রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অষ্টম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ

২৩.০২.১৪
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ সাক্ষী ইস্কন্দার আলম চৌধুরীর জবানবন্দী গ্রহণ করার পর আসামীপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাকে জেরা করেন। এরপর আগামীকাল সোমবার পরবর্তী সাক্ষীর জবনবন্দী গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।

জবানবন্দী (সংক্ষিপ্ত): জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আমি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে মৌরিপুর এয়ারবেজে গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়র হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ’৭১ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে এক সুযোগে পালিয়ে ঢাকায় আসি। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপন্ন থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আমি চট্টগ্রামের নিজ বাড়িতে আসি। এর পরের দিন আমার বড়ভাই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও তৎকালীন নগর আওয়ামী লীগের সদস্য মরহুম শামসুল আলম চৌধুরীর গোপন আস্তানায় থাকি।
১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর আল-বদর বাহিনী ও পাকিস্তান আর্মি আনুমানিক ভোর ৪টার দিকে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। ওই সময় আমাকে আটক করে অন্যান্য আটককৃতদের সাথে ট্রাকে করে আল-বদরের নির্যাতন ক্যাম্প ডালিম হোটেলে নিয়ে আসে। এরপর ট্রাক থেকে সকলকে নামিয়ে ডালিম হোটেলের নিচতলায় ছোট্ট একটি কক্ষে ঢোকানো হয়। ওই কক্ষে নিয়ে আসার দু’একদিন পর আমাকে চোখ ও হাত বেধে হোটেলের দ্বিতীয় তলায় একটি রুমে নিয়ে যায়। রুমে যাওয়ার পর কোন একজন লোক বলল, ‘খান কোথায়? উত্তরে কেউ একজন মীর কাসেম আলী সাহেব আমি আসছি।’ এরপর একজন আমার কক্ষে প্রবেশ করে উপর্যুপরি কিলঘুষি ও লাথি মেরে ফোরে ফেলে দেয় এবং ইলেট্রিক ওয়ার দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এক পর্যায়ে নির্যাতনকারীদের একজন আমার চোখের বাঁধন খুলে দেয়। চোখ খুলে যাওয়ার পরে আমি মীর কাসেম আলীসহ আরেকজনকে দেখতে পাই। যিনি সম্ভবত পূর্বে উল্লেখিত খান হতে পারে। এরপর আমাকে ডালিম হোটেলের দ্বিতীয় তলা থেকে নীচতলায় আনা হয়। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ডালিম হোটেলে লোকজনের আনাগোনা কমে এসছে বলে বুঝতে পারি। পরদিন ১৬ ডিসেম্বর সকালে স্থানী লোকজন ডালিম হোটেলে এসে যে কক্ষে আটক ছিলাম তার দরজা ভেঙ্গে আমাকে উদ্ধার করে।

জেরা:
জবানবন্দী শেষে আসামীপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন।
প্রশ্ন : আপনি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পর্যন্ত মীর কাসেম আলীকে দেখেছেন?
উত্তর : না, দেখিনি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আপনি স্বচোখে মীর কাসেম আলীকে দেখেছেন?
উত্তর : না, দেখিনি।
প্রশ্ন : আজ ডকে (আসামীর কাঠগড়ায়) একজন ব্যক্তি উপস্থিত আছে?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আজ এই ট্রাইব্যুনালে এসেছেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে মীর কাসেম আলী কোথায় থাকতেন সে সম্পার্কে আপনার ধারণা আছে?
উত্তর : কোথায় থাকতেন সে সম্পার্কে ধারণা নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে আপনি কি পাকিস্তানের মৌরিপুর এয়ারবেজ থেকে পালিয়ে যান?
উত্তর : হ্যাঁ। 
প্রশ্ন : আপনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি নেয়ার কোন আবেদন করেছেন?
উত্তর : না, করিনি।
প্রশ্ন : পাকিস্তানের মৌরিপুর এয়ারবেজ থেকে করাচী এয়ারপোটের দূরত্ব কত?
উত্তর : আনুমানিক ১০-১২ কিলোমিটার।
প্রশ্ন : বিমানবাহিনী থেকে কেউ পালিয়ে গেলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করা হয়।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনি পাকিস্তানের মৌরিপুর থেকে কিভাবে ঢাকায় আসেন?
উত্তর : বিমানযোগে এসেছি।
প্রশ্ন : কোন বিমানে এসেছেন?
উত্তর : সম্ভবত পিআইএ এর বিমানযোগে ঢাকায় এসেছি।
প্রশ্ন : আপনি কোন পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গেছেন?
উত্তর : আমি সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথ ব্যবহার করেছিলাম।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের সময় সড়কপথ ও রেলপথ বিদ্ধস্ত ছিল কি?  
উত্তর : হ্যাঁ। তবে নৌপথ বিদ্ধস্ত ছিল না। 
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনি কিভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যান?
উত্তর : ঢাকা থেকে প্রথমে সদরঘাট হয়ে নৌপথে চাঁদপুর পৌছাই।
প্রশ্ন : আপনার বাড়ি চট্টগ্রামের কোথায়?
উত্তর : চট্টগ্রাম পাচলাইশ থানার অধীনে ছিল।
প্রশ্ন : সৈয়দ মো: এমরানের ঘাটিটি পাচলাইশ থানার অধীনে ছিল।
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : আপনি কখন সৈয়দ মো: এমরানের ঘাটিতে গিয়ে ছিলেন?
উত্তর : কোন সময় গিয়েছিলাম তা মনে নেই। 
প্রশ্ন : সৈয়দ মো: এমরান পাকিস্তান আর্মিদের বিরুদ্ধে কোন সম্মুখ যদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন কি?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের কোথায় কোথায় আল-বদর ক্যাম্প ছিল?
উত্তর : ডালিম হোটেলে আল-বদর ক্যাম্প ছিল আমি নিশ্চিত। তবে চকবাজারে আল-বদর ক্যাম্প ছিল বলে শুনেছি।
প্রশ্ন : আপনি ১৯৭১ সালে করাচী থেকে ঢাকায় এসে চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে পাকিস্তান আমি ও আল-বদরদের টহল দিতে দেখেছেন?
উত্তর : হ্যাঁ, দেখেছি।
প্রশ্ন : আপনি আটক হওয়ার আগে আপনার দেখা আল-বদরদের নাম বলতে পারবেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি ডালিম হোটেলে আটক অবস্থায় আল-বদরদের সাথে পাকিস্তান আর্মিদের দেখেছেন?
উত্তর : দু’একজন পাকিস্তন আর্মি দেখেছি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে জালাল আহমেদ চৌধুরী নামে কোন রাজাকারের নাম শুনেছেন? 
উত্তর : শুনিনি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নামের রাজাকারের নাম শুনেছেন?
উত্তর : শুনিনি, তবে কোরবানীগঞ্জের মইত্যা গুন্ডা নামে একজনের নাম শুনেছি।
প্রশ্ন : আপনি জানেন মইত্যা গুন্ডা ১৯৭১ সালে ডালিম হোটেল দখল করেছিল।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি কি জানেন ডালিম হোটেলের মালিক কে ছিল?
উত্তর : আমি জানার চেষ্টা করিনি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে মইত্যা গুন্ডা ডালিম হোটেল দখল করেছিল।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনি চাকরি থেকে পালায়ন করে আসার কারণে আপনাকে গ্রেফতার করে জেলে আটক রাখা হয়।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সৈয়দ মো: এমরান ৮০ বছরের অধিক বয়স্ক আবুল কাসেমকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে জেলখানায় বন্দি ছিলেন বা ১৬ ডিসেম্বর তারিখে তিনি আপনার সাথে জেল থাকা অবস্থা থেকে মুক্তি পান। 
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনাকে ডালিম হোটেলে আটক রেখে নির্যাতনের ঘটনা সম্পর্কিত জবানবন্দী আপনি যা যা বলেছেন তা এই ট্রাইব্যুনালে প্রথম বললেন।
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ডালিম হোটেল দখল রাখার অভিযোগে রাখার অভিযোগে কোন মামলা হয়ে ছিল কি না?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : আপনাকে আটক করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া, সেখানে মীর কাসেম আলীর উপস্থিতিতে নির্যাতন করার বিষয়ে আপনি অসত্য সাক্ষ্য দিয়েছেন।
উত্তর : সত্য নয়।

##

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন