শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

পিডব্লিউ ১৬

   রোববার ৭ অক্টোবর ২০১২
আমার নাম মো: মতিউর রহমান, আমার বয়স- ৫৯ বৎসর। আমি অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার। সি,আই,ডি বাংলাদেশ, ঢাকা হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন নম্বর স্ব:ম: (আই-২) তদন্তকারী সংস্থা/১-৫/২০১০/২৪০ তারিখ ২১-০৭-২০১০ খ্রিষ্টাব্দ মূলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বাংলাদেশ ঢাকায় তদন্ত সংস্থায় নিয়োগ ও বদলী সূত্রে ০১-০৮-২০১০ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে আমি তদন্তকারী অফিসার হিসাবে যোগদান করি। তদন্ত সংস্থার অফিস হইতে জ্যেষ্ঠ তদন্তকারী অফিসার জনাব মো: আব্দুর রহিম, বি.বি.এম (অতিরিক্ত আই,জি,পি) আমাকে একপক্ষ ১-১৫ ই আষাঢ়, ১৪১৭ বাংলা প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা ১৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত প্রতিবেদনের ফাটোকপি তৎসহ আসামী অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত অপরাধ মূলক কার্যকলাপের কতিপয় তথ্য সংক্রান্ত একটি নথি তদন্তের জন্য আমার নিকট হস্তান্তর করেন। আমি উক্ত নথি পর্যালোচনা করে আসামী অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য তদন্ত সংস্থায় কমপ্লেইন্ট রেজিষ্টার ক্রমিক নং-০৫ তারিখ ০১-০৮-২০১০ খ্রিষ্টাব্দ মূলে লিপিবদ্ধ করিয়া তদন্ত কার্যক্রম শুরু করি। তদন্তকালে আমি বাংলা একাডেমী, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, ন্যাশনাল আরকাইভে রক্ষিত সম-সাময়িক পত্র-পত্রিকা বিভিন্ন দলিল পত্রাদি পর্যালোচনা করিয়া ১৯৭১ সনের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ঐ সময়ে সংঘটিত ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন (১৯৭৩ সালের ১৯ নম্বর আইন) এর ৩(২) ধারা মোতাবেক মানবতাবিরোধী অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা ও অন্যান্য মানবতা বিরোধী অপরাধ ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ, লেখকের বিবৃতি, তথ্য সমৃদ্ধ বই-পুস্তক পর্যালোচনা করি এবং সংশ্লিষ্ট আলামত পরীক্ষা করি। দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত বধ্যভুমি, গণহত্যা, লাইব্রেরী ইত্যাদি পরিদর্শন করি এবং আমার সহযোগী অফিসারদের একাত্তর ভুক্তভোগী সহ প্রত্যক্ষ স্বাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করি। তদন্তকালে আমি ও আমার সহযোগী সহ ল্যাপটপ, স্ক্যানার, প্রিন্টার ডিজিটাল ক্যামেরা, ফটোকপিয়ার মেশিন ইত্যাদি সরঞ্জাম ব্যবহার করিয়া গত ০১-০৮-২০১০ ইং তারিখ হইতে ২৫-১০-১১ ইং খিষ্টাব্দ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৫ টি জব্দ তালিকা মূলে আলামত জব্দ করি যাহা নি¤œ রুপ:-
১। গত ২২-০২-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৪.০০ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে সংবাদ শিরোনামে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় ১৮-০৫-১৯৭১ ইং তারিখ হইতে ২৯-১১-১৯৭১ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ৩০ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-১ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-১/৬ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই ৩০টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-১ হইতে ৩১ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
২। গত ২৪-০২-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৪.৩০ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক আজাদ পত্রিকার ০৫-০৪-১৯৭১ ইং তারিখ হইতে ১৩-১১-১৯৭১ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ২০ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-৩২ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-৩২/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল। সেই ২০ টি সংবাদের মধ্যে ১৮টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-৩৩ হইতে ৫০ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
৩। গত ২৭-০২-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৪.১৫ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকার ০৬-০৪-১৯৭১ ইং তারিখ হইতে ২২-০৯-১৯৭১ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ২৪ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-৫১ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-৫১/৪ হিসাবে চিহ্নিত হইল। সেই ২৪ টি সংবাদের মধ্যে ২২টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-৫২ হইতে ৭৩ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
৪। গত ২৮-০২-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৪.০০ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ১৬-০৬-১৯৭১ ইং তারিখ হইতে ০২-১২-১৯৭১ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ২৪ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-৭৪ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-৭৪/৪ হিসাবে চিহ্নিত হইল। সেই ২৪ টি সংবাদের মধ্যে ২৩টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-৭৫ হইতে ৯৭ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
৫। গত ২৮-০৩-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৪.৩০ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার ০৬-০৪-১৯৭১ ইং তারিখ হইতে ২৭-১১-১৯৭১ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ১৮ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-৯৮ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-৯৮/৩ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই ১৮ টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-৯৯ হইতে ১১৬ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
৬। গত ১৫-০৩-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৪.৩০ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক অবজারভার পত্রিকার ০১-০১-১৯৭২ ইং তারিখ হইতে ২৮-০২-১৯৭২ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ৩০ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-১১৭ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-১১৭/৪ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই ৩০ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ২০ টি পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছে এবং ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-১১৮ হইতে ১৩৭ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।

                       



০৭-১০-২০১২ ইং ২.০০ মি: পুনরায় জবানবন্দী শুরুঃ-
৭। গত ২৪-০৩-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৩.৩০ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ১৯-১২-১৯৭১ ইং তারিখ হইতে ১৬-১২-১৯৭১ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ২৫ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-১৩৮ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-১৩৮/৪ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই ২৪ টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ২১ টি পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছে এবং ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-১৩৯ হইতে ১৫৯ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
৮। জনাব মো নুরুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার, তদন্ত সংস্থা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে আমি চিনি। তার হাতের লেখা ও দস্তখত আমি চিনি। তিনি বিগত ১৪-০৯-২০১১ ইং তারিখে বাংলা একাডেমী হইতে ২০-০৩-২০১১ ইং তারিখে দৈনিক সমকাল পত্রিকা সহ মোট ২৬ টি পত্রিকার সংবাদ জব্দনামা মুলে জব্দ করেন। এই সেই জব্দনামার ফটোকপি যাহা ইতোপূর্বে প্রদর্শনী-১৬০ হিসেবে চিহ্নিত হইয়াছে এবং উহাতে তাহার দস্তখত প্রদর্শনী-১৬০/৩ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে। এই সেই ২০-০৩-২০১১ ইং তারিখের দৈনিক সমকাল সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতিপূর্বে প্রদর্শনী-১৬১ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে (ডিফেন্সের আপত্তি সহকারে)।
৯। গত ১২-১০-২০১১ ইং তারিখে ১৪.৩০ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক অবজারভার পত্রিকার ১০-০১-১৯৭২ ইং তারিখ হইতে ২৯-০২-১৯৭২ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ৩ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-১৬২ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-১৬২/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই ৩ টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-১৬৩ হইতে ১৬৫ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
১০। গত ১২-১০-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৫.০৫ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক পয়গাম পত্রিকার ১২-০৪-১৯৭১ ইং তারিখ হইতে ২২-০৫-১৯৭১ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ৩ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-১৬৬ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-১৬৬/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই ৩ টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-১৬৭ হইতে ১৬৯ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
১১। গত ১২-১০-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৫.৩০ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ০৭-০১-১৯৭২ ইং তারিখ হইতে ২৬-১১-১৯৭২ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ৫ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-১৭০ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-১৭০/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই ৫ টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-১৭১ হইতে ১৭৫ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
১২। গত ১২-১০-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৬.১৫ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক আজাদ পত্রিকার ১৮-০২-১৯৭২ ইং তারিখ হইতে ১২-০৬-১৯৭২ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ৬ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-১৭৬ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-১৭৬/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই ৬ টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-১৭৭ হইতে ১৮২ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
১৩। গত ১২-১০-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৬.৩০ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার ২৬-১২-১৯৭১ ইং তারিখের ১টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-১৮৩ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-১৮৩/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-১৮৪ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
১৪। গত ১৩-১০-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১২.৩০ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে স দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ১৮-০৭-১৯৭১ ইং তারিখ হইতে ২৬-০৪-১৯৭২ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ৭ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-১৮৫ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-১৮৫/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই ৭ টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ৭টি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-১৮৬ হইতে ১৯২ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
১৫। গত ১৩-১০-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৩.৩০ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার ২৫-১২-১৯৭১ ইং তারিখ হইতে ৩০-১২-১৯৭১ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ৩ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-১৯৩ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-১৯৩/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই ৩ টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-১৯৪ হইতে ১৯৬ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
১৬। গত ১৩-১০-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৪.৩০ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক অবজারভার পত্রিকার ০৪-০১-১৯৭২ ইং তারিখ হইতে ১৪-০২-১৯৭২ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ৯ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-১৯৭ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-১৯৭/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই ৯ টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ৮টি পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছে এবং এগুলি ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-১৯৮ হইতে ২০৫ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
১৭। গত ২৪-১০-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৩.১৫ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক আজাদ পত্রিকার ২৬-১২-১৯৭১ ইং তারিখ হইতে ১৫-০৩-১৯৭২ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ৫০ টি এবং দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ০৫-০১-১৯৭২ ইং তারিখে ১টি সর্বমোট ৫১ টি  সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-২০৬ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-২০৬/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই ৫১ টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ৪৩টি পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছে এবং এগুলি ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-২০৭ হইতে ২৪৯ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
১৮। গত ২৪-১০-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১৪.৩০ ঘটিকার সময় বাংলা একাডেমী হইতে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার ০৪-০৫-১৯৭১ ইং তারিখ হইতে ২৯-১১-১৯৭১ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ১১০ টি এবং দৈনিক আজাদ পত্রিকার ০৩-০৫-১৯৭১ ইং তারিখ হতে ১১-১২-১৯৭১ তারিখ পর্যন্ত ১১৯টি এবং দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকার ০৬-০৭-১৯৭১ ইং তারিখ হতে ২৮-১১-১৯৭১ ইং তারিখ পর্যন্ত ২৩টি অর্থাৎ সর্বমোট ২৪২ টি সংবাদের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। প্রদর্শনী-২৫০ হইল সেই জব্দনামা এবং উহাতে আমার একটি দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-২৫০/১৪ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই ২৪২ টি খবরের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতোমধ্যে প্রদর্শনী-২৫১ হইতে ৪৩৫ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।



০৮-১০-২০১২ ইং পুনরায় জবানবন্দী শুরুঃ-
১৯। গত ১০-১০-২০১২ ইং তারিখে ১৬.৩০ ঘটিকার সময় ঢাকাস্থ বাংলাদেশ পুলিশ স্পেশাল ব্রাঞ্চ, রাজনৈতিক শাখা হইতে বাংলাদেশ পুলিশ এ্যাবষ্ট্রাক্ট অব ইনটেলিজেন্স ভলিউম-২৫ এর ৪১ এ্যাষ্ট্রাক্টের সত্যায়িত কপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। এই সেই জব্দনামা যাহা পূর্বেই প্রদর্শনী-৪৩৬ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে এবং উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী-৮৩৬/৮ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে। এই সেই জব্দকৃত ৪১ টি এ্যাবষ্ট্রক্টের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা প্রদর্শনী-৪৩৭ হইতে প্রদর্শনী-৪৭৭ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
২০। গত ০৩-০৩-২০১২ ইং তারিখের ২০.০০ ঘটিকার সময় এস,পি. ডি,এস,পি. অফিস কুষ্টিয়া হইতে ১৬টি ফোর্ট নাইটলি রিপোর্ট অন পলিটিক্যাল সিচুয়েশন অব ১৯৭১ (টপ সিক্রেট নম্বর ৫-২০ পর্যন্ত) এর সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। এই সেই জব্দনামা যাহা প্রদর্শনী-৪৭৮ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে এবং উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী-৪৭৮/৬ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে। এই সেই জব্দকৃত ১৬টি রিপোর্ট যা পূর্বেই প্রদর্শনী-৪৭৯ হইতে প্রদর্শনী-৪৯৪ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
২১। গত ০২-০৮-২০১০ ইং তারিখে ১৪.০০ ঘটিকার সময় ৩৬ চামেলীবাগ, প্যারাডাইস তমাল হাউজ, ৪/সি, থানা পল্টন, ঢাকার বাসা হইতে আনোয়ারা বেগমের দাখিল করা মতে সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে সিরুমিয়া দারোগা, আনোয়ার কামাল, শহীদ নজরুল ইসলাম ও আনোয়ারা বেগমের ছবি ও পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। এই সেই জব্দনামা যাহা প্রদর্শনী-৪৯৫ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে এবং উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী-৪৯৫/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই জব্দকৃত ছবি ও পত্র যাহা পূর্বেই প্রদর্শনী-৪৯৬ হইতে ৪৯৭ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
২২। গত ২০-০৪-২০১১ ইং তারিখে ১৫.০০ ঘটিকার সময় বাংলাদেশ যাদুঘর, শাহবাগ, ঢাকা এর গ্যালারী নম্বর ৩৮ তে রক্ষিত ছবি/আইডি কার্ড/তীর/ধনুক/বল্লম/রামদা/ব্যাজ/প্রতীক/গোলার খোল এবং বিমানের ভগ্নাংশ মো: মনিরুল হক, পিতা মো: এনামুল হক, সাং- বাউনি, থানা- শ্রীপুর, জেলা-গাজীপুর, সহকারী কীপার, ইতিহাস ও ধ্রুপদি শিল্পকলা বিভাগ, জাতীয় যাদুঘর, ঢাকা এর উপস্থাপন মোতাবেক সাক্ষীদের উপস্থিতিতে মো: রাজ্জাক খান, পি.পি.এম, তদন্তকারী অফিসার, তদন্ত সংস্থা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, মোট ৮৫ টি ডকুমেন্ট জব্দনামা মূলে জব্দ করেন। আমি তার হাতের লেখা এবং দস্তখত চিনি। এই সেই জব্দনামা যাহা ইতিপূর্বে ৪৯৮ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে এবং উহাতে তাহার দস্তখত প্রদর্শনী-৪৯৮/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল (ডিফেন্সের আপত্তি সহকারে)। জব্দকৃত ৮৫টি ডকুমেন্টের মধ্যে ১৮টি ডকুমেন্ট যাহা ইতিপূর্বে প্রদর্শনী-৪৯৯ হইতে প্রদর্শনী-৫১০ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
২৩। ০৯-০২-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১০.০০ ঘটিকার সময় পুলিশ সুপারের কার্যালয়, ঢাকা এর স্মারক নং ৩৫৯৯/আর,ও তারিখঃ- ১৪-০৮-৯৬ ইং সহ সংলগ্ন ৪ পাতা এর সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। এই সেই জব্দনামা যাহা ইতোপূর্বে প্রদর্শনী-৫১১ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে এবং উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী-৫১১/২ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে। এই সেই জব্দকৃত স্মারকের সত্যায়িত ফটোকপি যাহা ইতোপূর্বে প্রদর্শনী- ৫১৩ হিসাবে চিহ্নিত হইল। সেই মূল স্মারক পত্রটি ঐ একই তারিখে একই সময়ে মোঃ আমিনুল ইসলাম (পি-ডব্লিউ-৯) এর নিকট সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে জিম্মানামা মূলে জিম্মায় প্রদান করি। এই সেই জিম্মানামা যাহা ইতিপূর্বে প্রদর্শনী- ৫১২/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল।
২৪। বিগত ২৪-০১-২০১১ ইং তারিখে বেলা ১১.৩০ ঘটিকার সময় মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সমন্বয় অধিশাখা, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ হইতে বাংলাদেশ গেজেট এক্সট্রা অর্ডিনারী পাবলিষ্ট বাই অথোরিটি, টুয়েষ্টডে, মে ২৩, ১৯৭২- দি প্রকামেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স মুজিবনগর, বাংলাদেশ ডেটেড ১০ই এপ্রিল, ১৯৭১, দি বাংলাদেশ গেজেট এক্সট্রা অর্ডিনারী, তারিখ ২ মে, ১৯৭২ এবং ১০ই এপ্রিল, ১৯৭১ মুজিব নগরে গঠিত সরকারের সত্যায়িত ফটোকপি সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। এই সেই জব্দনামা যাহা পূর্বেই প্রদর্শনী- ৫১৪ হিসাবে চিহ্নিত হইল এবং উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী- ৫১৪/২ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই জব্দকৃত গেজেটের সত্যায়িত ফটোকপি ও মুজিব নগর সরকারের ফটোকপিসমূহ যাহা ইতিপূর্বে প্রদর্শর্নী- ৫১৫ হইতে প্রদর্শনী- ৫১৭ পর্যন্ত চিহ্নিত হইল।
২৫। বিগত ০১-০৮-২০১০ ইং তারিখ ১১.৩০ ঘটিকার সময় একপক্ষ অফিস, উকিলবাড়ি, ডমিনো সনরিৎসা ৯/১৪ ইকবাল রোড, মোহাম্মাদপুর, ঢাকা হইতে একপক্ষ, ১-১৫ আষাঢ়, ১৪১৭, ১ বর্ষ, সংখ্যা ১ সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে জব্দনামা মূলে জব্দ করি। এই সেই জব্দনামা প্রদর্শনী- ৫১৮ এর উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী- ৫১৮/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই জব্দকৃত এক পক্ষের সত্যায়িত ফটোকপি প্রদর্শনী- ৫১৯ হিসাবে চিহ্নিত হইল।

ইহাছাড়া আমি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর হইতে পিস কমিটির সাথে রাজাকার সিভিল ও সামরিক প্রশাসনের যোগাযোগ সংক্রান্ত পত্র মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী ও স্থানীয় দোষরদেরকৃত অপরাধে ভিডিও চিত্র বাংলাদেশের সমস্ত জেলা প্রশাসক হইতে প্রাপ্ত বধ্যভূমি, গণকবরের তালিকা, পিস কমিটি, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের তালিকা, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের বিভিন্ন হাট-বাজার, বাড়ি-ঘরে অগ্নি সংযোগের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ ইত্যাদি সংগ্রহ করিয়াছি যাহা আমার তদন্ত প্রতিবেদনের সংগে বই আকারে ৩১-১০-২০১১ ইং বিজ্ঞ চীফ প্রসিমিউটরের নিকট দাখিল করা হইয়াছে। আমার ঐ তদন্ত প্রতিবেদনের ৩৬০ পৃষ্ঠা সম্বলিত। তদন্ত প্রতিবেনের সাথে জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণপত্র মোট ৬খন্ড দাখিল করিয়াছি। ইহাছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ও ইতিহাস দুই খন্ড, সাক্ষীদের জবানবন্দী একখন্ড দাখিল করিয়াছি, ইহা ছাড়াও ফোর্ট নাইটলি রিপোর্ট অন পলিটিক্যাল সিচুয়েশন, ১৯৭১ ফ্রম স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ইষ্ট পাকিস্তান, ঢাকা এবং ইষ্ট পাকিস্তান পুলিশ এ্যাবষ্ট্রক্ট অব ইনটেলিজেন্স ভলিউম ২৫ এর ফটোকপি দুই খন্ড দাখিল করিয়াছি। তদুপরি ১০টি ডিভিডি দাখিল করিয়াছি। (চলবে)




০৯-১০-২০১২ইং তারিখে পুনরায় জবানবন্দী শুরু ঃ-
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোষরদের কৃত অপরাধ সংক্রান্ত ১০টি ডি.ভি.ডি দাখিল করিলাম। ইহা ছাড়াও ইনডেক্স অব এ.বি.সি. এন.বি.সি. এবং সি.বি.এস. নিউজ দাখিল করিলাম। তদন্তকালে আমি শহীদ সিরু মিয়া দারোগা তাহার কিশোর পুত্র শহীদ আনোয়ার কামাল, শহীদ নজরুল সহ মোট ৩৮ জনের হত্যার বিষয় তদন্ত করি। তদন্তকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। আলামত জব্দ করি ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করি। ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র ও সূচীপত্র আলাদা কাগজে প্রস্তুত করি। এই সেই খসড়া মানচিত্র প্রদর্শনী-৫২০ এবং উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী-৫২০/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই সূচীপত্র প্রদর্শনী-৫২১ এবং উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী-৫২১/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। তদন্তকালে আমি পৈরতলা গণকবরের, গণকবর সংলগ্ন রেলওয়ে ব্রীজ, বি. বাড়িয়া পুরাতন জেলখানা এবং দানা মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ফটোগ্রাফ সংগ্রহ করি যাহা যথাক্রমে প্রর্দশনী- ৫২২, ৫২২/১, ৫২২/২ এবং ৫২২/৩ হিসাবে চিহ্নিত হইল।
মামলা সংক্রান্তে আমি তিনটি জব্দ তালিকা মোতাবেক আলামত জব্দ করি যাহা ইহিপূর্বে প্রদর্শনী ৫১৮,৫১৯,৪৯৬-৪৯৭ এবং  ৫১১-৫১৩ হিসাবে প্রদর্শিত হইয়াছে।
এই মামলা সংক্রান্ত আমি যে সকল সাক্ষীর জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করিয়াছে তাহার মধ্যে সাক্ষী মহসিন আলী খান, পিতা মৃত রিয়াসত আলী খান এর জবানবন্দী আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের ১৯(২) ধারা মোতাবেক ট্রাইব্যুানাল কর্তৃক সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহন করা হইয়াছে। এই সেই জবানবন্দী যাহা ০৩-০৮-২০১০ ইং তারিখে আমি লিপিবদ্ধ করিয়াছি, উহা প্রদর্শনী-৫২৩ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে। উহাতে আমার স্বাক্ষর প্রদর্শনী ৫২৩/১ হিসাবে চিহ্নিত হইয়াছে।
তদন্তকালে আমি জব্দকৃত আলামত, প্রাপ্ত কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা, ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া ইহা আমার নিকট স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, আসামী অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৬৯ সাল হইতে ১৯৭১ সাল পযন্ত পূর্ব পাকিস্তানী জামায়াত ইসলামীর আমীর ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ সেই কালো রাত্রিতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে সর্বাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়া নিরহ নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ব্যাপকভাবে মানবতা বিরোধী অপরাধ, গণহত্যা সহ অন্যান্য অপরাধ সংঘটন করিতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে সবকিছু দেখে, শুনে এবং বুঝে ১৯৭১ সালের ৪ঠা এপ্রিল আসামী অধ্যপক গোলাম আযম অন্যান্য ১২ জন লোক সহ গভর্নর হাউজে টিক্কা খানের সহিত সাক্ষাত করিয়া পাকিস্তান বাহিনী কর্তৃক কৃত এবং চলমান উল্লেখিত অপরাধ সমূহ সমর্থন করেন এবং ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা মোতাবেক পাকিস্তান বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এবং আশ্বাস প্রদান করেন। উক্ত ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা ধারাবহিকতায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী সর্বাত্মক অপরাধমূলক কাজে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালের ৯ই এপ্রিল ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রিয় শান্তি কমিটি গঠন করেন। আসামী অধ্যাপক গোলাম আযম উক্ত কমিটির শীর্ষস্থানীয় তৃতীয় ব্যক্তি । বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানী জামায়াতে ইসলামীর আমির ও পিস কমিটির শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্রীয় নেতা ও নিয়ন্ত্রক হিসাবে অপরাধীদের শীর্ষ স্থানে অবস্থান করিয়া তাহার নেতৃত্বাধীন এবং নিয়োজিত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী এবং উহার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ এবং পিস কমিটির কেন্দ্রিয় শীর্ষ স্থানীয় নেতা ও নিয়ন্ত্রক হিসাবে তিনি বিভিন্ন স্থানে উস্কানিমূলক বক্তৃতা, বিবৃতি প্রদান, বেতার বিবৃতি প্রদান করেন। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর সাথে ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা মোতাবেক তাহার দলীয় ও সমমনা লোকদের দ্বারা  পিস কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলসামশ প্রভৃতি বাহিনী গঠন করিয়া দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহিত একত্রে ও আলাদাভাবে অপরাধ মূলক কার্যকলাপ দ্বারা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এর ৩(২) ধারা মোতাবেক অপরাধ করিয়াছেন। যাহাতে অধ্যাপক গোলাম আযমের সম্পৃক্ততা রহিয়াছে যাহা আমার তদন্ত প্রতিবেদন এবং সংযুক্ত জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমান পত্রে উল্লেখ রহিয়াছে এবং তাহা ইতিমধ্যে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হইয়াছে।




১০/১০/২০১২ ইং পুনরায় জবানবন্দী শুরুঃ-
আসামী অধ্যাপক গোলাম আযমের ধারাবাহিক ব্যাপক অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ফলে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মাস হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ত্রিশ লাখ লোক শহীদ হয়েছে। দুই লক্ষ মা বোন ধর্ষিতা হয়েছেন এক কোটি মানুষ দেশান্তরে বাধ্য হয়েছেন, অগনিত মানুষ দেশের ভিতর স্থানান্তরিত হয়েছেন এবং ঝোপে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন, হাজার হাজার বাড়িঘর, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে, মসজিদ-মন্দির রাস্তাঘাট, ব্রীজ কালবার্ট ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছে। জোর পূর্বক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ধর্মান্তরে বাধ্য করা হয়েছে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের  সময় পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলাম এর আমীর এবং পিস কমিটির শীর্ষ স্থানীয় কেন্দ্রীয় নেতা ও নিয়ন্ত্রক হিসাবে অপরাধীদের শীর্ষ স্থানে অবস্থান করিয়া উল্লেখিত অপরাধ মুলক কার্যকলাপের তিনিই মাস্টার মাইন্ড, তিনিই পিস কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস প্রভৃতি বাহিনীর শিরোমনি। অতএব আসামী অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ এর ৩ (২) ধারা মোতাবেক অপরাধ আমার তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশ ঢাকায় বিচারের নিমিত্তে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার স্মারক নাম্বার আঃ অঃ ট্রাইঃ তদন্ত সংস্থা/১১৩৯ তারিখ ৩১-১০-২০১১খ্রিঃ মোতাবেক আমার তদন্ত প্রতিবেদন সহ সমস্ত ডকুমেন্ট বিজ্ঞ চিফ প্রসিকিউটর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মহোদয়ের নিকট দাখিল করি। আসামী অধাপক গোলাম আযম অদ্য ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আছেন।

জেরা ঃ
ফরমাল চার্জ চীফ প্রসিকিউটর দাখিল করেছেন, তিনিই ফরমাল চার্জ সম্পর্কে বলতে পারবেন। এই মামলায় কয়বার ফরমাল চার্জ দাখিল হয়েছে সে সম্পর্কে আমার ধারনা নাই। জেষ্ঠ তদন্তকারী অফিসার জনাব মোঃ আব্দুর রহিম বি,পি,এম অতিরিক্ত আই,জি,পি আপনাকে যে একপক্ষ পত্রিকার ১ম বর্ষ ১৪১৭ বাংলা প্রদান করেছিলেন তাহা আমি প্রদর্শনী- ৫১৯ হিসাবে চিহ্নিত করিয়াছি। আমি সর্বপ্রথম ০১-০৮-২০১০ ইং তারিখ সকাল ১০.০০ ঘটিকার সময় এই মামলার ডায়রী পত্তন পূর্বক তদন্ত কার্যক্রম শুরু করি। এই ডায়রি পত্তনের পূর্বেই আমি একপক্ষ পত্রিকাটি পেয়েছিলাম এবং কমপ্লেইন্ট রেজিস্টারে এন্ট্রি করেছিলাম। কমপ্লেইন্ট রেজিস্টারে কোন মতামত দেওয়ার সুযোগ ছিল না, শুধু মাত্র পত্রিকাটিই কমপ্লেইন্ট হিসাবে এন্ট্রি করেছি। উক্ত পত্রিকার আমি যে অংশটুকু দেখেছি তাতে “যুদ্ধাপরাধের বিচার সরকারের ধীর গতি বিরুধী দলের বাধা” এই শিরোনাম ছিলনা তবে ইহা কভার পেজে ছিল। এই পত্রিকাটি ০১-০৮-২০১০ইং তারিখ বেলা ১১.০০ টার সময় একপক্ষ অফিস, উকিল বাড়ি, ডমিনো-সনরিৎসা, ৯/১৪ ইকবাল রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা- ১২০৫ থেকে জব্দ করেছি। ঐ অফিসের অফিস সহকারী মাহবুব আলমের নিকট থেকে উহা জব্দ করা হয়। আমার জব্দ তালিকায় পত্রিকাটি কয় পৃষ্ঠা তা লেখা নাই। ঐ পত্রিকার কয় পৃষ্ঠা জব্দ করেছি তা লেখা নাই তবে সংখ্যা ১ হিসাবে উল্লেখ করেছি। ঐ পত্রিকার পুরা অংশ জব্দ করেছি। (চলবে)

১১-১০-১২ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ-
আমি ঐ পত্রিকার “গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ প্রধানমন্ত্রীর কাছেই আছে” শিরোনামে অত্র মামলায় দাখিল করেছি। উল্লেখিত শিরোনামের প্রতিবেদনটি একটি মূখ্য প্রতিবেদন, তবে উহার প্রতিবেদকের নাম উল্লেখ নাই। ঐ পত্রিকার ঐ সংখ্যার মূখ্য প্রতিবেদক কে সে সম্পর্কিত কোন কাগজপত্র আমি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করি নাই, তবে ঐ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের নাম উল্লেখ রহিয়াছে। আমি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশককে জিজ্ঞাসাবাদ করি নাই। এই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক কে তা জানার চেষ্টা করি নাই। এই পত্রিকায় প্রাপ্ত জব্দ তালিকায় যে দুইজনকে সাক্ষী করা হয়েছিল তারা এই ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত হয় নাই। কমপ্লেইন্ট নম্বর ৫-এ তে কোন অভিযোগকারীর নাম লিখি নাই। কারণ আমার মতে প্রয়োজন নাই। অভিযোগে উল্লেখিত সিরু মিয়া সম্পর্কে আমি তদন্ত করেছি। সিরু মিয়া কবে কি পদে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেছিলেন তা আমার জানা নাই, তবে ১৯৭১ সালে উনি সাব ইন্সপেক্টর পদে চাকুরী করতেন। সিরু মিয়ার মৃত্যুর পর তার চাকুরীকালীন আর্থিক সুবিধা কে নিয়েছেন তা আমি তদন্ত করি নাই। সিরু মিয়ার সর্বশেষ কর্মস্থল মোহাম্মাদপুর থানার ১৯৭১ সালে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে ছিলেন তা আমি তদন্ত করি নাই। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তারিখে মোহাম্মাদপুর থানায় কতজন সাব-ইন্সপেক্টর ছিলেন তা আমি তদন্ত করি নাই।

এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ যেখানে আছে বলা হয়েছে তা সংগ্রহের জন্য সেখানে আমি যোগাযোগ করি নাই, কারণ তদন্তের জন্য তা প্রয়োজন হয় নাই। উল্লেখিত প্রতিবেদনে বর্ণিত সিরু মিয়াকে মুক্তি দানের জন্য যে চিঠির উল্লেখ সেই চিঠিটি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সচিবালয় বা কোন মন্ত্রণালয়ে আমি কোন পত্র প্রেরণ করি নাই। এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত বক্তব্যের বিষয় আমি তদন্ত করিয়াছি। অধ্যাপক গোলম আযম সাহেবের লিখিত সিরু মিয়ার মুক্তি সংক্রান্ত চিঠিটি সিরু মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আমাকে প্রদান করেন নাই। মহসীন আলী খান সাহেবের নিকট থেকে চিঠির অবস্থান সম্পর্কে আমি কোন খবর পাই নাই, তবে উনি চিঠির অস্তিত্বের কথা বলেছেন। চিঠি উদ্ধারের জন্য আমি পেয়ারা মিয়ার বাড়ি তল্লাশী করি নাই। পেয়ারা মিয়া বর্তমানে জীবিত নাই। তার ছেলে-মেয়ে বর্তমান। তার এক ছেলের নাম ছানাউল হক চৌধুরী। ছানাউল হক চৌধুরীর নিকট এই চিঠির খোঁজে আমি যাই নাই, কারণ আমার ধারণা ছিল তার নিকট ঐ চিঠি থাকলেও তিনি তাহা আমাকে দিবেন। মহসিন আলী খান আনোয়ারা বেগমের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। মহসিন আলী খান ১৯৬১ সালে সরকারি আরমানি টোলা জেলা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে কাজে প্রথম যোগদান করেন।

আমার অনুসন্ধানে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের কার্যাবলী স্বাধীনতার পূর্বের কিছু অংশ, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের সম্পূর্ণ বর্ণনা এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের কিছু অংশের উল্লেখ আছে। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে সৌদি আরবে আল-হামরা প্রাসাদে সৌদি বাদশার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন তাহা আমি তদন্তে পেয়েছি, আমি তারিখটা পাই নাই। তদন্তকালে একজন ব্যক্তির কাছ থেকে আমি এ তথ্য পেয়েছি। এ তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তি যেদিন গোলাম আযম সাহেব সৌদি বাদশার সাথে সাক্ষাত করেন সেদিন তিনিও সাক্ষাত করেছিলেন। তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তি ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে সৌদি বাদশার সঙ্গে যে দেখা করেছিলেন তৎমর্মে কোন প্রামাণ্য দলিল আমার নিকট দেন নাই, তবে তার বক্তব্য আছে। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১১ জুলাই ১৯৭৮ তারিখে পাকিস্তানী পাসপোর্ট যোগে লন্ডন থেকে ঢাকায় আসেন। পাকিস্তানি পাসপোর্ট যোগে লন্ডন থেকে গোলাম আযম সাহেবের ঢাকায় আসার ব্যাপারে আমি তার পাসপোর্ট দেখি নাই, তবে তদন্তে পেয়েছি। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের ভাই ডা. গোলাম মোয়াজ্জেম সাহেব গোলাম আযম সাহেবের সঙ্গে সৌদি আরবে ছিলেন এটা সাক্ষীর বক্তব্য এসেছে।

গোলাম আযম সাহেব লন্ডনে কোন পত্রিকা প্রকাশ করতেন কিনা তা আমার কেস ডাইরীতে উল্লেখ নাই। তার সম্পাদনায় লন্ডনে কোন পত্রিকা হতো কিনা সেটাও আমার কেস ডাইরীতে উল্লেখ নাই। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের লিখিত প্রবন্ধ সম্বলিত কোন লন্ডনের পত্রিকা আমি জব্দ করি নাই। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব, যে পাকিস্তানী পাসপোর্টে বাংলাদেশে এসেছিলেন সেই পাসপোর্ট তিনি এদেশে আসার পরপরই কর্র্তৃপক্ষের নিকট জমা প্রদান করে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চেয়েছিলেন কিনা তাহা আমার কেস ডাইরীতে উল্লেখ নাই, তবে এপ্রিল ১৯৯৩ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশকে ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকে। (চলবে)


১১-১০-২০১২ ইং ২.০০ মিঃ পুনরায় শুরু
লন্ডন এবং সৌদি আরবে গোলাম আযম সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল এরকম একজন ব্যক্তিকেই সাক্ষী করেছি। আমি তদন্তকালে গোলাম আযম সাহেবকে জিজ্ঞাসাবাদ করি নাই। তার বক্তব্য আছে কিনা তা জানার জন্যও তার নিকট কোন পত্র প্রেরণ করি নাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া তৎকালীন জেলখানা হইতে পৈরতলা যেখানে সিরু মিয়াসহ ৩৮ জনকে হত্যা করা হয় সেখানের দূরত্ব আনুমানিক ২ কিলোমিটার। শহীদ সিরু মিয়া ও শহীদ আনোয়ার কামাল যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলখানায় আটক ছিল তৎমর্মে কোন সরকারি রেকর্ড পাওয়া যায় নাই, তবে জেলখানা থেকে আনোয়ার কামাল কর্তৃক লিখিত তাহার মা আনোয়ারা বেগমের নিকট লিখিত চিঠি আছে এবং সাক্ষীও আছে। জেলখানা থেকে আত্মীয়-স্বজনের নিকট চিঠি পাঠাতে গেলে জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠানো হয়, তবে ১৯৭১ সালে এরকম কোনো পরিস্থিতি ছিল না। ১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলখানায় জেল কর্তৃপক্ষ থাকতেও পারে। শহীদ আনোয়ার কামাল কর্তৃক তাহার মায়ের নিকট প্রেরিত চিঠিটি জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রেরিত চিঠি নয়, তবে সাক্ষী আনোয়ারা বেগমের হাতে পৌছেছে। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এস.ডি.ও এর দায়িত্বে ছিলেন মোঃ ইসমাইল হোসেন সি.এম.পি। জেলসুপার কে ছিলেন সে বিষয়ে কোন খোঁজ খবর নিই নাই। ১৯৭১ সালে ঐ জেলখানার কয়েদি/বন্দি সংক্রান্ত কোন নথিপত্র আমি পাই নাই। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তারিখে ঐ জেলখানায় কোন কোন কারারক্ষি দায়িত্বরত ছিলেন তাদের নামও আমি সংগ্রহ করিতে পারি নাই। উল্লেখিত বিষয়ে তথ্য চেয়ে জেলের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট কোন পত্র প্রেরণ করি নাই, কারণ ঐ সময় স্বাভাবিক অবস্থা ছিল না। আমার তদন্তকালে আমি চিনু মিয়া নামীয় একজনের অস্বিত্ব পেয়েছি। আমি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি নাই, কারণ আমি তাকে খুঁজে পাই নাই। তার ঠিকানা পেয়েছিলাম। তার বাড়ি কোথায় তা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। ৩৮ জন শহীদদের মধ্যে শহীদ সিরু মিয়া ও শহীদ আনোয়ার কামাল ব্যতীত বাকী ৩৬ জন শহীদদের মধ্যে নজরুল ইসলামসহ আরো কয়েক জনের পরিচয় পেয়েছি, তবে এ মুহূর্তে তাদের নাম আমি বলতে পারছি না। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে কোন ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছিল এমন কোন পরিবারের সন্ধান পাওয়ার বিষয় আমার কেস ডাইরীতে উল্লেখ নাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্যদের কোন পরিচিত ব্যক্তি ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন সময়ে নিখোজ হওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপারে খোঁজ খবর করার বিষয়ে আমার ডাইরীতে উল্লেখ নাই। (চলবে)





১৪-১০-১২ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ-
আমি তদন্তকালে ২২-০৮-২০১০ ইং তারিখে একবারই ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাই এবং ২৪-০৮-১০ ইং তারিখে ফেরত আসি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সি এ্যান্ড বি রোডের দোতারা মাজার শরীফে আমি গিয়েছিলাম কিনা তা আমার রেকর্ডে নাই। শহীদ সিরু মিয়া যে  তালেবের সংগে যোগাযোগ করে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সেই তালেবকে আমি খুঁজে পাই নাই। তালেবের গ্রামের নাম ছিল সুভারামপুর। এর বেশি তার সম্পর্কে কোন তথ্য আমার রেকর্ডে নাই। তালেবের ঠিকানা সংগ্রহের জন্য সাক্ষী আনোয়ারা বেগম এবং শফিউদ্দিনকে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। তারা জানাইয়াছিল যে, তারা তালেবকে চিনেন এবং তার বাড়ি সুভারামপুরে। সুভারামপুর গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কোন্ থানায় অবস্থিত সে মর্মে তথ্য চাহিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার এসপি বা ডিএসপির নিকট কোন পত্র প্রেরণ করি কিনা তা আমার রেকর্ডে নাই। সুভারামপুর গ্রামের তালেবের অবস্থান জানার জন্য অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, তবে কাকে কাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি তা আমার রেকর্ডে নাই। তন্তর চেকপোষ্ট যেখানে ছিল সেখানে আমি স্বশরীরে যাই নাই, তবে খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি তন্তরে এখন আর কোন চেকপোষ্ট নাই। শহীদ সিরু মিয়াদেরকে যে অবস্থায় আটক করা হয়েছিল সেইখানে বর্তমানে সেই অবস্থা নাই। তন্তর চেকপোষ্ট কসবা থানাধীন। এ স্থাপনা বা অবস্থান সম্পর্কে কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বা ঐ থানার কোন এসআই কে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়টি আমার রেকর্ডে নাই। তবে তদন্তে এবং অন্যান্য সাক্ষ্য প্রমাণে ইহা আমি জানতে পারি। শহীদ সিরু মিয়াদের আটক করার সময় তন্তর চেকপোষ্টে যে সকল রাজাকার কর্মরত ছিল তাদের খোঁজ খবর করার বিষয় কোন তথ্য আমার রেকর্ডে নাই। তন্তরের অনেক লোকজনকে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে তাদের নাম এ মুহূর্তে আমার স্মরণ নাই। তন্তরে যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম তাদের নাম আমার কেস ডাইরীতে লিপিবদ্ধ করি নাই। ২২-০৮-১০ ইং তারিখে ১৮:০০টার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছানোর পর তন্তরসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন আমার সংগে দেখা করেছেন আমি তাদের সংগে কথা বলেছি। তাদের নাম ডাইরীতে আছে, তবে বিশেষভাবে তন্তরের লোক হিসেবে কারো নাম নাই। ঠিকানা উল্লেখে ১১ জনের  নাম উল্লেখ আছে, তবে ঠিকানাবিহীন কারো নাম উল্লেখ নাই। বিভিন্ন সংগঠনের নাম উল্লেখ আছে। উল্লেখিত ১১ জনের সবাইকে এই মামলার সাক্ষী করি নাই। একজন সাক্ষী সোনা মিয়া এই মামলা সংক্রান্ত হওয়ায় তাকে এই মামলার সাক্ষী করেছি।
সুনির্দিষ্টভাবে আমার ডায়রীতে বলা নাই যে, আমার সংগে আওয়ামী লীগ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নেতৃবৃন্দ এবং উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ দেখা করেছিলেন কিনা। আমার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী দেখা করার বিষয় ডাইরীতে উল্লেখ আছে, তবে সংগঠনের নাম উল্লেখ নাই। যেহেতু আমি তদন্তে যাচ্ছি সে কারণে পূর্বেই আমি স্থানীয় লোকদেরকে আমার সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য সংবাদ দিয়েছিলাম, তবে লিখিত নোটিশ দিয়েছিলাম কিনা এ মুহূর্তে আমার স্মরণ নাই। আমি এই মুহূর্তে স্মরণ করতে পারছি না যে, কোন সংস্থার মাধ্যমে সংবাদ দিয়েছিলাম। এ বিষয়টি আমার ডাইরীতে নোট নাই। তদন্তকালে আমি শহীদ সিরু মিয়ার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার হোমনা থানাধীন রামকৃষ্ণপুর গ্রামে যাই নাই। তবে সেখানকার অনেককেই আমি জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তদন্তকালে আমি ০২-১১-১০ ইং তারিখে কুমিল্লায় গিয়েছিলাম এবং ০৪-১১-১০ ইং তারিখে ফেরত আসি। তৎপর আবার ২৩-০৭-২০১১ ইং তারিখে গিয়ে ২৪-০৭-২০১১ ইং তারিখে ফেরত আসি। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন রামচন্দ্রপুর গ্রামে আমি গিয়েছিলাম। উক্ত গ্রামে সাক্ষী আনোয়ার বেগমের পিতার বাড়িতে গিয়েছিলাম কিনা তা আমার মনে নাই। ডাইরীতে এ কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা নাই, তবে অন্যান্য কার্যক্রমের কথা লেখা আছে। সাক্ষী আনোয়ারা বেগমরা তিন বোন এই পরিচয় পেয়েছি। মায়া, মিনা এবং উনি নিজে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা শান্তি কমিটি ৫৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল। হাবিবুর রহমান সাহেব আহবায়ক ছিলেন। প্রদর্শনী-৫১৯ এ উল্লেখিত “একজন বাঙ্গালী অফিসারের নেতৃত্বে পাকিস্তান সৈন্যরা এসে তাদের নিয়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে” তদন্তকালে আমি উল্লেখিত বাঙ্গালী অফিসারের কোন তথ্য পাই নাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা অনেক রাজাকারের নাম আমি তদন্তকালে পেয়েছি, তবে রাজাকার হিসাবে সুনির্দিষ্টভাবে কারো নাম পাই নাই।  (চলবে)


২২-১০-১২ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ
আমার তদন্তকালে কুমিল্লায় আমি অনেকের জবানবন্দী রেকর্ড করেছি তবে মোট কতজনের রেকর্ড করেছি তা এই মুহূর্তে স্মরণ নাই। আমার কেস ডায়েরীটি এই মুহূর্তে আমার সঙ্গে নাই, ট্রাইব্যুানলের কাছে দেওয়া আছে। স্মৃতি শক্তি থেকে আমি সমস্ত কিছু বলতে পারব না তবে অনেক কিছু বলতে পারব। জেরার জবাব দেওয়ার জন্য একটি নোট আছে যেটা আমাকে সাহায্য করে। কুমিল্লায় তদন্তকালে এই মামলা সংক্রান্ত কোন কিছু জব্দ করি নাই। ১৯৯২ সালের ১৬ এপ্রিল তারিখের জাতীয় সংসদের অধিবেশনের ঐ দিনের কার্যধারার অডিও, ভিডিও বা লিখিত কার্যবিবরণী আমি জব্দ করি নাই। ১৯৯২ সালের ১৬ এপ্রিলের পূর্বে প্রকাশিত এমন কোনো সাময়িকী/ দৈনিক পত্রিকা/ পুস্তিকাদী তদন্তকালে আমি জব্দ করেছি বলে মনে হয় না যাহার মধ্যে শহীদ সিরু মিয়া দারোগা এবং তার ছেলে শহীদ আনোয়ার কামালের হত্যার বর্ণনা আছে। শহীদ সিরু মিয়া দারোগা ও অন্যান্যদের গ্রেফতারের পর মাইকিং শুনে যাহারা দেখতে গিয়েছিলেন তাদের কারো জবানবন্দী আমি রেকর্ড করি নাই, তবে আমি অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর নিকট থেকে একথা শুনেছি (ডিফেন্সের আপত্তি সহকারে)। আমি অন্যাদা হাই স্কুলের কোন শিক্ষক, ছাত্র বা কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করি নাই, ইহা সত্য নহে। প্রদর্শনী- ৫১৯- এ উল্লেখিত তিতাসের পাড়ে বলতে কি বুঝানো হয়েছে সেটা আমি এই মুহূর্তে স্মরণ করতে পারছি না। (চলবে)





                               
৩০-১০-২০১২ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ                
তিতাস নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি নদী আছে তাহা আমি শুনেছি। পৈরতলা রেল ব্রীজের নিকটবর্তী গণকবর থেকে তিতাস নদীর সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থানের দূরত্ব কত তা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারব না। পৈরতলা রেল ব্রীজ নিকটবর্তী বা গণকবর থেকে তিতাস নদী দেখা যায় কিনা তাহা আমার স্মরণ নাই। যাদের কাছ থেকে আমি মাইকিং শুনে দেখতে যাওয়ার কথা শুনেছিলাম তাদের দুই/একজনের নাম এ মুহূর্তে স্মরণ নাই। প্রদর্শনী- ৫১৯-এ উল্লেখিত কুপন এবং তার সাথে থাকা ছবিটি দুই ছবির সমন্বয়ে বা একটি ছবি কিনা তা আমি বলতে পারছি না। যতদূর মনে হয় উল্লেখিত ছবিটি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের। আমি তদন্তকালে একপক্ষে উল্লেখিত ছবি ও কূপন সমন্বয়ে কোন কূপন সংগ্রহ করি নাই। রাজাকার বাহিনী সরকারী নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগে ঐ বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন তা আমি না জানলেও এই বাহিনী মাওলানা এ কে এম ইউসুফ সাহেবের নেতৃত্বে খুলনার খান জাহান আলী রোডের আনছার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামায়াত কর্মী নিয়ে তৈরি হয়েছিল এটা আমি তদন্তে পেয়েছি। ইউসুফ সাহেবের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী গঠনের বিষয়টি আমি স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য এবং তদন্তে জেনেছি। ইউসুফ সাহেবের নেতৃত্বে প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠনের বিষয়ে ১৯৭১ সালের কোন পত্রিকা বা নিউজ এজেন্সির কোন কাটিং বা খবর সংগ্রহ করেছি কিনা তা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। বিজয় অর্জনের পর থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এই ধরনের খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তবে তাদের নাম আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। মাওলানা এ কে এম ইউসুফ সাহেব রাজাকার বাহিনী গঠন করেছিলেন এই সংক্রান্তে সবচেয়ে পুরনো ডকুমেন্ট কোনটি তা এ মুহূর্তে আমার দখলে না থাকায় বলতে পারছি না, তবে আমি তা তদন্তে পেয়েছি। রাজাকার বাহিনী সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরে ঐ বাহিনীর প্রধান ছিলেন মোঃ ইউনিস যিনি জামায়াতে ইসলামীর সাথে জড়িত ছিলেন এবং বর্তমানে উনি ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থায় উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত আছেন। মোঃ ইউনিস সাহেব ১৯৭১ সালে, ১৯৭১ সালের আগে বা পরে কোন সরকারি চাকুরী করতেন কিনা তা আমি জানি না। রাজাকার অর্ডিনেন্স জারির সময় আনসার বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন তা আমার এ মুহূর্তে স্মরণ নাই। রাজাকার বাহিনীর গেজেট নটিফিকেশনের পর পর এর প্রধান ডি. আই. জি. অব পুলিশ আব্দুর রহিম সাহেব ছিলেন কিনা তা আমার জানা নাই। রাজাকার বাহিনীকে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার পরে এর প্রধান কে ছিলেন তা আমার স্মরণে নাই। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কোন অফিসার সহযোগী বাহিনী হিসেবে রাজাকার বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতো তা আমার স্মরণ নাই। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোন অফিসার রাজাকার বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতো তা জানার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কোন যোগাযোগ করি নাই। খাজা খয়রুদ্দিন সাহেবকে আহবায়ক করে শান্তি কমিটি গঠনের পর তাকে অপসারণ করে শান্তি কমিটির অন্য কোন আহবায়ক বা সভাপতি বা চেয়ারম্যান হিসাবে অন্য কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল কিনা তৎমর্মে কোন তথ্য আমার নিকট নাই। একপক্ষে উল্লেখিত রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটির প্রধান অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন না, ইহা সত্য নহে।
শহীদ সিরু মিয়া পুলিশের উপ-পরিদর্শক বা এস. আই. ছিলেন না, ইহা সত্য নহে।
“আনোয়ারার ভাই ফজলু মিয়া ১ নভেম্বর কুমিল্লায় গেলেন চিঠি নিয়ে। রাজাকার কমান্ডার চিঠি পড়ে বললেন ঈদের পরের দিন কামালকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর সিরু মিয়াকে পুলিশে যোগদানের জন্য পাঠানো হবে।” এই কথাগুলি প্রদর্শনী- ৫১৯-এ উল্লেখ আছে। প্রদর্শনী- ৫১৯-এ উল্লেখিত গণ আদালতের অভিযোগকারী, গঠন, বিচারক ও রায় সম্পর্কে আমি তদন্তকালে অনুসন্ধান করি নাই। প্রদর্শনী- ৫১৯ এর তথ্য সমূহ আমি তদন্ত করে সত্যতা পাই নাই, ইহা সত্য নহে। উপস্থিত ব্যক্তিদের সহায়তায় আমি স্কেচ ম্যাপ (প্রদর্শনী- ৫২০) এবং সূচীপত্র (প্রদর্শনী- ৫২১) তৈরি করেছি। এই স্কেচ ম্যাপটি বর্তমান সময়ের। ১৯৭১ সালে পৈরতলা গণ কবরে যাওয়ার কোন সড়ক পথ ছিল না তবে পায়ে হাটা পথ ছিল। পৈরতলা গণ কবর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে যাওয়ার পথে নিকটবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলষ্টেশন অনুমান ৪০০ গজ পূর্ব দিকে। প্রদর্শনী- ৫২২/১-এ উল্লেখিত রেলওয়ে ব্রীজটি জলাভূমির উপর নির্মিত। প্রদর্শনী- ৫২২/২ হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুরাতন জেলখানার সম্মুখভাগের ছবি। ছবিতে স্থাপনের তারিখ ১১-০৭-৮৮ ইং লেখা আছে, তবে সম্ভবত ইহা মহকুমা কারাগার হইতে জেলা কারাগার হিসাবে রুপান্তরিত হওয়ার তারিখ হইতে পারে। মহকুমা কারাগার স্থাপনের তারিখ এবং নাম ফলক আমি পাই নাই। সূচীতে (প্রদর্শনী- ৫২১) উল্লেখিত শাহজাহান মিয়া, রমজান মিয়া, আব্দুল খালেক ও হাজি এমরানুর রেজাকে আমি তদন্ত কালে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি কিনা তা আমার এ মুহূর্তে মনে নাই তবে অনেক কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। প্রদর্শনী-৫২২/৩ এর বাড়ির মালিক দানা মিয়া বর্তমানে জীবিত নাই। তার আরেক নাম মিজানুর রহমান মোল্লা। ঐ বাড়িতে বর্তমানে তার ছেলে লিটন মোল্লা, মোস্তাক মোল্লা, শিকু মোল্লা, আলাউর রহমান বসবাস করেন। তদন্তকালে আমি বাংলা একাডেমীতে সর্বপ্রথম ২২-০২-২০১১ ইং তারিখে সম্ভবত সকাল ১০.০০ টার দিকে গিয়েছিলাম। ঐ তারিখ বেলা ১৪.০০ ঘটিকার একটি জব্দ তালিকা প্রস্তুত করেছিলাম যে পত্রিকাগুলি জব্দ করা হয়েছিল তার তালিকা যাওয়ার পূর্বে নির্দিষ্ট করিয়া যাই নাই। যে পত্রিকাগুলি জব্দ করি তাহা আমি পড়ে জব্দ করেছি। ঐ দিন বাংলা একাডেমীতে ১৮-০৫-১৯৭১ ইং তারিখ হইতে ২৯-১১-১৯৭১ ইং পর্যন্ত যে সমস্ত দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার কপি ছিল তার সবগুলি পড়ে তার মধ্যে হইতে ৩০টি শিরোনামের সংবাদ জব্দ করেছি।
১৮-০৫-১৯৭১ তারিখ হইতে ২৯-১১-১৯৭১ ইং তারিখ পর্যন্ত যে সমস্ত দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার কপি আমি জব্দ করি নাই তাহাতে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের কোন বিবৃতি বক্তব্য বা খবর সম্বলিত কোন শিরোনাম ছিল কিনা তা আমার স্মরন নাই। ১৯৭১ সালে পত্রিকার উপর সেন্সরশীপ কোন তারিখে আরোপিত হয়েছিল তা আমার জানা নাই। ১৯৭১ সালে সংবাদ প্রকাশের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে কোন সেন্সরশীপ আদৌ জারি করা হয়েছিল কিনা তা আমার জানা নাই।

পত্রিকার কপি সমূহ যাহা আমি আদালতে প্রদর্শন করেছি তাহার সত্যায়নকারী বর্তমানে সকলেই জীবিত আছেন। প্রদর্শনী- ১ মূলে যে পত্রিকা সমূহের সত্যায়িত ফটোকপি জব্দ করা হয়েছিল সেই সকল মূল পত্রিকাগুলি বাংলা একাডেমীতে আছে। প্রদর্শনী- ১ মূলে যে পত্রিকা সমূহের সত্যায়িত ফটোকপি জব্দ করেছি তার মূল কপি আমি দেখেছি, তবে তাহা জব্দ করি নাই।




৩০-১০-১২ ইং, ২.০০ মিনিট পূনরায় জেরা শুরু ঃ

২২-০২-২০১১ ইং তারিখে বাংলা একাডেমীর মোবারক হোসেনের অনুকূলে জিম্মানামা মূলে সংশ্লিষ্ট পত্রিকাগুলো জিম্মায় প্রদান করি, জিম্মানামার সময় উল্লেখ নাই। ২২-০২-২০১১ ইং তারিখে বাংলা একাডেমীতে গিয়ে ১৯৭১ সালের মে মাসের পূর্বের কোন দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা আমি পাই নাই। আমি যতদুর জানি বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার পর হইতে সমস্ত পত্রিকা তাদের আরকাইভে সংরক্ষন করে। এ,পি,পি এর ১৯৭১ সালে ঢাকার সংবাদদাতা কে ছিলেন তাহা আমি তদন্তকালে অনুসন্ধান করি নাই। প্রদর্শনী- ২ এ উল্লেখিত এম, এন, এ আবুল কাশেম সাহেব জীবিত আছেন কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। মেজর জেনারেল অব: ওমরাও খান, শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম আযম, মেজর আবছার উদ্দিন, জনাব আবুল কাশেম, দেওয়ান ওরাসাত হোসেন খান, জনাব তোহাবিন হাবিব দের মধ্যে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন, অন্যরা কে কি করতেন তাহা আমি জানি না। ঐ তারিখে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখিত শান্তি কমিটির সভায় অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবকে শান্তি কমিটি পরিচালনা, নিয়ন্ত্রন ও সিদ্ধান্ত গ্রহনের একক কোন ক্ষমতা প্রদান করা হয় মর্মে কোন সংবাদ পরিবেশিত হয় নাই। ০৯-০৪-১৯৭১ ইং তারিখে শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ঃ শান্তি কমিটি কোন নীতিমালার ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল?
উত্তর ঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে দুষ্কৃতিকারীদের আন্দোলন হিসেবে গণ্য করে এই দুষ্কৃতিকারীদের সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল।
যে প্রক্রিয়ায় শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল ঠিক একই প্রক্রিয়ায় জেলা, মহকুমা, থানা এবং ইউনিয়ন শান্তি কমিটির গঠিত হয়েছিল। শান্তি কমিটি গঠনের ব্যাপারে কোন সরকারি প্রজ্ঞাপন হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট ছিল। ১৯৭১ সালে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির অনেকগুলি মিটিং হয়েছিল তবে কয়টি হয়েছিল আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালের ৯ই এপ্রিল তারিখের পরে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি মিটিং হয়েছিল মর্মে প্রকাশিত সংবাদের পত্রিকা বা নিউজ এজেন্সির উদ্ধৃতি আমি তদন্তকালে সংগ্রহ করেছি। তার মধ্যে ১৩-০৪-১৯৭১, ১৫-০৪-১৯৭১, ২২-০৪-১৯৭১, ১৭-০৫-১৯৭১ উল্লেখযোগ্য। এই মিটিংগুলি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
১৯৭১ সালের ১৮ই মে তারিখে প্রকাশিত সংবাদ (প্রদর্শনী- ২) এর প্রথমে “গতকাল সোমবার পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে পর্যালোচনার জন্য ঢাকায় সকল স্তরের নাগরিকদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়” উল্লেখ আছে, তবে এখানে আরও অনেক তথ্যবহুল সংবাদ আছে। (চলবে)




৩১-১০-১২ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ-

ঢাকার বাইরে সর্বপ্রথম ০৩-০৫-১৯৭১ ইং তারিখে নরসিংদীতে শান্তি কমিটি গঠিত হয় মর্মে আমার তদন্তে তথ্য রয়েছে। ১৯৭১ সালে নরসিংদী ঢাকা জেলার একটি মহকুমা ছিল কিনা তা আমি এই মুহূর্তে স্মরণ করতে পারছি না। নরসিংদীতে এই সভাটি কার আহবানে হয়েছিল সে সম্পর্কে আমার নিকট কোন নোট নাই, তবে মিটিংয়ে মিয়া আব্দুল মজিদ কে আহ্বায়ক করা হয়। এই তথ্য ০৫-০৫-১৯৭১ ইং এবং ১২-০৫-১৯৭১ ইং তারিখের দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় আছে। ০৫-০৫-১৯৭১ ইং তারিখের দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় “নরসিংদীতে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি গঠিত” এই খবরটি আছে। ০৫-০৫-১৯৭১ ইং তারিখের দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে কাহাদের সমন্বয়ে শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছে তাদের নাম উল্লেখ নাই। খাজা খয়েরুদ্দিন সাহেবের নেতৃত্বে যে শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল সেই কমিটির কোন সদস্য নরসিংদীতে ঐ মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন মর্মে আমার তদন্তে কিছু পাই নাই। চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগীয় শহরে সর্বপ্রথম শান্তি কমিটি গঠিত হয় এই তথ্যসমূহ এই মুহূর্তে আমার নিকট নাই, কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ২১ জন। আমি যতটুকু জেনেছি উক্ত ২১ জনের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ছিলেন ২ জন। কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সদস্য সচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দপ্তর সম্পাদকের কোন পদ ছিল কিনা তা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। মৌলভী ফরিদ আহম্মেদের নেতৃত্বে কোন ভিন্ন শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল কিনা আমি এ মুহূর্তে আমার ডকুমেন্টে খুঁজে পাচ্ছি না। জনৈক ফরিদ আহমেদ কেন্দ্রীয়  শান্তি কমিটির সংগে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তবে তিনি মৌলভী ফরিদ আহমেদ কিনা তা আমি বলতে পারব না। কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি বা কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ের কার্যবিবরণী আমি তদন্তকালে সংগ্রহ করতে পারি নাই। কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি গঠনের পরে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়া সম্পর্কে পত্রিকার কাটিং আমি সংগ্রহ করেছি এবং সেই পত্রিকা ১৩ই এপ্রিল ১৯৭১ তারিখের দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান ও দৈনিক পয়গাম। দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি এ.পি.পি পরিবেশিত একটি সংবাদ (প্রদর্শনী-৩৯)। এই সংবাদে একটি শোভাযাত্রা আহ্বানের কথা বলা হয়েছে।

এই সংবাদে এই শোভাযাত্রা আয়োজনের জন্য শান্তি কমিটির কোন তারিখের কোন মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে তার উল্লেখ নাই, তবে নাগরিক শান্তি কমিটির উদ্যোগে শোভাযাত্রার কথা বলা আছে। এই সংবাদে এই বিবৃতি দানকারীর নাম নাই। দৈনিক পাকিস্তান এবং দৈনিক পয়গাম পত্রিকায় ঐ একই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তবে দৈনিক পয়গামে আরো বলা হয়েছে যে, নাগরিক শান্তি কমিটির উদ্যোগে ঢাকার বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে এক শান্তি জনসভা অনুষ্ঠিত হইবে। কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যাবলী দ্রুত ও যথোপযুক্তভাবে চালিয়ে যাওয়া এবং তাদের নীতি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে কার্যকরী করার জন্য এই কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়াও আরও অন্যান্য দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং দেশে স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃ প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয় (প্রদর্শনী- ৫৭)।

১৯৭১ সালে প্রত্যেকটি জেলা এবং মহকুমায় শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং এ ব্যাপারে যতগুলি প্রমাণপত্র আমি পেয়েছি তাহা আমার ডকুমেন্টে আছে। এই সব জেলা কিংবা মহকুমার শান্তি কমিটির আহবায়কদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সদস্য কতজন ছিলেন সে ব্যাপারে এখন সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নহে। জেলা কিংবা মহকুমা পর্যায়ে শান্তি কমিটির কার্যাবলী কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির নির্দেশনায় পরিচালিত হতো।

প্রশ্নঃ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির পক্ষে নির্দেশনা সমূহ কার স্বাক্ষরে অধঃস্তন কমিটি সমূহের নিকট পাঠানো হতো?
উত্তরঃ এই বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য এ মুহূর্তে আমার নিকট নাই, তবে ঐ সময় কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির বিভিন্ন নির্দেশনা সিদ্ধান্ত এবং ঘোষণা সমূহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন এবং বেতারের মাধ্যমে প্রচারিত হতো যাহা অধঃস্তন শান্তি কমিটির উপর বাধ্যতামূলক ছিল।

১৯৭১ সালে ঢাকা টেলিভিশন সেন্টারের সম্প্রচার কত মাইল ব্যাপী ব্যপ্ত ছিল তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র সমূহ টেকনাফ এবং তেতুলিয়া পৌঁছাতে সময় একটু বেশি লাগতো কারণ ঐ সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা ততটা উন্নত ছিল না। ১৯৭১ সালে পটুয়াখালীতে দৈনিক সংগ্রাম এবং দৈনিক পয়গাম পত্রিকা বিলি হতো এই মর্মে আমার নিকট প্রামাণ্য তথ্য নাই, তবে সমগ্র বাংলাদেশেই এই পত্রিকাগুলি বিলি হতো।

আমার তদন্তকালে আমি যে সমস্ত স্থানে গিয়েছি সেখানকার থানা, মহকুমা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররা যাহারা আমার নিকট এসেছেন তাদের সবাইকে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, তবে তাদের সংখ্যা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। আমি লিখিতভাবে কোন ব্যক্তিকেই বক্তব্য দেওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করি নাই। এ ব্যাপারে ১৯৭১ সালের জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররাও ব্যতিক্রম নহে। বর্তমানে জীবিত সেক্টর কমান্ডারদের মধ্যে আমি দুইজনকে তদন্তকালে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি এবং একজন সাব সেক্টর কমান্ডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা হলেন জেনারেল কে. এম সফিউল্লাহ, বি. ইউ লে. কর্নেল (অবঃ) আবু ওসমান চৌধুরী, বি. ইউ এবং জনাব মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বি. বি। মাহ্বুব উদ্দিন আহম্মেদ সাহেব খুলনা- সাতক্ষীরা এলাকার অর্থাৎ ৮ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের জেলা ইউনিট কমান্ডারদের মধ্যে কতজনকে আমি আমার তদন্তকালীন সময়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি তাহা এ মুহূর্তে বলতে পারব না। আমি তদন্তকালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্র্ক্ষ্মণবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল, খুলনা, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা জেলাসমূহে অর্থাৎ ১৫টি জেলায় গিয়েছি। উল্লেখিত ১৫টি জেলার কতটি উপজেলায় গিয়েছি তাহা আমি এ মুহূর্তে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছি না। এই মামলা আমি একাই তদন্ত করেছি, তবে তদন্তকালে আমার কয়েকজন সহকারী ছিল। এই সহকারীদের মধ্যে কেউ কেউ আমার নির্দেশনা অনুযায়ী সাক্ষীদের জবানবন্দী রেকর্ড করেন এবং আলামত জব্দ করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় তদন্তাধীন বা তদন্ত সম্পন্ন হওয়া অন্য মামলার কিছু কিছু তথ্য উপাত্ত আমি এই মামলায় রিপোর্ট দাখিলের সময় ব্যবহার করেছি। তন্মধ্যে কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার নম্বর ০১ তারিখ ২১-০৭-২০১০ এবং কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার নম্বর ০৩ তারিখ ২৬-০৭-২০১০ এই মোকদ্দমা দুইটির আলামতের কিছু অংশ আমি এই মামলায় ব্যবহার করেছি। ফরমাল চার্জ দাখিলের সময় কতজন সাক্ষীর জবানবন্দী দাখিল করা হয়েছে তা আমি রেকর্ড না দেখে বলতে পারব না। (চলবে)



৩১-১০-১২ ইং ২:২০ মিনিট পুনরায় জেরা শুরুঃ-                        

কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার নম্বর ০২ তারিখ ২১-০৭-২০১০ এর ৩ জন সাক্ষীর জবানবন্দী আমি এই মামলায় ব্যবহার করেছি। কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার নম্বর ০৩ তারিখ ২৬-০৭-২০১০ এই মোকদ্দমার অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আমার রেকর্ডে নাই। ঐ তিনটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা হলেন আব্দুর রাজ্জাক খান, মোঃ হেলাল উদ্দিন এবং নূরুল ইসলাম। তাদেরকে আমি এই মামলার সাক্ষী করি নাই।

যে দুইটি মামলার আলামত এই মামলায় ব্যবহার করেছি সেই দুইটি মামলার আলামত জব্দকারী কর্মকর্তা এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা একই ব্যক্তি। তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগমের জব্দকৃত আলামত এই মামলায় ব্যবহার করি নাই। তবে তার রেকর্ডকৃত জবানবন্দী ব্যবহার করেছি। এই মামলায় তদন্ত রিপোর্টের সংগে সরকারী গোপনীয় নথিপত্র ডকুমেন্ট হিসাবে দাখিল করেছি। আসামী অধ্যাপক গোলাম আজম কর্তৃক ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তারিখ হইতে ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত অপরাধমূলক কার্যকলাপের কতিপয় তথ্য সংক্রান্ত একটি নথি আমার নিকট তদন্তের জন্য হস্তান্তর করা হয় এই নথির বিষয়বস্তু গোপনীয় বিধায় আমার পক্ষে বলা সম্ভব নহে। এই নথির কোন অংশ সরাসরি ডকুমেন্ট হিসাবে আমি এই মামলায় দাখিল করি নাই। তবে সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংগৃহীত ডকুমেনট আমি প্রসিকিউশনের নিকট দাখিল করেছি। যে সকল গোপনীয় ডকুমেন্ট অত্র মামলায় ব্যবহার কেরেছি তাহা ব্যবহারের জন্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছি।

আমি যে সকল  ডকুমেন্ট ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে সেগুলিই আমাকে প্রয়োজনে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আমি অনেক লেখকের বিবৃতি পর্যালোচনা করেছি। তবে এই মুহূর্তে তাদের নাম বলা সম্ভব নহে। আমার নোটে আছে কিনা তাও বলতে পারছি না। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস, সম্পাদনা প্রফেসর সালাহ উদ্দিন আহমদ, মেনন সরকার এবং ড. নূরুল ইসলাম মঞ্জুর, হাজার বছরের বাংলাদেশের ইতিহাসের এ্যালবাম, সম্পাদনা ড. মু. হান্নান। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, লেখক লে. কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী, বীর উত্তম, লক্ষ  প্রাণের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১, লেখক রফিকুল ইসলাম বি. ইউ. বাংলাদেশ ডকুমেন্ট, সম্পাদনা শামসুল আরেফীন, হোয়াই বাংলাদেশ (বাজেট), শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারকগ্রন্থ, সম্পাদনা আনিসুজ্জামান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, সম্পাদনা হাসান হাফিজুর রহমান, মহান একুশে সুবর্ণ জয়ন্তীগ্রন্থ, দি রেপ অব বাংলাদেশ রিটেন বাই এ্যানথনি মাসকারেনহাস বই সমূহ পর্যালোচনা করেছি এবং এই বই সমূহে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি এবং ইতিহাস সম্পর্কে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা আমি পর্যালোচনা করে আমি আমার তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেছি। এটিএন মিউজিক এক্সকুসিভ ডিভিডি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করেছি।

জাতীয় যাদুঘরের ভিডিও সিডি পর্যালোচনা করেছি। উইকিপিডিয়ায় থাকা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেছি। ১ জানুয়ারী, ১৯৭১ পাকিস্তান গেজেট, ইসলামাবাদ পর্যালোচনা করেছি। ১ জানুয়ারী, ১৯৭১-এর গেজেটের বিষয়বস্তু কি ছিল তাহা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারব না। আমি আমার তদন্তকালে কয়টি বধ্যভূমি এবং গণকবর পরিদর্শন করেছি তাহার সঠিক সংখ্যা বলতে পারছি না। তবে আমি যে সমস্ত স্থানে গিয়েছি সেখানে বধ্যভূমি ও গণকবরগুলি পরিদর্শন করেছি। চুকনগর ভধ্যভূমিতে আমি যাই নাই। চুকনগর বধ্যভূমি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার অন্তর্গত। ডুমুরিয়া থানা ৮ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত ছিল। চুকনগর হত্যাকান্ড কত তারিখে সংঘটিত হয়েছিল তাহা আমি বলতে পারব না। চুকনগর হত্যাকান্ডের বিষয় আমি কোন তদন্ত করি নাই।

যে সকল জেলায় আমি তদন্তকালে যাই নাই সেই সকল জেলায় সংঘটিত হত্যাকান্ড, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের দায় দায়িত্ব কার তাহা আমি নির্ধারণ করিতে পারি নাই, ইহা সত্য নহে। পঞ্চগড় জেলার ৮টি বধ্যভূমির তালিকা আমার নিকট আছে। এর তালিকা সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা স্থানীয় জনগণের সহায়তায় তৈরি করেছেন। পঞ্চগড় সদরের বধ্যভূমির তালিকাটি কত তারিখে তৈরি করা হয়েছে তাহা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। ১৯৭১ সালে পঞ্চগড় সদরে অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা এ মুহূর্তে আমার নিকট নাই। অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা এ মুহূর্তে আমার নিকট নাই। ১৯৭১ সালে পঞ্চগড় সদরে সংঘটিত অপরাধের দায় দায়িত্ব আমি তদন্তে নিধারণ করি নাই, ইহা সত্য নহে। পঞ্চগড়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন কতজন ধর্ষিতা ছিল এ মুহূর্তে তথ্যটি আমার হাতে নাই। পঞ্চগড়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন যে সকল নারী ধর্ষিত হয়েছিলেন তাদের বা তাদের আত্মীয়-স্বজনের কারো জবানবন্দী আমি গ্রহণ করি নাই এবং তাহাদের কাউকেও আমি এ মামলায় সাক্ষী করি নাই। ধর্ষিতা মহিলাদের একজনের নাম আমার এ মুহূর্তে হাতে নাই। পঞ্চগড় সদরে যে সকল গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল তার কোন তারিখ আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। কত তারিখে তলব করা হয়েছিল তাহা রেকর্ড না দেখে বলতে পারব না। রেকর্ডটি এ মুহূর্তে আমার হাতে নাই।

যে স্মারক মূলে ইউএনও ও জেলা প্রশাসক থেকে তলব করা হয়েছিল তার বিষয়বস্তু কি ছিল তাহা ঐ চিঠি না দেখে বলতে পারছি না। কারণ ঐ স্মারক পত্রটি আমার নিকট নাই। তবে যতদূর মনে পড়ে বধ্যভূমি, গণকবর, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট ধ্বংস, নারী ধর্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। ঐ স্মারকমূলে তলবী রিপোর্ট আমার নিকট নাই, অফিসে আছে।

তলবী রিপোর্টও এ মুহূর্তে আমার হাতে নাই। আজ তলবী রিপোর্টের বিস্তারিত বর্ণনা আমি দিতে পারব না। প্রদর্শনী-৩ এ উল্লেখিত সংবাদটি এপিপি কর্তৃক পরিবেশিত সংবাদ। এই সংবাদে উল্লেখ আছে যে, অধ্যাপক গোলাম আযম, “সেন্সরশীপ প্রত্যাহারেরও আহবান জানান। তিনি বলেন, এর ফলে কে কি করতে চায়, তাহা জানার ব্যাপারে সরকারকে সাহায্য করবে”। সেন্সরশীপ ছিল কিনা তাহা আমি তদন্তে উল্লেখ করি নাই।

প্রদর্শনী-৪ এ উল্লেখিত সংবাদটি পিপিআই সংবাদ সংস্থা কর্তৃক পরিবেশিত সংবাদ। উক্ত সংবাদে উল্লেখ আছে যে, “পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর প্রধান অধ্যাপক গোলাম আযম বলেছেন, পূর্ব পাকিস্তানে স্বাভাবিক অবস্থা পুন:প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত জনগণের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায় না।”

উক্ত সংবাদে আরও উল্লেখ আছে যে, অধ্যাপক গোলাম আযম বলেন, “দেশের উভয় অংশকে কেবলমাত্র সেই আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ রাখা যেতে পারে, যে আদর্শের ভিত্তিতে পাকিস্তান জন্মলাভ করেছে।” (চলবে)





০১-১১-১২ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ-

১৯৫২ সালের আর্মি এ্যাক্ট, ১৯৫৩ সালের এয়ারফোর্স এ্যাক্ট এবং ১৯৬১ সালের নেভি অর্ডিন্যান্স বলে কোন অীঁরষরধৎু (অক্সিলিয়ারী)  ফোর্স তৈরি হয়েছিল কিনা বা গধরহঃধরহ করা হতো কিনা তা আমি জানি না। ১৬ই ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজী যখন আত্মসমপর্ণ করেন তখন তার সঙ্গে অীঁরষরধৎু (অক্সিলিয়ারী)  ফোর্স হিসেবে প্যারামিলিটারী ফোর্সেস এবং সিভিল আর্মড ফোর্সেস আত্মসমপর্ণ করেন। জেনারেল নিয়াজী যখন আত্মসমপর্ণ করেন তখন তার সঙ্গে কোন বাহিনীর কতজন সদস্য ছিল তাহার একটি তালিকা ইন্সট্রুমেন্ট অব সারেন্ডার এর দলিলের সঙ্গে ছিল কিনা তাহা দলিলে দেখা যাচ্ছে না বিধায় আমি জানি না। ইন্সট্রুমেন্ট অব সারেন্ডারের স্বাক্ষর করা ছাড়া অন্য কোন ডকুমেন্টে জেনারেল নিয়াজী স্বাক্ষর করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। জেনারেল নিয়াজী আত্মসমপর্ণকালে তিনি এবং জেনারেল অররা কোন কোন দলিলে দস্তখত করেছিলেন তাহা জানার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট যোগাযোগ করি নাই। ইহা সত্য নহে যে, ১৬ই ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজীর আত্মসমপর্ণকালীন সময়ে যে ইন্সট্রুমেন্ট অব সারেন্ডার ছাড়াও নি¤œবর্ণিত বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত ছিল।

১. হেড কোয়ার্টারর্স
ক) হেড কোয়ার্টারস ইষ্টার্ণ কমান্ড
খ) রেয়ার হেড কোয়ার্টারর্স ১৪ ডিভিশন,
গ) হেড কোয়ার্টারর্স ৩৬ (এডহক) ডিভিশন অরজিনালী ইপিক্যাফ,
ঘ) হেড কোয়ার্টারর্স ইষ্ট পাকিস্তান লজিষ্টিক এরিয়া,
ঙ) ষ্টেশন হেড কোয়ার্টারর্স,
চ) হেড কোয়ার্টারর্স অব ফাগ অফিসার কমন্ডিং ইষ্ট পাকিস্তান,
ছ) হেড কোয়ার্টারর্স অব এয়ার অফিসার কমান্ডিং ইষ্ট পাকিস্তান,
জ) ওয়েষ্ট পাকিস্তান পুলিশ হেড কোয়ার্টারর্স,
ঝ) হেড কোয়ার্টারর্স ডিরেক্টর জেনারেল, রাজাকার

২. ট্রুপস- রেগুলার এ্যাক্ট প্যারা,
আর্মড কোর (এডহক ট্রাস্ক ট্রুপস) .................................................................................... ৫০
আর্টিলারী (৬ এল, এ, এ রেজিমেন্ট, এইচ, ও, আর, টি রিইনফোর্সমেন্ট ই, টি, পি ...........................৭০০
ইঞ্জিনিয়ার্স (রেয়ার পার্টিস অব ভেরিয়াস, ভেরিয়াস ইউনিটস, এইচ, কিউ, ইঞ্জিনিয়ার্স) ...................... ৫০০
ইনফ্রেনট্রি  রেমনেন্টস অব ৯৩ ফ্রিগেড ইরিচড ঢাকা অন ১৩ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ এবং রিএনফোর্সমেন্ট .....১০০০
সার্ভিসেস (অর্ডিনেন্স এ্যান্ড সাপ্লাই ইন্সটোলেশন নেভী ওয়ার্কসপ ................................................৫০০
ইপিক্যাপ ..........................................................................................................৪০০০
মুজাহিদস .........................................................................................................১৫০০
রাজাকারস ........................................................................................................৭০০০
ওয়েষ্ট পাকিস্তান পুলিশ ...........................................................................................২৫০০
ইন্ডাট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স .....................................................................................১৫০০
                                             মোটঃ     ২৬,২৫০

ইহা সত্য নহে যে, উল্লেখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভূক্ত ছিল তাহা আমি জানা সত্ত্বেও গোপন করেছি। জামায়াতে ইসলামী, পিডিপি, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী, আল-বদর, আল-শামস ইত্যাদি সংগঠনকে পাকিস্তান আর্মির ইষ্টার্ণ কমান্ড অথবা সেন্ট্রাল কমান্ড অীঁরষরধৎু ফোর্স হিসাবে ঘোষণা করে কোন প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়েছিল তৎমর্মে আমি তদন্তকালে সরাসরি কোন প্রমাণ্য দলিল পাই নাই, তবে উপরোক্ত সংগঠনগুলো মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে অীঁরষরধৎু ফোর্স হিসাবে কাজ করেছে তার প্রমাণ আমি তদন্তকালে পেয়েছি। (চলবে)




০১-১১-২০১২ ইং ২:০০ মিঃ পুনরায় জেরা শুরুঃ

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে জেনারেল নিয়াজী আত্মসমপর্ণ করার সময় তার সঙ্গে রাজাকার বাহিনীর সদস্য আত্মসমপর্ণ করেছিল কিনা তাহা এই মুহূর্তে আমি আমার ডকুমেন্টে খুঁজে পাচ্ছি না। আমি চীফ প্রসিকিউটরের কাছে যে সকল ডকুমেন্ট জমা দিয়েছিলাম সেগুলোর কপি নিয়ে আমি সাক্ষ্য দিতে এসেছি। আমি যে সকল ডকুমেন্ট বিষয়ে চীফ প্রসিকিউটরের নিকট জমা দিয়েছি তার মধ্যে কেস ডাইরী থাকার কথা নয়। ইহা সত্য নহে যে, সত্য উদঘাটিত হবে এই ভয়ে কেস ডাইরী এবং অনেক ডকুমেন্ট না নিয়েই আমি সাক্ষ্য দিতে এসেছি। অীঁরষরধৎু ফোর্সের গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমার পরিষ্কার ধারণা নাই, তবে আমি মনে করি যাহারা মূল বাহিনীকে সাহায্য সহযোগিতা করে তারাই অীঁরষরধৎু ফোর্স। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা চলাকালীন সময়ে পুলিশ বাহিনীর কিছু কিছু সদস্য পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সাহায্য সহযোগীতা করেছে মর্মে আমি শুনেছি।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ তারিখে পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশ বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন তা এ মুহূর্তে আমার স্মরণ নাই। ১৯৭১ সালে ১০ই এপ্রিল তারিখে মুজিব নগর সরকার গঠনের পর পুলিশ বাহিনীর কিছু উর্দ্ধতন অফিসার মুজিব নগর সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল, তবে তাদের সঠিক সংখ্যা আমি বলতে পারছি না। ডি. আই. জি বা তার উর্দ্ধতন কতজন অফিসার মুজিব নগর সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল তা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারব না। আমি পুলিশ বাহিনীতে ১৯৭৩ সালে সাব ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করি। পুলিশ বাহিনীর প্রত্যেকটি কনষ্টেবলের এবং আনকনফরম এ. এস. আই দের একটি নম্বর থাকে এবং অফিসিয়েটিং এস. আই. দেরও একটি থাকে, তবে কনষ্টেবল থেকে অফিসিয়েটিং সাব ইন্সপেক্টর পর্যন্ত একই নম্বর থাকে কিনা সে সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নাই। আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন কর্মকর্তা তবে প্রেষণে তদন্ত সংস্থায় আমি আসি নাই, গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আদিষ্ট হইয়া তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে তদন্ত সংস্থায় যোগদান করেছি। তদন্ত সংস্থা থেকে আমাকে ভিন্ন কোন নিয়োগপত্র দেওয়া হয় নাই। আমি চাকুরীরত অবস্থায় যদি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমাকে তদন্ত সংস্থা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ বাহিনীতে ফেরতের গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারী করা হয় তাহলে আমি আবার পুলিশ বাহিনীতে ফিরে যেতে আইনত বাধ্য। আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনের ঘোষণাপত্র আমি দেখেছিলাম, তবে এখন তাহা মনে নাই। ১৯৭১ সালে নিখিল পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শূরার পূর্ব পাকিস্তান থেকে কতজন সদস্য ছিলেন তাহা আমি জানি না। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শূরা ছিল কিনা সে সম্পর্কে আমার ধারণা নাই। নিখিল পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী বা পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী কি প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতো সে সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নাই।

রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, মুজাহিদ এবং শান্তি কমিটির সদস্য নয় অথচ জামায়াতে ইসলামী, পিডিপি, নেজামী ইসলামীর এমন কোন মুসলিম লীগের সদস্যকে পাকিস্তানী আর্মি অস্ত্র সরবরাহ করেছিল তাহা আমার রেকর্ডে নাই। আল-বদর বাহিনী প্রথম ১৬ই মে, ১৯৭১ তারিখে শেরপুর জেলায় ৪৭ জন ছাত্র সংঘের কর্মীকে নিয়ে গঠন করা হয়। এই তথ্য আমি আমার তদন্তে পেয়েছি।

প্রশ্নঃ আল-বদর বাহিনী সর্বপ্রথম ১৬ই মে, ১৯৭১ তারিখে গঠন করা হয় এই তথ্য আপনাকে কোন ব্যক্তি দিয়েছিলেন কিনা এবং দিয়ে থাকলে সেই ব্যক্তির নাম কি?
উত্তরঃ আমি তদন্তে পেয়েছি।

প্রশ্ন: এই মর্মে কোন ডকুমেণ্ট আপনি তদন্তকালে জব্দ করেছেন কিনা?
উত্তর: আমি তদন্তকালে ডকুমেন্ট দেখেছি, তবে জব্দ করি নাই।
প্রশ্ন: কোন্ ডকুমেন্টে আপনি উহা দেখেছেন তার নাম বলতে পারবেন কি?
উত্তর: আলবদর নামক বইয়ে পেয়েছি।
প্রশ্ন: আলবদর বইয়ের লেখকের নাম কি?
উত্তর: আলবদর বইয়ের লেখকের নাম সেলিম মুনসুর খালেদ।
প্রশ্ন: তিনি বাঙ্গালী কিনা?
উত্তর: সম্ভবত তিনি বাঙ্গালী নন। বাংলা বইটি লাহোর থেকে প্রকাশিত।
প্রশ্ন: ১৯৭১ সালে সেলিম মুনসুর খালেদ বাংলাদেশে ছিলেন কিনা?
উত্তর: ঐ বইয়ে এই সম্পর্কে কোন তথ্য নাই।
প্রশ্ন: সেলিম মুনসুর খালেদ সাহেবের ১৯৭১ সালে বয়স কত ছিল?
উত্তর: এ বইয়ে এই সম্পর্কে কোন তথ্য নাই। এ বইয়ে উল্লেখিত ৪৭ জন ছাত্র সংঘের কর্মীদের সকলের নাম এবং পরিচয় আমি তদন্তকালে পাই নাই। তবে যাদের নাম পেয়েছি তাদের মধ্যে প্রথম কমান্ডারের নাম কামরান। তার বাড়ি শেরপুর। এছাড়া অন্য কোন নাম পাই নাই। শুনেছি কামরান নামীয় ব্যক্তির অস্তিত্ব আছে তবে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত করি নাই। উল্লেখিত ব্যক্তির বাড়ি শেরপুরের কোন এলাকায় ছিল তাহা আমি জানি না। আলবদর নামক বইয়ের যে সমস্ত তথ্য দেওয়া আছে সেই সমস্ত তথ্য সমূহের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঐ বইয়ে উল্লেখিত যে সকল সামরিক অফিসারের উদ্ধৃতি দেওয়া আছে তাদের কাউকে আমি তদন্তকালে জিজ্ঞাসাবাদ করি নাই। এ বইয়ে বাঙ্গালী কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বক্তব্যের উদ্ধৃতি আছে কিনা তাহা আমি এই মুহূর্তে না পড়ে বলতে পারব না, কারণ বইটি অনেক বড়। আলবদর বাহিনীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে আমি তদন্তে কিছু পাই নাই। তবে সাংগঠনিক কাঠামো হিসাবে প্রথম ইউনিট ৩১৩ জন ক্যাডেট, দ্বিতীয় ইউনিট ৩ কোম্পানী, প্রত্যেক কোম্পানীতে ১০৪ জন মুজাহিদ, ১ কোম্পানীতে ৩ প্লাটুন, প্রত্যেক প্লাটুনে ৩৩ সাজি, ১ প্লাটুনে ৩ সেকশন ট্রুপস এবং প্রত্যেক ট্রুপসে ১১ জন আলবদর ছিল মর্মে পাই। আমার বর্ণিত সাংগঠনিক কাঠামোটি বিভাগীয় নাকি জেলা নাকি মহকুমা পর্যায়ে তাহা আমি বলতে পারব না। এই তথ্যটিও আমি এই আলবদর বই থেকে সংগ্রহ করেছি। এ বইয়ে এই কাঠামোটি পদ পদবী সংক্রান্ত কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখ নাই। আলবদর বাহিনীর ৩১৩ জন ক্যাডেটের যিনি প্রধান ছিলেন তার পদবী কি ছিল তাহা বইয়ে উল্লেখ না থাকায় আমি বলতে পারছি না। আলবদর বাহিনীর বর্ণিত ইউনিটসমূহের প্রধানদের পদ-পদবী কি ছিল তাহা ঐ বইয়ে লেখা না থাকায় আমি বলতে পারছি না। ঢাকা জেলা আলবদর কমান্ডারের নাম হিসাবে আমি তদন্তে কিছু পাই নাই। তবে ঢাকায় কর্মরত তিনটি আলবদর গ্রুপ ছিল তারা হলেন শহীদ আবদুল মালেক কোম্পানী যার কমান্ডার ছিলেন মো: জাহাঙ্গীর। শহীদ অজিজভাট্টি কোম্পানী যার কমান্ডার ছিলেন আবদুল হক এবং গাজী সালাহউদ্দিন কোম্পানী যার কমান্ডার ছিলেন মো: আশরাফুজ্জামান। উল্লেখিত তিনটি কোম্পানী কোন্ ইউনিটের অধীন ছিল তাহা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারব না। শহীদ আবদুল মালেক কোম্পানীর অধীনস্থ প্লাটুন কমান্ডারের নাম আমার নিকট নাই। ইহা সত্য নহে যে, আমি সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে আলবদর বইয়ে যে তথ্য দেওয়া আছে সে সম্পর্কে আমি কোন অনুসন্ধান করি নাই। আল শামস বাহিনী কবে গঠিত হয়েছিল তাহা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবব না। আল শামস বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন তাহা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারব না।
মুজাহিদ বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো কেমন ছিল তাহা আমি বলতে পারব না। মুজাহিদ বাহিনীর বেতন ভাতাদি কতছিল তাহা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারব না। মুজাহিদ বাহিনীর বেতন ভাতাদি কে সরবরাহ করত তাহা আমি বলতে পারব না। মুজাহিদ বাহিনীকে জেলা ও মহকুমা পর্যায়ে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর কোন্ পদ মর্যাদার কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রণ করতেন তাহা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। মুজাহিদ বাহিনীর পোষাক কি ধরনের ছিল তাহা এ মুহূর্তে বলতে পারব না। (চলবে)    



০৪-১১-২০১২ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ

অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে সামরিক কর্মকর্তা ছাড়া এদেশের কোন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সংশ্লিষ্ট ছিল না, ইহা সত্য নহে। অপারেশন সার্চ লাইট সংক্রান্ত সরকারী নথি আমি তদন্তকালে জব্দ করতে পরি নাই। শান্তি কমিটির মধ্যে কোন সামরিক বাহিনীর সদস্য অন্তর্ভূক্ত ছিল কিনা তাহা আমার রেকর্ডে নাই। শান্তি কমিটির কোন ইউনিটকে সামরিক ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল না তৎমর্মে কোন তথ্য আমার নিকট নাই। শান্তি কমিটির সদস্যদেরকে সরকারী বেতন ভাতাদি প্রদান করা হতো মর্মে কোন ডকুমেন্ট আমি তদন্তকালে জব্দ করি নাই। শান্তি কমিটির অধস্তন শাখা সমূহ সংঘটনে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিলেন তৎমর্মে আমি ডকুমেন্ট জব্দ করেছি। ইহার মধ্যে প্রদর্শনী- ৫৭ এবং অন্যান্য পত্রিকায় ইহায় উল্লেখ আছে। শান্তি কমিটির কোন শাখাকে গোলাম আযম সাহেবের দস্তখত সহ কোন নির্দেশনা পাঠানো হয়েছিল তৎমর্মে কোন ডকুমেন্ট আমি জব্দ করতে পারি নাই। গোলাম আযম সাহেব শান্তি কমিটির কোন অধস্তন শাখাকে বাতিল বা স্থগিত করতে পারবে তাকে এই ধরনের ক্ষমতা প্রদান করে শান্তি কমিটির কোন রেজুলেশন হয়েছিল মর্মে কোন ডকুমেন্ট আমি তদন্তকালে জব্দ করিতে পারি নাই। শান্তি কমিটির সর্ব নি¤œ ইউনিট ছিল ইউনিয়ন কাউন্সিল পর্যায়ে। ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সাধারণভাবে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হতেন ইহা সর্বক্ষেত্রে সত্য নহে। ইউনিয়ন শান্তি কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে সার্কেল অফিসার (ডেভেলপমেন্ট) রাজাকারদের নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রস্তাব করে এস.ডি.ও সাহেবের নিকট পাঠাতেন এবং এম.ডি.ও সাহেব তাদের নিয়োগ দিতেন এবং সংশ্লিষ্ট থানার ও.সি তাদেরকে ট্রেনিং দিতেন মর্মে কোন ডকুমেন্ট আমি এ মুহূর্তে খুঁজে পাচ্ছি না। রাজাকারের বিরুদ্ধে কি প্রক্রিয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাহা রাজাকার অর্ডিনেন্সে লিপিবদ্ধ ছিল ইহা সত্য। রাজাকারের সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে আমার ধারনা নাই, ইহা সত্য নহে। ২রা আগষ্ট ১৯৭১ তারিখের আগে রাজাকার বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো কি রকম ছিল সে সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নাই। আল-বদর এবং আল-শামস বাহিনী নামে কোন পৃথক বাহিনী ছিল না। এটা রাজাকার বাহিনীর দুটোপৃথক শাখা, ইহা সত্য নহে। পাকিস্তান আর্মির সহযোগী বাহিনীর কোন সদস্যকে নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণ, আদেশ এবং শাস্তি প্রদানের কোন ক্ষমতা অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের ছিল মর্মে কোন ডকুমেন্ট আমি তদন্তকালে পাই নাই, তবে আল-বদর বাহিনীর উপর তার নিয়ন্ত্রণ ছিল তৎমর্মে কাগজপত্র আমি পেয়েছি। পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী তার সহযোগী বাহিনীদেরকে নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণ, আদেশ ও শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবকে প্রদান করে কোন পরিপত্র বা নির্দেশ জারি করেছিল কিনা তৎমর্মে কোন কাগজ আমি তদন্তকালে পাই নাই। ২রা আগষ্ট, ১৯৭১ তারিখের পূর্বেই রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি বাহিনী ছিল তৎমর্মে অথ্যপ্রমাণ প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারক নং ১৬৪ (১০)। গোপনীয়, তারিখ ২৫শে মে, ১৯৭১ এর একটি কপি সংগ্রহ করেছি। উক্ত স্মারক পত্রের বিষয়বস্তু সম্পর্কে উক্ত স্মারকে লেখা আছে। আমি যে সমস্ত পুলিশের পাক্ষিক রিপোর্ট, পুলিশ এ্যাবস্ট্রাক এবং সরকারের গোপনীয় নথি জব্দ করেছি তার কোনটাতেই জামায়াতে ইসলামী, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর, আলÑশামসের কোন সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ, শাস্তি প্রদান বা আদেশ প্রদানের কোন ক্ষমতা অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবকে প্রদান করা হয়েছিল তৎমর্মে কোন তথ্য আছে কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমি যে সমস্ত পত্রিকার কপি প্রদর্শন করেছি সেই সকল সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে আমি তদন্ত করি নাই। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের উদ্বৃতি সহ যে সমস্ত সংবাদ আমি প্রদর্শন করেছি তার মধ্যে কতটা তার নিজের পক্ষ থেকে প্রেস রিলিজ, কতটা দৈনিক সংগ্রামের নিজস্ব সংবাদদাতার রিপোর্ট, অন্য কোন সংবাদ সংস্থা বা সংবাদদাতার রিপোর্ট তাহা আমি আলাদাভাবে ভাগ করি নাই। আমার প্রদর্শিত সংবাদের কতটি সরকারি বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে প্রকাশিত হয়েছিল তাহা আমি বলতে পারব না। শান্তি কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সরকারি গোপনীয় যে রিপোর্ট (প্রদর্শনী- ৪৭৯) আমি ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করেছি তাতে কোন সামরিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের সুযোগ শান্তি কমিটির ছিল না, ইহা সত্য নহে। আমার দাখিলকৃত ফোর্ট নাইটলি রিপোর্ট এবং পুলিশ এ্যাবস্ট্রাক্টে দুষ্কৃতিকারী ও ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী বলতে শুধুমাত্র অস্ত্রধারীদেরকে বুঝানো হয়েছে, ইহা সত্য নহে। আমার প্রদর্শনকৃত কোন দলিলপত্রে এমন কোন তথ্য নাই যে, অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের বিবৃতি পড়ে বা শুনে কোন ব্যক্তি অপরাধমূলক কর্মকান্ড করেছে, ইহ সত্য নহে।

প্রশ্নঃ আপনার প্রদর্শিত দলিলপত্র সমূহের মধ্যে এমন একটি দলিল কি আপনি আমাদের দেখাতে পারবেন যাতে দেখা যায় অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের বিবৃতি পাঠ করে বা শুনে কোন ব্যক্তি কোন সুনির্দিষ্ট অপরাধ সংঘঠন করেছে?
উত্তরঃ আমি এতগুলো ডকুমেন্ট এ মুহূর্তে পর্যালোচনা না করে সুস্পষ্টভাবে জবাব দিতে পারব না।
প্রশ্নঃ ১৯৭১ সালে যে সমস্ত অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল সেই সমস্ত অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের সঙ্গে ঐ অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে পরামর্শ করে বা তার নির্দেশনা অনুযায়ী ঐ অপরাধ সংঘঠন করেছে তৎমর্মে কোন দালিলিক প্রমাণ আপনি দাখিল করেছেন কিনা?
উত্তরঃ আমি একটি ক্ষেত্রে সাক্ষ্য প্রমাণ দাখিল করেছি। দালিলিক প্রমাণ শব্দটি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আমি আগের প্রশ্নের ভিন্ন উত্তর দিয়েছি, ইহা সত্য নহে। আমি ৩১ ঘন্টার যে সি.ডি বা ডি.ভি.ডি দাখিল করেছি তাতে বর্ণিত তথ্য সমূহ তদন্ত বা পর্যালোচনা না করেই দাখিল করেছি, ইহা সত্য নহে।
প্রশ্নঃ উক্ত সিডি বা ডিভিডি তে উল্লেখিত প্রফেসর শহিদুর রহমান, মিসেস শহিদুর রহমান, মোহন মুন্সী, গোলাম মোস্তফার ভাই মোশাররফ হোসেন মানিক, ডাঃ এম এ হাসান জাতীয় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাংবাদিক মাহবুব কামাল, শহীদ মুনীর চৌধুরীর ভাই শমসের চৌধুরী, পান্না কায়ছার, অধ্যাপক ফরিদা বানু (শহীদ গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদের বোন), অধ্যাপক এনামুল হক, এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার, খন্দকার মাহবুব ছোলাইমান, (সিনিয়র পাবিলক প্রসিকিউটর- ১৯৭১-১৯৭৫), শাহরিয়ার কবির, মেসবাহুর রহমান চৌধুরী, সাজু চেয়ারম্যান, আব্দুল বারী, ডলি চৌধুরী, জাহিদ রেজা নূর, ডা. ফয়জুল হক, আতিকুর রহমান, জয়নাল আবেদীন, মাহমাদুর রহমান, ডা. আনিসুজ্জামান, ড. কামাল হোসেন, ড. আবুল বারাকাত প্রমুখ ব্যক্তিগণ বর্তমানে জীবিত আছেন কিনা?
উত্তরঃ আমার দাখিলকৃত সিডি বা ডিভিডিতে উল্লেখিত ব্যক্তিগণের নাম উল্লেখ আছে বলে মনে হয় না।
প্রশ্নঃ আপনার দাখিলকৃত সিডি বা ডিভিডিতে এমন কোন তথ্য আছে কি যাতে দেখা যায় যে আল-বদর বাহিনী মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক গঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ এ মুহূর্তে আমার স্মরণ নাই।
প্রশ্নঃ আপনার দাখিলকৃত সিডি বা ডিভিডিতে এমন কোন তথ্য আছে কি যাতে দেখা যায় যে, আল-বদর বাহিনী আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ এ মুহূর্তে আমার স্মরণ নাই।
প্রশ্নঃ আপনার দাখিলকৃত সিডি বা ডিভিডিতে এমন কোন তথ্য আছে কি যাতে দেখা যায় যে, প্রেসিডেন্ট কর্তৃক অপরাধীদের ক্ষমা প্রদানের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে?
উত্তরঃ এ মুহূর্তে আমার স্মরণ নাই।
প্রশ্নঃ আপনার দাখিলকৃত সিডি বা ডিভিডিতে এমন কোন তথ্য আছে কি যাতে দেখা যায় যে, স্বাধীনতার ঘোষণার পরে মেজর জিয়া খানকে প্রেসিডেন্ট (জিয়াউর রহমান নন) অস্থায়ী রাষ্ট্র প্রধান কর হয়েছিল?
উত্তরঃ ইহা আমার স্মরণ নাই। (চলবে)





০৪-১১-১২ ইং ২:০০ মিঃ পুনরায় জেরা শুরুঃ

আমার দাখিলকৃত ডিভিডিতে আমার দাখিলকৃত এপ্রিল ১ এবং এপ্রিল ১১ সি বি এস নিউজে ভারত অতিরিক্ত প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে মর্মে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে আমি কোন অনুসন্ধান করি নাই। ডিভিডি তে উল্লেখিত মেসবাহুর রহমান চৌধুরী এবং সৌদি আরবে গোলাম আযম সাহেবের সৌদি আরবের বদশার সাথে সাক্ষাতকালে উপস্থিত ব্যক্তি একই ব্যক্তি কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। যে ব্যক্তি সৌদি বাদশা ও গোলাম আযম সাহেবের সাক্ষাত করা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছেন তার নাম এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। এ মুহূর্তে সিডি দেখেও বলতে পারব না। সি বি এস এবং এন বি সি নিউজে উল্লেখিত ২রা মার্চ, ১৯৭১ তারিখে পূর্ব পাকিস্তানে প্রেস  সেন্সরশীপ চালুর বিষয়টি আমি তদন্ত করি নাই। ১৯৭২ সালে জনাব আব্দুর রহিম কে চেয়ারম্যান করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ, অপরাধ সংগঠনকারী পাকিস্তান আর্মি এবং তাদের সহযোগীদের ভূমিকা সম্পর্কে যে ১২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আমি তদন্তকালে আমি সংগ্রহ করেছিলাম কিনা তাহা এখন আমার স্মরন নাই। মেমোরী থেকেও বলতে পারছি না। অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম সাহেবকে আহবায়ক করে বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিলেন কিনা তাহা আমি আমার রেকর্ডে খুঁজে না পাওয়ায় বলতে পারছি না। আল-বদর বাহিনীকে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব নিয়ন্ত্রণ করতেন ইহা আমার শুধুই অনুমান, ইহা সত্য নহে। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব এবং টিক্কা খানের মধ্যে ৪ঠা এপ্রিলের মিটিংয়ে যে আলোচনা বা কর্থাবার্তা হয়েছিল তা পরের দিন ০৫ই এপ্রিল দৈনিক আজাদ এবং ৬ই এপ্রিল দৈনিক আজাদ, দৈনিক পূর্বদেশ ও দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ঐ সকল পত্রিকায় ঢাকায় নাগরিক কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়, দুষ্কৃতিকারী, রাষ্ট্রদ্রোহী এবং সমাজ বিরোধীর আশ্রয় না দেওয়ার এবং সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের নিকট তাদের সম্পর্কে সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। এই তথ্যসমূহ আমি আমার দাখিলকৃত কাগজপত্রের মধ্যে খুঁজে পেয়েছি। আমার তদন্তকালে সংগৃহীত সাক্ষ্য প্রমাণের যতগুলি কাগজপত্র বিজ্ঞ চীফ প্রসিকিউটরের নিকট দাখিল করেছি। তার সবগুলিই ট্রাইবুনালে নিয়ে এসেছি। এই মামলার প্রয়োজনে যতগুলি দলিলপত্র প্রয়োজনীয় মনে করেছি ততগুলিই আমি বিজ্ঞ চীফ প্রসিকিউটরের নিকট দাখিল করেছি। আমার জেরার উত্তরে যে সকল দলিলপত্রের বিষয়ে বলেছি যে, খুঁজে পাচ্ছি না সেই দলিলপত্রসমূহ আমার ডকুমেন্টসমূহের মধ্যে আছে এর বাইরে কিছু নাই। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব রেডিও পাকিস্তানে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তার অডিও আমি তদন্তকালে খুঁজে পাইনি। রেডিও পাকিস্তানের উদ্ধৃতি দিয়ে যে সমস্ত খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল তার অডিও ভার্সন আমি খুঁজে পাই নাই। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের সংগে টিক্কা খান এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মিটিংসমূহের কার্যবিবরণী আমি তদন্তকালে খুঁজে পাই নাই। পাকিস্তান সামরিক সরকারের পক্ষ থেকে যে সমস্ত বিবৃতি দেওয়া হতো তার অধিকাংশই ছিল মুক্তিকামী জনগণকে দাবিয়ে রাখার জন্য প্রতারণামূলক কৌশল কিনা তাহা বিশ্লেষণের ব্যাপার। পূর্ব পাকিস্তান সামরিক সরকারের পক্ষ থেকে যে সকল প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল তার কতটি আমি তদন্তকালে বিশ্লেষণ করেছি তার সঠিক সংখ্যা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। পূর্ব পাকিস্তান সামরিক সরকারের কোন প্রেস বিজ্ঞপ্তি আমি তদন্তকালে জব্দ করি নাই। কারণ পাই নাই। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব ৬ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে জেনারেল টিক্কা খানের সংগে দেখা করেন নাই, ইহা সত্য নহে। মিত্র বাহিনী ৪ঠা ডিসেম্বর ঢাকায় আক্রমণ করেছিল কিনা তাহা এ মুহূর্তে আমি সঠিক বলতে পারছি না। মুনতাসির মামুন লিখিত বা সম্পাদিক কোন বই আমি জব্দ করি নাই। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা তাদের সহযোগী বাহিনী কোন অপরাধ করলে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক তাদের কোন শাস্তির বিধান করা হবে না মর্মে কোন আইন করা হয়েছিল কিনা তা আমার জানা নাই। পাকিস্তান আর্মিরা যুদ্ধকালীন সময়ে মাঝে মাঝে জনসাধারণের নিকট ডান্ডি কার্ড দেখতে চাইতো। ১৯৭১ সালে মুনতাসির মামুন সাহেব যখন ধানমন্ডিতে থাকতেন তখন তিনি ইলেক্ট্রিশিয়ানের কার্ড ব্যবহার করার কথা তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট প্রদত্ত জবানবন্দীতে বলেছেন। মিসেস সুলতানা কামাল যে ১৯ জন ধর্ষিতা মহিলার দেখাশুনার কথা বলেছেন তার মধ্যে ১ জনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম এবং সেই ধর্ষিতা মহিলা দুইজনকেই সাক্ষী মান্য করা হয়েছিল। ঐ ধর্ষিতা মহিলা বা মনোয়ারা বেগমকে সাক্ষী হিসেবে ট্রাইবুনালে হাজির করার জন্য আমি কোন সাক্ষীর প্রসেস পাই নাই। আমার প্রদত্ত সাক্ষীর তালিকার মধ্যে যত জনের সমন আমাকে দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে মহসীন আলী খানকে পাওয়া যায় নাই, তিনি আমেরিকায় আছেন, অন্য সকলকে ট্রাইবুনালে হাজির করা হয়েছে। মহসীন আলী খান সাহেব আমেরিকায় গেছেন তৎমর্মে তার পাসপোর্ট নম্বর ও যাওয়ার তারিখ উল্লেখ করে আমি বিজ্ঞ চীফ প্রসিকিউটর বরাবর প্রতিবেদন দিয়েছি। উনার ভিসা, বিমানের টিকেট বা বোডিং পাশ এ ধরনের কোন কাগজ দাখিল করি নাই। গোলাম আযম সাহেবের যে কয়জন ছেলেদের নাম আমি পেয়েছি তাদের সকলের নামের শেষে আযমী শব্দটি আছে। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের যে ছেলের নাম আমি আযমী হিসেবে উল্লেখ করেছি তার পুরো নাম মামুন আযমী। ১৯৬৯ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের ছেলে মামুন আযমী খিলগাও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। তার অপর ছেে ল আমিন আযমী ১৯৭০ সালে খিলগাও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ইহা সত্য নহে যে, ১৯৭১ সালে মহসীন আলী খান সাহেব খিলগাও সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন না। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের সংগে মহসীন আলী খান সাহেব ছিলেন কিনা তাহা আমি জানি না, তবে তিনি তাদের স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। মহসীন আলী খান সাহেব আদৌ আমার নিকট জবানবন্দী দেন নাই, ইহা সত্য নহে। জবানবন্দীটি মামলার প্রয়োজনে সৃষ্টি করা হয়েছে, ইহাও সত্য নহে।

তদন্তকালে আমি যে ১৫টি জেলায় গিয়েছি তন্মধ্যে ঢাকা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যতীত অন্য কোন জেলায় কোন ভিকটিম বা তাদের পরিবারের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করি নাই বা সাক্ষী করি নাই, ইহা সত্য নহে। আমি অনেক ভিকটিম এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে সাক্ষী করেছি। আমি যে কয়জন সাক্ষীকে ট্রাইবুনালে হাজির করেছি তারা এবং মহসীন আলী খান বাদে অন্য সাক্ষীর কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এই মর্মে কোন তথ্য এখন পর্যন্ত আমার নিকট নাই। আমাদের শেখানো মতে ভিকটিম বা তার পরিবারের কোন সদস্য সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে রাজী না হওয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের অত্র ট্রাইবুনালে সাক্ষ্য দিতে হাজির করি নাই, ইহা সত্য নহে।

আমার লেখা লেখি এবং মুখ্য গবেষণার বিষয় তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ বর্তমানে বাংলাদেশ এর সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, নগরায়ন ও মুক্তিযুদ্ধ। আমি ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে শ্রেষ্ঠ শিশু লেখক হিসাবে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করি। খুব সম্ভব ১৯৬৩ সালে বাংলা সাহিত্যের সামগ্রিক অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করি। ২০১০ সালে ২১শে পদক লাভ করি গবেষণার জন্য। সুনির্দিষ্টভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণার জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার লাভ করি। এছাড়া আরও অন্যান্য পুরস্কার প্রাপ্ত হই এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পাকিস্তানীদের ভাষায় আমাদের ক্রোধান্বিত করেছিল। এই ক্রোধ ও ক্ষোভ আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল ১৯৬৯ সনের গণ-আন্দোলনে এবং ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের পরে ঢাকা থেকে কয়েকটি সংবাদপত্র নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছিল বলে আমার মনে পড়ে। যার মধ্যে ডেইলী অবজারভার, দৈনিক পাকিস্তান, সংগ্রাম, পূর্বদেশ পত্রিকাও ছিল। তখনকার পত্র পত্রিকাগুলির ব্যাপারে বলতে পারি সেগুলি ছিল অবরুদ্ধ দেশের সংবাদপত্র এবং তবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে জামায়াতে ইসলামী এবং মুসলিম লীগের ভূমিকাই ছিল বেশী এবং আমরা বার বার দেখি যে এপ্রিলে তাদের পরামর্শে ও উৎসাহে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। শান্তি কমিটি পরবর্তীকালে দুভাগ হয়ে গেলেও খাজা খয়রুদ্দিন গোলাম আযমের নেতৃত্বাধীন শান্তি কমিটি প্রাধ্যন্য বিস্তার করেছিল এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়তা পেয়েছিল। অচিরেই আমরা দেখতে পাই তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং উল্লেখ্য সে সময়ের সংবাদপত্রগুলি যদি দেখা যায় তাহলে আমরা দেখতে পাবো জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির জনাব গোলাম আযমের বক্তব্য প্রাধান্য পাচ্ছে এবং আমি যখন একটি দলের নাম বলছি তখন তার ভিতরে সেই দলের অঙ্গ সংগঠনকেও অন্তর্ভূক্ত করছি এবং প্রত্যেকটি দলের ব্যাপারেই একথা প্রযোজ্য। এ সব দলের নেতারা প্রতি নিয়ত বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে তাদের কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেছে, প্রণোদনা যুগিয়েছে এসব কমিটি ও বাহিনীতে যোগদানের জন্য। আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক জান্তাকে সহায়তা করার জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিলেন জামায়াতের তৎকালীন আমির জনাব গোলাম আযম। আজকে ৪০ বৎসর পরও যখন শান্তি কমিটির সদস্য রাজাকারদের এবং আল-বদরদের হত্যাযজ্ঞ, লুট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এগুলোর কথা স্মরণ করি তখন শিউরে উঠি এবং পাকিস্তান বাহিনী তো ছিলই কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে তাদের এই সহযোগীরা যদি না থাকতো তাহলে হয়তো এই ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা খানিকটা কম হতো এবং আমরা আরও আগে জয়ী হতে পারতাম। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থ আমি লিখেছি। প্রধানত আমি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির উপর বেশী গবেষণা করছি এবং আমার সব সময় একটা কৌতুহল ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী ছাড়া বাঙ্গালী যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে তাদের মনোজগৎটা কেমন ছিল। তারা এ ধরণের নিষ্ঠুর কর্মকান্ড একই জাতির মানুষের উপর, একই ধর্মাবলম্বীদের উপর কিভাবে করতে পারে সেটা মিমাংসা আমরা করতে পারিনি, এবং আমরা অনেকে এসব কমিটির বা বাহিনীর কর্মকান্ডের মধ্যে সুক্ষ্ম তফাৎ করার চেষ্টা করি। কিন্তু মূলত এদের সবার লক্ষ্য ছিল একই। সেটি হচ্ছে তৎকালীন ক্ষমতার সঙ্গে সংযুক্ত থাকা, সম্পদ লুটের মাধ্যমে আহরণ, জনগণকে দমিত করার জন্য হত্যা ও ধর্ষণকে ব্যবহার, এবং তাদের সব সময় প্ররোচনা দিয়েছি, প্রণোদনা যুগিয়েছি শান্তি কমিটির নেতৃবৃন্দ যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযম ছিলেন প্রধান, এবং এ সম্পর্কে কিছু বই বেরিয়েছে সেখানে দেখলে দেখা যাবে তার বর্ণনা দেয়া আমার পক্ষে খুবই কষ্টকর। রাজাকারদের একইভাবে উৎসাহ দিয়েছে, প্ররোদনা যুগিয়েছে এবং প্ররোচনাও দিয়েছে ঐ সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। যার মধ্যে জামায়াতের তৎকালীন আমির জনাব গোলাম আযম উল্লেখযোগ্য, এবং কেননা বলা যেতে পারে তারা এক প্রকার লাইসেন্স প্রদান করেছে হত্যা করার জন্য। কারণ তারা অহরহ রাজনৈতিক বক্তব্যের মাধ্যমে এসব কমিটির সদস্য ও বাহিনীর সদস্যদেরকে উৎসাহিত করেছে এসব বর্বর কর্মকান্ড করার জন্য এবং এসব করলে তাদের কোন শাস্তি হবে না সেটাও নিশ্চিত করা হয়েছে। কারণ এসব কর্মকান্ড যারা করেছে তাদের কেউ কখনও দন্ডিত হয় নাই, এবং আমি প্রায় ৪ দশক শিক্ষকতার সংগে যুক্ত আমার ছাত্ররা বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী কিন্তু কখনও তারা শিক্ষক হিসাবে আমাকে অসম্মান করেনি আমিও যে কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের হউক না কেন যখন ছাত্র হিসাবে আমার কাছে এসেছে আমি তাদের প্রতি সমভাবে আচরণ করেছি। সে কারণে বললাম কতটা মনুষত্ব বিবর্জিত হলে শিক্ষককে মিথ্যা কথা বলে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে হত্যা করতে পারে। ইতিহাসে এর উদাহরণ পাওয়া খুব কঠিন, এবং এ মুহূর্তে আমার একটি বইয়ের নাম ও দলিলের কথা মনে পড়ছে। বইটির লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা ও সাবেক রেজিষ্ট্রার তার নাম সম্ভবত নাজিম উদ্দিন হতে পারে। বইটির নাম ‘যখন কৃতদাস’। বইটির কথা উল্লেখ করছি একটি কারণে, বইটির শিরোনামের মাধ্যমে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিকামী বাঙ্গালীর অবস্থা কি ছিল তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অর্থাৎ মুক্তিকামী মানুষ কৃতদাস ছিল, কৃতদাস হতে বাধ্য করা হয়েছিল। হত্যার কথা বলেছি, তার সঙ্গে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্মান্তর করণ, দেশান্তর সবকিছুই এই প্রত্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। কৃতদাসের কোন ইচ্ছা থাকে না, এই অবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙ্গালীদেরও এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল যে, তারা স্বইচ্ছায় কোন কাজ করতে পারতো না। জেনারেল নিয়াজীর একটি দলিলের কথা উল্লেখ করতে চাই যেটি আমার বই ‘মুক্তিযুদ্ধের ছিন্ন দলিলপত্র’-এ উল্লেখ করেছি। নিয়াজী তার নথিতে উল্লেখ করেছিলেন যে, পাকিস্তানীদের উচিত হবে বাঙ্গালীদের সংখ্যাঘুতে পরিণত করা। এখন আমরা যদি সেই সব রাজনীতিবিদ যাদের কথা ইতিপূর্বে আমি উল্লেখ করেছি সেসব কমিটি ও বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা এই লক্ষ্য পূরণে পাকিস্তানী জান্তাকে সহায়তা করে গেছে। অর্থাৎ মুসলমান ছাড়া অন্যান্য ধর্মালম্বী বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করা। এক্ষেত্রে তারা সিষ্টেমেটিক্যালি কাজ করছে। এর প্রমাণ প্রায় এক কোটি লোকের দেশ ত্যাগ, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাবে নদীর পার্শ্বে যেখানে সেতু আছে সেখানে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে যাদের বধ্যভূমিতে স্থান হয় নাই। উদাহরণ স্বরুপ আমি একবার বরিশালের উজিরপুরে এক প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানকার লোকেরা সাধারণত পান চাষ করে। তারা আমাকে জানিয়েছিল যে, রাজাকাররা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীদের পথ দেখিয়ে সেই গ্রামে নিয়ে গিয়েছিল এবং সেই গ্রামে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। গণহত্যার বিস্তৃতি তৃণমূল পর্যায়ে কিভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল সেটা ঐ গ্রামের ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। অনেক গণহত্যার পর অনেকের লাশ গণকবর না দিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়, এবং এইসব রাজনৈতিক দলের মধ্যে আমি আগেও উল্লেখ করেছি, আবারও বলছি জামায়াতে ইসলামী ছিল প্রধান এবং এর দায় দায়িত্ব জামায়াতের নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির বা প্রধান গোলাম আযমের উপর বর্তায়, এবং আমার কাছে যে সকল কাগজপত্র আছে বা যে সকল বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১৩ থেকে ২০ বছরের বালিকা ও তরুণীদের তুলে নেয়া হয়েছিল, এবং ১৩/১৪ বৎসরের বালিকারাও জানিয়েছে প্রতিদিন কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ বার তাদের ধর্ষণ করা হতো, এবং আমি ভাবতে পারি না যে, বাঙ্গালী রাজনীতিবিদরা যারা পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী হিসাবে কাজ করছিল তারা কিভাবে এ কাজে পরামর্শ দিলেন, সহায়তা করলেন, তাদেরও তো স্ত্রী, কন্যা ছিল। নারী ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনকে ব্যবহার করা হয়েছে বাঙ্গালী মুক্তিকামী মানুষকে কৃতদাস করে রাখার জন্য। আমরা শরনার্থীদের কথা বলি কিন্তু শরনার্থী শিবিরে কত মানুষ মারা গেছে সেটা উল্লেখ করি না। এসব মানুষও গণহত্যার অন্তর্ভূক্ত, এবং তারা এসব কর্মকান্ডে এত বদ্ধ পরিকর ছিল যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও গোলাম আযম পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করে, এবং আমাদের প্রয়াত ধর্মপ্রাণ দার্শনিক জনাব দেওয়ান মোঃ আজরফ বলেছিলেন যে, ধর্মের নামে এত মুসলমান এর আগে এত হত্যা করা হয় নাই, এবং আমার জীবিত কালে বা জীবন কালে এত অশ্রু, এত রক্ত, এত বেদনার সম্মুখীন আর কখনও হয়নি, হতে চাইও না আল্লাহর কাছে এটি আমার প্রার্থনা।
এই কথাগুলি পিডব্লিউ-১ মুনতাসির মামুন তদন্তকারী কর্মকর্তা যিনি বক্তব্য রেকর্ড করেছেন তার নিকট বলেন নাই। (প্রসিকিউশনের আপত্তি সহকারে)
০৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনার জন্য আমি সাতকানিয়া থেকে আমার আরো অনেক বন্ধু বান্ধব সহ চট্টগ্রামে চলে আসি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনা হয় নি কারণ রেডিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছেল। তাৎক্ষনিক আমরা বন্ধু বান্ধবরা যার যার কর্মস্থলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং কেহ ট্রেনিং ক্যাম্পে ফেরত যাইনি, এবং এই খবর আমাকে থানা থেকে একজন পুলিশ কনস্টেবল এসে জানায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে থানায় চলে আসি এবং স্থানীয় জনগনকে এবং নেতৃবৃন্দকে থানায় ডেকে আনি। ঝিনাইদহে অবস্থানরত সরকারী কর্মকর্তারাও সেখানে ছিলেন, এবং পাকিস্তান আর্মির একটি জিপ থানায় আসে, এসে আমাদেরকে এবং থানার ওসি সাহেবকে খোজাখুজি করে। কাউকে না পেয়ে শহরের উপর দিয়ে তারা কুষ্টিয়ায় চলে যায়, এবং সঙ্গে সঙ্গে এলাকার আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলে গাছ কাটা শুরু করে। সেই সময় ঝিনাইদহ যশোর, ঝিনাইদহ মাগুড়া, ঝিনাইদহ কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ চুয়াডাঙ্গা সকল রাস্তার পাশে বড় বড় মেহগনি এবং অন্যান্য গাছ ছিল। এই গাছের ডালপালা গুলো কেটে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং ২৯ শে মার্চ সকাল বেলা ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং এমপি জনাব জে কে এম এ আজিজ আমাকে খবর দেন যে ঢাকা থেকে দুই জন মেহমান এসেছেন আপনি আসুন, এবং কুষ্টিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষ সেদিন আক্রমণে আমাদেরকে সহায়তা করে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান নিয়ে আকাশ বাতাস প্রকস্পিত করে এবং আমাদের বাহিনী ও জনগণের আক্রমণের মুখে পাকিস্তান বাহিনী শহরে তিন স্থান দিয়ে বের হয়ে জিলা স্কুলে সমবেত হয়। জনগণ তখন চারিদিক দিয়ে জিলা স্কুলকে ঘিরে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পাকিস্তান বাহিনী তখন দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে ঝিনাইদহের পথে রাতের অন্ধকারে রওয়ানা দেন ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে, এবং এই অবস্থায় তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। সকাল বেলা গ্রামের মানুষ তাদের সবাইকে হত্যা করে এবং সমস্ত গোলাবারুদ উদ্ধার করে ঝিনাইদহ থানায় নিয়ে আসে। একজন লে. আতাউল্লা শাহ শৈলকূপায় একটা বদ্ধ দালানের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে পাগলের মত গুলি ছুড়তে থাকে। আমি নিজে আমার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে তার চারদিকে ঘেরাও করে তাকে গুলি ছুড়া বন্ধ করতে আহব্বান করলে সে গুলি ছুড়া বন্ধ করে, এবং শহীদদের মধ্যে দুই জন ছিলেন স্থানীয় এমএনএ ইকবাল আনোয়ারুল ইসলাম সাহেবের দুই ছেলে”, এবং “এই জমা রশিদটি বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে”, এবং “এর মধ্যে এই অঞ্চলের সমস্ত মানেুষের সুখ-দুঃখ ও ছোখের জল, স্বাধীনতাকমী রাজনতিক নেতৃবৃন্দের প্রয়াস প্রচেষ্টা ও সচেষ্ট অংশ গ্রহণের এবং সার্বিক জন যুদ্ধের একটা চিত্র দিতে আমি চেষ্টা করেছি। কিন্তু এর পর দীর্ঘ নয় মাস আমি ও আমার সঙ্গী যারা মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন তাদের নিয়ে বেনাপোলের কাগজ পুকুরে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি”, এবং “এই যুদ্ধ চলা অবস্থায় আমাদের মুক্তিবাহিনীর হাতে অনেক রাজাকার, আলবদর, আলশামস গ্রেফতার হয়েছে, তাদের কাছ থেকে এবং পাকিস্থান রেডিও এবং তৎকালীন পত্রপত্রিকা শুনে ও পড়ে জেনেছি যে ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ট হয় এবং যে দলগুলো তার বিরোধিত করে পরাজিত হয় তাদের মধ্যে ছিল জামায়াত ইসলামী, মুসলিম লীগ, পিডিপি প্রমুখ। এই পরাজিত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে ২৫ শে মার্চ থেকে তাদের পরিচালিত অপারেশন সার্চ লাইটকে সমর্থন করে এবং সেই পাকিস্তান আর্মিকে সহায়তা করার জন্য সারাদেশ ব্যাপি শান্তি কমিটি গঠন করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে। আমি শুনেছি টিক্কা খানের সঙ্গে যারা দেখা করেছেন তাদের মধ্যে অধ্যাপক গোলাম আযম, খাজা খয়েরুদ্দিন ও নুরুল আমিন ছিলেন। তারা যে দেখা করেছেন সেই ছবি সম্বলিত পত্রিকা আমি স্বাধীনাতর পরে দেখেছি। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ। এই ছাত্র সংঘ রেজাকার বাহিনী গঠন করে। তার সঙ্গে তারা আলবদর বাহিনীও গঠন করে। এই শান্তি কমিটি, আলবদর, রেজাকার এদেরকে সশস্ত্র করার জন্য শুনেছি গোলাম আযম সাহেব প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করেছেন। ফলে এই বাহিনীগুলোকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য আনসার বাহিনীকে বিলুপ্ত করে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং শান্তিকমিটি এদের মধ্যে যারা আগ্রহী ছিল তাদেরকে সশস্ত্র করা হয় এবং বেতন ভাতা দেওয়া হয়। এই শান্তি কমিটি, আলবদর, আলশামস, রাজাকার বাহিনী আমাদের ৮ নং সেক্টরে সশস্ত্র অবস্থায় পাকিস্থান আর্মির সঙ্গে চলাফেরা করত, পাকিস্তান আর্মিকে পথঘাট দেখিয়ে যেসব বাড়ি, গ্রাম অথবা অঞ্চলে হাটে বাজারে মুক্তিকামী জনতা, মুক্তিযোদ্ধা থাকত সেখানে তাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে এসে হত্যা গুম ইত্যাদি করত এবং এলাকার সুন্দরী যুবতী মেয়েদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানী ক্যাম্পে পৌঁছিয়ে দিত। আমার এলাকার চুকনগরে তারা কয়েক হাজার মানুষকে হণহত্যা করেছে। এরকম গণহত্যা বাংলাদেশের সর্বত্র করা হয়েছে বলে আমি শুনেছি”, এবং “মুক্তিযোদ্ধাদের দেশদ্রোহী বলেছে এবং নিজেদেরকে দেশপ্রেমিক বলেছে। সর্বশেষ ১৪ই ডিসেম্বর ঢাকার মীরপুরে বুদ্ধিজীবীদের গণহারে হত্যা করেছে এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধা শূন্য করার চেষ্টা করেছে। এই যে স্বাধীনতা বিরোধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ, এই অপরাধের নেতৃত্ব দিয়েছে সবছেয়ে বড় দল জামায়াত ইসলামী এবং তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ। বড় দল হিসাবে এবং বড় দলের নেতা হিসাবে অধ্যাপক গোলাম আযম এবং তার সাথীরা যারা এই পাকিস্তনী সহযোগী বাহিনীদের সম্পূর্ণ নিজের কমান্ডে নিয়েছিল, তারাই এই মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে এবং তাদের মূল নেতা প্রফেসর গোলাম আযম এর নেতৃত্ব দিয়েছেন।” এই কথাগুলি পিডব্লিউ-২ মাহবুব উদ্দিন আহম্মদ বীর বিক্রম আমার নিকট বলেন নাই।

আমার মা ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম পরিষদ বলে একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন যারা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছিল মূল ধারার রাজনীতির আন্দোলনের সাথে, বা মার্চ মাসে যখন থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছিল তাতে আমরা সাংগঠনিকভাবে অংশগ্রহন করেছিলাম এবং সেই সময়ে সে সমস্ত সভা, সমিতি ও সমাবেশ হচ্ছিল তাতে অংশ গ্রহন করেছি সক্রিয়ভাবে। ৭ই মার্চে তদানিন্তন রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায়ও উপস্থিত থেকে অংশগ্রহন করেছি এবং “আমাদের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, আমাদের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” এই বানীতে উজ্জিবীত হয়েছিলাম, বা অন্যদিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক কর্মী কিংবা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে উজ্জিবীত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপর নানা রকম হামলাও চালানো হচ্ছিল, বা ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের রাত্রি ১২-০০ টার দিকে আমার ভগ্নিপতি চট্টগ্রাম থেকে টেলিফোনে আমাদের নিকট জানতে চান যে, ঢাকার অবস্থা কেমন এবং শুধু এটুকুই বলতে পারেন যে, অবস্থা ভাল নয়, একথা বলার পর পরই টেলিফোনের লাইন কেটে যায়, বা আমাদের পাশের দোতলা বাড়ির একজন জানালেন যে, তাদের বাড়ির ছাদ থেকে কোনাকোনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আগুনের হলকা দেখা যাচ্ছে এবং আমাদের বাড়ির সামনে একটি নির্মানাধীন বাড়ির ছাদে একটি কালো পতাকা উড়ছিল এবং সেই বাড়ির দারোয়ানকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছিল। আমাদের বাড়ির সামনে পানির লেকের উপর একটি ব্রীজ আছে এবং ঐ ব্রীজের উপর দিয়ে মানুষের দৌড়াদৌড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছিল এবং ঐ ব্রীজের উপর একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, বা সাংবাদিক শহিদুল্লাহ কায়ছার সংবাদ পাঠালেন যে, বা আস্তে আস্তে আমরা জানতে পারলাম যে, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর, রাজশাহী সর্বত্রই একই ধরনের হত্যাকান্ড চলছে এবং পুলিশের তৎকালীন বড় কর্মকর্তা মামুন মাহমুদ রাজশাহীতে ছিলেন তাকেও হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় কর্মরত বাঙ্গালী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণকে হত্যা করা হয়েছে, বা ২৭শে মার্চ সকাল বেলায় যখন আমরা রাস্তা পার হয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রাস্তা দিয়ে হেটে যাই আমি নিজে দেখেছি বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে মালামাল নিয়ে ট্রাকে তুলছিল, বা তারা কিছু গোপন কিলার ফোর্স তৈরি করার উদ্যেগ নিয়েছে এবং আলবদর, আলশামস নামে দুটি বাহিনী ঐ উদ্দেশ্যে গঠন করা হয় এবং তারা খুব গোপনে একাজগুলি করবে মর্মে জেনেছিলাম, বা নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, রায়ের বাজারের কাছে হিন্দু অধ্যূষিত এলাকায় একটি অপারেশনে তাকে যেতে হবে, বা সেই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন তৎকালীন খালেদ মোশাররফ সাহেব। তার সঙ্গে আমরা দেখা করলাম, বা সেখানে আমাদের সঙ্গে এই কর্মকান্ডে জড়িত হন ডাঃ জাফরউল্লা চৌধুরী, ডাঃ মোবিন, ডাঃ কামারুজ্জামান প্রমুখ যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অত্যন্ত সম্মানিত ও সুপরিচিত। পরে ডাঃ ক্যাপ্টেন সিতারা এসে আমাদের সাথে অক্টোবর মাসে যোগ দেন যিনি পরবর্তীতে বীর প্রতীক উপাধীতে ভূষিত হন, বা আমরা যেখানে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ থেকে আরও কয়েকজন মেয়ে যারা বাংলাদেশে ভিতরে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাজ করছিল এবং যোগাযোগ রাখছিল তারাও সেখানে এসে হাসপাতালে সেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজে যোগ দেন। যাদের মধ্যে প্রফেসর জাকিয়া খাতুন, আসমা, রেশমা, মিনু, অনুপমা, পদ্মা, নিলিমা, ডাঃ ডালিয়া শামসুদ্দিন উল্লেখযোগ্য, বা আমেরিকা প্রবাসী ভাইয়ের নিকট আমার মায়ের দেয়া কোড ল্যাংগুয়েজের চিঠি সমূহ যাহা আমাদের নিকট দেয়া হতো সেগুলির মাধ্যমে আমরা দেশের অভ্যন্তরের খবরাখবর পেতাম, বা শেরাটনের বোমা হামলার ঘটনা, রুমি, বদি, আলম, বাদল, চুন্নু সামাদ, আলভী গংদের বিভিন্ন গেরিলা অপারেশনে ঘটনা সবকিছুই আমরা নিয়মিত ঐ হাসপাতালে বসে পেতাম, বা আলশামস, রাজাকার এই বাহিনী সমূহের নেতা হিসেবে গোলাম আযম স্বাধীনতার পক্ষের মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এক প্রতীক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যেমন মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তেমন এর বিরোধী পক্ষের প্রতীক ছিলেন অধ্যাপক গোলাম আযম, বা চার্চের মধ্যেও ঢুকেও তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, মন্দির গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে তাদেরকে এই অত্যাচারিত ও ধর্মান্তরিত হতে হয়েছে, বা শুধুমাত্র হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান দেরকেই একই উদ্দেশ্যে আক্রমন করা হয়েছে তা নয়, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বাঙ্গালী জাতিয়তাবাদে বিশ্বাসী এবং স্বাধীনতার পক্ষের প্রত্যেকটি মানুষের চেতনাকে আঘাত করে তাদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে, তবে বিশেষভাবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানদের চিহ্নিত করে ধর্মীয় কারণে তাদের উপর হত্যা লুন্ঠন, নির্যাতন, ধর্ষণ সহ বিভিন্ন অপরাধ করা হয়েছে, বা কালি মন্দির আক্রমন, শাখারী বাজার, রায়ের বাজার, হাটখোলা ওয়ারী যে সমস্ত জায়গা হিন্দু অধ্যূষিত বলে পরিচিত কারপিউ দিয়ে অগ্নিসংযোগ করা আবার একই সাথে রাজারবাগে অগনিত পুলিশ বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া, একই রকমভাবে পিলখানায় রাইফেলসের সদস্যদের উপর আক্রমন করা একটি ঘৃন্য গণহত্যার উদাহরন স্থাপন করে, বা বরিশালের একটি উদাহরন দেই বাজারে সমবেত জনগোষ্ঠির উপর  হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়। ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ দৌড়ে নদীতে ঝাপ দিতে গেছে তখন লঞ্চ থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদেরকে বিপরীত দিতে থেকে গুলি করেছে। এই ধরনের ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না, এরকম ঘটনা দেশের সর্বত্রই হয়েছিল। এই ছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার কৌশল এবং সেই কৌশলকে সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছে তারাও এই অপরাধের সমান ভাগিদার, বা সহযোগিতার মাস্টার মাইন্ড, বা ১৯৭১ সালের ২৩শে আগষ্ট এবং ৩১শে আগষ্ট তারিখে গোলাম আযম পাকিস্তানের লাহোর এবং হায়দারাবাদে নিজে উপস্থিত থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর এইসব কর্মকান্ডকে সমর্থন দিয়েছেন এবং মক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন এবং মুক্তিবাহিনীকে নির্মূল করার আহ্বান জানিয়েছেন। লক্ষ্য করা যেতে পারে সেপ্টেম্বর মাসে যখন তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে নতুন মন্ত্রী সভা গঠন করা হয় সেখানে জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদেরকে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এখানে একটা প্রশ্ন পরিস্কার করা প্রয়োজন যে, শান্তি কমিটি কখনও সশস্ত্র কোন অভিযানে অংশ গ্রহন করেছে কিনা। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তারা কখনও কখনও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে তারা সশস্ত্র অভিযানে অংশ নিয়েছে। রাজাকারদের কাছে অস্ত্র ছিল সেটা সকলেরই জানা আছে। আমরা আরও লক্ষ্য করি ১৯৭১ সালের ১লা ডিসেম্বর যখন মুক্তিযুদ্ধ জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে তখনও গোলাম আযম ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাত করে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন যে, মক্তিবাহিনীকে পরাভূত করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং তিনি দম্ভভরে একথাও বলেন যে, সে ব্যাপারে রাজাকাররাই যথেষ্ট, বা যে উপায়ে এবং যে নির্যাতন ও অত্যাচার করে এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয় নাৎসী আমলেরও অনেক হত্যাকান্ড তা দেখে লজ্জিত হবে। আমরা জানি রাজাকার, শান্তি কমিটি ও আলবদর ও আলশামস এই সমস্ত বাহিনীল দার্শনিক এবং কৌশলগত পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন গোলাম আযম। এই কথাগুলি পিডব্লিউ-৩ সুলতানা কামাল তদন্তকারী কর্মকর্তা যিনি বক্তব্য রেডর্ক করেছেন তার নিকট বলেন নাই।

ঐ দিন দিবাগত রাতে যখন পাকিস্তান আর্মিরা মোহাম্মাদপুর থানা ঘেরাও করে ফেলে তখন আমার স্বামী পিছনের রাস্তা দিয়ে থানা থেকে বের হয়ে বাসায় আসেন। বা (পুলিশ লাইনে) মাইকিং হতে থাকে এই কথা বলে যে, আপনারা কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। আমাদের ঘরের লাইট নিভিয়ে ফেলেন। বা সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাত্রি আনুমানিক ১২টা সাড়ে বারোটার সময় আমার স্বামী বাসায় ফিরে আসেন। তখন আমরা ঘরের মেঝেতে শুয়েপড়ি। ঐ ২৫ মার্চ সারারাত্রি গোলাগুলির শব্দ শুনা যায়। বা আমার স্বামী আমকে বলে যে, তাকে (সিরু মিয়া) সবাই চিনে তাকে হয়ত ধরে নিয়ে যাবে এবং আমার ছেলে কামালকেও মেরে ফেলবে আমরা তাঁকে বাঁচাতে পারবো না। ছেলে কামাল ২৫ মার্চ তারিখে বিকেলে আমাদের বাসার সামনে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিল। ঐ সময় আমাদের বাসা ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনের খুবই নিকটে। বা তাকে আমাদের এখানকার ৫টি থানা এলাকার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের তদারকি করার জন্য। বা নজরুল দাউদকান্দি থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিল। যাওয়ার আগে তিনি আমার সঙ্গে দেখা করেন। ২৬ অক্টোবর তারিখে তারা ছতরা নামীয় একটি গ্রামে ছিল কারণ তখন বর্ডারে খুব কড়াকড়ি ছিল, তারা পার হতে পারে নাই। বা এর দুইদিন পরে আমার ভাই কামালের আব্বা এবং কামালের সংগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া দেখা করতে গেলে তার নিকট তার ব্যবহৃত কাপড় চোপড় ফেরত দেয়া হয়। বা দেশ স্বাধীনের পর শফিউদ্দিন জেল থেকে বেরিয়ে এসে আমার সংগে দেখা করে। এই কথাগুলি পিডব্লিউ- ১৩ আনোয়ারা বেগম আমার নিকট বলেন নাই।

কোন সাক্ষীর জবানবন্দী একাধিক দিনে গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে আমার নিকট তথ্য নাই। সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণের জন্য ন্যায়ানুগ নীতিমালা আমি অনুসরণ করি নাই, ইহা সত্য নহে।

যেহেতু রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তি কর্তৃক অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সেহেতু আমি একজন সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়নে অতি উৎসাহী হয়ে আমার শেখানো ও পরিকল্পনা মতে সাক্ষী গ্রহণ করে অসত্য তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি, ইহা সত্য নহে। অধ্যাপক গোলাম আযমের ১৯৭১ সালের ভূমিকা ছিল শুধুমাত্র রাজনৈতিক, ইহা সত্য নহে। তিনি এবং তার দল মনে করতেন ১৯৪৭ সালের পর পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের উপর যে শোষণ, নির্যাতন এবং নীপিড়ন করা হয়েছে তার প্রতিকার এবং সমাধান গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অর্থাৎ পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের মধ্যেই সম্ভব ছিল, ইহা সত্য নহে। তিনি এবং তার দলের দর্শন ছিল ভারত তার নিজস্ব স্বার্থে তাদের আধিপত্যবাদী নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনসাধারণের আন্দোলনকে ভিন্নভাবে চিত্রায়নের চেষ্টা করছে, ইহা সত্য নহে। অধ্যাপক গোলাম আযম এবং তার দলের এই দর্শনের পক্ষে ভারত কর্তৃক কৃত ১৯৭১ সালের আগে এবং পড়ে বহু কার্য দ্বারাই সমর্থিত হয়, ইহা সত্য নহে। আমি অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ এনেছি তার সবই অসত্য, মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে, ইহা সত্য নহে। (সমাপ্ত)




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন