শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৩

তদন্ত কর্মকর্তাকে বিশ্বাস করা হলে সত্য মিথ্যার পার্থক্য থাকবেনা


২/১২/২০১২ রোববার
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত রয়েছে। আজ   তিনি  ট্রাইব্যুনালে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা এই মামলায় যেসব কেলেঙ্কারী করেছে, যে মিথ্যা এবং  প্রতরনার  আশ্রয় নিয়েছে তারপরও যদি তাকে বিশ্বাস করা হয় তাহলে সত্য আর মিথ্যার পার্থক্য থাকবেনা। আলো আর  অন্ধকারের পার্থক্য থাকবেনা। দিন আর রাতের পার্থক্য থাকবেনা।

সেফ হাউজের ডকুমেন্ট বিষয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এর মধ্যে যেসব তথ্য  আছে তা-ই এটির সত্যতা প্রমানের জন্য যথেষ্ঠ,সেফ হাউজের অস্তিত্ব প্রমানের জন্য যথেষ্ঠ। এখানে যেসব তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে বিস্তারিতভাবে  নিথভুক্ত করা হয়েছে তা কোন মানুষের পক্ষে কাল্পনিকভাবে তৈরি করা সম্ভব নয়।  তিনি বলেন, একজন পুলিশ  একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং তিনি সে মামলায় কোর্টে  হাজিরা দিতে গেছেন। সে তথ্যও ডায়েরিতে লেখা আছে।  এ তথ্য আমাদের পক্ষে কি করে জানা সম্ভব? এভাবে আরো যেসব তথ্য আছে তা থেকে প্রমানিত যে, সেফ হাউজ ছিল এবং  আমরা সেফ হাউজের যে ডকুমেন্ট দাখিল করেছি তা সত্য।
সেফ হাউজের ডকুমেন্টের সত্যতা দাবি করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোন সাক্ষী কোর্টে এসে সাক্ষ্য দেয়ার সময় তার দিকে পাঁচ মিনিট তাকিয়ে থেকেই আপনরা বুঝে যান সাক্ষী সত্য বলছে কি মিথ্যা বলছে। সে ক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতা আপনাদের আছে।
এসয় ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তা আমরা বুঝি কিন্তু আইনের ফাক দিয়ে অনেক সময় অনেক কিছু বের হয়ে যায়।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, তা বের হয়ে যাক কোন আপত্তি নেই। কিন্তু কোন নির্দোষ মানুষ যেন শাস্তি না পায় সেটা নিশ্চিত করা আপনাদের দায়িত্ব।  ১  জন  নির্দোষ মানুষের জীবন বাঁচাতে যদি ৯৯ জন দোষীও খালাস পায় তবু  তা দোষের নয়।  তবু নির্দোষীর জীবন যেন রক্ষা পায়। এটাই মানবতার দাবি।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, শাহরিয়ার কবির, জুয়েল আইচ এবং ড. জাফর ইকবাল বলেছেন তারা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী দেননি। আর  তদন্ত কর্মকর্তা তাদের নামে জবানবন্দী জমা দিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, তাদের জবানবন্দী আমরা গ্রহণ করিনি ১৫ জনের সাথে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  বলেন আপনি ঠিক  বলেছেন। কিন্তু  তদন্ত কর্মকর্তা যে প্রতারনা করেছেন তার প্রমানতো এখানে রয়ে গেছে।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন তারা বাইরে পত্রিকার কাছে বলেছেন তারা তদন্ত কর্মকর্তাকে জবানবন্দী দেননি। কোর্টে   এসে একথা  বলেননি। আর তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন তারা তার কাছে জবানবন্দী দিয়েছেন। এতেই কি প্রমানিত হয়ে যায় যে, তদন্ত কর্মকর্তা প্রতারান করেছেন? বা যদি  প্রমানিত হয় তদন্ত কর্মকর্তা মিথ্য বলেছেন তাতেও কি প্রমানিত হয় তিনি প্রতারনা (ফ্রড) করেছেন?

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, না তাতেই প্রমানিত হয়না যে, তিনি প্রতারনা করেছেন।  শুধু এ একটি ঘটনার কারনে আমরা বলছিনা তিনি প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে সিরিজ অব ফ্রড করেছেন এবং তার প্রমান আমরা দিয়েছি।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, কোন অভিযোগে  আসামীকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে তিনি ওই অপরাধ করেছেন এ মর্মে সন্দেহাতীত  প্রমান এবং ব্যাখ্যা হাজির করতে হবে।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, ধর্ষণ, গণহত্যা, হত্যা প্রভৃতি অপরাধের  যেসব উপাদান আছে তার প্রত্যেকটি উপাদান সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করতে হবে রাষ্ট্রপক্ষকে। ১৯৭১ সালের যেসব অপরাধের বিচার হচ্ছে তার  প্রত্যেকটি উপাদান রাষ্ট্রপক্ষকে  দেখাতে হবে এবং প্রমান করতে হবে। তিনি বলেন,  মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের পাঁচটি উপাদান আছে। এগুলো হল হামলা, হামলার ফলে হত্যা গণহত্যা নির্যাতন সংঘটিত হওয়া, বেসরমারিক নাগরিক হত্যা, পরিকল্পিত উপায়ে পদ্ধতিগতভাবে কোন জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন বা নির্মূল করা এবং অমানুসিক   নির্যাতন।  এসব  প্রত্যেকটি উপাদান প্রমানসহ অন্যান্য অভিযোগ যেমন  গণহত্যা, ধর্ষণ, ধর্মান্তরকরন প্রভৃতি অভিযোগের সব উপাদান প্রমান করতে হবে। কিন্তু এসব অপরাধের উপাদান প্রমানের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ কোন সাক্ষী হাজির করেনি। রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষী এসে এখানে বললেন মোসলেম মাওলানা এবং সাঈদী ভানুসাহাকে নিয়মিত ধর্ষণ করতেন। শুধু এতটুকু বলে দিলেই প্রমান হয়ে যায়না যে  তারা তাকে ধর্ষণ করত। ভুক্তভোগীকে এখানে হাজির করা হয়নি। আন্তর্জাতিক একটি কেসের উদাহরন দিয়ে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন সে ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে হাজিরসহ ধর্ষনের সমস্ত আলামত হাজির করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মধুসূদন ঘরামী বলেছেন জোর করে ধর্মান্তরকরনের কারনে তার আত্মীয়রা লজ্জায় ভারতে চলে গেছে। একথা বলাতেই প্রমান হয়না যে, তাদের ওপর ধর্মার্ন্তরকনসহ অন্যান্য  অমানুসিক নির্যাতন হয়েছে এবং শুধুমাত্র সে কারনেই তারা ভারতে চলে গেছে। মধুসূদনকেও জোর করে ধর্মান্তরকরন করার অভিযোগ করেছেন তিনি। কিন্তু তিনি নিজেতো  লজ্জার কারনে ভারতে যাননি। তার অন্য আত্মীয়রা লজ্জায় ভারতে গেছে তা তিনি এসে বলেছেন। যারা গেছে তারা এসে বলেননি যে তারা লজ্জার কারনে ভারতে গেছে।  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাজনৈতিক কারনে গণহত্যা হলে  তা  প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইনে  গণহত্যা হবেনা। কোন একটি গোষ্ঠী বা গ্রুপের সব মানুষকে পদ্ধতিগতভাবে নির্মুল করার জন্য পরিকল্পিত উপায়ে  নিধন  কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে সেটা গণহত্যা। বিশ্বে যত আন্তর্জাতিক আইন আছে তার কোনটিতেই রাজনৈতিক হত্যাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়নি। কিন্তু ১৯৭৩ সালের আইনে আছে।
অন্যান্য আন্তজাতিক আইনে গণহত্যার সংজ্ঞা স্পষ্ট করে দিয়ে বলা হয়েছে  সেসব অপরাধের  বাইরে অন্য কোন হত্যা গণহত্যা হবেনা।
তিনি বলেন,    ১৯৭৩ সালের আইনে বর্নিত আরো অনেক অপরাধের কোন সঠিক সংজ্ঞা নেই।

বিচারপতি নিজামুল হক  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে গতকালের  মধ্যে তার আইনী যুক্তি উপাস্থাপন শেষ করার  জন্য বললে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন আগামীকাল ১২টার মধ্যে  তিনি শেষ করতে পারবেন।

যুক্তি উপস্থাপনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, আবু বকর সিদ্দিক।  অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মতিউর রহমান আকন্দ।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন