বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৪

নিজামীর মৃত্যুদণ্ড

মেহেদী হাসান, ২৯/১০/২০১৪
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। চারটি অভিযোগের প্রতিটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর আরো চারটি অভিযোগের প্রত্যেকটিতে মাওলানা নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  আজ  তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের এ রায় ঘোষনা করেন।

মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যা, গনহত্যা, হত্যা,  ধর্ষণ ও মানবতাবিরোধী  অপরাধের নির্দেষদাতা, পরিকল্পনা,  ষড়যন্ত্র এবং  উর্দ্ধতন নেতৃত্বের দায়ে (সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি) মাওলানা নিজামীকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে মাওলানা নিজামী তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘ এবং আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। আলবদর বাহিনী একটি অপরাধী সংগঠন এবং এ বাহিনী কর্তৃক বুুদ্ধিজীবী হত্যায়  মাওলানা নিজামীর নৈতিক সমর্থন ছিল। ইসলামী ছাত্রসংঘ এবং     বদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে এসব সংগঠনের সদস্যদের ওপর তার নিয়ন্ত্রন ছিল। কাজেই উর্দ্ধতন নেতা হিসেবে মানবতাবিরোধী এসব  অপরাধের দায় তিনি এড়াতে পারেননা।  

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে মোট ১৬টি অভিযোগে চার্জ গঠন হয়েছিল। এর মধ্যে আটটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অপর আটটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

২০১২ সালের ২৮ মে বিচার শুরুর পর আড়াই বছরের মাথায় ট্রাইব্যুনালের অন্যতম আলোচিত এ মামলার রায় দেয়া হল। রায় ঘোষনা উপলক্ষে দেশী বিদেশী বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক, আইনজীবী, এবং বিভিন্ন শ্রেনিপেশার লোকজন  জড়ো হন ট্রাইব্যুনালে। সকাল ১১টা পাঁচ মিনিটের সময় জনাকীর্ণ ট্রাইব্যুনলে রায় ঘোষনা শুরু হয়। রায় প্রদান উপলক্ষে সুপ্রীম কোর্ট এলাকা এবং ট্রাইব্যুালের আশপাশে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

মৃত্যুদন্ডের চার অভিযোগ :
মাওলানা নিজামীকে ২, ৪, ৬ এবং ১৬ নং অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
দুই  নং অভিযোগে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের  ১০ মে বেলা ১১টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের  রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শান্তি কমিটি এবং রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা অংশগ্রহণ করে। মাওলানা নিজামী সেখানে বক্তব্য রাখেন। ওই সভার পরিকল্পনা অনুসারে  বাউশগাড়ি এবং রূপসী  গ্রামে পাকিস্তান আর্মি অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষ হত্যা ৪০ জনের মত নারী ধর্ষণ করা হয়। এ গনহত্যা বিষয়ে ষড়যন্ত্র এবং পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে।

চতুর্থ অভিযোগ হল হত্যা ধর্ষণ এবং দেশান্তরকরন বিষয়ক। এতে বলা হয়েছে পাবনার করমজা গ্রামে মাওলানা  নিজামীর নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় হাবিবুর রহমান নামে একজনকে হত্যা করা হয়। ৮ মে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী করমজা গ্রাম ঘিরে ফেলে  মেঘা ঠাকুর, ষষ্ঠি হালদার, শান্তি হালদার, ফকির চাঁদসহ ৯ জন হিন্দুকে  হত্যা, মেঘা ঠাকুরের মেয়ে এবং আরেক ব্যক্তির স্ত্রীকে ধর্ষণ এবং বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়। মাওলানা নিজামীর র্নিদেশে রাজকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা মানবতাবিরোধী এ অপরাধ করেছে। 

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, মাওলানা  নিজামীর নির্দেশে ২৭ নভেম্বর পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে  মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে অভিযান চালায় রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা। এসময় ২৬ জন নিরস্ত্র নারী পুরুষকে হত্যা করা হয়।

১৬ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী । তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান  হিসেবে  মাওলানা নিজামী এ  গণহত্যার দায় এড়াতে পারেননা এবং এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত চার অভিযোগ :
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত চারটি অভিযোগ হল ১, ৩, ৭ এবং ৮।
১ নং অভিযোগে বলা হয়েছে  ১৯৭১ সালের ৪ জুন পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক মাওলানা কছিমুদ্দিনকে পাকিস্তানী সেনারা অপহরন করে । মাওলানা নিজামীর উপস্থিতিতে ১০ জুন ইছামতি নদীর পাড়ে কছিমউদ্দিনসহ আরো দুইজনকে হত্যা করা হয়।

তৃতীয় অভিযোগে হল হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং ষড়যন্ত্র বিষয়ক। এতে বলা হয়েছে  ১৯৭১ সালের মে মাসের শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প ছিল। রাজাকার ও আলবদর বাহিনীও সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে। মাওলানা নিজামী ওই ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র করতেন।

সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে, ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে নিজামীর তথ্যমতে পাকিস্তানি বাহিনী পাবনার বৃশালিখা গ্রাম  ঘিরে ফেলে সোহরাব আলীকে আটক করে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সামনে হত্যা করে। এ ঘটনায় মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে নির্যাতন  এবং হত্যার দায় আনা হয়েছে। 

অষ্টম অভিযোগে বলা হয়েছে, ৩০ আগস্ট মাওলানা নিজামী নাখালপাড়ার পুরোনো এমপি হোস্টেলে গিয়ে সেখানে আটক রুমী, বদি ও জয়েল  হত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের প্ররোচনা  দেন।


মাওলানা নিজামীকে মন্ত্রী বানানো লজ্জার :
রায় ঘোষনার সময় রায়ের পর্যবেক্ষনে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন মাওলানা নিজামীকে তৎকালীন সরকারের সময় মন্ত্রী করা হয়েছিল। এটা ছিল একটা ভুল এবং দেশের জন্য লজ্জা ও কলঙ্কের। মুক্তিযুদ্দে ৩০ লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। মাওলানা নিজামী মনে প্রানে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। জাময়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রসংঘ এবং আলবদর বাহিনীর সদস্যরা স্বাধীনতাযুদ্ধকালে হত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যতান করেছে মানুষের ওপর। তারা কখনো মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি উচ্চারন করেনি। মুক্তিযোদ্ধাদের তারা দুষ্কৃতকারী বলেছে। পাকিস্তানকে আল্লাহর ঘর বলেছে। হিন্দুদের মুসলমানদের এবং পাকিস্তানের শত্রু আখ্যায়িত করেছে। ইসলামের নামে তারা ভয়ঙ্কর সব অপরাধ করেছে। রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার করেছে ১৯৭১ সালে।

উর্দ্ধতন নেতৃত্বের দায় :
রায় ঘোষনার সময় মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে উর্দ্ধতন নেতৃত্বের দায় বা সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি বিষয়ে তুলে ধরেন  ট্রাইব্যুনাল। এসময় রায় থেকে ‘১৯৭১ সালে মাওলানা নিজামীর অবস্থান এবং ভূমিকা’ শীর্ষক অধ্যায় পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনাল। এতে ট্রাইব্যুনাল বলেন, মাওলানা নিজামী তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘ এবং আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তিনি ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রধান ছিলেন। আলবদর বাহিনী একটি ক্রিমিনাল সংগঠন। ইসলামী ছাত্রসংঘ, আলবদর এবং জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা হত্যা, ধর্ষণ নির্যাতন সংঘটিত করেছে। মাওলানা নিজামী আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে এ বাহিনীর কর্মকান্ডের দায় এড়াতে পারেননা। ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘ এবং বদরবাহিনীর প্রধান হিসেবে মাওলানা নিজামী উর্দ্ধতন নেতৃত্বের দায়ে অভিযুক্ত এবং এটা শাস্তিযোগ্য।  আলবদর বাহিনী কর্তৃক বুদ্ধিজীবী  হত্যা বিষয়ে মাওলানা নিজামীর নৈতিক সমর্থন এবং উসকানি ছিল। ছাত্রসংঘ এবং বদরবাহিনীর হাইকমান্ড হিসেবে এ বাহিনীর সদস্যদের ওপর, অধীনস্ততের ওপর মাওলানা নিজামীর কার্যকরী নিয়ন্ত্রন ছিল। কাজেই এদের অপরাধের দায় তিনি এড়াতে পারেননা। অধীনস্তদের ওপর নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা হিসেবে ১৬ নং অভিযোগ যথা বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা তিনি ঠেকাতে পারতেনা কিন্তু প্রতিরোধ করেননি। একইভাবে মোহাম্মদপুরে ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে গড়ে তোলা নির্যাতন কেন্দ্রে তার সংগঠনের সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত  অপরাধও তিনিি প্রতিরোধ করেননি। কাজেই তিনি উর্দ্ধতন নেতত্বের দায়ে দোষী ।

ট্রাইব্যুনালের এ পর্যবেক্ষন বিষয়ে মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব ছিল  ১৯৭১ সালে মাওলানা নিজামী কোন অপরাধের সাথে জড়িত ছিল কি-না তার বিচার করা। কিন্তু মাওলানা নিজামীকে মন্ত্রী হওয়া বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল যে মন্তব্য করেছেন তার মাধ্যমে তারা তাদের ক্ষমতা এবং এখতিয়ারের বাইরে বিচরন করেছেন। মাওলানা নিজামী জনগনের ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি মন্ত্রী হয়েছেন। কাজেই তার মন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল যে মন্তব্য করলেন তার মাধ্যমে আসলে জনগনের রায়কে অস্বীকার করলেন। এর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের আবেগতাড়িত হওয়ার প্রমান মিলেছে এবং এ কারনে এ রায় বাতিল হওয়া উচিত ।

অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালই তার রায়ে বলেছেন, মাওলানা নিজামী ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। কাজেই ডিসেম্বর মাসে সংঘটিত বুদ্ধিজীবী হত্যার দায় তার ওপর আসে কিভাবে।
চেয়ারম্যান বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা করেন। অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
রায় ঘোষনার শুরুতে চেয়ারম্যান বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, রায় ঘোষনার বিলম্ব নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন কথা উঠেছে। । সেসবের জবাব দেয়ার সুযোগ আমাদের নেই। কারণ আমরা রাস্তায় গিয়ে কথা বলতে পারিনা। তিনি বলেন, আমাদের ওপর কারো নির্দেশ নেই। আমরা সংবিধান এবং আইনের নির্দেশ মেনে কাজ করি। তিনি বলেন, এর আগে এ ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রদত্ত তিনটি রায় দেয়া হয়েছে এবং  সংক্ষিপ্ত  রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রায়টি ২০৪ পৃষ্ঠার। সংক্ষিপ্ত রায় তৈরি করা হয়নি। আমরা এখানে আমাদের পর্যবেক্ষন, অভিযোগ এবং রায় অংশ পড়ে শোনাব।
এরপর তিনজন বিচারপতি পালাক্রমে রায় থেকে পড়ে শোনান।

খালাস পাওয়া আট অভিযোগ :
খালাস পাওয়া আটটি অভিযোগ হল উসকানি বিষয়ক। এগুলো হল ১১, ১২, ১৩ এবং ১৪ নং অভিযোগ। এসব অভিযোগে বলা হয়েছে মাওলানা নিজামী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে ইসলামী ছাত্রসংঘ, রাজাকার এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী লোকজনকে নানাভাবে উসকানি এবং প্ররোচনা দিয়েছেন স্বাধীনতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে।
 এছাড়া খালাস পাওয়া অপর চারটি অভিযোগ হল ৫,  ৯, ১০, এবং ১৫ নং অভিযোগ।
 ৫ নং অভিযোগ তথা ঈশ্বরদী হত্যাকান্ড বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কোন সাক্ষী হাজির করেনি।
নবম অভিযোগ হল  বৃশালিখা গ্রামে  ৭০ জনকে হত্যা ও ৭২টি ঘরে অগ্নিসংযোগ, দশম অভিযোগ হল মুক্তিযোদ্ধা অনিলের বাড়িতে আগুন দেয়া, ১৫ নং অভিযোগ হল পাবনার সাথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে গিয়ে মাওলানা নিজামী কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ষড়যন্ত্র করা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা করার অভিযোগ।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরন:
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ সংক্রান্ত  মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে জাতীয় প্রেসকাবের সামনে থেকে গ্রেফতার  করা হয়। পরে একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ, স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য উসকানি, পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র  এবং বৃদ্ধিজীবী হত্যাসহ মোট  ১৬টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয় ২০১২ সালের ২৮ মে। 

গত বছর ১৩ নভেম্বর এ মামলার বিচার কার্যক্রম শেষে রায়ের তারিখ অপেক্ষমান ঘোষনা করেন ট্রাইব্যুাল। কিন্তু রায় ঘোষনার আগে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বদল হওয়ায় পুনরায় যুক্তি উপস্থাপন করা হয় এবং গত ২৪ মার্চ দ্বিতীয় দফায় মামলার  রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হয়।

গত ২৪ জুন মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষনার জন্য ধার্য্য করা হয়েছিল। মাওলানা নিজামী অসুস্থ থাকায়  তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে না পারায় ওইদিন রায় ঘোষনা থেকে বিরত থাকে ট্রাইব্যুনাল।

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৬৭ জন সাক্ষীর তালিকা দেয়। এখান থেকে ২৬ জনকে হাজির করে তারা। অপরদিকে আসামী পক্ষ ১০ হাজার ১১১ জন সাক্ষীর তালিকা দেয়। আসামী পক্ষে চারজন সাক্ষী  নির্ধারন করে দেয় ট্রাইব্যুনাল এবং তারা চারজন সাক্ষী হাজির করে।

মাওলানা নিজামীর পক্ষে এ মামলায় আইনজীবী হিসেবে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেম মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর হায়দার আলী, প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী,  প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ প্রমুখ দায়িত্ব পালন করেন এ মামলায়।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন