সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১২

ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী অপহরন/// আইনজীবীদের আদালত বর্জন


মেহেদী হাসান
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষের একজন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে  অপহরন করে নিয়ে গেছে ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) পুলিশের লোকজন। তার নাম সুখরঞ্জন বালী। তিনি ছিলেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের তালিকাভুক্ত  সাক্ষী ।  গতকাল তিনি এসেছিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে। সাক্ষ্য দিতে আসার সময় ট্রাইব্যুনালের প্রবেশ পথে তাকে  ডিবি পুলিশের লোকজন  ধরে নিয়ে  গেছে।

সাক্ষী অপহরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল বর্জন করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। আইনজীবীদের উপস্থিতি ছাড়াই বিকালে মাওলানা সাঈদীর মামলার যুক্তিতর্ক  গ্রহণ শুরু করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

মাওলানা সাঈদীপর আইনজীবীরা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন সাক্ষীকে   ধরে নিয়ে  পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় তাকে থাপ্পড় মেরেছে ডিবি পুলিশের লোকজন।


এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালে জানিয়েছেন  সাক্ষী অপহরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি।

যেভাবে সাক্ষী  ধরে নেয়া হল :

আইনজীবী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল   সকাল সোয়া দশটার দিকে  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী  মিজানুল ইসলাম এবং অন্য কয়েকজন আইনজীবী একটি গাড়িতে করে  ট্রাইব্যুনালে আসছিলেন। তাদের সাথেই ছিলেন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী। তাদের বহনকারী গাড়ি ট্রাইব্যুনালের  পাশে মাজার সংলগ্ন গেটে আসার পর   দায়িত্বরত পুলিশ  গাড়ি থামান। পুলিশ  সব আইনজীবীদের গাড়ি থেকে নামতে বলেন। অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী,  হাসানুল  বান্না সোহাগ সবাই নেমে আসেন। তাদেরকে হেটে ট্রাইব্যুনালে যেতে বলেন  দায়িত্বরত। অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম পক্ষাগাতগ্রস্ত হওয়ায় শুধুমাত্র তাকে গাড়িতে চড়ে ট্রাইব্যুনালের  সামনে যাওয়ার অনুমতি দেন পুলিশ। গাড়িতে থাকা সাক্ষীকে সুখরঞ্জন বালীকেও নেমে আসতে বলেন তারা । সাক্ষী নেমে আসেন।
সাক্ষীসহ অন্যান্য আইনজীবীরা গেটে দাড়িয়ে থাকেন। অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ ভেতরে যান অন্য আইনজীবী এবং সাক্ষীর জন্য গেট পাশ আনতে। (অন্যান্য দিন এ ধরনের কড়াকড়ি ব্যবস্থা ছিলনা। সাক্ষী এবং আইনজীবী  এবং সাংবাদিকরা  সরসারি ট্রাইব্যুনালের সামনে চলে যেতে পারতেন। শুধুমাত্র গতকালই বাইরের গেটে এভাবে কড়াকড়ি এবং চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়।)

এসময়  আসামী পক্ষের জুনিয়র আইনজীবী হাসানুল বান্না সোহাগ এবং সাক্ষী গেটে  দাড়িয়ে থাকেন। তখন চারজন সাদাপোশাকধারী লোক এসে  নিজেদের ডিবি পুলিশের লোক পরিচয় দেন। তারা সাক্ষীর নাম জিজ্ঞেস করেন। তারপর  সাক্ষীর দুপাশ থেকে দুজন করে পুলিশ হাত ধরে   রাস্তার দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। আইনজীবী এর  প্রতিবাদ করলে  ডিবি সদস্যরা জানান কিছু  পাশেই তাদের কন্ট্রোল রুমে  নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দেয়া হবে। এরপর সাক্ষীকে  টেনে      শিক্ষাভবনের দিককার  পুরনো হাইকোর্ট  গেট থেকে বের করে দোয়েল চত্বরের দিকে  ট্রাইব্যুনালের অপর গেটের দিকে নিয়ে যায়। এসময় ডিবি পুলিশের এক সদস্য মোবাইলে ফোন করলে ট্রাইব্যুনালের ভেতরের চত্বর থেকে একটি পুলিশের  পিকআপ ভ্যান  গেটে আসলে সাক্ষীকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া  হয়। প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী জানান,  তাকে গাড়িতে ওঠানোর সময় থাপ্পর দেয়া হয় এবং টেনে চিচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ধাক্কা মারা হয়।

ট্রাইব্যুনাল বর্জন :

সকাল সাড়ে দশটায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম    শুরু হলে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বিষয়টি অবহিত করেন। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন কোর্ট শেষে আমরা বিষয়টি দেখব। আসামী পক্ষের প্রধান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন সাক্ষীকে  এ অবস্থায় রেখে আমরা বিচার কাজে অংশ নিতে পারিনা। বিষয়টির বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেয়া হোক।
এরপর ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুকে নির্দেশ দেন   অপহরনের বিষয়টি বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে  এবং তাকে ছাড়িয়ে আনার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করতে। তিনি আদেশের সাথে সাথে  তাকে  কোর্ট থেকে বের হয়ে চেম্বারে গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজ  নেয়ার নির্দেশ দেন।
সাড়ে বারটার দিকে গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালে আসেন। তখন অন্য একটি মামলার শুনানী চলছিল।  আসামীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক সে শুনানী বন্ধ রেখে গোলাম আরিপ টিপুর কাছ থেকে  সাক্ষী বিষয়ক পরিস্থিত  শোনার আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন চলমান আবেদনের শুনানী শেষ হোক। এরপর   একটা বাজার সামান্য আগে শুনানী শেষ হলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যনালের সামনে দাড়িয়ে বলেন, আমি  আইনশৃঙখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে  কথা বলেছি। তারা বলেছেন, আইনের কোন লঙ্ঘন তারা করেননি।  ট্রাইব্যুনালের প্রবেশ পথে তারা  তাদের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন একজনকে  ধরে  নিয়ে যাবার বিষয়ে আপনাকে খোঁজ নিতে বলেছিলাম তার কি হল। তার কি হল?
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি আজ সেখানে। 
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, একটা হতে পারে কারা  এ কাজ যারা করেছে তারা চিনতে পারেনি অথবা ঘটনা ঘটেনি।
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, আদৌ  এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।
বিচারপতি নিজামুল হক আবারো বলেন, ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে কেউ অপহরন হয়েছে কি-না?
গোলাম আরিফ টিপু বলেন কেউ অপহরন হয়নি।
এর সাথে সাথে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা  তীব্র প্রতিবাদ জানান। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার কয়েকজন আইনজীবী এখানে এসে ঘটনা বলল প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সেটা মিথ্যা হয়ে গেল? মিজান সাহেব কি তাহলে মিথ্যা বলেছেন?  তার সাথে থাকা আমাদের অন্যান্য আইনজীবীরা মিথ্যা বলেছেন?  আর চিফ প্রসিকিউটর পুলিশের কথা শুনে বলে দিলেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি?
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, দুইটার পর আমরা বিষয়টি দেখব। এর মধ্যে আমরাও একটু খোঁজ খবর  নিয়ে দেখি কি হয়েছে। ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক অনুরোধ করেন বিষয়টি সুরাহা করে তারপর কোর্ট বিরতিতে যাক।

এরই মধ্যে  সাক্ষীকে ধরে নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত মোবাইলে তোলা ছবি  প্রিন্ট করে ট্রাইব্যুনাল কক্ষে প্রবেশ করেন  আসামী পক্ষের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির।   আসামী পক্ষ ট্রাইব্যুনালের সামনে সে ছবি জমা দেন। তিনজন বিচারপতি তা দেখেন। এরপরও তারা দুপুরের বিরুতিতে যাবার প্রস্তুতি নেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মিজানুল ইসলাম কিছু  কথা বলেন। এসময় বিচারপতিগন চেয়ার থেকে উঠে যান । চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন,  এখন আর শোনা হবেনা। মিজানুল ইসলাম তীব্র ক্ষোভের সাথে বলেন, আমাদের কথাও শোনাও হবেনা? তাহলে আমরা এ  কোর্টে আসব কিভাবে? আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয় কোর্টরুমে। মিজানুল ইসলাম উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করতে থাকেন। এরই মধ্যে কোর্টরুম ত্যাগ করে চলে যান বিচারপতিগন।

সকালে শুনানী চলাকালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডন্টে  সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদূদ আহমদ, সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি  জয়নুল আবেদনী ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। ব্যারিস্টার মওদূদ আহমদ এবং খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানীতে অংশগ্রহণ করেন।
ট্রাইব্যুনাল বর্জনের পর খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জানিনা  হতভাগ্য সাক্ষীর ভাগ্যে কি আছে। বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে এখন লোকজন গুম হচ্ছে। আমরা জানিনা এ সাক্ষীকে আর খুঁজে পাওয়া যায় কি-না। কারণ সরকার পক্ষ তাকে অপহরনের বিষয়টি অস্বীকার করছে।  কোর্টে আসার পথে সাক্ষী অপরহন করা হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?

ঢ়ধৎঃ২ ফি রিঃহবংং ধনফঁপঃবফ, ৎবঢ়ড়ৎঃ, ৫/১১/২০১২
সবযবফু


রাষ্ট্রপক্ষের   অভিযোগ :
সাক্ষী অপহরন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে এবং ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাংবাদিকদের কাছে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সুখরঞ্জন বালী আসামী পক্ষের কোন সাক্ষী নয়। আজ সাক্ষীর জন্য নির্ধারিত কোন তারিখও ছিলনা।  সে তাদের কাছে গেল কি করে সেটাই আমাদের প্রশ্ন। সৈয়দ হায়দার আলী অভিযোগ করে বলেন, ট্রাইব্যুনাল  বর্জনের অজুহাত হিসেবে এ ঘটনার অবতারনা করা হয়েছে।

কে এই সুখরঞ্জন বালী : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ  ১৯৭১ সালের ২ জুন পিরোজপুরের উমেদপুরে হিন্দুপাড়ায়  বিশাবালী নামে একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে নারকেল গাছে সাথে বেঁেধ রাজাকাররা হত্যা করে। মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই বিশাবালীল ভাই হলেন সুখরঞ্জন বালী।   রাষ্ট্রপক্ষ তাকে সাক্ষী মেনেছিল। তবে  রাষ্ট্রপক্ষ তাকে হাজির করতে পারেনি।

বিশাবালীকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ গত   মার্চ  মাসে ট্রাইব্যুনালে জানিয়েছিল চার মাস আগে  নিজ বাড়ি থেকে বের হবার পর  সুখরঞ্জনবালী নিখোঁজ হয়েছে।

গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন পেশ করা হয়। আবেদনে বলা হয়  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  ৪৬ জন  সাক্ষীকে  হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই  ৪৬ জন সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে  জবানবন্দী  দিয়েছেন তা  তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক।  এই ৪৬ জন সাক্ষীর তালিকায় সুখরঞ্জন বালীর নামও ছিলেন।


সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যেসব কারণ উল্লেখ করেছিল তার মধ্যে রয়েছে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সন্ত্রাসী অস্ত্রধারীদের হুমকির কারনে  অনেকে  আত্মগোপন করেছে, কেউ বাড়ি থেকে নিখোঁজ, কেউ গোপনে ভারতে  পালিয়ে গেছে, কেউ অসুস্থ, কারো কারো স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে।
৪৬ জনের সেই তালিকা থেকে ১৫ জনের জবানবন্দী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধেথ  সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে ২৯ মার্চ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সেই ১৫ জনের মধ্যেও ছিলেন সুখরঞ্জন বালী।
রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষী সম্পর্কে বলেছিল সে নিখোঁজ সেই সুখরঞ্জন বালী গতকাল  এসেছিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে।
রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সাক্ষী হাজির করতে যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছিল তাকে মিথ্যা এবং প্রতারনা বলে অভিযোগ করেছিল আসামী পক্ষ। আসামী পক্ষ অভিযোগ করে বলেছিল সাক্ষীরা রাষ্ট্রপক্ষের শেখানো মতে মিথ্যা বলতে রাজি নয় বিধায় তাদের হাজির করা হচ্ছেনা।

কড়া নিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালে : গতকাল ট্রাইব্যুনালে ছিল কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনি যা আগে কখনো দেখা যায়নি। সাধারনত ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে পাশ নিয়ে প্রতিদিন গেট পাশ নিয়ে সাংবাদিক আইনজীবী এবঙ আসামীর আত্মীয়স্বজনকে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু গতকাল একদন বাইরের গেটে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা কর্র্মী প্রত্যেকের আইডি কার্ড চেক করে ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা করেন। মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করে বলেন, আজ কি কারনে এরকম ব্যবস্থা করা হল তা আমরা জানিনা এবং  এরকম যে ব্যবস্থা করা হবে তাও আমাদের জানানো হয়নি। জানালে আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পারতাম। তিনি বলেন নিরাপত্তাকমীর দায়িত্ব হল আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। কিন্তু তারা যদি আমাদের হয়রানি করে, আইনজীবীদের  গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় এবং সাক্ষীকে ধরে নিয়ে যায় তাহলে সে নিরাপত্তা কর্মী কিসের জন্য?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ গাড়ি চেক করতেই পারে,   আগতদের পরিচয় জানতে চাইতে পারে। কিন্তু তারা আমাদের আইনজীবীদের সাথে আজ যা ব্যবহার করছে তা কোনমতেই  গ্রহণযোগ্য নয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দুজন আইনজীবীকে এখনো পুলিশ বাইরে আটকে রেখেছে। তাদেরকে ঢুকতে দিচ্ছেনা। বলা হচ্ছে  পাশ ছাড়া কারো ভেতরে যাবার অনুমতি নেই।  কিন্তু বাইরে তো  গেট পাশ সংগ্রহের কোন ব্যবস্থাই নেই।   ভেতরেই যদি প্রবেশ করতে না দেয়া হয় তাহলে সে পাশ সংগ্রহ করবে কিভাবে? তিনি বলেন আমাদের আইনজীবীদের সাথে একরকম এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সাথে আরেক রকম ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ অভিযোগের পর ট্রাইব্যুনাল রেজিস্ট্রার নাসরি উদ্দিনকে ডেকে পাঠান এবং এ বিষয়ে জানতে চান।
নতুন নিরাপত্তা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন আমরাই এ নির্দেশ দিয়েছি। আমরা ট্রাইব্যূনালকে হাট বানাতে দিতে চাইনা। আমরা দেখতে  পাই প্রতিদিন গাউন পরে অনেক লোক এখানে আসেন যারা  কোন পক্ষের আইনজীবী নন। তারা কিভাবে পাশ নিয়ে এখানে আসেন? আমরা আগেই বলেছি আসামীর আইনজীবী ছাড়া শেখার জন্য কেউ কেউ আসবেন। কিন্তু তার একটা মাত্রা তো থাকতে হবে। আমরা আপনাদের জন্য একশ আইনজীবী আসতে দিতে পারিনা।
তাজুল ইসলাম  গতকালের ঘটনার জন্য ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন   কারণ ট্রাইব্যুনাল বলেছেন তাদের নির্দেশেই গতকালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে।

সুখরঞ্জন বালী  কার সাক্ষী? সুখরঞ্জন বালী রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন।  তিনি এবং আরেক সাক্ষী গণেশচন্দ্র সাহাকে আসামী পক্ষের সাক্ষী হিসেবে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করেছিলেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। এ বিষয়ে আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন আপনারা যাকে খুসী সাক্ষী হিসেবে আনতে পারেন তবে সমন জারি করা  হবেনা।  এরপর গত ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী  গণেশচন্দ্রকে হাজির করে আসামী পক্ষ  তিনি মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেন। সুখরঞ্জন বালী বিষয়ে গতকাল আদেশের সময় ট্রাইব্যুনাল  তাকে আসামী পক্ষের সাক্ষী উল্লেখ না করেননি। মিজানুল ইসলাম বলেন তিনি এখন  আমাদের  মানে আসামী পক্ষের সাক্ষী। তাকে সে হিসেবে উল্লেখ করা হোক। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল  তা গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মিজানুল ইসলাম বলেন তিনি আসামী পক্ষের সাক্ষী।







রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১২

তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষ//গোলাম আযমের পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু রোববার থেকে


মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষ হয়েছে আজ । আগামী রোববার ১১ নভেম্বর থেকে আসামী পক্ষের সাক্ষী হাজিরের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।

আজ  বেলা একটার মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানের জেরা শেষ করার জন্য ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ ছিল আসামী পক্ষের আইনজীবীর প্রতি। তবে একটার মধ্যে জেরা শেষ না হওয়ায় বিকালের সেশন   পর্যন্ত সময় দেয়া হয় এবং আজকের  মধ্যে জেরা শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়।  প্রয়োজনে কোর্টের নির্ধারিত সময় সাড়ে চারটা  পার  হয়ে গেলে  প্রয়োজনে সময় বাড়িয়ে দেয়ার কথাও বলেন কোর্ট। সে অনুযায়ী  গতকাল সোয়া পাঁচটায়  শেষ হয় জেরা।

আজ  তদন্ত কর্মকর্তার জেরার সময়   বেশ কয়েকবার উভয় পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে উত্তেজনা বিতর্ক দেখা দেয়।

তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির প্রমুখ।

জেরা :
জেরা : রাজাকার বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা আছে?
উত্তর : নাই।
প্রশ্ন : পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী বাহিনীর কোন সদস্যের নিয়োগ, নিয়ন্ত্রন, আদেশ বা শাস্তি দানের কোন ক্ষমতা অধ্যাপক গোলাম আযমের ছিল এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট পেয়েছেন?
উত্তর : সরাসরি ওনার লিখিত কোন  ডকুমেন্ট পাইনি। তবে জামায়াতের প্রধান হিসেবে এসব বাহিনীর ওপর  তার নিয়ন্ত্রন ছিল। আল বদর বাহিনীর ওপর তার নিয়ন্ত্রন ছিল সে কাগজ আমি পেয়েছি।
প্রশ্ন : সহযোগী বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রন, আদেশ, নিয়োগ বা সদস্যদের শস্তিপ্রদানের  বিষয়ে অধ্যাপক গোলাম আযমকে  ক্ষমতা দিয়ে  পাকিস্তান আর্মি কোন আদেশ জারি করেছে এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট পেয়েছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২ আগস্টের আগে পর্যন্ত রাজাকার বাহিনী  পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রন ছিল এ মর্মে তথ্য প্রমান আপনি তদন্তকালে পেয়েছেন।
উত্তর : পাইনি।
প্রশ্ন : আপনি তদন্তকালে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর থেকে এ মর্মে সংগৃহীত একটি ডকুমেন্ট দাখিল করেছেন। নেত্রকোনা মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ের ডকুমেন্ট এটি।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনি  পুলিশের যেসব পাক্ষিক রিপোর্ট, সরকারি গোপন নথিপত্র, পুলিশ অ্যাবস্ট্রাক্ট রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন তার একটিতেও শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস এর কোন সদস্যের নিয়ন্ত্রন, নিয়োগ, শাস্তি প্রদানের বা আদেশ প্রদানের কোন  ক্ষমতা অধ্যাপক গোলাম আযমকে দেয়া হয়েছে এ মর্মে কোন তথ্য নেই।
উত্তর :  এসব কাগজপত্রে যা আছে তার বাইরে আমার কোন বক্তব্য নেই।
প্রশ্ন : আপনি যেসব পত্রিকার  খবরের কপি দাখিল করেছেন তার সত্যতা সম্পর্কে আপনি কোন তদন্ত করেননি।
উত্তর : করিনি।
প্রশ্ন : আপনি যেসব দলিলপত্র দাখিল করেছেন তাতে এমন কোন তথ্য নেই যে, অধ্যাপক গোলাম আযমের বিবৃতি পড়ে বা বক্তব্য শুনে কেউ কোন অপরাধ করেছে।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার দাখিলকৃত দলিলপত্র থেকে  এ মর্মে অন্তত একটি প্রমান দেখান ।
উত্তর : (এ প্রশ্নের উত্তর দিতে দীর্ঘ সময় পার হয়। উভয়পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে বিতর্ক চলে। পরে তিনি নিম্নোক্ত জবাব দেন) এতগুলো ডকুমেন্ট পর্যালোচনা না করে এ মুহূর্তে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে যেসব অপরাধ হয়েছে সেসব অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি গোলাম আযমের সাথে পরামর্শ বা যোগাযোগ করে বা তার নির্দেশেনা অনুসারে কোন অপরাধ  করেছে এ  মর্মে কোন দালিলিক প্রমান দাখিল করেছেন?
উত্তর : একটি ক্ষেত্রে সাক্ষ্য প্রমান দাখিল করেছি।
এ উত্তর দেয়ার পর অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি প্রশ্ন করেছি দালিলিক প্রমান আছে কি-না সে বিষয়ে। ট্রাইব্যুনাল বলেন, তিনি যা উত্তর দিয়েছেন তাতে যা অর্থ হয় তা হবে।
প্রশ্ন : দালিলিক প্রমান কথাটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আপনি ভিন্ন উত্তর দিলেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ৩১ ঘন্টার যে সিডি, ডিভিডি ভিডিও  আপনি  দাখিল করেছেন তা তদন্ত  ছাড়াই দাখিল করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : উক্ত সিডি, ডিভিডিতে  বর্নিত প্রফেসর শহীদুর রহমান, মিসেস শহীদুর রহমান, মোহন মুন্সি, গোলাম মোস্তফার ভাই মোশাররফ হোসেন মানিক, ডা. এস এ হাসান, জাতীয় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাংবাদিক মাহবুবু কামাল, শহীদ মুনির চৌধুরীর ভাই শমশের চৌধুরী, পান্না কায়সার, অধ্যাপক ফরিদা খান, শহীদ গিয়াসউদ্দিন আহমেদের বোন, অধ্যাপক  এনামুল হক, এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার,  শাহরিয়ার কবির,  মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, আব্দুল বারি, ডলি চৌধুরী, জাহিদ রেজা নূর, ডা. ফাইজুল হক, জয়নাল আবেদীন, মাহমুদুর রহমান, ড. আনিসুজ্জামান, ড. কামাল হোসেন. ড. আবুল বারাকাত কি জীবিত?
উত্তর : আমার সিডিতে এ নামগুলো নেই।
প্রশ্ন : এসব সিডি ডিভিডিতে এমন কোন তথ্য আছে কি-না  যাতে দেখা যায় আল বদর বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয়েছিল?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী গঠিত হয় এমন কোন তথ্য আছে  এসব সিডি ডিভিডিতে?
উত্তর : স্মরন নেই।

ঢ়ধৎঃ২ রড় লবৎধ বহফ, ৎবঢ়ড়ৎঃ, ৪/১১/২০১২
সবযবফু


প্রশ্ন : অপরাধীকে ক্ষমা করার প্রেসিডেন্টের  ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এমন কোন তথ্য আছে  এস সিডি ডিভিডিতে?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : অধ্যাপক মাজহারুল ইসলামকে আহবায়ক করে গঠিত ইতিহাস প্রণয়ন কমিটির রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন?
উত্তর : আমার রেকর্ডে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
প্রশ্ন : গোলাম আযম এবং টিক্কা খানের সাথে ৪ এপ্রিলের মিটিংয়ে কি আলোচনা হয়েছিল এ বিষয়ে আপনার কাছে কোন তথ্য নেই।
উত্তর : ৫ এপ্রিল দৈনিক আজাদ, ৬ এপ্রিল দৈনিক পূর্বদেশ, আজাদ এবং দৈনিক পাকিস্তানে এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।  প্রকাশিত খবরের তথ্য অনুযায়ী বৈঠকে নাগরিক শান্তি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়।  দুষ্কৃতকারী, রাষ্ট্রদ্রোহী সমাজ বিরোধীদের আশ্রয় না দেয়া এবং সামরিক আইন প্রশাসকের নিকট তথ্য পৌছে দেয়ার কথা আছে। দাখিলকৃত তথ্যে এটা খুজে পেয়েছি।
প্রশ্ন : ওইসব রিপোর্টে শান্তি কমিটি কথাটা কি আছে?
উত্তর : তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিটি পত্রিকার রিপোর্ট পড়তে থাকেন। প্রথমে ৫ এপ্রিলের রিপোর্ট পড়ে বলেন, নাগরিক কমিটি কথা লেখা আছে।  মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি জানতে চেয়েছি শান্তি কমিটি কথাটা আছে কি-না। এরপর তিনি আবার অন্য পত্রিকার রিপোর্ট পড়া শুরু করেন। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ৬ তারিখের আজাদে কি আছে বলেন। রিপোর্ট পড়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন শান্তি কথাটি নেই। এরপর বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, পূর্বদেশ এবং  ইত্তেফাকের রিপোর্টে কি আছে? তদন্ত কর্মকর্তা রিপোর্ট পড়ে বলেন  শান্তি কথাটি নেই।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আগের প্রশ্নের জবাবে যেখানে নাগরিক শান্তি কমিটি কথাটি লেখা হয়েছে সেখান থেকে শান্তি  শব্দটি বাদ দেয়া হবে। তিনি কম্পোজারকে নির্দেশ দেন শান্তি শব্দটি মুছে ফেলার জন্য। মিজানুল ইসলাম তীব্র আপত্তি করে বলেন, আমিতো পরের প্রশ্নটি করেছি তার আগের উত্তরকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য। তিনি আগের উত্তরে সঠিক বলেননি সেটা প্রমানের জন্য। এখন আগের উত্তর থেকে শান্তি শব্দটি বাদ দিলে তো আমার উদ্দেশ্য ব্যর্থ   হবে।
বিচারপতি  নিজামুল হক বলেন, সাক্ষী যতক্ষন পর্যন্ত ডকে থাকেন এবং জবানবন্দীতে স্বাক্ষর না করেন ততক্ষন পর্যন্ত তিনি তার উত্তর সংশোধন করতে পারেন। সে অধিকার  তার আছে। ট্রাইব্যুনালও এটি পারে। তিনি বলেন, আগের উত্তর থেকে শান্তি শব্দটি মুছে দেয়া হবে। কিন্তু ততক্ষনেও কম্পোজার শান্তি শব্দটি না মোছায় তিনি তাকে কিছুটা ধমকের সুরে  মুছে ফেলতে নির্দেশ দেন।
এসময় অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম দাড়িয়ে বলেন, আগের অনেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন  খুঁজে পাচ্ছিনা, স্মরন নেই । সেসব  প্রশ্নের উত্তর  আমরা যদি ডকুমেন্ট   খুঁজে দেখতে  বলি  তাহলে কি সেসব প্রশ্নের উত্তর সংশোধন করে  আছে  মর্মে লেখা  হবে? উনি সেযব প্রশ্নের উত্তর গোপন করছেন সেটাতো আপনারা নিচ্ছেনননা। খুঁজে উত্তর দিতে বলছেননা।  উত্তর চ্যালেঞ্জ করার এভাবে যদি আগের   প্রশ্নের উত্তর সংশোধন করা হয় তাহলে আমারা ক্ষতিগ্রস্ত হব। আসামী ন্যায় বিচার থেকে  বঞ্চিত হবে।
জবাবে বিচারপতি নিজামুল  হক বলেন, আমরা যা করছি তা আইন অনুযায়ী করছি এবং আমাদের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। আমরা সরি আপনার  প্রস্তাব গ্রহণ করা হলনা।   সামনে আগান।
প্রশ্ন : আপনি আপনার সংগৃহীত দলিলের কতটি নিয়ে এসেছেন আর কতটি রেখে এসেছেন?
উত্তর : আমি সংগৃহীত সব দলিলই দাখিল করেছি এবং এখানে সবই নিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন : যেসব প্রশ্নের উত্তরে খুঁজে পাচ্ছিনা বলেছেন সে দলিলপত্রগুলো কোথায় আছে?
উত্তর : আমার ডকুমেন্টের মধ্যেই আছে। এর বাইরে কিছু নেই।
প্রশ্ন : অধ্যাপক গোলাম আযম রেডিওতে যে ভাষন দিয়েছিলেন তার অডিও  কপি খুঁজে পেয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন সামরিক সরকার যে প্রেসরিলিজগুলো দিয়েছিল তার অধিকাংশই ছিল জনগনের মুক্তির  আকাঙ্খাকে দাবিয়ে রাখার জন্য প্রতারনামূলক কৌশল।
উত্তর : এটা বিশ্লেষনের ব্যাপার।
প্রশ্ন :  পূর্ব পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষ যেসব প্রেসরিলিজ দিয়েছিল তার কতটি আপনি তদন্ত করেছেন?
উত্তর : সঠিক সংখ্যা বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : কতটি  প্রেসরিলিজ  জব্দ করেছেন?
উত্তর : একটিও, না কারণ পাইনি।
প্রশ্ন :  ৬ এপ্রিল গোলাম আযম টিক্কা খানের সাথে দেখা করেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : মিত্র বাহিনী ৪ ডিসেম্বর ঢাকা আক্রমন করে এটি ঠিকতো?
উত্তর : সঠিক বলতে পারবনা।
 জেরার এ পর্যায়ে  অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের জবানবন্দীর কণ্ট্রাডিকশ নিয়ে  তীব্র বিতর্ক দেখা দেয় উভয় পক্ষের আইনজীবী এবং ট্রাইব্যুনালের মধ্যে। মুনসাসির মামুনের জবানবন্দী গ্রহণ করেন তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম। মিজানুল ইসলাম বলেন, মুনতাসির মামুন কোর্টে এসে কিছু কথা বলেছেন যা তদন্ত কর্মকর্তার  কাছে প্রদত্ত  জবানবন্দীতে নেই আবার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীতে কিছু কথা আছে যা তিনি কোর্টের জবানবন্দীতে বলেননি। এ বৈষাদৃশ্য তুলে ধরে মিজানুল ইসলাম  প্রশ্ন করলে তদন্ত কর্মকর্তা জবাব দেন  এ বিষয়ে আমার রেকর্ডে নেই।
এ উত্তর লিপিবদ্ধ নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা  দেয়। মিজানুল ইসলাম এবং তাজুল ইসলাম বলেন, আমার রেকর্ডে নেই এর মানে হল তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাক্ষী   ওইসব কথা বলেননি সে কারনে তার রেকর্ডে নেই। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, জবানবন্দী  নিয়েছেন মনোয়ারা বেগম। কাজেই এ বিষয়টি তার রেকর্ডে নেই এটা বলাই তো স্বাভাবিক।
শেষে মিজানুল ইসলাম নিবেদন করেন মনোয়ারা বেগমকে হাজির করার জন্য। তবে ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন  গ্রহণ না করে উত্তরটি এমনভাবে লেখেন যাতে দুই পক্ষই সন্তুষ্ট হয়।
প্রশ্ন : যেহেতু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ  প্রশাসনের ব্যক্তি কর্তৃক অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সেহেতু আপনি  একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য আপনার ইচ্ছামত সাক্ষ্য সংগ্রহ করে অসত্য প্রতিবেদন দিয়েছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে গোলাম আযমের ভূমিকা ছিল শুধুমাত্র রাজনৈতিক। তিনি মনে করতেন পূর্ব পাকিস্তান জনগনের ওপর যে শোষন নিপীড়ন হয়েছে তার সমাধান অখন্ড পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যেই সম্ভব ছিল।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : তিনি এবং তার দলের দর্শন ছিল ভারত তার অধিপত্য  নীতি বাস্তবায়নের জন্য জগনের আন্দোলনকে ভিন্নভাবে চিত্রায়নের চেষ্ট করছে।
উত্তর সত্য নয়।

রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর, সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি   প্রতিবেদন দাখিলের জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে আরো এক সপ্তাহ সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল মাওলানা আব্দুস সোবহানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আরো ৩ সাক্ষীকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজিরের জন্য আবেদন


রাষ্ট্রপক্ষের আরো  তিনজন  সাক্ষীকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করা হয়েছে আসামী পক্ষ থেকে। এরা হলেন  সুমতী রানী মন্ডল, সমর মিস্ত্রী এবং আশিষ কুমার মন্ডল।  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ  এ আবেদন পেশ করা হয়।

তদন্ত কর্র্মকর্তার কাছে প্রদত্ত যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে  আদালত মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করেছেন উক্ত তিনজনই সেই ১৫ জনের অন্তর্ভুক্ত।

আবেদন বিষয়ে আজ  শুনানী অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।
এর রাগে রাষ্ট্রপক্ষের  দুজন সাক্ষীকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করা হয়েছিল। তারা হলেন গণেশ চন্দ্র সাহা এবং সুখরঞ্জন বালী। এরাও ১৫ জনের  জনের অন্তর্ভুক্ত।

ট্রাইব্যুনাল এ আবেদন বিষয়ে আদেশে বলেছিলেন আসামী পক্ষ যাকে খুসী সাক্ষী হিসেবে হাজির করতে পারে কিন্তু কোর্ট থেকে  এ বিষয়ে কোন সমন জারি করা হবেনা।  এদের মধ্যে শহীদ ভাগীরথী সাহার ছেলে গণেশ চন্দ্র সাহা গত ২৩ অক্টোবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে মাওলানা সাঈদীর  পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

এদিকে আগামীকাল সোমবার   মাওলানা সাঈদীর মামলায় আর্গুমেন্ট বা যুক্তিতর্ক শুরু হবার জন্য নির্ধারিত রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের  জন্য প্রথমে আর্গুমেন্ট পেশ করার কথা রয়েছে।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  গতকাল এ বিষয়ে  একটি আবেদন করা হয়েছে । সেটি হল আসামী পক্ষকে প্রথমে আর্গুমেন্ট পেশ করার সুযোগ দেয়া হোক। 

গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন পেশ করা হয়। আবেদনে বলা হয়  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  ৪৬ জন  সাক্ষীকে  হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই  ৪৬ জন সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে  জবানবন্দী  দিয়েছেন তা  তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক।

আবেদনে ৪৬ জন সাক্ষীর  মধ্যে ১৯ জনকে ঘটনার সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ১৯ জন সাক্ষীর মধ্য থেকে ১৫ জনের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে ২৯ মার্চ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দরখাস্তে ১৯ জন ঘটনার সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে বিভিন্ন কারণ  উল্লেখ করা হয়েছিল।  এদের মধ্যে পাঁচজনকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে বলা হয়েছে তারা নিখোঁজ।  ১৪জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। মাওলানা সাঈদীর পক্ষের অস্ত্রধারীদের হুমকির কারনে  তারা আত্মগোপন করেছে।  নিখেঁাঁজ  পাঁচ জনের তিনজন গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে। এছাড়া একজনের স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে এবং বয়স ও অসুস্থতাজনিত কারনে ভ্রমনে মৃত্যুর ঝুকি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আশিষ কুমার মন্ডল, সুমীত রানী মন্ডল এবং সমর মিস্ত্রী  সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের দরখাস্তে বলা হয়েছিল  তারা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নিখোঁজ। সম্ভবত তারা গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে। সেই সাক্ষীদেরই মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজিরের জন্য আবেদন করা হল আসামী পক্ষ থেকে।

বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১২

শান্তি কমিটি আলবদর আল শামসকে সহযোগী বাহিনী গণ্য করে জারিকৃত কোন দলিল পাননি তদন্ত কর্মকর্তা//জেরা শেষ করা নিয়ে বিতর্ক

মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় জেরার সময় তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী, শান্তি কমিটি, আলবদর, আল শামস প্রভৃতি বাহনীকে  সহযোগী বাহিনী গণ্য করে জারি করা কোন  প্রমান্য  দলিল তিনি তার তদন্তকালে পাননি ।

আজ জেরার সময় তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হয় “জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, পিডিপি, নেজামে ইসলাম, শান্তি কমিটি, আলবদর, আল শামস, বাহিনীকে অক্সিলিয়ারি ফোর্স  (সহযোগী বাহিনী)  হিসেবে  গণ্য করে পাকিস্তান আর্মির ইস্টার্ন কমান্ড বা সেন্ট্রাল কমান্ড কোন প্রজ্ঞাপন  জারি করেছে এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট আপনি তদন্তকালে সংগ্রহ করতে পারেননি।”

জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “সরাসরি কোন প্রামান্য দলিল আমি আমার তদন্তকালে পাইনি। তবে  উক্ত  সংগঠনগুলো অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে কাজ করেছে সে প্রমান আমি তদন্তকালে পেয়েছি।”

তদন্ত কমকর্তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন এবং তার উত্তর নিয়ে গতকাল ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘ বিতর্ক চলে। এছাড়া  জেরা শেষ করার জন্য  ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সময় বেঁধে দেয়া নিয়েও দর্ঘি বিতর্ক চলে। গতকাল ৪টা ৫০ মিনিটে শেষ হয় বিচার কার্যক্রম।
তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন  অধ্যাপক গোলা আযমের   পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জেরার সময় মিজানুল ইসলাম ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আর্মির আত্মসর্পনের সময় স্বাক্ষরিত দলিল নিয়ে প্রশ্ন করলে তা নিয়েও দীর্ঘ সময় আলোচনা, বিতর্ক চলে। মিজানুল ইসলাম বলেন,  আত্মসর্পনের সময় জেনারেল নিয়াজি কর্তৃক স্বাক্ষরিত ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অব সারেন্ডার’ ডকুমেন্ট ছাড়াও  আরো কিছূ  দলিল সম্পাদন হয় এবং তাতে তিনি স্বাক্ষর করেন। সেগুলো তদন্ত কর্মকর্তা জেনেও গোপন করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা  তা অস্বীকার করেন। মিজানুল ইসলাম সে দলিল থেকে  ট্রাইব্যুনালে যে তালিকা উল্লেখ করেন সেখানে  পাকিস্তান বাহিনীর নিয়মিত, প্যারা, এবং বিভিন্ন সহযোগী বাহিনীর ২৬ হাজার ২৫০ জন সদস্যের পরিসংখ্যান দেয়া আছে। সে তালিকায় মুজাহিদ বাহিনী, রাজাকার বাহিনীর নাম আছে। কিন্তু আল বদর, আল শামস, শান্তি কমিটির নাম নেই সহযোগী বাহিনী হিসেবে।

রাতে  মিজানুল ইসলামের কাছে তার দাবিকৃত   ডকুমেন্টের নাম জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দলিলটির নাম হল ‘ট্রুপস ইন ঢাকা এট দি টাইম অব সারেন্ডার : রেগুলোর এন্ড প্যারা।

জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট  তাজুল ইসলাম, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন।
বিচার কার্যক্রম করেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক।

জেরা :

প্রশ্ন : আর্মি এ্যাক্ট ১৯৫২, এয়ারফোর্স এ্যাক্ট ১৯৫৩ ও নেভি অর্ডিন্যান্স ১৯৬১তে অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে কোন  বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল কিনা বা অন্য কোন বাহিনীকে মেইনন্টেইন করা হতো কিনা?
উত্তর : আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর  জেরারেল নিয়াজী যখন আত্মসমর্পন করেন তার সঙ্গে অক্সিলিয়ারি ফোর্সও আত্মসমর্পন করেছিল
উত্তর : অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে প্যারামিলিটারী ও সিভিল আর্মড ফোর্সেস ছিল।
প্রশ্ন : পাকিস্তান সেনাাহিনীর ইষ্টার্ণ কমান্ডার জেরারেল নিয়াজী যখন আত্মসমর্পন করেন তখন তার কোন বাহিনীর  কত  সদস্য ছিল এটার কোন তালিকা ছিল কিনা জানা আছে?
উত্তর : রেকর্ডে দেখা যাচ্ছেনা। আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : ইনস্ট্রুমেন্ট অব সারেন্ডার-এ স্বার  করা ছাড়া অন্য কোন দলিলে জেনারেল নিযাজী  স্বাক্ষর  করেছেন?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন জেনারেল নিয়াজী ও জেনারেল অরোরা কোন দলিলে সার  করেছেন এটা জানতে সংশিষ্ট কর্তৃপরে  সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কিনা?
উত্তর : যোগাযোগ করিনি। 
প্রশ্ন : ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজি যখন আত্মসমর্পন করেন তখন যেসব দলিল সম্পাদন করেছেন তার মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ছিল যা আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করেছেন।  সেগুলো হল
হোডকোয়ার্টার্স ইস্টার্ন কমান্ড, এ পর্যন্ত বলার পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপন   করে বলা হয় এটি আসামী পক্ষ প্রদর্শন করেননি ট্রাইব্যুনালে। তাছাড়া উনি ‘যেসব দলিল’ বলে সবকিছু এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছেন বলে আপত্তি করা হয় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে।

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, এটি আপনি কি আমাদের  কাছে জমা দিয়েছেন?  মিজানুল ইসলাম বলেন দিয়েছি। তখন ট্রাইব্যূনালের নির্দেশে  তিনটি ভলিউম আলমারি থেকে বের করা হয়। সেগুলো দেখে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি যে  দলিলের কথা বলছেন তাতো আমাদের সামনে নেই। কাজেই  ডকুমেন্ট না থাকলে সে বিষয়ে সাজেশন দেবেন কিভাবে?
জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, আত্মসমর্পনের সময় এক পৃষ্ঠার একটি ডকুমেন্ট স্বাক্ষরিত হয় তাতে পাকিস্তান আর্মির সৈন্য সংখ্যা, কি কি সম্পদন ছিল তার  উল্লেখ ছিল। আমি সাজেশন দিচ্ছি ইনস্ট্রুমেন্ট অব ডকুমেন্ট এর সাথে আরো কিছু ডকুমেন্ট ছিল সেগুলো  তদন্ত কর্মকর্তা গোপন করছেন। তিনি যদি তা অস্বীকার করেন তাহলে তা প্রমানের দায়িত্ব আমার। কিন্তু আমি কেন সাজেশন দিতে পারবনা? আইনে এ বিষয়ে বাঁধা কোথায়।
তখন ট্র্ইাব্যুনাল বলেন, সাজেশনটা অন্যভাবে দেন। সেটা এভাবে  হতে পারে- ওই ডকুমেন্ট এর সাথে  আরো কিছু ডকুমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছিল আপনি তা জানেন কি-না।
কিন্তু এরপরও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপন করা হলে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সারেন্ডার ডকুমেন্ট এর সাথে যদি অন্য ডকুমেন্ট থাকে এবং তদন্ত কর্মকর্তা তা গোপান করে থাকেন তাহলে এর বেনিফিট আসামী পক্ষকে নিতে দেবেননা কেন?
এরপর ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দিয়ে বলেন, আমরা এ সাজেশনটি দেয়ার অনুমতি দিলাম। এরপর প্রশ্নটি নিম্নলিখিতভাবে করা হয়।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পনের সময় ইনস্ট্র্রুমেন্ট অব সারেন্ডার ডকুমেন্ট ছাড়াও অন্য কিছু দলিল সম্পাদন করা হয়। তার মধ্যে নিম্নলিখিতি বিষয়গুলো ছিল। ১. হেডকোয়ার্টাস (ক) হেডকোয়ার্টার্স ইস্টার্ন কমান্ড, (খ) রিয়ার হেডকোয়ার্টার্স ১৪ ডিভিশন, (গ) হেডকোয়ার্টাস ৩৬ ডিভিশিন, হেডকোয়ার্টার্স ইস্ট পাকিস্তান লজিস্টিক, (ঘ) স্টেশন হেডকোয়ার্টার্স, (ঙ)  হেডকোয়ার্টার্স অফিসার কমান্ডিং ইস্ট পাকিস্তান, (চ) ওয়স্ট পাকিস্তান পুলিশ, (ছ)  হেডকোয়ার্টাস  ডিজি রাজাকার।

২. ট্রুপস রেগুলার এন্ড প্যারা। এর অধীনে ট্যাংকস, আর্টিলারি, ইনফ্যান্ট্রি, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগনাল, সার্ভিস, মুজাহিদ,  রাজাকার, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পুলিশ মিলিয়ে মোট ২৬ হাজার ২৫০ জন সৈন্য সংখ্যা উল্লেখ আছে।
অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম এ বিষয়গুলো উল্লেখ করার পর ট্রাইব্যুনাল বলেন, আলাদা দুটি প্রশ্ন করেন।
প্রশ্ন : উপরোক্ত বিষয়গুলো ডকুমেন্টে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি জেনেও তা পোগন করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, পিডিপ, নেজামে ইসলাম, শান্তি কমিটি, আলবদর, আল শামস, বাহিনীকে অক্সিলিয়ারি ফোর্স  (সহযোগী বাহিনী)  হিসেবে  গণ্য করে পাকিস্তান আর্মির ইস্টার্ন কমান্ড বা সেন্ট্রাল কমান্ড কোন প্রজ্ঞাপন  জারি করেছে এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট আপনি সংগ্রহ করতে পারেননি।
উত্তর : সরাসরি কোন প্রামান্য দলিল আমি তদন্তকালে পাইনি। তবে শান্তি কমিটি, জামায়াতে ইসলাী সারা দেশে রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনী গঠন করে পাকিস্তান আর্মিকে সহায়তা করেছে এবং নিজেরাও অংশগ্রহণ করেছে এর প্রমান আমি তদন্তকালে পেয়েছি।
এ উত্তরের পর দীর্ঘ বিতর্ক চলে আসামী পক্ষ, রাষ্ট্রপক্ষ এবং ট্রাইব্যুনালের মধ্যে।

মিজানুল ইসলাম বলেন, ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারবেন।  সে অধিকার তার আছে। কিন্তু  ফ্যাক্টস এবং দলিল বিষয়ক এ প্রশ্নে এ ব্যাখ্যা প্রাসঙ্গিক নয়। কারণ এটা দলিল। আমার প্রশ্ন হল কোন প্রজ্ঞাপন জারি  বিষয়ে। সেখানে কার্যকলার কেন আসবে। 
ট্রাইব্যুনাল তদন্ত কর্মকর্তা প্রদত্ত ব্যাখ্যাকে প্রাসঙ্গিক আখ্যায়িত করে বলেন, অনেক কাজ হয় যা কাগজে কলমে লেখা  থাকেনা। কিন্তু হয়েছে এটাই সত্য।
মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা বোঝাতে চেয়েছেন শান্তি কমিটি, জামায়াতে ইসলামী সহযোগী বাহিনী হিসেবে  কাগজে কলমে না থাকলেও এদেরকে পাকিস্তান আর্মি ব্যবহার করেছে তাইতো?
ট্রাইব্যুনাল বলেন  ‘হ্যা’।
তখন মিজানুল ইসলাম বলেন, এটাতো তিনি তার জবানবন্দীতে বলেছেন এবং প্রয়োজনে আবারো  রাষ্ট্রপক্ষ তাকে রিইক্সামিন করে বলাতে পারেন। আইন অনুযায়ী সহযোগী বাহিনী গঠনের অধিকার  মুল বাহিনীর। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা বললেন জামায়াতে ইসলামী এসব সহযোগী বাহিনী  গঠন করেছে। আমার আপত্তি সেখানে।
 ট্রাইব্যুনাল বলেন আপনি যা   চেয়েছেন তাতো ওনার উত্তরের প্রথম অংশে আছে। পরের ব্যাখ্যা থাকলে অসুবিধা নেই।
মিজানুল ইসলাম বলেন, হয় এ প্রশ্নটি বাদ দেয়া হোক অথবা প্রশ্ন উত্তর আকারে রেকর্ড করা হোক।
এরপর ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দিয়ে বলেন, ব্যাখ্যাটি এভাবে নেয়া যায় কি-না দেখেন । তাহল “উক্ত সংগঠনগুলো সহযোগী বাহিনী হিসেবে কার করেছে সে প্রমান আমি তদন্তকালে পেয়েছি”
মিজানুল ইসলাম বলেন ঠিক আছে।
প্রশ্ন : জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পনের সময় রাজাকার বাহিনীর কোন সদস্য উপস্থিত ছিল তদন্তকালে আপনি এমন কোন তথ্য পেয়েছেন ?
উত্তর : আমার রেকর্ডে তা খুঁজে পাচ্ছিনা।
প্রশ্ন : আপনি  কি কোন কেস ডায়েরি ছাড়াই সাক্ষ্য দিতে এসেছেন?
উত্তর ধ চিফ প্রসিকিউটরের কাছে যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি তার সবই আমি নিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন : যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন তার মধ্যে কেস ডায়েরি ছিল?
উত্তর :  থাকার কথা না।
প্রশ্ন : আমি বলছি সত্য উদঘটানের ভয়ে আপনি কেস ডায়েরিসহ আরো অনেক ডকুমেন্ট আনেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : অক্সিলিয়ারি ফোর্স এর গঠন সম্পর্কে কোন ধারণা আছে?
উত্তর : পরিস্কার কোন ধারণা নেই। তবে আমি মনে করি যারা মুল বাহিনীকে সহযোগিতা করে তারাই অক্সিলিয়ারি ফোর্স।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পুলিশ বাহিনী আর্মিকে সহযোগিতা করত কি-না।
উত্তর : কিছু কিছু  সদস্য সহযোগিতা করত বলে শুনেছি।
ট্রাইব্যুনাল বলেন,  এখানে তো তাহলে প্রশ্ন এসে যায় বাংলাদেশ সিভিল প্রশাসনও সহযোগিতা করত কি-না। মিজানুল ইসলাম বলেন,  তারা পাকিস্তান আর্মির সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তারা  অক্সিলিয়ারি ফোর্স নয় এটা বোঝাতে চেয়েছি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার গঠনের পর কতজন এসপি, ডিআইজি  আনুগত্য করে?
উত্তর : অনেক। তবে  সঠিক সংখ্যা বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ডিআইজি বা তার উর্ধ্বতন কতজন আনুগত্য করে?
উত্তর : এ  মুহুর্তে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামের মজলিশে শুরায় কতজন পূর্ব পাকিস্তানের সদস্য ছিল?
উত্তর : এ তথ্য আমার কাছে নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান  জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে শুরা ছিল তা জানেন?
উত্তর : ধারণা নেই।
প্রশ্ন : পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলাম কি প্রকৃয়া সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিত সে বিষয়ে ধারণা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের অস্ত্র সরবাহের জন্য পাকিস্তান আর্মির কাছে আবেদন করেছিল এ মর্মে কোন তথ্য আপনার কাছে আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : কি আছে বলেন।
উত্তর : লাহোরে অধ্যাপক গোলাম আযম বলেছেন পূর্ব পাকিস্তানে এখনো  দুষ্কৃতকারী আছে। পূর্ব পাকিস্তানের শান্তিপ্রিয়  নিরীহ জনগনের জন্য অস্ত্রের  প্রয়োজন। এই নিরহী জনগন মানে তার দলের লোক।
মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি নির্দিষ্ট করে বলেছি জামায়াতে ইসলামের সদস্যদের জন্য অস্ত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল কি-না। সেখানে ব্যাখ্যা দিয়ে নিরীহ জনগনকে দলের লোক হিসেবে মেলানোর  কোন সুযোগ নেই। তাহলে পত্রিকার ওই খবরে প্রত্যেকটি শব্দের ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব। সে সুযোগ কি আমি পাব?
ট্রাইুব্যনাল বলেন, তার দলের লোকদের ক্ষেত্রে এটা ইমপ্লাইস। কারণ আপনিতো ওই বক্তব্য খন্ডন করতে চাচ্ছেন।
মিজানুল ইসলম বলেন যেহেতু আমার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর আসেনি  আমি এ প্রশ্ন বাদ দিতে চাচ্ছি।
ট্রাইব্যুনাল বলেন শেষবারের মত আপনাকে এ সুযোগ দেয়া হল। এরপর বুঝে প্রশ্ন করতে হবে যাতে বাদ দিতে না হয়।
মিজানুল ইসলাম বলেন, উত্তরও সোজা দিলে আমাকে বাদ দিতে হবেনা।
প্রশ্ন : মসলিম লীগের কোন সদস্য যারা রাজাকার, শান্তি কমিটি, আলবদরে যোগ দেইনি এমন কাউকে মুসলিম লীগার হিসেবে  পাকিস্তান আর্মি অস্ত্র সরবরাহ করেছে এমন তথ্য পেয়েছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আলবদর কবে কোথায় প্রথম গঠন হয়/
উত্তর : ১৯৭১ সালের ১৬ মে শেরপুরে ৪৭ জন ছাত্রসংঘের কর্মীকে সামরিক প্রশিক্ষন দিয়ে এ বাহিনী গঠন করা হয়।
প্রশ্ন : এ তথ্য আপনি কোথায় পেলেন?
উত্তর : তদন্তে পেয়েছি।
প্রশ্ন  : তদন্তে কিভাবে পেলেন, কেউ কি আপনাকে দিয়েছে?
উত্তর :  আমি তদন্তে পেয়েছি।
প্রশ্ন : এ বিষয়ে কোন প্রামান্য ডকুমেন্ট জব্দ  করেছেন?
উত্তর :  ডকুমেন্ট দেখেছি তবে জব্দগ করিনি।
প্রশ্ন : ডকুমেন্টটির নাম বলতে পারবনে, মানে কোন বই বা পেপার  কার্টি কি-না?
উত্তর : আলবদর বইতে পেয়েছি।
প্রশ্ন : লেখক কে?
উত্তর : সেলিম মনছুর খালেদ।
প্রশ্ন : তিনি কি বাঙ্গালী?
উত্তর : সম্ভবত নয়। কারণ বইটি লাহোর থেকে প্রকাশিত।
প্রশ্ন : এই লেখক ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ছিলেন?
উত্তর : বইয়ে এ বিষয়ে তথ্য নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে তার বয়স কতদ ছিল?
উত্তর : বইয়ে এ বিষয়ে তথ্য নেই।
প্রশ্ন : যে ৪৭ জন ছাত্রসংঘের কর্মী নিয়ে আল বদর বাহিনী গঠনের কথা বলা হয়েছে তদন্তকালে তাদের নাম পরিচয় সনাক্ত করতে পেরেছেন?
উত্তর  : সবার পারিনি। প্রথম কমান্ডারের নাম কামরান, শেরপুর । এছাড়া অন্যকারো নাম পরিচয় পাইনি।
প্রশ্ন : কামরানের অস্তিত্ব আছে?
উত্তর : শুনেছি আছে। তবে বিস্তারিত তদন্ত  করিনি।
প্রশ্ন : তার পেশা কি ছিল?
উত্তর : বিস্তারিত তদন্ত করিনি।
প্রশ্ন : তার বাড়ি শেরপুরের কোন এলাকায়?
উত্তর : বলেছিতো বিস্তারিত তদন্ত  করিনি।
প্রশ্ন : আলবদর তৈরির পর কেন্দ্রীয় কোন কাঠামো তৈরি হয়েছিল কি-না?
উত্তর : কেন্দ্রীয় কাঠামো জিনিসটা কি বুঝলামনা।
প্রশ্ন  : এই যেমন ধরেন পুলিশের আইজি, তারপর এডিশনাল আইজি, ডিআইজ, এসপি এভাবে।
উত্তর : প্রথম ইউনিট ৩১৩ ক্যাডেট। দ্বিতীয় ইউনিট ৩ কোম্পানী। প্রত্যেক কোম্পানীতে ১০৪ জন মুজাহিদ। ১ কোম্পানীতে ৩ প্লাটুন। প্রত্যেক প্লাটুনে ৩৩ সাজী। ১  প্লাটুনে ৩ সেকশন ট্রুপস। প্রত্যেক ট্রুপে ১১ জন আলবদর।
প্রশ্ন : আমার প্রশ্ন ছিল কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কাঠামো।
উত্তর : আমার তদন্তে এ জাতীয় কিছূ পাইনি।
প্রশ্ন : এইযে কাঠামোর কথা বললেন এটা জেলার না মহকুমার?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : এই কাঠামো বিন্যাসের তথ্য কোথায় পেলেন?
উত্তর : আলবদর বইতে।
প্রশ্ন : এই কাঠামো অনুযায়ী কোন ইউনিটের সদস্যদের নাম উল্লেখ ছিল?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ৩১৩ ক্যাডেটের যে প্রথম ইউনিট তার প্রধানের পদবী কি ?
উত্তর : বইয়ে উল্লেখ না থাকায় আমি জানিনা।
প্রশ্ন : ওই ইউনিটসমূহের প্রধানের পদবীর ক্ষেত্রেও একই উত্তর প্রযোজ্য?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ঢাকা জেলা আলবদর কমান্ডারের নাম কি ছিল?
উত্তর : : ঢাকা জেলা আলবদর কমান্ডার হিসেবে আমি কিছু পাইনি। তবে তিনটি গ্রুপের নাম পেয়েছি। একটি শহীদ আব্দুল মালেক কোম্পানী। এর কমান্ডার আর জাহাঙ্গীর। শহীদ আজিজ ভাট্টি কোম্পানী। এর কমান্ডার আব্দুল হক এবং গাজী সালাহউদ্দিন কোম্পানী। এর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান।
প্রশ্ন : এই তিনটি গ্রুপ কোন কোম্পানীর অধীনে ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : আল শামস  কবে গঠন হয়?
উত্তর : সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : এর প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : এ মুহূর্তে  বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : এর কাঠামো কেমন ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন :  এর সদস্যদের  বেতনভাতা কত ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : তাদের পোশাক কেমন ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : বেতনবাতা কে দিত?>
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : প্রশ্ন : মুজাহিদ বাহিনীর ক্ষেত্রেও একই উত্তর  প্রযোজ্য?
উত্তর : হ্যা।

জেরা শেষ করা নিয়ে বিতর্ক : গতকাল  দুপুরের পর ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনাদের রোববার   আরেক সেশন পর্যন্ত সময় দেয়া হল জেরা শেষ করার জন্য। এর  মধ্যে জেরা শেষ করতে হবে। গতকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত জেরার পর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মোট ৫২৩টি প্রদর্শণী মার্ক করা হয়েছে। এগুলো সবই হল  পেপারকাটিং,  প্রেসরিলিজ, নিউজধমী। এর সংখ্যা ৫২৩টি। এরপরও তার পুরো মামলা নির্ভর করা হয়েছে।  এর মধ্যে মাত্র ৭টি প্রদর্শনী বিষয়ে এ পর্যন্ত  আমরা জেরা করতে পেরেছি। ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে  একদম প্রাথমিক দাবী হল সব মৌলিক  ডকুমেন্টের ওপর জেরা করা। আর মাত্র একটি সেশনে জেরা  শেষ করা কোন অবস্থায়ই সম্ভব নয়। এটি আমি আমি আমার আসামীর প্রতি আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবনা। তিনি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন। আসামীর প্রতি সুবিচার করা সম্ভব  হবেনা। সবকিছুর উদ্দেশ্য হল ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। আমার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের  সারা দেশের সব অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। সব কিছুর মাস্টারমাইন্ড বলা হয়েছে।   আমরা যতক্ষন পর্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিষয়ে জেরা করি ততক্ষন পর্যন্ত জেরা করতে দেয়া উচিত।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, বিষয়টি প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক  নয়। বিষয়টি হল  আমরা টাইম ফ্রেমিং পদ্ধতি অনুসরন করছি। সব ক্ষেত্রেই এটি মেনে চলতে হবে। তদন্ত কর্মকর্তা মোট ৫ সেশন জবানবন্দী দিয়েছেন।  সে অনুযায়ী আপনারা ১১ সেশন পেলেও ১২ সেশন জেরা করতেদ দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি পর্যাপ্ত জেরা হয়েছে। সাতটি প্রদর্শনী জেরা করতে যাদেত আপনাদের ১২ সেশন লাগে তাহলে ৫২৩টি প্রদর্শনী জেরা করতে কত দিন লাগবে এ প্রশ্ন আপনার কাছে আমরা। জবাব দেন।

বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা যেসব ডকুমেন্ট দাখিল করেছেন সেসব রিপোর্ট তিনি করেননি । তিনি তার কর্তৃপক্ষও নন। কাজেই ওসব রিপোর্ট বিষয়ে আপনারা আরগুমেন্টে বলতে পারবেন। বিচার থেকে খালাস দেয়াও ন্যায়  বিচার নয়, দোষী সাব্যস্ত করাও ন্যায় বিচার নয়।  জাস্টিস ইজ জাস্টিস। দ্রুত বিচার পাওয়াও আসামীর অধিকার। আসামীকে কাস্টডিতে রেখে বিচার  চলছে। কাজেই  দ্রুত বিচার করে তাকে নির্দোষ প্রমান করাও আপনাদের দায়িত্ব।  জাস্টিস ডিলে জাস্টিস ডিনাইড তাও  তো সত্য।

তাজুল ইসলাম বলেন কতদিন লাগবে সেটা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হল ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। সেজন্য যদি সময় লাগে সময় দিতে হবে। ৪০ বছর আগের ঘটনার বিচার হচ্ছে। ২ বছর ধরে তারা তদন্ত করেছেন। আর মাত্র ৬টি দিন আমাদের দিলে বিচার বিলম্বিত হয়ে যাবে? যদি তাই হল তাহলে আমাদের বলার কিছু নেই।  তদন্ত কর্মকর্তা ৫  সেশন জবানবন্দী দিয়েছেন সেটা যেমন সত্য তেমনি তিনি ৫সেশনে  কি ডুকমেন্ট হাজির করেছেন তাও বিবেচনা করে দেখার বিষয়।
মিজানুল ইসলাম বলেন তিনি মাত্র এক মিনিটে ৩১ ঘন্টার ভিডিও ডকুমেন্ট হাজির করেছেন। কাজেই আপনাদের হিসেবে এক মিনিটের জবানবন্দীর জন্য অন্তন্ত ৩১ ঘন্টা সময় দরকার জেরায়।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক বলেন রোববার এক সেশনে শেষ করার প্রস্তুতি নিয়ে আসেন। তারপর আমরা দেখব।