সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৫

কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

মেহেদী হাসান, ১১/৪/২০১৫
 জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামানের  মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আজ রাত ১০ টা  ৩০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রেীয় কারাগারে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্স যোগে কড়া প্রহরায় কামারুজ্জামানের লাশ তার জন্মস্থান শেরপুরের বাজিতখিলার উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। একজন ডেপুৃটি জেলারের তত্ত্বাবধানে পাঁচ সদস্যের কারা কর্মকর্তরা তার লাশ নিয়ে শেরপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হন।

সিনিয়র জেলসুপার ফরমান আলী রাত ১১টা ৪৩ মিনিটে কারাগার থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রাত ১০টা ৩০ মিনিটে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। তিনি প্রাণভিক্ষা চাননি।

কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড  কার্যকর বিষয়ক সরকারের নির্বাহী আদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিকাল পৌনে তিনটায় কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌছায়।
দণ্ড কার্যকর উপলক্ষে  সন্ধ্যার পর থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিপুল সংখ্যাক র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি, কারারক্ষী এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা  সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। কারাগারের আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে নির্দিষ্ট কয়েকটি রোডে পুলিশ, সাংবাদিক এবং প্রশাসনের যানবাহন ছাড়া সব গাড়ি এবং লোকজনকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ঘিরে পুরো রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় সন্ধ্যার পর থেক্ েগুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়।
বিকাল চারটার দিকে  কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যরা কারাগারে আসা উপলক্ষে দুপুরের পর থেকেই  বিপুলসংখ্যক দেশী বিদেশী সাংবাদিক জড়ো হয়।

সন্ধ্যা সাতটার পরে কারাগারে একটি অ্যাম্বুলেন্স (ঢাকা মেট্রো-চ ৭৪-০১২৭) প্রবেশ করে ।
সন্ধ্যা ছয়টা ৪৫ মিনিটে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখারুজ্জামান প্রবেশ করেন। সাতটার দিকে প্রবেশ করেন অতিরিক্ত আইজিপি কর্ণেল বজলুল কবির। সোয়া সাতটায় প্রবেশ করেন সহকারি সিভিল সার্জন আহসান হাবিব। এরপর প্রবেশ করেন লালবাগ জোনের ডিসি।

কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি জানান,  দুপুর  সোয়া একটার দিকে ডেপুটি জেল সুপার তাদেরকে ফোনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসতে বলেন কামারুজ্জামানের সাথে দেখা করার জন্য।    বিকাল চারটা দশ মিনিটে কামারুজ্জামানের ২২ জন নিকট আত্মীয় কারাগারে প্রবেশ করেন। সাক্ষাত শেষে পাঁচটা ২০ মিনিটে তারা বের হয়ে আসেন।  কারাফটকের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের হাসান ইকবাল ওয়ামি জানান, তার বাবা প্রাণভিক্ষা চাননি। তিনি বলেছেন প্রাণ দেয়ার এবং নেয়ার মালিক  আল্লাহ। রাষ্ট্রপতির কাছে  প্রাণভিক্ষার কোন প্রশ্নই আসেনা।

এর আগে গত ছয় এপ্রিল রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাবার পর ওইদিনই কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কেন্দ্রীয় কারাগারে ডেকে আনে তার সাথে সাক্ষাতের জন্য। এ প্রেক্ষিতে ওইদিন রাতেই কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে মর্মে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিচারপতিদের স্বাক্ষরিত রায় কারাগারে না পৌছানোয় দণ্ড কার্যকর করা থেকে বিরত থাকে কর্তৃপক্ষ। এরপর আট এপ্রিল রিভিউ মামলার রায়ের কপিতে বিচারপতিদের স্বাক্ষর এবং তা ওইদিন কারাগারে পাঠানোর পর যেকোন সময় ফাঁসি কার্যকর হতে পারে মর্মে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বলা হতে থাকে। কারাগার সূত্র এবং সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় ফাঁসি কার্যকরের জন্য সব প্রস্ততি নিয়ে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় নয় এপ্রিল কামারুজ্জামানের সাথে দেখা করেন তার আইনজীবীরা। সাক্ষাত শেষে অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির সাংবাদিকদের জানান, কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না সে বিষয়ে তিনি যথযথ কর্তৃপক্ষকে যথা সময়ে জানাবেন।
এরপর গত শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন দুজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। কামারুজ্জামানের প্রাণভিক্ষা বিষয়ে জানার জন্য  তারা কারাগারে যাচ্ছেন কি-না সাংবাদিকরা  কারা ফটকে জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে কোন কিছু জানাতে অস্বীকার করেন।


১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়  এর আগে  ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর  জামায়াতের আরেক সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

গত ৬ এপ্রিল সোমবার  প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন । গত ৮ এপ্রিল  রিভিউ রায়ের কপিতে স্বাক্ষর করেন চার বিচারপতি। এরপর গতরাতে কার্যকর করা হল তার মৃত্যুদণ্ড।

৬ এপ্রিল সোমবার রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাবার পরপরই কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখে কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ। কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কাছে ওইদিন দুপুরের পর চিঠি পাঠানো হয় বিকেল পাঁচটার মধ্যে কারাগারে এসে দেখা করার জন্য। তখন খবর ছড়িয়ে পড়ে সেদিন রাতেই কার্যকর হচ্ছে মৃত্যুদন্ড । তবে বিচারপতিদের স্বাক্ষরিত  রিভিউ রায়ের কপি কারাগারে না পৌছায় কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ড কার্যকর করা থেকে বিরত থাকে।

মুহম্মদ কামারুজ্জামানকে  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দুটি অভিযোগে  মৃত্যুদণ্ড দেয়। গত বছর ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের একটি অভিযোগ বহাল রাখেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। মৃত্যুদণ্ডের আরেকটি সাজা বাতিল করে যাবজ্জীবন করেন।
গত ৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। এর  মাধ্যমে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত বছর ৩ নভেম্বর যে রায় দিয়েছিলেন তা চূড়ান্তভাবে বহাল থাকে।


মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরন :
১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। 

ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে  অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মোট পাঁচটিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয়া  হয়।  দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, দুটি অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং অপর আরেকটি অভিযোগে ২০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।

নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষনার এক মাসের মধ্যে আসামী পক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করে। গত বছরের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখে রায় দেন। আপিল বিভাগের সংখ্যাগষ্ঠি রায়ে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ট্রাইব্যুনালের দেয়া আরেকটি মৃত্যুদণ্ডকে যাবজ্জীবন করা হয়। 
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
৫ মার্চ আসামী পক্ষ রিভিউ আবেদন দায়ের করে আপিল বিভাগে। ৫ এপ্রিল শুনানী শেষে ৬ এপ্রিল  রিভিউ আবেদন খারিজ করে রায় দেন আপিল বিভাগ। ফলে ৩ নভেম্বর মুত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেয়া রায়  বহাল থাকে। ৮ এপ্রিল রিভিউ রায়ে স্বাক্ষর করেন চার বিচারপতি।


ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছর ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।

কামারুজ্জামানের আপিল শুনানীর জন্য প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার  নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের  বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী।
আপিল  মামলায় কামারুজ্জামানের পক্ষে প্রধান আইনজীবী ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির।

কামারুজ্জামানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৫২ সালে শেরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি  জিকেএম ইনস্টিটিউশন  থেকে চার বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭২ সালে ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজে থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭৩ (১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত) সালে তিনি ঢাকা আইডিয়াল কলেজ থেকে ডিস্ট্রিংশনসহ বিএ পাস করেন। এরপর  ১৯৭৬ সালে কামারুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করেন।

১৯৭৯ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন এবং ১৯৯২ সালে  এ দলের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাহিত হবার আগে তিনি দীর্ঘদিন দলের কেন্দ্রেীয় প্রচার সম্পাদকসহ অন্যান্য  গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতে যোগ দেয়ার আগে তিনি  ১৯৭৮-৭৯ সালে দ্বিতীয়বারের মত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন।

মুহম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৮০ সাল থেকে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। দীর্ঘদিন তিনি দৈনিক সংগ্রমের নির্বাহিী সম্পাদক ছিলেন। গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত তিনি  সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কামারুজ্জামান এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও পরবর্তীতে  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের আন্দোলনে লিয়াজো কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।
একজন লেখক এবং সুবক্তা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে।  তিনি স্ত্রী,  পাঁচ ছেলে, ও এক মেয়ে  রেখে গেছেন। 

লাশ দাফনের প্রস্তুতি :
কামারুজ্জামানের ইচ্ছা অনুযায়ী তার প্রতিষ্ঠিত বাজিতখিলা কুমরী এতিমখানার পাশে লাশ দাফনের প্রস্তুত চলছে। রাত ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শেরপুর সংবাদদাতা জানান, কামারুজ্জামানের আত্মীয়স্বজনরা কবর খননের কাজ করছেন। নিরাপত্তার জন্য সেখানে দুই প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।












সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৫

রিভিউ আবেদন খারিজ : কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল

মেহেদী হাসান, ৬/৪/২০১৫
জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে।

আজ  আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া ।  এর ফলে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগ  এর আগে যে রায় দিয়েছিল তা বহাল রইল।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ সকালে রিভিউ আবেদন খারিজ করে রায় দেন।

রিভিউ আবেদনের খারিজের মধ্য দিয়ে এ মামলার  সমস্ত বিচার কার্যক্রম শেষ হয়ে গেল এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে আইনগত আর কোন বাঁধা নেই। আসামীর জন্য এখন সর্বশেষ  রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার  আবেদনের একটি সুযোগ রয়েছে। তিনি যদি এ  আবেদন না করেন বা আবেদন করলেও রাষ্ট্রপতি  যদি তা নামঞ্জুর  করেন তাহলে ফাঁসি কার্যকর করার ক্ষেত্রে আর কোন বাঁধা থাকবেনা।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেছেন, কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার আবেদনের জন্য সময় পাবেন। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে তাকে আবেদন করতে হবে। তিনি আবেদন করলে  তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকর করা যাবেনা। তবে আবেদন না করলে বা আবেদন নাকচ করা হলে  সেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল আইনের ধারা মোতাবেক সরকার ফাঁসি কার্যকর করার সময় নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, ফাঁসি কার্যকরের জন্য সাত দিনের আগে নয় এবং  ২১ দিনের পরে নয় জেলকোডের এ নিয়ম তার জন্য প্রযোজ্য হবেনা। সরকার যখন চাইবে তখন তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফাঁসির দিনক্ষন ঠিক করে তা জেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেবে এবং সে অনুযায়ী জেল কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 

প্রাণভিক্ষার আবেদন বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদন খারিজের বিষয়টি কারাকর্তপক্ষ বরাবর পাঠাবে। কারা কর্তৃপক্ষ রিভিউ আবেদনের রায় আসামীকে পড়ে শোনানোর পর তার কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন বিষয়ে জানতে চাইবে। সেটা বিবেচনার জন্য তিনি কিছু সময় পেতে পারেন। তবে খুব বেশি দেরি করার সুযোগ নেই।

মুহম্মদ কামারুজ্জামানকে  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দুটি অভিযোগে  মৃত্যুদণ্ড দেয়। গত বছর ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের একটি অভিযোগ বহাল রাখেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। মৃত্যুদণ্ডের আরেকটি সাজা বাতিল করে যাবজ্জীবন করেন।
আজ  রিভিউ আবেদন খারিজের মাধ্যমে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ৩ নভেম্বর যে রায় দিয়েছিলেন তা বহাল রইল। এছাড়া ট্রাইব্যুনালের অপর তিনটি অভিযোগের বিষয়ে আপিল বিভাগ পূর্বে যে রায় দেন তাও বহাল রইল গতকালের রায়ে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা ট্রাইব্যুনাল থেকে কারাগারে পাঠানো হয়।


কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও রায় :
ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে।

এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মোট পাঁচটিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয়া য় হয়।

নিম্নে এ পাঁচটি অভিযোগে ট্রাইবুন্যাল এবং আপিল বিভাগের রায় উল্লেখ করা হল।

১ নম্বর অভিযোগ : বদিউজ্জামানকে অপহরন করে আহমেদনগর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা। এ হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। আপিল বিভাগের রায়ে এ অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়েছে সর্বসম্মতভাবে।

২ নম্বর অভিযোগ : শেরপর কলেজের অধ্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক সৈয়দ আবদুল হান্নানকে প্রায় উলঙ্গ করে শহরে প্রদণি করানো এবং পেটানো হয়।  এ অভিযোগে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়। আপিল বিভাগে এ সাজা সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে বহাল রাখা হয়েছে।

৩ নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালে কামারুজ্জামানের পরামর্শে পাকিস্তান আর্মি দেশীয় রাজাকার এবং আলবদর সদস্যদের সাথে নিয়ে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে অভিযান চালায়। অভিযানে ওই গ্রামে দেড়শতাধিক মানুষ নিহত হয় এবং অসংখ্য নারী ধর্ষনের শিকার হয়। এ গণহত্যার অভিযোগে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে এ সাজা বহাল রাখে। 

৪ নম্বর অভিযোগ : শেরপর মোস্তফাবাগ থেকে গোলাম মোস্তফাকে ধরে আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে কামারুজ্জামানসহ অন্যান্যরা মিলে একটি ব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ অভিযোগে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে এ অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে যাবজ্জীবন দিয়েছে।  

৭ নম্বর অভিযোগ : মুক্তিযুদ্ধচলাকালে ময়মনসিংহ গোলাপজান রোডে টেপা মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে টেপা মিয়া এবং তার ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে ধরে জেলাপরিষদ ডাকবাংলায় অবস্থিত আলবদর ক্যাম্পে আনা হয়। পরেরদিন সকালে তারা দুজনসহ সাতজনকে ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর তীরে আনা হয়। এসময় টেপা মিয়া নদীতে ঝাপ দিয়ে রক্ষা পায় এবং বাকীদের হত্যা করা হয়। এ অভিযোগের সাথে সংশ্লিষ্টতার  ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ।  আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে এ দণ্ড বহাল রাখা হয়।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরন :
২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। 
গত বছরের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখে আদেশ দেন।
এরপর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

নিয়ম অনুযায়ী আসামীপক্ষ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে গত ৫ মার্চ আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন দায়ের করে।
৫ মাচ রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল রিভিউ আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছর ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।

কামারুজ্জামানের আপিল শুনানীর জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের  বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী।


কামারুজ্জামানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৫২ সালে শেরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি  জিকে স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। এরপর জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজে আইএসসি’তে ভর্তি হন। ১৯৭২ সালে নাসিরাবাদ কলেজে থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭৬ সালে কামারুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করেন।

১৯৭৯ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন এবং ১৯৯২ সালে  এ দলের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। জামায়াতে যোগ দেয়ার আগে তিনি ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রেীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
মুহম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৮০ সাল থেকে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। তিনি দৈনিক সংগ্রমের নির্বাহিী সম্পাদক ছিলেন। গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত তিনি  সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কামারুজ্জামান এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও পরবর্তীতে  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের আন্দোলনে লিয়াজো কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।
একজন লেখক এবং সুবক্তা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে।  তার পাঁচ ছেলে রয়েছে।



রায়ের কপিতে স্বাক্ষর করেননি বিচারপতিরা


এদিকে আজ  সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জানান, বিচারাপতিরা রিভিউ’র রায়ে স্বাক্ষর করেননি। আজ মঙ্গলবার তারা স্বাক্ষর করতে পারেন।

সিনিয়র জেল সুপার বিকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের জানান, তারা এখনো রায়ের কপি পাননি। কপি পেলে আসামীকে তা পড়ে শোনানো হবে এবং তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি-না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। এরপর পরবর্তী করনীয় বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রিভিউ আবেদন সকালে খারিজ করে দেয়ার পর কারাকর্তৃপক্ষ  দুপুরের পর কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের খবর দেয় বিকাল পাঁচটার মধ্যে কারাগারে আসার জন্য আসামীর সাথে সাক্ষাতের জন্য। কারা কর্তৃপক্ষও ফাঁসি কার্যকরের যাবতীয় প্রস্ততি সম্পন্ন করে রাখে। এসব কারনে  কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় রাতেই কার্যকর হতে পারে মর্মে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।



রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৫

কামারুজ্জামানের রিভিউ শুনানী শেষ কাল রায়

মেহেদী হাসান ,৫/৪/২০১৫
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদনের (পুনরায় বিবেবচনা)  রায় কাল।  রিভিউ আবেদনের ওপর আজ  উভয় পক্ষের শুনানী শেষ হয়েছে। শুনানী শেষে কাল  রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ রায় ঘোষনার এ তারিখ নির্ধারণ করেন। রিভিউ আবেদনই হল এ  মামলার সর্বশেষ ধাপ এবং তাই কালকের  এ রায় হল  চুড়ান্ত রায়।

মুহম্মদ কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন শুনানী করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানী করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। 
গত বছরের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখে আদেশ দেন।
নিয়ম অনুযায়ী গত ৫ মার্চ আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন দায়ের করে আসামী পক্ষ।

কামারুজ্জামানের আপিল শুনানীর জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের  বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী।

রিভিউ  শুনানী :
ট্রাইব্যুনাল মুহম্মদ কামারুজ্জামানকে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এ অভিযোগ দুটি হল ৩ নং অভিযোগ যথা সোহাগপুর গণহত্যা এবং ৪ নং অভিযোগ যথা শেরপুরে গোলাম মোস্তফা নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা।
আপিল বিভাগের রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে একটি মুত্যুদুন্ডের অভিযোগ (সোহাগপুর গণহত্যা) বহাল রাখা হয়েছে।  মুত্যুদন্ডের  আরেকটি অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করা হয়েছে।

আজ রিভিউ আবেদন শুনানীতে অংশ নিয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন  বলেন,

তিন নং অভিযোগ যথা সোহাগপুর গণহত্যার ক্ষেত্রে মূলত তিনজন সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে মুতৃ্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ তিনজন সাক্ষী হল রাষ্ট্রপক্ষের ১১, ১২ এবং ১৩ নং সাক্ষী। এর মধ্যে ১১ নং সাক্ষী হাসনা বেগম শোনা কথার ভিত্তিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন স্বাধীনতার পর তিনি মুরব্বীদের কাছে শুনেছেন সোহাগপুর গণহত্যার সাথে কামারুজ্জামান জড়িত ছিল।
১২ নং সাক্ষী হাফিজা বেওয়া নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছেন। তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি জেরায় বলেছেন স্বাধীনতার আগে তিনি কামারুজ্জামানকে চিনতেননা। স্বাধীনতার তিন/চার মাস পরে তিনি কামারুজ্জামানকে টিভিতে দেখেছেন।

১৩ নং সাক্ষী করফুলি বেওয়া। তিনিও বলেছেন তার স্বামী হত্যার সাথে কামারুজ্জামান জড়িত। কিন্তু জেরায় তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার পর তিনি কামারুজ্জামানকে তাদের বাড়ির উঠানে দেখেছেন। আগে চিনতেননা।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সাক্ষীরা যদি আসামীকে আগে না চিনে থাকে তাহলে তারা ঘটনাস্থলে আসামীকে সনাক্ত করল কিভাবে।

সোহাগপুর গণহত্যা বিষয়ে আসামী পক্ষ থেকে দুটি বই জমা দেয়া হয়েছিল । মুহম্মদ কামারুজ্জামানের আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের জানান, এ বই দুটিতে কামারুজ্জামানের নাম নেই। রাষ্ট্রপক্ষের ১১ এবং ১৩ নং সাক্ষীর সাক্ষাতকার রয়েছে। মামুনুর রশিদ নামে এক সাংবাদিক তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তারা কামারুজ্জামন সম্পর্কে কিছু বলেননি। কিন্তু বই দুটি ২০১১ এবং ২০১২ সালে প্রকাশিত বিধায় আপিল বিভাগের  রায়ে একে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রকাশিত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

শিশিুর মনির বলেন, তবে রিভিউ আবেদনের ক্ষেত্রে আসামী পক্ষ থেকে নতুন আরেকটি বই জমা দেয়া হয়েছে যা ১৯৭১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় এবং ২০০৮ সালে সর্বশেষ সংস্করন বের হয়। মহিলা মুক্তিযোদ্ধা নামে এ বইটির লেখক ফরিদা আখতার।

আজ  এ বই থেকে কিছু তথ্য তুলে ধরে যুক্তি উপস্থাপন করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
তিনি আদালতে বলেন,এ বইটিতে ১৩ নং সাক্ষী করফুলি বেওয়ার  একটি সাক্ষাতকার রয়েছে যা ১৯৯৬ সালে গ্রহণ করা হয়েছে। এ সাক্ষাতকারে  করফুলি বেওয়া বলেছেন, তার স্বামী হত্যার সাথে সেনাবাহিনী জড়িত।
তাই খন্দকার মাহবুব হোসেন এ বিষয়টি পুনরায় বিবেচনার জন্য আদালতের প্রতি নিবেদন করেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যে যুক্তিতে ৪ নং অভিযোগে  ট্রাইব্যুনালের দেয়া মুত্যুদণ্ডকে যাবজ্জীবন করা হয়েছে সে যুক্তিতে তিন নং অভিযোগ তথা সোহাগপুর গণহত্যার অভিযোগের সাজাও  পরিবর্তন করা যায়।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রিভিউ আবেদনের বিষয়ে শুনানীতে অংশ নিয়ে আদালতকে বলেন, আলবদর নেতা হিসেবে তখন মুহম্মদ কামারুজ্জামানের যে স্টাটাস ছিল সে কারনে সেখানকার আর্মি অফিসাররা তার কথা শুনে কাজ করত। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে শেরপুরে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হিসেবে মুহাম্মদ কামারজ্জামানের নাম বিভিন্ন বই এবং পত্রিকায় এসেছে।

শুনানীতে খন্দকার মাহবুব হোসেনকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।