শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৩

মদনসাহার দোকান লুট এবং ফেরত বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তার তথ্যে ভিন্নতা

২০/১১/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর  পক্ষে আইনজীবী  মিজানুল ইসলামের যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত রয়েছে। মাওলানা সাঈদীর নাম, মদনসাহার দোকান লুট এবং তা ফেরত প্রদান বিষয়ে  বিষয়ে সাক্ষী এবং তদন্ত কর্মকর্তার  সাক্ষ্য বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন তিনি।

আজ যুক্তি উপস্থাপন করে মিজানুল ইসলাম বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের পাঁচজন সাক্ষী বলেছিলেন ১৯৭১ সালে পাড়েরহাট বাজারে অবস্থিত  ব্যবসায়ী মদনসাহার  দোকান এবং বসত ঘর লুট করে তার শশুরবাড়ি নিয়ে যান। এরপর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে মুক্তিযোদ্ধারা সে ঘর উদ্ধার করে মদন সাহাকে ফেরত দেন।  অন্যদিকে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন  জেরার সময় বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মদনসাহা ভারতে চলে যান এবং এরপর আর ফেরত আসেনি। তাহলে মদনসাহাকে লুটের মাল কিভাবে ফেরত দেয়া হল?  আমরা কার কথা বিশ্বাস করব?

এরপর তদন্তকর্মকর্তা কর্তৃক  ট্রাইব্যুনালে দাখিলকৃত এবং প্রদর্শিত একটি ভিডিও চিত্র এবং  একটি স্থির চিত্র পুনরায় প্রদর্শনের  অনুরোধ করেন মিজানুল ইসলাম। ট্র্ইাব্যুনালের পর্দায়  প্রদর্শিত ভিডিও চিত্রে একটি টিনের ঘর দেখা যায়। মিজানুল ইসলাম বলেন,  তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেছিলেন এই ঘরটি মদন সাহার। এরপর একটি দোতলা বাড়ির ছবি পর্দায়  দেখানো হয়। মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জেরার সময় এই দোতালা বাড়িটিও মদন সাহার বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। একবার তিনি টিনের ঘরটিকে বলছেন মদন সাহার ঘর আরেকবার দোতলা বাড়িটিকে বলছেন মদন সাহার ঘর।
মিজানুল ইসলাম বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন এটি কি করে সম্ভব হতে পারে? এরপরও কি এই তদন্ত কর্মকর্তাকে বিশ্বাস করা যায়? তার ওপর আস্থা রাখা যায়? কি কারনে কিভাবে আমরা এরপরও তাকে বিশ্বাস করতে পারি?
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক এসময় বলেন এখানে কোন ভুল আছে কি-না তা আমরা বুঝতে চাই।
মিজানুল ইসলাম বলেন, অবশ্যই  আপনারা বুঝতে চাইবেন এবং সেটি আপনাদের চাওয়া উচিত।  এ বিসয়ে জেরার সময় ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘ বিতর্ক হয়েছে। আপনারা ইচ্ছা করলে সে ভিডিও রেকর্ড দেখতে পারেন।

এছাড়া আজ মাওলানা সাঈদীর নাম বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন মিজানুল ইসলাম । তিনি বলেন,  রাষ্ট্রপক্ষের দাবি  আল্লামা সাঈদীর নামের শেষে শিকদার ছিল। স্বাধীনতার পর তিনি নাম পরিবর্তন করে সাঈদী হয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১০ জন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।  কিন্তু আল্লামা  সাঈদীর নামের শেষে শিকদার ছিল, তার পিতার নামের শেষে শিকদার ছিল এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করতে পারেনি। কোন প্রমান তারা  দিতে পারেনি। আল্লামা সাঈদীর নাম সাঈদী ছাড়া অন্য কিছু ছিল তার কোন প্রমান  দিতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ  হয়েছে। বরং তারা   আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন তাতেই দেখা যায়  সাঈদী কথাটি  জন্ম থেকেই তার নামের শেষে ছিল। এমনকি তার পিতা এবং দাদার নামের সাথেও সাঈদী ছিল। তারা আল্লামা  সাঈদীর বিরুদ্ধে দাখিল এবং আলিমের সনদ জমা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালে। ১৯৫৭ সালের দাখিল সনদে তার নামের শেষে সাঈদী আছে। তার পিতার নামের শেষেও সাঈদী লেখা আছে। আলিমের সনদে নামের আগে ‘আবু নঈম মো: কথাটি’ একটানে কাটা আছে। যে শব্দটি কাটা সেটি তার নাম হতে পারেনা। আর বোর্ড কর্তৃপক্ষ যদি ভুল করে নাম লিখে আবার তা কাটে তার দায়দায়িত্ব তো সনদধারীর নয়। তাছাড়া মূল সনদ হল দাখিল। সেখানে যে নাম আছে সেটিই হল প্রকৃত নাম। সেখানে নামের শেষে সাঈদী আছে, পিতার নামের শেষেও সাঈদী আছে।
মিজানুল ইসলাম বলেন, তাছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ  সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে ইনকাম ট্যাক্স, হোল্ডিং ট্যক্স, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিলসহ মোট যে ছয়টি ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন তার প্রত্যেকটিতে তার নামের শেষে সাঈদী রয়েছে।।  পিতার নামের শেষেও সাঈদী আছে।  কাজেই তাদেরই জমা দেয়া এতগুলো ডকুমেন্টে তার এবং তার পিতার নামের শেষে সাঈদী লেখা থাকার পরও কি করে, কোন যুক্তিতে  তারা তাকে শিকদার বলে  আখ্যায়িত করতে পারে?
মিজানুল ইসলাম বলেন, আমরা সাঈদী সাহেবের পক্ষে ১৭ জন সাক্ষী হাজির করলাম। তাদের একজন সাক্ষীকেও  রাষ্ট্রপক্ষ জেরার সময় এমন কো সাজেশন দেননি যে, সাঈদী সাহেবের নাম আগে শিকদার ছিল, তার পিতার নামের শেষেও শিকদার ছিল।

মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা শপথ নিয়ে এই কাঠগড়ায় দাড়িয়ে অসত্য তথ্য দিয়েছেন।
মাওলানা সাঈদীর নামের  সাথে আল্লামা এবং মাওলানা লেখা বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য এবং অভিযোগের জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ কোনদিন মাদ্রাসায় পড়েননি।  আব্দুল হামিদ খান ভাসানীও   কোন মাওলানা নন। কিন্তু তাদের নামের আগে মাওলানা শব্দেরব ব্যবহার নিয়ে কি কারো কোন প্রশ্ন আছে? তাছাড়া আল্লামা আজিজুল হক, আল্লামা ইকবালের  নামের আগে আল্লাম ব্যবহার করা হয়। কাজেই আল্লামা লিখতে হলে ইসলামী বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করতে হবে বলে তদন্ত কর্মকর্তা যে তথ্য দিয়েছেন তা তার মনগড়া এবং অসত্য তথ্য।
গতকাল মিজানুল ইসলামের যুক্তি উপস্থাপনের সময় আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার   ইমরান সিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে  উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু।
ট্রাইব্যুনাল  চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল  হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন