বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল মামলায় ২টি অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থপান শেষ

মেহেদী হাসান, ৩০/১/২০১৪
বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল আবেদন মামলায়  আজ তৃতীয় দিনের মত যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রমানিত আটটি অভিযোগের মধ্যে ছয় এবং সাত নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি পেশ শেষে গতকাল আট নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন অ্যাডভোকে এসএম শাহজাহান।
প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপির বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করেন।

সাত নং অভিযোগ যথা সেলিম খানের বাড়িতে আগুন দেয়া  বিষয়ে গতকাল বুধবার  যেখান থেকে যুক্তি উপস্থাপন মুলতবি হয় আজ সেখান থেকে যুক্তি পেশ  শুরু হয়। অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আট নং সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদারের একটি মামলায় সাজা হয় এবং পরে খালাস পান। সেলিম খানের বাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা তিনি খালের ওপর থেকে দেখার কথা ট্রাইব্যুনালে বললেও তদন্ত কর্মকর্তাকে তিনি তা বলেননি। তাছাড়া তিনি আরো বলেছেন সাঈদী সেলিম খানের বাড়ি দেখিয়ে দিয়েছে আগুন দেয়ার জন্য। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় বলেছেন একথাও তাকে মোস্তফা হাওলাদার বলেননি জবানবন্দীতে । তাছাড়া ১৫/১৬ বছর আগে সাঈদী নাম ধারনের কথাও তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীতে বলেননি বলে জেরায় স্বীকার করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

রাষ্ট্রপক্ষের ১২ নং সাক্ষী একেএম আউয়াল জবানবন্দীতে বলেছেন ‘শুনেছি দানেশ মোল্লা সেকেন্দার শিকদারের সাথে সাঈদী সাহেবও ছিলেন’। জেরায় তাকে প্রশ্ন করা হয় সাঈদী সাহেব থাকার যে কথা আপনি শুনেছেন বলে ট্রাইব্যুনালে বলেছেন তা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীতে বলেননি। তিনি জানান বলেছি। অপর দিকে তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় জানিয়েছেন ‘শুনেছি সাঈদী সাহেবও ছিলেন/ একথা এমপি আউয়াল তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীতে বলেননি।

অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, সাত নং অভিযোগ প্রমানের পক্ষে ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের তিনজন সাক্ষীর ওপরও নির্ভর করেছে। কিন্তু এর মধ্যে ৩ নং সাক্ষী সাত নং অভিযোগ বিষয়ে কিছুই বলেননি। ট্রাইব্যুনাল রায়ে ভুলক্রমে এটি করে থাকতে পারে। অরপর দিকে আসামী পক্ষের  ১৫ নং সাক্ষী সাত নং অভিযোগ বিষয়ে বলেছেন ঘটনার সময় সেলিম খান এবং তার পিতা নুরুল ইসলাম খান কেউ বাড়িতে ছিলেননা। ৭ মের আগেই সেলিম খান মুক্তিযুদ্ধে চলে যান। কাজেই নুরুল ইসলামের ওপর  নির্যাতনের  অভিযোগ সত্য নয়। 
অ্যাডভোকেট এসএম শাহাজাহান বলেন, তাছাড়া সাত নং চার্জে  আগুন দেয়া এবং নির্যাতনের অভিযোগ থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষের কোন সাক্ষী নির্যাতন বিষয়ে কিছু বলেননি।
তিনি বলেন, এ ঘটনা বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ সেলিম খানকে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি সেফ হাউজে এনে রাখে। ১১ এবং ১২ জানুয়ারি তাকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আনে কিন্তু সে রাজি না হওয়ায় ১২ জানুয়ারি তাকে গাড়িতে করে আজিমপুরে তার মেয়ের বাড়িতে পৌছে দেয়া হয়।
দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পড়ে শোনানোর সময় আদালত জানতে চান এর ভিত্তি কি। এসএম শাহজাহান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সেফহাউজ ডায়েরিতে এ তথ্য রয়েছে।

এরপর তিনি আট নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। আট নং অভিযোগ ছিল মানিক পসারীর বাড়িতে আগুন দেয়া ও লুটপাটের  পর সেখান থেকে তাদের বাড়িতে কর্মরত ইব্রাহীম কুট্টি ও মফিজ উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যাওয়ায়। এরপর ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা করা হয় এবং মফিজ উদ্দিন নির্যাতনের পর পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে মোট নয় জন যথা ২,৪,৬,৭,৮,৯,১০,১১, এবং ১২ নং সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এসএম শাহজাহান বলেন, চার্জে উল্লেখ আছে মানিক পসারীর বাড়ি আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে বিকাল তিনটায়। কিন্তু ২ নং সাক্ষী রুহুল আমিন নবিন বলেছেন তিনি ১১/১২টার দিকে জানতে পেরেছেন আগুন দেয়ার ঘটনা।
আইনজীবী বলেন, আসলে তিনি আগুন দেয়ার সময় ঘটনাস্থলে বা তার আশপাশেও ছিলেননা। রাষ্ট্রপক্ষের নবম সাক্ষী বলেছেন ৭ মে’র অনেক আগেই রুহুল আমিন নবিন এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এরপর দেশ স্বাধীনের পর ১৮ ডিসেম্বর পাড়েরহাট তিনি তাকে প্রথম দেখেন। এসএম শাহাজান বলেন, রুহুল আমিন নবিন মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং নবম সাক্ষী তাকে আগে থেকেই চিনতেন। যারা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন ২৫ মার্চের পর তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়াই স্বাভাবিক এবং রাষ্ট্রপক্ষের নবম সাক্ষী সে দাবিই করেছেন। কাজেই রুহুল আমিন নবিন আসলে ৭ মে’র ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেননা।
এরপর আট নং অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের চার নং সাক্ষীর সাক্ষ্য বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি বলেন এ সাক্ষীর পরিচয় কি? ট্রাইব্যুালে জেরায় চতুর্থ সাক্ষী (সুলতান আহমেদ)  স্বীকার করেছেন কলা চুরির মামলায় জজ কোর্টে তার সাজা হয়েছে এবং এ মামলা বর্তমানে হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া ট্রলার চুরির ২টি মামলা বরিশাল কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
এ পর্যন্ত যুক্তি পেশের পর শুনানী আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
যুক্তি উপস্থাপনের সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান, আসামী পক্ষে গিয়াসউদ্দিন মিঠু, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, তারিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


বুধবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৪

সাঈদী ৭১ সালে কিছু করলে দুটি বইয়ে অবশ্যই তার নাম থাকত-শুনানিতে বললেন বিচারপতি

মেহেদী হাসান, 29/1/2014
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল আবেদন শুনানির সময় বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেছেন, সাঈদী ১৯৭১ সালে কিছু করে থাকলে দুটি বইয়ে অবশ্যই তার নাম থাকত। বই দুটি হল কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিক তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র এবং পিরোজপুর জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত পিরোজপুর জেলার ইতিহাস। এ বই দুটির কোথাও মাওলানা সাঈদীর নাম না থাকার বিষয়টিকে বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা খুবই সিগনিফিকেন্স (তাৎপর্যপূর্ণ) বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে তার আইনজীবীরা  ডকুমেন্ট আকারে  ট্রাইব্যুনালে  জমা দিয়েছিলেন উক্ত বই দুটি। আজ  সুপ্রীম কোর্টের আপিল বেঞ্চে মাওলানা সাঈদীর আপিল আবেদন শুনানীর সময় এভিডেন্স হিসেবে প্রদর্শিত ওই  বই দুটি  বিষয়ে যুক্তি পেশ করেন অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান। তিনি বলেন, বই দুটিতে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার ন্যায়  পিরোজপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা, ক্ষতিগ্রস্তদের নাম, স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম এবং তাদের কর্মকান্ডের অনেক বিবরন রয়েছে। কিন্তু বই দুটির কোথাও মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। মাওলানা সাঈদী যদি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকতেন তাহলে এ বই  দুটিতে অন্তত কোথাও না কোথাও মাওলানা সাঈদীর নাম থাকত।

তিনি বলেন, পিরোজপুর জেলা পরিষদ কর্তৃক পিরোজপুর জেলার ইতিহাস নামক বইতে পিরোজপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্ননার পাশপাশি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি, স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, শান্তি কমিমিটির লোকজনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তুএস তালিকারও কোথাও মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। এমনকি এ বইয়ে পিরোজপুর জেলার কৃতি সন্তানদের নামের যে তালিকা রয়েছে সেখানে মাওলানা সাঈদীর ছবিসহ তার পরিচিতি রয়েছে যেখানে মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন, বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ পিরোজপুর জেলার আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নাম রয়েছে। এ বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০০৭ সালে যখন কোন রাজনৈতিক সরকার ছিলনা দেশে। তাছাড়া বইটি যারা সম্পাদনা করেছেন তাদের মধ্যে পিরোজপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জামালুল হক মনুসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা জড়িত ছিলেন।

যুক্তি উপস্থাপনের এ পর্যায়ে বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, মাওলানা সাঈদী যদি ১৯৭১ সালে কিছু করত তাহলে এ দুটি বইয়ে অবশ্যই তার নাম থাকত। এটা খুবই সিগনিফিকেন্স (তাৎপর্যপূর্ণ) একটা বিষয়। এছাড়া পিরোজপুর জেলার ইতিহাস বইয়ে পিরোজপুরের কৃতি সন্তানদের তালিকায় অন্যান্যদের সাথে  তার নাম রয়েছে ছবিসহ। এটিও খুবই সিগনিফিকেন্স। বইটি সম্পাদনার সাথে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের নাম রয়েছে। তিনি জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। এটাও ইমপরটেন্ট একটা  বিষয়।

এসময় অপর বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, পিরোজপুর জেলার ইতিহাস বইয়ে জামায়াতের সম্পর্কেও আলোচনা রয়েছে। সেখানেও সাঈদীর নাম নেই। স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায়ও সাঈদীর নাম নেই। অথচ দানেশ মোল্লা সেকেন্দার শিকদার এদের নাম বারবার এসেছে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে।  কিন্তু সাঈদীর নাম একবারও আসেনি।
এসময় বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা পিরোজপুর জেলার ইতিহাস নামক বই থেকে কয়েকটি লাইন পড়ে শুনিয়ে বলেন, এখানে জামায়াত নেতা কাউখালির মাওলানা আব্দুর রহিমের নাম রয়েছে। কিন্তু মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

তখন অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র বইটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের ওপর এটি খুবই অথেনটিক একটি বই। মাওলানা সাঈদী সাহেব যদি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী কাজের সাথে জড়িত থাকতেন তাহলে এ বইটি এবং পিরোজপুর জেলার ইতিহাস নামক বই যেখানে পিরোজপুরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিবরন রয়েছে এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের  কর্মকান্ড এবং তাদের নামের তালিকা রয়েছে সেখানে কোথাও না কোথাও তার নাম থাকত। তিনি বলেন পিরোজপুর জেলার ইতিহাস বইতে স্বাধীনতা বিরোধীদের  নামের তালিকায় দানেশ মোল্লা সেকেন্দার সিকদার, মোসলেম মাওলানা, সেকেন্দার কমান্ডার, সরদার সুলতান মাহমুদ, আবুদুল আজিজ মল্লিক, আশরাফ আলী, আজিজুল হকম দেলোয়ার মল্লিক, জিন্নাত আলী, সৈয়দ সালেহ আহমেদ, মানিক খন্দকার এদের নাম রয়েছে। কিন্তু এদের সাথে মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ শুনানী গ্রহণ করেন। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তিপেশ শেষে ৭ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তিপেশ শুরু হয়েছে। শুনানী আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

মাওলানা সাঈদীর মামলার তদ্বিরকারক মাসুদ সাঈদী বিকালে এ প্রতিনিধিকে বলেন, পিরোজপুর জেলার ইতিহাস বইটি সম্পাদনার সাথে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জামালুল হক মনু ছাড়াও আরো একজন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জড়িত ছিলেন। তিনি হলেন, গৌতম রায় চৌধুরী। এছাড়া বইটি সম্পাদনার সাথে অধিকাংশ প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পিরোজপুর প্রতিনিধিরা জড়িত ছিলেন। পিরোজপুর জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি মনিকামন্ডলসহ পাঁচজন হিন্দু জড়িত রয়েছেন। এছাড়া পিরোজপুরের নামকরা অনেক আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নেতৃবৃন্দ জড়িত ছিলেন বইটি প্রণয়নের সাথে। বইটিতে পিরোজপুর জেলার কৃতিসন্তানদের নামের যে তালিকা রয়েছে সেখানে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ যিনি ১৯৭৭ সালে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন, সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এমএনএ খিতিশ চন্দ্র মন্ডল ও এনায়েত হোসেনসহ অনেকের সাথে মাওলানা সাঈদীর নামও রয়েছে।
মাসুদ সাঈদী বলেন, হুমায়ূন আহমেদ এর ভগ্নিপতি অ্যাডভোকেট আলী হায়দার কর্তৃক বর্নিত হুমায়ূন আহমেদ এর পিত হত্যার ঘটনা, দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত ভাগিরথী হত্যার ঘটনা, মাছিমুপুর গণহত্যায় নিহত অনেক হিন্দু পরিবারের আত্মীয় স্বজন এর সাক্ষাৎকার  রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র বইটিতে। কিন্তু কেউই  পিরোজপুরের কোন ঘটনার সাথে মাওলানা সাঈদীর নাম উল্লেখ করেননি। 

আজ  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষে ৭ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়েছে। ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামী পক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং জেরা উপস্থাপন করে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান প্রমান করার  চেষ্টা করেন যে, পাড়েরহাট ৭ মে ঘটনার সাথে মাওলানা সাঈদী জড়িত ছিলেননা।
তিনি বলেন, ৬ নং অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৮ জন সাক্ষী হাজির করেছে কিন্তু তাদের কেউই পাড়েরহাট বাজারের নন। কোন ভুক্তভোগীকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি। যারা আসছেন তারা কেউ ভুক্তভোগী নন। তিনি বলেন সাক্ষীদের কারো বাড়ি টেংরাটিলা, কারো বাড়ি চিথলিয়া, কারো বাড়ি হোগলাবুনিয়া এবং কারো বাড়ি পাড়েরহাট বাজার থেকে দেড় দুই মাইল দুরে অন্য গ্রামে।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৭ নং অভিযোগে বলা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সেলিম খানের বাড়িতে মাওলানা সাঈদীর দেখানো মতে লুটপাট শেষে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয় ।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট শাহাজাহান বলেন, সেলিম খানের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে কিন্তু তাকে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হিসেবে হাজির করেনি। সাক্ষী হিসেবে হাজির করেছে দূরের লোক। রাষ্ট্রপক্ষের আট নং সাক্ষী বলেছেন তিনি খালের ওপারে দাড়িয়ে সেলিম খানের বাড়িতে ধোয়া উড়তে দেখেছেন। কাজেই তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেননা এবং তিনি যে  বলেছেন সাঈদীর দেখানো মতে আগুন দেয়া হয়েছে তাও সত্য নয়।

শুনানীতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল আবেদনে যুক্তি উপস্থাপন শুরু// সাক্ষীর বয়স এবং ঘটনা শুনে বিচারপতি বললেন আনবিলিভঅ্যাবল

মেহেদী হাসান, ২৮/১/২০১৪
বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল আবেদন মামলায় যুক্তি উপস্থাপন  শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়।  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান যুক্তি পেশ শুরু করেছেন। এর আগে এ মামলায় এভিডেন্স ( জবানবন্দী, জেরা এবং রায়) পাঠ শেষ হয়।

প্রথম দিন একটি অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য খন্ডন করে যুক্তি পেশ করা হয়েছে।

যুক্তি উপস্থাপনের শুরুতে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান মামলার সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে এবং দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে। প্রমানিত আটটি অভিযোগ হল  ৬,৭,৮,১০,১১,১৪,১৬ এবং ১৯। ৮ এবং ১০ নং অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, যে আটটি অভিযোগে তাকে সাজা প্রদান করা হয়েছে সে বিষয়ে যুক্তি পেশ করেন।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি পেশ শুরু করে বলেন, এ অভিযোগে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ৭ মে পিরোজপুর জেলার পাড়েরহাট বাজারে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আসে এবং মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শান্তি কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর মাওলানা সাঈদীর দেখানো মতে পাড়েরহাট বাজারে আওয়ামী লীগ ও হিন্দুদের দোকানপাট ও বসতবাড়িতে আগুন দেয়।
এ ঘটনা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের  ১,২,৩,৪,৮,৯,১২ এবং ১৩ নং সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছে।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী মাহবুবুল আলম ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, ‘মে মাসের প্রথম সপ্তায় পাক হানাদার বাহিনী পিরোজপুরে আসে। ৭ মে সকাল বেলা আমি নিজ বাড়িতেই ছিলাম। এবং লোকমুখে শুনতে পাই পাক হানাদার বাহিনী পাড়েরহাট আসিতেছে  এবং পাড়েরহাটের শান্তি কমিটির লোকেরা পাড়েরহাট রিক্সা স্ট্যান্ডে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অপেক্ষা করছে। আমি পাড়েরহাটে যাইয়া  রিক্সা স্ট্যান্ডের আড়ালে থেকে  গোপনে লক্ষ্য করিতেছি পাড়েরহাটের শান্তি কমিটির লোকের দাড়িয়ে আছে। কিছু পরে একেকটি রিক্সা করে ২৬টি রিক্সায় ৫২ জন পাক হানাদার বাহিনী রিক্সা স্ট্যান্ডে নামে। শান্তি কমিটির লোকেরা তাদের অভ্যর্থনা জানায়। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী উর্দুভাষা ভাল জানতেন বিধায় ক্যাপ্টেন ইজাজের সাথে কথা বলেন।  পরে বাজারের দিকে পাক হানাদার বাহিনী যেতে থাকে। শান্তি কমিটির লোকেরা বাজারের ভেতরের দিকে যায়।  মুক্তিযোদ্ধার পক্ষের আওয়ামী লীগ ও হিন্দু  সম্প্রদায়ের লোকদের দোকানঘর, বসতঘর ক্যাপ্টেন ইজাজকে দেখিয়ে দেয়। ক্যাপ্টেন ইজাজ লুটের নির্দেশ দেয়। লুটপাট শুরু হয়ে যায়। আমি অকুস্থল থেকে কিছু দূরে সরে যাই। পরে জানতে পারি ৩০ থেকে ৩১টি দোকান ঘরের মামামাল, বসতবাড়ি লুটপাট করে  সাঈদী সাহেবের নেতৃত্বে ভাগ বাটোয়ারা করে দেয়।’

অ্যাডভোকেট শাহাজাহন বলেন, সাধারনত পাকিস্তান আর্মি আসলে সে এলাকায় একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হত। মানুষ জীবন নিযে পালাত। কিন্তু এ সাক্ষী বলেছেন তিনি আড়ালে থেকে গুনেছেন পাকিস্তান আর্মি একে একে  ২৬টি রিক্সা যোগে এসেছে এবং প্রতি রিক্সায় দুজন করে মোট ৫২ জন  সৈন্য ছিল। কোন একটি স্থানে লুকিয়ে থেকে ২৬ টি রিক্সা আসতে দেখা, তাতে ৫২ জন আর্মি গননা করা কি সম্ভব? তাছাড়া তিনি বলেলেন লুকিয়ে থেকে ঘটনা দেখেছেন। কাজেই মাওলানা সাঈর্দী কর্তৃক ক্যাপ্টেন ইজাজের সাথে উর্দতে কথা বলা তিনি শুনলেন কিভাবে?
এ পর্যায়ে বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহা বলেন, ইমপ্রব্যাবল (অভাবনীয়)।

অ্যাডভোকেট শাহজাহান এরপর বলেন, সাক্ষী মাহবুবুল আলমের  এসএসসি রেজিস্ট্রেশন ফর্মে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ২০/৩/১৯৫৯। সে মোতাবেক ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ তার বয়স ছিল ১২ বছর । ৭ মে তার বয়স দাড়ায় ১২ বছর ২ মাসের মতন।  রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ নং সাক্ষী বলেছেন মাহবুবুল আলম স্বাধীনতার আগে স্কুল ছাত্র ছিলেন।
এ বয়সের একজন শিশু সাক্ষী বলেছেন, পাকিস্তান আর্মি আসার খবর শুনে তিনি আড়ালে অবস্থান করে পর্যবেক্ষন করেছেন,  রিক্সা এবং   সৈন্য সংখ্যা গননা করেছেন।
এ পর্যায়ে বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহা বলেন, আনবিলিভঅ্যাবল। এসময় অপর বিচারপতি এএইএম শামসুদ্দীন চৌধুরী বলেন, ১২ বছর বয়সে একজন অনেক ম্যাচিউরড হয়ে যায়।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী মাহবুবুল আলম এ মামলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন সাক্ষী। কারণ তিনি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পিরোজপুরে মামলা করেছেন এবং পরে ট্রাইব্যুনালে তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার  দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করে তদন্ত সংস্থা এবং মামলার কার্যক্রম শুরু হয়।

এরপর অ্যাডভোকেট শাহাজাহান মাহবুবুল আলম এবং রাষ্ট্রপক্ষের অন্যান্য সাক্ষীদের জেরা থেকে মাহবুবুল আলমের সাক্ষ্যকে অসত্য প্রমানের চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, সাক্ষী বলেছেন, ‘ লুটপাট শুরু হয়ে যায়। আমি অকুস্থল থেকে কিছু দূরে সরে যাই। পরে জানতে পারি ৩০ থেকে ৩১টি দোকান ঘরের মামামাল, বসতবাড়ি লুটপাট করে  সাঈদী সাহেবের নেতৃত্বে ভাগ বাটোয়ারা করে দেয়।’ কাজেই কাদের বাড়িঘর লুটপাট হয়েছে তা তার পক্ষে দেখা এবং বলা সম্ভব নয়। তাছাড়া জেরায় তিনি বলেছেন মাখন সাহার দোকান লুটের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেননা।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের দুই নং সাক্ষী রুহুল আমিন নবিন এর সাক্ষ্য খন্ডন করে যুক্তি পেশ করেন অ্যাডভোকেট শাহজাহান। এ  সাক্ষী ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে বলেছেন, ‘৭ মে  পাড়েরহাটের শান্তি কমিটির  সেকেন্দার  আলী শিকদার, দানেস মোল্লা, মাওলানা মোসলেহউদ্দিন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব সহ আরো কয়েকন পারের হাটে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য রিক্সা স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে থাকে। ২৬টি রিক্সাযোগে  প্রায় ৫২ জন পাক হানাদার বাহিনী পারের হাটে প্রবশে করে।  শান্তি কমিটির লোকজন পাক হানাদারদের নিয়ে পারেরহাট বাজারে  প্রবেশ করে  এবং  আওয়ামী লীগ ও হিন্দুদের বাড়িঘর দোকানপাট দেখিয়ে দেয়। শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের দেখিয়ে দেওয়া ঘরগুলোতে   শুরু হয় লুটপাট।  পারের হাট বাজারের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মাখন  সাহার দোকানের মাটির নিচের লোহার সিন্দুক থেকে ২২ শের স্বর্ণ ও রূপা লুট করে। ৩০/৩৫টি দোকান ঘর লুটাপাট চালায়। ’

অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, জেরায় সাক্ষী বলেছেন, মাখন সাহার দোকানে গর্ত করার খবরটা তিনি শুনেছেন বিকালে। আর ৩০/৩৫টি দোকান লুটের খবর তিনি জানতে পেরেছেন সন্ধ্যায়। তার মানে ঘটনার সময় সে সেখানে ছিলনা এবং দেখেনওনি। তিনি শুনেছেন।
তাছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের ৯ নং সাক্ষী রুহুল আমিন নবিন সম্পর্কে বলেছেন ৭ মে’র অনেক আগে তিনি পাড়েরহাট ছেড়ে চলে গেছেন। ৯ নং সাক্ষী আরো বলেছেন, পাড়েরহাটে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে রুহুল আমিন নবিনের নাম তার মনে আছে। কাজেই  ৯ নং সাক্ষী যে দাবি করেছেন অর্থাৎ ৭ মে’র আগেই নবিন পাড়েরহাট ছেড়ে চলে গেছে এটা স্বাভাবিক। কারণ যারা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের কাজ করেছে ২৫ মার্চের পর তাদের এলাকায় না থাকাই স্বাভাবিক। কাজেই রুহুল আমিন নবিন ৭ মে পাড়েরহাট ছিলেননা এবং ওই দিন তিনি মাওলানা সাঈদীকে পাড়েরহাট দেখেছেন মর্মে যে ঘটনার বিবরন দিয়েছেন তা অসত্য।
তাছাড়া নুরুল হক মৌলভির যে মামুস স্টোরের সামনে  দাড়িয়ে তিনি ঘটনা দেখার কথা বলেছেন তা তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেননি বলে জেরায় তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

যুক্তি উপস্থাপন আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান, মাওলানা সাঈদীর পক্ষে গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, সাইফুর রহমান, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, তারিকুল ইসলাম, আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৪

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষীর জেরা

 ২৩.১.১৪
দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান (এমসি) ও জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষী মো: সানাউল্লাহ চৌধুরীকে আসামীপক্ষের জেরা শেষ হয়েছে। আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ সাক্ষীকে জেরা করেন মীর কাসেম আলীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। দ্বিতীয় সাক্ষীর জেরা শেষে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের তৃতীয় সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। 
সাক্ষ্যগ্রহণের সময় মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। তিনি আদালতের কাঠগড়ায় বসে সাক্ষ্য গ্রহণ দেখেন। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মিজানুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, মীর আহমদ বিন কাসেম, আসাদ উদ্দিন ও আবু বকর সিদ্দিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও সুলতান মাহমুদ সিমন।

জেরা:
প্রশ্ন: ডালিম হোটেল কখন থেকে চিনতেন?
উত্তর: স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকে।
প্রশ্ন: ডালিম হোটেল ভবনের কোন কোন তলা আবাসিক হোটেল ছিল?
উত্তর: দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা।
প্রশ্ন: ডালিম হোটেলের মালিক কে ছিল?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: ডালিম হোটেলের আশপাশে কোন বসতি ছিল কি না?
উত্তর: বসতি ছিল কি না বলতে পারব না, তবে দোকানপাট ছিল।
প্রশ্ন: টন্টুসেন, জসিম ও রঞ্জিত দাসকে ডালিম হোটেলে দেখার আগে চিনতেন কি না?
উত্তর: চিনতাম না।
প্রশ্ন: ডালিম হোটেলের আটক থাকা অবস্থায় নবী চৌধুরীর নাম শুনেছেন কি না?
উত্তর: শুনিনি। তবে পিডিপি নেতা নবী চৌধুরীকে আমি চিনতাম।
প্রশ্ন: তিনি কি স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন? 
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: রাজাকার কমান্ডার মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা গুন্ডার নাম শুনেছেন?
উত্তর: শুনিনি।
প্রশ্ন: ডালিম হোটেলে আপনি কোন পাকিস্তান আর্মি বা বিহারীদের দেখেছেন? 
উত্তর: দেখিনি।
প্রশ্ন: আটক অবস্থায় আপনাকে ডালিম হোটেলের কোন কোন রুমে রাখা হত?
উত্তর: নির্দিষ্ট কোন রুমে রাখত না, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রুমে রাখা হত।
প্রশ্ন: বাবুলকান্তি নাথ নামে কাউকে চেনেন?
উত্তর: এ নামে কাউকে চিনি বলে মনে পড়ছে না।
প্রশ্ন: ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত রাজাকাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়।
উত্তর: রাজাকার ও আল-বদরদের বিরুদ্ধে মামলা হয় বলে শুনেছি।
প্রশ্ন: পেশকারের দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে কোন মামলা করতে দেখেছেন?
উত্তর: আমার নজরে আসেনি।
প্রশ্ন: ১৯৭২ সালে ডালিম হোটেলের মালিক মইত্যা গুন্ডা ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে হোটেল ভবন দখলে রাখা এবং সেখানে অবস্থান করে মহিলাদের শ্লীলতাহানী, লুটপাট সংগঠন প্রভৃতি অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছিল কি না?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: আপনি এসএসসি কোন সালে পাস করেছেন?
উত্তর: ১৯৬২ সালে।
প্রশ্ন: কোন সালে চাকরিতে যোগদান করেন?
উত্তর: ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের চাকরিতে যোগদান করি।
প্রশ্ন: এসডিও অফিসে কোন সালে কাজ করেছেন?
উত্তর: ১৯৭৮ সাল থেকে ’৮২ সাল পর্যন্ত এডিশনাল এসডিও অফিসে পেসকার হিসেবে চাকরি করেছি।
প্রশ্ন: ১৯৭১ সালে কোন পদে ছিলেন?
উত্তর: ’৭১ সালে ল্যান্ড অ্যাকুইজেশন শাখার অফিস সহকারী ছিলাম।
প্রশ্ন: অবসরের সময় কোন পদে ছিলেন?
উত্তর: ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় সহকারী হিসেবে কর্মরত অবস্থায় অবসর গ্রহণ করি।
প্রশ্ন: চাঁন্দগাও নামে চট্টগ্রামে কোন গ্রাম নেই।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: ১৯৭১ সালে চাঁন্দগাও ইউনিয়ন ছিল? 
উত্তর: ইউনিয়নও ছিল, গ্রামও ছিল।
প্রশ্ন: ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মি চট্টগ্রাম শহরে কবে প্রবেশ করে?
উত্তর: ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করার চার বা পাঁচদিন পর।
প্রশ্ন: চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানায় পাকিস্তান আর্মি কোথায় ছিল?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: জেলা প্রশাসনের নিকটবর্তী পাকিস্তান আর্মির ক্যাম্প কোথায় ছিল?
উত্তর: সার্কিট হাইজে অবস্থান করত, তবে সেখানে ক্যাম্প অফিস ছিল কিনা বলতে পারব না।
প্রশ্ন: চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসকের কার্যালয় কোথায় ছিল?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: শন্তি কমিটির অফিস কোথায় ছিল?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: জেলা আনসার অ্যাডজুটেন্ড কার্যালয় কোথায় ছিল?
উত্তর: স্মরণ নেই।
প্রশ্ন: জেলা অ্যাকাউন্টস অফিস ভবন কোথায় ছিল?
উত্তর: জেলা প্রশাসন ভবনেই ছিল।
প্রশ্ন: ’৭১ সালে অ্যাকাউন্টস অফিসে লুটপাট হয়?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: মুক্তিযোদ্ধা, বিএলএফ বা অন্যকোন মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপক্ষ শক্তি কর্তৃক জেলা প্রশাসনের অফিস আক্রান্ত হয়েছিল কি না?
উত্তর: জানা নেই। 
প্রশ্ন: আপনি ১৯৭০-৭১ সালে জেলা প্রশাসন ভবনে কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ছিলেন কি না?
উত্তর: ছিলাম না।
প্রশ্ন: ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর প্রধান কার্যালয় কোথায় ছিল?
উত্তর: রাজাকারদের প্রধান কার্যালয় কোথায় ছিল বলতে পারব না। আল-বদরদের প্রধান অফিস চিল আন্দর কিল্লাস্থ ডালিম হোটেল।
প্রশ্ন: ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক কে ছিলেন?
উত্তর: ২৬ মার্চের পর সম্ভবত হাসান আহমেদ জেলা প্রশাসক ছিলেন।
প্রশ্ন: আপনি জবানবন্দীতে মীর কাসেম আলী সম্পার্কে যে সকল বক্তব্য দিয়েছেন সে মর্মে কোন ঘটনা ঘটেনি।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর থেকে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামে থাকতেন না।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: মীর কাসেম আলী কোন সময় আল বদর কমান্ডার ছিলেন না?
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনি শেখানো মতে সাক্ষ্য দিয়েছেন?
উত্তর: সত্য নয়।

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল শুনানী // এভিডেন্স পড়া শেষ ২৮ জানুয়ারি থেকে যুক্তি উপস্থাপন

21/1/2014
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল আবেদন শুনানীতে আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হবে। আজ এ মামলায় এভিডেন্স অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালের রায় এবং উভয় পক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী ও জেরা পড়ে শেষ করা হয়েছে। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান আজ আসামী পক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী ও জেরা  পড়ে শোনানো শেষ করেন। এরপর আসামী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী ২৮ জানুয়ারি যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ধার্য্য করা হয়। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ মামলার শুনানী গ্রহণ করেন।

গত রোববার মাওলানা সাঈদীর পক্ষে এ মামলার শুনানী চার সপ্তাহ  মুলতবি রাখার আবেদন করা হয়। আজ মুলতবি আবেদনের পক্ষে শুনানীতে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, এ মামলা শুনানীর জন্য  দুজন সিনিয়র আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে। এদের একজন হলেন বাংলাদেশ বার এসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন। কিন্তু তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া অপর সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এ কারনে অন্তত চার সপ্তাহ সময় দরকার ।
আসামী পক্ষের এ আবেদনের বিরোধীতা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান। শুনানী শেষে আদালত এক সপ্তাহ মুলতবি করেন।
আসামী পক্ষ থেকে নয়া দিগন্তকে জানানো হয়েছে গত সোমবার মুলতবি আবেদন বিষয়ে শুনানী হবার কথা ছিল। সেজন্য গতকাল সিনিয়র আইনজীবী নজরুল ইসলাম, জয়নুল আবেদিন এবং নিতাই চন্ত্র রায় উপস্থিত ছিলেন।




বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৪

সাঈদীর আপিল শুনানী// সাফাই সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা পড়া শুরু

১৬/১/২০১৪
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল আবেদনের ওপর শুনানী অব্যাহত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ শুনানী গ্রহণ করেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং জেরা পড়ে শোনাচ্ছেন আদালতে। গতকাল রাষ্ট্রপক্ষের শেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার জেরা পড়ে শোনানো শেষ হয়েছে। এরপর মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ছয়জন সাফাই সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা পড়ে শোনানো হয়েছে। এরপর আগামী রোববার পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা হয়েছে।

শুনানীতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান, মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


সাঈদী সম্পর্কে আহমদ ছফা

সাঈদী সম্পর্কে দার্শনিক আহমদ ছফার মূল্যায়ন পড়ে আমি যারপরনাই পুলকিত হলাম। আমার সহকর্মী আলফাজ আনাম ভাইর রুমে ঢোকামাত্র আমাকে তিনি আহমদ ছফার লেখাটি ধরিয়ে দিয়ে বললেন পড়েন। পড়ে আমি হোহো করে হেসে উঠলাম। তাকে বললাম ফেসবুকে ছাড়েন। সে ছাড়ল। আমি শেয়ার করলাম। পড়ে কপি করে আমিও একটা স্টাটাস মারলাম। নিম্নে সাঈদী সম্পর্কে আহমদ ছফার মূল্যায়নটি পড়তে পারেন। পুলকিত হবেন আশা করি।

...............আমার বিচারে স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বোত্তম আশ্চর্য বস্তু হল হযরত মাওলানা আলহাজ্ব দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। তাঁকে কি কারণে এ দুর্লভ সম্মানে ভূষিত করতে হল সেটা একটু ব্যাখ্যা করার দাবি রাখে। গত ফাল্গুনে আমি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখি আমার ভাতৃবধূ কে-টু সিগারেট পান করছেন এবং ক্যাসেটে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের মিলাদ শুনছেন। আমার বাবা-মা যদ্দিন বেঁচেছিলেন ওই মহিলাকে জোর করে একবারও নামাযের পাটিতে দাঁড় করাতে পারেননি। আমার ভাইও অনেক চেষ্টা করে ক্ষান্ত দিয়েছিলেন। আমি দেখলাম হযরত সাঈদী এই মহিলার অন্তরে ধর্মপিপাসা জাগ্রত করতে সক্ষম হয়েছেন। তারপরেও যদি তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতি দিতে আমি রাজি না হই, নিজের উৎকৃষ্ট অংশের প্রতি আমি অবিচার করব। ভাবীর এই রূপান্তর দেখে আমি নিজেও হযরতের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি। তার কারণ আছে। অন্য মাওলানার মিলাদ আমি শুনেছি। তাঁরা ধর্মকথা পুণ্যকথা বলেন। কিন্তু সেগুলো বোরিং লাগে। মাওলানা সাঈদীর ক্যাসেট যখন শুনলাম, বুঝতে পারলাম মিলাদ কাকে বলে। এখনে ধর্ম অর্থ মোক্ষ কাম সব মেলে। হযরত সাঈদী যদি গান করতেন, মাইকেল জ্যাকসনের কাছাকাছি পৌঁছুতেন। অভিনয় করলে ছবি বিশ্বাসকে ছাড়িয়ে যেতেন। নাচ করলে বুলবুল চৌধুরীর রেকর্ড ম্লান হয়ে যেত। নাচ গান অভিনয় এবং তার ওপর ধর্মকথা এই একের ভেতর চার তিনি সমন্বয় করেছেন। তাঁকে কি করে আমি সামান্য মানুষ বলব। সুতরাং বরণীয় স্মরণীয়দের তালিকায় আমি সাঈদী সাহেবকে একটা জায়গা দিয়ে বসে আছি
(ত্রি বঙ্গাশ্চর্য পরিচয় / আহমদ ছফা)নিকট ও দূরের প্রসঙ্গ, ১৯৯৫।

বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল আবেদন শুনানী চলছে

১৫/১/২০১৪
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল আবেদন শুনানী অব্যাহত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ শুনানী গ্রহণ করেন। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান তদন্ত কর্মকর্তার জেরা পড়ে শোনান ।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যেসব সাক্ষীদের জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা পড়ে শোনানো হয়েছে আজ। সুখরঞ্জন বালী, গণেশচন্দ্র সাহা, উষারানী মালাকার, মমতাজ বেগম, সেতারা বেগম, রানী বেগম,  সুমতি রানী মন্ডল, আশিষ কুমার মন্ডল, সমর মিস্ত্রী, আইউব আলী, সেলিম খান প্রভৃতি সাক্ষী ছাড়াও ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার ঘটনা বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে যে জেরা করা হয়েছে তা পড়ে শোনা হয়েছে ।
শুনানীতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যটর্নি জেনারেল এমকে রেহমান, আসামী পক্ষে ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল শুনানী আবার শুরু

13/1/2014
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল আবেদন শুনানী বেশ কিছুদিন পর আবার  শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ  শুনানী গ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী ও জেরা পড়ে শোনানোর পর বর্তমানে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা পড়ে শোনানো হচ্ছে এ মামলায়। তবে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা পড়ে শোনানো শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার জেরা পড়ে শোনানো শেষ হলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী ও জেরা পড়ে শোনানো হবে। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান জবানবন্দী ও জেরা পড়ে শোনাচ্ছেন। এসময় মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অন্যান্য আইনজীবীর মধ্যে ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান।

মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৪

আল্লাহর পরে প্রধানমন্ত্রী এরপর আমরা : বললেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান

মেহেদী হাসান,
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, আল্লাহর পরে প্রধানমন্ত্রী এরপর আমরা।   আজ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা পরিচালনার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।

ট্রাইব্যুনালে একটি মিস মামলার আদেশের জন্য ধার্য্য ছিল আজ। মামলার  একটি পক্ষ  হিসেবে  বাগেরহাট নোটারী পাবলিকের দুই আইনজীবী শেখ আবদুল ওয়াদুদ এবং শামীমা আক্তারের উপস্থিতে এ আদেশ প্রদানের কথা ছিল। কিন্তু তারা কেউ গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেননা।

অবরোধের কারনে তারা আসতে না পারায় তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট গাজি এমএইচ তামিম সময় প্রার্থনা করেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ওনারা আসেননি কেন? ওনারা কোথায়?  এসময় গাজি তামিম হরতাল অবরোধ এবং নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন এসব কারনে তারা আসতে পারেননি।
তখন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, এভাবে হয়না। আদালতে আইনজীবীরা আসছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে মামলার সাক্ষীরাও আসছে। গাড়ি ঘোড়া সব চলে । সবাই আসতে পারেন আর ওনারা পারেননা?  আসবেন, আমরা আসার ব্যবস্থা করলে আপনে আপনেই আসবেন। পরের  দিন  তারা আসতে না পারলে যেখানে যাবার সেখানে যেতে হবে তাদের। এর আগেও আমরা তাদের অনেক সুযোগ দিয়েছি।

এসময় গাজি তামিম বলেন তারা আসার জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পারেননি। হরতাল অবরোধে সারা দেশে বর্তমান কি অবস্থা বিরাজ করছে তা আপনারা জানেন মাইলর্ড।
তখন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, ওনারা চেষ্টা করলে আসতে পারতেন। চেষ্টা করলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসতে পারতেন। আসলে ওনারা চেষ্টা করেননি। আমরা চেষ্টা করিয়ে দিলেই তারা আসবেন।


ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, এসব নাটক আর কতদিন চলবে? এসব বন্ধ করেন। এসব নাটক করে কি হবে? দেশে ইলেকশন হয়েছে।  সবকিছু চলছে। কোনকিছুতো থেমে নেই। তিনি বলেন,  আমরা অনেক সুযোগ দিয়েছি। এসব সুযোগ গ্রহণ করেন।  আমাদেরও সহ্য এবং ধৈর্য্যের একটা সীমা আছে। আমাদের ধৈর্য্যরে সে বাঁধ ভেঙ্গে দিবেননা। আমরা আর কত অপেক্ষা করব? আমাদের যদি আপনারা ক্ষেপিয়ে তোলেন এবং আমরাও যদি রাগের বশে তাদের বিরুদ্ধে কোন আদেশ দেই সে আদেশের  বিরুদ্ধে কোন আপিল করতে পারবেননা। কি তামিম সাহেব পারবেন কোন আপিল করতে?

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান এরপর বলেন, দেখুন  আল্লাহর পরে প্রধানমন্ত্রী এরপর আমরা ।  আমরা কারো জন্য  আর অপেক্ষা করবনা। দেশ যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে।  আমাদেরও একইসাথে এগিয়ে যেতে হবে।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান গাজি তামিমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি তো ট্রাইব্যুনালে এসেছেন। আপনাকে তো আগুন, বোমা, হামলা, জামায়াত-শিবির, পুলিশ আওয়ামী লীগ কিছু করতে পারেনা। আপনি তো আসতে পারেন। তারা কেন আসতে পারছেনা? 

মিস মামলার প্রেক্ষাপট : জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের  সপ্তম সাক্ষী ছিলেন আসিয়া খাতুন ।

মাওলানা ইসুফের পক্ষে আইনজীবী গাজি এমএইচ তামিম দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, সাক্ষী আসিয়া খাতুন ২০১০ সালে মাওলানা উসুফের বিরুদ্ধে তার স্বামী হত্যার বিষয়ে অভিযোগ করে একটি মামলা করেন। সে মামলাটি ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
গাজি তামিম বলেন, আসিয়া খাতুন ২০১০ সালের মামলায় মাওলানা ইউসফ সাহেবকে আসামী করলেও মামলা দায়ের করার তি/চার মাস পরে একটি এফিডেভিট করেন বাগেরহাট নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে। সে এফিডেভিটে  তিনি বলেন, তার স্বামী হত্যার সাথে  মাওলানা ইউসুফের কোন সম্পর্ক নেই। ভুল করে তার স্বামী হত্যায় মাওলানা ইউসুফকে আসামী করা হয়েছে।  আসামীর তালিকা থেকে মাওলানা ইউসুফের নাম বাদ দিয়ে তিনি এ এফিডিভিট করেন।

গাজি তামিম বলেন, গত ১৭ নভেম্বর আমরা স্বাক্ষীকে জেরার সময় তার এ এফিডেভিট তাকে আদালতে প্রদর্শন করি। তখন  তিনি বলেন এফিডেভিট এর ছবি তার কিন্তু তিনি এফিডিভিট এবং এর স্বাক্ষর অস্বীকার করেন। । তখন ট্রাইব্যুনাল এফিডেভিট বিষয়ে জানতে চান। আমারা ট্রাইব্যুনালকে আমাদের সংগৃহীত কপি জমা দিয়েছি। এপর বাগেরহাট নোটাারি পাবলিক এর যে আইনজীবী  এফিডেভিট করেন এবং যিনি এটি সনাক্ত করেছেন সেই দুই আইনজীবীকে  তলব করে আদেশ দেন এ বিষয়ে জানার জন্য। ৪ ডিসেম্বর প্রথম তাদের হাজিরের জন্য দিন ধার্য্য ছিল।

গাজি তামিম বলেন, হরতাল অবরোধের কারনে এর আগেও বেশ কয়েকবার তারা আসতে পারেননি। তবে পরবর্তীতে তারা দুজন পৃথকভাবে এসে আদালতে হাজিরা দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে, তাদের মাধ্যমে আসিয়া খাতুন এফিডেভিট করিয়েছেন। আজ  এ বিষয়ে আদেশ এর জন্য ধার্য্য ছিল।