বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

আমার ভাই হত্যার সময় সাঈদী সাহেব ছিলেন তা কখনো শুনিনাই

মেহেদী হাসান
মাওলানা  সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে  অপহরনের শিকার সুখরঞ্জন বালী বলেছেন, আমার ভাইকে হত্যার সময় সাঈদী সাহেব ছিলেন বলে কখনো শুনিনাই। মিলিটারি এবং  দেশীয় যেসব লোক আমাদের বাড়ি থেকে আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যায় সেদিন সাঈদী সাহেব সেখানে ছিলেননা, তাকে দেখিনাই।

রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হওয়া সত্ত্বেও সাক্ষ্য দিতে না আসা প্রসঙ্গে সুখরঞ্জন বালী বলেছেন, মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার আমাকে  বলতে বলে সাঈদী সাহেব ছিল এই কথা বলবা। আমাকে দিয়া তারা মিথ্যা কথা বলানোর জন্য চেষ্টা করছে । তাতে রাজি না হওয়ায় আমারে তারা আনেনাই। আমিও   হেদিকে  যাই নাই ।

ঢাকায় আসার পর অপহরনের একদিন পূর্বে দৈনিক নয়া দিগন্তের সাথে সাক্ষাৎকারে সুখরঞ্জন বালী উপরোক্ত কথা বলেন। রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার বিনিময়ে তাকে একটি বাড়ি একটি খামার এবং নগদ অর্থও  দিতে চাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন সুখরঞ্জন বালী।

১৯৭১ সালে  পিরোজপুরে উমেদপুরে বিশাবালী নামে এক ব্যক্তিকে নারকেল গাছের সাথে বেঁধে মাওলানা  সাঈদীর নির্দেশে এবং উপস্থিতিতে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ আনা হয়েছে  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে। সেই বিশাবালীর ছোট ভাই সুখরঞ্জন বালীকে সাক্ষী করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। তবে তিনি রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে সাক্ষ্য দিতে না এসে মাওলানা সাঈদীপর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন গত  পাঁচ নভেম্বর। সেদিন তাকে গোয়েন্দা পুলিশ অপহরন করে নিয়ে যায় ট্রাইব্যুালের গেট থেকে।

বিশাবালী নিহত হওয়া বিষয়ে সুখরঞ্জন বালী বলেন, ১৯৭১ সালের জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি সময়  হবে। আমার ভাই বিশাবালী  অসুস্থ  ছিলেন  ।  ঘটনার দিন মিলিটারি আসার খবর এবং চিৎকার টের পেয়ে  আমি আমার মাকে নিয়ে বাড়ির পাশে বাগানে যাই।  আমার অসুস্থ ভাই ঘরে থাকে।  ১৫/১৬ জন মিলিটারি আসে। তাদের সাথে  রাজ্জাক, সেকেন্দার শিকদার, দানেশ মোল্লা, গনি গাজি, মোসলেম মওলানা, মোহসিন ও মোমিন ও মুন্সি এরা ছিল । সাঈদী সাহেব ছিলেন না।  তারে আমরা ভালোভাবেই চিনি। তার শ্বশুরের কাপড়ের দোকান  ছিল পাড়েরহাটে। সে কারনে তার সাথে আমাদের পরিচয় ছিল।  ঘটনার দিন তিনি থাকলে  আমরা চিনতাম। তিনি  ছিলেন না, তারে আমরা দেখি নাই।

সুখরঞ্জন বালী বলেন, মিলিটারি এবং তাদের সাথে থাকা দেশী মানুষ আমাদের ঘরে উইড্যা  আমার অসুস্থ ভাই বিশাবালীকে  ঘর থেকে নামাইয়া রাইফেলের কোন্দা দিয়া পিডায়। পিডাইয়া তারে বাইন্দা ছাইন্দা নিয়া যায়। পরদিন সকাল বেলা শুনি পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর পাড়ে নিয়া আমার ভাই ও হোগলাবুনিয়ার যে ৫/৬ জন লোক ধরছে তাদেরকে একত্র করিয়া বলেশ্বর নদীর ঘাটে নিয়া গুল্লি কইরা হত্যা করছে। আমার ভাইকে হত্যার সময় সাঈদী সাহেব ছিলেন বলে কখনো শুনিনাই।
রাষ্ট্রপক্ষের তালিকাভুক্ত সাক্ষী হওয়া সত্ত্বেও আপনি তাদের পক্ষে কেন সাক্ষ্য দিতে আসলেননা সে প্রশ্নের জবাবে  সুখরঞ্জন বালী জানান, আসি নাই কারন আমি সত্য সাক্ষী দিতে চাই। কিন্তু তারা আমারে বলতে বলে সাঈদী সাহেব ছিল এই কথা বলবা। আমাকে দিয়া তারা মিথ্যা কথা বলানোর জন্য চেষ্টা করছে । আমি বলছি, না আমি বলতে পারবো না।  আমি মিথ্যা কথা বলবো না। যারে আমি দেহি নাই তার নামে কিভাবে মিথ্যা বলব। এজন্য আমি হেদিকে  যাই নাই। এদিকে আমারে আনছে।  তারা আমারে আনে নাই।

রাষ্ট্রপক্ষের কথামত সাক্ষ্য দিতে চাপ সৃষ্টি প্রসঙ্গে সুখরঞ্জন বালী বলেন, ট্রাইব্যুনালের পক্ষে  লোক গেছিলো  আমার বাড়িতে।  তখন মাহবুব (মামলার বাদী) আমার বাড়িতে যাইয়া বলে তুমি সাক্ষী দিতে যাবা একটু পাড়ের হাট। আমি বলছি, ঠিক আছে আমি যা জানি সেই সত্য কথাই বলব। সে বলে, ঠিক আছে যাবা আমার সাথে এহন চলো। হেরপর, আমারে নিয়া পাড়েরহাট রাজলক্ষী স্কুলের দোতলায় বইস্যা আমার সাক্ষী নেয়া শুরু করছে। আমি যেডুক জানি আমার ভাই সমন্ধে তা বলি। আমার ভাইরে কে মারছে এই কথা আমি বলা শুরু করছি । আমি বলি  অমুক অমুক ছিল, তখন মাহবুব বলে যে, না ঐসব বাদ দিয়ে তুমি সাঈদীর কথা বলবা। আমি বলছি আমি পারবনা।  তখন আমার পেট পাছাইয়া চিমটি মারে, আমার পিঠে আঙুল দিয়া গুতা মারে মানিক (মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী এবং পিরোজপুরে দায়ের করা মামলার বাদী) ও মাহবুব।

এসময় ঢাকা থেকে যাওয়া এক লোক  বলে , মাহবুব সাহেব আপনি যে সাক্ষী আনছেন, এই সাক্ষীতে  আপনার সর্বনাশ হইয়া যাইতেছে, আপনার সাক্ষী হয় না। এরপর ঐখান দিয়া মাহবুব আর মানিক  আমারে উঠাইয়া দেয়।  আমি চইল্লা আসি ।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে গত মার্চ মাসে ট্রাইব্যুালে অভিযোগ করা  হয়েছে আপনিসহ আরো অনেক সাক্ষীকে মাওলানা সাঈদীর  পক্ষে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হুমকি ধামকি দিয়েছে। সে কারনে আপনি চার মাস   ধরে নিখোঁজ। তারা  আপনাকে খুঁজে পাচ্ছেনা এবং ট্রাইব্যুনালেও হাজির করতে পারছেনা। এ প্রশ্নের জবাবে সুখরঞ্জন বালী বলেন,    কোনদিন আমার সাথে হেদের কেউ দেখাও করে নাই, হুমকি ধামকিও দেয় নাই। বর্তমানে আওয়ামী লীগের যে মাহবুব আর মানিক হেরা আমারে হুমকি ধামকি করতেছে। আমাকে আর একদিন বলছে  তোমারে একটি বাড়ি একটি খামার দেব আর দেড় লাখ টাকা দেব, তুমি সাঈদী সাহেবের নামের কথা বলবা। আমি বলছি না, আমার মরা ভাইকে আমি বেচতে আমি স্বিকার নাই। আমি মিথ্যা কথা কইতাম না। যারে না দেখছি আমি কেউর নামের কথা বলতে পারব না।

সাঈদী সাহেবের লোকজন কর্তৃক ভয়ভীতি দেখানো এবং আপনার নিখোঁজ হওয়া বিষয়ে আপনার মেয়ে একটি জিডি করেছে বলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ প্রশ্নের জবাবে সুখরঞ্জন বালী বলেন,  আমি রাজি না হওয়ায়  মাহবুব আর মানিক  আমারে লোকজন দিয়া রগকাটার হুমকি দিছে। ওরা বাড়িতে যাইয়া  গালাগালি করছে।

হেরপর একদিন আমার সাথে  দেখার পরে বলে তুমি একটি বাড়ি একটি খামার  নিবা নাইলে তুমি এই দেশে থাকতে পারবা না। তারপরে আমি বাড়ি থেকে চইল্লা গেছি। চইল্লা যাওয়ার পরে আমার মেয়ে, মেয়েরে এসে হুমকি ধামকি দিছে, তোর বাবার নামে তুই  গুম কেস করবি। । আমার মেয়ে বলছে, আমার বাবার নামে গুম কেস করা লাগবে না। আমার স্ত্রী বলছে, হেয় যেখানে থাকুক না কেন আমাগো সাথে কথা বার্তা চলে, আমরা কারো নামে গুম কেস করতে পারব না। শেষ মেষ বলে জোর করে আমার মেয়েকে ১০০০/- এক হাজার

টাকা দিয়া একটা সাদা কাগজে সই নিছে। তারপর ঐ সই করা কাগজ দিয়া তারা কি করছে না করছে তা আমি বলতে পারব না।

বিশাবালী হত্যা বিষয়ে অভিযোগ : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ২০ টি অভিযোগে বিচার চলছে তার মধ্যে একটি হল তার নির্দেশে এবং উপস্থিতিতে বিশাবালী নামে একজনকে নারকেল গাছের সাথে বেঁধে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগ বিষয়ে মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম গত বছর ৭ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দী প্রদানের সময় বলেন,
২ জুন সকাল বেলা আমি নিজ বাড়িতে ছিলাম। লোকদের কাছ থেকে জানতে পারি অনুমান সকাল ১০টায় পারের হাটের শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী দানশ আলী মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মোমিন হাওলাদার, হাকিম  কাজী, হাবিবুর রহমান মুন্সী  পাক হানাদার বাহিনী সঙ্গে নিয় উমেদপুর গ্রামে  আমার বাড়ির  নিকটস্থ হিন্দু পাড়ায় আক্রমণ চালিয়েছে।  ২৫/৩০টি ঘর লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। বিশাবালী অসুস্থ  থাকায় তাকে ধরে ফেলে এবং একটি নারিকেল গাছের সাথে বেঁেধ মারমিট করে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নির্দেশক্রমে বলে যে, ওটাকে যখন পেয়েছি ওটাকে গুলি কর। জনৈক রাজাকার গুলি করে বিশাবালীকে হত্যা করে।

ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী অপহরন//আইনজীবীদের আদালত বর্জন

মেহেদী হাসান, ৫/১১/২০১২, সোমবার
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষের একজন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে  অপহরন করে নিয়ে গেছে ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) পুলিশের লোকজন। তার নাম সুখরঞ্জন বালী। তিনি ছিলেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের তালিকাভুক্ত  সাক্ষী ।  আজ তিনি এসেছিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে। সাক্ষ্য দিতে আসার সময় ট্রাইব্যুনালের প্রবেশ পথে তাকে  ডিবি পুলিশের লোকজন  ধরে নিয়ে  গেছে।

সাক্ষী অপহরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল বর্জন করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। আইনজীবীদের উপস্থিতি ছাড়াই বিকালে মাওলানা সাঈদীর মামলার যুক্তিতর্ক  গ্রহণ শুরু করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন সাক্ষীকে   ধরে নিয়ে  পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় তাকে থাপ্পড় মেরেছে ডিবি পুলিশের লোকজন।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালে জানিয়েছেন  সাক্ষী অপহরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি।

যেভাবে সাক্ষী  ধরে নেয়া হল :
আইনজীবী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ  সকাল সোয়া দশটার দিকে  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী  মিজানুল ইসলাম এবং অন্য কয়েকজন আইনজীবী একটি গাড়িতে করে  ট্রাইব্যুনালে আসছিলেন। তাদের সাথেই ছিলেন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী। তাদের বহনকারী গাড়ি ট্রাইব্যুনালের  পাশে মাজার সংলগ্ন গেটে আসার পর   দায়িত্বরত পুলিশ  গাড়ি থামান। পুলিশ  সব আইনজীবীদের গাড়ি থেকে নামতে বলেন। অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী,  হাসানুল  বান্না সোহাগ সবাই নেমে আসেন। তাদেরকে হেটে ট্রাইব্যুনালে যেতে বলেন  দায়িত্বরত। অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম পক্ষাগাতগ্রস্ত হওয়ায় শুধুমাত্র তাকে গাড়িতে চড়ে ট্রাইব্যুনালের  সামনে যাওয়ার অনুমতি দেন পুলিশ। গাড়িতে থাকা সাক্ষীকে সুখরঞ্জন বালীকেও নেমে আসতে বলেন তারা । সাক্ষী নেমে আসেন।
সাক্ষীসহ অন্যান্য আইনজীবীরা গেটে দাড়িয়ে থাকেন। অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ ভেতরে যান অন্য আইনজীবী এবং সাক্ষীর জন্য গেট পাশ আনতে। (অন্যান্য দিন এ ধরনের কড়াকড়ি ব্যবস্থা ছিলনা। সাক্ষী এবং আইনজীবী  এবং সাংবাদিকরা  সরসারি ট্রাইব্যুনালের সামনে চলে যেতে পারতেন। শুধুমাত্র গতকালই বাইরের গেটে এভাবে কড়াকড়ি এবং চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়।)

এসময়  আসামী পক্ষের জুনিয়র আইনজীবী হাসানুল বান্না সোহাগ এবং সাক্ষী গেটে  দাড়িয়ে থাকেন। তখন চারজন সাদাপোশাকধারী লোক এসে  নিজেদের ডিবি পুলিশের লোক পরিচয় দেন। তারা সাক্ষীর নাম জিজ্ঞেস করেন। তারপর  সাক্ষীর দুপাশ থেকে দুজন করে পুলিশ হাত ধরে   রাস্তার দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। আইনজীবী এর  প্রতিবাদ করলে  ডিবি সদস্যরা জানান কিছু  পাশেই তাদের কন্ট্রোল রুমে  নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দেয়া হবে। এরপর সাক্ষীকে  টেনে      শিক্ষাভবনের দিককার  পুরনো হাইকোর্ট  গেট থেকে বের করে দোয়েল চত্বরের দিকে  ট্রাইব্যুনালের অপর গেটের দিকে নিয়ে যায়। এসময় ডিবি পুলিশের এক সদস্য মোবাইলে ফোন করলে ট্রাইব্যুনালের ভেতরের চত্বর থেকে একটি পুলিশের  পিকআপ ভ্যান  গেটে আসলে সাক্ষীকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া  হয়। প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী জানান,  তাকে গাড়িতে ওঠানোর সময় থাপ্পর দেয়া হয় এবং টেনে চিচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ধাক্কা মারা হয়।

ট্রাইব্যুনাল বর্জন :
সকাল সাড়ে দশটায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম    শুরু হলে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বিষয়টি অবহিত করেন। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন কোর্ট শেষে আমরা বিষয়টি দেখব। আসামী পক্ষের প্রধান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন সাক্ষীকে  এ অবস্থায় রেখে আমরা বিচার কাজে অংশ নিতে পারিনা। বিষয়টির বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেয়া হোক।
এরপর ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুকে নির্দেশ দেন   অপহরনের বিষয়টি বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে  এবং তাকে ছাড়িয়ে আনার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করতে। তিনি আদেশের সাথে সাথে  তাকে  কোর্ট থেকে বের হয়ে চেম্বারে গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজ  নেয়ার নির্দেশ দেন।
সাড়ে বারটার দিকে গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালে আসেন। তখন অন্য একটি মামলার শুনানী চলছিল।  আসামীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক সে শুনানী বন্ধ রেখে গোলাম আরিপ টিপুর কাছ থেকে  সাক্ষী বিষয়ক পরিস্থিত  শোনার আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন চলমান আবেদনের শুনানী শেষ হোক। এরপর   একটা বাজার সামান্য আগে শুনানী শেষ হলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যনালের সামনে দাড়িয়ে বলেন, আমি  আইনশৃঙখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে  কথা বলেছি। তারা বলেছেন, আইনের কোন লঙ্ঘন তারা করেননি।  ট্রাইব্যুনালের প্রবেশ পথে তারা  তাদের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন একজনকে  ধরে  নিয়ে যাবার বিষয়ে আপনাকে খোঁজ নিতে বলেছিলাম তার কি হল। তার কি হল?
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি আজ সেখানে। 
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, একটা হতে পারে কারা  এ কাজ যারা করেছে তারা চিনতে পারেনি অথবা ঘটনা ঘটেনি।
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, আদৌ  এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।
বিচারপতি নিজামুল হক আবারো বলেন, ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে কেউ অপহরন হয়েছে কি-না?
গোলাম আরিফ টিপু বলেন কেউ অপহরন হয়নি।
এর সাথে সাথে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা  তীব্র প্রতিবাদ জানান। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার কয়েকজন আইনজীবী এখানে এসে ঘটনা বলল প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সেটা মিথ্যা হয়ে গেল? মিজান সাহেব কি তাহলে মিথ্যা বলেছেন?  তার সাথে থাকা আমাদের অন্যান্য আইনজীবীরা মিথ্যা বলেছেন?  আর চিফ প্রসিকিউটর পুলিশের কথা শুনে বলে দিলেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি?
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, দুইটার পর আমরা বিষয়টি দেখব। এর মধ্যে আমরাও একটু খোঁজ খবর  নিয়ে দেখি কি হয়েছে। ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক অনুরোধ করেন বিষয়টি সুরাহা করে তারপর কোর্ট বিরতিতে যাক।

এরই মধ্যে  সাক্ষীকে ধরে নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত মোবাইলে তোলা ছবি  প্রিন্ট করে ট্রাইব্যুনাল কক্ষে প্রবেশ করেন  আসামী পক্ষের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির।   আসামী পক্ষ ট্রাইব্যুনালের সামনে সে ছবি জমা দেন। তিনজন বিচারপতি তা দেখেন। এরপরও তারা দুপুরের বিরুতিতে যাবার প্রস্তুতি নেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মিজানুল ইসলাম কিছু  কথা বলেন। এসময় বিচারপতিগন চেয়ার থেকে উঠে যান । চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন,  এখন আর শোনা হবেনা। মিজানুল ইসলাম তীব্র ক্ষোভের সাথে বলেন, আমাদের কথাও শোনাও হবেনা? তাহলে আমরা এ  কোর্টে আসব কিভাবে? আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয় কোর্টরুমে। মিজানুল ইসলাম উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করতে থাকেন। এরই মধ্যে কোর্টরুম ত্যাগ করে চলে যান বিচারপতিগন।

সকালে শুনানী চলাকালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডন্টে  সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদূদ আহমদ, সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি  জয়নুল আবেদনী ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। ব্যারিস্টার মওদূদ আহমদ এবং খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানীতে অংশগ্রহণ করেন।
ট্রাইব্যুনাল বর্জনের পর খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জানিনা  হতভাগ্য সাক্ষীর ভাগ্যে কি আছে। বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে এখন লোকজন গুম হচ্ছে। আমরা জানিনা এ সাক্ষীকে আর খুঁজে পাওয়া যায় কি-না। কারণ সরকার পক্ষ তাকে অপহরনের বিষয়টি অস্বীকার করছে।  কোর্টে আসার পথে সাক্ষী অপরহন করা হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?


রাষ্ট্রপক্ষের   অভিযোগ : সাক্ষী অপহরন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে এবং ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাংবাদিকদের কাছে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সুখরঞ্জন বালী আসামী পক্ষের কোন সাক্ষী নয়। আজ সাক্ষীর জন্য নির্ধারিত কোন তারিখও ছিলনা।  সে তাদের কাছে গেল কি করে সেটাই আমাদের প্রশ্ন। সৈয়দ হায়দার আলী অভিযোগ করে বলেন, ট্রাইব্যুনাল  বর্জনের অজুহাত হিসেবে এ ঘটনার অবতারনা করা হয়েছে।

কে এই সুখরঞ্জন বালী : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ  ১৯৭১ সালের ২ জুন পিরোজপুরের উমেদপুরে হিন্দুপাড়ায়  বিশাবালী নামে একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে নারকেল গাছে সাথে বেঁেধ রাজাকাররা হত্যা করে। মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই বিশাবালীল ভাই হলেন সুখরঞ্জন বালী।   রাষ্ট্রপক্ষ তাকে সাক্ষী মেনেছিল। তবে  রাষ্ট্রপক্ষ তাকে হাজির করতে পারেনি।

বিশাবালীকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ গত   মার্চ  মাসে ট্রাইব্যুনালে জানিয়েছিল চার মাস আগে  নিজ বাড়ি থেকে বের হবার পর  সুখরঞ্জনবালী নিখোঁজ হয়েছে।

গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন পেশ করা হয়। আবেদনে বলা হয়  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  ৪৬ জন  সাক্ষীকে  হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই  ৪৬ জন সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে  জবানবন্দী  দিয়েছেন তা  তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক।  এই ৪৬ জন সাক্ষীর তালিকায় সুখরঞ্জন বালীর নামও ছিলেন।


সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যেসব কারণ উল্লেখ করেছিল তার মধ্যে রয়েছে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সন্ত্রাসী অস্ত্রধারীদের হুমকির কারনে  অনেকে  আত্মগোপন করেছে, কেউ বাড়ি থেকে নিখোঁজ, কেউ গোপনে ভারতে  পালিয়ে গেছে, কেউ অসুস্থ, কারো কারো স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে।
৪৬ জনের সেই তালিকা থেকে ১৫ জনের জবানবন্দী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধেথ  সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে ২৯ মার্চ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সেই ১৫ জনের মধ্যেও ছিলেন সুখরঞ্জন বালী।
রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষী সম্পর্কে বলেছিল সে নিখোঁজ সেই সুখরঞ্জন বালী গতকাল  এসেছিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে।
রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সাক্ষী হাজির করতে যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছিল তাকে মিথ্যা এবং প্রতারনা বলে অভিযোগ করেছিল আসামী পক্ষ। আসামী পক্ষ অভিযোগ করে বলেছিল সাক্ষীরা রাষ্ট্রপক্ষের শেখানো মতে মিথ্যা বলতে রাজি নয় বিধায় তাদের হাজির করা হচ্ছেনা।

কড়া নিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালে : আজ ট্রাইব্যুনালে ছিল কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনি যা আগে কখনো দেখা যায়নি। সাধারনত ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে পাশ নিয়ে প্রতিদিন গেট পাশ নিয়ে সাংবাদিক আইনজীবী এবঙ আসামীর আত্মীয়স্বজনকে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু গতকাল একদন বাইরের গেটে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা কর্র্মী প্রত্যেকের আইডি কার্ড চেক করে ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা করেন। মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করে বলেন, আজ কি কারনে এরকম ব্যবস্থা করা হল তা আমরা জানিনা এবং  এরকম যে ব্যবস্থা করা হবে তাও আমাদের জানানো হয়নি। জানালে আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পারতাম। তিনি বলেন নিরাপত্তাকমীর দায়িত্ব হল আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। কিন্তু তারা যদি আমাদের হয়রানি করে, আইনজীবীদের  গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় এবং সাক্ষীকে ধরে নিয়ে যায় তাহলে সে নিরাপত্তা কর্মী কিসের জন্য?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ গাড়ি চেক করতেই পারে,   আগতদের পরিচয় জানতে চাইতে পারে। কিন্তু তারা আমাদের আইনজীবীদের সাথে আজ যা ব্যবহার করছে তা কোনমতেই  গ্রহণযোগ্য নয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দুজন আইনজীবীকে এখনো পুলিশ বাইরে আটকে রেখেছে। তাদেরকে ঢুকতে দিচ্ছেনা। বলা হচ্ছে  পাশ ছাড়া কারো ভেতরে যাবার অনুমতি নেই।  কিন্তু বাইরে তো  গেট পাশ সংগ্রহের কোন ব্যবস্থাই নেই।   ভেতরেই যদি প্রবেশ করতে না দেয়া হয় তাহলে সে পাশ সংগ্রহ করবে কিভাবে? তিনি বলেন আমাদের আইনজীবীদের সাথে একরকম এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সাথে আরেক রকম ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ অভিযোগের পর ট্রাইব্যুনাল রেজিস্ট্রার নাসরি উদ্দিনকে ডেকে পাঠান এবং এ বিষয়ে জানতে চান।
নতুন নিরাপত্তা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন আমরাই এ নির্দেশ দিয়েছি। আমরা ট্রাইব্যূনালকে হাট বানাতে দিতে চাইনা। আমরা দেখতে  পাই প্রতিদিন গাউন পরে অনেক লোক এখানে আসেন যারা  কোন পক্ষের আইনজীবী নন। তারা কিভাবে পাশ নিয়ে এখানে আসেন? আমরা আগেই বলেছি আসামীর আইনজীবী ছাড়া শেখার জন্য কেউ কেউ আসবেন। কিন্তু তার একটা মাত্রা তো থাকতে হবে। আমরা আপনাদের জন্য একশ আইনজীবী আসতে দিতে পারিনা।
তাজুল ইসলাম  গতকালের ঘটনার জন্য ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন   কারণ ট্রাইব্যুনাল বলেছেন তাদের নির্দেশেই গতকালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে।

সুখরঞ্জন বালী  কার সাক্ষী? সুখরঞ্জন বালী রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন।  তিনি এবং আরেক সাক্ষী গণেশ চন্দ্র সাহাকে আসামী পক্ষের সাক্ষী হিসেবে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করেছিলেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। এ বিষয়ে আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন আপনারা যাকে খুসী সাক্ষী হিসেবে আনতে পারেন তবে সমন জারি করা  হবেনা।  এরপর গত ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী  গণেশচন্দ্রকে হাজির করে আসামী পক্ষ  তিনি মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেন। সুখরঞ্জন বালী বিষয়ে আদেশের সময় ট্রাইব্যুনাল  তাকে আসামী পক্ষের সাক্ষী উল্লেখ না করেননি। মিজানুল ইসলাম বলেন   বালী রাষ্ট্রপক্ষের  সাক্ষী ছিলেন।    তিনি তাদের পক্ষে আসেননি।  তাকে আমরা আনার আবেদন করেছি এবং     ট্রাইব্যুনাল তা অ্যালাউ করেছেন। তিনি এখন  আমাদের  মানে আসামী পক্ষের সাক্ষী। তাকে সে হিসেবে উল্লেখ করা হোক। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল  তা গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মিজানুল ইসলাম বলেন ট্রাইব্যুনাল তাকে আসামী পক্ষের সাক্ষী উল্লেখ করুক বা না করুক তিনি  আসামীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসার পর আর কোন অবস্থাতেই রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী নন। তিনি আসামী পক্ষের সাক্ষী।

আমি সত্যিকথা কমু এজন্য তারা আমাকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আনেনাই

মেহেদী হাসান, ২/১১/২০১২
আমাকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে আনার জন্য যে কতবার সরকারী লোকজন বাড়িতে গেছে তার কোন গোনাবাছা নেই। ডিসি  অফিস, থানার ওসি, স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন বারবার বাড়িতে লোক পাঠাইছে  আমাকে যাওয়ার জন্য। অনেকবার পুলিশ গেছে। কোর্টের লোকজন গেছে ঢাকা থেকে। একবার দারোগা এসে হোন্ডায় করে পিরোজপুর থানায় নিয়ে গেল। তাদের সবার কথা একটাই। আমাকে বলতে হবে আমার মাকে সাঈদী সাহেব মারছে। আমি তাতে রাজি হইনি।  সে কারনে আমি সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আসি নাই। আমি সত্যিকথা কমু এজন্য তারা আমাকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আনেনাই। 

গনেশ চন্দ্র  সাহা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন। গত ২৩ অক্টোবর তিনি  আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (১)  হাজির হয়ে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন। 

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার পর আমি বিকালে একটি রুমে বসে গনেশের সাথে কথা বলি। জানতে চাই কেন তিনি রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হয়েও রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিতে না এসে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এলেন।  গনেশ চন্দ্র বলেন,  সরকার পক্ষের লোকজনের কথামত সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় বারবার তাদের বাড়িতে লোক পাঠানো হয়েছে।  থানায় নিয়ে তাকে টাকা সাধা হয়েছে তাদের কথামত সাক্ষ্য দেয়ার জন্য। একবার  রাতে তাকে   স্থানীয় সরকার সমর্থক লোকজন ধরে নিয়ে যায়।  কিন্তু তিনি তার মায়ের নামে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হননি। গণেশ জানান সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে না আসায়  তাকে  এলাকার আওয়ামী লীগের লোকজন রাজাকার ডাকে।

গনেশ বলেন, “একদিন পিরোজপুরের এক দারোগা  মটর সাইকেলে  করে থানায় নিয়ে গেল।  দারোগার নাম আমি জানি না। অনেক দূর নিয়া তিন তলায় উঠাইছে। কিছুক্ষণ পর  লোকজন আইসা আমার চারপাশে বইছে । তারা ঢাকার লোক। হেগো কতা আমি ভাল বুঝিনা।  উচা উচা লোক। এরপর জনাচারেক  পুলিশ আইছে ।  চারপাশে পুলিশ বইছে।  কতগুলা মেশিন পত্র ফিট করছে।  ফিট কইরা তারপর নানান কথা কইছে । আমার মায়ের  ঘটনাগুলো কইতে কইছে। পরে কওয়া ধরছি। পরে ঢাকার লোক  কয়- না, তোমার মায়রে  মারছে সাঈদী সাহেব।  আমারে কইতে কইল তুমি কবা তোমার মায়রে সাঈদী সাহেব মারছে।  আমি কইলাম, না সাঈদী সাহেব মারে নাই। তার নামে মিথ্যা কথা কইতে পারমু না। তারা বলছে হ তুমি কও, তোমারে পয়সা-পাতি দেব। আমি কইলাম কোন পয়সা পাতিতে কাজ হবেনা। তখন আমার সামনে  দুইটা ব্রিফকেস খুইল্লা টাহা দেখাইছে । আমারে কইল-এই টাকা নিয়া চইল্লা যাবা, তুমি নাম কও। মেলা সময় তোহাই মোহাইয়া কয়, তুমি বোঝ। আমি কইলাম আমার বোঝা হইয়া গেছে, আমি পারমু না। আপনার যা খুশি করতে পারেন। আমি  আমার মরা মায়রে বেচতে পারমু না। মরা মায়রে বেইচ্যা আমি খাবনা । আমি পারলাম না। এইটা বছর দেড় আগের ঘটনা।”
একথা বলার পর গনেশ চোখ মুছল মাথা নিচের দিক করে।

ঢাকা থেকে কোর্টের পরিচয়ে  বাড়িতে লোকজন যাওয়া প্রসেঙ্গ গণেশ চন্দ্র বলেন, “গত ফালগুনের আগের ফালগুনে ছয়জন আমার কাছে গেছে। গিয়ে খুব জোরাজুরি  করেছে। তারা কইল  তোমার মায় যে মারা গেছে তোমরা কি জান? আমি কইলাম   জানি;  খাতা মাতা বই পুস্তকে সবতায় আছে, আর্মিতে মাইররা হালাইছে, মিলিটারীতে মারছে আমার মায়রে।  সব কিছুই আছে। তারা বলতেছে- না, সাঈদী সাহেব মারছে। আমি মায়ের কথা বলতে পারমুনা, মরা মায়ের নামে মিথ্যা কথা বলতে পারমুনা। এই লইয়া বেশ তোহাই মোহাই কইররা তহন কইছে তয় কেডা মারছে? আমি কইলাম মারছে পাক সৈন্যতে। তারা কয়  তুমি এখন বিচার চাও? আমি কইলাম হ আমি বিচার চাই। পরে তারা বলছে তয় কও বিচার চাই বিচার চাই, বার বার কবা। পরে আমি বিচার চাই বিচার চাই, বার বার কইছি । ”

-    কিছুক্ষন থেমে গণেশ আবার  বলেন, “এইর মধ্যে এক রাইতে  স্থানীয় আর পিরোজপুরের আওয়ামী লীগের লোকজন আমারে ধইর‌্যা নিয়া গেছে। মটর সাইকেলে কইরা নিয়া গেল পিরোজপুর পর্যন্ত। রাস্তায় আমি কইলাম- আমারে  ছাড় নাইলে চিক মারমু (চিৎকার করব) । তারপর আমি ঐ জায়গা থেকে দৌড়াইয়া এক বাড়িতে গিয়া উঠছি।  সে আমারে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে নিয়া  গেল ভোরে।  উপজেলা চেয়ারম্যান মতি সরদাররে জানাইলাম যে, এই এই ঘটনা। মতি সরদার একজন মুক্তিযোদ্ধা। সে মোবাইল করল কাকে কাকে যেন। মোবাইলে কইল  তোরা গনেশের সাথে এসব  কি শুরু করছ।  ওকে কি তোরা এলাকায় থাকতে দিবিনা? ১৯৭১ সালে সাঈদীরে তো আমিই চিনতামনা, দেখিনাই।  ও   চেনবে  ক্যামনে?”
-    গনেশ বলল মতি চেয়ারম্যান একজন ভাল মানুষ। সেই প্রথমে আমারে খরব দেয় ঢাকার লোকজন সম্পর্কে। সে মনে করেছিল তারা আমার উপকারের জন্য আইছে। কিন্তু পরে বুঝল- না, ঘটনা অন্য রহম । রেহপর মতি শিকদার আমারে সাবধান করে দিয়া কইল-  এ ছ্যামড়া, তুই কি জান?  যা সত্যি তাই কবি। এর বাইরে কিছু কবিনা।  মনে সাহস রাখবি। উপরের দাত নিচে উড়াবিনা আর নিচের দাত উপরে তুলবিনা।
-    গনেশ এরপর বলতে লাগল -এর মাঝে একদিন পুলিশ আইছে আমাগো বাড়ী। আইসা আমারে ডাকাইয়া আনছে। আমি বাড়ী ছিলাম না বাইরে ছিলাম। পুলিশ কইছে, তোমার সাথে কিছু কতা আছে, আমি কইছি কোন কেস আছে নিহি? কয়, না কেস নাই। আমি কইলাম, তয় কন কি কতা? কয়, না এহন কবনা পরে এক সময় কব। ওসি সাহেব কতা হোনতে কয়। পরে  আর যাই নাই।”

-    গনেশ বলেন, “বহুবার লোক গেছে আমাকে আনার জন্য গেছে। ওর কোন গোনা-বাছা নাই। তাদের বক্তব্য একটাই যে, তারা যা বলবে তা বলতে হবে, তাদের এই কথায় আমি রাজী হইনাই। যার কারনে আমি আসি নাই।  ডিসি ও ওসি দিয়াও খবর দেওয়াইছে কিন্তু আমি রাজী হইনাই।  সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে না আসায় এলাকার আওয়ামী লীগের লোকজন আমারে কয় তুই রাজাকার। তোর সাঈদী তোরে বাঁচাইতে পারবেনা। সে যাইতে পারবেনা ইলেকশনে।  সে বের হইতে পারবেনা। আমরাই থাকব এলাকায়। তুই কয়দিন পলাইয়া থাকবি।   সাঈদী সাহেবের রেহাই নাই। ” 

-    গণেশের সাথে কথা বলা শেষে আমি আমার পকেটে হাত দিলাম। মাত্র একশ টাকার একটি নোট উঠল হাতে। আমি তা গনেশকে দিলাম চা খাওয়ার জন্য। গণেশ কেঁদে বলল, না লাগবেনা। আমারে যেদিন দারোগা থানায় নিয়ে গেল এবং পরে তাদের কতামত কতা কইতে রাজি না হয়ে চইল্লা আইতেছিলাম তহন থানার এক লোক আমার এক হাজার টাহা দিল। আমি কইলাম আমি টাহা নিমুনা। সে আমার পিডে আত দিয়া কইল তুই যে তোর মায়ের নামে মিথ্যা কইতে রাজি হওনি সেজন্য তোরে দিলাম। আমি খুসি হয়ে তোরে দিলাম। নিয়া যা। 

-    গনেশ চোখ মুছতে মুছতে বলল পরে আমি নিলাম।

মেহেদী হাসান, ২৩/১০/২০১২, মঙ্গলবার 
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ চাঞ্চল্যকর ঘটনার অবতারনা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের এক সাক্ষী সাক্ষ্য দিলেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে। সাক্ষীর নাম গণেশ চন্দ্র সাহা।  ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে  বর্বরোচিত  এবং নিমর্ম হত্যার  শিকার শহীদ ভাগীরথীর ছেলে  এই গণেশ চন্দ্র সাহা।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ভাগীরথীকে হত্যায় সহযোগিতার  অভিযোগ এনেছে রাষ্ট্রপক্ষ। যে ভাগীরথীকে   হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সেই ভাগিরথীর ছেলে এসে  সাক্ষ্য দিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে। তিনি বললেন মাওলানা সাঈদী তার মাকে মারেননি। পাকিস্তান আর্মিরাই তার মাকে মেরেছে।

কে এই গণেশ?
গণেশ চন্দ্র সাহা শুধু যে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী তাই নয়। যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন সেই ১৫ জনেরও একজন এই   গণেশ চন্দ্র  সাহা।

গত ২০ মার্চ  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে   ৪৬ জন সাক্ষীর বিষয়ে একটি দরখাস্ত দাখিল করা হয়  ট্রাইব্যুনালে । দরখাস্তে নিবেদন করা হয়  ৪৬ জন সাক্ষীকে  ট্রাইব্যুনালে হাজির করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। তাই এসব সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছে তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হোক।
৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জন সম্পর্কে দরখাস্তে রাষ্ট্রপক্ষ উল্লেখ করেছিল  আসামীর (মাওলানা সাঈদী) পক্ষ অবলম্বনকারী পিরোজপুরের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক সাক্ষীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকির  প্রেক্ষিতে ভয়ে ভীত হয়ে তারা আত্মপোগন করেছে। তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই তাদের হাজির করা সম্ভব নয়।

যে ১৪ জন সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষ এ দাবি করেছিল সেই ১৪ জনের একজন হলেন এই গণেশ চন্দ্র ।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের  প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল গত ২৯ মার্চ ১৫ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী প্রদান করেন তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে আদেশ দেন।  গণেশ চন্দ্রের নাম সেই ১৫ জনের তালিকায়ও রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষীর বিষয়ে বলেছিল মাওলানা সাঈদীর  পক্ষাবলম্বনকারী অস্ত্রধারী  সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত গোপন করেছে, তাদের খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা এবং আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় সেই গণেশ গতকাল মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজির হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেন।  


ভাগীরথী হত্যা বিষয়ে  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হল ভাগীরথী হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ।  এ বিষয়ক অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে-ভাগীরথী নামে একটি মেয়ে পাকিস্তান সেনা ক্যাম্পে কাজ করত। সাঈদী পাকিস্তানী সেনাদের খবর দেয় যে, ভাগীরথী  মুক্তিযোদ্ধাদের চর হিসেবে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পের খবর  মুক্তিযোদ্ধাদের পৌছে দেয়। এরপর পাকিস্তান সেনারা তাকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।

গণেশ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ : রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী অভিযোগ করে বলেন, সাক্ষী গণেশচন্দ্র সাহা পক্ষত্যাগকারী এবং বশিভূত। তাকে পক্ষত্যাগকারী  হিসেবে জরো করতে চাই।
 ট্রাইব্যুনাল বলেন, সে অনুমতি দেয়া হবেনা। তাকে আর আমরা আপনাদের সাক্ষী মানতে  রাজি নই। তাকে আপনারা আনেননি।  আমরা তাকে পক্ষত্যাগকারী বা  হস্টাইল কোনটাই বলবনা।
এরপর সৈয়দ হায়দার  আলী  জেরার সময় সাজেশন দিয়ে সাক্ষীকে বলেন, আপনি অর্থের বিনিময়ে পক্ষত্যাগ করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগ বিষয়ে সাংবাদিকরা  ট্রাইব্যুনাল শেষে তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের  টাকার অভাব নেই। সমস্ত  রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের পেছনে কাজ করছে। তারপরও যদি তারা বলে আমরা টাকার বিনিময়ে তাদের সাক্ষী আমাদের পক্ষে এনেছি তাহলে এর চেয়ে মিথ্যা কথা আর কি হতে পারে। তাজুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী তাদের কথামত মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি সে কারনে তারা তাকে আনেনি ।

গণেশের জবানবন্দী : আমার নাম গনেশ চন্দ্র সাহা। বয়স আনুমানিক ৫১ বছর।
আমার মা ভাগীরথী সাহা ১৯৭১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের বাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা থাকতো। আমার মা মেলেটারী ক্যাম্পে কাজ করতো। আমার মা ক্যাম্পের খবরা-খবর মুক্তিযোদ্ধাদের পৌঁছিয়ে দিতেন। মতিউর রহমান সরদার, কালু মোল্লা, জলিল মোল্লা, হানিফ খান এরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মতিউর রহমান সরদার বর্তমানে পিরোজপুর উপজেলা চেয়ারম্যান। মা রাতের বেলায় বাসায় আসত এবং সকাল বেলা ক্যাম্পে যেত। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমার মা কি কথা বলতেন তা আমাদের শুনতে দিতেন না। কিছুদিন পরে আমাদের গ্রাম বাগমারায় মিলিটারী আসে তখন মুক্তিবাহিনী ও মিলিটারীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। ১০ জন মিলিটারী মারা যায়। অস্ত্র ফেলে মিলিটারীরা পিরোজপুরে পালিয়ে যায়। আমার মা ঐ দিন পিরোজপুর ক্যাম্পে ছিলেন। ঐ দিন আমার মা বাড়ীতে ফিরে আসে নাই। তারপর দিন আমরা দুই ভাই মায়ের খোঁজে যাই। আমার অপর ভাইয়ের নাম কার্তিক চন্দ্র সাহা। তিনি বর্তমানে মৃত। বারটার দিকে আমরা শুনি এক মহিলাকে ধরে নিয়ে গেছে, তিনি আমার মা, আরো শুনি মিলিটারী তার কোমরে এবং পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে গাড়িতে করে টেনে নদীর ধারে নিয়ে গেছে। ওখানে গিয়ে দেখি মায়ের শরীর ক্ষত-বিক্ষত, গাড়ীতে ৫ জন লোক বসা। মাকে মেরে নদীর চড়ে ফেলে রেখেছে। ঐ ৫ জনের ভিতর ৪ জনের হাতে অস্ত্র, একজন ড্রাইভার সবাই খাকী পোশাক পরা। এই ৫ জনকে আমি চিনি না। এরা কি কথা বলতো তা বুঝতে পারি নাই। কিছুক্ষণ পরে তারা গাড়ী চালিয়ে চলে যায়। এদের সাথে কোন রাজাকারকে দেখি নাই। একজন কেও চিনতে পারি নাই।

এরপর মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের  প্রশ্নের  জবাবে গণেশ চন্দ্র সাহা বলেন, বছর দেড়েক আগে আমি জানতে পেরেছি এই মামলার আমি সাক্ষী।  বৈশাখ মাসের শেষে আমি জানতে পেরেছি। আমার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে সাংবাদিক এবং কোর্টের লোক আমার কাছে গিয়েছিল। তারা আমার কাছ থেকে এই মৃত্যুর কথা শুনে এসেছে। আমার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে আজকেই আমি প্রথম সাক্ষ্য দিচ্ছি।

আরেক প্রশ্নের  জবাবে গণেশ বলেন, আমি এই মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে বৈশাখ মাসের শেষে রফিক ভাই আমার সাথে দেখা করেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন আপনার মাকে কারা মেরেছে । আমি বলেছি মিলিটারীরা মেরেছে। তখন তিনি বলেছেন, না আরো অন্য মানুষেরাও মেরেছে। সত্য করে বল। তখন আমি বলেছি না শুধু পাক সৈন্যরাই মেরেছে। তখন তিনি বলেন, তুমি দিব্বি করে বল, কারা মেরেছে। আমি বলেছি  আমার মায়ের মৃত্যুর কাহিনী নাটক নোভেলে আছে, সবাই দেখেছে, প্রতি বছর হচ্ছে এসব।  পাকিস্তানী সৈন্যরাই আমার  মাকে মেরেছে। এরপর রফিক ভাই আবারো বলেন, আমার বাবা কি আপনার মাকে মেরেছে? আমি তাকে জিজ্ঞাস করি আপনার বাবা কে? উনি বলেন সাঈদী সাহেব, তখন আমি বলি না উনি আমার মাকে মারেন নি।

জেরা :
প্রশ্ন : রফিকভাইকে কতদিন ধরে রফিক ভাই ডাকেন?
উত্তর : রফিক ভাই একদিনই আমাদের বাড়িতে গিয়েছেন এবং তাকে আমি একদিনই দেখেছি।
প্রশ্ন : সেটা কবে?
উত্তর : বৈশাখ মাসের শেষ দিকে পিরোজপুরে তিনি ওয়াজ অথবা মাফেল  করতে যান। তখনকার ঘটনা এটি।
প্রশ্ন : বৈশাখ মাস এখন থেকে  কতদিন আগে হবে?
উত্তর : সাত মাস আগে ছিল।
প্রশ্ন : ওয়াজ শুনতে গেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনাকে পেলেন কিভাবে?
উত্তর : উনি আমাদের বাড়ি যাওয়ার পরে আমি মাঠে ছিলাম, মোবাইলে আমাকে ডেকে নিয়ে এসেছেন
প্রশ্ন : ওনার সাথে আর কেউ ছিলেন?
উত্তর  :  আরেকজন  গিয়েছিল।
প্রশ্ন : তাকে চেনেন?
উত্তর :  চিনি, তার নাম নান্না, রফিক ভাইয়ের মামা না কি হয়।
প্রশ্ন : আর কেউ গিয়েছিল?
উত্তর : ঐদিন ছাড়া আমার কাছে কেউ আর কোনদিন যায় নাই।
প্রশ্ন : কেন সে এক:থা আপনাকে  জিজ্ঞাসা করছেন তা জানতে চেয়েছিলেন?
উত্তর : হ্যা।  তিনি বলেনম, তোমার মাকে কে মেরেছে তাতো জানি না, তাই জানতে এসেছি, আমার জানার দরকার আছে।
প্রশ্ন : এতদিন পরে কেন জানতে আসছেন এ কথা তাকে জিজ্ঞাসা করেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তিনি অন্য কোন বাড়িতে গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনার মায়ের নামে পিরোজপুরে ভাগীরথী চত্ত্বর আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : কোর্টের লোক কদ্দিন আগে গেল আপনার কাছে?
উত্তর : গত ফাল্গুনে কোর্টের লোক আমার নিকট গিয়েছিল। গিয়ে বলেছে আমরা কোর্টের লোক, কোর্ট থেকে তদন্তের জন্য এসেছি।
প্রশ্ন : যে গিয়েছিল সে তার পরিচয় দিয়েছিল বা নাম বলেছে?
উত্তর :  নাম ধাম বলেন নাই, তারা বলেছিল তারা ঢাকা থেকে এসেছেন, আমিও তাদেরকে নাম জিজ্ঞাসা করি নাই। এক সপ্তাহ পরে উনারা আবার গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন : আপনার মাকে কাহারা মেরেছে বা কি কি ঘটনা ঘটেছিল তা আপনি  কোর্টের লোকদের কাছে বলেছেন?
উত্তর :  হ্যা।
প্রশ্ন : যুদ্ধের সময় রাজাকার দেখেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : শুনেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : যুদ্ধটা কিসের যুদ্ধ ছিল?
উত্তর : মুক্তিবাহিনী আর মিলিটারির মধ্যে  গোলাগুলি হইছে এটা বুঝেছি।
প্রশ্ন : রাজাকারদের বিষয়ে কি শুনেছেন?
উত্তর : তারা লোকদের ধরে ধরে নিয়ে মারত (হত্যা করত) , মারতে সাহায্য করত।
প্রশ্ন :   যে মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসেছেন সে মামলার আসামী কে?
উত্তর : সাঈদী সাহেবের ছেলে বলছে তুমি আমার বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেছ কি-না। আমি বলেছি করিনাই। তিনি বলেছেন কোর্টে গিয়ে একথা বলতে পারবা? আমি বলেছি পারব। সেকথা বলতেই আমি এসেছি।
প্রশ্ন : আপনার মায়ের হত্যা বিষয়ে পাড়েরহাটের  সাঈদী সাহেবের প্রত্যক্ষ হাত ছিল।
উত্তর : এটা মিথ্যা।
প্রশ্ন : একথাগুলো না বলার জন্য রফিক এবং তার মামা আপনাকে টাকা পয়সা দিয়ে বশীভূত করে সাক্ষ্য  দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছে।
উত্তর : আপনি এটা ভুল বুঝলেন। এটা ভুল।
প্রশ্ন : আপনি অর্থের বিনিময়ে  পক্ষ ত্যাগ করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।

তাজুল ইসলামের প্রতিকৃয়া :
গণেশচন্দ্র সাহার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে যে কারণ  বলেছিল তা মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। তারা বলেছিল  মাওলানা সাঈদীর সন্ত্রাসীদের ভয়ে সাক্ষীরা নিখোঁজ। সেই সাক্ষী আজ ট্রইব্যুনালে এসে তার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়ে গেলেন অত্যন্ত সাহসের সাথে। মায়ের নির্মম হত্যার বিবরন দিতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
তাজুল ইসলামকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে আপনারা তাকে টাকার বিনিয়ে পক্ষ ত্যাগ করিয়েছেন।
জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা আছে।  সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করছে তাদের পক্ষে। তারপরও আমরা  তাদের সাক্ষী টাকার বিনিময়ে এনেছি এর চেয়ে মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ আর কি  হতে পারে। আমরা আগেও বলেছি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার।
তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হয়  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তিনি তার মায়ের হত্যার বিষয়ে সাঈদী সাহেব জড়িত বলে জবানবন্দী দিয়েছেন মর্মে রেকর্ড করা আছে । সেটি তাহলে কি।
তাজুল ইসলাম বলেন, গণেশচন্দ্র সাহা তার মায়ের হত্যা বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সত্য সাক্ষ্য দিয়েছিলেন  । কিন্তু সে কথা  সেভাবে লেখা হয়নি।   তিনি তার মায়ের হত্যা বিষয়ে সত্য সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিলেন কোর্টে এসে।  তাকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়েছিল সাঈদী সাহেবকে জড়িয়ে । কিন্তু  তাতে তিনি রাজী হননি  বিধায় তাকে রাষ্ট্রপক্ষ কোর্টে আনেনি এবং বলেছে তাকে পাওয়া যাচ্ছেনা। সাঈদীর সন্ত্রাসীর ভয়ে সে নিখোঁজ।

ভাগীরথী হত্যাকান্ড এবং  স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র :
ভাগীরথীর হত্যাকান্ড বিষয়ে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় একটি রিপোর্ট ছাপা হয় “বর্বরতার রেকর্ড” শিরোনামে । সে রিপোর্টটি  কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র নামক মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রমান্য   গ্রন্থে  হুবহু  স্থান পায়। রিপোর্টটি নিচে তুলে ধরা হল হেডলাইনসহ।

বর্বরতার রেকর্ড
॥ রহিম আজাদ প্রদত্ত ॥
বরিশাল :  ‘মহাদেবের জটা থেকে ‘নয় বাংলা মায়ের নাড়ী ছিঁড়ে জন্ম দিয়েছিলেন যে সোনার মেয়ে সে ভাগীরথীকে ওরা জ্যান্ত জীপে বেঁধে শহরের রাস্তায় টেনে টেনে হত্যা করেছে। খান দস্যুরা হয়তো পরখ করতে চেয়েছিল ওরা কতখানি নৃশংস হতে পারে। বলতে হয় সেক্ষেত্রে ওরা শুধু সফলই হয়নি, বর্বরতার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অষ্টাদশী ভাগীরথী ছিল বরিশাল জেলার পিরোজপুর থানার বাঘমারা কদতলীর এক বিধবা পল্লীবালা। বিয়ের এক পর পর একটি পুত্র সন্তান কোলে নিয়েই তাকে বরণ করে নিতে হয় সুকঠিন বৈধব্য।
স্বাীর বিয়োগব্যথা তাঁর তখনও কাটেনি। এরই মধ্যে দেশে নেমে এল ইয়াহিয়ার ঝটিকা বাহিনী। গত মে মাসের এক বিকেলে ওরা চড়াও হলো ভাগীরথীদের গ্রামে। হত্যা করলো অনেককে যাকে সেখানে যেভাবে পেলো। এ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও ভাগীরথীকে ওরা মারতে পাররো না। ওর দেহলাবণ্য দস্যুদের মনে যে লালসা জাগিয়েছিল তাতেই হার মানল তাদের রক্তপিপাসা। ওকে ট্রাকে তুলে নিয়ে এল পিরোজপুরে। তারপর ক্যাম্পে তার উপর চালানো হলো হিংস্র পাশবিক অত্যাচার।
সথী নারী ভাগীরথী। এ পরিস্থিতিতে মৃত্যকে তিনি একমাত্র পরিত্রাণের উপায় বলে ভাবতে লাগলেন। ভাবতে ভাবতেই এক সময় এল নতুন চিন্তাÑ হ্যাঁ মৃত্যুই যদি বরণ করতে হয় ওদেরইবা রেহাই দেবো কেনো? ভাগীরথী কৌশলের আশ্রয় নিল এবার। এখন আর অবাধ্য মেয়ে নয় দম্ভরমত খানদের খুশী করতে শুরু করলো, ওদের আস্থা অর্জনের আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগলো।
বেশি দিন লাগলো না অল্প ক’দিনেই নারীলোলুপ ইয়াহিয়া বাহিনৗ ওর প্রতি দারুণ আকর্ষণ অনুভব করলো। আর এই সুযোগে ভাগীরথী ওদের কাছ থেকে জেনে নিতে শুরু করলো পাক বাহিনীর সব গোপন তথ্য। এক পর্যায়ৈ বিশ্বাসভাজন ভাগীরথীকে ওরা নিজের ঘরেও যেতে দিলো। আর কোনো বাধা নেই। ভাগীরথী এখন নিয়মিত সামরিক ক্যাম্পে যায় আবার ফিরে আসে নিজ গ্রামে।
এরই মধ্যে চতুরা ভাগীরথী তার মূল লক্ষ্য অর্জনের পথেও এগিয়ে গেল অনেকখানি। গোপনে মুক্তিবাহিনীর সাথে গড়ে তুলল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।
এরপরই এল আলস সুযোগ। জুন মাসের একদিন ভাগীরথী খান সেনাদের নিমন্ত্রণ করলো তার নিজ গ্রামে। এদিকে মুক্তিবাহিনীকেও তৈরি রাখা হলো  যথারীতি। ৪৫ জন খান সেনা সেদিন হাসতে হাসতে বাগমারা কদমতলা এসেছিল কিন্তু তার মধ্যে ৪/৫ জন ক্যাম্পে ফিরতে পেরেছে বুলেটের ক্ষত নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে। বাকিরা ভাগীরথীর গ্রামেই শিয়াল কুকুর শকুনের খোরাক হয়েছে। এরপর আর ভাগীরথী ওদের ক্যাম্পে যায়নি। ওরা বুঝেছে, এটা তারই কীর্তি। কীর্তিমানরা তাই হুকুম দিল জীবিত অথবা মৃত ভাগীরথীকে যে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে নগদ এক হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
কিন্তু ভাগীরথী তখনও জানতো না ওর জন্য আরো দুঃসহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। একদিন হাটবারে তাকে শহরের রাস্তায় এনে দাঁড় করানো হলো জনবহুল চৌমাখায়। সেখানে প্রকাশ্যে তার অঙ্গাবরণ খুলে ফেলল কয়েকজন খান সেনা। তারপর দু’গাছি দড়ি ওর দু’পায়ে বেঁধে একটি জীপে বেঁধে জ্যান্তে শহরের রাস্তায় টেনে বেড়াল ওরা মহাউৎসবে। ঘণ্টাখানেক রাজপথ পরিক্রমার পর আবার যখন ফিরে এল সেই চৌমাথায় তখনও রর দেহে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে।
এবার তারা দু’টি পা দু’টি জীপের সাথে বেঁধে নিল এবং জী দু’টিকে চালিয়ে দিল বিপরীত দিকে। ভাগীরথী দু’ভাগ হয়ে গেল। সেই দু’ভাগে দু’জীপে আবার শহর পরিক্রমা শেষ করে জল্লাদ খানরা আবার ফিরে এল সেই চৌমাথায় এবং এখানেই ফেরে রেখে গেল ওর বিকৃত মাংশগুলো।
একদিন দু’দিন পরে মাংসগুলো ঐ রাস্তার মাটির সাথেই একাকার হয়ে গেল এক সময়। বাংলামায়ের ভাগীরথী এমনিভাবে আবার মিশে গেল বাংলার ধূলিকণার সাথে। কেবল ভাগীরথী নয়, আরো দু’জন মুক্তিযোদ্ধাকেও রা এমনি করে পিরোজপুর শহরে হত্যা করে।

১৫ সাক্ষী থেকে সেফ হাউজ ডায়েরি : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  গণেশ চন্দ্রসাহাসহ  ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী  তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের  পর থেকে  সে  আদেশ পুনরায় বিবেচনার জন্য আসামী পক্ষ দীর্ঘ আইনী লড়াই করেছেন। সর্বশেষ তারা সেফ হাউজের ডকুমেন্ট হাতে পাবার পর  গত
৯ মে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। গত ৩রা জুন এ বিষয়ে শুনানীর সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের সমস্ত কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে  বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে  কারণ দাবি করছেন তা    সম্পূর্ণ মিথ্যা। যে ১৫ জনের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে তাদের মধ্যকার  বেশ কয়েকজন সাক্ষীসহ  রাষ্ট্রপক্ষের আরো অনেক সাক্ষী  হেফাহাউজে   (ঢাকায় যেখানে সাক্ষী  এনে রাখা হত)   রাখা হয়েছিল। কিন্তু তারা তাদের শেখানো মতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় তাদেরকে  কোর্টে  আনেনি তারা । 

গত ১২ জুলাই ট্রাইব্যুনাল রিভিউ আবেদন খারিজ করে  দেন ।
তাজুল ইসলাম   আমাকে  বলেন, আমরা  প্রমানসহ বলেছিলাম রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে যেসব কারণ এবং অভিযোগ  উল্লেখ করেছে তা মিথ্যা।  আজ আমরা সেই ১৫ সাক্ষীর একজন গণেশকে হাজির করে আরো একবার তাদের দাবি মিথ্যা প্রমান করলাম। মাওলানা সাঈদীল পক্ষে আরো অনেকে সাক্ষ্য দিতে চান। কিন্তু  নিরাপত্তার কারনে তারা সময়মত আসতে পারছেননা। সময় এবং সুযোগ পেলে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমান করতে পারব।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  সাক্ষী হাজিরের  আজই  ছিল শেষ সুযোগ। ১৭ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে  ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ  কোজড।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন,   বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, মনজুর আহমেদ আনসারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


রাষ্ট্রপক্ষের আরো ৩ সাক্ষীকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজিরের জন্য আবেদন

মেহেদী হাসান, ৪/১১/২০১২
রাষ্ট্রপক্ষের আরো  তিনজন  সাক্ষীকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করা হয়েছে আসামী পক্ষ থেকে। এরা হলেন  সুমতী রানী মন্ডল, সমর মিস্ত্রী এবং আশিষ কুমার মন্ডল।  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ  এ আবেদন পেশ করা হয়।

তদন্ত কর্র্মকর্তার কাছে প্রদত্ত যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে  আদালত মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করেছেন উক্ত তিনজনই সেই ১৫ জনের অন্তর্ভুক্ত।

আবেদন বিষয়ে আজ  শুনানী অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।
এর রাগে রাষ্ট্রপক্ষের  দুজন সাক্ষীকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করা হয়েছিল। তারা হলেন গণেশ চন্দ্র সাহা এবং সুখরঞ্জন বালী। এরাও ১৫ জনের  জনের অন্তর্ভুক্ত।

ট্রাইব্যুনাল এ আবেদন বিষয়ে আদেশে বলেছিলেন আসামী পক্ষ যাকে খুসী সাক্ষী হিসেবে হাজির করতে পারে কিন্তু কোর্ট থেকে  এ বিষয়ে কোন সমন জারি করা হবেনা।  এদের মধ্যে শহীদ ভাগীরথী সাহার ছেলে গণেশ চন্দ্র সাহা গত ২৩ অক্টোবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে মাওলানা সাঈদীর  পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

এদিকে আগামীকাল সোমবার   মাওলানা সাঈদীর মামলায় আর্গুমেন্ট বা যুক্তিতর্ক শুরু হবার জন্য নির্ধারিত রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের  জন্য প্রথমে আর্গুমেন্ট পেশ করার কথা রয়েছে।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  আজ এ বিষয়ে  একটি আবেদন করা হয়েছে । সেটি হল আসামী পক্ষকে প্রথমে আর্গুমেন্ট পেশ করার সুযোগ দেয়া হোক। 

গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন পেশ করা হয়। আবেদনে বলা হয়  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  ৪৬ জন  সাক্ষীকে  হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই  ৪৬ জন সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে  জবানবন্দী  দিয়েছেন তা  তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক।

আবেদনে ৪৬ জন সাক্ষীর  মধ্যে ১৯ জনকে ঘটনার সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ১৯ জন সাক্ষীর মধ্য থেকে ১৫ জনের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে ২৯ মার্চ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দরখাস্তে ১৯ জন ঘটনার সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে বিভিন্ন কারণ  উল্লেখ করা হয়েছিল।  এদের মধ্যে পাঁচজনকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে বলা হয়েছে তারা নিখোঁজ।  ১৪জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। মাওলানা সাঈদীর পক্ষের অস্ত্রধারীদের হুমকির কারনে  তারা আত্মগোপন করেছে।  নিখেঁাঁজ  পাঁচ জনের তিনজন গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে। এছাড়া একজনের স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে এবং বয়স ও অসুস্থতাজনিত কারনে ভ্রমনে মৃত্যুর ঝুকি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আশিষ কুমার মন্ডল, সুমীত রানী মন্ডল এবং সমর মিস্ত্রী  সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের দরখাস্তে বলা হয়েছিল  তারা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নিখোঁজ। সম্ভবত তারা গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে। সেই সাক্ষীদেরই মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজিরের জন্য আবেদন করা হল আসামী পক্ষ থেকে।


মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১৬ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ :

মেহেদী হাসান, ২১/১০/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ  ১৬ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া  ১৩ তম এবয় ১৫ তম সাক্ষীর জেরাও শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যনালের আদেশ ছিল গতকাল মাওলানা সাঈদীর  পক্ষে বাকী  পাঁচজন সাক্ষী হাজির করার। তা নাহলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ  বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু গতকাল মাওলানা সাঈদীর পক্ষে একজন মাত্র নতুন সাক্ষী হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন আজ  সোমবার এ বিষয়ে আদেশ দেয়া  হবে।


১৬ তম সাক্ষীর জবানবন্দী :
আমার নাম আব্দুল হালিম ফকির। বয়স ৫৫ বৎছ। আমার গ্রাম টেংরাখালী, থানা- জিয়ানগর, জেলা- পিরোজপুর। আমি বর্তমানে সাংসারিক, কৃষি কাজ করি। ১৯৭১ সালে আমি নবম শ্রেণীতে পড়াশুনা করতাম। আমি এস,এস,সি পাশ করেছি। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের টেংরাখালী গ্রামে রাজাকার, পিস কমিটি ও পাক বাহিনীর কোন লোক প্রবেশ করে নাই এবং কোন বাড়িঘর লুটতরাজ হয় নাই, কোন লোক নির্যাতিত হয় নাই। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেলোয়ার হোসেন সাইদী সাহেব রাজাকার ছিলেন না, পিস কমিটির সদস্য ছিলেন না,স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন না, মানবতা বিরোধী কোন কাজ তার দ্বারা হয় নাই।

জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।


বেডে শুয়ে সাক্ষ্য গ্রহনের ব্যবস্থার নির্দেশ ট্রাইব্যুালের

মেহেদী হাসান, ১৮/১০/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষী যাতে  আগামী রোববার  বিছানায়  শুয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন সেজন্য ট্রাইব্যুনাল কক্ষে সিক বেডের ব্যবস্থা গ্রহনের  জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

গত বুধবার মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১৫ তম সাক্ষী হিসেবে  জবানববন্দী প্রদান করেন  আব্দুস সালাম হাওলাদার। কিন্তু জবানবন্দীর পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওই দিন আর তার জেরা করা সম্ভব হয়নি। গতকালও তিনি অসুস্থ থাকায় আসামী পক্ষ তাকে কোর্টে  হাজির করেনি।
এ এছাড়া  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে   অন্য কোন নতুন সাক্ষীও  গতকাল    হাজির করেনি আসামী পক্ষ। এ প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়ে বলেন, আগামী  রোববার বাকী পাঁচ জন সাক্ষীকে  হাজির করতে হবে।  একই সাথে  অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষী যাতে বিছানায় শুয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন সে মর্মে  সিকবেড প্রস্তুত রাখার জন্য  রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ২৩ তম সাক্ষী মধুসূদন ঘরামীকে  ট্রাইব্যুনালে সিক বেডে রেখে ডাক্তারের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

সকালে মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম শুরু হলে  মামলার তদ্বিকারক মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী  কাঠগড়ায় যান। তিনি মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেছেন এবং তার অসমাপ্ত জেরা শুরু হবার কথা ছিল গতকাল। তাকে জেরার শুরুতে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে প্রশ্ন করেন আপনাদের বাকি সাক্ষীদের খবর কি? মিজানুল ইসলাম বলেন, ১৫ তম সাক্ষী এখনো সুস্থ হয়নি। এছাড়া আমাদের হাতে আজ আর কোন নতুন সাক্ষী নেই। এরপরই ট্রাইব্যুনাল আদেশ প্রদান করেন।

আদেশ :
ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেন, আসামী  পক্ষকে সাক্ষী হাজিরের জন্য যথেষ্ঠ সময় এবং সুযোগ দেয়া হয়েছে।  আসামী পক্ষ জানিয়েছেন তাদের ১৫ তম সাক্ষী অসুস্থ। আমরা তার অসুস্থতা নিয়ে কোন কথা বলতে চাইনা। আমরা রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিচ্ছি এখানে একটি সিক বেডের ব্যবস্থা করতে যাতে অসুস্থ সাক্ষী আগামী রোববার বেডে  শুয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন।
এরপর ট্রাইব্যুনাল বলেন, আগামী রোবার তাদের বাকী পাঁচজন সাক্ষী হাজির করতে  হবে। যদি ওইদিন তারা সব সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের ভবিষ্যতে  আর নতুন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবেনা। তাদেরকে সাক্ষী আনার জন্য আর কোন সময়ও দেয়া হবেনা।
 এরপর মাসুদ সাঈদীর জেরা শুরু হয়।  গতকাল তাকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী। সারাদিন তার জেরা চলে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য  জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।


১৫ তম সাক্ষীর অসুস্থতা প্রসঙ্গ :
গত বুবধবার সকালে  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১৪ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল বলেন পরের সাক্ষী নিয়ে আসেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী অসুস্থ। তবে তিনি  কোর্টে   এসেছেন।  আজ তার

সাক্ষ্য না নিলে ভাল হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন, নিয়ে আসেন তাকে। মিজানুল ইসলাম বারবার  আপত্তি জানিয়ে বলেন, আজ থাক। তবে ট্রাইব্যুনাল আপত্তি না শুনে সাক্ষী হাজিরের নির্দেশ দেন।

দুপুর একটার দিকে  ১৫ তম সাক্ষী আব্দুস সালামের  জবানবন্দী শেষ হয়। এরপর এক ঘন্টার বিরতি দেয়া হয়। বিরতির পর সাক্ষীকে যখন কোর্টে হাজির করা হয় তখন সে অসুস্থ। কাঠগড়ায় মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকেন।  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা  জানান বিরতির সময় তার বমি হয়েছে। এসময়  ট্রাইব্যুনাল কিছূক্ষন সময় নেন সাক্ষী যাতে স্বাভাবিক বোধ করেন সেজন্য।  ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের কাছে  জানতে চান সাক্ষীকে স্যালাইন বা কোন ঔধষ খাওয়ানো হয়েছে কি-না। বা অন্য কোন খাবার খাওয়নো হয়েছে কি-না। আইনজীবীরা জানান,  না । স্যালাইন, ঔষধ খাওয়ানো হয়নি। অন্য খাবার খেতে পারছেনা। এরপর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রাই্যুনালের কোথায় কি হয় সব আমার নজরে আসে।  আমার নজরে আনা হয়। ডিফেন্স রুমে একজন সাক্ষী এভাবে অসুস্থ হয়ে  পড়লেন আর আপনারা আমাদের কিছুই জানালেননা। এটা কি ঠিক করলেন আপনারা?  আপনাদের পাশের রুমেই সহকারি রেজিস্ট্রারের অফিস তাকেও জানাতে পারতেন অন্তত।
মিজানুল ইসলাম বলেন, মনে করেছিলাম বমি বন্ধ হলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু হলনা।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সকালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় তো দেখে ভালই মনে হয়েছিল।
এরপর আবার কিছুক্ষন  সময় দেয়া হয় সাক্ষীকে যাতে সে সুস্থতা বোধ করেন সেজন্য।  কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকেন কোর্ট।
বিচারপতি নিজামুল হক সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি সাক্ষ্য দিতে পারবেন? সাক্ষী বলেন, স্যার আমি এখন পারবনা। একটু সময় দিলে ভাল হয়।
বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, সময় দেয়া হবেনা। পারলে এখন সাক্ষ্য  দেবেন। না হলে বাড়ি চলে যাবেন।  ল ইউলি টেক ইট অউন কোর্স।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, ঠিক আছে সাক্ষীকে নিয়ে যান।
দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে সাক্ষীকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে  বলেন, মি মিজানুল ইসলাম, ২০ জন সাক্ষী হাজির করা আপনাদের পার্ট। দায়িত্ব আপনাদের। এখন অন্য সাক্ষীর (১৩ তম সাক্ষী মাসুদ সাঈদী) জেরা হবে।  এর মধ্যে যদি ওই সাক্ষী সুস্থ হয় তাহলে তার সাক্ষ্য হবে। তা না হলে ল ইউল টেক ইট অউন কোর্স। আপনি জানেন হোয়াট  ইজ ল। পরের সাক্ষী ডকেন।

এরপর ১৩ তম সক্ষিী মাসুদ সাঈদীর অসমাপ্ত  জেরা শুরু হয়।  সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলে জেরা। তখনো তার জেরা শেষ না হওয়ায় বুধবার আর অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষীকে আর ডাকা হয়নি ।

মাসুদ সাঈদীকে বুধবারের জেরা :
প্রশ্ন : আপনারা কয় ভাইবোন?
উত্তর : আমরা চার ভাই। বোন নেই। সম্প্রতি আমার বড় ভাই মারা গেছেন।
প্রশ্ন :   তিন ভাই কোথয় কি পড়াশুনা  করেছেন একটু বলেন।
উত্তর : বর্তমানে বড়ভাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করেছেন।  তারপর আমি তিতুমীর কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি। পরে নিউইয়কের লাগুনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছি। আমার ছোট ভাই সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসি পাশের পর লন্ডনে অথর্নীতিতে পড়াশুনা শেষ করেছে । তবে কলেজের নাম এ মুহুর্তে মনে করতে পারছিনা।
প্রশ্ন : কার কি পেশা ?

উত্তর : বর্তমান বড়ভাই ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করেন। টিকেটিং হজ্ব ওহমরাহ। আমি রিয়েল  এস্টেট ব্যবসা করি।  ছোট ভাই লন্ডনে একটি ফার্মে চাকরি করে।
প্রশ্ন : আপনার দাদার বাবার নাম কি?
উত্তর : গোলাম রহমান সাঈদী।
প্রশ্ন : আপনার বাবার লেখালেখি বা বই আছে?
উত্তর : হ্যা। আমার আব্বার লেখা ৭২টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন : ওনার পেশা কি?
উত্তর : লেখক।
প্রশ্ন : এছাড়া তার অন্য কোন পেশা নেই এবং অতীতেও ছিলনা।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : আপনার সাথে সিতারা বেগমের দেখা হয়নি।
উত্তর : না। মামলার (সিতারা বেগমের মেয়ে মমতাজ বেগম তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি, এবং ভাই সাহেব আলী হত্যার বিচার চেয়ে ১৯৭২ সালে  মমতাজ বেগম যে মামলা করেছিল তার কপি) কপিটি আমি আমার বড় ভাইর কাছ থেকে পেয়েছি।
প্রশ্ন : আপনার বড় ভাইর মুত্যৃ হয়েছে কবে?
উত্তর : গত ১৩ জনু। চার মাস আগে।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম বিষয়ে আপনার সাথে আপনার বড় ভাইর কথাবার্তা হয়েছে?
উত্তর : না। তবে সম্ভবত মমতাজ বেগম তার মায়ের কাছ থেকে মামলার কপিটি এনে আমার ভাইকে দিয়েছেন।
প্রশ্ন : কাগজটি কে কখন তুলেছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : প্রদর্শনী-  এ (মামলার কপি) তে সাহেব আলী বা সাহাবউদ্দিন নাম লেখা আছে?
উত্তর : না। তবে সিরাজ আলী  লেখা আছে।
প্রশ্ন : প্রদশর্নী  -- এ’তে এক নং আসামী হিসেবে পাকিস্তানী সৈন্য পিরোজপুর ক্যাম্প লেখা আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : মামলার কপির প্রত্যেক পাতার পেছনে কোন লেখা বা স্বাক্ষর  আছে?
উত্তর : সিল মারা আছে। কোন লেখা বা স্বাক্ষর নেই।
প্রশ্ন : মামলার এ সাটিফাইড কপিটি সম্পূর্ণরুপে  অত্র মামলার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এবং   কপির ভেতরে উল্লিখতি  মামরার কোন অস্তিত্ব নেই।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম বা মমতাজ বেগমের পরিবারের সাথে আপনার বড় ভাইর ভাল সম্পর্ক ছিল।
উত্তর : না। তবে সিতারা বেগমের ছেলে মোস্তফা হাওলাদারের সাথে আমার ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম ও মোস্তফা হাওলাদার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনাদের কারনেই তারা সাক্ষ্য দিতে আসেননি।
প্রশ্ন : সত্য নয়। তবে অসত্য সাক্ষ্য দিতে রাজী না হওযায় তারা আসেনি।

বিদেশী সাক্ষী আনতে সমন জারির আবেদন খারিজ :
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে  ন্যাটোর সাবেক এক জেনারেলসহ দুজন বিদেশী সাক্ষী  মেনেছিল আসামীপক্ষ। তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য  সমন জারির  প্রার্থনা করে আবেদন করেছিল অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষের আইনজীবীরা। গতকাল সে আবেদন  খারিজ করে দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামী পক্ষ যাকে  খুসী সাক্ষী আনতে পারবেন। সেটি তাদের বিষয়। এরপর সমন জারির আবেদন খরিজ করে দেন।



মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ২ আরো সাক্ষীর জবানবন্দী

মেহেদী হাসান, ১৭/১০/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ  দুজন সাক্ষীর জবানবন্দী  গ্রহণ করা হয়েছে। এরা হলেন ১৪ তম সাক্ষী যশোরের এমরান হোসাইন এবং ১৫ তম সাক্ষী পিরোজপুরের আব্দুস সালাম হাওলাদার।
সাক্ষী আব্দুস সালাম হাওলাদার ১৯৭১ সালে পাড়েরহাট বাজারে তার পিতার দোকানে মাঝে মাঝে বসতেন বলে জানান।  ১৯৭১ সালে ৭ মে পাড়েরহাট বাজারে পাকিস্তান আর্মির আগমন এবং শান্তি কমিটির লোকজন কর্তৃক  পাড়েরহাট বাজারে লুটপাটের বিবরন দেন। সাক্ষী বলেন, পাড়েরহাট বাজারে  ৭ মে শান্তি কমিটির লোকজন, আর্মি এবং পরবর্তীতে রাজাকারদের সাথেও তিনি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেখেননি।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ১৯৭১ সালের মে মাসে  পাড়েরহাটে আর্মি আসার পর শান্তি কমিটির লোকজনের সাথে মাওলানা সাঈদী পাকিস্তান আর্মিকে অভ্যর্থনা জানান । এরপর পাকিস্তান আমি, শান্তি কমিটির অন্যান্যদের সাথে নিয়ে মাওলানা সাঈদী পাড়েরহাট  বাজারসহ আশপাশের অনেক এলাকায় লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যাকান্ড চালান।

১৫ তম সাক্ষীর জবানন্দী :
আমার নাম আব্দুস সালাম হাওলাদার, বয়স ৬৫ বছর।  গ্রাম বাদুরা, থানা ও জেলা পিরোজপুর। আমি গৃহস্থ  কাজ করি।  ১৯৭১ সালে পাড়েরহাট বাজারে আমার আব্বার দোকান ছিল আমি সেই দোকানে মাঝে মাঝে বসতাম। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। ৭ই মে তারিখে পাক সেনারা পাড়েরহাটে আসে। তাদের সহযোগিতায় পাড়েরহাটের কিছু সংখ্যক লোক দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, গণি গাজি, আসমত আলী মুন্সি, মালেক শিকদার পাড়েরহাটের ৫/৬টি হিন্দুর দোকান লুট করে। লুটপাটের পরে পাক সেনারা আবার পিরোজপুরের দিকে রওনা করে যায়। যাদের দোকান লুট করে তারা হলেন মাখন সাহা, নারায়ন সাহা, মদন সাহা, বিজয় মাস্টার, গৌরাঙ্গ পাল প্রমুখ। লুটপাটের পরের দিন আবার পাক সেনারা পাড়েরহাটে আসে। তখন ঐ সমস্ত লোকজন যথা  দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, গণি গাজি, আসমত আলী মুন্সি, মালেক শিকদারদের সাহায্যে  আর্মি ব্রীজ পার হয়ে দক্ষিণ পার্শ্বে আমার চাচা নুরু খান সাহেবের বাড়িতে ঢোকে। পিস কমিটির সদস্যরা ঐ বাড়ি পাক সেনাদের দেখিয়ে দেয় এবং তারা ঐ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার ঐ চাচা আওয়ামী লাগের নেতা ছিলেন। ঐ সময়ে আমার চাচা নূরু খান, তার ছেলে সেলিম খান এবং সেলিম খানের মা এরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না।  যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান।

তার বাড়িতে আগুন দেওয়ার আনুমানিক ১৫/২০ মিনিট পরে পাক সেনারা সেখান থেকে বের হয়ে চিথলিয়া গ্রামের দিকে যায়। এর কিছুক্ষণ করে আমরা ধোয়া দেখতে পাই। বহু লোকজন  দৌড়াদৌড়ি করছিল । আমরা শুনতে পেলাম চিথলিয়া গ্রামের সইজুদ্দিন এবং রইজুদ্দিনের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। আনুমানিক আধা ঘন্টা কি ৪৫ মিঃ পরে পাক সেনারা পিস কমিটির সদস্য সহ পাড়েরহাট বাজারের দিকে রওনা করে আসে। আমি তখন ব্রীজের উত্তর পাশে লোকজনের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং দেখি উল্লেখিত পিস কমিটির সদস্যসহ পাক সেনারা ব্রীজ পার হয়ে পাড়েরহাটের দিকে আসে। তাদের যাওয়ার সময় এবং আসবার সময় দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবকে তাদের সংগে দেখি নাই। পাক সেনারা পাড়েরহাট বাজারে কিছু সময় থেকে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। এর দুই/তিন দিন পরে পাড়েরহাটে পিস কমিটি গঠন হয়। সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মওলানা, দানেশ মোল্লা, সফিজউদ্দিন মৌলভী, গণি, গাজি, আসমত আলী মুন্সি, মালেক শিকদারদেরকে নিয়ে পিস কমিটি গঠন করা হয়। পাড়েরহাট বাজারে পূর্ব গলিতে ফরিকদাশের বিল্ডিং দখল করে সেখানে পিস কমিটির অফিস করা হয়। জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিকে পাড়েরহাট হাইস্কুলের দোতলায় রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। রাজাকার মোমিন, রাজ্জাক, বজলু কারী, হানিফ, মহসিনদেরকে আমি রাজাকার হিসেবে চিনি। তারা পাড়েরহাট বাজারে আসা যাওয়া করতো। তাদের সংগে কখনও আমি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবকে দেখি নাই।
আমাদের পিরোজপুর ১ আসনে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব তিন বার নির্বাচন করেন। দুইবার বাবু সুধাংশু শেখর হাওলাদারের সংগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তিনি একজন নামকরা আইনজীবী তিনি কোন সময় সাঈদী সাহেবের বিপক্ষে যুদ্ধাপরাধের কোন অভিযোগ করেন নাই এবং মামলা করেন নাই। তৃতীয়বার উনি এ,কে,এম,এ আওয়াল সাহেবের সংগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন, তিনিও সাঈদী সাহেবের বিপক্ষে যুদ্ধাপরাধের কোন অভিযোগ করেন নাই।

অসুস্থ সাক্ষী নিয়ে যা হল :
সকালে ১৪ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল বলেন পরের সাক্ষী নিয়ে আসেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী অসুস্থ।  কোর্টে আসছেন। তবে আজ তার সাক্ষ্য না নিলে ভাল হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন নিয়ে আসেন। মিজানুল ইসলাম বলেন সাক্ষ্য দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দায় দায়িত্ব কার।  মিজানুল ইসলাম আপত্তি করেন আজ তাকে না আনার জন্য।  কিন্তু তারপরও তাকে কোর্টে আনার জন্য নির্দেশ দেন  ট্রাইব্যুনাল।

দুপুর একটার দিকে সাক্ষীর জবানবন্দী শেষ হয়। এরপর এক ঘন্টার বিরতি দেয়া হয়। বিরতির পর সাক্ষীকে যখন কোর্টে হাজির করা হয় তখন সে অসুস্থ। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা  জানান বিরতির সময় তার বমি হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল জানতে চান স্যালাইন বা কোন ঔধষ খাওয়ানো হয়েছে কি-না। বা অন্য কোন খাবার খাওয়নো হয়েছে কি-না। আইনজীবীরা জানান না । স্যালাইন, ঔষধ খাওয়ানো হয়নি। অন্য খাবার খেতে পারছেনা। এরপর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রাই্যুনালের কোথায় কি হয় সব আমার নজরে থাকে। নজরে আনা হয়। ডিফেন্স রুমে একজন সাক্ষী এভাবে অসুস্থ হয়ে  পড়লেন আর আপনারা আমাদের কিছু জানালেননা। এটা কি ঠিক করলেন আপনারা?
মিজানুল ইসলাম বলেন, মনে করেছিলাম বমি বন্ধ হলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু হলনা।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সকালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় তো দেখে ভালই মনে হয়েছিল।
এরপর কিছুক্ষন  সময় দেয়া হয় সাক্ষীকে যাতে সে সুস্থতা বোধ করেন। কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকেন কোর্ট। এরপর বিচারপতি নিজামুল হক সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন আপনি কি সাক্ষ্য দিতে পারবেন? সাক্ষী বলেন স্যার আমি এখন পারবনা। একটু সময় দিলে ভাল হয়।
বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, সময় দেয়া হবেনা। পারলে এখন দেবেন। না হলে বাড়ি চলে যাবেন।  ল ইউলি টেক ইট অউন কোর্স।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, ঠিক আছে সাক্ষীকে নিয়ে যান।
এরপর তিনি মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলমে বলেন, মি মিজানুল ইসলাম, ২০ জন সাক্ষী হাজির করা আপনাদের পার্ট। দায়িত্ব আপনাদের। এখন অন্য সাক্ষীর (১৩ তম সাক্ষী মাসুদ সাঈদী) জেরা হবে।  এর মধ্যে যদি ওই সাক্ষী সুস্থ হয় তাহলে তার সাক্ষ্য হবে। তা না হলে ল ইউল টেক ইট অউন কোর্স। আপনি জানেন হোয়াট  ইজ ল। পরের সাক্ষী ডকেন।
মিজানুল ইসলাম বলেন, মাঝে মাঝে মনে হয় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা হলেন কুলিন ব্রাক্ষ্মন আর আমরা হলাম নমশুদ্র। কোন কোন ক্ষেত্রে এটা মনে হচ্ছে।
এরপর মাসুদ সাঈদীর জেরা শুরু হয়।  সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলে জেরা। তখনো তার জেরা শেষ না হওয়ায় অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষীকে আর ডাকা হয়নি ।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১৪ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ

মেহেদী হাসান, ১৭/১০/২০১২
আমার নাম  এমরান হোসাইন,  বয়স- ৫৯ বছর।  গ্রাম- মহিরন, থানা- বাঘারপাড়া, জেলা যশোর ।
আমার পেশা শিক্ষকতা। বাঘারপাড়া পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।
১৯৭১ সালে  আমি ছাত্র ছিলাম। ১৯৬৯-৭০ সালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যশোরে নিউ টাউনে বাসা ভাড়া থাকতেন। ওই সময় ধর্ম সভা করেন। ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে শেল মারা শুরু করলো শহরের ওপরে। শহরের বসবাসকারী লোকজন ভয়ে ভীত হয়ে গ্রামে চলে যেতে লাগল। ওই সময় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মে মাসের মাঝামাঝি সময় আমাদের মহিরন গ্রামে মরহুম সদরুদ্দিন পীর সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে ১৫ দিন থাকার পরে দোহারকোলো গ্রামের রওশন আলী সাহেবকে পীর সাহেব ডেকে বললেন, আমার বাড়িতে লোকজনের ভিড় হয়েছে, থাকার সমস্যা । আপনি আপনার বাড়িতে সাঈদী সাহেবকে নিয়ে যান। উনার বাড়িতে আড়াই মাস থাকার পর সাঈদী সাহেবকে তার ভাই এসে তাকে দেশের বাড়িতে পিরোজপুর  নিয়ে গেলেন।

জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী সাক্ষীকে জেরা করেন।
জেরা :
প্রশ্ন : আপনি কোন বিষয় পড়ান?
উত্তর : ইসলাম  ধর্ম।
প্রশ্ন : স্কুলটি স্বাধীনতার আগে হয়েছিল না পরে ?
উত্তর : ১ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন : যে পীর সাহেবের কথা বলেছেন তার ছেলে মেয়ে আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : আপনার সঙ্গে প্রথম কবে সাঈদী সাহেবের দেখা হয়?
                   উত্তর : তিনি যেদিন পীর সাহেবের বাড়িতে যান সেদিন।  মাগরিবের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে পরিচয়হয়। পীর      সাহেবের বাড়ি আমার বাড়ির মধ্যে ১০০/১৫০ গজ ব্যবধান।
প্রশ্ন : আপনি সাঈদী সাহেবের সঙ্গে রওশন আলীর বাড়িতে গেছেন?
উত্তর : না ।
প্রশ্ন : আপনি কোথায় পড়শোনা করেছেন?
উত্তর : আমি পদ্মবেলা সিনিয়র আমীর মাদরাসা খুলনায় পড়েছি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের সময় মাদরাসা খোলা ছিল না বন্ধ ছিল?
উত্তর : বন্ধ ছিল।
প্রশ্ন : পুরো সময় বন্ধ ছিল?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনাদের গ্রামে পীর সাহেব ছাড়া আরো অবস্থাসম্পন্ন পরিবার  পরিবার ছিল।
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : আপনাদের অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর : আমরা মধ্যবিত্ত  শ্রেণীল ছিলাম। গরিবও না  বেশি  ধনিও না।
প্রশ্ন : মাদরাসার ছাত্ররা অনেকে রাজাকার, আলবদর, বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলো জানেন?
উত্তর : আমি শুনেছি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধকালে আপনি বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথায়ও যাননি ।
উত্তর : যাইনি।
প্রশ্ন : আপনাদের গ্রামে  পাকিস্তান বাহিনী বা রাজাকার বাহিনী দ্বারা কোন কান তি হয়েছিল?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে পাকিস্তান বাহিনী, আলবদর, রাজাকার ও শান্তিবাহিনী মানুষকে খুন করতো
অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্ষণ করতো তা শুনেছেন?
উত্তর : তখন শুনিনি, পরে শুনেছি।
প্রশ্ন : কোন ধরনের লোকজনের ওপর তারা  অত্যাচার  করতো, তারা কাদেরকে মারতো?
উত্তর : বলতে পারবো না।
প্রশ্ন : আপনি যে মামলায় সাী দিতে এসেছেন সেটা কিসের মামলা?
উত্তর : কাগজপত্রে দেখেছি দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে।
যে সময়ের কথা পত্রিকায় উলেখ করা হয়েছে সে সময় তিনি আমাদের গ্রামে ছিলেন। এজন্য সত্য কথা
বলতে আমি সাী দিতে এসেছি।
প্রশ্ন : কবে কিভাবে এটা জানলেন?
উত্তর : এক বছর কয়েক মাস আগে এটা জেনেছি।
প্রশ্ন : পত্র-পত্রিকা কি আগেও পড়তেন না একবছর কয়েক মাস আগে থেকে পড়েন?
উত্তর : আগে পড়তাম।  তবে মাঝে মাঝে । এখনো মাঝে মাঝে পড়ি।
প্রশ্ন : আগে যখন  পড়েছেন তখন এই অভিযোগ দেখেননি?
উত্তর :না।
প্রশ্ন : আপনি জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত।
উত্তর : আমি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নই।
প্রশ্ন : এ মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার বিষয়ে আপনাকে কে বলেছে?
উত্তর : এক বছর আগে সাঈদী সাহেবের বড় ছেলে রাফিক  আমাদের বাড়িতে যান। তিনি আমাদের পাড়ার
অনেক লোকজন ডাকলেন। তিনি তার  আব্বার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা আমাদের বললেন। তিনি
আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন তার পিতা  সাঈদী সাহেব  যুদ্ধের সময় এখানে ছিলেন কি-না। আমরা বলি 
হ্যা তিনি এখানে ছিলেন। তখন তিনি আমদের এ বিসয়ে সাক্ষ্য দেয়ার অনুরোধ করলে আমি রাজি হই ।
প্রশ্ন : এভাবে অনুরোধ করলে আপনি স্যা দেন।
উত্তর : আমি অন্য কোনো মামলায় সাী দেইনি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আপনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন?
উত্তর : এ কথা সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত এবং আপনার দলের নেতার বিরুদ্ধে মামলা
চলছে তাই আপনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে  সত্য গোপন করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলেন।

উত্তর : আপনার এ কথা সত্য নয়।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, মনজরু আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার তানভির
আহমেদ আল আমিন, আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ছেলের সাক্ষ্য গ্রহণ

মেহেদী হাসান, ১৪/১০/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ ১৩ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিলেন তার তৃতীয় ছেলে মাসুদ সাঈদী। তিনি মাওলানা সাঈদীর  মামলায়  তার পিতার পক্ষে  তদবিরকারক। মাওলানা সাঈদীর   পক্ষে  যেসব ডকুমেন্ট ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয়েছে তা তিনি উপস্থাপন করেন। এছাড়া মাওলানা সাঈদীর বিপক্ষে যেসব সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন সে বিষয়েও কিছু ডকুমেন্ট তিনি উপস্থাপন করেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে যেসব ডকুমেন্ট তিনি উপস্থাপন করেন তার মধ্যে  একটি হল-মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আলোচিত অভিযোগ ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে ডকুমেন্ট।  ইব্রাহীম কুট্টি এবং তার শ্যালক সাহেব আলী হত্যার বিচার চেয়ে ইব্রাহীমের স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলার  এজাহারের সার্টিফাইড কপি তিনি উপস্থাপন করেন। 
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আরেকটি আলোচিত অভিযোগ হল  কথাসাহিত্যিক হুমাযূন আহমেদের পিতা (তিনি ১৯৭১ সালে পিরোজপুরের এসডিপিও ছিলেন) শহীদ ফয়জুর রহমানকে হত্যায় সহায়তা করা। হুমায়ুন আহমেদের মা এবং শহীদ ফয়জুর রহমানের স্ত্রী আয়েশা ফয়েজ পিরোজপুরের স্মৃতিচারন করে লিখিত ‘জীবন যেরকম’ বই লিখেছেন। সেখানে ফয়জুর রহমান হত্যার  পূর্বাপর ঘটনা তিনি  তুলে ধরেছেন।  মাসুদ সাঈদী ‘জীবন যেরকম’ বইটি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন।

এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ভগ্নিপতি অ্যাডভোকেট আলী  হায়দার খানের  একটি লেখা  অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের  দলিলপত্র’ নামক প্রামান্য গ্রন্থে।  ওই লেখায় আলী হায়দার খান  ১৯৭১ সালে পিরোজপুরের কিছু ঘটনা তুলে ধরেছেন । স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র নামক গ্রন্থের যেখানে ১৯৭১ সালে পিরোজপুর সংক্রান্ত ঘটনা বর্র্নিত আছে সে অংশ  মাসুদ সাঈদী  ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন ।
এছাড়া সুন্দরবন সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন আহমেদ লিখিত ‘সুন্দরবনের উন্মাতাল দিনগুলি’, হুমায়ুন আহমেদ রচিত ‘জোসনা ও জননীর গল্প’ বই ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি মাওলানা সাঈদীর বিভিন্ন সময়ে করা পাসপোর্ট  ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়।  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মনজুর আহমদ আনসারী নয়া দিগন্তকে জানান, মাওলানা সাঈদী  ১৯৮২, ১৯৮৫ এবং ১৯৮৬ সালে পলাতক ছিলেন মর্মে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি যে পলাতক ছিলেননা  তা প্রমানের জন্য ১৯৭৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ের তার অনেকগুলো পাসপোর্ট উপস্থাপন করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে।



মাওলানা সাঈদীর পক্ষে তথ্য প্রমান উপস্থাপন অব্যাহত

১৫/১০/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে তথ্য প্রমান উপস্থাপন অব্যাহত রয়েছে। মাওলানা সাঈদীর তৃতীয় ছেলে মাসুদ সাঈদী তার পিতার পক্ষে  ১৩ তম সাক্ষী হিসেবে তথ্য প্রমান উপস্থাপন করেন। দ্বিতীয় দিনের মত।
আজ  যেসব তথ্য প্রমান উপস্থাপন করা হয় তার মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাজ্যের ইসলামিক মিশন কর্তৃক আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল সিরাত কনফারেন্স- ১৯৭৮ এর কার্যতালিকার ফটোকপি । এতে ২৯ মে তারিখের কার্যতালিকার দ্বিতীয় আইটেমের দারসে কোরআন বাই মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী লেখা আছে। দি ইসলামিক কাউন্সিল অব নর্থ আমেরিকা কর্তৃক আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য প্রদানের জন্য  মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে ভিসা প্রদানের অনুরোধ পত্রের ফটোকপি । ঢাকাস্থ ক্যানাডীয় দূতাবাস  ৫ই আগষ্ট, ১৯৮৬  অনুরোধপত্র পাঠায়। 
ইসলামী সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা কর্তৃক আয়োজিত ইষ্ট কোষ্ট কনফারেন্সে যোগদানের জন্য  ভিসা প্রদানের জন্য ঢাকাস্থ আমেরিকান এ্যাম্বেসিকে অনুরোধপত্র তারিখ ৭ইমে, ১৯৮৭, দাওয়াতুল ইসলাম যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড কর্তৃক বার্ষিক সভায় যোগদানের আমন্ত্রনপত্র তারিখ ২৬ শে জুলাই, ১৯৭৯,  ইউ.কে. ইসলামিক মিশন কর্তৃক আন্তর্জাতিক সিরাত সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রনপত্র গ্রহণ করার জন্য প্রদত্ত ধন্যবাদপত্র ১০ই মে, ১৯৭৮, দাওয়াতুল ইসলাম ইউ.কে. এবং আয়ারল্যান্ড কর্তৃক তাদের বার্ষিক সভায় যোগদানের জন্য আমন্ত্রনপত্র তারিখ ২৮ শে জুন, ১৯৮৫  এর ফটোকপিসহ  মাওলানা সাঈদীকে আরো বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক বিদেশ  গমনের     আমন্ত্রণপত্রের ফটোকপি ট্রাইব্যুনালে  উপস্থাপন করা হয়।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম আমাকে  জানান, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি স্বাধীনতার পর আত্মগোপনে ছিলেন। দীর্ঘদিন পর তিনি ভুয়া মাওলানা হিসেবে নাম বদল করে আত্ম প্রকাশ করেন।   মাওলানা সাঈদী যে স্বাধীনতা  যুদ্ধের পর পলাতক বা আত্মগোপনে ছিলেননা  তার প্রমান হিসেবে এসব দাখিল করা হয়েছে।
এছাড়া পিরোজপুর জেলার ইতিহাস নামক গ্রন্থের ফটোকপি, সাংবাদিক রকুনউদ্দৌলাহ কর্তৃক রচিত “মুক্তিযুদ্ধে যশোর” নামীয় বইয়ের ফটোকপি,  বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ১৯৭১ এর ৪র্থ খন্ডে উল্লেখিত ০৯-০৪-১৯৭৪ ইং তারিখে ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পাদিত ত্রিপাক্ষিক চুক্তির ফটোকপি,  রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষের তালিকাভুক্ত  সাক্ষী খলিলুর রহমানের জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং ভোটার তালিকায় তার নাম সম্বলিত সংশ্লিষ্ট অংশের ফটোকপি দাখিল করা হয়। 
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবীন তার সাক্ষ্যে বলেছিলেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস করেছেন। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীর দাবি তিনি বহিষ্কৃতি হয়েছিলেন। সে মর্মে  ডকুমেন্ট গতকাল উপস্থাপন করা হয়। এটি হল  উবনধৎৎবফ ষরংঃ ড়ভ ঃযব উবমৎবব (ঐড়হ’ং) ঊীধসরহধঃরড়হ ড়ভ ১৯৭৬ যবষফ রহ অঢ়ৎরষ, ঔঁষু ধহফ অঁমঁংঃ ১৯৭৮ এর ফটোকপি (প্রসিকিউশনের আপত্তি সহ) এবং এর ৩৫২ নম্বর ক্রমিকে মোঃ রুহুল আমীন, পিতা আলহাজ্ব সিরাজউদ্দিন আহমেদ উল্লেখ আছে। 

সেফ হাউজে ডায়েরি   প্রদর্শন করতে দেয়া হয়নি

১৬/১০/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আলোচিত সেফ হাউজ ডায়েরি বা রেজিস্ট্রার বই প্রদর্শনী করতে দেয়া হযনি।    ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেছেন যার কাছ থেকে এ  ডায়েরি বা বই সংগ্রহ করা হয়েছে তাকে ট্রাইব্যুনালে আসতে হবে এবং তার মাধ্যমে এগুলো উপস্থাপন করতে  হবে।

আজ মঙ্গলবার  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এ  মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী ১৩ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ার সময় আসামী পক্ষ  সেফ হাউজ সংক্রান্ত তিনটি রেজিস্ট্রার বই  ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক   চিহ্নিতকরনের উদ্যোগ নিলে  ট্রাইব্যুনাল আপত্তি উত্থাপন করেন।  তবে সেফহাউজ সংক্রান্ত দুটি জিডির ফটোকপি  পদর্শন মার্ক করা হয়েছে।

গতকাল  সোমবার প্রথমে সেফ হাউজ রেজিস্ট্রার বই চিহ্নিতকরন করতে চাইলে ট্রাইব্যুনাল  সাক্ষীর কাছে জানতে চান এটি তিনি  কিভাবে পেয়েছেন। তখন সাক্ষী  মাসুদ সাঈদী  জানান, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় এ বিষয়ে রিপোর্ট ছাপা হওয়ার পর আমরা সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের সাথে যোগাযোগ করি এবং তিনি এটি আমাদের দিয়েছেন। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাহলে ওই রিপোর্টরকে আসতে  হবে। এরপর   এ বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে  জটিলতা না দেখা দেয় সেজন্য আসামী পক্ষকে আরো চিন্তা করার পরামর্শ দেন ট্রাইব্যুনাল। আসামী পক্ষ তখন এ বিষয়টি বাদ দিয়ে অন্যান্য বিষয় প্রদশর্ন করান।

আজ   ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী  প্যানেল ট্রাইব্যুনালকে জানান তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এটি তারা প্রদর্শন করাবেন । তখন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমরা এটি তার (মাসুদ সাঈদী)  কাছ থেকে নেবনা। এটি তার কাছে কিভাবে এসেছে সেটি আগে ঠিক করেন। আমরা বুঝতে পারছিনা তিনি (মাসুদ সাঈদী)  কিভাবে এর সাথে  জড়িত হলেন। আপনাদের দাবি অনুযায়ী এটা সরকারি ডকুমেন্ট। সরকারি ডকুমেন্ট কি যে কেউ প্রদর্শন করতে পারে ? তিনি এটা বলতে পারেননা যে তিনি এটা সংগ্রহ করেছেন।  এটা যে পুলিশের ডকুমেন্ট তা বলার তিনি কে? তিনি এটা অন্য আরেকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন । তাকে আসতে হবে।
তারপরও আমরা আপনাদের সতর্ক করে বলছি যদি দেখা যায় এটা  জাল   তাহলে কিন্তু মারাত্মক পরিণতি হবে। সেই ঝামেলায় আপনারা ওনার ছেলেকে টেনে আনছেন কেন?

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, এটা আপনারা বিবেচনা করবেন কি করবেননা সেটি পরের বিষয় কিন্তু প্রদর্শন হতে আপত্তি কোথায়। 
এরপর  এটি পদশর্নীর পরিবর্তে সাক্ষী মাসুদ সাঈদী সেফ  হাউজের তিনটি রেজিস্ট্রার   বই দেখেছেন এবং তার মধ্যে  কি আছে তার  সংক্ষিপ্ত একটি বিবরন রেকর্ড করা হয় ট্রাইব্যুনালে। এছ্ড়াা সেফ জাউজ সংক্রান্ত দুটি জিডি প্রদশর্ন করা হয়। 

সাক্ষী মাসদু সাঈদী এ জুডি দুটি বিষয়ে নয়া দিগন্তকে জানান, সেফ  হাউজের রেজিস্ট্রার  বইতে  ৮ ডিসেম্বর ১১২ নং নোটে যাত্রা বাড়ি থানায় তিনটি জিডি করার কথা উল্লেখ আছে। সেফ হাউজে অবস্থানরত রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে কে বা কারা হুমকি দেয়। সে কারনে সেফ হাউজের ইনচার্জ   আমজাদ  গত ৮/১২/২০১১ তারিখ যাত্রাবাড়ি থানায় গিয়ে সাক্ষীকে হুমকির বিষয়ে জিডি করেন।  যাত্রাবাড়ি থানায় জিডি করার এ বিষয়টি সেফ হাউজের রেজিস্ট্রার বইতে নোট করে রাখা হয় ১৯/১২/২০১১ তারিখ। সেখানে জিডির নম্বরও উল্লেখ করা হয়। সেই সূত্র ধরে আমরা যাত্রাবাড়ি থানা থেকে জিডির ২টি কপি সংগ্রহ করি। 

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, এ জিডির কপি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেফ হাউজের অস্তিত্ব্ স্বীকার করে নেয়া হল।

এ জিডি কপি প্রদর্শনের সময় ট্রাইব্যুনাল সাক্ষী মাসুদ সাঈদীকে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। সেগুলো হল-
প্রশ্ন : আপনি জিডি হিসেবে যে দুটি  ফটোকপি  হিসেবে দাখিল করেছেন তা যে জিডি তা আপনাকে কে  বলেছে?
উত্তর : কেউ বলেনি। দেখে বুঝেছি এটা জিডির কপি।
প্রশ্ন : থানায় জিডি হয়েছে তা আপনি কিভাবে জানলেন?
উত্তর : সেফ হাউজের ডকুমেন্টে জিডি করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। সেটা দেখে আমার মরহুম বড় ভাই রাফিক বিন সাঈদী ও জিডি কপি সংগ্রহ করেছেন।
প্রশ্ন : এ কুপি দুটি আপনার ভাই কিভাবে কার  কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন তা আপনার জানা আছে?
উত্তর : আমার ভাইয়ের কাছে শুনেছি তিনি থানার মুন্সির কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। আরো শুনেছি  জিডির  নম্বর বলতে পারলে এভাবে থানা থেকে জিডি কপি  সংগ্রহ করা যায় ।

এছাড়া জিডির কপি দুটি রেকর্ড করা বিষয়ে আরো কয়েকটি কথা রেকর্ড  করেন ট্রাইব্যুনাল।  সেটি হল- এই ডকুমেন্ট দুইটি থানায়প্রদত্ত দুটি জি,ডি এন্ট্রির ফটোকপি, যখন আসামী পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবিদের এর দায়দায়িত্ব ও সঠিকতা সম্পর্কে স্মরন করিয়ে দেওয়া হয় তখন তাহারা বলেন যে, এর দায় ও সঠিকতা সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে তাহারা এই ডকুমেন্ট ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন

এরপর সেফ হাউজের  যে  তিনটি রেজিস্ট্রার বই মাওলানা সাঈদীর পক্ষে দাখিল করা হয়েছে তা নিম্নোক্ত উপায়ে ট্রাইব্যুনালে রেকর্ড করা হয়-

সেইফ হাউজের ১৮-১০-২০১১ইং তারিখ হতে ২০-০৩-১২ ইং তারিখ পর্যন্ত সময়ে সাক্ষীদের আসা যাওয়া সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার খাতা, উক্ত সেইফ হাউজের ১৮-১০-২০১১ইং তারিখ হতে ২০-০৩-২০১২ইং তারিখের সাধারন ডায়রী বই এবং উক্ত সেইফ হাউজের ১৮-১০-২০১১ইং তারিখ হতে৩০-০৩-২০১২ ইং তারিখের খাদ্য রেজিস্ট্রারগুলির ফটোকপি যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী ১৫ জন সাক্ষীর তদন্তকারী অফিসারের নিকট প্রদত্ত জবানবন্দী গ্রহন    করে   মাননীয় ট্রাইব্যুনাল যে আদেশ প্রদান করেন তা রিভিউ দরখাস্ত শুনানীকালে আমার পিতার পক্ষ হতে ০৩-০৬-১২ইং তারিখ দাখিল করা হয়েছে, তা আমি দেখেছি। ঐ সমস্ত রেজিস্ট্রার প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের আসা যাওয়া, খাওয়া দাওয়া, তাদের সঙ্গীয় মেহমানদের বর্ণনা, মোবাইল নম্বর কে কয়দিন থেকেছে ইত্যাদির বর্ণনা আছে। ঐ রেজিস্টারে উল্লেখযোগ্য যে সমস্ত বিষয় সমুহ লিপিবদ্ধ ছিল তার মধ্যে সাক্ষী আশীষ কুমার মন্ডল এবং তাহার মাতা এবং অপর সাক্ষী সমর মিস্ত্রি উল্লেখিত সেইফ হাউজে ২০১২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত অবস্থান করেছেন।

গতকাল সাক্ষী মাসুদ সাঈদীর  জবানবন্দী শেষে জেরা শুরু হয়েছে।

গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবেদন করে বলা হয় মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  অনুপস্থিত  ৪৬ সাক্ষী হাজির করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়।   রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল ১৫ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী প্রদান করেন তা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে আদেশ দেন ২৯ মার্চ। এ বিষয়ে রিভিউ আবেদনের শুনানীর সময় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে  কিছু ডকুমেন্ট উপস্থাপন করা হয়। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের ঢাকায় এনে রাখা হত যেখানে সেই সেফ হাউজের তিনটি রেজিস্ট্রার বই তারা উদ্ধার করেছেন। সেখানে কোন সাক্ষী কবে আসছে, কবে গেছে, কতদিন ছিল  তার সমস্ত তথ্য লিপিবদ্ধ আছে।  তারা সে তথ্য উপস্থাপন করে বলেন,  সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যে কারন দেখিয়েছে তা মিথ্যা।   যেসব সাক্ষী তারা খুঁজে পাচ্ছেনা বলে দাবি করছেন তার অনেক সাক্ষী ঢাকায় সেফ হাউজে ছিল তাদেরই তত্তাবধানে। 
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মাসুদ সাঈদীকে বুধবারের জেরা :
১৭/১০/২০১২

প্রশ্ন : আপনারা কয় ভাইবোন?
উত্তর : আমরা চার ভাই। বোন নেই। সম্প্রতি আমার বড় ভাই মারা গেছেন।
প্রশ্ন :   তিন ভাই কোথয় কি পড়াশুনা  করেছেন একটু বলেন।
উত্তর : বর্তমানে বড়ভাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করেছেন।  তারপর আমি তিতুমীর কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি। পরে নিউইয়কের লাগুনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছি। আমার ছোট ভাই সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসি পাশের পর লন্ডনে অথর্নীতিতে পড়াশুনা শেষ করেছে । তবে কলেজের নাম এ মুহুর্তে মনে করতে পারছিনা।
প্রশ্ন : কার কি পেশা ?

উত্তর : বর্তমান বড়ভাই ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করেন। টিকেটিং হজ্ব ওহমরাহ। আমি রিয়েল  এস্টেট ব্যবসা করি।  ছোট ভাই লন্ডনে একটি ফার্মে চাকরি করে।
প্রশ্ন : আপনার দাদার বাবার নাম কি?
উত্তর : গোলাম রহমান সাঈদী।
প্রশ্ন : আপনার বাবার লেখালেখি বা বই আছে?
উত্তর : হ্যা। আমার আব্বার লেখা ৭২টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন : ওনার পেশা কি?
উত্তর : লেখক।
প্রশ্ন : এছাড়া তার অন্য কোন পেশা নেই এবং অতীতেও ছিলনা।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : আপনার সাথে সিতারা বেগমের দেখা হয়নি।
উত্তর : না। মামলার (সিতারা বেগমের মেয়ে মমতাজ বেগম তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি, এবং ভাই সাহেব আলী হত্যার বিচার চেয়ে ১৯৭২ সালে  মমতাজ বেগম যে মামলা করেছিল তার কপি) কপিটি আমি আমার বড় ভাইর কাছ থেকে পেয়েছি।
প্রশ্ন : আপনার বড় ভাইর মুত্যৃ হয়েছে কবে?
উত্তর : গত ১৩ জনু। চার মাস আগে।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম বিষয়ে আপনার সাথে আপনার বড় ভাইর কথাবার্তা হয়েছে?
উত্তর : না। তবে সম্ভবত মমতাজ বেগম তার মায়ের কাছ থেকে মামলার কপিটি এনে আমার ভাইকে দিয়েছেন।
প্রশ্ন : কাগজটি কে কখন তুলেছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : প্রদর্শনী-  এ (মামলার কপি) তে সাহেব আলী বা সাহাবউদ্দিন নাম লেখা আছে?
উত্তর : না। তবে সিরাজ আলী  লেখা আছে।
প্রশ্ন : প্রদশর্নী  -- এ’তে এক নং আসামী হিসেবে পাকিস্তানী সৈন্য পিরোজপুর ক্যাম্প লেখা আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : মামলার কপির প্রত্যেক পাতার পেছনে কোন লেখা বা স্বাক্ষর  আছে?
উত্তর : সিল মারা আছে। কোন লেখা বা স্বাক্ষর নেই।
প্রশ্ন : মামলার এ সাটিফাইড কপিটি সম্পূর্ণরুপে  অত্র মামলার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এবং   কপির ভেতরে উল্লিখতি  মামরার কোন অস্তিত্ব নেই।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম বা মমতাজ বেগমের পরিবারের সাথে আপনার বড় ভাইর ভাল সম্পর্ক ছিল।
উত্তর : না। তবে সিতারা বেগমের ছেলে মোস্তফা হাওলাদারের সাথে আমার ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম ও মোস্তফা হাওলাদার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনাদের কারনেই তারা সাক্ষ্য দিতে আসেননি।
প্রশ্ন : সত্য নয়। তবে অসত্য সাক্ষ্য দিতে রাজী না হওযায় তারা আসেনি।


সেফ হাউজের সাক্ষী আনার জন্য মাওলানা সাঈদীর বিচার এক সপ্তাহ মুলতুবির আবেদন///একদিন মুলতুবি দিলেন আদালত

১০/১০/২০১২
সেফ হাউজের পুলিশ সদস্যসহ তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাদের  মাওলানা  সাঈদীর মামলায় সাক্ষী হিসেবে হাজির করার প্রস্তুতির জন্য  আসামী পক্ষ থেকে এক সপ্তাহের জন্য   বিচার মুলতবি  চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আগামী কাল বৃহষ্পতিবার এক দিনের জন্য শর্ত সাপেক্ষে মুলতবি দিয়েছেন। শর্ত হল রোববার মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী হাজির করতে হবে। আসামী পক্ষ শর্ত সাপেক্ষে একদিনের মুলতবি নিতে রাজি হয়েছেন।


সেফ হাউজের (রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ঢাকায় এনে রাখা হত যেখানে) দায়িত্বরত পুলিশ এবং তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাসহ মোট ৩৮ জনকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে হাজির করার জন্য মাওলানা সাঈদীর  আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল গত রোববার। সোমবার শুনানী শেষে  মঙ্গলবার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল । আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে সমন জারি করা হবেনা। আসামী পক্ষ চাইলে তাদেরকে সাক্ষী হিসেবে আনতে পারবে। তবে মোট সাক্ষীর সংখ্যা পূর্ব নির্ধারিত ২০ জনকে  অতিক্রম করবেনা।  অর্থাৎ নতুন সাক্ষী আনতে হলে পূর্বে ২০ জনের যে তালিকা দেয়া হয়েছে সেখান থেকে বাদ দিতে হবে।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ২০ জন সাক্ষীর সংখ্যা নির্ধারন  করে দিয়ে ইতোপূর্বে আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী  মিজানুল ইসলাম আজকের মুলতবি আবেদনের  শুনানীতে বলেন, যেহেতু ট্রাইব্যুনারের পক্ষ থেকে সমন জারি করা হবেনা তাই সাক্ষীদের কাছে আমাদের যেতে হবে। তারা আসবে কি-না সেটি আমাদের জানা দরকার।  যদি আসে কাদের আনা দরকার সেটাও ঠিক করতে  হবে। কারণ  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।  ট্রাইব্যুনাল আমাদেরকে ২০ জন সাক্ষীর সংখ্যা নির্ধারন করে দিয়েছেন। এখন সেফ হাউজ থেকে আমাদের নতুন সাক্ষী আনতে হলে বাকী আটজন থেকে কাউকে বাদ দিয়ে আনতে হবে।  সেজন্য নতুন সাক্ষী বাছাই, তাদেরকে রাজি করানোর জন্য  মাওলানা সাঈদীর বিচার এক সপ্তাহ মুলতবি রাখা হোক।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, এ  দরখাস্ত আপনারা আগে করতে পারতেন। কিন্তু করেছেন গতকাল। আমাদের মনে হচ্ছে এর পেছনে কোন রহস্য বা গোপন উদ্দেশ্য (আলটারিয়র মোটিভ)  আছে। সব শেষে যখন আর কিছু করার  সময় থাকবেনা মুলতবি  ছাড়া তখন এটা করেছেন কোর্টকে বাধ্য করার জন্য। আগে করলে হয়ত এক সপ্তাহ সময় দিতাম। কিন্তু এখন সময় দেয়া সম্ভব নয়। ইউ আর  সরি। আমরা সময় দেয়ার জন্য প্রস্তুত নই। এটা অনেক দিন আগে থেকে বলেছি।

মিজানুল ইসলাম বলেন, আপনাদের কাছে মনে হতে পারে  আলটারিয়র মোটিভ আছে। কিন্তু আমরা সেকরম কোন কিছু বিবেচনা করে এ দরখাস্ত করিনি। আমরা মনে করেছি ন্যায় বিচারের স্বার্থে এখন এ দরখাস্ত করা দরকার তাই করেছি।

এরপর বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, একটা শর্তে আপনাদের আগামীকাল বৃহষ্পতিবার একদিনের জন্য  মুলতবি দিতে পারি সেটা হল রোববার সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষী আনতে হবে। এতে রাজি আছেন কি-না বলেন।
মিজানুল ইসলাম আরো একদিন  সময় চাইলে কোর্ট তাতে রাজি হননি এবং মিজানুল ইসলাম একদিন মুলতবি মেনে নেন।

ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং আনোয়ারুল হক উপস্থিত ছিলেন।

৭ মার্চের ভাষনও সাঈদীর বিরুদ্ধে আলামত?

মেহেদী হাসান, ৮/১০/২০১২
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগের পক্ষে যেসব আলামত জব্দ করা হয়েছে তার মধ্যে ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষনও রয়েছে। ভাষনের অডিও ভিডিও সিডি এবং দুই পৃষ্ঠার কম্পোজ কপিও জব্দ করে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। আজ  সে ভাষনের ভিডিও দেখানো হল ট্রাইব্যুনালে। তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আজ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার সময় এ ভিডিও দেখানোর ব্যবস্থা করেন বড় পর্দায়।

কোন কোন সাংবাদিক ভিডিও দেখানোর পরে কানাকানি করে বলছেন সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যা খুন ধর্ষণ লুটপাট অগ্নিসংযোগের অভিযোগের সাথে এ ভাষনের সস্পর্ক কি। একজন সাংবাদিক রসিকতা করে বলেন, তিনি ঐ সমাবেশে মনে হয় যাননি এবং সেটাই হয়ত তার অপরাধ।

মাওলানা সাঈদী ২৯ জুন ২০১০ সালে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ বিভিন্ন থানায় মোট ১৬টি মামলা হয়। এছাড়া ২০০৯ সালের আরেকটি মামলাসহ মোট ১৭টি মামলার বিবরন দেন। দীর্ঘ সময় নিয়ে তিনি এসব মামলার ধারা, তারিখ প্রভৃতি উল্লেখ করেন। সেগুলো আদালতের কম্পোজারকে দিয়ে  লিখিত রেকর্ডও করানো হয়। মামলার বিবরন শেষ হলে বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ তদন্ত কর্মকতা হেলাল উদ্দিনকে প্রশ্ন করেন  এই মামলার চার্জে  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  যেসব অভিযোগ আছে তার সাথে আপনার বর্নিত এই ১৭টি মামলার সম্পর্ক কি। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন কোন সম্পর্ক নেই।
সাংবাদিকসহ কোর্টে উপস্থিত অন্যান্যরা তখন পরষ্পরের প্রতি মুখ চাওয়া চাওয়ি করে ফিস ফিস করে বলেন, তাহলে এগুলো এতক্ষন ধরে বলা এবং লিপিবদ্ধ করানো হল কেন।


সেফ হাউজের ৩৮ জনকে সাক্ষী হিসেবে হাজিরের আবেদন আসামী পক্ষের

৮/১০/২০১২
তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো: আব্দুল হান্নান খান, সেফহাউজের  দায়িত্বরত সমস্ত পুলিশ সদস্যসহ  মোট ৩৮ জনকে সাক্ষী হিসেবে হাজিরের জন্য আবেদন করেছেন আসামী পক্ষ। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-১ এ আবেদন করা হয়। আজ এ আবেদনের ওপর  শুনানীতে অংশগ্রহণ করেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানীর সময়  ট্রাইব্যুনালকে বলেন, সেফ হাউজ ডায়েরি বিষয়ে আদেশে আপনারা বলেছিলেন আমরা  সেফহাউজ বিষয়ে যে ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেছি তা আমাদেরই প্রমান করতে হবে। আমরা সেটি প্রমানের সুযোগ চাই। এর সত্যতা প্রমানের জন্য সেফ হাউজে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা এবং পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেছে তাদের সহ মোট ৩৮জনের তালিকা আমরা দিয়েছি। । তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য সমন জারি করা হোক। তারা ট্রাইব্যুনালে আসলে তাদেরকে আমরা এ ডায়েরি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব এবং এর সত্যতা বের হয়ে আসবে। আমাদের এ সুযোগ দেয়া হেক।

এদিকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ গতকাল অনুষ্ঠিত হয়নি। আজ অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।

গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন পেশ করা হয়। আবেদনে বলা হয়  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  ৪৬ জন  সাক্ষীকে  হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই  ৪৬ জন সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে  জবানবন্দী  দিয়েছেন তা  তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক। সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে যেসব কারণ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে  উল্লেখ করা হয় তার মধ্যে রয়েছে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের অস্ত্রধারীদের হুমকির কারনে  কেউ কেউ  আত্মগোপন করেছে, কেউ  নিখেঁাঁজ,  তিনজন গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে। এছাড়া একজনের স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে এবং বয়স ও অসুস্থতাজনিত কারনে ভ্রমনে মৃত্যুর ঝুকি রয়েছে ।

গত ২৯ মার্চ  ১৫ জনের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ  করে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এ রায় পুনরায় বিবেচনার জন্য গত ৯ মে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। গত ৩রা জুন এ বিষয়ে শুনানীর সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের (ঢাকায় যেখানে সাক্ষী  এনে রাখা হত)  সমস্ত কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে  বলেন, সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যে কারণ দেখিয়েছে তা সম্পূর্ণ  মিথ্যা। তারা কোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে প্রতারিত করেছেন।  অনেক সাক্ষী তাদের হেফাজতেই ছিল এবং সেফহাউজের এসব কাগজপত্রে তার প্রমান রয়েছে।  কোন সাক্ষী কবে ঢাকায় আসে,  কতদিন সেফ হাউজে ছিল, কয়বেলা খাবার খেয়েছেন, কোন কোন পুলিশ  ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর এবং কনস্টেবল কোনদিন সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন  তার সমস্ত বিবরণ লেখা রয়েছে সেফ হাউজের ডায়েরিতে। আসামী পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে সে ডায়রির কপি  দাখিল করা হয় কোর্টে।

রাষ্ট্রপক্ষের সৈয়দ হায়দার আলী আসামী পক্ষের সেফ হাউজের ডায়েরিকে জাল হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এটি আসামী পক্ষ  তৈরি করেছেন। সেফ হাউজ এবং এ ধরনের  ডায়েরি বলতে তাদের কিছু নেই।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন,   একজন সাক্ষী সেফ হাউজে থাকা অবস্থায় তাকে হুমকি দেয়া হয় । সে বিষয়টি তিনি  যাত্রাবাড়ি থানায় ডায়েরি করেছেন। এ বিষয়টিও সেফ হাউজের ডায়েরিতে লেখা রয়েছে। জিডির নম্বর উল্লেখ রয়েছে।  এটা কেমন করে আমাদের পক্ষে জানান সম্ভব? যাত্রাবাড়ি থানার ডায়েরির সাথে সেফ হাউজের ডায়েরিতে বর্নিত নম্বর মিলিয়ে দেখলেই তো এর সত্যতা প্রমানিত হবে। তাছাড়া একজন পুলিশ সদস্য সেফ হাউজে দায়িত্ব পালনের সময় ঢাকার একটি কোর্টে সাক্ষী দিতে গেছে। তাও বর্নিত আছে।  এটা আমাদের পক্ষে কেমন করে জানা সম্ভব? ওই কোর্টের তথ্য হাজির করা হোক তাহলেও তো প্রমানিত হবে সে বর্নিত তারিখে  সে কোর্টে গিয়েছিল কি-না। তাহলে প্রমান হবে সেফ হাউজের ডায়েরি সত্য। সেফ হাউজে  দায়িত্ব পালন করেছে যেসব পুলিশ তাদের প্রত্যেকের ফোন নম্বর, কে কতক্ষন দায়িত্ব পালন করেছে সে সময় এবং প্রত্যেকের ব্যাজ নম্বর, পুলিশের কোড নম্বর সব উল্লেখ আছে। এটা আমাদের পক্ষে কি করে জানা সম্ভব?
একজন সাক্ষীকে সাক্ষ্য দেয়ার পর তদন্ত সংস্থা থেকে ফোন করে বলা হয়েছে আজ তার সাক্ষ্য খুব ভাল হয়েছে। তাকে মিষ্টি খাওয়ানো হোক। পাঞ্জাবী কিনে দেয়া হোক। তাও লেখা রয়েছে সেফ হাউজের ডায়েরিতে। এজাতীয় তথ্য সংবিলত ডায়েরি কি করে কোন মানুষের পক্ষে বানিয়ে রচনা করা সম্ভব?
তাই সর্বশেষ এখন এর সত্যতা প্রমান করতে হলে সেইসব পুলিশ সদস্যদের হাজির করে  আমাদেরকে ওপেন কোর্টে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ দেয়া হোক।

মাওলানা সাঈদীর ক্ষেত্রে অবিচার করা হচ্ছে-ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক

মেহেদী হাসান, ৭/১০/২০১২
আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ করে বলেছেন  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ক্ষেত্রে অবিচার করা হচ্ছে। আমরা সুবিচার পাচ্ছিনা।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে একাধিক সাক্ষী হাজির না করায় আজ আবার ট্রাইব্যুনাল একটি আদেশ পাশ করে বলেছেন আগামীকাল সোমবার যদি একের অধিক সাক্ষী হাজির করা না হয় তাহলে আগামীকালই মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে।

এর আগে গত বৃহষ্পতিবার ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়ে বলেছিলেন রোববার সাক্ষী হাজির করা না হলে রোববারই সাক্ষ্য গ্রহন বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে একজনমাত্র সাক্ষী হাজির করায় ট্রাইব্যুনাল আবারো  আসামী পক্ষকে আল্টিমেটাম দিয়ে সোমবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
এ আদেশের পর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  ট্রাইব্যুনালে বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর। শেষ হয়েছে এ বছর আগস্ট মাসে। তারা ৯ মাস সময় পেয়েছে। ৯ মাসে তারা ২৮ জন সাক্ষী হাজির করেছে।  আর  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর । আজ পর্যন্ত মোট এক মাস ৫ দিন হয়েছে এবং এ সময়ের মধ্যে  নয় জন সাক্ষী হাজির করা হয়েছে। আমাদের মাত্র এক মাস ৫  দিনের মাথায় এভাবে কঠোর আদেশ দেয়া হল। অথচ রাষ্ট্রপক্ষ ১৭ বার ব্যর্থ হয়েছে সময়মত সাক্ষী হাজির করতে। ১৭ বার তাদের সময় দেয়া হয়েছে। অনেকবার মুলতবি করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী আনতে না পারার কারনে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে কখনো এভাবে  সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে মর্মে আল্টিমেটাম দিয়ে আদেশ পাশ করা হয়নি। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ কোন কোন তারিখে সাক্ষী আনতে পারেনি,  সাক্ষী আনতে না পারার কারনে  কবে কতদিন সময় দিয়ে  বিচার মুলতবি করা হয়েছে তার সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। কতবার তারা সাক্ষীর অসুস্থতার কথা জানিয়েছে সে তথ্যও আছে।  ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক রাষ্ট্রপক্ষ সময় মত সাক্ষী আনতে না পারার অনেকগুলো তারিখ উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনালের সামনে।

এরপর ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, তাদেরকে নয় মাস দিয়েছেন। আমরা নয় মাস চাইনা। অর্ধেক দেন। সাড়ে চার মাস  সময় দেন আমাদের ।  সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের পক্ষে কাজ করছে। তারপরও তারা  বারবার ব্যর্থ হয়েছেন সময় মত সাক্ষী আনতে। আর আমাদের ক্ষেত্রে মাত্র এক মাস  পাঁচ দিনের মাথায় এভাবে আদেশ দিলেন।

এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, গত বছর ডিসেম্বর মাসে তাদের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।  মার্চ মাসে শেষ হয়েছে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। কিন্তু সেটা বিষয় নয়। বিষয় হল   তারাও সাক্ষী আনতে না পারার কারনে আমরা অনেক কথা তাদের বলেছি। পত্রিকায় সেসব কথা হেডলাইন হয়েছে। তবে এটা ঠিক তাদের ক্ষেত্রে এভাবে আদেশ দেয়া হয়নি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদেরও মুখে বলেন, একশবার বলেন। কিন্তু তাদের বেলায় এভাবে লিখিত আদেশ না দিয়ে শুধু  আমাদের ক্ষেত্রে লিখিত আদেশ দেয়া হচ্ছে। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আমরা সমান সুযোগ চাই। এরপর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, মাই লর্ড ইজ ডুয়িং ইনজাস্টিস  টু মাওলানা সাঈদী। (মাওলানা সাঈদীর ক্ষেত্রে অবিচার করা হচ্ছে)। আমরা  সুবিচার পাচ্ছিনা।

ট্রাইব্যুনালের আদেশ :
আগামীকাল সোমবার  একের অধিক সাক্ষী আনতে না পারলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে মর্মে এক আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল -১। বেলা দুইটার পরে এ আদেশ দেয়া হয়।
আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে নবম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং জেরা শেষ হয়েছে। আসামীপক্ষ  বলেছেন আরেকজন সাক্ষী তাদের হাতে আছেন তবে সে অসুস্থ থাকায় তাকে কোর্টে হাজির করা যায়নি। গত ২ সেপ্টেম্বর মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর একজন সাক্ষী হাজির করা হয় এবং ওইদিন আর কোন সাক্ষী ছিলনা। ৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় সাক্ষী হাজির করা হয় এবং পরের দিন ৬ সেপ্টেম্বর তার  জেরা হয়। এরপর সেদিনও আর কোন  সাক্ষী তারা আনেনি। ৯ সেপ্টেম্বর   তাদের  সাক্ষী হাজিরের জন্য ধার্য্য ছিল তবে তারা সেদিন সাক্ষী আনেনি। ১০ সেপ্টেম্বর তৃতীয় সাক্ষী আনা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর তারা সাক্ষী আনতে না পারায় মুলতবি চান। ১২ সেপ্টেম্বর চতুর্থ সাক্ষী আনেন এবং  ১৩ সেপ্টেম্বর সাক্ষী ছিলনা। ১৬ সেপ্টেম্বর ৫ম সাক্ষী এবং ১৭ সেপ্টেম্বর  তাদের সাক্ষী ছিলনা। ১৮ সেপ্টেম্বর ৫ম সাক্ষীর জেরা শেষে তাদের পরবর্তী  কোন সাক্ষী ছিলনা।  ১৯ সেপ্টেম্বর   অসুস্থ থাকা তৃতীয় সাক্ষীর জেরা শেষ হবার পর সেদিনও আর কোন সাক্ষী আনেনি তারা। ২০ তারিখও কোন সাক্ষী ছিলনা। ২৪ সেপ্টেম্বর ৬ষ্ঠ, ২ নভেম্বর ৭ম, ৪ নভেম্বর অষ্টম সাক্ষী হাজির করা হয়।
চার নভেম্বর বৃহষ্পতিবার আমরা আদেশ দিয়ে বলেছিলাম রোববার যদি সাক্ষী আনা না হয় তা হলে রোববারই তাদের পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করা  দেয়া হবে। কিন্তু আজ তারা একজন সাক্ষী এনেছেন। আমরা  তাদের বারবার বলেছি একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে  পরবর্তী সাক্ষী  প্রস্তুত রাখবেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি তারা একদিনে একজনের বেশি সাক্ষী  হাজির করছেনা। আমরা বলেছি সাক্ষী আনতে না পারার কারনে বিচার  মুলতবি করা হবেনা। কিন্তু তারপরও আমরা  তাদের বেশ কয়েকবার সময় দিয়েছি। শেষে ৪ নভেম্বর আমরা  আদেশ পাশ করেছি। কিন্তু পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি তাতেও। তারা একাধিক সাক্ষী আনতে পারেনি। আমরা আগামীকাল পর্যন্ত তাদের সময় দিতে চাই। আগামী কাল একজন সাক্ষী আনলে  চলবেনা। আগামীকাল যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক সাক্ষী  না আনা হয় তাহলে     সাঈদী সাহেবের পক্ষের সাক্ষীদের  সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে। এবং আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

আদেশ শেষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  ট্রাইব্যুনালের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, সাঈদী সাহেবের বিচার  নিয়ে এত তাড়াহুড়া কেন। আরো তো অনেক মামলা আছে এ কার্টে। সেগুলো চলতে পারে।  রাষ্ট্রপক্ষ বারবার ব্যর্থ হয়েছে সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে। আমাদের ক্ষেত্রে দুয়েকবার অপরাগতা হতে পারেনা? আমরা চেষ্টা করছি সাক্ষী আনার জন্য। অনেক সাক্ষী বাড়ি ছাড়া, এলাকা ছাড়া মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে রাজি হবার কারনে।  তাদের  ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাদের আমরা খুঁজে পাচ্ছিনা। সেজন্য কিছু সমস্যা হচ্ছে।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন  এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক  আজ বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

আদেশ পাশের সময় আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন  হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মনজুর আহমেদ আনসারীর, ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক প্রমুখ।

রোববার সাক্ষী আনতে না পারলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে-ট্রাইব্যুনালের আদেশ পাশ

মেহেদী হাসান, ৪/১০/২০১২,
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন  সাঈদীর পক্ষে আগামী রোববার সাক্ষী আনতে না পারলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষীদের সাক্ষ্য  গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে। আজ   আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এ মর্মে এক আদেশ পাশ করেছেন।

আজ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী হাজিরের জন্য ধার্য্য ছিল। আসামী পক্ষ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে একজন সাক্ষী হাজির করে এবং তার জবানবন্দী ও জেরা পৌনে একঘন্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। এরপর ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষকে পরবর্তী  সাক্ষী হাজিরের জন্য বলেন। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে তাদের হাতে সাক্ষী নেই।  অসুস্থতা এবং  পিরোজপুর থেকে সাক্ষী ঢাকায় আনতে না পারার কারনে আজ আর কোন সাক্ষী  আনা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি। 

এরপর  ট্রাইব্যুনাল  উপরোক্ত আদেশ দেন। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে এ পর্যন্ত আটজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে । তারা সাধারনত একদিনে একজন করে সাক্ষী হাজির করে আসছিল।  অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের সাক্ষীদের জবানবন্দী  এবং জেরা অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়েছে।  ট্রাইব্যুনাল ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার আসামী পক্ষকে বলেছেন আপনারা  বেশি সাক্ষী আনবেন। একজন সাক্ষী শেষ হলে আরো সাক্ষী  প্রস্তুত রাখবেন। গত বুধবার  ট্রাইব্যুনাল  আসামী পক্ষকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন,  আগামীকাল বৃহষ্পতিবার একাধিক সাক্ষী আনতে হবে। তা নাহলে আমরা আদেশ পাশ করতে বাধ্য হব। আমাদের সে আদেশ করতে বাধ্য করবেননা আপনারা।

অবশেষে আজ   মাওলানা সাঈদীর পক্ষে একজন সাক্ষী আনায় এবং পরবর্তীতে আর সাক্ষী  হাজির না করায় ট্রাইব্যুনাল আদেশ  পাশ করেন।
আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, প্রতিদিন তারা একজন করে সাক্ষী আনেন। আমরা তাদেরকে বারবার বলেছি একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে পরবর্তী সাক্ষী রেডি রাখবেন। বিচার কার্যক্রম কোন মুলতবি ছাড়াই চলবে। অতীতে আমরা সাক্ষী আনতে না পারার কারনে বেশ কয়েকবার মুলতবি করেছি। কিন্তু এখন সময় এসেছে এ বিষয়ে আদেশ পাশ করার। আগামী রোববার যদি তারা সাক্ষী আনতে না পারে তাহলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে।


তাজুল ইসলামের প্রতিকৃয়া: আদেশ পাশের পর তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘বন্ধ করে দেয়া হবে’ কথাটা একটু কঠিন হয়ে গেল। এটা পরিবর্তন করলে ভাল হয়। এ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে কিছুটা  উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় । তাজুল ইসলাম বলেন,  এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে কতবার সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হয়েছে এবং কতবার তারা সাক্ষী আনতে না পারার কারনে মুলতবি করা হয়েছে সে আমলনামা আমাদের কাছে আছে। তাজুল ইসলাম সে বিষয়ে একটি কাগজ ট্রাইব্যুনালের সামনে উচু করে দেখিয়ে বলেন, তাদের ক্ষেত্রে অতীতে  এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয়নি।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনারা রোববার সাক্ষী আনেন। তাহলেতো আর এ আদেশ  থাকবেনা।
এ সময় ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি  জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা কি এখন বসে থাকব? আমরা তো বসে থাকতে পারিনা। এটা একা লার্জার বেঞ্চ। তিনজন বিচারপতি নিয়ে  গঠিত। আমরা সবাই বসে থাকতে পারিনা।
জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, এ কোর্টে আরো অনেক মামলা আছে। সেগুলো চালাতে পারেন। মামলাতো একটা নয়।

এসময় ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন, দেখনে তাজুল সাহেব, আজ হঠাৎ করে  কিন্তু এ আদেশ দেয়া হয়নি। চেয়ারম্যান মহোদয় বারবার আপনাদের বলেছেন সাক্ষী রেডি রাখার কথা। গতকালও শেষ বারেরমত সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, মাই লর্ড, আপনি শুরু থেকে এ ট্রাইব্যুনালে ছিলেননা। অতীতে রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী আনতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে এবং বহুবার সাক্ষী আনতে না পারার কারনে মুলতবি করা হয়েছে।  তাদের ক্ষেত্রে  আদেশ এবং শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। 

তাজুল ইসলাম এবং ট্রাইব্যুনালের মধ্যে কথপোকথনের এক পর্যায়ে তাজুল ইসলাম অনুরোধ করেন উভয় পক্ষের প্রতি  সমান আচরনের। তখন ট্রাইব্যুনাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনি কি বলতে চান আমরা উভয় পক্ষের প্রতি সমান আচরন করছিনা? বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনার এ অভিযোগ আদালত অবমাননার শামিল।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমি ন্যায় বিচার  চেয়ে আবেদন করছি।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, তা অবশ্যই চাইতে পারেন। কিন্তু  কথাটা  সেভাবে বলেননি আপনি।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এসয় তাজুল ইসলামকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তাজুল  সাহেব এটা একটা কোর্ট, আপনি একজন লইয়ার তা মনে রাখবেন। লইয়ার এভাবে কোর্টের সাথে কথা বলতে পারেনা।

কথপোথনের এক পর্যায়ে বিচারপতি নিজামুল হক তাজুল ইসলামকে লক্ষ্য করে  বলেন, আপনাদের তো বাইরে গিয়ে অভিযোগ করার সুযোগ আছে। সেভাবে  অভিযোগ করেন গিয়ে যে, আমরা তাদের (রাষ্ট্রপক্ষের )   বেশি সুযোগ দিয়েছি। আর আপনাদের কম সুযোগ দিয়েছি। এ অভিযোগ  তো করেই আসছেন।

এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী আদেশ সমর্থন করে বলেন, আজই সাক্ষীর সাক্ষ্য বন্ধ করে  দিয়ে আদেশ দেয়া উচিত ছিল।

দুপুরের বিরতির পর জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দুই জন সাক্ষীর জেরা শেষ হয়ে যায় তিনটার মধ্যে। তখন  ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুমকে পরবর্তী সাক্ষী হাজির করতে বলেন। কিন্তু জেয়াদ আল মালুম বলেন, আজ আর তাদের কাছে  সাক্ষী নেই। তখন ট্রাইব্যুনাল তাদের ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এখন কি করব। সাক্ষী কেন নেই।  চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু এবং জেয়াদ আল মালুম বলার চেষ্টা করেন তাড়াতাড়ি দুজন সাক্ষীর জেরা শেষ হয়ে যাবার কারনে সময় বের হয়েছে। আপনারাতো    আহমেদ  ইমতিয়াজ বুলবুলের জেরার জন্য চারটা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু আসামী পক্ষ জেরা সংক্ষেপ করায় দ্রুত শেষ হয়ে গেল। এখানে তো আমাদের তেমন কিছু করার  নেই।

সাঈদী এবং গোলাম আযমের বিচার চলবে মুলতবি ছাড়া :
এ পর্যায়ে  ট্রাইব্যুনাল  চেয়ারম্যান  বিচারপতি নিজামুল হক বলেন,  সাক্ষী অসুস্থ, সাক্ষী নেই এ গ্রাউন্ডে আর বিচার মুলতবি করা হবেনা। মাওলানা সাঈদী এবং অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচার শেষ না হওয়া  পর্যন্ত এ দুটা কেস চলতে থাকবে। কোন মুলতবি হবেনা।  রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামী পক্ষ উভয়ের প্রতি তিনি বলেন, আপনারা সাক্ষী  রেডি  রাখবেন।

রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক  সময়মত সাক্ষী আনতে না পারার খতিয়ান :

১.    ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২, ২৪ তম সাক্ষী না আনতে পারায়  ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয় বিচার।
২.    ১৩ ফেব্রুয়ারি ২৪ তম সাক্ষী না আনতে পারায় ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
৩.    ২২ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১২, ২৮ তম সাক্ষী আফরোজা বেগম অসুস্থতার কারনে বিচার মুলতবি করা হয়।
৪.    ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী আনতে না পারার কারনে মুলতবি করা হয় বিচার।
৫.    ৭ মার্চ ২০১২ সাক্ষী আনতে  না পারার কারনে মুলতবি করা হয় এবং আদেশ পাশ করা। আদেশে তাদেরকে “শেষ চান্স” দেয়া হল বলে উল্লেখ করা হয়।
৬.    ১৮ মার্চ  ২০১২ তারা জানায় তাদের আর কোন সাক্ষী নেই এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে জবানবন্দীর জন্য পেশ করতে চায়।

৭.    ২০ মার্চ ২০১২ ট্রাইব্যুনালে দরখাস্ত দিয়ে জানান তাদের পক্ষে আর সাক্ষী হাজির করা সম্ভব নয়।

এভাবে আরো প্রায় ১০ দিন যথাসময়ে  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী সাক্ষী আনতে  পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। অনেকবার রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীর তালিকার সিরিয়াল  ভঙ্গ করে অন্য সাক্ষী হাজির করেছে । 

মাওলানা সাঈদী ১৯৬৯ থেকে যশোরে আমাদের বাসার পাশে থাকতেন

মেহেদী হাসান, ১০/১০/২০১২, বুধবার
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে  আজ বুধবার ১২ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।  যশোরের এ সাক্ষীর নাম হাফিজুল হক। সাক্ষী বলেন, আমরা ১৯৬৬ সাল থেকে যশোরের নিউটাউনে থাকতাম। আমাদের বাসার পাশে একটি বাসায় ১৯৬৯ সাল থেকে ভাড়া থাকতেন মাওলানা  সাঈদী। এরপর ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের যুদ্ধ শুরু হলে মাওলানা সাঈদীসহ আমরা পাশাপাশি চারটি পরিবার একত্র হয়ে  ৪ এপ্রিল  গ্রামের দিকে চলে যাই।  এর কিছুদিন পর মাওলানা সাঈদী  যশোরের মহীরনে তার এক পীর সাহেবের বাড়িতে যান।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যে অভিযোগ তাতে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের  ৮ মে পাড়েরহাটে যখন পাকিস্তান আর্মি আসে তখন  অন্যান্য রাজাকারদের সাথে মাওলানা সাঈদী তাদেরকে স্বাগত জানান পাড়েরহাট রিক্সাস্ট্যান্ডে। এরপর ওই দিনই পাড়েরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তান আর্মি,  মাওলানা সাঈদীসহ অন্যান্য রাজাকার এবং শান্তিকমিটির নেতৃবৃন্দ লুটপাট, হত্যা, অগ্নিসংযোগে অংশ নেন। এছাড়া  ৮ মে পাড়েরহাটে পাকিস্তান আর্মি আসার আগে সেখানে শান্তি কমিটি এবং রাজাকার বাহিনী  গঠনের বিষয়ে মাওলানা সাঈদী ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন সাক্ষী এ  মর্মে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যদিকে   গতকালের সাক্ষীসহ আরো কয়েকজন যশোরের সাক্ষী মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, মাওলানা সাঈদী যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই যশোরে থাকতেন স্বপরিবারে এবং    এপ্রিল, মে মাস থেকে শুরু করে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত যশোরেই  ছিলেন।

জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ হাফিজুল হক । বয়স-৫২ বছর । গ্রাম- খড়কী, বামনপাড়া রোড, থানা-কোতয়ালী, জেলা-যশোর। আমি মুদি মালের ব্যবসা করি। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল ১১ বছর এবং আমি ৫ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। আমার পিতা মাস্টার  মোঃ শহিদুল ইসলাম ১৯৬৬ সালে যশোর নিউ টাউনে এ ব্লকের ১৮৪ নম্বর বাসা একজন এ্যালটির কাছ থেকে ক্রয় করেন। তারপর আমরা ঐ বাসায় স্বপরিবারে বসবাস করতে থাকি। ১৯৬৮ সালে আমার বাসার পশ্চিম পাশে ১৮৫ নম্বর বাসা মৃত হযরত আলী সাহেব এক এলোটির কাছ থেকে ক্রয় করেন। তারপর আমরা দুই পরিবার পাশাপাশি বসবাস করতে থাকি। ১৯৬৯ সালে আমার বাসার পূর্বদিকে প্রিন্সিপাল আনোয়ার সাহেবের ১৮৩ নম্বর বাসায় মাওলানা আবুল খায়ের সাহেব ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতে থাকেন।  ঐ একই সময়ে প্রফেসর আনোয়ার সাহেবের ১৮২ নম্বর বাসায় মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতে থাকেন। আমার পিতা মাস্টার  মোঃ শহিদুল ইসলাম শেখহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মরহুম হযরত আলী মিয়া যশোর এস.পি অফিসের হেড কার্ক ছিলেন। মাওঃ
আবুল খায়ের সাহেব আমার পিতার স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। মাওঃ দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব বৃহত্তর যশোরের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করতেন।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ  ভয়াল রাতে  যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে যশোর শহরের উপর গোলাগুলি চলতে থাকে।  পরবর্তী ২/৩ দিন ও একই ভাবে গোলাগুলি চলতে থাকে। এমতাবস্থায় শহরের লোকজন গ্রামের দিকে আশ্রয় নিতে থাকে। আমার পিতা, হযরত আলী চাচা, আবুল খায়ের চাচা এবং সাঈদী চাচা সম্মিলিতভাবে এক বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত নেন অন্যত্র চলে যাওয়ার।
পরবর্তী ৪ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে শেখহাটি চলে যাই। ওখানে আমার পিতার স্কুলের তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মরহুম জয়নুল আবেদীন সাহেবের বাসায় রাত্রি যাপন করি। পরের দিন সকালে চাচা আবুল খায়ের সাহেবের মামার বাড়িতে ধান কাটাঘাটা নামক স্থানে চলে যাই। ওখানে আমরা ৭/৮ দিন থাকি। অনেকগুলি পরিবার এক জায়গায় থাকায় আবার ৪ জন মুরব্বিরা মিলে  সিদ্ধান্ত  নেন অন্যত্র চলে যাওয়ার। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব বলেন যে, তিনি বাঘার পাড়ায় মহিরণের পীর সাহেবের বাড়ি যাবেন। আমার পিতা এবং হয়রত আলী সাহেব একত্রে ইন্ডিয়া চলে যাবেন। পরবর্তী দিন সকালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব মহিরনের উদ্দেশ্যে চলে যান। তারপর হযরত আলী এবং আমরা ভারতের উদ্দেশ্যে চলে যাই এবং মাওলানা আবুল খায়ের সাহেব ঐ বাড়িতেই থেকে যান।

জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী।