সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মীর কাসেম আলীর মামলা ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর

মেহেদী হাসান,  ৩০.৯.১৩
দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (এমসি) ও জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর মামলা ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়েছে। আজ  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মীর কাসেম আলীর মামলা ট্রাইব্যুনাল-২ প্রেরণের জন্য স্বতপ্রণদিত (সুয়োমোটো) হয়ে আদেশ দেন।

সকালে মীর কাসেম আলীর পক্ষে দায়ের করা চার্জ গঠনের আদেশ পুর্নবিবেচনা করা এবং মামলার মূলতবি করার আবেদনের উপর সংক্ষিপ্ত শুনানি গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল মামলা স্থানান্তরের আদেশ দেন। মীর কাসেম আলীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সুলতান মাহমুদ সিমন।

আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ট্রাইব্যুনাল-১ এ লার্জ নাম্বার অফ কেসেস পেন্ডিং রয়েছে। এই মামলাটি দ্রুত শুনানি ও নিষ্পত্তি করার জন্য ট্রাইব্যুনাল-২ এ প্রেরণ করা হল।

আদেশের পর তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা তো এটা চাইনি। মামলা ট্রান্সফারের বিষয়ে আমরা একটি শব্দও বলিনি। জবাবে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, আমরা সুয়োমোটো আদেশ দিয়েছি। ট্রাইব্যুনাল আইনে আমাদের এই ক্ষমতা রয়েছে।

আজ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ করার দিন ধার্য ছিল।

গত ৫ সেপ্টেম্বর মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ১৪টি ঘটনায় অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন  করা হয়।
গত ২৬ মে জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ১৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত বছর ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে  ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  এর নির্দেশে। সেই থেকে তিনি বন্দী রয়েছেন।






মুঈনুদ্দিন-আশরাফুজ্জামানের মামলার রায় যে কোন দিন


মেহেদী হাসান, ৩০/৯/২০১৩
চৌধুরী মুঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের মামলার যে কোন দিন রায় ঘোষণা করা হবে। এ দুজনের বিরুদ্ধে  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সমস্ত বিচার কার্যক্রম শেষ হলে আজ মামলার  রায়  অপেমাণ (সিএভি) ঘোষনা করা হয়।

দুই আসামী পলাতক থাকা অবস্থায় তাদের বিচার কার্যক্রম শেষ হল। পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলনা এবং ট্রাইব্যুনাল তাদের পক্ষে দুজন আইনজীবী নিয়োগ দেন রাষ্ট্রীয় খরচে।
এর আগে মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিচার এবং রায় তার অনুপস্থিতিতে হয়েছিল।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্ব তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলার শেষ পর্বে চৌধুরী মুঈনুউদ্দিন পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবী সালমা হাই টুনী। এরপর রাষ্ট্রনিযুক্ত অপর ডিফেন্স আইনজীবী আবদুস শুকুর খান আশরাফুজ্জামান খানের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে। এরপর পাল্টা যুক্তি উপস্থাপনে করে রাষ্ট্রপরে সমাপনী বক্তব্য দেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।  এর মাধ্যমেই এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে সমাপ্ত হয়েছে।

পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন শেষে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, বুদ্ধিজীবী অপহরণ ও হত্যার নায়ক  চৌধুরী মুঈনুদ্দিন  ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ১১টি অভিযোগ আমরা সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করছি। 

পলাতক আশরাফুজ্জামান খান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এবং চৌধুরী মাইন উদ্দিন যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তাদের মধ্যে চৌধুরী মাইনউদ্দিন ১৯৭১ সালে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন।

চৌধুরী মুঈনুদ্দিন  ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গত ২৪ জুন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পূর্বলগ্নে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে রাষ্ট্রপক্ষের আনা সর্বমোট ১১টি অভিযোগে অভিযুক্ত করে ট্রাইব্যুনাল। 

চৌধুরী মুঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগগুলো হল: 
১. সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনকে অপহরণ ও হত্যা।
২. সাংবাদিক সৈয়দ নাজমুল হককে অপহরণ ও হত্যা।
৩. সাংবাদিক আ ন ম গোলাম মোস্তফাকে অপহরণ ও হত্যা।
৪. সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমদকে অপহরণ ও হত্যা।
৫. সাংবাদিক সেলিনা পারভিনকে অপহরণ ও হত্যা।
৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিনসহ আটজন শিক্ষককে অপহরণ ও হত্যা।
৭. অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীকে অপহরণ ও হত্যা।
৮. অধ্যাপক মনির চৌধুরীকে অপহরণ ও হত্যা।
৯. সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারকে অপহরণ ও হত্যা।
১০. অধ্যাপক ফজলে রাব্বীকে অপহরণ ও হত্যা।
১১. ডা. আলীম চৌধুরীকে অপহরণ ও হত্যা। 

চৌধুরী মুঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ১৬টি অভিযোগ এনেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। এরমধ্যে ১১টি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-২।

আজ  আশরাফুজ্জামানের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কলে রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবী আবদুস শুকুর খান বলেন, আশরাফুজ্জামান যুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত নন। আশরাফুজ্জামানের কোন ডায়রি উদ্ধার করা হয়নি। পত্রপত্রিকায় ডায়রির বিষয়ে যা লেখা হয়েথে তা পাকিস্তানের জেনারেল রাও ফরমান আলীর নিজের হাতের লেখা। পাকিস্তান সেনা বাহিনীর কোন অফিসার বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছে। আর ডায়রির যে পাতাগুলো উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে তা অন্য কোন ডায়রির পাতা। তিনি বলেন, ঘটনার পর দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্টে এসেছে বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়ক পাকিস্তান আর্মির জেনারেল রাও ফরমান আলী।  

রাষ্ট্র যুক্তি অপর ডিফেন্স আইনজীবী সালমা হাই টুনী বলেন, চৌধুরী মইন উদ্দিন ঘটনার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দৈনিক পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টর ছিলেন। তিনি একজন ব্যাস্ততম রিপোর্টর হিসেবে সাংবাদিকতার কাজেই ব্যস্ত থাকতেন। তিনি কাউকে অপহরণ বা হত্যার সাথেও জড়িত ছিলেন না।


মামলার বিবারণ: গত ২২ সেপ্টেম্বর চৌধুরী মুঈনুদ্দিন  ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। ২৩ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর তিন দিন রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করে। এরপর ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বার রাষ্ট্র নিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবীরা যুক্তি পেশ করেন।
গত ১৫ জুলাই থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুই তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির ও আতাউর রহমানসহ রাষ্ট্রপরে মোট ২৫ জন সাী স্যা দিয়েছেন।

গত ২৭ মে পলাতক দুই আসামী চৌধুরী মুঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে দুইজন আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু করার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল-২। ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর আব্দুস শুক্কুর খান ও সালমা হাই টুনীকে আসামীপক্ষের আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়। গত ২৫ এপ্রিল পলাতক চৌধুরী মুঈনুদ্দিন  ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ ১৬টি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমার চার্জ) দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রসিকিউশনের দেয়া অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ২ মে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরের বেজড়া ভাটরা (চিলেরপাড়) গ্রামের মৃত আজহার আলী খানের পুত্র মোঃ আশরাফুজ্জামান খান এবং ফেনী জেলার দাগনভুঞার চানপুর চৌধুরী বাড়ি (জগতপুর ফালিজেরঘাট) গ্রামের মৃত দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীর পুত্র চৌধুরী মুঈনুদ্দিন । 


মাওলানা সাঈদীর আপিল শুনানী চলছে

৩০/৯/৩০১৩
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন বিষয়ে শুনানী অব্যাহত রয়েছে। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আইনজীবীরা আজ সোমবার  পর্যন্ত  ট্রাইব্যুনালের রায় পড়া শোনানো  শেষ করেছেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং জেরা পড়ে শোনানো শুরু হয়েছে।  আজ রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী এবং মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদারের জবানবন্দী পড়া শেষে জেরা পড়ে শোনানো শুরু হয়েছে। এ পর্যায়ে শুনানীর কার্যক্রম আগামীকাল  মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা চলছে

৩০/৯/২০১৩
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ তদন্ত কর্মকর্তার জেরা চলছে। আজকের জেরায় অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা যেসব উত্তর দেন তা নিম্নরূপ।

পুনরায় জেরাঃ
তারিখ- ৩০-০৯-২০১৩
কেরানীগঞ্জ থানার মামলায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে ৩০-০৬-২০১০ ইং তারিখে গ্রেফতার দেখানো হয়। তদন্ত সংস্থায় নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি লিখিত বা মৌখিকভাবে কোন নালিশ দায়ের করেন নাই। আমি নিজেও নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে কোন নালিশ দায়ের করি নাই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এর রেজিষ্ট্রার মহোদয় কর্তৃক প্রেরিত পল্লবী থানার মামলা নং ৬০(১)০৮ কে আমি কমপ্লেইন্ট ১ তারিখ ২১-০৭-২০১০ হিসাবে গণ্য করেছি। এই কমপ্লেইন্টে আমি মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোঃ মুজাহিদ, মোঃ কামারুজ্জামান ও মোঃ আব্দুল কাদের মোল্লাকে আমি আসামী শ্রেণীভূক্ত করেছি। পল্লবী থানার মামলা নং ৬০(১)০৮ মামলার এজাহারে ঐ চারজন ব্যতীত অন্য যাদের নাম আছে তাদেরকে কমপ্লেইন্ট ১-এ আসামীভূক্ত করি নাই। কেরানীগঞ্জ ও পল্লবী থানার মামলা দুটির জুডিসিয়াল নথি এখনো তদন্ত সংস্থার হেফাজতে আছে। উক্ত মামলা দুটির দায় থেকে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য মাননীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বা সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ আদালতে কোন আবেদন দাখিল করি নাই। ইহা সত্য নহে যে, পল্লবী ও কেরানীগঞ্জের উল্লেখিত মামলা দুটির জুডিসিয়াল নথি বেআইনীভাবে তদন্ত সংস্থায় প্রেরণ করা হয়েছে এবং আমি তা বেআইনীভাবে তদন্ত সংস্থার হেফাজতে নিয়েছি। ইহা সত্য নহে যে, জামায়াতে ইসলামী এবং উহার নেতাদের বিরুদ্ধে সরকারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে আমি এই মামলায় নালিশ রেকর্ড করেছি। এই মামলার নালিশ রেকর্ড করার পর থেকে মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করার আবেদন দাখিল করার মধ্যবর্তি সময়ে আমি এই মামলায় কোন সাক্ষীর জবানবন্দী রেকর্ড করি নাই বা এই মামলা সংক্রান্ত কোন দালিল পত্রাদিও জব্দ করি নাই, যদিও আমি গ্রেফতারী পরোয়ানার আবেদনে বলেছি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, কারণ নালিশ রেকর্ড করার  পরে এবং গ্রেফতারী পরোয়ানার আবেদন দাখিলের মধ্যবর্তী সময়ে আমি কিছু পত্রিকা ও বই পুস্তক পর্যালোচনায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পেয়েছিলাম। ঐ সময় যে সমস্ত পত্রিকা এবং পুস্তক পর্যালোচনা করেছিলাম তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দৈনিক সংগ্রামের ১৫-০৯-১৯৭১ এবং ১৪-১১-১৯৭১ তারিখের সংখ্যা এবং একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়। তদন্ত সংস্থায় নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার পর আমি বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং বই পর্যালোচনা পূর্বক তা সংগ্রহ করি। তদন্ত সংস্থায় যোগদানের পর থেকে নালিশ রেকর্ড করা পর্যন্ত আমাকে সুনির্দিষ্ট কোন মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয় নাই এবং আমি নিজেও সুনির্দিষ্ট কোন মামলার তদন্তের জন্য মনোস্থির করি নাই।
পল্লবী থানার মামলার এজাহারকারী ছিলেন আমির হোসেন মোল্লা। তাকে আমি তদন্তকালে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি কিন্তু নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে তাকে সাক্ষী মান্য করিনি। বর্তমান পল্লবী থানা এলাকাটি ১৯৭১ সালে মিরপুর থানা এলাকার অধীনে ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। রায়ের বাজার ১৯৭১ সালে কোন থানার অন্তর্ভূক্ত ছিল তাহা আমার জানা নাই। রায়ের বাজার বধ্যভূমি ১৯৭১ সালের ঢাকা বাজারের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। পল্লবী থানার মামলার এজাহারে ১৯৭১ সালে সংঘটিত দুইটি ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছিল। তন্মধ্যে প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল ২৪-০৪-১৯৭১ তারিখে ফজরের নামাজের পর আলব্দি গ্রামে। অন্য ঘটনাটি ১৮-১২-১৯৭১ তারিখে মিরপুরের কাদের মোল্লার আস্তানায় ঘটার কথা বলা হয়েছে, ঘটনাস্থল মিরপুরের বোটানিকেল গার্ডেনের পশ্চিম পাশে। এই মামলার নালিশ রেকর্ড করার পূর্বে পল্লবী থানার মামলায় কয়জন তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন তাহা আমি বলতে পারব না। আমার তদন্তকালীন সময়ে ঐ সব তদন্তকারী কর্মকর্তা কয়জন সাক্ষীর জবানবন্দী রেকর্ড করেছিলেন বা কোন আলামত উদ্ধার করেছিলেন কিনা সেই বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করি নাই। পল্লবী থানার মামলার এজারে ১৪ ব্যক্তিকে নাম ঠিকানা সহ সাক্ষী মান্য করা আছে। মানিত সাক্ষী গইজুদ্দিন মোল্লা, আব্দুস ছাত্তার মোল্লা, ফজলুল হক, আলামত হোসেন ব্যাপারী, মোহাম্মদ আলী মতবর, মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন, কদম আলী বেপারী, আনার উদ্দিন বেপারী, হাজী আম্বর আলী মোল্লা, মতিউর রহমান মোল্লা, রিয়াজ উদ্দিন ফকির, জুমন মোল্লা এবং হাজী আব্দুর রশিদ মোল্লাদের মধ্যে আমি অত্র মামলায় কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করি নাই। এই মামলার কেস ডাইরী অক্ষত অবস্থায় আমার নিকট সংরক্ষিত আছে। পল্লবী থানার মামলায় যে দুইটি ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে সেই দুইটি ঘটনাস্থল আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের মামলা তদন্তকালে পরিদর্শন করি নাই।
কেরানীগঞ্জ থানার মামলা নং- ৩৪(১২)২০০৭ এর এজাহারে নিজামী সাহেব দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত আটক থাকার যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে সেই বিষয়ে আমি তদন্ত করেছি তবে তিনি কোন মামলায় আটক ছিলেন তাহা পাই নাই। ঐ মামলার এজাহারকারী বা মানিত কোন সাক্ষীকে অত্র মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করি নাই বা সাক্ষী মান্য করি নাই। কেরানীগঞ্জ থানার মামলায় উল্লেখিত ঘটনাস্থল অত্র মামলার তদন্তকালে পরিদর্শন করি নাই বা তদন্ত সংক্রান্তে কেরানীগঞ্জ থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করি নাই। লারকানা ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় অপারেশন সার্চ লাইট প্রণয়ন করা হয়। অপারেশন সার্চ লাইটের প্রণেতা রাও ফরমান আলী কিনা, তা আমার সঠিক জানা নাই। জেনারেল টিক্কা খান এই অপারেশন সার্চলাইটের সাথে জড়িত ছিলেন তবে জেনারেল হামিদ যুক্ত ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। অপারেশন সার্চ লাইট সফলভাবে কার্যকর হয়েছে মর্মে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ কোন রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। অপারেশন সার্চ লাইট প্রণয়নের সাথে কোন বাঙ্গালীর সংশ্লিষ্টতা আমি তদন্তকালে পাই নাই।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে টিক্কা খানের গভর্ণর হিসাবে শপথ গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন ডা. আব্দুল মালেক। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে কে ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা জেলার মার্শাল ল’ এডমিনিষ্ট্রেটর এর দায়িত্বে কে কে ছিলেন বিষয়টি তদন্ত না করায় এই বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারছি না। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ তারিখে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের জিওসি কে ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালের ১৪ই নভেম্বর থেকে ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের জিওসি কে ছিলেন তাহাও আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম, সিলেট ও যশোর জেলার সামরিক আইন প্রশাসক এর দায়িত্বে কারা ছিলেন তাহা আমি তদন্ত না করায় বলতে পারব না। পাবনা জেলার সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে এপ্রিল ১৯৭১ থেকে জুন ১৯৭১ পর্যন্ত ছিলেন মেজর হামিদ, জুলাই ১৯৭১ থেকে আগস্ট ১৯৭১ পর্যন্ত ছিলেন মেজর নেওয়াজ এবং সেপ্টেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন মেজর আসলাম মাহমুদ খান। ১৯৭১ সালে পাবনায় কোন ক্যান্টনমেন্ট ছিল না। ১৯৭১ সালে পাবনায় যে আর্মি ক্যাম্প ছিল সেটি নিয়ন্ত্রিত হতো বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাবনা নূরপুর ওয়াপদা আর্মি ক্যাম্পের দায়িত্বে কে ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। কারণ তদন্তকালে এ বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে কোন আর্মি অফিসারের নেতৃত্বে আর্মিরা আরিচা থেকে গিয়ে নগরবাড়ী ঘাট দখল করে তাহা আমার জানা নাই, কারণ তদন্তকালে এ বিষয়ে আমি কোন তথ্য পাই নাই। ১৯৭১ সালে পাবনার পাবনা সদর, সাঁথিয়া, ঈশ্বরদী ও বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে কে ছিলেন তাহা আমার জানা নাই, কারণ তদন্তকালে এ বিষয়ে আমি কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারিনি।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ১৯৭১ সালের পুরো সময়েই একজন বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন।
১৯৭১ সালে আর্মি এ্যাক্ট, ১৯৫২ অনুযায়ী রাজাকার ছাড়া অন্য কোন সংগঠনকে সরকারীভাবে সহায়ক বাহিনী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় নাই, তবে আলবদর, আল শামস ও মুজাহিদ বাহিনীকে বেসরকারীভাবে সহায়ক বাহিনী হিসাবে ব্যবহার করা হতো। ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সেস কোন সময়ে তৈরী করা হয় তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭১ সালে ২রা আগস্ট আনসার বাহিনী বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান আর্মির সহায়ক বাহিনী হিসাবে কাজ করেছে। মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যরা সাধারণভাবে বিহারী সম্প্রদায়ের লোক ছিল। মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ বিহারী অধ্যূষিত সকল এলাকায় মুজাহিদ বাহিনীর কার্যক্রম চালু ছিল। এয়ার ফোর্স এ্যাক্ট ১৯৫৩ এবং নেভী অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১ এর অধীনে কোন সহায়ক বাহিনী গঠন করা হয়েছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। পাঞ্জাব রেজিমেন্ট পাকিস্তান আর্মির সহায়ক বাহিনী হিসাবে কর্মরত ছিল। বিধি মোতাবেক রাজাকার বাহিনীর দুইটি উইং হিসাবে আলবদর এবং আলশামস উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে রাজাকার, আলবদর ও আল শামস পৃথক পৃথক বাহিনী হিসাবে কর্মরত ছিল। ১৯৭১ সালের ২রা আগস্ট সরকারীভাবে রাজাকার বাহিনী গঠিত হওয়ার পর উহার প্রধান কে ছিলেন এবং পদবী কি ছিল তদন্তকালে তা সংগ্রহ করলেও এই মুহূর্তে তা বলতে পারছি না। মুজাহিদ এবং আল শামস বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন এবং তাদের পদবী কি ছিল তাহাও আমি তদন্তাকালে সংগ্রহ করেছিলাম তবে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।
কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি এবং ঢাকা জেলা ও শহর কমিটি গঠেেনর মিটিংয়ে মতিউর রহমান নিজামী উপস্থিত ছিলেন মর্মে কোন তথ্য আমি তদন্তকালে পাই নাই। কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি এবং ঢাকা জেলা ও শহর কমিটির কোন মিটিংয়ে উপস্থিত হয়ে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বক্তব্য দিয়েছিলেন এই ধরনের কোন তথ্য প্রমাণ আমি তদন্তকালে পাই নাই। যশোর জেলা ও মহাকুমা এবং চট্টগ্রাম জেলা, শহর ও মহকুমার শান্তি কমিটির কোন মিটিংএ মতিউর রহমান নিজামী সাহেব কোন বক্তব্য দিয়েছিলেন এই ধরনের কোন তথ্য আমি তদন্তকালে পাইনাই। মিরপুর এবং মোহাম্মদপুর এলাকার শান্তি কমিটির ও মিরপুর এলাকায় রাজাকার, আল শামস এবং মুজাহিদ বাহিনীর দায়িত্বে কে ছিলেন তাহা আমি তদন্তকালে সংগ্রহ করতে পারি নাই।
প্রদর্শনী-১ এ সিরাজুল ইসলাম মতলিব সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, কোন এলাকার বা কোথাকার সভাপতি এই চিঠিতে তাহা উল্লেখ নাই। সিরাজুল ইসলাম মতলিব সাহেবের সাথে তদন্তকালে আমার দেখা হয়েছিল। তদন্তকালে তাকে নোটিশ দিয়ে ডেকে নিয়ে এসে তার জবানবন্দী আমি রেকর্ড করেছিলাম। তার হাতের লেখা সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞের মতামত সংগ্রহের জন্য তা প্রেরণ করি নাই। আমি হস্তলিপি বিশারদ নই। আমার নিকট প্রদত্ত জবানবন্দীতে সিরাজুল ইসলাম সাহেব প্রদর্শনী- ১ চিঠিটি লেখার কথা অস্বীকার করেছেন। মেজর ফখরুল ইসলাম তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমার সেনাবাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। এই তথ্যটি আমি মৌলভী বাজার মহকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এডভোকেট মিসির উল্লাহর জবানবন্দী থেকে পেয়েছি। তবে তাকে আমি এই মামলায় সাক্ষী মান্য করি নাই। মিসির উল্লাহ মুসলিম লীগ করতেন। পিডব্লিউ-১ মিসবাহুর রহমান চৌধুরীর পিতা মরহুম আব্দুর রহমান চৌধুরী মুসলিম লীগ করতেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। মৌলভীবাজার জেলার ইতিহাস নামক বইটি আমি পর্যালোচনা করি নাই। মিসবাহুর রহমান চৌধুরী রাজাকার ছিলেন কিনা তাহা আমি জানিনা। তবে তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্য ছিলেন। প্রদর্শনী-১ এর মূল চিঠিটি যে এ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম খান সাহেবের নিকট আছে বলা হয়েছে তার ঠিকানা সংগ্রহের জন্য মিসবাহুর রহমান সাহেবেকে ৬বার অনুরোধ করেছি, কিন্তু তিনি পরে দিবেন বলে ঠিকানা দেননি। এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম খান সাহেবের এই চিঠিটি আছে মর্মে মিসবাহুর রহমান চৌধুরী কোন থানায় জিডি করেছিলেন মর্মে আমাকে কোন তথ্য দেন নাই। (চলবে)


মাওলানা সাঈদীর আপিল শুনানী চলছে


৩০/৯/৩০১৩
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন বিষয়ে শুনানী অব্যাহত রয়েছে। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আইনজীবীরা আজ সোমবার  পর্যন্ত  ট্রাইব্যুনালের রায় পড়া শোনানো  শেষ করেছেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং জেরা পড়ে শোনানো শুরু হয়েছে।  আজ রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী এবং মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদারের জবানবন্দী পড়া শেষে জেরা পড়ে শোনানো শুরু হয়েছে। এ পর্যায়ে শুনানীর কার্যক্রম আগামীকাল  মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার রায় আগামীকাল

মেহেদী হাসান ৩০/৯/২০১৩
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি’র বিরুদ্ধে মামলার রায়  আগামীকাল  মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ  রায় ঘোষণার কথা জানান। সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে বেলা ১১টার একটু পরে  ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন,  চীফ প্রসিকিউটর বনাম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায় আমরা চূড়ান্ত করে ফেলেছি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) রায় ঘোষণা করা হবে।

