সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১২

prosecution witness misbahur rahman chy deposited against lawyer instead of accused

আসামীর বদলে তার আইনজীবীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন  মিছবাহুর রহমান চৌধুরী
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে গতকাল ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। প্রায় দুই ঘন্টার জবানবন্দীতে তিনি মাওলানা নিজামী সম্পর্কে মাত্র দুটি বাক্য বলেছেন।  তিনি তার দীর্ঘ জবানবন্দীতে জামায়াত নেতৃবৃন্দের পক্ষে নিযুক্ত প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছেন।

মাওলানা নিজামী সম্পর্কে তিনি তার জবানবন্দীতে  বলেন, নিজামী আল বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। এছাড়া অপর এক স্থানে একটি চিঠির বরাতে তিনি মাওলানা নিজামীর নাম উল্লেখ করেন। এর বাইরে তিনি মাওলানা নিজামী সম্পর্কে জবানবন্দীতে কিছু বলেননি।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ  জানিয়েছেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক। জবানবন্দীর পরপরই ব্যারিস্টার রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের কাছে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।  তিনি বলেন,  জনাব মিছবাহুর রহমান ধানবানতে এসে শিবের গীত গেয়েছেন। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে এবং ডিফেন্স টিমের প্রধান হিসেবে আমাকে আমার পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা গ্রস্ত করার জন্য তাকে দিয়ে এ ধরনের বক্তব্য দেয়ানো হতে পারে।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক সম্পর্কে যা বলেছেন মিছবাহুর রহমান:
মিছবাহুর রহমান চৌধুীর জানান  স্বাধীনতা যুদ্ধের  সময় তার পিতা তাকে লন্ডন পাঠিয়ে দেন।  এরপর তিনি লন্ডনে স্কুলে এবং  কলেজে পড়াশুনা করেন। মিছবাহুর রহমান  জানান  লন্ডনে থাকা অবস্থায় ইয়াং মুসলিম অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি হন তিনি। এ সংগঠন করার সময় একদিন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক (তখন ব্যারিস্টার হননি) আমার সাথে এসে সাক্ষাৎ করেন। উনি আমাকে  ইসলাম পছন্দ লোকদের একটি বৈঠকে যোগ দেয়ার অনুরোধ করেন। বৈঠকের ঠিকানা বলেন, ৫৭+২।  আমি এবং তৎকালীন  ইয়াং মুসলিম অর্গানাইজেশনের সভাপতি, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ জেড শাহ তার অনুরোধে বৈঠকে যাই। গিয়ে দেখি  সেখানে অধ্যাপক গোলাম আযম, তৎকালীন পাকিস্তান জামায়াতের আমীর মিয়া তোফায়েল, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দীন সেখানে উপস্থিত। এ ধরনের একটি বৈঠকে আমাদের ডাকার জন্য আমি ব্যারিস্টার রাজ্জাকের ওপর মনোুন্ন হই। সেখানে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের কিছু  বক্তব্যে জানতে পারি তিনি নিজে  ১৯৭১ সালে আল বদর সদস্য ছিলেন। ব্যারিস্টার রাজ্জাক আল বদর সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালের  ডিসেম্বর পর্যন্ত তার প্রতি অর্পিত  দায়িত্ব পালন করেছেন।  পাকিস্তানী সৈনিকদের সহায়তা করেন। এরপর ভারত-নেপাল   হয়ে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে তিনি লন্ডনে চলে যান।

তার  একটি ভাঙ্গা রেকর্ড আছে :
মিছবাহুর রহমানের জবানবন্দী শেষে ব্যারিস্টার রাজ্জাক  সাংবাদিকদের বলেন, লন্ডনে বৈঠকে ৫৭+২ নামে  যে স্থানের নাম তিনি বলেছেন এরকম কোন জায়গার নাম আমার জানা নেই। আমাকে জড়িয়ে লন্ডনে বৈঠক সম্পর্কে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন  সেখানে আমার নাম তিনি একবারও উচ্চারন করেননি। আরো মজার বিষয় হল তিনি ২০০৮ এবং ২০০৯ সালেও আমার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানেও তিনি আমার বিরুদ্ধে লন্ডন বৈঠকের গল্প বলেননি। আমি যদি লন্ডন বৈঠকে নিজেকে আল বদর সদস্য স্বীকার করে কোন বক্তব্য দিতাম তা তিনি কেন গত ৩৮ বছরে একবারও বলেননি। ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে কেন বলেননি। ১৯৭১ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪০  বছরে একমাত্র  মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ছাড়া আমার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের কোন একজন ব্যাক্তি এ ধরনের কোন অভিযোগ করেননি। মুক্তিযুদ্ধের ওপর শত শত বই  লেখা হয়েছে। তার কোথাও আমার নাম নেই। নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে  সাক্ষ্য দিতে এসে তিনি আমার বিরুদ্ধে লম্বা  বক্তব্য দিয়েছেন। নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে মাত্র দুটি বাক্য বলেছেন।  তিনি আমার বিরুদ্ধে  এ নিয়ে যতবার বক্তব্য দিয়েছেন প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন গল্প হাজির করেছেন।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর একটি ভাঙ্গা রেকর্ড আছে। সেটি তিনি মাঝে মাঝে বাজান।  তিনি কি ছিলেন এবং তার চরিত্র কি তা দেশের মানুষ জানে। আমি বলতে চাইনা।  আমি একটি সফল ডিফেন্স টিম গঠন করেছি। সেটা যাতে চালাতে না পারি সেজন্য আমার  ভাব মর্যাদা ুন্ন করার জন্য উদ্দেশ্য মূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের বক্তব্য দেয়া হয়েছে। আমাকে জড়িয়ে তার এ   ধরনের মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্যর  তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর জবানবন্দী : (সংক্ষিপ্ত)
আমার নাম মিজবাহুর রহমান চৌধুরী, পিতার নাম-মৃত রহমান চৌধুরী, মাতার নাম- মৃত শাসি খানম, বয়স ৫৭ বছর।

বর্তমানে আমি বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান। আমি ১৯৬২ সালে মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই। ঐখানে পড়াবস্থায় জনাব সিরাজুল ইসলাম মতলিব যিনি তৎকালীন মৌলভীবাজার সাংগঠনিক জেলার ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ।  তার আহ্বানে পাকিস্তান শান্তি ফৌজে আমি যোগদান করি এবং একই সঙ্গে ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যপদ গ্রহণ করি।

আমি যতদিন ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মী ছিলাম ততদিন আমি মনোযোগ সহকারে এর দায়িত্ব পালন করেছি। ইসলামী ছাত্র সংঘ একটি নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন ছিল। এই সংগঠনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল এবং মাওলানা মওদূদী সাহেবের বই পড়ানো হতো। ইসলামী ছাত্র সংঘ জামায়াতে ইসলামীর একটি অংগ সংগঠন ছিল এবং জামায়াতের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত ছিল। যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এ দেশের মানুষের উপর ঝাপাইয়া পড়ে তখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ বা জামায়াতে ইসলামী সংগঠন হিসাবে ইহার প্রতিবাদ বা বিরোধীতা করবে। কিন্তু তাহারা তার প্রতিবাদ বা বিরোধীতা করে নাই। ১৯৭১ ইংরেজীর আগষ্ট মাসে সিরাজুল ইসলাম মতলিব আমার মৌলভীবাজারের শহরের বাড়িতে একাধিকবার আসেন ।  আমারে না পাইয়া তিনি হাতের লেখা একটি চিঠি রাখিয়া চলিয়া যান। সেই চিঠিতে তিনি আমাকে সম্মোধন করেন মেজবাহ ভাই হিসাবে। সেই চিঠির সারমর্ম হলো - ইসলামী ছাত্রসংঘ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, ১০ আগষ্ট ১৯৭১ সালের মধ্যে ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীরা আল-বদর বাহিনীতে যোগদান করিবে এবং ঐ চিঠিতে আমাকেও নির্দেশ করেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মৌলভীবাজার কমান্ডার মেজর ফখরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে সখান থেকে নিয়োগপত্র নিয়ে আসতে ।  চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, তদানিন্তন পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি জনাব মতিউর রহমান নিজামী, তাহাকে তিনি শুধু নিজামী ভাই বলে উল্লেখ করেছিলেন, আমি যদি আলবদর বাহিনীতে যোগদান করি তাহলে নিজামী সাহেব ব্যক্তিগতভাবে খুব খুশী হবেন এবং ভারতের দালালদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আল্লাহর পথে সৈনীকদের কর্তব্য।  যাহারা বদরবাহিনীতে যোগদিবেন না তারা ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মী হিসাবে বিবেচিত হবে না। তখন আমি ঐ চিঠিটি আমার আব্বাকে দেখাই। উনি মুসলীম লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন তবে জামায়াতের রাজনীতিকে পছন্দ করতেন না। চিঠি দেখে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আমাকে ঢাকা নিয়ে এসে লন্ডন পাঠিয়ে দেন।

১৯৭৪ সালে আমি লন্ডনের বাকিংহাম কলেজে ভর্তি হই এবং ঐ কলেজে অধ্যায়নের সময় আমি সেখানকার মুসলিম স্টুডেন্ট মুভমেন্ট নামে সংগঠনের সদস্যভূক্ত হই ।  পরবর্তীতে আমি উহার সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। উক্ত সংগঠনের সদস্য থাকাকালে আমি সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশা ফয়সালের আমন্ত্রণে আমি সৌদি আরব সফর করি। সৌদি আরবে বাদশার সাথে সাক্ষাতের জন্য যেয়ে দেখি ওখানে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব এবং তার ভাই অধ্যাপক গোলাম মোয়াজ্জেম সাহেব অন্য একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে সেখানে উপস্থিত আছেন। ওখানে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কিছু কথা বলেছিলেন যাহা আমি প্রতিবাদ করি। তিনি বলেছিলেন যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এবং পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশের অধিকাংশ মসজিদ ভেঙে ফেলেছে এবং মাদ্রাসা থেকে ধর্মীয় শিক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে এবং তেলাওয়াতের জন্য দেশে কোরআন শরীফও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন যে, তার সাথে ইসলামী আন্দোলন করতো এমন চল্লিশ হাজার লোককে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করেছে। এই ১০ হাজার পরিবার পূনর্বাসনের জন্য, কুরআন শরীফ বিতরণের জন্য, মসজিদ-মাদ্রাসা পুন:নির্মাণের জন্য, মাদ্রাসা শিক্ষা পুন:চালু করণের জন্য সৌদি বাদশার নিকট অধ্যাপক গোলাম আযম আর্থিক সাহায্য কামনা করেন। অধ্যাপক গোলাম আযমের সাক্ষাতের পর আমি যখন বাদশাহর সাথে সাক্ষাত করি তখন আমি বাদশাহকে এই মর্মে অবগত করি যে, মুক্তিযোদ্ধারা সিংহভাগ মুসলমান এবং তাদের দ্বারা কোন মসজিদ, মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই এবং ধর্মীয় শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয় নাই। সৌদি আরব থেকে লন্ডনে ফেরার পরে আমরা একটি নতুন যুব সংগঠন তৈরি করি যার নাম ছিল ইয়াং মুসলিম অর্গানাইজেশন, যার প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী ছিলাম আমি। এই সংগঠন করাকালীন সময়ে ইসলামী ছাত্র সংঘের একজন নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক (ঐ সময় তিনি ব্যারিস্টার হন নাই) আমার সংগে দেখা করেন। তিনি আমাকে ইসলাম পছন্দ করে এমন কিছু লোকজনের সঙ্গে



একটি বৈঠকে আসার জন্য অনুরোধ করেন এবং বৈঠকের ঠিকানা বলেন- ৫৭+২। আমি এবং তৎকালীন ইয়াং মুসলিম অর্গানাইজেশনের সভাপতি বর্তমানে ঢাবির অধ্যাপক এ. জেড. শাহ ঐ বৈঠকে যোগদান করি। যেখানে গিয়ে আমরা দেখি অধ্যাপক গোলাম আযম এবং পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর মিয়া তোফায়েল এবং আরেকজন বিখ্যাত যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈন উদ্দিন, ড. আবদুল আজিজ সেখানে উপস্থিত আছেন। আমরা এই ধরনের মিটিং-এ আমাদের ডাকার জন্য বিশেষ করে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক-এর উপর অসন্তুষ্ট হই এবং তার কিছু বক্তব্য শুনে আরও অসন্তুষ্ট হই। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক-এর ঐ বক্তব্য থেকে জানতে পারি যে, তিনি নিজেও আলবদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন....।
 .....
আমি এবং এ. জেড শাহ ঐ বৈঠক ত্যাগ করে চলে আসি। আমি একজন ইসলামী রাজনীতিপক্ষী লোক তবে সেই থেকে জামায়াতে ইসলামীর কার্যকলাপ লক্ষ্য করে এবং বিভিন্ন কাগজপত্র দেখে শুনে আমি মনে করি জামায়াতে ইসলামী ইসলাম বিরোধী এবং মানবতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট দল। ১৯৪১ সনে হায়দরাবাদের জন্ম হওয়ার পর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এই দলের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এবং গবেষণা করে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা এবং মানবতাবিরোধী একটি ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল যারা ধর্মের ছদ্মাবরণে বিভিন্ন কুৎসতি কাজ করে থাকে। তাদের বিরুদ্ধাবাদীদের দমনের জন্য মিথ্যাচার, অত্যাচার, গোপন হত্যা এ ধরনের পথ তারা অবলম্বন করে। ধর্মের কথা বলে বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা ব্যয় করে এবং সেই অর্থের সাহায্যে এমন কোন হীন কাজ নাই যা তারা করে নাই। রাজাকার ও আল শামস বাহিনী যেভাবে গঠিত হয়েছিল আলবদর বাহিনী সেভাবে গঠিত হয় নাই। আলবদর বাহিনী ইসলামী ছাত্র সংঘ কর্মীদের দ্বারাই গঠন করা হয়েছিল। যার নেতৃত্বে ছিল মতিউর রহমান নিজামী এবং তারপরে ছিল আলী আহসান মো: মুজাহিদ সাহেব। এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য পাক সেনাবাহিনী দ্বারা সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।


জবানবন্দী শেষে মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর জেরা শুরু হয়। তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর  আহমদ আনসারী। এসময় ট্রাইব্যুনালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, মতিউর রহমান আকন্দ,  ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার ইহসান এ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির  প্রমুখ।

জেরা (সংক্ষিপ্ত)
প্রশ্ন : সিরাজল ইসলাম মতলিব সাহেবের চিঠি পাবার আগে আপনার পাসপোর্ট ছিলনা।
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : ভিসা  কিভাবে পান?
উত্তর : লন্ডন যাবার সময় আমার ডিপেডেন্ট ভিসা ছিল।
প্রশ্ন : আপনার বাবা ১৯৭১ সালে লন্ডন গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ হওয়ার পরে আপনি  বাংলাদেশ কিম্বা অন্য কোন দেশের পাসপোর্ট গ্রহন  করেননি।
উত্তর : করিনাই।
প্রশ্ন :  ১৯৭২ সালে লন্ডন  যাবার পরে ১৯৭৬ সালের পূর্বে আপনি  বাংলাদেশে  আসেননি।
উত্তর : আসিনি।
প্রশ্ন :  আপনি কোন দেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গেলেন?
উত্তর :  বাংলাদেশের। 
প্রশ্ন : ১৯৭৫ সালের ২৬/২৮ মার্চের দিকেও আপনি  বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে আরেকবার সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ।
উত্তর : হ্যা।
এরপর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী  বলেন, ১৯৭৫ সালে আমি সৌদি আরবের বাদশাহর আমন্ত্রনে গিয়েছিলাম, তখন সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় নাই বিধায় ভিসা হতো না। আমাকে সৌদি এয়ারপোর্টে আমন্ত্রন পত্রের ভিত্তিতে বিশেষ ভিসা দেয়া হয়। বিশেষ ভিসাতে আমাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেখানো হয়েছিল। ১৯৭২ সালে জানুয়ারী মাসে ইংল্যান্ড যাওয়ার সময় আমাকে একটি পারমিট দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে।  তখন কাউকেই পাসপোর্ট দেয়া হত না। ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে আমি লন্ডন থেকে প্রথম সৌদি আরবে যাই। ঐ সময়ে আমি সৌদি আরবে ১৫/২০ দিন ছিলাম। ১৯৭৪ সালে আগস্ট মাসের পরে এবং ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসের পূর্বে আমি হজ্ব করার জন্য সৌদি আরবে যাই। হজ্বের সঠিক মাস আমি বলতে পারবো না, তবে ১৯৭৪ সালের শেষের দিকে হয়েছিল।

প্রশ্ন ঃ ১৯৭১ সালে প্রথম দিকে নিখিল  পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সেক্রেটারী কে ছিল?
উত্তর ঃ ঐ সময়ে ইসলামী ছাত্র সংঘ বলতে আমরা পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘ বুঝতাম, যার জেনারেল সেক্রেটারী ছিলেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। পাকিস্তানী ইসলামী ছাত্র সংঘকে আমরা জমিয়াতে তালাবায়ে আরাবীয়া হিসেবে জানতাম।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মিছবাহুর রহমান বলেন, মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ১৯৭১ সালে নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘ এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত মতিউর রহমান নিজামী সাহেব জমিয়াতে তলাবায়ে আরাবীয়ার সভাপতি ছিলেন সেটা আমি জানি, কিন্তু ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিলেন কিনা সেটা আমি নিশ্চিত নই।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন