বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৩

জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন তিনি ১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুর বালিকা বিদ্যালয়েল প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আর জেরায় বললেন ১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুরে কোন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ছিলনা

মেহেদী হাসান  ২৯/৮/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আজ ১৮ তম সাক্ষীর  জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি রাজনারায়নপুর বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আর জেরায় তিনি জানান, ১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুরে একটি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। কোন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ছিলনা।
মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাকে প্রশ্ন করেন রাজনারায়নপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়টি রাজনারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কতদূর এবং কোন দিকে।
জবাবে সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয় নামে কোন বিদ্যালয় ছিল না।  ১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুরে একটি মাত্র অবতৈনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল।
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে একটি প্রশ্নের মাধ্যমে জেরা করা হয়। এরপর জেরা আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ জহরুল হক। আমার বয়স আনুমানিক ৬৭/৬৮ বৎসর। আমার ঠিকানা গ্রাম- হাড়িয়া, থানা- সাথিয়া, জেলা- পাবনা।
আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাথিয়া থানা কমান্ড-এর ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার। আমি ১৯৭১ সালে বেড়া থানাধীন রাজ নারায়নপুর বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিলাম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শুনার পর সাথিয়া থানায় আমি আমার বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলি। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের মধ্যরাতের পর বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা দেওয়ার এবং পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙ্গালীদের উপর নিধনযজ্ঞ শুরু করার পর ১৩-৫-১৯৭১ সালে আমার কয়েকজন বন্ধু তাদের মধ্যে মোতাহার হোসেন, রহিজ উদ্দিন, আলতাব হোসেন, আব্দুল খালেক আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সাথিয়া থানাধীন বাউশগাড়ি গ্রামে শহীদ আব্দুল জব্বার সাহেবের বাড়িতে সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করি। এই প্রস্তুতি গ্রহন কালে আমি রূপসী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক আইনুল হকের নিকট জানতে পারি যে, ১০-৫-১৯৭১ তারিখে তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সহ ১০/১২ জন দালাল নিয়ে রুপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন এবং ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য লোকজন নিয়ে আলোচনা করেন যে, অতি শীঘ্র পাক হানাদার বাহিনী পিস কমিটি গঠন করার জন্য আসবে এবং তিনি আরো আলোচনা করেন যে, রাজাকার আলবদর বাহিনীও গঠন করতে হবে। তিনি আরো নির্দেশ দেন যে, পাক হানাদার বাহিনীকে সবাই মিলে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন। অতঃপর ১৪-৫-১৯৭১ সালে ফজরের নামাজের পর অতর্কিত গোলাগুলির শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি তখন রাস্তার দিকে অগ্রসর হই। রাস্তার পাশে এসে একটি ঝোপের আড়াল থেকে দেখতে পাই মতিউর রহমান নিজামী সাহেব, আসাদ, কাদের, ছাত্তারসহ কিছু দালাল এবং পাক বাহিনীর একটি দল নির্বিচারে গুলি চালিয়ে রাস্তা দিয়ে দক্ষিন দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ অবস্থা দেখে আমি অতি দ্রুত আমার সঙ্গীদের নিয়ে গ্রামের পূর্ব পাশের বিলের দিকে পালিয়ে যাই। আনুমানিক ৬/৭ ঘন্টা পর আবার আমরা রূপসী বাউশগাড়িতে ফিরে আসি। সেখানে এসে দেখতে পাই যে রাস্তার পাশে হিন্দু মুসলমান আনুমানিক চারশত নারী পুরুষের লাশ পড়ে আছে এবং উপস্থিত জনতার কাছে শুনতে পাই যে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের উপস্থিতিতে এই সকল নিরীহ নিরস্ত্র মানুষগুলোকে একত্রে জড়ো করে নিজামী সাহেবের নির্দেশে পাক হানাদার বাহিনী বৃষ্টির মত গুলি করে হত্যা করে। এই অবস্থা দেখে বিভিন্ন লাশের নিকট গিয়ে দেখি শহীদ আব্দুর জব্বার, শহীদ আজগর আলী, শহীদ মুকসেদ আলী, শহীদ ইদ্রিস আলী, শহীদ একেন আলী, শহীদ মলম প্রামানিক, তার ভাই কলম প্রামানিক, শহীদ ওয়াজ উদ্দিন, শহীদ শ্রী বলরাম দাস,  শহীদ উপেন্দ্র নাথ, শহীদ যিতেন্দ্র নাথসহ প্রায় ৫০/৬০ জনের লাশ সনাক্ত করি।
এরপর দেশে থাকা নিরাপদ নয় মনে করে আমি, আলতাফ, খালেদ, রহিজ, মোতাহার, মান্নান মকবুলসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। আনুমানিক জুন মাসের মাঝামাঝি আমি এদেরকে সঙ্গে নিয়ে বেড়া থেকে ভারতের বালুরঘাট এলাকায় মালঞ্ছি ইয়্যূথ রিসেপশন ক্যাম্পে যাই এবং ভর্তি হই। তারপর সেখান থেকে আমাদেরকে উচ্চতর প্রশিক্ষনের জন্য দেরাদুনে পাঠানো হয়। সেখানে ৪১ দিন প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ৩৩ জনের একটি দল নিয়ে অস্ত্র শস্ত্রসহ ভারতের মানকার চর হয়ে রংপুর বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। বাংলাদেশে প্রবেশ করে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার মালীপাড়া  রাজাকার, আলবদর ও আর্মি ক্যাম্প আক্রমন করি। এখানে যুদ্ধে দুইজন পাক হানাদার বাহিনীসহ পাঁচ জন রাজাকার নিহত হয়, অন্যরা গোলাবারুদ ফেলে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়।
১৯৭১ সালের মে মাসের আরেকটি ঘটনা, সম্ভবত ১১/১২ মে তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ও ইছাক মাওলানা আনুমানিক ১০০/১৫০ রাজাকার আলবদর নিয়ে সাথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প উদ্বোধন করেন। সেখানে উদ্বোধনী ভাষণে নিজামী সাহেব বলেন যে, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকদের হত্যা করতে হবে এবং স্থানীয় যুবকদের রাজাকার, আলবদরে ভর্তি করাতে হবে। এই ঘটনা সাথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ তোফাজ্জল হোসেন ও আরো অনেকের নিকট থেকে শুনতে পাই।
আমি আরো শুনেছি যে পাবনায় অবস্থানরত পাক বাহিনীর সহিত মাওলানা নিজাম উদ্দিন সাহেবের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল, পরে বলে মাওলানা নিজামী (ডিফেন্সের জোরালো আপত্তি সহকারে)। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পরিকল্পনায়, পরামর্শে প্রত্যক্ষ মদদে পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার ও আলবদররা বেড়া ও সাথিয়া থানায় বহু নিরস্ত্র ও নিরিহ লোকজনকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও লুন্ঠন করে এবং নারী ধর্ষণের কথা শুনা যায়। এই তথ্যগুলো ধৃত রাজাকার, আলবদরদের জিজ্ঞাসাবাদের ফলে জানা যায়। আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দি প্রদান করেছি ১৭-৫-২০১৩ ইং তারিখে। অদ্য ট্রাইব্যুনালে অত্র মামলার আসামী মতিউর রহমান নিজামী সাহেব কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।
 জেরা-
১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয় নামে কোন বিদ্যালয় ছিল না, তবে রাজনারায়নপুরে অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় ছিল। (চলবে)

এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুনানী শুরু

 ২৯/৮/২০১৩
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানী শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ প্রথমে শুনানী পেশ শুরু করে আজ। এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ছয়টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলাম প্রথম দিন শুনানী পেশ করেন। আসামী পক্ষ থেকে দুই সপ্তাহ মুলতবি আবেদন করা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনাল বলেছে আপনাদের পরে সময় দেয়া হবে। আজ রাষ্ট্রপক্ষ শুরু করুক।

ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির আজ অনুপস্থিত ছিলেন। সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। দুপুরের বিরতি পর্যন্ত শুনানী শেষে শুনানী আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে ১৮ জুলাই  রাষ্ট্রপক্ষ ফরমাল চার্জ দাখিল করে এবং  ২৫ জুলাই অভিযোগ আমলে নেয়  ট্রাইব্যুনাল।

গত বছর ২২ আগস্ট এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর  ওইদিনই তাকে  তাকে তার মগবাজারস্থ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সেই থেকে তিনি বন্দী রয়েছেন।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিষয়ে আদেশ ৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় নির্ধারন

মেহেদী হাসান, ২৯/৮/২০১৩
দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (এমসি) জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য  মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হবে কি হবেনা সে বিষয়ে আদেশের তারিখ আগামী ৫ সেপ্টেম্বর  পুনরায় নির্ধারন করা হয়েছে।

আজ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিষয়ক আদেশের জন্য নির্ধারিত ছিল। আসামী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে চার্জ গঠন বিষয়ক আদেশের তারিখ পুনরায় নির্ধারন করে ট্রাইব্যুনাল।

গত ২১ আগস্ট চার্জ গঠন বিষয়ে উভয় পক্ষের শুনানী শেষে ২৯ আগস্ট চার্জ গঠনের  আদেশের জন্য ধার্য্য করা হয়। সেদিন শুনানী শেষে আসামী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন ট্রাইব্যুনালকে অনুরোধ করেন চার্জ গঠন বিষয়ক আদেশ ৮ অথবা ৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারন করা হোক। কারণ  আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন এবং তিনি অনুরোধ করেছেন তিনি চার্জ শুনানীতে অংশ নিতে চান। তিনি ৮ তারিখ দেশে আসবেন। তাকে সে সুযোগ প্রদানের জন্য ৮ বা ৯ তারিখ  চার্জ গঠনের জন্য নির্ধারন করা হোক এবং তাকে চার্জ গঠনের দিন হলেও যেন আদেশের পূর্বে শুনানী পেশ করার সুযোগ দেয়া হয়।

কিন্তু এত লম্বা মুলতবি করতে তখন রাজি হয়নি ট্রাইব্যুনাল এবং ২৯ আগস্ট তারিখ নির্ধারন করে ট্রাইব্যুনাল। এরপর গত মঙ্গলবার আবারো আসামী পক্ষ থেকে আবেদন করা হয় মীর কাসেম আলীর চার্জ গঠনের আদেশের তারিখ পেছানো হোক এবং ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে শুনানী পেশ করার সুযোগ দেয়া হোক। অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিদেশ থেকে ফোন করে অনুরোধ করেছেন আপনাদের কাছে এ আবেদন রাখার জন্য। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাকে সুযোগ দিতে আমাদের কোন  আপত্তি নেই। তিনি দেশে ফিরে আসুক আমরা তাকে সুযোগ দেব। তাকে বলেন তিনি যেন সফর সংক্ষেপ করে চলে আসেন। তাকে আমাদের পক্ষ থেকে এ কথা জানান। মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি আপনাদের এ কথা তাকে জানাব।
এরপর আজ মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি তাকে আপনাদের কথা ফোনে জানিয়েছি । কিন্তু তার পক্ষে এ মুহুর্তে দেশে ফেরা সম্ভব নয়। কারণ হল তিনি ইতোমধ্যে তার সফর সাত দিন কমিয়ে আট তারিখ দেশে ফেরার তারিখ ঠিক করেছেন। তাছাড়া এখন প্লেনের টিকিট পাওয়াও সম্ভব হয়নি। তাছাড়া তিনি যে কাজে গেছেন সে কারনেও সফর  দ্বিতীয়বার সংপেক্ষপ করা কঠিন তার পক্ষে। মিজানুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের অনুরোধ যদিও বিব্রতকর তবুও  ন্যায় বিচারের স্বার্থে এক সপ্তাহ পেছালে খুব একটা অসুবিধা হবেনা। আপনারা আগেও আমাদের অনুরোধ শুনেছেন। এ মামলার যখন শুনানী চলে তখন তার বা আমাদের কারোর নলেজে  ছিলনা তাকে বিদেশে এ লম্বা সফর রয়েছে। তাই আপনারাও বলেছেলেন তাকে আপনারা সুযোগ দেবেন।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এত লম্বা সময় মামলা মুলতবি রাখা  আসলে আইন আমাদের  অনুমিত দেয়না।
মিজানুল ইসলাম বলেন, আইনে লম্বা মুলতবি বা সংক্ষিপ্ত মুলতবি বলতে কিছু নেই। ন্যায় বিচারের স্বার্থে আপনাদের এ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আইনে দেয়া আছে।

রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন  আসামী পক্ষের আবেদনের তীব্র বিরোধীতা  করে বলেন, তাদের পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়েছে।  তাদের আইনজীবীর কারনে মামলার তারিখ পেছানো কোন যৌক্তিক কারণ হতে পারেনা।
শুনানী শেষে ট্রাইব্যুনাল ৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় তারিখ নির্ধারন করেন।
আজ ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির অনুপস্থিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি জাহঙ্গীর হোসেন  ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক  শুনানী গ্রহণ করেন এবং আদেশ দেন।


মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন, অপহরন লুন্ঠন এবং অগ্নিসংযোগের মত ১৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ গত ১৬ মে। ১৪টি অভিযোগের মধ্যে  দুটি পৃথক অভিযোগে মোট সাতজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। বাকী ১২টি অভিযোগ হল অপহরন এবং নির্যাতন সংক্রান্ত। এসব অভিযোগের সাথে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপনসিবিলিটি বা উর্দ্ধতন নেতৃত্বে দায় আনা হয়েছে। ২৬ মে ট্রাইব্যুনাল মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়ার পর ২৫ জুলাই চার্জ গঠনের  শুনানী শুরু হয়।

গত বছর  ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে  ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  এর নির্দেশে। সেই থেকে তিনি বন্দী রয়েছেন।

মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে আরো ৫ অতিরিক্ত সাক্ষী

মেহেদী হাসান 27/8/2013
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে নতুন করে আরো পাঁচজন সাক্ষী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে নতুন সাক্ষী তালিকভুক্ত করা বিষয়ে আজ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন। এ নিয়ে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের মোট তালিকাভুক্ত সাক্ষীর সংখ্যা দাড়াল ১০৪ জনে। এর আগেও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে দুইবার সাক্ষীর সংখ্যা বাড়ানোর অনুমতি  দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষকে।

রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে প্রথমে মোট ৬৮ জন সাক্ষীর তালিকা জমা দেয়। এরপর একবার ছয় জন এবং আরেক বার ২৮ জন নতুন সাক্ষী তালিকাভুক্ত করার আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ এবং তা মঞ্জুর করা হয়। আজ নতুন করে আরো পাঁচজন  নতুন সাক্ষী বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে অনুমতি দেয়া হল।

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
আজ নতুন যে পাঁচজন সাক্ষীর আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে তাদের মধ্য থেকে একজনকে রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করে ট্রাইব্যুনালে। তবে ট্রাইব্যুনাল তার সাক্ষ্য গ্রহনে রাজি হয়নি। ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের প্রশ্ন  করেন আপনাদের আজকের আবেদন আমরা গ্রহণ করব তা আগে থেকে জানতেন কি করে? তখন প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী বলেন, যদি গ্রহণ করা হয় সেই আশা থেকে আমরা নতুন পাঁচজনের মধ্য থেকে একজনকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছি।
আগামী বৃহষ্পতিবার নতুন সাক্ষীর জবানবন্দী  গ্রহণ করা হবে। রোববার তার জেরার জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।

নতুন সাক্ষীর আবেদন বিষয়ে শুনানী :
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পাঁচজন সাক্ষী বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা আবেদনের ওপর সকালে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপক্ষে  প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী শুনানী পেশ করেন প্রথমে। তিনি বলেন, মাওলানা নিজামীর মামলায় এখনো তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং নতুন তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে। সে কারনে ন্যায় বিচারের স্বার্থে নতুন সাক্ষী গ্রহণ করা উচিত। তা নাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।
ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন তখন প্রশ্ন করেন, আগেই আপনাদের ১০০ জন সাক্ষী হাজিরের বিষয়ে অনুমতি দেয়া আছে। এত সাক্ষী থাকার পরও নতুন করে সাক্ষী কেন দরকার?
অপর সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন,  আপনারা কি আগের সাক্ষীদের বিষয়ে কান্ত (এক্সহজটডে) হয়ে গেছেন?
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, মিস্টার মোহাম্মদ আলী, আমরা আগেও আপনাদের দুইবার সাক্ষী বাড়ানোর বিষয়ে আবেদন গ্রহণ করেছি। নতুন করে সাক্ষীর আবেদন করলে আপনাদের  নির্দিষ্ট করে দেখাতে হবে কেন নতুন সাক্ষী দরকার।

এরপর আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষের দরখাস্তের বিরোধীতা করে শুনানী পেশ করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর বলেছেন এ মামলায় এখনো তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আমার মনে হয় এটি উনি ঠিক বলেননি। আইন এবং রুলস অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর আর নতুন করে তদন্ত পরিচালনার কোন সুযোগ নেই।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের দরখাস্তের একটি প্যারা উদ্ধৃত করে মিজানুল ইসলাম বলেন, এটা ওনারা কি লিখলেন? এটাই যদি হয় তাহলে ন্যায় বিচারের আর কিছু থাকেনা। প্রথমে তারা ৬৮ জন সাক্ষীর তালিকা দিলেন। এরপর আরো দুই দফায় সাক্ষীর তালিকা বাড়ানো হল। এসব সাক্ষী তারা কেন হাজির করতে পারছেনা তার কোন ব্যাখ্যা তারা দেয়নি।
মিজানুল ইসলাম বলেন, আসলে এ মামলায় তাদের অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি হয়েছে। সেগুলো শোধরানোর জন্য তদন্ত কর্মকর্তা এবং প্রসিকিউটর মিলে কাজ করছেন। তারই অংশ হিসেবে তারা নতুন সাক্ষীর দরখাস্ত দিয়েছেন।  তারা সততার সাথে এ দরখাস্ত এনেছে কি-না এবং আসামী পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা এর লক্ষ্য কি-না তা আপনাদের খতিয়ে দেখা দরকার। আমাদের বক্তব্য হল তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ দরখাস্ত এনেছে মামলার এ পর্যায়ে।

এ সময় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আগে রাষ্ট্রপক্ষ বলত আসামী পক্ষ মামলা বিলম্ব করার চেষ্টা করছে। এখন মনে হয় রাষ্ট্রপক্ষ মামলা ডিলে করতে চাচ্ছে।
চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএফ ফজলে কবির বলেন, আগে ১০০ জনের অনুমতি দেয়া আছে। এখন আবার নতুন করে সাক্ষী বাড়াতে চাচ্ছেন। এতে তো মনে হয় দুই বছরেও আপনারা মামলা শেষ করবেননা।

বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীর উদ্দেশে বলেন, আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম প্রশ্ন তুলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর তদন্তের আর কোন সুযোগ নেই। এর জবাব  দেন।

মোহাম্মদ আলী তখন আইন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তদন্ত কমকর্তার পাশাপাশি আইনজীবীও এ মামলায় তদন্তের কাজ পরিচালনা করতে পারে। মামলায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এটা একটা চলমান প্রকৃয়া। তদন্ত রিপোর্ট যখন জমা দেয়া হয়েছে সেটা তদন্তের একটা পার্ট। কিন্তু তদন্ত এখনো চলছে এবং তারই অংশ হিসেবে আমরা নতুন সাক্ষী এনেছি।
বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, আপনি এটি ঠিক বলেননি। বস্তুত তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর তার হাতে আর কিছু থাকেনা। তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার পর তদন্তের আর সুযোগ নেই।  তবে হ্যা নতুন করে গুরুত্বপূর্ণ কোন এভিডেন্স নজরে আসলে তখন সেটি বিবেচনা করা যেতে পারে। তাছাড়া পুনরায় তদন্তের সুযোগ নেই।  আর আইনজীবী তদন্ত করতে পারলেও বস্তুত আপনারা তো তদন্ত করেনননি। করেছে তদন্ত সংস্থা।

এরপর ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের দরখাস্ত মঞ্জুর করে আদেশ দেন এবং সাক্ষী  হাজিরের জন্য বলেন রাষ্ট্রপক্ষকে।
রাষ্ট্রপক্ষ তখন  আজকের দরখাস্তে অনুমতি প্রাপ্ত পাঁচজন থেকে একজনকে হাজির করে। মিজানুল ইসলাম তখন বলেন, আপনারা কি করে জানলেন যে, আপনাদের দরখাস্ত মঞ্জুর হবে?
তখন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ সাক্ষীর সাক্ষ্য আজ আমরা নেবনা। আপনারা কি করে জানলেন আপনাদের নতুন সাক্ষীদের বিষয়ে দরখাস্ত আমরা গ্রহণ করব?
তখন মোহাম্মদ আলী বলেন, যদি গ্রহণ করা হয় সেই আশায় নিয়ে এসেছিলাম।
বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, আমিতো মনে করেছিলাম পুরান সাক্ষী এনেছেন।
এরপর মিজানুল ইসলাম বলেন, নতুন সাক্ষীদের বিষয়ে আমাদের তদন্তের জন্য কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় দেন। আর আজ যে নতুন সাক্ষী হাজির করা হল তার সাক্ষ্য  গ্রহণ করতে হলে আগামী রোববার তারিখ নির্ধারন করা হোক।
এরপর আগামী বুধবার নতুন সাক্ষীর জবানবন্দী এবং রোববার জেরার জন্য নির্ধারন করা হয়।
এদিকে ইকোনমিস্ট বিষয়ে  আজ  আদেশ দেয়ার কথা থাকলেও তা পুনরায় ২৬ সেপ্টেম্বর নির্ধারন করা হয়েছে।

নতুন সাক্ষী বিষয়ে দরখাস্তের বিরোধীতা করে  আসামী পক্ষ ট্রাইব্যুনালে যে লিখিত আপত্তি দায়ের করে তা নিম্নরূপ
IN THE INTERNATIONAL CRIMES TRIBUNAL-1, DHAKA

ICT-BD. CASE NO.   03 OF 2011

IN THE MATTER OF:
Prayer for dismissing the application filed by the prosecution on 26.08.2013 for seeking permission to submit the statement of 5 (five) additional prosecution witnesses.

AND
IN THE MATTER OF:
Motiur Rahman Nizami, Ameer of Bangladesh Jamaat-e-Islami, 505 Elephant Road, Mogbazar, Dhaka 1217.
…Accused-Petitioner.
-versus-

The Prosecution.
       …Opposite Party.
The humble petition on behalf of the Accused-Petitioner above named most respectfully –

S H E W E T H:
1.   That on 9 January 2012, this Hon’ble Tribunal stated that a prima facie case had been established against the Accused-Petitioner and ordered that cognizance be taken under sections 3 (2), 4 (1) and 4 (2) of the International Crimes (Tribunal) Act 1973 (hereinafter: “IC(T)A”).
2.   The Tribunal ordered for the Prosecution to disclose copies of the formal charge and all supporting documents relied upon while forming the charge concerned to the Defence by 15 January 2012. Pursuant to the above mentioned order passed on 9 January 2012 and Rule 18 (4) of the Rules of Procedure, the Defence was supplied with a copy of formal charge and supporting documents on 15 January 2012. This consists of 15 volumes of documents comprising of 4288 pages.
3.   That on ....... the prosecution filed an application seeking permission to submit the statement of 6 ( six) additional prosecution witnesses which was vehemently opposed by the Defence but this Hon’ble Tribunal allowed that application and the prosecution examined only one witness from those additional witnesses.
4.     That the prosecution again filed an application seeking permission to submit the statement of 28 ( twenty eight) additional prosecution witnesses which was hard on 11.02.2013 and that was also vehemently opposed by the Defence but the Defence yet not been well informed regarding the fate of that application though the prosecution already examined one witness from that additional witness list.
5.   That furthermore, 0n 26.08.2013 again the prosecution filed an application for permission to submit an additional list of 5 (five) prosecution witnesses statement.
6.   That it is stated that the prosecution filed this application only to fill up the lacuna arises from the Defense’s cross examination of the PW’s.
7.   That it is further submitted that the prosecution in fact filed this application only to mislead the Tribunal as the defense by cross examination of the PW’s got major discrepancies between the prosecution story and the facts on the ground and thereby destroyed the prosecution case and now by taking the advantage of submitting additional prosecution witnesses they have just reversed their previous case and come with a new case which can no way be allowed.
8.   That as prosecution is not come with the application for seeking permission to submit the statement of 5 (five) additional prosecution witnesses with clean hand the prosecution application is liable to be dismissed.
9.   That it is submitted that the 5 new witness statements brought before the Tribunal in the form of application are manipulated, fabricated and concocted and if the prosecution application is allowed the accused petitioner will be highly prejudiced.
10.           That for the abovementioned reasons the Accused-Petitioner humbly prays that this Hon’ble Tribunal issues an order directing for rejecting the application filed by the prosecution.
Wherefore it is most humbly prayed that the Hon’ble Tribunal would graciously be pleased to issue an order dismissing the application filed by the prosecution for seeking permission to submit the statement of 5 (five) additional prosecution witnesses and/or pass any order or further order(s) as it may deem fit and proper. 
And for this act of kindness, that the Accused-Petitioner, as in duty bound shall ever pray.

সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৩

নিজামীর বিরুদ্ধে ১৭ তম সাক্ষীর জেরা শেষ : রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর অশালীন মন্তব্যে ট্রাইব্যুনালে উত্তেজনা


মেহেদী হাসান, ২৬/৮/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ১৭ তম সাক্ষী জামাল উদ্দিনের জেরা আজ  শেষ হয়েছে। গত রোববার জামাল উদ্দিনের জবানবন্দী গ্রহণ শেষে জেরা শুরু হয়।
মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাকে জেরা করেন।

জেরা : (সংক্ষিপ্ত )
জেরায় আইনজীবীর প্রশ্নে সাক্ষী যে উত্তর বলেন তা নিম্নরূপ:
২০০০ সালে ডিসেম্বর মাসে করমজা গ্রাম থেকে হাড়গোড় উদ্ধারের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। যে সমস্ত লোক ঐ ঘটনা সম্পর্কে আমাদেরকে জানায় তাদের মধ্যে চতুর আলী চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা আবু সামা এবং আরো অনেকেই ছিলেন। এই চতুর আলী চেয়ারম্যান ঐ এলাকার পিস কমিটির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোদা বক্সের ভাই কিনা তা আমি বলতে পারব না। আমি ঐ সময় সাথিয়া উপজেলা পরিষদ বা সাথিয়া উন্নয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলাম না। আমি ২০০৩ সালে সাথিয়া উপজেলার শান্তি শৃংখলা কমিটির সদস্য ছিলাম কিনা তা আমার মনে নাই, তবে আমি ঐ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। করমজা গ্রাম আমার ইউনিয়নের অন্তর্গত নয়। আমাদের গ্রাম থেকে করমজা গ্রাম আনুমানিক ১৫ কিলোমিটার দূরে। ঐ স্থানে যাওয়ার জন্য তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাঈদ সাহেবই আমাকে খবর দিয়েছিল। ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসের আগ পর্যন্ত আমাকে কেউ করমজা গ্রামের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে নাই, তবে আমি আগে থেকেই ঘটনাটি জানতাম। যেহেতু করমজা আমার ইউনিয়নের নয় তাই আমি প্রশাসনকে ঐ ঘটনাটি জানাইনি। ১৯৯১ সালে অধ্যাপক আবু সাঈদকে পরাজিত করে নিজামী সাহেব এম.পি হয়েছিলেন। তবে ঐ সময় নিজামী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর সাধারন সম্পাদক নাকি আমীর ছিলেন তা আমি বলতে পারব না। ১৯৯৬ সালে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব নিজামী সাহেবকে পরাজিত করে ঐ এলাকায় এম.পি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসের হাড়গোড় উদ্ধারের ঘটনার ২/১ দিন আগে নিজামী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হয়েছিলেন কিনা তা আমার জানা নাই। ঐ সময় নির্বাচন সমাগত থাকলে নির্বাচনি আমেজ থাকার কথা। ২০০১ সালের নির্বাচনে নিজামী সাহেব আবু সাঈদ সাহেবকে হারিয়ে আমাদের এলাকার এম.পি নির্বাচিত হয়েছিলেন কিনা তা আমার জানা নাই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হওয়ায় এবং ঐ এলাকায় আবু সাঈদ সাহেবের বিপক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন এই আশংকায় অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের সাথে আমি এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা নিজামী সাহেবের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য হাড়গোড় উদ্ধারের কল্প কাহিনী তৈরী করেছিলাম, এটা সত্য নয়।  মেঘা ঠাকুরের মেয়ে পাবনায় বসবাস করে কিনা তা আমি জানি না। মেঘা ঠাকুরের কোন আত্মীয় স্বজন ঐ এলাকায় বসবাস করেন কিনা তাও আমি জানি না।
১৯৭১ সালের জহরুল হক মাস্টারের বাড়িতে নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে রাজাকার আলবদর ও পাক বাহিনী জহুরুল হককে ধরতে যাওয়ার ঘটনা জহুরুল হক নিজেই এই ঘটনার ২/৩ দিন পর আমাকে বলেছিল। সাথিয়া থানা এলাকায়ই আমাকে ঐ ঘটনা সম্পর্কে বলেছিল, তবে কোন স্থানে বলেছিল তাহা আমার স্মরন নাই।
রূপসী এলাকা আমাদের এলাকা থেকে প্রায় দুই মাইল দূরে। আমার গ্রাম থেকে পাবনা শহর বা ধূলাউড়ি বাজারে যেতে রূপসী গ্রাম পড়ে না। আমরা সাধারনত ধূলাউড়ি বাজারে হাট বাজার করতাম। আমি যে স্কুলে পড়তাম সে স্কুলে যাওয়ার পথে রূপসী গ্রাম পড়ে না। বাউশগাড়ী এবং ডেমরা রূপসী গ্রামের পাশাপাশি অবস্থিত। রূপসী, বাউশগাড়ী ও ডেমরা গ্রামের ঐ সময়ের অধিবাসী কে কোন দল করতো তা আমি বলতে পারবো না। আমাদের স্কুলে যেহেতু চারজন শিক্ষক ছিল সেহেতু অনুমান করে বলছি রূপসী স্কুলেও চারজন শিক্ষক থাকতে পারে। আইনুল হক ছাড়া রূপসী স্কুলের অন্য শিক্ষকদের নাম আমি বলতে পারব না। আইনুল হক রূপসী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন কিনা আমার জানা নাই, তবে তিনি সেই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। আমি আমার মূল জবানবন্দীতে আইনুল হক সাহেবকে ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেছিলাম অনুমান করে। মুক্তিযোদ্ধা শামসুল রহমান ওরফে নান্নুকে আমি ১৯৭১ সালে বা আগে থেকেই চিনতাম, তার বাড়ি সাথিয়া থানায়। উনার সাথে ভারতে ট্রেনিং নেওয়ার সময় দেখা হয় নাই। উনার পাবনা শহরের বাসা আমি চিনতাম না। নান্নু সাহেবের সম্বন্ধি এ্যাডভোকেট এ.কে.এম শামসুল হুদাকে আমি চিনি না।
ভারতে ইয়থ ক্যাম্প ট্রেনিং নেওয়ার সময় আমাদের এলাকার আনছার, লাল মোহন, আনন্দ গোপাল সহ আরো অনেকে সেই ক্যাম্পে ছিল। সেখানে ট্রেনিং নেওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান সাহেবের (গলাকাটা) সাথে আমার দেখা হয়নি।  আমার সাথে মুখলেছুর রহমান ওরফে রঞ্জু, কুদ্দুস, সালাম, মাজেদ, মুকছেদ ও জলিল আমাদের ট্রেনিং ক্যাম্পে ছিল না।
রূপসী, বাউশগাড়ি ও ডেমরা গ্রামে ১৯৭১ সালে যাদের বয়স ১৫ বৎসরের বেশি ছিল তাদের অনেকেই এখনো জীবিত থাকতে পারেন। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে আসার ২দিন আগেও আমি রূপসী, বাউশগাড়ী ও ডেমরা বাজারে গিয়েছি। রূপসী, বাউশগাড়ি, ডেমরা ও ধূলাউড়ি গ্রামে আমার থেকে বয়সে বড় লোক এখনও জীবিত আছেন। ধূলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক বাহিনী ও তাদের সহযোগী বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয় রাত অনুমান ২.৩০/৩.০০ টার দিকে এবং ফজরের সময় পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। ফজরের আযানের পর পরই আমরা ধূলাউড়ি গ্রামে পৌছাই। ঐ সময় আমি এবং তাদের সহযোগিরা চলে গিয়েছিল।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বাংলাদেশের একজন পরিচিত ব্যক্তি। ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বাংলাদেশে থাকতেন জানি, তবে কখন কোথায় থাকতেন তা জানি না। ১৯৭১ সালে সাথিয়ায় কোন কলেজ ছিল না। শাহজাহান সাহেবের আহত হওয়ার ঘটনাটি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পরই দেখেছি। মুক্তিযোদ্ধা মুখলেছ ঐ যুদ্ধেই মারা গিয়েছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধা মাজেদ ঐ যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন কিনা আমার স্মরন নাই।
১৯৭১ সালে করমজা গ্রামের ঘটনা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে ঘটে মর্মে আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলি নাই, এটা সত্য নয়।
মেঘা ঠাকুরের মেয়ে এবং তার ছেলের বউকে ধর্ষণ করা হয়, এ কথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলি নাই, এটা সত্য নয়।
১৯৭১ সালের ১২ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হককে রাজাকার, আলবদর ও পাক বাহিনী নিজামী সাহেবের “নেতৃত্বে” ধরতে যায় একথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, এটা সত্য নয়।
মামলার কার্যক্রম আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পাঁচজন সাক্ষী তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছে। আগামীকাল এ বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।
জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আজমেদ আনসারী, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, আসাদ উদ্দিন প্রমুখ।


আইনজীবীর অশ্লীল মন্তব্যে উত্তেজনা :
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলতাফ হোসেন কর্তৃক মিজানুল ইসলামের প্রতি অশ্লীল  মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনালে উত্তেজনা দেখা দেয়। ট্রাইব্যুনাল আলতাফ হোসেন এর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আলতাফ হোসেন মাওলানা নিজামীর পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে কিছু অশালীন মন্তব্য (লেখার অনুপযুক্ত) করেন তার পাশের আরেক আইনজীবীর কাছে। সেকথা মিজানুল ইসলাম এবং মাওলানা নিজামীর পক্ষে অপর আইনজীবী তাজুল ইসলামের কানে যায় । মিজানুল ইসলাম তখন ক্ষোভের সাথে বলেন, আপনারা যে অভদ্র, অশভ্য ভাষা ব্যবহার করলেন তার জবাব দেয়ার ক্ষমতা এবং যোগ্যতা আমাদের আছে। কিন্তু আমরা এখানে ঝগড়া বা বাহাস করতে আসিনি। এসময়  রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী  আবার কিছু একটা বলায় অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম দাড়িয়ে ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সবাই শুনেছেন তারা কি অশালীন ভাষা ব্যবহার করেছে। প্রয়োজনে আবার  রেকর্ড শুনতে পারেন আপনারা । তখন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা কেউ কিছূই শুনিনি। তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা সবাই শুনেছি। তখন বিচারপতি জাহঙ্গীর হোসেন তাজুল ইসলামের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা আগেও লক্ষ্য করেছি আপনি  ট্রাইব্যুনালকে আঘাত করে কথা বলেন। আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আমরা  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কথা শুনেও বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি?  এসময় অপর বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন, আমরা আসলেই কিছু শুনিনি তাজুল সাহেব। আমরা তিনজন লোক কি মিথ্যা বলব? এসময় অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম তাজুল ইসলামকে থামানোর চেষ্টা করেন বারবার। তখন  তাজুল ইসলাম বেঞ্চে বসেন। তখন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন তাজুল ইসলাম এর  প্রতি উদ্দেশ্য করে বলেন,  আপনি যেভাবে বলেছেন বিষয়টা তা ঠিক নয়। আপনরা ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে নিজেরা ট্রাইব্যুনালকে আক্রমন শুরু করে দিয়েছেন। আমরা তিনজন এখানে অনেক সময় অনেক কথা বলি। তা কি আপনরা শুনতে পান? আপনাদেরও সব কথা আমরা শুনতে পাইনা। এসময় বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন, আমাদের নজর থাকে সাক্ষীর প্রতি। বেঞ্চে বসে কোন কোন আইনজীবী কার সাথে কি বলে  তার প্রতি আমাদের লক্ষ্য থাকেনা সব সময়।
এরপর  তাজুল ইসলাম  দাড়িয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর একটি অশালানী মন্তব্য সম্পর্কে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করে বলেন,  রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইজীবী মিজানুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তিনি প্রস্রাব করলে মিজানুল ইসলাম তাতে ভেসে যাবেন। তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবী  মিজানুল ইসলামকে লক্ষ্য করে আরো একটি বাক্য বলেছেন তা উচ্চারনের যোগ্য নয়।
তখন  ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলতাফ হোসেনের প্রতি  লক্ষ্য করে ক্ষোভের সাথে বলেন, আপনি এ ধরনের কথা বলেছেন? তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী দাড়িয়ে বলেন, তারা  পারসোনাল কথাবার্তা বলছিল। সাইড টকিং করছিল। মোহাম্মদ আলী আলতাফ হোসেনের পক্ষ থেকে আদালতের প্রতি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এসময় বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, এ ধরনের ভাষা এখানে গ্রহণ করা হবেনা। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মিস্টার মোহাম্মদ আলী, আপনারা যদি কোর্টকে সহায়তা করতে পারেন তাহলে আসবেন। আর তা না হলে এখানে আসবেননা। বিচারপতি আনোয়ারুল হক  আলতাফ হোসেনকে লক্ষ্য করে বলেন, আপনারা যে ভাষা ব্যবহার করলেন তা তো কোন আইনজীবীর ভাষা হতে পারেনা। এমনকি কোন ভদ্রলোকেরও ভাষা হতে পারেনা এটি।
এরপর তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের সাথে তার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, এ ধরনের কথা কানে আসার পর স্বাভাবিকভাবে আমাদের উত্তেজিত করে। আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই ছিল আমার মূল লক্ষ্য । আমার প্রকাশ ভঙ্গিটা হয়ত একটু অন্যরকম হয়েছে।

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৭ তম সাক্ষীর জেরা শেষ

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ১৭ তম সাক্ষী জামাল উদ্দিনের জেরা আজ শেষ হয়েছে। গতকাল তার জবানবন্দী শেষে জেরা শুরু করেন মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।

আজকের জেরা : ২৬/০৮/২০১৩
জেরায় আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী যে উত্তর বলেন তা নিম্নরূপ:
ধূলাউড়িতে যেদিন যেই বাড়িতে থাকতাম সেই দিন ঐ বাড়িটি ক্যাম্প হিসাবে বিবেচিত হতো। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের পুরো সময়টাই ধূলাউড়িতে ছিলাম। আমার যতদূর মনে পড়ে আবুল হোসেন ফকির নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিল এবং তিনিই ঐ এলাকার মেম্বার ছিলেন। নভেম্বর মাসে সর্বপ্রথম ধূলাউড়িতে কার বাড়িতে ছিলাম তাহা দীর্ঘদিন আগের ঘটনা হওয়ায় আমার স্মরন নাই। নভেম্বর মাসে যাদের বাড়িতে ছিলাম তাদের মধ্যে একজনের নাম আমার মনে আছে তিনি হলেন বিশ্বাস বাড়ির খন্দকার নূরুল ইসলাম, বর্তমানে তিনি মৃত। আমি ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বর ধূলাউড়িতে ছিলাম না, ইছামতি নদীর ওপারে রামকান্তপুরে ছিলাম। ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই ঐদিন ভোর রাত্রে ধূলাউড়ি গ্রামে এসেছিলাম। ডা: আব্দুল আউয়ালের নাম আমি শুনেছি, তার বাড়ি ধূলাউড়ি গ্রামে স্কুলের পাশে। উনার বাড়িতেও আমরা গিয়েছিলাম, উনাকে গিয়ে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই এবং তার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আব্দুল কুদ্দুস নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা আমাদের গ্রুপে ছিলেন সে আমাদের মধ্যে বয়সে ছোট ছিলেন। স্বাধীনতার অনেক পরে তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। বিজয় অর্জনের পর পরই ডা: আব্দুল আউয়ালের হত্যাকান্ডের বিষয়ে কোন মামলা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। মাস্টার আয়নাল হক কোন মুক্তিযোদ্ধা নয়, তার বাড়ি বাউশগাড়ি। তার বাড়িতে আমাদের যাতায়াত ছিল। ঐ বাড়ির তার চাচাতো ভাই আমান উল্লাহকে আমি চিনি সে একজন কুখ্যাত রাজাকার, সে এখনো জীবিত আছে এবং বর্তমানে সে মানসিক ভারসাম্যহীন। ধূলাউড়ি ঘটনার জন্য বিশেষত ডা: আউয়ালকে হত্যা করার দায়ে আমান উল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমার জানা মতে আরেকজন রাজাকার হাবিবুর রহমান জীবিত আছে, মাজেদ মারা গেছে এবং অন্য রাজাকারদের নাম অনেকদিন আগের ঘটনা হওয়ায় আমার স্মরন নাই। ধূলাউড়ির ঘটনা যারা স্বচক্ষে দেখেছে তাদের অনেকে এখনো জীবিত আছে। স্থানীয় যে সমস্ত রাজাকার এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তাদের অনেকে নাম প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে বলেছে। স্থানীয় রাজাকার যারা ধূলাউড়ি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল তাদেরকে বিচারের জন্য সোপর্দ করি নাই, কারণ এ ধরনের প্রশাসনিক দায়িত্ব আমার ছিল না। আমরা স্বাধীনতার পর পরই আমাদের ক্যাম্প থেকে স্থানীয় রাজাকারদের ধরতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ধরতে পারিনি। কারণ তারা পলাতক ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে আমার ইউনিয়নে কোন রাজাকার ধরা পড়েছিল কিনা তাহা আমার মনে নাই। সাথিয়া থানাধীন নন্দনপুরের লুৎফর রহমান রাজাকারকে আমি চিনি, তবে স্বাধীনতার পর তাকে আটক করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই।
যে সমস্ত রাজাকাররা ব্রীজ কালভার্ট পাহারা দিত, ঐ এলাকার লোক কিনা তাহা আমার জানা নাই। ভিটাপাড়া আমার এলাকা থেকে আনুমানিক ১০/১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সোলাপাড়িয়া বাকচাদপুরও আমার বাড়ি থেকে ১০/১১ কিলোমিটার দূরে তবে ভিন্ন দিকে। এই দুই এলাকার স্বাধীনতার পূর্ব থেকে আমার কম বেশি যাতায়াত ছিল। ঐ দুই এলাকা থেকে যে ০৯ জন রাজাকারকে ধরা হয়েছিল তাদের মধ্যে দুই জন রাজাকার জীবিত আছে, তাদের মধ্যে একজন মকবুল এবং আরেকজন জামাল। সম্ভবত ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে সোলাপাড়িয়ার বাকচাদপুর ব্রীজ অপারেশন করতে এই দুইজন রাজাকার সহ মোট চারজন আমাদের নিকট আত্মসমর্পন করেছিল। ভিটাপাড়া ব্রীজ অপারেশনে বর্ষাকালে গিয়েছিলাম। তবে মাস আমি বলতে পারব না। মূলত আমরা ভিটাপাড়া ব্রীজ অপারেশনে যাই নাই আমাদেরকে ব্রীজের নিচ দিয়ে যাওয়ায় বাধা দিলে আমরা কৌশলে তিন/চার জন রাজাকারকে ধরে নিয়ে যাই। ধৃত রাজাকাররা আমাদের কাকুতি মিনতি করে বলে যে, তারা পেটের দায়ে নিজামী সাহেব ও পিস কমিটির লোকদের নির্দেশে রাজাকারে নাম লিখেছে, তাদের অস্ত্র রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেই, তাদের নাম এ মূহুর্তে আমার মনে নাই এবং ঐ অস্ত্র নতুন তিন/চার জন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রদান করি। এই নতুন তিন/চার জন মুক্তিযোদ্ধা ভিটাপাড়ার নয়, সাথিয়া এলাকার ছিল।
২০০০ সালে ডিসেম্বর মাসে করমজা গ্রাম থেকে হাড়গোড় উদ্ধারের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। যে সমস্ত লোক ঐ ঘটনা সম্পর্কে আমাদেরকে জানায় তাদের মধ্যে চতুর আলী চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা আবু সামা এবং আরো অনেকেই ছিলেন। এই চতুর আলী চেয়ারম্যান ঐ এলাকার পিস কমিটির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোদা বক্সের ভাই কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। আমি ঐ সময় সাথিয়া উপজেলা পরিষদ বা সাথিয়া উন্নয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলাম না। আমি ২০০৩ সালে সাথিয়া উপজেলার শান্তি শৃংখলা কমিটির সদস্য ছিলাম কিনা তাহা আমার মনে নাই, তবে আমি ঐ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। করমজা গ্রাম আমার ইউনিয়নের অন্তর্গত নয়। আমাদের গ্রাম থেকে করমজা গ্রাম আনুমানিক ১৫ কিলোমিটার দূরে। ঐস্থানে যাওয়ার জন্য তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাঈদ সাহেবই আমাকে খবর দিয়েছিল। ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসের আগ পর্যন্ত আমাকে কেউ করমজা গ্রামের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে নাই, তবে আমি আগে থেকেই ঘটনাটি জানতাম। যেহেতু করমজা আমার ইউনিয়নের নয় তাই আমি প্রশাসনকে ঐ ঘটনাটি জানাইনি। ১৯৯১ সালে অধ্যাপক আবু সাঈদকে পরাজিত করে নিজামী সাহেব এম.পি হয়েছিল। তবে ঐ সময় নিজামী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর সাধারন সম্পাদক নাকি আমীর ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৯৬ সালে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব নিজামী সাহেবকে পরাজিত করে ঐ এলাকায় এম.পি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসের হাড়গোড় উদ্ধারের ঘটনার ২/১ দিন আগে নিজামী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ঐ সময় নির্বাচন সমাগত থাকলে নির্বাচনি আমেজ থাকার কথা। ২০০১ সালের নির্বাচনে নিজামী সাহেব আবু সাঈদ সাহেবকে হারিয়ে আমাদের এলাকার এম.পি নির্বাচিত হয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হওয়ায় এবং ঐ এলাকায় আবু সাঈদ সাহেবের বিপক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন এই আশংকায় অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের সাথে আমি এবং আওয়ামী ীগের অন্যান্য নেতারা নিজামী সাহেবের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য হাড়গোড় উদ্ধারের কল্প কাহিনী তৈরী করেছিলাম, ইহা সত্য নহে। মেঘা ঠাকুরের মেয়ে পাবনায় বসবাস করে কিনা তাহা আমি জানি না। মেঘা ঠাকুরের কোন আত্মীয় স্বজন ঐ এলাকায় বসবাস করেন কিনা তাহাও আমি জানি না। দাস এবং হালদার হিন্দু সম্প্রদায়ের নি¤œ গোত্র বা বর্ণের পদবী কিনা তাহা হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞান না থাকায় বলতে পারব না।
১৯৭১ সালের জহরুল হক মাস্টারের বাড়িতে নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে রাজাকার আলবদর ও পাক বাহিনী জহুরুল হককে ধরতে যাওয়ার ঘটনা জহুরুল হক নিজেই এই ঘটনার ২/৩ দিন পর আমাকে বলেছিল। সাথিয়া থানা এলাকায়ই আমাকে ঐ ঘটনা সম্পর্কে বলেছিল, তবে কোন স্থানে বলেছিল তাহা আমার স্মরন নাই।
রূপসী এলাকা আমাদের এলাকা থেকে প্রায় দুই মাইল দূরে। আমার গ্রাম থেকে পাবনা শহর বা ধূলাউড়ি বাজারে যেতে রূপসী গ্রাম পড়ে না। আমরা সাধারনত ধূলাউড়ি বাজারে বাজার করতাম। আমি যে স্কুলে পড়তাম সে স্কুলে যাওয়ার পথে রূপসী গ্রাম পড়ে না। বাউশগাড়ী এবং ডেমরা রূপসী গ্রামের পাশাপাশি অবস্থিত। রূপসী, বাউশগাড়ী ও ডেমরা গ্রামের ঐ সময়ের অধিবাসী কে কোন দল করতো তাহা আমি বলতে পারবো না। আমাদের স্কুলে যেহেতু চারজন শিক্ষক ছিল সেহেতু অনুমান করে বলছি রূপসী স্কুলেও চারজন শিক্ষক থাকতে পারে। আইনুল হক ছাড়া রূপসী স্কুলের অন্য শিক্ষকদের নাম আমি বলতে পারব না। আইনুল হক রূপসী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন কিনা আমার জানা নাই, তবে তিনি সেই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। আমি আমার মূল জবানবন্দীতে আইনুল হক সাহেবকে ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেছিলাম অনুমান করে। মুক্তিযোদ্ধা শামসুল রহমান ওরফে নান্নুকে আমি ১৯৭১ সালে বা আগে থেকেই চিনতাম, তার বাড়ি সাথিয়া থানায়। উনার সাথে ভারতে ট্রেনিং নেওয়ার সময় দেখা হয় নাই। উনার পাবনা শহরের বাসা আমি চিনতাম না। নান্নু সাহেবের সম্বন্ধি এ্যাডভোকেট এ.কে.এম শামসুল হুদাকে আমি চিনি না।
ভারতে ইয়থ ক্যাম্প ট্রেনিং নেওয়ার সময় আমাদের এলাকার আনছার, লাল মোহন, আনন্দ গোপাল সহ আরো অনেকে সেই ক্যাম্পে ছিল। সেখানে ট্রেনিং নেওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান সাহেবের (গলাকাটা) সাথে আমার দেখা হয় নাই। আমার সাথে মুখলেছুর রহমান ওরফে রঞ্জু, কুদ্দুস, সালাম, মাজেদ, মুকছেদ ও জলিল আমাদের ট্রেনিং ক্যাম্পে ছিল না।
রূপসী, বাউশগাড়ি ও ডেমরা গ্রামে ১৯৭১ সালে যাদের বয়স ১৫ বৎসরের বেশি ছিল তাদের অনেকেই এখনো জীবিত থাকতে পারেন। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে আসার ২দিন আগেও আমি রূপসী, বাউশগাড়ী ও ডেমরা বাজারে গিয়েছি। রূপসী, বাউশগাড়ি, ডেমরা ও ধূলাউড়ি গ্রামে আমার থেকে বয়সে বড় লোক এখনও জীবিত আছেন। ধূলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক বাহিনী ও তাদের সহযোগী বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয় রাত অনুমান ২.৩০/৩.০০ টার দিকে এবং ফজরের সময় পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। ফজরের আযানের পর পরই আমরা ধূলাউড়ি গ্রামে পৌছাই। ঐ সময় আমি এবং তাদের সহযোগিরা চলে গিয়েছিল।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বাংলাদেশের একজন পরিচিত ব্যক্তি। ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বাংলাদেশে থাকতেন জানি, তবে কখন কোথায় থাকতেন তা জানি না। ১৯৭১ সালে সাথিয়ায় কোন কলেজ ছিল না। শাহজাহান সাহেবের আহত হওয়ার ঘটনাটি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পরই দেখেছি। মুক্তিযোদ্ধা মুখলেছ ঐ যুদ্ধেই মারা গিয়েছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধা মাজেদ ঐ যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন কিনা আমার স্মরন নাই। মুখলেছ নামে অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা মাজেদ পাক আর্মি কর্তৃক ধৃত হয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই।
১৯৭১ সালে করমজা গ্রামের ঘটনা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে ঘটে মর্মে আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
মেঘা ঠাকুরের মেয়ে এবং তার ছেলের বউকে ধর্ষণ করা হয়, এ কথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
১৯৭১ সালের ১২ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হককে রাজাকার, আলবদর ও পাক বাহিনী নিজামী সাহেবের “নেতৃত্বে” ধরতে যায় একথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
“রূপসী, বাউসগাড়ী ও ডেমড়ায় মে মাসের প্রথম দিকে তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা মতিউর রহমান নিজামী স্থানীয় জামায়াত ও ছাত্র শিবির নিয়া রূপসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিটিং করেন আলবদর রাজাকার গঠন করার জন্য। যাহা আমি ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইনুল হক ও শামসুল রহমান ওরফে নান্নুর নিকট থেকে জানতে পারি।” বা “এছাড়া আরো প্রায় ২/৩শত বাড়ি ঘর বাজার সহ পুড়িয়ে দেয়। সেখানে হিন্দু লোকের বসবাস বেশি ছিল সেই হিন্দুদের বাড়ি-ঘর লুটপাট করে” বা “১৯৭১ সালের ২৭ শে নভেম্বর ধূলাউড়ি গ্রামের আশে পাশে ৩/৪টি গ্রুপে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করছিলাম। এই সংবাদ পেয়ে রাত্রি আনুমানিক আড়াইটা/তিনটার দিকে পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর জানা যায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে ঘিরে ফেলে” বা “ঐ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছে, তার নাম শাহজাহান আলী। সে গলা কাটা শাহজাহান আলী বলে পরিচিত। তার কাছে আরো জানা যায় যে, তাকে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে ছাত্তার রাজাকার তাকে জবাই করে, তার কাছে আরো জানা যায় যে, সেই সময় নিজামী সাহেবের উপস্থিতিতে এবং নিজামী সাহেবের নির্দেশে সাত্তার রাজাকার তাকে জবাই করে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে শাহজাহান আলী বেঁচে  যায়।” বা “এই হত্যা করেই খান্ত হয়নি, উপরোন্ত হত্যা করে তার লিঙ্গ কেটে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে যাহা মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডাার নিজাম উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন ও তৎকালীন হেডমাস্টার রমিছ উদ্দিন সাহেবের নিকট থেকে জানতে পারি। এদের কাছে আরো জানতে পারি যে, এই ঘটনার সময় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবও নাকি উপস্থিত ছিলেন।” একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
১৯৭১ সালের ১৪ই মে ভোর বেলায় রূপসী, ডেমড়া ও বাউসগাড়ী গ্রামে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের ‘নেতৃত্বে’ পাক বাহিনী, স্থানীয় রাজাকার ও আলবদররা ঘেরাও করে গুলি করে নিরস্ত্র ৪৫০ জনকে হত্যা করে। একথাগুলির মধ্যে “নেতৃত্বে” কথাটি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
আমি বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ার কারণে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের দমন পীড়নের অংশ হিসাবে নিজামী সাহেবকে জড়িয়ে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করেছি, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ১৯৭১ সালে কোন সময় পাবনায় ছিলেন না, ইহা সত্য নহে। (জেরা সমাপ্ত)
মামলার কার্যক্রম আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পাঁচজন সাক্ষী তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছে। আগামীকাল এ বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।
জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আজমেদ আনসারী, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, আসাদ উদ্দিন প্রমুখ।

রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে দুই সাক্ষীর পরষ্পরবিরোধী তথ্য

মেহেদী হাসান, ২৫/৮/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আজ ১৭ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন মো : জামাল উদ্দিন। তিনি জেরায় বলেছেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি কোন সময় টাঙ্গাইল জেলায় ও কুড়িগ্রামের রৌমারী এলাকায় যাই নাই।”

সাক্ষী জামাল উদ্দিন জেরায় আরো  বলেছেন তার গ্রুপে যেসব মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন তাদের মধ্যে একজন  হলেন জানে আলম ওরফে জানু  । ১৯৭১ সালের জুন মাসে ভারতের ইয়থ ক্যাম্পে ট্রেনিং নেওয়ার সময় থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত জানে আলম জানু তার সাথে  একই গ্রুপে যুদ্ধ করেছেন।

মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, আজকের সাক্ষী জামাল উদ্দিন যে জানে আলম ওরফে জানুর নাম বললেন তিনি  গত গত ১৯ আগস্ট ১৬ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে।  ট্রাইব্যুনালে তিনি তার জবানবন্দীর এক অংশে বলেন, “কয়েকদিন পর আমরা আবার সংঘবদ্ধ হয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী বর্ডার দিয়ে ভারতে চলে যাই। সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে আমরা আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশে প্রবেশ করে টাংগাইলের শাহাজানির চরে অবস্থান নেই।”

মিজানুল ইসলাম বলেন, জানে আলম বললেন তারা টাঙ্গাইল এবং রৌমারি গেছেন আর আজকের সাক্ষী জামাল উদ্দিন বললেন তিনি ১৯৭১ সালে কখনো টাঙ্গাইল এবং রৌমারি যাননি। অথচ তিনি অন্য প্রশ্নে আবার স্বীকার করেছেন জানে আলম ১৯৭১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তার সাথে থেকে একত্রে যুদ্ধ করেছে।

১৭ তম সাক্ষীর জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ জামাল উদ্দিন, আমার বয়স আনুমানিক ৬০ বৎসর। আমার ঠিকানা গ্রাম- ডহরজানি, থানা- সাঁথিয়া, জেলা- পাবনা।
আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সাথিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার। ১৯৭১ সালে আমি ধূলাউড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পরীক্ষার্থী ছিলাম। আমি মহান মুক্তিযোদ্ধার সময়ে ফরিদপুর, বেড়া, ভাংগুরা, শাহজাদপুর এবং সাথিয়া থানার বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ করি। ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসে কইজুড়ি ব্রিজ অপারেশনে রাজাকারদের পরাস্থ করে তাদেরকে অস্ত্রসহ ধৃত করি। এরপর সাথিয়া থানার ভিটামাটি ব্রীজ অপারেশনে রাজাকারদের পরাস্থ করে অস্ত্রসহ পাঁচজনকে ধৃত করি। সাথিয়া সোলাপাড়িয়া বাকচাঁদপুর ব্রীজ অপারেশনে চারজন রাজাকারকে ধৃত করি।
২০০০ সালে ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের নেতৃত্বে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় করমজা গ্রামে মেঘা ঠাকুরের বাড়ির পাশে একটি গর্তের মধ্যে থেকে মানুষের কিছু মাথার খুলী এবং হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়। সেখানে উপস্থিত লোকজনদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মে মাসে ফজরের নামাজের পরে পাক বাহিনী, স্থানীয় রাজাকাররা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে করমজা গ্রামে মেগা ঠাকুরের বাড়ি ঘেরাও করে নিরস্ত্র নিরীহ ৯ জনকে হত্যা করে। সেখানে আরো জানা যায় যে, মেগা ঠাকুরের মেয়ে এবং তার ছেলের বৌকে ধর্ষণ করা হয়।

১৯৭১ সালের ১২ই নভেম্বর হাড়িয়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হককে রাজাকার, আলবদর ও পাকবাহিনী নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে ধরতে যায়। ধরতে গিয়ে জহুরুল হককে না পেয়ে ঐ গ্রামের কয়েকটি হিন্দু বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং দুইজন হিন্দু মহিলাকে ধর্ষণ করে। রূপসী, বাউসগাড়ী ও ডেমরায় মে মাসের প্রথম দিকে তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা মতিউর রহমান নিজামী স্থানীয় জামায়াত ও ছাত্র শিবির নিয়া রূপসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিটিং করেন আলবদর রাজাকার গঠন করার জন্য। যাহা আমি ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইনুল হক ও শামসুর রহমান ওরফে নান্নুর নিকট থেকে জানতে পারি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ১৪ই মে ভোর বেলায় রূপসী, ডেমরা ও বাউসগাড়ী গ্রামে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে পাক বাহিনী, স্থানীয় রাজাকার ও আলবদররা ঘেরাও করে গুলি করে নিরস্ত্র ৪৫০ জনকে হত্যা করে। এছাড়া আরো প্রায় ২/৩শত বাড়ি ঘর বাজার সহ পুড়িয়ে দেয়। সেখানে হিন্দু লোকের বসবাস বেশি ছিল সেই হিন্দুদের বাড়ি-ঘর লুটপাট করে এবং আরো সেখানে অনেক হিন্দু মুসলমান মেয়েকে ধর্ষণ করে।
১৯৭১ সালের ২৭ শে নভেম্বর ধূলাউড়ি গ্রামের আশে পাশে ৩/৪টি গ্রুপে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করছিলাম। এই সংবাদ পেয়ে রাত্রি আনুমানিক আড়াইটা/তিনটার দিকে পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর জানা যায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে ঘিরে ফেলে এবং গুলি করে মুক্তিযোদ্ধা ৯ জন এবং ঐ পাড়ার ১৪ জন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে এবং ঐ জায়গায় বাড়ি ঘর অগ্নি সংযোগ করা হয়। ঐ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছে, তার নাম শাহজাহান আলী। সে গলা কাটা শাহজাহান আলী বলে পরিচিত। তার কাছে আরো জানা যায় যে, তাকে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে ছাত্তার রাজাকার তাকে জবাই করে, তার কাছে আরো জানা যায় যে, সেই সময় নিজামী সাহেবের উপস্থিতিতে এবং নিজামী সাহেবের নির্দেশে সাত্তার রাজাকার তাকে জবাই করে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে শাহজাহান আলী বেঁচে  যায়। এই অপারেশন শেষে যাওয়ার পথে ধূলাউড়ি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকে পাকবাহিনী, রাজাকার ও আলবদররা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র সামাদকে গ্রেনেডসহ ধৃত করে সাথিয়া থানায় নিয়ে যায় এবং থানার পাশে বেল গাছে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে বেয়নট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে। এই হত্যা করেই খান্ত হয়নি, উপরোন্ত হত্যা করে তার লিঙ্গ কেটে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে যাহা মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডাার নিজাম উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন ও তৎকালীন হেডমাস্টার রমিছ উদ্দিন সাহেবের নিকট থেকে জানতে পারি। এদের কাছে আরো জানতে পারি যে, এই ঘটনার সময় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবও নাকি উপস্থিত ছিলেন।
আমি একটি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের কমান্ডার হিসাবে ধৃত রাজাকার, আলবদরদের নিকট থেকে জানতে পাই যে, পাবনা জেলা সাথিয়া থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় যে সমস্ত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে উহা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পরামর্শে ও নির্দেশেই হয়েছে।



জেরা :
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমেদ আনসারী, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন ও আসাদ উদ্দিন প্রমুখ।
সাক্ষী জেরায় বিভিন্ন প্রশ্নের যে জবাব দেন তা এখানে তুলে ধরা হল

আমি এক সময় ধূলাউড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। আমি এস.এস.সির পর আর পড়াশোনা করার সুযোগ পাই নাই। ইহা সত্য নহে যে, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অস্ত্র জমা না দেওয়ার কারণে আমি গ্রেফতার হয়েছিলাম, আমি জীবনে কখনও গ্রেফতার হই নাই। বর্তমান সরকারের আমলে আমাকে ধূলাউড়ি কাওছারিয়া কামিল মাদ্রাসার সভাপতি করা হয়েছে। আমার নিজের পৃথক কোন কক্ষ নাই, প্রিন্সিপাল সাহেবের পাশেই আমার বসার ব্যবস্থা আছে। মাজেদা খাতুন, স্বামী মোয়াজ্জেম হোসেনকে আমি চিনি না। আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম মজিদা খাতুন, মাজেদা খাতুন নয়। ইহা সত্য নহে যে, মজিদা খাতুন অন্যের স্ত্রী থাকা অবস্থায় তার সাথে আমি প্রেম করে বিয়ে করেছি। ইহা সত্য নহে যে, আমার স্ত্রী মজিদার আমার সাথে বিয়ের পূর্বে কোন সন্তান ছিল। ৩ ভাই ৭ বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। আমি বাড়ির নিকটস্থ চরপাড়া প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়া করেছি। ধূলাউড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে আমার পড়াকালীন সময়ে ছাত্র রাজনীতি ছিল না। আমি জামায়াতে ইসলামীর জনসভায় কোন সময় যোগদান করেছিলাম কিনা তাহা আমার স্মরণ নাই। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে কোন জনসভা আমাদের এলাকায় হয়েছিল কিনা তাহা আমার মনে পড়ে না। আমাদের বাড়ি থেকে ধূলাউড়ি উচ্চ বিদ্যালয় এবং কাউছারিয়া কামিল মাদ্রাসার দূরত্ব ১ কিঃমিঃ হতে পারে। ১৯৭১ সালে এটি দাখিল বা কামিল মাদ্রাসা ছিল কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। আমি স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য ট্রেনিং নেই নাই, তবে আমার আনছার ট্রেনিং ছিল। আমি যখন ট্রেনিং নেই তখন আনছার এ্যাডজুটেন্ট কে ছিল তাহা আমার স্মরন নাই, কারন তাহা অনেক দিনের আগের কথা। সম্ভবত ১৯৬৯ সালে আমি আনছার ট্রেনিং নিয়েছিলাম। আনছার থাকা অবস্থায় সরকারী কোন ডিউটিতে আমি যাই নাই। ১৯৭১ সালে আমাদের ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন সম্ভবত আবুল কাশেম সরদার। ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কে ছিল তাহা স্মরন করতে পারছি না। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অর্থাৎ ২৫শে মার্চের পর থেকে ১৯শে এপ্রিল পর্যন্ত সাথিয়ার কোন অঞ্চলে আর্মিদের ক্যাম্প ছিল তাহা আমার জানা নাই। ২৫শে মার্চ থেকে ১৯শে এপ্রিল পর্যন্ত আমি নিজ বাড়িতেই ছিলাম। ১৯৭১ সালের ১৯শে এপ্রিলের আগ পর্যন্ত আমি কোন প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহন করি নাই। ২৫শে মার্চ থেকে ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান আর্মিরা আমাদের এলাকার রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে আমি দেখেছি। ২৫শে মার্চ থেকে ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান আর্মিদের গাড়িতে স্বাধীনতা বিরোধী দালালরা থাকতো তবে তারা রাজাকার না আলবদর তাহা আমার জানা ছিল না। খোদা বক্স চেয়ারম্যান ঐ দালালদের মধ্যে একজন ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমি বেড়ার একজন আসাদের নাম শুনেছি সে পাকিস্তানীদের দালালী করত তবে তাকে আমি কখনও দেখি নাই। আমাদের বাড়ি থেকে মনমথপুর আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আমাদের বাড়ি থেকে মনমথপুরের মধ্যবর্তি এলাকার কিছু রাজাকার ও আলবদরকে চিনি, তবে পিস কমিটির কাউকে আমি চিনতাম না। রাজাকার ও আলবদর পৃথক কিনা সম্পৃক্ত না থাকায় আমি বলতে পারব না। আমি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সম্ভবত জুন মাসের দিকে সর্বপ্রথম ভারতে যাই। আমি জলঙ্গী বর্ডার দিয়ে ভারতে গিয়েছিলাম। আমি ভারতের কেচুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে রিক্রুট হই এবং ইয়থ ক্যাম্পে ট্রেনিং নেই। ইয়থ ক্যাম্পটি কোন এলাকায় অবস্থিত ছিল তাহা আমার স্মরন নাই। কেচুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পে দুই/তিন দিন অবস্থান করার পর ইয়থ ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আমরা ২১ দিনের গেরিলা ট্রেনিং নিয়েছিলাম। ট্রেনিং শেষে আগষ্ট মাসের দিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে জলঙ্গী বর্ডার দিয়ে ঈশ্বরদিতে আসি এবং তারপর চাটমহর থানা এলাকায় যাই। জলঙ্গী হচ্ছে ভারতের মুর্শিদাবাদ এবং মালদহ এলাকার মধ্যবর্তী স্থান যেটি মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত কিনা আমি বলতে পারব না। আমি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজশাহীতে কোন দিন যাই নাই। ১৯৭১ সালে বর্তমান সিরাজগঞ্জ পাবনা জেলার অন্তর্গত ছিল। আমি ১৯৭১ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এলাকায় গেরিলা যুদ্ধ করেছি। শাহজাদপুর থেকে বেড়ার বৃশালিকা যেতে বাসে ঘন্টাখানিক সময় লাগে। ১৯৭১ সালে শাহজাদপুর থেকে বেড়ার বৃশালিকা পর্যন্ত রাত্রী ১২টার পর থেকে ফজর পর্যন্ত বাস চলত কিনা তাহা আমার জানা নাই। চাটমহর থানায় আমি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কোন অপারেশনে অংশগ্রহন করি নাই। চাটমহরে যাওয়ার পর প্রথমে ভাঙ্গুড়া থানা এলাকায় যাই। ভাঙ্গুড়া থানা থেকে ফরিদপুর তারপর বেড়া থানায় তার পরে শাহজাদপুর থানায় যাই। ভাঙ্গুড়ার কইজুড়ি ব্রিজে ধৃত রাজাকারদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কারন এই রাজাকাররা পেটের দায়ে ও নিজামী সাহেবের নির্দেশে যায় এই বিবেচনায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভাঙ্গুড়া থানায় অপারেশন করার পরপরই আমরা সেখান থেকে চলে যেতাম। ৪২ বৎসর  আগের ঘটনা তাই যে রাজাকারদের আমরা ধৃত করেছিলাম তাদের নাম এ মুহুর্তে স্মরন নাই। কইজুড়ি ব্রীজ এলাকায় অপারেশন করার পূর্বে আমি কোন দিন ঐ এলাকায় যাই নাই, তবে রেকি করার জন্য আমার গ্রুপের লোকজন গিয়েছিল। অপারেশনের সময় কইজুড়ি এলাকার কোন লোক আমাদের গ্রুপে ছিল না। আমার দলের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫/১৬ জন। যিনি রেকি করতে কইজুড়ি ব্রীজ এলাকায় গিয়েছিলেন তাহার নাম আমার মনে নাই, কারণ অনেক দিন আগের কথা। আমাদের গেরিলাদের সেই সময় কোন স্থায়ী ক্যাম্প ছিল না। আমার গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন এস, এম আমীর আলী (বর্তমান মৃত), লাল মোহন (বর্তমান ভারতে), জানে আলম ওরফে জানু, আবুল কাশেম সরদার (বর্তমানে মৃত)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি কোন সময় টাঙ্গাইল জেলায় ও কুড়িগ্রামের রৌমারী এলাকায় যাই নাই। ফরিদপুর থানায় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ভিপি আশরাফকে আমি দেখেছি। তার অবস্থান কোথায় তা আমি বলতে পারব না।
১৯৭১ সালের ১৮ই এপ্রিল থেকে জুন মাসে ভারত যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি নিজ বাড়ীতে এবং সাথিয়া থানার আশপাশ এলাকায় থাকতাম। ইয়থ ক্যাম্পে ট্রেনিং নেওয়ার সময় থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত জানে আলম জানু আমার সাথে একই সাথে একই গ্রুপে যুদ্ধ করেছেন, নভেম্বর মাসে বেড়া থানায় আলাদা গ্রুপ গঠিত হলে তিনি ঐ গ্রুপে চলে যান। ধূলাউড়ি গ্রাম থেকে সাথিয়া থানা পূর্ব দিকে। ধূলাউড়ি গ্রাম থেকে ইছামতি নদী উত্তর দিকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য প্রথম ঢাকায় আসি। কোন মাসে ঢাকায় এসেছিলাম তাহা আমার স্মরন নাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের ইউনিয়নে যে ক্যাম্প হয়েছিল সেই ক্যাম্পে ছিলাম। সমগ্র পাবনা অঞ্চল ৬ই ডিসেম্বর মুক্ত হয়েছিল কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। আমার জানা মতে ২রা নভেম্বর সাথিয়া থানা এলাকা শত্রুমুক্ত হয় নাই। ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বর আব্দুস সামাদ ও গলাকাটা শাহজাহান ছাড়া অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তান আর্মিদের নিকট ধরা পড়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ঐ যুদ্ধে অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা ধরা পড়ার বিষয়ে পরবর্তীতে শুনেছি কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। (চলবে)

এ পর্যন্ত জেরার  পর মামলার কার্যক্রম আগামীকাল  সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান -১ বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।



মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৭ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ

25/8/2013
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজ ১৭ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। সাক্ষীর নাম জামাল উদ্দিন। জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন মাওলানা নিজামীর পক্ষে অ্যঅডভোকেট মিজানুল ইসলাম।

জবানবন্দী :

আমার নাম মোঃ জামাল উদ্দিন, আমার বয়স আনুমানিক ৬০ বৎসর। আমার ঠিকানা গ্রাম- ডহরজানি, থানা- সাঁথিয়া, জেলা- পাবনা।
আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সাথিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার। ১৯৭১ সালে আমি ধূলাউড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পরীক্ষার্থী ছিলাম। আমি মহান মুক্তিযোদ্ধার সময়ে ফরিদপুর, বেড়া, ভাংগুরা, শাহজাদপুর এবং সাথিয়া থানার বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ করি। ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসে কইজুড়ি ব্রিজ অপারেশনে রাজাকারদের পরাস্থ করে তাদেরকে অস্ত্রসহ ধৃত করি। এরপর সাথিয়া থানার ভিটামাটি ব্রীজ অপারেশনে রাজাকারদের পরাস্থ করে অস্ত্রসহ পাঁচজনকে ধৃত করি। সাথিয়া সোলাপাড়িয়া বাকচাঁদপুর ব্রীজ অপারেশনে চারজন রাজাকারকে ধৃত করি। ২০০০ সালে ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের নেতৃত্বে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় করমজা গ্রামে মেঘা ঠাকুরের বাড়ির পাশে একটি গর্তের মধ্যে থেকে মানুষের কিছু মাথার খুলী এবং হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়। উখানে উপস্থিত লোকজনদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মে মাসে ফজরের নামাজের পরে পাক বাহিনী, স্থানীয় রাজাকাররা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে করমজা গ্রামে মেগা ঠাকুরের বাড়ি ঘেরাও করে নিরস্ত্র নিরীহ ০৯ জনকে হত্যা করে। সেখানে আরো জানা যায় যে, মেগা ঠাকুরের মেয়ে এবং তার ছেলের বৌকে ধর্ষণ করা হয়।
১৯৭১ সালের ১২ই নভেম্বর হাড়িয়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হককে রাজাকার, আলবদর ও পাকবাহিনী নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে ধরতে যায়। ধরতে গিয়ে জহুরুল হককে না পেয়ে ঐ গ্রামের কয়েকটি হিন্দু বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং দুইজন হিন্দু মহিলাকে ধর্ষণ করে। রূপসী, বাউসগাড়ী ও ডেমড়ায় মে মাসের প্রথম দিকে তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা মতিউর রহমান নিজামী স্থানীয় জামায়াত ও ছাত্র শিবির নিয়া রূপসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিটিং করেন আলবদর রাজাকার গঠন করার জন্য। যাহা আমি ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইনুল হক ও শামসুল রহমান ওরফে নান্নুর নিকট থেকে জানতে পারি। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ১৪ই মে ভোর বেলায় রূপসী, ডেমড়া ও বাউসগাড়ী গ্রামে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে পাক বাহিনী, স্থানীয় রাজাকার ও আলবদররা ঘেরাও করে গুলি করে নিরস্ত্র ৪৫০ জনকে হত্যা করে। এছাড়া আরো প্রায় ২/৩শত বাড়ি ঘর বাজার সহ পুড়িয়ে দেয়। সেখানে হিন্দু লোকের বসবাস বেশি ছিল সেই হিন্দুদের বাড়ি-ঘর লুটপাট করে এবং আরো সেখানে অনেক হিন্দু মুসলমান মেয়েকে ধর্ষণ করে।
১৯৭১ সালের ২৭ শে নভেম্বর ধূলাউড়ি গ্রামের আশে পাশে ৩/৪টি গ্রুপে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করছিলাম। এই সংবাদ পেয়ে রাত্রি আনুমানিক আড়াইটা/তিনটার দিকে পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর জানা যায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে ঘিরে ফেলে এবং গুলি করে মুক্তিযোদ্ধা ৯ জন এবং ঐ পাড়ার ১৪ জন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে এবং ঐ জায়গায় বাড়ি ঘর অগ্নি সংযোগ করা হয়। ঐ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছে, তার নাম শাহজাহান আলী। সে গলা কাটা শাহজাহান আলী বলে পরিচিত। তার কাছে আরো জানা যায় যে, তাকে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে ছাত্তার রাজাকার তাকে জবাই করে, তার কাছে আরো জানা যায় যে, সেই সময় নিজামী সাহেবের উপস্থিতিতে এবং নিজামী সাহেবের নির্দেশে সাত্তার রাজাকার তাকে জবাই করে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে শাহজাহান আলী বেঁচে  যায়। এই অপারেশন শেষে যাওয়ার পথে ধূলাউড়ি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকে পাকবাহিনী, রাজাকার ও আলবদররা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র সামাদকে গ্রেনেডসহ ধৃত করে সাথিয়া থানায় নিয়ে যায় এবং থানার পাশে বেল গাছে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে বেয়নট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে। এই হত্যা করেই খান্ত হয়নি, উপরোন্ত হত্যা করে তার লিঙ্গ কেটে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে যাহা মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডাার নিজাম উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন ও তৎকালীন হেডমাস্টার রমিছ উদ্দিন সাহেবের নিকট থেকে জানতে পারি। এদের কাছে আরো জানতে পারি যে, এই ঘটনার সময় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবও নাকি উপস্থিত ছিলেন।
আমি একটি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের কমান্ডার হিসাবে ধৃত রাজাকার, আলবদরদের নিকট থেকে জানতে পাই যে, পাবনা জেলা সাথিয়া থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় যে সমস্ত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে উহা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পরামর্শে ও নির্দেশেই হয়েছে। আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী দিয়েছি। অদ্য  ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় আসামী মতিউর রহমান নিজামী সাহেব উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।


জেরায় আইনজীবীর প্রশ্নে সাক্ষী যে জবাব দেন তা নিম্নরূপ :

আমি এক সময় ধূলাউড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। আমি এস.এস.সির পর আর পড়াশোনা করার সুযোগ পাই নাই। ইহা সত্য নহে যে, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অস্ত্র জমা না দেওয়ার কারণে আমি গ্রেফতার হয়েছিলাম, আমি জীবনে কখনও গ্রেফতার হই নাই। বর্তমান সরকারের আমলে আমাকে ধূলাউড়ি কাওছারিয়া কামিল মাদ্রাসার সভাপতি করা হয়েছে। আমার নিজের পৃথক কোন কক্ষ নাই, প্রিন্সিপাল সাহেবের পাশেই আমার বসার ব্যবস্থা আছে। মাজেদা খাতুন, স্বামী মোয়াজ্জেম হোসেনকে আমি চিনি না। আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম মজিদা খাতুন, মাজেদা খাতুন নয়। ইহা সত্য নহে যে, মজিদা খাতুন অন্যের স্ত্রী থাকা অবস্থায় তার সাথে আমি প্রেম করে বিয়ে করেছি। ইহা সত্য নহে যে, আমার স্ত্রী মজিদার আমার সাথে বিয়ের পূর্বে কোন সন্তান ছিল। ৩ ভাই ৭ বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। আমি বাড়ির নিকটস্থ চরপাড়া প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়া করেছি। ধূলাউড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে আমার পড়াকালীন সময়ে ছাত্র রাজনীতি ছিল না। আমি জামায়াতে ইসলামীর জনসভায় কোন সময় যোগদান করেছিলাম কিনা তাহা আমার স্মরণ নাই। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে কোন জনসভা আমাদের এলাকায় হয়েছিল কিনা তাহা আমার মনে পড়ে না। আমাদের বাড়ি থেকে ধূলাউড়ি উচ্চ বিদ্যালয় এবং কাউছারিয়া কামিল মাদ্রাসার দূরত্ব ১ কিঃমিঃ হতে পারে। ১৯৭১ সালে এটি দাখিল বা কামিল মাদ্রাসা ছিল কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। আমি স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য ট্রেনিং নেই নাই, তবে আমার আনছার ট্রেনিং ছিল। আমি যখন ট্রেনিং নেই তখন আনছার এ্যাডজুটেন্ট কে ছিল তাহা আমার স্মরন নাই, কারন তাহা অনেক দিনের আগের কথা। সম্ভবত ১৯৬৯ সালে আমি আনছার ট্রেনিং নিয়েছিলাম। আনছার থাকা অবস্থায় সরকারী কোন ডিউটিতে আমি যাই নাই। ১৯৭১ সালে আমাদের ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন সম্ভবত আবুল কাশেম সরদার। ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কে ছিল তাহা স্মরন করতে পারছি না। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অর্থাৎ ২৫শে মার্চের পর থেকে ১৯শে এপ্রিল পর্যন্ত সাথিয়ার কোন অঞ্চলে আর্মিদের ক্যাম্প ছিল তাহা আমার জানা নাই। ২৫শে মার্চ থেকে ১৯শে এপ্রিল পর্যন্ত আমি নিজ বাড়িতেই ছিলাম। ১৯৭১ সালের ১৯শে এপ্রিলের আগ পর্যন্ত আমি কোন প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহন করি নাই। ২৫শে মার্চ থেকে ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান আর্মিরা আমাদের এলাকার রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে আমি দেখেছি। ২৫শে মার্চ থেকে ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান আর্মিদের গাড়িতে স্বাধীনতা বিরোধী দালালরা থাকতো তবে তারা রাজাকার না আলবদর তাহা আমার জানা ছিল না। খোদা বক্স চেয়ারম্যান ঐ দালালদের মধ্যে একজন ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমি বেড়ার একজন আসাদের নাম শুনেছি সে পাকিস্তানীদের দালালী করত তবে তাকে আমি কখনও দেখি নাই। আমাদের বাড়ি থেকে মনমথপুর আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আমাদের বাড়ি থেকে মনমথপুরের মধ্যবর্তি এলাকার কিছু রাজাকার ও আলবদরকে চিনি, তবে পিস কমিটির কাউকে আমি চিনতাম না। রাজাকার ও আলবদর পৃথক কিনা সম্পৃক্ত না থাকায় আমি বলতে পারব না। আমি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সম্ভবত জুন মাসের দিকে সর্বপ্রথম ভারতে যাই। আমি জলঙ্গী বর্ডার দিয়ে ভারতে গিয়েছিলাম। আমি ভারতের কেচুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে রিক্রুট হই এবং ইয়থ ক্যাম্পে ট্রেনিং নেই। ইয়থ ক্যাম্পটি কোন এলাকায় অবস্থিত ছিল তাহা আমার স্মরন নাই। কেচুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পে দুই/তিন দিন অবস্থান করার পর ইয়থ ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আমরা ২১ দিনের গেরিলা ট্রেনিং নিয়েছিলাম। ট্রেনিং শেষে আগষ্ট মাসের দিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে জলঙ্গী বর্ডার দিয়ে ঈশ্বরদিতে আসি এবং তারপর চাটমহর থানা এলাকায় যাই। জলঙ্গী হচ্ছে ভারতের মুর্শিদাবাদ এবং মালদহ এলাকার মধ্যবর্তী স্থান যেটি মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত কিনা আমি বলতে পারব না। আমি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজশাহীতে কোন দিন যাই নাই। ১৯৭১ সালে বর্তমান সিরাজগঞ্জ পাবনা জেলার অন্তর্গত ছিল। আমি ১৯৭১ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এলাকায় গেরিলা যুদ্ধ করেছি। শাহজাদপুর থেকে বেড়ার বৃশালিকা যেতে বাসে ঘন্টাখানিক সময় লাগে। ১৯৭১ সালে শাহজাদপুর থেকে বেড়ার বৃশালিকা পর্যন্ত রাত্রী ১২টার পর থেকে ফজর পর্যন্ত বাস চলত কিনা তাহা আমার জানা নাই। চাটমহর থানায় আমি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কোন অপারেশনে অংশ গ্রহন করি নাই। চাটমহরে যাওয়ার পর প্রথমে ভাঙ্গুড়া থানা এলাকায় যাই। ভাঙ্গুড়া থানা থেকে ফরিদপুর তারপর বেড়া থানায় তার পরে শাহজাদপুর থানায় যাই। ভাঙ্গুড়ার কইজুড়ি ব্রিজে ধৃত রাজাকারদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কারন এই রাজাকাররা পেটের দায়ে ও নিজামী সাহেবের নির্দেশে যায় এই বিবেচনায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভাঙ্গুড়া থানায় অপারেশন করার পরপরই আমরা সেখান থেকে চলে যেতাম। ৪২ বৎসর  আগের ঘটনা যে রাজাকারদের আমরা ধৃত করেছিলাম তাদের নাম এ মুহুর্তে স্মরন নাই। কইজুড়ি ব্রীজ এলাকায় অপারেশন করার পূর্বে আমি কোন দিন ঐ এলাকায় যাই নাই, তবে রেকি করার জন্য আমার গ্রুপের লোকজন গিয়েছিল। অপারেশনের সময় কইজুড়ি এলাকার কোন লোক আমাদের গ্রুপে ছিল না। আমার দলের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫/১৬ জন। যিনি রেকি করতে কইজুড়ি ব্রীজ এলাকায় গিয়েছিলেন তাহার নাম আমার মনে নাই, কারণ অনেক দিন আগের কথা। আমাদের গেরিলাদের সেই সময় কোন স্থায়ী ক্যাম্প ছিল না। আমার গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন এস, এম আমীর আলী (বর্তমান মৃত), লাল মোহন (বর্তমান ভারতে), জানে আলম ওরফে জানু, আবুল কাশেম সরদার (বর্তমানে মৃত)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি কোন সময় টাঙ্গাইল জেলায় ও কুড়িগ্রামের রৌমারী এলাকায় যাই নাই। ফরিদপুর থানায় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ভিপি আশরাফকে আমি দেখেছি। তার অবস্থান কোথায় তা আমি বলতে পারব না।
১৯৭১ সালের ১৮ই এপ্রিল থেকে জুন মাসে ভারত যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি নিজ বাড়ীতে এবং সাথিয়া থানার আশপাশ এলাকায় থাকতাম। ইয়থ ক্যাম্পে ট্রেনিং নেওয়ার সময় থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত জানে আলম জানু আমার সাথে একই সাথে একই গ্রুপে যুদ্ধ করেছেন, নভেম্বর মাসে বেড়া থানায় আলাদা গ্রুপ গঠিত হলে তিনি ঐ গ্রুপে চলে যান। ধূলাউড়ি গ্রাম থেকে সাথিয়া থানা পূর্ব দিকে। ধূলাউড়ি গ্রাম থেকে ইছামতি নদী উত্তর দিকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য প্রথম ঢাকায় আসি। কোন মাসে ঢাকায় এসেছিলাম তাহা আমার স্মরন নাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের ইউনিয়নে যে ক্যাম্প হয়েছিল সেই ক্যাম্পে ছিলাম। সমগ্র পাবনা অঞ্চল ৬ই ডিসেম্বর মুক্ত হয়েছিল কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। আমার জানা মতে ২রা নভেম্বর সাথিয়া থানা এলাকা শত্রুমুক্ত হয় নাই। ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বর আব্দুস সামাদ ও গলাকাটা শাহজাহান ছাড়া অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তান আর্মিদের নিকট ধরা পড়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ঐ যুদ্ধে অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা ধরা পড়ার বিষয়ে পরবর্তীতে শুনেছি কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। (চলবে)
এ পর্যন্ত জেরার  পর মামলার কার্যক্রম আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
জেরায় মিজানুল  ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজেব মোমেন, আসাদ উদ্দিন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

বাংলাদেশের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ২০০৯ -স্টিভেন কে কিউসি

১৫/১০/১০
যুগোশ্লাভিয়া এবং  রুয়ান্ডার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইনজীবী, যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ স্টিভেন  কিউসি বাংলাদেশের  যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বিচারের জন্য প্রণীতি আইন নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা করেছেন। বাংলায়  প্রবন্ধটির  পূর্ণ শিরোনাম হল ‘বাংলাদেশের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ (আদালত) (সংশোধন) এ্যাক্ট ২০০৯’ । এখানে প্রবন্ধটি   ভাষান্তর করে তুলে ধরা  হল। ভাষান্তর করেছেন মেহেদী হাসান।

সংবিধান হল আঠা যা দেশের জনসাধারণকে একসাথে বেঁধে রাখে।  নাগরিকের অধিকার এবং     দায়িত্ব বিষয়ে  এটি সরকার এবং জনগণের মধ্যে একটি চুক্তি যার ওপর ভিত্তি করে সরকার দেশ চালাবে।   সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া বিষয়ে   জাতিসংঘের  বিশেষ সহায়তা  ইউনিটির প্রতি  মহাসচিবের যে  দিক নির্দেশনা রয়েছে তাতেও এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের এ বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে-
“একটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রূপকল্প  রচনার ক্ষেত্রে সংবিধান প্রণয়ন বিশাল সুযোগ এনে দেয়। একটি রাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভের ক্ষেত্রে এর গভীর এবং সুদুরপ্রসারী ছাপ পড়ে।”

আন্তর্জাতিক যেসব মানবধিকার সংগঠন এবং অন্যান্য সংস্থা আছে তাদের সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের এ  নির্দেশনা মেনে চলা হয়। জাতিসংঘের রুল অব ল ইউনিটের সহায়তায় ‘রুল অব ল কোঅর্ডিনেশন এন্ড রিসোর্স গ্রুপ’  নামে একটি সমন্বয়ক সংস্থা রয়েছে।  জাতিসংঘের উপমহাসচিব এর চেয়ারম্যান। মানবাধিকার রক্ষা বিষয়ে জাতিসংঘ ঘোষিত যে সার্বজনীন নাগরিক সনদ রয়েছে রাষ্ট্রগুলো যেন তা মেনে চলে তা নিশ্চিত করা এ সংস্থার লক্ষ্য।  এছাড়া রাষ্ট্রগুলোকে এ নাগরিক অধকিার রক্ষায়ও সহয়তা করা হয় এ ইউনিটের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার  বিষয়ক যেসব  চুক্তি এবং ঘোষনা রয়েছে বিভিন্ন দেশের সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে তার একটা প্রভাব আছে এবং এগুলোই হল ন্যায় বিচার  এবং সমঅধিকার  রক্ষা কবচ।

১৯৭২ সালের  সংবিধান
বাংলাদেশের  সংবিধানের একদম শুরুতে প্রস্তবনায় বলা হয়েছে“ আমরা আরো অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক  পদ্ধতিতে এমন এক শোসনমুক্ত সমাজতান্ত্রিক  সমাজ প্রতিষ্ঠা-যেখানে সকল নাগরিকের জন্য  আইনের শাসন, মৌলিক  মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইব্”ে
সংবিধানের সাত ধারায় সংবিধানকে সবার উপরে স্থান দেয়া হয়েছে। গণতন্ত্র  এবং মানবাধিকার রক্ষার জাতীয় অঙ্গীকার ১১ ধারায় উল্লেখ আছে। ‘গণতন্ত্র   ও মানবাধিকার শিরোনামে’  সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে  বলা হয়েছে “প্রজাতন্ত্র  হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক  মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি  শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত  হইবে। এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হাইবে।”


সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ২৭ অনুচ্ছেদে ‘আইনের দৃষ্টিতে সমতা’ শিরোনামে  মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে পুনরায় উল্লেখ করে বলা হয়েছে “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী।”

২৬ অনুচ্ছেদে আরো বলা হয়েছে “এই ভাগের বিধানাবলীর সহিত অসামাঞ্জস্য  সকল  প্রচলিত আইন যতখানি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ , এই সংবিধান প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হাইয়া যাইবে (১) । রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসামাঞ্জস্যপূর্ণ কোন  আইন প্রনয়ন  করিবেন না  এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত  যতখানি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হাইয়া যাইবে (২)।

তথাপি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে যে প্রথম সংশোধনী আনা হয়  তাতে  সকল নাগরিক সমান- সাম্যের এই   আকাঙ্খা   রহিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী ১৯৭৩
১৯৭৩ সালে সংবিধান সংশোধন  করে ৪৭ অনুচ্ছেদের ৩ উপধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে “ এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবাতা বিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক  আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা  বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক ফৌজদারীতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান সংবলিত কোন আইন বা আইনের বিধান সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনী বলিয়া  গণ্য হইবেনা  কিংবা কখনো বাতিল বা বেআইনী হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবেনা।”

যুদ্ধাপরাধের বিচার যাতে কেউ উচ্চ আদালতে  চ্যালেঞ্জ করতে না পারে তার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে সংবিধানের এই ধারাটি সংযোজনের মাধ্যমে।

যেমন ৪৭ ক (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে  “এই সংবিধানে যাহা বলা হাইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের  (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়,  এই সংবিধানের  অধীন কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করিবার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবেনা।”
এই ধারার ফলে   ট্রাইব্যুনালের বিচারে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি  তার নির্দোষীতা প্রমানে উচ্চ আদালতের কাছে বিচার চাইতে পারবেননা।

বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক লোকের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে  এখানে।  যে লোকগুলো এখন পর্যন্ত বিচারে দোষী প্রমানিত হয়নি কেবলমাত্র  অভিযোগ খাড়া করা হয়েছে  তাদের বিরুদ্ধে।

১৯৭৩ সালের সংবিধানে নতুনভাবে সংযোজিত ৪৭  ক (১) অনুচ্ছেদের মাধ্যমে  সংবিধানে অন্যান্য যেসব মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে তাও কেড়ে নেয়া হয়েছে  নির্দিষ্ট কিছু

লোকের ক্ষেত্রে।  অথচ সংবিধানে বলা হয়েছে সকলেরই আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকার আছে এবং তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধ বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে আটক, আটককৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ, চার্জ গঠন প্রভৃতি ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের যে  বিধান তা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক। এই প্রথমবারের মত বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় ‘অসাম্য’  প্রবর্তন করা হল।

বাংলাদেশে প্রথম সংবিধান সংশোধন করা হয় যুদ্ধাপরাধ বিচারকে কেন্দ্র করে


মেহেদী হাসান
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের  লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে ১৮ জুলাই সংসদের একটি আইন পাশ হয়। এর নাম ‘ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার ক্রাইমস (ট্রাইবিউনালস ) এ্যাক্ট ১৯৭৩’। আইনটি পাশের জন্য বাংলাদেশের সংবিধানের  সংশোধন করতে হয়েছিল। আইনটি পাশ হয় ১৯৭৩ সালের ১৮ জুলাই। এর তিনদিন আগে ১৫ জুলাই স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রথমবারের মত সংশোধন করা হয়। একটি আইন পাশ করতে সংবিধানে সংশোধনী আনার প্রয়োজন হয়েছিল কেন?

যুদ্ধাপরাধ বিচার বিষয়ে এ পর্যন্ত দেশী বিদেশী যেসব সংস্থা এবং  আইনজ্ঞ  মতামত প্রদান করেছেন তাদের মতে ১৯৭৩ সালের আইনে এমন কিছু ধারা আছে যা বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।  সংবিধানে যে সর্বজনীন মৌলিক মানাবধিকারের ঘোষনা রয়েছে তা   ৭৩ সালের আইনে রহিত করা হয়েছে। সেজন্য ৭৩ সালের আইন পাশ এবং আইনটিকে সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে সংশোধনী আনতে হয়েছিল। সংবিধান সংশোধন করে ৪৭ (ক) ও ৪৭ (৩ ) নামে দুটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়।  সংবিধান এবং আইনবিশেষজ্ঞদের মতে  এই ধারা দুটি সয়ং সংবিধানের ৩৫, ৩১, ৩৩ এবং ৪৪ ধারা   এবং সংবিধানের  মূল চেতনার পরিপন্থী ও সাংঘর্ষিক।  সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে মানবাধিকার বিষয়ক সংবিধানের বেশ কিছু ধারা অকার্যকর ঘোষনা করা হয়।

আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞ স্টিভেন কে কিউসি, টবি ক্যাডম্যান,   বিচারপতি মাইকেল বেলফ,   বিশ্বে আইনজীবীদের সবচেয়ে বড় সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশন (আইবিএ), হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আরো বিভিন্ন  মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সংস্থা এবং আইনবিদদের মতে ১৯৭৩ সালের আইনে বাংলাদেশের সংবিধানে ঘোষিত কিছু মৌলিক অধিকার রহিত করা হয়েছে।  ৭৩ সালের  আইনে এমন কিছু ধারা আছে যা বাংলাদেশের সংবিধান এবং প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার সাথে সাংঘষিক। সেজন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে প্রণীত এ আইনকে যাতে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে না পারে এবং  আইনের অসাংবিধানিক  ধারাগুলোকে সুরক্ষার জন্য সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। 

কী আছে প্রথম সংবিধান  সংশোধনীতে?
সংবিধানে নতুনভাবে সংযোজিত  ৪৭ (৩) ধারায় বলা হয়েছে “ এই সংবিধানে যাহা বলা
হইয়াছে তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবাতা বিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক  আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা  বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক ফৌজদারীতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান সংবলিত কোন
আইন বা আইনের বিধান সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনী বলিয়া  গণ্য হইবেনা  কিংবা কখনো বাতিল বা বেআইনী হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবেনা।”

নতুভাবে সংযোজিত ৪৭ (ক) এ ১ ও ২ নামে দুটি উপধারা রয়েছে। ৪৭ ক (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে  “এই সংবিধানে যাহা বলা হাইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের  (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়,  এই সংবিধানের  অধীন কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করিবার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবেনা।”

৪৭ ক (১) ধারায় বলা হয়েছে “যে বক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) ধারায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ, ৩৫ অনুচ্ছেদের (১) ও (৩) দফা, এবং ৪৪ অনুচ্ছেদের অধীনে নিশ্চয়কৃত অধিকারসমূহ প্রযোজ্য ইবেনা। ”

বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে  বলা হয়েছে “অপরাধের দায়যুক্ত কর্মসংঘটনকালে বলবৎ ছিল, এইরূপ আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাইবেনা  এবং অপরাধ সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইনবলে যে দন্ড দেওয়া যাইতে পারিত, তাহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দণ্ড দেওয়া যাইবেনা।”
অর্থাৎ পূর্বে সংঘটিত অপরাধের জন্য পরে আইন করে শাস্তি দেয়া যাবেনা। সংবিধানের এই ৩৫ ধারাসহ  ৩১, ৩৩ এবং ৪৪ ধারায় বর্ণিত আরো কিছু মৌলিক  রহিত করা হয়েছে ১৯৭৩ সালের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে।

বিশেষজ্ঞদের মতে  সংবিধানে ৪৭ (ক) অনুচ্ছেদ সংযোজনের ফলে জুডিশিয়াল রিভিউর অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধের জন্য গঠিত আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেতে পারবেনা অভিযুক্ত ব্যক্তি।    বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী বিষয়ে যে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করা হয়েছে তাতে এই  জুডিশিয়াল রিভিউকে সংবিধানের মূল কাঠামো হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর  এই জুৃডিশিয়াল রিভিউর বিধান রাখা হয়নি ১৯৭৩ সালের আইনে। এছাড়া সংবিধান সংশোধন করে ১৯৭৩ সালের আইনকে প্রটেকশন দেয়ার ফলে ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচারক নিয়োগ এবং রায় নিয়ে কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবেনা।
যুক্তরাজ্য রানীর সাবেক কাউন্সেলর এবং  বিচারপতি মাইকেল জে বেলফ ১৯৭৩ সালের আইনে জুডিশিয়াল রিভিউ’র ক্ষমতা খর্ব করে  সংবিধানে যে প্রটেকশন দেয়া হয়েছে তাকে অসাংবিধানিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
যুগোশ্লাভিয়া এবং  রুয়ান্ডার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইনজীবী, যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ স্টিভেন  কিউসি  বলেন,  ১৯৭৩ সালের আইন এবং এ আইনকে সুরক্ষার জন্য যে সংবিধান সংশোধন করা হল তার মাধ্যমে এই প্রথমবারের মত বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় ‘অসাম্য’  প্রবর্তন করা হল।
১৯৭৩ সালের সংবিধানে নতুনভাবে সংযোজিত ৪৭  ক (১) অনুচ্ছেদের মাধ্যমে  সংবিধানে অন্যান্য যেসব মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে তাও কেড়ে নেয়া হয়েছে  নির্দিষ্ট কিছু 

লোকের ক্ষেত্রে। যুদ্ধাপরাধের বিচার যাতে কেউ উচ্চ আদালতে  চ্যালেঞ্জ করতে না পারে তার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে সংবিধানের এসব  ধারা সংযোজনের মাধ্যমে।
 ১৯৭৩ সালের সংবিধানে প্রথম যে সংশোধনী আনা হয়েছে তা যে বাংলাদেশের সযং ঐ সংবিধানেরই বিরোধী তা বোঝাতে স্টিভেন  ১৯৭২ সালের সংবিধানের  কয়েকটি ধারা উদাহরণ হিসেবে তুরে ধরেণ। যেমন , সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ২৭ অনুচ্ছেদে ‘আইনের দৃষ্টিতে সমতা’ শিরোনামে  মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে পুনরায় উল্লেখ করে বলা হয়েছে “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী।”
২৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “এই ভাগের বিধানাবলীর সহিত অসামাঞ্জস্য  সকল  প্রচলিত আইন যতখানি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ , এই সংবিধান প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হাইয়া যাইবে (১) । রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসামাঞ্জস্যপূর্ণ কোন  আইন প্রনয়ন  করিবেন না  এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত  যতখানি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হাইয়া যাইবে (২)।
স্টিভেন বলেন, তথাপি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে যে প্রথম সংশোধনী আনা হয়  তাতে  সকল নাগরিক সমান- সাম্যের এই   আকাঙ্খা   রহিত করা হয়েছে।


পূর্বের  অপরাধের বিচার পরে আইন করে করা যায়না
বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে  বলা হয়েছে “অপরাধের দায়যুক্ত কর্মসংঘটনকালে বলবৎ ছিল, এইরূপ আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাইবেনা  এবং অপরাধ সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইনবলে যে দন্ড দেওয়া যাইতে পারিত, তাহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দণ্ড দেওয়া যাইবেনা।”
অর্থাৎ পূর্বে সংঘটিত অপরাধের জন্য পরে আইন করে শাস্তি দেয়া যাবেনা। অপরাধ সংঘটনের সময় বিদ্যমান আইনে যে শাস্তির বিধান থাকে পরে আইন করে তার চেয়ে বেশি শাস্তি দেয়া যায়না। সারা বিশ্বে আইনের মূলনীতি এটি।  বাংলাদেশের সংবিধানেও   নিশ্চয়তা রাখা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৩ সালের সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ৩৫ ধারায় ঘোষিত এ নিশ্চয়তা  অকার্যকর  ঘোষনা করা হয়েছে। কারণ অপরাধ সংঘটন হয়েছে ১৯৭১ সালে। আর অপরাধের বিচারের জন্য আইন করা হয়েছে ১৯৭৩ সালে। পূর্বের অপরাধ পরে  আইন করে বিচারের সুযোগ রাখার জন্য এ সংশোধনী আনা হয়।  আন্তর্জাতিক আইনের মূলনীতি বিরোধী এটি।

যেমন জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০০২ সাল থেকে কার্যকর হয়েছে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) ।  এ আদালতে ২০০২ সালের পূর্বে সংঘটিত কোন অপরাধের বিচার করা যাবেনা। ২০০৯ সালের  ডিসেম্বর মাসে আইসিসির প্রধান বিচারপতি স্যাং হুন সং বাংলাদেশ সফরের সময় বলেছেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়েনা এবং সে সুযোগও নেই।  সরকারকে ডিঙ্গিয়ে ৩৮ বছর আগের বিষয় নিয়ে কাজ করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পরেনা।
(প্রবন্ধটি 2010 সালের কোন এক সময় লেখা)

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) ও ১৯৭৩ সালের আইনের তুলনা

Mehedy Hasan
জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০০২ সাল থেকে কার্যকর হয়েছে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) ।  জেনেভার হেগে অবস্থিত এ   আন্তর্জাতিক আদালত চারটি বিষয়ে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এগুলো হল গণহত্যা,  মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ  এবং আগ্রাসনমূল অপরাধ । বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালের নাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অর্থাৎ বাংলাদেশের এ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক কিছু অপরাধের যথা গনহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ। বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের অপরাধ আইনের সাথে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তিনটি বিষয়ে মিল রয়েছে যথা গণহত্যা,  মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ  । বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালে যেহেতু বিচার্য প্রধান তিনটি বিষয়ে মিল রয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতের সাথে তাই  আন্তর্জাতিক আদালতের তুলনায় বাংলাদেশের  আইনের তুলনা করা এবং দুর্বলতাগুলো খুব সহজেই চোখে পড়ছে সবার। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিধানাবলীকে ভিত্তি বা স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে  ধরে  বাংলাদেশের অপরাধ আইনের  সমালোচনা করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং  আইনবিশেষজ্ঞরা।

এ প্রতিবেদনে  আন্তর্জাতিক আদালতের সাথে বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আইনের কিছু তুলনা তুলে ধরা হয়েছে। তবে তার আগে আন্তর্জাতিক আদালাতের বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করা দরকার।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে  সংঘটিত  মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা যাতে পার পেয়ে না যায় সেজন্য একটি আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠার দাবী ওঠে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে। এ পেক্ষাপটে ১৯৯৮ সালের ১৭ জুলাই ইতালীর রোমে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে  যা রোম সংবিধি বা রোম স্ট্যটিউট নামে পরিচিত। এ রোম সংবিধির অধীনেই প্রতিষ্ঠা করা হয় আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি)। আদালত প্রতিষ্ঠার সময় শর্ত দেয়া হয় বিশ্বের ৬০টি দেশ যখন এর পূর্ণাঙ্গ সদস্য হবে তখন থেকে এ আদলত কার্যকর হবে। ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে এর সদস্য সংখ্যা ৬০  উন্নীত হয় এবং  ঐ বছরই ১ জুলাই থেকে এ আদালতের বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ এ রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ তবে পূর্ণ সদস্য হবার জন্য যে রেটিফিকেশন বা অনুস্বাক্ষর করা দরকার তা করেনি।

কেবলমাত্র এ আদালত কার্যকর হবার দিন থেকে যদি কোথাও  এ ধরণের অপরাধ ঘটে তবে এ আদালত তার বিচার করতে পারবে। আদালত প্রতিষ্ঠার  আগে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার বিচারের ক্ষমতা নেই এ আদালতের। এছাড়া অন্য কোন অপরাধের ক্ষেত্রে   যে রাষ্ট্রে ঐ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সে দেশ যদি তার বিচার করে সেক্ষেত্রে এ আদালত আগ বাড়িয়ে কোন হস্তক্ষেপ করবেনা। সংশ্লিষ্ট দেশ  যদি বিচার  না করে এবং সদস্য রাষ্ট্র  যদি বিচারের জন্য আবেদন করে তবেই কেবল শেষ আশ্রয় হিসেবে এ আদালত তার বিচারের উদ্যোগ নেবে।
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়টি সামনে আসায় শুরুতে অনেকেই এ আদালতের সাহয্য নেয়া বা এ আদালতের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে কথা বলেন। তবে ২০০৯ সালের  ডিসেম্বর মাসে

আইসিসির প্রধান বিচারপতি স্যাং হুন সং বাংলাদেশ সফরের সময় বলেছেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়েনা এবং সে সুযোগও নেই।  সরকারকে ডিঙ্গিয়ে ৩৮ বছর আগের বিষয় নিয়ে কাজ করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়েনা।  এরপর থেকে এ অধ্যায়ের অবসান ঘটে।

আইসিসির বিচারিক ক্ষমতা

আন্তর্জাতিক ফৌজদারি  আদালত (আইসিসি)  বিশ্বের বিভিন্ন  প্রান্তে সংঘটিত চারটি বড় ধরণের অপরাধের বিচার করতে পারবে। এগুলো হল
১.    গণহত্যা
২.    মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ
৩.    যুদ্ধাপরাধ এবং
৪.    আগ্রাসনজনিত অপরাধ

গণহত্যা
কোন জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আংশিক বা পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের বিরুদ্ধে নিচের যেকোন একটি অপরাধমূলক কাজ পরিচালনা করলে তা গণহত্যার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে যথা-

ক. কোন সম্প্রদায় বা শ্রেণীর  সদস্যদের হত্যা করা
খ. সম্প্রদায় বা শ্রেণীর  সদস্যদের শারিরীক এবং মানসিকভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতি
    করা
গ. আংশিক বা পুরোপুরিভাবে কোন শ্রেণীকে ধ্বংস করার জন্য তাদের ওপর কোনকিছু
    চাপিয়ে দেয় বা জীবন বিপন্ন করে তোলার ব্যবস্থা করা।
ঘ. জন্মহার নিয়ন্ত্রন করার জন্য কোন পদ্ধতি  চাপিয়ে দিয়ে তাদের  নির্মূলের কৌশল গ্রহণ করা
ঙ. শিশুদের জোরপূর্বক এক গ্রুপ থেকে অন্য গ্রুপে স্থানান্তর করা।

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ
বেসামরিক জনসাধারণের ওপর যখন পদ্ধতিগতভাবে বা  ব্যাপকভাবে নিচের যেকোন একটি অপরাধমূলক কর্মকান্ড  পরিচালনা করা হয় তখন তাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে চিহ্ণিত করা হবে যথা-

ক. হত্যা
খ. খাদ্য ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ থেকে বঞ্চিত করে বিনাস/ধ্বংস/ উচ্ছেদ করা
গ. দাসত্ব করতে বাধ্য করা
ঘ. জোরপূর্বক জনসাধারণকে অন্যত্র স্থানান্তর বা দ্বীপান্তর করা
ঙ. অবরোধ করে  রাখা এবং  জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক  উপাদান থেকে বঞ্চিত করা
চ. নির্যাতন চালানো
ছ. ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা। কোন  জাতিকে দূষিত করা বা তাদের
   মধ্যে অন্য জাতির বিস্তার ঘটানোর  লক্ষ্যে  গণহারে নারীদের ধর্ষণ করে  জোরপূর্বক  গর্ভধারণ
    করানো।  বন্ধ্যাকরণ করা বা অন্য যেকোন ধরণের যৌন অপরাধ
জ. ধর্ম, বর্ণ, গোত্র,  জাতীয়তা, লিঙ্গ বা অন্য কোন কারণে  বৈষম্য, হয়রানি  এবং
   অবমূল্যায়ন করা
ঝ.    রাষ্ট্রীয় সমর্থনে গনগ্রেফতার , অপহরন করে জোরপূর্বক নিরুদ্দেশ  করা
ঞ.    বর্ণবাদের অপরাধ
ট.    অন্য যেকোন অমানবিক অপরাধ

যুদ্ধাপরাধ
ক. জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করে সংঘটিত   নিম্নের যেকোন অপরাধ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গন্য হবে যথা-

১.    ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা
২.    ল্যাবরেটরিতে জীবন নিয়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ নির্যাতন, অমনাবিক আচরণ করা যা কোন মেডিক্যাল সাসেন্স স্বীকৃত নয়
৩.    ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে কষ্ট দেয়া, আহত করা বা স্বাস্থ্যহানী ঘটানো।
৪.    বেআইনী এবং নির্মমভাবে সম্পত্তির ধ্বংস সাধন এবং অপব্যবহার
৫.    যুদ্ধবন্দীদের বা অন্য বন্দীদেরকে শত্রু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা
৬.    যুদ্ধবন্দী বা অন্য বন্দীদেরকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা।
৭.    বেআইনীভঅবে দ্বীপান্তর, স্থানান্তর বা  আবদ্ধ করা
৮.    বন্দীদের জিম্মী হিসেবে ব্যবহার

খ. আন্তর্জাতিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে যেসব আইন এবং রীতিনীতি আছে তা ভঙ্গ করা যেমন:
১. বেসরমারিক নাগরিক অথবা অন্য ব্যক্তিবর্গ যারা যুদ্ধ বা সংঘাতে জড়িত নয় তাদের
    ওপর       ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমন পরিচালনা করা
২. বেসাসমরিক নাগরিকদের পন্য দ্রব্য বা এমন বস্তু যা যুদ্ধ সরঞ্জাম নয় তার ওপর
    ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমন পরিচালনা করা
৩. উদ্ধারকারী দল, স্থাপনা,  পন্যদ্রব্য, বেসামরিক বা মানবিক কাজে ব্যবহৃত যানবাহন বা
    টিম, শান্তিরক্ষা মিশনের ওপর  ইচ্ছাকৃত আক্রমন পরিচালনা।
৪. বেসরমাকি ব্যক্তিবর্গের জীবনহানি ঘটায়, সহায় সম্পত্তি ধ্বংস করে, স্বল্প এবং দীর্ঘ
    মেয়াদে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, প্রাকৃতিক  পরিবেশ বিপন্ন করে এমন কোন হামলা
    ইচ্ছাতৃতভাবে পরিচালনা করলে।
৫. বেসামরিক ভবন, শহর, গ্রাম এবং  আবাসিক এলাকায় বোমা হামলা  বা আক্রমন 
    পরিচালনা করলে।
৬. আত্মসমপর্ণকারী সৈন্য, বা নিরস্ত্র সৈন্যকে হত্যা বা আহত করা।
৭.  যুদ্ধ বিরতীর পতাকা, সেনা পোশাক, ব্যাজ এবং অন্যান্য সামরিক প্রতীকের প্রতরাণাপূর্ণ
     ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করা
৯.    দখলদার শক্তি কর্তৃক সেখানকার অধিবাসীদের নিজভূমি থেকে বিতদাড়ন করা
    ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঐতিহাসিক স্থাপনা, দাতব্য সংস্থা, হাসপাতাল,
        আশ্রমে ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা চালানো
১০.    বন্দীদের ওপর বেজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো
১১.    প্রতারণামূলকভাবে বন্দীদের হত্যা করা
১২.    বন্দীদেরকে তাদের নিজ দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা
১৩.    জীবানু অস্ত্র ব্যবহার বা কারো ওপর প্রয়োগ করা
১৪.    ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা, জাতিকে দূষিত বা এক জাতি থেকে অন্য জাতিতে রূপান্তরের জন্য নারীদের ধর্ষণ করে  জোরপূর্বক  গর্ভধারণ করানো, বন্ধ্যাকরণ করা বা অন্য যেকোন ধরণের যৌন অপরাধ ।
১৫.    নিরাপদ জোনে হামলা চালানো
১৬.    ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা, খাদ্য বহনে বাধা দেয়া
১৭.    ১৫ বছরের নিচের শিশুদের দিয়ে যুদ্ধ করানো

কমান্ডার এবং অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়দায়িত্ব

কমান্ডারের অধীনস্ত সৈনিকদের মাধ্যমে যদি কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘটিত হয়  তবে হুকুমদাতা হিসেবে তার দায়দায়িত্ব কমান্ডারের ওপর বর্তাবে। কমান্ডারের অধীনস্তদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ কমান্ডারের হুকুমে হয়েছে অথবা তার নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারনে হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।

উর্ধ্বতনের নির্দেশ এবং আইনের অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা

সরকার বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে ( সামরিক বা বেসমারিক যা-ই হোক না কেন ) কেউ যদি  যুদ্ধাপরাধের মত কোন অপরাধ করে তবে সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি এর দায় থেকে অব্যাহতি পাবে যদি-

ক. সরকার বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানতে তিনি  আইনগতভাবে বাধ্য থাকেন
খ. তিনি যে আদেশ মানছেন তা যে বেআইনী তা যদি তিনি অবহিত না থাকেন
গ.  আদেশ যে বেআইনী বা অবৈধ তা যদি প্রকাশ করা না হয়

এক নজরে যুদ্ধাপরাধ এ্যাক্ট


 মেহেদী হাসান
নাম:        দি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইবিউনালস) (এমেন্ডমেন্ট) এ্যাক্ট ২০০৯
            (১৯৭৩ সালে দি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইবিউনাল) এ্যাক্ট প্রণীত হয়।
             ২০০৯  সালের ৮ জুলাই সংশোধন করা হয়।)

আইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও  আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির আটক, বিচার  শাস্তি বিধানের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে এ এ্যাক্ট প্রণীত হয়।

শাস্তি: এই এ্যাক্টের অধীনে প্রতিষ্ঠিত আদালত অপরাধীর সবোর্চচ্চ শাস্তি মুত্যদণ্ড প্রদান
       করতে পারবে।
বিচারের আওতা: এই  এ্যাক্টের অধীনে প্রতিষ্ঠিত আদালত মূলত চারটি অপরাধের বিচার
                    করবে। এগুলো হল-মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে
                    অপরাধ,গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধ। সশস্ত্র বাহিনী, প্রতিরক্ষা বাহিনী বা
                    সহায়ক বাহিনীর সদস্য ছাড়াও কোন একক ব্যক্তি বা ব্যাক্তিগোষ্ঠীকেও 
                    বিচারের আওতায় আনা যাবে।

অপরাধের সংজ্ঞা:
১. মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ:  হত্যা,  দাসত্ব করতে বাধ্য করা, জোরপূর্বক জনসাধারণকে অন্যত্র স্থানান্তর বা দ্বীপান্তর করা, অবরোধ করে  রাখা, নির্যাতন চালানো,
ধর্ষণ, অপহরণ এবং রাজনৈতিক, ধর্ম, বর্ণ বা  অন্য কোন কারণে বেসরমারিক জনসধারণের বিরুদ্ধে অন্য যেকোন অনমানবিক অপরাধ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। 
২. শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ: আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করে আগ্রাসনমূলক যুদ্ধের জন্য  পরিকল্পনা ও  প্রস্তুতি
৩. গণহত্যা: কোন জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আংশিক বা পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের বিরুদ্ধে নিচের যেকোন একটি অপরাধমূলক কাজ পরিচালনা করলে তা গণহত্যার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে যথা-
ক. কোন সম্প্রদায় বা শ্রেণীর  সদস্যদের হত্যা করা
খ. সম্প্রদায় বা শ্রেণীর  সদস্যদের শারিরীক এবং মানসিকভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতি
    করা
গ. আংশিক বা পুরোপুরিভাবে কোন শ্রেণীকে ধ্বংস করার জন্য তাদের ওপর কোনকিছু 
    চাপিয়ে দেয় বা জীবন বিপন্ন করে তোলার ব্যবস্থা করা।
ঘ. জন্মহার নিয়ন্ত্রন করার জন্য কোন পদ্ধতি  চাপিয়ে দিয়ে তাদের  নির্মূলের কৌশল গ্রহণ করা
ঙ. শিশুদের জোরপূর্বক এক গ্রুপ থেকে অন্য গ্রুপে স্থানান্তর করা।
৪. যুদ্ধাপরাধ:  যুদ্ধের আইন এবং রীতি লঙ্ঘন করে কাউকে হত্যা করা, দাসে পরিণত করা, যুদ্ধ বন্দীকে হত্যা করা, রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখল করা, শহর, নগর এবং বন্দরে নির্মম ধ্বংস লীলা পরিচালনা করা।

আদালত:
এক বা একাধিক আদালত স্থাপন করা যাবে এই এ্যাক্টের অধীনে। প্রতি আদালতে একজন চেয়ারম্যান এবং সদস্য সংখ্যা দুই এর কম এবং চারজনের বেশি হবেনা।  বাংলাদেশের সুপ্রীম কোটের বিচারপতি হবার যোগ্য যেকোন বিচারপতি চেয়ারম্যান বা সদস্য হিসেবে নিয়োগ   করা যাবে।

রুলস অব এভিডেন্স: সংবাদপত্র বা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত খবর, ছবি এবং ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্র বা  রেকডির্ং  অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রমান হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে। এসনকি মৃত্যবরণকারী কোন ব্যক্তির অতীতে রেকর্ড করা বক্তব্যও প্রমান হিসেবে আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে। বিচারের আগে জিজ্ঞাসাবাদের সময় যেকোন প্রথম শ্রেণীর মেজিস্ট্রেট তার অভিযুক্তের জবানবন্দী রেকর্ড করতে পারবে।

১৯৭৩ সালের আইনের সংশোধন:
১৯৭৩ সালের আইনে  সশস্ত্র বাহিনী, প্রতিরক্ষা বাহিনী বা
                    সহায়ক বাহিনীর সদস্যদের বিচার করার কথা বলা হয়। পরে ২০০৯ সালের
                      সংশোধনীতে ‘কোন একক ব্যক্তি বা ব্যাক্তিগোষ্ঠীকেও  (ইন্ডিভিজুয়াল অর  গ্রুপ অব
                     ইন্ডিভিজুয়ালস)                       বিচারের আওতায় আনা যাবে’ কথাগুলো যোগ রা  
                    হয় । এ সংশোধনীর   মাধ্যমে বাংলাদেশী লোকজনের বিচারের উদ্যোগ নেয়া
                     হয়েছে।