শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৩

ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা ঘটনা এবং তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলায় যা রয়েছে


 ২৮/২/২০১৩

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যে দুটি অভিযোগে মুত্যৃদণ্ড প্রদান করা হয়েছে তার মধ্যে একটি হল ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার ঘটনা।  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ৮ মে মাওলানা সাঈদীর  সাঈদীর নেতৃত্বে  পাকিস্তান আর্মি এবং শান্তি কমিটির লোকজন চিথলিয়া গ্রামে যায় এবং মানিক পসারীর বাড়ি লুট করে । এখানে ৫টি ঘর তারা কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় লুটপাটের পর। মানিক পসারীর বাড়ি থেকে ইব্রাহীম কৃট্টি  এবং মফিজুল নামে দুজনকে  ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরা দুজন  মানিক পসারীর বাড়িতে কাজ করত। মাওলানা সাঈদী এদের দুজনকে ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে পাড়েরহাট বাজারে নিয়ে যান  তার সাথে লোকজনের সহায়তায়। এরপর মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে পাড়েরহাট বাজহারে ব্রিজের কাছে পাকিস্তান আর্মি ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। মফিজউদ্দিনকে   আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। যে বাড়িতে তারা কাজ করত সেই বাড়ির ছেলে মানিক পসারী এবং পালিয়ে আসা মফিজও সাক্ষ্য দিয়েছেন। গতকাল  ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছেন  মফিজ এ ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। এ ঘটনা প্রমানিত হয়েছে উল্লেখ করে মাওলানা সাঈদীকে মুত্যৃ দণ্ড প্রদান করা হয়েছে।


ইব্রাহীমের স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলায় যা উল্লেখ আছে :
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর  ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই  ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম তার স্বামী এবং ভাই সাহেব আলী হত্যার বিচার চেয়ে একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলার এজাহারে মমতাজ বেগম উল্লেখ করেছিলেন যে, তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি তার বাপের বাড়ি নলবুনিয়া থাকা অবস্থায় শান্তি কমিটির লোকজন এবং পাকিস্তান আর্মি গুলি করে  হত্যা করে। ঘটনাটি ঘটে  ১৯৭১ সালের ১  অক্টোবর । ওই ঘটনার সময় তাদের বাড়ি থেকে তার ভাই সাহেব  আলীকে এবং তার মা সিতারা বেগমকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পিরোজপুর। পরে তার মাকে ছেড়ে দেয়া হলেও তার ভাই সাহেব আলীকে আর ছাড়া হয়নি। তাকে পাকিস্তান আর্মি গুলি করে হত্যা করে। মমতাজ বেগম  সে মামলায় মোট ১৩ জনকে আসামী করেছেন এবং  সে আসামীর তালিকা মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা মমতাজ বেগমের মামলার  এজাহার ট্রাইব্যনুলে দাখিল করে বলেন ইব্রাহীম কুট্টিকে  হত্যা করা হয় নলবুনিয়ায় পাড়েরহাট নয়। হত্যার তারিখও ভিন্ন। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি ৮ মে। আর মমতাজ বেগমের এজাহারে উল্লেখ রয়েছে ১ অক্টোবর।  তাছাড়া মমতাজ বেগম যে ১৩ জনকে আসামী করেন তখন সেখানে মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। কাজেই মাওলানা সাঈদী কোন অবস্থাতেই এ ঘটনার  সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করেন তারা।


ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রীর মমতাজ বেগম যে  মামলা করেন তার এজহারে উল্লেখ  করা হয়েছে জীবন বাঁচাতে  তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি তাকে নিয়ে  তার বাপের বাড়ি নলবুনিয়ায় চলে আসেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়।    তিনি তার স্বামীকে নিয়ে বাপের বাড়ি থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালের  ১ অক্টোবর আসামীরা  তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টিকে গুলি করে হত্যা করে। সে ঘটনায় তার হাতেও গুলি লাগে। মমতাজ বেগম এখনো জীবিত কিন্তু তাকে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা হয়নি।

মমতাজ বেগম তার স্বামীর হত্যা মামলায় যাদের আসামী করেছেন তারা হলেন, দানেশ মোল্লা,  আতাহার আল, আশ্রাব আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী কালাম চৌধুরী, রুহুল আমিন, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন, সেকোন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা।  আসামীদের তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। এছাড়া পাকিস্তান আর্মিকেও আসামী করা হয় মমতাজ বেগমের মামলায়।

মমতাজ বেগমের মামলার এজাহারে যাদের নাম রয়েছে আসামী হিসেবে  তাদের প্রায় সকলকেই  পাড়েরহাটের  কুখ্যাত রাজাকার এবং পিস কমিটির নেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা।


রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা যা বলেছেন :
গত ২৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের  ষষ্ঠ সাক্ষী  মানিক পসারী তার জবানবন্দীতে বলেন,  ১৯৭১ সালে ৮ মে পাক সেনাবাহিনী নিয়ে দেলোয়ার শিকদার বর্তমানে সাঈদী, সেকেন্দার শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মোসলেম মাওলানা, রেজাকার  মবিন, হাকিম কারী, সোবহান মাওলানাসহ আরো অনেক রেজাকার আমার বাড়িতে   প্রবেশ করে। তাদের আসতে দেখে আমি বাড়ির  পাশে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকি এবং সব ঘটনা  দেখতে  থাকি। তারা আমার বাড়িতে প্রবেশ করে আমার ফুফাত ভাই মফিজ উদ্দিন (  বাড়িতে কাজ করত)  এবং অপর কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকে আর্মিরা ধরে একই দড়িতে বাঁধে। তারপর  লুটপাট করে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।  মফিজ ও ইব্রাহিম কুট্টিকে  বেঁধে পাড়েরহাট নিয়ে যাবার সময় আমি তাদের পেছনে পেছনে যেতে থাকি। তাকে পারের  হাট বাজারের মধ্যে  ব্রিজের ওপারে নিয়ে যায়।  আমি  এপারে বসে তাদের লক্ষ্য করি। দেলোয়ার  হোসেন শিকদারকে আর্মির সাথে পরামর্শ করতে দেখি। তারপর দেলোয়ার হোসেন শিকদার, সেকেন্দার শিকদারের সাথে পরামর্শক্রমে পাক আর্মিরা  ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে। ইব্রাহিম চিৎকার মারে। তারপর লাশ নদীতে ফেলে দেয়।

গত ২১  ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্র্থ সাক্ষী সুলতান আহমদ হাওলাদার বলেন, মানিক পসারীর  বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে দেখি দানেশ আলী মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন  শিকদার বর্তমান সাঈদী, মোসলেম মাওলানাসহ অনেক রাজাকার বাহিনী  মানিক পসারীর বাড়ির  কর্মচারী ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বাজারের দিকে। আমি তাদের পিছু পিছু  যেতে থাকি। বাজারের ব্রিজ পার হয়ে পশ্চিম দিকে যাবার পর আমি এপার বসে  থাকি। উত্তর দিকে থানার ঘাট পর্যন্ত নিয়ে যাবার পর  দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমানে সাঈদী সাহেব পাক আর্মির সাথে কি যেন বলাবলি করছে দেখতে পাই। তখনই বিকট  গুলির শব্দ এবং চিৎকার শুনতে পাই।     এরপর   ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসার পর পরের দিন শুনতে পাই মানিক পসারীর বাড়ির কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করে পানিতে ফেলে দিয়েছে।

২৯ ডিসেম্বর   সাক্ষ্য দেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মফিজউদ্দিন পসারী। মফিজ মানিক পসারীর ফুফাত ভাই এবং সে  মানিক পসারীদের বাড়িতে  কাজ করত। ইব্রাহীম কুট্টির সাথে তাকেও ৮ মে পাড়েরহাট ধরে নিয়ে যায় মর্মে দুজন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্যে বলেছেন। তবে মফিজ উদ্দিন প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।    মফিজ উদ্দিন তার জবনাবনন্দীতে বলেন,  ১৯৭১ সালের ৮ মে সকালে   গরু মহিষ  নিয়ে চরে যাই। সাথে ইব্রাহিম কুট্টিও ছিল। কিন্তু  আনুমানিক ১০/১১টার দিকে  চরে বসে বসে মামার   বাড়িতে আগুন  এবং  ধোয়া দেখতে পাই। তারপর মামার বাড়ির দিকে ফিরে আসি।  এসময় দেখি ১২/১৪ জন পাক আর্মি, ২০/২২ জন রাজাকার মামার বাড়ি যাচ্ছে । তার মধ্যে দিলু  শিকদার ছিল। আমরা পালাতে চাইলে পাক আর্মি ধরে ফেলে। আমাদের দুজনকে এক দড়িতে  বাঁধে।  এরপর রাজাকাররা ঘরে ঢুকে  লুটপাট করে এবং কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।  আমাদের দুজনকে পারেরহট বাজারে নিয়ে যায়।   পুল থেকে নামিয়ে দিলু শিকদার (তাদের ভাষায় দিলু শিকদার মানে মাওলানা সাঈদী) সেকেন্দার শিকাদর উর্দুতে কি যেন বলল। আমি উর্দু বুঝিনা এবং কি বলেছিল তা  শুনতে পাইনি। এরপর ইব্রাহিমকে  দড়ি থেকে খুলে ছেড়ে দিল এবং আমাকে নিয়ে সামনের দিকে গেল। তারপর গুলির  শব্দ শুনতে পাই। ইব্রাহিম মা বলে চিৎকার করে। পেছনে তাকিয়ে দেখি ইব্রাহিমকে গুলি করছে। সেনাবানিহনী লাথি মেরে লাশ নদীতে ফেলে দিল।


গত ১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন  মো: মোস্তফা হাওলাদার।  মোস্তফা হাওলাদার  জবানবন্দীতে বলেন, আমি ১৯৭১ সালে পারেরহাট বাজারে বুটমুড়ি ফেরি করে বিক্রি করতাম।  মে মাসের সাত তারিখ  শান্তি কমিটির দেলোয়ার  শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মোসলেম মাওলানা এরা  বাজারের উত্তর মাথায় রিক্সা স্ট্যান্ডের কাছে যায়। কিছুক্ষন পর ২৬টি  রিক্সায় ৫২ জন পাক আর্মি আসে।..... অর্মির অর্ডারে শুরু হয় লুটপাট। ....... আমরা খালের ওপারে বসে ধোয়া এবং আগুন দেখতে পাই নুরু খার ঘরের। আগুন আর ধোয়া দেখার পর দেখি  লুটপাট করে লোকজন রইজুদ্দীন কোম্পানীর বাড়ির দিকে যাচ্ছে। রইজুদ্দীন সইজুদ্দীন পসারীর বাড়িতে (মানিক পসারীদের বাড়ি) দুজন লোক থাকত মফিজ উদ্দিন এবং ইব্রাহীম কুট্টি নামে। তারা চরে গিয়েছিল গরু চড়াতে। তারা আগুন দেখে দৌড়ে আসে। এসময় দেলোয়ার শিকদার তাদের চাইপপা ধরে এবং মফিজ উবরাইয়া পরে যায়।  পাক আর্মি ধরে ইব্রাহিম কুট্টিকে। তাদের এক দাড়িতে বেঁধে পারেরহাট বাজারে নিয়ে যায়। তারপর মফিজকে পারেরহাট রাজাকার ক্যাম্পে আর ইব্রাহিমকে নেয়া হয় থানার ঘাটের দিকে। তারপর গুলির শব্দ শুনি। থানার ঘাটের কাছে ব্রিজের গোড়ায় ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেয়।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষীরা যা বলেছেন :
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  তিনজন  সাক্ষী ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

গত নয় অক্টোবর ১১ তম সাক্ষী গোলাম মোস্তাফার তার জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ অক্টোবর আমার গ্রাম নলবুনিয়ায় আজাহার আলী হাওলাদারের বাড়িতে একটি ঘটনা ঘটে। ওইদিন ফজরের আজানের পূর্ব মুহূর্তে এক প্রচন্ড শব্দ শুনে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে উঠার পরেই মসজিদে আযান হলে মসজিদে নামায পড়তে যাই। নামাজের পরে মুসল্লিদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হতে থাকে যে, আযানের পূর্বে কোথায় এই প্রচন্ড শব্দটি হলো। এই আলাপ আলোচনা করতে করতে আমরা মসজিদের সামান্য দূরে খালের পাড়ের রাস্তায় আসি। একটু পরেই দেখতে পাই  উত্তর দিক থেকে দানেশ আলী মোল্লা, মোসলেম মাওলানা, সেকেন্দার শিকদার, রুহুল আমীন, মোমিন,  আজহার আলী হাওলাদারের ছেলে সাহেব  আলী এবং তার মাকে  নিয়ে পাড়েরহাটের দিকে যাচ্ছে। তার ৫/৭ মিনিট পরে নৌকায় করে আইউব আলী  চকিদার, কালাম   চকিদার, হামিক মুন্সি, আব্দুল মান্নান, আশরাফ আল মিলে আজহার আল হাওলাদারের জামাই ইব্রাহীম কুট্টির লাশ নিয়ে যাচ্ছে।
এরপর আমরা কায়েকজন আজহার হাওলাদারের বাড়ি যাই। সেখানে  গিয়ে বাড়িভর্তি মানুষ এবং ঘরে কান্নার রোল শুনতে পাই। লোকজন বলাবলি করতেছে আজহার হাওলাদারের জামাইকে (ইব্রাহীম কুট্টি)  মেরে ফেলেছে। ইব্রাহীমের স্ত্রী মমতাজ বেগমও সেকথা জানায়।

এরপর আমরা সেখান থেকে চলে আসি।  বিকালের দিকে শুনি সাহেব আলীকে (মমতাজ বেগমের ভাই এবং ইব্রাহীমের শ্যালক)  এবং তার মাকে রাজাকাররা পিরোজপুরে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গেছে। পরের দিন শুনি  সাহেব আলীর মা সেতারা বেগম ফিরে এসেছে এবং সাহেব আলীকে পাকিস্তানী বাহিনী পিরোজপুরে গুলি করে মেরেছে।

এছাড়া মাওলানা সাঈদীর পক্ষে দ্বিতীয় সাক্ষী আব্দুর রাজ্জাক আঁকনও গত ৫  অক্টোবার ইব্রাহীম কুট্টি  হত্যা বিষয়ে একই ধরনের জবানবন্দী প্রদান করেন।

ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিবরন তুলে ধরে গত ২ অক্টোবর  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সপ্তম সাক্ষী হিসেবে  সাক্ষ্য  দেন পিরোজপুর নলবুনিয়ার জামাল হোসেন ফকির।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আমি আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি রাত্রের শেষ ভাগে আমি নৌকা নিয়ে বড়শি তুলে বাড়ির কাছাকাছি আসলে বিশাল একটা শব্দ শুনতে পাই। পরে আজহার আলীর বাড়ি গিয়ে দেখি  ইব্রাহিম কুট্টির লাশ আইয়ুব আলী চৌকিদার, কালাম চৌকিদার, হাকিম মুন্সি, মান্নান ও আশরাফ আলী খালের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তার পিছে দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, মোসলেম মওলানা, রুহুল আমিন, মোমিনরা মিলে সাহবে আলীকে পিছমোড়া দিয়ে বেঁধে তার মাকেসহ পাড়েরহাটে দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি সামনে এগিয়ে দেখি ইব্রাহিম কুট্টির লাশ নৌকায় তুলে পাড়েরহাটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি সাহেব আলীদের ঘরে চলে আসি। ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতেছে

তারপরের দিন আবার তাদের  বাড়ি গিয়ে জানতে পারি পিরোজপুর নিয়া সাহেব আলীকে মিলিটারীরা গুলি  করে মারছে। সাহেব আলীর মা ফিরে এসেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন