সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১২

ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী অপহরন/// আইনজীবীদের আদালত বর্জন


মেহেদী হাসান
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষের একজন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে  অপহরন করে নিয়ে গেছে ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) পুলিশের লোকজন। তার নাম সুখরঞ্জন বালী। তিনি ছিলেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের তালিকাভুক্ত  সাক্ষী ।  গতকাল তিনি এসেছিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে। সাক্ষ্য দিতে আসার সময় ট্রাইব্যুনালের প্রবেশ পথে তাকে  ডিবি পুলিশের লোকজন  ধরে নিয়ে  গেছে।

সাক্ষী অপহরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল বর্জন করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। আইনজীবীদের উপস্থিতি ছাড়াই বিকালে মাওলানা সাঈদীর মামলার যুক্তিতর্ক  গ্রহণ শুরু করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

মাওলানা সাঈদীপর আইনজীবীরা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন সাক্ষীকে   ধরে নিয়ে  পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় তাকে থাপ্পড় মেরেছে ডিবি পুলিশের লোকজন।


এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালে জানিয়েছেন  সাক্ষী অপহরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি।

যেভাবে সাক্ষী  ধরে নেয়া হল :

আইনজীবী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল   সকাল সোয়া দশটার দিকে  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী  মিজানুল ইসলাম এবং অন্য কয়েকজন আইনজীবী একটি গাড়িতে করে  ট্রাইব্যুনালে আসছিলেন। তাদের সাথেই ছিলেন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী। তাদের বহনকারী গাড়ি ট্রাইব্যুনালের  পাশে মাজার সংলগ্ন গেটে আসার পর   দায়িত্বরত পুলিশ  গাড়ি থামান। পুলিশ  সব আইনজীবীদের গাড়ি থেকে নামতে বলেন। অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী,  হাসানুল  বান্না সোহাগ সবাই নেমে আসেন। তাদেরকে হেটে ট্রাইব্যুনালে যেতে বলেন  দায়িত্বরত। অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম পক্ষাগাতগ্রস্ত হওয়ায় শুধুমাত্র তাকে গাড়িতে চড়ে ট্রাইব্যুনালের  সামনে যাওয়ার অনুমতি দেন পুলিশ। গাড়িতে থাকা সাক্ষীকে সুখরঞ্জন বালীকেও নেমে আসতে বলেন তারা । সাক্ষী নেমে আসেন।
সাক্ষীসহ অন্যান্য আইনজীবীরা গেটে দাড়িয়ে থাকেন। অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ ভেতরে যান অন্য আইনজীবী এবং সাক্ষীর জন্য গেট পাশ আনতে। (অন্যান্য দিন এ ধরনের কড়াকড়ি ব্যবস্থা ছিলনা। সাক্ষী এবং আইনজীবী  এবং সাংবাদিকরা  সরসারি ট্রাইব্যুনালের সামনে চলে যেতে পারতেন। শুধুমাত্র গতকালই বাইরের গেটে এভাবে কড়াকড়ি এবং চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়।)

এসময়  আসামী পক্ষের জুনিয়র আইনজীবী হাসানুল বান্না সোহাগ এবং সাক্ষী গেটে  দাড়িয়ে থাকেন। তখন চারজন সাদাপোশাকধারী লোক এসে  নিজেদের ডিবি পুলিশের লোক পরিচয় দেন। তারা সাক্ষীর নাম জিজ্ঞেস করেন। তারপর  সাক্ষীর দুপাশ থেকে দুজন করে পুলিশ হাত ধরে   রাস্তার দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। আইনজীবী এর  প্রতিবাদ করলে  ডিবি সদস্যরা জানান কিছু  পাশেই তাদের কন্ট্রোল রুমে  নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দেয়া হবে। এরপর সাক্ষীকে  টেনে      শিক্ষাভবনের দিককার  পুরনো হাইকোর্ট  গেট থেকে বের করে দোয়েল চত্বরের দিকে  ট্রাইব্যুনালের অপর গেটের দিকে নিয়ে যায়। এসময় ডিবি পুলিশের এক সদস্য মোবাইলে ফোন করলে ট্রাইব্যুনালের ভেতরের চত্বর থেকে একটি পুলিশের  পিকআপ ভ্যান  গেটে আসলে সাক্ষীকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া  হয়। প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী জানান,  তাকে গাড়িতে ওঠানোর সময় থাপ্পর দেয়া হয় এবং টেনে চিচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ধাক্কা মারা হয়।

ট্রাইব্যুনাল বর্জন :

সকাল সাড়ে দশটায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম    শুরু হলে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বিষয়টি অবহিত করেন। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন কোর্ট শেষে আমরা বিষয়টি দেখব। আসামী পক্ষের প্রধান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন সাক্ষীকে  এ অবস্থায় রেখে আমরা বিচার কাজে অংশ নিতে পারিনা। বিষয়টির বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেয়া হোক।
এরপর ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুকে নির্দেশ দেন   অপহরনের বিষয়টি বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে  এবং তাকে ছাড়িয়ে আনার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করতে। তিনি আদেশের সাথে সাথে  তাকে  কোর্ট থেকে বের হয়ে চেম্বারে গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজ  নেয়ার নির্দেশ দেন।
সাড়ে বারটার দিকে গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালে আসেন। তখন অন্য একটি মামলার শুনানী চলছিল।  আসামীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক সে শুনানী বন্ধ রেখে গোলাম আরিপ টিপুর কাছ থেকে  সাক্ষী বিষয়ক পরিস্থিত  শোনার আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন চলমান আবেদনের শুনানী শেষ হোক। এরপর   একটা বাজার সামান্য আগে শুনানী শেষ হলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যনালের সামনে দাড়িয়ে বলেন, আমি  আইনশৃঙখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে  কথা বলেছি। তারা বলেছেন, আইনের কোন লঙ্ঘন তারা করেননি।  ট্রাইব্যুনালের প্রবেশ পথে তারা  তাদের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন একজনকে  ধরে  নিয়ে যাবার বিষয়ে আপনাকে খোঁজ নিতে বলেছিলাম তার কি হল। তার কি হল?
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি আজ সেখানে। 
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, একটা হতে পারে কারা  এ কাজ যারা করেছে তারা চিনতে পারেনি অথবা ঘটনা ঘটেনি।
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, আদৌ  এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।
বিচারপতি নিজামুল হক আবারো বলেন, ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে কেউ অপহরন হয়েছে কি-না?
গোলাম আরিফ টিপু বলেন কেউ অপহরন হয়নি।
এর সাথে সাথে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা  তীব্র প্রতিবাদ জানান। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার কয়েকজন আইনজীবী এখানে এসে ঘটনা বলল প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সেটা মিথ্যা হয়ে গেল? মিজান সাহেব কি তাহলে মিথ্যা বলেছেন?  তার সাথে থাকা আমাদের অন্যান্য আইনজীবীরা মিথ্যা বলেছেন?  আর চিফ প্রসিকিউটর পুলিশের কথা শুনে বলে দিলেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি?
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, দুইটার পর আমরা বিষয়টি দেখব। এর মধ্যে আমরাও একটু খোঁজ খবর  নিয়ে দেখি কি হয়েছে। ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক অনুরোধ করেন বিষয়টি সুরাহা করে তারপর কোর্ট বিরতিতে যাক।

এরই মধ্যে  সাক্ষীকে ধরে নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত মোবাইলে তোলা ছবি  প্রিন্ট করে ট্রাইব্যুনাল কক্ষে প্রবেশ করেন  আসামী পক্ষের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির।   আসামী পক্ষ ট্রাইব্যুনালের সামনে সে ছবি জমা দেন। তিনজন বিচারপতি তা দেখেন। এরপরও তারা দুপুরের বিরুতিতে যাবার প্রস্তুতি নেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মিজানুল ইসলাম কিছু  কথা বলেন। এসময় বিচারপতিগন চেয়ার থেকে উঠে যান । চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন,  এখন আর শোনা হবেনা। মিজানুল ইসলাম তীব্র ক্ষোভের সাথে বলেন, আমাদের কথাও শোনাও হবেনা? তাহলে আমরা এ  কোর্টে আসব কিভাবে? আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয় কোর্টরুমে। মিজানুল ইসলাম উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করতে থাকেন। এরই মধ্যে কোর্টরুম ত্যাগ করে চলে যান বিচারপতিগন।

সকালে শুনানী চলাকালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডন্টে  সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদূদ আহমদ, সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি  জয়নুল আবেদনী ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। ব্যারিস্টার মওদূদ আহমদ এবং খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানীতে অংশগ্রহণ করেন।
ট্রাইব্যুনাল বর্জনের পর খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জানিনা  হতভাগ্য সাক্ষীর ভাগ্যে কি আছে। বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে এখন লোকজন গুম হচ্ছে। আমরা জানিনা এ সাক্ষীকে আর খুঁজে পাওয়া যায় কি-না। কারণ সরকার পক্ষ তাকে অপহরনের বিষয়টি অস্বীকার করছে।  কোর্টে আসার পথে সাক্ষী অপরহন করা হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?

ঢ়ধৎঃ২ ফি রিঃহবংং ধনফঁপঃবফ, ৎবঢ়ড়ৎঃ, ৫/১১/২০১২
সবযবফু


রাষ্ট্রপক্ষের   অভিযোগ :
সাক্ষী অপহরন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে এবং ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাংবাদিকদের কাছে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সুখরঞ্জন বালী আসামী পক্ষের কোন সাক্ষী নয়। আজ সাক্ষীর জন্য নির্ধারিত কোন তারিখও ছিলনা।  সে তাদের কাছে গেল কি করে সেটাই আমাদের প্রশ্ন। সৈয়দ হায়দার আলী অভিযোগ করে বলেন, ট্রাইব্যুনাল  বর্জনের অজুহাত হিসেবে এ ঘটনার অবতারনা করা হয়েছে।

কে এই সুখরঞ্জন বালী : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ  ১৯৭১ সালের ২ জুন পিরোজপুরের উমেদপুরে হিন্দুপাড়ায়  বিশাবালী নামে একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে নারকেল গাছে সাথে বেঁেধ রাজাকাররা হত্যা করে। মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই বিশাবালীল ভাই হলেন সুখরঞ্জন বালী।   রাষ্ট্রপক্ষ তাকে সাক্ষী মেনেছিল। তবে  রাষ্ট্রপক্ষ তাকে হাজির করতে পারেনি।

বিশাবালীকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ গত   মার্চ  মাসে ট্রাইব্যুনালে জানিয়েছিল চার মাস আগে  নিজ বাড়ি থেকে বের হবার পর  সুখরঞ্জনবালী নিখোঁজ হয়েছে।

গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন পেশ করা হয়। আবেদনে বলা হয়  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  ৪৬ জন  সাক্ষীকে  হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই  ৪৬ জন সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে  জবানবন্দী  দিয়েছেন তা  তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক।  এই ৪৬ জন সাক্ষীর তালিকায় সুখরঞ্জন বালীর নামও ছিলেন।


সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যেসব কারণ উল্লেখ করেছিল তার মধ্যে রয়েছে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সন্ত্রাসী অস্ত্রধারীদের হুমকির কারনে  অনেকে  আত্মগোপন করেছে, কেউ বাড়ি থেকে নিখোঁজ, কেউ গোপনে ভারতে  পালিয়ে গেছে, কেউ অসুস্থ, কারো কারো স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে।
৪৬ জনের সেই তালিকা থেকে ১৫ জনের জবানবন্দী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধেথ  সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে ২৯ মার্চ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সেই ১৫ জনের মধ্যেও ছিলেন সুখরঞ্জন বালী।
রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষী সম্পর্কে বলেছিল সে নিখোঁজ সেই সুখরঞ্জন বালী গতকাল  এসেছিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে।
রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সাক্ষী হাজির করতে যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছিল তাকে মিথ্যা এবং প্রতারনা বলে অভিযোগ করেছিল আসামী পক্ষ। আসামী পক্ষ অভিযোগ করে বলেছিল সাক্ষীরা রাষ্ট্রপক্ষের শেখানো মতে মিথ্যা বলতে রাজি নয় বিধায় তাদের হাজির করা হচ্ছেনা।

কড়া নিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালে : গতকাল ট্রাইব্যুনালে ছিল কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনি যা আগে কখনো দেখা যায়নি। সাধারনত ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে পাশ নিয়ে প্রতিদিন গেট পাশ নিয়ে সাংবাদিক আইনজীবী এবঙ আসামীর আত্মীয়স্বজনকে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু গতকাল একদন বাইরের গেটে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা কর্র্মী প্রত্যেকের আইডি কার্ড চেক করে ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা করেন। মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করে বলেন, আজ কি কারনে এরকম ব্যবস্থা করা হল তা আমরা জানিনা এবং  এরকম যে ব্যবস্থা করা হবে তাও আমাদের জানানো হয়নি। জানালে আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পারতাম। তিনি বলেন নিরাপত্তাকমীর দায়িত্ব হল আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। কিন্তু তারা যদি আমাদের হয়রানি করে, আইনজীবীদের  গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় এবং সাক্ষীকে ধরে নিয়ে যায় তাহলে সে নিরাপত্তা কর্মী কিসের জন্য?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ গাড়ি চেক করতেই পারে,   আগতদের পরিচয় জানতে চাইতে পারে। কিন্তু তারা আমাদের আইনজীবীদের সাথে আজ যা ব্যবহার করছে তা কোনমতেই  গ্রহণযোগ্য নয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দুজন আইনজীবীকে এখনো পুলিশ বাইরে আটকে রেখেছে। তাদেরকে ঢুকতে দিচ্ছেনা। বলা হচ্ছে  পাশ ছাড়া কারো ভেতরে যাবার অনুমতি নেই।  কিন্তু বাইরে তো  গেট পাশ সংগ্রহের কোন ব্যবস্থাই নেই।   ভেতরেই যদি প্রবেশ করতে না দেয়া হয় তাহলে সে পাশ সংগ্রহ করবে কিভাবে? তিনি বলেন আমাদের আইনজীবীদের সাথে একরকম এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সাথে আরেক রকম ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ অভিযোগের পর ট্রাইব্যুনাল রেজিস্ট্রার নাসরি উদ্দিনকে ডেকে পাঠান এবং এ বিষয়ে জানতে চান।
নতুন নিরাপত্তা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন আমরাই এ নির্দেশ দিয়েছি। আমরা ট্রাইব্যূনালকে হাট বানাতে দিতে চাইনা। আমরা দেখতে  পাই প্রতিদিন গাউন পরে অনেক লোক এখানে আসেন যারা  কোন পক্ষের আইনজীবী নন। তারা কিভাবে পাশ নিয়ে এখানে আসেন? আমরা আগেই বলেছি আসামীর আইনজীবী ছাড়া শেখার জন্য কেউ কেউ আসবেন। কিন্তু তার একটা মাত্রা তো থাকতে হবে। আমরা আপনাদের জন্য একশ আইনজীবী আসতে দিতে পারিনা।
তাজুল ইসলাম  গতকালের ঘটনার জন্য ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন   কারণ ট্রাইব্যুনাল বলেছেন তাদের নির্দেশেই গতকালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে।

সুখরঞ্জন বালী  কার সাক্ষী? সুখরঞ্জন বালী রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন।  তিনি এবং আরেক সাক্ষী গণেশচন্দ্র সাহাকে আসামী পক্ষের সাক্ষী হিসেবে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করেছিলেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। এ বিষয়ে আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন আপনারা যাকে খুসী সাক্ষী হিসেবে আনতে পারেন তবে সমন জারি করা  হবেনা।  এরপর গত ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী  গণেশচন্দ্রকে হাজির করে আসামী পক্ষ  তিনি মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেন। সুখরঞ্জন বালী বিষয়ে গতকাল আদেশের সময় ট্রাইব্যুনাল  তাকে আসামী পক্ষের সাক্ষী উল্লেখ না করেননি। মিজানুল ইসলাম বলেন তিনি এখন  আমাদের  মানে আসামী পক্ষের সাক্ষী। তাকে সে হিসেবে উল্লেখ করা হোক। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল  তা গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মিজানুল ইসলাম বলেন তিনি আসামী পক্ষের সাক্ষী।







রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১২

তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষ//গোলাম আযমের পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু রোববার থেকে


মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষ হয়েছে আজ । আগামী রোববার ১১ নভেম্বর থেকে আসামী পক্ষের সাক্ষী হাজিরের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।

আজ  বেলা একটার মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানের জেরা শেষ করার জন্য ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ ছিল আসামী পক্ষের আইনজীবীর প্রতি। তবে একটার মধ্যে জেরা শেষ না হওয়ায় বিকালের সেশন   পর্যন্ত সময় দেয়া হয় এবং আজকের  মধ্যে জেরা শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়।  প্রয়োজনে কোর্টের নির্ধারিত সময় সাড়ে চারটা  পার  হয়ে গেলে  প্রয়োজনে সময় বাড়িয়ে দেয়ার কথাও বলেন কোর্ট। সে অনুযায়ী  গতকাল সোয়া পাঁচটায়  শেষ হয় জেরা।

আজ  তদন্ত কর্মকর্তার জেরার সময়   বেশ কয়েকবার উভয় পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে উত্তেজনা বিতর্ক দেখা দেয়।

তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির প্রমুখ।

জেরা :
জেরা : রাজাকার বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা আছে?
উত্তর : নাই।
প্রশ্ন : পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী বাহিনীর কোন সদস্যের নিয়োগ, নিয়ন্ত্রন, আদেশ বা শাস্তি দানের কোন ক্ষমতা অধ্যাপক গোলাম আযমের ছিল এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট পেয়েছেন?
উত্তর : সরাসরি ওনার লিখিত কোন  ডকুমেন্ট পাইনি। তবে জামায়াতের প্রধান হিসেবে এসব বাহিনীর ওপর  তার নিয়ন্ত্রন ছিল। আল বদর বাহিনীর ওপর তার নিয়ন্ত্রন ছিল সে কাগজ আমি পেয়েছি।
প্রশ্ন : সহযোগী বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রন, আদেশ, নিয়োগ বা সদস্যদের শস্তিপ্রদানের  বিষয়ে অধ্যাপক গোলাম আযমকে  ক্ষমতা দিয়ে  পাকিস্তান আর্মি কোন আদেশ জারি করেছে এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট পেয়েছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২ আগস্টের আগে পর্যন্ত রাজাকার বাহিনী  পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রন ছিল এ মর্মে তথ্য প্রমান আপনি তদন্তকালে পেয়েছেন।
উত্তর : পাইনি।
প্রশ্ন : আপনি তদন্তকালে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর থেকে এ মর্মে সংগৃহীত একটি ডকুমেন্ট দাখিল করেছেন। নেত্রকোনা মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ের ডকুমেন্ট এটি।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনি  পুলিশের যেসব পাক্ষিক রিপোর্ট, সরকারি গোপন নথিপত্র, পুলিশ অ্যাবস্ট্রাক্ট রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন তার একটিতেও শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস এর কোন সদস্যের নিয়ন্ত্রন, নিয়োগ, শাস্তি প্রদানের বা আদেশ প্রদানের কোন  ক্ষমতা অধ্যাপক গোলাম আযমকে দেয়া হয়েছে এ মর্মে কোন তথ্য নেই।
উত্তর :  এসব কাগজপত্রে যা আছে তার বাইরে আমার কোন বক্তব্য নেই।
প্রশ্ন : আপনি যেসব পত্রিকার  খবরের কপি দাখিল করেছেন তার সত্যতা সম্পর্কে আপনি কোন তদন্ত করেননি।
উত্তর : করিনি।
প্রশ্ন : আপনি যেসব দলিলপত্র দাখিল করেছেন তাতে এমন কোন তথ্য নেই যে, অধ্যাপক গোলাম আযমের বিবৃতি পড়ে বা বক্তব্য শুনে কেউ কোন অপরাধ করেছে।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার দাখিলকৃত দলিলপত্র থেকে  এ মর্মে অন্তত একটি প্রমান দেখান ।
উত্তর : (এ প্রশ্নের উত্তর দিতে দীর্ঘ সময় পার হয়। উভয়পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে বিতর্ক চলে। পরে তিনি নিম্নোক্ত জবাব দেন) এতগুলো ডকুমেন্ট পর্যালোচনা না করে এ মুহূর্তে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে যেসব অপরাধ হয়েছে সেসব অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি গোলাম আযমের সাথে পরামর্শ বা যোগাযোগ করে বা তার নির্দেশেনা অনুসারে কোন অপরাধ  করেছে এ  মর্মে কোন দালিলিক প্রমান দাখিল করেছেন?
উত্তর : একটি ক্ষেত্রে সাক্ষ্য প্রমান দাখিল করেছি।
এ উত্তর দেয়ার পর অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি প্রশ্ন করেছি দালিলিক প্রমান আছে কি-না সে বিষয়ে। ট্রাইব্যুনাল বলেন, তিনি যা উত্তর দিয়েছেন তাতে যা অর্থ হয় তা হবে।
প্রশ্ন : দালিলিক প্রমান কথাটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আপনি ভিন্ন উত্তর দিলেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ৩১ ঘন্টার যে সিডি, ডিভিডি ভিডিও  আপনি  দাখিল করেছেন তা তদন্ত  ছাড়াই দাখিল করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : উক্ত সিডি, ডিভিডিতে  বর্নিত প্রফেসর শহীদুর রহমান, মিসেস শহীদুর রহমান, মোহন মুন্সি, গোলাম মোস্তফার ভাই মোশাররফ হোসেন মানিক, ডা. এস এ হাসান, জাতীয় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাংবাদিক মাহবুবু কামাল, শহীদ মুনির চৌধুরীর ভাই শমশের চৌধুরী, পান্না কায়সার, অধ্যাপক ফরিদা খান, শহীদ গিয়াসউদ্দিন আহমেদের বোন, অধ্যাপক  এনামুল হক, এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার,  শাহরিয়ার কবির,  মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, আব্দুল বারি, ডলি চৌধুরী, জাহিদ রেজা নূর, ডা. ফাইজুল হক, জয়নাল আবেদীন, মাহমুদুর রহমান, ড. আনিসুজ্জামান, ড. কামাল হোসেন. ড. আবুল বারাকাত কি জীবিত?
উত্তর : আমার সিডিতে এ নামগুলো নেই।
প্রশ্ন : এসব সিডি ডিভিডিতে এমন কোন তথ্য আছে কি-না  যাতে দেখা যায় আল বদর বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয়েছিল?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী গঠিত হয় এমন কোন তথ্য আছে  এসব সিডি ডিভিডিতে?
উত্তর : স্মরন নেই।

ঢ়ধৎঃ২ রড় লবৎধ বহফ, ৎবঢ়ড়ৎঃ, ৪/১১/২০১২
সবযবফু


প্রশ্ন : অপরাধীকে ক্ষমা করার প্রেসিডেন্টের  ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এমন কোন তথ্য আছে  এস সিডি ডিভিডিতে?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : অধ্যাপক মাজহারুল ইসলামকে আহবায়ক করে গঠিত ইতিহাস প্রণয়ন কমিটির রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন?
উত্তর : আমার রেকর্ডে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
প্রশ্ন : গোলাম আযম এবং টিক্কা খানের সাথে ৪ এপ্রিলের মিটিংয়ে কি আলোচনা হয়েছিল এ বিষয়ে আপনার কাছে কোন তথ্য নেই।
উত্তর : ৫ এপ্রিল দৈনিক আজাদ, ৬ এপ্রিল দৈনিক পূর্বদেশ, আজাদ এবং দৈনিক পাকিস্তানে এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।  প্রকাশিত খবরের তথ্য অনুযায়ী বৈঠকে নাগরিক শান্তি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়।  দুষ্কৃতকারী, রাষ্ট্রদ্রোহী সমাজ বিরোধীদের আশ্রয় না দেয়া এবং সামরিক আইন প্রশাসকের নিকট তথ্য পৌছে দেয়ার কথা আছে। দাখিলকৃত তথ্যে এটা খুজে পেয়েছি।
প্রশ্ন : ওইসব রিপোর্টে শান্তি কমিটি কথাটা কি আছে?
উত্তর : তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিটি পত্রিকার রিপোর্ট পড়তে থাকেন। প্রথমে ৫ এপ্রিলের রিপোর্ট পড়ে বলেন, নাগরিক কমিটি কথা লেখা আছে।  মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি জানতে চেয়েছি শান্তি কমিটি কথাটা আছে কি-না। এরপর তিনি আবার অন্য পত্রিকার রিপোর্ট পড়া শুরু করেন। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ৬ তারিখের আজাদে কি আছে বলেন। রিপোর্ট পড়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন শান্তি কথাটি নেই। এরপর বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, পূর্বদেশ এবং  ইত্তেফাকের রিপোর্টে কি আছে? তদন্ত কর্মকর্তা রিপোর্ট পড়ে বলেন  শান্তি কথাটি নেই।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আগের প্রশ্নের জবাবে যেখানে নাগরিক শান্তি কমিটি কথাটি লেখা হয়েছে সেখান থেকে শান্তি  শব্দটি বাদ দেয়া হবে। তিনি কম্পোজারকে নির্দেশ দেন শান্তি শব্দটি মুছে ফেলার জন্য। মিজানুল ইসলাম তীব্র আপত্তি করে বলেন, আমিতো পরের প্রশ্নটি করেছি তার আগের উত্তরকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য। তিনি আগের উত্তরে সঠিক বলেননি সেটা প্রমানের জন্য। এখন আগের উত্তর থেকে শান্তি শব্দটি বাদ দিলে তো আমার উদ্দেশ্য ব্যর্থ   হবে।
বিচারপতি  নিজামুল হক বলেন, সাক্ষী যতক্ষন পর্যন্ত ডকে থাকেন এবং জবানবন্দীতে স্বাক্ষর না করেন ততক্ষন পর্যন্ত তিনি তার উত্তর সংশোধন করতে পারেন। সে অধিকার  তার আছে। ট্রাইব্যুনালও এটি পারে। তিনি বলেন, আগের উত্তর থেকে শান্তি শব্দটি মুছে দেয়া হবে। কিন্তু ততক্ষনেও কম্পোজার শান্তি শব্দটি না মোছায় তিনি তাকে কিছুটা ধমকের সুরে  মুছে ফেলতে নির্দেশ দেন।
এসময় অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম দাড়িয়ে বলেন, আগের অনেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন  খুঁজে পাচ্ছিনা, স্মরন নেই । সেসব  প্রশ্নের উত্তর  আমরা যদি ডকুমেন্ট   খুঁজে দেখতে  বলি  তাহলে কি সেসব প্রশ্নের উত্তর সংশোধন করে  আছে  মর্মে লেখা  হবে? উনি সেযব প্রশ্নের উত্তর গোপন করছেন সেটাতো আপনারা নিচ্ছেনননা। খুঁজে উত্তর দিতে বলছেননা।  উত্তর চ্যালেঞ্জ করার এভাবে যদি আগের   প্রশ্নের উত্তর সংশোধন করা হয় তাহলে আমারা ক্ষতিগ্রস্ত হব। আসামী ন্যায় বিচার থেকে  বঞ্চিত হবে।
জবাবে বিচারপতি নিজামুল  হক বলেন, আমরা যা করছি তা আইন অনুযায়ী করছি এবং আমাদের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। আমরা সরি আপনার  প্রস্তাব গ্রহণ করা হলনা।   সামনে আগান।
প্রশ্ন : আপনি আপনার সংগৃহীত দলিলের কতটি নিয়ে এসেছেন আর কতটি রেখে এসেছেন?
উত্তর : আমি সংগৃহীত সব দলিলই দাখিল করেছি এবং এখানে সবই নিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন : যেসব প্রশ্নের উত্তরে খুঁজে পাচ্ছিনা বলেছেন সে দলিলপত্রগুলো কোথায় আছে?
উত্তর : আমার ডকুমেন্টের মধ্যেই আছে। এর বাইরে কিছু নেই।
প্রশ্ন : অধ্যাপক গোলাম আযম রেডিওতে যে ভাষন দিয়েছিলেন তার অডিও  কপি খুঁজে পেয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন সামরিক সরকার যে প্রেসরিলিজগুলো দিয়েছিল তার অধিকাংশই ছিল জনগনের মুক্তির  আকাঙ্খাকে দাবিয়ে রাখার জন্য প্রতারনামূলক কৌশল।
উত্তর : এটা বিশ্লেষনের ব্যাপার।
প্রশ্ন :  পূর্ব পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষ যেসব প্রেসরিলিজ দিয়েছিল তার কতটি আপনি তদন্ত করেছেন?
উত্তর : সঠিক সংখ্যা বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : কতটি  প্রেসরিলিজ  জব্দ করেছেন?
উত্তর : একটিও, না কারণ পাইনি।
প্রশ্ন :  ৬ এপ্রিল গোলাম আযম টিক্কা খানের সাথে দেখা করেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : মিত্র বাহিনী ৪ ডিসেম্বর ঢাকা আক্রমন করে এটি ঠিকতো?
উত্তর : সঠিক বলতে পারবনা।
 জেরার এ পর্যায়ে  অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের জবানবন্দীর কণ্ট্রাডিকশ নিয়ে  তীব্র বিতর্ক দেখা দেয় উভয় পক্ষের আইনজীবী এবং ট্রাইব্যুনালের মধ্যে। মুনসাসির মামুনের জবানবন্দী গ্রহণ করেন তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম। মিজানুল ইসলাম বলেন, মুনতাসির মামুন কোর্টে এসে কিছু কথা বলেছেন যা তদন্ত কর্মকর্তার  কাছে প্রদত্ত  জবানবন্দীতে নেই আবার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীতে কিছু কথা আছে যা তিনি কোর্টের জবানবন্দীতে বলেননি। এ বৈষাদৃশ্য তুলে ধরে মিজানুল ইসলাম  প্রশ্ন করলে তদন্ত কর্মকর্তা জবাব দেন  এ বিষয়ে আমার রেকর্ডে নেই।
এ উত্তর লিপিবদ্ধ নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা  দেয়। মিজানুল ইসলাম এবং তাজুল ইসলাম বলেন, আমার রেকর্ডে নেই এর মানে হল তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাক্ষী   ওইসব কথা বলেননি সে কারনে তার রেকর্ডে নেই। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, জবানবন্দী  নিয়েছেন মনোয়ারা বেগম। কাজেই এ বিষয়টি তার রেকর্ডে নেই এটা বলাই তো স্বাভাবিক।
শেষে মিজানুল ইসলাম নিবেদন করেন মনোয়ারা বেগমকে হাজির করার জন্য। তবে ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন  গ্রহণ না করে উত্তরটি এমনভাবে লেখেন যাতে দুই পক্ষই সন্তুষ্ট হয়।
প্রশ্ন : যেহেতু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ  প্রশাসনের ব্যক্তি কর্তৃক অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সেহেতু আপনি  একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য আপনার ইচ্ছামত সাক্ষ্য সংগ্রহ করে অসত্য প্রতিবেদন দিয়েছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে গোলাম আযমের ভূমিকা ছিল শুধুমাত্র রাজনৈতিক। তিনি মনে করতেন পূর্ব পাকিস্তান জনগনের ওপর যে শোষন নিপীড়ন হয়েছে তার সমাধান অখন্ড পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যেই সম্ভব ছিল।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : তিনি এবং তার দলের দর্শন ছিল ভারত তার অধিপত্য  নীতি বাস্তবায়নের জন্য জগনের আন্দোলনকে ভিন্নভাবে চিত্রায়নের চেষ্ট করছে।
উত্তর সত্য নয়।

রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর, সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি   প্রতিবেদন দাখিলের জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে আরো এক সপ্তাহ সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল মাওলানা আব্দুস সোবহানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আরো ৩ সাক্ষীকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজিরের জন্য আবেদন


রাষ্ট্রপক্ষের আরো  তিনজন  সাক্ষীকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করা হয়েছে আসামী পক্ষ থেকে। এরা হলেন  সুমতী রানী মন্ডল, সমর মিস্ত্রী এবং আশিষ কুমার মন্ডল।  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ  এ আবেদন পেশ করা হয়।

তদন্ত কর্র্মকর্তার কাছে প্রদত্ত যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে  আদালত মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করেছেন উক্ত তিনজনই সেই ১৫ জনের অন্তর্ভুক্ত।

আবেদন বিষয়ে আজ  শুনানী অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।
এর রাগে রাষ্ট্রপক্ষের  দুজন সাক্ষীকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করা হয়েছিল। তারা হলেন গণেশ চন্দ্র সাহা এবং সুখরঞ্জন বালী। এরাও ১৫ জনের  জনের অন্তর্ভুক্ত।

ট্রাইব্যুনাল এ আবেদন বিষয়ে আদেশে বলেছিলেন আসামী পক্ষ যাকে খুসী সাক্ষী হিসেবে হাজির করতে পারে কিন্তু কোর্ট থেকে  এ বিষয়ে কোন সমন জারি করা হবেনা।  এদের মধ্যে শহীদ ভাগীরথী সাহার ছেলে গণেশ চন্দ্র সাহা গত ২৩ অক্টোবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে মাওলানা সাঈদীর  পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

এদিকে আগামীকাল সোমবার   মাওলানা সাঈদীর মামলায় আর্গুমেন্ট বা যুক্তিতর্ক শুরু হবার জন্য নির্ধারিত রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের  জন্য প্রথমে আর্গুমেন্ট পেশ করার কথা রয়েছে।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  গতকাল এ বিষয়ে  একটি আবেদন করা হয়েছে । সেটি হল আসামী পক্ষকে প্রথমে আর্গুমেন্ট পেশ করার সুযোগ দেয়া হোক। 

গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন পেশ করা হয়। আবেদনে বলা হয়  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  ৪৬ জন  সাক্ষীকে  হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই  ৪৬ জন সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে  জবানবন্দী  দিয়েছেন তা  তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক।

আবেদনে ৪৬ জন সাক্ষীর  মধ্যে ১৯ জনকে ঘটনার সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ১৯ জন সাক্ষীর মধ্য থেকে ১৫ জনের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে ২৯ মার্চ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দরখাস্তে ১৯ জন ঘটনার সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে বিভিন্ন কারণ  উল্লেখ করা হয়েছিল।  এদের মধ্যে পাঁচজনকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে বলা হয়েছে তারা নিখোঁজ।  ১৪জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। মাওলানা সাঈদীর পক্ষের অস্ত্রধারীদের হুমকির কারনে  তারা আত্মগোপন করেছে।  নিখেঁাঁজ  পাঁচ জনের তিনজন গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে। এছাড়া একজনের স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে এবং বয়স ও অসুস্থতাজনিত কারনে ভ্রমনে মৃত্যুর ঝুকি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আশিষ কুমার মন্ডল, সুমীত রানী মন্ডল এবং সমর মিস্ত্রী  সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের দরখাস্তে বলা হয়েছিল  তারা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নিখোঁজ। সম্ভবত তারা গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে। সেই সাক্ষীদেরই মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজিরের জন্য আবেদন করা হল আসামী পক্ষ থেকে।

বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১২

শান্তি কমিটি আলবদর আল শামসকে সহযোগী বাহিনী গণ্য করে জারিকৃত কোন দলিল পাননি তদন্ত কর্মকর্তা//জেরা শেষ করা নিয়ে বিতর্ক

মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় জেরার সময় তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী, শান্তি কমিটি, আলবদর, আল শামস প্রভৃতি বাহনীকে  সহযোগী বাহিনী গণ্য করে জারি করা কোন  প্রমান্য  দলিল তিনি তার তদন্তকালে পাননি ।

আজ জেরার সময় তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হয় “জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, পিডিপি, নেজামে ইসলাম, শান্তি কমিটি, আলবদর, আল শামস, বাহিনীকে অক্সিলিয়ারি ফোর্স  (সহযোগী বাহিনী)  হিসেবে  গণ্য করে পাকিস্তান আর্মির ইস্টার্ন কমান্ড বা সেন্ট্রাল কমান্ড কোন প্রজ্ঞাপন  জারি করেছে এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট আপনি তদন্তকালে সংগ্রহ করতে পারেননি।”

জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “সরাসরি কোন প্রামান্য দলিল আমি আমার তদন্তকালে পাইনি। তবে  উক্ত  সংগঠনগুলো অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে কাজ করেছে সে প্রমান আমি তদন্তকালে পেয়েছি।”

তদন্ত কমকর্তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন এবং তার উত্তর নিয়ে গতকাল ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘ বিতর্ক চলে। এছাড়া  জেরা শেষ করার জন্য  ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সময় বেঁধে দেয়া নিয়েও দর্ঘি বিতর্ক চলে। গতকাল ৪টা ৫০ মিনিটে শেষ হয় বিচার কার্যক্রম।
তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন  অধ্যাপক গোলা আযমের   পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জেরার সময় মিজানুল ইসলাম ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আর্মির আত্মসর্পনের সময় স্বাক্ষরিত দলিল নিয়ে প্রশ্ন করলে তা নিয়েও দীর্ঘ সময় আলোচনা, বিতর্ক চলে। মিজানুল ইসলাম বলেন,  আত্মসর্পনের সময় জেনারেল নিয়াজি কর্তৃক স্বাক্ষরিত ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অব সারেন্ডার’ ডকুমেন্ট ছাড়াও  আরো কিছূ  দলিল সম্পাদন হয় এবং তাতে তিনি স্বাক্ষর করেন। সেগুলো তদন্ত কর্মকর্তা জেনেও গোপন করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা  তা অস্বীকার করেন। মিজানুল ইসলাম সে দলিল থেকে  ট্রাইব্যুনালে যে তালিকা উল্লেখ করেন সেখানে  পাকিস্তান বাহিনীর নিয়মিত, প্যারা, এবং বিভিন্ন সহযোগী বাহিনীর ২৬ হাজার ২৫০ জন সদস্যের পরিসংখ্যান দেয়া আছে। সে তালিকায় মুজাহিদ বাহিনী, রাজাকার বাহিনীর নাম আছে। কিন্তু আল বদর, আল শামস, শান্তি কমিটির নাম নেই সহযোগী বাহিনী হিসেবে।

রাতে  মিজানুল ইসলামের কাছে তার দাবিকৃত   ডকুমেন্টের নাম জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দলিলটির নাম হল ‘ট্রুপস ইন ঢাকা এট দি টাইম অব সারেন্ডার : রেগুলোর এন্ড প্যারা।

জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট  তাজুল ইসলাম, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন।
বিচার কার্যক্রম করেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক।

জেরা :

প্রশ্ন : আর্মি এ্যাক্ট ১৯৫২, এয়ারফোর্স এ্যাক্ট ১৯৫৩ ও নেভি অর্ডিন্যান্স ১৯৬১তে অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে কোন  বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল কিনা বা অন্য কোন বাহিনীকে মেইনন্টেইন করা হতো কিনা?
উত্তর : আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর  জেরারেল নিয়াজী যখন আত্মসমর্পন করেন তার সঙ্গে অক্সিলিয়ারি ফোর্সও আত্মসমর্পন করেছিল
উত্তর : অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে প্যারামিলিটারী ও সিভিল আর্মড ফোর্সেস ছিল।
প্রশ্ন : পাকিস্তান সেনাাহিনীর ইষ্টার্ণ কমান্ডার জেরারেল নিয়াজী যখন আত্মসমর্পন করেন তখন তার কোন বাহিনীর  কত  সদস্য ছিল এটার কোন তালিকা ছিল কিনা জানা আছে?
উত্তর : রেকর্ডে দেখা যাচ্ছেনা। আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : ইনস্ট্রুমেন্ট অব সারেন্ডার-এ স্বার  করা ছাড়া অন্য কোন দলিলে জেনারেল নিযাজী  স্বাক্ষর  করেছেন?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন জেনারেল নিয়াজী ও জেনারেল অরোরা কোন দলিলে সার  করেছেন এটা জানতে সংশিষ্ট কর্তৃপরে  সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কিনা?
উত্তর : যোগাযোগ করিনি। 
প্রশ্ন : ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজি যখন আত্মসমর্পন করেন তখন যেসব দলিল সম্পাদন করেছেন তার মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ছিল যা আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করেছেন।  সেগুলো হল
হোডকোয়ার্টার্স ইস্টার্ন কমান্ড, এ পর্যন্ত বলার পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপন   করে বলা হয় এটি আসামী পক্ষ প্রদর্শন করেননি ট্রাইব্যুনালে। তাছাড়া উনি ‘যেসব দলিল’ বলে সবকিছু এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছেন বলে আপত্তি করা হয় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে।

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, এটি আপনি কি আমাদের  কাছে জমা দিয়েছেন?  মিজানুল ইসলাম বলেন দিয়েছি। তখন ট্রাইব্যূনালের নির্দেশে  তিনটি ভলিউম আলমারি থেকে বের করা হয়। সেগুলো দেখে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি যে  দলিলের কথা বলছেন তাতো আমাদের সামনে নেই। কাজেই  ডকুমেন্ট না থাকলে সে বিষয়ে সাজেশন দেবেন কিভাবে?
জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, আত্মসমর্পনের সময় এক পৃষ্ঠার একটি ডকুমেন্ট স্বাক্ষরিত হয় তাতে পাকিস্তান আর্মির সৈন্য সংখ্যা, কি কি সম্পদন ছিল তার  উল্লেখ ছিল। আমি সাজেশন দিচ্ছি ইনস্ট্রুমেন্ট অব ডকুমেন্ট এর সাথে আরো কিছু ডকুমেন্ট ছিল সেগুলো  তদন্ত কর্মকর্তা গোপন করছেন। তিনি যদি তা অস্বীকার করেন তাহলে তা প্রমানের দায়িত্ব আমার। কিন্তু আমি কেন সাজেশন দিতে পারবনা? আইনে এ বিষয়ে বাঁধা কোথায়।
তখন ট্র্ইাব্যুনাল বলেন, সাজেশনটা অন্যভাবে দেন। সেটা এভাবে  হতে পারে- ওই ডকুমেন্ট এর সাথে  আরো কিছু ডকুমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছিল আপনি তা জানেন কি-না।
কিন্তু এরপরও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপন করা হলে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সারেন্ডার ডকুমেন্ট এর সাথে যদি অন্য ডকুমেন্ট থাকে এবং তদন্ত কর্মকর্তা তা গোপান করে থাকেন তাহলে এর বেনিফিট আসামী পক্ষকে নিতে দেবেননা কেন?
এরপর ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দিয়ে বলেন, আমরা এ সাজেশনটি দেয়ার অনুমতি দিলাম। এরপর প্রশ্নটি নিম্নলিখিতভাবে করা হয়।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পনের সময় ইনস্ট্র্রুমেন্ট অব সারেন্ডার ডকুমেন্ট ছাড়াও অন্য কিছু দলিল সম্পাদন করা হয়। তার মধ্যে নিম্নলিখিতি বিষয়গুলো ছিল। ১. হেডকোয়ার্টাস (ক) হেডকোয়ার্টার্স ইস্টার্ন কমান্ড, (খ) রিয়ার হেডকোয়ার্টার্স ১৪ ডিভিশন, (গ) হেডকোয়ার্টাস ৩৬ ডিভিশিন, হেডকোয়ার্টার্স ইস্ট পাকিস্তান লজিস্টিক, (ঘ) স্টেশন হেডকোয়ার্টার্স, (ঙ)  হেডকোয়ার্টার্স অফিসার কমান্ডিং ইস্ট পাকিস্তান, (চ) ওয়স্ট পাকিস্তান পুলিশ, (ছ)  হেডকোয়ার্টাস  ডিজি রাজাকার।

২. ট্রুপস রেগুলার এন্ড প্যারা। এর অধীনে ট্যাংকস, আর্টিলারি, ইনফ্যান্ট্রি, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগনাল, সার্ভিস, মুজাহিদ,  রাজাকার, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পুলিশ মিলিয়ে মোট ২৬ হাজার ২৫০ জন সৈন্য সংখ্যা উল্লেখ আছে।
অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম এ বিষয়গুলো উল্লেখ করার পর ট্রাইব্যুনাল বলেন, আলাদা দুটি প্রশ্ন করেন।
প্রশ্ন : উপরোক্ত বিষয়গুলো ডকুমেন্টে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি জেনেও তা পোগন করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, পিডিপ, নেজামে ইসলাম, শান্তি কমিটি, আলবদর, আল শামস, বাহিনীকে অক্সিলিয়ারি ফোর্স  (সহযোগী বাহিনী)  হিসেবে  গণ্য করে পাকিস্তান আর্মির ইস্টার্ন কমান্ড বা সেন্ট্রাল কমান্ড কোন প্রজ্ঞাপন  জারি করেছে এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট আপনি সংগ্রহ করতে পারেননি।
উত্তর : সরাসরি কোন প্রামান্য দলিল আমি তদন্তকালে পাইনি। তবে শান্তি কমিটি, জামায়াতে ইসলাী সারা দেশে রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনী গঠন করে পাকিস্তান আর্মিকে সহায়তা করেছে এবং নিজেরাও অংশগ্রহণ করেছে এর প্রমান আমি তদন্তকালে পেয়েছি।
এ উত্তরের পর দীর্ঘ বিতর্ক চলে আসামী পক্ষ, রাষ্ট্রপক্ষ এবং ট্রাইব্যুনালের মধ্যে।

মিজানুল ইসলাম বলেন, ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারবেন।  সে অধিকার তার আছে। কিন্তু  ফ্যাক্টস এবং দলিল বিষয়ক এ প্রশ্নে এ ব্যাখ্যা প্রাসঙ্গিক নয়। কারণ এটা দলিল। আমার প্রশ্ন হল কোন প্রজ্ঞাপন জারি  বিষয়ে। সেখানে কার্যকলার কেন আসবে। 
ট্রাইব্যুনাল তদন্ত কর্মকর্তা প্রদত্ত ব্যাখ্যাকে প্রাসঙ্গিক আখ্যায়িত করে বলেন, অনেক কাজ হয় যা কাগজে কলমে লেখা  থাকেনা। কিন্তু হয়েছে এটাই সত্য।
মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা বোঝাতে চেয়েছেন শান্তি কমিটি, জামায়াতে ইসলামী সহযোগী বাহিনী হিসেবে  কাগজে কলমে না থাকলেও এদেরকে পাকিস্তান আর্মি ব্যবহার করেছে তাইতো?
ট্রাইব্যুনাল বলেন  ‘হ্যা’।
তখন মিজানুল ইসলাম বলেন, এটাতো তিনি তার জবানবন্দীতে বলেছেন এবং প্রয়োজনে আবারো  রাষ্ট্রপক্ষ তাকে রিইক্সামিন করে বলাতে পারেন। আইন অনুযায়ী সহযোগী বাহিনী গঠনের অধিকার  মুল বাহিনীর। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা বললেন জামায়াতে ইসলামী এসব সহযোগী বাহিনী  গঠন করেছে। আমার আপত্তি সেখানে।
 ট্রাইব্যুনাল বলেন আপনি যা   চেয়েছেন তাতো ওনার উত্তরের প্রথম অংশে আছে। পরের ব্যাখ্যা থাকলে অসুবিধা নেই।
মিজানুল ইসলাম বলেন, হয় এ প্রশ্নটি বাদ দেয়া হোক অথবা প্রশ্ন উত্তর আকারে রেকর্ড করা হোক।
এরপর ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দিয়ে বলেন, ব্যাখ্যাটি এভাবে নেয়া যায় কি-না দেখেন । তাহল “উক্ত সংগঠনগুলো সহযোগী বাহিনী হিসেবে কার করেছে সে প্রমান আমি তদন্তকালে পেয়েছি”
মিজানুল ইসলাম বলেন ঠিক আছে।
প্রশ্ন : জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পনের সময় রাজাকার বাহিনীর কোন সদস্য উপস্থিত ছিল তদন্তকালে আপনি এমন কোন তথ্য পেয়েছেন ?
উত্তর : আমার রেকর্ডে তা খুঁজে পাচ্ছিনা।
প্রশ্ন : আপনি  কি কোন কেস ডায়েরি ছাড়াই সাক্ষ্য দিতে এসেছেন?
উত্তর ধ চিফ প্রসিকিউটরের কাছে যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি তার সবই আমি নিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন : যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন তার মধ্যে কেস ডায়েরি ছিল?
উত্তর :  থাকার কথা না।
প্রশ্ন : আমি বলছি সত্য উদঘটানের ভয়ে আপনি কেস ডায়েরিসহ আরো অনেক ডকুমেন্ট আনেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : অক্সিলিয়ারি ফোর্স এর গঠন সম্পর্কে কোন ধারণা আছে?
উত্তর : পরিস্কার কোন ধারণা নেই। তবে আমি মনে করি যারা মুল বাহিনীকে সহযোগিতা করে তারাই অক্সিলিয়ারি ফোর্স।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পুলিশ বাহিনী আর্মিকে সহযোগিতা করত কি-না।
উত্তর : কিছু কিছু  সদস্য সহযোগিতা করত বলে শুনেছি।
ট্রাইব্যুনাল বলেন,  এখানে তো তাহলে প্রশ্ন এসে যায় বাংলাদেশ সিভিল প্রশাসনও সহযোগিতা করত কি-না। মিজানুল ইসলাম বলেন,  তারা পাকিস্তান আর্মির সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তারা  অক্সিলিয়ারি ফোর্স নয় এটা বোঝাতে চেয়েছি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার গঠনের পর কতজন এসপি, ডিআইজি  আনুগত্য করে?
উত্তর : অনেক। তবে  সঠিক সংখ্যা বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ডিআইজি বা তার উর্ধ্বতন কতজন আনুগত্য করে?
উত্তর : এ  মুহুর্তে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামের মজলিশে শুরায় কতজন পূর্ব পাকিস্তানের সদস্য ছিল?
উত্তর : এ তথ্য আমার কাছে নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান  জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে শুরা ছিল তা জানেন?
উত্তর : ধারণা নেই।
প্রশ্ন : পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলাম কি প্রকৃয়া সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিত সে বিষয়ে ধারণা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের অস্ত্র সরবাহের জন্য পাকিস্তান আর্মির কাছে আবেদন করেছিল এ মর্মে কোন তথ্য আপনার কাছে আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : কি আছে বলেন।
উত্তর : লাহোরে অধ্যাপক গোলাম আযম বলেছেন পূর্ব পাকিস্তানে এখনো  দুষ্কৃতকারী আছে। পূর্ব পাকিস্তানের শান্তিপ্রিয়  নিরীহ জনগনের জন্য অস্ত্রের  প্রয়োজন। এই নিরহী জনগন মানে তার দলের লোক।
মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি নির্দিষ্ট করে বলেছি জামায়াতে ইসলামের সদস্যদের জন্য অস্ত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল কি-না। সেখানে ব্যাখ্যা দিয়ে নিরীহ জনগনকে দলের লোক হিসেবে মেলানোর  কোন সুযোগ নেই। তাহলে পত্রিকার ওই খবরে প্রত্যেকটি শব্দের ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব। সে সুযোগ কি আমি পাব?
ট্রাইুব্যনাল বলেন, তার দলের লোকদের ক্ষেত্রে এটা ইমপ্লাইস। কারণ আপনিতো ওই বক্তব্য খন্ডন করতে চাচ্ছেন।
মিজানুল ইসলম বলেন যেহেতু আমার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর আসেনি  আমি এ প্রশ্ন বাদ দিতে চাচ্ছি।
ট্রাইব্যুনাল বলেন শেষবারের মত আপনাকে এ সুযোগ দেয়া হল। এরপর বুঝে প্রশ্ন করতে হবে যাতে বাদ দিতে না হয়।
মিজানুল ইসলাম বলেন, উত্তরও সোজা দিলে আমাকে বাদ দিতে হবেনা।
প্রশ্ন : মসলিম লীগের কোন সদস্য যারা রাজাকার, শান্তি কমিটি, আলবদরে যোগ দেইনি এমন কাউকে মুসলিম লীগার হিসেবে  পাকিস্তান আর্মি অস্ত্র সরবরাহ করেছে এমন তথ্য পেয়েছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আলবদর কবে কোথায় প্রথম গঠন হয়/
উত্তর : ১৯৭১ সালের ১৬ মে শেরপুরে ৪৭ জন ছাত্রসংঘের কর্মীকে সামরিক প্রশিক্ষন দিয়ে এ বাহিনী গঠন করা হয়।
প্রশ্ন : এ তথ্য আপনি কোথায় পেলেন?
উত্তর : তদন্তে পেয়েছি।
প্রশ্ন  : তদন্তে কিভাবে পেলেন, কেউ কি আপনাকে দিয়েছে?
উত্তর :  আমি তদন্তে পেয়েছি।
প্রশ্ন : এ বিষয়ে কোন প্রামান্য ডকুমেন্ট জব্দ  করেছেন?
উত্তর :  ডকুমেন্ট দেখেছি তবে জব্দগ করিনি।
প্রশ্ন : ডকুমেন্টটির নাম বলতে পারবনে, মানে কোন বই বা পেপার  কার্টি কি-না?
উত্তর : আলবদর বইতে পেয়েছি।
প্রশ্ন : লেখক কে?
উত্তর : সেলিম মনছুর খালেদ।
প্রশ্ন : তিনি কি বাঙ্গালী?
উত্তর : সম্ভবত নয়। কারণ বইটি লাহোর থেকে প্রকাশিত।
প্রশ্ন : এই লেখক ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ছিলেন?
উত্তর : বইয়ে এ বিষয়ে তথ্য নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে তার বয়স কতদ ছিল?
উত্তর : বইয়ে এ বিষয়ে তথ্য নেই।
প্রশ্ন : যে ৪৭ জন ছাত্রসংঘের কর্মী নিয়ে আল বদর বাহিনী গঠনের কথা বলা হয়েছে তদন্তকালে তাদের নাম পরিচয় সনাক্ত করতে পেরেছেন?
উত্তর  : সবার পারিনি। প্রথম কমান্ডারের নাম কামরান, শেরপুর । এছাড়া অন্যকারো নাম পরিচয় পাইনি।
প্রশ্ন : কামরানের অস্তিত্ব আছে?
উত্তর : শুনেছি আছে। তবে বিস্তারিত তদন্ত  করিনি।
প্রশ্ন : তার পেশা কি ছিল?
উত্তর : বিস্তারিত তদন্ত করিনি।
প্রশ্ন : তার বাড়ি শেরপুরের কোন এলাকায়?
উত্তর : বলেছিতো বিস্তারিত তদন্ত  করিনি।
প্রশ্ন : আলবদর তৈরির পর কেন্দ্রীয় কোন কাঠামো তৈরি হয়েছিল কি-না?
উত্তর : কেন্দ্রীয় কাঠামো জিনিসটা কি বুঝলামনা।
প্রশ্ন  : এই যেমন ধরেন পুলিশের আইজি, তারপর এডিশনাল আইজি, ডিআইজ, এসপি এভাবে।
উত্তর : প্রথম ইউনিট ৩১৩ ক্যাডেট। দ্বিতীয় ইউনিট ৩ কোম্পানী। প্রত্যেক কোম্পানীতে ১০৪ জন মুজাহিদ। ১ কোম্পানীতে ৩ প্লাটুন। প্রত্যেক প্লাটুনে ৩৩ সাজী। ১  প্লাটুনে ৩ সেকশন ট্রুপস। প্রত্যেক ট্রুপে ১১ জন আলবদর।
প্রশ্ন : আমার প্রশ্ন ছিল কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কাঠামো।
উত্তর : আমার তদন্তে এ জাতীয় কিছূ পাইনি।
প্রশ্ন : এইযে কাঠামোর কথা বললেন এটা জেলার না মহকুমার?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : এই কাঠামো বিন্যাসের তথ্য কোথায় পেলেন?
উত্তর : আলবদর বইতে।
প্রশ্ন : এই কাঠামো অনুযায়ী কোন ইউনিটের সদস্যদের নাম উল্লেখ ছিল?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ৩১৩ ক্যাডেটের যে প্রথম ইউনিট তার প্রধানের পদবী কি ?
উত্তর : বইয়ে উল্লেখ না থাকায় আমি জানিনা।
প্রশ্ন : ওই ইউনিটসমূহের প্রধানের পদবীর ক্ষেত্রেও একই উত্তর প্রযোজ্য?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ঢাকা জেলা আলবদর কমান্ডারের নাম কি ছিল?
উত্তর : : ঢাকা জেলা আলবদর কমান্ডার হিসেবে আমি কিছু পাইনি। তবে তিনটি গ্রুপের নাম পেয়েছি। একটি শহীদ আব্দুল মালেক কোম্পানী। এর কমান্ডার আর জাহাঙ্গীর। শহীদ আজিজ ভাট্টি কোম্পানী। এর কমান্ডার আব্দুল হক এবং গাজী সালাহউদ্দিন কোম্পানী। এর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান।
প্রশ্ন : এই তিনটি গ্রুপ কোন কোম্পানীর অধীনে ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : আল শামস  কবে গঠন হয়?
উত্তর : সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : এর প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : এ মুহূর্তে  বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : এর কাঠামো কেমন ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন :  এর সদস্যদের  বেতনভাতা কত ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : তাদের পোশাক কেমন ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : বেতনবাতা কে দিত?>
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : প্রশ্ন : মুজাহিদ বাহিনীর ক্ষেত্রেও একই উত্তর  প্রযোজ্য?
উত্তর : হ্যা।

জেরা শেষ করা নিয়ে বিতর্ক : গতকাল  দুপুরের পর ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনাদের রোববার   আরেক সেশন পর্যন্ত সময় দেয়া হল জেরা শেষ করার জন্য। এর  মধ্যে জেরা শেষ করতে হবে। গতকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত জেরার পর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মোট ৫২৩টি প্রদর্শণী মার্ক করা হয়েছে। এগুলো সবই হল  পেপারকাটিং,  প্রেসরিলিজ, নিউজধমী। এর সংখ্যা ৫২৩টি। এরপরও তার পুরো মামলা নির্ভর করা হয়েছে।  এর মধ্যে মাত্র ৭টি প্রদর্শনী বিষয়ে এ পর্যন্ত  আমরা জেরা করতে পেরেছি। ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে  একদম প্রাথমিক দাবী হল সব মৌলিক  ডকুমেন্টের ওপর জেরা করা। আর মাত্র একটি সেশনে জেরা  শেষ করা কোন অবস্থায়ই সম্ভব নয়। এটি আমি আমি আমার আসামীর প্রতি আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবনা। তিনি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন। আসামীর প্রতি সুবিচার করা সম্ভব  হবেনা। সবকিছুর উদ্দেশ্য হল ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। আমার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের  সারা দেশের সব অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। সব কিছুর মাস্টারমাইন্ড বলা হয়েছে।   আমরা যতক্ষন পর্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিষয়ে জেরা করি ততক্ষন পর্যন্ত জেরা করতে দেয়া উচিত।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, বিষয়টি প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক  নয়। বিষয়টি হল  আমরা টাইম ফ্রেমিং পদ্ধতি অনুসরন করছি। সব ক্ষেত্রেই এটি মেনে চলতে হবে। তদন্ত কর্মকর্তা মোট ৫ সেশন জবানবন্দী দিয়েছেন।  সে অনুযায়ী আপনারা ১১ সেশন পেলেও ১২ সেশন জেরা করতেদ দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি পর্যাপ্ত জেরা হয়েছে। সাতটি প্রদর্শনী জেরা করতে যাদেত আপনাদের ১২ সেশন লাগে তাহলে ৫২৩টি প্রদর্শনী জেরা করতে কত দিন লাগবে এ প্রশ্ন আপনার কাছে আমরা। জবাব দেন।

বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা যেসব ডকুমেন্ট দাখিল করেছেন সেসব রিপোর্ট তিনি করেননি । তিনি তার কর্তৃপক্ষও নন। কাজেই ওসব রিপোর্ট বিষয়ে আপনারা আরগুমেন্টে বলতে পারবেন। বিচার থেকে খালাস দেয়াও ন্যায়  বিচার নয়, দোষী সাব্যস্ত করাও ন্যায় বিচার নয়।  জাস্টিস ইজ জাস্টিস। দ্রুত বিচার পাওয়াও আসামীর অধিকার। আসামীকে কাস্টডিতে রেখে বিচার  চলছে। কাজেই  দ্রুত বিচার করে তাকে নির্দোষ প্রমান করাও আপনাদের দায়িত্ব।  জাস্টিস ডিলে জাস্টিস ডিনাইড তাও  তো সত্য।

তাজুল ইসলাম বলেন কতদিন লাগবে সেটা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হল ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। সেজন্য যদি সময় লাগে সময় দিতে হবে। ৪০ বছর আগের ঘটনার বিচার হচ্ছে। ২ বছর ধরে তারা তদন্ত করেছেন। আর মাত্র ৬টি দিন আমাদের দিলে বিচার বিলম্বিত হয়ে যাবে? যদি তাই হল তাহলে আমাদের বলার কিছু নেই।  তদন্ত কর্মকর্তা ৫  সেশন জবানবন্দী দিয়েছেন সেটা যেমন সত্য তেমনি তিনি ৫সেশনে  কি ডুকমেন্ট হাজির করেছেন তাও বিবেচনা করে দেখার বিষয়।
মিজানুল ইসলাম বলেন তিনি মাত্র এক মিনিটে ৩১ ঘন্টার ভিডিও ডকুমেন্ট হাজির করেছেন। কাজেই আপনাদের হিসেবে এক মিনিটের জবানবন্দীর জন্য অন্তন্ত ৩১ ঘন্টা সময় দরকার জেরায়।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক বলেন রোববার এক সেশনে শেষ করার প্রস্তুতি নিয়ে আসেন। তারপর আমরা দেখব।





বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১২

মহকুমা, জেলা থানা শান্তি কমিটির আহবায়কদের মধ্যে কতজন জামায়াত করতেন তা বলতে পারলেননা তদন্ত কর্মকর্তা


মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানের জেরা চলছে। তাকে জেরা করছেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। আজ  জেরার সময় তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা  হয় ১৯৭১ সালে মহকুমা, জেলা এবং থানা পর্যায়ে  শান্তি কমিটির যারা আহবায়ক ছিলেন তাদের মধ্যে কতজন জামায়াত করতেন। জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবনা।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা স্বীকার করেন অন্য মামলার তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দী তিনি  অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় ব্যবহার করেছেন।

আজ জেরা শেষ করার অনুরোধ :
আজ  জেরার শুরুতে ট্রাইব্যুনাল মিজানুল ইসলামকে  বলেন, আগামীকাল বৃহষ্পতিবারের মধ্যে জেরার শেষ করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। মিজানুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমার ১২টি সেশন পাব বলে আশা করছি।  আগামীকাল শেষ করলে আমার  ১১টি সেশন হবে। তারপরও আমি চেষ্টা করব কালকের মধ্যে শেষ করার।  ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমি জানি মিজানুল ইসলাম চেষ্টা করলে শেষ করতে পারবেন।

এরপর জেরা শুরু হয়। জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন।

জেরা :

প্রশ্ন : মৌলভী ফরিদ আহমেদের নেতৃত্বে ভিন্ন কোন শান্তি কমিটি হয়েছিল?
উত্তর : এ মুহুর্তে ডকুমেন্টে খুঁজে পাচ্ছিনা।
প্রশ্ন : মৌলভী ফরিদ আহমেদ শান্তি কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট আছে?
উত্তর : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির ১৪০ সদস্যের মধ্যে ফরিদ আহমেদ নামে একজনের নাম আছে। তিনি মৌলভী ফরিদ আহমেদ কি-না বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন বৈঠকের কোন কার্যবিবরনী সংগ্রহ করতে পেরেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন সাধারন সভার কোন খবরের পেপারকাটিং সংগ্রহ করতে পেরেছেন?
উত্তর : ১৩/৪/১৯৭১ তারিখের দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান এবং দৈনিক পয়গাম আছে।
প্রশ্ন : ১৩/৪/১৯৭১ তারিখের আজাদ পত্রিকার খবরে একটি শোভাযাত্র আয়োজনের আহবানের খবর আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ওই খবরে শোভাযাত্রা আয়োজনের বিষয়টি  কোথায় বসে কত তারিখের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় সে বিষয়টি উল্লেখ নেই।
উত্তর : নাই। তবে নাগরিক শান্তি কমিটির উদ্যোগে শোভাযাত্রার কথা বলা আছে।
প্রশ্ন : ওই খবরে কোন বিবৃতিকারীর নাম নাই।
উত্তর : নাই।
প্রশ্ন : দৈনিক পয়গাম এবং দৈনিক পাকিস্তানের খবরেও একই কথা বলা আছে।
উত্তর : দৈনিক পয়গামে আরো বলা আছে নাগরিক শান্তি কমিটির উদ্যোগে ঢাকার বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গনে এক শান্তি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রশ্ন : মহকুমা, জেলা  শান্তি কমিটির যারা আহবায়ক ছিলেন তাদের মধ্যে কতজন জামায়াত করতেন?
উত্তর : সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পটুয়াখালিতে দৈনিক সংগ্রাম বিতরন হত কি-না।
উত্তর : এ মর্মে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। তবে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সব জায়গায় এসব পত্রিকায় যেত।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের সংগ্রামের সার্কুলেশন কত ছিল?
এ প্রশ্নের পর প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। এরপর ট্রাইব্যুনালও আপত্তি করেন এ প্রশ্নের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে। জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ১৯৭১ সালে সারা দেশে বিভিন্ন  অপরাধ সংগঠনে সহায়তা করা। সংগ্রামের খবর. অধ্যাপক গোলাম আযমের  বক্তব্য, বিবৃতি  পড়ে কি পরিমান লোক উদ্বুদ্ধ হত তা জানার জন্য সংগ্রামের সার্কুলেশন  তখন কত ছিল তা জানা দরকার। অনেকে টিভিতে বলে বেড়াচ্ছেন শুধুমাত্র সংগ্রাম পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের কপি জমা দিয়েই গোলাম আযমের ফাঁসি দেয়া যায়। আর কিছু লাগেনা। কাজেই সংগ্রাম  তখন কত ছাপা হত এটা জানা খুবই দরকার। শেষে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দেন এ প্রশ্নের প্রাসঙ্গিকতা নেই। কাজেই এ প্রশ্ন যাবেনা। এরপর মিজানুল ইসলাম  প্রশ্ন করেন কয় থানায় সংগ্রাম বিলি হত। ট্রাইব্যুনাল বলেন এ প্রশ্নও যাবেনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে থানা, জেলা এবং মহকুমার দায়িত্বে ছিলেন এমন কতজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে তদন্তকালে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : সংখ্যা বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন এমন কতজনকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য লিখিত নোটিশ দিয়েছিলেন?
উত্তর : আমি কোন সাক্ষীকেই লিখিত নোটিশ দেইনি আমার কাছে এসে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য। জেলা মুক্তিযোদ্ধা  কমান্ডারদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
প্রশ্ন : কতজন সেক্টর কমান্ডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : ২ জন।
প্রশ্ন : কতজন সাবসেক্টর কমান্ডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : ১ জন।
প্রশ্ন : এদের নাম কি?
উত্তর : মেজর জেনারেল (অব) কে এম শফিউল্লাহ বীর উত্তম, মেজর (অব) আবু ওসমান চৌধুরী এবং জনাব মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম।
প্রশ্ন : বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কতজন জেলা কমান্ডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : তদন্তকালে আপনি কয়টি জেলা সফর করেছেন এবং জেলাগুলোর নাম কি?
উত্তর : ১৫টি। চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ফরিদপুর, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, এবং ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া।
প্রশ্ন : বর্তমান মামলার ফরমাল চার্জের সাথে কতজন সাক্ষীর জবানবন্দী ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে জানেন?
উত্তর : রেকর্ড না দেখে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : অন্য কোন মামলার জবানবন্দী এ মামলায় ব্যবহার করেছেন?
উত্তর : (তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে বলেন করিনাই। এরপর মিজানুল ইসলাম বলেন, আমার মনে হয় করেছেন। একটু দেখেন। এরপর বেলা একটা বেজে যায় এবং এ প্রশ্নটি এবং উত্তর অমিমাংসিত রেখে ট্রাইব্যুনাল বিরতিতে যান। দুইটায় আবার ট্রাইব্যুনাল বসলে মিজানুল ইসলাম প্রশ্নটি করেন। তখন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন “জি অন্য একটি   মামলার জবানবন্দী এ মামলায় ব্যবহার করেছি। সেটা হল ধর্মান্তর সংক্রান্ত। অন্য মামলার তিনজন  সাক্ষীর  জবানবন্দী ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রশ্ন : যে মামলার জবানবন্দী ব্যবহার করেছেন সেই মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম কি?
উত্তর : আমার রেকর্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম নেই।
প্রশ্ন : সেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার নাম কি?
উত্তর : আব্দুর রাজ্জাক খান, হেলাল উদ্দিন এবং নুরুল ইসলাম।
প্রশ্ন : তাদেরকে এ মামলায় সাক্ষী করেননি।
উত্তর  : না।
প্রশ্ন : তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগমের রেকর্ডকৃত বা জব্দকৃত কোন আলামত আপনি এ মামলায় ব্যবহার করেছেন কি-না।
উত্তর : কোন আলামত ব্যবহার  করিনাই তবে রেকর্ডকৃত জবানবন্দী  ব্যবহার করেছি।
প্রশ্ন : এ মামলায় আপনি সরকারি গোপন নথিপত্র ডকুমেন্ট হিসেবে দাখিল করেছেন?
উত্তর :করেছি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কতিপয় তথ্য সংক্রান্ত নথিপত্র আপনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে আপনি বলেছেন। সেই নথির বিষয়বস্তু কি?
উত্তর : এটা গোপনীয় প্রকাশ করা যাবেনা।
প্রশ্ন : নথির কোন অংশ ডকুমেন্ট হিসেবে দাখিল করেছেন?
উত্তর : সরাসরি কোন অংশ ডকুমেন্ট হিসেবে দাখিল করিনি। তবে সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংগৃহীত ডকুমেন্ট দাখিল করেছি।
প্রশ্ন : গোপনীয় ডকুমেন্ট ব্যবহার করার  জন্য স্বরাষ্ট্র   মন্ত্রনালয়ের অনুমতি নিয়েছেন কি-না।
উত্তর : যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছি।
প্রশ্ন : ওই ডকুমেন্ট ব্যবহারে সরকার কি বাঁধা দিয়েছিল?
এ প্রশ্নের সাথে সাথে  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দেন এ প্রশ্নটি যাবেনা। এরপর  এ বিষয়ে আরো কিছু প্রশ্ন নিয়ে বেশ কিছুক্ষন উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বিতর্ক চলে।  রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন বলেন, তদন্ত সংস্থা একটি স্বাধীন সংস্থা। তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউটর সিদ্ধান্ত নেবে কোন ডকুমেন্ট সে ব্যবহার করবে বা করবেনা, কোনটি দাখিল করবে বা করবেনা। 
জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত সংস্থা স্বাধীন এবং সরকারি ডকুমেন্ট ব্যবহারে তাদের অনুমতি নেয়ারও প্রয়োজন নেই। কিন্তু তারপরও তারা  অনুমিত নিয়েছেন। সেজন্যই বিষয়টি এসেছে। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  উদাহরন টেনে বলেন সৌজন্যতার খাতিরে অনুমতি  নেয়া হয় অনেক সময়।
প্রশ্ন : যখন অনুমতি চান তখন কয়টির অনুমতি দিয়েছিল সরকার?
উত্তর : আমি যেগুলোর অনুমতি চেয়েছি সেগুলো আমার প্রয়োজনমত ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন : পঞ্চগড়ে কয়টি বধ্যভূমি আছে?
উত্তর : আটটি বধ্যভূমি, গণকবরের তালিকা আমি পেয়েছি।
প্রশ্ন : এ তালিকা কে প্রস্তুত করেছে এবং আপনাকে  তা কে দিয়েছে?
উত্তর : সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পঞ্চগড় শহরে সংঘটিত অপরাধের দায় দায়িত্ব কার তা আপনি নির্ধারন করেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : পঞ্চগড়ে কতজন ধর্ষিতা আছে?
উত্তর : আমার কাছে এ মুহুর্তে এ তথ্য নেই।
প্রশ্ন : যারা ধর্ষিত হয়েছে তাদের বা তাদের কোন আত্মীয় স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি এবং কাউকে সাক্ষীও করেননি।
উত্তর : করিনাই।
প্রশ্ন : পঞ্চগড় সদরে যেসব গণহত্যা সংঘটিত হয় তার একটিরও তারিখ আপনার তদন্তে আসেনি।
উত্তর : এ মুহুর্তে বলতে পারছিনা।
প্রশ্ন : ইউএনও ডিসিদের রিপোর্ট কে তলব করেছিল?
উত্তর : তদন্ত সংস্থা।
প্রশ্ন : কত তারিখ?
উত্তর : রেকর্ড না দেখে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : রেকর্ড দেখে বলেন।
উত্তর : রেকর্ড এখন  হাতে নেই।

জেরার এক পর্যায়ে গতকাল মিজানুল ইসলাম বলেন, বারবার বলা হচ্ছে ট্রাইব্যুনালের মামলার ক্ষেত্রে আমি যেন আমার মাথা থেকে সিআরপিসি (দি কোড অব ক্রিমিানল প্রসিডিউর) ঝেড়ে ফেলে দেই। কিন্তু সিআরপিসি মামলায়ও আমি কোন দিন দেখিনি যে,  কেস ডায়েরি ছাড়া কোন তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য  দিতে আসেন। (তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান কেস ডায়েরি  নিয়ে আসেননা সাক্ষ্য দেয়ার সময়)

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক গতকাল বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।


গতকালের জেরা, ৩০/১০/২০১২, মঙ্গলবার
গোলাম আযম রাজাকার, শান্তি  কমিটির প্রধান ছিলেননা একথা সত্য নয়


পবিত্র ঈদুল আযহার পর গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এ বিচার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায়  দিনব্যাপী জেরা চলে তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানের।  তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।

জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা  মতিউর রহমান বলেন,  সরকারি নিয়ন্ত্রনে নেয়ার পর রাজাকার বাহিনীর প্রধান  হন  মো: ইউনিস।  তিনি জামায়াতের সাথে জড়িত ছিলেন।
এরপর মিজানুল ইসলাম সাজেশন দিয়ে বলেন, “গোলাম আযম রাজাকার বাহিনী, শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেননা।” জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “সত্য নয়।”

অ্যাডভোকেম মিজানুল ইসলাম  গতরাতে এ প্রতিবেদককে  বলেন, তার মানে হল তদন্ত কর্মকর্তার জবাব অনুযায়ী গোলাম আযম রাজাকার এবং শান্তি  কমিটির প্রধান ছিলেন। কিন্তু আসলে গোলাম আযম   রাজাকার বা শান্তি কমিটির কোনটারই প্রধান ছিলেননা।  আবার আরেক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা  বললেন ,   সরকারি নিয়ন্ত্রনে নেয়ার পর রাজাকার বাহিনীর প্রধান  হন মো:  ইউনিস। তার   কাছ থেকেই তো দুই রকম উত্তর আসল।

মিজানুল ইসলাম বলেন, তাকে আরো একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেটি হল “খাজা খয়েরউদ্দিনকে আহবায়ক করে শান্তি কমিটি গঠনের পর তাকে পরিবর্তন করে অন্য কাউকে কি শান্তি কমিটির আহবায়ক বা  চেয়ারম্যান বা সভাপতি করা হয়েছিল কি-না।” এর জবাবে তিনি বলেছেন এরকম কোন তথ্য তার কাছে নেই।

গতকাল জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর  আহমদ আনসারী, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম এবং প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন উপস্থিত ছিলেন।

জেরা :
প্রশ্ন : তিতাস নামে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ায় একটি নদী আছে নাম শুনেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : পৈরতলা রেলব্রিজ থেকে তিতাস নদীর সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থানের নাম কি?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : পৈরতলা রেলব্রিজ নিকটবর্তী গণকবর থেকে তিতাস নদী দেখা যায়?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : প্রত্যক্ষদর্শী যাদের কাছে শুনেছেন বলেছেন তাদের দুয়েকজনের নাম বলেন।
উত্তর :  স্মরন নেই।
প্রশ্ন : একপক্ষ ম্যাগাজিনের কূপন এবং ছবি কি দুটি ছবির সমন্বয় না একটি ছবি?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ছবিটি কার?
উত্তর : যতদুর মনে হয়  মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের।
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনী সরকারের নিয়ন্ত্রনে নেয়ার আগে এর প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : তা না জানলেও এ বাহিনী  মাওলানা একেএম ইউসুফ সাহেবের নেতৃত্বে খুলনায় খানজাহান আলী রোডে আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামায়াত কর্মী নিয়ে গঠিত হয়।
প্রশ্ন : এর তথ্যসূত্র কি?
উত্তর : স্থানীয় লোকজন বলেছে এবং তদন্তকালে পেয়েছি।
প্রশ্ন :  এ বিষয়ে ১৯৭১ সালে প্রকাশিত কোন খবর আনপার সংগ্রহে নেই?
উত্তর : এ মুহূর্তে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : মাওলানা   এ কে এম ইউসুফ সাহেব রাজাকার বাহিনী গঠন করেছেন এ মর্মে সবচেয়ে পুরনো কি ডকুমেন্ট আছে আপনার কাছে?
উত্তর : আমার কাছে নেই। তবে তদন্তে  আমি এটা পেয়েছি।
প্রশ্ন : সরকারি নিয়ন্ত্রনে নেয়ার পর রাজাকার বাহিনীর প্রধান কে হয়?
উত্তর : মো: ইউনিস। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সাথে জড়িত ছিলেন। ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদে অধিষ্ঠিত আছেন। (এ প্রশ্নের উত্তরে সাক্ষী  প্রথমে বলেছিলেন,  মো :ইউনিস, জামায়াতে ইসলামী। ডিজি ইসলামী ব্যাংক, জিজি মজলিশে শুরা ইসলামী ব্যাংক। তবে উত্তরটি এভাবে না লিখে উপরোক্তভাবে রেকর্ড করা  হয়। )
প্রশ্ন : রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারির সময় আনছার বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : গেজেট প্রকাশের পর রাজাকার বাহিনীর ডিজি ছিলেন পুলিশের ডিআইজি আব্দুর রহিম সাহেব।
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনীকে অক্সিলিয়ারী ফোর্স হিসেবে সামরিক বাহিনীর অধীনে নেয়ার পর এর প্রধান কে হয়?
উত্তর : স্মরন নেই। তবে রাজাকার বাহিনীকে জামায়াতে ইসলামী এবং পিস কমিটির লোকজন নিয়ন্ত্রন করত।
প্রশ্ন : সামরিক বাহিনীর কোন অফিসার রাজাকার বাহিনীকে অক্সিলিয়ারী ফোর্স হিসেবে নিয়ন্ত্রন করত?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : এটা জানার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেননি।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : খাজা খয়েরউদ্দিনকে আহবায়ক করে শান্তি কমিটি গঠনের পর তাকে পরিবর্তন করে অন্য কাউকে কি শান্তি কমিটির আহবায়ক বা  চেয়ারম্যান বা সভাপতি করা হয়েছিল?
উত্তর : এরকম কোন তথ্য আমার কাছে নেই।
প্রশ্ন : তাহলে একপক্ষ ম্যাগাজিনে যে লেখা হয়েছে গোলাম আযম শান্তি কমিটি/রাজাকার বাহিনীর  প্রধান এ তথ্যটি অসত্য।
উত্তর : (এ  তদন্ত কর্মকর্তা সরাসরি এর উত্তর না দেয়ায় মিজানুল ইসলাম তাকে আবার অন্যভাবে সাজেশন আকারে প্রশ্নটি করেন। )
প্রশ্ন : গোলাম আযম রাজাকার বাহিনী/শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেননা।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ২২/২/২০১১১ তারিখে বাংলা একাডেমীর  অনুকুলে কোন জিম্মানামা সম্পাদনা করেছেন কি-না। করলে কয়টায়।
উত্তর : করেছিলাম। সময় লিখিত নেই। যতদূর মনে পড়ে সত্যায়িত ফটোকটি জব্দ করার পরই   তা জিম্মায় প্রদান করি।
প্রশ্ন : মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী, খাজা খয়ের উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, গোলাম আযম, মেজর আফসার উদ্দিন,  আবুল কাশেম, ওয়ারাসাত  হোসেন খান, তোহা বিন হাবিব এদের মধ্যে  অধ্যাপক গোলাম আযম ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর কতজন সদস্য ছিল?
উত্তর : গোলাম আযম ছাড়া অন্যরা কে কি করতেন তা জানা নেই।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির নিয়ন্ত্রন, পরিচালনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনের একক  ক্ষমতা গোলাম আযমের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কি-না তা প্রকাশিত খবরে উল্লেখ নেই।
প্রশ্ন : এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের সভা সেটি ছিলনা।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি কবে গঠন হয়?
উত্তর ৯/৪/১৯৭১।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি গঠনের নীতিমালা কি ছিল?
উত্তর : শান্তি  কমিটির পরবর্তী কার্যক্রমই প্রমান করে তাদের নীতিমালা কি ছিল।
অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, এটা তো উত্তর হলনা। তখন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক তদন্ত কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, যেকোন সংগঠন গঠনের সময় তার একটি লক্ষ্য উদ্দেশ্য  বা নীতিমালা থাকে।  শান্তি কমিটি গঠনের বিষয়ে আপনি এ জাতীয় কিছু পেয়েছেন কি-না। তখন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে দুষ্কৃতিকারীদের আন্দোলন হিসেবে গণ্য করে তাদের ভাষায় সেই দুস্কৃতিকারীদের ধ্বংস করাই ছিল শান্তি কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন : শান্তি  কমিটির কোন সাংগঠনিক কাঠামো ছিল?
উত্তর : যেভাবে ঢাকায় গঠিত হয়েছিল সেভঅবে জেলা, ,মহকুমা, থানা এবং ইউনিয়নে গঠিত হয়েছিল।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি গঠনের পর সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি কত সদস্য বিশিষ্ট ছিল?
উত্তর : ১৪০।

এরপর জেরা আজ বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আজ আবার তার জেরা শুরু হবার কথা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।


মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১২

ট্রাইব্যুনালে চাঞ্চল্যকর ঘটনা////রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী গণেশ সাক্ষ্য দিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে


মেহেদী হাসান, 23/10/2012
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ  চাঞ্চল্যকর ঘটনার অবতারনা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের এক সাক্ষী সাক্ষ্য দিলেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে। সাক্ষীর নাম গণেশ চন্দ্র সাহা।  ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে  বর্বরোচিত  এবং নিমর্ম হত্যার  শিকার শহীদ ভাগীরথীর ছেলে  এই গণেশ চন্দ্র সাহা।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ভাগীরথীকে হত্যায় সহযোগিতার  অভিযোগ এনেছে রাষ্ট্রপক্ষ। যে ভাগীরথীকে   হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সেই ভাগিরথীর ছেলে এসে  সাক্ষ্য দিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে। তিনি বললেন মাওলানা সাঈদী তার মাকে মারেননি। পাকিস্তান আর্মিরাই তার মাকে মেরেছে।

কে এই গণেশ?

গণেশ চন্দ্র সাহা শুধু যে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী তাই নয়। যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন সেই ১৫ জনেরও একজন এই   গণেশ চন্দ্র  সাহা।

গত ২০ মার্চ  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে   ৪৬ জন সাক্ষীর বিষয়ে একটি দরখাস্ত দাখিল করা হয়  ট্রাইব্যুনালে । দরখাস্তে নিবেদন করা হয়  ৪৬ জন সাক্ষীকে  ট্রাইব্যুনালে হাজির করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। তাই এসব সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছে তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হোক।
৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জন সম্পর্কে দরখাস্তে রাষ্ট্রপক্ষ উল্লেখ করেছিল  আসামীর (মাওলানা সাঈদী) পক্ষ অবলম্বনকারী পিরোজপুরের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক সাক্ষীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকির  প্রেক্ষিতে ভয়ে ভীত হয়ে তারা আত্মপোগন করেছে। তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই তাদের হাজির করা সম্ভব নয়।

যে ১৪ জন সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষ এ দাবি করেছিল সেই ১৪ জনের একজন হলেন এই গণেশ চন্দ্র ।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের  প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল গত ২৯ মার্চ ১৫ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী প্রদান করেন তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে আদেশ দেন।  গণেশ চন্দ্রের নাম সেই ১৫ জনের তালিকায়ও রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষীর বিষয়ে বলেছিল মাওলানা সাঈদীর  পক্ষাবলম্বনকারী অস্ত্রধারী  সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত গোপন করেছে, তাদের খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা এবং আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় সেই গণেশ আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজির হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেন।  


ভাগীরথী হত্যা বিষয়ে  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হল ভাগীরথী হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ।  এ বিষয়ক অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে-ভাগীরথী নামে একটি মেয়ে পাকিস্তান সেনা ক্যাম্পে কাজ করত। সাঈদী পাকিস্তানী সেনাদের খবর দেয় যে, ভাগীরথী  মুক্তিযোদ্ধাদের চর হিসেবে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পের খবর  মুক্তিযোদ্ধাদের পৌছে দেয়। এরপর পাকিস্তান সেনারা তাকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।

গণেশ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ : রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী অভিযোগ করে বলেন, সাক্ষী গণেশচন্দ্র সাহা পক্ষত্যাগকারী এবং বশিভূত। তাকে পক্ষত্যাগকারী  হিসেবে জরো করতে চাই।
 ট্রাইব্যুনাল বলেন, সে অনুমতি দেয়া হবেনা। তাকে আর আমরা আপনাদের সাক্ষী মানতে  রাজি নই। তাকে আপনারা আনেননি।  আমরা তাকে পক্ষত্যাগকারী বা  হস্টাইল কোনটাই বলবনা।
এরপর সৈয়দ হায়দার  আলী  জেরার সময় সাজেশন দিয়ে সাক্ষীকে বলেন, আপনি অর্থের বিনিময়ে পক্ষত্যাগ করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগ বিষয়ে সাংবাদিকরা  ট্রাইব্যুনাল শেষে তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের  টাকার অভাব নেই। সমস্ত  রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের পেছনে কাজ করছে। তারপরও যদি তারা বলে আমরা টাকার বিনিময়ে তাদের সাক্ষী আমাদের পক্ষে এনেছি তাহলে এর চেয়ে মিথ্যা কথা আর কি হতে পারে। তাজুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী তাদের কথামত মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি সে কারনে তারা তাকে আনেনি ।


গণেশের জবানবন্দী : আমার নাম গনেশ চন্দ্র সাহা। বয়স আনুমানিক ৫১ বছর।
আমার মা ভাগীরথী সাহা ১৯৭১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের বাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা থাকতো। আমার মা মেলেটারী ক্যাম্পে কাজ করতো। আমার মা ক্যাম্পের খবরা-খবর মুক্তিযোদ্ধাদের পৌঁছিয়ে দিতেন। মতিউর রহমান সরদার, কালু মোল্লা, জলিল মোল্লা, হানিফ খান এরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মতিউর রহমান সরদার বর্তমানে পিরোজপুর উপজেলা চেয়ারম্যান। মা রাতের বেলায় বাসায় আসত এবং সকাল বেলা ক্যাম্পে যেত। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমার মা কি কথা বলতেন তা আমাদের শুনতে দিতেন না। কিছুদিন পরে আমাদের গ্রাম বাগমারায় মিলিটারী আসে তখন মুক্তিবাহিনী ও মিলিটারীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। ১০ জন মিলিটারী মারা যায়। অস্ত্র ফেলে মিলিটারীরা পিরোজপুরে পালিয়ে যায়। আমার মা ঐ দিন পিরোজপুর ক্যাম্পে ছিলেন। ঐ দিন আমার মা বাড়ীতে ফিরে আসে নাই। তারপর দিন আমরা দুই ভাই মায়ের খোঁজে যাই। আমার অপর ভাইয়ের নাম কার্তিক চন্দ্র সাহা। তিনি বর্তমানে মৃত। বারটার দিকে আমরা শুনি এক মহিলাকে ধরে নিয়ে গেছে, তিনি আমার মা, আরো শুনি মিলিটারী তার কোমরে এবং পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে গাড়িতে করে টেনে নদীর ধারে নিয়ে গেছে। ওখানে গিয়ে দেখি মায়ের শরীর ক্ষত-বিক্ষত, গাড়ীতে ৫ জন লোক বসা। মাকে মেরে নদীর চড়ে ফেলে রেখেছে। ঐ ৫ জনের ভিতর ৪ জনের হাতে অস্ত্র, একজন ড্রাইভার সবাই খাকী পোশাক পরা। এই ৫ জনকে আমি চিনি না। এরা কি কথা বলতো তা বুঝতে পারি নাই। কিছুক্ষণ পরে তারা গাড়ী চালিয়ে চলে যায়। এদের সাথে কোন রাজাকারকে দেখি নাই। একজন কেও চিনতে পারি নাই।

এরপর মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের  প্রশ্নের  জবাবে গণেশ চন্দ্র সাহা বলেন, বছর দেড়েক আগে আমি জানতে পেরেছি এই মামলার আমি সাক্ষী।  বৈশাখ মাসের শেষে আমি জানতে পেরেছি। আমার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে সাংবাদিক এবং কোর্টের লোক আমার কাছে গিয়েছিল। তারা আমার কাছ থেকে এই মৃত্যুর কথা শুনে এসেছে। আমার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে আজকেই আমি প্রথম সাক্ষ্য দিচ্ছি।

আরেক প্রশ্নের  জবাবে গণেশ বলেন, আমি এই মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে বৈশাখ মাসের শেষে রফিক ভাই আমার সাথে দেখা করেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন আপনার মাকে কারা মেরেছে । আমি বলেছি মিলিটারীরা মেরেছে। তখন তিনি বলেছেন, না আরো অন্য মানুষেরাও মেরেছে। সত্য করে বল। তখন আমি বলেছি না শুধু পাক সৈন্যরাই মেরেছে। তখন তিনি বলেন, তুমি দিব্বি করে বল, কারা মেরেছে। আমি বলেছি  আমার মায়ের মৃত্যুর কাহিনী নাটক নোভেলে আছে, সবাই দেখেছে, প্রতি বছর হচ্ছে এসব।  পাকিস্তানী সৈন্যরাই আমার  মাকে মেরেছে। এরপর রফিক ভাই আবারো বলেন, আমার বাবা কি আপনার মাকে মেরেছে? আমি তাকে জিজ্ঞাস করি আপনার বাবা কে? উনি বলেন সাঈদী সাহেব, তখন আমি বলি না উনি আমার মাকে মারেন নি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী সাক্ষীকে জেরা করেন।

জেরা :
প্রশ্ন : রফিকভাইকে কতদিন ধরে রফিক ভাই ডাকেন?
উত্তর : রফিক ভাই একদিনই আমাদের বাড়িতে গিয়েছেন এবং তাকে আমি একদিনই দেখেছি।
প্রশ্ন : সেটা কবে?
উত্তর : বৈশাখ মাসের শেষ দিকে পিরোজপুরে তিনি ওয়াজ অথবা মাফেল  করতে যান। তখনকার ঘটনা এটি।
প্রশ্ন : বৈশাখ মাস এখন থেকে  কতদিন আগে হবে?
উত্তর : সাত মাস আগে ছিল।
প্রশ্ন : ওয়াজ শুনতে গেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনাকে পেলেন কিভাবে?
উত্তর : উনি আমাদের বাড়ি যাওয়ার পরে আমি মাঠে ছিলাম, মোবাইলে আমাকে ডেকে নিয়ে এসেছেন
প্রশ্ন : ওনার সাথে আর কেউ ছিলেন?
উত্তর  :  আরেকজন  গিয়েছিল।
প্রশ্ন : তাকে চেনেন?
উত্তর :  চিনি, তার নাম নান্না, রফিক ভাইয়ের মামা না কি হয়।
প্রশ্ন : আর কেউ গিয়েছিল?
উত্তর : ঐদিন ছাড়া আমার কাছে কেউ আর কোনদিন যায় নাই।
প্রশ্ন : কেন সে এক:থা আপনাকে  জিজ্ঞাসা করছেন তা জানতে চেয়েছিলেন?
উত্তর : হ্যা।  তিনি বলেনম, তোমার মাকে কে মেরেছে তাতো জানি না, তাই জানতে এসেছি, আমার জানার দরকার আছে।
প্রশ্ন : এতদিন পরে কেন জানতে আসছেন এ কথা তাকে জিজ্ঞাসা করেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তিনি অন্য কোন বাড়িতে গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনার মায়ের নামে পিরোজপুরে ভাগীরথী চত্ত্বর আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : কোর্টের লোক কদ্দিন আগে গেল আপনার কাছে?
উত্তর : গত ফাল্গুনে কোর্টের লোক আমার নিকট গিয়েছিল। গিয়ে বলেছে আমরা কোর্টের লোক, কোর্ট থেকে তদন্তের জন্য এসেছি।
প্রশ্ন : যে গিয়েছিল সে তার পরিচয় দিয়েছিল বা নাম বলেছে?
উত্তর :  নাম ধাম বলেন নাই, তারা বলেছিল তারা ঢাকা থেকে এসেছেন, আমিও তাদেরকে নাম জিজ্ঞাসা করি নাই। এক সপ্তাহ পরে উনারা আবার গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন : আপনার মাকে কাহারা মেরেছে বা কি কি ঘটনা ঘটেছিল তা আপনি  কোর্টের লোকদের কাছে বলেছেন?
উত্তর :  হ্যা।
প্রশ্ন : যুদ্ধের সময় রাজাকার দেখেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : শুনেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : যুদ্ধটা কিসের যুদ্ধ ছিল?
উত্তর : মুক্তিবাহিনী আর মিলিটারির মধ্যে  গোলাগুলি হইছে এটা বুঝেছি।
প্রশ্ন : রাজাকারদের বিষয়ে কি শুনেছেন?
উত্তর : তারা লোকদের ধরে ধরে নিয়ে মারত (হত্যা করত) , মারতে সাহায্য করত।
প্রশ্ন :   যে মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসেছেন সে মামলার আসামী কে?
উত্তর : সাঈদী সাহেবের ছেলে বলছে তুমি আমার বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেছ কি-না। আমি বলেছি করিনাই। তিনি বলেছেন কোর্টে গিয়ে একথা বলতে পারবা? আমি বলেছি পারব। সেকথা বলতেই আমি এসেছি।
প্রশ্ন : আপনার মায়ের হত্যা বিষয়ে পাড়েরহাটের  সাঈদী সাহেবের প্রত্যক্ষ হাত ছিল।
উত্তর : এটা মিথ্যা।
প্রশ্ন : একথাগুলো না বলার জন্য রফিক এবং তার মামা আপনাকে টাকা পয়সা দিয়ে বশীভূত করে সাক্ষ্য  দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছে।
উত্তর : আপনি এটা ভুল বুঝলেন। এটা ভুল।
প্রশ্ন : আপনি অর্থের বিনিময়ে  পক্ষ ত্যাগ করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।

তাজুল ইসলামের প্রতিকৃয়া :
গণেশচন্দ্র সাহার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে যে কারণ  বলেছিল তা মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। তারা বলেছিল  মাওলানা সাঈদীর সন্ত্রাসীদের ভয়ে সাক্ষীরা নিখোঁজ। সেই সাক্ষী আজ ট্রইব্যুনালে এসে তার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়ে গেলেন অত্যন্ত সাহসের সাথে। মায়ের নির্মম হত্যার বিবরন দিতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
তাজুল ইসলামকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে আপনারা তাকে টাকার বিনিয়ে পক্ষ ত্যাগ করিয়েছেন।
জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা আছে।  সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করছে তাদের পক্ষে। তারপরও আমরা  তাদের সাক্ষী টাকার বিনিময়ে এনেছি এর চেয়ে মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ আর কি  হতে পারে। আমরা আগেও বলেছি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার।
তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হয়  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তিনি তার মায়ের হত্যার বিষয়ে সাঈদী সাহেব জড়িত বলে জবানবন্দী দিয়েছেন মর্মে রেকর্ড করা আছে । সেটি তাহলে কি।

তাজুল ইসলাম বলেন, গণেশচন্দ্র সাহা তার মায়ের হত্যা বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সত্য সাক্ষ্য দিয়েছিলেন  । কিন্তু সে কথা  সেভাবে লেখা হয়নি।   তিনি তার মায়ের হত্যা বিষয়ে সত্য সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিলেন কোর্টে এসে।  তাকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়েছিল সাঈদী সাহেবকে জড়িয়ে । কিন্তু  তাতে তিনি রাজী হননি  বিধায় তাকে রাষ্ট্রপক্ষ কোর্টে আনেনি এবং বলেছে তাকে পাওয়া যাচ্ছেনা। সাঈদীর সন্ত্রাসীর ভয়ে সে নিখোঁজ।

ভাগীরথী হত্যাকান্ড এবং  স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র :

ভাগীরথীর হত্যাকান্ড বিষয়ে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় একটি রিপোর্ট ছাপা হয় “বর্বরতার রেকর্ড” শিরোনামে । সে রিপোর্টটি  কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র নামক মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রমান্য   গ্রন্থে  হুবহু  স্থান পায়।

ভাগীরথী হত্যা বিষয়ে  দৈনিক আজাদ পত্রিকায় লেখা হয়েছিল “‘মহাদেবের জটা থেকে” নয় বাংলা মায়ের নাড়ী ছিঁড়ে জন্ম দিয়েছিলেন যে সোনার মেয়ে সে ভাগীরথীকে ওরা জ্যান্ত জীপে বেঁধে শহরের রাস্তায় টেনে টেনে হত্যা করেছে। খান দস্যুরা হয়তো পরখ করতে চেয়েছিল ওরা কতখানি নৃশংস হতে পারে। বলতে হয় সেক্ষেত্রে ওরা শুধু সফলই হয়নি, বর্বরতার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অষ্টাদশী ভাগীরথী ছিল বরিশাল জেলার পিরোজপুর থানার বাঘমারা কদতলীর এক বিধবা পল্লীবালা। বিয়ের এক বছর পর একটি পুত্র সন্তান কোলে নিয়েই তাকে বরণ করে নিতে হয় সুকঠিন বৈধব্য।

স্বামীর বিয়োগব্যথা তাঁর তখনও কাটেনি। এরই মধ্যে দেশে নেমে এল ইয়াহিয়ার ঝটিকা বাহিনী। গত মে মাসের এক বিকেলে ওরা চড়াও হলো ভাগীরথীদের গ্রামে। হত্যা করলো অনেককে যাকে সেখানে যেভাবে পেলো। এ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও ভাগীরথীকে ওরা মারতে পারলো না। ওর দেহলাবণ্য দস্যুদের মনে যে লালসা জাগিয়েছিল তাতেই হার মানল তাদের রক্তপিপাসা। ওকে ট্রাকে তুলে নিয়ে এল পিরোজপুরে। তারপর ক্যাম্পে তার উপর চালানো হলো হিংস্র পাশবিক অত্যাচার।
সথী নারী ভাগীরথী। এ পরিস্থিতিতে মৃত্যকে তিনি একমাত্র পরিত্রাণের উপায় বলে ভাবতে লাগলেন। ভাবতে ভাবতেই এক সময় এল নতুন চিন্তাÑ হ্যাঁ মৃত্যুই যদি বরণ করতে হয় ওদেরইবা রেহাই দেবো কেনো? ভাগীরথী কৌশলের আশ্রয় নিল এবার। ভাগীরথী ওদের কাছ থেকে জেনে নিতে শুরু করলো পাক বাহিনীর সব গোপন তথ্য। এক পর্যায়ে বিশ্বাসভাজন ভাগীরথীকে ওরা নিজের ঘরেও যেতে দিলো। আর কোনো বাধা নেই। ভাগীরথী এখন নিয়মিত সামরিক ক্যাম্পে যায় আবার ফিরে আসে নিজ গ্রামে।
এরই মধ্যে চতুরা ভাগীরথী তার মূল লক্ষ্য অর্জনের পথেও এগিয়ে গেল অনেকখানি। গোপনে মুক্তিবাহিনীর সাথে গড়ে তুলল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।
এরপরই এল আলস সুযোগ। জুন মাসের একদিন ভাগীরথী খান সেনাদের নিমন্ত্রণ করলো তার নিজ গ্রামে। এদিকে মুক্তিবাহিনীকেও তৈরি রাখা হলো  যথারীতি। ৪৫ জন খান সেনা সেদিন হাসতে হাসতে বাগমারা কদমতলা এসেছিল কিন্তু তার মধ্যে ৪/৫ জন ক্যাম্পে ফিরতে পেরেছে বুলেটের ক্ষত নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে। বাকিরা ভাগীরথীর গ্রামেই শিয়াল কুকুর শকুনের খোরাক হয়েছে। এরপর আর ভাগীরথী ওদের ক্যাম্পে যায়নি। ওরা বুঝেছে, এটা তারই কীর্তি। কীর্তিমানরা তাই হুকুম দিল জীবিত অথবা মৃত ভাগীরথীকে যে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে নগদ এক হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
কিন্তু ভাগীরথী তখনও জানতো না ওর জন্য আরো দুঃসহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। একদিন হাটবারে তাকে শহরের রাস্তায় এনে দাঁড় করানো হলো জনবহুল চৌমাখায় ..........।
এরপর ভাগীরথীকে গাড়ির পেছনে বেঁেধ শহরের রাস্তায় টেনে নিমর্মভাবে হত্যার বিরবন দেয়া হয়েছে আজাদের রিপোর্টে।

১৫ সাক্ষী থেকে সেফ হাউজ ডায়েরি :
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  গণেশ চন্দ্রসাহাসহ  ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী  তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের  পর থেকে  সে  আদেশ পুনরায় বিবেচনার জন্য আসামী পক্ষ দীর্ঘ আইনী লড়াই করেছেন। সর্বশেষ তারা সেফ হাউজের ডকুমেন্ট হাতে পাবার পর  গত
৯ মে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। গত ৩রা জুন এ বিষয়ে শুনানীর সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের সমস্ত কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে  বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে  কারণ দাবি করছেন তা    সম্পূর্ণ মিথ্যা। যে ১৫ জনের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে তাদের মধ্যকার  বেশ কয়েকজন সাক্ষীসহ  রাষ্ট্রপক্ষের আরো অনেক সাক্ষী  হেফাহাউজে   (ঢাকায় যেখানে সাক্ষী  এনে রাখা হত)   রাখা হয়েছিল। কিন্তু তারা তাদের শেখানো মতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় তাদেরকে  কোর্টে  আনেনি তারা । 

গত ১২ জুলাই ট্রাইব্যুনাল রিভিউ আবেদন খারিজ করে  দেন ।
তাজুল ইসলাম   গতকাল রাতে দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা  প্রমানসহ বলেছিলাম রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে যেসব কারণ এবং অভিযোগ  উল্লেখ করেছে তা মিথ্যা।  আজ আমরা সেই ১৫ সাক্ষীর একজন গণেশকে হাজির করে আরো একবার তাদের দাবি মিথ্যা প্রমান করলাম। মাওলানা সাঈদীল পক্ষে আরো অনেকে সাক্ষ্য দিতে চান। কিন্তু  নিরাপত্তার কারনে তারা সময়মত আসতে পারছেননা। সময় এবং সুযোগ পেলে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমান করতে পারব।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  সাক্ষী হাজিরের আজই  ছিল শেষ সুযোগ। ১৭ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে  ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ  কোজড।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন,   বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, মনজুর আহমেদ আনসারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।





সোমবার, ২২ অক্টোবর, ২০১২

তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচারনের অভিযোগে শোকজ জারি



মেহেদী হাসান
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ এ আসামী পক্ষের অন্যতম অইনজীবী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচরনের অভিযোগে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে আজ। অসদাচরন এবং পেশা বিরোধী কাজের অভিযোগে কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবেনা সে মর্মে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জবাবদানের জন্য নির্দেশ  দিয়েছেন কোর্ট।

আজ সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে তাজুল ইসলাম গতকালের ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সাক্ষী মিছবাহুর রহমানের বিরুদ্ধে  পদক্ষেপ গ্রহনের আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে  পনুরায় পদক্ষেপ গ্রহন করবেননা  বলে জানান। তাজুল ইসলাম তখন বলেন, তাহলে তার পক্ষে আর কোর্টে থাকা সম্ভব নয়। ট্রাইব্যুাল তাকে কোর্টরুম ত্যাগ করতে বারন করা সত্ত্বেও তিনি কোর্টরুম ছেড়ে চলে আসায় তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হল।


আজ সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে আসামী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির গতকাল সোমবারের ঘটনার  উল্লেখ করে বলেন, এভাবে সাক্ষী কর্তৃক আমাদের একজন আইনজীবীকে শিবিরের ক্যাডার আখ্যায়িত করাটা আমাদের পেশার জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ। এর একটি প্রতিকার হওয়া উচিত।

এরপর   ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে নির্দেশ দেন  সাক্ষী মিছবাহুর রহমানকে জেরা করার জন্য। আধাঘন্টার মধ্যে জেরা শেষ করতে হবে বলে ট্রাইব্যুনাল জানান।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল  হক বলেন, আসামী পক্ষের যিনি জেরা করবেন তিনি ছাড়া এবং রাষ্ট্রপক্ষের যিনি সংশিষ্ট আইনজীবী তিনি ছাড়া অন্য কেউ কোন কথা বলতে পারবেননা। দাড়াতেও পারবেননা।

মিজানুল ইসলাম এসময় বলেন, আমরা আশা করেছিলাম গতকালের ঘটনা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এসময় মিজানুল ইসলাম আরো কিছু কথা বলায় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান  বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, মি, মিজানুল ইসলাম ইউ আর লুজিং  ইউর টাইম। প্লিজ স্টার্ট ক্রস ইক্সামিনেশন।

মিজানুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের নিবেদনও পেশ করতে পারবনা? এটাতো দু:খজনক।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সাক্ষীর বিরুদ্ধে আপনারা বলতে পারেন। কিন্তু তিনি তো এখানে আপনাদের অভিযোগের জবাব দেয়ার অবস্থায় নেই। কাজেই তার বিরুদ্ধে আমরা কিভাবে ব্যবস্থা নেব?
এসময়  সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গতকালের ঘটনার পর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান নির্দেশ দিয়েছিলেন গতকালই জেরা শেষ করতে   হবে। আপনার অনুরোধে আজ আবার আধাঘন্টা সময় দেয়া হয়েছে এবং সাক্ষীকে আনা হয়েছে।  এরপর এবং ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান যা বলেছেন  তারপরতো আর এ বিষয়ে কোন কথা থাকতে পারেনা।
এরপরও মিজানুল ইসলাম তাজুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে  যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত রাখেন। তখন পৌনে এগারটা  বাজে। তার জন্য বরাদ্দ  আধা ঘন্টা সময় থেকে ১০ মিনিট পার হয়ে গেছে।  বিচারপতি নিজামুল ইসলাম বলেন, মি. মিজানুল ইসলাম আমরা ১১টা ১০ মিনিটে জেরা বন্ধ করে দেব। আপনি ট্রাইব্যুনালের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। দয়া করে শুরু করেন।

এসময় তাজুল ইসলাম দাড়িয়ে বলেন, সাক্ষী গতকাল তাকে  ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করে যে কথা বলেছেন তার প্রতিকার করতে হবে। আমরা এ কোর্টের অফিসার। আমাদের সুরক্ষা প্রদান করা  কোর্টের দায়িত্ব। এভাবে যদি সাক্ষী যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন একজন আইনজীবীকে কোর্টে এসে এবং তার যদি কোন প্রতিকার না হয় তাহলে মান সম্মান নিয়ে একজন আইনজীবী হিসেবে আমার পক্ষে এ কোর্টে থাকা সম্ভব নয়। আমাকে কোর্ট ত্যাগ করে চলে যেতে হবে।
এসময়  বিচারপতি নিজামুল  হকট্রাইব্যুনালের বিধি পড়ে শোনান তাজুল  ইসলামকে। তিনি বলেন, আপনি আসামীর পক্ষে ওকালাতনামা দিয়েছেন। ওকালাতনামা অনুযায়ী আপনি এখানে  কোর্টে থাকতে  বাধ্য। এভাবে চলে যাওয়া মিসকনডাক্ট (অসদাচরন) এবং আপনার পেশার বিরোধী কাজ। আপনি ভাল করে আইন এবং রুলস পড়েন। 
তাজুল ইসলাম বলেন, আমি  খুব ভাল করে পড়েছি। এবং পড়েই বলছি  আমার পক্ষে এখানে থাকা সম্ভব নয়।
 ট্রাইব্যুনাল বলেন আমি নির্দেশ দিচ্ছি তাজুল সাহেব আপনি বসেন। টেক ইউর সিট প্লিজ।
কিন্তু তাজুল ইসলাম এ নিদের্শ অমান্য করে কোর্ট রুম  থেকে বের হয়ে যান।
 তিনি  দরজা পর্যন্ত পৌছামাত্র বিচারপতি নিজামুল হক কোর্ট অফিসারকে বলেন, টেক ডাউন । এরপর তিনি আদেশ লেখার জন্য ডিকটেট করেন।
আদেশ :
এটা প্রতীয়মান যে, জনাব তাজুল ইসলামকে সবসময়  ুব্ধ মনে হয়েছে। গতকালের   বিতর্কের সময় আমরা বারবার তাজুল  সাহেবকে বলেছি, তাজুল সাহেব আপনি দাড়াবেননা। বসেন। কিন্তু তিনি প্রতি ৩.৪ মিনিট পরপর দাড়িয়ে যান। এটা  একটা সমস্যা তৈরি করে। এর এক পর্যায়ে সাক্ষী আইনজীবীকে লক্ষ্য করে কিছু মন্তব্য করেন যা  তাজুল সাহেবকে আহত করেছে। 

আমরা মনে করি পুরো বিষয়টার জন্য তাজুল ইসলাম দায়ী। এমনকি তাকে বসতে বলার আদেশ দেয়ার পরও  বার বার তিনি দাড়াচ্ছিলেন। গতকাল এবং আজো তিনি বেপরোয়া ব্যবহার করেছেন কোর্টের সাথে। তিনি দাবি করেছেন সাক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তিনি কোর্টে থাকবেননা। আমরা তাকে আদেশ দিলাম বসার জন্য। কিন্তু তিনি বেপরোয়াভাবে কোর্ট রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। এটা একটা অসদাচারন  এবং একজন আইনজীবী হিসেবে পেশা বিরোধী কাজ।
তার বিরুদ্ধে কেন অসদাচরন এবং পেশা বিরোধী আচরনের জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবেনা সে মর্মে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেয়া হল। জবাব পাবার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা  হবে।
আদেশে কিছু  শব্দ পরিবর্তন হতে পারে বলেন তিনি।

আদেশ পাশের পর অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের সামনে অপক্ষেরত সাংবাদিকদের বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক, অনকাঙ্খিত। সাক্ষীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে  শুধুমাত্র আইনজীবীর বিরুদ্ধে  এ আদেশ দেয়া ঠিক হয়নি বলে আমি  মনে করি।



মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর  মামলায় গতকাল সোমবার সাক্ষী মিছবাহুর রহমান, আসামীপক্ষ এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে তীব্র হট্টগোল হয়  হট্টগোলের । জেরা নিয়ে এ হট্টগোল বাঁধে। এসম  সাক্ষী মিছবাহুর রহমান তাজুল ইসলামকে বলেন,  তিনি (তাজুল ইসলাম)  আইনজীবী বেশে শিবিরের ক্যাডার হিসেবে এখানে এসেছেন। তাজুল ইসলামও তাকে বেয়াদব বলেন।





মাওলানা সাঈদীর মামলার আর্গুমেন্ট শুরু ৫ নভেম্বর

মাওলানা  দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আগামী পাঁচ নভেম্বর যুক্তিতর্ক  (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপনের জন্য নির্ধারন করা হয়েছে। আজ আন্তর্জাতিক  অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১   তারিখ নির্ধারন করে এ আদেশ দেন। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা    তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করবেন।  তাদের পর্ব শেষ হলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি তর্ক পেশ করবেন।

এদিকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  বাকী সাক্ষী উপস্থাপনের  জন্য আগামীকাল  শেষবারের মত সময় পাবেন।
ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেন, ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাদের  আজ এবং আগামীকাল সময় দেয়া হল।
গত বৃহষ্পতিবার ১৮ অক্টেবার ট্রাইব্যুনাল  এক আদেশে বলেছিলেন রোববার  ২১ নভেম্বর মাওলানা  সাঈদীর পক্ষে বাকী সব সাক্ষী উপস্থাপন করতে হবে।  ওইদিন যদি তারা  সব সাক্ষী হাজির করতে না পারে তাহলে তাদের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা  হবেনা এবং আর কোন সময়ও তাদের দেয়া হবেনা। কিন্তু  গত রোববার আসামী পক্ষ মাত্র একজন নতুন সাক্ষী হাজির করেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে মোট ২০ জন সাক্ষী নির্ধারন করে দেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে  এখন পর্যন্ত মোট ১৬ জন সাক্ষী হাজির করা হয়েছে। গতকালও তারা কোন নতুন সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী হাজিরের জন্য আরো এক সপ্তাহ সময় চেয়ে বিচার মুলতবি রাখার আবেদন করা হয় ।
এ  আবেদনের পক্ষে  শুনানীতে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সমস্ত মেশিনারি কাজ করেছে  রাষ্ট্রপক্ষের  মামলা এবং সাক্ষী  হাজিরের জন্য। সে অবস্থায় তারাও সব সাক্ষী হাজির করতে পারেননি এবং বেশ কয়েকবার সময় নিয়েছেন। এই যদি হয় তাদের অবস্থা তাহলে আমাদের সাক্ষীদের অবস্থা কি হবে তা সহজেই অনুমেয়। কারণ আমাদের সাক্ষীরা রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে। যেখানে রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে সাক্ষী সেখানে আমরা কিভাবে রাষ্ট্রের পুলিশের কাছে আমাদের সাক্ষীদের নিরাপত্তা চাইতে পারি। উ
তারা আমাদের  সাক্ষীদের নিরাপত্তা প্রদান তো দূরের কথা বরং আমাদের সকল সাক্ষীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা তল্লাসী, হয়রানি করেছে। বাড়ির লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কারো কারো বাড়িতে গিয়ে তছনছ করেছে  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী হবার কারনে।


মিজানুল ইসলাম বলেন,  আমাদের প্রথম সাক্ষী শামসুল আলম তালুকদার এ কোর্টে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন এ খবর টিভিতে প্রচারের সাথে সাথে তার গ্রামের বাড়িতে পুলিশ গিয়েছে। তার লাইসেন্স করা বন্দুক পর্যন্ত তারা সিজ করে নিয়ে গেছে। শামসুল আলম তালুকদার  একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সুন্দরবন সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন আহমেদের তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। তার অবস্থা যদি হয় এই তাহলে অন্যদের অবস্থা কি।
মিজানুল ইসলাম বলেন, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি সাক্ষী হাজিরের জন্য। কিন্তু কিছু সমস্যা হচ্ছে। এজন্য আরো এক সপ্তাহ সময় দরকার।

এছাড়া গতকাল রাষ্ট্রপক্ষের দুজন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী এবং গনেশ চন্দ্র সাহাকে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আইনজীবীরা।  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী  তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় তাদের মধ্যে এ দুজনও রয়েছে। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে তাদেরকে সাক্ষী হিসেবে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করা হয়েছিল।
ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে বলেন আসামী পক্ষ যাকে খুসী তাদের পক্ষে সাক্ষী হিসেবে আনতে পারবে। সেটা  তাদের বিষয়। তবে ট্রাইব্যুনাল সমন জারি করবেনা।





সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৫ তম সাক্ষী/// পরে জেনেছি এবং শুনেছি উনি ছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী

বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের  চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৫ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে আজ। সাক্ষীর নাম নিজামউদ্দিন আহমেদ। বাড়ি লোহাগড়া।  ১৯৭১ সালে   তার বয়স ছিল ১৮ বছর এবং এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

সাক্ষী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার পর ৫ জুলাই হাজারি ইউনিয়নে অবস্থিত  তাদের ক্যাম্প থেকে তাকে এবং  তার দুজন সহযোদ্ধাকে  পাকিস্তানী সৈন্যরা ধরে নিয়ে যায়।  ধরে নিয়ে যাবার সময় পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে  তিন থেকে চারজন সাদা পোশাকের  স্মার্ট যুবক  ছিল। এরপর তাদেরকে গুডস হিলে নিয়ে যাওয়া হয়। গুডস হিলে নিয়ে নির্যাতন করা হয় । একদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নির্যাতন চলে। সাক্ষী বলেন, যারা আমার ওপর অত্যাচার করেছে তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে যারা আমাদেরকে ক্যাম্প থেকে ধরে  এনেছিল তাদের মধ্যে ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেবের এক ছেলে ছিল। পরে জেনেছি এবং শুনেছি উনি ছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এ বিষয়ে আমি এবং অন্যরাও পত্রপত্রিকায় লিখেছি।
এছাড়া সাক্ষী তার বেশ লম্বা জবানবন্দীতে আর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাম বলেননি।

সাক্ষী জানান বেশ কয়েকদিন  গুডস হিলে, চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে এবং ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর পর চট্টগ্রাম জেলে পাঠানো হয়। ১৮ নভেম্বর তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। এরপর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়।

জবানবন্দীর শুরুতে সাক্ষী বলেন তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক। তবে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী প্রদানের পর রয়টার্স থেকে তার চাকরি চলে যায়। বর্তমানে তিনি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন।

জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা  শুরু করেন আসামী পক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুলতান মাহমুদ সিমন সাক্ষীকে পরিচালনা করেন জবানবন্দী গ্রহনের সময়।

মিছবাহুর রহমানের জেরা শেষ


মাওলানা  মতিউর রহমান নিজামীর  বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর জেরা আজ শেষ হয়েছে। তাকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।

জেরা :
প্রশ্ন : আলবদর প্রশিক্ষন ক্যাম্প সর্বপ্রথম কবে কোন জেলায় শুরু হয় তা জানা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আলবদর প্রশিক্ষনের জন্য পাকিস্তান সেনা বাহিনীর কোন অফিসার মূল দায়িত্বে ছিলেন ?
উত্তর : নির্দিষ্ট কোন অফিসার ছিল  কি-না জানা নেই। তবে জামায়ত এটা নিয়ন্ত্রন করত।
প্রশ্ন : আপনার গবেষনাকালে কোন প্রশিক্ষন কেন্দ্রের কোন কোন প্রশিক্ষনার্থীর সনদ সংগ্রহ করতে পেরেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কতজন আলবদরের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন?
উত্তর : একাধিক।
প্রশ্ন : কতজন ধর্ষিতার সাক্ষাকার নিয়েছেন?
উত্তর : কারা নয়।
প্রশ্ন : ইসলামী ছাত্রসংঘের এমন কোন সিদ্ধান্তের কপি কি আপনার কাছে এসেছে  যাতে বলা হয়েছে ছাত্রসংঘের সবাইকে আলবদর বাহিনীতে যোগ দিতে হবে?
উত্তর : না। তবে মতলিব সাহেবের চিঠির মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি
প্রশ্ন : আলবদর বাহিনীতে যোগদানের বিষয়ে নিজামী সাহেবের নির্দেশ সম্বলিত, লিখিত কোন নির্দেশনা বা চিঠি আপনি  ১৯৭১ সালে বা তৎপরবর্তীতে পাননি।
উত্তর : পাইনি।
প্রশ্ন :  আপনি ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যপদ কখনোই গ্রহণ করেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আমি বলছি মতলিব সাহেব নিজামী সাহেবের উদ্ধৃতি দিয়ে কখনো আপনাকে কোন চিঠি দেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : মতলিব সাহেবের যে চিঠির কথা বলছেন তা বানোয়াট,  আপনার সৃজিত।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : রাজনৈতিক হিরো  সাজার আকাঙ্খায় আপনি নিজে এ চিঠি তৈরি করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : মৌলভিবাজার ইসলামী ছাত্রসংঘের সাংগঠনিক জেলা হিসেবে কখনোই স্বীকৃত ছিলনা।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি রাজনৈতিক সুবিধাবাদী এবং সুবিধা আদায়ারে জন্য এ সাক্ষ্য দিতে আসলেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি সময় এবং সুযোগমত রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করেন।
উত্তর : সত্য নয়।

রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১২

মিছবাহুর রহমানের জেরার সময় তীব্র হট্টগোল ট্রাইব্যুনালে



 মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে জেরার সময় আজ  তীব্র হট্টগোল দেখা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এ। সাক্ষী, আসামীপক্ষ  এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের  ত্রিমুখী ত্রিমুখী বাগবিতন্ডা এবং উত্তেজনার এক পর্যায়ে  কিছুই শোনা যাচ্ছিলনা। যে যার মত করে পরষ্পরকে আক্রমন করে যাচ্ছিলেন। সাক্ষী এবং উভয় পক্ষের আইনজীবীরা  দাড়িয়ে, হাত উচিয়ে পরষ্পরকে মৌখিকভাবে আক্রমন চালান। বেশ কিছুক্ষন এভাবে চলার পর ট্রাইব্যুনাল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।

মিছবাহুর রহমান চৌধুরী  মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী। গতকাল তাকে জেরার সময় একটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সূত্রপাত। উত্তেজনার এক পর্যায়ে  সাক্ষী মিছবাহুর রহমান আইনজীবী তাজুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে  বলেন,  সে  আইনজীবীর বেশে শিবিরের ক্যাডার হিসেবে এখানে  এসেছে এবং আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। তাজুল ইসলামও তাকে বেয়াদব বলেন। এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলতাফ হোসেনও দাড়িয়ে তীব্রস্বরে প্রতিবাদ করতে থাকেন। তার সাথে যোগ দেন  রাষ্ট্রপক্ষের অপর আইনজীবী সুলতান মাহমুদ সিমনও।

এর আগেও সাক্ষীকে জেরার সময় উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বেশ কয়েকবার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু গতকালের হট্টগোলের মাত্রা অতীতের সব   উত্তেজনাকে ছাড়িয়ে গেছে।


উত্তেজনা শেষ হলে তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের কাছে  বলেন, সাক্ষী আমাকে শিবিরের ক্যাডার বলেছেন। কোর্টে এসে আইনজীবীকে হুমকি দিয়েছে। আগে এর বিচার করতে হবে। তা না হলে আমরা মামলা পরিচালনা করতে পারবনা। সাক্ষী মিছবাহুর রহমান চৌধুরীও এসময় তাজুলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, সে আমাকে বেয়াদব বলেছে।

যেভাবে সূত্রপাত : মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে জেরার সময় আইনজীবী মিজানুল ইসলাম প্রশ্ন করেন “আপনি আপনার  গবেষনার সময় যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের একটি তালিকা করেছেন?”
সাক্ষী জবাব দেন “হ্যা করেছি”
এরপর মিজানুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, “সেই তালিকায় কতজন পাকিস্তান সেনা অফিসারের নাম আছে?”
জবাবে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, এটি শুধু আলবদর বাহিনীর তালিকা।
আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি জানতে চেয়েছি সেই তালিকায়  কতজন পাকিস্তান সেনা  অফিসারের নাম আছে সেটি। আলবদর বাহিনী সংক্রান্ত কোন প্রশ্নতো আমি করিনি। আগে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে তারিকায় পাকিস্তান আর্মি অফিসারের নাম আছে কি নাই।

এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে বলা হয়  সাক্ষী যা উত্তর দিয়েছে তাই যাবে। মিজানুল ইসলাম তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেন আমি আল বদর নিয়ে কোন প্রশ্ন করিনি। কাজেই কেন আল বদর বিষয়ে লেখা হবে এ প্রশ্নের জবাবে।
এসময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, মিজান সাহেব আপনি প্রথমে প্রশ্ন  করেছেন তিনি যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতা বিরোধীদের  তালিকা করেছেন কি-না। তিনি বলেছেন ‘হ্যা’ ।  এরপর আপনি প্রশ্ন করেছেন সেই তালিকায়

কয়জন পাকিস্তান সেনা অফিসারদের নাম আছে। তাহলে  পরের প্রশ্নের জবাবে আল  বদর বিষয়  অন্তর্ভুক্ত  করতে সমস্যা কোথায়।
মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি প্রথম প্রশ্নটি করিনি। আমি একটি প্রশ্ন করতে চেয়েছি। এসময় ট্রাইব্যুনাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনি না বললে প্রশ্নটি লেখা হল কিভাবে। ট্রাইব্যুনাল এসময় বলেন, প্রয়োজনে ভিডিও দেখা হবে।
মিজানুল ইসলাম  আবারো বলেন, আমি একটি প্রশ্ন করতে চেয়েছি। আলবদর বিষয়ে কোন প্রশ্ন আমি করিনি কাজেই সে উত্তর কেন লেখা হবে।  মিজানুল ইসলাম প্রস্তাব করেন তার এ প্রশ্নটি প্রয়োজনে বাদ দেয়া হোক। মিজানু ইসলাম গতকাল  এর আগেও আরেকটি  প্রশ্ন নিয়ে সমস্যা হওয়ায়  সেটি বাদ দিতে বলেন এবং ট্রাইব্যুনাল বাদ দেন।

এরপর  ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তক্রমে সাক্ষী মিছাবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, তার সেই তালিকায় পাকিস্তান সেনা অফিসারে নাম নেই। সেটি রেকর্ড করেন কোর্ট।
এরপর  মিজানুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, “পাকিস্তান আর্মির পূবাঞ্চল বা পশ্চিমাঞ্চলের কোন অফিসার বা কমান্ডার আলবদর বাহিনী নিয়ন্ত্রন করত তার নাম আপনার গবেষনায় এসেছে?”
সাক্ষী  জবাবে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আল বদর বাহিনী নিয়ন্ত্রন করত জামায়াত।
সাথে সাথে মিজানুল ইসলাম আপত্তি জানিয়ে বলেন, আমি কি প্রশ্ন করলাম আর উনি কি উত্তর দিলেন। আমিতো এ প্রশ্ন করিনি। এসময় তাজুল ইসলাম বলেন, আইন অনুযায়ী সাক্ষী প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য।
সাক্ষী মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, মাই লর্ড আমি এখানে একটি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি। ওনারাও একটি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি। তারা একটি প্রশ্ন করেন। তার জবাব তাদের পছন্দ না হলে তারা সেটি বাদ দিতে বলেন। এসময়   উত্তেজনা শুরু হয়ে যায়। মিছবাহুর রহমান চৌধুরী তাজুল ইসলামকে লক্ষ্য করে বলেন, মি. লর্ড, আপনি কোর্টের আইন না মানতে পারেন। আমিও পলিটিক্স করি। .... এরপর সাক্ষী এবং উভয় পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে তীব্র হট্টগোলে কারো কথা কিছূ বোঝা যায়নি।  সাক্ষী মিছবাহুর রহমান এবং তাজুল ইসলাম উভয়ে দাড়িয়ে পরষ্পরকে তীব্র ভাষায় আক্রমন করে যাচিছলেন। উভয় পক্ষের সব আইনজীবীরা দাড়িয়ে যান তখন। সাক্ষী মিছবাহুর রহমান অনবরত বলে যাচ্ছিলেন। তাজুল ইসলাম কোর্টের কাছে সাক্ষী থেকে আত্মরক্ষা কামনা করেন। কোর্ট  সবাইকে থামার জন্য বারবার নির্দেশ  দেন। কিন্তু সে নিদের্শ তখন  কারো কানে পৌছানোর মত পরিস্থিতি ছিলনা। বেশ কিছুক্ষন এভাবে চলার পর কোর্ট সাক্ষী মিছবাহুর রহমান এবং  তাজুল ইসলামকে  উচ্চস্বরে কঠোরভাবে  নির্দেশ দেন থামার জন্য। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

কোর্ট শেষে সামনের বেঞ্চে বসা আসামী পক্ষের আইনজীবীদের কাছে নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় হট্টগোলের সময় মিছবাহুর রহমানকে কি বলেছিলেন। তারা জানান, সাক্ষী  তাজুল  ইসলামকে বলেছেন, সে শিবিরের ক্যাডার। আইনজীবীর বেশে কোর্টে এসেছে।
সাক্ষী মিছাহুর রহমান চৌধুরী   পরে কোর্টের কাছে অভিযোগ করেছেন তাজুল ইসলাম তাকে বেয়াদব বলেছেন।

পরিস্থিতি  শান্ত হলে কোর্ট মিজানুল ইসলামকে বলেন, জেরা শুরু করেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, এখন সাড়ে চারটা বাজে।   আমার মনের এখন যা অবস্থা তাতে আজ আর আমার পক্ষে জেরা করা  সম্ভব নয়। দয়া করে আজ মুলতবি করেন।

কোর্ট বলেন, আজই জেরা শেষ করতে হবে । আজ ওনাকে আমরা  বিদায় দেব।  তাকে আর আনা হবেনা।  (মিছবাহুর রহমান গত ২৬ আগস্ট জবানবন্দী দেন। তাকে এর আগে মোট পাঁচ দফা জেরা করা হয়েছে। সর্বশেষ জেরার দিন কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন  পরবর্তীতে যেকোন দিন আর এক ঘন্টার মধ্যে জেরা শেষ করতে হবে। )




আজই  জেরা শেষ করার পক্ষে  দীর্ঘ সময় অনড় থাকেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল বলেন,   নিয়ম অনুযায়ী আপনার এক ঘন্টা জেরা করার কথা ছিল। আজ দেড় ঘন্টার মত জেরা হয়েছে।  আজ অনেক জেরা হয়েছে। আজ  জেরা শেষ করতে  হবে। তা না হলে তার জেরা আজ বন্ধ করে দেয়া হবে।
মিজানুল ইসলাম বলেন, এটা কেমন করে হতে পারে। জেরা শেষ  করতে না দিয়ে বন্ধ করে দেবেন। এখনো অনেক প্রশ্ন বাকি আছে।  কণ্ট্রাডিকশন নেয়া হয়নি এখনো।  তাছাড়া আজ সাড়ে চারটা পার হয়ে গেছে।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, আজ জেরা শেষ করতে হবে।    জেরা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোর্ট চলবে।
মিজানুল ইসলাম অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের সম্মানে আমি একটি প্রশ্ন করব। কিন্তু এরপর আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী আমাকে শিবিরের ক্যাডার বলেছেন। আমাকে হুমকি দিয়েছেন। আগে এর বিচার করতে হবে। তা নাহলে আমাদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
বিষয়টি পরে দেখা হবে আশ্বাস দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ট্রাইব্যুনাল মিজানুল ইসলামকে বলেন, আপনার আর কতক্ষন লাগবে?
মিজানুল ইসলাম বলেন, ৪৫ মিনিট।
ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন আপনি কাল আসতে পারবেন?
সাক্ষী বলেন, আমি অসুস্থ। আমার পক্ষে আর আসা সম্ভব নয়।
এরপর ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীকে আদেশ দিয়ে বলেন, আপনাকে কাল আসতে হবে। এটা ট্রাইব্যুনালের আদেশ। সাক্ষী বলেন ঠিক আছে।
এসয় ৪টা ৫০  বেজে যায়। গতকালের মত মুলতবি হয় কোর্ট।

মিছবাহুর রহমানকে জেরা :
প্রশ্ন : বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডে সম্পর্কে যেসব মামলা হয়েছিল তার কোনটাই আপনি দেখেননি আপনার গবেষনার প্রয়োজনে।
উত্তর : না।

এরপর মিজানুল ইসলাম প্রশ্ন করেন “নির্বাচন কমিশিন যাদের নিবন্ধন দেয়ার পর তা আবার বাতিল করে সে তালিকায় প্রথমে ছিল ফ্রিডম পার্টির নাম তা জানেন? সাক্ষী “হ্যা” বলে জবাব দেন।
তবে ট্রাইব্যুনাল এসময় প্রশ্নটি বিষয়ে অষ্পষ্টতার আপত্তি  জানালে মিজানুল  ইসলাম  অনুরোধ করেন প্রশ্নটি বাদ দেয়া হোক। পরে  প্রশ্নটি বাদ দেয়া হয়।

প্রশ্ন : ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশিন যেসব দলের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার একটি তালিকা আছে তা জানেন?
(এ প্রশ্নেও ট্রাইব্যুনাল আপত্তি জানিয়ে  বলেন, এটির ক্ষেত্রেও আগের  সমস্যা রয়ে গেল। তখন তাজুল ইসলাম এবং মিজানুল ইসলাম বলেন, আগের প্রশ্নটির উত্তরে সাক্ষী হ্যা বলেছেন।  এ প্রশ্নটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার। যেসব দলের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে তাদের একটি তালিকা হয়েছিল তা তিনি জানেন কি-না। )
উত্তর : নাই। তবে বাতিল তালিকায় তাদের নাম আছে।
প্রশ্ন : কানাডায় বসবাসরত খালেদ চৌধুরী, পিতা ফজলুল চৌধুরী, মা লুৎফুন চৌধুরী  নামে কাউকে চেনেন?
উত্তর : না। তবে আমার ছেলের নাম  খালেদ চৌধুরী।  আমার বোনের নাম লুৎফুন চৌধুরী। সে কানাডায় থাকে। (মিজানুল ইসলাম এর সাথে যোগ করে বলেন, আপনার ভগ্নিপতির নাম ফজলুল চৌধুরী)
প্রশ্ন : বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড বিষয়ে যেসব মামলা হয়েছিল  তা তদন্তের জন্য একজন ডিআইজকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তার নাম কি আপনার গবেষনায় এসেছে?
উত্তর : না।
এরপর যে সব প্রশ্ন নিয়ে হট্টগোলের সূত্রপাত হয় তা উপরে বর্নিত হয়েছে।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে নতুন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ




মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ  ১৬ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া  ১৩ তম এবয় ১৫ তম সাক্ষীর জেরাও শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যনালের আদেশ ছিল আজ মাওলানা সাঈদীর  পক্ষে বাকী  পাঁচজন সাক্ষী হাজির করার। তা নাহলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ  বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু গতকাল মাওলানা সাঈদীর পক্ষে একজন মাত্র নতুন সাক্ষী হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন  আগামীকাল   সোমবার এ বিষয়ে আদেশ দেয়া  হবে।


১৬ তম সাক্ষীর জবানবন্দী :
আমার নাম আব্দুল হালিম ফকির। বয়স ৫৫ বৎছ। আমার গ্রাম টেংরাখালী, থানা- জিয়ানগর, জেলা- পিরোজপুর। আমি বর্তমানে সাংসারিক, কৃষি কাজ করি। ১৯৭১ সালে আমি নবম শ্রেণীতে পড়াশুনা করতাম। আমি এস,এস,সি পাশ করেছি। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের টেংরাখালী গ্রামে রাজাকার, পিস কমিটি ও পাক বাহিনীর কোন লোক প্রবেশ করে নাই এবং কোন বাড়িঘর লুটতরাজ হয় নাই, কোন লোক নির্যাতিত হয় নাই। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেলোয়ার হোসেন সাইদী সাহেব রাজাকার ছিলেন না, পিস কমিটির সদস্য ছিলেন না,স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন না, মানবতা বিরোধী কোন কাজ তার দ্বারা হয় নাই।

জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১২

মাওলানা সাঈদীর মামলা///বেডে শুয়ে সাক্ষ্য গ্রহনের ব্যবস্থার নির্দেশ ট্রাইব্যুালের


মেহেদী হাসান ,18/10/2012
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষী যাতে  আগামী রোববার  বিছানায়  শুয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন সেজন্য ট্রাইব্যুনাল কক্ষে সিক বেডের ব্যবস্থা গ্রহনের  জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

গতকাল  বুধবার মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১৫ তম সাক্ষী হিসেবে  জবানববন্দী প্রদান করেন  আব্দুস সালাম হাওলাদার। কিন্তু জবানবন্দীর পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওই দিন আর তার জেরা করা সম্ভব হয়নি। আজও  তিনি অসুস্থ থাকায় আসামী পক্ষ তাকে কোর্টে  হাজির করেনি।

এ এছাড়া  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে   অন্য কোন নতুন সাক্ষীও  গতকাল    হাজির করেনি আসামী পক্ষ। এ প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়ে বলেন, আগামী  রোববার বাকী পাঁচ জন সাক্ষীকে  হাজির করতে হবে।  একই সাথে  অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষী যাতে বিছানায় শুয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন সে মর্মে  সিকবেড প্রস্তুত রাখার জন্য  রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ২৩ তম সাক্ষী মধুসূদন ঘরামীকে  ট্রাইব্যুনালে সিক বেডে রেখে ডাক্তারের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

আজ  সকালে মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম শুরু হলে  মামলার তদ্বিকারক মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী  কাঠগড়ায় যান। তিনি মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেছেন এবং তার অসমাপ্ত জেরা শুরু হবার কথা ছিল গতকাল। তাকে জেরার শুরুতে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে প্রশ্ন করেন আপনাদের বাকি সাক্ষীদের খবর কি? মিজানুল ইসলাম বলেন, ১৫ তম সাক্ষী এখনো সুস্থ হয়নি। এছাড়া আমাদের হাতে আজ আর কোন নতুন সাক্ষী নেই। এরপরই ট্রাইব্যুনাল আদেশ প্রদান করেন।

আদেশ :
ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেন, আসামী  পক্ষকে সাক্ষী হাজিরের জন্য যথেষ্ঠ সময় এবং সুযোগ দেয়া হয়েছে।  আসামী পক্ষ জানিয়েছেন তাদের ১৫ তম সাক্ষী অসুস্থ। আমরা তার অসুস্থতা নিয়ে কোন কথা বলতে চাইনা। আমরা রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিচ্ছি এখানে একটি সিক বেডের ব্যবস্থা করতে যাতে অসুস্থ সাক্ষী আগামী রোববার বেডে  শুয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন।
এরপর ট্রাইব্যুনাল বলেন, আগামী রোবার তাদের বাকী পাঁচজন সাক্ষী হাজির করতে  হবে। যদি ওইদিন তারা সব সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের ভবিষ্যতে  আর নতুন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবেনা। তাদেরকে সাক্ষী আনার জন্য আর কোন সময়ও দেয়া হবেনা।
 এরপর মাসুদ সাঈদীর জেরা শুরু হয়।  গতকাল তাকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী। সারাদিন তার জেরা চলে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য  জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।



১৫ তম সাক্ষীর অসুস্থতা প্রসঙ্গ :
গত বুবধবার সকালে  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১৪ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল বলেন পরের সাক্ষী নিয়ে আসেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী অসুস্থ। তবে তিনি  কোর্টে   এসেছেন।  আজ তার

সাক্ষ্য না নিলে ভাল হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন, নিয়ে আসেন তাকে। মিজানুল ইসলাম বারবার  আপত্তি জানিয়ে বলেন, আজ থাক। তবে ট্রাইব্যুনাল আপত্তি না শুনে সাক্ষী হাজিরের নির্দেশ দেন।

দুপুর একটার দিকে  ১৫ তম সাক্ষী আব্দুস সালামের  জবানবন্দী শেষ হয়। এরপর এক ঘন্টার বিরতি দেয়া হয়। বিরতির পর সাক্ষীকে যখন কোর্টে হাজির করা হয় তখন সে অসুস্থ। কাঠগড়ায় মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকেন।  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা  জানান বিরতির সময় তার বমি হয়েছে। এসময়  ট্রাইব্যুনাল কিছূক্ষন সময় নেন সাক্ষী যাতে স্বাভাবিক বোধ করেন সেজন্য।  ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের কাছে  জানতে চান সাক্ষীকে স্যালাইন বা কোন ঔধষ খাওয়ানো হয়েছে কি-না। বা অন্য কোন খাবার খাওয়নো হয়েছে কি-না। আইনজীবীরা জানান,  না । স্যালাইন, ঔষধ খাওয়ানো হয়নি। অন্য খাবার খেতে পারছেনা। এরপর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রাই্যুনালের কোথায় কি হয় সব আমার নজরে আসে।  আমার নজরে আনা হয়। ডিফেন্স রুমে একজন সাক্ষী এভাবে অসুস্থ হয়ে  পড়লেন আর আপনারা আমাদের কিছুই জানালেননা। এটা কি ঠিক করলেন আপনারা?  আপনাদের পাশের রুমেই সহকারি রেজিস্ট্রারের অফিস তাকেও জানাতে পারতেন অন্তত।
মিজানুল ইসলাম বলেন, মনে করেছিলাম বমি বন্ধ হলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু হলনা।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সকালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় তো দেখে ভালই মনে হয়েছিল।
এরপর আবার কিছুক্ষন  সময় দেয়া হয় সাক্ষীকে যাতে সে সুস্থতা বোধ করেন সেজন্য।  কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকেন কোর্ট।
বিচারপতি নিজামুল হক সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি সাক্ষ্য দিতে পারবেন? সাক্ষী বলেন, স্যার আমি এখন পারবনা। একটু সময় দিলে ভাল হয়।
বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, সময় দেয়া হবেনা। পারলে এখন সাক্ষ্য  দেবেন। না হলে বাড়ি চলে যাবেন।  ল ইউলি টেক ইট অউন কোর্স।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, ঠিক আছে সাক্ষীকে নিয়ে যান।
দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে সাক্ষীকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে  বলেন, মি মিজানুল ইসলাম, ২০ জন সাক্ষী হাজির করা আপনাদের পার্ট। দায়িত্ব আপনাদের। এখন অন্য সাক্ষীর (১৩ তম সাক্ষী মাসুদ সাঈদী) জেরা হবে।  এর মধ্যে যদি ওই সাক্ষী সুস্থ হয় তাহলে তার সাক্ষ্য হবে। তা না হলে ল ইউল টেক ইট অউন কোর্স। আপনি জানেন হোয়াট  ইজ ল। পরের সাক্ষী ডকেন।

এরপর ১৩ তম সক্ষিী মাসুদ সাঈদীর অসমাপ্ত  জেরা শুরু হয়।  সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলে জেরা। তখনো তার জেরা শেষ না হওয়ায় বুধবার আর অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষীকে আর ডাকা হয়নি ।

মাসুদ সাঈদীকে বুধবারের জেরা :
প্রশ্ন : আপনারা কয় ভাইবোন?
উত্তর : আমরা চার ভাই। বোন নেই। সম্প্রতি আমার বড় ভাই মারা গেছেন।
প্রশ্ন :   তিন ভাই কোথয় কি পড়াশুনা  করেছেন একটু বলেন।
উত্তর : বর্তমানে বড়ভাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করেছেন।  তারপর আমি তিতুমীর কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি। পরে নিউইয়কের লাগুনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছি। আমার ছোট ভাই সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসি পাশের পর লন্ডনে অথর্নীতিতে পড়াশুনা শেষ করেছে । তবে কলেজের নাম এ মুহুর্তে মনে করতে পারছিনা।
প্রশ্ন : কার কি পেশা ?

উত্তর : বর্তমান বড়ভাই ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করেন। টিকেটিং হজ্ব ওহমরাহ। আমি রিয়েল  এস্টেট ব্যবসা করি।  ছোট ভাই লন্ডনে একটি ফার্মে চাকরি করে।
প্রশ্ন : আপনার দাদার বাবার নাম কি?
উত্তর : গোলাম রহমান সাঈদী।
প্রশ্ন : আপনার বাবার লেখালেখি বা বই আছে?
উত্তর : হ্যা। আমার আব্বার লেখা ৭২টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন : ওনার পেশা কি?
উত্তর : লেখক।
প্রশ্ন : এছাড়া তার অন্য কোন পেশা নেই এবং অতীতেও ছিলনা।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : আপনার সাথে সিতারা বেগমের দেখা হয়নি।
উত্তর : না। মামলার (সিতারা বেগমের মেয়ে মমতাজ বেগম তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি, এবং ভাই সাহেব আলী হত্যার বিচার চেয়ে ১৯৭২ সালে  মমতাজ বেগম যে মামলা করেছিল তার কপি) কপিটি আমি আমার বড় ভাইর কাছ থেকে পেয়েছি।
প্রশ্ন : আপনার বড় ভাইর মুত্যৃ হয়েছে কবে?
উত্তর : গত ১৩ জনু। চার মাস আগে।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম বিষয়ে আপনার সাথে আপনার বড় ভাইর কথাবার্তা হয়েছে?
উত্তর : না। তবে সম্ভবত মমতাজ বেগম তার মায়ের কাছ থেকে মামলার কপিটি এনে আমার ভাইকে দিয়েছেন।
প্রশ্ন : কাগজটি কে কখন তুলেছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : প্রদর্শনী-  এ (মামলার কপি) তে সাহেব আলী বা সাহাবউদ্দিন নাম লেখা আছে?
উত্তর : না। তবে সিরাজ আলী  লেখা আছে।
প্রশ্ন : প্রদশর্নী  -- এ’তে এক নং আসামী হিসেবে পাকিস্তানী সৈন্য পিরোজপুর ক্যাম্প লেখা আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : মামলার কপির প্রত্যেক পাতার পেছনে কোন লেখা বা স্বাক্ষর  আছে?
উত্তর : সিল মারা আছে। কোন লেখা বা স্বাক্ষর নেই।
প্রশ্ন : মামলার এ সাটিফাইড কপিটি সম্পূর্ণরুপে  অত্র মামলার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এবং   কপির ভেতরে উল্লিখতি  মামরার কোন অস্তিত্ব নেই।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম বা মমতাজ বেগমের পরিবারের সাথে আপনার বড় ভাইর ভাল সম্পর্ক ছিল।
উত্তর : না। তবে সিতারা বেগমের ছেলে মোস্তফা হাওলাদারের সাথে আমার ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম ও মোস্তফা হাওলাদার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনাদের কারনেই তারা সাক্ষ্য দিতে আসেননি।
প্রশ্ন : সত্য নয়। তবে অসত্য সাক্ষ্য দিতে রাজী না হওযায় তারা আসেনি।