বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৪

নিজামীর মৃত্যুদণ্ড

মেহেদী হাসান, ২৯/১০/২০১৪
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। চারটি অভিযোগের প্রতিটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর আরো চারটি অভিযোগের প্রত্যেকটিতে মাওলানা নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  আজ  তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের এ রায় ঘোষনা করেন।

মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যা, গনহত্যা, হত্যা,  ধর্ষণ ও মানবতাবিরোধী  অপরাধের নির্দেষদাতা, পরিকল্পনা,  ষড়যন্ত্র এবং  উর্দ্ধতন নেতৃত্বের দায়ে (সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি) মাওলানা নিজামীকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে মাওলানা নিজামী তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘ এবং আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। আলবদর বাহিনী একটি অপরাধী সংগঠন এবং এ বাহিনী কর্তৃক বুুদ্ধিজীবী হত্যায়  মাওলানা নিজামীর নৈতিক সমর্থন ছিল। ইসলামী ছাত্রসংঘ এবং     বদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে এসব সংগঠনের সদস্যদের ওপর তার নিয়ন্ত্রন ছিল। কাজেই উর্দ্ধতন নেতা হিসেবে মানবতাবিরোধী এসব  অপরাধের দায় তিনি এড়াতে পারেননা।  

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে মোট ১৬টি অভিযোগে চার্জ গঠন হয়েছিল। এর মধ্যে আটটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অপর আটটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

২০১২ সালের ২৮ মে বিচার শুরুর পর আড়াই বছরের মাথায় ট্রাইব্যুনালের অন্যতম আলোচিত এ মামলার রায় দেয়া হল। রায় ঘোষনা উপলক্ষে দেশী বিদেশী বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক, আইনজীবী, এবং বিভিন্ন শ্রেনিপেশার লোকজন  জড়ো হন ট্রাইব্যুনালে। সকাল ১১টা পাঁচ মিনিটের সময় জনাকীর্ণ ট্রাইব্যুনলে রায় ঘোষনা শুরু হয়। রায় প্রদান উপলক্ষে সুপ্রীম কোর্ট এলাকা এবং ট্রাইব্যুালের আশপাশে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

মৃত্যুদন্ডের চার অভিযোগ :
মাওলানা নিজামীকে ২, ৪, ৬ এবং ১৬ নং অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
দুই  নং অভিযোগে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের  ১০ মে বেলা ১১টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের  রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শান্তি কমিটি এবং রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা অংশগ্রহণ করে। মাওলানা নিজামী সেখানে বক্তব্য রাখেন। ওই সভার পরিকল্পনা অনুসারে  বাউশগাড়ি এবং রূপসী  গ্রামে পাকিস্তান আর্মি অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষ হত্যা ৪০ জনের মত নারী ধর্ষণ করা হয়। এ গনহত্যা বিষয়ে ষড়যন্ত্র এবং পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে।

চতুর্থ অভিযোগ হল হত্যা ধর্ষণ এবং দেশান্তরকরন বিষয়ক। এতে বলা হয়েছে পাবনার করমজা গ্রামে মাওলানা  নিজামীর নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় হাবিবুর রহমান নামে একজনকে হত্যা করা হয়। ৮ মে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী করমজা গ্রাম ঘিরে ফেলে  মেঘা ঠাকুর, ষষ্ঠি হালদার, শান্তি হালদার, ফকির চাঁদসহ ৯ জন হিন্দুকে  হত্যা, মেঘা ঠাকুরের মেয়ে এবং আরেক ব্যক্তির স্ত্রীকে ধর্ষণ এবং বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়। মাওলানা নিজামীর র্নিদেশে রাজকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা মানবতাবিরোধী এ অপরাধ করেছে। 

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, মাওলানা  নিজামীর নির্দেশে ২৭ নভেম্বর পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে  মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে অভিযান চালায় রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা। এসময় ২৬ জন নিরস্ত্র নারী পুরুষকে হত্যা করা হয়।

১৬ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী । তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান  হিসেবে  মাওলানা নিজামী এ  গণহত্যার দায় এড়াতে পারেননা এবং এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত চার অভিযোগ :
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত চারটি অভিযোগ হল ১, ৩, ৭ এবং ৮।
১ নং অভিযোগে বলা হয়েছে  ১৯৭১ সালের ৪ জুন পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক মাওলানা কছিমুদ্দিনকে পাকিস্তানী সেনারা অপহরন করে । মাওলানা নিজামীর উপস্থিতিতে ১০ জুন ইছামতি নদীর পাড়ে কছিমউদ্দিনসহ আরো দুইজনকে হত্যা করা হয়।

তৃতীয় অভিযোগে হল হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং ষড়যন্ত্র বিষয়ক। এতে বলা হয়েছে  ১৯৭১ সালের মে মাসের শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প ছিল। রাজাকার ও আলবদর বাহিনীও সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে। মাওলানা নিজামী ওই ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র করতেন।

সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে, ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে নিজামীর তথ্যমতে পাকিস্তানি বাহিনী পাবনার বৃশালিখা গ্রাম  ঘিরে ফেলে সোহরাব আলীকে আটক করে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সামনে হত্যা করে। এ ঘটনায় মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে নির্যাতন  এবং হত্যার দায় আনা হয়েছে। 

অষ্টম অভিযোগে বলা হয়েছে, ৩০ আগস্ট মাওলানা নিজামী নাখালপাড়ার পুরোনো এমপি হোস্টেলে গিয়ে সেখানে আটক রুমী, বদি ও জয়েল  হত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের প্ররোচনা  দেন।


মাওলানা নিজামীকে মন্ত্রী বানানো লজ্জার :
রায় ঘোষনার সময় রায়ের পর্যবেক্ষনে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন মাওলানা নিজামীকে তৎকালীন সরকারের সময় মন্ত্রী করা হয়েছিল। এটা ছিল একটা ভুল এবং দেশের জন্য লজ্জা ও কলঙ্কের। মুক্তিযুদ্দে ৩০ লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। মাওলানা নিজামী মনে প্রানে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। জাময়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রসংঘ এবং আলবদর বাহিনীর সদস্যরা স্বাধীনতাযুদ্ধকালে হত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যতান করেছে মানুষের ওপর। তারা কখনো মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি উচ্চারন করেনি। মুক্তিযোদ্ধাদের তারা দুষ্কৃতকারী বলেছে। পাকিস্তানকে আল্লাহর ঘর বলেছে। হিন্দুদের মুসলমানদের এবং পাকিস্তানের শত্রু আখ্যায়িত করেছে। ইসলামের নামে তারা ভয়ঙ্কর সব অপরাধ করেছে। রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার করেছে ১৯৭১ সালে।

উর্দ্ধতন নেতৃত্বের দায় :
রায় ঘোষনার সময় মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে উর্দ্ধতন নেতৃত্বের দায় বা সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি বিষয়ে তুলে ধরেন  ট্রাইব্যুনাল। এসময় রায় থেকে ‘১৯৭১ সালে মাওলানা নিজামীর অবস্থান এবং ভূমিকা’ শীর্ষক অধ্যায় পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনাল। এতে ট্রাইব্যুনাল বলেন, মাওলানা নিজামী তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘ এবং আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তিনি ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রধান ছিলেন। আলবদর বাহিনী একটি ক্রিমিনাল সংগঠন। ইসলামী ছাত্রসংঘ, আলবদর এবং জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা হত্যা, ধর্ষণ নির্যাতন সংঘটিত করেছে। মাওলানা নিজামী আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে এ বাহিনীর কর্মকান্ডের দায় এড়াতে পারেননা। ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘ এবং বদরবাহিনীর প্রধান হিসেবে মাওলানা নিজামী উর্দ্ধতন নেতৃত্বের দায়ে অভিযুক্ত এবং এটা শাস্তিযোগ্য।  আলবদর বাহিনী কর্তৃক বুদ্ধিজীবী  হত্যা বিষয়ে মাওলানা নিজামীর নৈতিক সমর্থন এবং উসকানি ছিল। ছাত্রসংঘ এবং বদরবাহিনীর হাইকমান্ড হিসেবে এ বাহিনীর সদস্যদের ওপর, অধীনস্ততের ওপর মাওলানা নিজামীর কার্যকরী নিয়ন্ত্রন ছিল। কাজেই এদের অপরাধের দায় তিনি এড়াতে পারেননা। অধীনস্তদের ওপর নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা হিসেবে ১৬ নং অভিযোগ যথা বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা তিনি ঠেকাতে পারতেনা কিন্তু প্রতিরোধ করেননি। একইভাবে মোহাম্মদপুরে ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে গড়ে তোলা নির্যাতন কেন্দ্রে তার সংগঠনের সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত  অপরাধও তিনিি প্রতিরোধ করেননি। কাজেই তিনি উর্দ্ধতন নেতত্বের দায়ে দোষী ।

ট্রাইব্যুনালের এ পর্যবেক্ষন বিষয়ে মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব ছিল  ১৯৭১ সালে মাওলানা নিজামী কোন অপরাধের সাথে জড়িত ছিল কি-না তার বিচার করা। কিন্তু মাওলানা নিজামীকে মন্ত্রী হওয়া বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল যে মন্তব্য করেছেন তার মাধ্যমে তারা তাদের ক্ষমতা এবং এখতিয়ারের বাইরে বিচরন করেছেন। মাওলানা নিজামী জনগনের ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি মন্ত্রী হয়েছেন। কাজেই তার মন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল যে মন্তব্য করলেন তার মাধ্যমে আসলে জনগনের রায়কে অস্বীকার করলেন। এর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের আবেগতাড়িত হওয়ার প্রমান মিলেছে এবং এ কারনে এ রায় বাতিল হওয়া উচিত ।

অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালই তার রায়ে বলেছেন, মাওলানা নিজামী ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। কাজেই ডিসেম্বর মাসে সংঘটিত বুদ্ধিজীবী হত্যার দায় তার ওপর আসে কিভাবে।
চেয়ারম্যান বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা করেন। অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
রায় ঘোষনার শুরুতে চেয়ারম্যান বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, রায় ঘোষনার বিলম্ব নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন কথা উঠেছে। । সেসবের জবাব দেয়ার সুযোগ আমাদের নেই। কারণ আমরা রাস্তায় গিয়ে কথা বলতে পারিনা। তিনি বলেন, আমাদের ওপর কারো নির্দেশ নেই। আমরা সংবিধান এবং আইনের নির্দেশ মেনে কাজ করি। তিনি বলেন, এর আগে এ ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রদত্ত তিনটি রায় দেয়া হয়েছে এবং  সংক্ষিপ্ত  রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রায়টি ২০৪ পৃষ্ঠার। সংক্ষিপ্ত রায় তৈরি করা হয়নি। আমরা এখানে আমাদের পর্যবেক্ষন, অভিযোগ এবং রায় অংশ পড়ে শোনাব।
এরপর তিনজন বিচারপতি পালাক্রমে রায় থেকে পড়ে শোনান।

খালাস পাওয়া আট অভিযোগ :
খালাস পাওয়া আটটি অভিযোগ হল উসকানি বিষয়ক। এগুলো হল ১১, ১২, ১৩ এবং ১৪ নং অভিযোগ। এসব অভিযোগে বলা হয়েছে মাওলানা নিজামী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে ইসলামী ছাত্রসংঘ, রাজাকার এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী লোকজনকে নানাভাবে উসকানি এবং প্ররোচনা দিয়েছেন স্বাধীনতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে।
 এছাড়া খালাস পাওয়া অপর চারটি অভিযোগ হল ৫,  ৯, ১০, এবং ১৫ নং অভিযোগ।
 ৫ নং অভিযোগ তথা ঈশ্বরদী হত্যাকান্ড বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কোন সাক্ষী হাজির করেনি।
নবম অভিযোগ হল  বৃশালিখা গ্রামে  ৭০ জনকে হত্যা ও ৭২টি ঘরে অগ্নিসংযোগ, দশম অভিযোগ হল মুক্তিযোদ্ধা অনিলের বাড়িতে আগুন দেয়া, ১৫ নং অভিযোগ হল পাবনার সাথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে গিয়ে মাওলানা নিজামী কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ষড়যন্ত্র করা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা করার অভিযোগ।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরন:
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ সংক্রান্ত  মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে জাতীয় প্রেসকাবের সামনে থেকে গ্রেফতার  করা হয়। পরে একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ, স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য উসকানি, পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র  এবং বৃদ্ধিজীবী হত্যাসহ মোট  ১৬টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয় ২০১২ সালের ২৮ মে। 

গত বছর ১৩ নভেম্বর এ মামলার বিচার কার্যক্রম শেষে রায়ের তারিখ অপেক্ষমান ঘোষনা করেন ট্রাইব্যুাল। কিন্তু রায় ঘোষনার আগে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বদল হওয়ায় পুনরায় যুক্তি উপস্থাপন করা হয় এবং গত ২৪ মার্চ দ্বিতীয় দফায় মামলার  রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হয়।

গত ২৪ জুন মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষনার জন্য ধার্য্য করা হয়েছিল। মাওলানা নিজামী অসুস্থ থাকায়  তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে না পারায় ওইদিন রায় ঘোষনা থেকে বিরত থাকে ট্রাইব্যুনাল।

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৬৭ জন সাক্ষীর তালিকা দেয়। এখান থেকে ২৬ জনকে হাজির করে তারা। অপরদিকে আসামী পক্ষ ১০ হাজার ১১১ জন সাক্ষীর তালিকা দেয়। আসামী পক্ষে চারজন সাক্ষী  নির্ধারন করে দেয় ট্রাইব্যুনাল এবং তারা চারজন সাক্ষী হাজির করে।

মাওলানা নিজামীর পক্ষে এ মামলায় আইনজীবী হিসেবে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেম মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর হায়দার আলী, প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী,  প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ প্রমুখ দায়িত্ব পালন করেন এ মামলায়।






শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৪

অধ্যাপক আযমের জানাজা কাল // বাসায় হাজারো মানুষের ভিড়

মেহেদী হাসান  ২৪/১০/২০১৪
কাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অধ্যাপক গোলাম আযমের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। জোহরের নামাজের পর জানাজা হবে। অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী জানাজা নামাজের ইমামতি করবেন।
জানাজা শেষে বড়মগবাজার কাজী অফিস লেনের পারিবারিক গোরস্তানে তাকে দাফন করা হবে। আজ সন্ধ্যার পর আব্দুল্লাহিল আমান আযমী এ ঘোষনা দেন।   জানিয়েছেন।

আমান আযমী বলেন, তিনি ছাড়া তার অপর পাঁচভাই সপরিবারে বিদেশে বাস করেন। তাছাড়া তাদের আরো অনেক আত্মীয় স্বজন রয়েছে। তার আব্বার অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী আছেন দেশে বিদেশে। তারা সবাই আব্বার জানাজা এবং দাফনে অংশ নিতে চেয়েছেন। সেজন্য জানাজা এবং দাফনের জন্য অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু তার ভাইয়েরা স্বল্প সময়ের নোটিশে ভিসা সংগ্রহ করে দেশে আসতে পারছেননা। তাই আর অপেক্ষা না করে আজ জানাজার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ।

নিজ বাসায় গোলাম আযম
অধ্যাপক গোলাম আযম নিজ বাসায় ফিরলেন। তবে লাশ হয়ে। পৌনে তিনবছর প্রিজন সেলে বন্দী থাকার পর আজ সকাল সাতটা ৫০ মিনিটে তার লাশ  বড়মগবাজারের কাজী অফিস লেনের নিজ বাসায় আনা হয়।

গত বৃহষ্পতিবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল  করেন অধ্যাপক গোলাম আযম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি অধ্যাপক গোলাম আযমকে গ্রেফতার করা হয়।  গ্রেফতারের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত  নব্বয়োর্ধ অসুস্থ অধ্যাপক গোলাম আযমকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের প্রিজন সেলেই বন্দী ছিলেন। 

রাত দুইটা ৪৫ মিনিটের সময় অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশ বিএসএমএমইউ থেকে পোস্ট মর্টেমের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পোস্ট মর্টেম সম্পন্ন করার পর সকাল সাতটা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে লাশ হস্তান্তর করা হয় অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর কাছে। এরপর সাতটা ৫০ মিনিটে তার লাশ বাসায় এসে পৌছে।
বাসায় আনার পর সর্বপ্রথম অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশ গোসল করানো হয়। গোসল শেষে সকাল পৌনে ১১টায় তার লাশ বাসার সামনে নেয়া হয় এবং সেখানে বিপুল সংখ্যক ভক্ত অনুসারী তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ভ্রাম্যমান মরচুয়ারিতে করে ২০ মিনিটের মত বাড়ির সামনে রাখা হয় লাশ । এরপর লাশ আবার ভবনের নিচে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাজারো মানুষের ভিড়
অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশ নিজ বাসায় আনার পর বিশ্ববরেণ্য এ রাজনীতিবিদের প্রতি  শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করে হাজারো মানুষ।
তাকে শেষবারের মত দেখা এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সারাদিন অগনতি মানুষ ভিড় জমাতে থাকে কাজি অফিস লেনের বাসভবনের সামনে। জুমার নামাজের পর আবার তার লাশ বাসার সামনে আনা হয় ।  এসময় পুরো কাজী অফিস লেন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় তাকে শেষবারের মত দেখার জন্য। হাজার হাজার মানুষ দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করেন তাকে দেখার জন্য। জুমার নামাজের পর অধ্যাপক গোলাম আযমের জন্য মুনাজাত করেন বাড়ি সংলগ্ন মসজিদের খতিব। এসময় সেখানে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। অনেকের চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। এরপর ৯২ বছর বয়সে অসুস্থ অবস্থায় দীর্ঘ বন্দী জীবন এবং বন্দীত্ব অবস্থায় মৃত্যুর পর লাশ হয়ে বাসার ফেরার প্রসঙ্গ তুলে ধরে একজন বক্তব্য রাখার পর অনেকে হুহু করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এরপর সারাদিনব্যাপী চলতে থাকে অগনিত মানুষের ভিড়।
নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. আব্দুল্লাহ মো : তাহের, সাবেক এমপি হামিদুর রহমান  আযাদ. কর্মপরিষদ সদস্য ডা. অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, কর্মপরিষদ সদস্য ডা. রেদোয়ান উল্লাহ শাহেদী, ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি মনজুরুল ইসলাম ভুইয়া, সেলিম উদ্দিন, ড. রেজাউল করিম, লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, জাগপা মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমানসহ বিপুলসংখ্যক রাজনীতিবিদ নেতাকর্মী অধ্যাপক গোলাম আযমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আসেন।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বাসার সামনে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন।

পোষ্টমর্টেম :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান  মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রাত ২টায় অধ্যাপক গোলাম আযমের সুরতহাল প্রস্তুত করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারেক হাসান। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন শাহবাগ থানার এসআই ফেরদৌস আলম।
পরে রাত  ৩টার দিকে এম্বুলেন্সে করে গোলাম আযমের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে সকাল পৌনে ৬টার দিকে অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশ পোষ্টমর্টেম কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল সোয়া ৬টার দিকে লাশের পোষ্টমর্টেম শুরু হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: শফিউজ্জামান খায়ের এবং প্রভাষক ডা: প্রদীপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে পোষ্টমর্টেম সম্পন্ন হয়। প্রায় ৩০ মিনিটে পোষ্টমর্টেম সম্পন্ন হয়।
মর্গ সূত্র জানায়, পোষ্টমর্টেমের সময় অধ্যাপক গোলাম আযমের লাং, হার্ট ও পাকস্থলির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে প্যাথলজি পরীক্ষার জন্য।
পোষ্টমর্টেম শেষে ৭-৪০ মিনিটে অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশ হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে। সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী পিতার লাশ গ্রহণ করেন। এসময় কারাগারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষি মো: জাকারিয়া ।
এদিকে অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নেয়ার পর সেখানে আত্মীয়-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা ভিড় করেন। সকাল হলে ভিড় আরো বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। 



মৃত্যুর ঘোষনা
গ্রেফতারের পর থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন অধ্যাপক গোলাম আযম। গত দুই সেপ্টম্বর থেকে  ৯২ বছর বয়সী অধ্যাপক গোলাম আযমের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। এরপর থেকে তাকে বেশ কয়েকবার সিসিইউ, আইসিইউতে নেয়া হয়। গত বৃহষ্পতিবার অধ্যাপক গোলাম আযমের রক্তচাপ একেবারেই কমে যায় সকালে এক পর্যায়ে তার রক্তচাপ ৬০/৪০ এ নেমে আসে এবং সহজে কারো ডাকে সাড়া দিচ্ছিলেননা। অনেকক্ষন ডাকাডাকির পর মাঝে মাঝে তিনি চোখ তুলে তাকাতেন। এ পর্যায়ে চিকিৎসকরা ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে তার রক্তচাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেন এবং পরবর্তীতে কৃত্রিম শ্বাসপ্রসাসের ব্যবস্থা করা হয়। বৃহষ্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে অধ্যাপক গোলাম আযমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে সংবাদ মাধ্যমে। ১০টার দিকে অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী জানান তার বাবা আর বেচে নেই। এরপর ডাক্তারা প্রথমে তাকে কিনিক্যালী ডেড ঘোষনা করে। রাত ১১টা ৫২ মিনিটের মিনিটে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আব্দুল মজিদ ভূইয়া তার মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করেন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ম্যাসিভ হার্ট এ্যাটাকের কারণে রাত ১০টা ১০ মিনিটে অধ্যাপক গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করেছেন।

১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে  ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অধ্যাপক গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করে।



বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

অধ্যাপক গোলাম আযমের ইন্তেকাল


মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১    বছর ১১ মাস। আজ  রাত ১১টা ৫২ মিনিটে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আব্দুল মজিদ ভূইয়া তার মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করেন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ম্যাসিভ হার্ট এ্যাটাকের কারণে রাত ১০টা ১০ মিনিটে অধ্যাপক গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করেছেন। রাতেই কারা বিধি অনুযায়ী তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যেহেতু তিনি একজন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি তাই পোস্ট মর্টেম হবে কিনা কারা কর্তৃপক্ষই তা নির্ধারণ করবেন বলে জানান তিনি।

বিএসএমএমইউ’র পরিচালকের বক্তব্যের কিছুক্ষণ পূর্বে অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী সাংবাদিকদের জানান, তার পিতা আর বেঁচে নেই। একজন মুসলমান হিসেবে যেভাবে দাফন-কাফন করা প্রয়োজন তারা সেটাই চান। তার এ বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক গোলাম আযমের মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করেন।

গত কয়েকািদন ধরে মারাত্মক অসুস্থতার পর গতকাল সকাল থেকেই তার অবস্থার অবনতি ঘটে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ম্যাসিভ হার্ট এ্যাটাকের পর মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, অধ্যাপক গোলাম আযম ‘কিনিক্যালি ডেড’। তবে তাকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। রাত ১০টার দিকে আইনজীবী তাজুল ইসলাম গোলাম আযমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনালের আব্দুল্লাহিল আমান আযমীকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন, ‘আমার পিতা আর বেঁচে নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন তার মৃত্যুর ঘোষনা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাচ্ছেননা তা আমরা জানিনা’।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আব্দুল মজিদ ভূইয়া রাত ৯টা ৫৮ মিনিটে অধ্যাপক গোলাম আযমের মৃত্যুর খবরটি গুজব বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি তখন জানান, তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি মারা যাননি’।

গত ৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অধ্যাপক অধ্যাপক গোলাম আযমকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সেদিন বিকাল ৪টার কিছু আগে তাকে প্রিজন সেল থেকে সিসিইউ-এ নেয়া হয়। তিনি দীর্ঘদিন থেকে নানা ধরনের অসুখে ভুগছেন। এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর শ্বাসকষ্ট হওয়ায় তাকে সিসিউি-এ চিকিৎসা দেয়া হয়। তার ছিল অতি উচ্চ রক্তচাপ (১৬০/১০৫), হৃদ স্পন্দন ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি (১৪০-১৪৩)। ফুসফুসে দেখা দেয় সংক্রমণ। তার নিউমোনিয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।

অধ্যাপক গোলাম আযম বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক সুপরিচিত নাম। দেশের বাইরেও ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত কোটি কোটি মানুষের কাছেও তিনি ছিলেন সমাদৃত। ইসলামী আদর্শের একজন একনিষ্ঠ অনুসারী ও নেতা হিসেবে বিশ্বের আনাচে-কানাচেও তার সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের নেতা হিসেবেও সর্বত্র তাকে মান্য করা হয়।

 ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনে তার রয়েছে স্মরণীয় ভূমিকা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে ভূমিকা রাখায় তিনি নাগরিকত্ব হারান। ১৯৯৪ সালে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে নাগরিকত্ব ফিরে পান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি দুইবার ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৭১ সালের ভূমিকার কারণে তার বিচার শুরু হয় এবং তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০১২ সালের ১১ জানুয়ারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশে অধ্যাপক গোলাম আযমকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকেই তাকে বিএসএমএমইউ’র প্রিজন সেলে রাখা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন।

জানাযা ও দাফন :
অধ্যাপক আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী জানান, জানাযার বিষয়ে আমার পিতা আমার কাছে অসিয়ত করেছেন যে, জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী যেন তারা জানাযায় ইমামতি করেন। তখন আমি তাকে জানাই মাওলানা নিজামীও কারাবন্দী। এটা শুনে আমার পিতা বলেন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যেন তার জানাযা পড়ান। মাওলানা সাঈদীও কারাবন্দী জানানো হলে আমার পিতা জানাযার বিষয়ে আর কিছু বলেননি।

দাফনের বিষয়ে তিনি অসিয়ত করেছেন। মগবাজার কাজী অফিস লেনে আমার দাদার কবরের পাশে দাফন করার কথা বলেছেন।আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, আমরা ছয় ভাই। আমি ছাড়া অন্যরা প্রবাসে। তারা সবাই দেশে আসলে পিতার দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।
ময়না তদন্ত বিষয়ে তিনি জানান, আমরা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি, আমার পিতার যেন ময়না তদন্ত না করা হয়। তিনি হাসপাতালের সি ব্লকের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

হাসপাতাল ও বাসভবনে ভীড় : অধ্যাপক গোলাম আযমের স্বাস্থ্যের অবনতির খবর সকাল থেকেই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে অধ্যাপক গোলাম আযমের পরিবার ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। তারা বিভিন্নভাবে তার শারীরিক অবস্থা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। সন্ধ্যার পর অনেকেই হাসপাতাল ও মগবাজার কাজী অফিস লেনের বাসভবনে ভীড় করতে থাকেন। উদ্বেগজনক খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার পর রাতে ভীড় আরো বেড়ে যায়। 
রাত ৯টা পর হাসপাতাল ও তার বাসভবনে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। এমনকি রাতে বিএসএমএমইউ’র সি ব্লক স¤পূর্ণটা পুলিশ ঘেরাও করে রাখে। তার স্বাস্থ্যের প্রকৃত অবস্থা জানতে দেশ-বিদেশের বিপুল সংখ্যক গণমাধ্যম কর্মী হাসপাতালে ভড়ি জমান।

শোক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ এবং ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে অধ্যাপক গোলাম আযমের ইন্তেকালে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন। বিৃবতিতে তারা বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের এ মৃত্যু ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য এক অপুরণীয় ক্ষতি। তিনি ছিলেন এদেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের অভিভাবক তুল্য। মহাল আল্লাহ পাক এ মর্দে মুৃমিনকে জান্নাতে উত্তম প্রতিদান দিন। দলের পক্ষ থেকে আজ দেশ-বিদেশে সর্বত্রই গায়েবানা জানাযার আহবান জানানো হয়েছে।


অধ্যাপক গোলাম আযমের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি 

অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার লক্ষ্মিবাজারে তার মাতুলালয় শাহ সাহেব বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস ব্রাèনবাড়িয়ার নবীনগরের বীরগাঁও গ্রামে।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে  ১৯৪৬ সালে বিএ ও  ১৯৪৮ সালে এমএ পাশ করেন। এর আগে ১৯৪৪ সালে ঢাকার তৎকালীন ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে মেধা তালিকায় দশম স্থানসহ ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ১৯৫০ থেকে ৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন।

অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৪৭-৪৮ মেয়াদে ডাকসু’র জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৪৮-১৯৪৯ মেয়াদে তিনি পুনরায় এ পদে নির্বাচিত হন। তিনি অন্যতম একজন ভাষাসৈনিক। ডাকসু জিএস থাকাকালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে সকল ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষে তিনি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে ঐতিহাসিক স্মারকলিপি উপস্থাপন করেন।  ভাষা আন্দোলনের কারণে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তাকে গ্রেফতার করা হয়। রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনার সময়ও তিনি কারাবরন করেন। জীবনের শুরুতে তিনি তাবলীগ জামায়াতের সাথে যুক্ত হন। পরে ১৯৫৪ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন এবং ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত  তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত একই দলের  সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জীবনে বহুবার তিনি রাজনৈতিক কারণে কারাবরণ করেছেন। 
জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ এ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের পাশপাশি তিনি পাকিস্তান সরকার বিরোধী আন্দোলন এবং জাতীয় বিভিন্ন সঙ্কট উত্তোরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পক্ষে প্রচারণা, আইউব খান বিরোধী জোট ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি’র (ডাক) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, পাকিস্তান শাসক বিরোধী জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (ডিপিএম) এর সেক্রেটারি জেনারেল এর দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর তিনি পাকিস্তানের উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন এবং ১৯৭৩ সালে লন্ডন যান। ১৯৭৮ সালের ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং  আবার জামায়াতের আমির নিযুক্ত হন । ২০০১  সালে তিনি আমিরের দায়িত্ব থেকে অবসরে যান। ১৯৭৩ সালে অধ্যাপক গোলাম আযমের বাংলাদেশী নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয় এবং পরবর্তীতে নাগরিকত্ব বিষয়ে আলোচিত মামলায়  ১৯৯৪ সালে হাইকোর্ট  তার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেন ।  

বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রূপকার  অধ্যাপক গোলাম আযমের পরিচিতি রয়েছে দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সুবাদে বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক  নেতৃবৃন্দের কাছে অধ্যাপক গোলাম আযম একজন ইসলামী রাজনীতিবিদ  হিসেবে খুবই পরিচিত একটি নাম।

জেনারেল এরশাদের শাসনামলে আশির দশকের মাঝামাঝি তিনি জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ধারণা প্রচার করেন। এরপর ১৯৯১ সালে এ ব্যবস্থার অধীনে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যা স্বাধীন বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাইলফলক এবং যুগান্তকারী ঘটনা  হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এরপর তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আরো তিনটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক গোলাম আযম  বেশ কিছু  আলোচিত  গ্রন্থের প্রণেতা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পলাশী থেকে বাংলাদেশ, ইকামতে দ্বীন, মনটাকে কাজ দিন, তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘জীবনে যা দেখলাম’। এছাড়া তার বেশ কিছু অনুবাদ গ্রন্থও রয়েছে।

অধ্যাপক গোলাম আযমের ছয় ছেলে। এর মধ্যে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী দেশে আছেন। তার স্ত্রী সৈয়দা আফিফা আযম জীবিত আছেন।

গ্রেফতার ও মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরন

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলার কার্যক্রম শুরু হলে অধ্যাপক গোলাম আযমকে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ মোতাবেক তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির হলে সেদিনই  ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে  ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অধ্যাপক গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করে।

অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পাঁচ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। পাঁচ ধরনের অভিযোগ হল ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উসকানি, সহযোগিতা এবং সিরু মিয়া দারোগা ও তার কিশোর পুত্র আনোয়ার কামালসহ মোট ৩৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া কারাগারে হত্যার নির্দেশ।

উর্দ্ধতন নেতৃত্বের দায় হিসেবে ১৯৭১ সালের যাবতীয় অপরাধের দায় আনা হয়েছে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ৩০ লাখ নরনারী হত্যা, ৪ লাখ নারী ধর্ষণসহ সমস্ত অপরাধ এবং  ধ্বংসযজ্ঞের দায়ভার চাপানো হয়েছে অধ্যাপক গোলাম আযমের ওপর ।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির রায় ঘোষনার সময় বলেছেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়নি বা  অপরাধ স্থলে উপস্থিত থাকা বা তার কথায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে কেউ কোন অপরাধ সংঘটন করেছে সরাসরি এমন কোন অভিযোগও আনা হয়নি তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা হল- উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায় বা সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’র অভিযোগ। তিনি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির। এ দলের আমির হিসেবে রাজাকার, শান্তি কিমিটি, আল বদর, আল শামস প্রভৃতি বাহিনী গঠন এবং এসব বাহিনীর কার্যক্রমের ওপর তার নিয়ন্ত্রন ছিল। এসব বাহিনী ১৯৭১ সালে  পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে হত্যা, গনহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে। তাছাড়া সরাসরি জামায়াতে ইসলামও পাকিস্তানের সহযোগী বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে। তাই এসব বাহিনীর অপরাধমূলক কর্মকান্ডের দায় তিনি এড়াতে পারেননা।