বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১২

মহকুমা, জেলা থানা শান্তি কমিটির আহবায়কদের মধ্যে কতজন জামায়াত করতেন তা বলতে পারলেননা তদন্ত কর্মকর্তা


মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানের জেরা চলছে। তাকে জেরা করছেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। আজ  জেরার সময় তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা  হয় ১৯৭১ সালে মহকুমা, জেলা এবং থানা পর্যায়ে  শান্তি কমিটির যারা আহবায়ক ছিলেন তাদের মধ্যে কতজন জামায়াত করতেন। জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবনা।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা স্বীকার করেন অন্য মামলার তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দী তিনি  অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় ব্যবহার করেছেন।

আজ জেরা শেষ করার অনুরোধ :
আজ  জেরার শুরুতে ট্রাইব্যুনাল মিজানুল ইসলামকে  বলেন, আগামীকাল বৃহষ্পতিবারের মধ্যে জেরার শেষ করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। মিজানুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমার ১২টি সেশন পাব বলে আশা করছি।  আগামীকাল শেষ করলে আমার  ১১টি সেশন হবে। তারপরও আমি চেষ্টা করব কালকের মধ্যে শেষ করার।  ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমি জানি মিজানুল ইসলাম চেষ্টা করলে শেষ করতে পারবেন।

এরপর জেরা শুরু হয়। জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন।

জেরা :

প্রশ্ন : মৌলভী ফরিদ আহমেদের নেতৃত্বে ভিন্ন কোন শান্তি কমিটি হয়েছিল?
উত্তর : এ মুহুর্তে ডকুমেন্টে খুঁজে পাচ্ছিনা।
প্রশ্ন : মৌলভী ফরিদ আহমেদ শান্তি কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট আছে?
উত্তর : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির ১৪০ সদস্যের মধ্যে ফরিদ আহমেদ নামে একজনের নাম আছে। তিনি মৌলভী ফরিদ আহমেদ কি-না বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন বৈঠকের কোন কার্যবিবরনী সংগ্রহ করতে পেরেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন সাধারন সভার কোন খবরের পেপারকাটিং সংগ্রহ করতে পেরেছেন?
উত্তর : ১৩/৪/১৯৭১ তারিখের দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান এবং দৈনিক পয়গাম আছে।
প্রশ্ন : ১৩/৪/১৯৭১ তারিখের আজাদ পত্রিকার খবরে একটি শোভাযাত্র আয়োজনের আহবানের খবর আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ওই খবরে শোভাযাত্রা আয়োজনের বিষয়টি  কোথায় বসে কত তারিখের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় সে বিষয়টি উল্লেখ নেই।
উত্তর : নাই। তবে নাগরিক শান্তি কমিটির উদ্যোগে শোভাযাত্রার কথা বলা আছে।
প্রশ্ন : ওই খবরে কোন বিবৃতিকারীর নাম নাই।
উত্তর : নাই।
প্রশ্ন : দৈনিক পয়গাম এবং দৈনিক পাকিস্তানের খবরেও একই কথা বলা আছে।
উত্তর : দৈনিক পয়গামে আরো বলা আছে নাগরিক শান্তি কমিটির উদ্যোগে ঢাকার বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গনে এক শান্তি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রশ্ন : মহকুমা, জেলা  শান্তি কমিটির যারা আহবায়ক ছিলেন তাদের মধ্যে কতজন জামায়াত করতেন?
উত্তর : সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পটুয়াখালিতে দৈনিক সংগ্রাম বিতরন হত কি-না।
উত্তর : এ মর্মে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। তবে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সব জায়গায় এসব পত্রিকায় যেত।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের সংগ্রামের সার্কুলেশন কত ছিল?
এ প্রশ্নের পর প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। এরপর ট্রাইব্যুনালও আপত্তি করেন এ প্রশ্নের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে। জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ১৯৭১ সালে সারা দেশে বিভিন্ন  অপরাধ সংগঠনে সহায়তা করা। সংগ্রামের খবর. অধ্যাপক গোলাম আযমের  বক্তব্য, বিবৃতি  পড়ে কি পরিমান লোক উদ্বুদ্ধ হত তা জানার জন্য সংগ্রামের সার্কুলেশন  তখন কত ছিল তা জানা দরকার। অনেকে টিভিতে বলে বেড়াচ্ছেন শুধুমাত্র সংগ্রাম পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের কপি জমা দিয়েই গোলাম আযমের ফাঁসি দেয়া যায়। আর কিছু লাগেনা। কাজেই সংগ্রাম  তখন কত ছাপা হত এটা জানা খুবই দরকার। শেষে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দেন এ প্রশ্নের প্রাসঙ্গিকতা নেই। কাজেই এ প্রশ্ন যাবেনা। এরপর মিজানুল ইসলাম  প্রশ্ন করেন কয় থানায় সংগ্রাম বিলি হত। ট্রাইব্যুনাল বলেন এ প্রশ্নও যাবেনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে থানা, জেলা এবং মহকুমার দায়িত্বে ছিলেন এমন কতজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে তদন্তকালে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : সংখ্যা বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন এমন কতজনকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য লিখিত নোটিশ দিয়েছিলেন?
উত্তর : আমি কোন সাক্ষীকেই লিখিত নোটিশ দেইনি আমার কাছে এসে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য। জেলা মুক্তিযোদ্ধা  কমান্ডারদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
প্রশ্ন : কতজন সেক্টর কমান্ডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : ২ জন।
প্রশ্ন : কতজন সাবসেক্টর কমান্ডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : ১ জন।
প্রশ্ন : এদের নাম কি?
উত্তর : মেজর জেনারেল (অব) কে এম শফিউল্লাহ বীর উত্তম, মেজর (অব) আবু ওসমান চৌধুরী এবং জনাব মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম।
প্রশ্ন : বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কতজন জেলা কমান্ডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : তদন্তকালে আপনি কয়টি জেলা সফর করেছেন এবং জেলাগুলোর নাম কি?
উত্তর : ১৫টি। চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ফরিদপুর, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, এবং ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া।
প্রশ্ন : বর্তমান মামলার ফরমাল চার্জের সাথে কতজন সাক্ষীর জবানবন্দী ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে জানেন?
উত্তর : রেকর্ড না দেখে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : অন্য কোন মামলার জবানবন্দী এ মামলায় ব্যবহার করেছেন?
উত্তর : (তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে বলেন করিনাই। এরপর মিজানুল ইসলাম বলেন, আমার মনে হয় করেছেন। একটু দেখেন। এরপর বেলা একটা বেজে যায় এবং এ প্রশ্নটি এবং উত্তর অমিমাংসিত রেখে ট্রাইব্যুনাল বিরতিতে যান। দুইটায় আবার ট্রাইব্যুনাল বসলে মিজানুল ইসলাম প্রশ্নটি করেন। তখন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন “জি অন্য একটি   মামলার জবানবন্দী এ মামলায় ব্যবহার করেছি। সেটা হল ধর্মান্তর সংক্রান্ত। অন্য মামলার তিনজন  সাক্ষীর  জবানবন্দী ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রশ্ন : যে মামলার জবানবন্দী ব্যবহার করেছেন সেই মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম কি?
উত্তর : আমার রেকর্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম নেই।
প্রশ্ন : সেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার নাম কি?
উত্তর : আব্দুর রাজ্জাক খান, হেলাল উদ্দিন এবং নুরুল ইসলাম।
প্রশ্ন : তাদেরকে এ মামলায় সাক্ষী করেননি।
উত্তর  : না।
প্রশ্ন : তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগমের রেকর্ডকৃত বা জব্দকৃত কোন আলামত আপনি এ মামলায় ব্যবহার করেছেন কি-না।
উত্তর : কোন আলামত ব্যবহার  করিনাই তবে রেকর্ডকৃত জবানবন্দী  ব্যবহার করেছি।
প্রশ্ন : এ মামলায় আপনি সরকারি গোপন নথিপত্র ডকুমেন্ট হিসেবে দাখিল করেছেন?
উত্তর :করেছি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কতিপয় তথ্য সংক্রান্ত নথিপত্র আপনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে আপনি বলেছেন। সেই নথির বিষয়বস্তু কি?
উত্তর : এটা গোপনীয় প্রকাশ করা যাবেনা।
প্রশ্ন : নথির কোন অংশ ডকুমেন্ট হিসেবে দাখিল করেছেন?
উত্তর : সরাসরি কোন অংশ ডকুমেন্ট হিসেবে দাখিল করিনি। তবে সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংগৃহীত ডকুমেন্ট দাখিল করেছি।
প্রশ্ন : গোপনীয় ডকুমেন্ট ব্যবহার করার  জন্য স্বরাষ্ট্র   মন্ত্রনালয়ের অনুমতি নিয়েছেন কি-না।
উত্তর : যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছি।
প্রশ্ন : ওই ডকুমেন্ট ব্যবহারে সরকার কি বাঁধা দিয়েছিল?
এ প্রশ্নের সাথে সাথে  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দেন এ প্রশ্নটি যাবেনা। এরপর  এ বিষয়ে আরো কিছু প্রশ্ন নিয়ে বেশ কিছুক্ষন উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বিতর্ক চলে।  রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন বলেন, তদন্ত সংস্থা একটি স্বাধীন সংস্থা। তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউটর সিদ্ধান্ত নেবে কোন ডকুমেন্ট সে ব্যবহার করবে বা করবেনা, কোনটি দাখিল করবে বা করবেনা। 
জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত সংস্থা স্বাধীন এবং সরকারি ডকুমেন্ট ব্যবহারে তাদের অনুমতি নেয়ারও প্রয়োজন নেই। কিন্তু তারপরও তারা  অনুমিত নিয়েছেন। সেজন্যই বিষয়টি এসেছে। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  উদাহরন টেনে বলেন সৌজন্যতার খাতিরে অনুমতি  নেয়া হয় অনেক সময়।
প্রশ্ন : যখন অনুমতি চান তখন কয়টির অনুমতি দিয়েছিল সরকার?
উত্তর : আমি যেগুলোর অনুমতি চেয়েছি সেগুলো আমার প্রয়োজনমত ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন : পঞ্চগড়ে কয়টি বধ্যভূমি আছে?
উত্তর : আটটি বধ্যভূমি, গণকবরের তালিকা আমি পেয়েছি।
প্রশ্ন : এ তালিকা কে প্রস্তুত করেছে এবং আপনাকে  তা কে দিয়েছে?
উত্তর : সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পঞ্চগড় শহরে সংঘটিত অপরাধের দায় দায়িত্ব কার তা আপনি নির্ধারন করেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : পঞ্চগড়ে কতজন ধর্ষিতা আছে?
উত্তর : আমার কাছে এ মুহুর্তে এ তথ্য নেই।
প্রশ্ন : যারা ধর্ষিত হয়েছে তাদের বা তাদের কোন আত্মীয় স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি এবং কাউকে সাক্ষীও করেননি।
উত্তর : করিনাই।
প্রশ্ন : পঞ্চগড় সদরে যেসব গণহত্যা সংঘটিত হয় তার একটিরও তারিখ আপনার তদন্তে আসেনি।
উত্তর : এ মুহুর্তে বলতে পারছিনা।
প্রশ্ন : ইউএনও ডিসিদের রিপোর্ট কে তলব করেছিল?
উত্তর : তদন্ত সংস্থা।
প্রশ্ন : কত তারিখ?
উত্তর : রেকর্ড না দেখে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : রেকর্ড দেখে বলেন।
উত্তর : রেকর্ড এখন  হাতে নেই।

জেরার এক পর্যায়ে গতকাল মিজানুল ইসলাম বলেন, বারবার বলা হচ্ছে ট্রাইব্যুনালের মামলার ক্ষেত্রে আমি যেন আমার মাথা থেকে সিআরপিসি (দি কোড অব ক্রিমিানল প্রসিডিউর) ঝেড়ে ফেলে দেই। কিন্তু সিআরপিসি মামলায়ও আমি কোন দিন দেখিনি যে,  কেস ডায়েরি ছাড়া কোন তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য  দিতে আসেন। (তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান কেস ডায়েরি  নিয়ে আসেননা সাক্ষ্য দেয়ার সময়)

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক গতকাল বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।


গতকালের জেরা, ৩০/১০/২০১২, মঙ্গলবার
গোলাম আযম রাজাকার, শান্তি  কমিটির প্রধান ছিলেননা একথা সত্য নয়


পবিত্র ঈদুল আযহার পর গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এ বিচার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায়  দিনব্যাপী জেরা চলে তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানের।  তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।

জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা  মতিউর রহমান বলেন,  সরকারি নিয়ন্ত্রনে নেয়ার পর রাজাকার বাহিনীর প্রধান  হন  মো: ইউনিস।  তিনি জামায়াতের সাথে জড়িত ছিলেন।
এরপর মিজানুল ইসলাম সাজেশন দিয়ে বলেন, “গোলাম আযম রাজাকার বাহিনী, শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেননা।” জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “সত্য নয়।”

অ্যাডভোকেম মিজানুল ইসলাম  গতরাতে এ প্রতিবেদককে  বলেন, তার মানে হল তদন্ত কর্মকর্তার জবাব অনুযায়ী গোলাম আযম রাজাকার এবং শান্তি  কমিটির প্রধান ছিলেন। কিন্তু আসলে গোলাম আযম   রাজাকার বা শান্তি কমিটির কোনটারই প্রধান ছিলেননা।  আবার আরেক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা  বললেন ,   সরকারি নিয়ন্ত্রনে নেয়ার পর রাজাকার বাহিনীর প্রধান  হন মো:  ইউনিস। তার   কাছ থেকেই তো দুই রকম উত্তর আসল।

মিজানুল ইসলাম বলেন, তাকে আরো একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেটি হল “খাজা খয়েরউদ্দিনকে আহবায়ক করে শান্তি কমিটি গঠনের পর তাকে পরিবর্তন করে অন্য কাউকে কি শান্তি কমিটির আহবায়ক বা  চেয়ারম্যান বা সভাপতি করা হয়েছিল কি-না।” এর জবাবে তিনি বলেছেন এরকম কোন তথ্য তার কাছে নেই।

গতকাল জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর  আহমদ আনসারী, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম এবং প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন উপস্থিত ছিলেন।

জেরা :
প্রশ্ন : তিতাস নামে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ায় একটি নদী আছে নাম শুনেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : পৈরতলা রেলব্রিজ থেকে তিতাস নদীর সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থানের নাম কি?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : পৈরতলা রেলব্রিজ নিকটবর্তী গণকবর থেকে তিতাস নদী দেখা যায়?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : প্রত্যক্ষদর্শী যাদের কাছে শুনেছেন বলেছেন তাদের দুয়েকজনের নাম বলেন।
উত্তর :  স্মরন নেই।
প্রশ্ন : একপক্ষ ম্যাগাজিনের কূপন এবং ছবি কি দুটি ছবির সমন্বয় না একটি ছবি?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ছবিটি কার?
উত্তর : যতদুর মনে হয়  মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের।
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনী সরকারের নিয়ন্ত্রনে নেয়ার আগে এর প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : তা না জানলেও এ বাহিনী  মাওলানা একেএম ইউসুফ সাহেবের নেতৃত্বে খুলনায় খানজাহান আলী রোডে আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামায়াত কর্মী নিয়ে গঠিত হয়।
প্রশ্ন : এর তথ্যসূত্র কি?
উত্তর : স্থানীয় লোকজন বলেছে এবং তদন্তকালে পেয়েছি।
প্রশ্ন :  এ বিষয়ে ১৯৭১ সালে প্রকাশিত কোন খবর আনপার সংগ্রহে নেই?
উত্তর : এ মুহূর্তে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : মাওলানা   এ কে এম ইউসুফ সাহেব রাজাকার বাহিনী গঠন করেছেন এ মর্মে সবচেয়ে পুরনো কি ডকুমেন্ট আছে আপনার কাছে?
উত্তর : আমার কাছে নেই। তবে তদন্তে  আমি এটা পেয়েছি।
প্রশ্ন : সরকারি নিয়ন্ত্রনে নেয়ার পর রাজাকার বাহিনীর প্রধান কে হয়?
উত্তর : মো: ইউনিস। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সাথে জড়িত ছিলেন। ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদে অধিষ্ঠিত আছেন। (এ প্রশ্নের উত্তরে সাক্ষী  প্রথমে বলেছিলেন,  মো :ইউনিস, জামায়াতে ইসলামী। ডিজি ইসলামী ব্যাংক, জিজি মজলিশে শুরা ইসলামী ব্যাংক। তবে উত্তরটি এভাবে না লিখে উপরোক্তভাবে রেকর্ড করা  হয়। )
প্রশ্ন : রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারির সময় আনছার বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : গেজেট প্রকাশের পর রাজাকার বাহিনীর ডিজি ছিলেন পুলিশের ডিআইজি আব্দুর রহিম সাহেব।
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনীকে অক্সিলিয়ারী ফোর্স হিসেবে সামরিক বাহিনীর অধীনে নেয়ার পর এর প্রধান কে হয়?
উত্তর : স্মরন নেই। তবে রাজাকার বাহিনীকে জামায়াতে ইসলামী এবং পিস কমিটির লোকজন নিয়ন্ত্রন করত।
প্রশ্ন : সামরিক বাহিনীর কোন অফিসার রাজাকার বাহিনীকে অক্সিলিয়ারী ফোর্স হিসেবে নিয়ন্ত্রন করত?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : এটা জানার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেননি।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : খাজা খয়েরউদ্দিনকে আহবায়ক করে শান্তি কমিটি গঠনের পর তাকে পরিবর্তন করে অন্য কাউকে কি শান্তি কমিটির আহবায়ক বা  চেয়ারম্যান বা সভাপতি করা হয়েছিল?
উত্তর : এরকম কোন তথ্য আমার কাছে নেই।
প্রশ্ন : তাহলে একপক্ষ ম্যাগাজিনে যে লেখা হয়েছে গোলাম আযম শান্তি কমিটি/রাজাকার বাহিনীর  প্রধান এ তথ্যটি অসত্য।
উত্তর : (এ  তদন্ত কর্মকর্তা সরাসরি এর উত্তর না দেয়ায় মিজানুল ইসলাম তাকে আবার অন্যভাবে সাজেশন আকারে প্রশ্নটি করেন। )
প্রশ্ন : গোলাম আযম রাজাকার বাহিনী/শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেননা।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ২২/২/২০১১১ তারিখে বাংলা একাডেমীর  অনুকুলে কোন জিম্মানামা সম্পাদনা করেছেন কি-না। করলে কয়টায়।
উত্তর : করেছিলাম। সময় লিখিত নেই। যতদূর মনে পড়ে সত্যায়িত ফটোকটি জব্দ করার পরই   তা জিম্মায় প্রদান করি।
প্রশ্ন : মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী, খাজা খয়ের উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, গোলাম আযম, মেজর আফসার উদ্দিন,  আবুল কাশেম, ওয়ারাসাত  হোসেন খান, তোহা বিন হাবিব এদের মধ্যে  অধ্যাপক গোলাম আযম ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর কতজন সদস্য ছিল?
উত্তর : গোলাম আযম ছাড়া অন্যরা কে কি করতেন তা জানা নেই।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির নিয়ন্ত্রন, পরিচালনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনের একক  ক্ষমতা গোলাম আযমের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কি-না তা প্রকাশিত খবরে উল্লেখ নেই।
প্রশ্ন : এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের সভা সেটি ছিলনা।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি কবে গঠন হয়?
উত্তর ৯/৪/১৯৭১।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি গঠনের নীতিমালা কি ছিল?
উত্তর : শান্তি  কমিটির পরবর্তী কার্যক্রমই প্রমান করে তাদের নীতিমালা কি ছিল।
অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, এটা তো উত্তর হলনা। তখন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক তদন্ত কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, যেকোন সংগঠন গঠনের সময় তার একটি লক্ষ্য উদ্দেশ্য  বা নীতিমালা থাকে।  শান্তি কমিটি গঠনের বিষয়ে আপনি এ জাতীয় কিছু পেয়েছেন কি-না। তখন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে দুষ্কৃতিকারীদের আন্দোলন হিসেবে গণ্য করে তাদের ভাষায় সেই দুস্কৃতিকারীদের ধ্বংস করাই ছিল শান্তি কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন : শান্তি  কমিটির কোন সাংগঠনিক কাঠামো ছিল?
উত্তর : যেভাবে ঢাকায় গঠিত হয়েছিল সেভঅবে জেলা, ,মহকুমা, থানা এবং ইউনিয়নে গঠিত হয়েছিল।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি গঠনের পর সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি কত সদস্য বিশিষ্ট ছিল?
উত্তর : ১৪০।

এরপর জেরা আজ বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আজ আবার তার জেরা শুরু হবার কথা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।


মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১২

ট্রাইব্যুনালে চাঞ্চল্যকর ঘটনা////রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী গণেশ সাক্ষ্য দিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে


মেহেদী হাসান, 23/10/2012
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ  চাঞ্চল্যকর ঘটনার অবতারনা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের এক সাক্ষী সাক্ষ্য দিলেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে। সাক্ষীর নাম গণেশ চন্দ্র সাহা।  ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে  বর্বরোচিত  এবং নিমর্ম হত্যার  শিকার শহীদ ভাগীরথীর ছেলে  এই গণেশ চন্দ্র সাহা।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ভাগীরথীকে হত্যায় সহযোগিতার  অভিযোগ এনেছে রাষ্ট্রপক্ষ। যে ভাগীরথীকে   হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সেই ভাগিরথীর ছেলে এসে  সাক্ষ্য দিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে। তিনি বললেন মাওলানা সাঈদী তার মাকে মারেননি। পাকিস্তান আর্মিরাই তার মাকে মেরেছে।

কে এই গণেশ?

গণেশ চন্দ্র সাহা শুধু যে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী তাই নয়। যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন সেই ১৫ জনেরও একজন এই   গণেশ চন্দ্র  সাহা।

গত ২০ মার্চ  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে   ৪৬ জন সাক্ষীর বিষয়ে একটি দরখাস্ত দাখিল করা হয়  ট্রাইব্যুনালে । দরখাস্তে নিবেদন করা হয়  ৪৬ জন সাক্ষীকে  ট্রাইব্যুনালে হাজির করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। তাই এসব সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছে তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হোক।
৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জন সম্পর্কে দরখাস্তে রাষ্ট্রপক্ষ উল্লেখ করেছিল  আসামীর (মাওলানা সাঈদী) পক্ষ অবলম্বনকারী পিরোজপুরের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক সাক্ষীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকির  প্রেক্ষিতে ভয়ে ভীত হয়ে তারা আত্মপোগন করেছে। তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই তাদের হাজির করা সম্ভব নয়।

যে ১৪ জন সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষ এ দাবি করেছিল সেই ১৪ জনের একজন হলেন এই গণেশ চন্দ্র ।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের  প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল গত ২৯ মার্চ ১৫ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী প্রদান করেন তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে আদেশ দেন।  গণেশ চন্দ্রের নাম সেই ১৫ জনের তালিকায়ও রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষীর বিষয়ে বলেছিল মাওলানা সাঈদীর  পক্ষাবলম্বনকারী অস্ত্রধারী  সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত গোপন করেছে, তাদের খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা এবং আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় সেই গণেশ আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজির হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেন।  


ভাগীরথী হত্যা বিষয়ে  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হল ভাগীরথী হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ।  এ বিষয়ক অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে-ভাগীরথী নামে একটি মেয়ে পাকিস্তান সেনা ক্যাম্পে কাজ করত। সাঈদী পাকিস্তানী সেনাদের খবর দেয় যে, ভাগীরথী  মুক্তিযোদ্ধাদের চর হিসেবে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পের খবর  মুক্তিযোদ্ধাদের পৌছে দেয়। এরপর পাকিস্তান সেনারা তাকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।

গণেশ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ : রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী অভিযোগ করে বলেন, সাক্ষী গণেশচন্দ্র সাহা পক্ষত্যাগকারী এবং বশিভূত। তাকে পক্ষত্যাগকারী  হিসেবে জরো করতে চাই।
 ট্রাইব্যুনাল বলেন, সে অনুমতি দেয়া হবেনা। তাকে আর আমরা আপনাদের সাক্ষী মানতে  রাজি নই। তাকে আপনারা আনেননি।  আমরা তাকে পক্ষত্যাগকারী বা  হস্টাইল কোনটাই বলবনা।
এরপর সৈয়দ হায়দার  আলী  জেরার সময় সাজেশন দিয়ে সাক্ষীকে বলেন, আপনি অর্থের বিনিময়ে পক্ষত্যাগ করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগ বিষয়ে সাংবাদিকরা  ট্রাইব্যুনাল শেষে তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের  টাকার অভাব নেই। সমস্ত  রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের পেছনে কাজ করছে। তারপরও যদি তারা বলে আমরা টাকার বিনিময়ে তাদের সাক্ষী আমাদের পক্ষে এনেছি তাহলে এর চেয়ে মিথ্যা কথা আর কি হতে পারে। তাজুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী তাদের কথামত মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি সে কারনে তারা তাকে আনেনি ।


গণেশের জবানবন্দী : আমার নাম গনেশ চন্দ্র সাহা। বয়স আনুমানিক ৫১ বছর।
আমার মা ভাগীরথী সাহা ১৯৭১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের বাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা থাকতো। আমার মা মেলেটারী ক্যাম্পে কাজ করতো। আমার মা ক্যাম্পের খবরা-খবর মুক্তিযোদ্ধাদের পৌঁছিয়ে দিতেন। মতিউর রহমান সরদার, কালু মোল্লা, জলিল মোল্লা, হানিফ খান এরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মতিউর রহমান সরদার বর্তমানে পিরোজপুর উপজেলা চেয়ারম্যান। মা রাতের বেলায় বাসায় আসত এবং সকাল বেলা ক্যাম্পে যেত। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমার মা কি কথা বলতেন তা আমাদের শুনতে দিতেন না। কিছুদিন পরে আমাদের গ্রাম বাগমারায় মিলিটারী আসে তখন মুক্তিবাহিনী ও মিলিটারীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। ১০ জন মিলিটারী মারা যায়। অস্ত্র ফেলে মিলিটারীরা পিরোজপুরে পালিয়ে যায়। আমার মা ঐ দিন পিরোজপুর ক্যাম্পে ছিলেন। ঐ দিন আমার মা বাড়ীতে ফিরে আসে নাই। তারপর দিন আমরা দুই ভাই মায়ের খোঁজে যাই। আমার অপর ভাইয়ের নাম কার্তিক চন্দ্র সাহা। তিনি বর্তমানে মৃত। বারটার দিকে আমরা শুনি এক মহিলাকে ধরে নিয়ে গেছে, তিনি আমার মা, আরো শুনি মিলিটারী তার কোমরে এবং পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে গাড়িতে করে টেনে নদীর ধারে নিয়ে গেছে। ওখানে গিয়ে দেখি মায়ের শরীর ক্ষত-বিক্ষত, গাড়ীতে ৫ জন লোক বসা। মাকে মেরে নদীর চড়ে ফেলে রেখেছে। ঐ ৫ জনের ভিতর ৪ জনের হাতে অস্ত্র, একজন ড্রাইভার সবাই খাকী পোশাক পরা। এই ৫ জনকে আমি চিনি না। এরা কি কথা বলতো তা বুঝতে পারি নাই। কিছুক্ষণ পরে তারা গাড়ী চালিয়ে চলে যায়। এদের সাথে কোন রাজাকারকে দেখি নাই। একজন কেও চিনতে পারি নাই।

এরপর মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের  প্রশ্নের  জবাবে গণেশ চন্দ্র সাহা বলেন, বছর দেড়েক আগে আমি জানতে পেরেছি এই মামলার আমি সাক্ষী।  বৈশাখ মাসের শেষে আমি জানতে পেরেছি। আমার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে সাংবাদিক এবং কোর্টের লোক আমার কাছে গিয়েছিল। তারা আমার কাছ থেকে এই মৃত্যুর কথা শুনে এসেছে। আমার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে আজকেই আমি প্রথম সাক্ষ্য দিচ্ছি।

আরেক প্রশ্নের  জবাবে গণেশ বলেন, আমি এই মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে বৈশাখ মাসের শেষে রফিক ভাই আমার সাথে দেখা করেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন আপনার মাকে কারা মেরেছে । আমি বলেছি মিলিটারীরা মেরেছে। তখন তিনি বলেছেন, না আরো অন্য মানুষেরাও মেরেছে। সত্য করে বল। তখন আমি বলেছি না শুধু পাক সৈন্যরাই মেরেছে। তখন তিনি বলেন, তুমি দিব্বি করে বল, কারা মেরেছে। আমি বলেছি  আমার মায়ের মৃত্যুর কাহিনী নাটক নোভেলে আছে, সবাই দেখেছে, প্রতি বছর হচ্ছে এসব।  পাকিস্তানী সৈন্যরাই আমার  মাকে মেরেছে। এরপর রফিক ভাই আবারো বলেন, আমার বাবা কি আপনার মাকে মেরেছে? আমি তাকে জিজ্ঞাস করি আপনার বাবা কে? উনি বলেন সাঈদী সাহেব, তখন আমি বলি না উনি আমার মাকে মারেন নি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী সাক্ষীকে জেরা করেন।

জেরা :
প্রশ্ন : রফিকভাইকে কতদিন ধরে রফিক ভাই ডাকেন?
উত্তর : রফিক ভাই একদিনই আমাদের বাড়িতে গিয়েছেন এবং তাকে আমি একদিনই দেখেছি।
প্রশ্ন : সেটা কবে?
উত্তর : বৈশাখ মাসের শেষ দিকে পিরোজপুরে তিনি ওয়াজ অথবা মাফেল  করতে যান। তখনকার ঘটনা এটি।
প্রশ্ন : বৈশাখ মাস এখন থেকে  কতদিন আগে হবে?
উত্তর : সাত মাস আগে ছিল।
প্রশ্ন : ওয়াজ শুনতে গেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনাকে পেলেন কিভাবে?
উত্তর : উনি আমাদের বাড়ি যাওয়ার পরে আমি মাঠে ছিলাম, মোবাইলে আমাকে ডেকে নিয়ে এসেছেন
প্রশ্ন : ওনার সাথে আর কেউ ছিলেন?
উত্তর  :  আরেকজন  গিয়েছিল।
প্রশ্ন : তাকে চেনেন?
উত্তর :  চিনি, তার নাম নান্না, রফিক ভাইয়ের মামা না কি হয়।
প্রশ্ন : আর কেউ গিয়েছিল?
উত্তর : ঐদিন ছাড়া আমার কাছে কেউ আর কোনদিন যায় নাই।
প্রশ্ন : কেন সে এক:থা আপনাকে  জিজ্ঞাসা করছেন তা জানতে চেয়েছিলেন?
উত্তর : হ্যা।  তিনি বলেনম, তোমার মাকে কে মেরেছে তাতো জানি না, তাই জানতে এসেছি, আমার জানার দরকার আছে।
প্রশ্ন : এতদিন পরে কেন জানতে আসছেন এ কথা তাকে জিজ্ঞাসা করেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তিনি অন্য কোন বাড়িতে গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনার মায়ের নামে পিরোজপুরে ভাগীরথী চত্ত্বর আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : কোর্টের লোক কদ্দিন আগে গেল আপনার কাছে?
উত্তর : গত ফাল্গুনে কোর্টের লোক আমার নিকট গিয়েছিল। গিয়ে বলেছে আমরা কোর্টের লোক, কোর্ট থেকে তদন্তের জন্য এসেছি।
প্রশ্ন : যে গিয়েছিল সে তার পরিচয় দিয়েছিল বা নাম বলেছে?
উত্তর :  নাম ধাম বলেন নাই, তারা বলেছিল তারা ঢাকা থেকে এসেছেন, আমিও তাদেরকে নাম জিজ্ঞাসা করি নাই। এক সপ্তাহ পরে উনারা আবার গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন : আপনার মাকে কাহারা মেরেছে বা কি কি ঘটনা ঘটেছিল তা আপনি  কোর্টের লোকদের কাছে বলেছেন?
উত্তর :  হ্যা।
প্রশ্ন : যুদ্ধের সময় রাজাকার দেখেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : শুনেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : যুদ্ধটা কিসের যুদ্ধ ছিল?
উত্তর : মুক্তিবাহিনী আর মিলিটারির মধ্যে  গোলাগুলি হইছে এটা বুঝেছি।
প্রশ্ন : রাজাকারদের বিষয়ে কি শুনেছেন?
উত্তর : তারা লোকদের ধরে ধরে নিয়ে মারত (হত্যা করত) , মারতে সাহায্য করত।
প্রশ্ন :   যে মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসেছেন সে মামলার আসামী কে?
উত্তর : সাঈদী সাহেবের ছেলে বলছে তুমি আমার বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেছ কি-না। আমি বলেছি করিনাই। তিনি বলেছেন কোর্টে গিয়ে একথা বলতে পারবা? আমি বলেছি পারব। সেকথা বলতেই আমি এসেছি।
প্রশ্ন : আপনার মায়ের হত্যা বিষয়ে পাড়েরহাটের  সাঈদী সাহেবের প্রত্যক্ষ হাত ছিল।
উত্তর : এটা মিথ্যা।
প্রশ্ন : একথাগুলো না বলার জন্য রফিক এবং তার মামা আপনাকে টাকা পয়সা দিয়ে বশীভূত করে সাক্ষ্য  দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছে।
উত্তর : আপনি এটা ভুল বুঝলেন। এটা ভুল।
প্রশ্ন : আপনি অর্থের বিনিময়ে  পক্ষ ত্যাগ করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।

তাজুল ইসলামের প্রতিকৃয়া :
গণেশচন্দ্র সাহার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে যে কারণ  বলেছিল তা মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। তারা বলেছিল  মাওলানা সাঈদীর সন্ত্রাসীদের ভয়ে সাক্ষীরা নিখোঁজ। সেই সাক্ষী আজ ট্রইব্যুনালে এসে তার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়ে গেলেন অত্যন্ত সাহসের সাথে। মায়ের নির্মম হত্যার বিবরন দিতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
তাজুল ইসলামকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে আপনারা তাকে টাকার বিনিয়ে পক্ষ ত্যাগ করিয়েছেন।
জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা আছে।  সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করছে তাদের পক্ষে। তারপরও আমরা  তাদের সাক্ষী টাকার বিনিময়ে এনেছি এর চেয়ে মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ আর কি  হতে পারে। আমরা আগেও বলেছি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার।
তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হয়  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তিনি তার মায়ের হত্যার বিষয়ে সাঈদী সাহেব জড়িত বলে জবানবন্দী দিয়েছেন মর্মে রেকর্ড করা আছে । সেটি তাহলে কি।

তাজুল ইসলাম বলেন, গণেশচন্দ্র সাহা তার মায়ের হত্যা বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সত্য সাক্ষ্য দিয়েছিলেন  । কিন্তু সে কথা  সেভাবে লেখা হয়নি।   তিনি তার মায়ের হত্যা বিষয়ে সত্য সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিলেন কোর্টে এসে।  তাকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়েছিল সাঈদী সাহেবকে জড়িয়ে । কিন্তু  তাতে তিনি রাজী হননি  বিধায় তাকে রাষ্ট্রপক্ষ কোর্টে আনেনি এবং বলেছে তাকে পাওয়া যাচ্ছেনা। সাঈদীর সন্ত্রাসীর ভয়ে সে নিখোঁজ।

ভাগীরথী হত্যাকান্ড এবং  স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র :

ভাগীরথীর হত্যাকান্ড বিষয়ে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় একটি রিপোর্ট ছাপা হয় “বর্বরতার রেকর্ড” শিরোনামে । সে রিপোর্টটি  কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র নামক মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রমান্য   গ্রন্থে  হুবহু  স্থান পায়।

ভাগীরথী হত্যা বিষয়ে  দৈনিক আজাদ পত্রিকায় লেখা হয়েছিল “‘মহাদেবের জটা থেকে” নয় বাংলা মায়ের নাড়ী ছিঁড়ে জন্ম দিয়েছিলেন যে সোনার মেয়ে সে ভাগীরথীকে ওরা জ্যান্ত জীপে বেঁধে শহরের রাস্তায় টেনে টেনে হত্যা করেছে। খান দস্যুরা হয়তো পরখ করতে চেয়েছিল ওরা কতখানি নৃশংস হতে পারে। বলতে হয় সেক্ষেত্রে ওরা শুধু সফলই হয়নি, বর্বরতার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অষ্টাদশী ভাগীরথী ছিল বরিশাল জেলার পিরোজপুর থানার বাঘমারা কদতলীর এক বিধবা পল্লীবালা। বিয়ের এক বছর পর একটি পুত্র সন্তান কোলে নিয়েই তাকে বরণ করে নিতে হয় সুকঠিন বৈধব্য।

স্বামীর বিয়োগব্যথা তাঁর তখনও কাটেনি। এরই মধ্যে দেশে নেমে এল ইয়াহিয়ার ঝটিকা বাহিনী। গত মে মাসের এক বিকেলে ওরা চড়াও হলো ভাগীরথীদের গ্রামে। হত্যা করলো অনেককে যাকে সেখানে যেভাবে পেলো। এ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও ভাগীরথীকে ওরা মারতে পারলো না। ওর দেহলাবণ্য দস্যুদের মনে যে লালসা জাগিয়েছিল তাতেই হার মানল তাদের রক্তপিপাসা। ওকে ট্রাকে তুলে নিয়ে এল পিরোজপুরে। তারপর ক্যাম্পে তার উপর চালানো হলো হিংস্র পাশবিক অত্যাচার।
সথী নারী ভাগীরথী। এ পরিস্থিতিতে মৃত্যকে তিনি একমাত্র পরিত্রাণের উপায় বলে ভাবতে লাগলেন। ভাবতে ভাবতেই এক সময় এল নতুন চিন্তাÑ হ্যাঁ মৃত্যুই যদি বরণ করতে হয় ওদেরইবা রেহাই দেবো কেনো? ভাগীরথী কৌশলের আশ্রয় নিল এবার। ভাগীরথী ওদের কাছ থেকে জেনে নিতে শুরু করলো পাক বাহিনীর সব গোপন তথ্য। এক পর্যায়ে বিশ্বাসভাজন ভাগীরথীকে ওরা নিজের ঘরেও যেতে দিলো। আর কোনো বাধা নেই। ভাগীরথী এখন নিয়মিত সামরিক ক্যাম্পে যায় আবার ফিরে আসে নিজ গ্রামে।
এরই মধ্যে চতুরা ভাগীরথী তার মূল লক্ষ্য অর্জনের পথেও এগিয়ে গেল অনেকখানি। গোপনে মুক্তিবাহিনীর সাথে গড়ে তুলল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।
এরপরই এল আলস সুযোগ। জুন মাসের একদিন ভাগীরথী খান সেনাদের নিমন্ত্রণ করলো তার নিজ গ্রামে। এদিকে মুক্তিবাহিনীকেও তৈরি রাখা হলো  যথারীতি। ৪৫ জন খান সেনা সেদিন হাসতে হাসতে বাগমারা কদমতলা এসেছিল কিন্তু তার মধ্যে ৪/৫ জন ক্যাম্পে ফিরতে পেরেছে বুলেটের ক্ষত নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে। বাকিরা ভাগীরথীর গ্রামেই শিয়াল কুকুর শকুনের খোরাক হয়েছে। এরপর আর ভাগীরথী ওদের ক্যাম্পে যায়নি। ওরা বুঝেছে, এটা তারই কীর্তি। কীর্তিমানরা তাই হুকুম দিল জীবিত অথবা মৃত ভাগীরথীকে যে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে নগদ এক হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
কিন্তু ভাগীরথী তখনও জানতো না ওর জন্য আরো দুঃসহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। একদিন হাটবারে তাকে শহরের রাস্তায় এনে দাঁড় করানো হলো জনবহুল চৌমাখায় ..........।
এরপর ভাগীরথীকে গাড়ির পেছনে বেঁেধ শহরের রাস্তায় টেনে নিমর্মভাবে হত্যার বিরবন দেয়া হয়েছে আজাদের রিপোর্টে।

১৫ সাক্ষী থেকে সেফ হাউজ ডায়েরি :
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  গণেশ চন্দ্রসাহাসহ  ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী  তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের  পর থেকে  সে  আদেশ পুনরায় বিবেচনার জন্য আসামী পক্ষ দীর্ঘ আইনী লড়াই করেছেন। সর্বশেষ তারা সেফ হাউজের ডকুমেন্ট হাতে পাবার পর  গত
৯ মে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। গত ৩রা জুন এ বিষয়ে শুনানীর সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের সমস্ত কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে  বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে  কারণ দাবি করছেন তা    সম্পূর্ণ মিথ্যা। যে ১৫ জনের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে তাদের মধ্যকার  বেশ কয়েকজন সাক্ষীসহ  রাষ্ট্রপক্ষের আরো অনেক সাক্ষী  হেফাহাউজে   (ঢাকায় যেখানে সাক্ষী  এনে রাখা হত)   রাখা হয়েছিল। কিন্তু তারা তাদের শেখানো মতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় তাদেরকে  কোর্টে  আনেনি তারা । 

গত ১২ জুলাই ট্রাইব্যুনাল রিভিউ আবেদন খারিজ করে  দেন ।
তাজুল ইসলাম   গতকাল রাতে দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা  প্রমানসহ বলেছিলাম রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে যেসব কারণ এবং অভিযোগ  উল্লেখ করেছে তা মিথ্যা।  আজ আমরা সেই ১৫ সাক্ষীর একজন গণেশকে হাজির করে আরো একবার তাদের দাবি মিথ্যা প্রমান করলাম। মাওলানা সাঈদীল পক্ষে আরো অনেকে সাক্ষ্য দিতে চান। কিন্তু  নিরাপত্তার কারনে তারা সময়মত আসতে পারছেননা। সময় এবং সুযোগ পেলে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমান করতে পারব।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  সাক্ষী হাজিরের আজই  ছিল শেষ সুযোগ। ১৭ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে  ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ  কোজড।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন,   বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, মনজুর আহমেদ আনসারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।





সোমবার, ২২ অক্টোবর, ২০১২

তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচারনের অভিযোগে শোকজ জারি



মেহেদী হাসান
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ এ আসামী পক্ষের অন্যতম অইনজীবী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচরনের অভিযোগে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে আজ। অসদাচরন এবং পেশা বিরোধী কাজের অভিযোগে কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবেনা সে মর্মে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জবাবদানের জন্য নির্দেশ  দিয়েছেন কোর্ট।

আজ সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে তাজুল ইসলাম গতকালের ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সাক্ষী মিছবাহুর রহমানের বিরুদ্ধে  পদক্ষেপ গ্রহনের আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে  পনুরায় পদক্ষেপ গ্রহন করবেননা  বলে জানান। তাজুল ইসলাম তখন বলেন, তাহলে তার পক্ষে আর কোর্টে থাকা সম্ভব নয়। ট্রাইব্যুাল তাকে কোর্টরুম ত্যাগ করতে বারন করা সত্ত্বেও তিনি কোর্টরুম ছেড়ে চলে আসায় তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হল।


আজ সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে আসামী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির গতকাল সোমবারের ঘটনার  উল্লেখ করে বলেন, এভাবে সাক্ষী কর্তৃক আমাদের একজন আইনজীবীকে শিবিরের ক্যাডার আখ্যায়িত করাটা আমাদের পেশার জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ। এর একটি প্রতিকার হওয়া উচিত।

এরপর   ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে নির্দেশ দেন  সাক্ষী মিছবাহুর রহমানকে জেরা করার জন্য। আধাঘন্টার মধ্যে জেরা শেষ করতে হবে বলে ট্রাইব্যুনাল জানান।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল  হক বলেন, আসামী পক্ষের যিনি জেরা করবেন তিনি ছাড়া এবং রাষ্ট্রপক্ষের যিনি সংশিষ্ট আইনজীবী তিনি ছাড়া অন্য কেউ কোন কথা বলতে পারবেননা। দাড়াতেও পারবেননা।

মিজানুল ইসলাম এসময় বলেন, আমরা আশা করেছিলাম গতকালের ঘটনা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এসময় মিজানুল ইসলাম আরো কিছু কথা বলায় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান  বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, মি, মিজানুল ইসলাম ইউ আর লুজিং  ইউর টাইম। প্লিজ স্টার্ট ক্রস ইক্সামিনেশন।

মিজানুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের নিবেদনও পেশ করতে পারবনা? এটাতো দু:খজনক।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সাক্ষীর বিরুদ্ধে আপনারা বলতে পারেন। কিন্তু তিনি তো এখানে আপনাদের অভিযোগের জবাব দেয়ার অবস্থায় নেই। কাজেই তার বিরুদ্ধে আমরা কিভাবে ব্যবস্থা নেব?
এসময়  সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গতকালের ঘটনার পর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান নির্দেশ দিয়েছিলেন গতকালই জেরা শেষ করতে   হবে। আপনার অনুরোধে আজ আবার আধাঘন্টা সময় দেয়া হয়েছে এবং সাক্ষীকে আনা হয়েছে।  এরপর এবং ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান যা বলেছেন  তারপরতো আর এ বিষয়ে কোন কথা থাকতে পারেনা।
এরপরও মিজানুল ইসলাম তাজুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে  যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত রাখেন। তখন পৌনে এগারটা  বাজে। তার জন্য বরাদ্দ  আধা ঘন্টা সময় থেকে ১০ মিনিট পার হয়ে গেছে।  বিচারপতি নিজামুল ইসলাম বলেন, মি. মিজানুল ইসলাম আমরা ১১টা ১০ মিনিটে জেরা বন্ধ করে দেব। আপনি ট্রাইব্যুনালের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। দয়া করে শুরু করেন।

এসময় তাজুল ইসলাম দাড়িয়ে বলেন, সাক্ষী গতকাল তাকে  ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করে যে কথা বলেছেন তার প্রতিকার করতে হবে। আমরা এ কোর্টের অফিসার। আমাদের সুরক্ষা প্রদান করা  কোর্টের দায়িত্ব। এভাবে যদি সাক্ষী যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন একজন আইনজীবীকে কোর্টে এসে এবং তার যদি কোন প্রতিকার না হয় তাহলে মান সম্মান নিয়ে একজন আইনজীবী হিসেবে আমার পক্ষে এ কোর্টে থাকা সম্ভব নয়। আমাকে কোর্ট ত্যাগ করে চলে যেতে হবে।
এসময়  বিচারপতি নিজামুল  হকট্রাইব্যুনালের বিধি পড়ে শোনান তাজুল  ইসলামকে। তিনি বলেন, আপনি আসামীর পক্ষে ওকালাতনামা দিয়েছেন। ওকালাতনামা অনুযায়ী আপনি এখানে  কোর্টে থাকতে  বাধ্য। এভাবে চলে যাওয়া মিসকনডাক্ট (অসদাচরন) এবং আপনার পেশার বিরোধী কাজ। আপনি ভাল করে আইন এবং রুলস পড়েন। 
তাজুল ইসলাম বলেন, আমি  খুব ভাল করে পড়েছি। এবং পড়েই বলছি  আমার পক্ষে এখানে থাকা সম্ভব নয়।
 ট্রাইব্যুনাল বলেন আমি নির্দেশ দিচ্ছি তাজুল সাহেব আপনি বসেন। টেক ইউর সিট প্লিজ।
কিন্তু তাজুল ইসলাম এ নিদের্শ অমান্য করে কোর্ট রুম  থেকে বের হয়ে যান।
 তিনি  দরজা পর্যন্ত পৌছামাত্র বিচারপতি নিজামুল হক কোর্ট অফিসারকে বলেন, টেক ডাউন । এরপর তিনি আদেশ লেখার জন্য ডিকটেট করেন।
আদেশ :
এটা প্রতীয়মান যে, জনাব তাজুল ইসলামকে সবসময়  ুব্ধ মনে হয়েছে। গতকালের   বিতর্কের সময় আমরা বারবার তাজুল  সাহেবকে বলেছি, তাজুল সাহেব আপনি দাড়াবেননা। বসেন। কিন্তু তিনি প্রতি ৩.৪ মিনিট পরপর দাড়িয়ে যান। এটা  একটা সমস্যা তৈরি করে। এর এক পর্যায়ে সাক্ষী আইনজীবীকে লক্ষ্য করে কিছু মন্তব্য করেন যা  তাজুল সাহেবকে আহত করেছে। 

আমরা মনে করি পুরো বিষয়টার জন্য তাজুল ইসলাম দায়ী। এমনকি তাকে বসতে বলার আদেশ দেয়ার পরও  বার বার তিনি দাড়াচ্ছিলেন। গতকাল এবং আজো তিনি বেপরোয়া ব্যবহার করেছেন কোর্টের সাথে। তিনি দাবি করেছেন সাক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তিনি কোর্টে থাকবেননা। আমরা তাকে আদেশ দিলাম বসার জন্য। কিন্তু তিনি বেপরোয়াভাবে কোর্ট রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। এটা একটা অসদাচারন  এবং একজন আইনজীবী হিসেবে পেশা বিরোধী কাজ।
তার বিরুদ্ধে কেন অসদাচরন এবং পেশা বিরোধী আচরনের জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবেনা সে মর্মে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেয়া হল। জবাব পাবার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা  হবে।
আদেশে কিছু  শব্দ পরিবর্তন হতে পারে বলেন তিনি।

আদেশ পাশের পর অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের সামনে অপক্ষেরত সাংবাদিকদের বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক, অনকাঙ্খিত। সাক্ষীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে  শুধুমাত্র আইনজীবীর বিরুদ্ধে  এ আদেশ দেয়া ঠিক হয়নি বলে আমি  মনে করি।



মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর  মামলায় গতকাল সোমবার সাক্ষী মিছবাহুর রহমান, আসামীপক্ষ এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে তীব্র হট্টগোল হয়  হট্টগোলের । জেরা নিয়ে এ হট্টগোল বাঁধে। এসম  সাক্ষী মিছবাহুর রহমান তাজুল ইসলামকে বলেন,  তিনি (তাজুল ইসলাম)  আইনজীবী বেশে শিবিরের ক্যাডার হিসেবে এখানে এসেছেন। তাজুল ইসলামও তাকে বেয়াদব বলেন।





মাওলানা সাঈদীর মামলার আর্গুমেন্ট শুরু ৫ নভেম্বর

মাওলানা  দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আগামী পাঁচ নভেম্বর যুক্তিতর্ক  (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপনের জন্য নির্ধারন করা হয়েছে। আজ আন্তর্জাতিক  অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১   তারিখ নির্ধারন করে এ আদেশ দেন। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা    তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করবেন।  তাদের পর্ব শেষ হলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি তর্ক পেশ করবেন।

এদিকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  বাকী সাক্ষী উপস্থাপনের  জন্য আগামীকাল  শেষবারের মত সময় পাবেন।
ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেন, ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাদের  আজ এবং আগামীকাল সময় দেয়া হল।
গত বৃহষ্পতিবার ১৮ অক্টেবার ট্রাইব্যুনাল  এক আদেশে বলেছিলেন রোববার  ২১ নভেম্বর মাওলানা  সাঈদীর পক্ষে বাকী সব সাক্ষী উপস্থাপন করতে হবে।  ওইদিন যদি তারা  সব সাক্ষী হাজির করতে না পারে তাহলে তাদের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা  হবেনা এবং আর কোন সময়ও তাদের দেয়া হবেনা। কিন্তু  গত রোববার আসামী পক্ষ মাত্র একজন নতুন সাক্ষী হাজির করেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে মোট ২০ জন সাক্ষী নির্ধারন করে দেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে  এখন পর্যন্ত মোট ১৬ জন সাক্ষী হাজির করা হয়েছে। গতকালও তারা কোন নতুন সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী হাজিরের জন্য আরো এক সপ্তাহ সময় চেয়ে বিচার মুলতবি রাখার আবেদন করা হয় ।
এ  আবেদনের পক্ষে  শুনানীতে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সমস্ত মেশিনারি কাজ করেছে  রাষ্ট্রপক্ষের  মামলা এবং সাক্ষী  হাজিরের জন্য। সে অবস্থায় তারাও সব সাক্ষী হাজির করতে পারেননি এবং বেশ কয়েকবার সময় নিয়েছেন। এই যদি হয় তাদের অবস্থা তাহলে আমাদের সাক্ষীদের অবস্থা কি হবে তা সহজেই অনুমেয়। কারণ আমাদের সাক্ষীরা রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে। যেখানে রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে সাক্ষী সেখানে আমরা কিভাবে রাষ্ট্রের পুলিশের কাছে আমাদের সাক্ষীদের নিরাপত্তা চাইতে পারি। উ
তারা আমাদের  সাক্ষীদের নিরাপত্তা প্রদান তো দূরের কথা বরং আমাদের সকল সাক্ষীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা তল্লাসী, হয়রানি করেছে। বাড়ির লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কারো কারো বাড়িতে গিয়ে তছনছ করেছে  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী হবার কারনে।


মিজানুল ইসলাম বলেন,  আমাদের প্রথম সাক্ষী শামসুল আলম তালুকদার এ কোর্টে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন এ খবর টিভিতে প্রচারের সাথে সাথে তার গ্রামের বাড়িতে পুলিশ গিয়েছে। তার লাইসেন্স করা বন্দুক পর্যন্ত তারা সিজ করে নিয়ে গেছে। শামসুল আলম তালুকদার  একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সুন্দরবন সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন আহমেদের তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। তার অবস্থা যদি হয় এই তাহলে অন্যদের অবস্থা কি।
মিজানুল ইসলাম বলেন, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি সাক্ষী হাজিরের জন্য। কিন্তু কিছু সমস্যা হচ্ছে। এজন্য আরো এক সপ্তাহ সময় দরকার।

এছাড়া গতকাল রাষ্ট্রপক্ষের দুজন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী এবং গনেশ চন্দ্র সাহাকে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আইনজীবীরা।  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী  তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় তাদের মধ্যে এ দুজনও রয়েছে। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে তাদেরকে সাক্ষী হিসেবে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করা হয়েছিল।
ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে বলেন আসামী পক্ষ যাকে খুসী তাদের পক্ষে সাক্ষী হিসেবে আনতে পারবে। সেটা  তাদের বিষয়। তবে ট্রাইব্যুনাল সমন জারি করবেনা।





সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৫ তম সাক্ষী/// পরে জেনেছি এবং শুনেছি উনি ছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী

বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের  চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৫ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে আজ। সাক্ষীর নাম নিজামউদ্দিন আহমেদ। বাড়ি লোহাগড়া।  ১৯৭১ সালে   তার বয়স ছিল ১৮ বছর এবং এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

সাক্ষী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার পর ৫ জুলাই হাজারি ইউনিয়নে অবস্থিত  তাদের ক্যাম্প থেকে তাকে এবং  তার দুজন সহযোদ্ধাকে  পাকিস্তানী সৈন্যরা ধরে নিয়ে যায়।  ধরে নিয়ে যাবার সময় পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে  তিন থেকে চারজন সাদা পোশাকের  স্মার্ট যুবক  ছিল। এরপর তাদেরকে গুডস হিলে নিয়ে যাওয়া হয়। গুডস হিলে নিয়ে নির্যাতন করা হয় । একদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নির্যাতন চলে। সাক্ষী বলেন, যারা আমার ওপর অত্যাচার করেছে তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে যারা আমাদেরকে ক্যাম্প থেকে ধরে  এনেছিল তাদের মধ্যে ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেবের এক ছেলে ছিল। পরে জেনেছি এবং শুনেছি উনি ছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এ বিষয়ে আমি এবং অন্যরাও পত্রপত্রিকায় লিখেছি।
এছাড়া সাক্ষী তার বেশ লম্বা জবানবন্দীতে আর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাম বলেননি।

সাক্ষী জানান বেশ কয়েকদিন  গুডস হিলে, চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে এবং ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর পর চট্টগ্রাম জেলে পাঠানো হয়। ১৮ নভেম্বর তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। এরপর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়।

জবানবন্দীর শুরুতে সাক্ষী বলেন তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক। তবে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী প্রদানের পর রয়টার্স থেকে তার চাকরি চলে যায়। বর্তমানে তিনি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন।

জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা  শুরু করেন আসামী পক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুলতান মাহমুদ সিমন সাক্ষীকে পরিচালনা করেন জবানবন্দী গ্রহনের সময়।

মিছবাহুর রহমানের জেরা শেষ


মাওলানা  মতিউর রহমান নিজামীর  বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর জেরা আজ শেষ হয়েছে। তাকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।

জেরা :
প্রশ্ন : আলবদর প্রশিক্ষন ক্যাম্প সর্বপ্রথম কবে কোন জেলায় শুরু হয় তা জানা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আলবদর প্রশিক্ষনের জন্য পাকিস্তান সেনা বাহিনীর কোন অফিসার মূল দায়িত্বে ছিলেন ?
উত্তর : নির্দিষ্ট কোন অফিসার ছিল  কি-না জানা নেই। তবে জামায়ত এটা নিয়ন্ত্রন করত।
প্রশ্ন : আপনার গবেষনাকালে কোন প্রশিক্ষন কেন্দ্রের কোন কোন প্রশিক্ষনার্থীর সনদ সংগ্রহ করতে পেরেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কতজন আলবদরের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন?
উত্তর : একাধিক।
প্রশ্ন : কতজন ধর্ষিতার সাক্ষাকার নিয়েছেন?
উত্তর : কারা নয়।
প্রশ্ন : ইসলামী ছাত্রসংঘের এমন কোন সিদ্ধান্তের কপি কি আপনার কাছে এসেছে  যাতে বলা হয়েছে ছাত্রসংঘের সবাইকে আলবদর বাহিনীতে যোগ দিতে হবে?
উত্তর : না। তবে মতলিব সাহেবের চিঠির মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি
প্রশ্ন : আলবদর বাহিনীতে যোগদানের বিষয়ে নিজামী সাহেবের নির্দেশ সম্বলিত, লিখিত কোন নির্দেশনা বা চিঠি আপনি  ১৯৭১ সালে বা তৎপরবর্তীতে পাননি।
উত্তর : পাইনি।
প্রশ্ন :  আপনি ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যপদ কখনোই গ্রহণ করেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আমি বলছি মতলিব সাহেব নিজামী সাহেবের উদ্ধৃতি দিয়ে কখনো আপনাকে কোন চিঠি দেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : মতলিব সাহেবের যে চিঠির কথা বলছেন তা বানোয়াট,  আপনার সৃজিত।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : রাজনৈতিক হিরো  সাজার আকাঙ্খায় আপনি নিজে এ চিঠি তৈরি করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : মৌলভিবাজার ইসলামী ছাত্রসংঘের সাংগঠনিক জেলা হিসেবে কখনোই স্বীকৃত ছিলনা।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি রাজনৈতিক সুবিধাবাদী এবং সুবিধা আদায়ারে জন্য এ সাক্ষ্য দিতে আসলেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি সময় এবং সুযোগমত রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করেন।
উত্তর : সত্য নয়।

রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১২

মিছবাহুর রহমানের জেরার সময় তীব্র হট্টগোল ট্রাইব্যুনালে



 মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে জেরার সময় আজ  তীব্র হট্টগোল দেখা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এ। সাক্ষী, আসামীপক্ষ  এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের  ত্রিমুখী ত্রিমুখী বাগবিতন্ডা এবং উত্তেজনার এক পর্যায়ে  কিছুই শোনা যাচ্ছিলনা। যে যার মত করে পরষ্পরকে আক্রমন করে যাচ্ছিলেন। সাক্ষী এবং উভয় পক্ষের আইনজীবীরা  দাড়িয়ে, হাত উচিয়ে পরষ্পরকে মৌখিকভাবে আক্রমন চালান। বেশ কিছুক্ষন এভাবে চলার পর ট্রাইব্যুনাল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।

মিছবাহুর রহমান চৌধুরী  মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী। গতকাল তাকে জেরার সময় একটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সূত্রপাত। উত্তেজনার এক পর্যায়ে  সাক্ষী মিছবাহুর রহমান আইনজীবী তাজুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে  বলেন,  সে  আইনজীবীর বেশে শিবিরের ক্যাডার হিসেবে এখানে  এসেছে এবং আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। তাজুল ইসলামও তাকে বেয়াদব বলেন। এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলতাফ হোসেনও দাড়িয়ে তীব্রস্বরে প্রতিবাদ করতে থাকেন। তার সাথে যোগ দেন  রাষ্ট্রপক্ষের অপর আইনজীবী সুলতান মাহমুদ সিমনও।

এর আগেও সাক্ষীকে জেরার সময় উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বেশ কয়েকবার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু গতকালের হট্টগোলের মাত্রা অতীতের সব   উত্তেজনাকে ছাড়িয়ে গেছে।


উত্তেজনা শেষ হলে তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের কাছে  বলেন, সাক্ষী আমাকে শিবিরের ক্যাডার বলেছেন। কোর্টে এসে আইনজীবীকে হুমকি দিয়েছে। আগে এর বিচার করতে হবে। তা না হলে আমরা মামলা পরিচালনা করতে পারবনা। সাক্ষী মিছবাহুর রহমান চৌধুরীও এসময় তাজুলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, সে আমাকে বেয়াদব বলেছে।

যেভাবে সূত্রপাত : মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে জেরার সময় আইনজীবী মিজানুল ইসলাম প্রশ্ন করেন “আপনি আপনার  গবেষনার সময় যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের একটি তালিকা করেছেন?”
সাক্ষী জবাব দেন “হ্যা করেছি”
এরপর মিজানুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, “সেই তালিকায় কতজন পাকিস্তান সেনা অফিসারের নাম আছে?”
জবাবে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, এটি শুধু আলবদর বাহিনীর তালিকা।
আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি জানতে চেয়েছি সেই তালিকায়  কতজন পাকিস্তান সেনা  অফিসারের নাম আছে সেটি। আলবদর বাহিনী সংক্রান্ত কোন প্রশ্নতো আমি করিনি। আগে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে তারিকায় পাকিস্তান আর্মি অফিসারের নাম আছে কি নাই।

এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে বলা হয়  সাক্ষী যা উত্তর দিয়েছে তাই যাবে। মিজানুল ইসলাম তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেন আমি আল বদর নিয়ে কোন প্রশ্ন করিনি। কাজেই কেন আল বদর বিষয়ে লেখা হবে এ প্রশ্নের জবাবে।
এসময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, মিজান সাহেব আপনি প্রথমে প্রশ্ন  করেছেন তিনি যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতা বিরোধীদের  তালিকা করেছেন কি-না। তিনি বলেছেন ‘হ্যা’ ।  এরপর আপনি প্রশ্ন করেছেন সেই তালিকায়

কয়জন পাকিস্তান সেনা অফিসারদের নাম আছে। তাহলে  পরের প্রশ্নের জবাবে আল  বদর বিষয়  অন্তর্ভুক্ত  করতে সমস্যা কোথায়।
মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি প্রথম প্রশ্নটি করিনি। আমি একটি প্রশ্ন করতে চেয়েছি। এসময় ট্রাইব্যুনাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনি না বললে প্রশ্নটি লেখা হল কিভাবে। ট্রাইব্যুনাল এসময় বলেন, প্রয়োজনে ভিডিও দেখা হবে।
মিজানুল ইসলাম  আবারো বলেন, আমি একটি প্রশ্ন করতে চেয়েছি। আলবদর বিষয়ে কোন প্রশ্ন আমি করিনি কাজেই সে উত্তর কেন লেখা হবে।  মিজানুল ইসলাম প্রস্তাব করেন তার এ প্রশ্নটি প্রয়োজনে বাদ দেয়া হোক। মিজানু ইসলাম গতকাল  এর আগেও আরেকটি  প্রশ্ন নিয়ে সমস্যা হওয়ায়  সেটি বাদ দিতে বলেন এবং ট্রাইব্যুনাল বাদ দেন।

এরপর  ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তক্রমে সাক্ষী মিছাবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, তার সেই তালিকায় পাকিস্তান সেনা অফিসারে নাম নেই। সেটি রেকর্ড করেন কোর্ট।
এরপর  মিজানুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, “পাকিস্তান আর্মির পূবাঞ্চল বা পশ্চিমাঞ্চলের কোন অফিসার বা কমান্ডার আলবদর বাহিনী নিয়ন্ত্রন করত তার নাম আপনার গবেষনায় এসেছে?”
সাক্ষী  জবাবে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আল বদর বাহিনী নিয়ন্ত্রন করত জামায়াত।
সাথে সাথে মিজানুল ইসলাম আপত্তি জানিয়ে বলেন, আমি কি প্রশ্ন করলাম আর উনি কি উত্তর দিলেন। আমিতো এ প্রশ্ন করিনি। এসময় তাজুল ইসলাম বলেন, আইন অনুযায়ী সাক্ষী প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য।
সাক্ষী মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, মাই লর্ড আমি এখানে একটি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি। ওনারাও একটি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি। তারা একটি প্রশ্ন করেন। তার জবাব তাদের পছন্দ না হলে তারা সেটি বাদ দিতে বলেন। এসময়   উত্তেজনা শুরু হয়ে যায়। মিছবাহুর রহমান চৌধুরী তাজুল ইসলামকে লক্ষ্য করে বলেন, মি. লর্ড, আপনি কোর্টের আইন না মানতে পারেন। আমিও পলিটিক্স করি। .... এরপর সাক্ষী এবং উভয় পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে তীব্র হট্টগোলে কারো কথা কিছূ বোঝা যায়নি।  সাক্ষী মিছবাহুর রহমান এবং তাজুল ইসলাম উভয়ে দাড়িয়ে পরষ্পরকে তীব্র ভাষায় আক্রমন করে যাচিছলেন। উভয় পক্ষের সব আইনজীবীরা দাড়িয়ে যান তখন। সাক্ষী মিছবাহুর রহমান অনবরত বলে যাচ্ছিলেন। তাজুল ইসলাম কোর্টের কাছে সাক্ষী থেকে আত্মরক্ষা কামনা করেন। কোর্ট  সবাইকে থামার জন্য বারবার নির্দেশ  দেন। কিন্তু সে নিদের্শ তখন  কারো কানে পৌছানোর মত পরিস্থিতি ছিলনা। বেশ কিছুক্ষন এভাবে চলার পর কোর্ট সাক্ষী মিছবাহুর রহমান এবং  তাজুল ইসলামকে  উচ্চস্বরে কঠোরভাবে  নির্দেশ দেন থামার জন্য। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

কোর্ট শেষে সামনের বেঞ্চে বসা আসামী পক্ষের আইনজীবীদের কাছে নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় হট্টগোলের সময় মিছবাহুর রহমানকে কি বলেছিলেন। তারা জানান, সাক্ষী  তাজুল  ইসলামকে বলেছেন, সে শিবিরের ক্যাডার। আইনজীবীর বেশে কোর্টে এসেছে।
সাক্ষী মিছাহুর রহমান চৌধুরী   পরে কোর্টের কাছে অভিযোগ করেছেন তাজুল ইসলাম তাকে বেয়াদব বলেছেন।

পরিস্থিতি  শান্ত হলে কোর্ট মিজানুল ইসলামকে বলেন, জেরা শুরু করেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, এখন সাড়ে চারটা বাজে।   আমার মনের এখন যা অবস্থা তাতে আজ আর আমার পক্ষে জেরা করা  সম্ভব নয়। দয়া করে আজ মুলতবি করেন।

কোর্ট বলেন, আজই জেরা শেষ করতে হবে । আজ ওনাকে আমরা  বিদায় দেব।  তাকে আর আনা হবেনা।  (মিছবাহুর রহমান গত ২৬ আগস্ট জবানবন্দী দেন। তাকে এর আগে মোট পাঁচ দফা জেরা করা হয়েছে। সর্বশেষ জেরার দিন কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন  পরবর্তীতে যেকোন দিন আর এক ঘন্টার মধ্যে জেরা শেষ করতে হবে। )




আজই  জেরা শেষ করার পক্ষে  দীর্ঘ সময় অনড় থাকেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল বলেন,   নিয়ম অনুযায়ী আপনার এক ঘন্টা জেরা করার কথা ছিল। আজ দেড় ঘন্টার মত জেরা হয়েছে।  আজ অনেক জেরা হয়েছে। আজ  জেরা শেষ করতে  হবে। তা না হলে তার জেরা আজ বন্ধ করে দেয়া হবে।
মিজানুল ইসলাম বলেন, এটা কেমন করে হতে পারে। জেরা শেষ  করতে না দিয়ে বন্ধ করে দেবেন। এখনো অনেক প্রশ্ন বাকি আছে।  কণ্ট্রাডিকশন নেয়া হয়নি এখনো।  তাছাড়া আজ সাড়ে চারটা পার হয়ে গেছে।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, আজ জেরা শেষ করতে হবে।    জেরা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোর্ট চলবে।
মিজানুল ইসলাম অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের সম্মানে আমি একটি প্রশ্ন করব। কিন্তু এরপর আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী আমাকে শিবিরের ক্যাডার বলেছেন। আমাকে হুমকি দিয়েছেন। আগে এর বিচার করতে হবে। তা নাহলে আমাদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
বিষয়টি পরে দেখা হবে আশ্বাস দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ট্রাইব্যুনাল মিজানুল ইসলামকে বলেন, আপনার আর কতক্ষন লাগবে?
মিজানুল ইসলাম বলেন, ৪৫ মিনিট।
ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন আপনি কাল আসতে পারবেন?
সাক্ষী বলেন, আমি অসুস্থ। আমার পক্ষে আর আসা সম্ভব নয়।
এরপর ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীকে আদেশ দিয়ে বলেন, আপনাকে কাল আসতে হবে। এটা ট্রাইব্যুনালের আদেশ। সাক্ষী বলেন ঠিক আছে।
এসয় ৪টা ৫০  বেজে যায়। গতকালের মত মুলতবি হয় কোর্ট।

মিছবাহুর রহমানকে জেরা :
প্রশ্ন : বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডে সম্পর্কে যেসব মামলা হয়েছিল তার কোনটাই আপনি দেখেননি আপনার গবেষনার প্রয়োজনে।
উত্তর : না।

এরপর মিজানুল ইসলাম প্রশ্ন করেন “নির্বাচন কমিশিন যাদের নিবন্ধন দেয়ার পর তা আবার বাতিল করে সে তালিকায় প্রথমে ছিল ফ্রিডম পার্টির নাম তা জানেন? সাক্ষী “হ্যা” বলে জবাব দেন।
তবে ট্রাইব্যুনাল এসময় প্রশ্নটি বিষয়ে অষ্পষ্টতার আপত্তি  জানালে মিজানুল  ইসলাম  অনুরোধ করেন প্রশ্নটি বাদ দেয়া হোক। পরে  প্রশ্নটি বাদ দেয়া হয়।

প্রশ্ন : ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশিন যেসব দলের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার একটি তালিকা আছে তা জানেন?
(এ প্রশ্নেও ট্রাইব্যুনাল আপত্তি জানিয়ে  বলেন, এটির ক্ষেত্রেও আগের  সমস্যা রয়ে গেল। তখন তাজুল ইসলাম এবং মিজানুল ইসলাম বলেন, আগের প্রশ্নটির উত্তরে সাক্ষী হ্যা বলেছেন।  এ প্রশ্নটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার। যেসব দলের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে তাদের একটি তালিকা হয়েছিল তা তিনি জানেন কি-না। )
উত্তর : নাই। তবে বাতিল তালিকায় তাদের নাম আছে।
প্রশ্ন : কানাডায় বসবাসরত খালেদ চৌধুরী, পিতা ফজলুল চৌধুরী, মা লুৎফুন চৌধুরী  নামে কাউকে চেনেন?
উত্তর : না। তবে আমার ছেলের নাম  খালেদ চৌধুরী।  আমার বোনের নাম লুৎফুন চৌধুরী। সে কানাডায় থাকে। (মিজানুল ইসলাম এর সাথে যোগ করে বলেন, আপনার ভগ্নিপতির নাম ফজলুল চৌধুরী)
প্রশ্ন : বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড বিষয়ে যেসব মামলা হয়েছিল  তা তদন্তের জন্য একজন ডিআইজকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তার নাম কি আপনার গবেষনায় এসেছে?
উত্তর : না।
এরপর যে সব প্রশ্ন নিয়ে হট্টগোলের সূত্রপাত হয় তা উপরে বর্নিত হয়েছে।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে নতুন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ




মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ  ১৬ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া  ১৩ তম এবয় ১৫ তম সাক্ষীর জেরাও শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যনালের আদেশ ছিল আজ মাওলানা সাঈদীর  পক্ষে বাকী  পাঁচজন সাক্ষী হাজির করার। তা নাহলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ  বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু গতকাল মাওলানা সাঈদীর পক্ষে একজন মাত্র নতুন সাক্ষী হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন  আগামীকাল   সোমবার এ বিষয়ে আদেশ দেয়া  হবে।


১৬ তম সাক্ষীর জবানবন্দী :
আমার নাম আব্দুল হালিম ফকির। বয়স ৫৫ বৎছ। আমার গ্রাম টেংরাখালী, থানা- জিয়ানগর, জেলা- পিরোজপুর। আমি বর্তমানে সাংসারিক, কৃষি কাজ করি। ১৯৭১ সালে আমি নবম শ্রেণীতে পড়াশুনা করতাম। আমি এস,এস,সি পাশ করেছি। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের টেংরাখালী গ্রামে রাজাকার, পিস কমিটি ও পাক বাহিনীর কোন লোক প্রবেশ করে নাই এবং কোন বাড়িঘর লুটতরাজ হয় নাই, কোন লোক নির্যাতিত হয় নাই। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেলোয়ার হোসেন সাইদী সাহেব রাজাকার ছিলেন না, পিস কমিটির সদস্য ছিলেন না,স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন না, মানবতা বিরোধী কোন কাজ তার দ্বারা হয় নাই।

জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১২

মাওলানা সাঈদীর মামলা///বেডে শুয়ে সাক্ষ্য গ্রহনের ব্যবস্থার নির্দেশ ট্রাইব্যুালের


মেহেদী হাসান ,18/10/2012
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষী যাতে  আগামী রোববার  বিছানায়  শুয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন সেজন্য ট্রাইব্যুনাল কক্ষে সিক বেডের ব্যবস্থা গ্রহনের  জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

গতকাল  বুধবার মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১৫ তম সাক্ষী হিসেবে  জবানববন্দী প্রদান করেন  আব্দুস সালাম হাওলাদার। কিন্তু জবানবন্দীর পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওই দিন আর তার জেরা করা সম্ভব হয়নি। আজও  তিনি অসুস্থ থাকায় আসামী পক্ষ তাকে কোর্টে  হাজির করেনি।

এ এছাড়া  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে   অন্য কোন নতুন সাক্ষীও  গতকাল    হাজির করেনি আসামী পক্ষ। এ প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়ে বলেন, আগামী  রোববার বাকী পাঁচ জন সাক্ষীকে  হাজির করতে হবে।  একই সাথে  অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষী যাতে বিছানায় শুয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন সে মর্মে  সিকবেড প্রস্তুত রাখার জন্য  রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ২৩ তম সাক্ষী মধুসূদন ঘরামীকে  ট্রাইব্যুনালে সিক বেডে রেখে ডাক্তারের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

আজ  সকালে মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম শুরু হলে  মামলার তদ্বিকারক মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী  কাঠগড়ায় যান। তিনি মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেছেন এবং তার অসমাপ্ত জেরা শুরু হবার কথা ছিল গতকাল। তাকে জেরার শুরুতে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে প্রশ্ন করেন আপনাদের বাকি সাক্ষীদের খবর কি? মিজানুল ইসলাম বলেন, ১৫ তম সাক্ষী এখনো সুস্থ হয়নি। এছাড়া আমাদের হাতে আজ আর কোন নতুন সাক্ষী নেই। এরপরই ট্রাইব্যুনাল আদেশ প্রদান করেন।

আদেশ :
ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেন, আসামী  পক্ষকে সাক্ষী হাজিরের জন্য যথেষ্ঠ সময় এবং সুযোগ দেয়া হয়েছে।  আসামী পক্ষ জানিয়েছেন তাদের ১৫ তম সাক্ষী অসুস্থ। আমরা তার অসুস্থতা নিয়ে কোন কথা বলতে চাইনা। আমরা রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিচ্ছি এখানে একটি সিক বেডের ব্যবস্থা করতে যাতে অসুস্থ সাক্ষী আগামী রোববার বেডে  শুয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন।
এরপর ট্রাইব্যুনাল বলেন, আগামী রোবার তাদের বাকী পাঁচজন সাক্ষী হাজির করতে  হবে। যদি ওইদিন তারা সব সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের ভবিষ্যতে  আর নতুন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবেনা। তাদেরকে সাক্ষী আনার জন্য আর কোন সময়ও দেয়া হবেনা।
 এরপর মাসুদ সাঈদীর জেরা শুরু হয়।  গতকাল তাকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী। সারাদিন তার জেরা চলে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য  জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।



১৫ তম সাক্ষীর অসুস্থতা প্রসঙ্গ :
গত বুবধবার সকালে  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১৪ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল বলেন পরের সাক্ষী নিয়ে আসেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী অসুস্থ। তবে তিনি  কোর্টে   এসেছেন।  আজ তার

সাক্ষ্য না নিলে ভাল হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন, নিয়ে আসেন তাকে। মিজানুল ইসলাম বারবার  আপত্তি জানিয়ে বলেন, আজ থাক। তবে ট্রাইব্যুনাল আপত্তি না শুনে সাক্ষী হাজিরের নির্দেশ দেন।

দুপুর একটার দিকে  ১৫ তম সাক্ষী আব্দুস সালামের  জবানবন্দী শেষ হয়। এরপর এক ঘন্টার বিরতি দেয়া হয়। বিরতির পর সাক্ষীকে যখন কোর্টে হাজির করা হয় তখন সে অসুস্থ। কাঠগড়ায় মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকেন।  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা  জানান বিরতির সময় তার বমি হয়েছে। এসময়  ট্রাইব্যুনাল কিছূক্ষন সময় নেন সাক্ষী যাতে স্বাভাবিক বোধ করেন সেজন্য।  ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের কাছে  জানতে চান সাক্ষীকে স্যালাইন বা কোন ঔধষ খাওয়ানো হয়েছে কি-না। বা অন্য কোন খাবার খাওয়নো হয়েছে কি-না। আইনজীবীরা জানান,  না । স্যালাইন, ঔষধ খাওয়ানো হয়নি। অন্য খাবার খেতে পারছেনা। এরপর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রাই্যুনালের কোথায় কি হয় সব আমার নজরে আসে।  আমার নজরে আনা হয়। ডিফেন্স রুমে একজন সাক্ষী এভাবে অসুস্থ হয়ে  পড়লেন আর আপনারা আমাদের কিছুই জানালেননা। এটা কি ঠিক করলেন আপনারা?  আপনাদের পাশের রুমেই সহকারি রেজিস্ট্রারের অফিস তাকেও জানাতে পারতেন অন্তত।
মিজানুল ইসলাম বলেন, মনে করেছিলাম বমি বন্ধ হলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু হলনা।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সকালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় তো দেখে ভালই মনে হয়েছিল।
এরপর আবার কিছুক্ষন  সময় দেয়া হয় সাক্ষীকে যাতে সে সুস্থতা বোধ করেন সেজন্য।  কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকেন কোর্ট।
বিচারপতি নিজামুল হক সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি সাক্ষ্য দিতে পারবেন? সাক্ষী বলেন, স্যার আমি এখন পারবনা। একটু সময় দিলে ভাল হয়।
বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, সময় দেয়া হবেনা। পারলে এখন সাক্ষ্য  দেবেন। না হলে বাড়ি চলে যাবেন।  ল ইউলি টেক ইট অউন কোর্স।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, ঠিক আছে সাক্ষীকে নিয়ে যান।
দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে সাক্ষীকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে  বলেন, মি মিজানুল ইসলাম, ২০ জন সাক্ষী হাজির করা আপনাদের পার্ট। দায়িত্ব আপনাদের। এখন অন্য সাক্ষীর (১৩ তম সাক্ষী মাসুদ সাঈদী) জেরা হবে।  এর মধ্যে যদি ওই সাক্ষী সুস্থ হয় তাহলে তার সাক্ষ্য হবে। তা না হলে ল ইউল টেক ইট অউন কোর্স। আপনি জানেন হোয়াট  ইজ ল। পরের সাক্ষী ডকেন।

এরপর ১৩ তম সক্ষিী মাসুদ সাঈদীর অসমাপ্ত  জেরা শুরু হয়।  সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলে জেরা। তখনো তার জেরা শেষ না হওয়ায় বুধবার আর অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষীকে আর ডাকা হয়নি ।

মাসুদ সাঈদীকে বুধবারের জেরা :
প্রশ্ন : আপনারা কয় ভাইবোন?
উত্তর : আমরা চার ভাই। বোন নেই। সম্প্রতি আমার বড় ভাই মারা গেছেন।
প্রশ্ন :   তিন ভাই কোথয় কি পড়াশুনা  করেছেন একটু বলেন।
উত্তর : বর্তমানে বড়ভাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করেছেন।  তারপর আমি তিতুমীর কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি। পরে নিউইয়কের লাগুনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছি। আমার ছোট ভাই সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসি পাশের পর লন্ডনে অথর্নীতিতে পড়াশুনা শেষ করেছে । তবে কলেজের নাম এ মুহুর্তে মনে করতে পারছিনা।
প্রশ্ন : কার কি পেশা ?

উত্তর : বর্তমান বড়ভাই ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করেন। টিকেটিং হজ্ব ওহমরাহ। আমি রিয়েল  এস্টেট ব্যবসা করি।  ছোট ভাই লন্ডনে একটি ফার্মে চাকরি করে।
প্রশ্ন : আপনার দাদার বাবার নাম কি?
উত্তর : গোলাম রহমান সাঈদী।
প্রশ্ন : আপনার বাবার লেখালেখি বা বই আছে?
উত্তর : হ্যা। আমার আব্বার লেখা ৭২টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন : ওনার পেশা কি?
উত্তর : লেখক।
প্রশ্ন : এছাড়া তার অন্য কোন পেশা নেই এবং অতীতেও ছিলনা।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : আপনার সাথে সিতারা বেগমের দেখা হয়নি।
উত্তর : না। মামলার (সিতারা বেগমের মেয়ে মমতাজ বেগম তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি, এবং ভাই সাহেব আলী হত্যার বিচার চেয়ে ১৯৭২ সালে  মমতাজ বেগম যে মামলা করেছিল তার কপি) কপিটি আমি আমার বড় ভাইর কাছ থেকে পেয়েছি।
প্রশ্ন : আপনার বড় ভাইর মুত্যৃ হয়েছে কবে?
উত্তর : গত ১৩ জনু। চার মাস আগে।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম বিষয়ে আপনার সাথে আপনার বড় ভাইর কথাবার্তা হয়েছে?
উত্তর : না। তবে সম্ভবত মমতাজ বেগম তার মায়ের কাছ থেকে মামলার কপিটি এনে আমার ভাইকে দিয়েছেন।
প্রশ্ন : কাগজটি কে কখন তুলেছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : প্রদর্শনী-  এ (মামলার কপি) তে সাহেব আলী বা সাহাবউদ্দিন নাম লেখা আছে?
উত্তর : না। তবে সিরাজ আলী  লেখা আছে।
প্রশ্ন : প্রদশর্নী  -- এ’তে এক নং আসামী হিসেবে পাকিস্তানী সৈন্য পিরোজপুর ক্যাম্প লেখা আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : মামলার কপির প্রত্যেক পাতার পেছনে কোন লেখা বা স্বাক্ষর  আছে?
উত্তর : সিল মারা আছে। কোন লেখা বা স্বাক্ষর নেই।
প্রশ্ন : মামলার এ সাটিফাইড কপিটি সম্পূর্ণরুপে  অত্র মামলার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এবং   কপির ভেতরে উল্লিখতি  মামরার কোন অস্তিত্ব নেই।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম বা মমতাজ বেগমের পরিবারের সাথে আপনার বড় ভাইর ভাল সম্পর্ক ছিল।
উত্তর : না। তবে সিতারা বেগমের ছেলে মোস্তফা হাওলাদারের সাথে আমার ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম ও মোস্তফা হাওলাদার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনাদের কারনেই তারা সাক্ষ্য দিতে আসেননি।
প্রশ্ন : সত্য নয়। তবে অসত্য সাক্ষ্য দিতে রাজী না হওযায় তারা আসেনি।

বিদেশী সাক্ষী আনতে সমন জারির আবেদন খারিজ

 ১৮/১০/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে  ন্যাটোর সাবেক এক জেনারেলসহ দুজন বিদেশী সাক্ষী  মেনেছিল আসামীপক্ষ। তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য  সমন জারির  প্রার্থনা করে আবেদন করেছিল অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষের আইনজীবীরা। গতকাল সে আবেদন  খারিজ করে দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামী পক্ষ যাকে  খুসী সাক্ষী আনতে পারবেন। সেটি তাদের বিষয়। এরপর সমন জারির আবেদন খরিজ করে দেন।


বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১২

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আরো 2 সাক্ষীর জবানবন্দী /// “রাজাকার ও পিস কমিপির লোকদের সাথে সাঈদী সাহেবকে দেখিনাই”


mehedy hasan, 17/10/2012
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ  দুজন সাক্ষীর জবানবন্দী  গ্রহণ করা হয়েছে। এরা হলেন ১৪ তম সাক্ষী যশোরের এমরান হোসাইন এবং ১৫ তম সাক্ষী পিরোজপুরের আব্দুস সালাম হাওলাদার।
সাক্ষী আব্দুস সালাম হাওলাদার ১৯৭১ সালে পাড়েরহাট বাজারে তার পিতার দোকানে মাঝে মাঝে বসতেন বলে জানান।  ১৯৭১ সালে ৭ মে পাড়েরহাট বাজারে পাকিস্তান আর্মির আগমন এবং শান্তি কমিটির লোকজন কর্তৃক  পাড়েরহাট বাজারে লুটপাটের বিবরন দেন। সাক্ষী বলেন, পাড়েরহাট বাজারে  ৭ মে শান্তি কমিটির লোকজন, আর্মি এবং পরবর্তীতে রাজাকারদের সাথেও তিনি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেখেননি।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ১৯৭১ সালের মে মাসে  পাড়েরহাটে আর্মি আসার পর শান্তি কমিটির লোকজনের সাথে মাওলানা সাঈদী পাকিস্তান আর্মিকে অভ্যর্থনা জানান । এরপর পাকিস্তান আমি, শান্তি কমিটির অন্যান্যদের সাথে নিয়ে মাওলানা সাঈদী পাড়েরহাট  বাজারসহ আশপাশের অনেক এলাকায় লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যাকান্ড চালান।

১৫ তম সাক্ষীর জবানন্দী :
আমার নাম আব্দুস সালাম হাওলাদার, বয়স ৬৫ বছর।  গ্রাম বাদুরা, থানা ও জেলা পিরোজপুর। আমি গৃহস্থ  কাজ করি।  ১৯৭১ সালে পাড়েরহাট বাজারে আমার আব্বার দোকান ছিল আমি সেই দোকানে মাঝে মাঝে বসতাম। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। ৭ই মে তারিখে পাক সেনারা পাড়েরহাটে আসে। তাদের সহযোগিতায় পাড়েরহাটের কিছু সংখ্যক লোক দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, গণি গাজি, আসমত আলী মুন্সি, মালেক শিকদার পাড়েরহাটের ৫/৬টি হিন্দুর দোকান লুট করে। লুটপাটের পরে পাক সেনারা আবার পিরোজপুরের দিকে রওনা করে যায়। যাদের দোকান লুট করে তারা হলেন মাখন সাহা, নারায়ন সাহা, মদন সাহা, বিজয় মাস্টার, গৌরাঙ্গ পাল প্রমুখ। লুটপাটের পরের দিন আবার পাক সেনারা পাড়েরহাটে আসে। তখন ঐ সমস্ত লোকজন যথা  দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, গণি গাজি, আসমত আলী মুন্সি, মালেক শিকদারদের সাহায্যে  আর্মি ব্রীজ পার হয়ে দক্ষিণ পার্শ্বে আমার চাচা নুরু খান সাহেবের বাড়িতে ঢোকে। পিস কমিটির সদস্যরা ঐ বাড়ি পাক সেনাদের দেখিয়ে দেয় এবং তারা ঐ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার ঐ চাচা আওয়ামী লাগের নেতা ছিলেন। ঐ সময়ে আমার চাচা নূরু খান, তার ছেলে সেলিম খান এবং সেলিম খানের মা এরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না।  যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান।

তার বাড়িতে আগুন দেওয়ার আনুমানিক ১৫/২০ মিনিট পরে পাক সেনারা সেখান থেকে বের হয়ে চিথলিয়া গ্রামের দিকে যায়। এর কিছুক্ষণ করে আমরা ধোয়া দেখতে পাই। বহু লোকজন  দৌড়াদৌড়ি করছিল । আমরা শুনতে পেলাম চিথলিয়া গ্রামের সইজুদ্দিন এবং রইজুদ্দিনের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। আনুমানিক আধা ঘন্টা কি ৪৫ মিঃ পরে পাক সেনারা পিস কমিটির সদস্য সহ পাড়েরহাট বাজারের দিকে রওনা করে আসে। আমি তখন ব্রীজের উত্তর পাশে লোকজনের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং দেখি উল্লেখিত পিস কমিটির সদস্যসহ পাক সেনারা ব্রীজ পার হয়ে পাড়েরহাটের দিকে আসে। তাদের যাওয়ার সময় এবং আসবার সময় দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবকে তাদের সংগে দেখি নাই। পাক সেনারা পাড়েরহাট বাজারে কিছু সময় থেকে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। এর দুই/তিন দিন পরে পাড়েরহাটে পিস কমিটি গঠন হয়। সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মওলানা, দানেশ মোল্লা, সফিজউদ্দিন মৌলভী, গণি, গাজি, আসমত আলী মুন্সি, মালেক শিকদারদেরকে নিয়ে পিস কমিটি গঠন করা হয়। পাড়েরহাট বাজারে পূর্ব গলিতে ফরিকদাশের বিল্ডিং দখল করে সেখানে পিস কমিটির অফিস করা হয়। জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিকে পাড়েরহাট হাইস্কুলের দোতলায় রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। রাজাকার মোমিন, রাজ্জাক, বজলু কারী, হানিফ, মহসিনদেরকে আমি রাজাকার হিসেবে চিনি। তারা পাড়েরহাট বাজারে আসা যাওয়া করতো। তাদের সংগে কখনও আমি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবকে দেখি নাই।
আমাদের পিরোজপুর ১ আসনে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব তিন বার নির্বাচন করেন। দুইবার বাবু সুধাংশু শেখর হাওলাদারের সংগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তিনি একজন নামকরা আইনজীবী তিনি কোন সময় সাঈদী সাহেবের বিপক্ষে যুদ্ধাপরাধের কোন অভিযোগ করেন নাই এবং মামলা করেন নাই। তৃতীয়বার উনি এ,কে,এম,এ আওয়াল সাহেবের সংগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন, তিনিও সাঈদী সাহেবের বিপক্ষে যুদ্ধাপরাধের কোন অভিযোগ করেন নাই।

অসুস্থ সাক্ষী নিয়ে যা হল :
সকালে ১৪ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল বলেন পরের সাক্ষী নিয়ে আসেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী অসুস্থ।  কোর্টে আসছেন। তবে আজ তার সাক্ষ্য না নিলে ভাল হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন নিয়ে আসেন। মিজানুল ইসলাম বলেন সাক্ষ্য দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দায় দায়িত্ব কার।  মিজানুল ইসলাম আপত্তি করেন আজ তাকে না আনার জন্য।  কিন্তু তারপরও তাকে কোর্টে আনার জন্য নির্দেশ দেন  ট্রাইব্যুনাল।

দুপুর একটার দিকে সাক্ষীর জবানবন্দী শেষ হয়। এরপর এক ঘন্টার বিরতি দেয়া হয়। বিরতির পর সাক্ষীকে যখন কোর্টে হাজির করা হয় তখন সে অসুস্থ। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা  জানান বিরতির সময় তার বমি হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল জানতে চান স্যালাইন বা কোন ঔধষ খাওয়ানো হয়েছে কি-না। বা অন্য কোন খাবার খাওয়নো হয়েছে কি-না। আইনজীবীরা জানান না । স্যালাইন, ঔষধ খাওয়ানো হয়নি। অন্য খাবার খেতে পারছেনা। এরপর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রাই্যুনালের কোথায় কি হয় সব আমার নজরে থাকে। নজরে আনা হয়। ডিফেন্স রুমে একজন সাক্ষী এভাবে অসুস্থ হয়ে  পড়লেন আর আপনারা আমাদের কিছু জানালেননা। এটা কি ঠিক করলেন আপনারা?
মিজানুল ইসলাম বলেন, মনে করেছিলাম বমি বন্ধ হলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু হলনা।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সকালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় তো দেখে ভালই মনে হয়েছিল।
এরপর কিছুক্ষন  সময় দেয়া হয় সাক্ষীকে যাতে সে সুস্থতা বোধ করেন। কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকেন কোর্ট। এরপর বিচারপতি নিজামুল হক সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন আপনি কি সাক্ষ্য দিতে পারবেন? সাক্ষী বলেন স্যার আমি এখন পারবনা। একটু সময় দিলে ভাল হয়।
বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, সময় দেয়া হবেনা। পারলে এখন দেবেন। না হলে বাড়ি চলে যাবেন।  ল ইউলি টেক ইট অউন কোর্স।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, ঠিক আছে সাক্ষীকে নিয়ে যান।
এরপর তিনি মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলমে বলেন, মি মিজানুল ইসলাম, ২০ জন সাক্ষী হাজির করা আপনাদের পার্ট। দায়িত্ব আপনাদের। এখন অন্য সাক্ষীর (১৩ তম সাক্ষী মাসুদ সাঈদী) জেরা হবে।  এর মধ্যে যদি ওই সাক্ষী সুস্থ হয় তাহলে তার সাক্ষ্য হবে। তা না হলে ল ইউল টেক ইট অউন কোর্স। আপনি জানেন হোয়াট  ইজ ল। পরের সাক্ষী ডকেন।
মিজানুল ইসলাম বলেন, মাঝে মাঝে মনে হয় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা হলেন কুলিন ব্রাক্ষ্মন আর আমরা হলাম নমশুদ্র। কোন কোন ক্ষেত্রে এটা মনে হচ্ছে।
এরপর মাসুদ সাঈদীর জেরা শুরু হয়।  সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলে জেরা। তখনো তার জেরা শেষ না হওয়ায় অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষীকে আর ডাকা হয়নি ।







১৪ তম সাক্ষীর জবানবন্দী :

১৪ তম সাক্ষীর জবানবন্দী : ১৭/১০/২০১২
আমার নাম  এমরান হোসাইন,  বয়স- ৫৯ বছর।  গ্রাম- মহিরন, থানা- বাঘারপাড়া, জেলা যশোর ।
আমার পেশা শিক্ষকতা। বাঘারপাড়া পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।
১৯৭১ সালে  আমি ছাত্র ছিলাম। ১৯৬৯-৭০ সালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যশোরে নিউ টাউনে বাসা ভাড়া থাকতেন। ওই সময় ধর্ম সভা করেন। ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে শেল মারা শুরু করলো শহরের ওপরে। শহরের বসবাসকারী লোকজন ভয়ে ভীত হয়ে গ্রামে চলে যেতে লাগল। ওই সময় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মে মাসের মাঝামাঝি সময় আমাদের মহিরন গ্রামে মরহুম সদরুদ্দিন পীর সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে ১৫ দিন থাকার পরে দোহারকোলো গ্রামের রওশন আলী সাহেবকে পীর সাহেব ডেকে বললেন, আমার বাড়িতে লোকজনের ভিড় হয়েছে, থাকার সমস্যা । আপনি আপনার বাড়িতে সাঈদী সাহেবকে নিয়ে যান। উনার বাড়িতে আড়াই মাস থাকার পর সাঈদী সাহেবকে তার ভাই এসে তাকে দেশের বাড়িতে পিরোজপুর  নিয়ে গেলেন।

জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী সাক্ষীকে জেরা করেন।
জেরা :
প্রশ্ন : আপনি কোন বিষয় পড়ান?
উত্তর : ইসলাম  ধর্ম।
প্রশ্ন : স্কুলটি স্বাধীনতার আগে হয়েছিল না পরে ?
উত্তর : ১ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন : যে পীর সাহেবের কথা বলেছেন তার ছেলে মেয়ে আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : আপনার সঙ্গে প্রথম কবে সাঈদী সাহেবের দেখা হয়?
                   উত্তর : তিনি যেদিন পীর সাহেবের বাড়িতে যান সেদিন।  মাগরিবের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে পরিচয়হয়। পীর      সাহেবের বাড়ি আমার বাড়ির মধ্যে ১০০/১৫০ গজ ব্যবধান।
প্রশ্ন : আপনি সাঈদী সাহেবের সঙ্গে রওশন আলীর বাড়িতে গেছেন?
উত্তর : না ।
প্রশ্ন : আপনি কোথায় পড়শোনা করেছেন?
উত্তর : আমি পদ্মবেলা সিনিয়র আমীর মাদরাসা খুলনায় পড়েছি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের সময় মাদরাসা খোলা ছিল না বন্ধ ছিল?
উত্তর : বন্ধ ছিল।
প্রশ্ন : পুরো সময় বন্ধ ছিল?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনাদের গ্রামে পীর সাহেব ছাড়া আরো অবস্থাসম্পন্ন পরিবার  পরিবার ছিল।
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : আপনাদের অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর : আমরা মধ্যবিত্ত  শ্রেণীল ছিলাম। গরিবও না  বেশি  ধনিও না।
প্রশ্ন : মাদরাসার ছাত্ররা অনেকে রাজাকার, আলবদর, বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলো জানেন?
উত্তর : আমি শুনেছি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধকালে আপনি বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথায়ও যাননি ।
উত্তর : যাইনি।
প্রশ্ন : আপনাদের গ্রামে  পাকিস্তান বাহিনী বা রাজাকার বাহিনী দ্বারা কোন কান তি হয়েছিল?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে পাকিস্তান বাহিনী, আলবদর, রাজাকার ও শান্তিবাহিনী মানুষকে খুন করতো
অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্ষণ করতো তা শুনেছেন?
উত্তর : তখন শুনিনি, পরে শুনেছি।
প্রশ্ন : কোন ধরনের লোকজনের ওপর তারা  অত্যাচার  করতো, তারা কাদেরকে মারতো?
উত্তর : বলতে পারবো না।
প্রশ্ন : আপনি যে মামলায় সাী দিতে এসেছেন সেটা কিসের মামলা?
উত্তর : কাগজপত্রে দেখেছি দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে।
যে সময়ের কথা পত্রিকায় উলেখ করা হয়েছে সে সময় তিনি আমাদের গ্রামে ছিলেন। এজন্য সত্য কথা
বলতে আমি সাী দিতে এসেছি।
প্রশ্ন : কবে কিভাবে এটা জানলেন?
উত্তর : এক বছর কয়েক মাস আগে এটা জেনেছি।
প্রশ্ন : পত্র-পত্রিকা কি আগেও পড়তেন না একবছর কয়েক মাস আগে থেকে পড়েন?
উত্তর : আগে পড়তাম।  তবে মাঝে মাঝে । এখনো মাঝে মাঝে পড়ি।
প্রশ্ন : আগে যখন  পড়েছেন তখন এই অভিযোগ দেখেননি?
উত্তর :না।
প্রশ্ন : আপনি জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত।
উত্তর : আমি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নই।
প্রশ্ন : এ মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার বিষয়ে আপনাকে কে বলেছে?
উত্তর : এক বছর আগে সাঈদী সাহেবের বড় ছেলে রাফিক  আমাদের বাড়িতে যান। তিনি আমাদের পাড়ার
অনেক লোকজন ডাকলেন। তিনি তার  আব্বার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা আমাদের বললেন। তিনি
আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন তার পিতা  সাঈদী সাহেব  যুদ্ধের সময় এখানে ছিলেন কি-না। আমরা বলি 
হ্যা তিনি এখানে ছিলেন। তখন তিনি আমদের এ বিসয়ে সাক্ষ্য দেয়ার অনুরোধ করলে আমি রাজি হই ।
প্রশ্ন : এভাবে অনুরোধ করলে আপনি স্যা দেন।
উত্তর : আমি অন্য কোনো মামলায় সাী দেইনি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আপনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন?
উত্তর : এ কথা সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত এবং আপনার দলের নেতার বিরুদ্ধে মামলা
চলছে তাই আপনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে  সত্য গোপন করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলেন।

উত্তর : আপনার এ কথা সত্য নয়।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, মনজরু আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার তানভির
আহমেদ আল আমিন, আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।


গোলাম আযমের পক্ষে বিদেশী সাক্ষী আনার বিষয়ে আপত্তি রাষ্ট্রপক্ষের

১৭/১০/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে দু’জন বিদেশী সাক্ষী আনার বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আজ ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, অসদুদ্দেশে (ম্যালাফাইডি)  এবং বিচারকে বিলম্বিত করার জন্য আসামী পক্ষ থেকে এ ধরনের আবেদন জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগের বিষয়ে তীব্র বিরোধীতা করে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এর মধ্যে কোথায় অসদুদ্দেশ্য আছে  তার একটি   উপাদান তারা দেখাক। সম্পূর্ণ আইনী  কাঠামোর মধ্যে এ আবেদন করা হয়েছে এবং ট্রাইব্যুনাল আইন আমাদের সে অধিকার দিয়েছে।   কোন আবেদন নিয়ে আসলেই তরা মুখস্ত বলে দিচ্ছে অসুদুদ্দেশ্যে আনা  হয়েছে। তাদের এ অভিযোগ শুনতে শুনতে আমরা খুবই  বিরক্ত।

অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে যে দুজন বিদেশী সাক্ষী আনার জন্য ট্রাইব্যুনালের প্রতি সমন জারির আবেদন জানানো হয়েছে তারা হলেন, ন্যাটোর সাবেক  কমান্ডার ইন চিফ (এলাইড ফোর্স নর্দার্ন রিজিয়ন) জেনারেল স্যার জ্যাক ডেভারেল এবং      আয়ারল্যান্ডের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (গ্যালওয়ে) আইন অনুষদের প্রফেসর উইলিয়াম এ সাবাজ।

গত ১ জুলাই অধ্যাপক গোলাম  আযমের পক্ষে ২ হাজার ৯৩৯ জন সাক্ষীর  তালিকা জমা দেয়া হয়। তার মধ্যে উক্ত দুই জন বিদেশী সাক্ষীও ছিলেন। এরপর গত ৯ অক্টোবার ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষকে ১২ জন সাক্ষীর সংখ্যা নির্ধারন   করে দিয়ে আদেশ দেন। আসামী পক্ষ  তাদের ১২ জন সাক্ষীর  তালিকায়ও  উক্ত দুই বিদেশী সাক্ষীর নাম অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তাদেরকে দেশে এসে সাক্ষ্য দেয়ার বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সমন জারির আবেদন করেন।  আসামী পক্ষের আবেদনে     উপরোক্ত বিদেশী দুজন সাক্ষীকে এক্সপার্ট উইটনেস বা বিশেষজ্ঞ সাক্ষী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং সেই হিসেবেই তাদের প্রতি সমন জারির আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনে বলা হয় অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে নেতৃত্বের দায় (কমান্ড রেসপনসিবিলিটি) অভিযোগ আনা হয়েছে। স্যার জ্যাক ডেভারেল একজন সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে এ বিষয়ে তার বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরবেন এবং তিনি একজন এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞ সাক্ষী।  এছাড়া উইলিয়াম সাবাজ সার্বভৌমত্ব বিষয়ে তার মতামত তুলে ধরবেন।

গত মঙ্গলবার এ আবেদনের ওপর  শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। আজ বুধবার এ বিষয়ে আদেশের জন্য ধার্য্য করা ছিল। আজ সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী বা চিফ প্রসিকিউটর  গোলাম আরিফ টিপু বলেন, তারা সাক্ষী হিসেবে আসতে পারেন কিন্তু এক্সপার্ট সাক্ষী হিসেবে নয়। তিনি  অভিযোগ করেন বিচার বিলম্বিত করার জন্য এ ধরনের আবেদন করা হয়েছে।
এসময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, তারা যদি তাদের মামলায় সহায়তার জন্য বিদেশী সাক্ষী আনেন তাহলে আপত্তি কোথায়।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের অপর প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন,  আসামী পক্ষের এ আবেদন  অসদুদ্দেশ্য প্রনোদিত।  এর মাধ্যমে তারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমকে একটি  খোরাক দেয়ার জন্য তারা এ আবেদন এনেছে। তারা  দেশে বিদেশে যে প্রচারনা চালাচ্ছেন তার সুবিধার জন্য তারা এটি করেছেন। তাছাড়া এ আবেদনের কোন ভিত্তি নেই। এ আবেদন বাতিল করা উচিত। এ আবেদন  মেইনটেইনবেল নয়।

জেয়াদ আল মালুম বলেন, গোলাম  আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল বেসামরিক নেতৃত্বের দায়।  আসামী পক্ষ যে বিদেশ  সাক্ষী আনতে চাচ্ছেন তারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কি-না সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তারা সিভিল সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি বিষয়ে  বিশেষজ্ঞ কি-না তাও উল্লেখ করা হয়নি।  মামলার যে বিষয়বস্তু তাতে কোনভাবেই এটা ট্রাইব্যুনালের জন্য সহায়ক নয়।
 উইলিয়াম সাবাজের বিষয়ে তিনি বলেন, তার বই আমরাও পড়ি। তিনি  আন্তর্জাতিকভাবে একজন খ্যাতিমান আইনজ্ঞ তাতে আমাদের কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তা কিভাবে আমাদের এই মামলায় প্রয়োজনীয় এবং সহায়ক তা পরিষ্কার নয়।

এরপর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগের জবাবে বলেন, তাদের মুখস্ত কথা শুনতে শুনতে আমরা বিরক্ত। সব কিছুতে তারা মুখস্ত বলে দিচ্ছেন  অসুদুদ্দেশ্য। কিন্তু কোথায় কিভাবে অসদুদ্দেশ্যে নিহিত আছে এ আবেদনের মধ্যে তার একটি উপাদান তিনি দেখাক। আমরা যদি বিচার মুলতবি চেয়ে আবদেন করতাম তাহলে এ অভিযোগ করলে মেনে নেয়া যেত। কিন্তু আমরা সম্পর্ণূ আইনী অধিকার বলে এবং আইনী কাঠামোর মধ্যে থেকে আবেদন করেছি। আর  তাকে তারা অসদুদ্দেশ্য বলে দিলেন।
এসময় ট্রাইব্যুনাল  প্রশ্ন করেন   কোন আবেদনকে কি প্রতিপক্ষ ম্যালাফাইডি আখ্যায়িত করতে পারেনা?
ব্যারিস্টার রাজ্জাক  বলেন, না  সব সময় পারেনা।
এরপর ট্রাইব্যুনাল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি প্রশ্ন করেন, ট্রাইব্যুনাল মনে করলে যেকোন বিশেষজ্ঞকে যেকোন সময় ডেকে আনতে পারি। কিন্তু আপনারা কেন এক্সপার্ট সাক্ষী আনবেন? তারা কোন বিষয়ে আপনাদেরকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে সাহায্য করবে? আসামী কোন আর্মি কমান্ডার নন। এখানে  আসামীর বিরুদ্ধে সিভিল সুপিরিয়র রেসপনসিবিলির অভিযোগ আনা হয়েছে। সেখানে  আর্মি কমান্ডার হিসেবে এসে তিনি কি করবেন?
জবাবে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি শুধুমাত্র আর্মিতেই হয়। বেসামরিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ অভিযোগ আনতে হলে তাকে রাষ্ট্রপ্রাধন হতে হবে যার  নিয়ন্ত্রন থাকবে আর্মির ওপর। যেমন   সশস্ত্র বাহিনী প্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি। প্রতিরক্ষা  মন্ত্রনালয প্রধানমন্ত্রীর হাতে।  এধরনের বেসামরিক ব্যাক্তির ক্ষেত্রে  বেসামিরক  নেতৃত্বের দায় চাপানো  যায় । কিন্তু  অধ্যাপক গোলাম আযম  এ ধরনের কোন    ক্ষমতায় ছিলেননা যাতে বলা যায়  আর্মির ওপর তার নিয়ন্ত্রন ছিল।
ব্যারিস্টার আব্দর রাজ্জাক বেলন, কমান্ড রেসপনসিবিলিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৯ সালে যখন উপসাগরীয় যুদ্ধ হল তখন তাতে যুক্তরাষ্ট্র  এবং যুক্তরাজ্য উভয় দেশ অংশ নেয়। যুক্তরাষ্ট্র বৃটেনকে বলেছিল তোমাদের আর্মিও আমাদের কমান্ডে থাকুক। কিন্তু  বৃটেন তাতে রাজি না হলে বলল আমাদের আর্মি আমাদের নেতৃত্বে থাকবে।
সেজন্য  এ বিষয়টির বিষয়ে  আমরা ন্যাটোর  সাবেক জেনারেল স্যার জ্যাক ডেভারেলকে আনতে চাচ্ছি।

শুনানী শেষে ট্রাইব্যুনাল বলেন আগামী কাল এ বিষয়ে আদেশ হবে।



সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১২

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে গোয়েন্দা নজরদারি এবং হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় দেশের শীর্ষ আইনজীবী নেতৃবৃন্দের ঘোষনা /////আইনজীবীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা হবে

 ১৫/১০/২০১২
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাককে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা এবং হয়রারিন বিরুদ্ধে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় দেশের শীর্ষ আইনজীবী নেতৃবৃন্দ হুশিয়ারি উচ্চারন করে বলেছেন, আইনজীবীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা হবে । ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর  গোয়েন্দা নজরদারি এবং হয়রানির তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেছেন,  অবিলম্বে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর থেকে সকল ধরনের গোয়েন্দা নজরদারি তুলে নিতে হবে এবং হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচী প্রদান করা হবে।

বাংলাদেশর সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বাসার সামনে  এবং গাড়ির পেছনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন  অনুসরন করছেন।   ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে তার পেশাগত  দায়িত্ব পালনে  হয়রানি এবং বাঁধার প্রতিবাদে সুপ্রীম কোর্টের  আইনজীবীবৃন্দ আজ সুপ্রীম কোর্ট বারের  দণি হলে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন    দেশের প্রবীণ আইনজীবী  বিচারপতি  টিএইচ খান।
সভায় বক্তব্য রাখেন খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদূদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের  ভাইস প্রেসিডেন্ট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি  সিনিয়র অ্যাডভোকেট যাইনুল আবেদীন,  সাবেক এটর্নি জেনারেল এ জে মো¤ম্মদ আলী, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবু হোসেন এমপি, অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান, গোলাম মো: চৌধুরী আলাল, ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির প্রমুখ। প্রতিবাদ সমাবেশে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত হন।


টিএইচ খান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আপনারা গোয়েবলসের নাম শুনেছেন কিন্তু হ্যান্সিয়ানির নাম শোনেননাই। হিটলারের সময় আইনমন্ত্রী ছিলেন হ্যান্সিয়ানি। সে সময়ও আইনজীবীদের এরকম নজরদারি করা হত। পরে ওই আইনমন্ত্রীর ফাঁসি হয়েছিল। এখন যা কিছু হয়, তাই বলা হয় যে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের জন্য করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, আজ আমরা যে উদ্দেশ্যে এখানে সমেবেত হয়েছি তা সত্যিই হৃদয় বিদারক। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক একজন বিজ্ঞ আইনজীবী।  তিনি তার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করছেন। কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারবে না। তার কোনো ক্রিটিক নেই।  আজ তার পেছনে সরকারের  গোয়েন্দা নজরদারি ও তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।’

তিনি   বলেন, ‘আমরা কথায় কথায় বলি পবিত্র সংবিধান, পবিত্র সংবিধান।  আপনারা সংবিধান খুললে দেখতে পাবেন তিনি (ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক) সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন। আর সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ মতে, একজন আসামীরও অধিকার আছে তিনি কাকে আইনজীবী হিসাবে পছন্দ করবেন। সাংবিধানিক এই দায়িত্ব পালনকালে তার পিছু নেয়া হচ্ছে- এমন কথা শুনতে অত্যন্ত কষ্ঠ লাগে। এটি করা হচ্ছে তাকে ট্রাইব্যুনাল থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘দেশে যা কিছুই ঘটে সরকার বলে যে, এটি যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে করা হচ্ছে। আপনারা জানেন দেশে ঠাডা পইরা (বজ্রপাতে) মানুষ মরতেছে।  বলা হবে যে, এটি  যুদ্ধাপরাধ বিচারকে বানচাল করার জন্যই হচ্ছে। এখন বন্যার সময় নয়। কিন্তু অকাল বন্যা হতে পারে। তখন সরকার বলবে যে, এটিও বিচারকে বানচাল করার জন্য করা হয়েছে। এই ধরনের আর্গুমেন্ট হিটলারের সময় করা হতো।’


ব্যারিস্টার মওদূদ আহমেদ বলেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের অপরাধ তিনি তার  পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা বিচারের বিরুদ্ধে নই। ব্যারিস্টার রাজ্জাকও বিচারের বিরুদ্ধে নন। বিচারের বিরুদ্ধে হলে তিনি তো ট্রাইব্যুনালে যেতেননা। তিনি তো ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিচারকে সহায়তা করছেন। আমরা সবাই স্বচ্ছ বিচার চাই। তিনিও স্বচ্ছ বিচারের জন্য কাজ করছেন। সেটাই তো সবার উদ্দেশ্য। কিন্তু আজ তাকে হয়রানি করে মূলত আইনের শাসন, আইনজীবীদের মৌলিক অধিকারের ওপর আঘাত করা হয়েছে। একজনকে তার পেশায় বাঁধা দেয়ার মত হীন কাজ আর কিছু  হতে পারেনা।  এ  ধরনের হয়রানি বন্ধ করা  হোক। তা না হলে সবাই মিলে প্রতিহত করতে হবে।

ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আইনের শাসন না থাকলে গনতন্ত্র  এবং মানবসভ্যতা থাকতে পারেনা। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মত লোকের পেছনে গোয়েন্দা নজরদারি করা আইনের শাসন এবং সংবিধানের লঙ্ঘন।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, অপরাধ সমর্থন করা কোন আনজীবীর দায়িত্ব নয়। কোন আসামীকে আদালতেক হাজির করা হলে  সে দোষী না নির্দোষ সেটা প্রমানে কোর্টকে সহায়তা করা আইনজীবীর দায়িত্ব।  শুধু ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক নয় বাংলাদেশের যেকোন আইনজীবীর ওপর তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোন ধরনের বাঁধা আসলে আমরা তা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করব। আইনজীবীকে তার পেশাগত কাজে বাঁধা দেয়া, হয়রানির পরিমনা অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে জাতীয়তাবাদীদের  বিজয়ের পর সরকার এখন বার কাউন্সিলকে পঙ্গু করার জন্য একটি আইন করছে। আমরা ৪৬ হাজার আইনজীবীর প্রতিনিধি।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক কোন অপরাধকে সমর্থন করতে ট্রাইব্যুনালে যাননি।  ট্রাইব্যুনালে  যাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে তাদের আইনগত সহায়তা করছেন এবং তিনি কোর্টকে সহায়তা করছেন। এর আগে আসামী পক্ষের আরেক  গুরুত্বপূণূ আইনজীবী তাজুল ইসলামের চেম্বারে সশস্ত্র   গোয়েন্দারা হানা দিয়েছে। সরকারের মনে রাখা উচিত কালো পোশাকধারীরা রাস্তায় নামলে তাদের  পতন অনিবার্য ।

ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা  বলেন, এটর্নি জেনারেল শুধু সরকারের এটর্নি জেনারেল নন। তিনি সারা বাংলাদেশের   এটর্নি জেনারেল। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে হয়রানির বিষয় জানার সাথে সাথে তার উচিত ছিল এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করা। প্রয়োজনে কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষন করে তিনি এ বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করতে পারতেন। এটি তার দায়িত্ব ছিল। তিনি তা না করায়   আইনজীবী সমাজ ুব্ধ এবং ব্যথিত। এ অবস্থা  উত্তোরনের জন্য আমি তাকে পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, যারা আইনের শাসন মানেনা, গণতন্ত্র মানেনা তারাই কেবল এ কাজ করতে পারে।

ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাককে হয়রানির প্রতিবাদ করে তিনি বলেন এ আঘাত সমস্ত আইনজীবীদের ওপর আঘাত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার ছিল। যদি এ হয়রানি বন্ধ না করা হয় প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিতে হবে।

অ্যাডভোকেট যাইনুল আবেদন বলেন, গনতান্ত্রিক নামের এ সরকারের আমলে কেউ তার  পেশাগত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছেননা। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মত একজন আইনজীবীকে গোয়েন্দা  নজরদারিতে রাখা এবং হয়রানি করা  অত্যন্ত লজ্জার কথা। তিনি বাংলাদেশের একজন সিনিয়র আইনজীবী। অনেক আগে তাকে   সিনিয়র আইনজীবী করা হয়েছে। তিনি ডাবল স্টারধারী । আপীল বিভাগ  এ মর্যাদা দিয়ে থাকে।
যাইনুল আবেদীন বলেন, সরকার যদি অবিলম্বে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর থেকে হয়রানি এবং গোয়েন্দা নজরদারি তুলে না নেয় তাহলে ব্যাপক কর্মসূচী দেয়া হবে।

মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি বলেন, ওয়ান ইলেভেন সরকারের সাথে এ সরকারের পার্থক্য কোথায়? তখনো  মানুষের পেছনে এভাবে গোয়েন্দা লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমার পেছনে সব সময় কিছু হোন্ডা ঘুরত। বর্তমান সরকার ওয়ান ইলেভেনের প্রাডাক্ট। তাই দুই সরকারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যখন কোন বিচার হয় তখন যদি তার আইনজীবী নিয়োগের সামর্থ্য না থাকে তাহলে রাষ্ট্র  তার পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয়। আইনজীবী ছাড়া কারো বিচার হয়না। সংবিধানে এ অধিকার দিয়েছে নাগরিকদের। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  আসামীর পক্ষে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন। আইনজীবীদের নিয়ে ছিনিমিন খেলবেননা। এ হয়রানি বন্ধ না হলে বিচার প্রশাসন বন্ধ হয়ে যাবে। কারন ব্যারিস্টার রাজ্জাক কোন একজন মাত্র ব্যক্তি নন।

আফজাল এইচ খান বলেন, আজ অত্যন্ত একটি পরিতাপের বিষয় নিয়ে এখানে সমবেত হয়েছি। জনগন আজ পীড়িত। কিছু হলেই বলা হয় যুদ্ধাপরাধের বিচার বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য এটি করা হচ্ছে।
ফাহিমা নাসরিন মুন্নি বলেন, পুরো দেশ আজ কারাগার, ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের মত দেশে আজ গুম সংস্কৃতি চালু হয়েছে।  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর হেনস্থার আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
গোলাম মো: চৌধুরী আলাল বলেন,  বাংলাদেশ আজ পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আইনজীবীদের পেশা পালনে বাঁধা এবং মৌলিক অধিকার হরনের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তার সর্বশেষ নজীর  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর গোয়েন্দা নজরদারির ঘটনা।

প্রতিবাদ সভাপর শুরুতে ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে  তিনি ১০ জন আসামীর পক্ষে  প্রধান আইনজীবী। তিনি তার মেধা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ এ পর্যায়ে  উপনীত হয়েছেন। আজ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বাসার সামনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন অবস্থান করছেন। তার গাড়ির পেছনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন  অনুসরন করছেন।  তিনি যাতে তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারেন সেজন্য তাকে মানসিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১২

‘গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের প্রমান প্রধানমন্ত্রীর কাছেই আছে’ প্রতিবেদন বিষয়ে জেরা ///প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে প্রশ্নে আপত্তি ট্রাইব্যুনালের


মেহেদী হাসান, ১১/১০/২০১২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে  বিরোধী দলীয়  নেতা থাকাকালে ১৯৯২ সালের ১৬ এপ্রিল গণআদালতের ন্যায্যতা এবং  অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের প্রমান তুলে ধরে একটি ভাষন দেন। ভাষনে তিনি বলেন, গোলাম আযম যে একজন হত্যাকারী ছিলেন তার একটি প্রমান আমি এখানে এনেছি। কুমিল্লার হোমনা থানার রামকৃষ্ণপুর  গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সিরু মিয়া দারোগা ও তার কিশোর পুত্র আনোয়ার কামালকে গোলাম আযমের লিখিত নির্দেশে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৭  অক্টোরব সিরু মিয়া এবং তার কিশোর পুত্র আনোয়ার কামাল ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার সময় অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাসহ রাজাকারদের  হাতে ধরা পড়েন। সিরু মিয়া মুক্তিযুদ্ধে অনেক দু:সাহসিক কাজ করেছেন। তিনি আমাদের প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী বেগম তাজউদ্দিনকে সপরিবারে কুমিল্লা সীমান্ত থেকে পার করে দিয়েছিলেন। সেই সিরু মিয়াকেও গোলাম আযমের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিল। তার নজির  ও প্রমান (কাগজ দেখিয়ে) এই কাগজে আছে। আপনি (মাননীয় স্পিকার) চাইলে এই কাগজও আপনার কাছে দিতে পারি।

পাক্ষিক ‘একপক্ষ’ নামে একটি ম্যাগাজিনে  বাংলা ১৪১৭ (ইংরেজি ২০১০ ) সংখ্যায় ‘গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের প্রমান প্রধানমন্ত্রীর কাছেই  আছে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  সংসদে   প্রধানমন্ত্রী  অভিযোগ এবং প্রমান উত্থাপন   সংক্রান্ত উপরোক্ত বিষয়টি বিস্তারিত  তুলে ধরা হয়।

একপক্ষ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত  উপরোক্ত প্রতিবেদনটি  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয়েছে ।  এ বিষয়ে আজ   তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরার সময় মিজানুল ইসলাম প্রশ্ন করেন,  প্রতিবেদনে বর্নিত  প্রধানমন্ত্রীর  কাছ থেকে ওই প্রমানপত্রটি   উদ্ধারের জন্য   যোগাযোগ করেছিলেন কি-না।  প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে করা এ পশ্নে  আপত্তি  করেন ট্রাইব্যুনাল। শেষে ট্রাইব্যুনালের পরামর্শে মিজানুল ইসলাম  প্রশ্নটি অন্যভাবে করেন।  এরপর এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন,  তিনি ওই প্রমানপত্রটি সংগ্রহ করেননি । এমনকি অধ্যাপক গোলাম আযম যে পেয়ারা মিয়ার কাছে চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন বলে বলা হয় তার বাড়িতে তল্লাসী করেনি এবং তার ছেলের সাথেও যোগাযোগ করেননি বলেন জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর ঈদের  দিন রাতে  ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া জেলখানা থেকে  সিরু মিয়া, তার কিশোর পুত্র আনোয়ার কামালসহ ৩৮ জন বন্দী মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এ হত্যঅ  বিষয়ে অধ্যাপক গোলাম আযমের  বিরুদ্ধে অভিযোগ  আনা হয়েছে। গতকাল এ বিষয়ে জেরা করা হয় তদন্ত কর্মকর্তাকে।



জেরা (সংক্ষিপ্ত) :
প্রশ্ন : ‘গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের প্রমান প্রধানমন্ত্রীর কাছেই  আছে’ শিরোনামে ‘একপক্ষ’ ম্যাগাজিনে  প্রকাশিত একটি   প্রতিবেদন আপনি দাখিল করেছেন।
উত্তর : হ্যা।

প্রশ্ন :  প্রতিবেদনে  গোলাম আযমের  বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের প্রমান যেখানে আছে বলা হয়েছে তা সংগ্রহের জন্য সেখানে যোগাযোগ করেছিলেন?
উত্তর : না। কারণ তদন্তের জন্য তা প্রয়োজন মনে হয়নি।
প্রশ্ন : ওই  প্রতিবেদনে  বর্নিত সিরু মিয়ার মুক্তির জন্য গোলাম আযমের যে চিঠির কথা বলা হয়েছে তা উদ্ধারের জন্য সচিবালয় বা কোন মন্ত্রণালয়ে  আপনি কোন পত্র পাঠিয়েছিলেন?

উত্তর : না।
প্রশ্ন : অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের লিখিত সিরু মিয়ার মুক্তি সংক্রান্ত চিঠিটি আপনি সিরু মিয়ার স্ত্রী শহীদ জননী আনোয়ারা বেগম আপনাকে প্রদান করেননি।
উত্তর :  না, তিনি  প্রদান করেননি।
প্রশ্ন : চিঠি উদ্ধারের জন্য আপনি পেয়ারা মিয়ার বাড়ি  তল্লাসী করেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : পেয়ারা মিয়া জীবিত?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তার ছেলে মেয়ে জীবিত আছে কেউ?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : বড় ছেলের নাম কি?
উত্তর :  সানাউল হক  চৌধুরী নামে এক ছেলের নাম আছে।
প্রশ্ন : তার সাথে যোগাযোগ করেছেন চিঠি উদ্ধারের জন্য?
উত্তর : না কারণ আমার ধারণা থাকলেও সে দেবেনা।
প্রশ্ন :  আনোয়ারা বেগম অধ্যাপক গোলাম আযমের কাছে গেছেন এ মর্মে আপনার তদন্তে কোন তথ্য নাই।
উত্তর : নাই।
প্রশ্ন : ১৯৭৫ সালে মার্চ মাসে আল হামরা প্রসাদে সৌদি বাদশার সাথে অধ্যাপক গোলাম আযম সাক্ষাৎ করেছেন এ মর্মে আপনার কাছে তথ্য আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এ তথ্য কোন ব্যক্তির কাছ থেকে পেয়েছেন না কোন ডকুমেন্ট আকারে পেয়েছেন?
উত্তর : ব্যক্তির কাছ থেকে।
প্রশ্ন : যার কাছ থেকে পেয়েছেন তিনিও সেদিন সৌদি বাদশার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : অধ্যাপক গোলাম আযম কবে দেশে আসলেন?
উত্তর : ১৯৭৮ সালের ১১ জুলাই  পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে লন্ডন থেকে ঢাকায় আসেন।
প্রশ্ন : দেশে আসার পরপর  গোলাম আযম  সাহেব তার পাসপোর্ট জমা দিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ফেরত পাবার জন্য আবেদন করেছিলেন।
উত্তর : আমার তদন্তে নাই। তবে ১৯৯৩ সালে তার নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ বেআইন ঘোষনা করে হাইকোর্টের প্রদত্ত রায় বহাল রাখেন আপীল বিভাগ।

প্রশ্ন :  তদন্তকালে অধ্যাপক গোলাম আযমের বক্তব্য জানার জন্য তার কাছে গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তার বক্তব্য জানার জন্য তাকে কোন চিঠি দিয়েছিলেন?


উত্তর : না।
প্রশ্ন : সিরু মিয়া এবং তার ছেলে আনোয়ার কামাল  ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া জেলখানায় আটক ছিলেন এ মর্মে কোন দালিলিক প্রমান আছে আপনার কাছে?
উত্তর : সরকারি রেকর্ড নেই। তবে জেলখানা থেকে আনোয়ার কামাল তার মায়ের কাছে যে চিঠি লিখেছেন তা আছে এবং এ মর্মে সাক্ষীও আছে।

প্রশ্ন : জেলখানা থেকে আত্মীয়দের কাছে চিঠি লিখতে হলে তা জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিখতে হয় তা জানা আছে?
উত্তর : ১৯৭১ সালে ওই জেলখানায় সেরকম কোন পরিস্থিতি ছিলনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ওই জেলখানার প্রধান কেউ  ছিলেন ?
উত্তর : থাকতে পারে।
প্রশ্ন : আনোয়ার কামাল কর্তৃক তার মায়ের কাছে যে চিঠি লেখার কথা জানিয়েছেন তা তা জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠানো হয়নি ঠিক কি-না?
উত্তর : জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠানো  নয় তবে সাক্ষী আনোয়ারা বেগমের ভাই ফজলুর রহমানের মাধ্যমে  তা আনোয়ারা বেগমের  হাতে আসে।
প্রশ্ন :  ১৯৭১ সালে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার  সাবডিভিশনাল পুলিশ অফিসর  (এসডিপিও)  কে ছিলেন?
উত্তর : ইসমাইল হোসেন সিএসপি।
প্রশ্ন : ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া  জেল সুপার কে ছিলেন সে বিষয়ে কোন  খোঁজ খবর নেননি?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে  ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া জেলখানায় কয়েদী/বন্দী সংক্রান্ত কোন নথিপত্র সংগ্রহ করেননি।
উত্তর : পাইনি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ২১ নভেম্বর ওই জেলখানায় কারারক্ষী হিসেবে কারা ছিল তাদের নামও সংগ্রহ করেননি।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে কারা বিভাগের প্রধানের কাছে কোন চিঠি লিখেছেন ?
উত্তর : না করন ওই সময় স্বাভাবিক অবস্থা ছিলনা।
প্রশ্ন : তদন্তকালে চিনু মিয়া নামে কারো অস্তিত্ব পেয়েছেন?
উত্তর : পেয়েছি।
প্রশ্ন : তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : না। কারণ খুঁজে পাইনি।
প্রশ্ন : তার ঠিকানা পেয়েছিলেন?
উত্তর : পেয়েছি।
প্রশ্ন : তার বাড়ি কোথায়?
উত্তর : এ মুহূর্তে  বলতে পারছিনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর শহীদ সিরু মিয়া, শহীদ আনোয়ার কামাল ছাড়া বাকী যে ৩৬ জনকে জেল থেকে বের করে  শহীদ  করা হয় তাদের কারো  খোঁজ পেয়েছেন?
উত্তর : শহীদ নজরুলসহ আরো কয়েকজনের খোঁজ পেয়েছি তবে এ মুহুর্তে তাদের নাম বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া শহর থেকে নিখোঁজ হয়েছেন এ মর্মে কোন তথ্য পেয়েছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া শহরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বা প্রখ্যাত যারা মুক্তিযোদ্ধা  আছেন তাদের  পরিচিত কেউ ১৯৭১ সালে নিখোঁজ হয়েছেন কি-না   সে বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন?

উত্তর : আমার ডায়েরিতে উল্লেখ নেই।




আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার  কার্যক্রম পরিচালনা করেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক।

তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী,  অ্যাডভোকেট শিশির মনির প্রমুখ।
চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম,  প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষে।

ডিফেন্স আইনজীবীদের হয়রানির প্রতিবাদে বার কাউন্সিলের হুঁশিয়ারি ///পেশাগত দায়িত্ব পালনে হয়রানি করা হলে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের  আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আাব্দুর রাজ্জাকের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি এবং  ডিফেন্স টিমের (আসামী পক্ষের আইনজীবী)  অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের চেম্বারে সশস্ত্র  গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানের প্রেক্ষিতে কড়া হুশিয়ারি উচ্চারন করা হয়েছে বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে।

সারা দেশের আইনজীবীদের অভিভাবক সংগঠন ‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিল’র পক্ষ থেকে  সতর্ক করে দিয়ে   বলা হযেছে  ‘আমরা সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলতে চাই, পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে একজন আইনজীবীর উপর আঘাত আসলে আমরা এটাকে সমগ্র আইনজীবীদের উপর আঘাত বলে ধরে নেবো এবং এর বিরুদ্ধে দেশের সকল আইনজীবীকে নিয়ে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হবো।’

গত মঙ্গলবার অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের চেম্বারে সিভিল ড্রেসে ১০/১২ জন গোয়েন্দা পুলিশ  হানা দেয়।
এর প্রতিবাদে আজ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ভবন অডিটরিয়ামে। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান ও বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন লিখিত বক্তব্য পেশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ডিফেন্স টিমের আইনজীবীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে সরকার। তাদের স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। গোয়েন্দা নজরদারির নামে তাদের চেম্বারে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা  করা হয়েছে। বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, ‘আমরা দেশে আইনের শাসন চাই। যারা দোষী তাদের সাজা হোক। কিন্তু যদি বিচারের নামে প্রহসন হয় এবং আইনজীবীদের যদি পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে হয়রানি করা হয়, তবে আমরাও বাধ্য হবো রাস্তায় নামতে। কালো কোর্ট (আইনজীবীরা) যদি একবার রাস্তায় নামে, অতীতের ইতিহাস দেখুন সে সরকার বেশি দিন টিকেনা।’

সংবাদ সম্মেলনে একই অভিযোগ করে ডিফেন্স টিমের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘গত  ৮/১০ দিন ধরে ২/৪ জন গোয়েন্দা আমাকে নজরদারি করছে। তারা আমার বাসায় গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এমনকি আমার সাথে একজন গোয়েন্দা কথাও বলেছেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, যাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে না পারি সেজন্যই এমনটি করা হচ্ছে। একজন আইনজীবীকে যদি হয়রানি করা হয় তবে কিভাবে তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, একজন আইনজীবীকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে হয়রানি করা আদালত অবমাননার শামিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিষয়টি ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আরো বলেন, বর্তমান সরকার বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করতে চাচ্ছে। আমরা বার বার এর প্রতিবাদ করেছি। অতীতেও আমরা দেখেছি, যারাই বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছে তাদের করুণ পরিণতি হয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় এসে নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালত সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এই কারণে দেশবাসীর মাঝে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি দেশ ও জাতির জন্য দুঃখজনক।

তিনি বলেন, ‘আমরা আইনজীবী। আমরা কোনো অপরাধকে সমর্থন করিনা। আমাদের দায়িত্ব, যখন একজন আসামীকে বিচারের আওতায় আনা হয়, তখন সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তার প্রকৃত অবস্থানকে তুলে ধরা। এমনকি ফাঁসির যে আসামী থাকে, যাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, তাদের যদি সামর্থ না থাকে তখন সরকার পক্ষ থেকে তাদের আইনি সহায়তা দেয়া হয় যাতে আদালত ন্যায় বিচার করতে পারে। তাই আজকে আমরা চাই, বাংলাদেশে আইনের শাসন কায়েম হোক। এর বিপরীত প্রচেষ্টা যদি হয় তবে দেশের আইনজীবীরা তাদের পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসাবে রুখে দাঁড়াবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিগত কয়েক দিন ধরে দেখছি, সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালে বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স আইনজীবীদের বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করছে। শুধু তাই নয়, কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ডিফেন্স টিমের অন্যতম একজন আইনজীবীর (অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম) চেম্বারে সাদা পোশাকে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে তারা। আমরা মনে করি, এমন আচরণ আমাদের পেশাগত দায়িত্বের প্রতি সরকারের প্রতিবন্ধকতা। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আইনের শাসন চাই। যারা দোষী তাদের সাজা হোক। কিন্তু যদি বিচারের নামে প্রহসন হয় এবং আইনজীবীদেরকে যদি পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে হয়রানি করা হয় তবে আমরাও বাধ্য হবো রাস্তায় নামতে। কালো কোর্ট যদি একবার রাস্তায় নামে, অতীতের ইতিহাস দেখুন সে সরকার বেশি দিন টিকেনা। তিনি বলেন, দেশে এমন কোনো ঘটনা ঘটতে দেবো না যাতে দেশে অশুভ একটি শক্তির আবির্ভাব হয় এবং দেশে অশান্তির সৃষ্টি হয়।’

লিখিত বক্তব্যে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির লোকেরা সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনিভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে আইনজীবীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। সারা দেশের আইনজীবীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং সব আইনজীবীর পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স টিমের অন্যতম প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের চেম্বারে সশস্ত্র ব্যক্তিরা ডিবি পুলিশের পরিচয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করে তল্লাশির নামে আইনজীবী, কায়েন্ট এবং কর্মচারীদের হয়রানি করছে। এটি একটি ভয়াবহ ঘটনা। কোনো সভ্য দেশে আইনজীবীদের চেম্বারে এইভাবে হয়রানিমূলক অভিযান চালানো হলে সংবিধান এবং আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত হতে বাধ্য। আইনজীবীগণ ‘অফিসার্স অব দ্য কোর্ট’ হিসাবে বিবেচিত এবং তাদের চেম্বারসহ যাবতীয় পেশাগত কার্যক্রম ‘চৎরারষবমবফ’ বলে বিবেচিত। পুলিশ আইনজীবীর চেম্বারে অভিযান চালিয়ে আইনজীবীদের পেশাগত অধিকারকে পদদলিত করেছে। এরূপ অবস্থায় কোনো আইনজীবীর পক্ষে বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য স্বাধীন এবং ভয়-ভীতিহীনভাবে কাজ করা সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, সব মানুষেরই আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার রয়েছে এবং সেটি সংবিধান স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। আইনজীবীকে হয়রানি করার অর্থ সংবিধান স্বীকৃত এই মৌলিক অধিকারকে পদদলিত করা । অতীতের কোনো সরকার এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড করতে সাহসী না হলেও বর্তমান সরকার অবলীলাক্রমে তা করতে উদ্যত হয়েছে।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাককে গোয়েন্দা নজরদারির নামে হয়রানি করা হচ্ছে এবং তিনি যাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে না পারেন সে ধরনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলতে চাই, পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে একজন আইনজীবীর উপর আঘাত আসলে আমরা এটাকে সমগ্র আইনজীবীদের উপর আঘাত বলে ধরে নেবো এবং এর বিরুদ্ধে দেশের সকল আইনজীবীকে নিয়ে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হবো।’

বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১২

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১২ তম সাক্ষী ///মাওলানা সাঈদী ১৯৬৯ থেকে যশোরে আমাদের বাসার পাশে থাকতেন



মেহেদী  হাসান,10/10/2012
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে  আজ বুধবার ১২ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।  যশোরের এ সাক্ষীর নাম হাফিজুল হক। সাক্ষী বলেন, আমরা ১৯৬৬ সাল থেকে যশোরের নিউটাউনে থাকতাম। আমাদের বাসার পাশে একটি বাসায় ১৯৬৯ সাল থেকে ভাড়া থাকতেন মাওলানা  সাঈদী। এরপর ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের যুদ্ধ শুরু হলে মাওলানা সাঈদীসহ আমরা পাশাপাশি চারটি পরিবার একত্র হয়ে  ৪ এপ্রিল  গ্রামের দিকে চলে যাই।  এর কিছুদিন পর মাওলানা সাঈদী  যশোরের মহীরনে তার এক পীর সাহেবের বাড়িতে যান।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যে অভিযোগ তাতে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের  ৮ মে পারেরহাটে যখন পাকিস্তান আর্মি আসে তখন  অন্যান্য রাজাকারদের সাথে মাওলানা সাঈদী তাদেরকে স্বাগত জানান পাড়েরহাট রিক্সাস্ট্যান্ডে। এরপর ওই দিনই পাড়েরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তান আর্মি,  মাওলানা সাঈদীসহ অন্যান্য রাজাকার এবং শান্তিকমিটির নেতৃবৃন্দ লুটপাট, হত্যা, অগ্নিসংযোগে অংশ নেন। এছাড়া  ৮ মে পাড়েরহাটে পাকিস্তান আর্মি আসার আগে সেখানে শান্তি কমিটি এবং রাজাকার বাহিনী  গঠনের বিষয়ে মাওলানা সাঈদী ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন সাক্ষী এ  মর্মে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যদিকে   গতকালের সাক্ষীসহ আরো কয়েকজন যশোরের সাক্ষী মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, মাওলানা সাঈদী যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই যশোরে থাকতেন স্বপরিবারে এবং    এপ্রিল, মে মাস থেকে শুরু করে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত যশোরেই  ছিলেন।

জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ হাফিজুল হক । বয়স-৫২ বছর । গ্রাম- খড়কী, বামনপাড়া রোড, থানা-কোতয়ালী, জেলা-যশোর। আমি মুদি মালের ব্যবসা করি। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল ১১ বছর এবং আমি ৫ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। আমার পিতা মাস্টার  মোঃ শহিদুল ইসলাম ১৯৬৬ সালে যশোর নিউ টাউনে এ ব্লকের ১৮৪ নম্বর বাসা একজন এ্যালটির কাছ থেকে ক্রয় করেন। তারপর আমরা ঐ বাসায় স্বপরিবারে বসবাস করতে থাকি। ১৯৬৮ সালে আমার বাসার পশ্চিম পাশে ১৮৫ নম্বর বাসা মৃত হযরত আলী সাহেব এক এলোটির কাছ থেকে ক্রয় করেন। তারপর আমরা দুই পরিবার পাশাপাশি বসবাস করতে থাকি। ১৯৬৯ সালে আমার বাসার পূর্বদিকে প্রিন্সিপাল আনোয়ার সাহেবের ১৮৩ নম্বর বাসায় মাওলানা আবুল খায়ের সাহেব ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতে থাকেন।  ঐ একই সময়ে প্রফেসর আনোয়ার সাহেবের ১৮২ নম্বর বাসায় মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতে থাকেন। আমার পিতা মাস্টার  মোঃ শহিদুল ইসলাম শেখহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মরহুম হযরত আলী মিয়া যশোর এস.পি অফিসের হেড কার্ক ছিলেন। মাওঃ



আবুল খায়ের সাহেব আমার পিতার স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। মাওঃ দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব বৃহত্তর যশোরের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করতেন।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ  ভয়াল রাতে  যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে যশোর শহরের উপর গোলাগুলি চলতে থাকে।  পরবর্তী ২/৩ দিন ও একই ভাবে গোলাগুলি চলতে থাকে। এমতাবস্থায় শহরের লোকজন গ্রামের দিকে আশ্রয় নিতে থাকে। আমার পিতা, হযরত আলী চাচা, আবুল খায়ের চাচা এবং সাঈদী চাচা সম্মিলিতভাবে এক বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত নেন অন্যত্র চলে যাওয়ার।
পরবর্তী ৪ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে শেখহাটি চলে যাই। ওখানে আমার পিতার স্কুলের তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মরহুম জয়নুল আবেদীন সাহেবের বাসায় রাত্রি যাপন করি। পরের দিন সকালে চাচা আবুল খায়ের সাহেবের মামার বাড়িতে ধান কাটাঘাটা নামক স্থানে চলে যাই। ওখানে আমরা ৭/৮ দিন থাকি। অনেকগুলি পরিবার এক জায়গায় থাকায় আবার ৪ জন মুরব্বিরা মিলে  সিদ্ধান্ত  নেন অন্যত্র চলে যাওয়ার। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব বলেন যে, তিনি বাঘার পাড়ায় মহিরণের পীর সাহেবের বাড়ি যাবেন। আমার পিতা এবং হয়রত আলী সাহেব একত্রে ইন্ডিয়া চলে যাবেন। পরবর্তী দিন সকালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব মহিরনের উদ্দেশ্যে চলে যান। তারপর হযরত আলী এবং আমরা ভারতের উদ্দেশ্যে চলে যাই এবং মাওলানা আবুল খায়ের সাহেব ঐ বাড়িতেই থেকে যান।

জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।