মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল // রাষ্ট্রপক্ষের ডকুমেন্টেই উল্লেখ আছে বিশাবালীকে পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর ঘাটে হত্যা করা হয়-শুনানীতে আইনজীবী

মেহেদী হাসান, ১১/২/২০১৪
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল আবেদন শুনানীতে আজ  আলোচিত সুখরঞ্জন বালীর ভাই বিশাবালী হত্যার অভিযোগ খন্ডন করে আসামী পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ মাওলানা সাঈদীর  উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে উমেদপুর গ্রামে বিশালীর বাড়ির সামনে নারকেল গাছের সাথে বেঁধে তাকে হত্যা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরাও তাদের জবানবন্দীতে একই তথ্য দিয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা একটি ডকুমেন্টেই দেখা যায় বিশাবালীকে পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর ঘাটে হত্যা করা হয়েছে। এ থেকে প্রমানিত যে, বিশাবালীকে মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে হত্যা করা হয়নি।

মাওলানা সাঈদীকে ১০ নং অভিযোগ তথা বিশাবালী হত্যার অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল এ অভিযোগে যুক্তি উপস্থাপন ছাড়াও ১১ নং অভিযোগ তথা মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়ি লুটের বিষয়ে যুক্তি পেশ শেষ হয়েছে। যুক্তি উপস্থাপনে অন্যান্য দিনের মত আজো অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহানকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন।
প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।

বিশাবালী হত্যার অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি পেশ :
অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, বিশাবালী হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার  ট্রাইব্যুনালে তার জবানবন্দীতে বলেছেন “২ জুন সকাল বেলা আমি নিজ বাড়িতে ছিলাম। স্বাক্ষী খলিলুর রহমান খুব ভোরে আমার বাড়ি এসে গোপনে জানিয়ে দেয় যে, আপনি এবং আপনার ঘরে যে আওয়ামী লীগ এর  নেতাকর্মী  এবং মুক্তিযোদ্ধারা আছে তাদের লিস্ট হয়েছে ধরার জন্য। আমি আমার ঘরে মুক্তিযোদ্ধা  ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের  আশ্রয় দিতাম  । আমি তাদেরকে অনেক দূরে নিয়ে রাখি। লোকদের কাছ থেকে জানতে পারি অনুমান সকাল ১০টায় পারের হাটের শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী দানশ আলী মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মোমিন হাওলাদার, হাকিম  কাজী, হাবিবুর রহমান মুন্সী  পাক হানাদার বাহিনী সঙ্গে নিয় উমেদপুর গ্রামে  আমার বাড়ির  নিকটস্থ হিন্দু পাড়ায় আক্রমণ চালিয়েছে। চিত্ত রঞ্জন তালুকদার, জগৎ তালুকদার, বিশাবালী, শুকুরবালী, পনির মন্ডলসহ আরো অনেকের ২৫/৩০টি ঘর লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। প্রায় ১৫ লক্ষ  টাকার ক্ষতি সাধিত হয়।
বিশাবালী অসুস্থ  থাকায় তাকে ধরে ফেলে এবং একটি নারিকেল গাছের সাথে বেঁেধ মারমিট করে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নির্দেশক্রমে বলে যে, ওটাকে যখন পেয়েছি ওটাকে গুলি কর। জনৈক রাজাকার গুলি করে বিশাবালীকে হত্যা করে।”

অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, মাহবুবুর রহমান খলিলের কাছ থেকে ঘটনার দিন ভোরে খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু  এই  খলিলুর রহমানের জন্ম সনদে   জন্ম তারিখ   লেখা রয়েছে  ১৯৭২ সালের ১৩ এপ্রিল।  ভোটার তালিকা এবং তার  কর্মস্থলের তথ্য বিবরনিতেও  জন্ম    তারিখ একই লেখা আছে।  কাজেই জন্ম সনদ অনুযায়ী ১৯৭১ সালে তার জন্মই হয়নি। কাজেই এরূপ ব্যক্তির কাছ থেকে খবর পাওয়ার কথা অসম্ভব । 
এছাড়া এক নং সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারের এসএসসির নিবন্ধনে তার জন্ম তারিখ ছিল ২০ মার্চ ১৯৫৯ সাল। সে হিসেবে ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ১২ বছর। এ তথ্য যে বিশ্বাসযোগ্য তার প্রমান হল তার বড় বোন মাতোয়ারা বেগমের জন্ম তারিখ ১৯/৭/১৯৫৭।

অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ এবং সাক্ষীদের দাবি বিশাবালীকে  উমেদপুরে তাদের বাড়ির সামনে একটি নারকেল গাছের সাথে বেঁধে মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষেরই দাখিল করা একটি ডকুমেন্টে দেখা যায় তাকে পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর বেদিতে হত্যা করা হয়েছে।
এ বিষয়ক ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের  এক নং সাক্ষী এবং মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার। মাহবুুবুল আলম  জিয়ানগর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর বেদিতে নিয়ে ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের একটি তালিকা তৈরি করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্যাডে তৈরি করা নিহতদের এ তালিকায় এক নং ক্রমিকে রয়েছে বিশাবালীর নাম। মাহবুবুল আলম হাওলাদার এ তালিকা তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়েছেন এবং রাষ্ট্রপক্ষ এ ডকুমেন্টের ওপর নির্ভর করেছে । কাজেই তাদের দাবি অনুযায়ী বিশাবালীকে পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর বেদিতে হত্যা করা হয়েছে।

এরপর তিনি বিশাবালী হত্যার  অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের পাঁচ নং সাক্ষী মাহতাব উদ্দিনের সাক্ষ্য খন্ডন করেন। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে মাহতাব বলেছেন ১৯৭১ সালে  ২ জুন উমেদপুরে অগ্নিসংযোগ এবং বিশাবালীকে হত্যার দিন তিনি পাড়েরহাট বাজারে গিয়েছিলেন এবং যাবার পথে এ ঘটনা দেখেছেন। অথচ তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় বলেছেন, ২ জুন তিনি পাড়েরহাট যাবার কথা তাকে বলেননি। কাজেই  সাক্ষী মাহতাবের কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আর পাড়েরহাট না গেলে ঘটনা দেখার কথাও সত্য নয়।
জেরায় মাহতাব এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন তিনি ৪০ বছরেও বিশবালীর লাশ কোথায় গেল সে বিষয়ে খোঁজ নেননি এবং কোন রাজাকার তাকে গুলি করেছিল তাও জানার চেষ্টা করেননি।

এরপর অ্যাডভোকেট শাহজাহান  বিশাবালী হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের নবম সাক্ষী আলতাফ হোসেনের সাক্ষ্য খন্ডন করে যুক্তি পেশ করেন। নবম সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২ জুন মামার বাড়ি উমেদপুর গ্রামে যাই। যাবার পথে   রাস্তায় দাড়িয়ে দেখি  একদল পাক হানাদার বাহিনী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ আরো অনেক রাজাকার  উমেদপুর গ্রামে হিন্দু পাড়ায় ঢুকছে। এ ঘটনা দেখার জন্য রাস্তার পাশে ঝোপের আড়ালে চলে যাই। যাবার পর দেখি পাক হানাদার বাহিনী  এবং দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হিন্দু পাড়ার ঘরে ঢুকে মালামাল লুট করে। ১৮/২০টি ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ইতোমধ্যে বিশাবালীকে ধরে নারকেল গাছের সাথে বেঁধে রাজাকাররা মারিপট করে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পাক হানাদার বাহিনীর সাথে কি যেন আলাপ আলোচান করল। তখন সাঈদী সাব বলে, শালাকে গুলি কর। এ কথা বলার পর একজন রাজাকার রাইফেল বা পিস্তল ঠিক বলতে পারবনা,  লম্বা লম্বা দেখেছি,  তা দিয়ে গুলি করে। গুলি করার  সাথে সাথে মা বলে চিৎকার  দেয়। আমি ভয়ে কাতর হয়ে  ঐ জঙ্গলের আরো গভীরে চলে যাই। এরপর মামার বাড়ি গিয়ে দুপুরে খেয়ে  অনেকের সাথে বিকালে পোড়াবাড়ি দেখতে যাই। লোকজনকে বলাবলি করতে শুনি লাশটা গেল কোথায়। অনেকে লক্ত টক্ত দেখতে পায়। আমিও রক্ত দেখি। লোকজনকে বলাবলি করতে শুনি ওকে খালে ফালাইয়া দিছে।”

অ্যাডভোকেটশ শাহজাহান বলেন, ট্রাইব্যুনালে জেরার সময় সাক্ষী আলতাফ হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয় ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পাক হানাদার বাহিনীর সাথে কি যেন আলাপ আলোচান করল। তখন সাঈদী সাব বলে, শালাকে গুলি কর। এ কথা বলার পর একজন রাজাকার রাইফেল বা পিস্তল ঠিক বলতে পারবনা,  লম্বা লম্বা দেখেছি,  তা দিয়ে গুলি করে। গুলি করার  সাথে সাথে মা বলে চিৎকার  দেয় । এরপর মামার বাড়ি গিয়ে দুপুরে খেয়ে  অনেকের সাথে বিকালে পোড়াবাড়ি দেখতে যাই। লোকজনকে বলাবলি করতে শুনি লাশটা গেল কোথায়। অনেকে লক্ত টক্ত দেখতে পায়। আমিও রক্ত দেখি। লোকজনকে বলাবলি করতে শুনি ওকে খালে ফালাইয়া দিছে ” একথাগুলো আপনি তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছিলেন কি-না। সাক্ষী জানায় বলেছি।
কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরার সময় প্রশ্ন করা হয় সাক্ষী উপরোক্ত কথাগুলো আপনাকে বলেছিল কি-না। তদন্ত কর্মকর্তা জানান সাক্ষী এ কথাগুলো তাকে বলেননি।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, এটাই হল ঘটনার মূল বিবরন।  আর একথাই তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দীতে বলেননি। অথচ ট্রাইব্যুনালে এসে তিনি এটা বলেছেন। কাজেই তার একথা বিশ্বাযোগ্য নয়।
সাক্ষী আলতাব হোসেনও বলেছেন বিশাবালীকে নারকেল গাছের সাথে বেধে কোন রাজাকার গুলি করেছিল তার নাম তিনি জানেননা এবং আজ পর্যন্ত জানারও চেষ্টা করেননি।

অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, বিশাবালী হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের তিনজন সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার, মাহতাব উদ্দিন এবং আলতাফ হোসেন তিনজনের বাড়িই টেংরাখালি। আর বিশবালীর বাড়ি উমেদপুর। টেংরাখালি থেকে উমেদপুর থেকে টেংরাখালির দূরত্ব ২ কিলোমিটার। কাজেই দেখা যাচ্ছে বিশাবালীকে হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সব সাক্ষী অন্যগ্রামের।

বিশাবালী হত্যা বিষয়ে বিশাবালীর ভাই সুখরঞ্জন বালীকে আসামী পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আনা এবং ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে তাকে অপহরনের বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য উপস্থাপন করতে চাইলে একজন বিচারপতি আপত্তি করে বলেন এটিতো মামলার কোন এভিডেন্স নয়। পরে  অ্যাডভোকেট শাজহানা আর এ বিষয়ে আগাননি।
তবে তিনি বলেন, সুখরঞ্জন বালী ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী এবং তাকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আনার জন্য সমন চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল ট্রাইব্যুনালে।

এরপর বিশাবালী হত্যা বিষয়ে আদালতের কিছু প্রশ্নের উত্তর পরবতীতে দেয়া হবে মর্মে এ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত রেখে তিনি ১১ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।

১১নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি পেশ :
১১ নং অভিযোগ হল মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে লুটপাট এবং তার বড় ভাই মজিদ হাওলাদারকে নির্যাতন। মাহবুবুল আলম হাওলাদার হলেন মামলার বাদী এবং রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী।
মাহবুবুল আলম তার জবানবন্দীতে তাদের বাড়ি লুটের বিষয়ে বলেছেন, “আমি এর একটু পূর্বে যখন জানি যে, আমার বাড়ির নিকটস্থ হিন্দু পাড়ায় আক্রমণ চালিয়েছে তখন আমি দণি দিক দিয়ে হিন্দু পাড়ার নিকটস্থ রাস্তার দক্ষিনে একটু দূরে ঝোপের পাশে আরো অনেককে দেখে আমিও সেখানে স্থান নেই। যখনই গুলি করে আমিসহ ওখানে আরো যারা ছিল মাহতাব তালুকদার, লতিফ হাওলাদার  আরো অনেকে ওখান থেকে দৌড়ে অন্যত্র দূরে আড়ালে স্থান নেই। অনুমান ১২টায় এ হিন্দু পারা থেকে শান্তি কমিটির লোক ও কিছু রাজাকার আমার নিজ বাড়ির দিকে যেতে দেখি এবং আমার বাড়ির ভেতর গিয়ে আমার ভাই আব্দুল মজিদকে  চাপ সৃষ্টি করে। আমাকে ও আওয়ামী লীগ এর নেতাকর্মী মুক্তিযোদ্ধাদের তাদের সামনে  হাজির করতে বলে। আমার ভাই অস্বীকার করলে তার ওপর অত্যাচার চালানো হয়। এক পর্যায়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে আলমিরা হতে ১০ ভরি ¯¦র্ণালঙ্কার নগদ ২০ হাজার টাকা, আমার মা যেখানে থাকত সেই ঘর থেকে দুই ভরি স্বর্ণালঙ্কার, প্রায় তিন লাখ টাকার মালামাল  এবং ঘরের আসবাবপত্র ফার্নিচার ভেঙ্গে চুরে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে।”

অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন অসহায় বেকর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘর নির্মানের জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। মাওলানা সাঈদীর কাছ থেকে সেই আবেদনের জন্য সুপারিশ সংগ্রহ করেন। সেই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন “ বর্তমান জিয়ানগর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসিতেছি। আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের পর হইতে আর্থিক অসুবিধায় দিন যাপন করিতেছি। বর্তমানে আর্থিক একেবারে নি:সহায় হইয়া পড়িয়াছি। আমরা তিনভাই তখন একই ঘরে বসবাস করিতাম। ভাইরা আমার কারনে স্বাধীনতাবিরোধীরা ঘর পোড়াইয়া ফেলার আশঙ্কায়, অবস্থা বুঝতে পেরে ঘরখানা ভেঙ্গে আলাদাভাবে ঘর তোলে সেই থেকে তারা আলাদা থাকে। আমি সেই খালি পোতার উপর কোন প্রকার  ছাপড়া দিয়া ছেলে মেয়ে ও স্ত্রী পরিজন নিয়ে কোনমতে কষ্টে দিনযাপন করিতেছি। আজ পর্যন্ত ঘরখানা তৈরি করিতে পারানাই। বর্তমানে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায়। শেষ জীবনে একখানা ঘর নির্মান করিয়া পরিবার পরিজন নিয়া কালবৈশাখী ঝড়রে কবল থেকে সাময়িকভাবে ভালভাবে বাঁচতে চাই। তাই  একেবারে নিরূপায় হইয়া আপনার শরনাপন্ন হাইয়াছি। ”

অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, এই দরাখস্ত থেকে এটা প্রমানিত যে, ১৯৭১ সালে তাদের বাড়ি লুট হয়নি এবয় আসলে ১৯৭১ সালে তার নিজের কোন বাড়িই  ছিলনা।

অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়ি লুটের অভিযোগ বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে একজন সাক্ষী উল্লেখ করেছেন। তিনি হলেন তিন নং সাক্ষী নুরুল হক হাওলাদার।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে নুরুল হক হাওলাদার  তার জবানবন্দীতে বলেছেন, “টেংরাখালীর মাহবুব আলম হাওলাদার আমার ভগ্নিপতির আপন ভাগ্নে। আরেকদিকে তিনি আমার আপন ফুফাতো ভাইয়ের চাচাতো ভাই। সেই হিসাবেও তিনি আমারও ভাই। ফুফাতো ভাইয়ের ঘর ও মাহবুব আলম হাওলাদারের ঘর পাশাপাশি। ছোট বেলা থেকেই ঐ বাড়িতে আমাদের যাওয়া আসা ছিল। ৪০ বৎসরের মধ্যে আমি কোন দিন শুনি নাই যে, তাদের বাড়ি লুট হয়েছিল। আমি শুনি যে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে তিনি একটি মামলা করেছেন। মামলা হওয়ার পরে আমি তার বড় ভাই বাতেন হাওলাদারের নিকট জিজ্ঞাসা করি, ভাইডি মাহবুব তো সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে কেস করল। বাতেন হাওলাদার উত্তরে বলে, ওকথা বলো না, বললে আমার লজ্জা করে, আমাদের বাড়িতে লুট হলে তো তোমরাও জানতা। আমাদের বাড়ি তো দূরের কথা টেংরাখালী গ্রামে কখনও রাজাকার বা পাক বাহিনী আসে নাই। তৎপর আমি আমার ফুফাতো ভাই আব্দুস সালাম হাওলাদারকে জিজ্ঞাসা করলে সে উত্তর দিল, ১৯৭১ সালে মাহবুব হাওলাদারের বয়স ১০/১১ বৎসর ছিল এবং সে প্রাইমারী স্কুলে পড়তো। ও বড় কোন স্বার্থের জন্য সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে। আমাদের বাড়িতে কিংবা আশে পাশে কোন সাক্ষী পাবে না বিধায় দূরের সাক্ষী মেনেছে। সব মিলিয়ে ওর বাবার চার/পাঁচ বিঘা সম্পত্তি ছিল মাত্র। মাহবুবুল আলম হাওলাদারের ভাগে পড়ে এক/দেড় বিঘা সম্পত্তি। সে সম্পত্তি সে বিক্রি করে ফেলেছে এবং তার স্ত্রীর সম্পত্তিও বিক্রয় করে ফেলেছে। সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা করার পর সে এখন দোতলা বিল্ডিং তৈরি করেছে। একতলা শেষ হয়েছে। । ”
 শুনানী আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন