রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে দুই সাক্ষীর পরষ্পরবিরোধী তথ্য

মেহেদী হাসান, ২৫/৮/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আজ ১৭ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন মো : জামাল উদ্দিন। তিনি জেরায় বলেছেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি কোন সময় টাঙ্গাইল জেলায় ও কুড়িগ্রামের রৌমারী এলাকায় যাই নাই।”

সাক্ষী জামাল উদ্দিন জেরায় আরো  বলেছেন তার গ্রুপে যেসব মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন তাদের মধ্যে একজন  হলেন জানে আলম ওরফে জানু  । ১৯৭১ সালের জুন মাসে ভারতের ইয়থ ক্যাম্পে ট্রেনিং নেওয়ার সময় থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত জানে আলম জানু তার সাথে  একই গ্রুপে যুদ্ধ করেছেন।

মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, আজকের সাক্ষী জামাল উদ্দিন যে জানে আলম ওরফে জানুর নাম বললেন তিনি  গত গত ১৯ আগস্ট ১৬ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে।  ট্রাইব্যুনালে তিনি তার জবানবন্দীর এক অংশে বলেন, “কয়েকদিন পর আমরা আবার সংঘবদ্ধ হয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী বর্ডার দিয়ে ভারতে চলে যাই। সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে আমরা আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশে প্রবেশ করে টাংগাইলের শাহাজানির চরে অবস্থান নেই।”

মিজানুল ইসলাম বলেন, জানে আলম বললেন তারা টাঙ্গাইল এবং রৌমারি গেছেন আর আজকের সাক্ষী জামাল উদ্দিন বললেন তিনি ১৯৭১ সালে কখনো টাঙ্গাইল এবং রৌমারি যাননি। অথচ তিনি অন্য প্রশ্নে আবার স্বীকার করেছেন জানে আলম ১৯৭১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তার সাথে থেকে একত্রে যুদ্ধ করেছে।

১৭ তম সাক্ষীর জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ জামাল উদ্দিন, আমার বয়স আনুমানিক ৬০ বৎসর। আমার ঠিকানা গ্রাম- ডহরজানি, থানা- সাঁথিয়া, জেলা- পাবনা।
আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সাথিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার। ১৯৭১ সালে আমি ধূলাউড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পরীক্ষার্থী ছিলাম। আমি মহান মুক্তিযোদ্ধার সময়ে ফরিদপুর, বেড়া, ভাংগুরা, শাহজাদপুর এবং সাথিয়া থানার বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ করি। ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসে কইজুড়ি ব্রিজ অপারেশনে রাজাকারদের পরাস্থ করে তাদেরকে অস্ত্রসহ ধৃত করি। এরপর সাথিয়া থানার ভিটামাটি ব্রীজ অপারেশনে রাজাকারদের পরাস্থ করে অস্ত্রসহ পাঁচজনকে ধৃত করি। সাথিয়া সোলাপাড়িয়া বাকচাঁদপুর ব্রীজ অপারেশনে চারজন রাজাকারকে ধৃত করি।
২০০০ সালে ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের নেতৃত্বে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় করমজা গ্রামে মেঘা ঠাকুরের বাড়ির পাশে একটি গর্তের মধ্যে থেকে মানুষের কিছু মাথার খুলী এবং হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়। সেখানে উপস্থিত লোকজনদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মে মাসে ফজরের নামাজের পরে পাক বাহিনী, স্থানীয় রাজাকাররা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে করমজা গ্রামে মেগা ঠাকুরের বাড়ি ঘেরাও করে নিরস্ত্র নিরীহ ৯ জনকে হত্যা করে। সেখানে আরো জানা যায় যে, মেগা ঠাকুরের মেয়ে এবং তার ছেলের বৌকে ধর্ষণ করা হয়।

১৯৭১ সালের ১২ই নভেম্বর হাড়িয়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হককে রাজাকার, আলবদর ও পাকবাহিনী নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে ধরতে যায়। ধরতে গিয়ে জহুরুল হককে না পেয়ে ঐ গ্রামের কয়েকটি হিন্দু বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং দুইজন হিন্দু মহিলাকে ধর্ষণ করে। রূপসী, বাউসগাড়ী ও ডেমরায় মে মাসের প্রথম দিকে তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা মতিউর রহমান নিজামী স্থানীয় জামায়াত ও ছাত্র শিবির নিয়া রূপসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিটিং করেন আলবদর রাজাকার গঠন করার জন্য। যাহা আমি ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইনুল হক ও শামসুর রহমান ওরফে নান্নুর নিকট থেকে জানতে পারি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ১৪ই মে ভোর বেলায় রূপসী, ডেমরা ও বাউসগাড়ী গ্রামে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে পাক বাহিনী, স্থানীয় রাজাকার ও আলবদররা ঘেরাও করে গুলি করে নিরস্ত্র ৪৫০ জনকে হত্যা করে। এছাড়া আরো প্রায় ২/৩শত বাড়ি ঘর বাজার সহ পুড়িয়ে দেয়। সেখানে হিন্দু লোকের বসবাস বেশি ছিল সেই হিন্দুদের বাড়ি-ঘর লুটপাট করে এবং আরো সেখানে অনেক হিন্দু মুসলমান মেয়েকে ধর্ষণ করে।
১৯৭১ সালের ২৭ শে নভেম্বর ধূলাউড়ি গ্রামের আশে পাশে ৩/৪টি গ্রুপে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করছিলাম। এই সংবাদ পেয়ে রাত্রি আনুমানিক আড়াইটা/তিনটার দিকে পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর জানা যায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে ঘিরে ফেলে এবং গুলি করে মুক্তিযোদ্ধা ৯ জন এবং ঐ পাড়ার ১৪ জন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে এবং ঐ জায়গায় বাড়ি ঘর অগ্নি সংযোগ করা হয়। ঐ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছে, তার নাম শাহজাহান আলী। সে গলা কাটা শাহজাহান আলী বলে পরিচিত। তার কাছে আরো জানা যায় যে, তাকে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে ছাত্তার রাজাকার তাকে জবাই করে, তার কাছে আরো জানা যায় যে, সেই সময় নিজামী সাহেবের উপস্থিতিতে এবং নিজামী সাহেবের নির্দেশে সাত্তার রাজাকার তাকে জবাই করে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে শাহজাহান আলী বেঁচে  যায়। এই অপারেশন শেষে যাওয়ার পথে ধূলাউড়ি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকে পাকবাহিনী, রাজাকার ও আলবদররা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র সামাদকে গ্রেনেডসহ ধৃত করে সাথিয়া থানায় নিয়ে যায় এবং থানার পাশে বেল গাছে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে বেয়নট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে। এই হত্যা করেই খান্ত হয়নি, উপরোন্ত হত্যা করে তার লিঙ্গ কেটে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে যাহা মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডাার নিজাম উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন ও তৎকালীন হেডমাস্টার রমিছ উদ্দিন সাহেবের নিকট থেকে জানতে পারি। এদের কাছে আরো জানতে পারি যে, এই ঘটনার সময় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবও নাকি উপস্থিত ছিলেন।
আমি একটি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের কমান্ডার হিসাবে ধৃত রাজাকার, আলবদরদের নিকট থেকে জানতে পাই যে, পাবনা জেলা সাথিয়া থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় যে সমস্ত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে উহা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পরামর্শে ও নির্দেশেই হয়েছে।



জেরা :
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমেদ আনসারী, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন ও আসাদ উদ্দিন প্রমুখ।
সাক্ষী জেরায় বিভিন্ন প্রশ্নের যে জবাব দেন তা এখানে তুলে ধরা হল

আমি এক সময় ধূলাউড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। আমি এস.এস.সির পর আর পড়াশোনা করার সুযোগ পাই নাই। ইহা সত্য নহে যে, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অস্ত্র জমা না দেওয়ার কারণে আমি গ্রেফতার হয়েছিলাম, আমি জীবনে কখনও গ্রেফতার হই নাই। বর্তমান সরকারের আমলে আমাকে ধূলাউড়ি কাওছারিয়া কামিল মাদ্রাসার সভাপতি করা হয়েছে। আমার নিজের পৃথক কোন কক্ষ নাই, প্রিন্সিপাল সাহেবের পাশেই আমার বসার ব্যবস্থা আছে। মাজেদা খাতুন, স্বামী মোয়াজ্জেম হোসেনকে আমি চিনি না। আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম মজিদা খাতুন, মাজেদা খাতুন নয়। ইহা সত্য নহে যে, মজিদা খাতুন অন্যের স্ত্রী থাকা অবস্থায় তার সাথে আমি প্রেম করে বিয়ে করেছি। ইহা সত্য নহে যে, আমার স্ত্রী মজিদার আমার সাথে বিয়ের পূর্বে কোন সন্তান ছিল। ৩ ভাই ৭ বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। আমি বাড়ির নিকটস্থ চরপাড়া প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়া করেছি। ধূলাউড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে আমার পড়াকালীন সময়ে ছাত্র রাজনীতি ছিল না। আমি জামায়াতে ইসলামীর জনসভায় কোন সময় যোগদান করেছিলাম কিনা তাহা আমার স্মরণ নাই। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে কোন জনসভা আমাদের এলাকায় হয়েছিল কিনা তাহা আমার মনে পড়ে না। আমাদের বাড়ি থেকে ধূলাউড়ি উচ্চ বিদ্যালয় এবং কাউছারিয়া কামিল মাদ্রাসার দূরত্ব ১ কিঃমিঃ হতে পারে। ১৯৭১ সালে এটি দাখিল বা কামিল মাদ্রাসা ছিল কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। আমি স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য ট্রেনিং নেই নাই, তবে আমার আনছার ট্রেনিং ছিল। আমি যখন ট্রেনিং নেই তখন আনছার এ্যাডজুটেন্ট কে ছিল তাহা আমার স্মরন নাই, কারন তাহা অনেক দিনের আগের কথা। সম্ভবত ১৯৬৯ সালে আমি আনছার ট্রেনিং নিয়েছিলাম। আনছার থাকা অবস্থায় সরকারী কোন ডিউটিতে আমি যাই নাই। ১৯৭১ সালে আমাদের ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন সম্ভবত আবুল কাশেম সরদার। ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কে ছিল তাহা স্মরন করতে পারছি না। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অর্থাৎ ২৫শে মার্চের পর থেকে ১৯শে এপ্রিল পর্যন্ত সাথিয়ার কোন অঞ্চলে আর্মিদের ক্যাম্প ছিল তাহা আমার জানা নাই। ২৫শে মার্চ থেকে ১৯শে এপ্রিল পর্যন্ত আমি নিজ বাড়িতেই ছিলাম। ১৯৭১ সালের ১৯শে এপ্রিলের আগ পর্যন্ত আমি কোন প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহন করি নাই। ২৫শে মার্চ থেকে ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান আর্মিরা আমাদের এলাকার রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে আমি দেখেছি। ২৫শে মার্চ থেকে ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান আর্মিদের গাড়িতে স্বাধীনতা বিরোধী দালালরা থাকতো তবে তারা রাজাকার না আলবদর তাহা আমার জানা ছিল না। খোদা বক্স চেয়ারম্যান ঐ দালালদের মধ্যে একজন ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমি বেড়ার একজন আসাদের নাম শুনেছি সে পাকিস্তানীদের দালালী করত তবে তাকে আমি কখনও দেখি নাই। আমাদের বাড়ি থেকে মনমথপুর আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আমাদের বাড়ি থেকে মনমথপুরের মধ্যবর্তি এলাকার কিছু রাজাকার ও আলবদরকে চিনি, তবে পিস কমিটির কাউকে আমি চিনতাম না। রাজাকার ও আলবদর পৃথক কিনা সম্পৃক্ত না থাকায় আমি বলতে পারব না। আমি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সম্ভবত জুন মাসের দিকে সর্বপ্রথম ভারতে যাই। আমি জলঙ্গী বর্ডার দিয়ে ভারতে গিয়েছিলাম। আমি ভারতের কেচুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে রিক্রুট হই এবং ইয়থ ক্যাম্পে ট্রেনিং নেই। ইয়থ ক্যাম্পটি কোন এলাকায় অবস্থিত ছিল তাহা আমার স্মরন নাই। কেচুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পে দুই/তিন দিন অবস্থান করার পর ইয়থ ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আমরা ২১ দিনের গেরিলা ট্রেনিং নিয়েছিলাম। ট্রেনিং শেষে আগষ্ট মাসের দিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে জলঙ্গী বর্ডার দিয়ে ঈশ্বরদিতে আসি এবং তারপর চাটমহর থানা এলাকায় যাই। জলঙ্গী হচ্ছে ভারতের মুর্শিদাবাদ এবং মালদহ এলাকার মধ্যবর্তী স্থান যেটি মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত কিনা আমি বলতে পারব না। আমি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজশাহীতে কোন দিন যাই নাই। ১৯৭১ সালে বর্তমান সিরাজগঞ্জ পাবনা জেলার অন্তর্গত ছিল। আমি ১৯৭১ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এলাকায় গেরিলা যুদ্ধ করেছি। শাহজাদপুর থেকে বেড়ার বৃশালিকা যেতে বাসে ঘন্টাখানিক সময় লাগে। ১৯৭১ সালে শাহজাদপুর থেকে বেড়ার বৃশালিকা পর্যন্ত রাত্রী ১২টার পর থেকে ফজর পর্যন্ত বাস চলত কিনা তাহা আমার জানা নাই। চাটমহর থানায় আমি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কোন অপারেশনে অংশগ্রহন করি নাই। চাটমহরে যাওয়ার পর প্রথমে ভাঙ্গুড়া থানা এলাকায় যাই। ভাঙ্গুড়া থানা থেকে ফরিদপুর তারপর বেড়া থানায় তার পরে শাহজাদপুর থানায় যাই। ভাঙ্গুড়ার কইজুড়ি ব্রিজে ধৃত রাজাকারদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কারন এই রাজাকাররা পেটের দায়ে ও নিজামী সাহেবের নির্দেশে যায় এই বিবেচনায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভাঙ্গুড়া থানায় অপারেশন করার পরপরই আমরা সেখান থেকে চলে যেতাম। ৪২ বৎসর  আগের ঘটনা তাই যে রাজাকারদের আমরা ধৃত করেছিলাম তাদের নাম এ মুহুর্তে স্মরন নাই। কইজুড়ি ব্রীজ এলাকায় অপারেশন করার পূর্বে আমি কোন দিন ঐ এলাকায় যাই নাই, তবে রেকি করার জন্য আমার গ্রুপের লোকজন গিয়েছিল। অপারেশনের সময় কইজুড়ি এলাকার কোন লোক আমাদের গ্রুপে ছিল না। আমার দলের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫/১৬ জন। যিনি রেকি করতে কইজুড়ি ব্রীজ এলাকায় গিয়েছিলেন তাহার নাম আমার মনে নাই, কারণ অনেক দিন আগের কথা। আমাদের গেরিলাদের সেই সময় কোন স্থায়ী ক্যাম্প ছিল না। আমার গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন এস, এম আমীর আলী (বর্তমান মৃত), লাল মোহন (বর্তমান ভারতে), জানে আলম ওরফে জানু, আবুল কাশেম সরদার (বর্তমানে মৃত)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি কোন সময় টাঙ্গাইল জেলায় ও কুড়িগ্রামের রৌমারী এলাকায় যাই নাই। ফরিদপুর থানায় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ভিপি আশরাফকে আমি দেখেছি। তার অবস্থান কোথায় তা আমি বলতে পারব না।
১৯৭১ সালের ১৮ই এপ্রিল থেকে জুন মাসে ভারত যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি নিজ বাড়ীতে এবং সাথিয়া থানার আশপাশ এলাকায় থাকতাম। ইয়থ ক্যাম্পে ট্রেনিং নেওয়ার সময় থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত জানে আলম জানু আমার সাথে একই সাথে একই গ্রুপে যুদ্ধ করেছেন, নভেম্বর মাসে বেড়া থানায় আলাদা গ্রুপ গঠিত হলে তিনি ঐ গ্রুপে চলে যান। ধূলাউড়ি গ্রাম থেকে সাথিয়া থানা পূর্ব দিকে। ধূলাউড়ি গ্রাম থেকে ইছামতি নদী উত্তর দিকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য প্রথম ঢাকায় আসি। কোন মাসে ঢাকায় এসেছিলাম তাহা আমার স্মরন নাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের ইউনিয়নে যে ক্যাম্প হয়েছিল সেই ক্যাম্পে ছিলাম। সমগ্র পাবনা অঞ্চল ৬ই ডিসেম্বর মুক্ত হয়েছিল কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। আমার জানা মতে ২রা নভেম্বর সাথিয়া থানা এলাকা শত্রুমুক্ত হয় নাই। ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বর আব্দুস সামাদ ও গলাকাটা শাহজাহান ছাড়া অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তান আর্মিদের নিকট ধরা পড়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ঐ যুদ্ধে অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা ধরা পড়ার বিষয়ে পরবর্তীতে শুনেছি কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। (চলবে)

এ পর্যন্ত জেরার  পর মামলার কার্যক্রম আগামীকাল  সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান -১ বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন