বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

শাহরিয়ার কবিরকে জেরা/// ১৯৪৮ সালে ডাকসুর পক্ষে জিন্নাহকে প্রদত্ত মানপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক গোলাম আযম

৫/৯/২০১২
বুধবার  দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে শাহরিয়ার কবিরকে জেরার সময় প্রশ্ন করা হয় ১৯৪৮ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাকে ডাকসুর পক্ষে যে মানপত্র দেয়া হয় তাতে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা বাংলা করার দাবি করা হয়।  
শাহরিয়ার কবির জবাব দেন ‘হ্যাঁ’।
তারপর তাকে প্রশ্ন করা হয় ওই মানপত্র পাঠ করেন তৎকালিন ডাকসুর জিএস অধ্যাপক গোলাম আযম।
শাহরিয়ার কবির জবাব দেন ‘হ্যা’। পরে বলেন, বিশেষ কারণে তিনি মানপত্র পড়েছিলেন।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বুধবার তাকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।

বুধবারের জেরার উল্লেখযোগ্য অংশ:
প্রশ্ন: আয়ুব খান সরকারের সময় জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: আপনি জামায়াতে ইসলামীর জন্ম থেকে বর্তমান পর্যন্ত জামায়াতের বিষয়ে গবেষণা করছেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তান সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: এই মামলার আসামীর পিতার নাম বলতে পারবেন?
উত্তর: মনে নেই।
প্রশ্ন: তিনি প্রদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: মাওলানা আবদুর রহিম পূর্ব বাংলার জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: তিনি ৬৯ সাল পর্যন্ত আমির ছিলেন?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত মাওলানা আবদুর রহিম জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ছিলেন?
উত্তর: শীর্ষ নেতা ছিলেন।
প্রশ্ন: ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের দিন তিনি ঢাকায় ছিলেন?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: মাওলানা আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে দালালী আইনে কোন মামলা হয়নি?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্টে তার বিরুদ্ধে আভিযোগ আনা হয়নি? 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ’৭৯ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: তিনি ইসলামি ডেমোক্রেটিক লীগের সভাপতি?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ছয় দফায় ধর্মনিরোপেক্ষতা ছিল না। 
উত্তর: হ্যাঁ। প্রয়োজন ছিল না।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের কোন দাবি কোন দিন করেননি।
উত্তর: হ্যাঁ, ২৬ মার্চের আগে করেননি।
প্রশ্ন: ১৯৪৮ থেকে ’৭০ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক সরকারের অংশীদার ছিল না।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ১৯৫৬ সালে সংবিধান রচনার মাধ্যমে পাকিস্তানকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়? 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: সোহরাওয়াদী বা শেখ মুজিবুর রহমান কেউই মওদূদী বা তার দল জামায়াতের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে হয়ে রাজনীতি করতেন না। 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ভষা আন্দোলনের বিরোধীতা করে জামায়াত কখনো  কোন দিন বিবৃতি প্রদান করেনি। 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ১৯৪৮ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাকে ডাকসুর পক্ষে যে মানপত্র দেয়া হয় তাতে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা বাংলা করার দাবি করা হয়।  
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ওই মানপত্র পাঠ করেন তৎকালিন ডাকসুর জিএস অধ্যাপক গোলাম আযম।
উত্তর: হ্যাঁ। পরে বলেন, বিশেষ কারণে তিনি মানপত্র পড়েছিলেন।
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলনে যুক্ত থাকা ভুল ছিল বলে গোলাম আযম সম্পার্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে কোন অডিও রেকর্ড আছে?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: গোলাম আযম কোথায় এ বক্তব্য দিয়েছিলেন?
উত্তর: এটা বদরুদ্দিন উমরের বই পড়ে বলতে হবে।
প্রশ্ন: এ বিষয়ে সংবাদপত্রে কি খবর প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তর: যত দূর মনে পড়ে বদরুদ্দিন উমর দৈনিক আযদের উদ্বৃতি দিয়েছেন।
প্রশ্ন: যে সংবাদের উদ্বিৃতি দিয়েছেন তা ’৭১এর আগে না পরে?
উত্তর: আগের ।
প্রশ্ন: উদ্বিৃতিতে সংবাদদাতার নাম আছে?
উত্তর: বই দেখে বলতে হবে।
প্রশ্ন: ওই বইটির নাম কি?
উত্তর: এ মুহুর্তে মনে নেই।
প্রশ্ন: অধ্যাপক গোলাম আযম ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা ভুল ছিল মর্মে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন মর্মে আপনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা জামায়াতে ইসলামির আদর্শের বিরোধী ব্যক্তি হিসেবে জামায়াত ও ওই দলের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আপনার ও আপনার সংগঠনের যে ধারাবাহিক অসত্য ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন তারই অংশ।   
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে পরিবর্তন করার জন্য কোন বিবৃতি দেননি বা আন্দোলন করেননি। 
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: আপনি ও আপনার সংগঠন জামায়াতে ইসলামি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার জন্য আন্দোলন করেছেন?  
উত্তর: ধর্ম একটি পবিত্র বিষয় ধর্মকে রাজনীতির ভেতর টেনে এনে কলুষিত করা উচিত নয়।
প্রশ্ন: জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত না করার জন্য আপনি ও আপনার সংগঠন নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন? 
উত্তর: জামায়াতকে নিবন্ধিত না করার জন্য ইসিকে আহ্বান জানিয়েছি। কারণ জামায়াত বাংলাদেশের সংবিধান মানে না।
প্রশ্ন: ১৯৯১, ’৯৬, ’০১ ও ’০৮ সালে জামায়াতে ইসলামি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংবিধান অনুযায়ী শপথ নিয়েছেন?
উত্তর: এটা জামায়াতের শঠতা।
প্রশ্ন: ২০০১ সালে জামায়াতের আমি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহম্মাদ মুজাহিদ মন্ত্রী হয়েছিলেন এবং তারা সংবিধান বিরোধী কোন কাজ করেন নাই।
উত্তর: মন্ত্রী হয়েছিলেন। তবে তারা সংবিধান মেনে কাজ করেছেন বলে আমি মনে করি না। সংবিধান লঙ্ঘন করে আমাকে গ্রেফতার করেছে।
প্রশ্ন: মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বা আলী আহসান মুহম্মাদ মুজাহিদ কি ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: নিজামী বা মুজাহিদ আপনার বিরুদ্ধে মামলাকারী ছিলেন কি?
উত্তর: না। তবে জোট সরকারের দায় এই দুই মন্ত্রীকেও নিতে হবে।
প্রশ্ন: ২০০১ সালের জোট সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীরাও কি সংবিধান লঙ্ঘন করেছিলেন?
উত্তর: না। জামায়াত যে অর্থে সংবিধান বিরোধী বিএনপি সে অর্থে সংবিধান বিরোধী নয়।

বুধবার  জেরার সময় শাহিরয়ার কবির আইনজীবীর  প্রশ্নকে ‘স্টুপিড কোশ্চেন’ বলায় ট্রাইব্যুনাল-২  তীব্র উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মিজানুল ইসলাম জেরায়  সাক্ষী শাহরিয়ার কবির প্রশ্ন করেন, অধ্যাপক গোলাম আযম ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা ভুল ছিল মর্মে বক্তব্য দিয়েছেন বলে আপনি যে কথা বলেছেন এর  সমর্থনে আপনার কাছে কোন অডিও বা ভিডিও আছে কি? শাহরিয়ার কবরি বলেন, এটা একটা স্টুপিড কোশচেন। এসময় ডিফেন্স কাউন্সেল মিজানুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবীরসহ উপস্থিত আইনজীবীরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদলও ডিফেন্স আইনজীবীদের বক্তব্যের বিরোধীতা করে বক্তব্য দিতে থাকেন। এতে আদালতের পরিবেশ কিছু সময়ের জন্য উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। 
আইনজীবী মিজানুল ইসলাম শাহরিয়ার কবিরের মন্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেন, এটা কোর্ট ল্যাঙ্গয়েজ নয়। আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে সাক্ষী অপমানজনক উক্তি করতে পারে না। আইনজীবীরা আদালতে অভিযোগ করেন, সাক্ষী আইনজীবীকে লক্ষ্য করে স্টুপিড বলেছেন। এসময় বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, তিনি (সাক্ষী) বলেছেন ‘স্টুপিড কোশ্চেন । এসময় ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর শাহরিয়ার কবিরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই মন্তব্য করার কারণে আপনার দুঃখ প্রকাশ করা উচিৎ। এতে আদালতের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এরপর শাহরিয়ার কবির তার মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপর ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবীর আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সাক্ষী আগে বলেছেন ভাষা ঠিক হচ্ছে না, আবার এখন তিনি বলছেন, স্টুপিড কোশচেন, এটা কি? এসময় বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন