বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অষ্টম সাক্ষীর জেরা///পিতার হত্যাকারীকে চেনা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেননি সাক্ষী।

১৯/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী মো. জিয়াউল ইসলামের জেরা । সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেছিলেন তার পিতা শহীদ নুরুল ইসলামকে ’৭১ সালে তৈয়ব ও রব্বানী নামে দুই আল-বদর সদস্য অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে আল-বদর সদস্যরা তাকে হত্যা করে। এ বিষয়ে জেরায় সাক্ষী বলেন, তৈয়ব ও রব্বানীকে আমি মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে চিনতাম। তাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের পর দেখাও হয়েছে। তবে তৈয়ব ও রব্বানীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেইনি।

আন্তর্জাতক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষীকে জেরা করেন ডিফেন্স কাউন্সেল কফিল উদ্দিন চৌধুরী। তাকে সহায়তা করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক ও অ্যাডভোকেট শিশির মনির। জেরায় সাক্ষী স্বীকার করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার  বাবার দোকানের ডানদিকে ছিল রব্বানীর দোকান যে তার  বাবাকে ধরে আল-বদর ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিল।

জেরায় সাক্ষী স্বীকার করেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম অর্ন্তভুক্ত করে।  ৭২ হাজার ৭৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় এবং অবৈধভাবে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে সাক্ষী ও তার স্ত্রীর নামে বিদ্যুৎ বিভাগ ২০০৪ সালে মামলা করে।


জেরা (সংক্ষিপ্ত):
প্রশ্ন: ’৭১ সালে আপনার পিতাকে অপহরণকারী তৈয়ব ও রব্বানীকে চেনেন?
উত্তর: তৈয়ব ও রব্বানী নামে দুই আল-বদর সদস্যকে আমি মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে চিনতাম। তাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের পর দেখাও হয়েছে।
প্রশ্ন: তৈয়ব ও রব্বানীর বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন?
উত্তর: নেইনি।
প্রশ্ন: ময়মনসিংহ জেলার আল-বদর কমান্ডার কে ছিলেন?
উত্তর: জানি না।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর আপনি যখন দেশে ফিরে আসেন তখন স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকায় কামারুজ্জামানের নাম পেয়েছেন?
উত্তর: তালিকা করা আমার দায়িত্ব নয়।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর থেকে (বর্তমান সরকার আসার আগ পর্যন্ত) পিতা হত্যার বিচার চেয়ে কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে কোথাও কোন অভিযোগ করেছেন কিনা?
উত্তর: পিতার হত্যার বিচার চেয়ে লিখিতভাবে কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে এই ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছি।
সাক্ষীর এ জবাবের পরই প্রসিকিউটর নুর জাহান বেগম মুক্তা বলতে থাকেন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তাকে-ই তিনি লিখিত অভিযোগ বলে মনে করেছেন। এ সময় জেরাকারী আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী প্রসিকিউশনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা এমন মন্তব্য করে ঠিক করেননি। আমি প্রশ্ন করার আগেই আপনারা জবাবটা দিয়ে দিচ্ছেন। ওই সময় ডিফেন্স কাউন্সেল ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক দাড়িঁয়ে ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মাই লর্ড  উনি (প্রসিকিউটর নুর জাহান মুক্তা) বারবারই এমন করেছেন, সাক্ষিকে উত্তর বলে দিচ্ছেন। এ সময় প্রসিকিউটর নুর জাহান মুক্তা আদালতকে বলেন,  সে আমকে চোখ রাঙিয়েছে। আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলেছেন। এ বিষয় নিয়ে কিছু সময়ের জন্য প্রসিকিউটর ও ডিফেন্সের সদস্যরা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল উভয়পক্ষকে থামিয়ে দেন এবং পুনরায় জেরা শুরু হয়।

প্রশ্ন: আপনি কি এই মামলার  অভিযোগকারি? 
উত্তর: হ্যাঁ, এই মামলার অভিযোগকারী আমি নিজেই।
প্রশ্ন: ’৭১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল তখন আপনার বাবার হত্যার মামলা (অভিযোগ) করেননি কেন?
উত্তর: সময় পাইনি। 
প্রশ্ন: আপনার যে বন্ধু আপনার বাবা হত্যার ঘটনা বলেছিলেন সেই বন্ধুর নাম কি?
উত্তর: ওই বন্ধুর নাম বলতে পারব না।
প্রশ্ন: ’৭১ সালে আপনি কখন ভারতে যান এবং কখন ফিরে আসেন?
উত্তর: ’৭১ সালের এপ্রিল মাসে আমি ভারতে যাই এবং ’৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ফিরে আসি।
প্রশ্ন: আপনি কত দিন বিস্ফোরক ট্রেনিং নেন?
উত্তর: তিন দিন।
প্রশ্ন: আপনি বিস্ফোরকের ট্রেনিং নেন বলেছেন, বিস্ফোরকের পাওয়ার কে কি বলা হয়?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: বিস্ফোরকের ট্রেনিং নেয়ার সময় আপনাদের ব্রিজের কোন অংশ বা কতটুকু উড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হত?
উত্তর: অংশ বলতে পাব না, ব্রিজ উড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
এপর সাক্ষী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে এতো প্রশ্ন করলে বাবা হত্যার বিচার চাই না।
প্রশ্ন: বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহারের সময় সোজাসুজি না আড়াআড়ীভাবে বসাতেন?
উত্তর: ৪০ বছর পর সঠিক মনে নেই বিস্ফোরক সোজাসুজি না, আড়াআড়িভাবে বসাতে হত।
প্রশ্ন: কাজী মতিউর রমানকে চেনেন?
উত্তর: চিনি, তিনি আমার বন্ধু এবং তিনি ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন। 
প্রশ্ন: কাজী মতিউর রমানের মেয়েকে অপহরণেল অভিযোগে আপনার ও আপনার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় কখন আপনার নাম অন্তর্ভূক্ত হয়েছে?
উত্তর: যখন থেকে তালিকা হয় তখন থেকে।
প্রশ্ন: ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আপনার নাম অর্ন্তভুক্ত করে।
উত্তর: সত্য।
প্রশ্ন: ময়মনসিংহ জেলা কমান্ডার নাজির উদ্দিন আহমেদসহ ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা ২০০৯ সালের ১১জুন মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ডে এক আবেদনে আপনাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা গণ্য করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে আপনার নাম কর্তনের আবেদন করেন।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: ওই অভিযোগের উপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধ কেন্দ্রীয় কমান্ড তালিকা (অভিযোগ) এর প্রথম পর্যায়ে আপনার নাম অন্তর্ভূক্ত করে।
উত্তর: অভিযোগ করেছে তবে এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
প্রশ্ন: আপনি সব সময় আওয়ামী লীগ পন্থী ও বর্তমান আপনার এলাকার সংসদ সদস্য মতিউর রহমান আপনার চাচা হয়।
উত্তর: শতভাগ সত্য।
প্রশ্ন: আপনার পিতা হত্যার বিষয়ে স্বাধীনতার ৪২ বছর পর কামারুজ্জামানকে জড়িয়ে যেসব কথা বলেছেন তা মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক ও বানোয়াট।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনি যেহেতু একজন বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা তাই  বিতর্ক থেকে নিজেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এমপির পরামর্শে এ মামলার আসামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিচ্ছেন।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: কামারুজ্জামান ’৭১ সালে আল-বদর স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন না, তিনি তখন এইচএসসির ছাত্র ছিলেন মাত্র।  
উত্তর: সত্য নয়।

রিপোটার : হাবিবুর রহমান

বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আরেক সাক্ষীর জেরা সম্পন্ন ।


মেহেদী হাসান, 19/9/2012
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর  পক্ষে আরেক সাক্ষীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে। তার নাম নুরুল হক হাওলাদার। তিনি গত ১০ সেপ্টম্বর মাওলানা সাঈদীর পক্ষে জবানবন্দী প্রদান করেন। সেদিন তার আংশিক জেরা হয়। এরপর অসুস্থতার কারনে তার জেরা মুলতবি ছিল। আজ  তাকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী। এ নিয়ে  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে মোট পাঁচজন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ এবং জেরা সম্পন্ন হল।

জেরা :

প্রশ্ন : আপনারা কয় ভাই?
উত্তর : তিন ভাই।
প্রশ্ন : তাদের নাম বলবেন?
উত্তর :  মোঃ শামসুল হক হাওলাদার,  মোঃ মোজাম্মেল হক হাওলাদার এবং আমি।
প্রশ্ন : অন্য দুজন কি আপনার বড় ?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : মোজাম্মেল হকের কয় ছেলে?
উত্তর : চার।
প্রশ্ন : তাদের নাম?
উত্তর :  শাহে আলম, শহিদুল ইসলাম, সাইদুল্লাহ এবং হাফিজুল্লাহ হাওলাদার ।
প্রশ্ন : বড় ভাই শামছুল হকের কয় ছেলে?
উত্তর :  তিন ছেলে।
প্রশ্ন : নাম?
উত্তর :  লোকমান হাওলাদার, সোলায়মান হাওলাদার এবং জামাল উদ্দিন হাওলাদার।
প্রশ্ন : সোলায়মান হাওলাদারের বর্তমান বয়স  কত?
উত্তর : ৫৭/৫৮ বৎসর।
প্রশ্ন : মাহবুবুল আলম হাওলাদার (মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষী)  প্রথমে তার চাচাতো বোন বিয়ে করে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনার  ফুফা এবং মাহবুবুল আলম হাওলাদারের শ্বশুর পরস্পর  কি  হন?
উত্তর : চাচাতো ভাই।
প্রশ্ন : মাহবুবুল আলমের ১ম স্ত্রী মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন :  সেই মামলায় সব সময় আপনি মাহবুবুল আলমের বিপক্ষে কাজ করেছেন।
উত্তর : পক্ষেও কাজ করিনি বিপক্ষেও কাজ করিনি।
প্রশ্ন : ওই স্ত্রীর সঙ্গে মাহবুবের এখন সম্পর্ক আছে?
উত্তর : না। ওই মামলায় সে দুই মাস হাজত খেটেছে।
প্রশ্ন :  মাহবুবের বর্তমান বাড়িটি  কিসের?
উত্তর : টিনসেড বিল্ডিং, বর্তমানে দোতলার কাজ চলছে।
প্রশ্ন :  দোতলায় কাজ চলছে কথাটি সত্য বলেনিনি আপনি।
প্রশ্ন : সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আপনি পাড়েরহাট রাজলক্ষী উচ্চ বিদ্যালয়ে গেছেন?
উত্তর : ভেতরে কখনও প্রবেশ করি নাই। আমাদের বাড়ীর নিকটবর্তী রাস্তার পাশে স্কুলটি অবস্থিত। ঐ রাস্তা দিয়ে আমি সর্বদা চলাচল করতাম। দোতলা বাহির থেকে দেখা যেত।
প্রশ্ন : আপনাকে কোনদিন কোন মিলিটারী বা রাজাকাররা ডিস্টার্ব করেছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনার  গ্রামের বাড়িতে বা পাড়েরহাটের বাসায় কোন দিন কোন পাকিস্তানী আর্মি বা রাজাকাররা  গেছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : পাড়েরহাট বাজারে কয়দিন  লুটপাট হয়েছে এবং কয়দিন অগ্নিসংযোগ হয়েছে?
উত্তর : পাড়েরহাট বাজারে একদিনই লুটপাট হয়েছে। তারপর দিন খালের ওপারে বাদুরা চিথলিয়া গ্রামে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। পাড়েরহাট বাজারে কোন অগ্নিসংযোগ হয় নাই।
প্রশ্ন :  পাড়েরহাট বাজার লুট হওয়ার দিন আপনি  কোথায় ছিলেন?
উত্তর :  পাড়েরহাট বাজারেই ছিলাম।
প্রশ্ন : লুটপাটের পর আপনি কি করলেন?
উত্তর : আমি  আমার বাসায় চলে আসি।
প্রশ্ন : কোন ধরনের লোকদের দোকান বাড়ি লুটপাট হয়েছে?
উত্তর : হিন্দুদের দোকান। পাঁচ ছয়জন হিন্দুদের দোকান লুট হয়। এরা হলেন, মাখন সাহা, মদন সাহা, নারায়ন সাহা, বিজয় মাস্টার, গৌরাঙ্গ পাল।
প্রশ্ন :  দোকানের সঙ্গেই তাদের বাড়ি ছিল?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : গৌরাঙ্গ পাল কোথয় আছে?
উত্তর : মারা গেছে।
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন হিন্দুরা নিজের জীবন বাঁচাতে স্বেচ্চায় মুসলমান হয়েছে। তাদের জীবনের প্রতি কারা হুমকি সৃষ্টি করেছিল?
উত্তর : পাকিস্তান আর্মি। তারা দেখতেছে পাক আর্মি হিন্দুদের  মেরে ফেলছে। তখন তাদের বাঁচার কোন পথ ছিলনা।
প্রশ্ন : পাকিস্তানী আর্মিরা  কে হিন্দু কে মুসলমান তা কি চিনত?
উত্তর : পিস কমিটর লোক তাদের দেখিয়ে দিত।
প্রশ্ন :  মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যারা মুসলমান হয়েছিল তাদের সংগে আপনার দেখা সাক্ষাৎ হয়েছিল?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : কোথায়?
উত্তর : পাড়েরহাট বাজারে।
প্রশ্ন : আপনি প্রতিদিন গ্রামের বাড়ি যেতেন?
উত্তর :  আমি পাড়েরহাটে থাকতাম। মাঝে মাঝে আমার গ্রামের বাড়ি টগরা যেতাম।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে মুক্তিযোদ্ধারা বাড়ি ফিরে এসেছিল?  মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান  তালুকদার ফিরে এসেছিল?
উত্তর : হ্যা বাড়ি ফিরে আসে। মিজানুর রহমান তালুকদারকে  আমি প্রায় ১ মাস পরে দেখেছি।
প্রশ্ন : মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে এসে কোথায় থাতক কি করত?
উত্তর : স্বাধীনতার পরে মুক্তিযোদ্ধারা শান্তি কমিটির অফিস ও রাজাকার ক্যাম্পে থাকতো। জনসাধারণ তাদেরকে  চাউল ডাইল দিত। তা পাকসাক করে খেত তারা।
প্রশ্ন : মান্নান তালুকদার সাব কি করত?
উত্তর :  পিরোজপুরে একটি ব্যাংকে চাকুরী করতো।
প্রশ্ন :  তিনি তার বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত করতেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন :  মান্নান তালুকদার সাহেব কখনও আপনাকে  তার উপর নির্যাতনের কথা বলেন নাই বলে যে কথা বলেছেন তা   অসত্য।
প্রশ্ন : সত্য বলেছি।
প্রশ্ন :  রাজাকাররা লুটকরা মালামাল মিজানুর রহমান তালুকদারের বাড়িতে জমা দিয়েছে। তিনি সেই মালামাল ঢোল সহরত করে যাদের মাল তাদেরকে ফেরত দিয়েছে। আমরা ৪০ বৎসরের মধ্যে  একথা শুনি নাই।  আপনার এই কথাগুলি অসত্য।
উত্তর : সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : আপনি  কখনও মান্নান তালুকদার সাহেবের সংগে টগরা কামিল মাদ্রাসা ও এতিমখানার ম্যানেজিং কমিটিতে ছিলেননা।
উত্তর : ছিলাম।
প্রশ্ন : গৌরাঙ্গ সাহার বাসা  আপনার বাসা থেকে কতদূর?
উত্তর : আমার বাসা থেকে ১০০/১৫০ গজ দূরে ছিল।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আপনার  বাড়ি ও গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ির মধ্যখানে  কয়টি দোকান ছিল?
উত্তর : আনুমানিক ২০/২৫টি বাড়িঘর ছিল।
প্রশ্ন : আপনার  বাড়ি ও রাজাকার ক্যাম্পের মাঝখানে কয়টি বাড়িঘর ছিল?
উত্তর : ১০/১৫টি
প্রশ্ন : আপনার  বাড়ি ও গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ির মধ্যখানে যে ২০/২৫টি বাড়ি ছিল তার মধ্যে হিন্দুদে;র কয়টি এবং মুসলমানদের কয়টি?
উত্তর :  ৭/৮টি হিন্দু বাড়ি ছিল।
প্রশ্ন : আপনার সবচেয়ে নিকটে কোন মুসলমানের বাড়ি ছিল?
উত্তর :  শফিজউদ্দিন মৌলভীর বাড়ি।
প্রশ্ন :   শফিজউদ্দিন মৌলভীর  ওই সময় কয়  মেয়ে  ছিল?
উত্তর :  এক মেয়ে।
প্রশ্ন : ছেলে?
উত্তর : ২ জন।
প্রশ্ন : কার বয়স কত ছিল?
উত্তর : বড় ছেলের বয়স ২০/২২ বছর।
প্রশ্ন : গৌরাঙ্গের বাড়ির পাশে কার বাড়ি ছিল?
উত্তর :  সতীন্দ্র ডাক্তারের বাড়ি।  এখন সে বাড়ি ও গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি নাই। নদীতে ভেঙ্গে গেছে।
প্রশ্ন : সতিন্দ্র ডাক্তারের কয়টি মেয়ে ছিল?
উত্তর : জানা নেই।  তবে তার ২ ছেলে ছিল, একজনের নাম সুভাষ, অন্য জনের নাম বলতে পারব না।
প্রশ্ন : সেই সময় গৌরাঙ্গ সাহার বয়স ১০/১১ বৎসর। তার বোনেরা তার ছোট ছিল। বড় বোনের বয়স ৬/৭ বৎসর। আমাদের পাড়ের হাট ইউনিয়েনে কোন মহিলা ধর্ষিত হয় নাই। আজ প্রায় ৪০ বৎসর হয়ে গেছে কোন লোক বলাবলি করে নাই যে, গৌরাঙ্গ সাহার বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আপনার এই কথাগুলি অসত্য।
উত্তর : সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : মোসলেম মাওলানার এখন কয় স্ত্রী?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : তিনি কয়টি বিবাহ করেছেন?
উত্তর : তাও জানা নেই।
প্রশ্ন :  প্রচারিত হয়েছিল যে ঐ মেয়েকে (ভানু সাহা) মোসলেম মাওলানা বিবাহ করেছে। আপনার একথাও সত্য নয়।
উত্তর  : সত্য।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেব রাজাকারও ছিলেন না, স্বাধীনতা বিরোধীও ছিলেন না এবং মানবতা বিরোধী কোন কাজ তিনি করেন নাই। তিনি এ ব্যাপারে  তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। জবানবন্দীতে আপনার একথাহুলি  অসত্য।
উত্তর : সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : আপনি কি সব সময় নির্বাচনী জনসভায় যেতেন?
উত্তর : মাঝে মাঝে রাজনৈতিক দল সমূহের জনসভায় উপস্থিত হয়েছি।
প্রশ্ন : নিয়মিত পত্রিকা পড়েন?
উত্তর : মাঝে মাঝে পত্র পত্রিকা পড়ি।
প্রশ্ন : দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক যুগান্তর ও অন্যান্য পত্রিকায় খবর আসত। তা পড়েছেন?
উত্তর : কিছু কিছু পড়েছি।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেব তিনটি এম,পি, নির্বাচন করেছেন।  তার প্রতিপক্ষ নির্বাচনী প্রচারনায় তার বিরুদ্ধে কোন মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করেন নাই।  যদি তিনি এই অপরাধে অভিযুক্ত হতেন তাহলে নিঃসন্দেহে প্রতিপক্ষ তার নির্বাচনী প্রচারনার সময় তা তুলে ধরতো। আপনার এই কথাগুলি সত্য নয়।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের আষাঢ়Ñশ্রাবণ মাসে সাঈদী সাহেব পাড়েরহাটে আসেন। আপনার একথাও সত্য নয়।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : আপনার  ভাতিজা রাজাকার ছিল। আপনাদের  পুরো পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সময় সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন :  বর্তমানে আপনি  জামায়াতে ইসলামী  করেন এবং  পাড়েরহাট জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বে  আছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : দায়িত্বে নেই, তাহলে কোন পদে আছেন?
উত্তর : আমি কোন পদে নেই। আমি জামায়াত করিনা।
প্রশ্ন : আপনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে সক্রিয় আছেন  বিধায় জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের পক্ষে সত্য গোপন করে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান  করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার বাবা শান্তি কমিটির সদস্য ছিল।
উত্তর : আমি স্যার এইমাত্র শুনলাম।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি  সৈয়দ আনোয়ারুল হক   বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

বিপদ সাহার মেয়েকে নিয়ে তাদেরই বাড়িতে থাকত পিস কমিটির সেক্রেটারি মোসলেম মাওলানা/////জেরায় সাক্ষী


মেহেদী হাসান, ১৮/৯/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে পঞ্চম সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা খসরুল আলমের জেরা  আজ  সোমবার  শেষ  হয়েছে। গত ১৬ সেপ্টম্বর  তার জবানবন্দী শেষে আংশিক জেরা হয়। আজ  তাকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী।

জেরায় তাকে প্রশ্ন করা হয় “বিপদ সাহা আপনার কাছে তার ক্ষতির কথা বলেছে  বলে  উল্লেখ করেছেন আপনি। তার কি ক্ষতি  হয়েছিল?”

জবাবে সাক্ষী বলেন, তার আর্থিক ক্ষতি হয়নি। সামাজিক এবং মানসিক ক্ষতি হয়েছিল। পিস কমিটির সেক্রেটারি মোসলেম মাওলানা  বিপদ সাহার মেয়েকে নিয়ে বিপদ সাহার বাড়িতে থাকত মুক্তিযুদ্ধের সময়।

এর আগে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  রাষ্ট্রপক্ষেরও একজন সাক্ষী জেরার সময় বলেছেন,  বিপদ সাহার মেয়েকে নিয়ে বিপদ সাহার বাড়িতে থাকত মোসলেম মাওলানা।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যে বিচার বর্তমানে চলছে তাতে একটি আলোচিত  চরিত্র ভানু সাহা । ভানু সাহাকে জড়িয়ে মাওলানা  দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, রাজাকার, পিস কমিটির লোকজন এবং পাক আর্মির বিরুদ্ধে   আদালতে  পরষ্পর বিরোধী সাক্ষ্য   দিয়েছেন সাক্ষীরা।

আদালতে সাক্ষীদের দেয়া তথ্য  এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে ভানু সাহার পিতার নাম বিপদ সাহা। । ১৯৭১ সালে পিরোজপুর পাড়েরহাট বাজারে বিপদ সাহা তার মেয়ে ভানু সাহাকে নিয়ে বাস করতেন। ।  পাড়েরহাট বাজারে তাদের একটি দোকান ছিল  এবং দোকানের  পেছনেই   ছিল তাদের বসবাসের ঘর।  ভানু সাহা তখন বয়সে তরুনী ছিল ।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে   তিনজন সাক্ষী তাদের  জবানবন্দীতে ভানু সাহাকে  ধর্ষনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ধর্ষনের বিষয়ে তিনজন সম্পূর্ণ তিন রকম কথা বলেছেন। 

যেমন, গত বছর ৮ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবিন  ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ভানু সাহা ও  ছবি রায়সহ আরো অনেক  মেয়েদের  পাক আর্মি শান্তি কমিটি ও  রাজাকারদের সাথে নিয়ে  ধর্ষন করত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে।  ভানু সাহাকে দীর্ঘ কয়েক মাস  আটকে রেখে পাক  আর্মি উপর্যপুরী ধর্ষন করে। 

গত বছর  ২৭ ডিসেম্বর  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পঞ্চম সাক্ষী  মাহতাব উদ্দিন হাওলাদার জেরার সময় জানান, পাড়েরহাটে বিপদ সাহার  মেয়েকে নিয়ে বিপদ সাহার বাড়িতেই বাস করতেন  পিস কমিটির নেতা মোসলেম উদ্দিন মাওলানা। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাকে প্রশ্ন করেন, ভানু সাহাকে মোসলেম মাওলানা বিয়ে করে জামাই হিসেবে থাকতেন কি-না।  তখন মাহতাব উদ্দিন বলেন, বিয়ে করেছিল কিনা বলতে পারবনা। তবে গন্ডগোলের সময় ভানু সাহাকে নিয়ে মোসলেম মওলানা   থাকতেন বিপদ সাহার বাড়িতে।  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী   সাক্ষীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মোসলেম উদ্দিন মাওলানা বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং তিনি   পিরোজপুর ওলামা লীগের সভাপতি  এ বিষয়টি জানেন কি-না? সাক্ষী  ‘সত্য নয়’ বলে জবাব দেন।

এ দুজন সাক্ষী ভানু সাহাকে ধর্ষন বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর নাম বলেননি।  কিন্তু ২১ ডিসেম্বর  চতুর্থ সাক্ষী  সুলতান আহমদ হাওলাদার আদালতে ভানু সাহা প্রসঙ্গে  বলেন, মাওলানা সাঈদী  ভানু সাহাকে নিয়মিত ধর্ষন করত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে। 


মোসলেম মাওলানার খপ্পরে ভানু সাহা
পাড়েরহাট    সূত্র জানায় মোসলেম মাওলানা একটি লাঠি  হাতে নিয়ে পারেরহাট বাজারে ঘোরাফেরা করত। বাজারে মাতব্বরী খবরদারী করত।  উর্দু ভাষা ভাল জানায় তিনি পাক আর্মিদের সাথে সবরকম যোগাযোগ করতেন এবং তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। পারের হাটে  পিস কমিটি গঠনে ভূমিক পালন এবং পাক আর্মির সাথে সম্পর্কের কারনে  তখন  পারেরহাটের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হন তিনি।
পাড়েরহাট বাজারে  নিয়মিত যাতায়াতের সুবাদে  মোসলেম মাওলানার  চোখ পড়ে  বিপদ সাহার  মেয়ে ভানু সাহার ওপর।  মোসলেম মাওলানা ভানুসাহাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় বিপদ সাহার ওপর।  বিপদ সাহা তখন মোসলেম মাওলানাকে তার বাড়িতে ওঠাতে  বাধ্য হন তার প্রভাবের কারনে। সেই সুযোগে মোসলেম মাওলানা ভানু সাহার সাথে একত্রে বসবাস করে।  মোসলেম মাওলানার প্রভাবে এবং পাক আর্মিদের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিপদ সাহা এবং তার ছেলেরা তখন মাথায় টুপি পরে বাজারে যাতায়াত করত। মাঝে মাঝে মসজিদে গিয়ে নামাজও পরত। বাজারের লোকজন তখন মনে করত মোসলেম মাওলানা  ভানুসাহা এবং তার পরিবারের সবাইকে মুসলমান বানিয়েছে  এবং ভানু সাহাকে বিয়ে করে তার সাথে বাস করছে।  তবে বিয়ে হয়েছিল কিনা  সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধারা  ভানু সাহাকে উদ্ধার করে। এরপর তারা সবাই আবার নিজ ধর্মে ফিরে যায়  সবাই ভারতে চলে যায়। 

মোসলেম মাওলানার একচ্ছত্র প্রভাবের কারনে এবং পারেরহাট বাজার  তাদের নিয়ন্ত্রনে থাকায় তখন  ভানু সাহার সাথে বসবাস নিয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলার সাহস পায়নি। সবাই তখন তাকে ভয় করে চলত।

কে এই মোসলেম মাওলানা?
পিরোজপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বইয়ের ৪১২ পৃষ্ঠায় স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে মোসলেম মাওলানার অপকর্মের বিষয়ে  উল্লেখ আছে।  মোসলেম মাওলানা ১৯৬৯ সালে ঢাকা রেসিডেন শিয়াল মডেল স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি এলাকায় চলে আসেন। তার গ্রাম বাদুরায়।  পাড়েরহাটে পাক আর্মি আসার আগেই  মোসলেম মাওলানার নেতৃত্বে সেখানে পিস কমিটি গঠন করা হয়। পিস  কমিটির সভাপতি করা হয়  রাজলক্ষী স্কুলের  সাবেক শিক্ষক এবং পরবর্তীতে  ইউনিয়ন চেয়ারম্যান দানেশ মোল্লাকে। সেক্রেটারি করা হয় সেকেন্দার শিকদারকে। তবে পিস কমিটি পরিচালনার কাজ করেন  মোসলেম মাওলানা।

স্বাধীনতার পরপরই  এলাকা থেকে পালিয়ে যায় মোসলেম মাওলানা। এরপর এরশাদের সময় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।  আশ্রয় নেন  জমিয়তুল মোদাররেছীনের তলে।  পরবর্তীতে জড়িত হন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সঙ্গঠন ওলামা লীগের সাথে।

আজ খসরুল আলমকে জেরা :
প্রশ্ন : আপনারা কয় ভাই?
উত্তর :  তিন ভাই।
প্রশ্ন : অন্য দুজন কি আপনার বড় না ছোট?
উত্তর : বড়।  বড় ভাই মারা গেছে।
প্রশ্ন : দ্বিতীয় জন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কি করতেন?
উত্তর : সাংসারিক কাজকর্ম করতেন। বর্তমানে সে অসুস্থ। বিছানায় শায়িত।
প্রশ্ন : বড় জন কি করতেন তখন?
উত্তর : তিনিও সাংসারিক কাজকর্ম করতেন। নিম্ন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কি বিবাহিত ছিলেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : তার তখন সন্তান ছিল?
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : আপনি ছাত্রলীগ করতেন বলেছেন। ছাত্রলীগে কিভাবে সদস্য হতে হয় বা  অন্তর্ভুক্ত হতে হয়?
উত্তর : আমরা স্কুল জীবন থেকেই ছাত্রলীগ করতাম। ছাত্রলীগের নেতারা পশ্চিম পাকিস্তানের শোসনের কথা আমাদের বলতেন। বোঝাতেন। এভাবে ছাত্রলীগের সাথে জড়িত হই। ওয়াদাপত্রে সই করি।
প্রশ্ন : ওয়াদাপত্রে কি লেখা ছিল?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : ছাত্রলীগের স্লোগান কি ছিল মনে আছে?
উত্তর : স্কুলে থাকতে আমরা ছাত্রলীগের সমর্থক ছিলাম। কলেজে যাবার পর সদস্য হই।
প্রশ্ন :  কলেজে যাবার পর ছাত্রলীগের স্লোগান কি ছিল মনে আছে?
উত্তর :  তখন  ছাত্রদের শিক্ষা, বিভিন্ন সমস্যার কথা বলতেন । সমস্যার সমাধানের কথা বলতেন। স্লোগান কি ছিল স্মরন নেই।
প্রশ্ন :  আপনি ছাত্রলীগ করতেন এটা সঠিক বলেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ছাত্রলীগের কোন ওয়াদাপত্র তখন ছিলনা।
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের পরে লেখাপড়া কতদূর করেছেন?
উত্তর : বিকম পরীক্ষা দিয়েছি মোড়েলগঞ্জ কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে।
প্রশ্ন : পরীক্ষার পর কোথায় ছিলেন?
উত্তর : মোড়েলগঞ্জে ছিলাম। পারেরহাট  আসতাম। ঢাকাও আসা যাওয়া ছিল।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের পর আজ পর্যন্ত আপনি দেশের বাইরে গেছেন?
উত্তর : ১৯৮৫ সালে আমি সৌদি আরব যাই। ২০ বছর পর দেশে আসি ২০০৪ সালে।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের পর কোন এক অস্ত্র মামলার আসামী আপনার নাম বলেন। সে কারনে আপনি সৌদি আরব পালিয়ে যান।
উত্তর : নাউজুবিল্লাহ।
প্রশ্ন : সৌদি আরব কি করতেন?
উত্তর : চাকরি করতাম । এয়ার ডিফেন্স এর সিভিল প্রজেক্টে চাকরি করেছি।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের পরে একটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড গঠন করে  তা জানা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনার কয়টা পাসপোর্ট?
উত্তর : ২টা।
প্রশ্ন : বিয়ে করেছেন কোন সালে?
উত্তর ” ১৯৭৮ সালে।
প্রশ্ন : আপনার শশুর কোথায় থাকত কি করত?
উত্তর : পিরোজপুরে তার স্বর্নের দোকান ছিল।
প্রশ্ন : তারা কি বংশপরম্পরায় পিরোজপুর থাকত?
উত্তর : তারা ভারত থেকে এসেছেন। আমার শশুরের আবার সাথে শশুর এসেছেন। তখন তিনি ছোট ছিলেন।
প্রশ্ন : তারা বাংলাভাষী নন।
উত্তর : তারা বাংলাভাষী এবং বাংলায় কথা বলেন।
প্রশ্ন : পারিবারিকভাবে আপনার শশুর পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন এবং এখনো আছেন।
উত্তর : সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট।
প্রশ্ন : শামসুল আলম তালুকদার (মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী) মুক্তিযুদ্ধের সময়  কোন দল করতেন?
উত্তর : ছাত্র ইউনিয়ন, ভাসানী ন্যাপ গ্রুপ।
প্রশ্ন : তার সাথে তখন আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?
উত্তর : ভাল।
প্রশ্ন :  ভাসানী ন্যাপের দুটি গ্রুপ ছিল। একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধ সমর্থক ছিল আরেকটি অংশ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল। শামসুল আলম তালুকদার ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী গ্রুপের লোক।
উত্তর : সত্য নয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গ্রুপের লোক ছিলেন।
প্রশ্ন : শঙ্কর পাশার আইউব আলীকে চেনেন?
উত্তর : স্বাধীনতার পর আইউব আলী বেওনেটসহ গ্রেফতার হয়।
উত্তর : শুনেছি।
প্রশ্ন : আইউব আলী গ্রেফতারের পর আপনি ঢাকায় চলে আসেন।
উত্তর : সম্পূর্ণ মিথ্যা।
প্রশ্ন : আপনি কোথায় ছিলেন?
উত্তর : মোড়েলগঞ্জে।
প্রশ্ন : ঢাকায় চাকরির জন্য কবে আসেন?
উত্তর : ১৯৭৭ সালে।
প্রশ্ন : আপনি আত্মগোপনের জন্য ঢাকায় আসেন।
উত্তর : সস্পূর্ণ বানোয়াট।
প্রশ্ন : আপনি বলছেন ক্যাম্পে ১৫/১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তাদের কয়েকজনের নাম বলেন।
উত্তর : মোকাররম হোসেন কবির, আব্দুল গনি পসারী, সেলিম খান, আব্দুস সালাম পশারী, আব্দুস সোবহান, মিজানুর রহমান তালুকদার, অনেক পরে আসেন রুহুল আমিন নবিন, তার চাচাত ভাই শাহ আলম প্রথম থেকে আমাদের সাথে ছিল।
প্রশ্ন : বিপদসাহা আপনার কাছে তার ক্ষতির কথা বলেছে  বলে বলছেন আপনি। তার কি ক্ষতি  হয়েছিল?
উত্তর : তার আর্থিক ক্ষতি হয়নি। সামাজিক এবং মানসিক ক্ষতি হয়েছিল। পিস কমিটির সেক্রেটারি মোসলেম মাওলানা  বিপদ সাহার মেয়েকে নিয়ে বিপদ সাহার বাড়িতে থাকত মুক্তিযুদ্ধের সময়।
প্রশ্ন : আপনি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পারেরহাট ক্যাম্পে ছিলেন বলেছেন। তখন পর্যন্ত মোসলেম মাওলানাকে পাননি।
উত্তর : পাইনি কারণ সে পলাতক ছিল।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা  গ্রেফতার হওয়ার কথা  শুনেছেন?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেবের ছেলেরা কে কোথায় লেখাপড়া করেছেন জানেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেবের দেশে কোথায় কি সম্পদ আছে জানেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের আগে তার  কি সম্পদ ছিল?
উত্তর : পৈত্রিক সূত্রে কিছু সম্পদ ছিল।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের সময় তার কয় সন্তান ছিল?
উত্তর : সম্ভবত দুই ছেলে।
প্রশ্ন : আপনার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার সময় কয়জন রাজাকার ছিল?
উত্তর : একজন। মহসিন রাজাকার। সাথে পাঞ্জাবী  সেনারা ছিল।
প্রশ্ন : আপনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেননা। সে কারনে আপনার সনদ বাতিল হয়েছে এবং তালিকা থেকেও নাম বাদ হয়েছে।
উত্তর : বানোয়াট, মিথ্যা।
প্রশ্ন : রাজলক্ষী স্কুলে আর্মি  থাকত মানে কি বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর : মাঝে মাঝে তারা আসত। রাত্রি যাপন করত মাঝে মাঝে।
প্রশ্ন : পারেরহাট ও শঙ্করপাশায় কোন নারী ধর্ষিত হয়নি বলে যে কথা বলেছেন তা সত্য নয়।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : আপনি এখন জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।
উত্তর : মোটেই সত্য নয়।
প্রশ্ন : জামায়াতের অর্থানুকুল্যে আপনি সৌদিআরব গেছেন। তাদের  সহায়তায় আপনি জীবন যাপন করেন বলে জামায়াতের নেতা মাওলানা সাঈদী সাহেবের পক্ষে সত্য গোপন করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলেন আপনি।
উত্তর : সত্য নয়।
ট্রাইব্যুনাল (১)  চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, মনজুর আহমদ আনসারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সপ্তম সাক্ষী বলল যে কামারুজ্জামানের কথা বল্লাম সে কোন কামারুজ্জামান তা এমুহুর্তে বলতে পারব না।


(মিছবাহুর রহমানের নিউজটা একটু নিচের দিকে দেখেন দয়া করে। )

১৭/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আজ  রাষ্ট্রপক্ষে দুই জন সাক্ষী জবানবন্দী দিয়েছেন। তারা হলেন সপ্তম সাক্ষী মো. লিয়াকত আলী, অষ্টম সাক্ষী  সাক্ষী মো. জিয়াউল ইসলাম।

আজ  আন্তর্জাতক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সপ্তম সাক্ষী মো. লিয়াকত আলী জবানবন্দীতে বলেন, ’৭১ সালে শেরপুর এলাকায় আল-বদর ও রাজাকারদের কর্মকান্ড এ মুহুর্তে বলতে পারব না। পকিস্তান আর্মিদের কাছ থেকে মুক্ত হওয়ার পর সামনে দেখি কামরান, পিছনে কামারুজ্জামানকে দেখি বলে মনে হল। যে কামারুজ্জামানের কথা বল্লাম সে কোন কামারুজ্জামান তা এমুহুর্তে বলতে পারব না।

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সপ্তম সাক্ষীর জবানবন্দী (সংক্ষিপ্ত):
সাক্ষী মো. লিয়াকত আলী জবানবন্দীতে বলেন, ’৭১ সালে ভারত থেকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়িতে আসি। এরপর নালিতাবাড়িতে ঘেরাও এরমধ্যে পড়ে শেরপুরে চলে আসি। শেরপুরে যে বাড়িতে ছিলাম সেই বাড়ি আল-বদররা ঘেরাও করে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। আমার পিতার চেষ্টায় ইনেসপেক্টর কবির সাহেবের মাধ্যমে আমাকে পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়। এরপর দুইদিন থানায় থাকার পর আমার সাথে আরো দুইজনকে আহম্মদ নগর আর্মি ক্যাম্পে চালান দেয়। এরপর একদিন ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের পিছনে একটি গর্তের মধ্যে আমাদের দাঁড় করিয়ে একজন ক্যাপ্টেন কলমা পড়াতে বলেন। এরপর তিনি আমাদের গুলি করতে নির্দেশ দেন। এসময় মেজর রিয়াজ আসে এবং আমাদের তিনজনের নাম ধরে ডাকেন। আমরা গর্ত থেকে উঠে আসি। সেখান থেকে বেশ কিছু দুর আসার পর আমাদের চোখের বাধন খুলে দেয়। সামনে দেখি কামরান, পিছনে কামারুজ্জামানকে দেখি বলে মনে হল। তারপর আমরা চলে আসি। শেরপুর আসার পর দেশ স্বাধীন হয়।

এরপর প্রসিকিউটরের এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, যে কামারুজ্জামানের কথা বললাম সে কোন কামারুজ্জামান তা এখন বলতে পারব না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ’৭১ সালে শেরপুরে আল-বদর রাজাকারদের কর্মকাণ্ড এই মুহুর্তে বলতে পারব না। জবানবন্দী দেয়ার পর সাক্ষী কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না করায় মাত্র ১০ মিনিটে আসামী পক্ষের জেরা শেষ হয়ে যায়।
সাক্ষীকে জেরা করেন, ডিফেন্স কাউন্সেল কফিল উদ্দিন চৌধুরী।

অষ্টম সাক্ষীর জবানবন্দী (সংক্ষিপ্ত):

জবানবন্দীতে রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী মো. জিয়াউল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস আমার বাবার সঙ্গে কোন যোগাযোগ ছিল না। ১০ ডিসেম্বর ’৭১ আমরা ময়মনসিংহ শহর মুক্ত করি। শহরে যখন ঢুকি হালুয়াঘাটে এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়। সে আমাকে বলে তোর আব্বাকে পাকিস্তন সেনারা মেরে ফেলেছে। ময়মনসিংহে বাড়িতে এসে আমার মাকে বাবার কথা জিজ্ঞাসা করি। মা বলেন, ’৭১ সালের নভেম্বর মাসে ময়মনসিংহ কোতয়ালী থানার সম্মুখে অবস্থিত জেলাপুরষদের ডাকবংলোয় আল-বদর ক্যাম্পে বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। ময়মনসিংহ বড় মসজিদের ইমাম সাহেবের ছেলে আল-বদর তৈয়ব ও রব্বানী বাবাকে ধরে নিয়ে য়ায়। আমার আত্মীয় স্বজনরা বাবাকে ছাড়ানোর জন্য যোগাযোগ ও চেষ্টা করায় বাবাকে ছেড়ে দিবে বলে আমার পরিবারকে আশ্বাস্থ করা হয়। একপর্যায়ে ক্যাম্পে থাকা লোকজন বলে, তাকে ছাড়া যাবে না। কারণ কামারুজ্জামানের হুকুম নেই। ওই সময় পরিবারের সদস্যরা আল-বদর ক্যাম্পে যেতে ভয় পেত। ’৭১ সালের ২৩ সভেম্বর শহর থেকে পাঁচ মাইল দুরে খালের পাশে বাবাকেও সঙ্গে অন্য একজনকে যাকে অনেকে কেনেডী বলে ডাকত তাদের বেনেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যা করে লাশ বদর বাহিনীর লোক খালের পাশে ফেলে আসে। পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন বাবার মৃতদেহ চিনতে পারে। তারা আমাদের বাড়িতে খবর দেয়। পরিবারের লোকজন আব্বার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে এবং পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি চিঠি দেন এবং আর্থিক সহায়তা করেন। তখন মামলা করার সুযোগ না থাকায় ও সংসার তছনছ থাকায় মামলা করতে পারিনি।

জবানবন্দী শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর আসামী পক্ষের জেরার দিন ধার্য করেন।

সাংবাদিক আবু তালেবকে হত্যা করে বিহারীরা/// কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দশম সাক্ষী।


১৭/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১০ সাী সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম জবানবন্দী দিয়েছেন আজ   ট্রাইব্যুনাল-২ এ ।
জবানবন্দী (সংক্ষিপ্ত): ’৭১ সালে সাংবাদিক ও আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব আমাকে খুব স্নেহ করতেন। ’৭১ সালের ২৩ মার্চ তালেব সাহেবের বাসায় রাত ১২টা পর্যন্ত টেলিভিশন দেখি। টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধের সময় আমরা অপেক্ষা করছিলাম পাকিস্তানের পতাকা না বাংলাদেশের পতাকা দেখানো হবে। বন্ধের সময় দেখলাম পাকিস্তানের পতাকাই দেখানো হয়। তারপর বাসায় গিয়ে শুয়ে পড়ি। রাত ১টা ৩৫ মিনিটের সময় শুনতে পাই বাইরর কিছু লোক আমার ঘরের জানালা ভাংছে এবং আমাকে মারার কথা বলছে। ভয়ে আমি বাসার পেছন দিক থেকে প্রাচির টপকে ড্রেনের মধ্যদিয়ে তালেব সাহেবের বাসার দিকে যেতে শুরু করি। তখন তিন থেকে চারজন লোক আমাকে আটক করে। তারা আমার হাতে ও ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করে। আমার চিৎকার শুনে মুল্লা নামের একজন লম্বা লোক ঘর থেকে বেরিয়ে আসলে আক্রমণকারীরা চলে যায়। এরপর তালেব সাহেব ও তার লোকজন এসে প্রথমে আমাকে তার বাসায় নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর আমার এক সহকর্মী ফারুক আহমেদের সহায়তায় আমি নিজবাড়ি নাসিরনগর থানার নাসিরপুর গ্রামে যাই।

এরপর ’৭১ সালের জুন মাসে ফারুক আমাদের বাড়িতে আসে। তার কাছে আমি শুনলাম খন্দকার আবু তালেবকে অবাঙ্গালী আক্তার গুন্ডা  মিরপুর ১০ নম্বরে জল্লাদ খানায় নিয়ে হত্যা করেছিল।

 ’৭২ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকায় এসে আবার স্কুলের কার্যক্রম শুরু করি। একদিন তালেব সাহেবের ড্রাইভার নিজামের সাথে আমার দেখা হলে নিজামও একই কথা বলে। হালিম নামে ইত্তেফাকের একজন অবাঙ্গালী হিসাব রক্ষক ছিল। হালিম তালেব সাহেবকে নিজ বাড়িতে আনছিলেন।  কিন্তু হালিম তালেবকে বাড়িতে না পৌছিয়ে বিহারীদের হাতে তুলে দেয়। বিহারীরা জল্লাদ খানায় নিয়ে তাকে হত্যা করে।

জবানবন্দীর শেষ পর্যায়ে প্রসিকিউটরের এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, ঘটনার সময় কাদের মোল্লা তরুণ ছিল দাঁড়ি ছিল না। ৪০ বছর আগের ঘটনা স্পষ্ট মনে নেই।

 জবানবন্দী শেষ হলে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর আসামী পক্ষের জেরার দিন ধার্য করা হয়।



প্রসিকিউশনের অতিরিক্ত তিনজন সাক্ষীর তালিকায় সৈয়দ আবদুল কাইয়ুমের নাম না থাকায় বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের দৃষ্ট আকর্ষণ  করেন কাদের মোল্লার আইনজীবীরা। তারা বলেন, প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী যে তিনজন অতিরিক্ত সাক্ষীর বিষয়ে আদালতের অনুমতি নিয়েছেন তাদের নাম শুরুতে উল্লেখ করা আছে এবং তিনি মৌখিকভাবেও আমাদের তিনজনের নাম জানিয়েছেন। কিন্তু ওই তিনজনের বাইরে এই সাক্ষী হাজির করা হয়েছে। এ বিষয়ে আসামী পক্ষ অবহিত নয়। এসময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা আদেশে উল্লেখ করেছি তিনজন অতিরিক্ত সাক্ষীর। প্রসিকিউশনের আবেদনে ক্রটি আছে। এরপর প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকে ট্রাইব্যুনাল বলেন সাতজনের নাম দিয়েছেন, যার মধ্যে তিন জনের বিষয়ে আবেদন করেছেন। এগুলো কখনো করবেন না। এরপর ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়ে সৈয়দ আবদুল কাইয়ুমের সাক্ষ্য গ্রহণের অনুমতি দেন।


শান্তি কমিটির তালিকায় মিছবাহুরের নাম ///সাক্ষী বলেন বইয়ের নামও শুনিনাই


মেহেদী হাসান, ১৭/৯/২০১২
‘মৌলভীবাজার জেলার ইতিহাস’ নামক বইয়ে  ওই জেলার শান্তি কমিটির সদস্যদের নাম  প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে ‘মিছবাহ’ এবং ‘ছানু মিয়া’ নামে দুটি নাম  উল্লেখ আছে। আজ  মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে জেরার সময় এ বই বিষয়ে  প্রশ্ন করা হলে সাক্ষী বলেন, বইটি আমি পড়িনাই এবং বইয়ের নামও শুনিনাই।

এছাড়া মৌলভীবাজার মহকুমার  শতবর্ষ পূর্তি  উপলক্ষে একটি স্মরনিকা বের হয় ১৯৮২ সালে । এর নাম ‘শতাব্দী’। সেখানে পাকিস্তান আর্মির সহযোগী হিসেবে  যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ‘মিছবাহ আহমদ চৌধুরী’ এবং  ‘ছানু মিয়া’র নাম রয়েছে।
এই বইটি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মিছাবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, বইটির নাম আমি জানি। তবে সেখানে তার এবং তার পিতার নাম স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকায় আছে কি-না তা তার জানা নেই।

মাওলানা নিজামীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম  বলেন, মৌলভীবাজার জেলার ইতহাস  বইয়ে শন্তি কমিটির তালিকায় ‘মিছবাহ’ এবং শতাব্দী   নামক স্মরনিকায় ‘মিছবাহ আহমদ চৌধুরী’ হিসেবে যার নাম উল্লেখ আছে তিনি মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। উভয় স্থানে পিতার নাম ছানু মিয়া উল্লেখ আছে।  মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর পিতার নাম ছানু মিয়া।  মিজানুল ইসলাম বলেন আমরা বই দুটি ট্রাইব্যুনালে ডকুমেন্ট হিসেবে জমা দিয়েছি।

মাওলানা নিজামীর  বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে আজ  তৃতীয় দফা জেরা করা হয়।
জেরায় মিছবাহুর রহমান চৌধুরী স্বীকার করেন ১৯৭৪ সালে তাকে বিশেষ   ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেয়া হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে রাজধানীতে সাপুড়িয়াদের  মিছিলে নেতৃত্বের বিষয় অস্বীকার করেন তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নানার নাম অন্নদা ঠাকুর ভট্টচার্য।

মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে জেরা করেন মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেম মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন প্রমুখ।

জেরা :
প্রশ্ন : ১৯৯৬ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঈদে মিলাদুন্নবীর একটি অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সাহেব প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন । সেখানে গোলযোগ সৃষ্টির অভিযোগে আপনাকে  গ্রেফতার করা হয়।
উত্তর : হ্যা । কথিত অভিযোগে আমাকে গ্রেফতার করা হয় এবং  পরবর্তীতে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই।
প্রশ্ন : আনপাকে  বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের এক আটকাদেশ দেয়া হয়েছিল ১৯৭৪ সালে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনাকে দুই দিনের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ১৯৯৪ সালে রাজধানীতে সাপুড়িয়াদের একটি মিছিলে আপনি নেতৃত্ব দেন।
উত্তর :  সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার  কথা অনুযায়ী যে পত্রিকায় আপনার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে  কোন আইনগত ব্যবস্থা  নিয়েছিলেন?
উত্তর : না। তবে প্রতিবাদ পাঠিয়েছিলাম। আমি কোন পত্রিকার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেই নাই।  পত্রিকায় যখন এই খবরটি ছাপা হয় তখন আমি কারাগারে ছিলাম। আমার সংগঠন প্রতিবাদটি পাঠিয়েছিল।
প্রশ্ন : প্রতিবাদ ছাপা হয়েছিল?
উত্তর : যে পত্রিকায় খবরটি ছাপা হয়েছিল তারা আমাদের এ প্রতিবাদটি ছাপায় নাই, তবে অন্যান্য পত্রিকায় প্রতিবাদটি ছাপানো হয়েছিল।
প্রশ্ন : আপনি  বায়তুল মোকাররম হকার কমিটির সভাপতি ছিলেন।
উত্তর : না।  বায়তুল মোকাররম মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলাম।
প্রশ্ন :  ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়ন্ত্রণে থেকে বায়তুল মোকাররমকে মুক্ত করে আপনার  মুসল্লী  কমিটি কর্তৃক পরিচালনার দাবী  করেছিলেন আপনি।
উত্তর :  সঠিক নয়।
প্রশ্ন : আপনার  মানব সম্পদ রাপ্তানীর লাইসেন্স  ছিল?
উত্তর : কোন দিন ছিল না।
প্রশ্ন : আপনার বিরুদ্ধে এলাকায়  চাঁদাবাজির  অভিযোগ ছিল।
উত্তর : ওই একই পত্রিকায় এ অভিযোগ লেখা হয়েছিল।
(আপনার দশ বউ লেখা হয়েছিল। জবাবে মিছবাহ  চৌধুরী বলেন আমার একজনই  বউ। তবে এ প্রশ্নটি কোর্ট এলাউ করেনি।)

প্রশ্ন :  ১৬৮, বাসাবো মুন্নী বেগমকে চেনেন?
উত্তর :  চিনি।  তার সঙ্গে আমার কাবিননামা সম্পন্ন হয়েছিল তবে তার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বেই পরিবারিকভাবে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই।
প্রশ্ন : ১৭৮/বি, খিলগাঁও এর আজিজুর রহমানকে  চেনেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন :  খিলগাঁও একটি বাড়িতে আপনি ভাড়া থাকতেন।
উত্তর :  একটি বাড়িতে আমি ভাড়া ছিলাম। আমি জানতে পারি যে, ঐ বাড়ির মালিক জামায়াতে ইসলামীর রোকন।  তখন আমি সেই বাসা ছেড়ে দেই।
প্রশ্ন : ঐ বাড়িওয়ালা আপনার  বিরুদ্ধে চুরির মামলা দায়ের করেছিল?
উত্তর : আজ প্রথম শুনলাম।
প্রশ্ন :  আপনি  ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী লোক?
উত্তর : আপনি  ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্ণরসের একজন সদস্য।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ইমামদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
উত্তর : হ্যা।
(এসময় ইসলামিক  ফাউন্ডেশনে ব্যালে ড্যান্সের আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কোর্ট তা এলাউ করেনি)
প্রশ্ন : আপনার এলাকায় আপনার পিতামাতার নামে একটি হাসপাতাল তৈরির জন্য  ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
উত্তর : আমাদের পারিবারিক জমিতে তা করা হয়। তবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী নয়,  বায়তুল মোকাররমের মাননীয় খতিব মাওলানা সালাউদ্দিন সাহেব ২০১১ সালে করেছিলেন।
প্রশ্ন : কাজ শুরু হয়েছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : টুরিষ্ট ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েটস লিমিটেড বাংলাদেশের  এর আপনি কি?
উত্তর : এমডি।
প্রশ্ন : চেয়ারম্যান কে?
উত্তর : আমার বোন বেগম গুলশান আক্তার চৌধুরী, উনি লন্ডন প্রবাসী।
প্রশ্ন : হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পরে স্থানীয় এলাকাবাসী অন্যের জায়গায় ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে মর্মে এর প্রতিবাদ করেছে এবং সাংবাদিক সম্মেলন  করেছে। ফলে সেখানে হাসপাতালের কাজ  এখনো শুরু হয়নি।
উত্তর :সঠিক নয়।
প্রশ্ন :  এ ব্যাপারে পত্রিকায় প্রতিবাদ পাঠিয়েছিলেন?
উত্তর :  সংবাদ সম্মেলন বা অভিযোগে হাসপাতাল বিষয়ে কিছু ছিলনা।
প্রশ্ন : “মৌলভীবাজার জেলার ইতিহাস” যার লেখক মোঃ মোমিনুল হক, বটি পড়েছেন?
উত্তর :  পড়ি নাই।
প্রশ্ন : নাম শুনেছেন?
উত্তর : নামও শুনি নাই।
প্রশ্ন : মৌলভীবাজার মহকুমার শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ‘শতাব্দি’ নামে একটি স্মরণিকা বের হয়েছিল জানেন?
উত্তর :  তা আমি জানি।
প্রশ্ন : ঐ বইয়ে স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষের অনেকের নাম  আছে।
উত্তর : থাকতে পারে।
প্রশ্ন :  আপনার এবং আপনার পিতার নাম স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে ঐ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে ।
উত্তর :  তা আমি জানিনা।
প্রশ্ন : মোমিনুুল হক লিখিত মৌলভীবাজার জেলার ইতিহাস নামক বইয়ে আপনার এবং আপনার পিতার নাম স্বাধীনতা বিরোধী হিসাবে উল্লেখ থাকায় আপনি  তা  জেনেও অস্বিকার করছেন ।
উত্তর :  ইহা সত্য নয়।
প্রশ্ন : সিলেট জেলার দায়িত্বে থাকা ব্রিগেডিয়ার মালিক, কর্ণেল সরফরাজ মালিক এবং ক্যাপ্টেন নুরুদ্দিন খান কে চেনেন?
উত্তর :  ১৯৭১ সালে দায়িত্বে ছিলেন কিনা তা আমি জানিনা, তবে পরবর্তিকালে দুই/একজনের নাম শুনেছি।
প্রশ্ন : মৌলভীবাজার মহকুমার ব্রিগেডিয়ার আলী, মেজর আজিজ খান, ক্যাপ্টেন ইউসুফ ও ক্যাপ্টেন রফিক, সুবেদার লালমনি চেনেন?
উত্তর :  ক্যাপ্টেন ইউসুফের নাম শুনেছি।
প্রশ্ন : আপনাদের বাড়ি থেকে নিকটবর্তী আর্মি ক্যাম্প  কতদূর?
উত্তর : দুই মাইলের মত দূরে ছিল। ক্যাম্পটি কোর্ট রোডের মাথায় ছিল, সম্ভবত সার্কিট হাউজে ছিল।
প্রশ্ন : এর চার্জে কে ছিল?
উত্তর : আমি ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাদের কাছ থেকে যা জানতে পেরেছিলাম তা হলো মেজর ফখরুল ইসলাম ছিলেন ঐ ক্যাম্পের দায়িত্বে।
প্রশ্ন : ছাত্রসংঘের কোন কোন নেতার সাথে তখন আপনার পরিচয় ছিল?
উত্তর : ইসলামী ছাত্র সংঘের সিরাজুল ইসলাম মতলিব, মোহাম্মদ আলী, ইসহাক এবং জামায়াতে ইসলামীর জনাব এডভোকেট আব্দুল মান্নান চৌধুরী, মৌলভীবাজার জামায়াতে ইসলামীর আমীর এদের সঙ্গে দুইদিন জামায়াতে ইসলামীর অফিসে বসে আমার আলাপ হয়।
প্রশ্ন :  রাজাকার ও পিস কমিটির অফিস কোথায় ছিল জানা আছে?
উত্তর : তা আমার জানা নাই।
প্রশ্ন : আপনি লন্ডন যাবার আগে মৌলভীবাজারে অবস্থানকালীন সময়ে আল-বদর গঠিত হয়েছিল?
উত্তর : কার্র্যক্রম শুরু হয়েছে, তবে আল-বদর বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়নি।
প্রশ্ন : শাহিন ফৌজের নিজস্ব কোন অফিস ছিল?
উত্তর : না, তবে ইসলামী ছাত্র সংঘের অফিসে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করতো।
প্রশ্ন : মেজর ফখরুল ইসলামের সঙ্গে আপনার কোন দিন দেখা   হয়েছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন :  বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে যে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা তৈরি হয়েছিল সেই তালিকা দেখেছিলেন?
উত্তর :  পত্রিকায় দেখেছি।
প্রশ্ন : তাতে সর্বপ্রথমে কার নাম ছিল?
উত্তর :  তা আমার মনে নাই।
প্রশ্ন : মেজর ফখরুলের নাম ঐ তালিকায় দেখেছিলেন?
উত্তর : মনে নাই কারণ পাকিস্তানীদের নাম আমি মনোযোগসহকারে দেখি নাই।
প্রশ্ন : ঐ তালিকায় কোন বাঙ্গালীর নাম ছিল?
উত্তর :  না।
প্রশ্ন : আপনি  যে দুইদিন জামায়াতে ইসলামীর অফিসে গিয়েছিলেন  তার তারিখ এবং মাস  মনে আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : মতিলব সাহেবেকর চিঠি পাবার আগে না পরে?
উত্তর :  প্রথম দিন গিয়েছিলাম মতলিব সাহেবের চিঠি পাওয়ার আগে, দ্বিতীয়বার সম্ভবতঃ ঐ চিঠিটি পাওয়ার পরের দিন।
প্রশ্ন : মতলিব সাহেব আপনার  বাসায় নিয়মিত আসতেন?
উত্তর :  না, মাঝে মাঝে আসতেন।
প্রশ্ন : মতলিব সাহেব আপনাকে আরো চিঠি দিয়েছিলেন?
উত্তর :  আমাকে ছাত্র সংঘ করাকালীন ঐ একটি চিঠিই দিয়েছিলেন, আমরা যেহেতু একই জায়গার বাসিন্দা কাজেই এর বেশি প্রয়োজন হয় নাই।

প্রশ্ন : মতলিব সাহেব কোথায় থাকতেন?
উত্তর : সেই সময়ে মতলিব সাহেবের শহরে বাড়ী ছিল না, উনি তখন মৌলভীবাজার ছাত্রাবাসে অবস্থান করতেন।
প্রশ্ন : আপনি তার গ্রামের বড়ি গিয়েছিলেন?
উত্তর : না। সেটা আমার বাড়ি থেকে ৭/৮ মাইল দূরে। ছাত্রাবাসটি আমার বাড়ি থেকে দেড়/দুই মাইল দূরে।
প্রশ্ন :  দেশ স্বাধীনের পরে মুক্তিবাহিনীরা মৌলভীবাজারে এসে সরকারী হাইস্কুলে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করেছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনি সে ক্যাম্পে গিয়েছিলেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন :  ঐ ক্যাম্পের সার্বিক দায়িত্বে কে ছিলেন?
উত্তর :  তা আমার এখন মনে নেই। তবে আমি যাদের নিকট গিয়েছিলাম তার মধ্যে আমার চাচাতো ভাই তৌফিকুল হক চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন, আরও ছিলেন আব্দুল মোছাব্বির বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান উনিও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। আরও অনেক আত্মীয়-স্বজন ছিলেন।
প্রশ্ন : মৌলভীবাজার কবে মুক্ত  হয়?
উত্তর : ১৬ ডিসেম্বরের দুইদিন আগে
প্রশ্ন :  ঐ সময়ে মৌলভীবাজারের এম.এন.এ ছিলেন ইলিয়াস আলী সাহেব।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ঐ সময়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের ধরে এনে কোথায় আটক রাখা হতো ?
উত্তর : তা আমি জানি না।
প্রশ্ন : ঐ সময়ে মেজর ফখরুলের বিরুদ্ধে তৌফিকুল হক চৌধুরী বা ইলিয়াস আলী সাহেবসহ কোন ব্যক্তির নিকট অভিযোগ  করেছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার পরে লন্ডন যাওয়ার আগ পর্যন্ত মৌলভীবাজারে অবস্থানকালীন সময়ে মতলিব সাহেবের সঙ্গে দেখা হয় ?
উত্তর : না।  কারণ তিনি আত্মগোপন করেছিলেন।
প্রশ্ন :  ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে ইসলামী ছাত্র সংঘের কোন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে দেখা হয়েছে?
উত্তর :  স্মরণ নাই।  ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংঘের এক সম্মেলন উপলক্ষে সিলেটে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অনেকের সঙ্গেই আমার দেখা হয়েছিল।
প্রশ্ন : ১৯৭০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইসলামী ছাত্র সংঘের কোন অনুষ্ঠানে  যোগ দিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন :  মৌলভীবাজারে রাজনগর থানাধীন পাঁচগাঁও গ্রামের নাম শুনেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন :  উদনা চা বাগানে  গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন :  মজিদপুর  গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন :  রাজনগর পাঁচগাঁওয়ে একটি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনার  নানাবাড়ী  কোথায়?
উত্তর : আমাদের গ্রামের পাশের গ্রাম নবীনগরে।
প্রশ্ন : আপনার নানার নাম?
উত্তর :  অন্নদা ঠাকুর ভট্রাচার্য্য।
প্রশ্ন : তারা এদেশে এসেছেন ?
উত্তর : তারা ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পূর্ব থেকেই কলকাতায় বসবাস করেন।
প্রশ্ন : মঈনদ্দিন চৌধুরী মধুমিয়া আপনার কি হয়?
উত্তর : আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনি  পাক বাহিনীর সহায়তা নিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
উত্তর :  ইহা সত্য নহে।
প্রশ্ন : আপনাদের  এলাকা কত নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল ?
উত্তর : তা আমার খেয়াল নেই।
প্রশ্ন : মতলিব সাহেব এখনও জীবিত আছেন?
উত্তর : হ্যা।   আমি শুনেছি তদন্ত সংস্থা তাকে হাজির হওয়ার চিঠি দিয়েছিল তবে উনি হাজির হন নাই।
প্রশ্ন : বর্তমানে কি তিনি পলাতক/
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ওই চিঠি ছাড়াও তার হাতের লেখা কোন কিছু আপনি দেখেছেন?
উত্তর :  দেখেছি।
প্রশ্ন : তার হাতের লেখা কোন কাগজ তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়েছেন?
উত্তর : তিনি আমাকে মিটিংয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য হাতে লেখা নোটিশ দিতেন। ঐ চিঠি ব্যতিত তার হাতের লেখা কোন কাগজ আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেই নাই, কারণ তিনি আমার কাছে চান নাই।
প্রশ্ন : মতলিব সাহেবের হাতের লেখা কোন কাগজ আপনি আজ  ট্রাইব্যুনালে দেখাতে পারবেন?
উত্তর : না।  তবে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল চাইলে  আমি আনার চেষ্টা করবো।
( প্রশ্ন : পরে যদি আরেকদিন আপনার জেরা হয় সেদিন কি নিয়ে আসতে পারবেন? এ প্রশ্নটি ট্রাইব্যুনাল রেকর্ড করেননি)

প্রশ্ন : মৌলভীবাজারে আনুষ্ঠানকিভাবে আল-বদর বাহিনীর কার্যক্রম শুরু হয়  কবে?
উত্তর : আগষ্ট মাসে বলে আমি শুনেছি।
প্রশ্ন :  মৗলভীবাজারের আল-বদরদের নাম এবং সংখ্যা বলতে পারবেন?
উত্তর :  জামায়াতে ইসলামী তাদের রোকনদের তালিকা প্রকাশ করলে আমার পক্ষে মৌলভীবাজারের আল-বদরদের সংখ্যা বলা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন : মৌলভীবাজারের ১০ জন আল-বদরের নাম  বলেন।
উত্তর : আমি বলতে পারব না কারণ এই বিষয়ে আমি গবেষণা করি নাই।
প্রশ্ন : রেজিমেন্ট, কান্টিনজেন্ট ও ট্যাবলো কি জানেন?
উত্তর :  রেজিমেন্ট সম্পর্কে আমার কিছু ধারণা আছে।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামীর কখনো কোন যুব সংগঠন ছিল?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আল বদর গঠনের কথা কবে প্রথম জানলেন?
উত্তর : ১৯৭১ সালে সর্বপ্রথম জনাব সিরাজুল ইসলাম মতলিব সাহেবের চিঠির মাধ্যমে আল-বদর বাহিনী গঠনের বিষয়টি আমি জানতে পারি।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক আল-বদর বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে  এ মর্মে  জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক প্রকাশিত  কোন কাগজপত্র আপনার গবেষণার সময় পেয়েছেন?
উত্তর :  আমি পাই নাই, কারণ সেগুলো এর পূর্বেই ধ্বংস করা হয়েছে।
প্রশ্ন : এ তথ্য কবে পান?
উত্তর : ১৯৭৭/৭৮ সালে
প্রশ্ন : গবেষণা রিপোর্ট সর্বপ্রথম  কবে প্রকাশ করেন?
উত্তর : ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সারাংশ প্রকাশ করি।
প্রশ্ন : পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট  আজ অবধি প্রকাশ করেননি।
উত্তর  : না।
প্রশ্ন :  এই রিপোর্ট তৈরির ব্যাপারে আপনি  ব্যক্তিগতভাবে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে জিজ্ঞাসাবাদ  করেছেন?
উত্তর : না।  যদিও তার সঙ্গে আমার দুই বার দেখা হয়েছে। তবে  এ ব্যাপারে কিছু বলিনাই।
প্রশ্ন : কবে দেখা হয়?
উত্তর : চারদলীয় জোট গঠনের পর তার ।
প্রশ্ন : মুফতি এজাহার সাহেব এবং আপনার  মধ্যে বিভক্তির আগে না পরে নিজামী সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল ?
উত্তর : তা আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
প্রশ্ন :  স্বাধীনতার আগে কি কখনো জামায়াত নিষিদ্ধ হয়েছিল?
উত্তর : ১৯৬২ সালে ।
প্রশ্ন : কিভাবে  নিষেধাজ্ঞা  প্রত্যাহার হয়?
উত্তর :  পাকিস্তান সেনা শাসকদেরকে তোষামোদের মাধ্যমে।
প্রশ্ন :  ফ্যাসিজম সম্পর্কে  ধারণা আছে? আপনি জামায়াততে ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
উত্তর : আছে।
উত্তর :
প্রশ্ন : ফ্যাসিস্টদের যে দল ছিল সে দল গণতান্ত্রিকভাবে তাদের নেতা নির্বাচন করেনা।
উত্তর : ফ্যাসিস্টরা গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি অবলম্বন করলেও প্রকৃতপক্ষে ইহা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়।
প্রশ্ন : ফ্যাসিস্ট দলটা কোন দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর : ফ্যাসিজম বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে আসে তবে জার্মানীতে হিটলার এবং ইতালিতে মুসোলিনী ফ্যাসিস্ট হিসেবে সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত।
প্রশ্ন : শাহীন ফৌজের সভাপতি হিসেবে আনপাকে যে নির্বাচিত করা হয় তা কি ফ্যাসিস্ট পদ্ধতিতে হয়েছিল?
উত্তর : আমাকে যে নির্বাচন করা হয়েছিল তা অবশ্যই ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতৃবৃন্দের ইচ্ছায় হয়েছিল এবং তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে, ইহা ফ্যাসিসজম কিনা তা তখন আমার ধারণা ছিল না।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামী ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়েছে এ মর্মে কতটি বই সংগ্রহ করেছেন?
উত্তর : অনেক। একটা যেমন তাফহীমুল কোরআন।
প্রশ্ন : এই অপব্যাখ্যা সমূহের সংশোধন করে প্রকৃত ব্যাখ্যা সহকারেআপনি কোন বই প্রকাশ করেছেন?
উত্তর : আমি করি নাই, তবে প্রখ্যাত আলেমদের দ্বারা অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামী এবং  আওয়ামী লীগ একসাথে রাজনীতি  করেছে।
উত্তর : একসাথে নয় এক ইস্যুতে রাজনীতি করেছে।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদূদী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে একসঙ্গে বসে আলাপ করার কোন ছবি দেখেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ এবং জামায়াত একক প্রার্থী দিয়েছে এরকম কোন নির্বাচন দেখেছেন?
উত্তর : বেগম ফাতেমা জিন্নাহকে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সেই সময়ে আইয়ুব খান এবং মুসলিম লীগ ব্যতীত অন্য সমস্ত দল একত্র হয়ে সমর্থন দিয়েছিল আইউব খানকে ঠেকানোর জন্য।  তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী ছিল, ইহা সত্য।

প্রশ্ন : অখন্ড পাকিস্তানের সর্বশেষ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন আওয়ামী লীগের এবং উপনেতা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর  তা জাননে?
উত্তর :  তা আমার জানা নাই। (পরে বলেন) যতদূর মনে পড়ে উপনেতা ছিলেন নেজামী ইসলামী দলের।
প্রশ্ন : ঐ সময় আপনি ছাত্রসংঘ করতেন?
উত্তর :  জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্য ছিলাম।


রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামও উচ্চারন করলেননা সাক্ষী////জেরা অস্বীকার আইনজীবীর


মেহেদী হাসান, ১৬/৯/২০১২
আজ   সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১২ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিলেন অরুনাাংশু বিমল  চৌধুরী। তিনি তার  সাক্ষ্যে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি । এমনকি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামও উচ্চারন করেননি। তার জবানবন্দী শেষ হলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী আহসানুল হক হেনা বলেন, আমি স্বাক্ষীকে জেরা করবনা (ক্রস ইক্সামিনেশন ডিকলাইন্ড)।

জবানবন্দী :
আমার নাম অরুনাংশু বিমল চৌধুরী। বয়স ৮০/৮২ বছর।
১৯৭১ সালে আমার বয়স ৪০/৪১ বছর ছিল। আমি মেট্রিক পাশ করে এল.এম.এফ. পাশ করি। আমার গ্রামের বাড়ি সুলতানপুর, জগতমল্লপাড়া, থানা-রাউজান, জেলা-চট্টগ্রাম। আমি ডাক্তারী করি। আমি রাঙ্গুনিয়ায় রানীহাটে ডাক্তারী করতাম। যেদিন ঘটনা ঘটে রাঙ্গুনিয়ার রাজানগরের চেয়ারম্যান কায়কোবাদ চৌধুরী আমার দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান।  আমাকে বলেন,  বাবু আপনি এুুনি বাড়ি চলে যান এবং বাড়ি গিয়ে আপনার ফেমেলি সহ রাস্তা থেকে দুই মাইল দূরে সরে যাবেন। তখন আমি স্বপরিবারে বিনাজুড়িতে আমার শ্বশুড় বাড়িতে চলে গেলাম। আমি ওখানে পৌঁছার ঘন্টা দুয়েক পরে শুনতে পাই যে, জগতমল্লপাড়ার সব লোককে গুলি করে হত্যা করে ফেলেছে। তখন আমি মনে করলাম যে, আমি একটু গিয়ে দেখে আসি। তারপর সেখানে যাওয়ার পথে আমার ভাবীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই। আমার বাড়ি থেকে এক মাইলের মত দেিণ আমার ভাবীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখি। আমার ভাবীর নাম জোৎস্না বালা চৌধুরী। তার বাবার বাড়িও বিনাজুড়িতে। তখন বিনাজুড়িতেও লুটপাট শুরু হয়ে যায়। আমার ভাবীকে বিনাজুড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে তার সংগে আমার কোন কথাবার্তা হয়নাই। এই ঘটনাগুলি কারা ঘটিয়েছে তাহা আমি জানিনা, কারণ আমি বাড়িতে ছিলামনা।

বিনাজুড়িতে যখন লুটপাট হয় তখন আমরা েেতর আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম। এই ঘটনার পরে রাত্রি ৯-০০টার সময় স্বপরিবারে ভারতে চলে যাই। আমি পদব্রজে ভারতে চলে যাই। আমি যখন বর্ডারে যাই তখন আমার শিক সাধন ধর, আবদুল্লাহ আল হারুণ ও খালেদ সাহেবের সংগে দেখা হয়। তারা আমাকে একটা স্লিপ দেয়। তৎপর আমি নদী পাড় হয়ে ভারতে চলে যাই। মুক্তিযুদ্ধের পরে আমরা ভারত থেকে দেশে ফিরে আসি। বাড়ি ফিরে এসে দেখি গ্রামের সব শেষ হয়ে গেছে, কিছুই নেই, মাটির ঘরগুলি দাঁড়িয়ে আছে। ফিরে আসার পরে আমি দেখি যে, জগতমল্লপাড়ায় সব তিগ্রস্থ হয়েছে। আমি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, কোথায় থাকবো, কি খাব, যার ফলে অন্য গ্রামে কি হয়েছে  না হয়েছে তা দেখিনাই।

আমার বড়ভাই হিমাংশু বিমল চৌধুরী, বৌদি নীলুবালা  চৌধুরী,  আমার অপর ভাই সিতাংশু বিমল চৌধুরী, আমার কাকা সুরেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরী, তার স্ত্রী চারুবালা চৌধুরী, আমার অপর ভাই কিরণ চন্দ্র চৌধুরী সহ আরো অনেককে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন  সময়ে। এদেরকে আমাদের বাড়িতে হত্যা করা হয়। এরপরে শুনেছি যে, আনুমানিক এক মাস পরে আরও তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনাগুলির পরে স্থানীয় লোকজন কে কোথায়  ছিল তা দেখার সুযোগ আমার হয়নাই। এই হত্যাকান্ডে জগতমল্লপাড়ায় যারা শহীদ হয়েছে তাদের স্মৃতিরার্থে শহীদ মিনার তৈরী করা হয়েছে। সেই শহীদ মিনারে শহীদদের নাম লেখা আছে।

এ পর্যন্ত বলার পর সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুলতান মাহমুদ সিমন প্রশ্ন করেন মামলা চলাকালে আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী দিয়েছিলেন কি-না বা তদন্ত কর্মকর্তা আপনার জবানবন্দী  নিয়েছিলেন কি-না। প্রশ্নটি  ভাল করে বুঝতে না পারাই ট্রাইব্যুনাল তাকে আবার  বুঝিয়ে প্রশ্নটি করেন। তখন তিনি জবাব দেন। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকালে আমার নিকট কোনকিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন কিনা তা আমার মনে পড়ছেনা।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন মুক্তিযোদ্ধা খসরুল আলম

মেহেদী হাসান, ১৬/৯/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ পঞ্চম সাক্ষী সাক্ষ্য দিলেন ট্রাইব্যুনালে (১)।  তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার নাম  খসরুল  আলম। তার বাড়ি শঙ্করপাশা  ইউনিয়নে। পাড়েরহাট মুক্ত হওয়ার পর তিনিসহ আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের দায়িত্ব পালন করেন।

জবানবন্দী:
আমার নমা খসরুল আলম। পিতা মৃত কাসেম আলী মাতুব্বর। বয়স ৬২।
১৯৭১ সালে আমি মোড়েলগঞ্জ  এস এম কলেজে এই কম ছাত্র ছিলাম। ১৯৭০  সালে আমি সেখানে  ভর্তি হই। আমি মোড়েলগঞ্জ কলেজের ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম। কলেজের তখনকার ভিপি লিয়াকত আলী খান, সাবেক ভিপি মোশাররফ হোসেন খান একত্রিত হয়ে মোড়েলগঞ্জের প্রাক্তন আর্মি সুবেদার এস এম কবির আহমেদের নেতৃত্বে  মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনে অগ্রসর হই। এভাবে কবির আহমেদের নেতৃত্বে আমরা রাইফেলের ট্রেনিং নেই। তার সাথে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাই। তারপর সংবাদ পাই আমি ছাত্রলীগ এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের কারনে শঙ্করপাশা (ডাক পাড়েরহাট, পিরোজপুর) আমাদের বাড়িতে পাড়েরহাটের পিস কমিটির সদস্য মৌলভী শফিজউদ্দিনের ছেলে মহসিন রাজাকার কয়েকজন পাঞ্জাবী সেনা নিয়ে   যায়। তারপর আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়ে ছাই   করে দেয়। আমার ষাটোর্ধ মাকে পাকিস্তানীরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। মে মাসের শেষের দিকে এ খবর পাই। এ ঘটনা শুনে মোড়েলগঞ্জের ভিপি লিয়াকত আলী খানের নেতৃত্বে সুন্দরবন সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিনের  স্টুডেন্ট ক্যাম্প গঠন করা হয়।  তার সাথে শামসুল আলম তালুকদার ছিলেন। স্টুডেন্ট ক্যাম্প গঠনের পর আমরা অনেক  ছাত্র ক্যাম্পে যোগ দেই। আমাদের ট্রেনিংয়ের জন্য ক্যাপ্টেন জিয়া পরিতোষ নামে  একজন ইনস্ট্রাক্টর   নিয়োগ দেন। প্রশিক্ষনের পর অভিযান   শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন জিয়া পিরোজপুর দখলের জন্য আড়াইশর  মত মুক্তিযোদ্ধা পাঠান লিয়াকতের নেতৃত্বে। রওয়ানার পরে রাত একটা বা দেড়টার দিকে পাড়েরহাট পৌছাই। লিয়াকত আলী শেখ বাদশা সেখানে কতক্ষন অবস্থান করেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পারেরহাট বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে। আমাদের আসার খবর পেয়ে রাজাকাররা ক্যাম্প থেকে ছিন্নভিন্ন হয়ে পালিয়ে যায়। লিয়াকত আলী বাদশা আমাদের ওখানে রেখে যান ক্যাম্প দেখাশুনার জন্য। মোকাররম হোসেন কবির, আব্দুল গনি পশারী ছিলেন আমাদের সাথে। এরপর ক্যাপ্টেন জিয়া এবং তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পারেরহাট হাজির হন। অনেক লোকজন আসে তাদের অভিনন্দনের জন্য। ক্যাপ্টেন জিয়া ৫/১০ মিনিট  অবস্থান করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখে চলে যান। শামসুল আলম  তালুকদার পারেরহাট থেকে যান ২/৩ ঘন্টার জন্য। ক্যাপ্টেন জিয়া পিরোজপুর চলে যান। লিয়াকত আলী ও শামসুল আলম তালুকদার বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেন  যুক্তভাবে। পাড়েরহাট হাইস্কুল রাজাকার ক্যাম্প, যেখানে মাঝে মাঝে পাকিস্তান আর্মি এসে থাকত, সেটাও পরিদর্শন করেন।

একটি কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম তা হল,  রাজাকারদের কার্যকলাপ স্থানীয় লোকজন ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিনকে  অবহিত করে। তার মধ্যে সেকেন্দার শিকদার, দানেশ মোল্লা, মফিজউদ্দিন মৌলভী, আসমত আলী মুন্সি, আব্দুল হনি হাজী এরা কুখ্যাত রাজাকার এবং পিস কমিটির লোক ছিল। এদের সাথে আরো অন্যান্য রাজাকার ছিল। তৈয়ব আলী মিস্ত্রী, আব্দুল করিম, মফিজ উদ্দিনের জামাই। সাঈদী সাহেব রাজাকার ছিলেন একথা কোন লোকই ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিনকে বলেনি ।
মোসলেম মাওলানা ভানু সাহাকে নিয়ে দীর্ঘ আট মাস বিপদ সাহার বাসায় বাস করেছে।
ক্যাপ্টেন জিয়া চলে যাবার সময় আমাদের দায়িত্ব দিয়ে যান এবং সেই অনুযায়ী ঢোলসহরত করে সবাইকে জানাই আপনাদের যা বলার আমাদের বলবেন। কোন রাজাকারকে আশ্রয় দেবেননা। নিশিকান্ত কয়েকদিন ঢোল পেটায়।
মাওলানা সাঈদী সাহেবকে তার বিয়ের পর থেকে চিনতাম। তিনি তার শশুরবাড়িতে আসতেন সেই সূত্রে পরিচয় ছিল। বিপদ সাহা আমার কাঁধে হাত দিয়ে কেঁদে বলেছিল মোসলেম মাওলানা দ্বারা আমার যে ক্ষতি হয়েছে তা  ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা।
আমরা সেকেন্দার সিকদার শফিজউদ্দিন, আব্দুল করিম এদেরকে আমরা আটক করি।
মোসলেম মাওলানা, দানেশ মোল্লা এবং অন্যান্য কুখ্যাত রাজাকারদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি কয়েকবার।
স্বাধীনতার পর ক্যাম্পে থাকাকালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের সাথে আমার দুয়েকবার দেখা হয়।

জবানববন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী।

জেরা :
জেরা : শফিউজউদ্দিন মৌলভীরা কয় ভাই?
উক্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন :  মহসিন রাজাকাররা কয় ভাই?
উত্তর :  জানা নেই। তারা তখন ছোট ছিল।
প্রশ্ন : এদের বাড় কোথায়?
উত্তর : মূল বাড়ি টগরা। থাকত পাড়েরহাট।
প্রশ্ন : টগরায় কতজন রাজাকার ছিল?
উত্তর : এটা পরিসংখ্যান করা হয়ন্ ি
প্রশ্ন : আপনার জানামতে পারেরহাটে কতজন রাজাকার ছিল?
 উত্তর : ৩০ এর বিশ।
প্রশ্ন : এদের মধ্যে কুখ্যাত কতজন ছিল?
উত্তর : ৪১ বছর আগে ঘটনা।  যা দেখেছি, শুনেছি তার সব মনে নেই। যা দরকার তা মনে আছে।
প্রশ্ন : কোন গ্রামে কয়টি বাড়িতে রাজাকার ধরার জন্য অভিযান চালান?
উত্তর : মোসলেম মাওলানার  বাড়িতে, তার নানা বাড়ি, শশুর বাড়িতে অভিযান চালাই। সাধারন ক্ষমা ঘোষনার আগ পর্যন্ত তাকে পাওয়া যাযনি।
প্রশ্ন : টগরায় কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিল?
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : নাম?
উত্তর : মিজানুর রহমান?
প্রশ্ন : মিজানুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে এসেছিল?
উত্তর : পরে যোগ দেয়।
প্রশ্ন : অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারাও পরে ক্যাম্পে যোগ দেয়?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ক্যাম্পে কি পরিমান মুক্তিযোদ্ধা ছিল?
উত্তর :১৫/১৬ জন।
প্রশ্ন : ক্যাম্পে কতদিন ছিলেন?
উত্তর : ফেব্রুয়ারির ১৫/২০ তারিখ পর্যন্ত ।
প্রশ্ন : আপনি চলে আসার পরও ক্যাম্প চলছিল?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ক্যাপ্টেন জিয়া উদ্দিন যখন লোকজনের সাথে কথা বলেন তখন কিভাবে বলেছিলেন অনেক লোকের সাথে একসাথে না আলাদা আলাদভাবে  একজন একজন করে?
উত্তর : তিনি ৫/১০ মিনিট ছিলেন। যাবার সময় আমাদের বললেন রাজাকারদের কেউ আশ্রয় দেবেনা। কারো কোন অভিযোগ থাকলে তা এখানাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বলবেন। এছাড়া তিনি অন্য কারো কথা শোনেননি।
প্রশ্ন :  শামসুল আলম যখন লোকজনের সাথে কথা  বলেন তখন কি পরিমান লোক ছিল?
উত্তর : হাজার/১২শ।
প্রশ্ন : তারা সবাই তার কাছে কথা বলছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কতজন বলেছে অনুমান?
উত্তর : সবারই অভিযোগ ছিল। তবে সবাই তো আর কথা বলতে পারেনি। কিছু লোক বলেছে।
 এ পর্যন্ত জেরার পর জেরা সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আইনজীবীর উপস্থিতি ছাড়াই মীর কাসেম আলীকে সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদ


15/9/2012
দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (এমসি)  জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে আজ  সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।  জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার পক্ষে কোন আইনজীবী সেখানে উপস্থিত ছিলেননা। টাইব্যুনালের আদেশ অনুযায়ী একজন আইনজীবীর উপস্থিতিতে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নিয়ম।

মীর কাসেম আলীর পক্ষে আইনজীবী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।  কোর্টের  আদেশ অনুযায়ী দুই দিন আগে আইনজীবীকে জিজ্ঞাসাবাদ বিষয়ে জানাতে হবে। আইনজীবী না জানিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তদন্ত সংস্থা কোর্টের আদেশ ভঙ্গ করেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনব। তাজুল ইসলাম বলেন যেহেতু আমাদের জানানো হয়নি  তাই আমরা জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত হয়নি।

মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বলেন,  পরিবারকেও জিজ্ঞাসাবাদ বিষয়ে আগে কিছু জানানো হয়নি। সকালে  ধানমন্ডিস্থ সেফ হোমে তার পিতাকে নেয়ার পর সেফ হোম থেকে  পরিবারে ফোন করে বলা হয়েছে মীর কাসেম আলীর কিছু গরম কাপড় দরকার। তাকে সেফ হোমে আনা হয়েছে। । তখনই পরিবারকে  জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে অবহিত হয়েছে বলে জানান সেফ হোমের সামনে অপক্ষেমান মীর আহমাদ।  

তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা গত ৯ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দিয়ে জানিয়েছি  জিজ্ঞাসাবাদ বিষয়ে  । ।  তারা কেন জানায়নি সেটা  বলতে পারবনা। কোন এক জায়গায় গ্যাপ হয়েছে হয়ত।

আব্দুল হান্নান খান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। আরো জিজ্ঞাসাবাদের দরকার। সেজন্য তারা এক অথবা দুইদিনের সময় চেয়ে আবেদন করবেন ট্রাইব্যুনালের কাছে। আব্দুল হান্নান খান  সেফ হোমের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের জানান, তিনিসহ তদন্ত সংস্থার আরো কয়েকজন মিলে একটি টিম গঠন করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।  মীর কাসেম আলীকে আজ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকাল সাড়ে ছয়টায় সেফ হোম থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৮ জুলাই ট্রাইব্যুনাল (১) মীর কাসেম  আলীকে একদিনের জন্য সেফ হোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি প্রদান করে আদেশ দেন।

আদেশে বলা হয়েছিল যেদিন তারা জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তার দুইদিন আগে তা নোটিশ দিয়ে মীর কাসেম আলীর আইনজীবীকে জানাতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সেখানে  একজন ডাক্তার তার পক্ষে একজন আইনজীবী উপস্থিত থাকবেন।  আব্দুল হান্নান খান বলেন একজন ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন।  কোন সমস্যা হয়নি।
গত ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালের আদেশে  গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী  অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মেহেদী হাসান

শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কি ছিল ১৯৭৪ সালের ত্রিদেশীয় দিল্লী চুক্তিতে?

১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ ভারত এবং পাকিস্তানেবর মধ্যে  ত্রিদেশীয় দিল্লী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।   চুক্তি অনুযয়ী বাংলাদেশে  ১৯৭১ সালের যুদ্ধে  গণহত্যা,   মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং  যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনাকর্মকর্তাকে ক্ষমা করে বাংলাদেশ।  চুক্তিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের বেদনায়ক  ঘটনার কারণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কাছে  ‘ক্ষমা কর এবং ভুলে যাও’ আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তাদের বিচার না করে   ক্ষমা করে দিয়েছে। যুদ্ধের কারণে  ভারতে আটক ৯২ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যসহ ৩০ লাখের উপরে বেসামরিক নাগরিক তখন তিন দেশে  আটকা পড়ে ছিল ।  ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরপরই ১৯৭২ সালে ভারত- পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং চুক্তিতে   দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং  সম্প্রীতি  স্থাপনে সব ধরণের প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করা হয় উভয় দেশের পক্ষ থেকে।   কিন্তু তার কোনটিই বাস্তবায়ন সম্ভব হয়না  বাংলাদেশকেন্দ্রিক যুদ্ধউত্তর সমস্যার সমাধান না হওয়ায় । যুদ্ধউত্তর সমস্যার সমাধান এবং তা নিয়ে তিন দেশের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিরসনে ১৯৭২ সাল থেকে  দফায় দফায় আলোচনাসহ নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয় এবং সবশেষে তা পূর্ণতা পায়  ১৯৭৪ সালের  ত্রিদেশীয় চুক্তির মাধ্যমে।  চুক্তিটি স্বাক্ষরের পর দিল্লী, ইসলামাবাদ এবং ঢাকা থেকে তা  একযোগে প্রকাশ করা হয়।  ১৬ দফার  সেই চুক্তিটি এখানে তুলে ধরা হল।  ভাষান্তর : মেহেদী হাসান


(১)     ১৯৭২ সালের ২ জুলাই ভারতের  প্রধানমন্ত্রী  এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের মধ্যে ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।  উপমহাদেশে শান্তি এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে  বিদ্যমান  দ্বন্দ্ব সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে পারষ্পরিক বন্ধুত্ব এবং সম্প্রীতি জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। এছাড়া এই চুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে যেকোন  বিবদমান বিষয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে  পারষ্পরিক তথা দ্বিপাক্ষিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। 

(২)    বাংলাদেশের পক্ষ থেকে  সিমলা চুক্তিকে স্বাগত জানানো হয়েছে।  উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশদুটির মধ্যে  সমঝোতা চুক্তিকে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জোরাল সমর্থন জানান।

(৩)     ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ফলে যে মানবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তা উপমহাদেশে বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।  বাংলাদেশ  একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে তখনো ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে না পারায়  যুদ্ধউত্তর মানবিক সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছিলনা। এ সমস্যা সমাধানে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হিসেবে ভারত এবং পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল সবেচেয়ে বেশি  জরুরি।   বাংলাদেশকে নিয়ে ত্রিদেশীয় বৈঠক অনুষ্ঠানে প্রধান অন্তরায় ছিল পাকিস্তান কর্তৃক  বাংলাদেশকে তখনো একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়া।

(৪)      বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে আটকে পড়া দুই দেশের লক্ষ লক্ষ নাগরিকের প্রত্যাবর্তন এবং ভারতে আটক ৯২ হাজার সৈন্য ফেরত পাঠানোসহ নানাবিধ মানবিক সমস্যা সমাধানে ভারত এবং বাংলাদেশ একটি  জোরাল উদ্যোগ নেয় ১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল।  এজন্য বাংলাদেশকে স্বীকৃতিজনতি  রাজনৈতিক সমস্যাকে  আপাতত পাশে সরিয়ে রাখা হয়। ১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল দুই দেশের পক্ষ
থেকে একটি যৌথ ঘোষনা দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, উপমহাদেশে উত্তেজনা কমিয়ে স্থায়ী  শান্তি ও সমৃদ্ধির  লক্ষ্যে দুই দেশ বন্ধুত্ব এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে কাজ করে যাবে। দুই দেশ থেকে প্রস্তাব করা হয় যে, আটককৃত এবং আটকে পড়া  নাগরিকদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা উচিত। তবে  বন্দী ঐসব পাকিস্তানী সৈন্য, যাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তাদের বাংলাদেশে বিচারের  প্রয়োজন হতে পারে তাদের  ক্ষেত্রে এই মানবিক দৃষ্টিকোনের বিষয়টি প্রযোজ্য হবেনা।

(৫)    এই ঘোষনার আলোকে ভারত-বাংলাদেশ এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক  চলে।    বৈঠক শেষে ১৯৭৩ সালের ২৮ আগস্ট একটি সমঝোতায় আসে দেশ তিনটি। এবং  বাংলাদেশের সম্মতির  ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে  একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়  বিদ্যমান মানবিক সমস্যা সমাধানে।

(৬)      এই সমঝোতার ফলে ১৯৭৩ সালের  ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দেশের মধ্যে আটকে পড়া এবং বন্দী প্রত্যর্পন শুরু হয়। প্রায় ৩০ লাখ নাগরিক  তাদের স্ব স্ব দেশে ফেরার সুযোগ পায় তখন।   এর ফলে তিন দেশের মধ্যে  বিরাজমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং উপমহাদেশে শান্তির পথে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হয়।

(৭)     ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ায়    একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে তিনদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পথ সুগম হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, ভারতের বিদেশমন্ত্রী শরন সিং এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমেদ সমমর্যাদা নিয়ে  ৫ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দিল্লীতে  বৈঠক করেণ এবং বৈঠকে তিন দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের অন্তরায় নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিশেষ করে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্বসহকারে স্থান পায়। এছাড়া পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশী এবং বাংলাদেশ ও ভারতে  আটকে পড়া পাকিস্তানীদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানোর চলমান প্রকৃয়া নিয়েও আলোচনা করা হয়। 

(৮)     ১৯৭৩ সালের ২৮ আগস্টের দিল্লী সমঝোতার আলোকে তিন দেশে আটকে পড়া নাগরিকদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি তিন মন্ত্রী  মূল্যায়ন করেণ এবং বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ শেষ  পর্যায়ে চলে আসায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেণ।

(৯)      আটকে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বাকী কাজ দ্রুত এবং সন্তোষজন উপায়ে শেষ করতে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে একমত পোষন করেণ তিন  মন্ত্রী।

(১০)    ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয় ভারতে বন্দী এবং আটকে পড়া  বাদবাকী সৈন্য  ও নাগরিকদের  দিল্লী চুক্তির অধীনে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে।  ১৯৭৪ সালের এপ্রিলের মধ্যেই এ প্রত্যাবাসন কাজ শেষ করার ঘোষনা দেয়া হয়।  দুই দেশের মধ্যে চলমান ট্রেনে করেই একদিন পরপর  বাকী সাড়ে ৬ হাজার সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিক পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। 

(১১)     পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয় পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠানোর কাজ প্রায় শেষের পথে। বাকীদেরও শান্তিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে আন  হবে।

(১২)    পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয় সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত,  কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে  চাকরি রত,  অথবা অন্য কোন কারণে পশ্চিম পাকিস্তানের  যেসব নাগরিক  বাংলাদেশে আটকে পড়েছে তাদের পাকিস্তানে ফেরত আনার জন্য ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয় প্রথম তিন ক্যাটাগরিতে যারা পড়বে তারা সংখ্যায় যতই হোক সবাইকে ছাড়পত্র দেয়া হবে। যাদের দরখাস্ত বাতিল করা হবে সে বিষয়ে  তাদেরকে এর কারণ জানিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হবে। যাদের আবেদন গ্রহণ করা হবেনা তাদের  আপীল করার সুযোগ  পরবর্তীতে খোলা থাকবে।  এ জন্য কোন নিদির্ষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হবেনা। পরবর্তীতে এ জাতীয় আবেদনের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌছবে।

(১৩)     উপমহাদেশে  শান্তি এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে  এবং তিন দেশের মধ্যে  আশু বন্ধুত্বপূর্ণ  সম্পর্ক ও সম্প্রীতি স্থাপনের লক্ষ্যে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টি  নিয়ে তিন দেশের তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী  আলোচনা করেণ।  বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বৈঠকে বলেন যে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাব, আন্তর্জাতিক আইন, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যাজনিত অপরাধ বিষয়ে যত আইন আছে তার সবগুলোর বিবেচনাতেই ১৯৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য অপরাধী । ঐসব আইনে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যার সংজ্ঞায় যেসব অপরাধের নাম আছে এবং যারা ঐসব অপরাধ করবে তাদের যথাযথ আইনী প্রকৃয়ায়  বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে সারা বিশ্ব সর্বসম্মতভাবে একমত। আর ১৯৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য ঐসব আইনে বর্ণিত অনেক অপরাধ করেছে।  পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব ঘটনাকে তার  সরকার কঠোরভাবে নিন্দা জানায়  এবং এ জাতীয় অপরাধ হয়ে থাকলে তার জন্য পাকিস্তান গভীরভাবে অনুতপ্ত।


(১৪)    তিন মন্ত্রী একমত হন যে,  উপমহাদেশে শান্তি ও অগ্রগতির স্বার্থে তিন দেশের মধ্যে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে তার আলোকেই ১৯৫ জন সৈনিকের বিষয়টি  বিবেচনা করা উচিত। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর  আমন্ত্রনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শীঘ্রই বাংলাদেশ ভ্রমনে যাবার ঘোষনা দিয়েছেন  এবং   আপনার দেশের নাগরিকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার  আবেদন জানাবেন । একইভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী  পাকিস্তানীদের  প্রতি ক্ষমা  প্রার্থনার  আহবান জানিয়ে ঘোষনা দিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের মানুষ   ক্ষমা করতে  জানে।  তাই নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করার জন্য ১৯৭১ বাংলাদেশে যে   বর্বরতা এবং  ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে তা তিনি তার দেশের নাগরিকদের ভুলে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

(১৫)   ‘ক্ষমা করো এবং ভুলে যাও’  বাংলাদেশের প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর এই আবেদন এবং মনোভাবের  প্রেক্ষিতে  বাংলাদেশ সরকার ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধপারাধীর বিচার  না করে  ক্ষমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে  বলে ঘোষনা করেণ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।   অত:পর দিল্লী সমঝোতার আলোকে অন্যান্য যুদ্ধবন্দীদের সাথে এই ১৯৫ জন সেনাকর্মকর্তাদেরও  ভারত হতে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। 

(১৬)  ১৯৭১ সালের যুদ্ধউত্তর মানবিক সমস্যা সমাধানে  তিন দেশের এসব  চুক্তি এবং সমঝোতা ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে বলে তিনমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেণ। তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী   একমত প্রকাশ করে বলেন যে, তিন দেশের দেশের ৭০ কোটি মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন এবং উপমহাদেশে শান্তি ও  অগ্রযাত্রার পথে তিনটি  দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে মিলে মিশে কাজ করে যাবে। 

চুক্তিতে স্বাক্ষর করেণ:
ড. কামাল হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশ সরকার
সরদার শরণ সিং, বিদেশমন্ত্রী, ভারত সরকার
আজিজ আহমেদ, পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, পাকিস্তান সরকার।

বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

জেরায় শাহরিয়ার কবির//স্বাধীনতার পর যে কয়টি সরকার পেয়েছি তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে চায়নি। বরং তারা চেয়েছে এই চেতনা জাতির স্মৃতি থেকে অবলুপ্ত হোক।

১৩/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির আসামী পক্ষের জেরায় শিকার করেছেন তার সম্পাদিত একাত্তরের ঘাতকেরা কে কোথায় বইয়ের ভূমিকায় লেখা আছে শেখ মুজিবুর রহমান ঘাতক ও দালালদের বিচার না করে ক্ষমা করেছিলেন। ওই বইয়ের মুখবন্ধে উল্লেখ আছে স্বাধীনতার পর যে কয়টি সরকার পেয়েছি তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে চায়নি। বরং তারা চেয়েছে এই চেতনা জাতির স্মৃতি থেকে অবলুপ্ত  হোক। তিনি আরো শিকার করেন, বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরী ’৭১ সালে পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন, প্রাণ বাঁচানোর জন্য তখন অনেকেই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুরাল-২ আজ  মুজাহিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন। এসময় মুজাহিদের আইনজীবী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মুন্সী আহসান কবির প্রমুখ। আজ  শাহরিয়ার কবিরের জেরা শেষ না হওয়ায় তিনি দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ট্রাইব্যুনাল জেরা অসমাপ্ত রেখে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর মুজাহিদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণের দিন ধার্য করেন।

জেরা:
প্রশ্ন: একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা  কে কোথায় বইটি সম্পাদক মন্ডলী ছিলেন ড. আহমেদ শরীফ, কাজী নুরুজ্জামান ও আপনি শাহরিয়ার কবির।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ওই বইয়ের মুখবন্ধে উল্লেখ আছে স্বাধীনতার পর যে কয়টি সরকার পেয়েছি তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে চায়নি। বরং তারা চেয়েছে এই চেতনা জাতির স্মৃতি থেকে অবলুপবত হোক।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায় বই এর ভূমিকায় লেখা আছে, শেখ মুজিবুর রহমান ঘাতক ও দালালদের বিচার না করে ক্ষমা করেছিলেন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের তথ্য উদঘাটনের জন্য স্বাধীনতার পর দুটি কমিটি হয়। একটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় ও অপরটি নাগরিক সমাজের উদ্যোগে যার নেতৃত্বে ছিলেন জহির রায়হান?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: জহির রায়হান যেসব তথ্য উদঘাটন করেছিলেন কলকাতার একটি পত্রিকার সাংবাদিক তা নিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন মর্মে বক্তব্য আপনাদের প্রকাশিত বইয়ে উল্লেখ আছে, এটা সত্য কি না?
উত্তর: জহির রায়হানের বোন ডা. সুরাইয়া বেগম এই তথ্য দিয়েছিলেন। পরে বলেন, সৈয়দ হাসান ইমাম বলেছেন ওই তদন্তের সব কাগজপত্র তারা এনএসআইকে হস্তান্তর করেছিল।
প্রশ্ন: বুদ্ধিজীবী হত্যার বিরুদ্ধে ওই সময় ৪০টির বেশি মামলা হয়?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ওই মামলার তদন্তে ছিল একজন ডিআইজির নেতৃত্বে গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল। 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: আপনার বইতে এই মর্মে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যে এ মামলার বেশিরভাগ ছিল সাজানো?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মামলা দায়ের প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদেরকে গবেষণার মাধ্যমে শনাক্ত করেছেন কি না?
উত্তর: আমি এ বিষয়ে কোন গবেষণা করিনি। পরে বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের অনেকেই এমামলা দায়ের প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
প্রশ্ন: দালাল আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলাসমূহ পরিচালনার মৃখ্য দায়িত্বে ছিলেন অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক। তার পদের নাম ছিল চিফ প্রসিকিউটর।
উত্তর: হ্যাঁ। তবে মামলার তদন্ত করেছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের অধিকাংশ মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পাক সামরিক জান্তার অধীনে চাকরি করেছে।
প্রশ্ন: বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরী ’৭১ সালে পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন কি না।
উত্তর: হ্যাঁ, দিয়ে ছিলেন। প্রাণ বাঁচানোর জন্য তখন অনেকেই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
প্রশ্ন: মুনির চৌধুরীর এক ভাই এখনো পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে পাকিস্তানে বসবাস করছেন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যতদিন দেশে ছিলেন সে সময়ে মুনির চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হয়েছে কি না?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: মুনির চৌধুরীর সঙ্গে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনার কোন যোগাযোগ হয়নি।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: আপনি জবানবন্দীতে বলেছেন ৭১ সালেল ৮ নভেম্বর দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের উদ্বৃতি দিয়ে বলেছেন এই মামলার আসামী আল বদর সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, যেখানে অল বদর শব্দের উল্লেখ নেই। ঐতিহাসিক বদর দিবসের কথঅ উল্লেখ আছে।
উত্তর: খবরে বদর দিবস উল্লেখ আছে। আল বদর উল্লেখ নেই। তবে সমাবেশটি ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীদের।
প্রশ্ন: মুজাহিদ আল বদর বাহিনীর নেতা, সদস্য, কমান্ডার বা সংগঠক এ মর্মে কোন সংবাদ ৭১ সালে এবং ’৭২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল কি?
উত্তর: হাইকমান্ডের নাম সংবাদপত্রে প্রকাশিত হত না। কারণ আল বদর একটি আধা গোপন সংগঠন।
প্রশ্ন: ’৭১ সাল থেকে ’৭৮ সাল পর্যন্ত মুজাহিদ আল বদর বাহিনীর প্রধান বা আল বদর সদস্য উল্লেখ করে কোন সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি।
উত্তর: এটা সত্য না।
প্রশ্ন: ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন পাস হয়। সেই সংসদে অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সদস্য ছিলেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: দালাল আইন পাস হওয়ার সময় পার্লামেন্টের কার্যধারায় দালাল আইনের অকার্যকারিতা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না?
উত্তর: সংসদের কার্যধারার বিবরণী না দেখে বলতে পারব না।
প্রশ্ন: যেসব ব্যক্তির বিচার দালাল আইনে হয়েছিল সেই দালাল আইন বাতিল করে তাদেরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ’৭৩ এর অধীনে বিচার করার জন্য দাবি করেছেন কি?
উত্তর: শহীদ পরিবারের পক্ষে দাবি করেছি।
প্রশ্ন: এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে পত্রিকার কাটিং দিয়েছেন কি না?
উত্তর: প্রয়োজন মনে করিনি।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ’৭৩ এর অধীনে ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার দাবি করে কোন বিবৃতি দিয়েছেন কি?
উত্তর: পত্রিকায় বিবৃতি দেয়ার জন্য সে সময় আমার সাংগঠনিক যোগ্যতা ছিল না।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ’৭৩ এর অধীনে বিচারের জন্য কোন বিবৃতি দিয়েছিল কি না?
উত্তর: এ মুহুর্তে মনে পড়ছে না।
প্রশ্ন: ১৯৭৩ সালে তৎকালিন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন পকিস্তান সশস্ত্র  বাহিনীর যে সকল সদস্যরা গণহত্যার বা স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অন্যান্য অপরাধ করেছে তাদের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ’৭৩ করা হয়েছে। এটি আপনি জানেন কি না?
উত্তর: জানা নেই।
রিপোর্টার :  হাবিবুর রহমান

লাট মিয়ার জেরা শেষ


13/9/2012
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের নবম সাী আমির হোসেন মোল্লা ওরফে লাট  মিয়ার  জেরা শেষ হয়েছে।  আজ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কাদের মোল্লার আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার সাক্ষীকে জেরা করেন।

জেরায় সাী আমির হোসেন মোল্লা ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যে মামলা করেছিলেন তার কপি আদালতে প্রদর্শন করেন। ওই মামলার উদ্বৃতি দিয়ে আসামী পক্ষেল আইনজীবী বলেন, ’৭১ সালে ঘটনার সময় ওই মামলার বাদি আমির হোসেন মোল্লা ও তার পরিবার বিলের কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে আত্মরক্ষা করেছিলেন। যা ওই মামলার নথিতে আছে। জবাবে আমির হোসেন মোল্লা বলেন, মামলার আরজিতে উকিল সাহেব কি লিখেছেন আমি বলতে পারব না। তবে এই কেসের প্রতি পাতায় আমার স্বাক্ষর আছে।
জেরায় আইনজীবী প্রশ্ন করেন, ২৪ এপ্রিল আপনার বর্ণিত ঘটনার দিন আপনারা ডোবায় কচুরি পানায় লুকিয়ে ছিলেন। জবাবে সাক্ষী বলেন, সত্য নয়। আমিও আমার বাবা গ্রামের পশ্চিম উত্তর দিকে কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে ছিলাম।

জেরা:
প্রশ্ন : ২৩ বা ২৪ মার্চ আপনি বাড়ি ছেড়ে পরিবার নিয়ে কোথাও যাননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ২৪ এপ্রিলের পর গ্রামে ছিলেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ওইদিন আপনি পরিবার নিয়ে ডোবায় কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে ছিলেন।
উত্তর : এটা সত্য নয়। (নিজে বলেন, আমি ও আমার পিতা আলুবদী গ্রামের পশ্চিম, উত্তর কোণায় যে কচুরিপানা ছিল সেখান থেকে ঘটনা দেখি)।
প্রশ্ন : কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে থাকার কথা বানোয়াট?
উত্তর : এটা সত্য নয় যে এই কথা বানোয়াট।
প্রশ্ন : কচুরিপানার নিচ থেকে কোনো ঘটনা দেখেননি, এটা বানোয়াট।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : এ ঘটনার সময় বাদি ও তার পরিবার কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে থেকে আত্মরা করেন।
উত্তর : নালিশী  মামলায় এ কথা লেখা আছে। উকিল সাহেব কি লিখেছেন আমি বলতে পারবো না। এই নালিশী মামলার দরখাস্তের সকল পাতায় আমার স্বার আছে।
প্রশ্ন : ২৫ মার্চের পরে বাদি, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে কোথায় যাবেন, কি করবেন এ চিন্তায় দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বাড়িতে সতর্ক অবস্থান করতে থাকেন- এ কথা নালিশী আবেদনে লেখা আছে। সেখানে আপনার স্বারও আছে।
উত্তর : উকিল সাহেব দরখাস্ত কি লিখেছেন তা তিনি জানেন। আমি বলতে পারবো না।
প্রশ্ন : সত্য গোপন করে মিথ্যা বলেছেন?
উত্তর : এটা সত্য নয়, যা বলেছি সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মিরপুর ভারতের বিহার রেজিমেন্টের দখলে ছিল। তারা মিরপুর-১২ নম্বর সেকশন ঘেরাও করে রেখে নিরীহ এলাকাবাসীর নিরাপত্তার জন্য।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ২৭ জানুয়ারি ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কাছে থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ মিরপুরের নিয়ন্ত্রণ বুঝে নেয়।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : দালাল আইনে কোনো আদালত গঠন হয়েছিল কি না?
উত্তর : আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : আকতার গুণ্ডাকে চিনতেন?
উত্তর : চিনতাম।
প্রশ্ন : এই আকতার গুণ্ডার আদালতে সাজা হয়েছিল কি না?
উত্তর : বলতে পারবো না।
প্রশ্ন : জেলে ছিল?
উত্তর : ৩১ জানুয়ারির পর জেলে ছিল।
প্রশ্ন : সাজা খেটে জেল থেকে বের হয়ে পাকিস্তানে চলে যান।
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালের পর মিরপুর থেকে অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর দেড়মাস সময় লেগেছিল কি না?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : জবানবন্দীতে বলেছেন ছাত্র সংঘের নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা ৭০/৮০ জন লোককে নিয়ে পাকিস্তান রার জন্য বিহারীদের ট্রেনিং দিতেন এটা বানোয়াট ও মিথ্যা।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : জবানবন্দীতে যে সকল অভিযোগ এনেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক।
উত্তর : এটা সত্য নয়।

রিপোর্টার : হাবিবুর রহমান।

সুলতানা কামালের জেরা শেষ/// গোলাম আযমকে হিটলারের সাথে তুলনা


 Mehedy Hasan, 13/9/2012
প্রশ্ন : রাজা ত্রিবিদ রায়   পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনের অধীনে।
উত্তর : সঠিক। তবে এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। কারণ যেকোন মুক্তিসংগ্রামে আক্রমনকারী পক্ষ আক্রান্তদের মধ্য থেকে কিছু লোক নিয়োগ দিয়ে সামনে আনে মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্য, দেখানোর জন্য। যাতে তারা বুঝতে না পারে এ ধরনের গণহত্যা এবং জতিগত নিধনের কথা।
প্রশ্ন : এটা আপনার মনগড়া বক্তব্য। স্বাধীনতার পর সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে যেসব বই  লেখা হয়েছে তার কোথাও এ ধরনের বক্তব্য সমর্থন করেনা।
উত্তর : মনগড়া নয়। এ ধরনের বক্তব্য নাও থাকতে পারে তাতে। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার বক্তব্য বলেছি।
প্রশ্ন : তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় জামায়াতে ইসলামের কোন সদস্য ছিলনা।
উত্তর : সত্য হতে পারে।
প্রশ্ন : অংশুপ্রু চৌধুরীও (মার্মা নেতা) বৌদ্ধদের নেতা ছিলেন এবং ১৯৭০ সালে  প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : তিনিও ডা. মালেক মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন।
উত্তর : (বোঝা যায়নি বিধায় নোট করা যায়নি)
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন আপনার মা (সুফিয়া কামাল) সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে মূলধারার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সেই মূলধারার নেতৃত্বে কোন দল ছিল?
উত্তর : আওয়ামী লীগ।
প্রশ্ন : আপনার মা যেসব পদক পেয়েছেন সেগুলো হল ১৯৬১ , ১৯৬২, ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৮­ ১৯৯৫ এবং ১৯৯৬ সালে।
উত্তর : অনেক পদক পেয়েছেন। সাল সব মনে নেই।
প্রশ্ন : মাহে নও নামে একটি মাসিক পত্রিকায় আপনার মা নিয়মিত লিখতেন যার সম্পাদক ছিলেন আব্দুল কাদির।
উত্তর : হ্যা।
( সে পত্রিকায় সুফিয়া কামাল কায়েদে আজমের  বন্দনা করে অনেক কবিতা লিখেছেন এ জাতীয় প্রশ্ন করতে চাইলে আইনজীবী কোর্ট তা এ্যালাউ করেনি। এ নিয়ে কোর্টে বিতর্ক চলার এক পর্যায়ে সুলতানা কামাল বলেন, গোলাম আযমের সাথে আমার কোন ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। বিরোধীতা নীতির  প্রশ্নে, কে কি অবস্থান নিয়েছিল সে  প্রশ্নে) ।
প্রশ্ন : আপনি ১৯৮৪ সালে কোথায় থাকতেন?
উত্তর : সিলেটে। ফ্রিল্যান্স কনসালটেন্সি করতাম।
প্রশ্ন : কত সময় সেখানে ছিলেন।
উত্তর : ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত।
প্রশ্ন : বার কাউন্সিলে সদস্য হিসেবে আপনার সিনিয়র কে ছিলেন?
উত্তর : জি এন দেব।
প্রশ্ন : কতদিন কাজ করেছেন তার অধীনে?
উত্তর : লাইসেন্স  পাবার জন্য যতদিন দরকার ততদিন। এরপর আর কোর্টে যাবার সময় পাইনি।
প্রশ্ন : সনদ এখনো আছে?
উত্তর : সিলেট বারের সদস্য সনদ এখনো আছে। তবে আমি কোর্টে যাইনা। আমি  প্রাকটিসিং লয়ার নই।
প্রশ্ন : আপনি বার কাউন্সিলে সনদ নেয়ার সময় এভিডেভিডে বলেছিলেন আপনি কোন পেশায় নিয়মিত নন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনি আপনার জবানবন্দীতে বলেছেন, রাজাকার, আল বদর, শান্তি কমিটি, আল শামস সংক্রান্ত খবরগুলো তখন পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হত।  সে পত্রিকাগুলোর নাম বলতে পারবেন?
উত্তর : পূর্ব দেশ, আজাদ।
প্রশ্ন : তারিখ?
উত্তর : ৫ এবং ৭  এপ্রিল।
প্রশ্ন : ওই খবরে গোলাম আযমের ভূমিকা সম্পর্কে কিছু নেই।
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : আমি বলছি ওই তারিখে আজাদে এ ধরনের কোন খবরই নেই।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ৬ এপ্রিল আজাদে খবর ছাপা হয় নুরুল আমিনের নেতৃত্বে একটি দল আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করে।  দেশে স্বাভাবিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের আশ্বাস দেয়া হয় সে বৈঠকে। ওই  খবরে  গোলাম আযমের নেতৃত্বে দেখা করার কথা বলা হয়নি।
উত্তর : এটা সত্য হতেও পারে তবে পূর্ব দেশের খবরে গোলাম আযমের নেতৃত্বের কথা বলা আছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি যে, মিছিল মিটিং হয়েছে। এমনকি গোলাম আযমের দস্তখত সংবলিত ১ টাকার টিকিটও বিক্রি হয়েছে অর্থ সংগ্রহের জন্য।
প্রশ্ন : গোলাম আযম মূখ্য ভূমিকা পালন করে একথা পূর্বদেশ পত্রিকার কত তারিখে আছে?
উত্তর : ৫ এবং ৭ এপ্রিল।
প্রশ্ন :   নুরুল আমিনের নেতৃত্বে টিক্কা  খানের সাথে দেখা করার পর শান্তি কমিটি গঠিত হয় এবং সে খবর ১১ এপ্রিল দৈনিক পআজাদে  ছাপা হয়।
উত্তর : পত্রিকার তারিখ আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : এই শান্তি কমিটির মূখ্য ব্যক্তি ছিলেন মুসলিম লীগের খাঁজা খয়ের উদ্দিন।
প্রশ্ন : হ্যা।
প্রশ্ন :  শান্তি কমিটিতে ১৪০ সদস্য ছিল।
উত্তর : সংখ্যা বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পত্রিকার খবরে লেখা হয়েছে নাগরিকদের প্রাত্যাহিক জীবনে সত্ত্বর স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি ও অহেতুক ভিত্তিহীন শংকা  দুর করা ।
উত্তর : একথা লেখা ছিল এটা সত্য তবে যেসময় জনগনতে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে সেই সময় এসব ঘটনাকে অহেতুক ও ভিত্তিহীন শঙ্কা বলে প্রকাশ করে তারা তাদের মানসিকতা এবং অপরাধের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে।
প্রশ্ন : গোলাম আযম মুক্তিযোদ্ধাদের দৃষ্কৃতকারী বলেছেন এ মর্মে কোন পেপারকাটিং আপনি দেখাতে পারবেন বা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন?
উত্তর : দেখাতে পারব। আমার কাছে আছে এবং তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দিয়েছি।
প্রশ্ন : চাপসৃষ্টি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে গোলাম আযম শান্তি কমিটিতে যোগ দিতে বাধ্য করেছে কোন বক্তব্য বিবৃতি সংবলিত  কোন প্রমান আছে?
উত্তর : আছে। জমাও দিয়েছি।
প্রশ্ন : এ মর্মে যুদ্ধকালে প্রকাশিত দেশি বা বিদেশী কোন পত্রিকার কাটিং আছে কি-না, এখনকার পেপার নয়।
প্রশ্ন : আমার সংগ্রহে নেই।
প্রশ্ন : গোপন কিলার ফোর্স গঠন বিষয়ে সেসময় দেশি বা বিদেশী কোন মাধ্যমে  খবর প্রকাশিত হয়েছে  কি-না।
উত্তর : তা বলতে পারবনা। তবে এ খবরগুলো আমি মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যকার গোয়েন্দাদের মাধ্যমে পেতাম যারা গেরিলা অপারেশনের জন্য ভারত থেকে দেশে  প্রবেশ  করত এবং আবার আগরতলা ফিরে আসত।
প্রশ্ন : গোলাম আযম কবে থেকে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমীর?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : অধ্যাপক গোলাম আযম কোন কমিটি বা বাহিনীর আনুষ্ঠানিক প্রধান ছিলেন না।
উত্তর : ছিলেননা। গোলাম আযমের ভূমিকাকে হিটলারের সমতুল্য।  হিটলার নাৎসী বাহিনীর প্রধান ছিলেননা এমনকি সদস্যও ছিলেননা। কিন্তু নাৎসী বাহিনীর অত্যাচারের নায়ক ছিলেন হিটলার। তেমনি শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর মূখ্য নেতা গোলাম আযম ছিলেননা কিন্তু তার নেতৃত্বে, নির্দেশে এবঙ পরিকল্পনায় এসব বাহিনী পরিচালিত হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার যা করেছে আমি মনে করি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় গোলাম আযম তাই করেছে।
প্রশ্ন : হিটলার তখন জার্মান রাষ্ট্রের ক্ষমতায় ছিলেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন  টিক্কা খান।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : হিটলারের অবস্থানে গোলাম আযম ছিলেননা।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : তার সাথে অধ্যাপক গোলাম আযমকে তুলনা করা  অস্বাভাবিক এবং উদ্দেশ্যপ্রনোদিত।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : স্বাধীনতা উত্তরকালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যত  ইতিহাস, বই লেখা হয়েছে তার সব জায়গায় ইয়াহিয়া এবং টিক্কা খানকে হিটলারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। গোলাম আযম সাহেবকে নয়। আপনি গোলাম আযমকে হিটলারের সাথে  তুলনা করে ইতিহাস বিকৃতি করলেন।
উত্তর : আমি ইতিহাস বিকৃতি করছিনা। গোলাম আযমের নাম উক্ত দুজনের সাথে যুক্ত করলাম।
প্রশ্ন :  আজ থেকেই যুক্ত করলেন?
উত্তর : আজ প্রসঙ্গক্রমে আসল বিষয়টি ।
প্রশ্ন : পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উচ্চতর পর্যায় থেকে গোলাম আযমের নাম ধরে প্রশংসা করা হয়েছে   বলেছেন আপনি।  আমি বলছি এ মর্মে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উচ্চতর পর্যায় থেকে কোন বিবৃতি দেয়া হয়নি।
উত্তর : দিয়েছে।
প্রশ্ন : এ মর্মে কোন প্রমান  দাখিল করেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডানের জনসযোগ কর্মকর্তা  ব্রিগেডিয়ার  সিদ্দিক সালেহ  লিখিত উইটনেস টু সারেন্ডার বইটি পড়েছেন?
উত্তর : পড়েছি।
প্রশ্ন : পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে পাকিস্তানপন্থী পূর্ব পাকিস্তানের কোন রাজনীতিবিদের  প্রভাব থাকার বিষয় স্বীকার করেননি।
উত্তর : থাকতে পারে। তবে তা তার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন হামিদুল্লাহ খানের বাসার কাজের ছেলেটিকে পাকিস্তান আর্মি ধরে নিয়ে গেল তাদের না পেয়ে। স্বাধীনতার পর ওই ছেলেটির খোঁজ নিয়েছিলেন?
উত্তর : যুদ্ধচলাকালে এবং স্বাধীনতার পরও  তাকে  অনেক খোঁজ করেছি।  তবে পাওয়া যায়নি।
প্রশ্ন : আল বদর, রাজাকার, আল শামস, শান্তি কমিটির অনেকের নামের সাথে প্রায়শই গোলাম আযমের নাম আসত বলেছেন আপনি জবানবন্দীতে। গোলাম আযমের নাম এসবের নেতা হিসেবে আসছে কি-না।
উত্তর : নেতা হিসেবে আসেনি। ওইসব বাহিনীর কার্যকলাপের সাথে তার নাম এসেছে।
প্রশ্ন : রাজাকার, আল বদর, আল শামস এবং শান্তি কমিটির অভিযান পরিচালনা বা কর্মকান্ডের সাথে গোলাম আযমের নাম আছে এ মর্মে ওই সময়কার কোন পত্রপত্রিকার কাটিং  তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়েছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : একটি সামরিক বাহিনীর সহায়ক বাহিনী যাকন কোন অভিযানের পরিকল্পনা গ্রহণ করে তখন তার কৌশলগত পরিকল্পনা  তৈরি করে সামরিক বাহিনীর অনমোদন নেয় অথবা সামরিক বাহিনীর নির্দেশনা অনুযায়ী তারা অভিযানের পরিকল্পনা করে।
উত্তর : নিয়মমত তাই হয়। তবে ওই তিনবাহিনী নিয়মমত সেসময় কাজ করেছে তা ঘটনা দেখলে মনে হয়না।
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনী সরকারী তত্ত্বাবধানে আসার আগে তার প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর :  নাম মনে নেই।
প্রশ্ন : অপারেশন সার্চ লাইটের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর  জেনারেল টিক্কা  খানের সাথে বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে শুধুমাত্র জুলফিকার আলী ভুট্টোর নাম শোনা যায়।
উত্তর : সত্য। এতেই মনে হয় ওই সময় বেসামরিক ব্যক্তিরাও জড়িত ছিল।।
প্রশ্ন : আপনি আত্মজীবনীমূলক একটি বই লিখেছেন তার নাম কি?
উত্তর :  আত্মকথা নীলিমার নীচে।
প্রশ্ন : রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিনের অধীনে আপনি তত্তাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিলেন।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাবার আগে বেবি মওদূদ, আসাদুজ্জামান নূর, সাবের হোসেন চৌধুরী, মোনায়েম সরকার আপনাকে ফোন করে  বলেছেন যে, নেত্রী শেখ হাসিনা উপদেষ্টা হিসেবে আপনাকে বাছাই করেছেন ১৪ দলের পক্ষ থেকে।
উত্তর : বলেছিল যদি তোমাকে সিলেক্ট করে তুমি না করোনা।
প্রশ্ন : সাবেক  মন্ত্রী  বর্তমান এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী আপনাকে ফোন করে বলেছিল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটা আমার অফিসিয়াল যোগাযোগ।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আমি বলছি আপনি আপনার জবানবন্দীতে গোলাম  আযমকে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতীক, গনহত্যার সমর্থন এবং সহযোগিতার মাস্টারমাইন্ড, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর দার্শনিক এবং কৌশলগত পরিকল্পনাকারী আখ্যায়িতসহ তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : অধ্যাপক গোলাম আযম পাকিস্তানের অখন্ডতায় বিশ্বাসী হলেও তার ভূমিকা ছিল শুধুমাত্র রাজনৈতিক। কোন অপরাধ সম্পৃক্ত নয়।
উত্তর : সত্য নয়।
আজ সুলতানা কামালকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম এবং কফিল উদ্দিন চৌধুরী।

বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সাঈদীর পক্ষে চতুর্থ সাক্ষী//সাঈদীসহ আমরা চারটি পরিবার ১৯৭১ সালে যশোর শহর থেকে শেখহাটি হয়ে -ধানঘাটা যাই


মেহেদী হাসান, ১২/৯/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ  চতুর্থ সাক্ষী জবনাবন্দী দিয়েছেন। তার নাম আবুল হোসেন। বাড়ি যশোর।  জবানবন্দীতে সাক্ষী  বলেন, ১৯৬৮ সাল থেকে তিনি যশোরের নিউটাউনে বাস করতেন। সেখানে তাদের বাসার পাশে বাস করতেন মাওলানা সাঈদী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে   তাদের পরিবার, মাওলানা সাঈদী সাহেবের পরিবারসহ পাশপাশি মোট চারটি বাসার পরিবার একত্র হয়ে যশোরের   শেখহাটি  হয়ে ধানঘাট যান। সেখানে  সাত/আট দিন থাকার পর দুটি পরিবার ভারতে চলে যায় এবং মাওলানা সাঈদী বাঘারপাড়ার মহিরনে তার এক পীরের বাড়ি চলে যান।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের  বেশ কয়েকজন সাক্ষী  ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন মে মাসে  পিরোজপুরের পারেরহাটে পাক আর্মি আসলে মাওলানা সাঈদীসহ অন্যান্যরা তাদের অভ্যর্থনা জানায়। তার  আগে পারেরহাট শান্তি কমিটি এবং রাজাকার বাহিনী গঠনে মাওলানা সাঈদী ভূমিকা পালন করেন।

কিন্তু আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী জানালেন সাঈদী সাহেব তাদের সাথে ১৯৭১  সালের এপ্রিল মাসে যশোর শহর থেকে গ্রামের উদ্দেশে বের হয়েছেন  নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য।

জবানবন্দী :
আমার নাম মো: আবুল হোসেন। বয়স ৫৬ বছর।
আমি একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরী করি। ১৯৬৮ সাল হতে যশোর নিউ টাউন, ব্লক -এ, ১৮৫ নম্বর বাড়িতে বসবাস করে আসছি। ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ কালরাত্রে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে । যশোর সেনানিবাস থেকে গোলাগুলি শুরু হয়। ২৬, ২৭  ও ২৮ শে মার্চ ওখান থেকে নিয়মিত গোলাগুলি চলে। আমার বাড়ির পাশে ১৮৪ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতেন শহিদুল ইসলাম সাহেব। তিনি শেখহাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার পাশের বাসায় ১৮৩ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতেন একই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ( নাম মনে পড়ছেনা এখন) ।  ১৮২ নম্বর বাসায় বসবাস করতেন দেলওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব। যশোর শহর থেকে অনেক পরিবার ভয়ে শহর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাচ্ছিল। তখন আমাদের এই চার পরিবারের অভিভাবকরা আলোচনা করলেন যে, এখানে তো আর থাকা যায় না। আমরা ১৯৭১ সালের ৩ অথবা ৪ এপ্রিল তারিখে যশোর থেকে শেখহাটি চলে যাই। রাত্রে শেখহাটিতে অবস্থান করি। ওখান থেকে সকালে আমরা আরও ভিতরে পূর্বদিকে ধানঘাটা গ্রামে চলে গিয়ে অবস্থান নেই। সেখানে ১৮৩ নম্বর বাড়ির বাসিন্দার (তার নাম   মনে পড়ছে আবুল খায়ের) মামার বাড়িতে অবস্থান করি। সেখানে ৭/৮ দিন থাকার পরে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় যে, আমাদের পরিবার এবং শহিদুল ইসলামের পরিবার ভারতে চলে যাবে ।  আবুল খায়ের তিনি তার মামার বাড়ি ধানঘাটায় থেকে গেলেন । সাঈদী সাহেব ওখান থেকে ৮/৯ মাইল দূরে চলে গেলেন যশোরের বাঘারপাড়া থানাধীন মহিরন উনার এক পীর সাহেবের বাড়িতে। আমাদের পরিবার এবং শহিদুল ইসলামের পরিবার ভারতে চলে যাই। এরপর সাঈদী সাহেবের সংগে আমার আর যোগাযোগ হয় নাই।

জবানবন্দী গ্রহনে সাক্ষীকে সহায়তা করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মনজুর আহমদ  আনসারী। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী।

জেরা :
প্রশ্ন : জাতীয় পরিচয় পত্র এনেছেন সাথে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন  জাতীয় পরিচয়পত্র আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : পরিচয় পত্র ঢাকায় আনেননি না কোর্টে আনেননি  কোনটা?
উত্তর : ঢাকায় আনিনি যশোর থেকে। যশোর আছে।
প্রশ্ন : আপনি কি করেন?
উত্তর : একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করি।
প্রশ্ন :  কতদিন ধরে?
উত্তর : ১০/১২ বছর।
প্রশ্ন : ফার্মের নাম কি/.
উত্তর : স্কয়ার ইলেকট্রিক মাইকপট্টি যশোর।
প্রশ্ন : চাকরি করেন সে মর্মে কোন কাগজপত্র এনেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন :  আপনি যে এলাকায় বাস করেন সে মর্মে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার থেকে কোন কাগজপত্র এনেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি কি  হিসেবে চাকরি করেন দোকানে?
উত্তর : ম্যানেজার।
প্রশ্ন : সেখানে কতজন কর্মচারি আছে?
উত্তর : চার/পাঁচ জন।
প্রশ্ন : মালিকের নাম?
উত্তর : শহিদুল ইসলাম।
প্রশ্ন : তার বয়স?
উত্তর : ৩৬/৩৭ বছর।
প্রশ্ন : এখানে চাকরির আগে কি করতেন?
উত্তর : কিন্ডার  গার্টেন স্কুলে চাকরি করতাম। আমি একজন সঙ্গিত শিল্পী। গানবাজনারও শিক্ষক ছিলাম।
প্রশ্ন : লেখাপড়া?
উত্তর : যশোরে।
প্রশ্ন : লেখাপড়া সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র এনেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে আপনার পরিবারের অভিভাবক কে ছিলেন?
উত্তর : বাবা। ১৯৮৫ সালে তিনি মারা গেছেন।
প্রশ্ন : তিনি কি করতেন?


উত্তর : পুলিশ অফিসের হেড এসিসট্যান্ট ছিলেন।
প্রশ্ন : আপনারা কয় ভাইবোন?
উত্তর : নয় ভাই চার বোন।
প্রশ্ন : আপনি কত নম্বর?
উত্তর :  তিন।
প্রশ্ন : আপনার বড় দুই জন কি ভাই  না বোন?
উত্তর : ভাই।
প্রশ্ন : তারা ওই সময় কি করত?
উত্তর :  লেখাপড়া।
প্রশ্ন : আপনার লেখাপড়া কতদূর?
উত্তর : আমি ১৯৭২ সালে এসএসসি পাশ করি।
প্রশ্ন : ভারতে গিয়ে কি করলেন?
উত্তর : বনগা মাদ্রাসার  ক্যাম্পের পাশে থাকতাম।
প্রশ্ন : সবাই মিলে?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনার দাদার বাড়ি কোথায়?
উত্তর : ২৪ পরগান জেলার  বশিরহাট।
প্রশ্ন : আপনাদের ১৮৫ নং বাড়িটি কি সরকারি এলটের?
উত্তর : হ্যা। যারা এলট পেয়েছে তাদের কাছে আমরা কিনেছি।
প্রশ্ন : ১৮২, ১৮৩, ১৮৪ নম্বর বাড়িও সরকারি এলটেড?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এখানে যারা থাকত তাদের বেশিরভাগই ভারত থেকে এসেছে? তাদের জন্যই এ বাড়িগুলো করা হয়েছিল।
উত্তর :  হ্যা।
প্রশ্ন : ভারত থেকে কবে আসলেন?
উত্তর : স্বাধীনতার এক মাস পর। তার আগে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর আমার বাবা পরিবার নিয়ে এদেশে আসেন এবং তখন থেকে আমরা ওখানেই থাকি।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার পর  দেশে এসে  কি করলেন ?
উত্তর :  গানবজনার সাথে জড়িত হই।
প্রশ্ন : আকড়ায় যেতেন?
উত্তর : আমি আকড়ার শিল্পী নই। আমি রবীন্দ্র, নজরুল, আধুনিক এবং আঞ্চলিক গান করি।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেব তখন ছেলে মেয়ে নিয়ে ওই বাসায় থাকতেন?
উত্তর : তার দুই সন্তান, পরিবার এবং কাজের মেয়ে নিয়ে থাকতেন।
প্রশ্ন : তিনি কি করতেন?
উত্তর : ওয়াজ মাহফিল করতেন।
প্রশ্ন : তিনি তার দুই সন্তান, পরিবার এবং কাজের মেয়ে নিয়ে থাকার যে কথা বলেছেন তা সত্য নয়।
উত্তর : থাকতেন।
প্রশ্ন : আপনি জীবনে কত মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন?
উত্তর : এ ধরনের মামলায় আমি এই প্রথম সাক্ষ্য দিলাম। তবে আমি যেখানে চাকরি করি সে প্রতিষ্ঠানের মামলায় আমাকে প্রতি মাসে সাক্ষ্য দিতে হয়  বিভিন্ন কোর্টে।


প্রশ্ন : যে কিন্ডারগার্টেনে চাকরি করতেন সেটি এখন আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : সেটি কবে  হয় এবং কবে বন্ধ হয়?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : ছাত্রজীবনে কোন সংগঠন করতেন/
উত্তর : না।
প্রশ্ন যশোরে কি কি ছাত্রসংগঠন ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ধানগাটা থেকে কারা আগে গেল?
উত্তর : আমরা আগে ভারতে যাই। ওইদিনই সাঈদী সাহেবও চলে যান।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেব ওখান থেকে ৮/৯ মাইল দূরে যশোরের বাঘারপাড়া মহিরন চলে যান বলে যে কথা বলেছেন তা মিথ্যা বলেছেন আপনি।
উত্তর : ১০০ ভাগ সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেবের গ্রামের বাড়ি কোথায় জানেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের পূর্বে সাঈদী সাহেবের সাথে আপনার পরিচয় থাকা, পাশাপাশি বাড়িতে বাস করা, একত্রে পলায়ানের যে কথা বলেছেন তা  সত্য নয়।
উত্তর :  সত্য।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার কথা কে বলেছে আপনাকে?
উত্তর : ওনার শ্যালক নান্না মামা।
প্রশ্ন : ওনার সাথে আগে পরিচয় ছিল?
উত্তর : উনি এক বছর আগে আমাদের বাসায় গিয়ে আমার আব্বাকে খোঁজ করেন। তিনি মারা গেছেন জানার পর আমাকে অনুরোধ করেন সাক্ষ্য দেয়ার জন্য।
প্রশ্ন : আপনার পেশা হল সাক্ষ্য দেয়া। এদের দ্বারা আর্থিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে এবং প্রভাবিত হয়ে আপনি এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসলেন।
উত্তর :  আপনি  বলতে পারেন। তবে  তা সত্য নয়।




সুলতানা কামালের আজকের জেরা

মেহেদী হাসান 12/9/2012
আজ দ্বিতীয় দিনের মত সুলতানা কামালকে জেরা করা হয়। তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। সুলতানা কামাল গত সোমবার এবং মঙ্গলবার দুই দফা অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  মোট সাড়ে তিন ঘন্টা জবানবন্দী প্রদান করেন। জবানবন্দী শেষে মঙ্গলবার তার জেরা শুরু হয়। আজ  সকালে তাকে দ্বিতীয় দফা জেরা করা হয়।

প্রশ্ন : বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা গোলাম আযমসহ অন্যান্যরা মিলে করেছে বলে আপনি বলেছেন। কবে কোথায় এ ধরনের পরিকল্পনা হয়েছে বলতে পারবেন?
উত্তর : এটা বলা সম্ভব নয় কারণ জনগনকে জানিয়ে এ ধরনের পরিকল্পনা হয়না। আল বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন  মতিউর রহমান। তিনি জামায়াতের নেতা। আল বদর বাহিনী কর্তৃক এ ধরনের গুপ্ত হত্যার ব্যাপারে জামায়াতের আমীর হিসেবে তিনি এর দায় দায়িত্ব এড়াতে পারেননা। তার অনুমোদন এবং অনুমতি নিয়েই এসব হত্যাকান্ড হয়েছে।
প্রশ্ন : জামায়াতের কোন সভায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলতে পারবেন?
উত্তর : বলা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন : কবে গোলাম আযম বুদ্ধিজীবী হত্যার অনুমোদন দিয়েছেন  সে মর্মে আপনার কাছে কোন  প্রামান্য তথ্য আছে?
উত্তর : নাই।
প্রশ্ন : গোলাম আযম বুদ্ধিজীবী হত্যার অনুমোদন দিয়েছেন এ মর্মে কোন প্রামান্য তথ্য আছে আপনার কাছে?
উত্তর : নাই। একটি সংগঠনের প্রধান নেতা হিসেবে তার অনুমোদ ছাড়া  তার অধীন অন্য কোন নেতারা এটা করতে পারেনা। তিনি এজন্য কোন ডিসিপ্লিনারি ব্যবস্থা নেননি তার অধীনস্তের উপর। অতএব নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের কাজের দায়িত্ব দলের প্রধানের উপর বর্তায়।
প্রশ্ন :  শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল শামস জামায়াতের কোন অঙ্গ সঙ্গঠন কি-না।
প্রশ্ন : কাঠামোগতভাবে জামায়াতের অঙ্গসঙ্গঠন  বলে ধরে নেয়া যায়না। তবে এ সঙ্গঠনের প্রতিষ্ঠাতা, কর্মপ্রকৃয়ায় জামায়াতের ভূমিকাই মূখ্য ছিল।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান বা সদস্য সচিব জামায়াতের ছিল কি-না।
উত্তর : স্পস্ট ধারণা নেই। তবে শান্তি কমিটি গঠন, ঘোষনা বিষয়ে গোলাম আযমের মুখ থেকেই আমরা পত্রপত্রিকায় পড়েছি। তিনি শান্তি কমিটির মিছিলেও নেতৃত্ব দিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি গঠনের আহবান জানিয়ে গোলাম আযম কোন বিবৃতি দিয়েছেন এ মর্মে কোন পেপারকাটিং আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন?
উত্তর : পূর্বদেশ, আযাদ, এর ১৯৭১ সালের ৪ ও ৭ এপ্রিলের কাটিং দিয়েছি।
প্রশ্ন : আপনি যে মিছিলে গোলাম আযমের নেতৃত্ব দেয়ার কথা বলছেন সেই মিছিলে শান্তি কমিটির আহবায়ক বা সদস্য সচিব ছিল কি-না।
উত্তর : বলতে পারিনা কারণ তাদের আমি চিনিনা।
প্রশ্ন : পত্রিকা মারফত  জেনেছেন ওই মিছিলের কথা?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : সেখানে খবরসহ ছবি ছিল না শুধু ছবি ছিল?
উত্তর : আমি শুধু খবর পড়েছি।
প্রশ্ন : খবর পড়ার সময় আপনি কি শুধু গোলাম আযমের  নামের অংশটুকু পড়েছেন?
উত্তর : গোলাম আযমের নাম খোঁজার জন্য আমি পড়তামনা। খবর পড়ে তার নাম আসছে লক্ষ্য করতাম।
প্রশ্ন : ওই খবরে গোলাম আযম ছাড়া অন্য কারো নাম ছিলনা?
উত্তর : থাকতে পারে। মনে করতে পারছিনা।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির ক্ষমতা এককভাবে গোলাম আযমের ওপর ন্যস্ত ছিল?
উত্তর : ধারনা নেই।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির অধস্তন কেউ, বা  শান্তি  কমিটির কোন শাখা কোন অপরাধ  করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়ে গোলাম আযমের কাছে বিচার চেয়েছে মর্মে কোন তথ্য  আছে আপনার কাছে?
উত্তর : চোখে পড়েনি।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির অধস্তন কাউকে অপসারনের কোন ক্ষমতা গোলাম আযমের ছিল কি-না।
 উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : রাজাকার বা শান্তি কমিটির কোন সদস্যকে বরখাস্ত করার কোন ক্ষমতা গোলাম আযমের ছিলনা।
উত্তর :  আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের আমলে ৫০ টির মত মামলা হয়েছিল তা জানা আােছে?
উত্তর :  অনেক মামলা হয়েছিল। তবে সংখ্যা ৫০টি কি-না তা বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চোধুরীর হত্যা বিষয়ে তিনটি পৃথক মামলা হয়েছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : শহীদুল্লাহ কায়সার সাহেবকে হত্যা বিষয়ে যে মামলা হয় তাতে জামায়াতের একজনকে  আসামী করা হয় এবং তাকে আল বদর  সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয় তা জানা আছে?
উত্তর  : খালেক মজুমদার ছিল সে। 
প্রশ্ন :  এই মামলায় নিম্ন আদালতের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করা হয়। আপীলে খালেক মজুমদার খালাস পান। খালেক মজুমদার আল বদর  সদস্য  তা প্রমানে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে উচ্চ আদালতের  রায়ে তা উল্লেখ করা হয়েছিল। এ বিষয়টি জানেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এই তিনটি সহ যে ৫০টি মামলা হয়েছিল তার কোন মামলার এজাহারে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী বা অন্যকোনভাবে গোলাম আযমকে আসামী করা হয়নি তা জানেন?
উত্তর : এ মামলাগুলো এককভাবে হত্যা মামলা হিসেবে দায়ের করা হয়েছিল। আজকের আমার যে সাক্ষ্য তা কোন হত্যা মামলার প্রেক্ষিতে নয়। সামগ্রিকভাবে ১৯৭১ সালের গণহত্যর সময় গোলাম আযমের ভূমিকা নিয়ে।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ঘটনার অভিযোগে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালে দুটি মামলা হয়েছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে গনহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের কোন অভিযোগ ছিল কি-না।
উত্তর : কমপ্লিসিটি (সম্পৃক্ততার ) অভিযোগ ছিল।
প্রশ্ন : বুদ্ধিজীবী হত্যা বিষয়ে স্বাধীনতার পর  সরকারি পযায়ে একটি এবং বেসরকারি পর্যায়ে আরেকটি মোট দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। এটা স্মরন আছে?
উত্তর : আমার যতটুকু স্মরন আছে তা হল সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এ উদ্যোগের ফলে জনমতের চাপে ১৯৭৩ সালে বর্তমান আইনটি হয়েছিল।
প্রশ্ন : জহির রায়হান সাহেব বুদ্ধিজীবী হত্যা বিষয়ে একটি নাগরিক তদন্ত কমিটি  গঠন করেছিলেন।
উত্তর : তিনি অনেক কিছুই করেছিলেন। বুদ্ধিজীবী হত্যা রহস্য উৎঘাটনের জন্য একটি নাগরিক কমিটি করেছিলেন।
প্রশ্ন : এই কমিটির উল্লেখযোগ্য  দুয়েকজন সদস্যের নাম বলতে পারবেন?
উত্তর : এই কমিটির কারো নাম বলতে পারবনা। তবে শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার আমার মায়ের সাথে যোগাযোগ করতেন।
প্রশ্ন :  ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর মালেক মন্ত্রীসভার সদস্যরা আদালতে আত্মসপর্নের পর  পূর্ব পাকিস্তানের শেষ গভর্নর মালেক সাহেবের দালাল আইনে বিচার হয়।
উত্তর : বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। শেষ কি হয়েছিল জানা নেই।
প্রশ্ন : দালাল আইনের অধীনে বিচার না করে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী বিচারের আবেদন জানিয়েছিলেন মালেক সাহেব তা জানা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : দালাল আইনে মালেক সাহেবের বিচারের বিরোধীতা করে কেউ বিবৃতি দিয়েছিল কি-না মনে আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : শহীদুল হক মামাকে চেনেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ টেলিভিশনে রনাঙ্গনের দিনগুলি নামে একটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে জানেন?
উত্তর : জানি হচ্ছে। তবে দেখার সুযোগ পাইনি।
প্রশ্ন : ওই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নাসির উদ্দিন ইউসুফ সাহেবের সাথে পরিচয় আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করলেও মিরপুর ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি মুক্ত হয়।
 উত্তর : মিরপুরসহ বাংলাদেশের আরো কিছ এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী এবঙ তাদের দোসরদের দ্বারা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। পরে ধীরে ধীরে সেসব এলাকা মুক্ত হয়।
প্রশ্ন : মিরপুর মুক্ত হবার পর একজন অবাঙ্গালির দেয়া তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানের একজন প্রাক্তন মন্ত্রীর বাসা থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যার নথিপত্র উদ্ধার করা হয় তা জানেন?
উত্তর : এ ধরনের নথিপত্র পাওয়া গেছে জেনেছি তবে কার তথ্য মতে কার বাড়ি থেকে পাওয়া গেছে তা জানা নেই।
প্রশ্ন : অধ্যাপক  মুনির চৌধুরী পাকিস্তানের অখন্ডতা ও সংহতির পক্ষে ১৯৭১ সালে বিবৃতি দিয়েছিলেন জানা আছে?
উত্তর : অনেকের সাথে তিনিও বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছিলেন জানি।
প্রশ্ন : যখন বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ঘটে তখন গোলাম আযম দেশে ছিলেননা।
উত্তর : ১ ডিসেম্বর তিনি ইয়াহিয়া খানের সাথে বৈঠক করেছেন, সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন  মুক্তিবাহিনী নির্মূলের জন্য রাজাকাররাই যথেষ্ঠ।
প্রশ্ন : আপনি আপনার জবানবন্দীতে বলেছেন হিন্দ বৌদ্ধ খ্রিস্টনাদের জাতি হিসেবে নির্মূলের জন্য রাজাকারা যোগ দেয় পাক হানাদার বাহিনীর সাথে।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানে যে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয় তাতে পূর্ব পাকিস্তানের  যেখানে বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল সেখান থেকে চাকমা রাজা ত্রিবিদ রায় (বৌদ্ধ) এম এন এ (মেম্বার অব ন্যাশনাল এসেম্বেলি) নির্বাচিত হন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ওই সময় বৌদ্ধ ধর্মগুরু ছিলেন বিশুদ্ধা নন্দ মহাথেরো।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এ দুজন ব্যক্তি (বিশুদ্ধা নন্দ মহাথেরো এবং রাজা ত্রিবিদ রায়) ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অখন্ডতায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং তার পক্ষে কাজ করেছেন।
উত্তর : হ্যা।