১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনালে যেসব মামলার রায় হয়ে হয়েছে এবং এখনো যেসম মামলা বিচারাধীন  রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি  আলোচিত মামলা হল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলা। তাছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তথা বিএনপির কোন নেতার বিরুদ্ধে এটিই হবে ট্রাইব্যুনালের প্রথম  রায়। সেদিক থেকেও  এ রায়ের রয়েছে আলাদা তাৎপর্য।   দুই ট্রাইব্যুনাল মিলে এ পর্যন্ত ছয়টি মামলার রায় ঘোষনা করা হয়েছে। এর মধ্যে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ছাড়া বাকী সবাই জামায়াতের ইসলামীর  প্রথম সারির নেতা। বিএনপির আরেকজন সাবেক নেতা যথা আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে মামলার রায়ও অপেক্ষমান রয়েছে।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে  চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং বোয়ালিয়া থানায় হত্যা, গনহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরন, নির্যতান দেশান্তরকরনসহ মানবতাবিরোধী অভিযোগ আনা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী মোট ৩২টি অভিযোগ দায়ের করে। সেখান থেকে ট্রাইব্যুনাল ২৩ টি অভিযোগে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে। বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ১৭টি অভিযোগের পক্ষে সাক্ষী হাজির করে এবং যুক্তি পেশ করে। বাকী ছয়টি অভিযোগ তারা ছেড়ে দিয়েছে।

দুই পক্ষের অভিযোগ :
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস থেকে সেপ্টম্বর মাস পর্যন্ত  রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং বোয়ালিয়া থানায় যেসব অপরধ সংঘটিত  হয়েছে তার অনেকগুলোতে  পাকিস্তান আর্মির সাথে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন এবং  নেতৃত্ব দিয়েছেন।

অপর দিকে আসামী পক্ষের দাবি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সেসময় দেশেই ছিলেননা। তিনি পাকিস্তানে ছিলেন তখন। তাদের দাবি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ পাকিস্তান গমন করেন এবং ১৯৭৪ সালের ২০ এপ্রিল বাংলাদেশে আসেন। কাজেই অপরাধের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার প্রশ্নই আসেনা। যুক্তি পেশের শেষে আসামী পক্ষ দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমান করতে পারেনি। তারা তার বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা সাক্ষী হাজির করেছে। তাই তারা আসামীর বেকসুর খালাস দাবি করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরন :
গত বছর ১৯ এপ্রিল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এক বছর চার মাসের মাথায় আলোচিত এ মামলার সমস্ত বিচার কার্যক্রম শেষ হয় গত ১৪ আগস্ট। ওই দিন যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হয়। 
২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোরে গ্রেফতার করা হয় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে।

১৭টি অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৪১ জন সাক্ষী হাজির করে। অপর দিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে আসামী নিজেসহ মোট চারজন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। 

বিচার কার্যাক্রম শেষে তিন সদস্যের  ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে  ২৩ অভিযোগে :

অভিযোগ ১ :  ১৯৭১ সালের ৪ বা ৫ এপ্রিল রাত আনুমাণিক ৯টার পর মতিলাল চৌধুরী, অরুণ চৌধুরী, যোগেশ চন্দ্র দে ও পরিতোষ দাস, পাচক সুনীল প্রমুখকে  শহীদ মতিলাল চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালি থানার রামজন লেনের বাসভব থেকে অপরহন করে নিয়ে যাওয়া হয় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পাারিবারিক বাসভবন গুড়সহিলে। পরে এদের মধ্য থেকে ছয়জনের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

অভিযোগ ২ : ১৯৭১ সালের  ১৩ এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তান  সেনাবাহিনীর একদল সদস্য রাউজানের গহিরা  গ্রামের  হিন্দু  পাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালায়। অভিযান চালিয়ে নিরীহ নিরস্ত্র হিন্দুদের ডাক্তার মাখন লাল শর্মার বাড়িতে জড়ো করা হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যরা ব্রাশফায়ার করে । এসময়  পঞ্চবালা শর্মা, সুনীল শর্মা, মতিলাল শর্মা ও দুলাল শর্মা নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত মাখন লাল শর্মা  তিন চারদিন পর মারা যায়। 
অভিযোগ-৩  :  ১৩ এপ্রিল রাউজানের গহিরায় অবস্থিত কুন্ডেশ্বরী কমপ্লেক্স এর প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবক অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করা হয়। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তান আর্মি তাকে  প্রথমে গুলি করে । পরে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজেও গুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।
অভিযোগ-৪ :  ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী স্থানীয় সহযোগী এবং  পাকিস্তানি  সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত জগৎমলপাড়ায় অভিযান চালান। এসময় ৩২ জনকে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-৫ : ১৩ এপ্রিল বেলা আনুমাণিক একটার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কতিপয় অনুসারীদের নিয়ে রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে  হামলা চালান। এসময় তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-৬  : ১৩ এপ্রিল বিকেল ৪টা থেকে ৫টা নাগাদ  সালাউদ্দিন কাদের চৌধরিী হিন্দু জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালান। এসময়  হিন্দু নর-নারীদের স্থানীয় তিীশ মহাজনের বাড়ির পেছনে পুকুর পাড়ে শান্তি মিটিংয়ের নামে একত্রিত করে এবং ৫০ থেকে ৫৫ জনকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে।
অভিযোগ-৭ : ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল দুপুর আনুমাণিক ১২টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানি সেনা সদস্য রাউজান পৌরসভা এলাকার সতীশ চন্দ্র পালিতের বাড়িতে  প্রবেশ করে। আসামীর নির্দেশে তাকে গুলি করে হত্যার পর লাশ কাপড়ে মুড়িয়ে পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
অভিযোগ-৮  :  ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ।  চট্টগ্রমাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ তার পুত্র শেখ আলমগীরসহ তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য প্রাইভেটকারযোগে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসছিলেন। পথে হাটহাজারী থানার খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি তিন রাস্তার মোড়ে সকাল অনুমান ১১টার দিকে পৌঁছামাত্র আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি দখলদার সৈন্যরা তাদের প্রাইভেট গাড়িটি অবরোধ করে শেখ মোজাফফর আহম্মেদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আটক করে স্থানীয় পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে আর তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ-৯ : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে এপ্রিলের মাঝামাঝি বোয়ালখালি থানার  কদুরখিল গ্রামে যাওয়ার সময় মুন্সীরহাটের শান্তি দেবকে ধরে নিয়ে হত্যা  করা হয়।
অভিযোগ-১০ :  ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল মানিক ধরের বাড়ি থেকে তার  জিপ গাড়ি ও ধান ভাঙ্গার কল লুট করে নিয়ে যায়।
অভিযোগ-১১ : ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল সকালবেলা বোয়ালখালী থানার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা শাকপুরা গ্রামে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে হিন্দুদের হত্যা করে। পরবর্তীতে শহীদদের মধ্যে ৫২ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়। এসব হত্যাকাণ্ড ছাড়াও শাকপুরা এলাকায় যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সময়ে আরও তিন শতাধিক লোককে হত্যা করা হয়, যাদের সেখানে মাটিচাপা দিয়ে সমাধিস্থ করা হয়েছে।
অভিযোগ-১২ : ১৯৭১ সালের  ৫ মে সকাল সাড়ে ১০টায় সালাহউদ্দিন কাদের  চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাউজান থানার জ্যোতিমল গ্রামে গুলি করে বিজয় কৃষ্ণ চৌধুরী রাখাল, বিভূতি ভূষণ চৌধুরী, হীরেন্দ্র লাল চৌধুরীকে হত্যা করে।
অভিযোগ-১৩  :  ১৯৭১ সালের ১৫ মে সন্ধ্যার সময় আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে ঘাসিমাঝির পার এলাকায় ৬ জনকে গুলি করে হত্যা, ২ জনকে গুরুতর আহত এবং অন্তত ৫ মহিলাকে ধর্ষণ করে।
অভিযোগ-১৪ :  ১৯৭১ সালের ২০ মে বিকেল ৪টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে তার সহযোগী কয়েকজন রাজাকার সদস্য পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার পথেরহাটের কর্তার দীঘির পারে মোঃ হানিফের বাড়িতে যায়। তাকে অপরহন করে গুড়সহিলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ-১৫ :  ১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি শেখ মায়মুন আলী চৌধুরী তার ভাগ্নি জামাই মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জের বাসায় ছিলেন। আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে  শেখ মায়মুন আলীকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
অভিযোগ-১৬ :  ১৯৭১ সালের ৭ জুন রাজাকার মাকসুদুর রহমান ও আসামির পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের সহযোগিতায় জামাল খান রোড থেকে ওমর ফারুককে ধরে নিয়ে গুড়সহিলে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-১৭ :  ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই সন্ধ্যা আনুমাণিক সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার আরও ২/৩ জন সহযোগীসহ পাকিস্তান সেনা সদস্যরা চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানার হাজারী লেনের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পোড়োবাড়ি থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করে বন্দী করে রাখা হয় দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত।
অভিযোগ-১৮ : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে একদিন ভোর আনুমাণিক সাড়ে ৫টায় আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর মুসলিম লীগ নেতা শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মৃত শামসু মিয়া সহযোগী তিনজন রাজাকারসমেত চট্টগ্রাম জেলার চান্দগাঁও থানার মোহারা গ্রামে আব্দুল মোতালেব চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তারা মোঃ সালেহউদ্দিনকে অপহরণ করে। পরে তাকে গুড়সহিলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার গালে চড় মারেন।

অভিযোগ-১৯ :  ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই রাত আনুমাণিক সাড়ে আটটায় হাটহাজারীর নেয়ামত আলী রোডের সাহেব মিয়ার বাড়ি (রজমান টেন্ডলের বাড়ি) ঘেরাও করে তার দু’ছেলে নুর মোহাম্মদ ও নুরুল আলমকে অপহরণ করা হয়। পরে তাদেরকে মুক্তিপনের বিনিময়ে ছাড়া হয়।

অভিযোগ-২০ : ১৯৭১ সালের  ২৭/২৮ জুলাই বিকেল ৩/৪টায় রাজাকার বাহিনী আকলাচ মিয়াকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সেখানে তার মৃত্যু ঘটে।
অভিযোগ-২১ : ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে  চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার বিনাজুরি গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরীকে অপরহ করে গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
অভিযোগ-২২ :  ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিকে এইচএসসি পরীা চলাকালীন রাত আনুমাণিক ৯টায় মোঃ নুরুল আনোয়ার চৌধুরীকে অপহরণ করা হয়। পরে মুক্তিপন আদায় করা হয়।
অভিযোগ-২৩ : এম সলিমুল্লাহকে গুড়সহিলে নিয়ে নির্যাতন।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট জেয়াদ আল মালুম, সুলতান মাহমুদ সিমন এবং ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। অপর দিকে আসামী পক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা,  ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আল ফেসানী প্রমুখ।


রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

চিফ জাস্টিসের প্রশ্ন // কি মিস্টার এডিশনাল এটর্নি জেনারেল প্রাইভেট প্রাকটিস কি শেষ হয়েছে?



মেহেদী হাসান, 29/9/2013
আপিল বিভাগের আজকের কার্যতালিকায় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল আবেদন শুনানী বিষয়ক মামলাটি ছিল ৩৩ নম্বর ক্রমিকে। ৩৩ নং ক্রমিক পর্যন্ত আসার আগেই সকালের সেশন ১১টায় শেষ হয়ে যায় । এক ঘন্টা বিরতির পর ১২টায় আবার আপিল বিভাগ বসে। ১২টায় কোর্ট বসার দুয়েক মিনিটের মাথায় মাওলানা সাঈদীর মামলার নাম ঘোষনা কর হয়। কিন্তু তখন ডান পাশের বেঞ্চে যেখানে এ মামলার শুনানীর সময় এটর্নি জেনারেল এবং তার অফিসের অন্যান্য সিনিয়র সরকারি আইনকর্মকর্তারা বসেন তারা কেউ উপস্থিত ছিলেননা।  কোর্টে উপস্থিত জুনিয়র দুজন আইনজীবী সামনের বেঞ্চে বসা ছিলেন। বিষয়টির প্রতি তখন প্রধান বিচারপতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পেছনের বেঞ্চ থেকে আরেকজন সাদা শশ্রুমন্ডিত আইনজীবী সামনের বেঞ্চে গিয়ে বসেন। এরপর মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান ট্রাইব্যুনালের রায় পড়ে শোনাতে শুরু করেন। ১২টা ১৫ মিনিটের মাথায় হন্তদন্ত হয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এমকে রহমান। তখন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, কি মিস্টার এডিশনাল এটর্নি জেনারেল প্রাইভেট প্রাকটিস কি শেষ হয়েছে আপনার? এখানে আসা তো আপনার পার্ট টাইম। ওইটা হল আসল তাইনা? এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, কোর্টের দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। মামলা কার্য তালিকায় পেছনে তাতে কি হয়েছে। মিস্টার রাজ্জাক সাহেব তো সকাল থেকে এখানে বসে আছেন।
এরপর আবার রায় পড়ে শোনাতে শুরু করেন এস এম শাহজাহান। ১২টি ২০ মিনিটের মাথায় আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তখন প্রধান বিচারপতি তার উদ্দেশে বলেন, মিস্টার এটর্নি জেনারেল, এখানে ম্যাটেরিয়াল এক্সিবিট হয়ে লাভ নেই। ম্যাটেরিয়াল এক্সিবিট একম পছন্দ করিনা আমরা। মামলা যখন ধরেছেন একটু সিনসিয়ার হোন। কোর্ট শুরু হয়ে গেছে কিন্তু আপনাদের কেউ নেই । প্রক্সি দেয়ার জন্যও তো অন্তত কাউকে রাখতে পারেন।
এরপর এটর্নি জেনারেল চুপ করে বসে পড়েন।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আজ ১৯ নম্বর অভিযোগ পর্যন্ত রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। একটা বাজলে আদালত আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি ঘোষনা করে।

শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড// ঘটনাবহুল আলোচিত একটি মামলা


মেহেদী হাসান
২৭/৯/২০১৩
শুধু বাংলাদেশ নয়, নানা কারনে গোটা বিশ্বে একটি আলোচিত এবং ঘটনাবহুল  মামলা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লা মামলাটি। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন, গণজাগরন মঞ্চ। যার প্রতিকৃয়া হিসেবে উত্থান হয় হেফাজতে ইসলাম এবং শেষ পর্যন্ত যা গড়ায় অপারেশন শাপলা পর্যন্ত। যুদ্ধাপরাধ ইস্যু, আব্দুল কাদের মোল্লা মামলা এবং এরই  ধারাবাহিকতায় একের পর এক ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতির অন্যতম নির্ধারক হিসেবে আবির্ভূত   হয়। শাহবাগের ধারাবাহিকতায় অপারেশন শাপলা এবং এর পরে অনুষ্ঠিত চারটি সিটি নির্বাচনে সরকারের ধরাশয়ী হবার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যু তথা আব্দুল কাদের মোল্লা মামলা তাই বাংলাদেশের নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতিতে ভোটের বাক্স নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় পরিণত হয়েছে শেষ পর্যন্ত। এটি ছাড়াও আইনী কারনে এ মামলা বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি আলোচিত ঘটনা হিসেবে স্থান করে নেবে ভবিষ্যতে। কারণ এই বিচারের রায় হয়ে যাবার পর  আইন সংশোধন করা হয়েছে। বিচারিক আদালতের সাজা বাড়িয়ে আসামীকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে যা অতীতে সুপ্রীম কোর্টে কখনো হয়নি বলে জানিয়েছে আসাসী পক্ষ।

চলতি বছর পাঁচ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীন দণ্ড  দেয়া হয়। এ রায়কে কেন্দ্র করে  শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে ওঠে । আন্দোলনকারীদের দাবি আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিতে হবে। ফাঁসি ছাড়া অন্য কোন রায় তারা মেনে নিতে রাজি নয়। কাদের মোল্লার যে অপরাধ তাতে ফাঁসিই একমাত্র তার উপযুক্ত শাস্তি। এ  দাবির প্রেক্ষিতে  ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয়  সরকার পক্ষের জন্য আপিলের বিধান রেখে।  আইন সংশোধনের পর সরকার আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করে আপিল আবেদন করে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে। 

ট্রাইব্যুনাল আইনে পূর্বের বিধান ছিল আসামী পক্ষ সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। আসামীর সাজা হলে রাষ্ট্রপক্ষের জন্য আপিলের বিধান ছিলনা। আসামীকে খালাস দেয়া হলে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের জন্য আপিলের বিধান ছিল। ১৮ ফেব্রুয়ারি আইন সংশোধন করে উভয় পক্ষকে আপিলের সমান সুযোগ দেয়া হয় এবং আইনের সংশোধনীকে  ২০০৯ সাল থেকে কার্যাকারিতা  প্রদান করা হয়। অর্থাৎ ধরে নিতে হবে এই সংশোধনী এবং সরকার পক্ষের জন্য আপিলের বিধান  ২০০৯ সাল থেকে কার্যকর রয়েছে। 

আইনের সংশোধনীর কারনে আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল শুনানী শেষ পর্যন্ত অ্যামিকাস কিউরি পর্যন্ত গড়ায়। ১৮ ফেব্রুয়ারি আইনের যে সংশোধন করা হয়েছে তা আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না জানতে চেয়ে ২০ জুলাই সুপ্রীম কোর্টের সাতজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয় আপিল বিভাগ।  কারণ আইনটি আব্দুল কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে সংশোধন করা হলেও তা আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না সামনে যেসব মামলার রায় দেয়অ হবে ট্রাইব্যুনাল থেকে সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তার কোন কিছু নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ ছিলনা। সংশোধনীর ভূমিকায় চলমান বিচার কথাটি উল্লেখ ছিল। সেকারনে শুনানীর সময় একজন বিচারপতি এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং তখন থেকে প্রশ্নটি সামনে আসে এ সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি-না। এ প্রশ্নকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত  এ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেয়া হয়। এরা হলেন, সাবেক বিচারপতি  টি এইচ খান, সাবেক এটর্নি জেনারেল প্রবীন আইনবিদ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি । এসব নানা কারনে আব্দুল কাদের মোল্লা মামলাটি গোটা দেশজুড়ে আলোচিত একটি  মামলায় পরিণত হয়।

রায়ে আসামী পক্ষের প্রতিকৃয়া :
আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রায়ের পর বলেছেন, বিচারিক আদালত কর্তৃক প্রদত্ত যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্র্তৃক মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম এবং বিচার বিভাগের জন্য এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়।
আপিল বিভাগে আবদুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার পরপরই সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক লিখিত বক্তব্যে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে আবদুল কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু এটি একটি ভুল রায়। আমরা এ রায়ে সংুব্ধ। আমরা বিস্মিত। আমরা মনে করি- এ রায় ন্যায় বিচারের পরিপন্থি।
বিচারিক আদালত যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেননি সেখানে প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ড প্রদান বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাছাড়া স্কাইপ কেলেঙ্কারির পরও ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান আইনের শাসনের পরিপন্থি। আমাদের সমাপনী বক্তব্যে আমরা বলেছিলাম- যে সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে আবদুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, আজ তাকে শুধু দোষী সাব্যস্তই করা হয়নি, মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়েছে। বিচারের ইতিহাসে এটি একটি দুঃখজনক অধ্যায়।

রিভিউ বিতর্ক
আবদুল কাদের মোল্লাকে আপিল বিভাগ কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড প্রদানের পরপরই শুরু হয় রিভিউ আবেদন নিয়ে বিতর্ক।  রায় ঘোষণার পরপরই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দায়ের করার কোন সুযোগ নেই। আপিল বিভাগের রায়ের মধ্য দিয়েই এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।

এরপর আবদুল কাদের মোল্লার আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার অডিটোরিয়ামে রায় বিষয় অনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া প্রদান করেন। তখন সাংবাদিকরা কাদের মোল্লার প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের কাছে অ্যাটর্নি জেনারেলের অভিমতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবিধান আসামীকে রিভিউ আবেদন দায়ের করার সুযোগ দিয়েছে। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অধীনে চলে। আর ট্রাইব্যুনাল আইনের উপরে সংবিধান। সুপ্রীম কোর্ট ট্রাইব্যুনালের আইন দিয়ে চলেনা। আমরা সংবিধান ও ট্রাইব্যুনাল আইনে আপিল দায়ের করেছি। একজন যাবজ্জিবন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। মৃত্যুদন্ডের  রায়ের বিরুদ্ধে তার রিভিউয়েরও  যদি সুযোগ না থাকে তাহলে সে যাবে কোথায়? কাজেই রিভিউ আবেদনের সুযোগ নেই এটা সঠিক নয়।

ব্যারিস্টার রাজ্জাকের এই যুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি বিশেষ আইন। এ রায়কে সংবিধান সুরক্ষা দিয়েছে। এ আইনে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিধান আছে, তবে রিভিউ দায়েরের কোন সুযোগ নেই। আপিল বিভাগের রায়ের মধ্য দিয়েই এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ। এখন আসামী চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে মা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতির কাছে মার আবেদন নাকচ হলে রায় কার্যকর করা যাবে।
তিনি বলেন, আমার অভিমত আমি দিয়েছি। রাজ্জাক সাহেব তার অভিমত দিয়েছেন। সেেেত্র রিভিউ করা যাবে কি-না, সেটি সিদ্ধান্ত নেবে আদালত।
অন্যদিকে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ রায়ের পার মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, রায় রিভিউ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদেশে এ ধরনের অপরাধে আপিলেরও সুযোগ থাকে না। বিচার বিভাগ বিশেষ আইনে না চললেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আপিল হয়েছিল।

বাংলাদেশ সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক ঘষিত রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনা করা বিধান রয়েছে। রিভিউ আবেদন বিষয়ে সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘আপিল বিভাগের কোন ঘোষিত রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের থাকিবে।’
এসব বিতর্কের কারনে এখন সবশেষে আইনজ্ঞদের মতে যেহেতু আইনমন্ত্রী, এটর্নি জেনারেল বলেছেন রিভিউ’র সুযোগ নেই এবং বিরোধী পক্ষ বলছে সুযোগ আছে তাই এখন এ বিষয়ে আপিল বিভাগকেই সুরাহা করতে হবে।


মোমেনা বেগমের জবানবন্দী এবং যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্টে যা রয়েছে
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল  যে দুটি  অভিযোগে  যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান  করা হয়েছে তার মধ্যে একটি অভিযোগ হল মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী,  তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও    মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা। এ ঘটনাটিতেই আপিল বিভাগের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
এবার দেখা যাক মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে এসে কি বলেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে তার নামে রক্ষিত ডকুমেন্ট এ কি রয়েছে ।
হযরত আলী লস্কর পরিবার হত্যাকান্ড  ঘটনায় বেঁচে যায় হযরতী আলী লস্করের   বড় মেয়ে মোমেনা বেগম। মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে এসে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন এ ঘটনা বিষয়ে । এই  সাক্ষী মোমেনা বেগম তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং ধর্ষনের ঘটনা বিষয়ে ২০০৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ যাদঘর কর্তৃপক্ষের কাছে জবানবন্দী দিয়েছেন। ট্রাইবু্যুনালে মোমেনা বেগম বলেছেন ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং ধর্ষনের ঘটনা দেখেছেন। তিনি নিজেও  ধর্ষন/ লাঞ্ছনার  শীকার হন এবং এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন। অপর দিকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে  কাছে  তিনি  ঘটনার বর্ননা দিয়ে বলেছেন ঘটনার দুই দিন আগে তিনি শশুরবাড়ি চলে যাওয়ায় প্রানে বেঁচে যান। কোর্টে তিনি বললেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন আর মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত বক্তব্যে দেখা যায় তিনি ঘটনার দুই দিন আগে শশুর বাড়ি চলে যান।
ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে (রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচার পরিচালনা)  মোমেন বেগমের  সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় ট্রাইব্যুনালে।  ফলে সেসময় মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশিত হয়নি। তবে মোমেনা বেগম কোর্টে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা আব্দুল কাদের মোল্লার রায়ে  বর্ননা করা হয়েছে বিস্তারিতভাবে।
ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগমের  জবানবন্দীর উদ্ধৃতি দিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘটনা ঘটে। মোমেনা বেগমরা তখন মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের  ৫ নং কালাপানি লেনে ২১ নম্বর বাসায় থাকতেন। মোমেনা বেগম কোর্টে সাক্ষ্য দিয়ে  ঘটনা বিষয়ে বলেন, সন্ধ্যার সময় তার পিতা হযরত আলী হন্তদন্ত হয়ে  ঘরে আসলেন এবং  বললেন কাদের মোল্লা তাকে মেরে ফেলবে। কাদের মোল্লা এবং তার বিহারী সাগরেদ আক্তার গুন্ডা তার পিতাকে হত্যার জন্য ধাওয়া করছে। তার পিতা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। এরপর তারা বাইরো বোমা ফাটাল। দরজা খোলার জন্য গালিগালাজ করল। তার মা দাও  হাতে নিয়ে দরজা খুলল। তারা ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করল তার মাকে। কাদের মোল্লা তার পিতাকে কলার ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। তার সঙ্গীরা তার বোন খাদিজা এবং তাসলিমাকে জবাই করল। দুই বছরের ভাইকে আছড়িয়ে হত্যা করে।
মোমেনা জানায় সে এবং তার  ১১ বছর বয়স্ক অপর বোন আমেনা খটের নিচে আশ্রয় নেয় ঘটনার সময়। আমেনা ভয়ে চিৎকার দেয়ায় তাকে খটের নিচ থেকে টেনে বের করে জামাকাপড় ছিড়ে ফেলে এবং এক পর্যায়ে তার কান্না থেমে যায়।  এক পর্যায়ে তাকেও টেনে বের করে এবং ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারায় এবং জ্ঞান ফিরে পেটে প্রচন্ড ব্যর্থা অনুভব করে। তার পরনের প্যাণ্ট ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পান তিনি। পরে এক  ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং তাদের সেবার মাধ্যমে কিছুটা সুস্থ হন। পরে তার শশুর খবর পেয়ে তাকে এসে নিয়ে যান।
রয়ে মোমেনা বেগমের বরাদ দিয়ে তাদের পরিবারের ঘটনার    বর্ননা করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত চিত্র এটি।

মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্ট :
হযরত আলী হত্যাকান্ডসহ আরো অনেক হত্যাকান্ড বিষয়ে  শহীদ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের  সাক্ষাতকার,  লিখিত বক্তব্যের মূল কপি, অডিও ভিডিও বক্তব্য সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া লিখিত  বক্তব্যের ডুপ্লিকেট কপি সংরক্ষিত আছে মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে।  মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত  পাম্প হাউজে  এনে ১৯৭১ সালে বিহারীরা বাঙ্গালীদের হত্যা করত। হত্যার পর তাদের লাশ ফেলে দিত পানির ট্যাংকি এবং পার্শবর্তী ডোবায়। ১৯৯০ দশকে  এখানকার বধ্যভূমিটি আবিষ্কার হয় এবং  অসংখ্য শহীদদের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এরপর পাম্প হাউজটিকে  জল্লাদখানা যাদুঘর করা হয় এবং এটি বর্তমানে মুুক্তিযুদ্ধ যাদু ঘরের অংশ।  জল্লাদখানায় ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে যাদুঘর কর্তৃপক্ষ তাদের পরিবারে অনেক আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে বের করে বিভিন্ন  সময়ে তাদের সাক্ষাতকার  বক্তব্য রেকর্ড করে তা যাদুঘরে সংরক্ষন করে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
যে হযরত আলী হত্যাঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে সেই ঘটনার একটি বিবরন রক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে। হযরত আলীর বেঁচে যাওয়া একমাত্র মেয়ে মোমেনা বেগমের বরাত দিয়েই সে ঘটনার বর্ননা  লিপিবদ্ধ এবং সংরক্ষন করা হয়েছে।  মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার গ্রহনের মাধ্যমে এ ঘটনার বিবরন তারা সংগ্রহ করে।    মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে রক্ষিত সে ডকুমেন্টে  লেখা আছে ঘটনার দুই দিন আগে মোমেনা বেগম তার শশুর বাড়ি চলে যান।

হযরত আলী হত্যাকান্ড বিষয়ে তার মেয়ে মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার যাদুঘর কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে ২৮/৯/২০৭  তারিখ। তিনি তখন তাদের কাছে ঘটনার যে বিবরন দেন তা নিম্নরূপ।  ‘ঘটনার বিবরণ : ১৯৭১ সালে মিরপুরের কালাপানি এলাকায় বিহারিদের সঙ্গে কিছু বাঙালি পরিবারও বাস করতো। ৭ মার্চ এর পর থেকে দেশের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কিছু কিছু বাঙালি পরিবার এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। অনেকের অন্যত্র যাওয়ার অবস্থা ছিল না ফলে এলাকায় রয়ে গেলেন। যে কয়েকটি পরিবার অন্যত্র যেতে পারলেন না তাদের মধ্যে একটি হযরত আলী লস্কর-এর পরিবার।
হযরত আলী লস্কর ছিলেন একজন দর্জি/খলিফা। মিরপুরেই তার দোকান ছিল। সকলে যখন এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন তখন হযরত আলী লস্করকেও তারা চলে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর যাওয়ার জায়গা ছিল না। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু হয়ে গেলে ২৬ মার্চ সকাল সাতটার দিকে বিহারির হযরত আলী লস্কর-এর বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং তাকে ধরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই তারা তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা ও শিশু পুত্রকে ধরে নিয়ে যায় এবং সকলকে এক সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করে পাশের বাড়ির কুয়োতে সব লাশ ফেলে যায়। বিহারিরা তার দ্বিতীয় কন্যা আমেনা বেগমকে ঘরের ভতর সারাদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে তাকেও হত্যা করে সেই কুয়োতে ফেলে। হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম মাত্র দুইদিন আগে শ্বশুরবাড়িতে চলে যাওয়ায় একমাত্র সেই প্রানে বেঁচে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, হযরত আলী স্ত্রী সে সময় অন্তঃসত্বা ছিল।
কয়েকদিন পরই এ খবর হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম জানতে পারেন। কিন্তু মিরপুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তিনি বাড়ি আসতে পারলেন না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজ বাড়িতে এসে তিনি আর কিছুই অবশিষ্ট পেলেন না। ভগ্নহৃদয়ে ফিরে গেলেন শ্বশুরবাড়িতে।”

রায়ের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে মোমেনা বেগম তার পিতামাতা এবং ভাইবোনকে হত্যার ঘটনাটি যে স্বচক্ষে দেখেছেন তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে। তার বয়স ছিল তখন ১৩ বছর এবং অলৌকিকভাবে সে বেঁচে যায়। তাকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই।

আসামী পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মোমেনা বেগমের যে জবানবন্দী মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে রক্ষিত রয়েছে তা  তারা ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছিলেন।  ট্রাইব্যুনাল তখন তা  নথিভুক্ত করে জানিয়েছিলেন বিষয়টি তারা রায়ের সময় বিবেচনা করবেন। তবে রায়ে এ ডকুমেন্ট বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। রায়ে আসামী পক্ষের দাবি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আসামী পক্ষ দাবি করেছে মোমেনা বেগম  হযরত আলী লস্করের মেয়ে নন। তিনি যে হযরত আলী রস্করের মেয়ে সে মর্মে রাষ্ট্রপক্ষ তা তিনি কোন  ডকুমেন্ট হাজির করেনি। তাছাড়া জেরায় আসামী পক্ষ মোমেনা বেগমের যেসব দুর্বল বিষয়   বের  করে আনে তাও উল্লেখ করা হয়নি রায়ে।
আসামী পক্ষ কর্তৃক মোমেনা বগমের জেরার পর্যালোচা করে রায়ে  বলা হয়েছে, জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে মোমেনা বেগম জানান, পাকিস্তান আর্মি এবং বিহারীদের সাথে যে বাঙ্গালী এসেছিল তিনি বাংলায় কথা বলছিলেন এবং তার বাবার কলার ধরে যিনি  নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি হলে কাদের মোল্লা। তিনি   খাটের নিচে লুকিয়ে থেকে এ ঘটনা দেখেন। কাদের মোল্লা যে সেখানে উপস্থিত ছিলেন তা এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে রায়ে মন্তব্য করা  হয়েছে।
রায়ে বলা হয়েছে মোমেনা বেগমের মা বাবা ভাই বোনকে কাদের মোল্লা নিজে হত্যা করেছে  চার্জে সে অভিযোগ করা হয়েছে বলে মনে হয়না। তবে রায়ে বলা হয়েছে কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে, সহায়তায় এবং নৈতিক সমর্থনে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। মানবতা বিরোধী এ ধরনের হত্যা ঘটনা  ব্যক্তি সরাসরি ঘটিয়েছে তা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন  হয়না।

রায়ে আরো বলা হয়েছে এ ঘটনায় একজনমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী   জীবিত সাক্ষী এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলেন মোমেনা বেগম। তার এভিডেন্সেকে পাশ কাটানো যায়না বা সন্দেহ পোশন করা যায়না।   

আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা  হয় এবং এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে কারাদান্ড প্রদান করা হয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে।  দুটি   হযরত আলী হত্যা ঘটনাটি ছিয় ছয় নম্বর অভিযোগ এবং এ অভিযোগসহ আরো একটি অভিযোগে যাবজ্জীবন প্রদান করা হয়। হযরত আলী লস্কর আওয়ামী লীগ করার কারনে এবং স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারনে  আব্দুল কাদের মোল্লা বিহারী এবং আর্মিদের সাথে নিয়ে তাকেসহ পরিবারের লোকজনকে হত্যা করে মর্মে অভিযোগ করা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।
আপিল বিভাগেও আসামী পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের জবানবন্দীর বরাতে তৈরি করা প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছিল। শুনানীর সময় আদালত এ রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যাদুঘরের যে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাকে হাজির করা হয়েছিল কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন আমারা এ রিপোর্ট সংগ্রহ করেছি। এখন  এ রিপোর্ট সত্য কি-না তা প্রমানের দায়িত্ব কোর্টের। কোর্ট এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারেন। কোর্ট যাদুঘর কর্তৃপক্ষকে তলব করতে পারেন এবং তাদের কাছে জানতে চাইতে পারেন যে, তাদের কাছে এ ধরনের রিপোর্ট আছে কি-না। তাহলেই বের হয়ে যাবে আমাদের রিপোর্ট সত্য কি মিথ্যা।
কিন্তুআদালত মন্তব্য করেছেন মোমেনা বেগম কোর্টে এসে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন সেটাই আসল বিবেচ্য। পরিবারের সবই নিহত  হয়েছে এবং বেঁচে যাওয়া একমাত্র মেয়ে ভুক্তভোগী সাক্ষীর কথা তারা অস্বীকার করে কি করে বলে মন্তব্য করেছেন কোর্ট।
শেষ পর্যন্ত এ ঘটনাতেই আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

অভিযোগ : ট্রাইব্যুনাল  এবং আপিল বিভাগের রায়
রাষ্ট্রপক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ এনেছি। ট্রাইব্যুনাল এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে তাকে সাজা দেয়া হয়। এসব অভিযোগ বিষয়ে  ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল বিভাগ  কর্তৃক সাজা বিষয়ে নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হল।

১ নং অভিযোগ পল্লব হত্যা :
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে  মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লব হত্যা ঘটনা। অভিযোগে বলা হয় আব্দুল কাদের মোল্লার নির্দেশে তার সাঙ্গপাঙ্গরা  মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে নওয়াবপুর থেকে ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করে।

ট্রাইব্যুনালের রায় :  ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ হত্যা ঘটনার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লার সংশ্লিষ্টতার   অভিযোগে তাকে  ১৫ বছরের জেল দেয়া হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে পল্লব হত্যার ঘটনা বিশ্লেষন করে উল্লেখ করা হয়েছে এ হত্যা ঘটনার অভিযোগের ভিত্তি হল শোনা কথা।  ট্রাইব্যুনালের হাতে  যা এসেছে তাতে দেখা যায় আব্দুল কাদের মোল্লা  ব্যক্তিগতভাবে কোন অপরাধ সংঘটন করেছেন এমন অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত নন।

আপিল বিভাগের রায় : আপিল বিভাগের রায়ে পল্লব হত্যা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত  ১৫ বছরের সাজা বহাল রাখা হয়েছে।

২ নং অভিযোগ কবি মেহের হত্যাকান্ড :
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগীদের নিয়ে মিরপুর ৬ নং সেকশনে নিজ ঘরে  থাকা অবস্থায় স্বাধীনতাপন্থী কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে হত্যা করে মর্মে অভিযোগ আনা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।

ট্রাইব্যুনালের রায় :  ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ অভিযোেেগ আব্দুল কাদের মোল্লাকে  ১৫ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে ।

কবি মেহেরুন্নেসা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আব্দুল কাদের মোল্লাকে  দন্ডিত করে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে  বলা হয়েছে  অভিযুক্ত কাদের মোল্লা কবি মেহেরুন্নেসার ঘরে  নিজে প্রবেশ করেননি হত্যাকান্ডের সময় । হত্যাকান্ডে কাদের মোল্লা নিজে সশরীরে অংশগ্রহণও করেননি। তবে  যারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তাদেরকে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে গেছেন এবং  এ  কাজে তার নৈতিক সমর্থন ছিল। কাদের মোল্লা নিজে এ অপরাধে অংশ নিয়েছেন সে মর্মে প্রমান নেই।
রায়ে আরো বলা হয়েছে এ হত্যাকান্ডের অভিযোগের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ তিনজন শোনা সাক্ষীর ওপর নির্ভর করেছে। অর্থাৎ  অভিযোগের ভিত্তি হল সাক্ষীদের শোনা কথা। 

আপিল বিভাগের রায় : আপিল বিভাগের রায়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত ১৫ বছরের সাজা বহাল রাখা হয়েছে।

৩ নং অভিযোগ সাংবাদিক আবু তালেব হত্যা :
১৯৭১ সালে ২৯ মার্চ সাংবাদিক আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব তার মিরপুর ১০ নং সেকশনে অবস্থিত বাসা থেকে  আরামবাগ যাচ্ছিলেন। তিনি মিরপুর ১০ নং বাস স্ট্যান্ডে পৌছার পর আব্দুল কাদের মোল্লা অন্যান্য আল বদর সদস্যা, রাজাকার,  দৃষ্কৃতকারী এবং বিহারীদের সাথে নিয়ে তাকে ধরে মিরপুর জল্লাদখানা পাম্প হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে সেখানে হত্যা করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের রায় : এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে ১৫ বছরের সাজা দিয়েছে। এ ঘটনায়ও আব্দুল কাদের মোল্লাকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে দুজন সাক্ষীর শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে।

আপিল বিভাগের রায় : আপিল বিভাগের রায়ে ট্রাইব্যুনালের এ সাজা বহাল রাখা হয়েছে।

৪ নং অভিযোগ ঘাটারচরে শতাধিক মানুষ হত্যা:
 ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর আব্দুল কাদের মোল্লা ৬০-৭০ জন রাজাকার বাহিনী সদস্য নিয়ে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচ এবং ভাওয়ালখান বাগ্রিণামক দুটি গ্রামে হামলা চালিয়ে দুজন মুক্তিযোদ্ধাসহ শতাধিক গ্রামবাসীকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।  সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের রায় : এ অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনালের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস  দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ এ ঘটনায়  তিনজন সাক্ষী হাজির করে। এদের একজন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করা হয়। বাকী দুজন শোনা সাক্ষী। প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আব্দুল মজিদ পালওয়ান সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন ঘটনার দিন যখন গ্রামের উত্তর দিক থেকে গুলি আসতে শুরু করে তখন তিনি যেদিক থেকে গুলি আসে সেদিকে এগিয়ে যান ।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ সাক্ষীর সাক্ষ্য পর্যালোচনায় বলা হয়েছে একবার সাক্ষী বলেছেন সকাল ১১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে অপরাধীরা চলে যাবার পর তিনি জানতে পারেন দুস্কৃতকারীদের সাথে পাজামা পাঞ্জাবী পরা লোকটা ছিল আব্দুল কাদের মোল্লা। আবার আরেক জায়গায় বলেছেন তিনি ঘটনা স্থলে গিয়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে রাইফেল হাতে দেখেছেন। একবার বলেছেন ঘটনা ঘটার পর জানতে পেরেছেন পাজামা পাঞ্জাবী পরা লোকটা ছিল কাদের মোল্লা আবার আরেকবার বলেছেন তিনি তাকে রাইফেল হাতে দেখেছেন। ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন করেছেন কোনটা সত্য? তাছাড়া এ ধরনের অভিযানের সময় যখন সাধারনত মানুষ জীবন বাঁচাতে পেছনের দিকে পালিয়ে যায় তখন সাক্ষী বলছেন তিনি গুলির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এটিও একটি     অস্বাভাবিক ঘটনা এবং আপিল বিভাগের শুনানীর সময়ও এ সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                     

আপিল বিভাগের রায় : ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ অভিযোগ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে  খালাস দেয়া হলেও আপিল বিভাগের রায়ে এ অভিযোগে আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে।

৫ নং অভিযোগ আলুবদি হত্যাকান্ড :
 এতে বলা হয়- ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল  সাড়ে চারটার সময় আব্দুল কাদের মোল্লার  সদস্যরা (মেম্বারস)  পাকিস্তান আর্মি সাথে নিয়ে মিরপুর পল্লবীর  আলুবদি গ্রামে নিরীহ বেসামরিক লোকজনের ওপর আক্রমন পরিচালনা করে । আক্রমনের অংশ হিসেবে তারা নির্বিচারে গুলি চালায় এবং এতে ৩৪৪ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায় : ট্রাইব্যুনালের রায়ে  এ অভিযোগে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায় : আপিল বিভাগের রায়ে এ সাজা বহাল রাখা হয়েছে।

৬ নং অভিযোগ হযরত আলী হত্যাকান্ড : ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘটনা ঘটে। মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের  ৫ নং কালাপানি লেনে ২১ নম্বর বাসায় হযরত আলী,  তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও    মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা ঘটে আব্দুল কাদের মোল্লার নেতৃত্বে।

ট্রাইব্যুনালের রায় : এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। রায়ে বলা হয়েছে কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে, সহায়তায় এবং নৈতিক সমর্থনে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।

আপিল বিভাগের রায় :  আপিল বিভাগের রায়ে ট্রাইব্যুনালের যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।



মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরন :
ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় প্রদানের  এক মাসের মাথায় আসামী পক্ষ এবং     রাষ্ট্রপক্ষ থেকে  রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হয়।  গত ২৩ জুলাই দীর্ঘ শুনানী শেষে আপিল বিভাগ মামলার রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করে।
এর আগে গত ৩১ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ গঠন করা হয় আপিল আবেদন শুনানীর জন্য। ১ এাপ্রিল থেকে শুনানী শুরু হয়। তবে বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান আব্দুল কাদের মোল্লা মামলার  শুনানী শেষ হবার আগেই অবসরে চলে গেছেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ কাদের মোল্লা মামলার আপিল শুনানী গ্রহণ করেন শেষ পর্যন্ত। প্রধান বিচারপতি ছাড়া অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী।
২০১০ সালের ১৩ জুলাই সুপ্রিমকোর্টের প্রধান গেট থেকে কাদের মোল্লাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ট্রাইব্যুনালে তদন্তকারী সংস্থার এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগষ্ট কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আটক রাখার আদেশ দেয়া হয়।
২০১২ সালের গত ২৮ মে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগের ঘটনায় চার্জ গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ৩ জুলাই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন এবং আসামী পক্ষে ছয় জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করে।
এর আগে ২০১২ সালের  ৭ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। এরপর ২০১২ সালের ২৫ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ মামলাটি সেখানে স্থানান্তর করা হয়।

বাংলাদেশ এর সর্বোচ্চ আদালত যথা সুপ্রীম কোর্ট এর আপিল বিভাগ  আব্দুল কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।  প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ  আলোচিত এবং ঘটনাবহুল  এ মামলার রায় ঘোষনা করেন ১৭ সেপ্টেম্বর ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গত ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল । আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের  যাবজ্জীবন সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দিল। রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের  মোট ছয়টি অভিযোগ এনেছিল। ট্রাইব্যুনাল একটি অভিযোগ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দিয়েছিল। কিন্তু আপিল বিভাগ ছয়টি অভিযোগেই তাকে সাজা দিয়েছে।

পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে (৪ : ১) আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে।
অর্থাৎ চার জন বিচারপতি মৃত্যুদন্ডের পক্ষে এবং একজন বিচারপতি মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে রয়েছেন। এছাড়া অপর যে পাঁচটি অভিযোগে আপিল বিভাগ কাদের মোল্লাকে সাজা দিয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই একজন বিচারপতি ভিন্নমত পোষন করেছেন। অর্থাৎ ছয়টি অভিযোগেই সাজা দেয়া হয়েছে ৪  অনুপাত ১ এর ভিত্তিতে।
ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দুইটি অভিযোগে যাবজ্জীবন, তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদন্ড এবং একটি অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছিল। আপিল বিভাগের রায়ে একটি যাবজ্জীবনের সাজা বাড়িয়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। এ অভিযোগটি হল  মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী,  তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও    মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা । এটি ছিল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ছয় নং অভিযোগ।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে চার নং অভিযোগ (কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর হত্যাকান্ড) থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে  খালাস দেয়া হয়েছিল। আপিল বিভাগের রায়ে খালাস দেয়া এ অভিযোগটিতে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া অপর যে চারটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল  সাজা দিয়েছিল তা বহাল রাখা হয়েছে আপিল বিভাগের রায়ে। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত যে চারটি সাজা আপিল বিভাগের রায়ে বহাল রাখা হয়েছে সেগুলো হল অভিযোগ নং ১, ২, ৩ এবং ৫।
সরকার পক্ষ  আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড এবং  ট্রাইব্যুনাল যে অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছে সেই অভিযোগে সাজা প্রদানের জন্য  আপিল আবেদন করেছিল। আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে  সরকার পক্ষের আবেদন পুরোপুরি গৃহীত হল। অপর দিকে আসামী পক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার খালাস চেয়ে আবেদন করেছিল আপিল বিভাগে। রায়ে তাদের  আবেদন বাতিল বা নামঞ্জুর হল।
আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আপিলের রায়ের মাধ্যমে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত কোন আসামীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় দেয়া হল।

কাদের মোল্লার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি :
আব্দুল কাদের মোল্লার জন্ম ১৯৪৮ সালে ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলায়।  তিনি প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করার পর ১৯৬৬ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। একই কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে বিএসসি পাশ করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে এমএসসি কাসে ভর্তি হন । মেধাবী ছাত্র আব্দুল কাদের মোল্লা প্রাইমারী এবং জুনিয়র স্কুল পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন যথাক্রমে ১৯৫৯ এবং ১৯৬১ সালে।
১৯৭৪ সালে তিনি  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর (ইন্সটিটিট অব এডুকেশন এন্ড রিসার্চ) এ ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (সোস্যাল সাইন্স) এ ভর্তি হই। ১৯৭৫ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এ কোর্সে। এরপর তিনি ১৯৭৭ সালে এডুকেশনাল এডমিনিস্ট্রেশন তেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে  এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।
আব্দুল কাদের মোল্লা  স্কুল জীবনে কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। ১৯৬৬ সালে তিনি তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাথে জড়িত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।
বিডিআর সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উদয়ন বিদ্যালয়ে ১৯৭৪-১৯৭৫ সালে শিক্ষকতা করেন। এছাড়া বাইশরশি শিব সুন্দরী একাডেমীতে শিক্ষকতা এবং  ইসলামী ফাউন্ডেশনেও  চাকুরী করেছেন তিনি।
আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৮২-৮৩ সালে পরপর  দুই বার ঢাকা ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট (ডিউজে)  সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনৈতিক জীবনে আব্দুল কাদের মোল্লা  ১৯৮৩ সালে ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক  এবং   ১৯৮৭ একই শাখার আমির নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। জামায়াতের নেতৃত্ব পর্যায়ের ভূমিকা পালনের সময় তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে জোটগদ রাজনীতির কারনে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতার ভূমিকাও পালন করেছেন। ১৯৬৪ সালে আইউব বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কারনে তাকে  চারবার কারাবরন করতে হয়েছে।
আব্দুল কাদের মোল্লার চার মেয়ে এবং দুই পুত্র সন্তানের পিতা।
আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আসামী পক্ষে প্রধান আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এছাড়া অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, তাজুল ইসলাম, শিশির মো: মনির, সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ দায়িত্ব পালন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।

The trial of the birth of a nation



This week the chairman of Bangladesh’s International Crimes Tribunal resigned. We explain the background to his action, our role in the story, and what it all means for his country’s search for justice

Dec 15th 2012 | from the print edition

BANGLADESH suffered a violent birth. In the last days of 1971 the country then called East Pakistan was engulfed by torture, rape, mass-killing and other acts of genocide. The main perpetrators were Pakistani troops bent on preventing secession from “West Pakistan”. But the army had the support of many of East Pakistan’s fundamentalist groups, including Jamaat-e-Islami, which remains Bangladesh’s largest Islamic party. Estimates of the death toll vary from around 300,000 to the current government’s reckoning of 3m—one in 20 of the population at that time.
In 2010 Bangladesh established a tribunal to try those accused of war crimes. It is called the International Crimes Tribunal, though it is not an international court in the sense of being founded on international law. Rather it is a national court, based on a Bangladeshi statute passed in 1973 and amended in 2009 and 2012. It was very late to begin the search for justice, for the accused as well as for victims. But war crimes are subject to no statute of limitation.
The main perpetrators are not in the dock, since they are either dead or living in Pakistan. But some suspects are still leading prominent lives in Bangladesh. Ten people have been arrested and charged with offences ranging from individual acts of rape and murder to the ordering of mass executions. This week the first case—that of Delwar Hossain Sayeedi, a member of parliament in 1996-2008 and a leader of Jamaat—seemed to be moving towards its fatal conclusion. His conviction, and presumed death sentence, was widely expected in mid-December.
At the last moment, however, the presiding judge, Mohammed Nizamul Huq, resigned as chairman of the tribunal, following questions put to him by The Economist and the publication in Bangladesh of private e-mails which cast doubt upon his role and upon the court proceedings. Recordings of him speaking by telephone were also available on YouTube. The Economist has seen these, and other materials, and has been investigating their accuracy and significance. This week, we publish the results of those investigations.
The e-mails and phone conversations we have seen raise profound questions about the trial. The material suggests the government tried to put pressure on Mr Nizamul, albeit he seems to have resisted it. It seems to show he worked improperly with a lawyer based in Brussels, and that the lawyer co-operated with the prosecution—raising questions about conflicts of interest. And in Mr Sayeedi’s case it points to the possibility that, even before the court had finished hearing testimony from the defence witnesses, Mr Nizamul was already expecting a guilty verdict.
These concerns are so serious that there is a risk not only of a miscarriage of justice affecting the individual defendants, but also that the wrongs which Bangladesh has already suffered will be aggravated by the flawed process of the tribunal. That would not heal the country’s wounds, but deepen them.
As well as being about the birth of the nation, the war-crimes trial also has enormous significance to today’s politics in Bangladesh. In the general election of 2008 the current prime minister, Sheikh Hasina, campaigned on a promise to set up the tribunal. The men in the dock include leaders or former leaders of Jamaat, which is allied with the main opposition group, the Bangladesh Nationalist Party (BNP), led by Sheikh Hasina’s bitter foe, Khaleda Zia. Since Mrs Zia cannot win power without support from Jamaat, many people doubt that she would continue with the trials should she become prime minister. She has already condemned them as a “mockery”. Backers of the trials therefore wanted them wrapped up before the next general election, which is due around the end of 2013.
The 1973 act says that “if, in the course of the trial, any one of the members of the Tribunal is, for any reason, unable to attend to any sitting thereof, the trial may continue before the other members.” The evidence we have seen, though, suggests that a full reconsideration of proceedings may now be required.
“Absolutely crazy for a judgment”
The first part of that evidence raises questions about the government’s behaviour. It suggests the tribunal came under political pressure to speed proceedings up, even though Bangladesh guarantees the independence %of the judiciary. In a conversation of October 14th, between Mr Nizamul and Ahmed Ziauddin, the Brussels-based lawyer of Bangladeshi origin, the judge refers to the government as “absolutely crazy for a judgment. The government has gone totally mad. They have gone completely mad, I am telling you. They want a judgment by 16th December...it’s as simple as that.” December 16th, known as Victory Day in Bangladesh, is the anniversary of the surrender by Pakistani forces in the war of independence.
So determined was the government to hurry matters along that Mr Nizamul and Mr Ziauddin worried that ministers were pushing too hard. “We have to make them understand that it [the verdict] is not a product that you just ask for it and it will be delivered from the machine,” Mr Ziauddin said later in that same conversation.“But we are not in a position to make them understand. Even then we have to try, we have to speak to them.”
It is one thing to push for an early verdict, another to attempt to intervene in the trial to secure one. That seems to have happened, too. In a conversation the next day, Mr Nizamul described how a member of the government “came to visit me this evening. He asked me to pass this verdict fast. I told him ‘how can I do that?’... He said, ‘Try as quick as you can.’”
In a phone interview on 5th December, the judge denied that he had come under political pressure and declared he was master of his own court. “We do proceed according to our own wish,” he said. “We are following our own proceeding according to our own system and own choice.”
Elsewhere in the material we were shown, however, it is Mr Nizamul’s independence that is in question. He is a Supreme Court judge and remains one after resigning as chairman of the tribunal. (A tribunal has between three and five judges; there is no jury.) Mr Ziauddin, the man he is communicating with, is an expatriate Bangladeshi who is an academic specialising in international law. He is the director of the Bangladesh Centre for Genocide Studies in Belgium. The two men have known each other for 25 years, as they were human-rights campaigners and Mr Ziauddin’s late brother had been a student friend of the judge.
The adviser
In the material shown to us, Mr Ziauddin emerges as an important figure in the trial—offering advice, urging Mr Nizamul to do this or that, and supplying him with news and drafts of court documents. In general, judges are required to be extremely careful about discussing details of cases with third parties because that could lead to bias or the impression that they have come under the influence of someone who has nothing to do with the proceedings. This requirement is embodied in Bangladesh’s constitution, which says “the chief justice and other judges shall be independent in the exercise of their judicial functions.” The judges’ code of conduct confirms that “an independent judiciary is indispensable to the justice system in Bangladesh.”
Perhaps, however, there are extenuating circumstances in this particular case. Though the tribunal is a domestic court, its officers seem eager to measure up to the standards set by international war-crimes tribunals. The tribunal is short of resources. It might be understandable if Mr Nizamul quietly talked to an international expert in order to improve the quality of the tribunal’s work.
That is what Mr Nizamul argued. The order of December 6th explains that the tribunal is based on “new law”, so the judges needed to “take the assistance of researchers from inside and outside the country”. It names Mr Ziauddin as just such an expert. “During the proceedings of the trial and order the Chairman also took assistance from him,” it says.
Speaking to The Economist on December 4th, Mr Ziauddin said something similar. “It’s up to judges to decide where they are going to get research support or other support they need. They are quite entitled to do it. The more so when they really don’t have that research backup [in Bangladesh]. [They ask for help] if they feel if there are people more informed about the issue, especially where [international law] is so new in Bangladesh...I’m not really advising him, but if there is a question then I try to respond.”
Yet the characterisation in the order and from Mr Ziauddin contradicts what the judge told us in an interview on December 5th. On the evening before issuing the order, Mr Nizamul admitted that he and Mr Ziauddin talk but denied that the expatriate had a part in preparing documents. “As judges, we cannot take help from third person and outsiders,” he said. Asked whether they sometimes exchange e-mails about the tribunal, he says “No, no, no, regarding tribunal...no talks regarding the judgment or regarding the proceedings, no.” Later he said, “A Supreme Court judge, we do not talk even with our wife regarding the tribunal.”
In his interview on the previous day, Mr Ziauddin also took the view that judges must be careful about speaking to third parties during a trial. He told us that he has “No official standing [with the court]. No relationship whatsoever.” He can send the judge messages if he wants—but “generally though I don’t,” he said, “he’s a judge after all.”
Of course, judges can take advice. But any adviser is usually given an official role, known to prosecution and defence. Also as a general rule, advisers tend to stick to their areas of expertise—giving advice on knotty points of law, for example.
Mr Ziauddin does not seem to meet these requirements. Before the tribunal’s order on 6th December his role had not been disclosed to the court or the public. And his advice seems to go beyond particular points of law to include, for example, the drafting of charges. The 17 hours of conversations available to The Economist took place between August 28th and October 20th this year—the equivalent of almost 20 minutes every day. The two men also exchanged more than 230 e-mails in the 12 months to September. Many of these contacts suggest that Mr Ziauddin was involved in aspects of the trial that go beyond what would be permitted to a court adviser or anyone else. Each particular accusation might appear to be modest, or might be explained away. Taken together, they suggest a disturbing pattern.
First, Mr Ziauddin appears to have helped prepare documents for the tribunal, which the judge said would be improper. On May 12th the Brussels-based lawyer sent Mr Nizamul a document called “GhulamAzamChargesFinalDraft”; it was a slightly revised version of a charge sheet he had sent six days earlier. The next day, May 13th, the tribunal issued its indictment against Mr Azam, whom the two men usually refer to as “the big one”. It was identical to Mr Ziauddin’s document. In interviews with us, both men denied that Mr Ziauddin helped prepare documents for the court.
Second, their discussions ranged beyond the realm of technical advice. On September 6th Mr Nizamul said: “I am a bit afraid about Shahinur [Shahinur Islam, a tribunal judge]. Because he is too inclined to the international standard. It...was in my mind—and prosecutors also complained to me—that he brought the references of foreign tribunals in every order.” Mr Ziauddin replied, “he has to be stopped from doing that or he has to be removed from there...If he does not stop he has to go as well, because it is so harmful to us.” Here, Mr Ziauddin talks as if he can recommend the dismissal of judges.
“Very anxious”
Again, on November 26th 2011 Mr Nizamul (who is known informally as Nasim) sent Mr Ziauddin an e-mail about an important defence petition. His message reads in full: “Subject: Order. not yet received. very anxious. please send by this night bd [Bangladesh] time, otherwise, i will follow my own one. Nasim.” Mr Nizamul’s e-mail suggests that he considered Mr Ziauddin’s arguments to have primacy over his own.
Third, material we have seen suggests that Mr Ziauddin was communicating with the prosecution and judge about the same issues at the same time. On November 8th 2011 he e-mailed Mr Nizamul a list of matters raised by a defence petition that the judge recuse himself from the trial. The first five items on the list are materials and documents that, the e-mail says, were to be supplied to Mr Nizamul by Zaed-al-Malum, the chief prosecutor at the tribunal. It was perfectly proper for the judge to receive such materials, which do not appear to concern matters that might be disputed in court. It is also possible that the prosecutor was the person best placed to supply them. Even so, it is curious that, on a matter of procedure, the chief prosecutor is being asked to help by someone who is also advising the judge.
The connection between judge, prosecution and adviser seemed to have continued. On December 11th 2011 Mr Ziauddin sent an e-mail to two prosecutors, including Mr Malum, apparently giving help with the case against Mr Azam and tips on how to present their arguments. He forwarded this advice to Mr Nizamul the same day. Speaking to us, Mr Ziauddin acknowledged knowing Mr Malum, who is acting for his family in unrelated matters. But he denies improper contact about the cases before the tribunal, and Mr Malum has not replied to our inquiries.
The material we have seen therefore suggests three things: that Mr Ziauddin had an influence over how the prosecution framed its case and how the court framed its indictment; that Mr Ziauddin told the judge in his December 2011 e-mail about how prosecutors might develop their case; and that after the prosecutors laid their charges, the judge accepted guidance about the formal accusations from Mr Ziauddin directly.
Lastly, in the case of Mr Sayeedi, an e-mail from Mr Ziauddin to Mr Nizamul refers to a shared Google document called “Sayeedi judgment”. This document says “last edit was made on October 14”. At this time, Mr Sayeedi’s lawyers were still presenting his defence to the court. The document consists of a series of subjects (“list of testimonies”, “procedural history”; “challenges”, etc). Presumably details were to be filled in later. The final headings, and the only two in capitals, read: “CONVICTION/BASIS” and “SENTENCING”.
Courts often start work on long judgments before the end of a trial and Mr Nizamul could have amended his structure to replace “conviction” with “acquittal”. However, on his own showing, that was not what was happening. He denied to us he had been working on the document in October. “Delwar Hussain’s judgment has not been even started then,” he said.
Legitimate questions
The judge called our allegations “absolutely absurd” and “all false”. Mr Ziauddin argued there were other explanations for our findings but—after the court order telling The Economist to appear before it—said he would make no further comment. We do not believe he has broken any laws and cannot be held responsible for the actions of others. In addition, our investigations have not covered any aspect of the defence’s approach to this tribunal. Nevertheless, we believe that, taken together, the material shown to us raises legitimate questions about due process that the Bangladeshi authorities should now investigate thoroughly. These investigations are the more urgent in the light of Mr Nizamul’s resignation.

Discrepancy in Dhaka



Dec 8th 2012, 17:34 by The Economist
 
The war-crimes court in Bangladesh has some explaining to do
ON 6th DECEMBER 2012 the presiding judge of Bangladesh’s International Crimes Tribunal, Mohammed Nizamul Huq, passed an order requiring two members of The Economist to appear before the court, demanding that they explain how we have come by e-mails and conversations between himself and Ahmed Ziauddin, a lawyer of Bangladeshi origins based in Belgium. The tribunal was established in 2010 to consider accusations of war crimes committed in 1971, during Bangladesh’s war of independence from Pakistan.
The Economist has heard 17 hours of recorded telephone conversations and seen over 230 e-mails between the two men. This material is confidential and we are bound by law and the British press’s code of conduct not to reveal such information except in matters of the most serious public interest. We did not solicit the material, nor pay for it, nor commit ourselves to publish it.
These e-mails, if genuine, would indeed raise questions about the workings of the court and we are bound to investigate them as fully as we can. It was in the course of those investigations that we contacted the two men.
Our investigations are continuing. Once they are concluded and if we consider the allegations contained in them to have merit, we will publish them. Meanwhile, we are publishing a short account of our dealings with Mr Huq and Mr Ahmed. These, we believe, have a bearing both on the tribunal’s proceedings and on the order of December 6th.
Mr Huq is a Supreme Court judge and “chairman” of a trio of judges on the tribunal. There is no jury and the court can impose the death penalty. The verdict in its first case could come within days. Mr Ahmed is an expatriate Bangladeshi who is an academic specialising in international law who lives in Brussels. The two men have known each other for 25 years, as they were human-rights campaigners and Mr Ahmed’s late brother had been a student friend of the judge. Mr Ahmed is not just an international lawyer, he is also the director of the Bangladesh Centre for Genocide Studies in Belgium, which is dedicated to ending what he has called “the ingrained culture of impunity” surrounding the war crimes in Bangladesh.
The order includes a description of Mr Huq’s relationship with Mr Ahmed. It explains that the tribunal is based on “new law”, so the judges need to “take assistance of researchers from inside and outside the country”. It names Mr Ahmed as just such an expert. “During the proceedings of the trial and orders the Chairman also took assistance from him,” it says.
Speaking to The Economist in Brussels on December 4th, Mr Ahmed had said something similar, “It’s up to judges to decide where they are going to get research support or other support they need. They are quite entitled to do it. The more so when they really don’t have that research backup [in Bangladesh]. [They ask for help] if they feel if there are people more informed about the issue, especially where [international law] is so new in Bangladesh. I’m not really advising him, but if there is a question then I try to respond.”
But the characterisation in the order and from Mr Ahmed contradicts what the judge told us in a taped interview. On December 5th, the evening before the court issued its order, Mr Huq insisted that Mr Ahmed was not helping him. He admitted that they talk, but denied that he had a part in helping prepare documents or doing anything in any official capacity. He said that for anyone to play such a role would be quite wrong.
“As judges, we cannot take help from third person and outsiders,” Mr Huq said. Asked whether they sometimes exchange e-mails about the tribunal, he says “No, no, no, regarding tribunal, no talks regarding the judgment or regarding the proceedings, no.” Later, he said, “A Supreme Court judge, we do not talk even with our wife regarding the tribunal.”
Judges generally have to be careful if they discuss cases with third parties, because to do so could lead to bias or the impression that they have come under the influence of someone who has nothing to do with the proceedings.
In his interview in Brussels on the previous day, Mr Ahmed had likewise told us that he has “no relationship whatsoever” with court. He can send the judge messages if he wants—“generally though I don’t,” he said, “he’s a judge after all.”
Several questions are raised by all this. On what basis did the judge select the experts who would help him? Why was Mr Ahmed’s role not revealed to the court and to the public until the tribunal order on December 6th, after we had contacted him? The order refers to the presiding judge of the tribunal “receiving the support [of Mr Ahmed] on the developments on International Criminal law throughout the world” and taking assistance “during the proceedings of the trial and orders”. Why then did he tell us on December 5th that the two men had had no talks regarding the tribunal or regarding the proceedings? And why did he say that it would not be appropriate for a Supreme Court judge to talk to others about the proceedings?

Justice in Bangladesh Another kind of crime



Bangladesh’s war-crimes tribunal is sullying its judicial and political systems

Mar 23rd 2013 |From the print edition

IN 1961 Israel kidnapped Adolf Eichmann from Argentina and put him on trial for crimes committed 20 years earlier. Eichmann had been secretary at the Nazis’ Wannsee conference that led to the Holocaust. His trial in Jerusalem was a model of meticulous process. The prosecutor was Israel’s attorney-general; the defence lawyer, a leading German attorney; the proceedings were broadcast. They were everything the Holocaust was not: open, subject to evidence and challenge, and legal.
Now consider the trials under way at the International Crimes Tribunal in Dhaka, the capital of Bangladesh. There too, men are being tried for dreadful crimes committed many years ago, in this case in 1971, during Bangladesh’s war of independence from Pakistan. The defendants have been accused of genocide, mass murder, mass rape and attempting to exterminate whole groups of people. But their trials have fallen a long way short of Israel’s model of due process.
The government has interfered in the court’s deliberations. Public discussion of the proceedings has been restricted. The number of defence witnesses was curtailed. One was even kidnapped on the steps of the court. In one case, the presiding judge resigned and the death sentence was handed down by three men who had not heard all the witnesses. In another, the defendant was represented by a lawyer who did not have nearly enough time to prepare a case. That also ended in a death sentence. These are profound judicial failings, falling short not only of the standards of the Eichmann trial but also of the requirements of Bangladeshi law. They contradict repeated government assurances that the trials would be models of judicial process.
The ostensible and laudable aim of these trials was to help Bangladesh come to terms with its past by bringing to justice those responsible for the crimes that marred the nation’s birth. By this measure, the trials have been an utter failure. Because most of the accused are linked to Jamaat-e-Islami, an Islamist group allied to the main opposition party, the court process has become enmeshed within the country’s internecine politics. Jamaat thugs with home-made bombs have gone on the rampage; police have fought running battles with mobs; dozens have died. Bangladesh is descending into a spiral of intolerance. The government talks of banning Jamaat; the opposition is becoming more aggressively Islamist; rumours are spreading that an election due this year may be postponed.
The poisoned well
Sadly, most Bangladeshis are cheering on the tribunal’s flawed proceedings. When the court passed a life sentence (rather than a death sentence), the crowds that gathered to protest against this leniency were the biggest that had been seen in Dhaka for 20 years. Now the government wants to rewrite the law to allow death sentences to be applied retrospectively. Few seem to care a jot for due process; rather, everybody thinks that the defendants are getting their just deserts.
The Economist has no sympathy for the views of Jamaat or its backers. But justice does not exist solely for those with a particular approved outlook. As the Eichmann trial demonstrated, due process is essential to provide true justice to the victims of genocide. Eventually Bangladeshis will also come to recognise this and demand a proper accounting. But by then it will be too late. The war-crimes tribunal is poisoning the well from which Bangladesh will one day want to drink.

আদালত অবমাননার অভিযোগের জবাব দাখিল করেছে ইকোনমিস্ট

২৫/৩/২০১৩
আদালত অবমাননার অভিযোগে লন্ডন থেকে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ‘দি ইকোনমিস্ট’ এর বিরুদ্ধে জারি করা রুলের জবাব  জমা দিয়েছে ইকোনমিস্ট। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ইকোনমিস্টের পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান লিখিত জবাব জমা দিয়েছেন। লিখিত জবাবে আদালত অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইকোনমিস্ট।

ট্রাইব্যুনাল-১ এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কথোপকথন এবং ইমেইল একাউন্ট হ্যাক করা ডকুমেন্ট হস্তগত করার জের ধরে ইকোনমিস্ট এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি নিজামুল হক চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ইকোনমিস্ট এর বিরুদ্ধে রুল জারি করে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত ডকুমেন্ট প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে  কেন আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া হবেনা সেজন্য ব্যাখ্যা দাবি করা  হয়।

এদিকে আজ   ট্রাইব্যুনাল-১ এ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষীর জেরা অব্যাহত ছিল।

স্কাইপ সংলাপ হ্যাকিংয়ে ইকোনমিস্ট দায়ী নয়

১৪/৫/২০১৩
লন্ডন ভিত্তিক সাময়িকী দি  ইকোনমিস্টোর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-১ কর্তৃক  জারি করা আদালত অবমাননা নোটিশের  ওপর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইকোনমিস্ট’র পক্ষে ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান শুনানীতে অংশ নিয়ে বলেন, ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি  নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ এবং ২৩০টি ইমেইল ডকুমেন্ট ইকোনমিস্ট কর্তৃপক্ষ তৃতীয় একটি পক্ষের কাছ থেকে লাভ করে। কাজেই স্কাইপ সংলাপ হ্যাকিংয়ের জন্য ইকোনমিস্ট দায়ী। প্রাপ্ত ডকুমেন্ট এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ইকনোমিস্ট সোর্সের সাথে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু গোপনীয়তার স্বার্থে কর্তৃপক্ষ সূত্র প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। ব্রিটেনের আইনে সে সুরক্ষা প্রদান করা আছে।

ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম  নিয়ে বেলজিয়ামের ড. আহমদ জিয়া উদ্দিনের সাথে বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ এবং ইমেইল ডকুমেন্ট হাতে পাওয়ার পর ইকোনমিস্ট এর সাংবাদিক বিচারপতি নিজামুল হকের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য। এ প্রেক্ষিতে গত বছর ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি নিজামুল হক ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে আদালত অবমনানা বিষয়ে নোটিশ জারি করেন  বিচারপতি নিজামুল হকের   ইমেইল, স্কাইপি একাউন্টস এবং  কম্পিউটর  থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ  করা হয়েছে তা প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় এবং  গোপন রাখার নির্দেশ দেয়া হয় ইকোনমিস্ট এর বিরুদ্ধে।
আদেশে বলা হয়, ইমেইল, স্কাইপি, কম্পিউটার হ্যাক করা, চেয়ারম্যানের কাছ থেকে অবৈধভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করা   ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন এবং  বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারপতিকে প্রভাবিত করার শামিল। টেলিফোনে চেয়ারম্যানের সাথে যিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি  নিজেকে চেয়ারম্যানের সাথে কথপোকথনে লিপ্ত করেছেন এবং আইন অনুযায়ী তিনি এটি পারেননা।
তাই বিচারকাজে বাঁধা সৃষ্টি এবং হস্তক্ষেপ এর অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননা বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা সে মর্মে ব্যাখ্যা দানের নির্দেশ দেয়া হয়।

শুনানীর সময় ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমানকে ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন করেন, বিচারকের সাথে সাংবাদিকের কথা বলা অপরাধ কি-না। 
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোন আইন নেই এবং কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনেরও কোন নজির নেই। বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজীর  সাথে  দৃটি পত্রিকার সাংবাদিক কথা বলে রিপোর্ট করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে আপিল বিভাগ  একটি পর্যবেক্ষন দিয়ে বলেছিলেন সাংবাদিকরা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে কথা বলতে পারতেন বিচারকের কাছে কোন কিছু জানতে চাওয়ার ক্ষেত্রে।
ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান ট্রাইব্যুনালকে প্রস্তাব করেন এ ক্ষেত্রেও কিছু পর্যবেক্ষন দিয়ে বিষয়টির সুরাহা করা যেতে পারে।

ইকোনমিস্ট কোন সূত্র থেকে স্কাইপ এবং ইমেইল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছে তা প্রকাশ করা হয়নি । এ বিষয়ে  ট্রাইব্যুনালের এ প্রশ্নের জবাবে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা কোন অবস্থাতেই সূত্র প্রকাশ করতে বাধ্য নয়।

ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ইকোনমিস্ট এর বিরুদ্ধে নোটিশের মূল বিষয় ছিল বিচারকের সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে। বিচারকের সাথে সাংবাদিকের কথা বলা আদালত অবমাননা কি-না এবং  ইকোনমিস্ট পক্ষ দাবি করেছেন তারা সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নন। এ বিষয়ে আপনাদের জবাব কি?
তাছাড়া বিচারকের সাথে কথা বলার বিষয়ে ব্রিটেনের আইনে কি আছে সে বিষয়েও মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চান ট্রাইব্যুনাল।
উভয় পক্ষ জবাব প্রদানের জন্য সময় চাইলে  আগামী ১৮ জুন শুনানীর জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।