সোমবার, ২২ অক্টোবর, ২০১২

তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচারনের অভিযোগে শোকজ জারি



মেহেদী হাসান
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ এ আসামী পক্ষের অন্যতম অইনজীবী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচরনের অভিযোগে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে আজ। অসদাচরন এবং পেশা বিরোধী কাজের অভিযোগে কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবেনা সে মর্মে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জবাবদানের জন্য নির্দেশ  দিয়েছেন কোর্ট।

আজ সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে তাজুল ইসলাম গতকালের ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সাক্ষী মিছবাহুর রহমানের বিরুদ্ধে  পদক্ষেপ গ্রহনের আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে  পনুরায় পদক্ষেপ গ্রহন করবেননা  বলে জানান। তাজুল ইসলাম তখন বলেন, তাহলে তার পক্ষে আর কোর্টে থাকা সম্ভব নয়। ট্রাইব্যুাল তাকে কোর্টরুম ত্যাগ করতে বারন করা সত্ত্বেও তিনি কোর্টরুম ছেড়ে চলে আসায় তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হল।


আজ সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে আসামী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির গতকাল সোমবারের ঘটনার  উল্লেখ করে বলেন, এভাবে সাক্ষী কর্তৃক আমাদের একজন আইনজীবীকে শিবিরের ক্যাডার আখ্যায়িত করাটা আমাদের পেশার জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ। এর একটি প্রতিকার হওয়া উচিত।

এরপর   ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে নির্দেশ দেন  সাক্ষী মিছবাহুর রহমানকে জেরা করার জন্য। আধাঘন্টার মধ্যে জেরা শেষ করতে হবে বলে ট্রাইব্যুনাল জানান।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল  হক বলেন, আসামী পক্ষের যিনি জেরা করবেন তিনি ছাড়া এবং রাষ্ট্রপক্ষের যিনি সংশিষ্ট আইনজীবী তিনি ছাড়া অন্য কেউ কোন কথা বলতে পারবেননা। দাড়াতেও পারবেননা।

মিজানুল ইসলাম এসময় বলেন, আমরা আশা করেছিলাম গতকালের ঘটনা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এসময় মিজানুল ইসলাম আরো কিছু কথা বলায় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান  বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, মি, মিজানুল ইসলাম ইউ আর লুজিং  ইউর টাইম। প্লিজ স্টার্ট ক্রস ইক্সামিনেশন।

মিজানুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের নিবেদনও পেশ করতে পারবনা? এটাতো দু:খজনক।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সাক্ষীর বিরুদ্ধে আপনারা বলতে পারেন। কিন্তু তিনি তো এখানে আপনাদের অভিযোগের জবাব দেয়ার অবস্থায় নেই। কাজেই তার বিরুদ্ধে আমরা কিভাবে ব্যবস্থা নেব?
এসময়  সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গতকালের ঘটনার পর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান নির্দেশ দিয়েছিলেন গতকালই জেরা শেষ করতে   হবে। আপনার অনুরোধে আজ আবার আধাঘন্টা সময় দেয়া হয়েছে এবং সাক্ষীকে আনা হয়েছে।  এরপর এবং ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান যা বলেছেন  তারপরতো আর এ বিষয়ে কোন কথা থাকতে পারেনা।
এরপরও মিজানুল ইসলাম তাজুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে  যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত রাখেন। তখন পৌনে এগারটা  বাজে। তার জন্য বরাদ্দ  আধা ঘন্টা সময় থেকে ১০ মিনিট পার হয়ে গেছে।  বিচারপতি নিজামুল ইসলাম বলেন, মি. মিজানুল ইসলাম আমরা ১১টা ১০ মিনিটে জেরা বন্ধ করে দেব। আপনি ট্রাইব্যুনালের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। দয়া করে শুরু করেন।

এসময় তাজুল ইসলাম দাড়িয়ে বলেন, সাক্ষী গতকাল তাকে  ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করে যে কথা বলেছেন তার প্রতিকার করতে হবে। আমরা এ কোর্টের অফিসার। আমাদের সুরক্ষা প্রদান করা  কোর্টের দায়িত্ব। এভাবে যদি সাক্ষী যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন একজন আইনজীবীকে কোর্টে এসে এবং তার যদি কোন প্রতিকার না হয় তাহলে মান সম্মান নিয়ে একজন আইনজীবী হিসেবে আমার পক্ষে এ কোর্টে থাকা সম্ভব নয়। আমাকে কোর্ট ত্যাগ করে চলে যেতে হবে।
এসময়  বিচারপতি নিজামুল  হকট্রাইব্যুনালের বিধি পড়ে শোনান তাজুল  ইসলামকে। তিনি বলেন, আপনি আসামীর পক্ষে ওকালাতনামা দিয়েছেন। ওকালাতনামা অনুযায়ী আপনি এখানে  কোর্টে থাকতে  বাধ্য। এভাবে চলে যাওয়া মিসকনডাক্ট (অসদাচরন) এবং আপনার পেশার বিরোধী কাজ। আপনি ভাল করে আইন এবং রুলস পড়েন। 
তাজুল ইসলাম বলেন, আমি  খুব ভাল করে পড়েছি। এবং পড়েই বলছি  আমার পক্ষে এখানে থাকা সম্ভব নয়।
 ট্রাইব্যুনাল বলেন আমি নির্দেশ দিচ্ছি তাজুল সাহেব আপনি বসেন। টেক ইউর সিট প্লিজ।
কিন্তু তাজুল ইসলাম এ নিদের্শ অমান্য করে কোর্ট রুম  থেকে বের হয়ে যান।
 তিনি  দরজা পর্যন্ত পৌছামাত্র বিচারপতি নিজামুল হক কোর্ট অফিসারকে বলেন, টেক ডাউন । এরপর তিনি আদেশ লেখার জন্য ডিকটেট করেন।
আদেশ :
এটা প্রতীয়মান যে, জনাব তাজুল ইসলামকে সবসময়  ুব্ধ মনে হয়েছে। গতকালের   বিতর্কের সময় আমরা বারবার তাজুল  সাহেবকে বলেছি, তাজুল সাহেব আপনি দাড়াবেননা। বসেন। কিন্তু তিনি প্রতি ৩.৪ মিনিট পরপর দাড়িয়ে যান। এটা  একটা সমস্যা তৈরি করে। এর এক পর্যায়ে সাক্ষী আইনজীবীকে লক্ষ্য করে কিছু মন্তব্য করেন যা  তাজুল সাহেবকে আহত করেছে। 

আমরা মনে করি পুরো বিষয়টার জন্য তাজুল ইসলাম দায়ী। এমনকি তাকে বসতে বলার আদেশ দেয়ার পরও  বার বার তিনি দাড়াচ্ছিলেন। গতকাল এবং আজো তিনি বেপরোয়া ব্যবহার করেছেন কোর্টের সাথে। তিনি দাবি করেছেন সাক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তিনি কোর্টে থাকবেননা। আমরা তাকে আদেশ দিলাম বসার জন্য। কিন্তু তিনি বেপরোয়াভাবে কোর্ট রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। এটা একটা অসদাচারন  এবং একজন আইনজীবী হিসেবে পেশা বিরোধী কাজ।
তার বিরুদ্ধে কেন অসদাচরন এবং পেশা বিরোধী আচরনের জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবেনা সে মর্মে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেয়া হল। জবাব পাবার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা  হবে।
আদেশে কিছু  শব্দ পরিবর্তন হতে পারে বলেন তিনি।

আদেশ পাশের পর অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের সামনে অপক্ষেরত সাংবাদিকদের বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক, অনকাঙ্খিত। সাক্ষীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে  শুধুমাত্র আইনজীবীর বিরুদ্ধে  এ আদেশ দেয়া ঠিক হয়নি বলে আমি  মনে করি।



মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর  মামলায় গতকাল সোমবার সাক্ষী মিছবাহুর রহমান, আসামীপক্ষ এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে তীব্র হট্টগোল হয়  হট্টগোলের । জেরা নিয়ে এ হট্টগোল বাঁধে। এসম  সাক্ষী মিছবাহুর রহমান তাজুল ইসলামকে বলেন,  তিনি (তাজুল ইসলাম)  আইনজীবী বেশে শিবিরের ক্যাডার হিসেবে এখানে এসেছেন। তাজুল ইসলামও তাকে বেয়াদব বলেন।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন