বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

ট্রাইব্যুনাল বর্জন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের///প্রয়োজনে আসামী বাইন্ধ্যা রাখা হবে-ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান

মেহেদী হাসান, ১০/৪/২০১২
আজ  তৃতীয় দিনের মত ট্রাইব্যুনালে  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন  মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে   বিদেশী পত্রপত্রিকায় যেসব রিপোর্ট  প্রকাশিত হয়েছে সেসব পেপার কাটিংয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা পাঁচটি ভলিউম তিনি আদালতে প্রদর্শন করতে চান। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এসব কপি   তাদের আগে দেয়া হয়নি। আইন অনুযায়ী আসামী পক্ষের এসব কপি পাওয়ার অধিকার  আছে। যেসব কপি আগে  আসামী পক্ষকে দেয়া হয়নি  তা  আদালতে আসামীর বিরুদ্ধে ডকুমেন্ট হিসেবে প্রদর্শন করা যায়না। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমি যতদূর এ কপিগুলো দেখেছি তাতে মনে হয়েছে এগুলো ফটোকপি করা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়।  বিদেশী পত্রপত্রিকার কাটিং সংগ্রহ করে মতিন সাহেব এটি তৈরি করে  মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রেখেছেন। সেগুলো প্রসিকিউশন  সিজ করে এনেছেন। এটি আসল কপি।  কাজেই এ কপি আপনাদের দেয়া যাবেনা।  তবে আপনারা এগুলো দেখার সুযোগ পাবেন।
বিচারপতি নিজামুল হক  এসব কপি নাড়াচাড়া করে দেখে বলেন এর একটা সংগ্রহ করতেই তো জান বের হয়ে গেছে। তারপর অস্পষ্ট।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং  মিজানুল ইসলাম আদালেত আইনের বিভিন্ন ধারা এবং যুক্তি তুলে ধরে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এসব ডকুমেন্ট এর ওপর নির্ভর করছেন বলেই আদালতে জমা দিয়েছেন।  আমার আসামীর বিরুদ্ধে এসব ডকুমেন্ট তারা  ব্যবহার করছেন। এসব ডকুমেন্টে কি আছে  তা আমরা জানিনা। কিন্তু  আমার আসামীর বিরুদ্ধে  ব্যবহার করা  ডকুমেন্টের প্রত্যেকটি শব্দ  পড়ার এবং জানার অধিকার আমাদের আছে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন,  যেসব ডকুমেন্ট আসামী পক্ষকে  পূর্বে দেয়া হয়নি সেসব ডকুমেন্ট প্রদর্শন করতে হলে আমাদের নোটিশ দিতে হবে। আদালতের অনুমিত নিতে হবে। কিন্তু তার কিছুই করা হয়নি।

মাওলানা সাঈদীর অপর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, আমার জানামতে এসব কপি আগে ট্রাইব্যুনালেও জমা দেয়া হয়নি। আপনাদের আগে দেয়া হয়েছে কি-না  তা দেখার এখতিয়ার আমাদের নেই।
তখন বিচারপতি নিজামুল হক   রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়তার আলীর প্রতি লক্ষ্য করে বলেন, মিস্টার হায়দার আলী. আগে দিয়েছিলেন?
তখন তিনি বলেন আগেই দেয়া হয়েছে।
মিজানুল ইসলাম বলেন আমার যতদূর মনে আছে  আগে দেয়া হয়নি। আর আগেও যদি  আপনাদের দেয়া হয়ে থাকে তাও তো আমরা জানতে পারলামনা। 

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আপানাদের আগেই একটি সিজার লিস্টের তালিকা দেয়া হয়েছে। সেখানে  এই পাঁচটি ভলিউমের নাম উল্লেখ আছে। এছাড়া অন্যান্য ডকুমেন্টের তালিকা দেয়া আছে। সুতরাং  এথেকে আপনাদের ধরে নেয়া উচিত যে এসব জিনিস   এভিডেন্স হিসেবে আদালতে প্রদর্শন করা হবে। ব্যরিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি লক্ষ্য করে তিনি বলেন, এরপর আপনার আর কি নোটিশ দরকার? (হোয়াট মোর নোটিশ ইজ নিডেড ট ইউ মিস্টার রাজ্জাক?) আমরা ধরে নিচ্ছি এটাই নোটিশ।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এর বিরোধীতা করে বলেন, এটি নোটিশ হতে পারেনা। নোটিশ আনুষ্ঠানিক হতে হবে। নোটিশ মানে হল ঐসব ডকুমেন্ট আসামী পক্ষকে সরবরাহ করা। দেখার সুযোগ দেয়া।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনি বলেন এখন বিকল্প কি করার আছে। আমি মনে করি বিকল্প যেটা আছে সেটা হল এসব ভলিউমন আপনাদের দেখার সুযোগ দেয়া এবং সে অধিকার আপনারা পাবেন।
আপনার কথা শুনলে কি হবে? আজ নোটিশ দিতে হবে। তিনদিন পর এসব ডকুমেন্ট প্রদর্শন করা হবে এইতো? তাহলে  আমাদের বলতে হবে ‘উইথ অল ডিউ সেসক্টে মিস্টার রাজ্জাক ইউর   পিটিশন ইজ রিজেক্টেড।’

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, ডকুমেন্ট আদালতে প্রদর্শন হয়ে যাবার পর দেখার সুযোগ দিয়ে লাভ কি। আমার কথা শোনার পর তো আপনাদের মত বলাতেও পারে। কাজেই  ডকুমেন্টগুলোর কপি আমাদের না দিয়ে তা আদালতে প্রদর্শন হয়েছে মর্মে যেন মার্ক করা না হয়।

বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনারা এই নিবেদন আরগুমেন্টের সময় করতে পারেন। কোন ডকুমেন্ট গ্রহণ করার পর যদি তা মিথ্যা প্রমানিত হয় তাহলে তা বাদ  দেয়ার নজির আছে। আমি নিজেই হাইকোর্টে থাকতে একবার  কিছু ডকুমেন্ট গ্রহণ করার পর তা মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় বাদ দিয়েছিলাম। কাজেই এ ক্ষেত্রেও বাদ দেয়ার সুযোগ  আছে। এগুলো বাদ দেয়া এক মিনিটের বিষয়।  যেকোন কিছু রেকর্ড থেকে বাদ দেয়া এবং প্রবেশ করানোর এখতিয়ার  আমাদের আছে। তিনি বলেন, এখন সাক্ষ্য গ্রহণ  এবং  এক্সিবিট  চলুক।  আপনাদের আরো কিছু বলার থাকলে তা কাল বলতে পারবেন। সমস্যা হলে আমরা  রেকর্ড থেকে বাদ দেব। আপনারা বসে বসে এখন দেখেন। এখন তো আপনাদের করার কিছু নেই।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আবারো অনুরোধ করেন  ডকুমেন্ট  কপি না দিয়ে এক্সিবিট মার্ক না করার জন্য। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল     সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকলে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তাহলে তো সত্যিই আমাদের করার কিছু নেই।  আমরা কোর্টকে আর সহযোগিতা করতে পারছিনা। আমাদের চলে  যাওয়া ছাড়া  উপায় নেই।
বিচারপতি নিজামুল হক তখন বলেন সেটি আপনাদের ইচ্ছা।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বেলা তিনটায় কোর্টরুম থেকে বের হয়ে আসেন  তাজুল ইসলাম, মিজানুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভীর আল আমিন, মনজুর আহমেদ আনছারী, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিক, কফিল উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ আইনজীবীরা।

কোর্ট থেকে বের হয়ে এসে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, আমারা বলেছিলাম আগে আমাদের ডকুমেন্ট দেন। কোর্ট তা শুনলনা। আমাদের করার কিছু ছিলনা। আমরা আমাদের আসামীকে সাহায্য করতে পারছিলামনা। কোর্টকেও সহযোগিতা করতে পারছিলামনা। তাই কোর্টের অনুমতি নিয়ে আমরা বের হয়ে এসেছি।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন,  যেসব ডকুমেন্ট  আমাদের দেয়া হয়নি তা দেয়ার জন্য আমরা আগে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তখন  সে দরখাস্ত বাতিল করে বলা হয়েছিল যে, যেসব কপি দেয়া হয়নি তা ব্যবহার করা হবেনা। কিন্তু তারা সেইসব ডকুমেন্ট নিয়ে এসেছেন প্রদর্শনের জন্য। 

প্রয়োজনে আসামী বাইন্ধ্যা রাখা হবে :
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী অসুস্থ বোধ করায় তার আইনজীবীরা তাকে কোর্ট থেকে জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। আদালত তা গ্রহণ করে তাকে কোর্ট থেকে পাঠিয়ে দেন দুপুরের দিকে।

এরপর বিকালে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা কোর্ট বর্জন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী তখন ট্রাইব্যুনালের সামনে দাড়িয়ে বলেন তারা পরিকল্পনা করে  দুপুরে আসামীকে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। এখন নিজেরা চলে গেল।
বিচারপতি নিজামুল হক তখন বলেন, তাই নাকি। এরপর আর বিচার চলাকালে কাউকে চলে যেতে দেয়া হবেনা। সুস্থ অসুস্থ যাই থাকুক প্রয়োজনে সাড়ে চারটা পর্যন্ত আসামী বাইন্ধ্যা রাখা হবে।
তিনি বলেন এর আগে আরো একদিন আসামী অসুস্থ বোধ করায় তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল তার আইনজীবীদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে। কিন্তু পরের দিন সংগ্রম পত্রিকায় লিখেছে সাঈদীর অনুপস্থিতিতে বিচার চালানো হয়েছে। কিন্তু তাকে যে  তারই আইনজীবীদের অনুরোধে পাঠানো হল তা আর লিখলনা।
এরপর কোর্ট মুলতবি করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন