শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

ঢাকা সফর শেষে স্টিফেন জে র‌্যাপ  ১৯৭৩ সালের আইনের বিধি সংশোধন করতে হবে  দল বা সংস্থা নয় বরং ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের প্রমান পেলে বিচার করতে হবে  বিচার হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ // বিচারের আগে গ্রেফতারকৃতদের জুড়িশিয়াল রিভিউর ব্যবস্থা থাকা দরকার

১৩/১/১১

মেহেদী হাসান
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ রাষ্ট্রদূত স্টিফেন জে. র‌্যাপ বলেছেন, ১৯৭৩ সালের আইনের সংশোধন করতে হবে আইনটিকে  আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হলে। বিচারের আগে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের জামিনের বিষয়ে জুড়িশিয়াল রিভিউর ব্যবস্থা থাকা দরকার। কোন দল বা সংস্থা নয় বরং কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় অপরাধ সংঘটনের প্রমান পাওয়া গেলে তার বিচার করতে হবে।

চারদিন ঢাকা সফর শেষে গতকাল সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে স্টিফেন এ কথা বলেন। তিনি বলেন আমরা মুক্ত এবং স্বচ্ছ বিচার দেখতে চাই। ন্যায় বিচার  প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এটি প্রমান করতে হবে। বিচার নিয়ে আমি  বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলের সাথে আলোচনা করেছি।   বাংলাদেশের মানুষ ন্যায় বিচার দেখতে চায়।

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রকৃয়া পর্যবেক্ষনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রনে গত সোমবার চারদিনের সফরে ঢাকা আসেন যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্টিফেন জে. র‌্যাপ। যুদ্ধাপরাধ বিচার বিষয়ে সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন পর্যায়ের  বিশেষজ্ঞদের সাথে মতবিনিময় শেষে গতকাল তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেণ। ঢাকা ছাড়ার  পূর্বে  সকালে তিনি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের আমেরিকান রিক্রিয়েশন এসোসিয়েশনে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন।

র‌্যাপ বলেন, কোন ব্যক্তি অতীতে কোন দল বা গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত ছিল কিনা তার  ভিত্তিতে নয় বরং  ১৯৭১ সালে মুুক্তিযুদ্ধের সময় ঐ ব্যক্তি নিজে সরাসরি কোন অপরাধের সাথে জড়িত ছিল কিনা তার ভিত্তিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। যুদ্ধপরাধ বিচারে যাতে নিরাপরাধ কোন ব্যক্তি সাজা না পায়  সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
স্টিফেন জে. র‌্যাপ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) একটি স্বাক্ষরকারী দেশ। আরো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক  চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।  বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের বিচার ব্যবস্থা আছে।  নমপেনে এক ধরনের বিচার রয়েছে, যুগোশ্লাভিয়ায় আরেক ধরণের বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। সেজন্য আইসিসিতে সুনির্দিষ্ট কিছু অপরাধের বিচারের আন্তর্জাতিক একটি মানদণ্ড ঠিক করা হয়েছে সারা বিশ্বের কথা চিন্তা করে। গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সংজ্ঞা আছে । বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যে আদালত গঠন করা হয়েছে তার নাম 

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তাই বাংলাদেশের আইনটিকে আন্তর্জাতিক মানের করার জন্য আইনের বিধিমালায় সংশোধন, সংযোজন  করতে হবে আইসিসির সাথে মিল রেখে।

সাংবাদিকরা স্টিফেনের কাছে  সুর্নিদিষ্ট করে জানতে চান বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে ন্যায় বিচার করা সম্ভব কিনা এবং বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনটি  আন্তর্জাতিক মানের কিনা। স্টিফেন এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলেন,   আইনের বিধিমালা সংশোধন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে ১৯৭১ সালে আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আইনটি হয়েছে ১৯৭৩ সালে । ২০০৯ সালে এ আইনে সংশোধন  করা হয়েছে। অনেকের প্রশ্ন ১৯৭৩ সালের আইন দিয়ে ২০০৯ বা ২০১০ সালে বিচার কেন হবে। এসব প্রশ্ন উঠেছে।  আমরা সেজন্য বলেছি ৪০ বছর  আগে ১৯৭১ সালে মুুক্তিযুদ্দের সময় কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষনের সুনির্দিষ্ট প্রমান পাওয়া যায় তাহলে তার বিচার করতে হবে। বিচার যেন কোন দল বা সংস্থার বিরুদ্ধে না হয়। দল বা সংস্থার নাম পরিবর্তন হতে পারে।  অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।   ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে এটি মানুষ দেখতে চায়।

স্টিফেন বলেন, স্বচ্ছ ও ন্যায় বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকার যদি ওয়াশিংটনের সহায়তা চায় হাতলে ওয়াশিংটন সে বিষয়ে সহায়তা করতে রাজি আছে। আমি এখানকার  যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রকৃয়া পর্যবেক্ষনের জন্য এসেছি সরকারি আমন্ত্রনে। ওয়াশিংটন ফিরে গিয়ে আমি আমার পর্যবেক্ষন তুলে ধরব।

জামায়াতসহ বিরোধী দল অভিযোগ করেছে  সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদেরকে ঘায়েল করার জন্য  যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে এবং বিচার প্রকৃয়া স্বচ্ছ নয়। সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন বলেন, রাজনৈতিক অভিযোগের জবাব আমি দেবনা। আমি  অভিযুক্তদের আইনজীবী এবং বিরোধী দলের লোকজনের সাথেও আলোচনা করেছি  তাদের  অভিযোগ শোনার জন্য এবং বিচার প্রকৃয়া সম্পর্কে জানার জন্য।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স্টিফেন র‌্যাপকে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দান করেণ।  ২০০৯ সালের  সেপ্টেম্বর থেকে তিনি  এ  বিষয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। স্টিফেন এর আগে সিয়েরালিওনে যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত বিশেষ আদালতে একজন মূখ্য আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন । ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এ আদালতে সিয়েরালিওনের গৃহযুদ্ধে ব্যাপক বর্বরতার অভিযোগে লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস টেইলরসহ আরো অনেকের  বিচার করা হয়।
স্টিফেন  র‌্যাপ ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত রুয়ান্ডা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সিনিয়র ট্রয়াল এটর্নী ও চীফ অব প্রসিকিউশন ছিলেন।
চারদিনের ঢাকা সফরকালে স্টিফেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপুমনী, যুদ্ধাপরাধের  বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবিউনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, ট্রাইবিউনালের অন্যান্য বিচারপতি এবং  প্রসিকিউটির, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহ আলম, পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস এবং আইন সচিব...............সাথে সাক্ষাত করেণ। এছাড়া  বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টি বার এসোসিয়েশন সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, রুয়ান্ডা যুদ্ধাপরাধ  ট্রাইবিউনালের বিচারপতি টিএইচ খানসহ বারের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, জামায়াতের  এসিসট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল  সুপ্রীম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং   যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের আইনজীবীদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন  বিচার প্রকৃয়া সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন