শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

মুনতাসির মামুন

শনিবার, ১ জুলাই, ২০১২
আমার নাম মুনতাসির উদ্দিন খান মামুন ওরফে মুনতাসির মামুন। আমার বয়স ৬১ বৎসর। আমি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। আমি ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর হাই স্কুল থেকে এস,এস,সি পাশ করি, ১৯৬৮ সনে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচ,এস,সি পাশ করি। তৎপর ১৯৬৮ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়ে ¯œাতক সম্মান ও ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করি ১৯৭২ সালে। স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য আমাদের ¯œাতকোত্তর পরীক্ষা ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু ডিগ্রীটি হয় ১৯৭২ সালে। ১৯৭৪ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করি। ১৯৮৩ সালে আমি পি,এইচ,ডি ডিগ্রী লাভ করি। আমার লেখালেখি এবং মুখ্য গবেষণার বিষয় তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ বর্তমানে বাংলাদেশ এর সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, নগরায়ন ও মুক্তিযুদ্ধ। আমি ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে শ্রেষ্ঠ শিশু লেখক হিসাবে প্রেসিডেন্ট পুরষ্কার লাভ করি। খুব সম্ভব ১৯৯৩ সালে বাংলা সাহিত্যের সামগ্রিক অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরষ্কার লাভ করি। ২০১০ সালে ২১ পদক লাভ করি গবেষণার জন্য। সুনির্দিষ্টভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণার জন্য মার্কেণ্টাইল ব্যাংক পুরষ্কার লাভ করি। এছাড়া আরও অন্যান্য পুরষ্কার প্রাপ্ত হই। ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়টা বাঙ্গালী জাতির জীবনে সবচেয়ে সংকটময় এবং ক্রান্তিকালীন সময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যারা তখন পড়াশুনা করেছি তাদের অধিকাংশই কোন না কোন ভাবে সম্পৃক্ত ছিল বাঙ্গালী জাতির আশা আকাংখা পরিপূরণে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পাকিস্তানিদের ভাষায় আমাদের ক্রোধান্বিত করেছিল। এই ক্রোধ ও ক্ষোভ আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল ১৯৬৯ সনের গণ-আন্দোলনে। এর পরের ইতিহাস আমরা সবাই কম বেশি জানি। সে কারণে বিস্তারিত বলব না। তবে ১৯৭০ সালে নির্বাচনের পর আমরা ভেবেছিলাম এই প্রথম আমাদের ন্যায্য দাবিগুলি পূরণ হবে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চের পর আমরা অনুধাবন করলাম হয়তো আবার আমাদের বঞ্চিত করা হবে। শুধু এটুকু বলতে পারি আমাদের জেনারেশনের প্রায় সবাই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের এই আচরণে ক্ষুব্ধ ছিলাম। ১৯৭১ সালের পুরা মার্চ মাসে আমি ঢাকায় ছিলাম। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে যা ঘটেছিল তা এখনও স্মরণ করলে মর্মাহত হই। আমাদের বয়সী কারো পক্ষে ঐ সময়কার বর্বর উপাক্ষ্যান তুলে ধরা খুবই কষ্টকর। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত আমি ছিলাম মিরপুরের পল্লবীতে। ২৫ মার্চ রাতে গোলাগুলির শব্দে আমরা আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ি। পল্লবী তখন খুবই নিরিবিলি জায়গা ছিল এবং মীরপুরে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ ছিল অবাঙ্গালী। কি হয়েছে তা দেখার জন্য আমরা ছাদে উঠি। গোলাগুলির ষ্পষ্ট আওয়াজ পাচ্ছিলাম, দূরে আগুনের লেলিহান শিখা চোখে পড়ছিল এবং কিছুক্ষণ পর আমরা দেখলাম কয়েকজন পাকিস্তানী সৈন্য সামনের রাস্তা দিয়ে টহল দিচ্ছে। এর আগে আহম্মদ ছফা টেলিফোনে জানিয়েছিলেন ঢাকা শহরে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হয়েছে এবং পাকিস্তানী সেনারা রাস্তায় নেমে পড়েছে। পরের দিন রেডিওতে আকাশ বাণী থেকে শোনা গেল তাদের ভাষায় পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে এবং তারপর বার বার আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি বাজানো হচ্ছিল। আমি এটুকুই বুঝে নিয়েছিলাম যে, পাকিস্তানী বাহিনী বন্দুকের সাহায্যে আমাদের দাবি নস্যাৎ করে দিতে চাচ্ছে। ২৯ মার্চ পর্যন্ত মিরপুরে অবাঙ্গালীরা পাকিস্তানী বাহিনীর সহায়তায় প্রায় প্রতিটি বাঙ্গালীর বাড়ি লুট করে, হত্যা করে এবং আমাদের কয়েকটি পরিবার তখন কয়েকজন অবাঙ্গালীর সহৃদয়তায় বেঁচে যায়। ২৯ মার্চ আমি মীরপুর থেকে ঢাকায় আসি। ঢাকায় আসার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, পুরানো ঢাকার কয়েকটি এলাকায় বন্ধু বান্ধবদের খোঁজ করি। তখন দেখেছি পাকিস্তানী বাহিনী কি নির্মম হত্যাযজ্ঞ এবং ধ্বংস কান্ড চালিয়েছে। ঢাকা শহর থেকে যেভাবে মানুষ পালাচ্ছিলেন তাতেই বোঝা যায় মানুষ কেমন আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। এটুকু হচ্ছে মার্চ মাস পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত একটি বিবরণ। আমি খুব সম্ভবত অক্টোবর মাস পর্যন্ত ঢাকাতে ছিলাম। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের পরে ঢাকা থেকে কয়েকটি সংবাদপত্র নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছিল বলে আমার মনে পড়ে। যার মধ্যে ডেইলী অবজারভার, দৈনিক পাকিস্তান, সংগ্রাম, পূর্বদেশ পত্রিকাও ছিল। তখনকার পত্র পত্রিকাগুলির ব্যাপারে বলতে পারি সেগুলি ছিল অবরুদ্ধ দেশের সংবাদপত্র। কোন পত্রিকাই সরকারি অনুমোদন হীন কোন খবর প্রকাশের ক্ষমতা ছিল না। আমরা পত্রিকাগুলি পড়তাম একটা কারণে। সরকার কি করছে সরকারের সংগে যারা আছে তারা কি বলছে, কি করছে এই সব বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়ার জন্য। আরেকটি বিষয়ের সত্যতার জন্য খবরের কাগজে আমরা খুজতাম তৎকালীন সরকার ও রাজনীতিকদের ভাষায় ‘দুষ্কৃতিকারীদের’ কর্মকান্ড জানার জন্য। কেননা দুষ্কৃতিকারী মানেই ছিল মুক্তিযোদ্ধারা। এছাড়া আরও খবর জানার জন্য আমরা নির্ভরশীল ছিলাম বি,বি,সি, রেডিও অষ্ট্রেলিয়া, আকাশ বাণী এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের উপর। ফলে খবরের সত্যতা যাচাই করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো। মার্চ মাসের পর থেকে যেসব রাজনৈতিক দল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারকে সমর্থন করেছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগের বিভিন্ন অংশ, পি,ডি,পি এবং আরও কিছু দলের শাখা। তবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে জামায়াতে ইসলামী এবং মুসলিম লীগের ভূমিকাই ছিল বেশী। আগেই উল্লেখ করেছি ২৫ মার্চের পর থেকে কোন দলগুলি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারকে এবং তাদের প্রতিনিধি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে কিভাবে সহায়তা করেছিল। তাদের প্রথম পদক্ষেপ ছিল টিক্কা খানের সদলবলে দেখা করা এবং এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে তারা এ কাজটি করেছিল যখন প্রতিদিনই পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ, লুট, ধর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছিল। এ রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে প্রখ্যাত ছিলেন নূরুল আমিন এবং গোলাম আযম এবং আমরা বার বার দেখি যে এপ্রিলে তাদের পরামর্শে ও উৎসাহে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। শান্তি কমিটি পরবর্তীকালে দুভাগ হয়ে গেলেও খাজা খয়রুদ্দিন গোলম আযমের নেতৃত্বোধীন শান্তি কমিটি প্রাধান্য বিস্তার করেছিল এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়তা পেয়েছিল। অচিরেই আমরা দেখতে পাই তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে গঠিত হয় রাজাকার বাহিনী, আল-বদর, আল-শামস ইত্যাদি বাহিনী। লক্ষ্যণীয় এই যে, এই সব কমিটি ও বাহিনীতে জামায়াতে ইসলামীর প্রাধান্য ছিল বেশি। উল্লেখ্য সে সময়ের সংবাদপত্রগুলি যদি দেখা যায় তাহলে আমরা দেখতে পাবো জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির জনাব গোলাম আযমের বক্তব্য প্রাধান্য পাচ্ছে। রাজাকার বাহিনীর সূত্রপাত জামায়াতে ইসলামীর নেতার মাধ্যমে। পরবর্তীকালে পাকিস্তান সরকার তার একটি আইনী কাঠামো তৈরি করে। আল-বদর বাহিনীরও নেতৃত্বে ছিলেন জামায়াতে ইসলামী ছিল সবচেয়ে বড় সে কারণে এসব কমিটি এবং বিভিন্ন বাহিনীতে জামায়াতের কর্মীদের আধিক্য ছিল বেশি। এর সাথে অন্যান্য দল যাদের কথা আগে উল্লেখ করেছি তাদের কর্মীরাও প্রধানত শান্তি কমিটি ও বাহিনীতে ছিল। আমি যখন একটি দলের নাম বলছি তখন তার ভিতরে সেই দলের অঙ্গ সংগঠনকেও অন্তর্ভূক্ত করছি এবং প্রত্যেকটি দলের ব্যাপারেই একথা প্রযোজ্য। এসব দলের নেতারা প্রতিনিয়ত বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে তাদের কর্মীদের উদ্বৃদ্ধ করেছে, প্রনোদনা যুগিয়েছে এসব কমিটি ও বাহিনীতে যোগদানের জন্য। আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক জান্তাকে সহায়তা করার জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিলেন জামায়াতের তৎকালীন আমির জনাব গোলাম আযম। আজকে ৪০ বৎসর পরও যখন শান্তি কমিটির সদস্য রাজাকারদের এবং আল-বদরদের হত্যাযজ্ঞ, লুট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এগুলোর কথা স্মরণ করি তখন শিউরে উঠি। পাকিস্তান বাহিনী তো ছিলই কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে তাদের এই সহযোগীরা যদি না থাকতো তাহলে হয়তো এই ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা খানিকটা কম হোত এবং আমরা আরও আগে জয়ী হতে পারতাম। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থ আমি লিখেছি। প্রধানত আমি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির উপর বেশি গবেষণা করেছি। আমার সব সময় একটা কৌতহল ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি ছাড়া বাঙ্গালী যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে তাদের মনোজগৎটা কেমন ছিল। তারা এ ধরণের নিষ্ঠুর কর্মকান্ড একই জাতির মানুষের উপর, একই ধর্মালম্বীদের উপর কিভাবে করতে পারে সেটা মিমাংসা আমরা করতে পারিনি। এ ধরনের যে কটি বইয়ের কথা আমার মনে পড়ছে তার মধ্যে আছে দুই খন্ডে প্রকাশিত ‘রাজাকারের মন’, ‘পাকিস্তানী জেনারেলদের মন’, ‘সেই সব পাকিস্তানী’, ‘শান্তি কমিটি’ ইত্যাদি। এছাড়াও আমার সম্পদানায় প্রকাশিত হয়েছে পাঁচ খন্ডের ‘মুক্তিযুদ্ধ কোষ’, ‘মুক্তিযুদ্ধের ছিন্ন দলিলপত্র’, ‘১৩ নম্বর সেক্টর’ প্রভৃতি। এ পর্যন্ত আমার প্রকাশিত বিভিন্ন বইয়ের সংখ্যা সোয়া দুইশত এর মত হবে। আমরা যারা তখন দেশে ছিলাম তারা দেখেছি, শুনেছি রাজাকার বাহিনী, আল-বদর এবং শান্তি কমিটির নৃশংস কর্মকান্ড। পরবর্তীকালে যখন গবেষণা করতে গেছি তখন এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনেছি। আমরা অনেকে এসব কমিটির বা বাহিনীর কর্মকান্ডের মধ্যে সুক্ষ্ম তফাৎ করার চেষ্টা করি। কিন্তু মূলত এদের সবার লক্ষ্য ছিল একই। সেটি হচ্ছে তৎকালীন ক্ষমতার সংগে সংযুক্ত থাকা, সম্পদ লুটের মাধ্যমে আহরণ, জনগণকে দমিত করার জন্য হত্যা ও ধর্ষণকে ব্যবহার। যদি আমরা শান্তি কমিটির কথা ধরি তাহলে আমরা দেখবো যে শান্তি কমিটি কেন্দ্র হতে তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত ছিল এবং এই শান্তি কমিটি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে বিভিন্ন জায়গায় পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছে, হত্যা করেছে বা সহায়তা করেছে, বাঙ্গালী নারীকে ধর্ষণ করেছে বা ধর্ষণে সহায়তা করেছে এবং সম্পদ লুট করেছে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ কর্মী এবং হিন্দু ধর্মালম্বীদের। তাদের সব সময় প্ররোচনা দিয়েছে, প্রনোদনা যুগিয়েছে শান্তি কমিটির নেতৃবৃন্দ যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযম ছিলেন প্রধান। এর উদারহণ আমরা পাই তৎকালীন পত্র পত্রিকায়। আমরা যদি তুলনামূলক আলোচনা করি তাহলে দেখবো জনাব আযমের বক্তব্যই বেশি প্রকাশিত হয়েছে। আমার যতদূর মনে পড়ে তার বক্তব্যের ধরণ ছিল কয়েকটি
(১) দুষ্কৃতিকারী অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের প্রতিহত করা এবং নির্মূল করা।
(২) তাদের ভাষায় দেশ প্রেমিক অর্থাৎ পাকিস্তানী ও পাকিস্তানের সহযোগীদের সমর্থনের আহ্বান।
(৩) এই সব দেশ প্রেমিককে প্রয়োজনে অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিতকরণ।

তাদেরকে প্রকাশ্যে উজ্জিবীত করায় এবং সহায়তা করায় প্রকৃতপক্ষে হত্যাযজ্ঞ, লুট ও ধর্ষণে সহায়তা করা হয়েছে এবং এর জন্য তাদের কোন দায়বদ্ধতা ছিল না। রাজাকার বাহিনী প্রথমে জামায়াতের কর্মীদের নিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীকালে পাকিস্তান সরকার তাদের এক ধরনের আইনী কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসে। তারাও একই ভাবে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছে, সহায়তা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের অংশ গ্রহণ করেছে। এককভাবে তারা (রাজাকার বাহিনী) একই ধরণের কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে। উদ্দেশ্য ছিল একই, ক্ষমতার সংগে অবস্থান এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে যারা বিশ্বাসী তাদের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের দমন করা। ঐ সময়ের নথিপত্র যদি আমরা দেখি বিশেষ করে যারা ধর্ষিত হয়েছে, আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই মানুষ কিভাবে এ ধরনের কাজ করতে পারে। এ সম্পর্কে কিছু বই বেরিয়েছে সেখানে দেখলে দেখা যাবে তার বর্ণনা দেয়া আমার পক্ষে খুবই কষ্টকর। রাজাকারদের একই ভাবে উৎসাহ দিয়েছে, প্রনোদনা যুগিয়েছে এবং প্ররোচনাও দিয়েছে ঐ সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। যার মধ্যে জামায়াতের তৎকালীন আমির জনাব গোলাম আযম উল্লেখযোগ্য। সেই সময় পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত তার বিভিন্ন বক্তব্য এর প্রমাণ। আল-বদর বাহিনীর ভূমিকা ছিল সুনির্দিষ্ট। শান্তি কমিটি বা রাজাকাররা নির্বিচারে গণহত্যা করেছে, লুটপাট এবং ধর্ষণ করেছে। কিন্তু আল-বদররা প্রধানত পেশাজীবীদের (বুদ্ধিজীবীসহ) হত্যা করেছে। এর কারণ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিশ্বাসীদের মধ্যে যাতে একটা প্রবল শুন্যতা সৃষ্টি হয়। এই আল-বদর বাহিনী প্রধানত জামায়াত কর্মীদের দ্বারাই গঠিত হয়েছিল, যার প্রধান ছিলেন জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী। সুতরাং একটা জিনিষ পরিষ্কার যারা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দোষর হিসাবে কাজ করেছে এর মধ্যে ব্যক্তি, দল সবই অন্তর্ভূক্ত। তারা প্রকাশ্যে এই সব হত্যাকান্ড, লুট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দায়ী। কেননা বলা যেতে পারে তারা এক প্রকার লাইসেন্স প্রদান করেছে হত্যা করার জন্য। কারণ তারা অহরহ রাজনৈতিক বক্তব্যের মাধ্যমে এসব কমিটির সদস্য ও বাহিনীর সদস্যদেরকে উৎসাহিত করেছে এসব বর্বর কর্মকান্ড করার জন্য এবং এসব করলে তাদের কোন শাস্তি হবে না সেটাও নিশ্চিত করা হয়েছে। কারণ এসব কর্মকান্ড যারা করেছে তাদের কেউ কখনও দন্ডিত হয় নাই। ফলে যারা উৎসাহ যুগিয়েছে এবং যারা কর্মকান্ড করেছে তারা প্রত্যেকেই এই হত্যাযজ্ঞ বা গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটের জন্য দায়ী। আমি যখন আল-বদরদের কথা বলেছিলাম তখন বলেছিলাম তারা নির্দিষ্টভাবে পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে চেয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু ছিল সব ধরনের আন্দোলনের সুতিকার সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের প্রতি পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলির আক্রোশ ছিল বেশি। জেনারেল রাও ফরমান আলী নিজে এক সাক্ষাতকারে আমাকে একথা বলেছেন। আমার শিক্ষকদের মধ্যে অনেককেই পাকিস্তানী বাহিনী প্রথমেই হত্যা করেছিল ২৫ মার্চ রাত থেকে। পরবর্তীকালে আল-বদর বাহিনীর সদস্যরাই আমাদের বা আমার শিক্ষকদের হত্যা করেছে। এর মধ্যে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের সংগে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিশেষ করে আমার শিক্ষক অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন সাহেবের কথা আমার মনে পড়ছে। শিক্ষকদের ছাত্ররা, আল-বদরের অধিকাংশ সদস্যই ছিল ছাত্র শিবিরের কর্মী সেহেতু বলছি ছাত্ররা শিক্ষকদের হত্যা করতে পারে এটা আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসাবে অন্য কোথাও দেখিনি। আমি প্রায় ৪ দশক শিক্ষকতার সংগে যুক্ত আমার ছাত্ররা বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী কিন্তু কখনও তারা শিক্ষক হিসাবে আমাকে অসম্মান করেনি আমিও যে কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের হউক না কেন যখন ছাত্র হিসাবে আমার কাছে এসেছে আমি তাদের প্রতি সমভাবে আচরণ করেছি। সে কারণে বললাম কতটা মানুষত্ব বিবর্জিত হলে শিক্ষককে মিথ্যা কথা বলে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে হত্যা করতে পারে। ইতিহাসে এর উদাহরণ পাওয়া খুব কঠিন। (চলবে)

পুরাতন হাইকোর্ট ভবন, ঢাকা।

০১-০৭-২০১২ ইং ২:০০ পুনরায় জবানবন্দী শুরুঃ-
এ মুহূর্তে আমার একটি বইয়ের নাম ও দলিলের কথা মনে পড়ছে। বইটির লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা ও সাবেক রেজিষ্ট্রার তার নাম সম্ভবত নাজিম উদ্দিন হতে পারে। বইটির ‘যখন কৃতদাস’। বইটির কথা উল্লেখ করছি একটি কারণে, বইটির শিরোনামের মাধ্যমে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিকামী বাঙ্গালীর অবস্থা কি ছিল তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অর্থাৎ মুক্তিকামী মানুষ কৃতদাস ছিল, কৃতদাস হতে বাধ্য করা হয়েছিল। হত্যার কথা বলেছি, তার সংগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্মান্তর করণ, দেশান্তর সবকিছুই এই প্রত্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। কৃতদাসের কোন ইচ্ছা থাকে না, এই অবস্থা সৃষ্টির মাধম্যে বাঙ্গালীদেরও এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল যে, তারা স্বইচ্ছায় কোন কাজ করতে পারতো না। জেনারেল নিয়াজির একটি দলিলের কথা উল্লেখ করতে চাই যেটি আমার বই ‘মুক্তিযুদ্ধের ছিন্ন দলিলপত্র’ এ উল্লেখ করেছি। নিয়াজি তার নথিতে উল্লেখ করেছিলেন যে, পাকিস্তানিদের উচিত হবে বাঙ্গালীদের সংখ্যালঘুতে পরিনত করা। এখন আমরা যদি সেই সব রাজনীতিবিদ যাদের কথা ইতিপূর্বে আমি উল্লেখ করেছি সেসব কমিটি ও বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা এই দুটি লক্ষ্য পূরণে পাকিস্তানী জান্তাকে সহায়তা করে গেছে। অর্থাৎ মুসলমান ছাড়া অন্যান্য ধর্মালম্বী বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করা। এক্ষেত্রে তারা সিষ্টেমেটিক্যালী কাজ করছে। এর প্রমাণ প্রায় এক কোটি লোকের দেশ ত্যাগ। যারা ছিলেন তাদের পাকিস্তানী বাহিনী এবং সহযোগী শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আল-বদর বাহিনী নির্বিচারে হত্যা করেছে। দেশ জুড়ে অসংখ্য বধ্যভূমি এর প্রমাণ। হত্যার আগে এবং হত্যা না করলেও যে পরিমাণ নির্যাতন করেছে তা অকল্পনীয়। এই নির্যাতনের উপর অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয় ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আমার গবেষণায় আমার ধারণা হয়েছে এর সংখ্যা এর থেকেও বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাবে নদীর পার্শ্বে যেখানে সেতু আছে সেখানে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে যাদের বধ্য ভূমিতে স্থান হয় নাই। উদাহরণ স্বরুপ আমি একবার বরিশালের উজিরপুরে এক প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানকার লোকেরা সাধারণত পান চাষ করে। তারা আমাকে জানিয়েছিল যে, রাজাকাররা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীদের পথ দেখিয়ে সেই গ্রামে নিয়ে গিয়েছিল এবং সেই গ্রামে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। গণহত্যার বিস্তৃতি তৃণমূল পর্যায়ে কিভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল সেটা ঐ গ্রামের ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। অনেক গণহত্যার পর অনেকের লাশ গণকবর না দিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। সেই হিসাবে ত্রিশ লক্ষ্যের অধিক লোককে হত্যা করা হয়েছিল। শরনার্থী বা দেশ ত্যাগে মানুষকে বাধ্য করা হয়েছিল তার একটা কারণ ছিল তাদের সম্পত্তি লুষ্ঠন করা। আমার পূর্বোল্লিখিত গ্রন্থে আমি কিছু দলিলপত্র সংযোজন করেছি। সেই দলিলপত্রে দেখা যায় যারা শরনার্থী হয়ে গেছে বা যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের বাড়ি শান্তি কমিটির সদস্যদের দিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। ফলে অবরুদ্ধ দেশে এই যে চিত্র আমরা দেখি তার কারণ একমাত্র পাকিস্তানী বাহিনী নয়, এর সহযোগী শক্তিরাও অর্থাৎ রাজনৈতিক দল এর জন্য দায়ী। কেননা তাদের পরিকল্পনায়, পরামর্শে শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আল-বদর ইত্যাদি গঠিত হয়েছিল। এইসব রাজনৈতিক দলের মধ্যে আমি আগেও উল্লেখ করেছি, আবারও বলছি জামায়াতে ইসলামী ছিল প্রধান এবং এর দায় দায়িত্ব জামায়াতের নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির বা প্রধান জনাব গোলাম আযমের উপর বর্তায়। দেখা যায় এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে তিনি দুবার টিক্কা খানের সাথে দেখা করেছিলেন, পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যারা গণহত্যাকে সমর্থন করেছিল তাদের সাথে সাক্ষাত করেছিলন। পত্র পত্রিকায় তার কথাই বার বার এসেছে। এর অর্থ এই নয় যে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নাম এবং কথা আসেনি। আমি যে সকল অপরাধের কথা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি তার মধ্যে বিশেষ করে নারী নির্যাতনের কথা ঊল্লেখ করতে চাই । আমার কাছে যে সকল কাগজপত্র আছে বা যে সকল বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১৩ থেকে ২০ বছরের বালিকা ও তরুণীদের তুলে নেয়া হয়েছিল। গ্রামে গ্রামে যখন ইচ্ছা হয়েছে বাড়ি ঘেরাও করে বালিকা ও তরুণীদের ধর্ষণ করেছে এবং ক্যাম্পে নিয়ে গেছে। অনেক বিবরণে আমরা দেখি রাজাকার বাহিনী তাদের সহযোগী হয়ে বাড়ি ঘর চিহ্নিত করেছে এবং ধর্ষণ করেছে, ক্যাম্পে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। ১৩/১৪ বৎরের বালিকারাও জানিয়েছে প্রতিদিন কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ বার তাদের ধর্ষণ করা হতো। এই ধর্ষিতার সংখ্যা আমরা এখন চার লক্ষ বলি বটে তবে আসল সংখ্যা এর থেকে অনেক বেশি। আমি এসব কথা মনে করতে চাই না, কারণ তাতে প্রমাণিত হয় জাতি হিসাবে আমরা কত মনুষ্যত্ব হীন হয়েছিলাম।
কেননা এই রাজাকারদের এবং শান্তি কমিটির অধিকাংশই ছিল বাঙ্গালী যা আমরা অস্বীকার করতে পারিনা। আমি ভাবতে পারি না যে, বাঙ্গালী রাজনীতিবিদরা যারা পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী হিসাবে কাজ করছিল তারা কিভাবে এ কাজে পরামর্শ দিলেন, সহায়তা করলেন, তাদেরও তো স্ত্রী, কন্যা ছিল। নারী ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনকে ব্যবহার করা হয়েছে বাঙ্গালী মুক্তিকামী মানুষকে কৃতদাস করে রাখার জন্য। আমরা শরনার্থীদের কথা বলি কিন্তু শরনার্থী শিবিরে কত মানুষ মারা গেছে সেটা উল্লেখ করি না। এসব মানুষও গণহত্যার অন্তর্ভূক্ত। সামগ্রিক ভাবে এ সমস্ত কর্মকান্ড গুরুতর অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তারা এসব কর্মকান্ডে এত বদ্ধ পরিকর ছিল যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও গোলাম আযম পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করে। কোন আদর্শে হত্যা, ধর্ষণ, লুট, ধর্মান্তকরণ, দেশান্তর করণ উপাদান হিসাবে থাকতে পারে না। আদর্শের উৎসই হচ্ছে মানুষের কল্যাণ। সুতরাং এই যে কর্মকান্ড তাকে যে রাজনৈতিক আদর্শের মধ্য দিয়ে বলা যাবে না যে, এটি একটি রাজনীতি। আমাদের প্রয়াত ধর্মপ্রাণ দার্শনিক জনাব দেওয়ান মোঃ আজরফ বলেছিলেন যে, ধর্মের নামে এত মুসলমান এর আগে এত হত্যা করা হয় নাই। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে যা ঘটেছে তা আমি যদি দিনের পর দিন বর্ণনা করি তাও শেষ করা যাবে না। আমার জীবিত কালে বা জীবন কালে এত অশ্রু, এত রক্ত, এত বেদনার সম্মুখীন আর কখনো হয়নি, হতে চাইও না আল্লাহর কাছে এটি আমার প্রার্থনা। এ কারণে আমি সব সময় মুক্তি যুদ্ধ বিষয়ক আমার লেখায় ও প্রবন্ধে এই সকল হত্যাকারীদের বিচার চেয়েছি। ইহা তো সত্য ১৯৭১ সালে আমার বর্ণিত ঘটনাগুলি ঘটেছিল। আমি যাই বলি না কে তা পুনরাবৃত্তি হবে এবং বিস্তৃতিকরণ হবে। ১৯৭১ মানে আমাদের জেনারেশনের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগীদের যাদের কথা আগে আমি উল্লেখ করেছি তাদের সংঘটিত গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরকরণ, ধর্মীয় সম্প্রদায় নিশ্চিহ্ন করণ ও কোটি লোকের দেশ ত্যাগ। আমি যে গোলাম আযমের কথা বলেছি তিনি অদ্য ট্রাইব্যুানলে উপস্থিত আছেন।

 জেরা
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে আমি অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিলাম। আমি অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি নাই। তবে মুক্তিযুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কাজে আমি যুক্ত ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের আগে কিংবা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গোলাম আযমের সহিত আমার ব্যক্তিগত কোন যোগাযোগ হয় নাই। অধ্যাপক গোলাম আযম যে সকল সভায় বক্তব্য দিয়েছেন আমি সেই সকল সভায় কোন দিন উপস্থিত ছিলাম না।

জামায়াতে ইসলামীর কোন সভা সমাবেশে আমি কোন দিন যোগদান করি নাই। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করাকালীন ছাত্র ইউনিয়নে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমি ছাত্র ইউনিয়নের কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার কার্যক্রম কমিটির সদস্য ছিলাম না। আমি কোন সভায় ছাত্র ইউনিয়নের কোন পদাধিকারী ছিলাম না। স্বাধীনতার পূর্বে ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন কবে হয়েছিল তা আমার স্মরণ নেই এবং সেই নির্বাচনে আমি কোন প্রার্র্র্র্র্র্র্র্র্থী ছিলাম না। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম ডাকসু নির্বাচন কোন সালে হয়েছিল তা আমার স্মরণ নেই। ডাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত কোন তথ্য আমি দিতে পারব না। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে বাংলাদেশে প্রথম কখন আদমশুমারী হয়েছিল তা আমি বলতে পারব না। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে এদেশে সর্বশেষ কত সালে আদমশুমারী হয়েছিল তা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শরুর সময় এদেশের জনসংখ্যা সাড়ে সাত কোটি ছিল বলা হয়। আমি ১৯৭৪ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা শুরু করি, তবে তার আগে থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে প্রবন্ধ লিখি। আমি ১৯৭৪ সালের আগে থেকেই দৈনিক বাংলা এবং সাপ্তাহিক বিচিত্রায় লেখালেখি করতাম।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পূর্ব পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কোন প্রবন্ধ লিখেছি কিনা তা আমার স্মরণ নাই। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করেছিলেন তা আমি কত সালে সর্বপ্রথম জানতে পারি তা বলতে পারি না তবে যখন গঠন করেছিলেন তখনই জেনেছিলাম। যতদূর মনে পড়ে তিনি সেটা গঠন করেছিলেন ১৯৭৩ সালে। এই সংবাদ আমি রেডিও, টেলিভিশন, পত্র/পত্রিকা বা কোন লোকের পত্র বা টেলিফোনের মাধ্যমে জেনেছিলাম কিনা তা আমার স্মরণ নাই। অধ্যাপক গোলাম আযম পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করেছিলেন তার কোন দৃশ্যমান কাগজ আমার নিকট নাই। কতজন লোক নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়েছিল তা আমি বলতে পারব না। কমিটির সম্পাদক কে ছিলেন তা আমি বলতে পারব না। কারণ আমাদের কাছে গোলাম আযমের ব্যাপারটিই মুখ্য ছিল অন্য কিছু নয়। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করেছিলেন তৎমর্মে ১৯৭৫ সালের পূর্বে দেশের কোন সাংবাদপত্র বা পত্রিকা আমার সংগ্রহে নাই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মিরপুরের সঙ্গে কোন এলাকা নিয়ে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের আসন ছিল তা আমার মনে নাই।

১৯৬৯ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চের পূর্ব পর্যন্ত আমি আমার চাচার বাড়ি পল্লবীতে থাকতাম। আমি ২৫ মার্চ থেকে পরবর্তী যে কয়দিন মিরপুরে ছিলাম তখন মিরপুরে অবাঙ্গালীরা বাঙ্গালীদের উপর অত্যাচার শুরু করেছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে যে দুটি আসন আওয়ামী লীগ পায় নাই সে দুটির মধ্যে একটি হলো ময়মনসিংহ এবং অপরটি পার্বত্য চট্টগ্রাম।

প্রাদেশিক পরিষদ এবং জাতীয় পরিষদের সদস্যদের নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনের পর গণপরিষদ গঠিত হয় তবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের লোকদের বাদ দেয়া হয়। এদের সংখ্যা আমি বলতে পারব না। আমি জেনারেল নিয়াজের যে দলিলের কথা জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছি তা ছিল টাইপ করা নথির অংশ। তাহাতে নিয়াজী সাহেবের কোন স্বাক্ষর ছিল না। উক্ত দলিলটি আমি রাজশাহী হেরিটেজ আর্কাইভ হইতে সংগ্রহ করেছিলাম। হেরিটেজ আর্কাইভ প্রতিষ্ঠানটি হলো অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত যাহা রাজশাহীর কাজলা এলাকায় অবস্থিত। ইহা চার/পাঁচ বছর আগে শুরু হয়েছে। উদ্ভোদনী অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম। আমার লিখিত “মুক্তিযুদ্ধের ছিন্ন দলিলপত্র” বইটি খুব সম্ভব ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে।

অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের একজন অধ্যাপক। তিনি কতসালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন তা আমার স্মরণ নাই। তিনি আমার থেকে বয়োকনিষ্ঠ। তিনি অধ্যাপনায় যোগদানের পূর্বে আমার জানা মতে অন্য কোন পেশায় ছিলেন না। তিনি কোথা থেকে নিয়াজির সাহেবের দলিলটি সংগ্রহ করেছেন তা আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি নাই। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে আত্মসর্ম্পণে সময় জেনারেল নিয়াজি সাহেব তার অস্ত্র-সস্ত্রসহ দলিলপত্র মিত্রবাহিনীর প্রধান জগজিৎসিংহ অররার নিকট প্রদান করেছিলেন কিনা তা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান সাহেবের বয়স কত ছিল তা আমি বলতে পারব না। জেনারেল নিয়াজি সাহেবের সাথে মাহবুবুর রহমানের কখনও সাক্ষাত হয়েছিল কিনা তা আমি জানি না। ১৯৭১ সালে বা তার পরিবর্তী সময়ে কোন পাকিস্তান জেনারেল বা কোন কমান্ডিং অফিসারের সঙ্গে অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান সাহেবের কোন দেখা সাক্ষাত হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। জেনারেল নিয়াজির দলিলটি কোন নথির ধারাবাহিক বিবরণ বা অংশ সে ব্যাপারে আমি কোন অনুসন্ধান করি নাই। (চলবে)


০৩-০৭-২০১২ইং পুনরায় জেরা শুরু ঃ-
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাস করতাম না। আমার সাবসিডিয়ারী বিষয় ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইংরেজী। ১৯৪৭ সালের পরে পূর্ব পাকিস্তানের যে বঞ্চনার কথা বলেছি তা বলেছি এই কারণে যে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় আমাদের একটা আশা ছিল যে পাকিস্তানে সাম্য বজায় থাকবে, তা না থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করার জন্য বঞ্চনার কথা এসেছে। আর ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পূর্বকালে যে বঞ্চনার কথা বলা হয় সেটা পৃথিবীর জন্ম থেকেই ঐধাব ধহফ যধাব হড়ঃ দের আলোচনার সময় বলা হয় সেই বঞ্চনা কোনভাবেই ১৯৪৭ পরবর্তী বঞ্চনার সংগে তুলনীয় নহে। ১৯৪৭ সালের আগে পূর্ব বঙ্গের কতজন ব্যক্তি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কমিশন অফিসার ছিলেন সে সম্পর্কে আমার নিকট কোন তথ্য নাই। অনুরূপভাবে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস এবং বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে কতজন ব্যক্তি পূর্ববঙ্গ থেকে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা ছিলেন সে সম্পর্কে কোন ধারণা নাই কারণ সেটি আমার বিষয় নহে। ১৯৪৭ সালের পূর্বে পূর্ববঙ্গে কোন পাটকল আমার জানা মতে ছিল না। এটিও আমার বিষয় নহে। ১৯৪৭ সালের পূর্বে আমার জানামতে পূর্ববঙ্গে কোন ভারী শিল্প কারখানার অস্তিত্ব ছিল না। পূর্ববঙ্গ এবং সিলেট একক মুসলিম রাষ্ট্র অর্থাৎ পাকিস্তান হবে এটা তৎকালীন সংখ্যা গরিষ্ঠ জনসাধারণই দিয়েছিল। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে যারা এই অঞ্চলের মুসলামনদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা কেউ জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ছিলেন না। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কোন সময় জামায়াতে ইসলামী আমার জানামতে ছিল না।

১৯৭১ সালের আগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় মুসলিম লীগ ছিল কখনও সামরিক বাহিনী ছিল, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যুক্তফ্রন্টের অঙ্গ হিসাবে পূর্ব পাকিস্তানে ছিল। পাকিস্তানে প্রথম সংবিধান তৈরির সময় পার্লামেন্টের পক্ষে বিপক্ষে মত এসেছে, তবে সংবিধান গ্রহণ করার পরে তাহার কোন বিরুদ্ধ মতের অস্তিত্ব থাকে না। যে পরিষদ কর্তৃক সংবিধান গৃহীত হয়েছিল তার অন্যতম সদস্য ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীকালে সামরিক শাসক যে সংবিধান তৈরি করেছিলেন তার প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ছিলেন কিনা তা আমি জানি না। মৌলিক গণতন্ত্রের অধীনে প্রেসিডেন্ট থেকে পার্লামেন্ট পর্যন্ত সকল নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেছিল কিনা তা আমি বলতে পারব না। আইয়ূব বিরুধী আন্দোলনে বিভিন্ন সময় ‘পি.ডি.এম,’ ‘কপ’ এবং ‘ডাক’ নামে রাজনৈতিক মোর্চা তৈরি হয়েছিল। আইয়ূব খানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মিস ফাতেমা জিন্নাহ একজন প্রার্থী ছিলেন। তিনি ‘কপ’ এর প্রার্থী ছিলেন। এই ‘কপ’ এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী দুই দলই ছিল। পার্লামেন্টে সংযুক্ত বিরুধী দল হিসাবে তারা ভূমিকা রাখতো কিনা তা আমি জানি না। আইয়ূব খানের আমলে শেষবারে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে বিরুধী দলের নেতা কাহারা ছিলেন তাদের নাম আমার মনে নাই। ‘পিডিএম’- এ জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগ ছিল কিনা তা আমার স্মরণ নাই। আমাদের দেশে প্রচলিত অধিকাংশ আইনই বৃটিশ আমলে গৃহীত কিনা তা আমি বলতে পারব না।

আমি আমার সম্পাদিত “মুক্তিযুদ্ধ কোষ” এর দ্বিতীয় খন্ডের ৯০-৯১ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন লেখকের লেখা ‘ভুক্তি’ অর্ন্তভুক্ত করেছি। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের লেখা তার আত্মজীবনীর অংশ উদ্বৃত করেছি এবং পঞ্চম খন্ডে নির্দেশিকা অধ্যায়ে ৪৯১ ক্রমিকে রেফারেন্স হিসাবে উল্লেখ করেছি। অধ্যাপক গোলাম আযমের উল্লেখিত লেখা উদ্বৃত করার জন্য আমি তার নিকট থেকে কোন অনুমতি গ্রহণ করি নাই। সেটা আমি ঐ বইয়ে উল্লেখ করেছি। প্রতি খন্ডের ভূমিকায় দ্বিতীয় পৃষ্ঠার দ্বিতীয় প্যারায় আমি উল্লেখ করেছি যে, “যে সব বই থেকে সংকলন করা হয়েছে তাদের অনেকের কাছ থেকে আমরা অনুমতি গ্রহণ করেছি। কিন্তু অনেকের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া সম্ভব হয়নি। কারণ স্থানীয়ভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক বই বেরিয়েছে বা কোন একটি সংস্থা প্রকাশক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল তারপর উঠে গেছে। এরকম অনেক ব্যক্তি/ সংস্থার সংগে যোগাযোগ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। প্রকাশিত ঠিকানায় ব্যক্তি/ সংস্থাতে পাইনি। এই অক্ষমতা আশা করি লেখকেরা (যাদের অনুমতি ছাড়া লেখা সংকলন হয়েছে) আমাদের ক্ষমা করবেন। আমার সদিচ্ছার অভাব ছিল না।” এই অংশটুকু অর্থাৎ আমার বক্তব্য উদ্বৃতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নহে শুধু ‘ভুক্তি’ এর বেলায় প্রযোজ্য। আমার এই ব্যাখ্যাটি ভূমিকায় উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করি নাই। ছয় দফাতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের কোন প্রস্তাবনা ছিল না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টোতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের কোন প্রস্তাবনা ছিল না। ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন সামরিক সরকারের এল.এফ.ও এর অধীনে হয়েছিল।

এল.এফ.ও এর অধীনে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের কোন সুনির্দিষ্ট মেয়াদ ছিল না। এই পরিষদের মধ্য হতে মন্ত্রী সভা গঠন করা হবে এ ধরণের কোন প্রস্তাবনা ছিল কিনা তা আমি জানি না। এই জাতীয় পরিষদের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব ছিল সংবিধান প্রণয়ন করা এই বক্তব্যের সহিত আমি একমত নহি। এল.এফ.ও অনুযায়ী জাতীয় পরিষদের প্রণীত সংবিধানের সাথে প্রেসিডেন্ট একমত না হলে জাতীয় পরিষদ বাতিল হয়ে যাবে এরকম ধারা সন্নিবেশিত ছিল কিনা তা আমার জানা নাই। জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন থেকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন করা না হলে জাতীয় পরিষদ বাতিল হয়ে যাবে এরকম ধারা ছিল কিনা তা আমার জানা নাই। ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতেই সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে এরকম বেশ কয়েকটি ধারা এর মধ্যে ছিল কিনা তা আমার জানা নাই। এল.এফ.ও এর বিরোধীতায় অধিকার সংরক্ষণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন বক্তব্য রেখেছিলেন কিনা তা আমার জানা নেই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পিডিপি জামায়াতে ইসলামী না মুসলিম লীগ বেশি প্রার্থী দিয়েছিলেন তা আমি কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না। উক্ত নির্বাচনে উল্লেখিত দলসমূহের মধ্যে কোন দল বেশি ভোট পেয়েছিল তা আমি কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা কতভাগ আওয়ামী লীগ পেয়েছিল তাও কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টুতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কোন বক্তব্য ছিল না।

স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রাজনৈতিক দল বা সমমনা রাজনৈতিক দলের সংগে কোন বৈঠক করেছিলেন কিনা তা আমার জানা নাই। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা তৎকালীন প্রচার মাধ্যমের দূর্বলতার কারণে এবং পাকিস্তান সরকারের সেন্সরশীপ থাকার কারণে অধিকাংশ জনগণের নিকট পৌছায় নাই, ইহা সত্য নহে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে মীরপুর এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে জনাব জহির উদ্দিন সাহেব নির্বাচিত হয়েছিলেন কিনা সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নহি। তিনি একজন উর্দূভাষী অবাঙ্গালী কিনা সে বিষয়েও আমি নিশ্চিত নহি। তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান না করে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর সহায়তা করেছিলেন কিনা তা আমার জানা নেই। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করার কারণে পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী অনেকের সদস্য পদ বাতিল করলেও জনাব জহির উদ্দিনের সদস্যপদ বহাল ছিল কিনা আমি কাগজ পত্র না দেখলে বলতে পারব না।

প্রশ্ন: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করার কারণে পাকিস্তান সরকার অনেক জাতীয় পরিষদ সদস্যপদ বাতিল করে প্রহসনের উপনির্বাচনের করেছিলেন কিনা?

উত্তরঃ ঐ সময়ে জাতীয় পরিষদের কোন অস্তিত্বই ছিলনা। সেজন্যই উপনির্বাচন করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালে মীরপুর এলাকায় কোন উপনির্বাচন হয়েছিল কিনা তা আমার জানা নাই। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ গঠিত হয়েছিল। ঐ গণপরিষদে সদস্য ছিলেন যারা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান এলাকা থেকে জাতীয় ও প্রদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলন। তবে তাদের মধ্যে যাহারা স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল তাদের গণপরিষদের সদস্য করা হয় নাই কিনা তা কাগজপত্র না দেখে আমরা বলতে পারব না। গণপরিষদের সদস্য কত ছিল তা কাগজপত্র না দেখে আমি বলতে পারব না। জনাব জহির উদ্দিন সাহেব গণপরিষদের সদস্য ছিলেন কিনা তা আমি বলতে পারব না। জনাব জহির উদ্দিন সাহেব পরবর্তী অন্য কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন কিনা তা আমি বলতে পারব না। জনাব জহির উদ্দিন সাহেব সম্পর্কে আমি জানা নাই হিসাবে যা বললাম তা সবই জানি তবে জানা নাই মর্মে অসত্য বলেছি, ইহা সত্য নহে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা মিথ্যা ছিল কিনা তা আমি বলতে পারব না। তবে মিথ্যা আখ্যায়িত করে এই মামলা প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন হয়েছিল, ইহা সত্য। এখন অনেকেই বলেছেন মামলার অভিযোগটি সত্য ছিল। তার মধ্যে বর্তমান সংসদরে মাননীয় ডেপুটি স্পিকার সাহেবও একথা বলে থাকতে পারেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বিষয়ে আমি কোন গবেষণা করি নাই। ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ তৎকালীন পূর্ববঙ্গ বর্তমানে বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, নগরায়ন ও মুক্তিযোদ্ধার বর্হিভূত বিষয় নহে। উপমহাদেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছে তা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে শুরু হয়েছে ইহা সম্পূর্ণ সঠিক নহে। উপমহাদেশের চলমান রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সবচেয়ে পুরাতন। পরবর্তীতে এরই ধারাবাহিকতায় মুসলিম লীগও কমিউনিষ্ট পার্টিসহ অন্যান্য দলসমূহের কার্যক্রম শুরু হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস অহিংস পদ্ধতিতে স্বাধীনতা আদায়ে বিশ্বাসী ছিল ইহা পূর্ণাঙ্গ সত্য নহে। এক সময়ে তারা অহিংস আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে গ্রহণ করেছিল।

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সুভাষ চন্দ্র বসু তার পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছিলেন তার মধ্যে সশস্ত্র কর্মপন্থাও ছিল, তবে ইহাই একমাত্র পথ তাহা তিনি বলেছিলেন কিনা তা আমার জানা নাই। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দ্বারা মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে না এই মতাদর্শ বিশ্বাস করে ভারতীয় মুসলিম লীগের জন্ম হয়, ইহা সত্য। মুসলিম লীগ তার জন্মলগ্ন থেকে মুসলমানদের জন্য নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব দাবি করেছিল কিনা তা আমি বলতে পারব না। সম্প্রদায় ভিত্তিক দাবিকে কেউ ধর্মীয় রাজনীতি আবার কেউ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি হিসাবে অভিহিত করেন কিনা তা আমি বলতে বলতে পারব না। জামায়াতে ইসলামীকে সাম্প্রদায়িক এবং ধর্ম ব্যবসায়ী দল হিসাবে মনে করি। মুসলীম লীগের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের দাবির ব্যাপারে জাতীয় কংগ্রেসের ঘোর আপত্তি ছিল কিনা তা আমি বলতে পারি না। পরবর্তীকালে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের চেষ্টা করা হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে খেলাফত আন্দোলনের নেতৃত্বে মিঃ গান্ধির নিকট অর্পন করা হয়েছিল কিনা তা  আমি বলতে পারব না। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নি¤œবর্ণের হিন্দুদের জন্য সংরক্ষিত আসন সমর্থন করলেও মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সমর্থন করে নাই, ইহা আমি কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের লাহোর প্রস্তাবে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে একাধিক রাষ্ট্র গঠনের কথা উল্লেখ থাকলেও পরবর্তীকালে ১৯৪৬ সালে একাধিক রাষ্ট্রের স্থলে একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব পাশ করা হয়। উক্ত প্রস্তাব বৃটিশরা মেনে নিলেও কংগ্রেসের প্রস্তাব গ্রহণ করে বাংলার অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহ পাকিস্তান থেকে পৃথক করে এবং পাঞ্জাবের হিন্দু ও শিখ অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহ পাকিস্তানের অন্তর্ভূত না করে ভারতের অন্তর্ভূক্ত করা হয়, ইহা আমি কাগজপত্র না দেখে বলতে পরব না। ১৯৪৬ সালে যে সম্মেলনে একটি মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত হয় তার নেতৃত্বে জিন্নাহ সাহেব এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব ছিলেন কিনা তা আমি কাগজপত্র না দেখে বলতে পরব না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐ সময়ে মুসলিম লীগ করতেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরে শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক সাহেবকে পূর্ব পাকিস্তানের এ্যাডভোকেট জেনারেল হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। (চলবে)


০৩-০৭-২০১২ ইং ২-০০মি পুনরায় জেরা শুরু ঃ-
বিহার, উড়িষ্যা ও আসাম কোন দাবির প্রেক্ষিতে প্রদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায় কিনা সে সম্পর্কে আমার কোন ধরনা নাই। জনাব আতাউর রহমান খান সাহেব আওয়ামী লীগ দলীয় লোক হিসাবে যুক্তফ্রন্টের মুখ্য মন্ত্রী হয়েছিলেন বলে আমার মনে পড়ে। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক সাহেবের ছেলে এ.কে ফায়জুল হক সাহেব আওয়ামী লীগের সংগে সংযুক্ত ছিলেন কিনা তা আমি বলতে পরব না। ১৯৯৬ সালে এ.কে. ফায়জুল হক সাহেব আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ছিলেন কিনা তা আমার স্মরণ নাই। ১৯৭১ সালে এ.কে ফায়জুল হক সাহেবের ভূমিকা সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নাই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর ২৫ শে মার্চের আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করে অধ্যাপক গোলাম আযম অথবা জামায়াতে ইসলামী কোন বক্তব্য দিয়েছিলেন কিনা তাহা কাগজপত্র না দেখে আমি বলতে পারব না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরোধীতা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন জনাব জুলফিকার ভূট্টো সাহেব একথা কাগজপত্র না দেখে বলা যাবেনা, তবে তিনি জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিলেন।
খুব সম্ভব কাগজে এ কথা পড়েছিলাম যে জানাব ভূট্টো সাহেব দুই প্রধানমন্ত্রীত্বের কথা বলেছিলেন। এই দুইজনের মধ্যে তিনি নিজে একজন দাবিদার ছিলেন কিনা তা কাগজপত্রে না দেখে বলতে পারব না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ যে কার্যকর হতে না পারে সে জন্য জেনারেল ইয়াহিয়া ও জানাব ভূট্টো সাহেব ষড়যন্ত্র করেছিলেন, ইহা একটি সাধারণ ধারণা।
২৫শে মার্চের নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর আক্রমনের পরিকল্পনা পাকিস্তান সামরিক সরকার পূর্ব থেকে পরিকল্পনা করে থাকতে পারে। ২৫শে মার্চের আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগে যে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের লোক দেখানো আচার ছিল মাত্র, ইহা অনেকরই ধারণা। আলোচনাকে ব্যবহার করে তিনি পাকিস্তানের দখলদার বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করেছিলেন, ইহা হতে পারে। লারকানাই পাখি শিকারের নামে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও জনাব ভূট্টো সাহেব বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন, তবে অপারেশন সার্চ-লাইটের বিষয় চুড়ান্ত করেছিলেন কি না তা আমি পত্রিকায় পড়ি নাই। আপারেশন সার্চ-লাইট শুরু করার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত ইয়াহিয়া খান সাহেব এবং জনাব ভূট্টো সাহেব ঢাকাতে ছিলেন। অপারেশন সার্চ-লাইট শুরুর আগ পর্যন্ত ইয়াহিয়া খান ও ভূট্টো সাহেবের সংগে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের সাক্ষাত হয়েছিল কিনা তা আমার স্মরণ নাই। আমার দীর্ঘ গবেষণা কালে এ সংক্রান্ত কোন সংবাদ আমার সাংগ্রহে আসে কিনা তা আমার স্মরণ নাই। অপারেশন সার্চ-লাইট বিষয়টি সর্বপ্রথম আমি কবে শুনেছি তা খেয়াল নাই, তবে পরে শুনেছি। অপারেশন সার্চ-লাইট শব্দটি আমি ১৯৭১ সালে বিজয়ের আগে না পরে শুনেছি তা আমার খোয়াল নাই। অপারেশন সার্চ-লাইট শব্দটি কোন মাধ্যমের নিকট থেকে সর্বপ্রথম জানতে পারি তা আমার খেয়াল নেই। অপারেশন সার্চ-লাইটের পুরো বিষয়বস্তু সম্বলিত কোন দলিল আমার সংগ্রহে নাই। আমি জেনারেল রাও ফরমান আলীর সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম। অপারেশন সার্চ-লাইটের পরিকল্পনা, কর্মপন্থা এবং বিস্তৃতি সম্পর্কে আমার সাক্ষাতকার না দেখলে আমি বলতে পারব না। বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ২৫শে মার্চের পর যখন দখলদার বাহিনী যে স্থানে অবস্থান নিয়েছে সে স্থান সমূহ মুক্তিকামী জনতার নিয়ন্ত্রনে ছিল। দখলদার পাক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ-লাইট’ ছাড়া ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্য কোন কোড নামে এদেশে অপারেশন চালিয়েছে কিনা তা আমার জানা নাই, এ সম্পর্কে পাকিস্তান জেনারেলদের বই পড়লে হয়তো জানা যাবে। অপারেশন সার্চ-লাইটের নীতি ও কর্মপন্থার আলোকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের কর্মকান্ড চালিয়েছিল কিনা তার সম্পূর্ন দলিল আমি দেখি নাই বিধায় বলতে পারছিনা। অপারেশন সার্চ-লাইট পরিকল্পনায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী করেছিল। কোন বেসামরিক ব্যক্তি এর সংঙ্গে জড়িত ছিল কিনা তা আমার জানা নাই।
প্রশ্নঃ পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ১৯৭১ সালে কোন বেসামরিক ব্যক্তি নিয়ন্ত্রন করতেন কি না ?
উত্তরঃ প্রভাবান্বিত করত।
নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবান্বিত করা দুটি ভিন্ন শব্দ এবং ভিন্ন অর্থ। ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি গঠনের আগ পর্যন্ত এ দেশের কোন বেসামরিক ব্যক্তির সহিত জেনারেল ইয়াহিয়া খানের যোগাযোগ ছিল না, ইহা আমার মনে হয় না। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পর থেকে ১৯৭১ সালের ৪টা এপ্রিলের আগ পর্যন্ত এদেশের আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, জেনারেল টিক্কা খান বা অন্য কোন পাকিস্তানি সামরিক অফিসারের সংগে সাক্ষাত করেছেন যোগাযোগ স্থাপন করেছেন এমর্মে কোন তথ্য ভিত্তিক সংগ্রহ আমার কাছে না থাকলেও এটা অনুমান করে বোঝা যায় যে, যোগাযোগ না থাকলে ৪ঠা এপ্রিলের বৈঠক হতে পরতো না। ৪ঠা এপ্রিলের যোগাযোগ করে ৪ঠা এপ্রিলে মিটিং করা সম্ভব কিনা তা আমি বলতে পারব না। সম্ভবত সর্বপ্রথম এপ্রিলের ৯ তারিখে শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল। তখন এর আহবায়ক ছিল খাজা খয়েরুদ্দিন সাহেব। সম্পাদক কে ছিলেন তা আমি বলতে পারব না। যতদূর মনে পড়ে ৯ই এপ্রিলের পরে মৌলভী ফরিদ আহম্মেদের নেতৃত্বে উক্ত শান্তি কমিটি বিভক্ত হয়ে শান্তি কল্যান কমিটি নামে আরেকটি কমিটি হয়। দখলদার বাহিনীর সামরিক অফিসারদের মধ্যে বেসামরিক বিষয় দেখাশুনা করবার জন্য জেনারেল রাও ফরমান আলীকে দায়িত্ব দেয়া হয় মর্মে কাগজপত্রে দেখা যায়। খাজা খয়রুদ্দিনের নেতৃত্বে শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল তবে ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট কিনা তা আমি কাগজপত্র না দেখে বলতে পারছিনা। মৌলভী ফরিদ আহম্মদের নেতৃত্বে যে শান্তি কল্যান কমিটি গঠিত হয়েছিল তার সংখ্যা কত ছিল তা কাগজ পত্র না দেখে আমি বলতে পরব না। উল্লেখিত শান্তি কমিটির ১৪০ জনের মধ্যে এডভোকেট এ.কিউ.এম. শফিকুল ইসলাম, সৈয়দ মো: মাসুম. গোলাম আযম, আব্দুল জব্বার খদ্দর, মাহমুদ আলী, ইউসুফ আলী চৌধুরী ওরফে মোহন মিয়া, এ কে রফিকুল ইসলাম, আবুল কাশেম, গোলাম সরোয়ার, সৈয়দ আজিজুল হক নান্না মিয়া, এ.এস.এম. সোলায়মান,পীর মহসিন উদ্দিন দুদু মিয়া, শফিকুর রহমান, মেজর অব: আফসার উদ্দিন, সৈয়দ মহসীন আলী, ফজলুল হক চৌধুরী, সিরাজ উদ্দিন, এ্যাডভোকেট এ.টি. সাদি, আতাউল হক খান, মকবুলুর রহমান, নুরুজ্জামান, জনাব সিদ্দিক আহম্মেদ, এ্যাডভোকেট আক্তার উদ্দিন, রাজা ত্রিদিব রায়, ফয়েজ বক্স সদস্য ছিলেন আমার যতদূর মনে পড়ে। উল্লেখিত ব্যক্তিগনের মধ্যে গোলাম আযম সাহেব জামায়াত ইসলামীর সদস্য ছিলেন এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত, অন্যদের ব্যপারে কাগজপত্র না দেখে আমি বলতে পরব না, তবে বিভিন্ন দলের ছিলেন। শান্তি কমিটি পরবর্তীকালে তাদের মধ্য থেকে একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করেছিল। সেই কার্য নির্বহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ২১ জন। এ কার্যকরী কমিটির আহবায়ক খাজা খয়রুদ্দিন ছিলেন কি না তা আমি বই না দেখে বলতে পারব না। তিনি এই কার্য নির্বহী কমিটির সদস্য ছিলেন কিনা তা বই না দেখে আমি বলতে পরব না। কার্য নির্বাহী কমিটিতে জামায়াতে ইসলামীর কতজন সদস্য ছিলেন তা আমি বই না দেখে বলতে পরব না। তবে গোলাম আযম সাহেব ছিলেন সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। শান্তি কমিটির প্রথম বৈঠকের পর পরবর্তীতে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত শান্তি কমিটির পূর্ণাঙ্গ বৈঠক হয়েছিল কি না সেটা আমি আমার বই না দেখে বলতে পরব না। শান্তি কমিটির বৈঠকের কোরাম কত সদস্য উপস্থিত থাকলে হতো তাও আমি বলতে পরব না। তৎকালীন রাজশাহীর চাপাই নবাবগঞ্জ মহকুমায় শান্তি কমিটির প্রধানের নাম আমি বই না দেখে বলতে পরব না। তিনি কোন দলের সদস্য ছিলেন তাও আমি বই না দেখে বলতে পরব না। রাজাশাহী চাপাই নবাবগঞ্জ মহকুমায় শান্তি কমিটির প্রধানের সাথেগোলাম আযম সাহেবের ১৯৭১ সালে দেখা সাক্ষাত হয়েছিল কি না তৎবিষয়ে আমার গবেষণার বই না দেখে বলতে পরব না। “গোলাম আযম সাহেব চাপাই নাবাবগঞ্জের শান্তি কমিটির কোন সদস্যকে কোন লিখিত নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন কিনা তাও আমি আমার গবেষনার বই না দেখে বলতে পরব না।
চাপাই নবাবগঞ্জ শান্তি কমিটি যৌথভাবে বা শান্তি কমিটির কোন সদস্য একক ভাবে গোলাম আযম সাহেবের সাথে দেখা করেছিলেন তৎমের্ম আমি আমার গবেষণার বই না দেখে বলতে পরব না।”
“পরবর্তীতে সাক্ষী বলেন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সমস্ত নির্দেশনা পাঠানো হতো তা সব জেলা কমিটিতে যেত এবং সে অনুযায়ী কাজ হতো।”
কোটেশনের মধ্যে উপরে উল্লেখিত সাক্ষীর জেরার বক্তব্য সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনাল পড়িয়া শুনাইলে সাক্ষী বলেন যে, ঐ বাক্তব্য আমার বলা মত সঠিকভাবে লেখা হয় নাই তখন ট্রাইব্যুনাল উপরে উল্লেখিত প্রশ্ন গুলি পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলে এই ব্যাপারে আসামীপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীদের আপত্তিসহ সাক্ষী নিন্মরুপ উত্তর প্রদান করে:-
প্রশ্নঃ গোলাম আযম সাহেব চাপাই নবাবগঞ্জের শান্তি কমিটির কোন সদস্যকে কোন লিখিত নির্দেশ পাঠিয়ে ছিলেন কি না ?
উত্তরঃ কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সমস্ত সার্কুলার ইউনিয়ন পর্যন্ত শান্তি কমিটিতে প্রেরণ করা হতো।
প্রশ্নঃ চাপাইনবাবগঞ্জ শান্তি কমিটি যৌথভাবে বা শান্তি কমিটির কোন সদস্য এককভাবে গোলাম আযম সাহেবের সাথে দেখা করেছিলেন কিনা ?
উত্তরঃ যেহেতু তারা শান্তি কমিটির সদস্য সেহেতু তার সাথে যোগাযোগ থাকাটা স্বাভাবিক। (চলবে)

০৪-০৭-২০১২ইং পুনরায় জেরা শুরু:
প্রশ্নঃ শান্তি কমিটির কোন সার্কুলার কোন স্থানে যাওয়া এবং শান্তি কমিটির কোন ব্যক্তির চিঠি যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে কিনা?

উত্তরঃ এ ক্ষেত্রে পার্থক্যটি কম। কেননা কোন ব্যক্তি যখন নি¤œ পর্যায়ে কমিটির কাউকে লেখেন এবং শান্তি কমিটি সংক্রান্ত কোন বিষয় সেখানে থাকে তখন পার্থক্যটি কম। একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় থাকলে অবশ্যই তার মধ্যে প্রার্থক্য থাকতে পারে।

প্রশ্নঃ শান্তি কমিটির পক্ষ থেকে কোন সার্কুলার যাওয়া এবং শান্তি কমিটির কোন লোকের কাছ থেকে নি¤œ কমিটির কারো কাছে যোগাযোগ করা একই ঘটনা কিনা?

উত্তরঃ আমার প্রদত্ত পূর্বের উত্তরের মধ্যে এই প্রশ্নের উত্তর আছে। কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি হতে চাপাইনবাবগঞ্জ শান্তি কমিটিতে কোন নির্দেশনা পাঠানো হয়েছিল এ সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। কেননা আমার সামনে সে ধারণের কোন ডকুমেন্ট নাই বিধায় স্মরণ করতে পারছি না। অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষ হতে চাপাইনবাবগঞ্জ শান্তি কমিটির কাছে কোন নির্দেশনা পাঠানো হয়েছিল কিনা তা আমি কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অধিকাংশ সময় আমি ঢাকার ধানমন্ডীতে ছিলাম। ধানমন্ডী কোন থানা ছিল কিনা তা আমি বলতে পারব না। তখন ধানমন্ডী থানার শান্তি কমিটির সভাপতি কে ছিলেন তা আমি বলতে পারব না। আমার বাড়ির সবচেয়ে নিকটবর্তী শান্তি কমিটির সদস্য কে ছিলেন তা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ থেকে ধানমন্ডী এলাকাসহ পুরা ঢাকা পাকিস্তান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ঐ এলাকার প্রশাসনও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাধারণ আচরণ ছিল লোক দেখলে তারা বলতো ‘ডানডি’ কার্ড দেখাও। আমি ১৯৭১ সালে ধানমন্ডী এলাকায় থাকা অবস্থায় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ডানডি কার্ড সংগ্রহ করেছিলাম, ইহা সত্য নহে। সত্য নহে যে আমি ১৯৭১ সালে টেকনিসিয়ান হিসাবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমি একটি ‘ডানডি’ কার্ড সংগ্রহ করেছিলাম। তৎকালীন ধানমন্ডীর ১৮ নম্বর রোডে আমি থাকতাম। আমি যে চাচার সাথে মীরপুরে থাকতাম সেই চাচার সাথেই ধানমন্ডীতে থাকতাম। আমার সেই চাচা জীবিত আছেন। আমার সেই চাচার নাম বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন।

আমার উক্ত চাচার আমার সমবয়সী কোন পুত্র সন্তান ছিল না। আমরা ধানমন্ডী এলাকায় যে বাসায় ভাড়া থাকতাম সেখান থেকে নিকটবর্তী রাজাকার ক্যাম্পের দূরত্ব আমার মনে নাই। ধানমন্ডী এলাকার রাজাকার কমান্ডারের নাম আমি জানি না। ঐ এলাকার আল-বদর অফিস কোথায় ছিল তা আমি বলতে পারব না। ঐ এলাকার আল-বদর কমান্ডারের নামও আমি বলতে পারব না। আমি ১৯৭১ সালে যতদিন ধানমন্ডী এলাকায় ছিলাম তখন প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হতাম না। ঐ এলাকায় আমরা যেখানে থাকতাম সেইখানে বেশিরভাগ অবাঙ্গালী না বাঙ্গালী ছিল তা আমি বলতে পারব না। ঐ সময় জনাব শাহরিয়ার কবিরের সঙ্গে আামর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল না। তার সঙ্গে একবার কি দু’বার যোগাযোগ হয়েছিল। পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কোন লোকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো এমন কোন লোকের নাম আমি নির্দিষ্ট কবে বলতে পারব না। আমার চাচা বোরহান উদ্দিন জাহাঙ্গীর সাহেব যতটুকু মনে পড়ে ঐ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। ঐ সময়ে তিনি খুব সম্ভব বেসরকারী ফার্মে কাজ করতেন। সেই বেসরকারী ফার্মের নাম আমি বলতে পারব না।

আমরা যে বাসায় থাকতাম সেখান থেকে আমার চাচার অফিসের দূরত্ব আমি বলতে পারব না। আমাদের বাসার বাজার ঘাট কে করতেন তা আমার স্মরণ নাই। আমার চাচা বাসা থেকে বের হয়ে কি যানবাহনে অফিসে যেতেন তা আমি বলতে পারব না। ঐ এলাকায় তখন ২/১ জনের সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। যেমন বেবী মওদূদ, বিচারপতি মওদূদের সাহেবের কন্যা যিনি বর্তমানে এম.পি। ১৯৭১ সালে আমি যখন ধানমন্ডীতে থাকতাম তখন সেই এলাকায় আমার সামনে হত্যা, ধর্ষণ, লুট ইত্যাদি হয়েছিল কিনা তা আমি বলতে পারব না, কারণ আমি প্রায় সময় বাসায় থাকতাম। ইহা সত্য নহে যে, ঐ এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, লুটের কোন ঘটনা আমার গোচরে আসে নাই। ইহা সত্য নহে, কারণ পত্র পত্রিকা, রেডিও কোন ব্যক্তি বা অতিথি আসলে তাদের মাধ্যমে মাঝে মাঝে খবর পেতাম। ঐ সময় ধানমন্ডী এলাকায় নিহত কোন ব্যক্তির নাম আমার স্মরণ নাই। ঐ সময়ে ঐ এলাকার নির্যাতিত কোন মহিলার নাম আমার স্মরণ নাই। ঐ এলাকায় যে সমস্ত বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছিল সে রকম কোন বাড়ির মালিকের নাম আমি বলতে পারব না। আমি নির্দিষ্ট করে ঐ এলাকার কোন বাড়িতে হত্যা, ধর্ষণ, লুট ঘটেছে তা হিসাবে বলতে পারব না।

১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ তারিখে আমি মীরপুর থেকে এসে প্রথমে সোবহান বাগ যাই। সেখানে আমার চাচার এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম যতদিন ধানমন্ডীর বাসা ভাড়া না হয় তবে কতদিন সেখানে ছিলাম তা অনুমান করেও বলতে পারছিনা। আমি খুব সম্ভব অক্টোবর মাস পর্যন্ত ধানমন্ডীতে ছিলাম। অক্টোবর মাসের পরে আমি চট্টগ্রাম চলে যাই, আমার পিতার সরকারি কোয়ার্টারে। ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় অর্জন পর্যন্ত আমি চট্টগ্রামে ছিলাম। আমার পিতা চট্টগ্রাম বন্দরে চাকুরী করতেন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে প্রশাসন বিভাগে চাকুরী করতেন। বন্দরের প্রশাসন বিভাগের পুরা নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান আর্মিদের ছিল কিনা তা আমার জানা নাই।

বন্দরের চেয়ারম্যান সেনাবাহিনী বা নৌবাহিনীর একজন ছিলেন বলে আমার মনে পড়ে। আমি চট্টগ্রাম যে এলাকায় ছিলাম সেই এলাকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, রাজাকার কমান্ডার, আল-বদর কমান্ডার, আল-শামস এবং আল-মুজাহিদের প্রধান কে ছিলেন তা আমি বলতে পারব না। বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিরাপদ ছিল না বিধায় পাকিস্তান আর্মিদের কোন রেজিমেন্ট কোথায় ছিল তা আমি বলতে পারব না। আমি চট্টগ্রামে যতদিন ছিলাম সেই সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা তাদের সহযোগী বাহিনীর কেহ আমাদের বাড়িতে তল্লাসী চালায় নাই। আমি ধানমন্ডীতে থাকাকালে একদিন সেনাবাহিনীর সদস্যরা আমাদের বাসা তল্লাসী করেছিল।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে বাহিরের কোন লোক আমাদের বাসায় ভিতরে প্রবেশ করে নাই। মীরপুরে চাচার যে বাসায় থাকতাম অবাঙ্গালীরা আমাদের সেই বাসা লুটপাট করেছিল। যারা লুটপাট করেছিল তাদেরকে নামে সনাক্ত করা সম্ভব হয় নাই। আমরা যে বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম সেই বাসার মালিকের নাম আমার মনে নাই। আমরা যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম সেই বাড়ির লোকজন আমাদের পূর্ব পরিচিত ছিল না, তবে রাস্তার বিপরীত দিকে হওয়ায় মুখ চেনা ছিল। ঐ বাড়ির সদস্য সংখ্যা কত ছিল তা আমি বলতে পারব না। সেই বাড়িতে মহিলা ছিল। যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম পরবর্তীকালে যেহেতু ১০ বছরে আমি আর ঐদিকে যাই নাই কাজেই তাদের কোন খোঁজ রাখতে পারি নাই। তাদের খোঁজ করা সম্ভব ছিল না। সোবহান বাগের যে বাড়িতে ছিলাম সেটা সরকারি আবাসন। সেটা আমার চাচার এক আত্মীয়ের নামে বরাদ্দ ছিল। সেই আত্মীয়ের নাম আমার মনে নাই। তিনি সরকারি অফিসে চাকুরী করতেন তবে কোথায় চাকুরী করতেন তা আমি জানি না। ১৯৭১ সালে তিনি হয়তো নিয়মিত অফিস করতেন। আমার চাচার সেই আত্মীয়ের সঙ্গে পরবর্তীতে মাঝে মাঝে আমার দেখা হয়েছে। সোবহান বাগ তখন কোন থানার অধীনে ছিল তা আমার মনে নাই। ১৯৭১ সালে সোবহান বাগ এলাকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান রাজাকার কমান্ডার, আল-বদর কমান্ডার, আল-শামস কমান্ডার এবং আল মুজাহিদের প্রধান কে ছিলেন তা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে ঢাকার ধানমন্ডী ও সোবহান বাগে থাকাকালে আমার পক্ষে কোন সময় চট্টগ্রামে যাতায়াত করা সম্ভব ছিল না।

প্রশ্নঃ আপনার লিখিত ‘শান্তি কমিটি ১৯৭১’ বইয়ে ২৩৪ এবং ২৩৫ পৃষ্ঠায় পিরোজপুর জেলা শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকা উল্লেখ আছে কিনা?

উত্তরঃ যদি থেকে থাকে তাহলে তা তথ্য ভিত্তিক। এর বাইরে আমার কোন বক্তব্য নাই। ১৯৭১ সালে পিরোজপুর জেলা ছিল না, এটা একটা মহকুমা থাকতে পারে। আমি আমার উল্লেখিত বইয়ে ২৩৫ পৃষ্ঠায় পিরোজপুর মহকুমা শান্তি কমিটির পৃথক বর্ণনা দিয়েছি কিনা তা আমার জানা নাই। আমার লিখিত ২০১২ সালে প্রকাশিত ‘শান্তি কমিটি ১৯৭১’ বইটি কোন তথ্য ভিত্তিক নয়, কোন গবেষণার ফল নয়, অসত্য বর্ণনায় উদ্দেশ্য মূলকভাবে মনগড়াভাবে বইটি লিখেছি, ইহা সত্য নহে। এই বইটি তথ্যভিত্তিক গবেষণামূলক একটি গ্রন্থ। ‘শান্তি কমিটি ১৯৭১’ গবেষণামূলক বইয়ের সম্পদনা নহে ইহা আমার লিখিত একটি বই মাত্র, ইহা সত্য নহে। এই বইয়ে আমি কোন তথ্যসূত্র উল্লেখ করি নাই, ইহা সত্য নহে।

প্রশ্নঃ চাপাইনবাবগঞ্জের শান্তি কমিটির সদস্যদের ব্যাপারে আপনাকে তথ্য কে দিয়েছিল?

উত্তরঃ উক্ত বইয়ে চাপাইনবাবগঞ্জের ব্যাপারে যদি বক্তব্য থাকে তা তথ্য ভিত্তিক, এর বাইরে আমার কোন বক্তব্য নাই। (চলবে)


০৪-০৭-২০১২ ইং ২-০০ মিঃ পুনরায় জেরা শুরুঃ-
প্রশ্নঃ পিরোজপুর জেলা ও মহকুমার পিস কমিটির সদস্যদের তালিকা আপনাকে কে সরবরাহ করেছিল?

উত্তরঃ আমি যদি এরকম কিছু লিখে থাকি তাহলে সেটা তথ্যের উপর ভিত্তি করে লিখেছি।

প্রশ্নঃ আপনার লিখিত ‘শান্তি কমিটি ১৯৭১’ গ্রন্থে যে সকল শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে তা আপনাকে কে বা কারা সরবরাহ করেছিল?

উত্তরঃ যদি তা আমার গ্রন্থে থেকে থাকে তাহলে তা তথ্যের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে, এর বাইরে আমার কোন বক্তব্য নাই।

প্রশ্নঃ পূর্বোল্লিখিত প্রশ্নের উত্তরে আপনি যে ‘যদি’ শব্দ ব্যবহার করেছেন তার অর্থ কি এই বুঝায় যে, ঐ বইয়ে শান্তি কমিটির কোন তালিকা নাই?

উত্তরঃ আমি আগেও উল্লেখ করেছি, এখনও করছি, যে বইটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা একটি গবেষণামূলক বই। সেখানে যা উল্লেখিত হয়েছে তা সবই তথ্য ভিত্তিক। গবেষক হিসাবে যখন কোন বই লেখা হয় তখন পুংখানুপুংখ বিবরণ একজন মানুষ হিসাবে সব মনে রাখা সম্ভব নয়। কোন গ্রন্থের সারাংশ জানতে চাইলে তা আমি বলতে পারি সেই কারণে আমি ‘যদি’ শব্দটি ব্যবহার করেছি।

প্রশ্নঃ শান্তি কমিটি কোন বিধিবদ্ধ সংস্থা ছিল কিনা?

উত্তরঃ শান্তি কমিটি তৎকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়েছিল। সুতরাং সেটি আইন করে করা হয়েছিল নাকি আইন না করে করা হয়েছিল তা আমার মতে অপ্রাসঙ্গিক।

প্রশ্নঃ শান্তি কমিটি কেন্দ্রীয় অফিসের জন্য কোন সরকারি আবাসন দেয়া হয়েছিল কিনা?

উত্তরঃ আমার জানা নাই।

প্রশ্নঃ শান্তি কমিটির সার্কুলার, নির্দেশনা, সংবাদ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়ার জন্য কোন সরকারি ব্যবস্থাপনা ছিল কিনা?

উত্তরঃ যারা তৎকালীন শান্তি কমিটিতে ছিলেন সেটা তারাই বলতে পারবেন। শান্তি কমিটি সম্পর্কিত আমার সব বক্তব্য তথ্য ভিত্তিক এর বাইরে আমি কিছু বলতে পারব না।

প্রশ্নঃ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সদস্যদের সরকারি ভাতা বা বেতন দেয়া হতো কিনা?

উত্তরঃ শান্তি কমিটির সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তারা সরকারের কাছে আবেদন করলে সহযোগিতা পেতেন।

প্রশ্নঃ শান্তি কমিটির কোন সদস্য এককভাবে সামরিক বাহিনীর কোন ইউনিটকে বা কোন সদস্যকে নির্দেশ দিয়ে কোন অপরেশনে পাঠাতে পারতো কিনা?

উত্তরঃ শান্তি কমিটির সদস্যরা সব পর্যায়েই কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়ার জন্য পরামর্শ দিতে পারতো এবং তাতে অংশ গ্রহণ করতে পারতো।

প্রশ্নঃ সামরিক বাহিনীর কোন ইউনিট অপারেশনে যাওয়ার পরে ঐ ইউনিট সম্মিলিতভাবে বা ঐ ইউনিটের কোন সদস্য এককভাবে কোন বিশৃঙ্খল কাজের সাথে জড়িত হলে তাদের কে শাস্তিদানের কোন ক্ষমতা শান্তি কমিটির সদস্যদের ছিল কিনা?

উত্তরঃ সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কখনও অধিকার থাকে না কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার।

প্রশ্নঃ সামরিক বাহিনীর কোন ইউনিট বা সদস্যকে শান্তি কমিটির কোন সদস্য কোন অপরাশনে যেতে বাধ্য করতে পারতো কিনা?

উত্তরঃ শান্তি কমিটির সদস্যরা সামরিক বাহিনীর ইউনিট বা ব্যক্তিকে পরামর্শ দিতে পারতো, প্রণোদনা যোগাতে পারতো এবং প্ররোচিত করতে পারতো।

প্রশ্নঃ পরামর্শ, প্রণোদনা, প্ররোচিত এবং বাধ্য করা শব্দগুলি প্রত্যেকটি পৃথক শব্দ এবং শব্দগুলির পৃথক অর্থ আছে কিনা?

উত্তরঃ থাকতে পারে।

প্রশ্নঃ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন সদস্য কোন সুনির্দিষ্ট অপারেশন পরিচালনার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে এই মর্মে আপনার নিকট কোন তথ্য আছে কিনা?

উত্তরঃ এ মুহূর্তে আমার নিকট সেরকম কোন তথ্য নাই, কেননা শান্তি কমিটির লোকজন নিজের ইচ্ছায় অনেক কাজ কর্ম করতো।

প্রশ্নঃ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন সদস্য সুনির্দিষ্টভাবে কোন ব্যক্তিকে হত্যা, কোন এলাকায় গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দিয়েছিল এই মর্মে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য আপনার নিকট আছে কিনা?

উত্তরঃ কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না।

প্রশ্নঃ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন সদস্য সুনির্দিষ্টভাবে কোন ব্যক্তিকে হত্যা, কোন এলাকায় গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের পরামর্শ দিয়েছিল এই মর্মে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য আপনার নিকট আছে কিনা?

উত্তরঃ যতদূর স্মরণে আছে পরামর্শ দিয়েছিল, কিন্তু কাগজপত্র না দেখে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারব না।

প্রশ্নঃ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন সদস্য সুনির্দিষ্টভাবে কোন এলাকায় কোন ব্যক্তিকে বা কোন এলাকার সাধারণভাবে সকল ব্যক্তিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎমর্মে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য আপনার নিকট আছে কিনা?

উত্তরঃ এরকম তথ্য আমরা পেয়েছি বা জেনেছি তবে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে কাগজপত্র দেখে বলতে হবে।

প্রশ্নঃ কোন এলাকার কোন ব্যক্তি বা সাধারণভাবে সকল ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করলে তাদেরকে তাদের বাড়ি বা এলাকা থেকে উৎখাত করে তাদেরকে দেশান্তরে বাধ্য করার জন্য কোন নির্দেশনা কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি বা তার কোন সদস্যের পক্ষ থেকে কোন আদেশ জারী করা হয়েছিল কিনা?

উত্তরঃ এরকম তথ্য আমরা পেয়েছি বা জেনেছি তবে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে কাগজপত্র দেখে বলতে হবে।

প্রশ্নঃ কোন এলাকায় কোন ব্যক্তি বা সাধারণভাবে সকল ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করলে তাদেরকে হত্য করার বা তাদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার কোন নির্দেশনা কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি বা কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন সদস্যের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জারী করা হয়েছিল কিনা এবং যদি হয়ে থাকে তাহলে কত তারিখে হয়েছিল?

উত্তরঃ এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারব না। তবে বিভিন্ন তথ্যে উল্লেখিত ঘটনাগুলি ঘটেছিল মর্মে উল্লেখ আছে বলে আমার মনে হয়। তবে লিখিত নির্দেশনা ও তারিখ বিষয়ে আমি কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না।

প্রশ্নঃ কোন ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তকরণ, সংগঠিত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি বা কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন সদস্য ধর্ষণকারী, অগ্নিসংযোগকারী বা ধর্মান্তর সংঘটনকারীর প্রশংসা করে কোন বিবৃতি প্রদান করেছিল কিনা  এবং যদি করে থাকে তাহলে তাহা কত তারিখে করেছিল?

উত্তরঃ নিজেরা যা করেছি তার প্রশংসা করার কি আছে, তবে আমার যতদূর মনে পড়ে কিছু কিছু নথিপত্রে প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে এই ধরণের কার্যে উৎসাহিত করার ইঙ্গিত আছে।

প্রশ্নঃ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন সদস্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কাউকে ধর্ষণ করেছে এমর্মে কোন খবর ঐ সময় বা তৎপরবর্তীকালে কোন সংবাদপত্রে বা কোন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল কিনা?

উত্তরঃ কাগজপত্র না দেখে আমি বলতে পারব না।

প্রশ্নঃ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কোন ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঐ ব্যক্তিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করেছিলেন এই মর্মে কোন সংবাদ তৎকালীন সংবাদ মাধ্যম বা তৎপরবর্তী কোন সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল কিনা এবং যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটা কত তারিখে?

উত্তরঃ কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না।

প্রশ্নঃ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি বা কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন সদস্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কোন বিশেষ ব্যক্তির বাড়ি বা কোন সুনির্দিষ্ট এলাকায় অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দিয়েছিলেন এই মর্মে কোন প্রামাণ্য তথ্য আপনার নিকট আছে কিনা এবং থাকলে উহা কত তারিখে ঘটে?

উত্তরঃ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি বা কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন সদস্য কোন বিশেষ ব্যক্তির বাড়ি বা কোন সুনির্দিষ্ট এলাকায় অগ্নি সংযোগের নির্দেশ দিয়েছেন কিনা তা কাগজপত্র না দেখে বলা যাবে না।

প্রশ্নঃ শান্তি কমিটির সকল সদস্য বেসামরিক ব্যক্তি ছিল কিনা?

উত্তরঃ হ্যঁ ছিল। (চলবে)

০৫-০৭-১২ ইং পূনরায় জেরা শুরু ঃ
প্রশ্ন ঃ শান্তি কমিটির কিছু বিধিবদ্ধ গঠনতন্ত্র ছিল কিনা?
উত্তর ঃ শান্তি কমিটির কিছু বিধিবদ্ধ নির্দেশনা ছিল যার মাধ্যমে তার সদস্যরা কর্মকান্ড পরিচালনা করতো। সেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র ছিল কিনা তা প্রযোজ্য নহে।
প্রশ্ন ঃ শান্তি কমিটির বিধিবদ্ধ নির্দেশনা সমূহ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি কর্তৃক তৈরী না অন্য কোন সংস্থা বা সরকার কর্তৃক প্রণীত?
উত্তর ঃ এসব নির্দেশনা প্রস্তুত করা হতো কেন্দ্রীয় এবং নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এবং সরকার তার সমর্থন করতো।
প্রশ্ন ঃ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির প্রথম বৈঠকে কি কি নির্দেশনা তৈরি হয়েছিল?
উত্তর ঃ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্য নির্বাহী সভায় যতদুর আমি স্মরন করতে পারি যেসব নির্দেশনাবলী ছিল তার সারাংশ হলো দুষ্কৃতিকারীদেরকে দমন করতে হবে।
প্রশ্ন ঃ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন তারিখের বৈঠকে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছিল?
উত্তর ঃ আমার যতদুর মনে পড়ে এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হয়েছিল, সুনির্দিষ্ট তারিখ আমার স্মরন নাই।
প্রশ্ন ঃ কার্যনির্বাহী কমিটি প্রথম মিটিং সংক্রান্ত কোন প্রামান্য তথ্য আপনি সংগ্রহ করেছিলেন কিনা?
উত্তর ঃ আমার গবেষনা লব্ধ সমস্ত রচনা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে লেখা।
প্রশ্ন ঃ এই সংক্রান্ত তথ্য আপনি কার কার নিকট থেকে পেয়েছিলেন?
উত্তর ঃ এই সংক্রান্ত তথ্য আমার গবেষনা লব্ধ রচনায় উল্লেখ করা আছে।
প্রশ্ন ঃ আপনার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষনা সংক্রান্ত প্রথম বই কোন সালে প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তর ঃ এটা আমার পক্ষে এ মূহুর্তে বলা সম্ভব নয়, কারণ ১৯৬৯ সাল থেকে আমার বই প্রকাশিত হচ্ছে এবং বইয়ের সংখ্যা অনেক।
প্রশ্ন ঃ শান্তি কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম বৈঠকে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন?
উত্তর ঃ অনেকে উপস্থিত ছিলেন, সুনির্দিষ্টভাবে সবার নাম বলতে না পারলেও এটা বলা যায় যে, সেই বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর আমির জনাব গোলাম আযম উপস্থিত ছিলেন।
প্রশ্ন ঃ কার্য নির্বাহী কমিটির নির্দেশনা সর্ব প্রথম শান্তি কমিটির কোন শাখার নিকট পৌঁছেছিল?
উত্তর ঃ এই নির্দেশনা একই সঙ্গে সমস্ত শাখা কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল?
প্রশ্ন ঃ ১৯৭১ সালে আপনার বাড়ি কোথায় ছিল?
উত্তর ঃ ১৯৭১ সালে আমার বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার কাদলা ইউনিয়নের গুলবাহার গ্রামে ছিল।
প্রশ্ন ঃ অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের বাড়ি কোন জেলার কোন ইউনিয়নে?
উত্তর ঃ আমি যতদুর জানি ব্রাহ্মনবাড়িয়া নবীনগর থানায়।
প্রশ্ন ঃ পূর্ব পাকিস্তানের সকল থানা এবং ইউনিয়নের সর্বশেষ কত তারিখের মধ্যে শান্তি কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছিল?
উত্তর ঃ আমি সুনির্দিষ্ট তারিখ স্মরন করতে পারছি না, তবে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে দীর্ঘদিন চলে।
প্রশ্ন ঃ আপনি এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমানের নিকট কত তারিখে জবানবন্দী প্রদান করেছেন?
উত্তর ঃ আমি মতিউর রহমানের নিকট কোন জবানবন্দী প্রদান করি নাই তবে তাদের পক্ষ থেকে খুব সম্ভব মনোয়ারা বেগম নামে একজন অথবা এই রকম নামের একজন এসেছিলেন তার নিকট বলেছি এবং তিনি লিখেছেন।
প্রশ্ন ঃ আপনি যার নিকট জবানবন্দী প্রদান করেছিলেন তিনি আজ ট্রাইবুনালে উপস্থিত আছে কিনা?
উত্তর ঃ হ্যাঁ তিনি উপস্থিত আছেন।
তিনি কত তারিখে আমার নিকট গিয়েছিলেন সঠিক তারিখ মনে নাই। সময়টা এ মূহুর্তে সঠিক মনে নাই। তিনি আমার নিকট মনে হয় ঘন্টা তিনেক উপস্থিত ছিলেন। তার নিকট আমার জবানবন্দীতে উল্লেখিত ‘শান্তি কমিটি ১৯৭১’, ‘রাজকারের মন’, ‘পাকিস্তানি জেনারেলদের মন’, ‘সেই সব পাকিস্তানি’, ‘মুক্তিযুদ্ধ কোষ’, ‘পাকিস্তানিদের দৃষ্টিতে একাত্তর’ এই বইগুলির কথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলেছিলাম কিনা তা এ মূহুর্তে স্মরন নাই, তবে কিছু কিছু বইয়ের নাম বলেছিলাম। ‘শান্তি কমিটির ১৯৭১’ বইটি সর্বপ্রথম প্রকাশ হয় ২০১২ সালে। আমার জবানবন্দীকালে আমি মনোয়ারা বেগকে আমার লিখিত কোন বই দেই নাই এবং তিনিও আমার নিকট হতে কোন বই জব্দ করেন নাই।
প্রশ্ন ঃ কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম বৈঠকে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব অবশ্যই উপস্থিত ছিলেন এই মর্মে আপনার নিকট কোন তথ্য না থাকায় আপনি মনোয়ারা বেগমকে আপনার লিখিত কোন বই প্রদান করেন নাই।
উত্তর ঃ তিনি কোন বই চান নাই।
প্রশ্ন ঃ আপনার লিখিত কোন বইয়ে গোলাম আযম সাহেব কার্য নির্বাহী কমিটির প্রথম বৈঠকে উপস্থিত ছিল মর্মে উল্লেখ আছে?
উত্তর ঃ যেহেতু জনাব গোলাম আযম সাহেব কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সদস্য সেহেতু তিনি অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন এবং তার উপস্থিতি ছাড়া মিটিং হতে পারে না। বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে কিনা সেটা আমার স্মরন নাই।
প্রশ্ন ঃ কার্য নির্বাহী কমিটির প্রথম বৈঠকে দুষ্কৃতিকারীদের নির্মূল করার বিষয়ে আপনার লিখিত কোন বইয়ে উল্লেখ আছে?
উত্তর ঃ আমার লিখিত যে বইয়ে এই প্রসঙ্গে লেখা আছে সেই বইয়ে উল্লেখ আছে। সেই বইয়ের সুনির্দিষ্ট নাম আমার পক্ষে এ মূহুর্তে বলা সম্ভব নহে।
প্রশ্ন ঃ আপনার লিখিত কোন বইয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম বৈঠকে দুষ্কৃতিকারীদের নির্মূল করায় বিষয়ে নির্দেশনা অধস্থন শান্তি কমিটির নিকট প্রেরণ সংক্রান্ত কোন তথ্য না থাকায় আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার লিখিত কথিত সংশ্লিষ্ট বই তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রদান করেন নাই?
উত্তর ঃ ইহা সত্য নহে। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার নিকট কোন বই চান নাই।
প্রশ্ন ঃ ইউনিয়ন শান্তি কমিটির তৎকালীন ইউনিয়ন কাউন্সিলে যারা নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তাদেরকে চেয়ারম্যান করে গঠিত হয়েছিল কিনা?
উত্তর ঃ প্রায় ক্ষেত্রেই ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ঃ ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যানরা ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেম্বারদের দ্বারা নির্বাচিত হতেন?
উত্তর ঃ হতে পারেন।
প্রশ্ন ঃ ইউনিয়ন কাউন্সিল সরাসরি এস,ডি,ও সাহেবদের অধীনে ছিলেন। ইউনিয়ন শান্তি কমিটির পক্ষ থেকে নিকটতম আর্মি ক্যাম্পে কমান্ডিং অফিসার বা আর্মিদেরকে কোন নির্দেশনা দেয়ার ক্ষমতা ছিল না।
উত্তর ঃ ইউনিয়ন শান্তি কমিটির নিকটস্থ আর্মি ক্যাম্পের আর্মিদেরকে নির্দেশনা দেয়ার ক্ষমতা ছিল না তা আমি এ মূহুর্তে বলতে না পারলেও তাদের সঙ্গে সহযোগী (অক্সিলিয়ারি) ফোর্স হিসাবে যোগাযোগ থাকতোই।
প্রশ্ন ঃ অক্সিলিয়ারি ফোর্সের সঙ্গা আপনার জানা আছে কিনা?
উত্তর ঃ আমার মত করে আমি জানি। আইনের সঙ্গা আমি নির্ধারন করতে পারবো না, তবে অক্সিলিয়ারি ফোর্স হচ্ছে সহযোগী শক্তি যা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানে এবং সহযোগী শক্তির পরামর্শ, উপদেশ প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ গ্রহন করে।
প্রশ্ন ঃ কর্তৃপক্ষ বেসামরিক ও সামরিক দুই ধরনের হতে পারে?
উত্তর ঃ ১৯৭১ সালে কর্তৃপক্ষ বলতে সামরিক কর্তৃপক্ষকে বোঝানো হচ্ছে এবং সেই সময়ে বেসামরিক কর্তৃপক্ষ থাকলেও তারা ও সামরিক কর্তৃপক্ষের অধস্তন হিসাবে কাজ করেছে।
প্রশ্ন ঃ শান্তি কমিটিকে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অধিনে আনার জন্য কোন সরকারী বা সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে কোন বিজ্ঞপ্তি বা গেজেট প্রকাশিত হয় নাই।
উত্তর ঃ এ বিষয়ে আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারব না।
প্রশ্ন ঃ শান্তি কমিটির প্রতিটি সদস্যের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য পাকিস্তানি সরকার কোন আর্মস সরবরাহের আদেশ প্রদান করেন নাই।
উত্তর ঃ কর্তৃপক্ষ থেকে অস্ত্র দেয়া হয়েছিল।
১৯৭১ সালের পূর্ব হতে জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন মওলানা মওদুদী। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ তৎকালীন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন মওলানা মওদুদী সাহেব, তবে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত ছিলেন কিনা তা আমি জানি না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী থেকে কেন্দ্রীয় পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে ১৬২ টি আসনের মধ্যে কতটি আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রতিদন্দীতা করেছেন তা আমি বলতে পারবো না। ১৯৭০ সালে আমি মিরপুরের যে এলাকায় বসবাস করতাম সেই এলাকা থেকে গোলাম আযম সাহেব নির্বাচনে প্রতিদন্দীতা করেছিলেন। প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে কতটি আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রতিদন্দীতা করেছিলেন তা আমি বলতে পারবো না। মুসলিম লীগ উভয় পরিষদে ৪৬২ টি আসনের মধ্যে কতটি আসনে প্রতিদন্দীতা করেছিল তা আমার স্মরনে নাই। রাজা ত্রিদীব রায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ও কর্মী সংখ্যা কত ছিল তা আমার জানা নাই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় আমি যে এলাকায় থাকতাম সেটা তখন ইউনিয়ন কাউন্সিলের অধীন ছিল কিনা তা আমি বলতে পারবো না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় আমি যে এলাকায় থাকতাম সেই এলাকার জামায়াতে ইসলামীর আমির বা জামায়াতে ইসলামীর প্রধান কে ছিলেন তা আমি বলতে পারবো না। আমি ইন্টারমিডিয়েট ২ বছর পড়েছি চট্টগ্রামে। আমাদের কাসে আমাদের মানবিক শ্রেণীতে দুটি শাখা ছিল, প্রতি শাখায় কমপক্ষে ১৫০/২০০ জন ছাত্র ছিল তাদের মধ্যে কতজন ছাত্র সংঘ করতো তা সুনির্দিষ্ট করে বলা আমার পক্ষে সম্ভব নহে। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন আমার কাসে কতজন ছাত্রসংঘ করতো তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নহে, ২/১ জনের নাম বলাও সম্ভব নহে। আমার কাসে কোন আলবদর ছিল না। (চলবে)



০৫-০৭-১২ ইং ২.০০ পূনরায় জেরা শুরু ঃ
আমি যে ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম সেই ছাত্র সংগঠন নীতিগতভাবে ধর্মীয় রাজনীতির বিরুধী।
প্রশ্ন ঃ আপনি নিজে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করে অনেক বক্তব্য ও বিবৃতী দিয়েছেন।
উত্তর ঃ আমি ধর্ম নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসার সব সময়ই বিরোধীতা করেছি এবং বিবৃতিও দিয়েছি।
প্রশ্ন ঃ ধর্মীয় রাজনীতি ও ধর্ম নিয়ে ব্যবসা দুটি পৃধক শব্দ এবং এর পৃথক অর্থ আছে।
উত্তর ঃ হতে পারে, আমি ব্যকরণবিদ নই, আমি যা বুঝেছি আমি তাই বলেছি।
প্রশ্ন ঃ রাজনীতি একটা ব্যবসা এটা আপনি মনে করেন কিনা?
উত্তর ঃ আদর্শগত রাজনীতি ব্যবসা নয়।
প্রশ্ন ঃ ব্যবসা অর্থ কোন কিছু বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করা।
উত্তর ঃ কোন কিছু পুজি করে মুনাফা অর্জন বা লাভ সেটিই ব্যবসা।
প্রশ্ন ঃ বই বিক্রি করে অর্থ উপার্জনও একটা ব্যবসা।
উত্তর ঃ প্রকাশক যখন বই বিক্রি করার জন্য প্রকাশ করে সেটা একটা ব্যবসা।
প্রশ্ন ঃ জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, পি.ডি.পি, নেজামে ইসলামী দল সমূহকে সামরিক বাহিনীর কমান্ডের অধীনে এনে পাকিস্তানি সামরিক সরকার কোন আদেশ জারী করেছিল কিনা তৎমর্মে আপনার নিকট কোন তথ্য আছে কিনা?
উত্তর ঃ এ সম্পর্কে আমার কাছে কোন তথ্য নাই । তারা সবসময় পরস্পর আলোচনা ও পরিকল্পনা করে অগ্রসর হয়েছে, সেই কারণে আলাদা কোন নির্দেশনা জারী করার প্রয়োজন ছিল না।
প্রশ্ন ঃ জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, পি.ডি.পি, নেজামে ইসলামী বা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তান সরকারকে সমর্থনকারী বা পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার সমর্থনকারী ব্যক্তি বা অন্যান্য দল সমূহের প্রতিটি সদস্য ও কর্মীকে সরকারের পক্ষ থেকে অস্ত্র সরবরাহের জন্য কোন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল কিনা ?
উত্তর ঃ উল্লেখিত ৪টি দলের কর্মীরা যখন শান্তি কিমিটি, রাজাকার বা আলবদর বাহিনীর সদস্য ছিল তখন অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রশ্ন ঃ    আপনি শান্তি কমিটির কতজন সদস্যের কাছে সরকারিভাবে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল এ মর্মে আপনার গবেষনাকালে কোন তথ্য পেয়েছিলেন কিনা ?
উত্তর ঃ    এই মূহুর্তে আমার তা স্মরণ নাই।
প্রশ্ন ঃ    জামায়াতে ইসলামী নেতার মাধ্যমে রাজাকার বাহিনীর সূত্রপাত হয় এই তথ্য আপনি কোথায় পেয়েছেন ?
উত্তর ঃ    এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য।
প্রশ্ন ঃ    জামায়াতে ইসলামী নেতার মাধ্যেমে রাজাকার বাহিনীর সূত্রপাত হয় ইহা একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য এ মর্মে কোন তথ্য আপনি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে প্রদান করেছিলেন কিনা ?
উত্তরঃ    সুনির্দিষ্টভাবে এত কথা মনে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নহে, তবে যতদূর মনে পড়ে আমি দিয়েছিলাম।
প্রশ্নঃ    ১৯৭১ সালে আপনি পত্র পত্রিকা পরতেন কিনা ?
উত্তরঃ    পড়তাম।
প্রশ্নঃ    ১৯৭১ সালে কোন মাসে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয় ?
উত্তরঃ    আমার যতদূর মনে পড়ে মে মাসে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়েছিল।
প্রশ্নঃ    মে মাসের কোন তারিখে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয় ?
উত্তরঃ    এ মূহুর্তে সুনির্দিষ্ট তারিখ আমার মনে নাই।
প্রশ্নঃ    ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসের ২ তারিখে গেজেট আকারে রাজাকার অর্ডিনেন্স জারী হয় ইহা আপনি জানেন কিনা ?
উত্তরঃ    এ মূহুর্তে সুনির্দিষ্ট তারিখ মনে না করতে পারলেও তা যে বিধিবদ্ধ সংস্থা পরিণত করে গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল মর্মে আমার মনে আছে।
প্রশ্নঃ    আল বদর কোন মাসের কোন তারিখে গঠিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ    আমি আগেও বলেছি এপ্রিল মাস থেকে জুন মাসের মধ্যে জামালপুরে প্রথম আলবদর গঠিত হয়েছিল।
প্রশ্নঃ    পাকিস্তান আর্মিরা আলবদর বাহিনী গঠন করেছিল ?
উত্তরঃ    আলবদর বাহিনী জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র সংঘের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল। পাকিস্তান আর্মিদের সাথে সম্পর্ক থাকায় তাদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ঃ    আলবদর বাহিনী গঠনের জন্য কোন আইন বা বিধি প্রনীত হয়েছিল কিনা ?
উত্তর ঃ    সহযোগী শক্তি বিধায় এর প্রয়োজন ছিল না।
প্রশ্ন ঃ    আল শামস বাহিনী গঠনের জন্য কোন আইন বিধি প্রনীত হয়েছিল কিনা ?
উত্তর ঃ    সহযোগী শক্তি বিধায় এর প্রয়োজন ছিল না।
প্রশ্ন ঃ    আল মুজাহিদ বাহিনী গঠনের জন্য কোন আইন বিধি প্রনীত হয়েছিল কিনা ?
উত্তর ঃ    এই ব্যপারে আমার কোন বক্তব্য নাই।
প্রশ্নঃ    মুজাহিদ বাহিনীর অস্তিত্য ছিল ১৯৭১ সালে ইহা ঠিক কিনা ?
উত্তরঃ    তথ্যাবলীতে তা ঠিক।
প্রশ্নঃ    ই,পি,আর, বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে ঊচঈঅঋ করা হয়েছিল কিনা ?
উত্তর ঃ    এ ব্যপারে আমার কোন বক্তব্য নাই।
প্রশ্ন ঃ    আনছার বাহিনী বিলুপ্ত করে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়েছিল এবং আনছার বাহিনীর সদস্যদেরকে রাজাকার বাহিনীর অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল কিনা ?
উত্তর ঃ    প্রথম অংশ সঠিক এবং দিত্বীয় অংশে দ্বিমত পোষণ করি।
প্রশ্ন ঃ    রাজাকার বাহিনীর প্রধান ছিলেন রাজাকার ডিরেক্টর।
উত্তর ঃ    বিধিবদ্ধ হওয়ার পরে পাকিস্তান সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিযুক্ত ডিরেক্টর দ¦ারা রাজাকার বাহিনী পরিচালিত হতো।
প্রশ্ন ঃ    বিধিবদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত রাজাকার বাহিনী একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ছিল ?
উত্তর ঃ    জন্মলগ্ন থেকে এর নাম দেয়া হয়েছিল “রেজাকার”। যা একটি ফার্সি শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী, বিধিবদ্ধ হওয়ার পরে এর নাম হয় রাজাকার বাহিনী।
প্রশ্ন ঃ    ৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সালে রাউয়ালপিন্ডিতে এক ঘোষনার মাধ্যমে রাজাকার বাহিনীকে সামরিক বাহিনীর অধিনে নিয়ে আনা হয়।
উত্তর ঃ    এ মূহুর্তে নির্দিষ্ট করে তারিখ বলতে না পারলেও আমি এটুকু বলতে পারি সবকিছু সামরিক বাহিনীর অধিনস্ত ছিল।
প্রশ্ন ঃ    রাজাকার বাহিনী বিধিবদ্ধ হওয়ার পর এর ডিরেক্টর হয়েছিলেন পুলিশ অফিসার আব্দুর রহিম সাহেব ?
উত্তর ঃ    হতে পারে।
প্রশ্ন ঃ    ১৯৭৩ সালে উক্ত আব্দুর রহিম সাহেবকে বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেয়া হয়।
উত্তর ঃ    আমার জানা নাই।
প্রশ্ন ঃ    আব্দুর রহিম সাহেব কোলাবরেটর আইনে গ্রেফতার হয় নাই।
উত্তর ঃ    তা আমার জানা নাই।
প্রশ্ন ঃ    আব্দুর রহিম সাহেবের পরেও আরেকজন ব্যক্তিকেও রাজাকারের ডিরেক্টর নিযুক্ত করা হয়েছিল।
উত্তর ঃ    এ মূহুর্তে আমার জানা নাই।
প্রশ্ন ঃ    ঢাকা জেলা রাজাকার এ্যাডজুটেন্ট এর নাম কি ছিল ?
উত্তর ঃ    তা আমার মনে নাই, এটা প্রশাসনিক বিষয়, যা আমার গবেষনার বিষয় নহে।
প্রশ্ন ঃ    রাজাকার সদস্যদের উপর রাজাকার ডিরেক্টর ও এ্যাডজুটেন্টদের এর নিয়ন্ত্রণ ছিল কিনা ?
উত্তর ঃ    তেমন নিয়ন্ত্রণ ছিল না, কেননা তারা অধিকাংশই ছিল জামায়াত কর্মী।
প্রশ্ন ঃ    ১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনীর সদস্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর ঃ    এ মূহুর্তে নির্দিষ্ট তথ্য দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নহে।
প্রশ্ন ঃ    ঢাকা জেলার রাজাকারের সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর ঃ    এ মূহুর্তে নির্দিষ্ট তথ্য দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নহে।
প্রশ্ন ঃ    ঢাকা জেলার রাজাকারদের নাম সংগ্রহের চেষ্টা কখনো করেছেন কি ?
উত্তর ঃ    এই বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নাই।
প্রশ্ন ঃ    রাজাকারদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিতকরন ছাড়া তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
উত্তর ঃ    ইহা সত্য নাহে, আমি আগেও বলেছি জামায়াত কর্মী দ্বারা রাজাকার বাহিনীর সৃষ্টি। যেহেতু জামায়াতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামে প্রতিনিয়ত জামায়োতের তৎকালীন নেতা জনাব গোলাম আযম ও অন্যান্য জামায়াত নেতৃবৃন্দ, রেজাকার বা রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সবসময় বক্তৃতা ও বিবৃতির মাধ্যমে প্রনোদনা, প্ররোচনা ও উৎসাহ যুগিয়েছেন এবং পাকিস্তান সরকার বা সামরিক সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন সেই কারণে আমি একথা বলেছি।
প্রশ্ন ঃ    দৈনিক সংগ্রাম প্রত্রিকা আপনি ১৯৭১ সালে নিয়মিত পড়তেন কিনা ?
উত্তর ঃ    মাঝে মাঝে পড়তাম, যেহেতু অপর পক্ষের সব খবর সেন্সর করা হতো সেজন্য পাকিস্তান সরকার কি করছে বা ভাবছে তা জানার জন্য এটা দরকার ছিল কেননা জামায়াত ছিল পাকিস্তান সরকারের প্রধান সহযোগী শক্তি এবং দৈনিক সংগ্রাম ছিল জামায়াতের মুখপাত্র। সেই হিসাবে সংগ্রাম কর্তৃপক্ষ প্রনোদনকারী, প্ররোচনাকারী ও উৎসাহদানকারী এবং সমর্থনকারী।
প্রশ্ন ঃ    দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা আপনি ১৯৭১ সালে নিয়মিত পড়তেন কিনা ?
উত্তর ঃ    আমি মাঝে মাঝে দৈনিক পাকিস্তান, অবজারভার, সংগ্রাম দেখতাম। এর বাইরে অন্য পত্রিকা সম্পর্কে স্মরণ নাই।
প্রশ্ন ঃ    ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের পরে মুক্তিযুদ্ধ গবেষনার জন্য কাজে ব্যবহারের জন্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রকাশিত ইত্তেফাক পত্রিকা সমূহ পর্যালোচনা করেছেন কিনা ?
উত্তর ঃ    কাগজপত্র না দেখে আমি বলতে পারব না।
প্রশ্ন ঃ    ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সরকারের প্রশংসা করে দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদকীয় বা উপ-সম্পাদকীয় কোন লেখা পর্যালোচনা করেছিলেন কিনা ?
উত্তর ঃ কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না। (চলবে)





২৫-০৯-২০১২ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ
প্রশ্নঃ বিজয়ের পর পরই সরকারি ব্যবস্থাপনায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের ব্যাপারে কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল কিনা?
উত্তরঃ আমার যতদূর মনে পড়ে স্বাধীনতার পর পরই বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে জহির রায়হান একটি কমিটি গঠন করেছিলেন যার উদ্দেশ্য ছিল গণহত্যা বিশেষ করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকান্ড তদন্ত করা এবং কারা এর জন্য দায়ী তা নির্ধারণ করা। জহির রায়হানের অন্তর্ধানের পর এই কমিটি আর কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি, তবে সরকারের পক্ষ থেকে নীতি নির্ধারণের অনেকে গণহত্যা বিশেষ করে বুদ্ধিজীবীদের ব্যাপারে তদন্ত করে বিচার করার কথা বলেছিলেন।
প্রশ্নঃ জহির রায়হান সাহেবের যে কমিটি গঠিত হয়েছিল তার প্রধান জহির রায়হান সাহেব ছিলেন কিনা?
উত্তরঃ জহির রায়হান সাহেবই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
প্রশ্নঃ উক্ত কমিটির কাগজপত্র জহির রায়হানের অন্তর্ধানের পর সরকাকে প্রদান করা হয়েছিল নাকি কলিকতায় একজন সাংবাদিক নিয়ে গিয়েছেন?
উত্তরঃ এই সম্পর্কে নানা রকম বর্ণনা আছে। এর মধ্যে একটি রটনা হলো কলিকাতার জনৈক সাংবাদিক কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু এর সত্যতা নির্ধারণ করা যায়নি। আমার যতদূর মনে পড়ে কাগজপত্র কি কি ছিল তার ইনভেনট্রি কখনও তৈরি করা হয়নি তবে কিছু কিছু কাগজপত্র সেই সময়ে এ্যাডভোকেট এস. আর. পালের নিকট মামলার স্বার্থে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মূলকথা হচ্ছে এই সকল কাগজপত্র সম্পর্কে সত্য কখনও নির্ধারণ করা যায় নাই।
প্রশ্নঃ উক্ত কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ছিলেন কিনা?
উত্তরঃ এটা আমি সঠিকভাবে বলতে পারব না, কারণ আমরা এটা জহির রায়হানের কমিটি হিসাবে জানতাম, কারণ তিনি এ কমিটির প্রধান ছিলেন।
প্রশ্নঃ আপনি গবেষণার কার্য পরিকল্পনা ক্ষেত্রে জহির রায়হান সাহেবের তদন্ত কমিটি সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন কিনা?
উত্তরঃ আমি জিজ্ঞাসাবাদ করি নাই।
শহিদুল হক মামা নামে কোন ব্যক্তিকে আমি চিনি না। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত নাছিরুদ্দিন ইউসুফ সাহেবের উপস্থাপনায় “রণাঙ্গনের দিনগুলি” অনুষ্ঠান সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নাই, তবে এই ধরণের একটি অনুষ্ঠান চ্যানেল আই’তে প্রচারিত হতে পারে।
৩১ জানুয়ারী ১৯৭২ তারিখে ঢাকার মীরপুর দখল মুক্ত হয়েছিল। ঐ সময়ের খবরের কাগজের প্রতিবেদন যতটুকু মনে পড়ে তাতে আমার যা স্মরণে আছে তা হলো জহির রায়হান তার বড় ভাই শহিদুল্লাহ কায়সারের খোঁজে উদ্বিগ্ন হয়ে মীরপুরের দিকে রওনা হয়েছিলেন, মীরপুর মুক্ত করতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন এরকম কোন সংবাদ কোথাও দেখি নাই। জহির রায়হান সাহেব মীরপুরে নিহত হওয়ার খবর শুনি নাই, তবে সেখানে তার অন্তর্ধানের খবর শুনেছি। জহির রায়হানের অন্তর্ধানের বিষয়ে সাংবাদিক জুলফিকার আলী মানিকের লিখিত কোন বই আমি পড়েছি কিনা তা আমার স্মরণ নাই। মীরপুরের কোন অবাঙ্গালী নাম যার মাস্তানা তিনি জহির রায়হানকে টেলিফোন করে নিয়ে গিয়েছিলেন এরকম কোন খবর আমার জানা নাই। মীরপুর মুক্ত হওয়ার পর সেখান থেকে ১০/১২ হাজার লোক বা কোন লোক গ্রেফতার হয়েছিল কিনা তা আমার জানা নাই। ১৯৭২ সালে ফেব্রুয়ারী মাসের গ্রেফতারকৃত একজন অবাঙ্গালী রাজাকারের স্বীকারোক্তিনুযায়ী পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী খান এ সবুরের বাসা থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র উদ্ধার হয়েছিল কিনা তা আমার জানা নাই। বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের বিষয়ে আমি পাকিস্তানী জেনারেল রাও ফরমান আলী, নিয়াজী এবং আরও সংশিষ্ট নীতি নির্ধারকদের অনেকের সাক্ষাতকার নিয়েছি। রাও ফরমান আলী ও নিয়াজী ১৯৭১ সালের ঘটনার বর্ণনা নিয়ে বই লিখেছেন তা আমি জানি। নিয়াজী তার লিখিত বই’য়ে একথা উল্লেখ করে থাকতে পারেন যে, রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান আর্মি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হতো, কিন্তু সেই সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করত পাকিস্তান সেনাবাহিনী, কিন্তু তারা একাই সব কাজ করেছে, ইহা সঠিক নহে, তৎকালীন তাদের সমর্থক রাজনৈতিক দলসমূহ তাদের সম্পূর্ণভাবে সহায়তা করেছে এবং এগুলি তাদের বইয়ে উল্লেখ আছে।
প্রশ্নঃ নিয়াজী আমার কাছে রাজনৈতিক দলসমূহ এবং নেতৃবৃন্দকে আমি বিশ্বাস করি না, নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সর্বদা নিজস্ব উদ্যোগ গ্রহণ করি একথা বলেছেন কিনা?
উত্তরঃ নিয়াজী পাকিস্তানের ভাঁড় হিসাবে পরিচিত। তার কথার মূল্য আমরা কেন পাকিস্তানীরও দেয় না। তার সমস্ত বক্তব্যই অন্যান্য তথ্য দ্বারা বিশ্লেষিত হয়েছে। তবে আপনি যা বললেন তা যদি আমার সাক্ষাতকারের অংশ হয়ে থাকে সে সম্পর্কে কাগজপত্র না দেখে আমি কিছুই বলতে পারব না।
প্রশ্নঃ রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস নিয়াজীর কমান্ডে ছিল কিনা আপনার এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন “তাই। কেউ কেউ বলে, ওরা জামায়াতে ইসলামীর অধীনে ছিল। কিন্তু আমি তা স্বীকার করি না। আল-বদর ও আল-শামস না হওয়ার নেপথ্যে জার্মানীর এক শাসকের ধরণা রয়েছে তিনি অনুরূপ ধারণার উদ্দ্যোক্তা। সেখান থেকে আমি ধারণাটি নিই” একথা সঠিক কিনা?
উত্তরঃ আপনি একটি সাক্ষাতকারের খন্ডাংশ তুলে ধরেছেন তার দ্বারা প্রমাণিত হয় না যে, নিয়াজী যাহা বলেছেন তা সত্য, কেননা আমি আগের প্রশ্নের উত্তরে বলেছি নিয়াজীর যে কোন উক্তি অন্যান্য তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করতে হবে।
প্রশ্নঃ আপনার নিকট দেওয়া সাক্ষাতকারে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস সম্পর্কে নিয়াজী আরও বলেছেন “তারা জামায়াতে ইসলামীর কেউ নয়। আমি রাজনীতিবিদদের ঘৃণা করি। যারা রাজনীতি করে তাদের কাউকেই আমি ক্যান্টনমেন্টে ঢুকতে দিই না। কাজেই আমি কেমন করে এ কাজে সাহায্য সহযোগীতা করতে কোন রাজনৈতিক দলকে বলতে পারি” একথা সঠিক কিনা?
উত্তরঃ আগের প্রশ্নের আমার উত্তরে এ প্রশ্নের উত্তর নিহিত, তবে জামায়াতের ঐতিহাসিক সেলিম মুনসুর এর উল্টোটি বলেছেন। সেই কারণে আমি বলেছিলাম পাকিস্তানী জেনারেল বা নীতি নির্ধারকদের যে কোন বক্তব্যেই অন্যান্য তথ্যের আলোকে বিচার না করলে সঠিক সত্য নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না।
প্রশ্নঃ জামায়াতে ইসলামীর কোন প্রকাশনা সংস্থা আছে কিনা?
উত্তরঃ যতদূর জানি পশ্চিম পাকিস্তানে তাদের প্রকাশনা সংস্থা এবং বাংলাদেশেও আছে। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র।
প্রশ্নঃ সেলিম মুনসুরের যে বক্তব্যের কথা আপনি বলেছেন সেটি জামায়াতে ইসলামীর কোন প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তরঃ জামায়াতের তালবা প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছে তবে যেহেতু শব্দটি উর্দু সেহেতু উচ্চারণে একটু পার্থক্য থাকতে পারে।
জামায়াতের কোন প্রকাশনা সংস্থা হতে সেলিম মুনসুরের উল্লেখিত বক্তব্য সম্বলিত বই প্রকাশিত হয় নাই, ইহা সঠিক নহে। যেখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে সেই সংস্থা জামায়াতের সংলগ্ন সংস্থা বলেই আমরা জানি।
প্রশ্নঃ রাজাকার বাহিনীকে অীঁরষষরধৎু ঋড়ৎপব (অক্সুলিয়ারি ফোর্স)  হিসেবে পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড কর্তৃক নয় বরং কেন্দ্রীয় কমান্ড কর্তৃক অন্তর্ভূক করা হয়েছিল কিনা?
উত্তরঃ যা কিছুই হয়েছে তা কেন্দ্রীয় কমান্ড বা সরকার কর্তৃক হয়েছে সেটা পূর্বাঞ্চলীয় হউক আর পশ্চিমাঞ্চলীয় হইক।
প্রশ্নঃ কেন্দ্রীয় কমান্ড বা সরকারকে নির্দেশ, সিদ্ধান্ত প্রদান, বা কোন কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার কোন ক্ষমতা অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের ছিল না।
উত্তরঃ কোন ব্যক্তি কোন সরকারকে বিশেষ করে সামরিক সরকারকে সরাসরি নির্দেশ প্রদান করতে পারেন না, তবে পরামর্শ দিতে পারে, প্রণোদনা যোগাতে পারে, পরিকল্পনায় সাহায্য করতে পারে, প্ররোচিত করতে পারে এমনকি তাদের সাথে ষড়যন্ত্রেও অংশ গ্রহণ করতে পারে।
প্রশ্নঃ আল-বদর, আল-শামস কোন পৃথক বাহিনী ছিল না, সে দুটি রাজাকার বাহিনীর পৃথক দুটি অংশ ছিল।
উত্তরঃ এই তথ্যটি নতুন। কারণ আমাদের জানামতে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও শান্তি কমিটি আমরা পৃথক পৃথক সংস্থা হিসেবে বিচার করলেও এর সদস্যদের সিংহভাগ জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরাই ছিল। অন্যভাবে বলা যেতে পারে যে, জামায়াতে ইসলমাীর সিংহভাগ রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এবং শান্তি কমিটিতে রুপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্নঃ যেহেতু শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের মোট সদস্য সংখ্যা কতছিল সে সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা না থাকার কারণে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের সিংহভাগ সদস্যই জামায়াতে ইসলামীর ছিল মর্মে আপনি যে তথ্য এখানে দিলেন তাহা অসত্য।
উত্তরঃ আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই। কারণ জামায়াতে ইসলমাীর নেতারা কখনও তাদের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করে নাই। (ডিফেন্সের আপত্তি সহকারে)
প্রশ্নঃ আপনি যে সমস্ত রাজাকার, শান্তি কমিটির সদস্য, আল-বদর, আল-শামসের সদস্য সনাক্ত করেছেন তাদের সকলের দলীয় পরিচিতি বলতে পারবেন কিনা?
উত্তরঃ আমি কখনও কাউকে নির্দিষ্টভাবে সনাক্ত করেছি একথা বলি নাই, তবে পত্র-পত্রিকার যাদের যে সমস্ত পরিচিতি উল্লেখ করা হয়েছে আমি সেগুলিই উল্লেখ করেছি।
প্রশ্নঃ আপনি কতজন রাজাকার এডজোটেন্টকে সনাক্ত করেছেন?
উত্তরঃ আমি বলতে পারব না।
প্রশ্নঃ আপনি কতজন মহকুমা পিস কমিটির সদস্যকে সনাক্ত করেছেন?
উত্তরঃ এটা আমাকে বই দেখে বলতে হবে।
প্রশ্নঃ আপনি অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের বক্তব্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন, ইহা একান্তই আপনার নিজস্ব এবং অসত্য।
উত্তরঃ ইহা সত্য নহে।
প্রশ্নঃ আপনি আপনার রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে জামায়াত বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে অসত্য প্রচারণা চালাচ্ছেন।
উত্তরঃ আমার রাজনৈতিক আদর্শ সনাক্ত না করা পর্যন্ত এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নহে, তবে আপনার বক্তব্য সত্য নহে।
প্রশ্নঃ ১৯৭১ সালে অধ্যাপক গোলম আযম সাহেবের ভূমিকা ছিল শুধুমাত্র রাজনৈতিক।
উত্তরঃ গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ইত্যাদি যদি রাজনৈতিক আদর্শের অন্তর্ভূক্ত হয় তাহলে আপনার বক্তব্য সঠিক।
প্রশ্নঃ ১৯৭১ সালে অধ্যাপক গোলম আযম সাহেব হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, কোন কাজের সহিত জড়িত ছিলেন না, আপনি তাকে জড়িয়ে অসত্য জবানবন্দী ও সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।
উত্তরঃ ইহা সত্য নহে।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
আমার লেখা লেখি এবং মুখ্য গবেষণার বিষয় তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ বর্তমানে বাংলাদেশ এর সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, নগরায়ন ও মুক্তিযুদ্ধ। আমি ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে শ্রেষ্ঠ শিশু লেখক হিসাবে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করি। খুব সম্ভব ১৯৬৩ সালে বাংলা সাহিত্যের সামগ্রিক অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করি। ২০১০ সালে ২১শে পদক লাভ করি গবেষণার জন্য। সুনির্দিষ্টভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণার জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার লাভ করি। এছাড়া আরও অন্যান্য পুরস্কার প্রাপ্ত হই।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পাকিস্তানীদের ভাষায় আমাদের ক্রোধান্বিত করেছিল। এই ক্রোধ ও ক্ষোভ আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল ১৯৬৯ সনের গণ-আন্দোলনে।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের পরে ঢাকা থেকে কয়েকটি সংবাদপত্র নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছিল বলে আমার মনে পড়ে। যার মধ্যে ডেইলী অবজারভার, দৈনিক পাকিস্তান, সংগ্রাম, পূর্বদেশ পত্রিকাও ছিল। তখনকার পত্র পত্রিকাগুলির ব্যাপারে বলতে পারি সেগুলি ছিল অবরুদ্ধ দেশের সংবাদপত্র।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
তবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে জামায়াতে ইসলামী এবং মুসলিম লীগের ভূমিকাই ছিল বেশী।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
আমরা বার বার দেখি যে এপ্রিলে তাদের পরামর্শে ও উৎসাহে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। শান্তি কমিটি পরবর্তীকালে দুভাগ হয়ে গেলেও খাজা খয়রুদ্দিন গোলাম আযমের নেতৃত্বাধীন শান্তি কমিটি প্রাধ্যন্য বিস্তার করেছিল এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়তা পেয়েছিল। অচিরেই আমরা দেখতে পাই তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
উল্লেখ্য সে সময়ের সংবাদপত্রগুলি যদি দেখা যায় তাহলে আমরা দেখতে পাবো জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির জনাব গোলাম আযমের বক্তব্য প্রাধান্য পাচ্ছে।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
আমি যখন একটি দলের নাম বলছি তখন তার ভিতরে সেই দলের অঙ্গ সংগঠনকেও অন্তর্ভূক্ত করছি এবং প্রত্যেকটি দলের ব্যাপারেই একথা প্রযোজ্য। এ সব দলের নেতারা প্রতি নিয়ত বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে তাদের কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেছে, প্রণোদনা যুগিয়েছে এসব কমিটি ও বাহিনীতে যোগদানের জন্য। আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক জান্তাকে সহায়তা করার জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিলেন জামায়াতের তৎকালীন আমির জনাব গোলাম আযম। আজকে ৪০ বৎসর পরও যখন শান্তি কমিটির সদস্য রাজাকারদের এবং আল-বদরদের হত্যাযজ্ঞ, লুট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এগুলোর কথা স্মরণ করি তখন শিউরে উঠি।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
পাকিস্তান বাহিনী তো ছিলই কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে তাদের এই সহযোগীরা যদি না থাকতো তাহলে হয়তো এই ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা খানিকটা কম হতো এবং আমরা আরও আগে জয়ী হতে পারতাম। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থ আমি লিখেছি। প্রধানত আমি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির উপর বেশী গবেষণা করছি।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
আমার সব সময় একটা কৌতুহল ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী ছাড়া বাঙ্গালী যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে তাদের মনোজগৎটা কেমন ছিল। তারা এ ধরণের নিষ্ঠুর কর্মকান্ড একই জাতির মানুষের উপর, একই ধর্মাবলম্বীদের উপর কিভাবে করতে পারে সেটা মিমাংসা আমরা করতে পারিনি।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
আমরা অনেকে এসব কমিটির বা বাহিনীর কর্মকান্ডের মধ্যে সুক্ষ্ম তফাৎ করার চেষ্টা করি। কিন্তু মূলত এদের সবার লক্ষ্য ছিল একই। সেটি হচ্ছে তৎকালীন ক্ষমতার সঙ্গে সংযুক্ত থাকা, সম্পদ লুটের মাধ্যমে আহরণ, জনগণকে দমিত করার জন্য হত্যা ও ধর্ষণকে ব্যবহার।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
তাদের সব সময় প্ররোচনা দিয়েছি, প্রণোদনা যুগিয়েছি শান্তি কমিটির নেতৃবৃন্দ যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযম ছিলেন প্রধান।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
এ সম্পর্কে কিছু বই বেরিয়েছে সেখানে দেখলে দেখা যাবে তার বর্ণনা দেয়া আমার পক্ষে খুবই কষ্টকর। রাজাকারদের একইভাবে উৎসাহ দিয়েছে, প্ররোদনা যুগিয়েছে এবং প্ররোচনাও দিয়েছে ঐ সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। যার মধ্যে জামায়াতের তৎকালীন আমির জনাব গোলাম আযম উল্লেখযোগ্য।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
কেননা বলা যেতে পারে তারা এক প্রকার লাইসেন্স প্রদান করেছে হত্যা করার জন্য। কারণ তারা অহরহ রাজনৈতিক বক্তব্যের মাধ্যমে এসব কমিটির সদস্য ও বাহিনীর সদস্যদেরকে উৎসাহিত করেছে এসব বর্বর কর্মকান্ড করার জন্য এবং এসব করলে তাদের কোন শাস্তি হবে না সেটাও নিশ্চিত করা হয়েছে। কারণ এসব কর্মকান্ড যারা করেছে তাদের কেউ কখনও দন্ডিত হয় নাই।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
আমি প্রায় ৪ দশক শিক্ষকতার সংগে যুক্ত আমার ছাত্ররা বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী কিন্তু কখনও তারা শিক্ষক হিসাবে আমাকে অসম্মান করেনি আমিও যে কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের হউক না কেন যখন ছাত্র হিসাবে আমার কাছে এসেছে আমি তাদের প্রতি সমভাবে আচরণ করেছি। সে কারণে বললাম কতটা মনুষত্ব বিবর্জিত হলে শিক্ষককে মিথ্যা কথা বলে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে হত্যা করতে পারে। ইতিহাসে এর উদাহরণ পাওয়া খুব কঠিন।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
এ মুহূর্তে আমার একটি বইয়ের নাম ও দলিলের কথা মনে পড়ছে। বইটির লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা ও সাবেক রেজিষ্ট্রার তার নাম সম্ভবত নাজিম উদ্দিন হতে পারে। বইটির নাম ‘যখন কৃতদাস’। বইটির কথা উল্লেখ করছি একটি কারণে, বইটির শিরোনামের মাধ্যমে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিকামী বাঙ্গালীর অবস্থা কি ছিল তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অর্থাৎ মুক্তিকামী মানুষ কৃতদাস ছিল, কৃতদাস হতে বাধ্য করা হয়েছিল। হত্যার কথা বলেছি, তার সঙ্গে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্মান্তর করণ, দেশান্তর সবকিছুই এই প্রত্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। কৃতদাসের কোন ইচ্ছা থাকে না, এই অবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙ্গালীদেরও এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল যে, তারা স্বইচ্ছায় কোন কাজ করতে পারতো না। জেনারেল নিয়াজীর একটি দলিলের কথা উল্লেখ করতে চাই যেটি আমার বই ‘মুক্তিযুদ্ধের ছিন্ন দলিলপত্র’-এ উল্লেখ করেছি। নিয়াজী তার নথিতে উল্লেখ করেছিলেন যে, পাকিস্তানীদের উচিত হবে বাঙ্গালীদের সংখ্যাঘুতে পরিণত করা। এখন আমরা যদি সেই সব রাজনীতিবিদ যাদের কথা ইতিপূর্বে আমি উল্লেখ করেছি সেসব কমিটি ও বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা এই লক্ষ্য পূরণে পাকিস্তানী জান্তাকে সহায়তা করে গেছে। অর্থাৎ মুসলমান ছাড়া অন্যান্য ধর্মালম্বী বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করা। এক্ষেত্রে তারা সিষ্টেমেটিক্যালি কাজ করছে। এর প্রমাণ প্রায় এক কোটি লোকের দেশ ত্যাগ।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাবে নদীর পার্শ্বে যেখানে সেতু আছে সেখানে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে যাদের বধ্যভূমিতে স্থান হয় নাই। উদাহরণ স্বরুপ আমি একবার বরিশালের উজিরপুরে এক প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানকার লোকেরা সাধারণত পান চাষ করে। তারা আমাকে জানিয়েছিল যে, রাজাকাররা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীদের পথ দেখিয়ে সেই গ্রামে নিয়ে গিয়েছিল এবং সেই গ্রামে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। গণহত্যার বিস্তৃতি তৃণমূল পর্যায়ে কিভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল সেটা ঐ গ্রামের ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। অনেক গণহত্যার পর অনেকের লাশ গণকবর না দিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
এইসব রাজনৈতিক দলের মধ্যে আমি আগেও উল্লেখ করেছি, আবারও বলছি জামায়াতে ইসলামী ছিল প্রধান এবং এর দায় দায়িত্ব জামায়াতের নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির বা প্রধান গোলাম আযমের উপর বর্তায়।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
আমার কাছে যে সকল কাগজপত্র আছে বা যে সকল বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১৩ থেকে ২০ বছরের বালিকা ও তরুণীদের তুলে নেয়া হয়েছিল।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
১৩/১৪ বৎসরের বালিকারাও জানিয়েছে প্রতিদিন কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ বার তাদের ধর্ষণ করা হতো।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
আমি ভাবতে পারি না যে, বাঙ্গালী রাজনীতিবিদরা যারা পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী হিসাবে কাজ করছিল তারা কিভাবে এ কাজে পরামর্শ দিলেন, সহায়তা করলেন, তাদেরও তো স্ত্রী, কন্যা ছিল। নারী ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনকে ব্যবহার করা হয়েছে বাঙ্গালী মুক্তিকামী মানুষকে কৃতদাস করে রাখার জন্য। আমরা শরনার্থীদের কথা বলি কিন্তু শরনার্থী শিবিরে কত মানুষ মারা গেছে সেটা উল্লেখ করি না। এসব মানুষও গণহত্যার অন্তর্ভূক্ত।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
তারা এসব কর্মকান্ডে এত বদ্ধ পরিকর ছিল যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও গোলাম আযম পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করে।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
আমাদের প্রয়াত ধর্মপ্রাণ দার্শনিক জনাব দেওয়ান মোঃ আজরফ বলেছিলেন যে, ধর্মের নামে এত মুসলমান এর আগে এত হত্যা করা হয় নাই।
একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেছিলাম কিন্তু তিনি লিখেছেন কিনা আমি জানি না।
আমার জীবিত কালে বা জীবন কালে এত অশ্রু, এত রক্ত, এত বেদনার সম্মুখীন আর কখনও হয়নি, হতে চাইও না আল্লাহর কাছে এটি আমার প্রার্থনা।
১৯৭১ সালে সকল পত্রিকার জন্য একই ধরণের সেন্সরশিপ ছিল। মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরষ্কার আমি পেয়েছি। এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হলেন আওয়ামী লীগ নেতা জলিল সাহেব। আমি মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনষ্টিটিউটের পরিচালক থাকা সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিধি বহির্ভূতভাবে সর্বোমোট ৮,৬৪,৪৮০/- (আট লক্ষ চৌষট্টি হাজার চারশত আশি) টাকা গ্রহণ করেছিলাম মর্মে পূর্ববর্তী সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি প্রমাণ পেয়েছিল, ইহা সত্য নহে। এই কারণে আমার বিরুদ্ধে যাতে অভিযোগ দায়ের না হয় সেই জন্য আমি বর্তমান সরকারের নির্দেশনা মতে অত্র ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান করতে এসেছি, ইহাও সত্য নহে। আমি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করি নাই, ইহা সত্য নহে। (সমাপ্ত)





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন