শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

গোলাম আযমের ছেলে আব্দুলহিল আমান আযমী’র জবানবন্দী ও জেরা

সোমবার ১২ নভেম্বর ২০১২
আমার নাম আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, আমার বয়স- ৫৩ বৎসর।
আমার ঠিকারা ১১৯/২ এলিফ্যান্ট লেন (কাজী অফিস লেন) বগ মগবাজার, ঢাকা- ১২১৭। আমি এই মামলায় সাক্ষী হিসাবে মূলত: ৪টি বিষয়ের উপর আলোকপাত করব। প্রথমতঃ আমার দীর্ঘ প্রায় ৩০ বৎসরে সামরিক বাহিনীর চাকুরীর অভিজ্ঞতার আলোকে সামরিক শাসন ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার এই উভয় সময়ে সামরিক, বেসামরিক সম্পর্ক কমান্ডস স্ট্রাকচার, কমান্ড এ্যান্ড কন্ট্রোল, কমান্ড স্ট্যাটাস ইত্যাদি বিষয়ে উদাহরন সহ বিস্তারিত ব্যাখা দিব। দ্বিতীয়তঃ আমি অধ্যাপক গোলাম আযমের জীবন ও রাজনীতি এর বিস্তারিত আলোকপাত করব। তৃতীয়তঃ বাংলাদেশের ভূকৌশলগত অবস্থানের আলোকে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক, এই অঞ্চলের ভূ- রাজনীতি, আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিষয় সমূহ, ভারতের সাথে প্রতেবেশী অন্যান্য দেশের সম্পর্ক এবং এর আলোকে ভারত বিভাগ, বিভাগ উত্তর পাক-ভারত রাজনীতি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি এবং সবশেষে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ-ভারত বিশেষ সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্লেষন করব। সবশেষে আমি কিছু দলিলপত্র উপস্থাপন করব।
এবার আমি আমার প্রথম প্রসঙ্গে আসি। আমি বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে কখনই যুক্ত ছিলাম না এবং এখনও নাই। শুধুমাত্র সুবিচারের উদ্দেশ্যে, ন্যায় বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে এবং সত্য প্রতিষ্ঠার তাড়নায় আমি আজকে সাক্ষ্য দিতে এসেছি। আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। আমার প্রায় ৩০ বৎসরের সেনাবাহিনীর চাকুরীতে সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও পেশাগত দক্ষতার মান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪০ বৎসরের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা অফিসারদের মধ্যেই সেনাবাহিনীর সকল অফিসার এবং সকল পদবীর সদস্যবৃন্দ আমাকে বিবেচনা করেছে, এখনও করে। আমার ৩০ বৎসরের চাকুরিতে শৃংখলা পরিপন্থী কাজের জন্য আমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কোন নজির নেই। বরঞ্চ একজন সুশৃঙ্খল অফিসার হিসাবে আমি সকলের নিকট অনুকরণীয় আদর্শ ছিলাম। ২০০৯ সালের জুন মাসে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার কোন অভিযোগ ছাড়া, কোন তদন্ত ছাড়া, কোন বিচার ছাড়া আমার এই ৩০ বৎসরের নিষ্কলুষ চাকুরী কোন কারন না দেখিয়ে আমাকে সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়। শুধু তাই নহে আমার পেনশন জনিত অর্থ সহ সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে আমাকে রঞ্চিত করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে অপরাধ ছাড়া, তদন্ত ছাড়া এবং বিচার ছাড়া বরখাস্ত করে এ ধরনের সকল সুবিধা বঞ্চিত করা নজির বিহীন। আমি একথা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে দাবি করে বলতে চাই যে, স্বাধীনতার ৪০ বৎসর পর আজ অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা একমাত্র কারন উনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়া, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা। এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যায় আমি পরে যাব। তবে প্রাসঙ্গিকভাবে একথাও আমি বলার প্রয়োজন মনে করি যে, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে এখন যেভাবে আমাকে বরখাস্ত করেছে ঠিক অনেকটা এরকমই ১৯৯৬-২০০১ সালে পর্যন্ত ক্ষমাসীন থাকার সময়ে বিনা কারনে সেই পাঁচ বৎসর মেজর পদ থেকে লে: কর্ণেল পদবীতে আমার পদোন্নতি আটকে রেখেছিল।
আমি ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বলতে চাই। আমি ঢাকা গভ: লেবরেটরী হাইস্কুলের ছাত্র ছিলাম। গভ: ল্যাবরেটরি স্কুল তখন সর্বজন স্বীকৃত দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় ছিল। ১৯৭৪ সালে স্কলারশীপ নিয়ে আমি এস,এস,সি পাশ করি এবং ঢাকা নটরডেম কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হই। একাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে ১৯৭৫ সালে আমি উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে গমন করি। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার শহরে অবস্থিত নর্থ ট্রাফোর্ড কলেজ অব ফারদার এডুকেশন থেকে ও লেভেল পাশ করি। এরপর আমি স্ট্যান্ডফোর্ড কলেজ অব টেকনোলজিতে এ লেভেল ভর্তি হই। এ লেভেল অধ্যায়নকালে ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে আমার বাবা বাংলাদেশে পত্যাবর্তন করার পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে ১৯৭৮ সালে অক্টোবর মাসে আমি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করি। ১৯৭৯ সালে আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন র‌্যাঙ্কে পঞ্চম বি, এম, এ লং কোর্সে যোগদানের জন্য নির্বাচিত হই। ১৯৮০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী আমি বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী, ভাটিয়ারী চট্টগ্রামে পঞ্চম বি, এম, এ লং কোর্সে জেন্টেলম্যান ক্যাডেট (জি, সি) যা প্রশিক্ষার্থী অফিসারদেরকে অভিহিত করা হয়, হিসাবে যোগদান করি। ১৯৮১ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট হিসাবে কমিশন লাভ করি। আমার এই দুই বৎসর প্রশিক্ষন কালীন কৃতি ক্যাডেটদের জন্য দেয় র‌্যাঙ্ক ল্যান্স কর্পোরাল ও কর্পোরাল পদে দায়িত্ব পালন করি। ফাইনাল টার্মে একাডেমিক ক্যাডেটদের জন্য প্রদত্ত সর্বশ্রেষ্ঠ এ্যাপয়েন্টমেন্ট, ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার (বি, এস, ইউ, ও) এর দায়িত্ব পালন করি। দুই বছরের ট্রেনিং শেষে কমিশন প্রাপ্তির সময় আমি বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমীর সর্বকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে পাঁচটি পুরস্কারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তিনটি পুরস্কার অর্জন করি। আমার অর্জিত পুরস্কার সমূহ হল ঃ
১। সর্ব বিষয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ জি.সি হিসাবে প্রেসিডেন্ট এ্যাওয়ার্ড যা সোর্ড অব অনার হিসাবে পরিচিত।
২। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৮১ সালে ডিগ্রী পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় কলা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক এবং
৩। রণকৌশল ও সামরিক যুদ্ধ বিদ্যায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের জন্য ট্যাকটিকস প্ল্যাক।
সেই সময়ে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমীর প্রধান ছিলেন তৎকালীন বিগ্রেডিয়ার জে: পরবর্তীতে মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত আব্দুস সালাম যিনি বর্তমান সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। ঐ সময় আরো ছিলেন তৎকালীন মেজর পরবর্তীতে মেজর পরবর্তী মে. জে. (অব:) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাস যিনি বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাই এবং বাংলাদেশের প্রথম ফোর স্টার জেনারেল সেনাপ্রধান জনাব মঈন উদ্দিন আহমেদ।
আমার কমিশন লাভ করার পর ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সপ্তম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিম্যান্ট জানুয়ারী ১৯৮২ তে যোগদান করি। ১৯৮২ সালের জানুয়ারী থেকে ১৯৮৪ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত আমার ইউনিটের সাথে ঢাকা সেনানিবাসে চাকুরীর পর জানুয়ারী ১৯৮৪ তে আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ এলাকায় সন্ত্রাস দমন অভিযানে মোতায়েন হই। আমার ঢাকায় দুই বৎসর চাকুরীকালীন ১৯৮২ সালের ২৪ শে মার্চ বাংলাদেশে সামরিক শাসন জারি হয়। সেই সময় হতে আমার ঢাকার পুরো অবস্থান আমি বাংলাদেশ টেলিভিশন, রেডিও বাংলাদেশ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত মার্শাল ল’ কন্ট্রোল রুম এর দায়িত্ব পালন সহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করি। উল্লেখ করা যেতে পারে এ দায়িত্ব পালনকালীন ১৯৮৩ সালে সম্ভবত ১৪ই ফেব্রুয়ারী সামরিক কর্তৃপক্ষ অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে। আমি তখন আমার কোম্পানীর সৈনিক গণসহ হেয়ার রোডে অবস্থিত (যেখানে এখন সুগন্ধা অবস্থিত) আর্মি ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করছিলাম। এ অবস্থায় বর্তমান সরকারের তিনজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে আটককৃত অবস্থায় আমার তত্ত্বাবধানে কয়েকদিনের জন্য রাখা হয়। যেহেতু ঐ তিনজন নেত্রী বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেহেতু আমি আমার জবানবন্দীতে তাদের নাম উল্লেক করতে চাই। তারা হলেন বাংলাদেশের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ, বাংলাদেশের বর্তমান কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বর্তমানে ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। ১৯৮৪ সালের জানুয়ারী থেকে ১৯৮৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালে আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন পর্যায়ে কমান্ডার এবং ব্রিগেড সদরে অপারেশন স্টাফ অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। এ সময়কালের মধ্যে ১৯৮৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মাইনীমুখ এলাকায় ১৯৮৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৮৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বান্দরবন এলাকায় সদর দফতর ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের জেনারেল স্টাফ অফিসার- এ (অপারেশন) এবং অক্টোবর ১৯৮৭ থেকে এপ্রিল ১৯৮৮ পর্যন্ত রাঙ্গামাটি জেলায় কাপ্তাই উপজেলার রাজস্থলী এলাকায় ২৩ ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানী অধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডে দায়িত্ব পালনকালীন আমার উপরস্ত কর্মকর্তা ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পরবর্তীতে মেজর জেনারেল (অবঃ) সুবিদ আলী ভুইয়া যিনি এখন আওয়ামী দলীয় সংসদ সদস্য। ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মাসে আমি ২৩ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে রাজস্থলি এলাকা হতে সৈয়দপুর সেনানিবাসে গমন করি। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, আমি সিলেটে অবস্থিত জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে স্কুল অব ইনফ্যানটরি এন্ড ট্যাকটিস এর কৌশল শাখায় সময়িক যুদ্ধবিদ্যার প্রশিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। এই সময়ের মধ্যে আমি ১৯৯০ সালে আমেরিকাতে উচ্চতর সাময়িক প্রশিক্ষণের জন্য যাই এবং এ্যায়ারবোর্ন বা প্যারাটুপার কোর্স এবং ইনফেন্টারী অফিসার এ্যাডভান্স কোর্স অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্পন্ন করি। ১৯৯২ সালে মিরপুর সেনানিবাসে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজে মেজর পদবীতে আমি স্টাফ কোর্স অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করি। এই স্টাফ কোেের্স কৃতিত্বের জন্য ১৯৯৩-৯৪ সালে আমাকে মালয়েশিয়ান আর্মস ফোর্সেস স্টাফ কলেজে দ্বিতীয়বারের মত স্টাফ কোর্সে প্রেরণ করা হয়। আমি সেই কোর্সে অত্যন্ত ভাল ফলাফল করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করি। উল্লেখ্য মীরপুর স্টাফ কলেজে ফলাফলে যারা প্রথম দিকে অবস্থান করে তাদেরকে বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রে দ্বিতীয়বারের মত স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করানোর জন্য পাঠানো হয়। এর উদ্দেশ্য হলো মীরপুর স্টাফ কলেজের প্রতিবছর বন্ধু রাষ্ট্র থেকে ৩০/৪০ জন বিভিন্ন বাহিনীর সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার গণ প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য আসেন। বাংলাদেশের যেসমস্ত অফিসারদেরকে স্টাফ কোর্স করাকালীন বিদেশী অফিসারদের প্রশিক্ষক হিসাবে উপযুক্ত মনে করা হয় কেবল মাত্র তাদেরকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বিতীয়বারের মত কোন বন্ধু রাষ্ট্রে দ্বিতীয় স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করার জন্য প্রেরণ করা হয়। মালয়েশিয়া থেকে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করে ১৯৯৫ সালে আমি পুনরায় জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি এন্ড ট্যাকটিসের গবেষণা ও উন্নয়ন শাখা (রিচার্স এন্ড ডেভলপমেন্ট শাখা) স্টাফ অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। ১৯৯৬ সালে জাতি সংঘ পর্যবেক্ষক হিসাবে আমি ইউনাইটেড ন্যাশন অবজার্ভার মিশনস ইন জর্জিয়াতে যোগদান করি। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে ১৭ টি দেশের ১২৭ জন অফিসারের মধ্য হতে আমাকে ডেপুটি চীপ অপারেশন অফিসার হিসাবে মিশন সদর দফতরে একজন সুইডিশ জেনারেলের অধীনে ন্যাস্ত করা হয়। জাতি সংঘ মিশনে দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন শেষে ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি দেশে ফিরি। সেই মাসেই পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা ৬ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপঅধিনায়ক হিসাবে আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৯৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আমি সেই দায়িত্ব পালন করি। এই সময় আমার পরিবার প্রাথমিক পর্যায়ে কাপ্তাই সেনানিবাসে অবস্থানরত থাকলেও পরবর্তীতে আমি তাদেরকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অবস্থিত সরকারি বাসবভনে স্থানান্তর করি। এ সময়ে আমার জীবনের একটি অত্যন্ত বেদনায়দক ঘটনা ঘটে। ১৯৯৮ সালের ১৪ই এপ্রিল যে দিন ১লা বৈশাখ আমার বাবা-মা আমার অসুস্থ স্ত্রী এবং অসুস্থ শিশু সন্তানকে দেখতে যান সেই সময় চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সদর ১৪ পদাধিক ডিভিশনে সদর দফতরে আমাকে ডেকে নিয়ে তৎকালীন সেনা প্রধান মরহুম জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রামের জি,ও,সি মেজর জেনারেল (অবঃ) ফজলুল কবিরকে নির্দেশ প্রদান করেছেন যে, আমার বাবা আমার সরকারি বাসভবনে থাকতে পারবেন না এবং আমাকে চাকুরী ভয় দেখিয়ে আমার বাবাকে আমার বাসা থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। আমার বাবা বাংলাদেশের একজন নাগরিক। সে সময় ওনার বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিল না। আমার বাবা সেনানিবাসে যেতে পারবেন না মর্মে আমাকে কখনো লিখিত বা মৌখিক কোন আদেশ কোন দিনই কোন কর্তৃপক্ষ দেন নাই। বরঞ্চ আমার বান্দরবানে চাকুরী করাকালীন ১৯৮৭ সালে আমার বাবা আমার সরকারি বাসভবনে বেড়াতে গেছেন। ১৯৯০ বা ১৯৯১ সালে আমার বাবা আমার জালালাবাদ সেনানিবাসের বাসভবনে বেড়াতে গেছেন। কখনো কোন অসুবিধা হয়নি। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না। ১৯৯৮ সালে আমার সাথে ঐ অমানবিক আচরণের একটাই কারণ দৃশ্যমান তা হলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল এবং আমার বাবার প্রতি বিদ্বেষের কারণে আমার সাথে এ রকম আচরণ করা হয়। শুধু তাই নয় সেনাবাহিনীর বদলীর আদেশ জারি, বদলীকৃত অফিসার কর্তৃক দায়িত্ব হস্তান্তর এবং বদলীকৃত অফিসার নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য সেনা আইন ও বিধি মোতাবেক প্রাপ্ত জয়েন্ট টাইম এবং জার্নিপিরিয়ড এ সকল কোন সময়ই আমাকে প্রদান করা হয় নাই। আমাকে একদিন সন্ধ্যায় সেই রাতের মধ্যেই দায়িত্ব হস্তান্তর করে পরদিন সকালে বিলাইছড়ি থেকে চলে আসতে বাধ্য করা হয়। আমার স্ত্রী ও সন্তান অসুস্থ থাকায় আমি কয়েকদিনের জন্য ছুটির আবেদন করি। কিন্তু আমার আবেদন অগ্রাহ্য করা হয়। আমি আমার কর্মস্থলে যোগদানের পর ব্যাকডেট দিয়ে সেনাসদর হতে আমার বদলীর আদেশ জারী করা হয়। উপরন্তু সেনাবাহিনীর সর্বস্তরের সদস্যদের সরকারি কর্তব্যে এক স্থান হতে অন্য স্থান গমনের জন্য লিখিত গমনাদেশ দেওয়ার বিধান রয়েছে। আমাকে লিখিত কোন গমনাদেশ না দিয়ে পরবর্তীতে লেখা মারফত ব্যাক ডেট দিয়ে গমনাদেশ আমার নতুন কর্মস্থলে প্রেরণ করা হয়। ১৯৯৮ সালের এপ্রিল হতে ২০০০ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত আমি রংপুর সেনানিবাসের আমার নতুন ....... ৩৬ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক এবং কিছু সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসাবে অত্যন্ত সফলতার সাথে আমার দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এ সময় মেজর হতে লেফনেন্ট কর্ণেল পদবীতে আমার প্রমোশন বন্ধ করে রেখে আমাকে টেমপোরিয়াল সুপারসিডেড করা হয়। এপ্রিল ২০০০ এ আমাকে ময়নসিংহ সেনানিবাস সদর দফতর ৭৭ পদাতিক ব্রিগেড ডি,এ,এ এন্ড কিউ, এন, জি, হিসাবে বদলী করা হয়। সেনাবাহিনীর প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মেজর থেকে লেঃ কর্নেলের পদন্নোতি সিলেকশন বোর্ড জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় সেই সিলেকশন বোর্ড মে ২০০১ এ সম্পন্ন করে এবং সেই বোর্ডেও আমাকে বিবেচনা করা হয়। উল্লেখ্য এ সময়ের মধ্যে আমার থেকে চার ব্যাচ জুনিয়র অফিসার পর্যন্ত লেঃ কর্ণেল পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিধি মোতাবেক আমাকে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী প্রমোশন বোর্ডে আমার নাম বিবেচনা করা হয় এবং বিনা বাক্য ব্যয়ে আগষ্ট ২০০২ মাসে আমি লেঃ কর্ণেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ঘাটাইল সেনানিবাসে ৩৮ ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। সেই সময়ে জি,ও,সি ছিলেন মেজর জেনারেল মঈন-ইউ- আহমেদ যিনি পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। আমার অধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব সফলতার সাথে সম্পন্ন করার পরে এপ্রিল ২০০৪ সালে আমাকে মীরপুর সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজের প্রশিক্ষক হিসাবে বদলী করা হয়। প্রশিক্ষক হিসাবে কর্মরত অবস্থায় ২০০৪ সালের শেষে সেই বৎসরের পদোন্নতি বোর্ডে আমার জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী এবং বিধি মোতাবেক যথানিয়মে আমি কর্ণেল পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হই এবং একই প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র ইনস্ট্রাকটর পদে দায়িত্ব গ্রহণ করি। সেনাবাহিনীতে পেশাগতভাবে দক্ষ অফিসার গণ সাধারণত কর্ণেল হওয়ার পর পরবর্তী বৎসরে প্রমোশন স্বাভাবিকভাবেই ব্রিগেডয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করে থাকেন। সেই হিসাবে আমি ২০০৫ সালে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করি এবং ঘাটাইল সেনানিবাসে ৩০৯ পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডারের দায়িত্ব গ্রহণ করি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের জুন মাস আমাকে বরখাস্ত করার পূর্ব পর্যন্ত আমি রংপুর অঞ্চলের অন্তর্গত দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার অন্তর্গত বীর উত্তম মাহবুব সেনানিবাসে ১৬ পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঐ সেনানিবাসের জ্যেষ্ঠতম অফিসার হিসাবে ষ্টেশন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করি। (চলবে)   
কিছু বানান ভুল, কিছু ভাষাগত ত্রুটি এবং কিছু তথ্যগত ভুল রয়েছে।
স্বা/ আব্দুল্লাহিল আমান আযমী
১২-১১-১২   
                       
                   

১৩-১১-২০১২ ইং পুনরায় জবানবন্দী শুরুঃ       

আমি গতকল্য ১২-১১-১২ ইং তারিখে আমার জবানবন্দী প্রদান করার পর উহাতে স্বাক্ষর দেওয়ার সময় কিছু বানান ভুল, কিছু ভাষাগত ত্রুটি এবং কিছু তথ্যগত ভুল রয়েছে মর্মে আমার দৃষ্টিগোচর হয় যাহা নি¤œরূপঃ

আমার জবানবন্দীর প্রথম পৃষ্ঠায় তৃতীয় লাইনে ‘সামরিক শাসন’ শব্দগুলির পরে একটি কমা সন্নিবেশিত হইবে। চতুর্থ লাইনে ‘সামরিক, বেসামরিক শব্দগুলির মাঝখানে কমার পরিবর্তে হাইপেন প্রতিস্থাপিত হইবে। একই লাইনে ‘কমান্ডারস’ শব্দের পরিবর্তে কমান্ড শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। একই লাইনে ‘এ্যান্ড’ শব্দের পরিবর্তে ‘অ্যান্ড’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ষষ্ঠ লাইনে ‘রাজনীতি এর’ শব্দগুলির পর ‘উপর’ শব্দটি সন্নিবেশিত হইবে। একই লাইনে ‘ভূকৌশলগত’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ভূ-কৌশলগত’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। সপ্তম লাইনে ‘বাংলাদেশ’ শব্দের পর একটি হাইপেন সন্নিবেশিত হইবে। একই লাইনে ‘ভূরাজনীতি’ শব্দের পরিবর্তে ‘ভূ-রাজনীতি’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। অষ্টম লাইনে ‘পাক’ শব্দের পরে একটি হাইপেন সন্নিবেশিত হইবে। প্রথম পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় প্যারায় ষষ্ঠ লাইনে ‘সদস্যবৃন্দ’ শব্দটির পর ‘সবসময়’ শব্দটি সন্নিবেশিত হইবে। ঐ প্যারার ৮ম লাইনে ‘বরঞ্চ’ শব্দের পরে একটি কমা সন্নিবেশিত হইবে। একই লাইনে ‘অনুকরনীয়’ শব্দের পরিবর্তে ‘অনুকরণীয়’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। দ্বিতীয় পৃষ্ঠার প্রথম লাইনে ‘নিষ্কলুস’ শব্দটির পরিবর্তে ‘নিষ্কলুষ’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ঐ একই লাইনে ‘চাকুরী’ শব্দটির পরিবর্তে ‘চাকুরীর পর’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে। দ্বিতীয় লাইনে ‘তাহাই নহে’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘তাই নয়,’ শব্দগুলি ও কমা প্রতিস্থাপিত হইবে। একই লাইনে ‘পেনশন জনিত’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘পেনশনজতিন’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ষষ্ঠ লাইনে ‘শুরু করা’ শব্দটির পরিবর্তে ‘করার; শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। সপ্তম লাইনে ‘ব্যাখ্যায়’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ব্যখ্যায়’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। অষ্টম লাইনে ‘প্রসঙ্গিক ভাবে’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘প্রাসঙ্গিকভাবে’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় প্যারার প্রথম লাইনে ‘আমি ব্যক্তিগত’ শব্দ দুইটির মাঝখানে ‘আমার’ শব্দটি সন্নিবেশিত হইবে। একই লাইনে ‘লেবরেটরী হাইস্কুলে’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘ল্যাবরেটরী হাই স্কুলের’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে। একই প্যারার চতুর্থ লাইনে ‘অধ্যায়ন কালে’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘অধ্যায়নকালে’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ঐ একই প্যারার ১২ নম্বর লাইনে ‘২ লেঃ’ সংখ্যা ও শব্দের পরিবর্তে ‘২ লেঃ’ সংখ্যা ও শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ঐ একই প্যারার ১৪ নম্বর লাইনে ‘সর্ব শ্রেষ্ঠ’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ঐ একই প্যারার ১৭ নম্বর লাইনে ‘পুরস্কার সমূহ’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘পুরষ্কারসমূহ’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। দ্বিতীয় পৃষ্ঠার দ্বিতীয় প্যারার  ‘প্রেসিডেন্স’ শব্দটির পরিবর্তে ‘প্রেসিডেন্টস’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। দ্বিতীয় পৃষ্ঠার শেষ লাইনে ‘পাক’ শব্দটির ‘;’ টি সন্নিবেশিত হইবে। তৃতীয় পৃষ্ঠার দ্বিতীয় প্যারার তৃতীয় লাইনে ‘সাফায়েতুল ইসলাম’ শব্দগুলির পরে একটি কমা সন্নিবেশিত হইবে। ঐ একই প্যারার শেষ লাইনে ‘ভাই এবং’ শব্দগুলির পর ‘তৎকালীন মেজরও’ শব্দগুলি ও অক্ষর সন্নিবেশিত হইবে। তৃতীয় প্যারার প্রথম লাইনে ‘সপ্তম’ শব্দটির পরিবর্তে ‘৭ম’ সংখ্যা ও অক্ষর প্রতিস্থাপিত হইবে। ঐ একই প্যারার ৮ম লাইনে ‘উল্লেখ’ শব্দের পরিবর্তে একটি কমা সন্নিবেশিত হইবে।

একই লাইনে ‘পালন কালীন’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘পালনকালীন’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ঐ প্যারার ১৩ নম্বর লাইনে ‘তাদের’ শব্দটির পরিবর্তে ‘উনাদের’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। একই লাইনে ‘তারা শব্দটির পরিবর্তে ‘উনারা’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ঐ একই প্যারার ১৯ তম লাইনে ‘৩’ সংখ্যার পর একটি স্পেস হবে এবং তৎপর ‘অপারেশনস’ শব্দের ন এর নীচে একটি ‘্’ সন্নিবেশিত হইবে। ঐ একই প্যারার ২২ নম্বর লাইনে ‘পালন কালীন’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘পালনকালীন’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ঐ একই লাইনের ২৩ নম্বর লাইনে ‘ভুইয়া’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ভূঁইয়া’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। তৃতীয় পৃষ্ঠার শেষ লাইনে ‘ইনফেনটরী এ্যান্ড ট্যাকটিস’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘ইনফ্যান্ট্রী অ্যান্ড ট্যাকট্কিস’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে। ৪ নম্বর পৃষ্ঠার ‘প্যারাটুপার’ শব্দটির পরিবর্তে ‘প্যারাট্রুপার’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ঐ একই লাইনে ‘ইনফেনটরী অফিসার্রস’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘ইনফ্যান্ট্রী অফিসার্স’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে। চতুর্থ লাইনে ‘এ্যান্ড’ শব্দটির পরিবর্তে ‘অ্যান্ড’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। পঞ্চম লাইনের ‘আর্মস’ শব্দটির পরিবর্তে ‘আমর্ড’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ষষ্ঠ লাইনের ‘কোর্সের’ শব্দের পরিবর্তে ‘কোর্সে’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। সপ্তম লাইনে ‘উল্লেখ্য’ শব্দটির পর একটি কমা সন্নিবেশিত হইবে। একই লাইনে ‘মীরপুর’ শব্দটির পরিবর্তে ‘মিরপুর’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। নবম লাইনে ‘মীরপুর স্টাফ কলেজের’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘মিরপুর স্টাফ কলেজ’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে। দশম লাইনে ‘অফিসার গণ’ শব্দটির পরিবর্তে ‘অফিসার’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ঐ একই লাইনে ‘অফিসারদেরকে’ শব্দটির পর ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি সন্নিবেশিত হইবে। ১৩ নম্বর লাইনে ‘করেন’ শব্দটির পরিবর্তে ‘করে’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। একই লাইনে ‘কেন্টনমেন্ট’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ক্যান্টনমেন্ট’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ১৪ নম্বর লাইনে ‘ইনফেনটরী এ্যান্ড ট্যাকটিসের’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘ইনফ্যান্ট্রী অ্যান্ড ট্যাকটিসের’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে। ঐ একই লাইনের ‘শাখা’ শব্দটির পরিবর্তে ‘শাখায়’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। একই লাইনে ‘রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলবমেন্ট’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে। ১৬ নম্বর লাইনে ‘ন্যাশনস’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ন্যাশন্স’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। একই লাইনে ‘মিশনস’ শব্দটির পরিবর্তে ‘মিশন’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ১৮ নম্বর লাইনে ‘জেলার’ শব্দটির পরিবর্তে ‘জেলায়’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। একই লাইনে ‘৬’ সংখ্যার পরিবর্তে ‘৬ষ্ঠ’ সংখ্যা ও অক্ষরগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে। ২৩ নম্বর লাইনে ‘যান’ শব্দের পরে একটি দাড়ি সন্নিবেশিত হইবে। একই লাইনে ‘ডিভিশনে’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ডিভিশনের’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ২৪ নম্বর লাইনের প্রথমে ‘আমাকে’ শব্দটি বিলুপ্ত হইবে। ৩০ নম্বর লাইনে ‘১৯৯০ বা ১৯৯১’ সংখ্যা ও শব্দের পরিবর্তে ‘১৯৯০/১৯৯১’ সংখ্যা ও অবলিগ সংযুক্ত হইবে। পঞ্চম পৃষ্ঠার প্রথম লাইনে ‘তাহাই নহে’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘তাই নয়’ শব্দগুলি ও কমা প্রতিস্থাপিত হইবে। তৃতীয় লাইনে ‘প্রিয়ড’ শব্দটির পরিবর্তে ‘পিরিয়ড’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। সপ্তম লাইনে ‘উপরন্তু’ শব্দটির পর একটি কমা সন্নিবেশিত হইবে। ১৫ নম্বর লাইনে ‘অ্যান্ড কিউ, এম, জি’ শব্দগুলি ও কমাগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে। ১৮ নম্বর লাইনে ‘সিলেকশন’ শব্দটির পূর্বে ‘বৎসরের’ শব্দটি সন্নিবেশিত হইবে। ১৯ নম্বর লাইনে ‘হয় নাই’ শব্দটির পরিবর্তে ‘হয়নি’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ঐ একই লাইনে ‘উল্লেখ্য’ শব্দটির পরে একটি কমা সন্নিবেশিত হইবে। ২০ নম্বর লাইনে ‘পরবর্তীতে’ শব্দটির পরে একটি কমা সন্নিবেশিত হইবে। একই লাইনে ‘জেষ্ঠ্যতা’ শব্দটির পরিবর্তে ‘জ্যেষ্ঠতা’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ২৫ নম্বর লাইনে ‘মীরপুর এবং এ্যান্ড’ শব্দ দুইটির পরিবর্তে যথাক্রমে ‘মিরপুর’ ও অ্যান্ড’ শব্দ দুইটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ২৭ নম্বর লাইনে ‘জেষ্ঠ্যতা’ শব্দটির পরিবর্তে ‘জ্যেষ্ঠতা’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ২৯ নম্বর লাইনে ‘বিগ্রেডিয়ার’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ব্রিগেডিয়ার’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ৩১ নম্বর লাইনে ‘ব্রিগেডে’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ব্রিগেডের’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে। ৩২ নম্বর লাইনে ‘পরবর্তীতে’ শব্দটির পরে একটি কমা সন্নিবেশিত হইবে। ৩৪ নম্বর লাইনে ‘ব্রিগেডে’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ব্রিগেডের’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হইবে।

১৯৮১ সালের কমিশন প্রাপ্তির পর হইতে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আমি বাংলাদেশে মার্শাল ল’ ডিউটি ১৯৮২ সালের মার্চ থেকে ১৯৮৪ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত প্রায় দু বৎসর ঢাকা শহরে দায়িত্ব পালন করি।  অতঃপর যতদিন মার্শাল ল’ ছিল ততদিন আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে মার্শাল ল’ ডিউটি পালন করি। পাশাপাশি ১৯৮৪ সালের শুরু থেকে ১৯৮৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অপারেশন পাউন্সিং টাইগার, অপারেশন দাবানল এবং ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার এর আওতায় বান্দরবন চট্টগ্রামের রাউজান এলাকা এবং কক্সবাজারে জাতীয় নির্বাচন এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করি। পরবর্তীকালে সকল জায়গায় মোতায়েনরত অবস্থায় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় আমার কর্মরত সেনাবাহিনীর আশে পাশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য যখনই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে তখনই আমি আমার সৈন্যদল নিয়ে মোতায়েন হয়ে বেসামরিক প্রশাসনিক ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় দায়িত্ব পালন করি। এরপর বাংলাদেশে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে যতগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে তার প্রায় সবগুলোতেই আমি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার এর আওতায় মোতায়েন হয়ে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। ২০০২ সালের অপারেশন কিন হার্ট এবং পরবর্তীতে ২০০৭-০৮ এ অপারেশন আলোর সন্ধানে এবং অপারেশন নবযাত্রায়ও আমি সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর বিদ্রোহের পর অপারেশন রেবেল হান্ট এ আমি দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রিগেড কমান্ডার হিসাবে ঐ দুইটি জেলার চারটি বিডিআর ব্যাটালিয়নের বিদ্রোহ দমনে প্রত্যক্ষভাবে মূখ্য ভূমিকা পালন করি। আমার এই দীর্ঘ সামরিক চাকুরীতে মার্শাল ল’ এবং ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার এর আওতায় আমি বেসামরিক প্রশাসন, সাধারণ জনগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আধা সামরিক বাহিনী ও সহযোগী বাহিনীর সাথে ওতপ্রোতোভাবে সম্পৃক্ত থেকে আমার সকল দায়িত্ব পালন করেছি। আমার এই অভিজ্ঞতার আলোকে আমি মার্শাল ল’ এবং ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার এর আওতায় সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক, সামরিক, আধা সামরিক সম্পর্ক, সামরিক বাহিনীর কমান্ড ষ্ট্রাকচার, কমান্ড ষ্ট্যাটাস, কমান্ডরেসপনসিবিলিটি, কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল ইত্যাদি সহ সামরিক বাহিনী এবং অন্যান্য সকলের বাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করব।

ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার এর আওতায় মোতায়েনকৃত অবস্থায় যেহেতু রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকে না এবং বেসামরিক সরকার সম্পূর্ণ বহাল থাকে সেই সময় সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ বেসামরিক প্রশাসন, আধা সামরিক বাহিনী, সহযোগী বাহিনী, স্থানীয় জনগণ, প্রয়োজনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্য অথবা অন্য যে কোন দায়িত্ব দেয়া হয় তা পালন করে থাকে। তবে সামরিক বাহিনীর কর্মকান্ড সামরিক বাহিনীর কমান্ড চ্যানেল অনুযায়ী সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত অপারেশন অর্ডার এর মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে। এ সমস্ত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যদি কোন আধা সামরিক বাহিনী বা সহযোগী বাহিনী সামরিক বাহিনীর অধিনস্থ করা হয় সেক্ষেত্রে এই সকল বাহিনীর কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সম্পূর্ণ সামরিক বাহিনীর হাতে ন্যস্ত থাকে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বা বেসামরিক প্রশাসন যে কোন ধরনের প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী এর অধীনস্থ সকল বাহিনী সহ এর সাহায্য চাইলে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যথাসাধ্য সাহায্য সহযোগিতা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে যেমন স্থানীয় এলাকা সম্পর্কে সামরিক বাহিনীর সুনির্দিষ্ট কোন জ্ঞান না থাকলে বা দুর্যোগ কবলিত এলাকা সম্পর্কে কোন ধারনা না থাকলে সামরিক বাহিনী বেসামরিক প্রসাশন কিংবা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাহায্য বা সহযোগীতা নিয়ে থাকতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ কোন শহরের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার সময় ঐ এলাকার বাঁধ রক্ষাকালে স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে এবং সামরিক উপরস্ত সদর দফতরের লিখিত আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী সেই কাজ সম্পন্ন করে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনী লজিস্টিক সহায়তার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় সাধারণ জনগণ সকলে কাধে কাধ মিলিয়ে সেনাবাহিনীর দিক নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে থাকে। আমার উপরোক্ত বক্তব্যে আমি সামরিক বাহিনী বলতে সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর অধিনস্থ সকল আধা সামরিক বাহিনী এবং সহযোগী বাহিনী বুঝিয়েছি। (চলবে)

পড়িয়া দেখিয়া শুদ্ধ স্বীকারে স্বাক্ষর করিলাম।
স্বা/ আব্দুল্লাহিল আমান আযমী
১৩-১১-১২   
   

১৮-১১-১২ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ-

আজকে আমি আমার জবানবন্দীতে পূর্বে উল্লেখিত বিষয়গুলির মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তব্য রাখব। বিষয়টি হচ্ছে সামরিক শাসন বা মার্শাল ল’ চলাকালীন সামরিক- বেসামরিক সম্পর্ক, সামরিক- অন্যান্য বাহিনীর সম্পর্ক এবং সামরিক শাসকগণের সাথে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্পর্ক এবং এর সাথে সম্পৃক্ত কমান্ড রিলেশনশীপ, কমান্ড রেসপনবিলিটি, কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল এবং কমান্ডার্স ষ্ট্যাটাস ইত্যাদি সম্পর্কে। তবে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার জন্য এই উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনী সমূহের জন্মের এবং তাদের কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে সামান্য আলোচনা দরকার।

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বৃটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মাধ্যমে এ অঞ্চলে বৃটিশ রাজত্ব শুরু হয়। এর একশত বছর পর ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহে ১৮৫৮ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে এ দেশের শাসন আনুষ্ঠানিকভাবে বৃটিশ রাজ্যের হাতে চলে যায়। ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত এ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক সেনাবাহিনী থাকলেও তাদের কর্মকান্ড সম্পূর্ণ পৃথকভাবে সমাধা করা হতো। সর্বপ্রথম ১৮৯৫ সালে বৃটিশ ইন্ডিয়ান আর্মি নামে এই অঞ্চলে স্থানীয় জনগণকে নিয়ে তৎকালীন বৃটিশ শাসক একটি সেনা বাহিনী গঠন করে। এই সেনা বাহিনী প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে বৃটিশ রাজত্বে বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি আফ্রিকাতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধুমাত্র এই মহাযুদ্ধে এই সেনাবাহিনীর প্রায় ৮৭ হাজার সৈন্য নিহত হয়। ১৯১৭ সালে যখন ভারতবর্ষ বিভক্ত হয় তখন স্থানীয় সেনাবাহিনীকে তিনভাবে ভাগ করা হয়। মুসলিম প্রধান একটি রাষ্ট্রটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে রুপান্তরিত করা হয় এবং অমুসলিম প্রধান দুই তৃতীয়াংশ সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে ভারতীয় সেনাবাহিনী হিসাবে রুপান্তর করা হয়। বৃটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিরা সকল অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি আনুপাতিক হারে উভয়দেশের মধ্যে বিতরণ করা হয়। উভয় দেশের সেনাবাহিনী তখন বৃটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির আদলে এবং দর্শনে প্রতিষ্ঠিত হয়। উভয় সেনাবাহিনী সাংগঠনিক কাঠামো, কমান্ডার, স্ট্রাকচার, বিভিন্ন সদর দফতর ফরমেশন ও ইউনিট, কমান্ডার স্টাফ সম্পর্ক, কমান্ডার সাব-অর্ডিনেট সম্পর্ক, স্টাফ বিউটিজ- অর্থাৎ অফিসিয়াল পত্রালাপ, অপারেশন অর্ডার, এ্যাডমিনিষ্ট্রটিব অর্ডার, বিধি-বিধান, রীতি-নীতি ও প্রথা বৃটিশ ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনী আদলেই চলতে থাকে। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত উভয়দেশের সেনাবাহিনীর উপরে উল্লেখিত বিষয় সমূহে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন করেনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পূর্বস্বরীদের মতই জন্ম লাভ করে। পাকিস্তান আর্মি এ্যাক্ট পাকিস্তান শব্দের পরিবর্তে বাংলাদেশ শব্দের প্রতিস্থাপন করে ব্যবহৃত হতে থাকে। একই রকম ম্যানুয়াল অব পাকিস্তান মিলিটারী ল’ ম্যানুয়েল অব বাংলাদেশ মিলিটারী ল’ হিসাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। এছাড়া আর্মি রুলস (রেগুলেশন) এবং আর্মি রুলস (ইন্সট্রাকশন) সহ সমস্ত সামরিক পুস্তকাদি এবং বিধি-বিধান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ন্যয় চলতে থাকে। স্বাধীনতার ৪১ বছর পর পর্যন্ত উল্লেখিত বই সমূহের উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন সাধিত হয়নি। এছাড়া, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম লাভের প্রায় ৩৫ বৎসর পর পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সকল সেনাপ্রধান সহ প্রায় সকল জেষ্ঠ কর্মকর্তা পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্বারা প্রশিক্ষিত ছিল। সুতরাং একথা অত্যন্ত সহজেই বোঝা যায় যে, আমাদের এই উপমহাদেশে তিন সেনা বাহিনী অর্থাৎ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একই দর্শনে একই ভাবধারায় প্রায় কাছাকাছি বিধি-বিধান ও রীতি-নীতি অনুসরন করে চলে থাকে। সুতরাং ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত সামরিক শাসন চলাকালে আমার প্রত্যক্ষ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে সামরিক বাহিনীর সাথে অন্যান্য সকলের যেরুপ সম্পর্ক থাকে বলে দেখেছি, এই ভূখন্ডে এর পূর্বের সকল সামরিক শাসনের সময়ই একই ধারা চলটাই স্বাভাবিক। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ভারতে গণতন্ত্র চর্চা হওয়ার ফলে বিগত ৬৫ বছরে সেখানকার সামরিক বাহিনী সেদেশে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। পক্ষান্তরে, বিগত ৬৫ বছরে এই ভূখন্ডে অর্থাৎ আমাদের বাংলাদেশের ভূখন্ডে যা প্রথম ২৪ বছর পর্যন্ত অন্তর্ভূক্ত ছিল এবং পরবর্তী ৪১ বছর স্বাধীন দেশ হিসেবে রয়েছে এখানে ৫টি সামরিক অভ্যুত্থান ইতিহাস দেখা যায়। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান সামরিক আইন জারি করে দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সামরিক শাসন আমলে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করেন। উল্লেখ করা যেতে পারে ঐ সময় অধ্যাপক গোলাম আযমের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল এবং তিনি ৮ মাসের জন্য কারাবন্দী ছিলেন। পরবর্তীতে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অজুহাতে ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন পাকিস্তান সেনা প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান পুনরায় সামরিক শাসন জারী করে দেশের ক্ষমতাভার গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন প্রধান সামরিক আমলে প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চের মাধ্যমে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড পরিচালনা করেন। ঐ সময়ও রাজনীতি প্রাথমিকভাবে নিষিদ্ধ এবং পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় চলতে থাকে। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সামরিক শাসন জারি হয় ১৯৭৫ সালে এবং তখনও রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকে এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব আত্মগোপন করে থাকেন। সামরকি সরকারের সাথে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এদেশে পুনরায় তৎকালীন সেনা প্রধান হুসাইন মুহাম্মাদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করে দেশের প্রশাসনের দায়িত্ব নেন। সেই অবস্থায়ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দগণ আত্মগোপন করেন বা কারাবন্দী হন এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সামরিক শাসক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপর মানসিক নির্যাতন চালায়। আমার বক্তব্যে আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে ১৯৮৩ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন সামরিক সরকার কর্তৃক গ্রেফতারকৃত বর্তমান সরকার দলীয় তিনজন শীর্ষ স্থানীয় নেত্রী আমার তত্ত্বাবধানে ছিলেন। সামরিক সরকার সাধারণত গ্রেফতারকৃত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সুআচরণ করেন না। আমার তত্ত্বাবধানে আটকাধীন ঐ তিন নেত্রীর সাথে যে ধরনের অমানবিক আচরণের জন্য আমার উপরোস্ত কর্মকর্তা নির্দেশ দিয়েছিলেন তা আমার নিকট অত্যন্ত অমানবিক প্রতীয়মান হওয়ায় একজন কনিষ্ট অফিসার হিসাবে আমি আমার চাকুরী ঝুঁকি নিয়ে উনাদের সাথে নির্দেশিত আচরণ করতে পারিনি। আমি মনে করি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত সম্মানি ব্যক্তি এবং আমার পারিবারিক শিক্ষক। শিষ্ঠাচার মূল্যবোধ ও মানুষের প্রতি শ্রদ্ধার কারণে আমি উনাদের সাথে সম্মান দিয়েই আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমার তৎকালীন সহকর্মীদের মধ্যে অনেকেই এখন হয় কর্মরত জেনারেল অথবা অবসর প্রাপ্ত জেনারেল। উনারা সকলেই এ বিষয়ে সাক্ষী। আমি নিশ্চিত নেতৃবৃন্দকারও বিষয়টি ভুলে যাননি।

এবারে আমি সামরিক শাসন চলাকালীন দেশের প্রশাসন কীভাবে চলে তা একটি চিত্রের সাহায্যে সম্মানিত ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরব। যিনি দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন তিনি নিজকে মার্শাল ল’ এ্যাডমিষ্ট্রেটর হিসাবে সংক্ষেপে সি এম এল এ হিসাবে যা বাংলায় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে অভিহিত করেন। আমি বিগত ৬৫ বছরে ৫টি সামরিক সাশানের কথা উল্লেখ করেছি। এর সবগুলোই তৎকালীন সেনাপ্রধান কর্তৃক জারী হয়। তবে পৃথিবীর ইতিহাসে কোন কোন দেশের সেনা প্রধান ছাড়াও সেনা প্রধান কনিষ্ট বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্তৃক সামরিক শাসন জারীর নজির রয়েছে। আমি শুধু এই ভূখন্ডের সামরিক আইন চলাকালীন প্রশাসনিক কাঠামো সামরিক শাসকগণ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন তার রূপরেখা ব্যাখ্যা করব।

১৯৭১ সালে তৎকালীন প্রধান সামরিক আইনে প্রশাসক সমগ্র পাকিস্তানকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রধান বা জোনাল মার্শাল ল’ এ্যাডমিনিস্ট্রেটর (যা সংক্ষেপে ডেডে, এম এল এ নামে পরিচিত) নিয়োগ করেছিলেন। ১৯৮২ সালে মার্শাল ল’ তেও তৎকালীন সামরিক আইন প্রশাসক সমগ্র বাংলাদেশকে আমার যতদূর মনে পড়ে ৫টি অঞ্চলে ভাগ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান একটি অঞ্চল হিসাবে এই অঞ্চলের জন্য একজন জেড এম এল এ নিয়োগ দিয়েছিলেন ১৯৮২ সালেও তেমনি প্রতিটি অঞ্চলের একজন করে জেড এম এল এ নিয়োগ দেওয়া হয়। সাধারণত মেজর জেনারেল অথবা লেঃ জেনারেল পদবীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং বা এরিয়া কমান্ডার জে এম এল এ এর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। প্রশাসনিক কর্মকান্ডের সুবিধার জন্য প্রত্যেকটি অভিযুক্তকে পুনরায় কয়েকটি উপঅঞ্চলে বিভক্ত করে প্রত্যেকটি উপ অঞ্চলের জন্য একজন করে উপ- আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসন অর্থাৎ এস জেড, এম এল এ নিযুক্ত করা হয়। সাধারণত কর্নেল অথবা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবীর অফিসার, মূলতঃ ব্রিগেড কমান্ডারগণ, এস জেড এম এল এ এর দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত হন। দেশের বেসামরিক কার্যাকলাপের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি উপ আইনের অধীনে অবস্থিত জেলা সমূহে একজন করে ডিষ্ট্রিক মার্শাল ল’ এ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা ডি এম এল এ নিযুক্ত করা হয়। সাধারণত লেঃ কর্নেল পদবী কমান্ডার অফিসারগণ ডি এম এল এ এর দায়িত্ব পালন করে যায়। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সি এম এল এ হতে সর্বনি¤œ পর্যায়ে ডি এম এল এ পর্যন্ত যার যার দায়িত্ব প্রাপ্ত এলাকায় অন্তর্ভুক্ত সে এলাকায় সকল বে সামরিক প্রশাসনের সমস্ত কমান্ডার নিয়োগ করে থাকেন। সামরিক আইন চলাকালে বে-সামরিক প্রশাসনের নিজের কোন সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা থাকে না।

ঐ এলাকার দায়িত্ব প্রাপ্ত সামরিক প্রশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী বেসামরিক প্রশাসন সকল কর্মকান্ড সম্পাদন করেন। এখানে একটি কথা উল্লেখ্য যে, আমি প্রথমেই বলেছি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের সময় বেসামরিক প্রশাসন সম্পূর্ণ স্বাধীন থেকে নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং রাজনীতিবিদ ও সাধারণ জনগণ সামরিক-বেসামরিক উভয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বিতভাবে একত্রে কাজ করে থাকেন। কিন্তু সামরিক শাসনের সময় পরিস্থিতি ভিন্ন থাকে। সামরিক শাসনের সময় বেসামরিক প্রশাসনের যেমন নিজস্ব কোন অস্তিত্ব থাকে না তেমনি রাজনীতিবিদগণও অনেকটা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় কোন কোন ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদগণও বা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধান, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণকে সহায়তা করার জন্য নিজস্ব উদ্যোগে কমিটি গঠন করে থাকেন। সামরিক শাসন চলাকালীন ১৯৮৬-৮৭ সালে বান্দরবন এলাকায় আমি দেখেছি স্থানীয় উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ জনসাধারণের জানমাল রক্ষা, এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণকে অন্য যে কোন সহায়তা প্রদানের জন্য ট্রাইবাল কনভেনশন কমিটি গঠন করে তাদের দায়িত্ব পালন করতেন। এই কমিটি স্থানীয় সামরিক কর্তৃপক্ষ বা আধা-সামরিক ও সহযোগী বাহিনীসমূহের উপর কোন ধরনের কর্তৃত্ব রাখে না। তবে কখনো কখনো বিশেষ প্রয়োজনে তারা স্থানীয় সামরিক বা আধা-সামরিক বা সহযোগী বাহিনীর সহায়তা চেয়ে জনগণের নিরাপত্তা বিধান করতো। বান্দরবন প্রশাসন ট্রাইবাল কনভেনশন কমিটিকে আমি নিজে দেখেছি আমার তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পরবর্তীতে মে. জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, বর্তমানে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যের সাথে সাক্ষাত করে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করতে। সামরিক শাসন চলাকালীন আধাসামরিক বা অন্যান্য সকল সহযোগী বাহিনী কিভাবে দায়িত্ব পালন করে সে ব্যাপারে যাওয়ার পূর্বে আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের ট্রাইবাল কনভেনশন কমিটির কর্মকান্ডের অভিজ্ঞতার আলোকে একথা দৃঢ়ভাবে মনে করি ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল ট্রাইবাল কনভেনশন কমিটির আদলে সাধারণ ও নিরীহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার উদ্দেশ্যে।  ১৯৮২ সালে মার্শাল ল’-এর অভিজ্ঞতার আলোকে আমি যেমনটি বলেছি যে, বেসামরিক প্রশাসন বা রাজনীতিবিদদের সামরিক প্রশাসনের ওপর যেমন কোন কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না ১৯৭১ সালেও সামরিক শাসনের ওপর বেসামরিক প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সামান্যতম নিয়ন্ত্রণ ছিল না। উপরন্তু সামরিক শাসন চলাকালীন দেশের প্রশাসনিক কাঠামো সংক্রান্ত যে ব্যাখ্যা আমি দিয়েছি এবং এর সাথে যে সংযুক্তি উপস্থাপন করেছি এর কোন স্তরেই কোন বেসামরিক ব্যক্তির কোন রূপ আদেশ বা নিয়ন্ত্রনের কোন সুযোগ নেই। এমনি বেসামরিক প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কোন ধরনের কমান্ড রেসপনসিবিলিটি থাকে না।

এখন আমি সামরিক শাসন চলাকালীন সামরিক বাহিনীর সাথে আধা সামরিক বাহিনীর বা অন্যান্য সহযোগী বাহিনীর কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল, কমান্ড স্ট্রাকচার, কমান্ড রিলেশনশীপ ইত্যাদি বিষয়ে একটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে বর্ণনা করতে চাই। প্রথমত: দেশের সর্বোচ্চ যিনি সিএমএলএ নামে পরিচিত তিনি কোন আধাসামরিক বাহিনী বা যে কোন সহযোগী বাহিনীকে যে কোন দায়িত্ব পালনের জন্য সুবিধামত স্থানে মোতায়েনরত অধিনায়কের সেনাদের অধীনস্থ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই অনুযায়ী প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দপ্তর হতে (যা চিত্রে গভ. হিসেবে দেখানো হয়েছে) প্রতিরক্ষা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লিখিত আদেশ প্রেরণ করা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে সশস্ত্র বাহিনী অর্থাৎ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বা বিমান বাহিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে দায়িত্ব পালন করেন। দেশের অন্যান্য সকল আধা সামরিক বা সহযোগী বাহিনীসমূহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দফতর হতে যথাযথ নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বাহিনী সদর দফতরে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাধ্যমে লিখিত আদেশ প্রেরণ করে। এখানে একটি উদাহরণের সাথে চিত্রটি ব্যাখ্যা করলে কমান্ড স্ট্রাকচার, কমান্ড রিলেশনশীপ এবং কমান্ড এ্যান্ড কন্ট্রোল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। যদি এখন সামরিক শাসন জারী হয় এবং রংপুর অঞ্চলের দিনাজপুর জেলার পার্বতিপুর উপজেলার অধীনে অবস্থিত বীর উত্তম শহীদ মাহবুব সেনানিবাসে অবস্থিত ১৬ পদাতিক ব্রিগেডের অধীনস্থ হিসেবে একটি আইন সামরিক শাসন বা বি জি বি এর একটি ব্যাটালিয়ন অধীনস্থ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সেক্ষেত্রে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের অফিস হতে পূর্বোল্লিখিত দুই মন্ত্রণালয়ের যথাযথ নির্দেশ প্রেরণ করা হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে যথাযথ নির্দেশ প্রদান করবে। যেহেতু এই নির্দেশে কেবলমাত্র সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত তাই সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এই মর্মে লিখিতভাবে সেনা সদরে নির্দেশ প্রদান করবে। সেনা সদর তখন লিখিত অপারেশন আদেশের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলের সদর দফতরে ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের যথাযথ নির্দেশ প্রদান করবে। সেনা সদরের নির্দেশ অনুযায়ী সদর দফতর ৬৬ পদাতিক ডিভিশন লিখিত অপারেশন আদেশের মাধ্যমে সদর দফতরে ১৬ পদাতিক ব্রিগেডকে একটি সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের জন্য একটি বিজিবি ব্যাটালিয়ন উক্ত ব্রিগেডের অধীনস্থ করা হবে মর্মে লিখিত নির্দেশ প্রদান করবে। অপরদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী সদর দফতর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে লিখিত নির্দেশ প্রদান করবেন। সেই আলোকে সদর দফতর বিজিবি দিনাজপুর সেক্টরকে লিখিত অপারেশনের আদেশের মাধ্যমে দিনাজপুর সেক্টরের অধিনস্থ একটি ব্যাটালিয়ন ১৬ পদাতিক ব্রিগেডের অধিনস্থ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করবেন। দিনাজপুর সেক্টর সদর দফতর এর নিজস্ব দায়িত্ব সম্পন্ন করার। পাশাপাশি সেক্টরের অধিনস্থ যে কোন একটি ব্যাটালিয়নকে (সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে) নির্দেশ প্রদান করে। তখন ১৬ পদাতিক ব্রিগেড এবং দিনাজপুর সেক্টরের সমন্বয়ের মাধ্যমে বি জি বি ব্যাটালিয়নটি সরাসরি ১৬ পদাতিক ব্রিগেডের অধীনস্থ হবে। এরপর সদর দফতর ১৬ পদাতিক ব্রিগেড নিজস্ব অধীনস্থ আর্মি ব্যাটালিয়নসমূহ এবং নতুন প্রাপ্ত বিজিবি ব্যাটারিয়ান সহ নিজস্ব অপারেশন পরিকল্পনা করে অপারেশন আদেশের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাটালিয়নকে প্রয়োজন অনুযায়ী মোতায়েন করবে। যখন কোন আধা-সামরিক বাহিনী বা সহযোগী বাহিনীকে সামরিক বাহিনীর অধীনস্থ করা হয় তখন ঐ আধা সামরিক বাহিনী বা সহেযাগী বাহিনীর স্টাটাস অব কমান্ডসহ সামরিক বাহিনীর অধীনস্থ করা হয় যা আমি চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করবো। (চলবে)




১৯-১১-২০১২ ইং জবানবন্দী শুরু ঃ
আজকে আমার জবানবন্দীতে গতকালের প্রদত্ত সাক্ষ্যের একটি তথ্য সম্পর্কে কিছু স্পষ্টিকরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছি। আমি গতকাল ৫টি মার্শাল ল’ এর কথা বলেছিলাম। প্রকৃতপক্ষে ১৯৫৮, ১৯৭৫ এবং ১৯৮২ এর মার্শাল ল ছাড়া ১৯৬৯ এবং ১৯৭১ কে দুটি পৃথক মার্শাল ল’ হিসাবে চিহ্নিত করেছি। কোন অবস্থাতেই ১/১১ খ্যাত সামরিক বাহিনী সমর্থিত বেসামরিক সরকারকে সামরিক শাসন বুঝাইনি। উল্লেখ্য সামরিক বাহিনী সমর্থিত বে-সামরিক সরকারের সময়ও এদেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদগণ গ্রেফতার হয়েছিলেন। আমার সামরিক শাসন সংক্রান্ত বক্তব্য শেষ করার পূর্বে সামরিক শাসনের সময় সামরিক শাসকগন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রনের বিষয়ে আমি কিছু কথা বলতে চাই এবং আমার ব্যক্তিগত অভিমতের আলোকে দুই একটি উদাহরন দিতে চাই। সব সময়ই সামরিক শাসকগণ দেশের কর্তৃত্ব গ্রহন করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট নটিফিকশনের মাধ্যমে সকল প্রকার সরকারি ও বেসরকারী প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সকল মাধ্যমের উপায় বিশেষ করে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রন আরোপ করে থাকেন। এই নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হল (১) সামরিক শাসনের সমালোচনা হতে বিরত রাখা, (২) সামরিক শাসন কর্মকান্ডের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকা, (৩) সামরিক সরকারের স্বার্থের পরিপন্থী কোন সংবাদ প্রচার করে গণমাধ্যম যেন সাধারণ জনগনের মাঝে সামরিক সরকারের ব্যাপার বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে না পারে। ১৯৭১ সালে সামরিক সরকার গণমাধ্যমের উপর গেজেট নটিফিকেশনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে কঠোর নিয়ন্ত্রন আরোপ করেছিল। একি রকমভাবে ১৯৮২ সালে মার্শাল ল’ এর পরেও গণমাধ্যমের উপর সামরিক কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রন আরোপ করে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। সেই নিয়ন্ত্রনের আলোকে ১৯৮২/৮৩ সালে আমি বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বি,টি,ভি এবং তৎকালীন রেডিও বাংলাদেশে আমার দায়িত্ব পালন কালীন গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রনের কাজ সম্পন্ন করেছি। এই দায়িত্ব সমূহ আমি ২ লেঃ/লেঃ পদবীতে হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করেছি। একজন কনিষ্ট অফিসার হিসাবে এ সকল কর্মকান্ডে আমি আমার সুপিরিয়র অফিসার বা কমান্ডার এর সরাসরি নির্দেশে সম্পন্ন করেছি। এখানে সুপিরিয়র অফিসার এর কমান্ডার বলতে আমি বিভিন্ন স্তরের এবং বিভিন্ন পদবীর জৈষ্ঠ সামরিক অফিসারকে বুঝিয়েছি। কেননা সামরিক শাসনের সময় সুপিরিয়র অফিসার বা কমান্ডার সব সময় সামরিক কর্মকর্তা হন। কোন অবস্থাতেই সুপিরিয়র অফিসার বা কমান্ডার বলতে কোন বেসামরিক ব্যক্তিকে বুঝায় না।
এখন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রনের আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দু/একটি উদাহরন দিতে চাই। এ প্রসঙ্গে প্রথমে বলতে চাই তখন কোন বেসরকারী টেলিভিশন বা রেডিও চ্যানেল ছিল না। প্রাথমিক পর্যায় আমি টেলিভিশনে ডিউটি পালন করি। আমার ডিউটির অন্তর্ভূক্ত ছিল (১) কোন লাইভ অনুষ্ঠান হলে সেখানে বসে থেকে দেখা এবং শুন্য যেন ঐ অনুষ্ঠানে সামরিক সরকার স্বার্থের পরিপন্থী কোন বক্তব্য না যায়, (২) যে কোন নাটক বা বিনোদন মূলক অনুষ্ঠান হলে সেখানে স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে একইরুপভাবে নিয়ন্ত্রিত করা যেন ঐ অনুষ্ঠানে রেকডিংয়ের মাধ্যমে সামরিক সরকার বিরোধী কোন বক্তব্য প্রচার না হয়, (৩) দৈনিক টেলিভিশন কি কি অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে তা লিখিত আকারে টেলিভিশন অফিসের প্রোগ্রামিং অফিসার (তখন টেলিভিশন প্রোগ্রামিং অফিসার ছিলেন বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য সংবাদ পাঠক সরদার ফিরোজ উদ্দিন, তিনি এখন একটি বেসরকারী টেলিভিশনের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা) আমার কাছে নিয়ে আসতেন। আমার দায়িত্ব ছিল প্রতিটি লাইন ও প্রতিটি শব্দ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ে সেটাতে অনুমোদন করে স্বাক্ষর দেওয়া। যদি কোন অনুষ্ঠান সামরিক সরকার স্বার্থের পরিপন্থী হতো বলে আমার ধারনা হতো তখন আমি আর্কাইভে গিয়ে নিজে দেখে নিতাম। তাতেও যদি সন্তুষ্ট না হতাম তখন আমি আমার সুপিরিয়র অফিসার বা আমার কমান্ডারের নিকট এ সমস্যা তুলে ধরতাম। তিনি ঐ অনুষ্ঠানটি পরিবর্তন করার জন্য নির্দেশ দিলে আমি সে অনুযায়ী প্রোগ্রামিং অফিসারকে নির্দেশ দিতাম এবং নতুন করে তিনি দিনের প্রোগাম তৈরি করে নিয়ে আসলে আমি পূনরায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ে অনুমোদন করে স্বাক্ষর করতাম। (৪) সংবাদ প্রচারের পরে সংবাদ পাঠক স্বয়ং রিডিং স্ক্রিপ্ট নিয়ে সংবাদ প্রচারের কয়েক ঘন্টা পূর্বে আমার অফিসে আসতেন। আমি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ে প্রতি পৃষ্ঠার উপরে এবং নীচে স্বাক্ষর করে তা অনুমোদন করতাম। সংবাদের ক্ষেত্রে সন্দেহজনক কোন কিছু আমার চোখে ধরা পড়লে আমি পূর্বের ন্যায় একি প্রক্রিয়া অনুসরন করতাম। যদি কোন অনুমোদিত কিন্তু স্পর্শকাতর বিষয় সেদিনের সংবাদে প্রচারের জন্য থাকত তাহলে আমি স্বয়ং সংবাদ পাঠকের পাশের কক্ষে যেখান থেকে সংবাদ পত্র নিয়ন্ত্রন করা হয় সেখানে গিয়ে যতক্ষন সংবাদ পাঠ করা শেষ না হয় ততক্ষন বসে থাকতাম। পরবর্তীকালে আমি যখন রেডিও বাংলাদেশে ডিউটি দেই তখনও প্রায় একই ধরনের নিয়ন্ত্রন আমরা নিশ্চিত করতাম। দেশে যেহেতু তখন পর্যন্ত টেলিভিশনের তুলনায় রেডিওর প্রচলন বেশি ছিল সেহেতু রেডিও সংবাদের ব্যাপারে আমরা আরও বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতাম। এ প্রসঙ্গে একটি ছোট্ট উদাহরন দিয়ে আমি আমার মার্শাল ল সংক্রান্ত বক্তব্য শেষ করতে চাই। ১৯৮৩ সালের কোন এক সময় তৎকালীন সম্ভবত যশোর অঞ্চলের আঞ্চলিক সামরিক সরকারের প্রশাসক, যার নাম ছিল জ.অ.গ এড়ষধস গঁশঃধফরৎ  (আর এ এম গোলাম মুক্তাদির) সংবাদ পাঠক সংবাদ পাঠ করার সময় ভূলক্রমে ” জ.অ.গ এড়ষধস গঁশঃধফরৎ (আর এ এম গোলাম মুক্তাদির) এর পরিবর্তে রাম গোলাম মুক্তাদির পাঠ করেন। তার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের নির্দেশে সংবাদ প্রচার শেষ হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে তাকে সাসপেন্ড করা হয়।
এবারে আমি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, ভারতের সাথে অন্যান্য প্রতিবেশ দেশ সমূহের সম্পর্ক ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভুমি ইত্যাদি নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। ইতিহাস শুধু অতীত নয় ইতিহাস ভবিষ্যতও। ইতহাস আমাদের শিক্ষা দেয় কোনটি সঠিক এবং কোনটি সঠিক নয়। এজন্য এই মামলার সঠিক বিবেচনায় এই উপমহাদেশের ইতিহাস আলোচনা করা অত্যাবশ্যকীয়। আমি ডিফেন্স স্টাডিস এ মাস্টার্স করার সময় এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজে এম ফিল করার সময় আমার এই বিষয়গুলো নিয়ে বিশদ অধ্যয়ন ও গবেষনা করার সুযোগ হয়েছে। আমার অধ্যয়ন ও গবেষণার আলোকে আমি ঐতিহাসিক কিছু বর্ণনা দিচ্ছি।
ইন্ডিয়ান কংগ্রেস এর নেতৃবৃন্দগণ কখনোই চাননি ভারতবর্ষ বিভক্ত হোক। এ বিষয়ে ভারতীয় বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক সাংবাদিকগণের অনেক বই এবং আর্টিকেল প্রকাশও প্রচার হয়েছে। ভারতের বুদ্ধিজীবী নিরোধ চোধুরী, পন্ডিত জওহার লাল নেহেরুকে উদ্ধৃতি করে বলেছেন ভারত বর্ষকে বিভাগ করতে হলে আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে করতে হবে। আমি এক ইঞ্চি পাকিস্তানও দেখতে চাই না। ভারতীয় বিখ্যাত সাহিত্যিক বিমলানন্দ শাসমল মহাত্মা গান্ধীকে উদ্ধৃতি করে বলেছেন ভারত কে বিভাগ করা মানে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। কংগ্রেসের সভাপতি আচার্য কৃপালিনী ভারত বর্ষ বিভাগের বিরুদ্ধে সোচ্ছার ছিলেন। অর্থাৎ এদেশে বৃটিশ রাজের সমাপ্তি লগ্নে ভারতীয় এবং কংগ্রেসের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ সমগ্র ভারতবর্ষকে তাদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে চেয়েছিলেন। এটি এক ঐতিহাসিক সত্য। যেহেতু তৎকালীন পূর্ব বাংলার ( যা বর্তমানে বাংলাদেশ ভুখন্ড নামে পরিচিত) মুসলমানগণ বুঝতে পেরেছিল যে, ভারতবর্ষ বিভক্ত না হলে পূর্ব বঙ্গের মুসলিম ভারতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দের প্রজা হিসেবে বাস করতে হবে সেজন্যই এদেশের অধিকাংশ মুসলমানদের ভোটেই মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভুমির ব্যপারে বৃটিশ সরকার অনুমোদন দেয়। এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে আমি ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ এবং ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ রদের বিষয়ে কিছু বলছি। মুসলমানদের উন্নতির জন্য তৎকালীন বৃটিশ সরকার পূর্ব বঙ্গকে আলাদা প্রদেশের মর্যাদা দেয়। মুসলমানদের আলাদা মর্যাদা ভারতীয় নেতাগণ মেনে নিতে না পারার কারণে সর্বভারতীয় বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন হয়। এরই ফলে ১৯১১ সালে ভারতীয় বিশেষ করে কংগ্রেস নেতৃবর্গ এর চাপে বৃটিশ সরকার ১৯১১ সালে এই বঙ্গভঙ্গ রদ করেন। ঠিক এর পর পরই বৃটিশ সরকার যখন মুসলমানদের জন্য আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ নেয় তখন কেউ কেউ এমন মন্তব্য করে যে, “চাষাভুষাদের পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় কি প্রয়োজন ?” এসমস্ত ঐতিহাসিক সত্যকে সামনে রেখে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, কংগ্রেস তখন ভারতীয় নেতৃবৃন্দ এই অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব বজায় রাখার জন্য সব সময় তৎপর ছিলেন। এই পটভুমিকায় ১৯৪৭ সালে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র অর্থাৎ ভারত এবং পাকিস্তান জন্ম লাভ করে। স্বাধীনতা অর্জনের পর হতে ভারত তাদের উপনিবেশক বা সম্প্রসারনবাদী মনোভাবের বহি:প্রকাশ ঘটায়। স্বাধীনতার পরপরই তারা গোয়া, মান ভাদর যেগুলো স্বাধীন ছিল এগুলো করায়ত্ত করে। এরপর নজর দেয় হায়দারাবাদের দিকে। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসেই ভারত হায়দারাবাদ দখলের পরিকল্পনা করে। এক পর্যায়ে পন্ডিত নেহেরু বলেছেন, “যখন এবং যেভাবে প্রয়োজন মনে করব হায়দারাবাদ দখল করব”। পন্ডিত নেহেরুর এ ধরনের বক্তব্যকে তৎকালীন বৃটিশ প্রধান স্যার উইনস্টন চার্চিল দাম্ভিব উক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে ১৯৪৮ সালের ৩০ জুলাই ইংল্যান্ডের হাউস অব কমার্স- এ বলেন যে, “পন্ডিত নেহেরুর এই আগ্রাসী বক্তব্য হিটলার কর্তৃক অস্ট্রিয়া দখলের পূর্বে যে রুপ উক্তি করা হয়েছিল সেইরুপ”। ১৯৪৮ সালে কায়েদে আজমের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরে ১৮ই সেপ্টেম্বর তারিখে ভারত হায়দারাবাদ দখল করে। হায়দারাবাদ তখন স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল, তাদের নিজস্ব পতাকা ছিল এবং জাতিসংঘে তাদের প্রতিনিধি ছিল। কিন্তু তারপর ভারতের এই সম্প্রসারনতার কাজ থেমে থাকেনি। ভারতীয় বুদ্ধিজীবী নিরোধ চৌধুরী বলেছেন যে, “১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত ভারত তিনবার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান দখলের পরিকল্পনা করেছিল।” তিনি আরো বলেছেন যে, “জয় প্রকাশ নারায়ন সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান দখলের জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন”। এ ধরনের অসংখ্য বর্ণনা ইতিহাসে রয়েছে যেগুলো ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক লেখনীর মাধ্যমে বেরিয়ে এসছে। এর ফলে অনেকেই ভারতের ভূমিকা বিষয়ে সন্দেহ পোষন করতো। (চলবে)



২০-১১-১২ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ-
আজ আমি এই ট্রাইব্যুনালে অধ্যাপক গোলাম আযমের কর্মজীবন, উনার ব্যক্তিগত এবং দর্শন সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিব। অধ্যাপক গোলাম আযম অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি সবসময় কাসে প্রথম স্থান অধিকার করতেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় অবস্থান দখল করে স্কলারশীপসহ উত্তীর্ণ হয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ভর্তি হন এবং ১৯৫০ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম. এ সম্পন্ন করে রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি অধ্যাপনার পেশা ছেড়ে দিয়ে ২০০০ পর্যন্ত নিজের জীবনকে এই ভূখন্ডে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। এরপর হতে আজ পর্যন্ত উনি রাজনীতি থেকে অবসর নিলেও আল্লাহর দ্বীন চর্চা, তার প্রচার এবং তার প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। সমগ্র বিশ্ব বিনা বাক্য ব্যয়ে নির্দ্বিধায় অধ্যাপক গোলাম আযমকে বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের মুরুব্বী হিসেবে বিবেচনা করেন। উনি প্রায় ১৩৮টি ছোট বড় বিভিন্ন আকারের বই লিখেছেন। যার মধ্যে ৯ খন্ডে জীবনে যা দেখলাম শিরোনামে উনার আত্মজীবনী, সহজ বাংলায় আল কোরআনের অনুবাদ রয়েছে। ছাত্র অবস্থা থেকেই তিনি সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ড এবং মানুষের কল্যাণের জন্য সব সময়ই নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। স্কুল ছাত্র অবস্থায় পাকিস্তান আন্দোলনের সময় তিনি স্বউদ্যোগে অনুরোধ করে মঞ্চে উঠে এদেশের জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষার জন্য পাকিস্তান ‘প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বআরোপ করে জোরালো বক্তব্য রাখেন। সমাজবেসায় সহায়ক হবে মনে করে তিনি স্কাউটে যোগদেন এবং দক্ষতার কারণে স্কাউট লিডার হিসেবে উনাকে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালে একই সাথে ফজলুল হক হলের এবং ডাকসুর নির্বাচিত জি. এস ছিলেন। ১৯৪৭-৪৮, ৪৮-৪৯ পরপর দু’বছর ডাকসুর জি. এস এর দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় একই প্যানেল থেকে ডাকসুর ভি. পি ছিলেন জনাব অরবিন্দ বোস। ১৯৪৮ সালে ডাকসুর জি. এস হিসেবে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে তিনি নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে জীবনে প্রথম বারের মত গ্রেফতার হন। একই সালে অর্থাৎ ১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পাকিস্তান সরকারের নিকট যে আনুষ্ঠানিক গবসড়ৎধহফঁস (মেমেরারেন্ডাম)  পেশ করা হয় তা তিনি করেন। ঐদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম মাঠে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের সামনে মঞ্চে দাড়িয়ে বাংলাকে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য এই ভূখন্ডের প্রথম আনুষ্ঠানিক দাবি তিনিই পাঠ করে শোনান।

ছাত্র জীবন শেষে কর্মজীবনে ১৯৫২ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনার সময় স্থানীয় সর্ব দলীয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানের কারণে তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনার সময় তিনি শিক্ষক সমিতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ সালে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি শুরু করার পর যতদিন তিনি রাজনীতি করেছেন ততদিন তিনি কেবল জনগণের কল্যাণ, সুখ ও শান্তি এবং নিরাপত্তার লক্ষ্যে কেবল আল্লাহর সংগঠনের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি কোনদিন ক্ষমতা-লোভী ছিলেন না। ক্ষমতা কেন্দ্রীক রাজনীতি তিনি কোনদিন করেননি। ক্ষমতা কেন্দ্রীক রাজনীতি করলে উনার পক্ষে অনেকবার মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এবং অফার থাকলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে তিনি এদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুরোভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৬০ এর দশকে কমবায়নড অপজিশন পার্টিস (কপ), ডেমোক্রেটিক এ্যাকশান কমিটি (ডাক) এবং পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) এ অন্য সকল দল মিলে সফলভাবে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। কপ এবং পি ডি এম এ তিনি জি এস এর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি যখন পিডিএম এর জেনারেল সেক্রেটারী ছিলেন তখন পিডিএম এর কোষাধ্যাক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতা এবং বাংলাদেশ প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ সাহেব। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সাথে গোলটেবিল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সকল জেষ্ঠ নেতৃবৃন্দসহ একত্রে বৈঠক করেছেন এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে বিজয় দলের নিকট সত্বর ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। গোলটেবিল বৈঠকের ছবি এবং উনার বিবৃতি সবই পত্রিকায় এসেছে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শুরু থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যে আলোচনা চলছিল সে সময় তিনি এদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং শংকিত ছিলেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর না হলে দেশের জন্য যে অকল্যাণ হওয়ার আশংকা থাকে তা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলেন। ঐ সময় আওয়ামলী লীগ তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি কর্তৃক মনোনিত দলীয় স্পোক্সম্যান এবং বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব আমাদের মহল্লায় উনার স্ত্রীর বড় ভাই মরহুম জামান সাহবের বাসায় থাকতেন। প্রতিদিন পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট আওয়ামী লীগের আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় আমার বাবা আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে ইসলাম সাহেবের সাথে দেখা করতেন। উনাকে তখন বেশ চিন্তিত দেখা যেত। মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ সাহেবের সাথে উনার ঘনিষ্ঠতা থাকার কারণে উনার সাথেও উনি যোগাযোগ রাখতেন। ২৫ মার্চের সন্ধ্যায়ও উভয়ের সাথে অধ্যাপক গোলাম আযমের ফোনে আলাপ হয়েছে এবং উনারা উভয়ে অখন্ড পাকিস্তান কাঠামোর ভিতরে থেকেই ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে বলে আব্দুস সামাদ আজাদ আশ্বস্থ করেন। মরহুম সামাদ আজাদ সাহেব বেঁচে থাকতে পত্রিকায় অধ্যাপক আজমের এই দাবি প্রকাশিত হয়েছে যা মরহুম সামাদ আজাদ সাহেব অস্বীকার করেননি।

২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী হত্যাযজ্ঞের পর অধ্যাপক গোলাম আযম ও উনার দলের জন্য কী করণীয় তা উনাদের সামনে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ায়। অধ্যাপক গোলাম আযম ও উনার দল মনে করতেন যে, ১৯৪৭ সাল হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জনগণের উপর যে অবিচার, অন্যায়, ও শোষণ করা হয়েছিল তা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই অখন্ড পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামোর ভিতরে থেকেই সম্ভবপর ছিল। উনাদের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ছিল এবং এর পেছনে মূলত ১৯৪৭ হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ভারত কর্তৃক পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশ সমূহের প্রতি যে আধিপত্যবাদী মনোভাব উনারা দেখেছিলেন তার ফলেই উনাদের এই রাজনৈতিক দর্শনে ছিল। উনাদের এই রাজনৈতিক দর্শন মূলত উনাদের প্রজ্ঞা ও দূর দর্শনের কারণে এবং তিনটি আশংকার উপর ভিত্তি করে উনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ১. ভারতীয়ও কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমি হিসাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য যে বিরোধীতা করেছিলেন তার আলোকে উনারা মনে করেছিলেন ভারতের প্রথম উদ্দেশ্য ছিল চির শত্রু পাকিস্তানকে দুর্বল করা ২. যেহেতু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান যা বাংলাদেশ ভূখন্ড হিসেবে পরিচিত তার প্রায় তিন দিকেই ভারত বাংলাদেশ স্থল সীমা রয়েছে এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও ভারতের আধিপত্যে রয়েছে সেহেতু বাংলাদেশ একটি পৃথক রাষ্ট্র হলে ভারত সরকার তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে পারবে এবং উপনিবেশিক ও সাম্প্রসারণবাদীদের মত নতজানু সরকার প্রতিনিধি করে নিজ কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারবে ৩. বাংলাকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে অত্যন্ত সহজভাবে নিজেদের পণ্যের বাজার হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে।

অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৭১ সালে কোন রকমের কোন মানবতা বিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত ছিলেন না। আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এ কথা দাবি করতে চাই যে, উনার বিরুদ্ধে এই ট্রাইব্যুনালে আনীত সকল অভিযোগ মনগড়া, কাল্পনিক, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য স্বাধীনতার চল্লিশ বৎসর পর এ সমস্ত অভিযোগ আনা হয়েছে। যদি অধ্যাপক গোলাম আযম প্রকৃত পক্ষেই যুদ্ধাপরাধ করতেন তাহলে এবার ক্ষমতাসীন হওয়ার পূর্বে আওয়ামী লীগ এদেশে আরোও দুবার ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় উনার বিচার করাটাই স্বাভাবিক ছিল। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সময় ১৯৫ জন চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে তাদের বিচারের জন্য করা আইন সংশোধন করে স্বাধীনতার চল্লিশ বৎসর পরে অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বণকারী অধ্যাপক গোলাম আজমকে বিচারের আয়োজন করেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে দ্বিতীয় বারের মত সামরিক আইন জারি করার পর এদেশের ইতিহাসে প্রথম বারের মত কেয়ারটেকার সরকার ফর্মূলা পেশ করেন অধ্যাপক গোলাম আযম। ৮০ দশকে দ্বিতীয়ার্ধে অধ্যাপক গোলাম আযমসহ উনার দল, আওয়ামী লীগ, এবং অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দল এক্ষেত্রে সরকার বিরোধী আন্দোলন করেন। তখন পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযম “স্বাধীনতা বিরোধী”, “ঘাতক”, “রাজাকার”, “আল-বদর”, “দালাল” ইত্যাদি অভিহিত করে উনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হতো। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়নি। এদেশের ইতিহাসে প্রথম বারের মত কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হয় সে নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ১৮টি আসন পায়। প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল অর্থাৎ বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন লাভে ব্যর্থ হয়। অধ্যাপক গোলাম আযম জামায়াতে ইসলামীর আমির থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতা দলের মুখপাত্র সরকার গঠনের জন্য অধ্যাপক গোলাম আযম ও তার দলের সমর্থন চেয়েছিলেন, তখনও আওয়ামী লীগ অধ্যাপক গোলাম আযমকে যুদ্ধাপরাধীতে আখ্যা দেয় নাই। সরকার গঠনের সমর্থন প্রদানের পরিবর্তে তখন জামায়াতে ইসলামীকে আওয়ামী লীগ কর্তৃক দুইজন কেবিনেট মিনিষ্টারের পদ, ২ জন প্রতিমন্ত্রীর পদ এবং সাতজন সংরক্ষিত আসনে মহিলা সাংসদের পদ অফার করা হয়েছিল। অধ্যাপক গোলাম আযম প্রকৃত পক্ষে যুদ্ধাপরাধী হয়ে থাকলে সরকার গঠনের জন্য অধ্যাপক গোলাম আযম ও তার দলের নিকট এ ধরনের অফার বিস্মকর। এরপর ১৯৯১ সালে, আওয়ামলী লীগ, মনোনীত প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী প্রেসেডিন্টে পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য অধ্যাপক গোলাম আযমের দলের সমর্থন চেয়ে অধ্যাপক গোলাম আযমের সাথে ব্যক্তিগত সাক্ষাত করে যখন অধ্যাপক গোলাম আযমের আর্শিবাদ চেয়েছিলেন, তখনও তো আওয়ামী লীগ মনে করে নাই যে, অধ্যাপক গোলাম আযম “যুদ্ধাপরাধী” এর পূর্বে সামরিক শাসনের সময় যখন আওয়ামী লীগ এবং অধ্যাপক গোলাম আযম এর জামায়াতে ইসলামী এক সাথে সংসদে বসে রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনা করেছিলেন তখনও তো অধ্যাপক গোলাম আযম যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। নব্বই দশকের মাঝামাঝি বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে যখন আওয়ামী লীগ এবং অধ্যাপক গোলাম আযমের দল জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে একত্র আন্দোলন করে বিস্ময়করভাবে তখনও পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযম যুদ্ধাপরাধী নন। উল্লেখ করা যেতে পারে এর পূর্বে নব্বই দশকের শুরুতে যখন অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচার চেয়ে “ঘাদানিক”, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করা হয় সেই কমিটিও অধ্যাপক গোলাম আযমকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দেয়নি। ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে যখন ‘গণআদালত’ গঠন করা হয় এবং সেই আদালতে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তখনও অধ্যাপক গোলাম আযম ‘যুদ্ধাপরাধী’ ছিলেন না। ঘতক দালাল নির্মূল কমিটির এর আন্দোলনের ফলে ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে যখন অধ্যাপক গোলাম আযম গ্রেফতার হন এবং ১৬ মাস কারাবন্দী থাকেন, তখন উনার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ হতে উনাকে অব্যহতি দিয়ে মাননীয় আদালত উনাকে মুক্তির আদেশ দেন। সরকার পক্ষ মাননীয় আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপীল করলে সুপ্রীম কোর্টে ফুল বেঞ্চ উনার পক্ষে সর্বসম্মত রায় প্রদান করেন এবং উনার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ হতে উনাকে সসম্মানে অব্যহতি দেন। স্বাধীনতার পর প্রায় ৪০ বৎসর পর্যন্ত উনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে উনার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে অধ্যাপক গোলাম আযমকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যা দেওয়া শুরু হয়েছে এবং আজ এই ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত হিসাবে কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়েছে।

আমি এখন এই মামলায় অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু বলব। ১. অধ্যাপক গোলাম আযম কখনই কোন ধর্ম, গোত্র, বর্ণ, ব্যক্তি, গোষ্ঠি, দল এর বিরুদ্ধে বিদ্বেষপোষণ করতেন না। ১৯৭১ সালে উনার কোন বক্তব্যই কোন ধর্ম, গোত্র, বর্ণ, ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা কোন দল এর বিরুদ্ধে ছিল না। অধ্যাপক গোলাম আযম সাম্প্রদায়িক নন বরং তিনি সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল ছাত্র জীবনে তিনি এবং একজন অমুসলিম একত্রে এক প্যানেল থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। স্বাধীনতা পূর্ব এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে অধ্যাপক গোলাম আযম কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য রেখেছেন বা কোন কর্মকান্ড করেছেন এর কোন নজির নেই। বরঞ্চ স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে অমুসলিম সম্প্রদায়ের এক বিশাল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার লক্ষ্যে তিনি যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা ছিল সকলের জন্য শিক্ষনীয়। ১৯৭১ সালে অধ্যাপক গোলাম আযমের বক্তব্য বা বিবৃতির কারণে কেউ সাম্প্রদায়িক কোন কাজ করেছে সেটার নজির নেই।

(২) ১৯৭১ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম দুষ্কৃতিকারী বিদ্রোহী, সন্ত্রাসী ইত্যাদি বলে কোন বিশেষ ধর্ম বা দলকে আখ্যায়িত করেননি। বরঞ্চ যারা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করেছে এবং জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘিœত করেছে তাদেরকেই তিনি বুঝিয়েছেন। (৩) ১৯৭১ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা সহযোগী বাহিনীকে প্রশংসা করে বক্তব্য রেখেছেন কেবলমাত্র অখন্ড পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাদের অবদান ও ত্যাগের কারণে। তিনি কখনই কোন অবস্থাতেই পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বা তাদের সহযোগী বাহিনীর যে কোন অপকর্ম বা মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের প্রশংসা করেননি। উপরন্তু অধ্যাপক গোলাম আযমের বক্তব্য ও বিবৃতির কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী এবং সহযোগী বাহিনীসমূহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে মর্মে কোন প্রমাণ নেই। (৪) অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৭১ সালে দেশপ্রেমিক বলতে যারা পাকিস্তানের অখন্ডতায় বিশ্বাসী তাদেরকেই বুঝিয়েছেন। তিনি শান্তিপ্রিয়, নিরীহ, নিরস্ত্র কোন জনগণের বিরুদ্ধে কোনরূপ বক্তব্য দিয়েছেন তার কোন প্রমাণ নেই।
অধ্যাপক গোলাম আযমের বয়স নব্বইয়ের ঊর্ধ্বে। উনাকে যারা ব্যক্তিগতভাবে চিনেন এবং জানেন উনারা সকলেই জানেন ব্যক্তি হিসেবে অধ্যাপক গোলাম আযম সকলের নিকট অনুকরণীয়। অধ্যাপক গোলাম আযম এক জীবন্ত কিংবদন্তী। তিনি বাংলাদেশ নামক এই ভূখন্ডে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য উনার জীবনের প্রায় ৬০ বৎসর উৎসর্গ করেছেন। ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং তিনি শান্তিতে বিশ্বাসী। উনার সকল কর্মকান্ডই ছিল সাধারণ জনগণের সুখ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে কৃত কাল্পনিক অভিযোগ এনে এই ট্রাইবুনালে বিচারের সম্মুখীন করা দুঃখজনক। ৯০ বৎসর বয়ষ্ক একটি মানুষ যার বিরুদ্ধে বাল্যকাল থেকে এই অশীতিপর বৃদ্ধ অবস্থা পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ তো দূরের কথা, মানুষের সাথে সামান্যতম দুর্ব্যবহারের নজির নেই তিনি ১৯৭১ সালে ৯ মাস যে সমস্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার সাথে জড়িত বলে দাবি করা সম্পূর্ণ অবান্তর। এ প্রসঙ্গে আমি আরো বলতে চাই যে, প্রকৃত অপরাধী ধরা পড়ার ভয়ে কোন দিন অপরাধ স্থলে ফিরে আসে না। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব যদি ১৯৭১ সালে প্রকৃতপক্ষে অপরাধ করেই থাকতেন তাহলে তিনিও এই ভূখন্ড থেকে পালিয়েই থাকতেন।
তিনি তার জন্মভূমি ও মাতৃভূমিতে ফিরে আসার জন্য আকুল ছিলেন। কারণ তিনি জানতেন তিনি নিরপরাধ। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, মানুষ জন্ম গ্রহণ করে সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছায় নিজের ইচ্ছায় নয়। তিনি আরো বিশ্বাস করেন যে, সৃষ্টিকর্তা যাকে যে ভূমিতে জন্ম দিয়েছেন তিনি চান ঐ ব্যক্তি ঐ জন্মভূমিকেই মানুষের কল্যাণে কাজ করুক এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করুক। তাই তিনি ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত একান্ত বাধ্য হয়ে বিদেশে অবস্থান করলেও সব সময়ই দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল ছিলেন। প্রথম সুযোগেই এদেশের জনমানুষের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। ১৯৭৮ সাল থেকে বিগত ৩৪ বছর তিনি নিরলসভাবে এদেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন। অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যে সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, এগুলো তিনি করে থাকলে তিনি বিদেশের মাটিতে অনেক আরাম আয়েশে জীবন কাটাতে পারতেন। অধ্যাপক গোলাম আযমের মত একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক, লেখক ও যোগ্য নেতা অনায়াসেই পৃথিবীর যে কোন রাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে উনার বাকি জীবন কাটাতে পারতেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে বসবাসরত অবস্থাই উনাকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য বলা হয়েছিল। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য উনার নিকট আরো অনেক লোভনীয় অফার ছিল। উনার ছয় ছেলের মধ্যে পাঁচ জন্য বিদেশে অবস্থানরত। তিনি চাইলে ছেলেদের সাথেও স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারতেন। সকল কিছু উপেক্ষা করে তিনি দেশের টানে, দেশের মানুষের জন্য কল্যাণের কাজ করার উদ্দেশ্যে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। ১৯৭১ সালের শেষ দিকে উনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা এক নির্জলা মিথ্যা। সত্য হল তিনি ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর উনার দলের সাংগঠনিক সভায় যোগদানের জন্য তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান যান। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর তিনি বিমানযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পিআইএ-এর বিমান যখন তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসার জন্য ভারতের ভূখন্ডের উপর দিয়ে আসার কোন অনুমোদন ছিল না। তাই পিআইএ-এর বিমান শ্রীলংকা হয়ে ঢাকায় আসত। তখন পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ভারতীয় বিমান বাহিনী কর্তৃক ঢাকা বিমান বন্দরের রানওয়েতে বোমা বর্ষণ করে তা ব্যবহারের অনুপযোগী করে দেওয়ার ফলে বিমানটি কলম্বোতে অবতরণ করে। এরপর সেখানে রিফুয়েলিং করে পিআইএ-এর বিমানটি সৌদি আরব হয়ে পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করে। এরপর হতেই তিনি দেশে আসার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি ইংল্যান্ড চলে যান। ১৯৭৫ সালে তৎকালীন সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান ঘোষণা দেন যে, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক যে সমস্ত ব্যক্তিবর্গের অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করার জন্য নাগরিকত্ব হরণ করা হয়েছিল সে সকল ব্যক্তিবর্গ নাগরিকত্ব ফিরে পেতে চাইলে নাগরিকত্ব পূনরুদ্ধারের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযম নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য তিনবার আবেদন করেন। প্রতিবারই বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কোন কারণ না দেখিয়ে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। ইতোমধ্যে উনার বাবা ইন্তিকাল করেন। অধ্যাপক গোলাম আযম উনার বাবার লাশ দেখার জন্য দেশে ফিরতে পারেননি। ১৯৭৮ সালে উনার মা অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যু আসন্ন আশংকা করে তৎকালীণ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়ার কাছে আকুলভাবে আবেদন জানিয়ে মুত্যুর পূর্বে ছেলেকে দেখার আকাঙ্খা ব্যক্ত করে অধ্যাপক গোলাম আযমকে বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। তখন বাংলাদেশ সরকার উনাকে তিন মাসের জন্য ভিসা প্রদান করেন। যেহেতু আন্তর্জাতিক ভ্রমনের জন্য একটি ট্রাভেল ডকুমেন্ট দরকার হয়। তাই তিনি পাকিস্তান হতে ইংল্যান্ড যাওয়ার পূর্বে বাধ্য হয়ে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ড অবস্থানকালে তিনি সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন এবং ১৯৭৮ সালে সেই পাসপোর্টেই তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশে আসার পর তিনি পাকিস্তানী পাসপোর্ট সারান্ডার করে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধারের আবেদন জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেন।
বাংলাদেশ সরকার তখন উনার নাগরিকত্ব পুনর্বহাল না করলেও উনাকে বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করেননি। ৯০ এর দশকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে উনার নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করার পূর্ব পর্যন্ত ১৬ বৎসর তিনি নাগরিকত্ব হীনভাবেই বসবাস করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে, এদেশ উনার জন্মভূমি, এদেশ উনার মাতৃভূমি। তাই তিনি মনে প্রাণে নিজেকে খাটি বাংলাদেশী দাবি করতেন।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর নতুন জন্মলাভ করা পাকিস্তান রাষ্ট্র যেমন সকল নাগরিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানী নাগরিক হয়ে যায় ঠিক তদ্রƒপ এদেশ উনার জন্মভূমি হওয়ার কারণেই স্বাভাবিকভাবেই তিনিও এদেশের নাগরিক। উনার নাগরিকত্ব হরণ করার আদেশটি অবৈধ হওয়ার কারণেই এদেশের সর্বোচ্চ আদালত ঐ আদেশের বিরুদ্ধে এবং উনার পক্ষে রায় দিয়েছেন। ১৯৪৭ সালে এমন অনেক ব্যক্তি ছিলেন যারা ভারতবর্ষ বিভাগের পক্ষে ছিলেন না কিন্তু ১৯৪৭ সালে জন্মলাভের পর এমন বহু ব্যক্তি পাকিস্তান এসেছেন, থেকেছেন এবং রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পদে আসীন হয়েছেন। ১৯৪৭ সালে অখন্ড ভারতের পক্ষে থাকা যেমন একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল, ১৯৭১ সালে অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে থাকা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। ১৯৪৭ সালে যারা অখন্ড ভারতের পক্ষে ছিলেন তাদের যেমন দেশ প্রেমের ঘাটতি ছিলনা, কেবলমাত্র ভিন্ন দর্শনের কারণেই উনারা অখন্ড ভারতের পক্ষে ছিলেন, ১৯৭১ সালেও যারা অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন তাদেরও দেশ প্রেমের ঘাটতি ছিল না। এটা ছিল রাজনৈতিক এক দর্শনের প্রতিফলন। এর সংগে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ একীভূত করা বা যোগসাজস খোঁজা নিতান্তই কাল্পনিক।
১৯৭৩ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তান পুনুরুদ্ধার কমিটি গঠনের অভিযোগ সম্পূর্ণই কাল্পনিক, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি কখনই এ ধরনের কোন কমিটি গঠন করা তো দূরের কথা এই ধরনের কোন কমিটির সাথে সম্পৃক্ততা সম্পূর্ণ বানোয়াট। যারা উনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনেন তারা বিগত চল্লিশ বৎসর উনাদের এই অভিযোগ বা দাবির সপক্ষে কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। কেবলমাত্র অধ্যাপক গোলাম আযমকে রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় ফেলার জন্য বিগত চল্লিশ বৎসর থেকে উনার বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চলছে।
১৯৭০ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক উনার ভাইসহ প্রফেসর ডা. গোলাম মোয়ায্যম (যিনি বাদশার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলে বলা হয়েছে) সহ সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সালের সাক্ষাত করে বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য রাখার কথা যারা বলেন তারা ভুল বলেন। ডা. গোলাম মোয়ায্যম একজন প্যাথলজিস্ট। একজন প্যাথলজিস্ট সৌদি বাদশাহর ব্যক্তিগত চিকিৎসক হওয়ার দাবি হাস্যকর। উপরন্তু যারা প্রটোকল সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান রাখেন তারা সকলেই জানেন সৌদি বাদশহর প্রটোকলে অধ্যাপক গোলাম আযমের মত ব্যক্তির সংগে রাজ প্রাসাদের একান্ত বৈঠকে (যদি হয়েও থাকে) সে সময় একজন ও’ লেভেল অধ্যয়নরত ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত থাকা অবিশ্বাস্য। (চলবে)
২১-১১-২০১২ ইং তারিখে পুনরায় জবানবন্দী শুরু
আমি আজকে আমার জবানবন্দীর সমর্থনে ও অভিযুক্তের পক্ষে কিছু দলিলপত্র প্রদর্শন করব। যথা: মার্শাল ল’ কমান্ড চ্যানেল প্রদর্শনী-অ হিসেবে চিহ্নিত হইল। কমান্ড স্ট্রাকচার, কমান্ড রিলেশনশীপ অ্যান্ড কমান্ড কন্ট্রোল প্রদর্শনী-ই হিসেবে চিহ্নিত হইল। স্টাটাস অব কমান্ড প্রদর্শনী-ঈ হিসাবে চিহ্নিত হইল। প্রদর্শনী- অ, ই এবং ঈ আমার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত। প্রফেসর গোলাম আযমঃ এ প্রোফাইল অব ষ্ট্রাগল ইন দি কজ অব আল্লাহ বাই নূরুজ্জামান এর ফটোকপি প্রদর্শনী- উ হিসেবে চিহ্নিত হইল। জননেতা প্রফেসর গোলাম আযম বাই শেখ আখতার হোসেনের ফটোকপি প্রদর্শনী- ঊ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একাডেমিক সার্টিফিকেট অব গোলাম আযম এর ফটোকপিসমূহ প্রদর্শনী- ঋ-ঋ/৭ হিসেবে চিহ্নিত হইল। এ্যান এ্যাড্রেস অব ওয়েলকাম টু দ্যা অনারেবল জনাব লিয়াকত আলী খান, প্রাইম মিনিষ্টার অব পাকিস্তান তারিখ ২৭ নভেম্বর, ১৯৪৮ এর ফটোকপি প্রদর্শনী- এ হিসেবে চিহ্নিত হইল। অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক রচিত “জীবনে যা দেখলাম” বইয়ের ১ম ও ৩য় খন্ড প্রদর্শনী- ঐ এবং ঐ১ হিসেবে চিহ্নিত হইল (ভলিউম- ১ এর পৃষ্টা ১৩৬-১৬৫ পর্যন্ত)।

জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভূমিকা, প্রফেসর গোলাম আযম বই এর ফটোকপি প্রদর্শনী- ১ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ (অনুবাদের মূল) বই সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী প্রদর্শনী- এ হিসেবে চিহ্নিত হইল। থ্রো দি ক্রাইসিস এস এম জাফর বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী- ক হিসেবে চিহ্নিত হইল। দি সান বিহাইন্ড দি কাউডস বই ফরিদ আহমেদ বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী- ক হিসেবে চিহ্নিত হইল। পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক সম্মেলন বাই প্রফেসর গোলাম আযম বই প্রদর্শনী- গ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ০১-০১-১৯৮৪ ইং এর দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার “রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের বছর” শিরোনাম যুক্ত খবরের ফটোকপি প্রদর্শনী- ঘ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকার ০৬-০৪-১৯৮৪ ইং তারিখের “অধ্যাপক গোলাম আযমের বিবৃতি- সরকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে মৌলিক রাজনৈতিক বিষয়ে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে।” শিরোনাম যুক্ত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- ঙ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকায় ২৩-০২-১৯৮৪ ইং তারিখের “ভাষা দিবসে জামায়াতের আলোচনা সভা” শিরোনামে খবরের ফটোকপি প্রদর্শনী- চ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকায় ১৬-০৭-১৯৯৪ ইং তারিখের অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক কেয়ারটেকার সরকারের দাবি সম্বলিত খবরের ফটোকপি প্রদর্শনী- ছ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকায় ১০-০৮-১৯৯৪ এর তারিখের “ইসলামী আন্দোলন অপপ্রচার ও সন্ত্রাসবাদের শিকার” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- জ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকার ২৮-০৮-১৯৯৪ ইং তারিখের “কেয়ারটেকার সরকারের অধীন নির্বাচনের বিল পাশ জরুরী হয়ে পড়েছে” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- ঝ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকার ২৬-১১-১৯৯৪ ইং তারিখের “তাকবির মুখরিত লাখ জনতা শ্লোগান” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- ঞ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকার ০২-১০-১৯৯৪ ইং তারিখের “নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকার চাই” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- ট হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকার ১১-১০-১৯৯৪ ইং তারিখের “সরকারি কর্মচারিদের নিয়ন্ত্রণের জন্য” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- ঠ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকার ২৯-১০-১৯৯৪ ইং তারিখের “সিলেটের লাখ কণ্ঠের শ্লোগান” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- ড হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকার ২৩-০২-১৯৯৪ ইং তারিখের “তমদ্দুন মজলিসের আলোচনা সভা” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- ঢ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকার ২৭-১১-১৯৯৪ ইং তারিখের “সাংবিধানিকভাবে কেয়ারটেকার সরকারের ব্যবস্থা করতে হবে” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- ণ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকার ১৮-১১-১৯৯৪ ইং তারিখের “জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকদের সাথে মত বিনিময়” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- ত হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকার ০৭-১২-১৯৯৪ ইং তারিখের “বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিরাট জনসভায় অধ্যাপক গোলাম আযম” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- অঅ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকার একই তারিখের “জামায়াত আ’লীগ ও জাপার আন্দোলনের কর্মসূচি” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- অই হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকায় ১১-১২-১৯৯৪ ইং তারিখের “জামায়াতের নব নির্বাচিত শূরার বৈঠক শুরু” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- অঈ হিসেবে চিহ্নিত হইল। দেশবাসীর খেদমতে আমার জন্মগত নাগরিক অধিকার প্রসংগ- গোলাম আযম পুস্তিকার ফটোকপি প্রদর্শনী- অউ হিসেবে চিহ্নিত হইল। সাংবাদিক সাক্ষাতকারে অধ্যাপক গোলাম আযম নামক পুস্তিকার ফটোকপি প্রদর্শনী- অঊ হিসেবে চিহ্নিত হইল। অধ্যাপক গোলাম আযমের ঐতিহাসিক ভাষণ সম্বলিত পুস্তিকার ফটোকপি প্রদর্শনী- অঋ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ১৮-১২-২০১১ দৈনিক নয়া দিগন্তে অধ্যাপক গোলাম আযমের সাক্ষাতকার সম্বলিত খবরের ফটোকপি প্রদর্শনী- অএ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ১৫-১২-২০১১ তারিখে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় প্রকাশিত “টি.ভি সাক্ষাতকারে ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- অঐ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ১৩-১১-২০১১ ইং তারিখে ডেইলী স্টার পত্রিকায় অন লাইন সংস্করণে রিজয়েন্ডার, আওয়ার রিপ্লাই শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী- অও হিসেবে চিহ্নিত হইল (প্রসিকিউশনের আপত্তি সহকারে)। মিডিয়ার মুখোমুখি অধ্যাপক গোলাম আযম পুস্কিকা প্রদর্শনী- অঔ হিসেবে চিহ্নিত হইল। (চলবে)


২২-১১-২০১২ ইং তারিখে পুনরায় জবানবন্দী শুরুঃ
আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন বাই প্রফেসর গোলাম আযম এর ফটোকপি প্রদর্শনী-অক হিসেবে চিহ্নিত হইল। জামায়াতে ইসলামীর কর্মনীতি বাই প্রফেসর গোলাম আযম এর ফটোকপি প্রদর্শনী-অখ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ইসলামী আন্দোলন সাফল্য ও বিভ্রান্তি বাই প্রফেসর গোলাম আযম বইয়ের প্রদর্শনী-অগ হিসাবে চিহ্নিত হইল। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও জামায়াতে ইসলামী বাই প্রফেসর গোলাম আযম বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী- অঘ হিসেবে চিহ্নিত হইল। আল্লাহর খেলাফত কায়েমের দায়িত্ব ও পদ্ধতি বাই প্রফেসর গোলাম আযম এর ফটোকপি প্রদর্শনী- অঙ হিসেবে চিহ্নিত হইল। বিশ্ব নবীর জীবনের রাজনীতি বাই প্রফেসর গোলাম আযম বই প্রদর্শনী- অচ হিসেবে চিহ্নিত হইল। জামায়াতে ইসলামীর বৈশিষ্ট বাই প্রফেসর গোলাম আযম বইয়ের প্রদর্শনী- অছ হিসেবে চিহ্নিত হইল। বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী বাই প্রফেসর গোলাম আযম প্রদর্শনী- অজ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ইকামতে দ্বীন বাই প্রফেসর গোলাম আযম বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী- অঝ হিসেবে চিহ্নিত হইল। অমুসলিম নাগরিক ও জামায়াতে ইসলামী বাই প্রফেসর গোলাম আযম বই প্রদর্শনী- অঞ হিসেবে চিহ্নিত হইল। গঠনতন্ত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী- অট হিসেবে চিহ্নিত হইল। গঠনতন্ত্র পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘ বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী- অঠ হিসেবে চিহ্নিত হইল। রাজনৈতিক দলের সংস্কার বাই প্রফেসর গোলাম আযম বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী- অড হিসেবে চিহ্নিত হইল। পাকিস্তান’স রিলেশন উইথ ইন্ডিয়া, ১৯৪৭-১৯৯৬ বাই জি-ডাব্লিউ, চৌধুরী বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী- অঢ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ইমাজ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ফরেন পলিসি অব বাংলাদেশ পুস্তিকার কভার পেজসহ ইমতিয়াজ আহম্মেদ লিখিত প্রবন্ধ “দি সুপার পাওয়ারস’ স্ট্যাটিজি ইন দি থার্ড ওয়াল্ডঃ দি ১৯৭১ সাউথ এশিয়ান ক্রাইসিস” এর ফটোকপি প্রদর্শনী- অণ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ভুইয়া ইকবাল সম্পাদিত সমাজ ও সংস্কৃতি নামক পুস্তিকার কভার পেজসহ আকমল হোসেন রচিত “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ভারতের ভূমিকা” শীর্ষক প্রবন্ধের ফটোকপি প্রদর্শনী- অত হিসেবে চিহ্নিত হইল। বি রমন লিখিত “র এর কাওবয়েরা” নামক বইয়ের অনুবাদ প্রদর্শনী- ইঅ হিসেবে চিহ্নিত হইল। আবু রুশদ রচিত “বাংলাদেশে র” নামক বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী- ইই হিসেবে চিহ্নিত হইল। রাও ফরমান আলী খান রচিত “বাংলাদেশের জন্ম” নামক বইয়ের অনুবাদ প্রদর্শনী- ইঈ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ইন্ডিয়া- বাংলাদেশ রিলেশনস ভলিউম- ১ এর কভার পেজসহ ৯ নম্বর পাতার ফটোকপি প্রদর্শনী- ইউ হিসেবে চিহ্নিত হইল। কমপ্লেইœড রেজিষ্টার ক্রমিক নং- ১ তারিখ ২১ জুলাই, ২০১০ এর জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণপত্র যাহা আসামী মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের কেস (আই.সি.টি.বি.ডি কেস নং- ০৩/১১) প্রসিকিউশন পক্ষ হইতে প্রদত্ত (প্রথম খন্ড) জাহাঙ্গীরপুর ডেভেলপমেন্ট সেন্টার পিস কমিটির ১৫-০৪-১৯৭১ তারিখের রেজুলেশন নম্বর- ১ এর ট্রুকপির ফটোকপি প্রদর্শনী- ইঊ হিসেবে চিহ্নিত হইল। উল্লেখিত ডকুমেন্ট ভলিউমে থাকা এ.ডি.সি জেনারেল ময়মনসিংহ কর্তৃক মহকুমা সদরে পাঠানো টেলিগ্রামের তারিখ ১৫ মে, ১৯৭১ প্রদর্শনী- ইঋ হিসেবে চিহ্নিত হইল। উল্লেখিত ডকুমেন্ট ভলিউমে থাকা এস.ডি.ও. নেত্রকোনা কর্তৃক সংশ্লিষ্ট থানার সার্কেল অফিসারদের নিকট প্রেরিত ১৫-০৫-১৯৭১ তারিখের নির্দেশনার ফটোকপি প্রদর্শনী- ইএ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই ডকুমেন্ট ভলিউমে থাকা টেলিগ্রাম বাই এস.ডি.ও নেত্রকোনা টু সার্কেল অফিসার তারিখ ১৫-০৫-১৯৭১ এর ফটোকপি প্রদর্শনী- ইঐ হিসেবে চিহ্নিত হইল। সার্কেল অফিসার (ডেভেলপমেন্ট) মোহনগঞ্জ, ময়মনসিংহ কর্তৃক এস.ডি.ও নেত্রকোনাকে প্রেরিত ১৯-০৫-১৯৭১ তারিখের পত্রের ফটোকপি প্রদর্শনী- ইও হিসেবে চিহ্নিত হইল। উল্লেখিত একই ডকুমেন্ট ভলিউমে সার্কেল অফিসার (ডেভেলপমেন্ট) দুর্গাপুর, ময়মনসিংহ কর্তৃক প্রেরিত এস.ডি.ও নেত্রকোনার নিকট প্রেরিত ২১-০৫-১৯৭১ তারিখের পত্রের ফটোকপি প্রদর্শনী- ইঔ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই ডকুমেন্ট ভলিউমে উল্লেখিত সার্কেল অফিসার (ডেভেলপমেন্ট) বারহাট্টা কর্তৃক এস.ডি.ও নেত্রকোনার নিকট প্রেরিত ২৩-০৫-১৯৭১ তারিখের পত্রের ফটোকপি প্রদর্শনী- ইজ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই ডকুমেন্ট ভলিউমে উল্লেখিত সার্কেল অফিসার (ডেভেলপমেন্ট) বারহাট্টা কর্তৃক এস.ডি.ও নেত্রকোনার নিকট প্রেরিত ৩০-০৫-১৯৭১ তারিখের পত্রের ফটোকপি প্রদর্শনী- ইখ হিসেবে চিহ্নিত হইল। কৈলাটি ইউনিয়ন পিস কমিটির ০৫-০৭-১৯৭১ তারিখের সভার কার্যবিবরণীর ফটোকপি প্রদর্শনী- ইগ হিসেবে চিহ্নিত হইল। (চলবে)
০৮-০১-২০১৩ইং পুনরায় জবানবন্দী শুরুঃ-
মেদনি ইউনিয়ন কাউন্সিল পিস কমিটির ০৭-০৭-১৯৭১ইং তারিখের সভার কার্যবিবরণীয় ফটোকপি প্রদর্শনী-ইঘ হিসাবে চিহ্নিত হইল। লক্ষ্মীগঞ্জ পিস কমিটির ০৮-০৭-১৯৭১ইং তারিখের সভার কার্যবিবরণীয় ফটোকপি প্রদর্শনী- ইঙ হিসাবে চিহ্নিত হইল। রাউহ্য পিস কমিটির ১২-০৭-১৯৭১ইং তারিখের সভার কার্যবিবরণীর ফটোকপি প্রদর্শনী- ইচ হিসাবে চিহ্নিত হইল। ১২-০৭-১৯৭১ইং তারিখে এ,ডি,সি (জেনারেল), ময়মনসিংহ কর্তৃক নেত্রকোনার মহকুমা প্রশাসকের নিকট প্রেরিত পত্রের ফটোকপি প্রদর্শনী – ইছ হিসাবে চিহ্নিত হইল। আমতলা পিস কমিটির ১৩-০৭-১৯৭১ইং তারিখের সভার কার্যবিবরণীর ফটোকপি প্রদর্শনী- ইজ হিসাবে চিহ্নিত হইল। ১৯-০৮-১৯৭১ইং তারিখের ডি,সি, ময়মনসিংহ কর্তৃক নেত্রকোনার মহকুমা প্রশাসকের নিকট প্রেরিত পত্রের ফটোকপি প্রদর্শনী- ইঝ হিসাবে চিহ্নিত হইল। জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়ন কাউন্সিলের গত ১৫-০৪-১৯৭১ইং তারিখের সভার কার্যবিবরণীয় ফটোকপি প্রদর্শনী- ইঞ হিসাবে চিহ্নিত হইল। রাজাকার অর্ডিনেন্সের ফটোকপি প্রদর্শনী- ইট হিসাবে চিহ্নিত হইল। “৭১-এ কি ঘটেছিল রাজাকার কারা ছিল” নামীয় বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী- ইঠ হিসাবে চিহ্নিত হইল। “বাংলাদেশঃ দ্যা আনফিনিসড রেভ্যুলেশন” বইয়ের পার্ট-২ এর পাতা ৯৮ হতে ১৫৩ পর্যন্ত এর ফটোকপি প্রদর্শনী- ইড হিসাবে চিহ্নিত হইল। “পাকিস্তান্স ক্রাইসিস ইন লিডাশীপ” নামীয় বইয়ের চ্যাপ্টার-৫ পাতা ৭১ থেকে ১৩০ পর্যন্ত এর ফটোকপি প্রদর্শনী- ইঢ হিসাবে চিহ্নিত হইল। লেঃ জেনারেল (অবঃ) এ,এ,কে, নিয়াজী কর্তৃক লিখিত “দি বিট্রেয়াল অব ইষ্ট পাকিস্তান” নামক বই প্রদর্শনী - ইণ সিসাবে চিহ্নিত হইল। গেজেট রিগার্ডিং রাজাকার অর্ডিনেন্স-১৯৭১ তারিখ ০৭-০৯-১৯৭১ এর সত্যায়িত অনুলিপি প্রদর্শনী- ইত হিসাবে চিহ্নিত হইল। গেজেট ডিগার্ডিং রাজাকার অর্ডিনেন্স-১৯৭১ তারিখ ০৭-০৯-১৯৭১ এর সত্যায়িত অনুলিপি প্রদর্শনী -ঈঅ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ডকুমেন্টস অন রাজাকারস, দেয়ার ট্রেনিং অ্যান্ড অর্গানাইজেশনস সহ তাহাদের সিলেবাস এবং সাধারণ নির্দেশাবলীর সত্যায়িত অনুলিপি প্রদর্শনী - ঈই হিসাবে চিহ্নিত হইল। ইন্সট্রমেন্ট অব সারেন্ডার তারিখ ১৬-১২-১৯৭১ এর সত্যায়িত অনুলিপি প্রদর্শনী - ঈঈ হিসাবে চিহ্নিত হইল। গভমেন্ট অব ইস্ট পাকিস্তান, ডিরেক্টরেট অব রাজাকারস কর্তৃক এ্যাসিসট্যান্ট ডিরেক্টর অব রাজাকার এর প্রতি প্রেরিত ১২-০৮-১৯৭১ইং তারিখের পত্রের ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈউ হিসেবে চিহ্নিত হইল। গর্ভর্ণরস অব ইস্ট পাকিস্তানের স্পেশাল রিলিফ ফান্ড থেকে রাজাকারদের মঞ্জুরী প্রদানের নির্দেশনাপত্র তারিখ ২৩-০৮-১৯৭১ইং তারিখের পত্রের ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈঊ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই বিষয়ে গভর্ণরস অব ইস্ট পাকিস্তানের ২৩-০৮-১৯৭১ইং তারিখের জেলা প্রশাসকদের প্রতি প্রেরিত পত্রের ফটোকপি প্রদর্শনী-......ঈঋ হিসেবে চিহ্নিত হইল। নেত্রকোনা মহকুমার রাজাকারদের দৈনন্দিন কার্যাবলীর ফটোকপি তারিখ ২৪-০৮-১৯৭১ইং প্রদর্শনী-ঈএ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ভেরিফিকেশন অব রাকাজার সংক্রান্তে জি,এস,ও, ২ এর নির্দেশ তারিখ ০৮-০৯-১৯৭১ইং এর ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈঐ হিসেবে চিহ্নিত হইল। একই বিষয়ে উল্লেখিত কর্তৃপরে ভেরিফিকেশন অব রাজাকার সংক্রান্তে নির্দেশ তারিখ ০৯-০৯-১৯৭১ইং এর ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈও হিসেবে চিহ্নিত হইল। নেত্রকোনা মহকুমার রাজাকার এ্যাডজুটেন্ট এর ১৬-০৯-১৯৭১ইং তারিখ হতে ১৯-০৯-১৯৭১ইং তারিখ পর্যন্ত ডেইলী ষ্টেটমেন্টস অব রাজাকার এর ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈঔ-ঈঔ৪ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ১৯-০৯-১৯৭১ইং তারিখ সমাপ্ত সপ্তাহের রাজাকার এ্যাডজুটেন্ট, নেত্রকোনা মহকুমা কর্তৃক প্রস্তুতকৃত সাপ্তাহিক রিপোর্টের ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈক হিসেবে চিহ্নিত হইল। ডেইলী ষ্টেটমেন্ট অব রাজাকারস তারিখ ২২-০৯-১৯৭১ইং এবং ২৩-০৯-১৯৭১ইং, নেত্রকোনা মহকুমা এর  ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈখ-ঈখ১ হিসেবে চিহ্নিত হইল। অস্ত্রধারী রাজাকারদের সম্মিলিত তালিকা, সাপ্তাহিক রিপোর্ট, দৈনন্দিন কার্যাবলীর রিপোর্ট এর ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈগ-ঈগ৭২ হিসেবে চিহ্নিত হইল। কোম্পানী কমান্ডারের জন্য নির্বাচিত রাজাকারদের তালিকা প্রদর্শনী-ঈঘ হিসেবে চিহ্নিত হইল। নেত্রকোনার রাজাকার এ্যাডজুটেন্ট কর্তৃক ২০-১০-১৯৭১ইং তারিখে নেত্রকোনার এ,এস,এম,এল,এ, এর নিকট প্রেরিত পত্রের ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈঙ-ঈঙ২ হিসেবে চিহ্নিত হইল। নেত্রকোনা মহকুমার রাজাকারদের পাকি রিপোর্টের ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈচ-ঈচ২ হিসেবে চিহ্নিত হইল। তদন্ত সংস্থা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বাংলাদেশ, কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার ক্রমিক নং-১, তারিখ ২১শে জুলাই, ২০১০ সংক্রান্তে জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণপত্র (৬ষ্ঠ খণ্ড) এর ১৯৩৫ পাতা হতে ১৯৫১ পর্যন্ত এর ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈছ হিসেবে চিহ্নিত হইল। তদন্ত সংস্থা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বাংলাদেশ, কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার ক্রমিক নং-১, তারিখ ২১ জুলাই, ২০১০ সংক্রান্তে জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণপত্র (৩য় খন্ড) এর ১১১৪ পাতায় ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈজ হিসেবে চিহ্নিত হইল। তদন্ত সংস্থা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বাংলাদেশ, কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার ক্রমিক নং-১ তারিখ ২১ জুলাই, ২০১০ সংক্রান্ত জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণপত্র (৪র্থ খন্ড) উল্লেখিত পাকিস্তান আর্মি এ্যাস্টের সংশোধনী সম্বলিত অর্ডিনেন্স নম্বর ঢওওও ড়ভ ১৯৭১ এর সত্যায়িত অনুলিপির ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈঝ হিসেবে চিহ্নিত হইল। তদন্ত সংস্থা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বাংলাদেশ, কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার ক্রমিক নং-১, তারিখ ২১ জুলাই, ২০১০ সংক্রান্তে জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণপত্র (৫ম খণ্ড) এর ১৭১৯ পাতার ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈঞ হিসেবে চিহ্নিত হইল। মেজর জেনারেল (অবঃ) শওকত রেজা কর্তৃক লিখিত “দি পাকিস্তান আর্মি ১৯৬৬-৭১” এর প্যাপ্টার ৪ এবং ৫ এর পাতা ১০১ হতে ১৩১ এর ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈট হিসেবে চিহ্নিত হইল। মেজর জেনারেল (অবঃ) ফজল মুকিম খান কর্তৃক লিখিত “পাকিস্তানস ক্রাইসিস ইন লিডারশীপ” নামীয় বইয়ের ১১৫ পাতা হতে ১৩১ পাতা এবং ১৫৯ পাতা হতে ১৭৩ পাতা পর্যন্ত এর ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈঠ হিসেবে চিহ্নিত হইল। সৈয়দ আলমদার রাজাক কর্তৃক লিখিত “ঢাকাস ডিবাকল” নামক বইয়ের পাতা ৬১ হতে ৬৫ পর্যন্ত এর ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈড হিসেবে চিহ্নিত হইল। (চলবে)


০৮-০১-২০১৩ইং ২:০০মিঃ পুনরায় জবানবন্দী শুরুঃ-
দৈনিক ইনকিলাবের সাথে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের ঐতিহাসিক সাাতকার আলআযামী পাবলিকশেনস কর্তৃক বই আকারে প্রকাশিত এর ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈঢ হিসেবে চিহ্নিত হইল। মিডিয়ার মুখোমুখি অধ্যাপক গোলাম আযম (অধ্যাপক গোলাম আযমের বিভিন্ন মিডিয়ার প্রদত্ত সাাতকারের ফটোকপি) প্রদর্শনী-ঈণ হিসেবে চিহ্নিত হইল। অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ও মহিউদ্দিন আহম্মেদ কর্তৃক সম্পাদিত “পাকিস্তানিদের দৃষ্টিতে ৭১” বইয়ের ৩১১ হতে ৩৬০ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদর্শনী-ঈত হিসেবে চিহ্নিত হইল। হিসাবে চিহ্নিত হইল। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ রিলেশনস, ডকুমেন্টস ১৯৭১-২০০২ ভলিউম-৫ এর উল্লেখিত ভারতীয় লোকসভায় তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ সহ ২৭ এবং ৩১ মার্চ, ১৯৭১ তারিখের লোকসভার কার্যবিবরণীর ফটোকপি প্রদর্শনী-উঅ হিসেবে চিহ্নিত হইল। বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ভলিউম-২ এ উল্লেখিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে মিঃ মাহমুদ আলী কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্যের ফটোকপি প্রদর্শনী-উই হিসেবে চিহ্নিত হইল। গর্ভমেন্ট অব পাকিস্তান কর্তৃক প্রকাশিত “হোয়াইট পেপার অন দি ক্রাইসিস ইন ইস্ট পাকিস্তান” বইয়ের ৪৫ পাতা হতে ৫৩ পর্যন্ত ফটোকপি প্রদর্শনী-উঈ হিসেবে চিহ্নিত হইল। হাসান আসকরী রিজভী কর্তৃক লিখিত “ইন্টারনাল স্ট্রাইফ অ্যান্ড এক্সটারনাল ইন্টারভেনশন” বইয়ের ১১৪ পৃষ্ঠা হতে ২৭১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ফটোকপি প্রদর্শনী-উউ হিসেবে চিহ্নিত হইল। ডঃ সফদার মাহমুদ কর্তৃক লিখিত “দি ডেলিভারেট ডিবাকুল” নামীয় বইয়ের ৫৫ পৃষ্ঠা হতে ১৯৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ফটোকপি প্রদর্শনী-উঊ হিসেবে চিহ্নিত হইল। অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক লিখিত “ভারতীয় আগ্রাসন ও বাঙ্গালী মুসলমান” নামক বই এর ফটোকপি প্রদর্শনী-উঋ হিসেবে চিহ্নিত হইল। অধ্যাপক গোলাম আযম কতৃৃক লিখিত “পলাশী থেকে বাংলাদেশ” নামক বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী-উএ হিসেবে চিহ্নিত হইল।অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক রচিত “স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন” নামক বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী-উঐ হিসেবে চিহ্নিত হইল।“পাকিস্তান হরাইজন” নামক জার্নালের ভলিউম ঢঢঠ, ঘড়, ১,১৯৭২ চধমব ঘড়. ২১-২৩ এর ফটোকপি প্রদর্শনী-উও হিসেবে চিহ্নিত হইল। মোঃ তাজাম্মুল হোসেন কর্তৃক লিখিত “বাংলাদেশ ভিকটিম অব ব্লাক প্রোপাগ্রান্ডা, ইনট্রিগ অ্যান্ড ইন্ডিয়ান হেজিমনি” বইয়ের পাতা ৩২ থেকে ৫২ এর ফটোকপি প্রদর্শনী-উঔ হিসেবে চিহ্নিত হইল। সরফরাজ হোসাইন মির্জা কর্তৃক সম্পাদিত “ইস্ট পাকিস্তান ক্রাইসিস” নামক বইয়ের ৪৯ থেকে ৯০ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদর্শনী-উক হিসেবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক নয়া দিগন্তের ১৮ইং ডিসেম্বর, ২০১১ইং তারিখের “দুর্ভাগ্য, আমাদের আশংকা সত্য প্রমাণিত হয়েছে” মিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী-উখ হিসেবে চিহ্নিত হইল। আতিক হেলাল সম্পাদিত মেজর  জলিল রচনাবলীর “অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা” নামক বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী Ñউগ হিসাবে চিহ্নিত হইল। মো: আলমগীর কর্তৃক রচিত “ভাতের জেলে আমার বন্দী জীবন” নামক বইয়ের ১১ হতে ৩১ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদর্শনী Ñউঘ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক সংবাদে ১১-০৪-১৯৯২ ইং তারিখে প্রকাশিত “আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের দাবী” শিরোনামযুক্ত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী Ñউঙ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক ইত্তেফাক ১১-০৪-২০০৮ইং তারিখে প্রকাশিত “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে” শিরোনামযুক্ত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী Ñউচ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক নয়া দিগন্তের ০৯-০৫-২০০৯ইং তারিখে প্রকাশিত “৭১ এর বারো বছরের শিশু অধ্যক্ষ তাজুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা” শিরোনামযুক্ত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী Ñউছ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক আমার দেশে ০৫-০৭-২০০৯ইং তারিখে প্রকাশিত “যশোরে ১২ বছরের কিশোরের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা” শিরোনামযুক্ত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী Ñউজ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক নয়া দিগন্ত ১১-০৩-২০১০ইং তারিখে প্রকাশিত “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষে জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবেঃ ১৪ দল” শিরোনামযুক্ত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনীÑউঝ হিসাবে চিহ্নিত হইল।একই পত্রিকার ২৬-০৩-২০১০ইং তারিখে প্রকাশিত “স্বাধীনতা বিরোধীরা মন্ত্রীসভায়ও রয়েছে” শিরোনামযুক্ত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী Ñউঞ হিসাবে চিহ্নিত হইল। একই পত্রিকার ০৪-০৪-২০১০ইং তারিখে প্রকাশিত “কোন আইনজীবী আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বলে তাদেরও দেখতে চাইঃ নাসিম” শিরোনামযুক্ত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী Ñউট হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক ইনকিলাবে ১৭-০৪-২০১০ইং তারিখে প্রকাশিত “ইবনেসিনা ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও ইসলামী ব্যাংক সরকারের নিয়ন্ত্রণে না নিলে যুদ্ধাপরাধের মামলা বাধাগ্রস্থ হবে” শিরোনামযুক্ত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী Ñউঠ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ২২-০৪-২০১০ইং তারিখের “পরিদপুর আ.লীগ নেতাদের শেখ হাসিনা, পুতুলের দাদা শ্বশুর রাজাকার হলেও যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না, দেশে কোন রাজাকার নেই” শিরোনামযুক্ত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী Ñউড হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক নয়দা দিগন্তের ২১-১২-২০১০ইং তারিখে প্রকাশিত “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে না একথা বলা যাবে নাঃ আইন মন্ত্রী, রাজাকারদের নিজ হাতে গুলি করে মারতে পারলে শান্তি পেতামঃ হানিফ” শিরোনামযুক্ত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী Ñউঢ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক যুগান্তরের ০৩-১১-২০১১ইং তারিখে প্রকাশিত “আটকদের বিচার এ সরকারের আমলেই শেষ হবে: অর্থমন্ত্রী” শিরোনামযুক্ত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী Ñউণ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক আমার দেশ অন লাইন সংস্করণ এর ০৬-১২-২০১১ তারিখে প্রকাশিত “যুদ্ধাপরাধীদের সরাসরি প্রাণদন্ড দেয়া উচিৎঃ পাটমন্ত্রী” শিরোনামযুক্ত সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী Ñউত  হিসাবে চিহ্নিত হইল। (চলবে)


০৯-০১-২০১৩ইং পুনরায় জবানবন্দী শুরুঃ
জাহানারা ইমাম লিখিত “একাত্তরের দিনগুলি” নামক বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনীÑঊঅ হিসাবে চিহ্নিত হইল। আবুল আসাদ লিখিত “কালো পঁচিশের আগে ও পরে” নামক বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী-Ñঊই হিসাবে চিহ্নিত হইল। গভর্ণমেন্ট অব পাকিস্তানের ৭ই আগস্ট, ১৯৭১ এর প্রেস নোটের ফটোকপি প্রদর্শনী Ñঊঈ হিসাবে চিহ্নিত হইল। মিজানুর রহমান খান কর্তৃক সম্পাদিত “১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল” নামক বইয়ের ২৯৭ থেকে ২৯৯ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদশর্নী Ñঊউ হিসাবে চিহ্নিত ইল। সেক্টর কমান্ডারÑ১ এর অধিনায়ক কর্তৃক কমান্ডার ইন চীফ, বাংলাদেশ ফোর্স বরাবর লিখিত ৪ঠা ডিসেম্বর, ১৯৭১ এর পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊঊ হিসাবে চিহ্নিত হইল। সরফরাজ হোসেন মির্জা কর্তৃক সম্পাদিত “নট দি হোল ট্রুথ” বইয়ের ১৯ থেকে ২৫ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদর্শনী Ñঊঋ হিসাবে চিহ্নিত ইল। এ.এম.এ. মুহিত কর্তৃক লিখিত “বাংলাদেশ, ইমারজেন্স অব এ নেশন” বইয়ের ২৩৫ থেকে ২৫৭ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊএ হিসাবে চিহ্নিত হইল। মেজর জেনারেল (অব:) ফজল মুকিম খান কর্তৃক লিখিত “পাকিস্তানস ক্রাইসিস ইন লিডারশীপ” বইয়ের ৯২ থেকে ১৪৬ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊঐ হিসাবে চিহ্নিত হইল। প্রথমা প্রকাশনীর “মুক্তিযেুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন” নামক বইয়ের ৩৭ থেকে ১৪৩ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊও হিসাবে চিহ্নিত হইল। ঢাকা গেজেট ১লা এপ্রিল, ১৯৭১ এর ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊঔ হিসাবে চিহ্নিত হইল। ঢাকা গেজেট ১০ আগস্ট ১৯৭১ এর ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊক হিসাবে চিহ্নিত হইল। আহমদ ছফা লিখিত  বেহাত বিপ্লব” বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊধ হিসাবে চিহ্নিত হইল। কুতুবুদ্দিন আজিজ কর্তৃক লিখিত “ব্লাড অ্যান্ড টিয়ারস” নামক বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊগ হিসাবে চিহ্নিত হইল। মাছুদুল হক কর্তৃক লিখিত “স্বাধীনতার ঘোষণা, মিথ ও দলিল” নামক বইয়ের ২৩ থেকে ৪৫ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊঘ হিসাবে চিহ্নিত হইল। রওনক জাহান কর্তৃক লিখিত !পাকিস্তানঃ ফেইলিওর ইন ন্যাশনাল ইন্ট্রিগ্রেশন” বইয়ের ১৮৫ থেকে ২০৫ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊঙ হিসাবে চিহ্নিত হইল। জি. ডাব্লিউ চৌধুরী কর্তৃক লিখিত “অখন্ড পাকিস্তানের শেষ দিনগুলি”  নামক বইয়ের ৭৪ থেকে ১০৩ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊচ হিসাবে চিহ্নিত হইল। মওদুদ আহমেদ কর্তৃক লিখিত “বাংলাদেশ: স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতা” নামক বইয়ের ১৬৮  থেকে ২০৭ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊছ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দি গার্ডিয়ানের ৬ই জুন, ১৯৭২ এর সংখ্যার নির্ধারিত অংশের ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊজ হিসাবে চিহ্নিত হইল। মো: তাজাম্মুল হোসেন কর্তৃক লিখিত “বাংলাদেশ ভিটটিম অব ব্লাক প্রোপাগান্ডা, ইনট্রিগ অ্যান্ড ইন্য়িান হেজিমনি” বইয়ের পাতা ৫৩ থেকে ৭০ এর ফটোকপি প্রদর্শন Ñঊঝ হিসাবে চিহ্নিত হইল। সুকুমার বিশ্বাস কর্তৃক সম্পাদিত “বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার, মুজিবনগর, গভর্ণমেন্ট ডকুমেন্টস, ১৯৭১” নামক বইয়ে উল্লেখিত ৭ই জুলাই, ১৯৭১, ৪ঠা ডিসেম্বর, ১৯৭১, ৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১, ৮ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্রচারিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি ও সংশ্লিষ্ট সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনÑঊঞ হিসাবে চিহ্নিত হইল। যঃঃঢ়://যরংঃড়ৎু.ংঃধঃব.মড়াব/পড়ঁহঃৎরবং/নধহমষধফবংয নামক ওয়েব সাইড থেকে টঝ.উবঢ়ধৎঃসবহঃ ড়ভ ঝঃধঃব, ড়ভভরপব ড়ভ ঃযব যরংঃড়ৎরধহ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ফটোকপি প্রদর্শনীÑঊট হিসাবে চিহ্নিত হইল। বাংলাদেশ গেজেট তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ এর ফটোকপি প্রদর্শনীÑঊঠ হিসাবে চিহ্নিত হইল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ১৮ এপ্রিল, ১৯৭৩ এর নোটিফিকেশনের ফটোকপি প্রদর্শনীÑঊড হিসাবে চিহ্নিত হইল। বাংলাদেশ গেজেট ৩১ জানুয়ারী, ১৯৭২ এর অনুলিপির ফটোকপি প্রদর্শনী ফটোকপি প্রদর্শনীÑঊঢ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক বাংলা ১৮ই এপ্রিল, ১৯৭৩ এর “মে মাসের শেষ দিকে ঢাকায় বিশেষ ট্রাইব্যুনালে” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি ও সরকারের প্রেস রিলিজের অনুলিপি যথাক্রমে ফটোকপি প্রদর্শনীÑঊণ,Ñঊণ১, হিসাবে চিহ্নিত হইল (প্রসিকিউশনের আপত্তি সহকারে)। দিন বাংলাদেশ অবজারভারের ১লা ডিসেম্বর, ১৯৭৩ এর সংখ্যার “ওভার থার্টি থাউজেন্ট উইল বি ফ্রিড বাই ডিসেম্বর ফিফটিন, কেমেন্সি গ্রান্টেড: মার্ডার, আর্সান, রেপড কেসেস নট ইনকুডেড” শিরোনামের সংবাদ প্রদর্শনীÑঊত হিসাবে চিহ্নিত হইল।
সংবিধান (প্রথম সংশোধনী), বিল ১৯৭৩ এর উপর জাতীয় সংসদের কার্যবিবরণী এবং আই.সিটি এ্যাক্ট-১৯৭৩ এর বিলের ফটোকপি, এবং উক্ত বিলের উপর জাতীয় সংসদের আলোচনার কার্যবিবরণী যথাক্রক্রমে প্রদর্শনী ঋঅ, ঋঅ১, ঋঅ২, হিসাবে চিহ্নিত হইল। বাংলাদেশ ডকুমেন্ট নামক বইয়ের পার্ট-৩ তে উল্লেখিত ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি তারিখ ৯ই এপ্রিল, ১৯৭৪ এর অনুলিপির ফটোকপি প্রদর্শনী ঋঈ, হিসাবে চিহ্নিত হইল। একই বইয়ের একই পার্টে উল্লেখিত শিমলা চুক্তি ৩ জুলাই, ১৯৭২ এর অনুলিপির ফটোকপি প্রদর্শনী ঋউ হিসাবে চিহ্নিত হইল।  দৈনিক সংগ্রাম ১লা মার্চ, ২০১২ইং তারিখের নির্ধারিত অংশের ফটোকপি প্রদর্শনী-ঋঊ  হিসাবে চিহ্নিত হইল। 
১৯৯২ সালের দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ১লা এপ্রিল, ৩রা সেপ্টেম্বর, ৬ই অক্টোবর, ৮ই মার্চ, ১২ই এপ্রিল, ১৫ই সেপ্টেম্বর, ১৮ই মার্চ, ১৮ই জুলাই, ২১শে জুলাই, ২২ শে মার্চ, ২৩শে মার্চ, ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২৮ শে মার্চ, ২৯ শে মার্চ, ৩১শে মার্চ, ২১ শে মার্চ, ২৪ শে মার্চ, ২৬শে মার্চ এর নির্ধারিত অংশ সমূহের ফটোকপি প্রদর্শনী ঋঋ-ঋঋ১৯, হিসাবে চিহ্নিত হইল। ১৯৯২ সালের দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ২০ শে মার্চ, ২১ শে মার্চ, ২২ শে মার্চ, ২৩শে মার্চ, ২৪শে মার্চ, ২৫ মার্চ, ২৬ শে মার্চ, ২৭শে মার্চ এর নির্ধারিত অংশ সমূহের ফটোকপি প্রদর্শনী ঋএ-ঋএ৯ হিসাবে চিহ্নিত হইল।  ১৯৯২ সালের িৈনদক আজকের কাগজ পত্রিকার ২১শে মার্চ, ২৪শে মার্চ, ২৫শে মার্চ নির্ধারিত অংশ সমূহের ফটোকাপি প্রদর্শনী ঋঐ-ঋঐ২ হিসাবে চিহ্নিত হইল। শাহরিয়ার কবীর সম্পাদিত “একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার” নামক বইয়ের ৬৩ থেকে ৬৫ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদর্শনী Ñঋ১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ০১-১১-২০১১ইং তারিখে “যুদ্ধাপরাধ ও বিচার-৩” শিরোনামে প্রকাশিত উপ-সম্পাদকীয় এর ফটোকপি প্রদর্শনীÑঋঔ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক ইনকিলাবের ২৮শে আগস্ট, ২০০০ এর প্রকাশিত সংবাদের নির্ধারিত অংশের ফটোকপি প্রদর্শনীÑঋক হিসাবে চিহ্নিত হইল। (প্রসিকিউশনের আপত্তিসহকারে)। (চলবে)



০৯-০১-২০১৩ইং পুনরায় জবানবন্দী শুরুঃ
দৈনিক জনকণ্ঠ ৫ই আগস্ট, ২০০০ এর নির্ধারিত অংশের ফটোকপি প্রদর্শনী ঋখ হিসাবে চিহ্নিত হইল (প্রসিকিউশনের আপত্তি সহকারে)্ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়, কমিটি শাখা-৭, অষ্টম জাতীয় সংসদের “শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি” কর্তৃক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তের জন্য গঠিত সাব কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকের কার্য বিবরণীর রিপোর্ট তারিখ ১৫-০৪-২০০৪ এর ফটোকপি প্রদর্শনী ঋগ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এ্যাডভোকেট সাদ আহমেদ কর্তৃক লিখিত “মুজিবের কারাগারে পৌনে সাতশ দিন” নামক বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী ঋঘ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক প্রথম আলো ০৭-১২-২০০৯ ইং তারিখের অন লাইন সংস্করণের “মুক্তিযুদ্ধে মিত্রদের অবদানের স্বীকৃতির দাবি” শিরোনামের সংবাদের ফটোকপি প্রদর্শনী ঋঙ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ২৭শে এপ্রিল, ২০১১ইং তারিখের অন লাইন সংস্করণের নির্ধারিত অংশের ফটোকপি প্রদর্শনী  ঋচ হিসাবে চিহ্নিত হইল। (চলবে)
০৩-০২-২০১৩ ইং পুনরায় জবানবন্দী শুরুঃ-
দি ডন পত্রিকার ১২ ফেব্রুয়ারী ১৯৭১, ৩রা এপ্রিল ১৯৭১, ৪ঠা এপ্রিল ১৯৭১ (দুইটি শিরোনাম), ৮ই এপ্রিল ১৯৭১, ৯ই এপ্রিল ১৯৭১, ১৪ই এপ্রিল ১৯৭১, ১৫ই এপ্রিল ১৯৭১, ৩রা মে ১৯৭১, ১৮ই মে ১৯৭১, ২৬শে মে ১৯৭১, ৩০শে মে ১৯৭১, ৩রা জুন ১৯৭১ (দুইটি শিরোনাম), ৭ই জুন ১৯৭১, ২২শে জুন ১৯৭১, ২৩শে জুন ১৯৭১, ২৪শে জুন ১৯৭১, ২৫শে জুন ১৯৭১, ৩০শে জুলাই ১৯৭১, ১৮ই অক্টোবর ১৯৭১, ২৮শে অক্টোবর ১৯৭১, নির্ধারিত অংশের ফটোকপি যথাক্রমে প্রদর্শনী- ঋছ-ঋছ১৯ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দি পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার ১লা এপ্রিল ১৯৭১, ৮ই এপ্রিল ১৯৭১, ৯ই এপ্রিল ১৯৭১ (তিনটি শিরোনাম), ১৭ই এপ্রিল ১৯৭১, ১৮ই এপ্রিল ১৯৭১, ২০শে এপ্রিল ১৯৭১, ২৭শে এপ্রিল ১৯৭১, ২৯শে এপ্রিল ১৯৭১, ৪ঠা মে ১৯৭১, ২৯শে মে ১৯৭১, ২০শে জুন ১৯৭১, ৩রা জুলাই ১৯৭১ (দুইটি শিরোনাম), ৭ই জুলাই ১৯৭১, ১৭ই জুলাই ১৯৭১, ২৯ শে জুলাই ১৯৭১ এর নির্ধারিত অংশের ফটোকপি যথাক্রমে প্রদর্শনী- ঋজ-ঋজ১৪ হিসাবে চিহ্নিত হইল। জামায়াত ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের দুইটি ছবির কাটিং এর ফটোকপি যথাক্রমে প্রদর্শনী- ঋঝ-ঋঝ১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। (সূত্রঃ যঃঃঢ়://লধসধধঃ-ব-রংষধসর.ড়ৎম/) প্রসিকিউশনের আপত্তি সহকারে চিহ্নিত হইল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রকাশকাল জুন ১৯৮৪)ঃ দশম খন্ড সশস্ত্র সংগ্রাম (২) এর ৬৫৬ পৃষ্ঠা হইতে ৬৭৩ পৃষ্ঠার প্রদর্শনী- ঋঞ হিসাবে চিহ্নিত হইল। বাংলাদেশ ডকুমেন্ট ১৯৭১ পার্ট ৩ এর পাতা ২১৬ ও ২১৭ এর ফটোকপি প্রদর্শনী- ঋট হিসাবে চিহ্নিত হইল। মুনতাসির মামুন রচিত শান্তি কমিটি ১৯৭১ নামক বই (প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারী ২০১২) এর ফটোকপি প্রদর্শনী- ঋঠ হিসাবে চিহ্নিত হইল (সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠা ২৩৪ থেকে ২৩৬ এবং ২৬১ থেকে ২৬৩ পৃষ্ঠা)। ডাঃ এম,এ, হাসান কর্তৃক রচিত যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ (প্রকাশকাল মে ২০০১) বইয়ের ফটোকপি প্রদর্শনী- ঋড হিসাবে চিহ্নিত হইল (সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠা ৩৮৬ থেকে ৩৮৮ পৃষ্ঠা)। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রকাশকাল জুন ১৯৮৪)ঃ দশম খন্ড সশস্ত্র সংগ্রাম (২) এর ৮৬ হইতে ১৭৭ পৃষ্ঠার ফটোকপি প্রদর্শনী- ঋঢ হিসাবে চিহ্নিত হইল। অফিস মেমো নম্বর ১৬৪ (১০)/পড়হ তারিখ ২৫শে মে, ১৯৭১ যাহা নেত্রকোনা মহকুমা কার্যালয় হইতে সার্কেল অফিসার (ডেঃ), এর প্রতি রাজাকার নিয়োগ প্রক্রিয়ার নির্দেশনাবলীর ফটোকপি প্রদর্শনী- ঋণ হিসাবে চিহ্নিত হইল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ একাদশ খন্ড সশস্ত্র সংগ্রম (৩) পৃষ্ঠা ৫৫৬ থেকে ৫৬৭ এর ফটোকপি প্রদর্শনী- ঋত হিসাবে চিহ্নিত হইল। দেশ টি,ভি, তে সম্প্রচারিত ১৪ই মে, ২০১২ সময় রাত্রি ১১.৫০ মিঃ টকশো “সোজা কথার” ভিডিও কিপিং বস্তু প্রদর্শনী- র হিসাবে চিহ্নিত হইল। বি,টি,ভি কর্তৃক ২৫ শে এপ্রিল ২০১২ তারিখ রাত্রি ১১.০৬ মিঃ সম্প্রচারিত “রনাঙ্গনের দিনগুলি” এর ভিডিও কিপিং বস্তু প্রদর্শনী- রর হিসাবে চিহ্নিত হইল।

আজ ৩রা ফেব্রুয়ারী ভাষার মাস। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য অনেক জীবন দিয়েছেন। কিন্তু আন্দোলন শুধুমাত্র সেদিনই শুরু হয়নি। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর হতেই ভাষা আন্দোলন শুরু হয় এবং বাংলাদেশের সকল আন্দোলনে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ভূমিকা থাকে ঠিক তেমনিই ভাষা আন্দোলনেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে অধ্যাপক গোলাম আযম তিনবার গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু আজকের বাংলাদেশের ইতিহাস বই থেকে ভাষা আন্দোলনে অধ্যাপক গোলাম আযমের অবদানকে মুছে ফেলে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে অধ্যাপক গোলাম আযমের ভূমিকাকেও বিকৃতভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে বিগত ৪১ বছর থেকে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে মিথ্যাকে সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চলছে।

অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৭১ সালের কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির ১৩০ জনের মধ্যে একজন সাধারণ সদস্য ছিলেন। তিনি ঐ কমিটির কোন অফিসিয়াল ছিলেন না। বিগত ৪১ বছরে ঐ শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সেক্রেটারী, জয়েন্ট সেক্রেটারীসহ কোন অফিসিয়ালের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ঘটানোর জন্য কোন মামলা করা হয়নি। আমি নিশ্চিত যারা অধ্যাপক গোলাম আযমকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে অপবাদ দেয় তাদের অধিকাংশই ঐ কমিটির অফিসিয়ালদের নামও বলতে পারবেন না। যে কমিটির কোন অফিসিয়াল কোন অপরাধ করেছেন বলে কোন অভিযোগ করা হয়নি সেই কমিটির একজন সদস্য দেশের সকল অপকর্ম ঘটানোর পিছনে মূল হোতা ছিলেন এ ধরনের দাবি সম্পূর্ণ অমূলক। বরং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আমরা দেখেছি অখন্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসী সরকারি আমলা বা শান্তি কমিটির সদস্য বিভিন্ন রকম ভাবে পুরষ্কৃত হয়েছেন। আজকে স্বাধীনতার ৪১ বৎসর পরে ভাষা আন্দোলনের সেনাপতি অধ্যাপক গোলাম আযমকে বিরুদ্ধ দল রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মানসে এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার স্বার্থে সম্পূর্ণ মিথ্যা, কল্পিত, বানোয়াট অভিযোগ এনে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সমগ্র দেশবাসির সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সরকার এক ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় লিপ্ত।

জেরা-

কর্মরত অবস্থায় জেনারেল মঈন-উ-আহমেদের সর্ব প্রথম ফোর ষ্টার জেনারেল করা হয় এবং তৎপূর্বে জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সাহেবকে অবসর পরবর্তী অনারারী ফোর ষ্টার জেনারেল করা হয়। সামরিক শাসন চলাকালীন সময়ে মিলিটারী ল সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য বলবৎ থাকে। (চলবে)

০৪-০২-২০১৩ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ-
জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সাহেব এল.পি.আর. এ থাকাকালে তাহাকে রিকল করে লেঃ জেনারেল হিসাবে পদোন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে নিয়োগ করা হয়। উল্লেখ্য তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাঠামো অনুযায়ী সেনা প্রধানের পদবী লেঃ জেনারেল ছিল। লেঃ জেনারেল মঈন সেনাপ্রধান থাকাকালীন সেনাপ্রধানের পদটিকে ফোরষ্টার জেনারেলে উন্নীত করে লেঃ জেনারেল মঈনকে পদোন্নতি দিয়ে ফোবষ্টার জেনারেল বা ফুল জেনারেল পদবী দেওয়া হয়। আমার যতদূর মনে পড়ে এটি হয়েছিল ২০০৭ অথবা ২০০৮ সালে। আমার জানামতে জেনারেল ওসমানী সাহেবকেও অনারারী ফোরাষ্টার জেনারেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। তবে, জেনারেল ওসমানী অবিভক্ত পাকিস্তানে কর্ণেল পদবীতে অবসরে গিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসাবে উনাকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য অনারারী ফুল জেনারেল করা হয়েছিল। কর্মরত অবস্থায় নয়, সঠিক সাল মনে করতে পারছি না।

প্রশ্নঃ ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার ও ইন এইড টু সিভিল অথরিটি এর মধ্যে পার্থক্য আছে কি?
উত্তরঃ আমরা অফিশিয়াল “ইন এইড টু সিভিল অথরিটি” এই টার্মের সাথে পরিচিত নই, আমরা ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার টার্মের সহিত পরিচিত। ১৯৫৮ সালের মার্শাল ল’ এবং ১৯৬৯ সালের মার্শাল ল’ এর মধ্যে গুণগত ও কৌশলগত কোন পার্থক্য ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। ঐ দুটি মার্শাল ল’ এর রেগুলেশন আমি মিলিয়ে দেখিনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চ লাইট শুরু হওয়ার পর বাঙ্গালী সেনা অফিসার যারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন তারা অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং তারা তখন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার হিসাবে গণ্য হন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যে সমস্ত বে-সামরিক ব্যক্তি প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্য হতে যোগ্যতার ভিত্তিতে দুটি ব্যাচে কমিশন দিয়ে অফিসার হিসাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নেওয়া হয় এবং একই পদ্ধতিতে সৈনিক পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়। ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসাবে পালিত হয়। কোন কোন আইন দ্বারা সেনাবাহিনী গঠিত তাহা আমার জানা নাই। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী সংবিধান স্বীকৃত বাহিনী। বৃটিশ এবং পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী গঠন সম্পর্কে আমার বিস্তারিত জানা নাই। তবে বৃটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মির একটি অংশ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গঠিত হয়েছিল মর্মে আমি জানি। ইহা সত্য নহে যে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বৃটিশ-ইন্ডিয়ান পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ধারাবাহিক কোন বাহিনী নয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় আমার বয়স ছিল ১২ বৎসর। সেই সময় আমি ঢাকায় ছিলাম আমার পিতা বাদে আমাদের পরিবারের সকল সদস্য ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ঢাকায় ছিলাম। ১৯৭২ সালে জুলাই কিংবা আগষ্টে আমার মেঝ ভাই এবং বড় ভাই অক্টোবর বা নভেম্বরে উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। আমি এবং আমার তৃতীয় ভাই আমরা দুজনে এস.এস.সি পাশ করার পর ১৯৭৫ সালে যুক্তরাজ্যে চলে যাই। ১৯৭৬ সালে আমার আম্মা আমার ছোট দুই ভাইকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান। ল্যাবরেটরী স্কুলে আমি ১৯৬৯ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই এবং ১৯৭২ সাল পর্যন্ত আমি ঐ স্কুলে পড়াশুনা করি। ১৯৭৪ সালে আমি সিলেট অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি পাশ করি। আমি ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরের দিক থেকে ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর/ অক্টোবর পর্যন্ত সিলেটে ছিলাম তৎপর ঢাকায় চলে আসি। ও লেভেল আমাদের দেশের এস.এস.সি এর সমমানের। ও লেভেল কোর্সে সিলেবাস কভার করতে কম/ বেশি দুই বৎসর সময় লাগে। আমি যুক্তরাজ্যে এ লেভেল দুই বছর পড়েছি। কিন্তু পারিবারিক সিদ্ধান্তের কারণে ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর/ অক্টোবর মাসে আমি দেশে ফিরে আসি। ১৯৭৯ সালে আমি আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচ.এস.সি তৃতীয় বিভাগে পাশ করি। ১৯৯১ সালে আমার পিতা আমার সিলেটের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ইহা সত্য নহে যে, ঐ সময় আমার বাসায় অবস্থান করা কালে সিলেট শহরের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছিলেন বা ঐ বিষয়টি আমার চাকুরী বহিতে মন্তব্য লিপিবদ্ধ আছে। ইহা সত্য নহে যে, ১৯৯৪ সালে মালেশিয়ায় স্টাফ কোর্স সম্পন্নের সময় স্থানীয় ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটির প্রশিক্ষক এবং ছাত্রগণ যারা মূলতঃ বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সদস্য তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। তবে এ মর্মে একটি মিথ্যা রিপোর্ট বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ডি.জি.এফ.আই হেড কোয়ার্টারে প্রেরণা করা হয়েছিল মর্মে আমি জেনেছিলাম এ নিয়ে কোন অভিযোগ বা তদন্ত হয়নি।

প্রশ্নঃ ১৯৯৮ সালের ২৪ এপ্রিল তারিখে আপনার পিতা আপনার চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সরকারি বাসায় কয়েকজন দেহরক্ষী ও রাজনৈতিক সঙ্গী সহ গমন করেন এবং সেখানে অবস্থান করেন কিনা?
উত্তরঃ ১৯৯৮ সালের ১৪ এপ্রিল তারিখে আমার পিতা আমার মা এবং ফুফু সহ আমার অসুস্থ স্ত্রী ও অসুস্থ সন্তানকে দেখার জন্য আমার চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সরকারি বাসভবনে গমন করেন। আমার বাবার কখনও কোন দেহরক্ষী ছিলেন না। তবে, উনি সফরে গেলে উনার নিরপত্তার জন্য কিছু লোক সাথে থাকতেন। ১৪ এপ্রিল আমার বাবার নিরাপত্তার জন্য যারা উনার সাথে গিয়েছিলেন তারা আমার বাবাকে বাসায় পৌছে দিয়েই চলে গিয়েছিলেন। (চলবে)

০৭-০২-২০১৩ ইং পূনরায় জেরা শুরু ঃ-  
সেনাবাহিনীতে সেরা অফিসার হিসাবে গণ্য করা হয় যাদের ভাল একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন থাকে, যাদের মানবিক ভাল গুনাবলী থাকে এবং যাদের ভাল পেশাগত দক্ষতা থাকে। তবে এই বিষয়ে কোন বিধিমালা নাই। তবে মেজর, লে:কর্ণেল এবং কর্ণেলদের জন্য প্রতি বছর একটি মেরিট লিষ্ট তৈরী করা হয়। ইহা সত্য নয় যে, আমাকে সেনাবাহিনীর সেরা অফিসারদের মধ্যে একজন গণ্য করা হয় না এবং আমাকে অনুকরনীয় আদর্শ হিসেবে গণ্য করা হয় না। আমাকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করার চিঠি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করিনি। সেনাবাহিনীর কোন অফিসার বা সদস্যকে বরখাস্ত করা হইলে তাতে সাধারনত সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা উল্লেখ থাকে। আমার বরখাস্ত সংক্রান্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপনে আইনের ধারা উল্লেখ আছে যাহা সেনা সদর দফতর হইতে একটি চিঠির মাধ্যমে আমাকে অবহিত করা হইয়াছে। ইহা সত্য নহে যে, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারনে কোন অপরাধ ছাড়া, কোন তদন্ত ছাড়া আমাকে চাকুরী হইতে বরখাস্ত করা হয় নাই। ১৯৭৫ এবং ১৯৮২ সনের সামরিক শাসন চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে কোন মুক্তিযুদ্ধ ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশে যতগুলি সামরিক শাসন হয়েছে সেগুলিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত বে-আইনি ঘোষনা করেছে মর্মে শুনেছি। অধ্যাপক পদবী আইনের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। আমার পিতা কারমাইকেল কলেজে ১৯৫০ হইতে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করতেন বিধায় তাকে অধ্যাপক বলা হয়। ঐ সময় প্রভাষক পদ ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমার জানা মতে ঐ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সকল শিক্ষককে অধ্যাপক বলা হতো, তখন শিক্ষকদের মধ্যে কোন শ্রেণী বিভাগ ছিল না। ইহা সত্য নহে যে, আমার পিতা কখনও অধ্যাপক ছিলেন না।
প্রশ্ন ঃ আপনার পিতার রাজনৈতিক দর্শনে আপনি বিশ্বাসী কিনা ?
উত্তর ঃ আমি এ বিষয়ে মতামত দিতে বাধ্য নই।
প্রশ্ন ঃ আপনি আপনার পিতার রাজনৈতিক দর্শনের অনুসারী কিনা?
উত্তর ঃ আমি কোন রাজনৈতিক দলের সহিত সম্পৃক্ত নই বিধায় আমার পিতার রাজনৈতিক দর্শনের অনুসারী হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। সুতরাং এ প্রশ্ন অবান্তর।
আমরা ছয় ভাই, আমাদের কোন বোন নাই। আমার ভাইয়েরা কোন রাজনীতি করে না। তারা সকলেই বিদেশে অবস্থান করে। ১৯৫২ সালে আমার পিতা রংপুর কারমাইকেল কলেজে ছিলেন, ঐ সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন না। অবিভক্ত পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মাওলানা মওদূদী সাহেবের সঙ্গে আমাদের পারিবারিকভাবে কোন পরিচয় বা সম্পর্ক ছিল না। মওলানা মওদূদী সাহেবের ছেলে মেয়েরা কে কি করতেন তাহাও আমি জানি না। তার ছেলে মেয়েদের সঙ্গে আমার জীবনেও দেখা সাক্ষাত হয় নাই। আমি শুনেছি যে, ১৯৪০ দশকের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদে ভি,পি ও জি, এস পদে একজন মুসলমান হলে অপরজন হিন্দু হতেন, তবে নির্বাচনের মাধ্যমে হতেন। আমি আমার জবানবন্দীতে যে সমস্ত ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি দিয়েছি তার সূত্র উল্লেখ করি নাই, তবে ট্রাইব্যুনাল চাইলে আমি সেই সকল বই দাখিল করিতে পারিব। মাওলানা মওদূদী সাহেব কতবার ঢাকায় এসেছিল তাহা আমি বলতে পারব না। আমি আমার বাবার বইয়ে পড়েছি যে, পঞ্চাশের দশকে একবার এবং ১৯৭১ সালে আরেকবার তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। এছাড়া তিনি ঢাকায় এসেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭০ সালে তিনি যখন ঢাকায় এসেছিলেন তখন তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল কিনা তাহা আমার মনে পড়ছে না। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে আমার পিতা ঢাকার মগবাজারস্থ আমাদের বাসাতেই ছিলেন। ঐ দিন তিনি সারাদিনই বাসায় ছিলেন এবং খুব উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত ছিলেন। ঐদিন কারফিউ বলবৎ ছিল। আমার পিতা ঐ দিন বাড়ির বাহিরে যান নাই এবং বাহির থেকেও কেউ আমাদের বাড়িতে আসে নাই। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের রাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যে হত্যাকান্ড চালিয়েছিল তার পরে সর্বপ্রথম কবে আমার পিতা বাসা থেকে বাহিরে বের হন তাহা আমার স্মরন নাই। তবে তিনি কয়েকদিন পর্যন্ত বাসা থেকে বের হন নাই। কয়েকদিন পরে তিনি যখন বাসা থেকে বের হন তখন তিনি কোথায় কখন কার কাছে গিয়েছিলেন তাহা আমি বলতে পারবো না। ৪ঠা এপ্রিল ১৯৭১ ইং তারিখে আমার পিতা পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষের সহিত সাক্ষাত করেছেন মর্মে আমি পরে জেনেছি তবে ঐ সময়ে আমি তার সহিত ছিলাম না। ঐ সাক্ষাতের সময় তাদের মধ্যে কি আলোচনা হয়েছিল কেবল মাত্র যারা উপস্থিত ছিল তারাই জানেন, অন্য কেউ জানে না। ৪ঠা এপ্রিল ১৯৭১ইং তারিখে পূর্বে কিংবা পরে আমার পিতা সামরিক কর্তৃপক্ষের সহিত সাক্ষাত করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা একাধিকবার পাকিস্তানে গিয়েছিলেন, তবে মোট কতবার গিয়েছিলেন তাহা আমার জানা নাই। আমার পিতা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন বিধায় কয়েক মাস অন্তর অন্তর পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরায় অংশগ্রহন করতে একাধিকবার সেখানে গিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে অবরুদ্ধ বাংলাদেশের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরার বৈঠক কোথায় অনুষ্ঠিত হইতো বা আদৌ হইতো কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমার পিতা ১৯৭১ সালে ঢাকার বাইরে গেলে আমি তার সঙ্গে যেতাম না। তবে তিনি ঐ সময় বাসার বাইরে কম যেতেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭০ সালের নির্বাচন উপলক্ষ্যে আমার পিতা ঢাকার বাইরে কয়েকবার নির্বাচনী সভায় যোগ দিয়েছিলেন মর্মে আমি শুনেছি। তবে তিনি সাধারনত সাংগঠনিক কাজের জন্য ঢাকার বাইরে যেতেন মর্মে শুনেছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা দুই/একবার ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন মর্মে আমি পরবর্তীতে পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল যেমন মুসলিম লীগ, পি.ডি.পি, নেজামী ইসলামী প্রমুখ দলের নেতাদের সঙ্গে কোন বৈঠক করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা বাসার বাইরে কোথায়, কখন, কার নিকট যেতেন তাহা আমি জানি না। আমার পিতার রচিত “জীবনে যা দেখলাম” নামীয় বইটি একটি আত্মজীবনী মূলক বই এবং এটি ৯ খন্ডে প্রকাশিত। এই খন্ডের মধ্যে আমি ট্রাইব্যুনালে প্রথম ও তৃতীয় খনড দাখিল করেছি যাহা প্রদর্শনী ঐ এবং ঐ-১ হিসেবে প্রদর্শিত হইয়াছে। উক্ত বইয়ের তৃতীয় খন্ডে (প্রদশর্নী ঐ১) ১৩৩ নম্বর পৃষ্ঠায় প্রথম লাইনে উল্লেখিত মুহাম্মদ আলী আমার পিতার ড্রাইভার ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে আমার পিতা ড্রাইভার সহ গাড়ি নিয়ে বাসার বাইরে যান এবং ঢাকা শহরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নবাবপুর রোড, গুলিস্তান এলাকায় ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত্রে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ নিজ চোখে দেখেন এবং মনে করেন যে, সেনাবাহিনী যেন কোন শত্রুদেশ জয় করার জন্য আক্রমন চালিয়েছে। বই বক্তব্য সমূহ উক্ত বইয়ের ১৩৩ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে। (চলবে)

০৭-০২-২০১৩ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ-
উক্ত বইয়ের ১৩০ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ২৫শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে দিবাগত রাত সাড়ে দশটার সময় আমার পিতা লেখক কামানের আওয়াজ শুনতে পান এবং দেখা গেল আকাশ লাল হয়ে গেল এবং বোঝা গেল কাথাও আগুন জ্বলছে এবং তার বাসার টেলিফোন বিকল পান। ইহা ছাড়া এশার নামাজের পর থেকে লোকদের মুখে শুনতে পান যে, শহরের বহু জায়গায় বহু লোক বেরিকেড দিয়ে পথ রোধ করে আছে। রাত এগারোটার দিকে জানতে পারেন যে, নয়াবাজার কাঠের দোকানগুলির আগুন আকাশ পর্যন্ত উচুঁ হয়ে জ্বলছে। তিনি বুঝতে পারেন যে, সেনাবাহিনী উক্ত কর্মটি করিয়াছে এবং তাহার বাড়ির টিনের চালে নিপাতিত একটি মর্টার সেলের মজবুত খোসা দেখতে পান।
উক্ত বইয়ে এর পরেই উল্লেখ আছে যে, তখনকার চলমান সংলাপ প্রক্রিয়া ফেল হলে কিছু একটা অঘটন ঘটবে বলে তিনি আশংকা করেছিলেন এবং ঘটনার বর্ণনায় উনি ধারণা করলেন সেনাবাহিনী শহর দখল করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করছে। বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য রীতিমত যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে।
উক্ত বইয়ের ১৩১ পৃষ্ঠায় আরও উল্লেখ আছে যে, “আমাদের বাড়ির সারিতে ৮/১০ টি বাড়ি। এই বাড়িগুলোর উত্তর দিকে ইস্পাহানি কলোনীর দীর্ঘ দেয়াল। রাত ১টার সময় খবর পেলাম, ঐ দেয়াল টপকিয়ে দুজন পুলিশ আশ্রয় নিয়েছে। তারা নাকি রাজাকার পুলিশ লাইন থেকে পালিয়ে এসেছে। সেনাবাহিনী পুলিশ লাইন আক্রমন করে হত্যাকান্ড চালাচ্ছে। পুলিশেরা যে দিকে সম্ভব পালানোর চেষ্টা করছে।”
উক্ত বইয়ের ২০৭ পৃষ্ঠায় “প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে সাক্ষাত” শিরোনামে তৃতীয় অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, “প্রথমে জিজ্ঞাসা করলেন যে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে কবে এসেছেন ? সেখানকার অবস্থা কেমন ? জাববে বললাম যে, ৫/৬ দিন আগে লাহোর পৌছেছি। সেখানকার অবস্থা আপনাকে অবগত করানোর জন্যেই পিন্ডি এসেছি। তা না হলে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শেষে ঢাকা ফিরে যেতাম। তারপর বললাম, “ আপনি তো পূর্ব পাকিস্তানেরও প্রেসিডেন্ট ২৫শে মার্চ জেনারেল টিক্কা খান সামরিক অপারেশন শুরু করার পর গত ৮ মাসের মধ্যে আপনি একবারও সেখানকার অবস্থা সরেজমিনে দেখার জন্য গেলেন না। জনগনের পক্ষ থেকে তার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আপনার সাক্ষাতের সুযোগ পেলেন না। সেখানে গেলে জনগনের প্রতিক্রিয়া স্বচক্ষে দেখে আসতে পারতেন।”
উক্ত বইয়ের ১৫৪ পৃষ্ঠায় শেষ অনুচ্ছেদে নূরুল আমিন সাহেবের বাড়িতে খাজা খয়রুদ্দিন এবং মৌলভী ফরিদ আহম্মেদ সাহেবের উদ্দোগে ১৯৭১ সালের এপিল মাসের শেষের দিকে একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে আমন্ত্রিতদের মধ্যে আমার পিতা অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের (আওয়ামী লীগের দুইজন নেতা সহ) প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। উক্ত বইয়ের ১৫৭ পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, সর্ব সম্মতিক্রমে মুসলীম লীগ নেতা খাজা খয়রুদ্দিন সাহেবকে আহ্বায়ক করে শান্তি কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
আমার অধ্যয়নের মাধ্যমে পরবর্তীতে যতদূর জেনেছি তাতে আমার যতদূর মনে পড়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকলীন সময়ে পাকিস্তান সামরিক সরকার একটি আদেশের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। আমি আমার অধ্যায়নে যতটুকু জানতে পেরেছি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত এম.এন.এ. দের মধ্য হতে অনেকেই পাকিস্তান সরকারের অনুগত্য ও সহানূভূতি প্রকাশ করেছিল এবং সেই মর্মে একটি গেজেট নটিফিকেশন বের হয়েছিল। যারা অনুগত্য প্রকাশ করেনাই তাদের পদগুলি শুন্য ঘোষনা করে সেই আসনগুলেতে পরবর্তীতে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই উপনির্বাচনে সম্ভবত জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহন করেছিল। ১৯৭১ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম দুষ্কৃতিকারী বলতে সশস্ত্র প্রতিপক্ষকে বুঝিয়েছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। তিনি কোন অবস্থাতেই নিরস্ত্র, নিরীহ জনসাধারনকে বোঝান নাই বা কোন বিশেষ ধর্ম শ্রেনী, গোত্র বা দলকে বোঝান নাই যারা অখন্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসী ছিলেন তাদের সশস্ত্র প্রতিপক্ষকে দুষ্কৃতিকারী হিসাবে আমার পিতা আখ্যায়িত করেছিলেন।
১৯৭১ সালে অখন্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসীদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বে-সামরিক ও নিরস্ত্র ছিলেন। তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি গঠন করেছিলেন। ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি কি করেছিল সে সম্পর্কে আমার সুষ্পষ্ট ধারনা নাই। সারা দেশে জেলা, মহকুমা, থানা এবং ইউনিয়নে শান্তি কমিটির কার্যক্রম তৎকালীন মুসলিম লীগের নেতাদের অধীনে পরিচালিত হতো। তবে এ সকল কমিটি কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির অধীনে পরিচালিত হতো কিনা তাহা আমার জানা নাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকলীন সময়ে আমার পিতা ৪ঠা ডিসেম্বর পাকিস্তান থেকে বিমানযোগে ঢাকা বিমান বন্দরে এসে নামতে না পেরে বাধ্য হয়ে সৌদিআরব যান, সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করার পর পাকিস্তানে ফিরে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা কোন বিদেশী নাগরিক বা নেতৃবৃন্দ বা সাংবাদিকদের সংগে দেখা সাক্ষাত করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। দৈনিক সংগ্রাম প্রত্রিকা পাকিস্তান আমল থেকেই প্রকাশিত হতো মর্মে আমি জেনেছি। তবে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। কোন পত্রিকাই কোন দলের মুখপাত্র হিসাবে প্রকাশিত হয় কিনা তাহা আমার জানা নাই। (চলবে)
১০-০২-২০১৩ পুনরায় জেরা শুরুঃ-

দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা সম্ভবত সর্বপ্রথম ১৯৭০ সালের জানুয়ারী মাসে প্রকাশ হয়। তবে ঐ সময় উহার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক কে ছিলেন তাহা আমার জানা নাই। ‘জীবনে যা দেখলাম’ বইয়ের তৃতীয় খন্ডের (প্রর্দশনী- ঐ১) ৯৬ পৃষ্ঠার তৃতীয় অনুচ্ছেদে ‘পত্রিকার সহযোগীতার কোন আশা না থাকায় মুরাদ সাহেবের কয়েক মাস ব্যাপী অকান্ত প্রচেষ্টায় জনসভার পূর্বদিন ১৭ জানুয়ারী থেকে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়’ উল্লেখ আছে। আমার বাবার লেখা কোন বই দেশে বা দেশের বাইরে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত আছে কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমাদের দেশের ধর্মীয় সংগঠনগুলোর উপর সামান্য ধারনা আছে। জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক সংগঠন বলে মনে করি। বৃটিশ ভারত বিভক্ত হওয়া এবং পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া দুইটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হয়েছে। আওয়ামলী লীগ এবং জামায়াতে ইসলমাী কখনও একই জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছ বলে আমার জানা নাই। তবে উক্ত দুটি দলসহ অন্যান্য দল ও জোটের নেতৃবৃন্দ একত্রে বৈঠক করে একই কর্মসূচি প্রনয়ন করে যুগপৎ আন্দোলন করেছে। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামলী লীগ সম্ভবত ৮৬টি আসন পেয়েছিল। ঐ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী সম্ভবত ১৮টি আসন পেয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সালের আগে আমার পিতার নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আবেদন সংক্রান্ত কাগজপত্র আমি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করি নাই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার পিতাসহ যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল তাহা কি প্রক্রিয়ায় হয়েছিল তাহা আমার জানা নাই। বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কতভোট পেয়েছিলেন তাহা আমার জানা নাই। আমার পিতা পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসার পরও তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। আমার পিতা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর লন্ডনে থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকবার সৌদি আরবে গিয়েছিলেন, তবে সঠিক সংখ্যা মনে নাই। আমাদের আত্মীয় স্বজন যাহারা হজ্জ্ব করতে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে কারো কারো সংগে আমার পিতার সৌদি আরবে দেখা হয়েছিল। উল্লেখ্য তখন কয়েকজন আত্মীয়ের সংগেও আমার পিতার দেখা হয়েছিল মর্মে আমার পিতার লিখিত বইয়ে লেখা আছে বলে আমার মনে পড়ে। সৌদি আরবে সফরকালে আমার পিতা সৌদি বাদশার সাথে দেখা করেছেন মর্মে শুনেছি, তবে কতবার দেখা হয়েছে তাহা বলতে পারব না। পাকিস্তান আমলে সৌদি বাদশার সংগে সম্ভবত আমার পিতার দেখা হয় নাই।

মার্শাল ল’ রেগুলেটেড হয় মার্শাল ল’ রেগুলেশন দ্বারা। মার্শাল ল’ জারী করার পর সামরিক সরকার তাদের প্রয়োজনে মার্শাল ল’ রেগুলেশন ও রুলস প্রনয়ন করে। মার্শাল ল’ এর জন্য কোন নির্ধারিত রুলস রেগুলেশন নাই। তবে একই ধরনের সাংগঠনিক কাঠামো বা একই ধরনের দর্শন থাকলে বিধি বিধানগুলি একই রকমের হয় (প্রসিকিউশনের আপত্তি সহকারে)। ১৯৫৮ সালের মার্শাল ল’ এর সময় রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তবে ১৯৬৯ সালের মার্শাল ল’ এর সময় কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। প্রদর্শনী- অ, ই, ঈ কোন সময়ের মার্শাল ল’ এর উপর ভিত্তি করে প্রনয়ন করা হয়েছিল তাহা প্রদর্শনীতে উল্লেখ নাই। ঐ প্রদর্শনীগুলিতে কোন আইন বা সূত্র উল্লেখ নাই। আমি ১২ নভেম্বর ২০১২ ইং তারিখে এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য প্রদান শুরু করি এবং ঐ প্রদর্শনীগুলিতে ১৮ ই নভেম্বর ২০১২ তারিখে দস্তখত করি। প্রদর্শনী- উ তে এর রানিং পৃষ্ঠা ১৮ এর তৃতীয় অনুচ্ছেদে “ঝুবফ গড়ঁফঁফর ংবষবপঃবফ ঢ়ৎড়ভ. এযঁষধস অুধস ধং ড়হব ড়ভ ঃযব ৫ গবসনবৎ ঃবধস ভড়ৎ ষড়ননুরহম রহ ঃযব অংংবসনষু ভড়ৎ ভৎধসরহম ওংষধসরপ পড়হংঃরঃঁঃরড়হ” উল্লেখ আছে। ঐ একই প্রদর্শনীর একই পৃষ্ঠায় বাম পাশে “ঐড়ি যব নবমধহ ড়িৎশ ধহফ নবপধসব ধ ঃড়ঢ় সধহ?” এ শিরোনামে উল্লেখিত “যব” বলতে আমার পিতা প্রফেসর গোলাম আযম সাহেবকে বোঝানো হয়েছে। প্রদর্শনী- উ বইটি জনৈক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান কর্তৃক লিখিত আমার পিতার জীবনীর উপর লিখিত একটি বই। উল্লেখিত বইয়ে লেখকের পরিচিতি উল্লেখ নাই। উক্ত লেখকের পরিচিতি সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। উক্ত প্রদর্শনীর রানিং পৃষ্ঠা ২ এ “চৎবভধপব” এর সপ্তম অনুচ্ছেদে “ও বীঢ়ৎবংং সু ঃযধহশং ঃড় ঔধসধধঃ ষবধফবৎ গঁযধসসধফ কধসধৎুুঁধসধহ ভড়ৎ যরং ংরহপবৎব পড়-ড়ঢ়বৎধঃরড়হ ধহফ ঔধসধধঃ-ব- ওংষধসর ইধহমষধফবংয ভড়ৎ ধষষড়রিহম সব ঃড় মড় ঃযৎড়ঁময ঃযব ৎবপড়ৎফং ধহফ ভরষবং”. উল্লেখ রহিয়াছে। ঐ প্রদর্শনী বইটি ০৭-১১-১৯৯২ ইং তারিখে প্রথম প্রকাশিত হয় মর্মে সেখানে উল্লেখ রহিয়াছে। ঐ সময় আমার পিতা জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন। প্রদর্শনী- ঊ শেখ আখতার হোসেন কর্তৃক লিখিত “জননেতা গোলাম আযম” নামক বইয়ে রানিং পৃষ্ঠা ১০৩ (মূল বইয়ের ২০ পৃষ্ঠা) এর বাম পাশে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে “১৯৭৩ সালের জানুয়ারীতে সৌদি আরবের বাদশা ফয়সালের সাথে তিনি প্রথম দেখা করেন। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে জাতীয় আদর্শ বলে ঘোষণা করায় বাংলাদেশের মুসলিম জনগণের পক্ষ থেকে বক্তব্য নিয়ে গোলাম আজম সৌদি বাদশাহ ফয়সালের সাহায্য চান এবং বাংলাদেশ সরকারের উপর নৈতিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য অনুরোধ জানান, যাতে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো শাসনতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা অপসারিত হয়।’ উল্লেখ রহিয়াছে। লেখকের পরিচিতি উক্ত বইয়ে উল্লেখ নাই এবং আমারও জানা নাই। প্রদর্শনী- ঊ বইটি আমি অনেক আগে পড়েছি। উক্ত বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় (রানিং পৃষ্ঠা ১০২) ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে “(১) ১৯৭৩ সালে জুলাই মাসে লিবিয়ার ত্রিপলিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী যুব সম্মেলনে ভাষণ দেন” উল্লেখ রহিয়াছে। আমার পিতা ভাষণ দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ রহিয়াছে। তবে সম্মেলনটি কি বিষয়ে ছিল এবং কি বক্তব্য দিয়েছিলেন তাহা আমার জানা নাই। উক্ত অনুচ্ছেদে “(৪) ১৯৭৭ সালে জুলাইতে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত টঋঝঙ- এর বার্ষিক সম্মেলনে ভাষণ দেন” উল্লেখ রহিয়াছে।

আমার পিতার ভাষণ দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ রহিয়াছে। তবে সম্মেলনটি কি বিষয়ে ছিল এবং কি বক্তব্য দিয়েছিলেন তাহাও আমার জানা নাই। ঐ সময় আমার পিতা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে ঐ সকল দেশ ভ্রমণ করেন। উক্ত বইতে প্রকাশকাল উল্লেখ নাই। এ বইটি ৬৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত এবং বইটির মূল্য হিসাবে নিউজপ্রিন্ট কাগজে ১০/- এবং সাদা কাগজে ১৫/- টাকা উল্লেখ রহিয়াছে। জামায়াতে ইসলমাীর প্রচারমূলক বই কিনা আমার জানা নাই এবং বইটির নামমাত্র মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ইহা সঠিক নহে। (চলবে)

                                                                                                                                          ১১-০২-২০১৩ পুনরায় জেরা শুরুঃ-
আমার পিতার লিখিত “জীবনে যা দেখলাম” বইয়ের তৃতীয় খন্ডে (প্রদর্শনী- ঐ১) এর ১৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন সময়ে আমার পিতা একটি বেতার ভাষণ দিয়েছিলেন। প্রদর্শনী- ও “জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভূমিকা” বইটি আমার পিতা অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক লিখিত একটি বই এবং উক্ত বইয়ের ৭০ এবং ৭১ পৃষ্ঠায় (রানিং পৃষ্ঠা নম্বর ১৯৯) মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শূরায় পার্টির করণীয় সম্পর্কে বিশ্লেষণ উল্লেখ আছে। ট্রাইব্যুনালে আমার দাখিলকৃত আমাদের ডকুমেন্ট সংক্রান্ত ভলিউম- ২ এবং ভলিউম- ৩ আমি পড়েছি। ইহা সত্য নহে যে, উক্ত ভলিউম দুটিতে সকল কাগজপত্র দাখিল করেছি তাহা অত্র মামলা সংক্রান্ত নহে কিংবা অপ্রয়োজনীয়। প্রদর্শনী- ইঈ বইটি “রাও ফরমান আলী খান বাংলাদেশের জন্ম” বাংলায় অনুবাদকৃত একটি বই এবং উহার ভূমিকা লিখেছেন মুনতাসির মামুন। উক্ত বইয়ের ৫১ পৃষ্ঠার শেষ অনুচ্ছেদে এবং ৫২ পৃষ্ঠার প্রথম অংশে “প্রেসিডেন্ট ২২ ফেব্রুয়ারী সকল গভর্ণর ও এম.এল.এ-র একটি সভা ডেকেছিল। পূর্ব পাকিস্তান থেকে আহসান ও ইয়াকুবের এতে যোগ দেয়ার কথা ছিল। আমাকে অবশ্য প্রেসিডেন্টের সংগে সাক্ষাতের জন্য ক দিন আগেই ডেকে নেয়া হয়েছিল। জেনারেল পীরজাদার সংগে আমি ১৯ ফেব্রুয়ারী প্রেসিডেন্টের অফিসে তার সংগে দেখা করলাম। আমাদের বৈঠকের বিবরণী অনেকটা এরকম। আমরা বসার সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট বলে উঠলেন, ‘আমি ঐ বার্ষ্টাড কে শায়েস্তা করতে যাচ্ছি’। আমি বললাম, ‘স্যার তিনি এখন আর বার্ষ্টাড নন। তিনি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং এখন সমগ্র পাকিস্তানের তিনিই প্রতিনিধিত্ব করছেন।’ ইয়াহিয়া সত্যিই ক্রুদ্ধ ছিলেন এবং জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছিলেন। আমি বললাম, “এর ফলে মিলিটারী এ্যাকশনে যেতে হবে।” “তাই হোক।” তিনি বললেন।” এই কথাগুলি উল্লেখ আছে।

প্রশ্নঃ উক্ত বইয়ে উল্লেখিত “বার্ষ্টাড” শব্দটি বলে কাকে গালি দেয়া হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তরঃ এটা স্ব-ব্যাখ্যায়িত।

উক্ত বইয়ের (প্রদর্শনী- ইঈ) এর ৫৪ পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের শেষের দিকে “আমরা পূর্ব পাকিস্তানকে আমাদের উপর শাসন চালাতে দেব না” ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের গৃহীত মূল সুর।” উল্লেখ আছে। উক্ত বইয়ের ৯৩ পৃষ্ঠায় “দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে “যে সিদ্ধান্ত গুলোর কারণে মিলিটারী এ্যাকশনে যাওয়া হয়েছিল, আমি সেগুলোর বিরোধীতা করেছিলাম। নির্দেশ পাওয়ার পর আমি অবশ্য আমার সাধ্যানুসারে কর্তব্য পালন করেছি। দুদিনের সামরিক কর্তব্যের পর আমি আবার সিভিল এ্যাফেয়ার্সের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। ঢাকায় সকল রাজনৈতিক নেতার সংগে আমি যোগাযোগ করি- জনাব নূরুল আমিন, খাজা খয়রুদ্দিন, মৌলভি ফরিদ আহম্মেদ, জনাব শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম আযম এবং অন্য সকলকে আমি এইচ কিউ এম এল এ- তে আসার জন্য অনুরোধ জানাই। তারা জেনারেল টিক্কার সংগে সাক্ষাত করেন এবং সংবাদপত্রে একটি বিবৃতি দিতে ও শান্তি কমিটি গঠন করতে সম্মত হন। তারা সত্যিকার অর্থেই অনুগত পাকিস্তানী ছিলেন।” এই কথাগুলি উল্লেখ রয়েছে। উক্ত বইয়ের ৯৪ পৃষ্ঠায় প্রথম ও দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে “এসব প্রচারণার প্রভাব মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে মুসলিম লীগ, পি.ডি.পি. জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামী দলের পাকিস্তান পন্থী নেতৃবৃন্দ খাজা খয়েরদ্দিনকে চেয়ারম্যান করে সারাদেশ ব্যাপী একটি শান্তি কমিটি গঠন করেছিলেন।

প্রাথমিক পর্যায়ে শান্তি কমিটি গুলো চমৎকার ভূমিকা পালন করেছিল। ৭ এপ্রিল বা ৭ এপ্রিলের দিকে সারা পাকিস্তানের সমর্থনে ঢাকায় একটি বিশাল মিছিল বের করেছিলেন। পাকিস্তান পন্থী মানুষদের পুনরায় সক্রিয় করে তোলার উদ্দেশ্যে সমগ্র প্রদেশ ব্যাপী একই ধরনের কার্যক্রম গৃহীত হয়েছিল। ........... কিন্তু এখানে দায়িত্ব প্রাপ্ত হিসাবে পেয়েছিলাম নিয়াজিকে, তিনি পূর্ব পাকিস্তানের জাতিগত কাঠামো পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন।” এই কথাগুলো উল্লেখ রয়েছে। উক্ত বইয়ের ৯৬ পৃষ্ঠায় তৃতীয় অনুচ্ছেদে “জনগণের নিরপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে রাজাকার নামের নতুন একটি বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। সামগ্রিকভাবে তারা চমৎকার ভূমিকা রেখেছিল।” এই কথাগুলি উল্লেখ রয়েছে। উক্ত বইয়ের ১০০ পৃষ্ঠায় তৃতীয় অনুচ্ছেদে “জুলাই- আগষ্টের সভাগুলোতে আলোচিত প্রধান বিষয়টি ছিল ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক এ্যাকশন। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, যে সকল এম.এন.এ/এম.পি.এ কোলকাতায় চলে গিয়েছিলেন এবং অপরাধ-কর্ম করেছিলেন তাদেরকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে এবং সে সব শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার পর জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে আহ্বান করা হবে।” এই কথাগুলি উল্লেখ রহিয়াছে। আমার কর্তৃক দাখিলী আমাদের ডকুমেন্ট সংক্রান্ত ভলিউম নম্বর ৫,৬,৭ ও ৮ আমি পড়েছি। ভলিউম ৯ এর প্রদর্শনী- ঊঅ বইটি জাহানারা ইমাম কর্তৃক লিখিত “একাত্তরের দিনগুলি” একটি বই। উক্ত বইয়ের ৬২ নম্বর পৃষ্ঠার (রানিং পেজ নম্বর ৩১) বাম পাশে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে “এদিকে আরেক নখরা। তিন/চার দিন আগে ঢাকায় এক নাগরিক শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছে। কাগজে খুব ফলাও করে খবর ছাপা হচ্ছে। খাজা খয়রুদ্দিন এর আহবায়ক সদস্য ১৪০ জন। তার মধ্যে সনামধন্য হচ্ছেন আব্দুল জাব্বার খদ্দর, মাহমুদ আলী, ফরিদ আম্মদ, সৈয়দ আজিজুল হক, গোলাম আযম। এই কথাগুলি উল্লেখ রয়েছে। আমার দাখিলকৃত ডকুমেন্ট সংক্রান্ত ১১ নম্বর ভলিউমের (রানিং পেজ ২৬৩) (প্রদর্শনী- ঊছ) “বাংলাদেশঃ স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতা” একটি অনুবাদকৃত বইয়ের অংশ বিশেষের ফটোকপি। মূল বইটি লিখেছেন মওদূদ আহমদ এবং বাংলায় অনুবাদ করেছেন জগলুল আলম। উক্ত বইয়ের ২০৪ নম্বর পৃষ্ঠায় (রানিং পেজ ২৮৩ এর বাম পাশে) দ্বিতীয় ও তৃতীয় অনুচ্ছেদে “অপ্রতিহতভাবে প্রায় ৩৬ ঘন্টা ধরে হামলা চালানো হয়। ২৬ মার্চের রাতে কয়েকজন সেনা অফিসার হোটেলে এসে বিদেশী সাংবাদিকদের নিয়ে যায় এবং ৬০ মিনিটের মধ্যে তাদের দেশ ত্যাগ করতে হয়। এয়ারফোর্সের একটি বাস তাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য হোটেলের প্রবেশ পথে অপেক্ষা করছিল। সে সময় আমি সাংবাদদাতাদের নিতে আসা পাঞ্জাবী এয়ারফোর্স অফিসারকে মুজিব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। অফিসারটিকে আমি ভাল করে চিনতাম এবং তিনি জোর দিয়ে বললেন, “বড় পাখিকে (মুজিব)কে ইতিমধ্যেই আটক করা হয়েছে। তাকেই আমরা সব চাইতে আগে ধরেছি।” ২৭ মার্চ সকালে কারফিউ প্রত্যাহার করা হলে আমি শহরের বিভিন্ন স্থানে মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখি। ইকবাল হলের সামনের মাঠে আমি আমার কয়েকজন শিক্ষক এবং বেশ কিছু সংখ্যক ছাত্রের লাশ সারিবদ্ধভাবে পড়ে থাকা অবস্থাই দেখতে পাই। ছাত্রাবাসের অভ্যন্তরে লাশগুলো তখনও জগন্নাথ হলের কাছে গণকবরে নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। এর মাধ্যমে শুরু হয় পাকিস্তান বাহিনীর নয় মাস ব্যাপী গুলি, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও অন্যান্য বর্বরতার পালা এবং শক্তিহীন জনতার মধ্য থেকে স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ গড়ে তোলার জন্য অভ্যুদয় ঘটে একটি দুধর্ষ মুক্তিবাহিনীর।” এই কথাগুলি উল্লেখ আছে।

আমার দাখিলী ডকুমেন্ট সংক্রান্ত ১২ নম্বর ভলিউমের রানিং পেজ নম্বর ২০০ তে উল্লেখিত শাহরিয়ার কবির সম্পাদিত “একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার” বইয়ের অংশ বিশেষের ফটোকপি যাহা প্রদর্শনী- ঋ১ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। উক্ত বইয়ের ৬৩ পৃষ্ঠায় (রানিং পৃষ্ঠা নম্বর ২০১) চতুর্থ অনুচ্ছেদে “ইনি সেই গোলাম আযম যিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর প্রতিটি অন্যায়, বেআইনী, অমানবিক ও নিষ্ঠুর কাজ প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন। যিনি মুক্তিযোদ্ধাদের দেশদ্রোহী বলে আখ্যা দিয়ে সমূলে ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, যিনি আল-বদর বাহিনী গড়ে তুলে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করার প্ররোচনা দিয়েছিলেন। গোলাম আযমের প্ররোচনায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আছেন আমার শিক্ষক মুনির চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সন্তোষ কুমার ভট্টাচার্য ও সিরাজুদ্দিন হোসেন, আমার অগ্রজপ্রতি শহিদুল্লাহ কায়ছার, আমার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ, আমার সহকর্মী আবুল খায়ের, আনোয়ার পাশা রাশিদুল হাসান ও মোহাম্মাদ মোর্তজা, আমার ছাত্র আ.ন.ম. গোলাম মোস্তাফা ও সৈয়দ নজরুল হক যাদের মৃত্যুতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত, শোকাহত ও ব্যথাতুর।” এই কথাগুলি উল্লেখ রয়েছে। (চলবে)
১১-০২-২০১৩ ইং ২-০০ মিঃ পুনরায় জেরা শুরুঃ-

ইহা সত্য নয় যে, আমার দাখিলী ডকুমেন্ট সংক্রান্ত ভলিউম নম্বর ২,৫,৬,৭,৮ এবং ১০ অত্র মামলা সংক্রান্ত নহে এবং ইহা অপ্রয়োজনীয়।

ইহা সত্য নহে যে, আমার প্রায় ত্রিশ বছরের সেনাবাহিনীর চাকুরীতে সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও পেশাগত দক্ষতার মান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চল্লিশ বছরের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা অফিসারদের মধ্যেই সেনাবাহিনীর সকল অফিসার এবং সকল পদবীর সদস্যবৃন্দ আমাকে বিবেচনা করে নাই, কিংবা এখনও করে না কিংবা আমার ত্রিশ বছরের চাকুরীতে শৃংখলা পরিপন্থী কাজের জন্য আমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কোন নজির আছে কিংবা বরং একজন সুশৃংখল অফিসার হিসাবে সকলের নিকট অনুকরনীয় আদর্শ ছিলাম না।

“২০০৯ সালের জুন মাসে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার কোন অভিযোগ ছাড়া, কোন তদন্ত ছাড়া, কোন বিচার ছাড়া আমার এই ৩০ বৎসরের নিষ্কলুষ চাকুরী কোন কারন না দেখিয়ে আমাকে সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়। শুধু তাই নহে আমার পেনশন জনিত অর্থ সহ সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে আমাকে রঞ্চিত করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে অপরাধ ছাড়া, তদন্ত ছাড়া এবং বিচার ছাড়া বরখাস্ত করে এ ধরনের সকল সুবিধা বঞ্চিত করা নজিরবিহীন। আমি একথা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে দাবি করে বলতে চাই যে, স্বাধীনতার ৪০ বৎসর পর আজ অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা একমাত্র কারন উনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়া, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা। এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যায় আমি পরে যাব। তবে প্রাসঙ্গিকভাবে একথাও আমি বলার প্রয়োজন মনে করি যে, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে এখন যেভাবে আমাকে বরখাস্ত করেছে ঠিক অনেকটা এরকমই ১৯৯৬-২০০১ সালে পর্যন্ত ক্ষমাসীন থাকার সময়ে বিনা কারনে সেই পাঁচ বৎসর মেজর পদ থেকে লে: কর্ণেল পদবীতে আমার পদোন্নতি আটকে রেখেছিল। ” আমার এই বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“সেনাবাহিনীর বদলীর আদেশ জারি, বদলীকৃত অফিসার কর্তৃক দায়িত্ব হস্তান্তর এবং বদলীকৃত অফিসার নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য সেনা আইন ও বিধি মোতাবেক প্রাপ্ত জয়েন্ট টাইম এবং জার্নিপিরিয়ড এ সকল কোন সময়ই আমাকে প্রদান করা হয় নাই। আমাকে একদিন সন্ধ্যায় সেই রাতের মধ্যেই দায়িত্ব হস্তান্তর করে পরদিন সকালে বিলাইছড়ি থেকে চলে আসতে বাধ্য করা হয়। আমার স্ত্রী ও সন্তান অসুস্থ থাকায় আমি কয়েকদিনের জন্য ছুটির আবেদন করি। কিন্তু আমার আবেদন অগ্রাহ্য করা হয়। আমি আমার কর্মস্থলে যোগদানের পর ব্যাকডেট দিয়ে সেনাসদর হতে আমার বদলীর আদেশ জারী করা হয়। ” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“সেনাবাহিনীর বদলীর আদেশ জারি, বদলীকৃত অফিসার কর্তৃক দায়িত্ব হস্তান্তর এবং বদলীকৃত অফিসার নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য সেনা আইন ও বিধি মোতাবেক প্রাপ্ত জয়েন্ট টাইম এবং জার্নিপিরিয়ড এ সকল কোন সময়ই আমাকে প্রদান করা হয় নাই।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় সেই সিলেকশন বোর্ড মে ২০০১ এ সম্পন্ন করে এবং সেই বোর্ডেও আমাকে বিবেচনা করা হয় নাই।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পূর্বস্বরীদের মতই জন্ম লাভ করে।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“সুতরাং ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত সামরিক শাসন চলাকালে আমার প্রত্যক্ষ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে সামরিক বাহিনীর সাথে অন্যান্য সকলের যেরুপ সম্পর্ক থাকে বলে দেখেছি, এই ভূখন্ডে এর পূর্বের সকল সামরিক শাসনের সময়ই একই ধারা চলটাই স্বাভাবিক।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“সামরিক আইন চলাকালে বে-সামরিক প্রশাসনের নিজের কোন সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। ঐ এলাকার দায়িত্ব প্রাপ্ত সামরিক প্রশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী বেসামরিক প্রশাসন সকল কর্মকান্ড সম্পাদন করেন। এখানে একটি কথা উল্লেখ্য যে, আমি প্রথমেই বলেছি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের সময় বেসামরিক প্রশাসন সম্পূর্ণ স্বাধীন থেকে নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং রাজনীতিবিদ ও সাধারণ জনগণ সামরিক-বেসামরিক উভয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বিতভাবে একত্রে কাজ করে থাকেন। কিন্তু সামরিক শাসনের সময় পরিস্থিতি ভিন্ন থাকে। সামরিক শাসনের সময় বেসামরিক প্রশাসনের যেমন নিজস্ব কোন অস্তিত্ব থাকে না তেমনি রাজনীতিবিদগণও অনেকটা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েন।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“সামরিক শাসন চলাকালীন আধাসামরিক বা অন্যান্য সকল সহযোগী বাহিনী কিভাবে দায়িত্ব পালন করে সে ব্যাপারে যাওয়ার পূর্বে আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের ট্রাইবাল কনভেনশন কমিটির কর্মকান্ডের অভিজ্ঞতার আলোকে একথা দৃঢ়ভাবে মনে করি ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল ট্রাইবাল কনভেনশন কমিটির আদলে সাধারণ ও নিরীহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার উদ্দেশ্যে।  ১৯৮২ সালে মার্শাল ল’-এর অভিজ্ঞতার আলোকে আমি যেমনটি বলেছি যে, বেসামরিক প্রশাসন বা রাজনীতিবিদদের সামরিক প্রশাসনের ওপর যেমন কোন কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না ১৯৭১ সালেও সামরিক শাসনের ওপর বেসামরিক প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সামান্যতম নিয়ন্ত্রণ ছিল না। উপরন্তু সামরিক শাসন চলাকালীন দেশের প্রশাসনিক কাঠামো সংক্রান্ত যে ব্যাখ্যা আমি দিয়েছি এবং এর সাথে যে সংযুক্তি উপস্থাপন করেছি এর কোন স্তরেই কোন বেসামরিক ব্যক্তির কোন রূপ আদেশ বা নিয়ন্ত্রনের কোন সুযোগ নেই। এমনি বেসামরিক প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কোন ধরনের কমান্ড রেসপনসিবিলিটি থাকে না।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“এরপর হতে আজ পর্যন্ত উনি রাজনীতি থেকে অবসর নিলেও আল্লাহর দ্বীন চর্চা, তার প্রচার এবং তার প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। সমগ্র বিশ্ব বিনা বাক্য ব্যয়ে নির্দ্বিধায় অধ্যাপক গোলাম আযমকে বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের মুরুব্বী হিসেবে বিবেচনা করেন।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“১৯৫৫ সালে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি শুরু করার পর যতদিন তিনি রাজনীতি করেছেন ততদিন তিনি কেবল জনগণের কল্যাণ, সুখ ও শান্তি এবং নিরাপত্তার লক্ষ্যে কেবল আল্লাহর সংগঠনের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি কোনদিন ক্ষমতা-লোভী ছিলেন না। ক্ষমতা কেন্দ্রীক রাজনীতি তিনি কোনদিন করেননি। ক্ষমতা কেন্দ্রীক রাজনীতি করলে উনার পক্ষে অনেকবার মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এবং অফার থাকলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করতেন না।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী হত্যাযজ্ঞের পর অধ্যাপক গোলাম আযম ও উনার দলের জন্য কী করণীয় তা উনাদের সামনে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ায়। অধ্যাপক গোলাম আযম ও উনার দল মনে করতেন যে, ১৯৪৭ সাল হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জনগণের উপর যে অবিচার, অন্যায়, ও শোষণ করা হয়েছিল তা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই অখন্ড পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামোর ভিতরে থেকেই সম্ভবপর ছিল। উনাদের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ছিল এবং এর পেছনে মূলত ১৯৪৭ হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ভারত কর্তৃক পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশ সমূহের প্রতি যে আধিপত্যবাদী মনোভাব উনারা দেখেছিলেন তার ফলেই উনাদের এই রাজনৈতিক দর্শনে ছিল। উনাদের এই রাজনৈতিক দর্শন মূলত উনাদের প্রজ্ঞা ও দূর দর্শনের কারণে এবং তিনটি আশংকার উপর ভিত্তি করে উনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ১. ভারতীয়ও কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমি হিসাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য যে বিরোধীতা করেছিলেন তার আলোকে উনারা মনে করেছিলেন ভারতের প্রথম উদ্দেশ্য ছিল চির শত্রু পাকিস্তানকে দুর্বল করা ২. যেহেতু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান যা বাংলাদেশ ভূখন্ড হিসেবে পরিচিত তার প্রায় তিন দিকেই ভারত বাংলাদেশ স্থল সীমা রয়েছে এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও ভারতের আধিপত্যে রয়েছে সেহেতু বাংলাদেশ একটি পৃথক রাষ্ট্র হলে ভারত সরকার তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে পারবে এবং উপনিবেশিক ও সাম্প্রসারণবাদীদের মত নতজানু সরকার প্রতিনিধি করে নিজ কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারবে ৩. বাংলাকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে অত্যন্ত সহজভাবে নিজেদের পণ্যের বাজার হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৭১ সালে কোন রকমের কোন মানবতা বিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত ছিলেন না। আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এ কথা দাবি করতে চাই যে, উনার বিরুদ্ধে এই ট্রাইব্যুনালে আনীত সকল অভিযোগ মনগড়া, কাল্পনিক, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য স্বাধীনতার চল্লিশ বৎসর পর এ সমস্ত অভিযোগ আনা হয়েছে।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে দ্বিতীয় বারের মত সামরিক আইন জারি করার পর এদেশের ইতিহাসে প্রথম বারের মত কেয়ারটেকার সরকার ফর্মূলা পেশ করেন অধ্যাপক গোলাম আযম।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“অধ্যাপক গোলাম আযম যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। নব্বই দশকের মাঝামাঝি বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে যখন আওয়ামী লীগ এবং অধ্যাপক গোলাম আযমের দল জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে একত্র আন্দোলন করে বিস্ময়করভাবে তখনও পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযম যুদ্ধাপরাধী নন। উল্লেখ করা যেতে পারে এর পূর্বে নব্বই দশকের শুরুতে যখন অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচার চেয়ে “ঘাদানিক”, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করা হয় সেই কমিটিও অধ্যাপক গোলাম আযমকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দেয়নি।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“স্বাধীনতার পর প্রায় ৪০ বৎসর পর্যন্ত উনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে উনার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে অধ্যাপক গোলাম আযমকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যা দেওয়া শুরু হয়েছে এবং আজ এই ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত হিসাবে কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়েছে।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“অধ্যাপক গোলাম আযম সাম্প্রদায়িক নন বরং তিনি সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“১৯৭১ সালে অধ্যাপক গোলাম আযমের বক্তব্য বা বিবৃতির কারণে কেউ সাম্প্রদায়িক কোন কাজ করেছে সেটার নজির নেই।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“১৯৭১ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম দুষ্কৃতিকারী বিদ্রোহী, সন্ত্রাসী ইত্যাদি বলে কোন বিশেষ ধর্ম বা দলকে আখ্যায়িত করেননি।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“তিনি শান্তিপ্রিয়, নিরীহ, নিরস্ত্র কোন জনগণের বিরুদ্ধে কোনরূপ বক্তব্য দিয়েছেন তার কোন প্রমাণ নেই।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“অধ্যাপক গোলাম আযম এক জীবন্ত কিংবদন্তী। তিনি বাংলাদেশ নামক এই ভূখন্ডে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য উনার জীবনের প্রায় ৬০ বৎসর উৎসর্গ করেছেন।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“উনার সকল কর্মকান্ডই ছিল সাধারণ জনগণের সুখ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে কৃত কাল্পনিক অভিযোগ এনে এই ট্রাইবুনালে বিচারের সম্মুখীন করা দুঃখজনক। ৯০ বৎসর বয়ষ্ক একটি মানুষ যার বিরুদ্ধে বাল্যকাল থেকে এই অশীতিপর বৃদ্ধ অবস্থা পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ তো দূরের কথা, মানুষের সাথে সামান্যতম দুর্ব্যবহারের নজির নেই তিনি ১৯৭১ সালে ৯ মাস যে সমস্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার সাথে জড়িত বলে দাবি করা সম্পূর্ণ অবাস্তব।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“তাই তিনি ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত একান্ত বাধ্য হয়ে বিদেশে অবস্থান করলেও সব সময়ই দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল ছিলেন। প্রথম সুযোগেই এদেশের জনমানুষের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। ১৯৭৮ সাল থেকে বিগত ৩৪ বছর তিনি নিরলসভাবে এদেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যে সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, এগুলো তিনি করে থাকলে তিনি বিদেশের মাটিতে অনেক আরাম আয়েশে জীবন কাটাতে পারতেন।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“এ সব কিছু উপেক্ষা করে তিনি দেশের টানে, দেশের মানুষের জন্য কল্যাণের কাজ করার উদ্দেশ্যে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। ১৯৭১ সালের শেষ দিকে উনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা এক নির্জলা অসত্য।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“১৯৪৭ সালে অখন্ড ভারতের পক্ষে থাকা যেমন একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল, ১৯৭১ সালে অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে থাকা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। ১৯৪৭ সালে যারা অখন্ড ভারতের পক্ষে ছিলেন তাদের যেমন দেশ প্রেমের ঘাটতি ছিলনা, কেবলমাত্র ভিন্ন দর্শনের কারণেই উনারা অখন্ড ভারতের পক্ষে ছিলেন, ১৯৭১ সালেও যারা অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন তাদেরও দেশ প্রেমের ঘাটতি ছিল না। এটা ছিল রাজনৈতিক এক দর্শনের প্রতিফলন। এর সংগে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ একীভূত করা বা যোগসাজস খোঁজা নিতান্তই কাল্পনিক।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“১৯৭৩ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তান পুনুরুদ্ধার কমিটি গঠনের অভিযোগ সম্পূর্ণই কাল্পনিক, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি কখনই এ ধরনের কোন কমিটি গঠন করা তো দূরের কথা এই ধরনের কোন কমিটির সাথে সম্পৃক্ততা সম্পূর্ণ বানোয়াট। যারা উনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনেন তারা বিগত চল্লিশ বৎসর উনাদের এই অভিযোগ বা দাবির সপক্ষে কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। কেবলমাত্র অধ্যাপক গোলাম আযমকে রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় ফেলার জন্য বিগত চল্লিশ বৎসর থেকে উনার বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চলছে।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।
“১৯৭৫ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক উনার ভাই প্রফেসর ডা. গোলাম মোয়াজ্জেম (যিনি বাদশাহর ব্যক্তিগত চিকিৎসক মর্মে বলা হয়েছে) সহ সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সালের সাথে সাক্ষাত করে বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য রাখার কথা যারা বলেন তারা ভুল বলেন। ডা. গোলাম মোয়াজ্জেম সাহেব একজন প্যাথলজিষ্ট। একজন প্যাথলিষ্ট সৌদি বাদশাহর ব্যক্তিগত চিকিৎসক হওয়ার দাবি হাস্যকর। উপরন্তু, যারা প্রটোকল সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞান রাখেন তারা সকলেই জানেন সৌদি বাদশাহর প্রটোকলে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের মত ব্যক্তির সংগে রাজ প্রাসাদে একান্ত বৈঠকে (যদি হয়েও থাকে) সে সময় একজন ও লেভেল অধ্যায়নরত ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত থাকা অবিশ্বাস্য।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“আজ ৩ ফেব্রুয়ারী। ফেব্রুয়ারী ভাষার মাস। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য অনেক জীবন দিয়েছেন। কিন্তু আন্দোলন শুধুমাত্র সেদিনই শুরু হয়নি। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর হতেই ভাষা আন্দোলন শুরু হয় এবং বাংলাদেশের সকল আন্দোলনে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ভূমিকা থাকে ঠিক তেমনই ভাষা আন্দোলনেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে অধ্যাপক গোলাম আযমের অবদানকে মুছে ফেলে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে অধ্যাপক গোলাম আযমের ভূমিকাকেও বিকৃতভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে বিগত ৪১ বছর থেকে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে মিথ্যাকে সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা চলছে।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

“অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৭১ সালের কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির ১৩০ জনের মধ্যে একজন সাধারণ সদস্য ছিলেন। তিনি ঐ কমিটির কোন অফিশিয়াল ছিলেন না। বিগত ৪১ বৎসরে ঐ শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সেক্রেটারী, জয়েন্ট সেক্রেটারী সহ কোন অফিশিয়ালের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ঘটানোর জন্য কোন মামলা করা হয়নি। আমি নিশ্চিত যারা অধ্যাপক গোলাম আযমকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে অপবাদ দেয় তাদের অধিকাংশই ঐ কমিটির অফিশিয়ালদের নামও বলতে পারবেন না। যে কমিটির কোন অফিশিয়াল কোন অপরাধ করেছেন বলে কোন অভিযোগ করা হয়নি সেই কমিটির একজন সদস্য দেমের সকল অপকর্ম ঘটানোর পিছনে মূল হোতা ছিলেন এ ধরনের দাবি সম্পূর্ণ অমূলক। বরং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আমরা দেখেছি অখন্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসী সরকারী আমলা বা শান্তি কমিটির সদস্য বিভিন্ন রকমভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন। আজকে স্বাধীনতার ৪১ বৎসরে পরে ভাষা আন্দোলনের সেনাপতি অধ্যাপক গোলাম আযমকে বিরুদ্ধ দল রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মানসে এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার স্বার্থে সম্পূর্ণ মিথ্যা, কল্পিত, বানোয়াট অভিযোগ এনে উদ্ধেশ্য প্রণোদিতভাবে সমগ্র দেশবাসীর সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সরকার এক ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় লিপ্ত।” আমার এ বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে।

আমার দাখিলী প্রদর্শনী- অ, ই ও ঈ আমার মনগড়া কাগজ এর কোন আইনগত ভিত্তি নাই এবং ইহা মামলার কারণে সৃষ্টি করা হয়েছে। ইহা সত্য নহে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সেরা অফিসারদের মধ্যে রয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা অফিসার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পালন কারী অফিসার এবং দেশে ও বিদেশে খেতাব অর্জনকারী অফিসার, ইহা সত্য। আমি কোন খেতাব প্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ছিলাম না। ইহা সত্য নহে যে, রাজনৈতিক কারণে আমাকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয় নাই। ইহা সত্য নহে যে, ১৯৭১ সালের শেষের দিকে নিশ্চিত পরাজয় জেনে আমার পিতা পাকিস্তানে পালিয়ে যান। আমার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভাঙ্গার অভিযোগ ছিল, ইহা সত্য নহে। ইহা সত্য নহে যে, বি, ডি, আর ঘটনার কারণে আমাকে ক্যান্টমেন্ট থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছিল। আমার পিতা বুঝে শুনে স্বজ্ঞানে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছেন এবং আমি তাহা জেনেও গোপন করে তার পক্ষে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান করেছি, ইহা সত্য নহে। ইহা সত্য নহে যে, আমার পিতা আত্মস্বীকৃত মানবতা বিরোধী। ইহা সত্য নহে যে, আমার পিতা আত্মস্বীকৃত মানবতা বিরোধী অপরাধী জানা সত্ত্বেও আমি তাকে রক্ষার জন্য সত্য গোপন করে অসত্য সাক্ষ্য দিলাম। আমার পিতা দেশ স্বাধীনের পরেও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার কৃত মানবতাবিরোধী ও অন্যান্য অপরাধে ধারাবাহিকতা পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন সহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, ইহা সত্য নহে। ইহা সত্য নহে যে, আমার পিতার বিরুদ্ধে অত্র মামলায় আনীত অভিযোগ সমূহ সত্য জানা সত্ত্বে তাকে রক্ষা করার জন্য মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করেছি। (সমাপ্ত)









                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                            

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন