বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

আবেদ খান বললেন সাঈদীর বিরুদ্ধে রিপোর্টটি আমি সমন্বয় করিনি

মেহেদী হাসান, ৪/৩/২০১২, রোববার
আবেদ খানের অসমাপ্ত জেরা  আজ   শেষ হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  সাক্ষ্য দেন এবং ঐদিন তার জেরা শুরু হয়। এরপর আজ আবার  তিনি আবার ট্রাইব্যুনালে  হাজির  হলে তাকে জেরা করেন মাওলানা সাঈদীল আইনজীবী। 

২০০৭ সালে তিনি দৈনিক সমকালের সম্পাদক থাকা অবস্থায় প্রকাশিত  ‘ধরাছোয়ার বাইরে জামায়াতের গডফাদাররা” শীর্ষক খবর বিষয়ে তিনি আদালতে সাক্ষী দেন। ঐ রিপোর্টে জামায়াত নেতা মাওলানা সাঈদী, শাহজাহান চৌধুরী, আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং মিয়া গোলাম পরওয়ারকে গডফাদার আখ্যায়িত করা হয়। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে রাজাকার বাহিনী গঠন, লুটপাট এবং নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়। গতকাল জেরার সময় আবেদ খান বলেন, প্রকাশিত ঐ রিপোর্টটি তিনি নিজে সমন্বয় করেননি।  রিপোর্টে বর্নিত  শিকদার থেকে সাঈদী নাম ধারন বিষয়েও তিনি যাচাই করেননি বলে জানান।

ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি প্রকাশিত গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে “১৯৭১ সালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কোন রাজনৈতিক দলের  সাথে জড়িত ছিলেননা। আবেদ খানকে জেরার সময় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী এ তথ্য তুলে ধরেন আদালতে। এর আগে বেশ কয়েকজন সাক্ষী সাঈদীকে জামায়াত নেতা হিসেবে উল্লেখ করে  এবং জামায়াতের নির্বাচনী জনসভায়  ভাষন দিতে দেখেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

ভারতীয় সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন করায় দীর্ঘ বিতর্ক: মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম আবেদ খানকে ভারতীয় সংবিধান এবং সীমানা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক চলে। প্রশ্নটি অপ্রাসঙ্গিক এ অভিযোগে সেটি আদালতের কার্যক্রমে রাখা হয়নি। প্রশ্নটি ছিল “ভারতের সংবিধানে  ভারত রাষ্ট্রের সীমানা চিহ্নিত করা হয়নি। সংবিধানের ১ (৩) সি ধারায় বলা হয়েছে ংঁপয ড়ঃযবৎ ঃবৎৎরঃড়ৎু ধং সধু নব ধপয়ঁরৎবফ” (এ ধরনের অন্য কোন অঞ্চল যদি দখল করা হয়....) । প্রশ্নটি  করার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয় এর প্রাসঙ্গিকতা বিষয়ে। ট্রাইব্যুনালও তখন এর প্রাসঙ্গিকতা বিষয়ে জানতে চান এবং একে অপ্রাসঙ্গিক হিসেবে মন্তব্য  করেন।    অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন,  প্রাসঙ্গিকতা পরের প্রশ্নে বোঝা যাবে। একটি প্রশ্নেই সব প্রাসঙ্গিকতা বোঝা গেলেতো দুয়েকটি প্রশ্নেই জেরা শেষ হয়ে যেত। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেছেন ৫২ থেকে এদেশের সকল গনতান্ত্রিক আন্দোলনকে পার্শবর্তী দেশের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেছে একটি মহল। সেজন্য  ঐ দেশ বিষয়ে প্রশ্ন করা দরকার। দীঘ  বিতর্কের পর মাওলানা সাঈদীর অপর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন,  চার্জশিট, সাক্ষীদের জবানবন্দীর ধারা বিশ্লেষন করলে দেখা যায় তারা  শুধু সাঈদী নন বরং জামায়াতকে দল হিসেবে টার্গেট করেছে। এই যখন অবস্থা তখন  এ বিষয়ে   সাক্ষীদের জেরা করা এবং তার হিস্টোরিক রেকর্ড থাকা দরকার। আলোচনা শেষে কোর্ট

সিদ্ধান্ত দেন  ভারতের সংবিধান বিষয়ক প্রশ্নের সাথে মামলার  প্রাসঙ্গিকতা নেই। জামায়াত, মওদূদী এবং অন্যান্য   প্রাসঙ্গিক বিষয়ে যতখুসী প্রশ্ন করেন কোন আপত্তি নেই।

আবেদ খানের অসমাপ্ত  জেরা
আইনজীবী : বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সীমানা চিহ্নিত করা আছে।
সাক্ষী : হ্যা।
এরপর ভারতের সংবিধানে ভারতের সীমানা বিষয়ক প্রশ্ন করা হলে প্রসিকিউশনের আপত্তি উত্থাপনের প্রেক্ষিতে  ট্রাইব্যুনাল সে প্রশ্ন বাদ দেন এবং এ বিষয়ে আর প্রশ্ন করা হয়নি।
আইনজীবী : প্রতিবেশী রাষ্ট্রবলতে আপনি কোন দেশকে বুঝিয়েছেন?
সাক্ষী : ভারত।
এরপর ভারত এবং ইতিহাস বিষয়ক আরো একটি প্রশ্ন করা হলে সেটিও রেকর্ড থেকে  বাদ দেন ট্রাইব্যুনাল।
আইনজীবী : ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের আগে ১৯৪৬ সালে বর্তমান ভারত বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের অধিকাংশ এলাকায় ভোটাভোটি হয়। বাংলাদেশ বিভক্ত ভারতের কোন অংশে যোগ দেবে সে বিষয়ে এখানে ভোটধিকার প্রয়োগ করা হয়।
সাক্ষী : বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে  যাবে কি-না সে বিষয়ে  বাংলাদেশে ভোট হয়েছিল।
আইনজীবী : ঐ সময়  প্রধানত দুটি দল নির্বাচনে অংশ নেয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ।
সাক্ষী : সর্বক্ষেত্রে সত্য নয়।
আইনজীবী : এই দুইটা দলতো অংশ নিয়েছিল?
সাক্ষী : হ্যা। এদের সাথে আরো দল অংশ নেয়।
আইনজীবী : জামায়াত কি সেসময় অংশ নিয়েছিল?
সাক্ষী : জামায়াত অংশ নেয়নি কারণ তারা পাকিস্তানে বিশ্বাস করতনা।
আইনজীবী : ভারতের জাতীয় কংগ্রেসও পাকিস্তান সৃষ্টির পক্ষে ছিল?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল?
সাক্ষী : তারা নিজস্ব সিদ্ধান্ত মতে নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
আইনজীবী : গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আরো যারা নেতা ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জওয়াহার লাল নেহরু এবং মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : তিনি ভারতের কংগ্রেসেরও সভাপতি ছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : মাওলানা আবুল কালাম আজাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কি জানা আছে?
সাক্ষী : আলীগড়ে লেখাপড়া করেছেন শুনেছি।
আইনজীবী : জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগের অন্যতম নেতা ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী  এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।
সাক্ষী : ইতিহাস তাই বলে।
আইনজীবী : মাওলানা ভাসানীর  শিক্ষাগত যোগ্যতা।
সাক্ষী: আমার জানা নেই।
আইনজীবী : বাংলাদেশ স্বাধীন  হবার পর যেসব সৈন্য বন্দী  হয় এবং বাংলাদেশের যারা পাকিস্তানে আটকে পরে তাদের  প্রত্যাবর্তনের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল দিল্লীতে ত্রিদেশীয় চুক্তি হয়েছিল।
সাক্ষী : আমি নিশ্চিত নই। স্থান  এবং  তারিখ সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই।
আইনজীবী : বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ড. কামাল হোসেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্মরন সিং এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী আব্দুল আজিজ সে চুক্তি সাক্ষর করেন।
সাক্ষী : সম্ভবত।
আইনজীবী :  চুক্তি অনুযায়ী ১৯৫ জন পাকিস্তানী সৈন্যকে মাফ করে প্রত্যাবর্তন করা হয়।
সাক্ষী : প্রত্যাবর্তন করা হয়েছে। মাফ করা হয়নি।
প্রশ্নটি যেভাবে করা হয়েছিল সেভাবে রেকর্ডভুক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে দুই পক্ষের  আইনজীবীদের মধ্যে  উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
আইনজীবী :একজন সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে মাফ করার বিষয়টি জেনেও আপনি গোপন করেছেন
সাক্ষী : অভিযোগ সত্য নয়।
আইনজীবী : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বিপক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের জামায়াতের কে কে বিবৃতি দিয়েছিলেন বলতে পারবেন?
সাক্ষী : পক্ষে বা বিপক্ষে কোন বিবৃতি দেয়া হয়নি। তবে মাওলানা মওদূদীর  লিখিতি বই সিয়াসি কাশমাকাশ এ ভাষা, আঞ্চলিকা, জাতীয়তাব এবং গণতন্ত্র ইস্যুকে কুফরী মতবাদ হিসেবে  আখ্যায়িত করা  হয়েছে। জামায়াত এ দর্শনই আকড়ে ধরে  থাকে।
আইনজীবী : বইটি কোন ভাষায় লেখা?
সাক্ষী : অবশই  উদর্ুু ভাষায়।
আইনজীবী : বইটি কোন সালে লেখা, ৪৭ এর আগে না পরে?
সাক্ষী : ৪৭ এর আগে লেখা।
আইনজীবী : বইটির কোন বাংলা অনুবাদ  হয়েছে?
সাক্ষী : আমি বঙ্গানুবাদ পড়িনি। বাংলায় হয়েছে কি-না জানা নেই।
আইনজীবী : ১৯৫২ সালে পুর্ব পাকিস্তান জামায়াত আমীর কে ছিলেন?
সাক্ষী : মাওলানা আব্দুর রহিম।
আইনজীবী : তিনি ঐ সময় ভাষা আন্দোলন ভারতীয় ষড়যন্ত্র মর্মে কোন বিবৃতি দিয়েছিলেন?
সাক্ষী : জানা নেই।
আইনজীবী : ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জামায়াত যুক্তফ্রন্টের বিপক্ষে কোন বিবৃতি দিয়েছিল তাদের ভোট না দেয়া মর্মে?
সাক্ষী : দেয়নি কারণ কাদিয়ানী দাঙ্গায় সামরিক আদালতে  মাওলানা মওদূদীর প্রাণ দণ্ডাদেশ হওয়ায় তারা খুব বিপর্যস্ত ছিল তখন।
আইনজীবী : আব্বাস আলী খানের আত্মজীবনীমূলক যে বকইটির কথা আপনি বলেছেন এবং যেখানে  মওদূদীর দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ঐ বইটির নাম বলতে পারবেন?

সাক্ষী : এ মুহূর্তে মনে নেই। তবে পড়েছিলাম।
আইনজীবী : জামায়াতে যোগ দেয়ার আগে তার পেশা কি ছিল বলতে পারবেন?
সাক্ষী : আমার জানার কথা নয়।
আইনজীবী : তিনি ৪৭ এর আগে না পরে জামায়াতে যোগ দেন?
সাক্ষী : মনে নেই।
আইনজীবী : মাওলানা মওদূদী কোন সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠা করেন?
সাক্ষী : সম্ভবত ৪০ এর দশকের গোড়ায়।
আইনজীবী : জামায়াতের সংবিধান বা গঠনতন্ত্র পড়েছেন?
সাক্ষী : পড়েছি।
আইনজীবী : জামায়াতের সর্বোচ্চ নির্বাহী পরিষদের নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী : মজলিশে শুরা।
আইনজীবী : জামায়াতের গঠনতন্ত্রে আদর্শ হিসেবে কি মওদূদীবাদ  উল্লেখ আছে?
সাক্ষী : সুনির্দিষ্টভাবে  উল্লেখ নেই।
আইনজীবী : সংসদে ১০ বছরে সাঈদী সাহেব  কয়বার বক্তব্য দেন বলতে পারবেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : সংসদে দেয়া তার কোন একটি  বক্তব্য পূর্নাঙ্গ শুনেছেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : বাংলাদেশে অসংখ্য ওয়াজ মাহফিলে সাঈদী সাহেব বক্তব্য রেখেছেন। সংসদের এবং তার ওয়াজের  বক্তব্যের ওপর অনেক অডিও এবং ভিডিও ক্যাসেট পাওয়া যায়।
সাক্ষী : অডিও ক্যাসেটের কথা  শুনেছি। ভিডিও ক্যাসেট সম্পর্কে জানা নেই।
আইনজীবী : ১৯৭১ সালের হত্যা, ধর্ষণ নির্যাতনকে জায়েজ বলে বক্তব্য দিয়েছেন এমন কোন ক্যাসেট কি আপনার কাছে আছে?
সাক্ষী : না। তবে তার যেসব বক্তব্য শুনেছি তাতে তিনি প্রকান্তরে এসবকে  জাস্টিফাইড করার চেষ্টা করেছেন বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।
আইনজীবী : যে বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি এসবকে জাস্টিফাইড করার চেষ্টা করেছেন বলে আপনার কাছে মনে হয়েছে এমন কোন বক্তব্যের আক্ষরিক উদ্ধৃতি কি দিতে পারবেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : ধর্ষণ বা খুনকে জায়েজ করার  প্রকান্তরে চেষ্টা করছেন বলে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন  সে বিষয়ে আপনি কোন প্রবন্ধ লিখেছেন?
সাক্ষী : অসংখ্য প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখেছি। বইয়েও লিপিবদ্ধ  আছে। এখন প্রবন্ধের নাম বলতে পারবনা।
আইনজীবী : আপনি ধর্মীয় রাজনীতি বিশেষ করে জামায়াতের রাজনৈতিক অধিকারের বিপক্ষে?
সাক্ষী : আমার অবস্থানগত  এবং আদর্শিক কারনে বিপক্ষে।
আইনজীবী : আদর্শিকভাবে বিরোধী হবার কারনে আপনি পরিকল্পিতভাবে  ধর্মীয় দল এবং বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে অসত্য কথা লিখেছেন আপনার প্রবন্ধে।
সাক্ষী : সর্বৈব মিথ্যা।
আইনজীবী : বাংলাদেশ স্বাধীন  হবার পর দেশের পত্রপত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ  এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের কর্মকান্ড নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। বইও প্রকাশিত হয়েছে।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : দেশ স্বাধীন হবার পর আবার দৈনিক আজাদ, ইত্তেফাক, পূর্বদেশ, বাংলার বানী, বিচিত্রসহ অনেক পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হয়।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : স্বাধীনতা বিরোধীদের খবর  প্রকাশের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা ছিলনা আওয়ামী লীগ বা বাকশাল আমলে।
সাক্ষী : না। বাকশাল ছিল মাত্র তিন মাস।
আইনজীবী : স্বাধীনতা বিরোধীদের ওপর লেখা কোন বই সরকার সেময় বাজেয়াপ্ত করেনি।
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাঈদী সাহেব স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন এমন কোন বক্তব্য বিবৃতি কোন পত্রপত্রিকায় আসেনি।
সাক্ষী : এ বিষয়ে আমি স্পষ্ট মনে করতে পারছিনা।
আইনজীবী : স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৩৫ বছর পর্যন্ত আপনি সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে  কোন কিছু লেখেননি।
সাক্ষী : তিনি এ সময় আমার  কাছে তেমন ইমপরটেন্ট কিছু ছিল  বলে মনে হয়নি। ফলে লিখিনাই।
আইনজীবী : তিনি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হবার কারনে আপনি তার বিরুদ্ধে লেখা শুরু করেন।
সাক্ষী : আমি কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে লিখিনা। আদর্শের কারনে লিখি।
আইনজীবী : কবি  হাসিন হাফিজ সম্পাদিক স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র এবং ডা, এম এ হাসানের লেখা পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী ১৯১ জন বই দুটি মুক্তিযুদ্ধের ওপর দুটি প্রামান্য গ্রন্থ।
সাক্ষী : এ এটি ঠিক যে ও দুটি প্রামান্য  গ্রন্থ। আরো অনেক বই বের হয়েছে। কাজেই কোন একটি বি দুটি বইকে প্রামান্য হিসেবে চিহ্নিত করা ঠিক নয়। অনেক প্রামান্য গ্রন্থের মধ্যে এ দুটি প্রামান্য গ্রন্থ তবে পূর্ণাঙ্গ নয়। কারণ এ বিষয়ে গবেষনা এখনো চলছে। তথ্য সূগ্রীহিত হচ্ছে।
আইনজীবী : ৯০ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ  দুয়েকটি প্রামান্য বইয়ের নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী : মুক্তিযুদ্ধে ব্যক্তির অবস্থান. ৭১ এর ঘাতক দালালেরা কে কোথায়,  আব্দুল আউয়াল লিখিত জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি।
আইনজীবী : আব্দুল আউয়াল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি (আসলে হবে পরিচালক) ছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী এম এ হাসানের যুদ্ধাপরাধী ১৯১ জন বইটি পড়েছেন?
সাক্ষী : কিছু  অংশ পড়েছি।
আইনজীবী : বইয়ের  শুরুতে সাড়ে ১২ লাখ নিশ্চিহ্ন করা এবং ২৮৭ জন যুদ্ধাপরাধী সনাক্তকরনের কথা উল্লেখ আছে। এর মধ্যে ১৯১ জনকে বড় মাপের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা আছে। বইয়ের পরবর্তী অংশে পিরোজপুরে পাকিস্তান আর্মি কর্তৃক হত্যা, ধর্ষন, নির্যাতন এবং পিরোজপুরের খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আছে।
সাক্ষী : হয়ত থাকতে পারে। বিস্তারিতভাবে বলতে পারবনা।
আইনজীবী : স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মালেক মন্ত্রী সভাপর যারা আত্মসমর্পন করেন তাদের দালাল আইনে বিচার করা হয়।
সাক্ষী : অনেকের।
আইনজীবী : মালেক সাহেব  দালাল আইনের বদলে জেনেভা কনভেনশন অনুসারে বিচার চেয়েছিলেন। কিন্তু আদালত তার দাবি অগ্রাহ্য  করেন তিনি দেশীয় লোক  বলে। আপনি তখন ইত্তেফাকের সাংবাদিক ছিলেন এবং ইত্তেফাকে রিপোর্ট প্রকাশিত  হয়েছিল এ বিষয়ে।
সাক্ষী : হ্যা রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল।
আইনজীবী : মাওলানা সাঈদীসহ ৩৫ জনকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষনার দাবীতে তিনজন আইনজীবী ঢাকার যুগ্মজেলাজজ আদালতে মামলা করেন। পরে মামলা প্রত্যাহারও হয়। সমকালে প্রকাশিত এ বিষয়ক রিপোর্টে দেওয়ানী  মামলার পিপি  এবং মামলার বাদীকে আসামী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সাক্ষী :  উত্তর অস্পষ্ট।
আইনজীবী : ২০০৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আপনার পত্রিকায় ‘গডফাদাররা ধরাছোয়ার বাইরে’ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।  অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুসারে গডফাদার শব্দের অর্থ বেআইনী সংগনের নেতা বা আমেরিকান মাফিয়া।
সাক্ষী : হ্যা। তবে মারিওপুজোর গডফাদার বইতে গডফাদারকে পপুলার আইকন হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
আইনজীবী :
ট্রাইব্যুনাল : গডফাদার বলতে আপনি কি বুঝিয়েছেন ?
সাক্ষী : আমি   বলতে চেয়েছি গডফাদাররা সবসময় ধরাছোয়ার বাইরে থাকে কিন্তু তারা আসল মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করে।
আইনজীবী : ঐ রিপোর্টে আপনি আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির গডফাদার শব্দটাও ব্যবার করেছেন।
আইনজীবী : আওয়ামী লীগের গডফাদার বলতে আপনি কাদের বুঝিয়েছেন?
সাক্ষী : রিপোর্ট ছিল চারজনকে নিয়ে। তাদের নাম ছিলনা।
আইনজীবী : আপনার রিপোর্ট করার আগে আওয়ামী লীগের যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের দায়ে গ্রেফতার হন তাদের আওয়ামী লীগের গডফাদার হিসেবে বুঝিয়েছেন?>
সাক্ষী ধ এ ব্যাপারে আমি কিছু বলবনা।

এ বিষয়ক প্রশ্ন করার সময় প্রসিকিউশন এবং ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হলে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, তিনি রিপোর্টে  সাঈদী সাহেবকে গডফাদার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাদেরকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির গডফাদারের সাথে তুলনা করেছেন। কাজেই  সাঈদীকে যেসব গডফাদারের সাথে তুলনা করেছেন তাদের নাম আমি জানতে চাইবনা? ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে সরাসরি প্রশ্নে আপত্তি বহাল রাখেন।
আইনজীবী : এ প্রশ্ন দ্বারা আপনি বোঝাতে চেয়েছেন আওয়মী লীগেও গডফাদার আছে।
সাক্ষী : ঐ রিপোর্টেই সে বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য আছে।
আইনজীবী : আওয়ামী লীগ  এবং বিএনপির অনেক নেতাদের সন্ত্রাস  এবং দুর্নীতির জন্য অনেককে গ্রেফতার করেছ। জামায়াতের কাউকে ধরা হয়নি। জামায়াতের লোকদেরও যাতে গ্রেফতার করা হয় সেজন্য এ রিপোর্ট করা হয়েছিল।
সাক্ষী : সত্য নয়।
আইনজীবী : যে চারজনের বিরুদ্ধে  ঐ রিপোর্ট করা হয় তার মধ্যে মাওলানা সাঈদী এবং মিয়া গোলাম পরোয়ারের বিরুদ্ধে জোট সরকারের সময় কোন দুনীতির  অভিযোগে  মামলা হয়নি  তত্ত্বাবধায়ক আমলে।
সাক্ষী : তখন পর্যন্ত হয়নি। আমাদের রিপোর্ট প্রকাশ পর্যন্ত হয়নি। পরে হয়েছে সম্ভবত।
আইনজীবী :  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এরা গ্রেফতার হয়?
সাক্ষী : গ্রেপ্তার হয়নি। আত্মগোপন করেছিল।
আইনজীবী : পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া বিষয়ে কোন খবর আপনার পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল?
সাক্ষী : স্মরন নেই।
আইনজীবী : চারজনের একজন আব্দুল্লাহ মো: তাহেরকে  জরুরি আইনে গ্রেপ্তার করা হলেও দুর্নীতির অভিযোগ না পাওয়ায় তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
সাক্ষী : স্মরন নেই।
আইনজীবী : শাহজাহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা হলেও তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা অবৈধ আখ্যায়িত করে হাইকোর্ট থেকে  তাকে  খালাস দেয়া হয়।
সাক্ষী : জানা নেই।
আইনজীবী : দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী লেখাপড়া সম্পর্কে কোন ধারণা আছে?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : ওনার দাখিল সার্টিফিকেটে কি নাম সাঈদী না শিকদার লেখা আছে জানেন?
সাক্ষী : দাখিল সাটিফিকেট দেখিনাই।
আইনজীবী : আলিমসাটিফিকেটেও শিকদার না সাঈদী লেখা আছে জানা নেই?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : উনি যে প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া  করেছেন সেখানে খোঁজ নিয়েছিলেন তিনি কি নাম লিখেছিলেন সাটিফিকেটে?

এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, এ বিষয়ে তো খোঁজ নেবেন তদন্ত কর্মকর্তা। তখন মিজানুল ইসলাম বলেন উনি তার রিপোর্টে লিখে দিলেন মাওলানা সাঈদী শিকদার ছেড়ে দিয়ে হঠাৎ করে সাঈদী লেখা শুরু করেন। তা উনি এ বিষয়ে যাচাই করবেননা রিপোর্ট প্রকাশের আগে যে আসলে উনার সাটিফিকেটে কি নাম লেখা আছে?
সাক্ষী : আমি যাচাই করিনি। আমার স্থানীয় রিপোর্টার যাচাই করেছে। তাকে বিশ্বাস করি বলে তার পাঠানো রিপোর্ট ছেপেছি।
আইনজীবী : রিপোর্টারের নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী : এখন মনে নেই।
আইনজীবী : অফিসেতো রিপোর্টারদের তালিকা থাকার কথা।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : তার নাম কি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দিয়েছেন?
সাক্ষী :  হ্যা তার কাছে আছে।
আইনজীবী : আপনি কি রিপোর্টের কপি পড়েছিলেন?
সাক্ষী : বার্তা সম্পাদক কপি সমন্বয় করেন। তার সমন্বয় করা কপি আমরা প্রকাশ করি। আমি নিজে সমন্বয় করিনি।  সেসময় বার্তা সম্পাদক ছিলেন আহমেদ  হাসান ফারুক। তিনি বর্তমানে মৃত।
(আবেদ খান বলেন সম্পাদক হিসেবে প্রকাশিত রিপোর্টের দায়দায়িত্ব আমার। কিন্তু সংবাদপত্রের একটি নিয়ম আছে। রিপোর্ট যাচাই বাছাই করার অনেক স্তর আছে। বার্তা  সম্পাদক যাচাই বাছাই এবং সমন্বয় করেন। তারপর আমাদের কাছে আসলে আমরা প্রকাশের বিষয়ে মত দেই। )
আইনজীবী : ঐ  খবরের  প্রতিবাদ ছাপা হলেও প্রেস কাউন্সিলের বিধি মেনে ছাপা হয়নি।
সাক্ষী : ছাপা হয়েছে।
আইনজীবী : গনতদন্ত কমিশন বিষয়ে ধারন আছে এবং তাদের পিপলস ইনকোয়ারি রিপোর্ট দেখেছেন?
সাক্ষী : হ্যা ।
আইনজীবী : তাদের রিপোর্টে উল্লেখ আছে ১৯৭১ সালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কোন রাজনৈতিক দলের  সদস্য ছিলেননা।
সাক্ষী : আমার স্মরন নেই।
আইনজীবী : ২০১০ সালে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের মামলায় প্রেসকাউন্সিল আপনাকে তিরস্কৃত করে।
সাক্ষী : হ্যা। আমার অজ্ঞাতসারে ঐ রিপোর্ট ছাপা হয়। আমি সে বিষয়ে আমি কালেরকন্ঠে কলাম লিখি এবং প্রেস কাউন্সিলের বক্তব্য অনুমোদন করি। এর ফলে মালিক পক্ষের সাথে আমার বিরোধের জের ধরে আমি কালের কণ্ঠ থেকে  পদত্যাগ করি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন