সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

নবম ও দশম সাক্ষীর সাক্ষ্য: সাক্ষী বললেন মীর কাসেম আলী ছাড়া অন্যকোন রাজাকার, আল-বদরকে চিনিনা

২৪/২/২০১৪
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের নবম ও দশম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আজ  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ নবম সাক্ষী মো: সালাউদ্দিন ও দশম সাক্ষী মো: জাকারিয়ার জবানবন্দী গ্রহণ করার পর আসামীপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাদের জেরা করেন। জেরায় দশম সাক্ষী মো: জাকারিয়া বলেন, আমি মীর কাসেম আলী ছাড়া অন্যকোন রাজাকার ও আল-বদরকে চিনিনা। 
জেরা শেষে আগামীকাল মঙ্গলবার পরবর্তী সাক্ষীর জবনবন্দী গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।


নবম সাক্ষী মো: সালাউদ্দিনের জবানবন্দী (সংক্ষিপ্ত) : 
জবানবন্দীতে সাক্ষী সালাউদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর আল-বদররা আমাকে এবং আমার চাচা মো: জাকারিয়া, জেঠাতো ভাই নাজেম, জাফর ও চাচা এস্কান্দারকে ধরে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। ডালিম হোটেলের একটি কে আমাদের ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তারা মেরে চলে যায়। আটক করার দু’তিন দিন পর আল-বদররা দরজা খুলে আমাদের এলোপাতাড়ি পেটায়। এর চার বা পাঁচদিন পর কেউ একজন আমাদের কে প্রবেশ করে আমার নাম ধরে ডাকে। ডাক শুনে সামনে এলে লোকটি আমার চোখ বেধে ডালিম হোটেলের উপরে নিয়ে যায় এবং আমাকে বলে, আমাদের কমান্ডার মীর কাশেম আলী তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এরপর আমী মীর কাসেম আলীর সামনে গেলে সে আমাকে জিজ্ঞাসা করে বল কোথায় অস্ত্র আছে এবং মুক্তিবাহিনীরা কোথায় আছে। না বললে তোমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে কর্নফুলী নদীতে ভাসিয়ে দেব। আমি কোন তথ্য না দেয়ায় মীর কাশেম আলীর নির্দেশে আল-বদরা আমাকে নির্যাতন করতে থাকে। 
আটকের এক পর্যায়ে আমার বাবা জনৈক আজিম সওদাগরের সহযোগিতায় আমাকে ছাড়িয়ে আনতে ডালিম হোটেলে যান। আমাকে আবার নিচ তলা থেকে হোটেলের ওপর তলায় নিয়ে আসে। তখন মীর কাশেম আলী বাবাকে দেখিয়ে বলেন, উনি কি তোমার বাবা? আমি হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলে মীর কাশেম আলী বলেন, তোমার বাবার জন্য তুমি এবার বেঁচে গেলে। এরপর আমি বাবার সাথে বাড়িতে চলে আসি।
জবানবন্দী শেষে আসামীপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন।
জেরা:
প্রশ্ন : আপনি স্বাধীনতার আগে ও পরে মীর কাসেম আলীকে দেখেননি।
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : ডকে (আসামীর কাঠগড়ায়) একজন ব্যক্তি আছে আপনি তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে এসেছেন।  
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পর থেকে আটক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আপনি রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর সদস্য রাকা ছিল বা তারা কোথায় থাকতো সে সম্পার্কে আপনার কোন ধারণা ছিল?
উত্তর : রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর নাম শুনলেও তারা কোথায় থাকত সে সম্পার্কে আমার কোন ধারণা ছিল না।
প্রশ্ন : মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা গুন্ডার নাম শুনেছেন?
উত্তর : শুনেছি।
প্রশ্ন : আপনি কখন থেকে ডালিম হোটেলের নাম শুনেছেন?
উত্তর : পাকিস্তান আমল থেকে।
প্রশ্ন : ডালিম হোটেলের তৎকালীন মালিক চন্দ্র মোহন নাথের নাম শুনেছেন?
উত্তর : শুনিনি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে মইত্যা গুন্ডা ডালিম হোটেল দখল করে ছিল, এটা আপনি শুনেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার চাচা এস্কান্দারকে কি কারণে চাকরি থেকে চলে এসছিল?
উত্তর : জানি না।
প্রশ্ন : আপনাকে ডালিম হোটেলে আটক করা হয়নি বা নির্যাতন করা হয়নি।
উত্তর : সত্য নয়।

দশম সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা:
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে দশম মো: জাকারিয়া জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালের রমজানের ঈদের ৫/৭ দিন পর আমি বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ ভোররাতে ঘরের দরোজায় কড়া নাড়ার শব্দ পাই। দরোজা খুলে দুজন সশস্ত্র আল-বদর সদস্য দেখতে পাই। তারা আমাকে ধরে আমার ভাতিজা জাফর, সালাউদ্দিন, নাজিম এবং জেঠাতো ভাই এস্কান্দারসহ আরো অনেককে প্রথমে এমএমসি স্কুল মাঠ, তারপর ট্রাকে করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়।
আটকের দু’তিনদিন পর আমাকে হোটেলের উপর তলায় নিয়ে যায়। দোতলায় নিয়ে আমাকে আল-বদররা মুক্তিবাহিনী এবং তাদের অস্ত্র-শস্ত্র কোথায় এই তথ্য দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। আমি অপারগতা প্রকাশ করলে তারা আমার উপর নির্যাতন করতে থাকে। এপর্যায়ে আরেকটি লোক এসে একই তথ্য জানতে চাইল। অপারগতা প্রকাশ করলে আমাকে আবারও পেটাতে বলে। তখন আল-বদররা আবার নির্যাতন শুরু করে। এরপর আমার নিজের নিয়ে যায়। যে আল-বদররা আমাকে এতক্ষোণ যাবৎ নির্যাতন করেছিল তারা বলাবলি করছিল যে লোকটি পরবর্তীতে এসে আবার পেটাও বলে উক্তি করেছিল তার নাম মীর কাসেম আলী। এর দু’এক দিন পর আমার বাবা ও চাচা মান্নান সওদাগর এসে আল-বদর ক্যাম্প থেকে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
জবানবন্দী শেষে আসামীপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন।

জেরা:
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে রাজাকার ও আল-বদররা আপনাদের এলাকায় না এলাকার বাইরে ছিল?
উত্তর : বলতে পারব না।
প্রশ্ন : যে আল-বদররা আপনাকে ধরে নিয়ে যায় তারা কি মুখোশ পরা ছিল?
উত্তর : হ্যাঁ, মুখোশ পরা ছিল।
প্রশ্ন : আপনি মীর কাসেম আলীকে যুদ্ধের আগে চিনতেন?
উত্তর : না, চিনতাম না।
প্রশ্ন : স্বাধীনতা যুদ্ধের পরেও দেখেননি।
উত্তর : দেখিনি।
টু কোর্ট: প্রশ্ন : আপনি মীর কাসেম আলীকে কবে কোথায় দেখেছেন?
          উত্তর : ডালিম হোটেলে আটক অবস্থায় দেখেছি। 
প্রশ্ন : আপনি মীর কাসেম আলী ছাড়া অন্য কোন রাজাকার বা আল-বদরকে চেনেন না।
উত্তর : সত্য, মীর কাসেম আলী ছাড়া অন্য কোন রাজাকার, আল-বদরকে চিনি না।
প্রশ্ন : আপনার বর্ণিত নাজির বাড়ির দিক থেকে আসা আল-বদররাও কি মুখোশ পরা ছিল? 
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : আপনাদের আটক করার সময় আল-বদরদের সাথে কি পাকিস্তান আর্মি ছিল?
উত্তর : হ্যাঁ, ছিল।
প্রশ্ন : এনএমসি স্কুলের সামনে আল-বদরদের সাথে কি পাকিস্তান আর্মি দেখেছেন?
উত্তর : হ্যাঁ, দেখেছি। তারা ডালিম হোটেল পর্যন্ত গিয়েছিল। 
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি সম্পার্কে আপনার কোন ধারণা আছে?
উত্তর : শান্তি কমিটি সম্পার্কে আমার কোন ধারণা নেই।
প্রশ্ন : আপনাদের এলাকায় কোন রাজাকার ক্যাম্প দেখেছেন?
উত্তর : না, দেখিনি।
প্রশ্ন : যুদ্ধের সময় আপনি কি বাড়ি থেকে চকবাজারে নিয়মিত যাতায়াত করতে?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : আপনি ডালিম হোটেল কখন থেকে চিনতেন?
উত্তর : যুদ্ধের আগে থেকে চিনতাম।
প্রশ্ন : আপনাকে ডালিম হোটেলের দোতলায় কি একবারই নেয়া হয়?
উত্তর : এক বারই নেয়া হয়।
প্রশ্ন : আপনার জবানবন্দীতে বর্ণিত আটক ও নির্যাতন সম্পার্কে এ পর্যন্ত কোন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেননি।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : ’৭১ সালে আপনাকে ডালিম হোটেলে আটক রাখা বা মীর কাসেম আলীর উপস্থিতিতে নির্যাতন করা বিষয়ে যা বলেছেন তা শেখানো মতে বলেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন