বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১২

reason behind Zahir Ahmed's resign

মতভিন্নতাই কাল হয়ে দাড়াল জহির আহমেদের জন্য!

মেহেদী হাসান
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ থেকে বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ তার পদত্যাগের কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে এটিকে একটি সাধারন অজুহাত হিসেবেই মনে করছেন অনেকে।

তার পদত্যাগের কারণ নিয়ে বিভিন্নমুখী  আলোচনা চলছে। পদত্যাগের দিনও তিনি বিচার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। কাজেই শারীরিক কারনে তিনি পদত্যাগ করেছেন এটি মানতে পারছেননা অনেকে। তার পায়ে কিছু সমস্যা থাকলেও তা পদত্যাগ করার মত বড়  কোন কারণ নয় বলে জানিয়েছে  সূত্র।
তাহলে কি তিনি নিজে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন না তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে  এটি নিয়েই মূলত চলছে আলোচনা।
ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ ভিন্নমত পোষন করেছেন, ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন যা অনেক সময় ওপেন কোর্টে প্রকাশও পেয়েছে। সূত্র জানিয়েছে এটিই তার জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছিল। এ কারনেই তাকে চলে যেতে হয়েছে।
সূত্র জানায় এছাড়া আরো বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন ইস্যুতে  তিনি ভিন্ন  অবস্থান নিতে চেয়েছেন । এ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল পর্দার আড়ালে। যার অনেক কিছু ওপেন কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়নি অনেক সময়।  ট্রাইব্যুনালের সাম্প্রতিক বিভিন্ন আদেশের সময় তিনি ওপেন কোর্টে  ভিন্নমত পোষন না করলেও বেশ কিছু বিষয় তিনি মেনে নিতে পারেননি বলে জানা গেছে। মাওলানা সাঈদীর মামলার ক্ষেত্রে আলোচিত  ১৫ সাক্ষী বিষয়ে রিভিউ আদেশের দিন তিনি কোর্টে অনুপস্থিত থাকেন। এজাতীয় আরো কিছূ বিষয়ে তার ভিন্ন অবস্থানের ফলে   অস্বস্তিতে ফেলে দেয় অনেককে। কেউ কেউ রুষ্ট  হন তার প্রতি।  সরকারের ভেতরেও তার বিষয়ে অসন্তোষ ছিল। সূত্র জানায় এসব কারনে তার ওপর পদত্যাগের জন্য চাপ সৃষ্টি  করা হয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল থেকে  এবং শেষ পর্যন্ত তিনি সরে দাড়ান।

বিচারক জহির আহমেদের পদত্যাগের বিষয়ে ডিফেন্স টিমের   পক্ষ থেকে  স্পষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে তার  পদত্যাগের পেছনে  আইন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা রয়েছে। সরকার তার  অনুগত ও আস্থাভাজন বিচারক নিয়োগ করে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে কুগিত করতে চায়।
ডিফেন্স টিমের অভিযোগ করেছে  সরকার বিচারক এ কে এম জহির আহমেদকে চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। জহির আহমেদ একজন মেধাবী, প্রাজ্ঞ ও নিরপে বিচারক ছিলেন এবং মামলা পরিচালনার েেত্র প সমুহের অধিকার সংরণের ব্যাপারে আপোষহীন ও সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। মামলা পরিচালনা কালে রাষ্ট্রপরে নানা রকম অযৌক্তিক ও আইন বহির্ভূত কর্মকান্ডের ব্যাপারে তিনি শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। আদালত কে রাষ্ট্রপরে বিভিন্ন বেআইনি পদেেপর ব্যাপারে একমত না হওয়ায় রাষ্ট্রপ প্রকাশ্যেই তার উপর ােভ ও উষ্মা প্রকাশ করেছিল।  এরই ধারাবাহিকতায় তাকে চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।  তার পদত্যাগের ঘটনা ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমের উপরে রাষ্ট্রপরে হস্তেেপর নগ্ন বহি:প্রকাশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে  ডিফেন্স টিম। 

ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে বিভিন্ন বিষয়ে বিচারক এ কে এম জহির আহমেদের সাথে অপর বিচারপতিদের মতভিন্নতা ছিল।   সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর  একটি আবেদনের আদেশে তিনি ভিন্ন আদেশ দিয়েছেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন  সাঈদীর মামলার  ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়  বিভিন্ন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের অপর দুই  বিচারপতির সাথে  তার  মতভিন্নতা  দেখা দেয় এবং একবার এ নিয়ে কোর্টে বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।  যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক  নেতাদের বিরুদ্ধে  চার্জ  শুনানীর সময় বিচারক জহির আহমেদের বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের যেসব প্রশ্ন করেছেন তার সন্তোষজন ব্যাখ্যা অনেক সময় পাননি তিনি। জহির আহমেদের এসব প্রশ্নে অনেক সময় রাষ্ট্রপক্ষের কোন কোন আইনজীবী বিব্রতকর  অবস্থায় পড়েছেন। 

চলতি বছর ১৩ মার্চ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দায়ের করা ছয়টি আবেদন বাতিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে।  এর মধ্যে একটি আবেদন ছিল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মামলা থেকে অব্যাহতি  প্রদান সংক্রান্ত। ওই  দিন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী  ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেননা। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে  তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি বিষয়ক আবেদনটি খারিজ করা বিষয়ে  অপর দুই বিচারপতির সাথে বিচারক জহির আহমেদ ভিন্নমত পোষন করে  ভিন্ন আদেশ   দেন। আদেশে তিনি  বলেন, আমি মনে করি এ আবেদনটির আদেশ তার উপস্থিতিতে হওয়া দরকার ছিল।  এটি একটি প্রতিষ্ঠিত রীতি।   

১২ জুলাই মাওলানা সাঈদীর  মামলায় আলোচিত ১৫ সাক্ষী বিষয়ে দায়ের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল। গুরুত্বপূর্ণ এই আদেশের দিন বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ ট্রাইব্যুনালে অনুপস্থিত থাকেন।

গত ১৯ জুলাই মাওলানা সাঈদীর মামলায়  তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে  জেরার এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতির মধ্যে বেশ মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। একটি  ইস্যুতে বিচারক একেএম জহির আহমেদের সাথে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক ভিন্ন মত পোষন করায় এ মতপার্থক্য দেখা দেয়। বিচারক জহির আহমেদ নিজেই তদন্ত কর্মকর্তাকে পরপর তিনটি প্রশ্ন করেন। এ প্রশ্ন  করা নিয়ে অপর দুই বিচারপতির সাথে জহির আহমেদের ভিন্নমত পোষন করেন।  শেষে বিচারপতি নিজামুল হক এবং আনোয়ারুল হক দুজন বিচারপতি একদিকে থাকায় এবং তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায়  জহির আহমেদের করা একটি প্রশ্ন জেরা থেকে বাদ দেয়া হয়।

জহির আহমেদ যখন  তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেন তখন বিচারপতি নিজামুল হক বেশ ক্ষোভের সাথে  জহির আহমেদকে বলেন, আপনি দয়া করে অর্ডারটা পড়েন। আপনি উত্তেজিত হয়ে এমনসব প্রশ্ন করছেন যাতে মনে হয় এ বিষয়ে কোন অর্ডারই নেই। আপনার  তৃতীয় প্রশ্নটি অর্ডার অনুযায়ী হয়নি।

গতরাতে দৈনিক নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে বিচারক জহির আহমেদের সাথে   যোগাযোগ করা হলে তিনি আবারো বলেন অসুস্থতার কারনে তিনি পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ এবং কোর্টে বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশ্যে তার ভিন্নমত পোষন করা  বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জহির আহমেদ  বলেন, যেকোন বিষয়ে ভিন্ন মত পোষন করা যেকো বিচারক/বিচারপতির স্বাধীনতা  এবং অধিকার রয়েছে। যেকোন বিষয়ে যে কেউ ভিন্ন মত পোষন করতেই পারেন। আমিও সেভাবে কোন কোন ক্ষেত্রে ভিন্নমত প্রকাশ করেছি। আমি সারা জীবন ন্যায় বিচারের পক্ষে ছিলাম। ন্যায় বিচারের পক্ষে কাজ করেছি।

ট্রাইব্যুনাল -১ বর্তমানে জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতের বর্তমান আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি জামায়াতের  ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে  এ ট্রাইব্যুনালের আদেশে।
















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন