বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সুলতানা কামালের আজকের জেরা

মেহেদী হাসান 12/9/2012
আজ দ্বিতীয় দিনের মত সুলতানা কামালকে জেরা করা হয়। তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। সুলতানা কামাল গত সোমবার এবং মঙ্গলবার দুই দফা অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  মোট সাড়ে তিন ঘন্টা জবানবন্দী প্রদান করেন। জবানবন্দী শেষে মঙ্গলবার তার জেরা শুরু হয়। আজ  সকালে তাকে দ্বিতীয় দফা জেরা করা হয়।

প্রশ্ন : বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা গোলাম আযমসহ অন্যান্যরা মিলে করেছে বলে আপনি বলেছেন। কবে কোথায় এ ধরনের পরিকল্পনা হয়েছে বলতে পারবেন?
উত্তর : এটা বলা সম্ভব নয় কারণ জনগনকে জানিয়ে এ ধরনের পরিকল্পনা হয়না। আল বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন  মতিউর রহমান। তিনি জামায়াতের নেতা। আল বদর বাহিনী কর্তৃক এ ধরনের গুপ্ত হত্যার ব্যাপারে জামায়াতের আমীর হিসেবে তিনি এর দায় দায়িত্ব এড়াতে পারেননা। তার অনুমোদন এবং অনুমতি নিয়েই এসব হত্যাকান্ড হয়েছে।
প্রশ্ন : জামায়াতের কোন সভায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলতে পারবেন?
উত্তর : বলা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন : কবে গোলাম আযম বুদ্ধিজীবী হত্যার অনুমোদন দিয়েছেন  সে মর্মে আপনার কাছে কোন  প্রামান্য তথ্য আছে?
উত্তর : নাই।
প্রশ্ন : গোলাম আযম বুদ্ধিজীবী হত্যার অনুমোদন দিয়েছেন এ মর্মে কোন প্রামান্য তথ্য আছে আপনার কাছে?
উত্তর : নাই। একটি সংগঠনের প্রধান নেতা হিসেবে তার অনুমোদ ছাড়া  তার অধীন অন্য কোন নেতারা এটা করতে পারেনা। তিনি এজন্য কোন ডিসিপ্লিনারি ব্যবস্থা নেননি তার অধীনস্তের উপর। অতএব নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের কাজের দায়িত্ব দলের প্রধানের উপর বর্তায়।
প্রশ্ন :  শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল শামস জামায়াতের কোন অঙ্গ সঙ্গঠন কি-না।
প্রশ্ন : কাঠামোগতভাবে জামায়াতের অঙ্গসঙ্গঠন  বলে ধরে নেয়া যায়না। তবে এ সঙ্গঠনের প্রতিষ্ঠাতা, কর্মপ্রকৃয়ায় জামায়াতের ভূমিকাই মূখ্য ছিল।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান বা সদস্য সচিব জামায়াতের ছিল কি-না।
উত্তর : স্পস্ট ধারণা নেই। তবে শান্তি কমিটি গঠন, ঘোষনা বিষয়ে গোলাম আযমের মুখ থেকেই আমরা পত্রপত্রিকায় পড়েছি। তিনি শান্তি কমিটির মিছিলেও নেতৃত্ব দিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি গঠনের আহবান জানিয়ে গোলাম আযম কোন বিবৃতি দিয়েছেন এ মর্মে কোন পেপারকাটিং আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন?
উত্তর : পূর্বদেশ, আযাদ, এর ১৯৭১ সালের ৪ ও ৭ এপ্রিলের কাটিং দিয়েছি।
প্রশ্ন : আপনি যে মিছিলে গোলাম আযমের নেতৃত্ব দেয়ার কথা বলছেন সেই মিছিলে শান্তি কমিটির আহবায়ক বা সদস্য সচিব ছিল কি-না।
উত্তর : বলতে পারিনা কারণ তাদের আমি চিনিনা।
প্রশ্ন : পত্রিকা মারফত  জেনেছেন ওই মিছিলের কথা?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : সেখানে খবরসহ ছবি ছিল না শুধু ছবি ছিল?
উত্তর : আমি শুধু খবর পড়েছি।
প্রশ্ন : খবর পড়ার সময় আপনি কি শুধু গোলাম আযমের  নামের অংশটুকু পড়েছেন?
উত্তর : গোলাম আযমের নাম খোঁজার জন্য আমি পড়তামনা। খবর পড়ে তার নাম আসছে লক্ষ্য করতাম।
প্রশ্ন : ওই খবরে গোলাম আযম ছাড়া অন্য কারো নাম ছিলনা?
উত্তর : থাকতে পারে। মনে করতে পারছিনা।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির ক্ষমতা এককভাবে গোলাম আযমের ওপর ন্যস্ত ছিল?
উত্তর : ধারনা নেই।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির অধস্তন কেউ, বা  শান্তি  কমিটির কোন শাখা কোন অপরাধ  করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়ে গোলাম আযমের কাছে বিচার চেয়েছে মর্মে কোন তথ্য  আছে আপনার কাছে?
উত্তর : চোখে পড়েনি।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির অধস্তন কাউকে অপসারনের কোন ক্ষমতা গোলাম আযমের ছিল কি-না।
 উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : রাজাকার বা শান্তি কমিটির কোন সদস্যকে বরখাস্ত করার কোন ক্ষমতা গোলাম আযমের ছিলনা।
উত্তর :  আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের আমলে ৫০ টির মত মামলা হয়েছিল তা জানা আােছে?
উত্তর :  অনেক মামলা হয়েছিল। তবে সংখ্যা ৫০টি কি-না তা বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চোধুরীর হত্যা বিষয়ে তিনটি পৃথক মামলা হয়েছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : শহীদুল্লাহ কায়সার সাহেবকে হত্যা বিষয়ে যে মামলা হয় তাতে জামায়াতের একজনকে  আসামী করা হয় এবং তাকে আল বদর  সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয় তা জানা আছে?
উত্তর  : খালেক মজুমদার ছিল সে। 
প্রশ্ন :  এই মামলায় নিম্ন আদালতের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করা হয়। আপীলে খালেক মজুমদার খালাস পান। খালেক মজুমদার আল বদর  সদস্য  তা প্রমানে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে উচ্চ আদালতের  রায়ে তা উল্লেখ করা হয়েছিল। এ বিষয়টি জানেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এই তিনটি সহ যে ৫০টি মামলা হয়েছিল তার কোন মামলার এজাহারে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী বা অন্যকোনভাবে গোলাম আযমকে আসামী করা হয়নি তা জানেন?
উত্তর : এ মামলাগুলো এককভাবে হত্যা মামলা হিসেবে দায়ের করা হয়েছিল। আজকের আমার যে সাক্ষ্য তা কোন হত্যা মামলার প্রেক্ষিতে নয়। সামগ্রিকভাবে ১৯৭১ সালের গণহত্যর সময় গোলাম আযমের ভূমিকা নিয়ে।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ঘটনার অভিযোগে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালে দুটি মামলা হয়েছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে গনহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের কোন অভিযোগ ছিল কি-না।
উত্তর : কমপ্লিসিটি (সম্পৃক্ততার ) অভিযোগ ছিল।
প্রশ্ন : বুদ্ধিজীবী হত্যা বিষয়ে স্বাধীনতার পর  সরকারি পযায়ে একটি এবং বেসরকারি পর্যায়ে আরেকটি মোট দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। এটা স্মরন আছে?
উত্তর : আমার যতটুকু স্মরন আছে তা হল সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এ উদ্যোগের ফলে জনমতের চাপে ১৯৭৩ সালে বর্তমান আইনটি হয়েছিল।
প্রশ্ন : জহির রায়হান সাহেব বুদ্ধিজীবী হত্যা বিষয়ে একটি নাগরিক তদন্ত কমিটি  গঠন করেছিলেন।
উত্তর : তিনি অনেক কিছুই করেছিলেন। বুদ্ধিজীবী হত্যা রহস্য উৎঘাটনের জন্য একটি নাগরিক কমিটি করেছিলেন।
প্রশ্ন : এই কমিটির উল্লেখযোগ্য  দুয়েকজন সদস্যের নাম বলতে পারবেন?
উত্তর : এই কমিটির কারো নাম বলতে পারবনা। তবে শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার আমার মায়ের সাথে যোগাযোগ করতেন।
প্রশ্ন :  ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর মালেক মন্ত্রীসভার সদস্যরা আদালতে আত্মসপর্নের পর  পূর্ব পাকিস্তানের শেষ গভর্নর মালেক সাহেবের দালাল আইনে বিচার হয়।
উত্তর : বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। শেষ কি হয়েছিল জানা নেই।
প্রশ্ন : দালাল আইনের অধীনে বিচার না করে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী বিচারের আবেদন জানিয়েছিলেন মালেক সাহেব তা জানা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : দালাল আইনে মালেক সাহেবের বিচারের বিরোধীতা করে কেউ বিবৃতি দিয়েছিল কি-না মনে আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : শহীদুল হক মামাকে চেনেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ টেলিভিশনে রনাঙ্গনের দিনগুলি নামে একটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে জানেন?
উত্তর : জানি হচ্ছে। তবে দেখার সুযোগ পাইনি।
প্রশ্ন : ওই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নাসির উদ্দিন ইউসুফ সাহেবের সাথে পরিচয় আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করলেও মিরপুর ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি মুক্ত হয়।
 উত্তর : মিরপুরসহ বাংলাদেশের আরো কিছ এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী এবঙ তাদের দোসরদের দ্বারা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। পরে ধীরে ধীরে সেসব এলাকা মুক্ত হয়।
প্রশ্ন : মিরপুর মুক্ত হবার পর একজন অবাঙ্গালির দেয়া তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানের একজন প্রাক্তন মন্ত্রীর বাসা থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যার নথিপত্র উদ্ধার করা হয় তা জানেন?
উত্তর : এ ধরনের নথিপত্র পাওয়া গেছে জেনেছি তবে কার তথ্য মতে কার বাড়ি থেকে পাওয়া গেছে তা জানা নেই।
প্রশ্ন : অধ্যাপক  মুনির চৌধুরী পাকিস্তানের অখন্ডতা ও সংহতির পক্ষে ১৯৭১ সালে বিবৃতি দিয়েছিলেন জানা আছে?
উত্তর : অনেকের সাথে তিনিও বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছিলেন জানি।
প্রশ্ন : যখন বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ঘটে তখন গোলাম আযম দেশে ছিলেননা।
উত্তর : ১ ডিসেম্বর তিনি ইয়াহিয়া খানের সাথে বৈঠক করেছেন, সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন  মুক্তিবাহিনী নির্মূলের জন্য রাজাকাররাই যথেষ্ঠ।
প্রশ্ন : আপনি আপনার জবানবন্দীতে বলেছেন হিন্দ বৌদ্ধ খ্রিস্টনাদের জাতি হিসেবে নির্মূলের জন্য রাজাকারা যোগ দেয় পাক হানাদার বাহিনীর সাথে।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানে যে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয় তাতে পূর্ব পাকিস্তানের  যেখানে বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল সেখান থেকে চাকমা রাজা ত্রিবিদ রায় (বৌদ্ধ) এম এন এ (মেম্বার অব ন্যাশনাল এসেম্বেলি) নির্বাচিত হন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ওই সময় বৌদ্ধ ধর্মগুরু ছিলেন বিশুদ্ধা নন্দ মহাথেরো।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এ দুজন ব্যক্তি (বিশুদ্ধা নন্দ মহাথেরো এবং রাজা ত্রিবিদ রায়) ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অখন্ডতায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং তার পক্ষে কাজ করেছেন।
উত্তর : হ্যা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন