বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১২

reason behind Zahir Ahmed's resign

মতভিন্নতাই কাল হয়ে দাড়াল জহির আহমেদের জন্য!

মেহেদী হাসান
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ থেকে বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ তার পদত্যাগের কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে এটিকে একটি সাধারন অজুহাত হিসেবেই মনে করছেন অনেকে।

তার পদত্যাগের কারণ নিয়ে বিভিন্নমুখী  আলোচনা চলছে। পদত্যাগের দিনও তিনি বিচার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। কাজেই শারীরিক কারনে তিনি পদত্যাগ করেছেন এটি মানতে পারছেননা অনেকে। তার পায়ে কিছু সমস্যা থাকলেও তা পদত্যাগ করার মত বড়  কোন কারণ নয় বলে জানিয়েছে  সূত্র।
তাহলে কি তিনি নিজে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন না তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে  এটি নিয়েই মূলত চলছে আলোচনা।
ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ ভিন্নমত পোষন করেছেন, ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন যা অনেক সময় ওপেন কোর্টে প্রকাশও পেয়েছে। সূত্র জানিয়েছে এটিই তার জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছিল। এ কারনেই তাকে চলে যেতে হয়েছে।
সূত্র জানায় এছাড়া আরো বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন ইস্যুতে  তিনি ভিন্ন  অবস্থান নিতে চেয়েছেন । এ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল পর্দার আড়ালে। যার অনেক কিছু ওপেন কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়নি অনেক সময়।  ট্রাইব্যুনালের সাম্প্রতিক বিভিন্ন আদেশের সময় তিনি ওপেন কোর্টে  ভিন্নমত পোষন না করলেও বেশ কিছু বিষয় তিনি মেনে নিতে পারেননি বলে জানা গেছে। মাওলানা সাঈদীর মামলার ক্ষেত্রে আলোচিত  ১৫ সাক্ষী বিষয়ে রিভিউ আদেশের দিন তিনি কোর্টে অনুপস্থিত থাকেন। এজাতীয় আরো কিছূ বিষয়ে তার ভিন্ন অবস্থানের ফলে   অস্বস্তিতে ফেলে দেয় অনেককে। কেউ কেউ রুষ্ট  হন তার প্রতি।  সরকারের ভেতরেও তার বিষয়ে অসন্তোষ ছিল। সূত্র জানায় এসব কারনে তার ওপর পদত্যাগের জন্য চাপ সৃষ্টি  করা হয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল থেকে  এবং শেষ পর্যন্ত তিনি সরে দাড়ান।

বিচারক জহির আহমেদের পদত্যাগের বিষয়ে ডিফেন্স টিমের   পক্ষ থেকে  স্পষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে তার  পদত্যাগের পেছনে  আইন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা রয়েছে। সরকার তার  অনুগত ও আস্থাভাজন বিচারক নিয়োগ করে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে কুগিত করতে চায়।
ডিফেন্স টিমের অভিযোগ করেছে  সরকার বিচারক এ কে এম জহির আহমেদকে চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। জহির আহমেদ একজন মেধাবী, প্রাজ্ঞ ও নিরপে বিচারক ছিলেন এবং মামলা পরিচালনার েেত্র প সমুহের অধিকার সংরণের ব্যাপারে আপোষহীন ও সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। মামলা পরিচালনা কালে রাষ্ট্রপরে নানা রকম অযৌক্তিক ও আইন বহির্ভূত কর্মকান্ডের ব্যাপারে তিনি শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। আদালত কে রাষ্ট্রপরে বিভিন্ন বেআইনি পদেেপর ব্যাপারে একমত না হওয়ায় রাষ্ট্রপ প্রকাশ্যেই তার উপর ােভ ও উষ্মা প্রকাশ করেছিল।  এরই ধারাবাহিকতায় তাকে চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।  তার পদত্যাগের ঘটনা ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমের উপরে রাষ্ট্রপরে হস্তেেপর নগ্ন বহি:প্রকাশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে  ডিফেন্স টিম। 

ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে বিভিন্ন বিষয়ে বিচারক এ কে এম জহির আহমেদের সাথে অপর বিচারপতিদের মতভিন্নতা ছিল।   সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর  একটি আবেদনের আদেশে তিনি ভিন্ন আদেশ দিয়েছেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন  সাঈদীর মামলার  ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়  বিভিন্ন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের অপর দুই  বিচারপতির সাথে  তার  মতভিন্নতা  দেখা দেয় এবং একবার এ নিয়ে কোর্টে বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।  যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক  নেতাদের বিরুদ্ধে  চার্জ  শুনানীর সময় বিচারক জহির আহমেদের বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের যেসব প্রশ্ন করেছেন তার সন্তোষজন ব্যাখ্যা অনেক সময় পাননি তিনি। জহির আহমেদের এসব প্রশ্নে অনেক সময় রাষ্ট্রপক্ষের কোন কোন আইনজীবী বিব্রতকর  অবস্থায় পড়েছেন। 

চলতি বছর ১৩ মার্চ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দায়ের করা ছয়টি আবেদন বাতিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে।  এর মধ্যে একটি আবেদন ছিল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মামলা থেকে অব্যাহতি  প্রদান সংক্রান্ত। ওই  দিন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী  ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেননা। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে  তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি বিষয়ক আবেদনটি খারিজ করা বিষয়ে  অপর দুই বিচারপতির সাথে বিচারক জহির আহমেদ ভিন্নমত পোষন করে  ভিন্ন আদেশ   দেন। আদেশে তিনি  বলেন, আমি মনে করি এ আবেদনটির আদেশ তার উপস্থিতিতে হওয়া দরকার ছিল।  এটি একটি প্রতিষ্ঠিত রীতি।   

১২ জুলাই মাওলানা সাঈদীর  মামলায় আলোচিত ১৫ সাক্ষী বিষয়ে দায়ের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল। গুরুত্বপূর্ণ এই আদেশের দিন বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ ট্রাইব্যুনালে অনুপস্থিত থাকেন।

গত ১৯ জুলাই মাওলানা সাঈদীর মামলায়  তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে  জেরার এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতির মধ্যে বেশ মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। একটি  ইস্যুতে বিচারক একেএম জহির আহমেদের সাথে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক ভিন্ন মত পোষন করায় এ মতপার্থক্য দেখা দেয়। বিচারক জহির আহমেদ নিজেই তদন্ত কর্মকর্তাকে পরপর তিনটি প্রশ্ন করেন। এ প্রশ্ন  করা নিয়ে অপর দুই বিচারপতির সাথে জহির আহমেদের ভিন্নমত পোষন করেন।  শেষে বিচারপতি নিজামুল হক এবং আনোয়ারুল হক দুজন বিচারপতি একদিকে থাকায় এবং তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায়  জহির আহমেদের করা একটি প্রশ্ন জেরা থেকে বাদ দেয়া হয়।

জহির আহমেদ যখন  তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেন তখন বিচারপতি নিজামুল হক বেশ ক্ষোভের সাথে  জহির আহমেদকে বলেন, আপনি দয়া করে অর্ডারটা পড়েন। আপনি উত্তেজিত হয়ে এমনসব প্রশ্ন করছেন যাতে মনে হয় এ বিষয়ে কোন অর্ডারই নেই। আপনার  তৃতীয় প্রশ্নটি অর্ডার অনুযায়ী হয়নি।

গতরাতে দৈনিক নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে বিচারক জহির আহমেদের সাথে   যোগাযোগ করা হলে তিনি আবারো বলেন অসুস্থতার কারনে তিনি পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ এবং কোর্টে বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশ্যে তার ভিন্নমত পোষন করা  বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জহির আহমেদ  বলেন, যেকোন বিষয়ে ভিন্ন মত পোষন করা যেকো বিচারক/বিচারপতির স্বাধীনতা  এবং অধিকার রয়েছে। যেকোন বিষয়ে যে কেউ ভিন্ন মত পোষন করতেই পারেন। আমিও সেভাবে কোন কোন ক্ষেত্রে ভিন্নমত প্রকাশ করেছি। আমি সারা জীবন ন্যায় বিচারের পক্ষে ছিলাম। ন্যায় বিচারের পক্ষে কাজ করেছি।

ট্রাইব্যুনাল -১ বর্তমানে জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতের বর্তমান আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি জামায়াতের  ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে  এ ট্রাইব্যুনালের আদেশে।
















মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১২

govt forced Zahir Ahmed to resign-defence team


বিচার প্রক্রিয়া কুক্ষিগত করতে জহির আহমেদকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে-ডিফেন্স টিম

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিফেন্স টিমের  (যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতৃবৃন্দের পক্ষে আইনজীবীদের টিম) পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে সরকার ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমকে কুক্ষিগত করার জন্য বিচারক এ কে এম জহির আহমেদকে চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগে বাধ্য করেছে।

ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে গতকাল বিচারক জহির আহমেদ পদত্যাগের পর ডিফেন্স টিমের পক্ষ থেকে লিখিত বিবৃতি প্রদান করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয় “ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জনাব এ কে এম জহির আহমেদ পদত্যাগ করায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স টিম গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ডিফেন্স টিম মনে করে যে, পদত্যাগের এই ঘটনা বিচারকার্যের উপর মারাত্মক তিকর প্রভাব ফেলবে এবং ন্যায়বিচার বিঘিœত হবে। ডিফেন্স টিম আবো মনে করে যে, বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ একজন মেধাবী, প্রাজ্ঞ ও নিরপে বিচারক ছিলেন এবং মামলা পরিচালনার েেত্র প সমুহের অধিকার সংরণের ব্যাপারে আপোষহীন ও সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। মামলা পরিচালনা কালে রাষ্ট্রপরে নানা রকম অযৌক্তিক ও আইন বহির্ভূত কর্মকান্ডের ব্যাপারে তিনি শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। আদালত কে রাষ্ট্রপরে বিভিন্ন বেআইনি পদেেপর ব্যাপারে একমত না হওয়ায় রাষ্ট্রপ প্রকাশ্যেই তার উপর ােভ ও উষ্মা প্রকাশ করেছিল। আমরা মনে করি যে, এরই ধারাবাহিকতায় তাকে চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তার এই পদত্যাগের ঘটনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমের উপরে রাষ্ট্রপরে হস্তেেপর নগ্ন বহি:প্রকাশ।

ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে তাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রপতির কাছেই তার পদত্যাগ পত্র জমা দেয়ার কথা কিন্তু তা না করে তিনি আইন মন্ত্রনালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, তার পদত্যগের পিছনে আইন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা রয়েছে।

আমরা আরো মনে করি যে, কোন কোন মামলার বিচারকার্য যখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে সে মুহুর্তে বিচারকের পদত্যাগ আসামী পকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করবে। ইতিপূর্বে এই ট্রাইব্যুনাল থেকে আরো একজন বিচারককে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-১ শুধুমাত্র একজনই বিচারক থাকলেন যিনি শুরু থেকেই এই মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট।

আমরা আশংকা করছি যে সরকার বিচারক জনাব এ কে এম জহির আহমেদ এর স্থলে সরকারের অনুগত ও আস্থাভাজন বিচারক নিয়োগ করে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে কুগিত করতে চায়।

ডিফেন্স টিম আরো মনে করে যে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একজন সম্পূর্ণ দলীয়প্রভাবমুক্ত, সৎ, সাহসী এবং হাইকোর্ট বিভাগে অন্তত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিচারককে এই শুন্য পদে নিয়োগ না করে যদি কোন দলীয় ব্যক্তিকে এই পদে নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে চলমান বিচার প্রক্রিয়া একটি প্রহসনে পরিণত হবে।”

Judge Zahir Ahmed resigned from tribunal

ট্রাইব্যুনাল থেকে বিচারক জহির আহমেদের  পদত্যাগ

মেহেদী হাসান
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে বিচারক  এ কে এম জহির আহমেদ পদত্যাগ করেছেন। গতকাল দুপুরের পর  তিনি  পদত্যাগ পত্র জমা দেন।

দুপুর দুইটার  সময় ট্রাইব্যুনালে তার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বিচারক এ কে এম জহির আহমেদের কাছে দৈনিক নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে ফোন করে এর কারণ  জানতে চাইলে তিনি কারণ  অসুস্থতার কথা জানান। সরকারের পক্ষ থেকে পদত্যাগের জন্য আপনার ওপর  চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে মর্মে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটি সত্য নয়। আমি বেশ কিছুদিন   ধরে অসুস্থ তা আপনারা জানেন। আমার পায়ে সমস্যা।  অসুস্থতার কারনে স্বাভাবিক কাজকর্ম  চালিয়ে যাওয়া আমার জন্য বেশ সমস্যা হচ্ছিল।   সে কারনেই পদত্যাগ করেছি। অন্য আর কিছু না।

গতকাল  দুপুর একটা পর্যন্ত বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজে অংশগ্রহণ করেন। দুপুর একটার সামান্য আগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে দশম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ শেষ হয়। এরপর একটার সময় কোর্টে  দুপুরের বিরতি ঘোষনা করা হয়।  সূত্র জানায়  এসময় বিচারক  এ কে এম জহির আহমেদ   ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে যান আইন মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে। আইনমন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগে তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দেন।  এরপর দুপুর দুইটায় ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের মাঝে খবর ছড়িয়ে পড়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন।

ট্রাইব্যুনালে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের কেউ কেউ তখনই  বিচারক জহির আহমেদের  সাথে কথা বলে তার পদত্যাগের ব্যাপারে নিশ্চিত হন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল রেজিস্ট্রার নাসির উদ্দিন আহমদের  কাছে বারবার সাংবাদিকরা খবরের সত্যতা বিষয়ে জানার জন্য গেলেও তিনি এ বিষয়ে কোন কিছু না জানিয়ে বলেন আমিও আপনাদের  কাছ থেকে  শুনেছি।

দুপুর দুইটার  সময় পুনরায় কোর্ট বসে এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১১ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ শুরু হয়।  জহির আহমেদ তখন অনুপস্থিত ছিলেন।

ডিফেন্স টিমের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে  বিচারক  জহির আহমেদকে  চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ডিফেন্স টিমের  বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ কে এম জহির আহমেদ একজন মেধাবী, প্রাজ্ঞ ও নিরপে বিচারক ছিলেন এবং মামলা পরিচালনার েেত্র প সমুহের অধিকার সংরণের ব্যাপারে আপোষহীন ও সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। মামলা পরিচালনা কালে রাষ্ট্রপরে নানা রকম অযৌক্তিক ও আইন বহির্ভূত কর্মকান্ডের ব্যাপারে তিনি শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। আদালত কে রাষ্ট্রপরে বিভিন্ন বেআইনি পদেেপর ব্যাপারে একমত না হওয়ায় রাষ্ট্রপ প্রকাশ্যেই তার উপর ােভ ও উষ্মা প্রকাশ করেছিল বিভিন্ন সময়।  আমরা আশংকা করছি যে,

সরকার বিচারক জনাব এ কে এম জহির আহমেদ এর স্থলে সরকারের অনুগত ও আস্থাভাজন বিচারক নিয়োগ করে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে কুগিত করতে চায়।

বিচারক জহির আহমেদ অসুস্থতার কারনে রমজান মাসে মাঝে মাঝে একঘন্টা দেরিতে কোর্টে আসতেন।   পায়ে সমস্যার কারনে তিনি থেরাপি নিতেন এবং এ কারনে কোর্টে দেরিতে আসতেন ।

ট্রাইব্যুনালে বিভিন্ন সময় জহির আহমেদের মতভিন্নতা :
ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে বিভিন্ন বিষয়ে বিচারক এ কে এম জহির আহমেদের সাথে অপর বিচারপতিদের মতভিন্নতা ছিল।   সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর  একটি আবেদনের আদেশে তিনি ভিন্ন আদেশ দিয়েছেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন  সাঈদীর মামলার  ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়  বিভিন্ন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের অপর দুই  বিচারপতির সাথে  তার  মতভিন্নতা  দেখা দেয় এবং একবার এ নিয়ে কোর্টে বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এসব বিষয় নিয়ে সরকারের ভেতরে তার ব্যাপারে অসন্তোষ ছিল বলে জানা গেছে।

গত ১৩ মার্চ বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দায়ের করা ছয়টি আবেদন বাতিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে।  ওই দিন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী  ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেননা। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে যে ছয়টি আবেদন খারিজ করা হয় তার মধ্যে একটি ছিল তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি  প্রদান  বিষয়ে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে  তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি বিষয়ক আবেদনটি খারিজ করা বিষয়ে ভিন্নমত পোষন করে  বিচারক একেএম জহির আহমেদ ভিন্ন আদেশ দেন। 

ট্রাইব্যুনাল ছয়টি আবেদনই বাতিল করে দিয়ে আদেশ দেয়ার পর  বিচারক জহির আহমেদ বেঞ্চ অফিসারকে ডাকেন ডিকটেশন নেয়ার জন্য।   আদেশে   তিনি বলেন,  চেয়ারম্যানের প্রতি সম্মান রেখে আমি একটি আবেদন বাতিল করা বিষয়ে ভিন্নমত পোষন করছি। মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন বাতিল বিষয়ে তিনি বলেন,  আমি মনে করি অভিযুক্ত’র উপস্থিতিতে  এটি বাতিল করা উচিত ছিল। এটি প্রতিষ্ঠিত নীতি। কেন তার আবেদনটি বাতিল করা হল এটি জানা  অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার। আমি মনে করি  এই আবেদনটি ছাড়া অন্য আবেদনগুলো তার অনুপস্থিতিতে বাতিল করা যেতে পারত।  এ আদেনটি স্থগিত রাখা যেতে পারত। 

গত ১২ জুলাই মাওলানা সাঈদীর  মামলায় আলোচিত ১৫ সাক্ষী বিষয়ে দায়ের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল। গুরুত্বপূর্ণ এই আদেশের দিন বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ ট্রাইব্যুনালে অনুপস্থিত থাকেন।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অনুপস্থিত ১৫ সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে গত ২৯ মার্চ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ বিষয়ে পরবর্তীতে মাওলানা সাঈদীর  আইনজীবীরা তথ্য প্রমান দাখিল করে ১৫ সাক্ষী বিষয়ক আদেশ বাতিল করে রিভিউ আবেদন  দাখিল করেছিলেন।

গত ১৯ জুলাই মাওলানা সাঈদীর মামলায়  তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে  জেরার এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতির মধ্যে বেশ মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। একটি  ইস্যুতে বিচারক একেএম জহির আহমেদের সাথে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক ভিন্ন মত পোষন করায় এ মতপার্থক্য দেখা দেয়। শেষে বিচারপতি নিজামুল হক এবং আনোয়ারুল


হক দুজন একদিকে থাকায় এবং তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায়  জহির আহমেদের করা একটি প্রশ্ন জেরা থেকে বাদ দেয়া হয়।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম  তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে প্রশ্ন করেন “আপনি নিজে গনেশকে হাজিরের জন্য প্রসিকিউশন বরাবর কোন প্রসেস ইস্যুর আবেদন করেছিলেন কি-না।”
তদন্ত কর্মকর্তা জবাব দেন “আমার নোটে নেই” বলে।
তখন বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন, অন্যসব প্রশ্নের মত এটাতেও নোটে নেই বললেতো হবেনা। আপনাকে বলতে হবে আপনি কোন আবেদন করেছিলেন কি-না। ইয়েস অর নো। এটা তো নোটে থাকা না থাকার বিষয় নয়।

এখান থেকে মতপাথ্যর্ক্যরে সূত্রপাত। এরপর বিচারক জহির আহমেদ   তদন্ত কমকর্তাতে বলেন, আপনি আমার প্রশ্নের জবাব দেন। আমাকে কিয়ার করেন। তিনি নিজে তদন্ত কর্মকর্তাকে পরপর  তিনটি প্রশ্ন করেন। তৃতীয় প্রশ্নের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারাতি নিজামুল হক আপত্তি উত্থাপন করেন। 
বিচারপতি নিজামুল হক  জহির আহমেদকে বলেন, আপনি দয়া করে অর্ডারটা পড়েন। আপনি উত্তেজিত হয়ে এমনসব প্রশ্ন করছেন যাতে মনে হয় এ বিষয়ে কোন অর্ডার নেই। তৃতীয় প্রশ্নটি অর্ডার অনুযায়ী হয়নি। শেষে  তৃতীয় প্রশ্নটি বাদ দেয়া হয়।

এছাড়া  অপর একদিন বিচারক  জহির আহমেদ কোর্ট চলাকালে বলেন, আমি ওপেন কোর্টে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষন করলাম।  পরে আবার তিনি ভিন্নমত পোষন করার বিষয়টি প্রত্যাহার করে নেন।

এছাড়া  বিভিন্ন আসামীর বিরুদ্ধে চার্জশিটের ওপর শুনানী, অভিযোগ বিষয়ে বিচারপতি এ কে এম জহির আহমেদের বিভিন্ন প্রশ্ন রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন আইনজীবীকে   বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি করেছে বিভিন্ন সময়।

২০১০ সালে  মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে  তিন সদস্যের প্রথম ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। বিচারপতি নিজামুল হককে  এর চেয়ারম্যান করা হয়।  এই ট্রাইব্যুনালে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ  এ কে এম জহির আহমেদ নিয়োগ পান। এছাড়া হাইকোর্ট থেকে   বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির আরেক সদস্য বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। চলতি বছর  ২৫ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের  যাত্রা শুরু হলে প্রথম ট্রাইব্যুনালের সদস্য  বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান করা হয়। এরপর প্রথম ট্রাইব্যুনালে তার স্থলে নিয়োগ দেয়া হয় হাইকোর্টের বিচারপতি আনোয়ারুল হককে।

সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১২

আদালত অবমাননার অভিযোগ:
সাজেদা চৌধুরীকে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ

জাতীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আমলে নিয়ে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সাজেদা চৌধুরীকে তার বিরুদ্ধে আনা আদালত অবমাননার অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আজ  তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

গত ২৭ জুলাই রাজধানীতে এক সভায় সাজেদা চৌধুরী বলেছিলেন, রাজাকাররা আইন মেনে একাত্তরে নির্যাতন করেনি। কাজেই এত আইন দেখলে হবে না। আগেই দু/একটাকে ঝুলিয়ে দিলে ওদের আইন নিয়ে কপচানি বন্ধ হবে।
ওই বক্তব্য আদালতের নজরে এনে গত ৫ আগস্ট সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। আদালত ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে সাজেদা চৌধুরীকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আইনজীবীর মাধ্যমেও তার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। ব্যাখ্যা পাওয়ার পর উভয় পরে শুনানির পরবর্তী আদেশে দেবে।

শুনানিতে বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর বলেন, আমরা আদালত অবমাননার বিষয়ে তার বক্তব্য শুনব। এখানে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার বক্তব্য শোনা উচিত।

ডিফেন্স কাউন্সেল অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, সাজেদা চৌধুরীর বক্তব্যে আদালত অবমাননা হয়েছে। তিনি আদালতকে ডিক্টেড করার চেষ্টা করেছেন। তিনি  সরকারি দলের শীর্ষ নেতা ও সংসদ উপনেতা। পরে এক ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, সাজেদা চৌধুরী গত ২৭ জুলাই একটা বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধপরাধের বিচারে ইনের দরাক কি, আগেই দু/একটাকে ঝুলিয়ে দিলে ওদের আইন নিয়ে কপচানি বন্ধ হবে। তাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি দলের একজন শীর্ষ নেতার এ ধরনের মন্তব্যে অভিযুক্তদের ন্যায়বিচার পাওয়া ব্যাহত হবে।
গত ২৭ জুলাই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাজেদা চৌধুরীর বক্তব্য রাখেন।  সভায় সাজেদা চৌধুরী বলেন, (দৈনিক আমার দেশে প্রতিবেদন) রাজাকাররা আইন মেনে একাত্তরে নির্যাতন করেনি। কাজেই এত আইন দেখলে হবে না। বসে বসে আইন কপচালে হবে না। আগেই দু/একটাকে ঝুলিয়ে দিলে ওদের আইন নিয়ে কপচানি বন্ধ হবে।
অনেকেই প্রশ্ন তোলে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে এত আইন-কানুনের কী দরকার? তারা (স্বাধীনতা বিরোধীরা) যখন অত্যাচার করেছে, তখন কোন আইন দেখে করেছিল? আইন দেখে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করিনি।
বিচারপতিদের সাথে শাহরিয়ার কবিরের সাক্ষাৎ
ট্রাইব্যুনাল-২ বিচারপতিদের সরে দাড়ানোর আবেদন খারিজ
জামায়াতের কেউ সাক্ষাৎ চাইলে কি আপনারা সাক্ষাৎ দিবেন? শুনানীতে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের প্রশ্ন

মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিচার কার্যক্রম থেকে ট্রাইব্যুনাল ২ এর বিচারপতিদের নিজ থেকে সরে দাড়ানোর আবেদন শুনানী শেষে খারিজ করে  দেয়া হয়েছে।

গত ১২ আগস্ট ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, প্রজন্ম ৭১ এর  সভাপতি শাহীন রেজা নূর  ট্রাইব্যুনালের (২) চেয়ারম্যান  এবং অপর দুই সদস্য বিচারপতির  সাথে সাক্ষাৎ করেন।

শাহরিয়ার কবির এবং শাহীন রেজা নূর  আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিরুদ্ধে  রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী।।  সাক্ষী কর্তৃক এভাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের সাথে সাক্ষাতের ফলে  বিচারপতিদের নিরপক্ষেতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আসামীর ন্যায় বিচার না পাবার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারনে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের   আর এ মামলার বিচার কার্যক্রম এবং শুনানিতে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিচারপতিদের সরে দাড়ানোর দাবি জানিয়ে গত  ২৬ আগস্ট  ডিফেন্স টিমের পক্ষ থেকে একটি  আবেদন  করা হয়। 

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারপতি শাহীনুর ইসলামের প্রতি সরে দাড়ানোর এ আবেদন করা হয়।

গতকাল  ডিফেন্স টিমের প্রধান  আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আবেদনের পক্ষে শুনানীতে অংশ নেন। রাষ্ট্র  পক্ষে সৈয়দ হায়দার আলী শুনানী করেন। উভয় পক্ষের শুনানী শেষে আবেদনটি  নামঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের উক্ত তিনজন বিচারপতি শুনানী গ্রহণ করেন।

আবদেন বাতিলের আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, শাহরিয়ার কবির এবং শাহীন রেজা নূর আলী আহসান মুজাহিদের  বিরুদ্ধে সাক্ষী তা সত্য। কিন্তু তারা আমাদের সাথে সাক্ষাতে মামলার কোন কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেননি। তারা ট্রাইব্যুনালের বিবিন্ন সমস্যা যেমন অবকাঠামোগত সমস্যা, নিরাপত্তা সমস্যা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করেছেন । তাদের এ সাক্ষাদের মাধ্যমে পক্ষপাতিত্ব বা নিরপেক্ষতা লঙ্ঘনের কোন ঘটনা ঘটেনি বা কোন পক্ষের স্বার্থও রক্ষা করা হয়নি।

ট্রাইব্যুনালে শুনানী শেষে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সামনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন,  সাক্ষীদের সাথে বিচারপতিদের সাক্ষাতের পর ট্রাইব্যুনাল -২ এ আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিচার কাজ আর চলতে পারেনা। বিচারপতিদের সাথে দুজন সাক্ষীর  বৈঠকের পর মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে তাদের নিরপেক্ষতার ব্যাপারে। কারণ শাহরিয়ার কবির এক পক্ষের নেতা। এ ঘটনার পর বিচারপতিদের এ মামলার বিচার কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ এ হস্তান্তর করা যায়।

আবেদন বাতিলের পর ডিফেন্স টিমের সদস্য অ্যাভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন,  ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির এবং শাহীন রেজা নূর আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিরুদ্ধে দুজন সাক্ষী। সাক্ষীর সাথে বিচারপতিরা একান্তে বৈঠক করেছেন। যে মুহুর্তে তারা এ কাজ করেছেন সে মুহূর্তে তাদের নিরপেক্ষতা দৃশ্যত চলে গেছে। তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তারা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য শপথ গ্রহণ করেছেন। বিচারপতিদের একটি আচরনবিধি আছে। সাক্ষীর সাথে এভাবে দেখা করার ঘটনা তাদের আচরন বিধি এবং শপথের পরিপন্থী কাজ। আমরা তাদের আদেশ মানতে বাধ্য। কিন্তু আমরা মনে করি  আবেদন বাতিল করার আদেশ একটি ভুল আদেশ। আমরা কতটা ন্যায় বিচার পাব তা নিয়ে আমাদের সংশয়  আছে।

শুনানীতে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের যুক্তি:
বিচারপতিদের সাথে সাক্ষীর সাক্ষাতের ঘটনায় কিভাবে তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং এ কাজ বিচারপতিদের জন্য  পক্ষপাতদুষ্ট  ঘটনার শামীল হয়েছে সে বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধান, বিচারপতিদের আচরনবিধি, বাংলাদেশের  উচ্চ আদালত এবং  বিশ্বের বিভিন্ন বিচার কার্যক্রমের  নজীর তুলে ধরেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, হাইকোর্টে শত শত ঘটনা আছে যেখানে সামান্য ব্যাপারে বিচারপতিরা বিব্রত বোধ করে সরে দাড়িয়েছেন  বিভিন্ন মামলা থেকে। অন্য বেঞ্চে সে মামলার শুনানী হয়েছে। আর এখানে যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তা তার থেকে অনেক গুরুতর। আমরা  আজ এখানে যে আবেদন করেছি তা বিচার ব্যবস্থার মান মর্যাদা রক্ষার জন্য। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করনে সহায়তার জন্য। সবার ওপরে হল আপনাদের বিবেক এবং  আদালতের মর্যাদা। আমরা কোর্টের সে মর্যাদা রক্ষা করতে চাই। আমরা মনে করি আপনাদের আর এ মামলার কাজে অংশ নেয়া উচিত নয়।
শাহরিয়ার কবির একজন এক্টিভিস্ট হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করে আসছে। এ বিষয়ে তার অসংখ্য লেখা লেখি আছে। আলী আহসান মো: মুজাহিদসহ বর্তমানে বন্দী জামায়াত নেতৃবৃন্দকে তিনি যুদ্ধাপরাধী আখ্যায়িত   করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে। তাদের বিরুদ্ধে তিনি  তথ্য সরবরাহ করেছেন এ ট্রাইব্যুনালে। সে তথ্যের ওপর নির্ভর করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি। এভাবে তিনি এ মামলার একটি পক্ষ। তিনি এ মামলার সাক্ষী এবং ইতোমধ্যে আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিরুদ্ধে  সাক্ষ্য দিয়েছেন। কাজেই এ ঘটনার পর আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে ।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন,  আপনারা কি জামায়াতের এমন কোন নেতাকে সাক্ষাৎ দিবেন যিনি এ বিচার বন্ধের দাবি করে আসছে?
ট্রাইব্যুনাল বলেন, এরকম কেউ কি চেষ্টা করেছে?
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আমি একশ ভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি এরকম কেউ সাক্ষাৎ চাইলে আপনারা সাক্ষাৎ দেবেননা এবং দেয়া  উচিতও হবেনা।



বিচারপতিদের আচরনবিধির ৩(৬)(এ) ধারা তুলে ধরে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন,  কোন বিচারপতির  নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন  দেখা দিলে  বিচারপতি মামলার কাজে নিজেকে অযোগ্য বিবেচিত হবেন। 
ব্যারিস্টার রাজ্জাক  আচরনবিধির আরো অনেকগুলো ধারার তুলে ধরে বলেন, বিচারপতিদের এমন কোন কাজ করা উচিত নয় যাতে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয় আসামীর মনে।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, বিচার শুরুর অনেক আগে থেকেই শাহরিয়ার কবির আলী আহসান মো: মুজাহিদকে একজন প্রথম সারির যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে। ১৬ জনকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে গণতদন্ত কমিশন রিপোর্ট তৈরিতে তিনি সহায়তা করেছেন। সে কমিশন রিপোর্ট তিনি ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছেন এবং রাষ্ট্রপক্ষ সে রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে। এভাবে শাহরিয়ার কবির এ মামলার একটি পক্ষে পরিণত হয়েছেন এবং সর্বোপরি তিনি একজন সাক্ষী।
১২ আগস্ট তারা আপনাদের সাথে দেখা করে গনমাধ্যমের কাছে  বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্যে  শাহরিয়ার কবির   যুদ্ধাপরাধের  দায়ে আটক ১০ জন নেতার বিচার ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ করার আশা প্রকাশ করেছেন।   কাজেই সাক্ষীর সাথে বিচারপতির বৈঠকের পর তাদের আর এ বিচার কাজে অংশ নেয়া উচিত নয়।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, প্রথম ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের বিরুদ্ধে অনাস্থার অভিযোগ উঠলে অন্য দুজন সদস্য বিচারপতি তার শুনানী শেষে রায় দেন। সেখানে তারা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিচারপতির বিবেকের ওপর ছেড়ে দেন। আমরা আজ  এখানে আপনাদের শুভ বিবেচনার আশা করছি।
তিনি বলেন ট্রাইব্যুনাল -১ এ একজন সাক্ষীর সাথে বিচারপতিরা সাক্ষাৎ করেছিলেন। কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামী পক্ষের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

শুনানীতে আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার ইহসান এ সিদ্দিকী, শিশির মো: মনির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

misbahur's statement against me are totally false-barrister rajjak

আমাকে জড়িয়ে মিছবাহুর রহমানের বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা-ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক

নিজস্ব প্রতিবেদক
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে  ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে আলবদর সদস্য উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন।  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক যুদ্ধাপরাধের দায়ে বর্তমানে আটক জামায়াত নেতৃবৃন্দের পক্ষে নিযুক্ত প্রধান আইনজীবী। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র এই আইনজীবী তাকে জড়িয়ে মিছবাহুর রহমানের    বক্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে লিখিত বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন,
“মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মামলায় আজ (রোববার) রাষ্ট্রপ জনৈক মিসবাহুর রহমান চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে স¦্যা প্রদানের জন্য হাজির করেন। তিনি তার দীর্ঘ জবান বন্দীতে মাওলানা নিজামী স¤পর্কে শুধুমাত্র একটি বাক্য বলেছেনঃ নিজামী আল-বদরের প্রধান ছিলেন। কিন্তুু তিনি তার দীর্ঘ জবান বন্দীতে আমার বিরুদ্ধে অনেক বিষোদগার করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ১৯৭৪ সালে লন্ডনে আমি তাঁেক একটি বৈঠকে ডেকে পাঠাই যে বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে অধ্যাপক গোলাম আযম এবং পাকিস—ানের তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর আমীর মিয়া তোফায়েল মোহাম¥দ উপ¯িহত ছিলেন। তিনি আরো অভিযোগ করেছেন যে, ঐ বৈঠকে আমি আল-বদরের সদস্য ছিলাম মর্মে স¦ীকারোক্তি দিয়েছি। তিনি আরো অভিযোগ করেছেন যে, আমি নেপাল এবং অন্যান্য দেশ হয়ে লন্ডনে গিয়েছি। এই সব অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
আশ্চর্যের বিষয় জনাব চৌধুরী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবান বন্দী দিয়েছেন তাতে আমার নাম পর্যন্ত উল্লেখ নেই। অতীতে তিনি আমার বিরুদ্ধে মানহানীকর বক্তব্য দিলে আমি তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করি। কিন্তুু আশ্চর্যের বিষয় যে, তার অতীতের বক্তব্যের সাথে আজকের বক্তব্যের কোন মিল নেই। মুক্তিযুদ্ধের উপরে সরকারী প্রকাশনা সহ শত-শত  বই প্রকাশিত হয়েছে। এসব কোন বইয়ে আমাকে আল-বদর সদস্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। লনীয় যে, বিগত ৪১ বছরে জনাব চৗধুরী ছাড়া বাংলাদেশের কোন নাগরিক আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের কোন অভিযোগ উত্থাপন করেননি। প্রতিবারই জনাব চৌধুরী আমার বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছেন।
এটা পরিষ্কার যে, জনাব চৌধুরীর বক্তব্যের আসল উদ্দেশ্য হচেছ আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করা। ডিফেন্স টীমের প্রধান হিসাবে আমার পেশাগত দায়িত¦ পালনে বাধাগ্র¯হ করা।”

prosecution witness misbahur rahman chy deposited against lawyer instead of accused

আসামীর বদলে তার আইনজীবীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন  মিছবাহুর রহমান চৌধুরী
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে গতকাল ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। প্রায় দুই ঘন্টার জবানবন্দীতে তিনি মাওলানা নিজামী সম্পর্কে মাত্র দুটি বাক্য বলেছেন।  তিনি তার দীর্ঘ জবানবন্দীতে জামায়াত নেতৃবৃন্দের পক্ষে নিযুক্ত প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছেন।

মাওলানা নিজামী সম্পর্কে তিনি তার জবানবন্দীতে  বলেন, নিজামী আল বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। এছাড়া অপর এক স্থানে একটি চিঠির বরাতে তিনি মাওলানা নিজামীর নাম উল্লেখ করেন। এর বাইরে তিনি মাওলানা নিজামী সম্পর্কে জবানবন্দীতে কিছু বলেননি।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ  জানিয়েছেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক। জবানবন্দীর পরপরই ব্যারিস্টার রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের কাছে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।  তিনি বলেন,  জনাব মিছবাহুর রহমান ধানবানতে এসে শিবের গীত গেয়েছেন। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে এবং ডিফেন্স টিমের প্রধান হিসেবে আমাকে আমার পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা গ্রস্ত করার জন্য তাকে দিয়ে এ ধরনের বক্তব্য দেয়ানো হতে পারে।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক সম্পর্কে যা বলেছেন মিছবাহুর রহমান:
মিছবাহুর রহমান চৌধুীর জানান  স্বাধীনতা যুদ্ধের  সময় তার পিতা তাকে লন্ডন পাঠিয়ে দেন।  এরপর তিনি লন্ডনে স্কুলে এবং  কলেজে পড়াশুনা করেন। মিছবাহুর রহমান  জানান  লন্ডনে থাকা অবস্থায় ইয়াং মুসলিম অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি হন তিনি। এ সংগঠন করার সময় একদিন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক (তখন ব্যারিস্টার হননি) আমার সাথে এসে সাক্ষাৎ করেন। উনি আমাকে  ইসলাম পছন্দ লোকদের একটি বৈঠকে যোগ দেয়ার অনুরোধ করেন। বৈঠকের ঠিকানা বলেন, ৫৭+২।  আমি এবং তৎকালীন  ইয়াং মুসলিম অর্গানাইজেশনের সভাপতি, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ জেড শাহ তার অনুরোধে বৈঠকে যাই। গিয়ে দেখি  সেখানে অধ্যাপক গোলাম আযম, তৎকালীন পাকিস্তান জামায়াতের আমীর মিয়া তোফায়েল, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দীন সেখানে উপস্থিত। এ ধরনের একটি বৈঠকে আমাদের ডাকার জন্য আমি ব্যারিস্টার রাজ্জাকের ওপর মনোুন্ন হই। সেখানে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের কিছু  বক্তব্যে জানতে পারি তিনি নিজে  ১৯৭১ সালে আল বদর সদস্য ছিলেন। ব্যারিস্টার রাজ্জাক আল বদর সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালের  ডিসেম্বর পর্যন্ত তার প্রতি অর্পিত  দায়িত্ব পালন করেছেন।  পাকিস্তানী সৈনিকদের সহায়তা করেন। এরপর ভারত-নেপাল   হয়ে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে তিনি লন্ডনে চলে যান।

তার  একটি ভাঙ্গা রেকর্ড আছে :
মিছবাহুর রহমানের জবানবন্দী শেষে ব্যারিস্টার রাজ্জাক  সাংবাদিকদের বলেন, লন্ডনে বৈঠকে ৫৭+২ নামে  যে স্থানের নাম তিনি বলেছেন এরকম কোন জায়গার নাম আমার জানা নেই। আমাকে জড়িয়ে লন্ডনে বৈঠক সম্পর্কে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন  সেখানে আমার নাম তিনি একবারও উচ্চারন করেননি। আরো মজার বিষয় হল তিনি ২০০৮ এবং ২০০৯ সালেও আমার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানেও তিনি আমার বিরুদ্ধে লন্ডন বৈঠকের গল্প বলেননি। আমি যদি লন্ডন বৈঠকে নিজেকে আল বদর সদস্য স্বীকার করে কোন বক্তব্য দিতাম তা তিনি কেন গত ৩৮ বছরে একবারও বলেননি। ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে কেন বলেননি। ১৯৭১ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪০  বছরে একমাত্র  মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ছাড়া আমার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের কোন একজন ব্যাক্তি এ ধরনের কোন অভিযোগ করেননি। মুক্তিযুদ্ধের ওপর শত শত বই  লেখা হয়েছে। তার কোথাও আমার নাম নেই। নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে  সাক্ষ্য দিতে এসে তিনি আমার বিরুদ্ধে লম্বা  বক্তব্য দিয়েছেন। নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে মাত্র দুটি বাক্য বলেছেন।  তিনি আমার বিরুদ্ধে  এ নিয়ে যতবার বক্তব্য দিয়েছেন প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন গল্প হাজির করেছেন।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর একটি ভাঙ্গা রেকর্ড আছে। সেটি তিনি মাঝে মাঝে বাজান।  তিনি কি ছিলেন এবং তার চরিত্র কি তা দেশের মানুষ জানে। আমি বলতে চাইনা।  আমি একটি সফল ডিফেন্স টিম গঠন করেছি। সেটা যাতে চালাতে না পারি সেজন্য আমার  ভাব মর্যাদা ুন্ন করার জন্য উদ্দেশ্য মূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের বক্তব্য দেয়া হয়েছে। আমাকে জড়িয়ে তার এ   ধরনের মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্যর  তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর জবানবন্দী : (সংক্ষিপ্ত)
আমার নাম মিজবাহুর রহমান চৌধুরী, পিতার নাম-মৃত রহমান চৌধুরী, মাতার নাম- মৃত শাসি খানম, বয়স ৫৭ বছর।

বর্তমানে আমি বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান। আমি ১৯৬২ সালে মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই। ঐখানে পড়াবস্থায় জনাব সিরাজুল ইসলাম মতলিব যিনি তৎকালীন মৌলভীবাজার সাংগঠনিক জেলার ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ।  তার আহ্বানে পাকিস্তান শান্তি ফৌজে আমি যোগদান করি এবং একই সঙ্গে ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যপদ গ্রহণ করি।

আমি যতদিন ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মী ছিলাম ততদিন আমি মনোযোগ সহকারে এর দায়িত্ব পালন করেছি। ইসলামী ছাত্র সংঘ একটি নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন ছিল। এই সংগঠনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল এবং মাওলানা মওদূদী সাহেবের বই পড়ানো হতো। ইসলামী ছাত্র সংঘ জামায়াতে ইসলামীর একটি অংগ সংগঠন ছিল এবং জামায়াতের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত ছিল। যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এ দেশের মানুষের উপর ঝাপাইয়া পড়ে তখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ বা জামায়াতে ইসলামী সংগঠন হিসাবে ইহার প্রতিবাদ বা বিরোধীতা করবে। কিন্তু তাহারা তার প্রতিবাদ বা বিরোধীতা করে নাই। ১৯৭১ ইংরেজীর আগষ্ট মাসে সিরাজুল ইসলাম মতলিব আমার মৌলভীবাজারের শহরের বাড়িতে একাধিকবার আসেন ।  আমারে না পাইয়া তিনি হাতের লেখা একটি চিঠি রাখিয়া চলিয়া যান। সেই চিঠিতে তিনি আমাকে সম্মোধন করেন মেজবাহ ভাই হিসাবে। সেই চিঠির সারমর্ম হলো - ইসলামী ছাত্রসংঘ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, ১০ আগষ্ট ১৯৭১ সালের মধ্যে ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীরা আল-বদর বাহিনীতে যোগদান করিবে এবং ঐ চিঠিতে আমাকেও নির্দেশ করেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মৌলভীবাজার কমান্ডার মেজর ফখরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে সখান থেকে নিয়োগপত্র নিয়ে আসতে ।  চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, তদানিন্তন পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি জনাব মতিউর রহমান নিজামী, তাহাকে তিনি শুধু নিজামী ভাই বলে উল্লেখ করেছিলেন, আমি যদি আলবদর বাহিনীতে যোগদান করি তাহলে নিজামী সাহেব ব্যক্তিগতভাবে খুব খুশী হবেন এবং ভারতের দালালদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আল্লাহর পথে সৈনীকদের কর্তব্য।  যাহারা বদরবাহিনীতে যোগদিবেন না তারা ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মী হিসাবে বিবেচিত হবে না। তখন আমি ঐ চিঠিটি আমার আব্বাকে দেখাই। উনি মুসলীম লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন তবে জামায়াতের রাজনীতিকে পছন্দ করতেন না। চিঠি দেখে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আমাকে ঢাকা নিয়ে এসে লন্ডন পাঠিয়ে দেন।

১৯৭৪ সালে আমি লন্ডনের বাকিংহাম কলেজে ভর্তি হই এবং ঐ কলেজে অধ্যায়নের সময় আমি সেখানকার মুসলিম স্টুডেন্ট মুভমেন্ট নামে সংগঠনের সদস্যভূক্ত হই ।  পরবর্তীতে আমি উহার সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। উক্ত সংগঠনের সদস্য থাকাকালে আমি সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশা ফয়সালের আমন্ত্রণে আমি সৌদি আরব সফর করি। সৌদি আরবে বাদশার সাথে সাক্ষাতের জন্য যেয়ে দেখি ওখানে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব এবং তার ভাই অধ্যাপক গোলাম মোয়াজ্জেম সাহেব অন্য একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে সেখানে উপস্থিত আছেন। ওখানে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কিছু কথা বলেছিলেন যাহা আমি প্রতিবাদ করি। তিনি বলেছিলেন যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এবং পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশের অধিকাংশ মসজিদ ভেঙে ফেলেছে এবং মাদ্রাসা থেকে ধর্মীয় শিক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে এবং তেলাওয়াতের জন্য দেশে কোরআন শরীফও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন যে, তার সাথে ইসলামী আন্দোলন করতো এমন চল্লিশ হাজার লোককে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করেছে। এই ১০ হাজার পরিবার পূনর্বাসনের জন্য, কুরআন শরীফ বিতরণের জন্য, মসজিদ-মাদ্রাসা পুন:নির্মাণের জন্য, মাদ্রাসা শিক্ষা পুন:চালু করণের জন্য সৌদি বাদশার নিকট অধ্যাপক গোলাম আযম আর্থিক সাহায্য কামনা করেন। অধ্যাপক গোলাম আযমের সাক্ষাতের পর আমি যখন বাদশাহর সাথে সাক্ষাত করি তখন আমি বাদশাহকে এই মর্মে অবগত করি যে, মুক্তিযোদ্ধারা সিংহভাগ মুসলমান এবং তাদের দ্বারা কোন মসজিদ, মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই এবং ধর্মীয় শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয় নাই। সৌদি আরব থেকে লন্ডনে ফেরার পরে আমরা একটি নতুন যুব সংগঠন তৈরি করি যার নাম ছিল ইয়াং মুসলিম অর্গানাইজেশন, যার প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী ছিলাম আমি। এই সংগঠন করাকালীন সময়ে ইসলামী ছাত্র সংঘের একজন নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক (ঐ সময় তিনি ব্যারিস্টার হন নাই) আমার সংগে দেখা করেন। তিনি আমাকে ইসলাম পছন্দ করে এমন কিছু লোকজনের সঙ্গে



একটি বৈঠকে আসার জন্য অনুরোধ করেন এবং বৈঠকের ঠিকানা বলেন- ৫৭+২। আমি এবং তৎকালীন ইয়াং মুসলিম অর্গানাইজেশনের সভাপতি বর্তমানে ঢাবির অধ্যাপক এ. জেড. শাহ ঐ বৈঠকে যোগদান করি। যেখানে গিয়ে আমরা দেখি অধ্যাপক গোলাম আযম এবং পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর মিয়া তোফায়েল এবং আরেকজন বিখ্যাত যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈন উদ্দিন, ড. আবদুল আজিজ সেখানে উপস্থিত আছেন। আমরা এই ধরনের মিটিং-এ আমাদের ডাকার জন্য বিশেষ করে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক-এর উপর অসন্তুষ্ট হই এবং তার কিছু বক্তব্য শুনে আরও অসন্তুষ্ট হই। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক-এর ঐ বক্তব্য থেকে জানতে পারি যে, তিনি নিজেও আলবদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন....।
 .....
আমি এবং এ. জেড শাহ ঐ বৈঠক ত্যাগ করে চলে আসি। আমি একজন ইসলামী রাজনীতিপক্ষী লোক তবে সেই থেকে জামায়াতে ইসলামীর কার্যকলাপ লক্ষ্য করে এবং বিভিন্ন কাগজপত্র দেখে শুনে আমি মনে করি জামায়াতে ইসলামী ইসলাম বিরোধী এবং মানবতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট দল। ১৯৪১ সনে হায়দরাবাদের জন্ম হওয়ার পর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এই দলের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এবং গবেষণা করে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা এবং মানবতাবিরোধী একটি ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল যারা ধর্মের ছদ্মাবরণে বিভিন্ন কুৎসতি কাজ করে থাকে। তাদের বিরুদ্ধাবাদীদের দমনের জন্য মিথ্যাচার, অত্যাচার, গোপন হত্যা এ ধরনের পথ তারা অবলম্বন করে। ধর্মের কথা বলে বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা ব্যয় করে এবং সেই অর্থের সাহায্যে এমন কোন হীন কাজ নাই যা তারা করে নাই। রাজাকার ও আল শামস বাহিনী যেভাবে গঠিত হয়েছিল আলবদর বাহিনী সেভাবে গঠিত হয় নাই। আলবদর বাহিনী ইসলামী ছাত্র সংঘ কর্মীদের দ্বারাই গঠন করা হয়েছিল। যার নেতৃত্বে ছিল মতিউর রহমান নিজামী এবং তারপরে ছিল আলী আহসান মো: মুজাহিদ সাহেব। এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য পাক সেনাবাহিনী দ্বারা সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।


জবানবন্দী শেষে মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর জেরা শুরু হয়। তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর  আহমদ আনসারী। এসময় ট্রাইব্যুনালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, মতিউর রহমান আকন্দ,  ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার ইহসান এ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির  প্রমুখ।

জেরা (সংক্ষিপ্ত)
প্রশ্ন : সিরাজল ইসলাম মতলিব সাহেবের চিঠি পাবার আগে আপনার পাসপোর্ট ছিলনা।
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : ভিসা  কিভাবে পান?
উত্তর : লন্ডন যাবার সময় আমার ডিপেডেন্ট ভিসা ছিল।
প্রশ্ন : আপনার বাবা ১৯৭১ সালে লন্ডন গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ হওয়ার পরে আপনি  বাংলাদেশ কিম্বা অন্য কোন দেশের পাসপোর্ট গ্রহন  করেননি।
উত্তর : করিনাই।
প্রশ্ন :  ১৯৭২ সালে লন্ডন  যাবার পরে ১৯৭৬ সালের পূর্বে আপনি  বাংলাদেশে  আসেননি।
উত্তর : আসিনি।
প্রশ্ন :  আপনি কোন দেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গেলেন?
উত্তর :  বাংলাদেশের। 
প্রশ্ন : ১৯৭৫ সালের ২৬/২৮ মার্চের দিকেও আপনি  বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে আরেকবার সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ।
উত্তর : হ্যা।
এরপর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী  বলেন, ১৯৭৫ সালে আমি সৌদি আরবের বাদশাহর আমন্ত্রনে গিয়েছিলাম, তখন সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় নাই বিধায় ভিসা হতো না। আমাকে সৌদি এয়ারপোর্টে আমন্ত্রন পত্রের ভিত্তিতে বিশেষ ভিসা দেয়া হয়। বিশেষ ভিসাতে আমাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেখানো হয়েছিল। ১৯৭২ সালে জানুয়ারী মাসে ইংল্যান্ড যাওয়ার সময় আমাকে একটি পারমিট দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে।  তখন কাউকেই পাসপোর্ট দেয়া হত না। ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে আমি লন্ডন থেকে প্রথম সৌদি আরবে যাই। ঐ সময়ে আমি সৌদি আরবে ১৫/২০ দিন ছিলাম। ১৯৭৪ সালে আগস্ট মাসের পরে এবং ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসের পূর্বে আমি হজ্ব করার জন্য সৌদি আরবে যাই। হজ্বের সঠিক মাস আমি বলতে পারবো না, তবে ১৯৭৪ সালের শেষের দিকে হয়েছিল।

প্রশ্ন ঃ ১৯৭১ সালে প্রথম দিকে নিখিল  পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সেক্রেটারী কে ছিল?
উত্তর ঃ ঐ সময়ে ইসলামী ছাত্র সংঘ বলতে আমরা পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘ বুঝতাম, যার জেনারেল সেক্রেটারী ছিলেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। পাকিস্তানী ইসলামী ছাত্র সংঘকে আমরা জমিয়াতে তালাবায়ে আরাবীয়া হিসেবে জানতাম।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মিছবাহুর রহমান বলেন, মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ১৯৭১ সালে নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘ এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত মতিউর রহমান নিজামী সাহেব জমিয়াতে তলাবায়ে আরাবীয়ার সভাপতি ছিলেন সেটা আমি জানি, কিন্তু ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিলেন কিনা সেটা আমি নিশ্চিত নই।


বুধবার, ২২ আগস্ট, ২০১২

ATM Azharul Islam arrested for War Crimes Allegation

এবার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার এটিএম আজহারুল ইসলাম

জামায়াতে  ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে  ১৯৭১ সালে  মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরপরই  আজ তাকে তার মগবাজারস্থ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

১৯৭১ সালে  যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে  (১)  আজ   রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতারের আবেদন জানানো হয়। তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে    হত্যা, গণহত্যা,  নির্যাতন, মানবতাবিরোধী অপরাধে  নেতৃত্ব দান এবং সহয়তার অভিযোগ আনা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাকে গ্রেফতারের  আবেদনে বল হয় তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্তে তার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেপতার করা না হলে তিনি দেশে বিদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচার নস্যাতের জন্য চেষ্টা চলাবেন।  এ অবস্থায়  তাকে গ্রেফতার  করা না হলে তদন্ত  কাজ বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিঘিœত হবে।  ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আবেদন গ্রহণ করে সকাল ১১টার দিকে তার বিরুদ্ধে  গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয় পুলিশের প্রতি।

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর দুপুর দুইটার পর রমনা থানা পুলিশ এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করে ঢাকা  মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)  অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরপরই এটিএম আজহারুল ইসলামের বাসার সামনে বিপুল সংখ্যাক পুলিশ অবস্থান নেয়।
আগামীকাল   বৃহষ্পতিবার তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে বলে জানিয়েছেন রমনা অঞ্চল পুলিশের ডিসি নুরুল ইসলাম।  গ্রেফতার করে প্রিজন ভ্যানে ওঠানোর সময়  এটিএম আজহারুল ইসলাম বাসার সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন তাকে  মিথ্যা অভিযোগে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি সকলের নিকট দোয়ার আবেদন করেছেন।
কাকরাইলে  পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন  মামলায় ১০ মাস ২৭ দিন  বন্দী থাকার পর গত ১৬ আগস্ট বৃহষ্পতিবার এটিএম আজহারুল ইসলাম জামিনে মুক্তি পান। 

আজ  সকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নূরজাহান বেগম মুক্তা  ট্রাইব্যুনালে এটিএম আজহারুল ইসলামকে  গ্রেফতারের  আবেদন জানান।   বন্দী জামায়াত নেতাতের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ফরিদ উদ্দিন  খান বলেন সকালে কোর্ট শেষ হবার সামান্য  পূর্বে তিনি খবর পেয়ে ট্রাইব্যুনালে পৌছেন। তিনি ছাড়া তখন অভিযুক্ত পক্ষে কোন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেননা।
এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতারের আবেদন জানানো হয়েছে এ খবরের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনালের সামনে বিপুল সংখ্যাক সাংবাদিক উপস্থিত হন আজ। জামায়াত নেতাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, ফরিদ উদ্দিন খান, ব্যারিস্টার ইহসান এ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার নাজিব মুমিন, , শিশির মো: মনির, রেজাউল করিম প্রমুখ আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে এসে উপস্থিত হন। কোর্ট বসার অপক্ষোয় থাকেন তারা। গতকাল  আর এটিএম আজহারুল ইসলমাকে ট্রাইব্যুনালে  হাজির করা হচ্ছেনা এ সংবাদ নিশ্চিত  হবার পর  সংবাদিক এবং আইনজীবীদের অনেকে বিকাল চারটা  পর্যন্ত অপেক্ষা করে চলে যান।

গ্রেফতারের পূর্বে বাসার সামনের দৃশ্য
সকাল থেকেই  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নেতা এটিএম আজাহারুল ইসলামের বড় মগবাজারের ৯১/বি (এফ টাওয়ার) বাসভবনের সামনে জড়ো হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা সেখানে অবস্থান করতে থাকে। উৎসুক লোকজন এসময় ভিড় করে রাস্তায়। ডিএমপি’র রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসময় ভবনের মূল গেইটের সামনে অবস্থান নেন। এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা ওই ভবনের চারদিকে ঘেরাও করে রাখে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারের ব্যাপারে আদালতে নির্দেশ হয়েছে খবর পেয়ে সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রায়ের কপি তাদের হাতে পৌঁছলেই এটিএম আজহারকে গ্রেফতার করবেন বলে জানান।
এদিকে আদালতের নির্দেশের কপি প্রথমে রমনা থানায় পৌঁছে। পরে ২টার কিছু আগে রায়ের কপি নিয়ে মগবাজারে যায় রমনা থানা পুলিশ। দুপুর ২টার দিকে রায়ের কপি নিয়ে ডিসি নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একদল এফ টাওয়ারের ৫ তলায় এটিএম আজহারের বাসায় প্রবেশ করেন। পুলিশ কর্মকর্তা এসময় এটিএম আজহারের সঙ্গে গ্রেফতার নিয়ে রায়ের ব্যাপারে কথা বলেন। এক পর্যায় তিনি প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার সাথে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। এসময় এটিএম আজহার এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই সরকারের পতন আন্দোলনের মাধ্যমেই ঘটবে। তিনি বলেন, জন সমর্থনই প্রমান করবে যে, সরকারের এসব সাজানো নাটক।
দুপুর ২টা ২৫ মিনিটের দিকে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারকে পুলিশের একটি প্রিজনভ্যানে তুলে মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর কার্যালয়ে রওনা হয়। ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে প্রিজনভ্যানটি ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করে। ডিএমপি’র রমনা জোনের ডিসি নুরুল ইসলাম এসময় সাংবাদিকদের জানান, আদালতের রাযের কপি হাতে পৌছার পরেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। তিনি বলেন, আদালতের রায় অনুযায়ী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এটিএম আজহারকে আদালতে হাজির করা হবে। তিনি জানান, এটিএম আজহার জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই পুলিশের নজরদারীতে ছিলেন। ডিএমপি’র মিডিয়া ও কমিউনিকেশন  বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, এটিএম আজহারকে আজ ডিবি কার্যালয়ে রাখা হবে। আজ বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে।

বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১২

statement of another 46 witness against sayedee received

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আরো এক সাক্ষীর জবানবন্দী অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে  গ্রহণ
ক্স    সাঈদীকে  হাজির করা হল ট্রাইব্যুনালে
ক্স    তদন্ত কর্মকর্তার জেরা দুইদিন বাড়ল


মেহেদী হাসান
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অনুপস্থিত ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্য থেকে আরো একজন সাক্ষীর জবানবন্দী তার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করল ট্রাইব্যুনাল (১)।  অর্থাৎ তদন্তকালে সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা তার অনুপস্থিতিতে  সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হল। 

নতুন যে সাক্ষীর জবানবন্দী তার অনুপস্থিতিতে  সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হল তার নাম মুকুন্দ চক্রবর্তী। তিনি  গত ২১ এপ্রিল মারা যাওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তার জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের আবেদন জানায়।  গতকাল বুধবার  এ আবেদন গ্রহণ করে আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ  হায়দার আলী ট্রাইব্যুনালে আবেদন উপস্থাপন করেন।

এ নিয়ে মোট ১৬ জন সাক্ষীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে  গ্রহণ করা হল। এর আগে গত ২৯ মার্চ এক আদেশের মাধ্যমে ১৫ জনের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় তাদের অনুপস্থিতিতে।

গত ২০ মার্চ   রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন জমা দেয়া হয়। তাতে উল্লেখ করা হয় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষী আদালতে আদৌ হাজির করা তাদের পক্ষে  সম্ভব নয়। তাই ওই ৪৬ জন সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে  তদন্তকালে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা যেন তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় এটি ছিল আবেদনের বিষয়।

৪৬ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যেসব কারণ  জানানো হয়েছিল  তার মধ্যে রয়েছে সাক্ষীর অসুস্থতা, সাক্ষী খুজে না পাওয়া, সাক্ষী নিখোঁজ  হয়ে যাওয়া এবং মাওলানা সাঈদীর পক্ষাবলম্বনকারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কর্তৃক বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি এবং হুমকি দেয়ার কারনে সাক্ষীদের বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়া। ২৯ মার্চ ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে এই ৪৬ জনের মধ্য থেকে ১৫ জনের আবেদন গ্রহণ করে এবং ৩১ জনের আবেদন  বাতিল করেন। গতকাল মুকুন্দ চক্রবর্তী নামে যে সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হল তার নাম ছিল ৪৬ জনের তালিকায় ৩৫ নম্বরে এবং বাতিল হওয়া ৩১ জনের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।

আবেদনের বিরোধীতায়  মিজানুল ইসলামের যুক্তি :
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম মুকুন্দ চক্রবর্তীর আবেদন গ্রহনের বিরোধীতা করে ট্রাইব্যুনালে বলেন, ৪৬ জন সাক্ষীর  জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের তারা আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে প্রথম ১৯ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে তারা যে কারণ দেখিয়েছে সেগুলো হল  একজন সাক্ষীর অসুস্থতা,  চার জন  নিখোঁজ হয়ে যাওয়া।  বাকী  ৬ থেকে ১৯ নং  ক্রমিকে বর্ণিত ১৪ জন সাক্ষী

বিষয়ে বলা হয়েছে আসামীর পক্ষাবলম্বনকারী  অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি এবং হুমকির কারনে তারা আত্মগোপনে চলে গেছে, তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

এই ৪৬ জন সাক্ষী হাজির  করতে না পারা বিষয়ে  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যে কারণ দেখানো হয়েছে  সে বিষয়ে আপনারা ১৫ জনের বিষয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদের  জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন। বাকী ৩১ জনের বিষয়ে যে কারণ দেখানো হয়েছে তাতে আপনারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিধায় তাদের জবানবন্দী আপনারা গ্রহণ না করে বাতিল করেছেন। আজ মুকুন্দ চক্রবর্তী নামে যে সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহনের আবেদন তারা করেছেন তার নাম ছিল ওই বাতিল হওয়া ৩১ জনের মধ্যে। ৪৬ জনের তালিকায়   তার নাম ছিল ৩৫ নম্বর সিরিয়ালে। তাকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কোন ধরনের ভয়ভীতি দেখানো, খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা বা সে আত্মগোপনে  চলে গেয়ে এ জাতীয় কোন কারণ তখন   হাজির করতে পারেনি তখন। সুতরাং যার আবেদন তখন  গ্রহণ করা আপনারা যৌক্তিক মনে করেননি এখন সে  মারা যাবার পরে কি কারনে তার  জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা যৌক্তিক হতে পারে?

এসময় ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন, তখন যে কারনে তার আবেদন গ্রহণ করা হয়নি সেটি এখন আর বিদ্যমান নেই।  এখন সে মারা গেছে। এর চেয়ে বড় কারণ আর নেই। আইনের ১৯.২ ধারায় সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার যে কারণ তার মধ্যে এক নম্বর কারণ বলা হয়েছে সাক্ষী যদি মারা যায়।  এ সাক্ষী মারা গেছে। এখন তার জবানবন্দী গ্রহনের অসুবিধা কোথায়?

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামকে লক্ষ্য করে বলেন, আপনার নিকট আমার প্রশ্ন,  প্রথমে গ্রহণ করা হয়নি বলে পরে মারা গেলেও গ্রহণ করা যাবেনা এ বিষয়ে আইনে কি কোন বাঁধা  আছে?

জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, এই সাক্ষীর জবানবন্দী যদি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হত তাহলে তো তারা     শুরুতে যখন ৩১ জনের আবেদন বাতিল করা হয়েছে তখনই এদের হাজির করার চেষ্টা করত। কিন্তু তারা তো আজ পর্যন্ত  মুকুন্দ চক্রবর্তীকে কখনো হাজির করার কোন চেষ্টাই করেনি। কাজেই তার জবানবন্দী যে গুরুত্বপূর্ণ এ  দাবির যৌক্তিকতা কোথায়?
শুনানী শেষে ট্রাইব্যুনাল মুকুন্দ চক্রবর্তীর জবানবন্দী গ্রহণ করে আদেশ দেন।
এদিকে ৪৬ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা গত ১৭ এবং ১৯ মার্চ  যে দুটি রিপোর্ট প্রসিকিউশন বরাবার দাখিল করেছিল তার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জেরার করার  দাবি জানিয়ে  আবেদন করেছিলেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। সে আবেদন খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল।

মাওলানা সাঈদীকে হাজির করা হল  ট্রাইব্যুনালে:
প্রায় দুই মাস পর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ তিনি কোর্টে হাজির ছিলেন গত ১৩ জুন।

গতকাল  সকালে মাওলানা সাঈদীকে হুইল চেয়ারে করে  ট্রাইব্যুনালের কোর্ট রুমে হাজির করা হয়। তাকে কাঠ গড়ায় না উঠিয়ে কোর্টরুমের আইনজীবীদের  বেঞ্চের পাশে হুইল চেয়ারে বসানো হয়। কিছুক্ষন পরে তিনি অসুস্থ বোধ করায় বেঞ্চে বসেন।  এরপর বেঞ্চে শুয়ে   পড়েন মাওলানা সাঈদী। তখন  ট্রাইব্যুনাল  বলেন, তাকে কোর্টরুমে রাখার দরকার নেই। কারাগারে নিয়ে যাওয়া হোক।

গত ১৩ জুন  পিতার বিচার উপলক্ষে ট্রাইব্যুনালে  হাজির ছিলেন  মাওলানা সাঈদীর বড় ছেলে রাফিক বিন সাঈদী । কোর্ট চলাকালীন অবস্থায় তিনি হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত হন।  সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর ওইদিনই মারা যান তিনি। মাওলানা সাঈদীও ওইদিন কোর্টে  উপস্থিত ছিলেন।  পরেরদিন  প্যারোলে মুক্তির মাধ্যমে ছেলের জানাজা পড়িয়ে মতিঝিল বয়েজ স্কুল মাঠ থেকে কারাগারে নিয়ে যাবার পরপরই বুকে ব্যথা অনুভব করায় দ্রুত মাওলানা সাঈদীকে হাসপাতালে নেয়া হয়।  দীর্ঘদিন বারডেমের ইব্রাহিম কার্ডিয়ান সেন্টার, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল  তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। কারাগারে নেয়ার  পূর্বে হাজত খানায় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী এবং তিন ছেলে তার সাথে সাক্ষাত করেন।

তদন্ত কর্মকর্তার জেরা দুইদিন বাড়ল: মাওলানা সাঈদীর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলালউদ্দিনকে জেরার জন্য আরো দুই দিন সময় বাড়ানো হয়েছে। গতকাল  তার জেরা শেষ হবার জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু  অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম স্বাস্থ্যগত কারণ  দেখিয়ে  একটার পর আর জেরা করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এবং জেরার আরো কিছু বিষয় বাকী থাকায় আরো কিছু সময় চান। এ প্রেক্ষিতে এবং নতুন আরেক সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার কারনে আগামী রবি  এবং সোমবার আরো দুই দিন জেরার জন্য সময় বাড়িয় দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ক আদেশে বলেছেন এরপর আর সময় বাড়ানো হবেনা।

সকালে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, আবু বকর সিদ্দিক।

জেরা  (সংক্ষিপ্ত) :
প্রশ্ন : পিরোজপুরের যেসব সাক্ষী অনুপস্থিত তাদের কারো বাড়িতেই আপনি প্রসেস (সমন) নিয়ে যাননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : কার কার বাড়ি গিয়েছিলেন তাহলে?
উত্তর : নাম বলতে পারছিনা। তবে সাক্ষীদের হাজির করার কিছু প্রসেস (সমন) আমার কাছে ছিল।
প্রশ্ন : আসামীর পক্ষাবলম্বনকারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি এবং ভয়ভীতির কারনে ৬ হতে ১৯ নং সাক্ষী আত্মগেপান করেছে বিধায় তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে ৪৬ সাক্ষী  বিষয়ক দরখাস্তে।  সাঈদীর পক্ষের সন্ত্রাসীরা  অস্ত্র নিয়ে বাড়ি  বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছে এটি দেখেছে এমন কতজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী পেয়েছেন?
উত্তর : ১৫/১৬ জন সাক্ষী আছে। তবে ঐ মুহুর্তে তাদের হাতে অস্ত্র ছিলনা। তবে তারা চিহ্নিত স্থানীয় অস্ত্রধারী লোক  এবং ডাকাত বলে পরিচিত।
প্রশ্ন : এই ১৫/১৬ জন  ব্যক্তির পরিচয় সংশ্লিষ্ট থানায় লিপিবদ্ধ আছে?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : সাক্ষীদের এই ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ হয়েছে?
উত্তর : হয়েছে।
প্রশ্ন : ডাকাত শামীম বাদে অন্য সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার জন্য কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে থানা থেকে আপনি কোন প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছেন?
উত্তর : আমি তদন্ত সংস্থার কোঅর্ডিনেটর বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করেছি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। । এ প্রেক্ষিতে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তা আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : দরখাস্তে বর্নিত অনুপস্থিত ৪৬ সাক্ষী হাজির করা সম্ভব হবেনা মর্মে আপনি কোন প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীবৃন্দ) কাছে দাখিল করেন নাই।
উত্তর : ১৭ এবং ১৯ মার্চের ওই দুটি প্রতিবেদন বাদে অন্য কোন প্রতিবেদন আমি  দেইনি।

গতকাল   মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট  গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, মো: তারিকুল ইসলাম প্রমুখ