বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আরো দুই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ

২৫/২/২০১৪
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের একাদশ ও দ্বাদশ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ একাদশ সাক্ষী নাজিম উদ্দিন ও দ্বাদশ সাক্ষী মো: হাসানের জবানবন্দী গ্রহণ করার পর আসামীপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাদের জেরা করেন। এরপর আগামী ৩ মার্চ পরবর্তী সাক্ষীর জবনবন্দী গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।


সাক্ষ্যগ্রহণের সময় মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় আনা হয়। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মিজানুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম ও অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও সুলতান মাহমুদ সিমন।

একাদশ সাক্ষী নাজিম উদ্দিনের জবানবন্দী (সংক্ষিপ্ত) : 
জবানবন্দীতে সাক্ষী নাজিম উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর আল-বদররা আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে আমাকে নাজিরবাড়ি মসজিদের সামনে নিয়ে আসে। সেখানে আবু জাফর, আমার চাচাতো ভাই ছুটু মিয়া, জাকারিয়া, এস্কান্দারসহ আরো কয়েকজনকে দেখতে পাই। এরপর আল-বদররা আমাদের সবাইকে দুটি ট্রাকে উঠিয়ে ডালিম হোটেলের একটি কক্ষে নিয়ে যায়। আমাকে আটক রাখার আনুমানিক ২ ঘণ্টা পর আল-বদর সদস্যরা এসে পূর্বে থেকে আটক থাকা কয়েকজনকে বের করে নিয়ে যায়। আনুমানিক ২ ঘণ্টা পর আবার তাদের রুমে ফিরিয়ে আনে যাদের অনেকের শরীরে আমি অত্যাচারের চিহ্ন দেখতে পাই। আহত ব্যক্তিরা আমাকে বলল, ‘তোমাকেও এভাবে নির্যাতন করা হবে।’ একথা শুনে আমি ভয়ে কাঁদতে থাকি। নির্যাতিত ব্যক্তিরা আরো বলছিল এটা মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে একটি নির্যাতন কেন্দ্র। এর তিন বা চারদিন পর আমার বাবার তদবিরে আল-বদররা আমাকে ছেড়ে দিলে বাড়ি চলে আসি। 
জবানবন্দী শেষে আসামীপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন।

জেরা:
প্রশ্ন : আপনাকে আটক করে ডালিম হোটেলে নিয়ে আসা পর্যন্ত আবু জাফর, ছুটু মিয়া, জাকারিয়া ও এস্কান্দার ছাড়া আটককৃত আর কাউকে আপনি চিনতে পেরেছেন।
উত্তর : আর কাউকে চিনতে পারিনি।
প্রশ্ন : আপনার চাচা এস্কান্দার আটক হওয়ার পূর্বে কি করতেন।
উত্তর : পাকিস্তানে থাকতেন, সেখানে কি করতেন তা জানতাম না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের পূর্বে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে আপনার কোন পরিচয় ছিল?
উত্তর : পরিচয় ছিল না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর ও আস শামস বাহিনী সম্পার্কে আপনার কোন ধারণা আছে।
উত্তর : আমার কোন ধারণা নেই।
প্রশ্ন : আপনাকে আটক করার পর থেকে ডালিম হোটেলে আনা পর্যন্ত সময়ে পাকিস্তান আর্মি দেখেছিলেন কি?
উত্তর : দেখিনি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনাকে আটক করা হয়নি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি মীর কাসেম আলীকে জড়িয়ে অসত্য সাক্ষ্য দিলেন।
উত্তর : সত্য নয়।

দ্বাদশ সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা: দ্বাদশ সাক্ষী মো: হাসান জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি চান্দগাঁও এনএমসি হাই স্কুলের কাস নাইনের ছাত্র ছিলাম এবং স্কুলের জিএস ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নিজের জিবন রক্ষার্থে অন্যত্র আত্মগোপনে যাই এবং আগষ্ট মাসে চট্টগ্রামের সাবানঘাটার বাড়িতে ফিরে আসি। ১৯৭১ সালে ২৯ নভেম্বর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে আল-বদর বাহিনীর লোক আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে এবং বাড়ি থেকে আমিসহ প্রফেসর মওলানা নূরুল ইসলাম, আমার বাবা মরহুম আবদুস ছাত্তার, চাচাতো ভাই নূরুল কুদ্দুস, নূরুল হাশেম, মো: ইব্রাহিম, আবদুল হাকিম, মো: ইদ্রিস, মো: শফিসহ ২০-২৫ জন লোককে বের করে এনএমসি স্কুলের সামনে নিয়ে আসে মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে এবং আমাদের সেখানে আল-বদরদের পাহারায় রেখে মীর কাসেম আলী চলে যায়। এনএমসি হাই স্কুলের সামনে দুটি ট্রাক দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল যাতে আটককৃত লোকদের তোলা হয়। আমার বয়স কম থাকায় আমাকে আল-বদররা এনএমসি স্কুলের সামনে থেকে ছেড়ে দেয়। এছাড়াও আমার বাবা মওলানা আবদুস ছাত্তার এবং মওলানা নূরুল ইসলাম সাহেবকে একই জায়গা থেকে আল-বদররা ছেড়ে দেয়। ট্রাকে করে যে সমস্ত ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল তারা স্বাধীনতার পরে মুক্তি পেয়ে আমাকে জানিয়েছিল যে, তাদেরকে মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে ডালিম হোটেলে আটকে রাখা হয়েছিল।
টু কোর্ট- প্রশ্ন: জবানবন্দীতে বর্নিত আটককৃত কুদ্দস এবং হাশেমকে কোথা থেকে মুক্তি দেয়া হয়?
          উত্তর: চট্টগ্রাম জেল খানা থেকে। ডালিম হোটেল থেকে তাদেরকে আল-বদররা জেল খানায় পাঠিয়েছিল।
আমি মীর কাসেম আলীকে ১৯৭০ সাল থেকে চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় চিনতাম। উনি ইসলামী ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।
জেরা:
প্রশ্ন : যেসব আল-বদরদের ঘটনার সময় দেখেছেন তারা কি মুখোশ পরিহিত ছিল?
উত্তর : সবাই মুখোশ পরা ছিল না।
প্রশ্ন : আপনি এসএমসি হাই স্কুলে পড়ার আগে কোথায় পড়তেন?
উত্তর : জামিয়া আহমাদিয়া আলিয়া মাদ্রাসায়।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে এনএমসি স্কুল কোন থানার অধীনে ছিল?
উত্তর : পাঁচলাইশ থানার অধীনে।
প্রশ্ন : চট্টগ্রাম কলেজ কোন থানার অধীনে ছিল?
উত্তর : কোতয়ালি থানার অধীনে।
প্রশ্ন : আপনার বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম কলেজ কোন দিকে কত দূরে অবস্থিত?
উত্তর : পশ্চিম ও দক্ষিণে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
প্রশ্ন : ১৯৭০-৭১ সালে চট্টগ্রাম কলেজের মেনন ও মতিয়া পন্থি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও সম্পাদক কে চিল?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি কে ছিল?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনি চট্টগ্রামে পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্প দেখেছেন?
উত্তর : পাকিস্তান আর্মির কোন ক্যাম্প দেখিনি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ও ফিরে আসার সময় একই রকম খারাপ অবস্থা ছিল।
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : বাদামতলীর মাওলানা আবুল কাশেমের নাম শুনেছেন?
উত্তর : শুনেছি। তিনি ’৭১ সালে নিহত হন।
প্রশ্ন : তিনি কি ৮০ বছর উর্ধ্ব বৃদ্ধ লোক ছিলেন?
উত্তর : বৃদ্ধ লোক ছিলেন। তবে ৮০ বছর উর্ধ্ব ছিলেন কি না বলতে পারব না। তিনি মাদ্রাসায় চাকরি করতেন।
প্রশ্ন : পিস কমিটি, রাজাকার, আস শামস সম্পার্কে আপনার কোন ধারণা নেই।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : চট্টগ্রাম শহরের রাজাকার প্রধান জালাল চৌধুরীর নাম শুনেছেন?
উত্তর : শুনিনি।
প্রশ্ন : চট্টগ্রাম শহরের পিস কমিটির চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারির নাম বলতে পারবেন?
উত্তর : বলতে পারব না।
প্রশ্ন : আপনি বর্নিত ডালিম হোটেলে গিয়েছেন?
উত্তর : হ্যাঁ, গিয়েছি।
প্রশ্ন : ওই হোটেলের কোন মালিককে আপনি চেনেন?
উত্তর : চিনি না।
প্রশ্ন : আপনি মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা রাজাকারের নাম শুনেছেন?
উত্তর : শুনিনি।
প্রশ্ন : আপনাদের এলাকায় কোন আল-বদর ক্যাম্প ছিল?
উত্তর : ছিল না।
প্রশ্ন : কুদ্দস এবং হাশেমকে কোথায় নিয়ে আটক রাখা হয়েছিল তা আপনি জানতেন না।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সৈয়দ মো: এমরানকে জেল খানায় আটক রাখা হয়েছিল এবং তাকে ডালিম হোটেল আটক রাখা হয়নি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ২৯ নভেম্বর আপনাকে আটক করা হয়নি বা আপনি ওইদিন মীর কাসেম আলীকে দেখেনি বা ডালিম হোটেল সম্পার্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা তা অসত্য। 
উত্তর : সত্য নয়।

##

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন