বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ওরা বলেছিল সাঈদী পারেরহাটে চট বিছিয়ে তেল নুন সাবান মরিচ বিক্রি করত

মেহেদী হাসান, ৬/৯/২০১২
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের   বেশ কয়েকজন সাক্ষী   ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছিলেন , স্বাধীনতা যুদ্ধের  আগে থেকে মাওলানা সাঈদী পারেরহাট বাজারে চট বিছিয়ে তেল, নুন, সাবান, মরিচ বিক্রি করত। এমনকি লঞ্চে ফেরি করে আবে হায়াত নামে দাতের মাজন বিক্রি করত। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি প্রথমে যশোরে পালিয়ে  গিয়ে আত্মগোপন করেন। পরবর্তীতে সেখানে তার অবস্থান জানাজানি হলে সেখান থেকেও  তিনি অন্যত্র পালিয়ে যান।  দীর্ঘদিন  পালিয়ে থাকার পর  নাম পরিবর্তন করে ভুয়া মাওলানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।

কিন্তু আজ  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে দ্বিতীয় সাক্ষীর জেরায়  সম্পূর্ণ  ভিন্ন তথ্য  বের হয়ে এসেছে। জেরায় সাক্ষী আব্দুর রাজ্জাক জানান,  ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে  মাওলানা সাঈদী এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করতেন। স্বাধীনতার এক বছর পরও তিনি এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করেছেন।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে দ্বিতীয় সাক্ষী আব্দুর রাজ্জাক আঁকনের জেরা আজ শেষ  হয়েছে। আব্দুর রাজ্জাককে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী। জেরায়  সাক্ষীকে প্রশ্ন করা হয় “সাঈদী সাহেব মুক্তিযুদ্ধের আগে কি করতেন  তা জানেন?” সাক্ষী বলেন,   “মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মাহফিল করতেন।”
কোথায় মাহফিল করতেন?
আমাদের গ্রামে দিঘির পাড় নামক এক মাঠ আছে সেই মাঠে তার মাহফিল আমি শুনেছি ।
এবং সেটা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে।
যুদ্ধের পর  এলাকায় তিনি  মাহফিল করেছেন?
করেছেন।
কবে করেছে বলতে পারবেন?
যুদ্ধের এক বছর পরে তিনি মাহফিল করেছেন।

জেরা:
প্রশ্ন : আপনি সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসছেন বলেছেন। সাঈদী সাহেবের সাথে আপনার পরিচয় কবে থেকে?
উত্তর : স্বাধীনতার দেড়/দুই বৎসর আগে থেকে।
প্রশ্ন : যে নান্না মিয়া (মাওলানা সাঈদীর শ্যালক) আপনাকে নিয়ে এসেছে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তার সাথে পরিচয় কবে থেকে?
উত্তর :  ১৫/২০ বৎসর পূর্ব থেকে।

প্রশ্ন : সাঈদী সাহেবের বাড়িতে আপননার যাওয়া আসা ছিল বা সাঈদী সাহেব আপনার বাড়িতে যাওয়া আসা করত?
উত্তর : সাঈদী সাহেবের বাড়িতে আমার যাওয়া আসা ছিলনা  এবং সাঈদী সাহেবও আমার বাড়িতে যাওয় আসা করতেন না।
প্রশ্ন : নান্না মিয়ার বাড়িতে যাওয়া আসা ছিল আপনার?
উত্তর : নান্না মিয়ার পিতা ইউনুস মুন্সির পাড়েরহাট বাজারে কাটা কাপড়ের দোকান ছিল। সেই দোকানে আমরা কাপড় চোপড় সেলাই করতাম সেই হিসাবে পরিচয়।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেব মুক্তিযুদ্ধের আগে কি করতেন জানেন?
উত্তর :  মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মাহফিল করতেন।
প্রশ্ন : কোথায় মাহফিল করতেন?
উত্তর : আমাদের গ্রামে দিঘির পাড় নামক এক মাঠ আছে সেই মাঠে তার মাহফিল আমি শুনেছি ।
এবং সেটা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে।
প্রশ্ন : যুদ্ধের পর  এলাকায় তিনি  মাহফিল করেছেন?
উত্তর :  করেছেন।
প্রশ্ন : কবে করেছে বলতে পারবেন?
উত্তর : যুদ্ধের এক বছর পরে তিনি মাহফিল করেছেন।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেব গ্রেফতার হয়েছে এরকম কিছু শুনেছেন?
উত্তর : এখন গ্রেফতার হয়েছে শুনেছি।
প্রশ্ন : এখনকার নয়, এর আগে গ্রেফতার হওয়ার কথা শুনেছেন?
উত্তর :   আগে কখনও গ্রেফতার হয়েছেন কিনা তা আমি শুনি নাই।
প্রশ্ন :  মুক্তিযুদ্ধের পরে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ শুনেছেন?
উত্তর : শুনি নাই। অভিযোগ হয় নাই।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেবের কি কি সম্পত্তি আছে তা জানেন?
উত্তর :  তা কি করে জানব?
প্রশ্ন :  তার ছেলেরা কে কি লেখাপড়া করেছে তা জানেন?
উত্তর :  সঠিক জানি না।
প্রশ্ন :  কুট্রির লাশ নৌকায় কে তুলেছিল তা দেখেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি এবং আপনার ভাগনে বাবুলের বিরুদ্ধে এক মহিলা মামলা করেছিল?
উত্তর :  হ্যা।  বাবুলকে ঐ মহিলার ছেলে কোপাইছিল।  তখন সেই ঘটনার জন্য আমি আমার ভাগনের পক্ষ হয়ে মহিলার বিরুদ্ধে মামলা করি। সেই  কারনে  ঐ মহিলা আমাদের দু জনকে আসামী করে মামলাটি করেছিল কাউন্টার হিসেবে। 
প্রশ্ন : বাবুলদের পৈত্রিক সম্পত্তি তারা কি ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে?
উত্তর : বাহাদুর অনেক সম্পত্তির মালিক এবং মধু এখনও বিবাহ করে নাই সে কারণে ভাগ বাটোয়ারা হয় নাই।
প্রশ্ন : ওই মহিলা যে মামলা করেছে সেখানে আপনার এবং আপনার ভাগনের বয়সের ব্যবধান দেখানো হয়েছে মাত্র দুই বছর।
উত্তর : সেখানে কার বয়স কি দেখানো হয়েছে বা না হয়েছে তা আমি জানিনা।
প্রশ্ন : আপনি সাঈদী সাহেবের  পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন। আপনি আসলে সাঈদী সাহেব সম্পর্কে কিছুই জানেননা।
উত্তর : ইয়েস । জানি।

প্রশ্ন : তখন গিয়ে দেখি উত্তর দিক থেকে সামনের খাল দিয়ে নৌকায় করে ইব্রাহিম কুট্টির লাশ নিয়ে পাড়ের হাটের দিকে আসতেছে। নৌকায় কালাম চৌকিদার, আইয়ুব আলী চৌকিদার এবং হাকিম মুন্সি দেখি। এরপর দেখি আরও কয়েকজন লোক খালের পাড় দিয়ে উত্তর দিক থেকে আসতেছে। যে সব লোক আসতেছে তাদের মধ্যে দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, রুহুল আমিন, মোমিনা রাজাকার ছিল। আরও দেখি যে, উক্ত লোকেরা আজু হাওলাদারের বৌ এবং তার ছেলে সাহেব আলীকে বেঁধে নিয়ে আসতেছে এবং পাড়েরহাটের দিকে নিয়া যাচ্ছে। তারপর দিন শুনি আজু হাওলাদারের বৌ বাড়িতে আসে এবং সাহেব আলীকে পিরোজপুরে নিয়ে পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে । আপনার এই কথাগুলি সত্য নয়। মিথ্যা বলেছেন।
উত্তর : আমি সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার কিছু দিন পরে শুনেছি যে, ইব্রাহিম কুট্টির বৌ একটি মামলা করেছে। আপনার এ কথাও সত্য নয়।
উত্তর : সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার ভাগ্নে আব্দুল হালিম বাবুলের বাড়িতে কোন পাক সেনা এবং রাজাকার যায় নাই, লুট  হয় নাই, আগুন দেয় নাই এবং এরকম কোন ঘটনাই ঘটে নাই- আপনার এ কথাগুলিও সত্য নয়।
প্রশ্ন : আমি সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : বাবুলের বাড়ি, খসরু মিয়ার বাড়ি, আমির খাঁর বাড়ি একই দিনে রাজাকাররা পুড়িয়ে দেয়। একথা জানা সত্ত্বেও সেটা গোপন করে আপনি  অসত্য সাক্ষ্য দিয়েছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন :  সাঈদী সাহেবের আত্মীয় স্বজনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আপনি  সাঈদী সাহেবকে রক্ষা করার জন্য এই মামলায় অসত্য সাক্ষ্য দিয়েছেন।
উত্তর : সত্য নয়।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীকে পরিচালনা করেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভেকেট তাজুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম,  গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।  আগামী রোববার মাওলানা সাঈদীর পক্ষে তৃতীয় সাক্ষী হাজিরের কথা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক  বিচার কার্যক্রমে অংশ নেন। 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন