মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড


মেহেদী হাসান, ১৭/৯/২০১৩
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এর আপিল বিভাগ আব্দুল কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ  আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষনা করেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গত ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল । আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের  যাবজ্জীবন সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দিল।

পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে (৪ : ১) আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে।
অর্থাৎ চার জন বিচারপতি মৃত্যুদন্ডের পক্ষে এবং একজন বিচারপতি মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে রয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের  মোট ছয়টি অভিযোগ এনেছিল। ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দুইটি অভিযোগে যাবজ্জীবন, তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদন্ড এবং একটি অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছিল। আপিল বিভাগের আজকের  রায়ে একটি যাবজ্জীবনের সাজা বাড়িয়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। এ অভিযোগটি হল  মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী,  তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও    মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা । এটি ছিল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ছয় নং অভিযোগ।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে চার নং অভিযোগ (কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর হত্যাকান্ড) থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে  খালাস দেয়া হয়েছিল। আপিল বিভাগের আজকের  রায়ে খালাস দেয়া এ অভিযোগটিতে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া অপর যে চারটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল  সাজা দিয়েছিল তা বহাল রাখা হয়েছে আপিল বিভাগের রায়ে। এর ফলে আপিল বিভাগের রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আনিত ছয়টি অভিযোগেই সাজা দেয়া হল আব্দুল কাদের মোল্লাকে।

ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত যে চারটি সাজা আপিল বিভাগের রায়ে বহাল রাখা হয়েছে সেগুলো হল অভিযোগ নং ১, ২, ৩ এবং ৫। এ চারটি অভিযোগের বিপরীতে সাজাও  বহালা রাখা হয়েছে আপিল বেঞ্চ এর সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে (৪ : ১)। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক খালাস দেয়া চার নং অভিযোগে আপিল বিভাগ যে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে তাও দেয়া হয়েছে ৪ : ১ অনুপাতে।

সরকার পক্ষ  আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড এবং  ট্রাইব্যুনাল যে অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছে সেই অভিযোগে সাজা প্রদানের জন্য  আপিল আবেদন করেছিল। আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে  সরকার পক্ষের আবেদন গৃহীত হল। অপর দিকে আসামী পক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার খালাস চেয়ে আবেদন করেছিল আপিল বিভাগে। আজকের  রায়ে তাদের  আবেদন বাতিল বা নামঞ্জুর হল।

রায় উপলক্ষে আজ  সকাল সাড়ে আটটা থেকে সাংবাদিক এবং আইনজীবী  কোর্ট রুমে জড়ো হতে শুরু করে। নয়টা ৩২ মিনিটের সময় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে অপর চার বিচারপতি আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। নয়টা ৩৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন রায় ঘোষনা শুরু করেন। মাত্র দুই মিনিটের মাথায় নয়টা ৩৭ মিনিটের সময় শেষ হয়ে যায় মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনা।

আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আজকের  আপিলের রায়ের মাধ্যমে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত কোন আসামীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় দেয়া হল।

আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রায়ের পর বলেছেন, বিচারিক আদালত কর্তৃক প্রদত্ত যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্র্তৃক মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম এবং বিচার বিভাগের জন্য এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়।


আলোচিত একটি মামলা :
নানা কারনে শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা বিশ্বে একটি আলোচিত মামলা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লা মামলাটি। কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে শাহবাগ কেন্দ্রিক আন্দোলন। যার প্রতিকৃয়া হিসেবে উত্থান হয় হেফাজতে ইসলাম এবং শেষ পর্যন্ত যা গড়ায় অপারেশন শাপলা পর্যন্ত। যুদ্ধাপরাধ ইস্যু, আব্দুল কাদের মোল্লা মামলা এবং তারই ধারাবাহিকতায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতির অন্যতম নির্ধারক হিসেবে আবির্ভূত   হয়।

চলতি বছর পাঁচ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীন সাজার রায় দেয়া হয়। এ রায়কে কেন্দ্র করে  শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে ওঠে । আন্দোলনকারীদের দাবি আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিতে হবে। এ  দাবির প্রেক্ষিতে  ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয়  সরকার পক্ষের জন্য আপিলের বিধান রেখে।  আইন সংশোধনের পর সরকার আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করে আপিল আবেদন করে। 

ট্রাইব্যুনাল আইনে পূর্বের বিধান ছিল আসামী পক্ষ সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। আসামীর সাজা হলে রাষ্ট্রপক্ষের জন্য আপিলের বিধান ছিলনা। আসামীকে খালাস দেয়া হলে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের জন্য আপিলের বিধান ছিল। ১৮ ফেব্রুয়ারি আইন সংশোধন করে উভয় পক্ষকে আপিলের সমান সুযোগ দেয়া হয় এবং আইনের সংশোধনীকে  ২০০৯ সাল থেকে কার্যাকারিতা  প্রদান করা হয়।
আইনের সংশোধনীর কারনে আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল শুনানী শেষ পর্যন্ত অ্যামিকাস কিউরি পর্যন্ত গড়ায়। ১৮ ফেব্রুয়ারি আইনের যে সংশোধন করা হয়েছে তা আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না এবং প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইন এ বিচারে প্রযোজ্য হবে  কি-না জানতে চেয়ে ২০ জুলাই সুপ্রীম কোর্টের সাতজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয় আপিল বিভাগ। এসব নানা কারনে আব্দুল কাদের মোল্লা মামলাটি গোটা দেশজুড়ে আলোচিত একটি  মামলায় পরিণত হয়। আপিল বিভাগ কর্তৃক চূড়ান্ত রায় উপলক্ষে গতকাল গোট দেশবাসীর নজর ছিল এ রায়ের প্রতি।
ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় রায় ছিল আব্দুল কাদের মোল্লা মামলার রায়। আব্দুল কাদের মোল্লা মামলার রায়ের আগে চলতি বছর  ২১ জানুয়ারি মাওলানা  আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। অবশ্য সে বিচার হয়েছিল আসামী পক্ষের অনুপস্থিতিতে এবং আসামী পক্ষে কোন আইনজীবীও ছিলনা। সেদিক বিবেচনায় আব্দুল কাদের মোল্লার রায়টিই প্রথম কোন রায় যা আসামী এবং আসামী পক্ষের অংশগ্রহনের মাধ্যমে বিচার হয়েছে।

 অভিযোগ এবং ট্রাইব্যুনালের রায় :
রাষ্ট্রপক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ এনেছি। ট্রাইব্যুনাল এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে তাকে সাজা দেয়া হয়। অভিযোগ এবং ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাজা বিষয়ে নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হল।

১ নং অভিযোগ পল্লব হত্যা : ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে  মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লব হত্যা ঘটনা। অভিযোগে বলা হয় আব্দুল কাদের মোল্লার নির্দেশে তার সাঙ্গপাঙ্গরা  মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে নওয়াবপুর থেকে ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ হত্যা ঘটনার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লার সংশ্লিষ্টতার   অভিযোগে তাকে  ১৫ বছরের জেল দেয়া হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে পল্লব হত্যার ঘটনা বিশ্লেষন করে উল্লেখ করা হয়েছে এ হত্যা ঘটনার অভিযোগের ভিত্তি হল শোনা কথা।  ট্রাইব্যুনালের হাতে  যা এসেছে তাতে দেখা যায় আব্দুল কাদের মোল্লা  ব্যক্তিগতভাবে কোন অপরাধ সংঘটন করেছেন এমন অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত নন।
আজ  আপিল বিভাগের রায়ে পল্লব হত্যা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত  ১৫ বছরের সাজা বহাল রাখা হয়েছে।

২ নং অভিযোগ কবি মেহের হত্যাকান্ড : ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগীদের নিয়ে মিরপুর ৬ নং সেকশনে নিজ ঘরে  থাকা অবস্থায় স্বাধীনতাপন্থী কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে হত্যা করে মর্মে অভিযোগ আনা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।  ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ অভিযোেেগ আব্দুল কাদের মোল্লাকে  ১৫ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে ।

কবি মেহেরুন্নেসা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আব্দুল কাদের মোল্লাকে  দন্ডিত করে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে  বলা হয়েছে  অভিযুক্ত কাদের মোল্লা কবি মেহেরুন্নেসার ঘরে  নিজে প্রবেশ করেননি হত্যাকান্ডের সময় । হত্যাকান্ডে কাদের মোল্লা নিজে সশরীরে অংশগ্রহণও করেননি। তবে  যারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তাদেরকে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে গেছেন এবং  এ  কাজে তার নৈতিক সমর্থন ছিল। কাদের মোল্লা নিজে এ অপরাধে অংশ নিয়েছেন সে মর্মে প্রমান নেই।
রায়ে আরো বলা হয়েছে এ হত্যাকান্ডের অভিযোগের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ তিনজন শোনা সাক্ষীর ওপর নির্ভর করেছে। অর্থাৎ  অভিযোগের ভিত্তি হল সাক্ষীদের শোনা কথা।
আজ  আপিল বিভাগের রায়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত ১৫ বছরের সাজা বহাল রাখা হয়েছে।

৩ নং অভিযোগ সাংবাদিক আবু তালেব হত্যা : ১৯৭১ সালে ২৯ মার্চ সাংবাদিক আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব তার মিরপুর ১০ নং সেকশনে অবস্থিত বাসা থেকে  আরামবাগ যাচ্ছিলেন। তিনি মিরপুর ১০ নং বাস স্ট্যান্ডে পৌছার আব্দুল কাদের মোল্লা অন্যান্য আল বদর সদস্যা, রাজাকার  এবং দৃষ্কৃতকার এবং বিহারীদের সাথে নিয়ে তাকে ধরে মিরপুর জল্লাদখানা পাম্প হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে সেখানে হত্যা করা হয়।
এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে ১৫ বছরের সাজা দিয়েছে। এ ঘটনায়ও আব্দুল কাদের মোল্লাকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে দুজন সাক্ষীর শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে।

আজ আপিল বিভাগের রায়ে এ সাজা বহাল রাখা হয়েছে।

৪ নং অভিযোগ ঘাটারচরে শতাধিক মানুষ হত্যা: ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগ তেকে ট্রাইব্যুনালের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়া হয়েছে।
আজ  আপিল বিভাগের রায়ে এ অভিযোগে আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে।

৫ নং অভিযোগ আলুবদি হত্যাকান্ড :  এতে বলা হয়- ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল  সাড়ে চারটার সময় আব্দুল কাদের মোল্লার  সদস্যরা (মেম্বারস)  পাকিস্তান আর্মি সাথে নিয়ে মিরপুর পল্লবীর  আলুবদি গ্রামে নিরীহ বেসামরিক লোকজনের ওপর আক্রমন পরিচালনা করে । আক্রমনের অংশ হিসেবে তারা নির্বিচারে গুলি চালায় এবং এতে ৩৪৪ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ অভিযোগে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
আপিল বিভাগের আজকের  রায়ে এ সাজা বহাল রাখা হয়েছে।

৬ নং অভিযোগ হযরত আলী হত্যাকান্ড : ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘটনা ঘটে। মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের  ৫ নং কালাপানি লেনে ২১ নম্বর বাসায় হযরত আলী,  তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও    মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা ঘটে আব্দুল কাদের মোল্লার নেতৃত্বে।
এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। রায়ে বলা হয়েছে কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে, সহায়তায় এবং নৈতিক সমর্থনে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।
আজ  আপিল বিভাগের রায়ে ট্রাইব্যুনালের যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরন :
ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় প্রদানের  এক মাসের মাথায় আসামী পক্ষ এবং     রাষ্ট্রপক্ষ থেকে  রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হয়।  গত ২৩ জুলাই দীর্ঘ শুনানী শেষে আপিল বিভাগ মামলার রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করে।

এর আগে গত ৩১ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ গঠন করা হয় আপিল আবেদন শুনানীর জন্য। ১ এাপ্রিল থেকে শুনানী শুরু হয়। তবে বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান আব্দুল কাদের মোল্লা মামলার  শুনানী শেষ হবার আগেই অবসরে চলে গেছেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ কাদের মোল্লা মামলার আপিল শুনানী গ্রহণ করেন শেষ পর্যন্ত। প্রধান বিচারপতি ছাড়া অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী।

২০১০ সালের ১৩ জুলাই সুপ্রিমকোর্টের প্রধান গেট থেকে কাদের মোল্লাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ট্রাইব্যুনালে তদন্তকারী সংস্থার এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগষ্ট কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আটক রাখার আদেশ দেয়া হয়।


২০১২ সালের গত ২৮ মে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগের ঘটনায় চার্জ গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ৩ জুলাই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন এবং আসামী পক্ষে ছয় জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করে।

এর আগে ২০১২ সালের  ৭ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। এরপর ২০১২ সালের ২৫ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ মামলাটি সেখানে স্থানান্তর করা হয়।

কাদের মোল্লার পরিচিতি :
আব্দুল কাদের মোল্লার জন্ম ১৯৪৮ সালে ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলায়।  তিনি প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করার পর ১৯৬৬ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। একই কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে বিএসসি পাশ করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে এমএসসি কাসে ভর্তি হন । মেধাবী ছাত্র আব্দুল কাদের মোল্লা প্রাইমারী এবং জুনিয়র স্কুল পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন যথাক্রমে ১৯৫৯ এবং ১৯৬১ সালে।

১৯৭৪ সালে তিনি  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর (ইন্সটিটিট অব এডুকেশন এন্ড রিসার্চ) এ ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (সোস্যাল সাইন্স) এ ভর্তি হই। ১৯৭৫ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এ কোর্সে। এরপর তিনি ১৯৭৭ সালে এডুকেশনাল এডমিনিস্ট্রেশন তেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে  এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।

আব্দুল কাদের মোল্লা  স্কুল জীবনে কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। ১৯৬৬ সালে তিনি তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাথে জড়িত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।

বিডিআর সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উদয়ন বিদ্যালয়ে ১৯৭৪-১৯৭৫ সালে শিক্ষকতা করেন। এছাড়া বাইশরশি শিব সুন্দরী একাডেমীতে শিক্ষকতা এবং  ইসলামী ফাউন্ডেশনেও  চাকুরী করেছেন তিনি।

আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৮২-৮৩ সালে পরপর  দুই বার ঢাকা ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট (ডিউজে)  সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনৈতিক জীবনে আব্দুল কাদের মোল্লা  ১৯৮৩ সালে ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক  এবং   ১৯৮৭ একই শাখার আমির নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। জামায়াতের নেতৃত্ব পর্যায়ের ভূমিকা পালনের সময় তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে জোটগদ রাজনীতির কারনে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতার ভূমিকাও পালন করেছেন। ১৯৬৪ সালে আইউব বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কারনে তাকে  চারবার কারাবরন করতে হয়েছে।
আব্দুল কাদের মোল্লার চার মেয়ে এবং দুই পুত্র সন্তানের পিতা।
আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আসামী পক্ষে প্রধান আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এছাড়া অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, তাজুল ইসলাম, শিশির মো: মনির, সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ দায়িত্ব পালন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।


 আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আজ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ যে  সংক্ষিপ্ত রায় পড়ে শোনান তা নিম্নরূপ



Criminal Appeal No. 24 of 2013 filed by the Government is found to be maintainable unanimously. This appeal is allowed by majority. The order of acquittal passed by the International Crimes Tribunal No. 2 in respect of charge No. 4 is set aside by majority and the respondent is found guilty of the said charge. He is sentenced to imprisonment for life of that charge. He is sentenced to death by the majority of 4:1 in respect of charge No. 6. He be hanged till death. Criminal Appeal No. 25 of 2013 filed by the Abdul Quader Mollah is dismissed unanimously. The conviction in respect of charge No. 6 is maintained unanimously. The conviction and sentence passed in respect of charge Nos. 1, 2, 3 and 5 are maintained by majority of 4:1



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন