সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মুঈনুদ্দিন-আশরাফুজ্জামানের মামলার রায় যে কোন দিন


মেহেদী হাসান, ৩০/৯/২০১৩
চৌধুরী মুঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের মামলার যে কোন দিন রায় ঘোষণা করা হবে। এ দুজনের বিরুদ্ধে  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সমস্ত বিচার কার্যক্রম শেষ হলে আজ মামলার  রায়  অপেমাণ (সিএভি) ঘোষনা করা হয়।

দুই আসামী পলাতক থাকা অবস্থায় তাদের বিচার কার্যক্রম শেষ হল। পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলনা এবং ট্রাইব্যুনাল তাদের পক্ষে দুজন আইনজীবী নিয়োগ দেন রাষ্ট্রীয় খরচে।
এর আগে মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিচার এবং রায় তার অনুপস্থিতিতে হয়েছিল।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্ব তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলার শেষ পর্বে চৌধুরী মুঈনুউদ্দিন পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবী সালমা হাই টুনী। এরপর রাষ্ট্রনিযুক্ত অপর ডিফেন্স আইনজীবী আবদুস শুকুর খান আশরাফুজ্জামান খানের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে। এরপর পাল্টা যুক্তি উপস্থাপনে করে রাষ্ট্রপরে সমাপনী বক্তব্য দেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।  এর মাধ্যমেই এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে সমাপ্ত হয়েছে।

পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন শেষে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, বুদ্ধিজীবী অপহরণ ও হত্যার নায়ক  চৌধুরী মুঈনুদ্দিন  ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ১১টি অভিযোগ আমরা সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করছি। 

পলাতক আশরাফুজ্জামান খান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এবং চৌধুরী মাইন উদ্দিন যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তাদের মধ্যে চৌধুরী মাইনউদ্দিন ১৯৭১ সালে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন।

চৌধুরী মুঈনুদ্দিন  ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গত ২৪ জুন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পূর্বলগ্নে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে রাষ্ট্রপক্ষের আনা সর্বমোট ১১টি অভিযোগে অভিযুক্ত করে ট্রাইব্যুনাল। 

চৌধুরী মুঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগগুলো হল: 
১. সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনকে অপহরণ ও হত্যা।
২. সাংবাদিক সৈয়দ নাজমুল হককে অপহরণ ও হত্যা।
৩. সাংবাদিক আ ন ম গোলাম মোস্তফাকে অপহরণ ও হত্যা।
৪. সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমদকে অপহরণ ও হত্যা।
৫. সাংবাদিক সেলিনা পারভিনকে অপহরণ ও হত্যা।
৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিনসহ আটজন শিক্ষককে অপহরণ ও হত্যা।
৭. অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীকে অপহরণ ও হত্যা।
৮. অধ্যাপক মনির চৌধুরীকে অপহরণ ও হত্যা।
৯. সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারকে অপহরণ ও হত্যা।
১০. অধ্যাপক ফজলে রাব্বীকে অপহরণ ও হত্যা।
১১. ডা. আলীম চৌধুরীকে অপহরণ ও হত্যা। 

চৌধুরী মুঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ১৬টি অভিযোগ এনেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। এরমধ্যে ১১টি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-২।

আজ  আশরাফুজ্জামানের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কলে রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবী আবদুস শুকুর খান বলেন, আশরাফুজ্জামান যুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত নন। আশরাফুজ্জামানের কোন ডায়রি উদ্ধার করা হয়নি। পত্রপত্রিকায় ডায়রির বিষয়ে যা লেখা হয়েথে তা পাকিস্তানের জেনারেল রাও ফরমান আলীর নিজের হাতের লেখা। পাকিস্তান সেনা বাহিনীর কোন অফিসার বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছে। আর ডায়রির যে পাতাগুলো উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে তা অন্য কোন ডায়রির পাতা। তিনি বলেন, ঘটনার পর দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্টে এসেছে বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়ক পাকিস্তান আর্মির জেনারেল রাও ফরমান আলী।  

রাষ্ট্র যুক্তি অপর ডিফেন্স আইনজীবী সালমা হাই টুনী বলেন, চৌধুরী মইন উদ্দিন ঘটনার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দৈনিক পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টর ছিলেন। তিনি একজন ব্যাস্ততম রিপোর্টর হিসেবে সাংবাদিকতার কাজেই ব্যস্ত থাকতেন। তিনি কাউকে অপহরণ বা হত্যার সাথেও জড়িত ছিলেন না।


মামলার বিবারণ: গত ২২ সেপ্টেম্বর চৌধুরী মুঈনুদ্দিন  ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। ২৩ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর তিন দিন রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করে। এরপর ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বার রাষ্ট্র নিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবীরা যুক্তি পেশ করেন।
গত ১৫ জুলাই থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুই তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির ও আতাউর রহমানসহ রাষ্ট্রপরে মোট ২৫ জন সাী স্যা দিয়েছেন।

গত ২৭ মে পলাতক দুই আসামী চৌধুরী মুঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে দুইজন আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু করার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল-২। ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর আব্দুস শুক্কুর খান ও সালমা হাই টুনীকে আসামীপক্ষের আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়। গত ২৫ এপ্রিল পলাতক চৌধুরী মুঈনুদ্দিন  ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ ১৬টি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমার চার্জ) দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রসিকিউশনের দেয়া অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ২ মে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরের বেজড়া ভাটরা (চিলেরপাড়) গ্রামের মৃত আজহার আলী খানের পুত্র মোঃ আশরাফুজ্জামান খান এবং ফেনী জেলার দাগনভুঞার চানপুর চৌধুরী বাড়ি (জগতপুর ফালিজেরঘাট) গ্রামের মৃত দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীর পুত্র চৌধুরী মুঈনুদ্দিন । 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন