মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

জেরায় মিছবাহুর রহমান চৌধুরী : জামায়াতের দুটি গঠনতন্ত্র ছিল একিট রুকনদের আরেকটি আম জনতার


জেরায় মিছবাহুর রহমান চৌধুরী :
জামায়াতের দুটি গঠনতন্ত্র ছিল একিট রুকনদের আরেকটি আম জনতার


৩/৯/২০১২
মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর জেরা চলছে। গতকাল ৩/৯/২০১২  জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর দু’টি গঠনতন্ত্র ছিল।  একটি রুকনরা পাঠ করত। আরেকটি  ছিল আম জনতার জন্য। আমি আম জনতার গঠনতন্ত্র দেখেছি। যেহেতু আমি জামায়াতের  রুকন ছিলাম না, সেহেতু আমি অপরটি দেখি নাই।

জেরায় অপর এক প্রশ্নের জবাবে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য আরেকটি ভিন্ন নামে ছাত্র সংগঠন ছিল। তিনি বলেন,
নিখিল পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ইসলামী ছাত্রসংঘ বলতে প্রকৃতপক্ষে কোন ছাত্র সংগঠন ছিল না। পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘ বলতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ভিত্তিক একটি ছাত্র সংগঠন ছিল এবং তার কার্যক্রম কেবল মাত্র তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ ছিল।

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাকে জেরা করেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, জামায়াতের কখনো দুটি গঠন তন্ত্রও ছিলনা এবং দুই পাকিস্তানে দুটি ভিন্ন নামে দুটি ছাত্রসংগঠনও ছিলনা।   একটিই ছাত্রসংগঠন ছিল।

বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী গত ২৬ আগস্ট মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিনে। সেদিন তার জেরা শুরু হয়। গতকাল দেড়ঘন্টা তার জেরা চলে।
জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন  অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট  গিয়াসউদ্দিন  আহমেদ মিঠু, অ্যাডভোকেট শাহজাহান কবীর, অ্যাডভোকেট আমিনুল হক, হাসানুল বান্না সোহাগ প্রমুখ।

জেরা :
প্রশ্ন : ইসলামী ছাত্রসংঘ পাকিস্তানে কোন সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : পূর্ব পাকিস্তানে কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কে?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘ প্রথম সভাপতি কে ?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : ইসলামী ছাত্রসংঘ সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে ধারণা আছে?
উত্তর : কিছুটা।
প্রশ্ন : ১৯৬৫ সালে আপনি যখন ছাত্রসংঘে যোগ দেন তখন পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানে এর সভাপতি এবং সেক্রেটারি  কারা ছিলেন?
উত্তর : নিখিল পাকিস্তান সভাপতি সেক্রেটারি কে ছিলেন বলতে পারবনা। পূর্ব পাকিস্তান সভাপতি ছিলেন ইউনুস সাহেব। সম্পাদক মতিউর রহমান নিজামী।
প্রশ্ন : ইউনুস সাহেবের পরে কে সভাপতি হন?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : নিজামী সাহেব কতদিন পর্যন্ত সাধারন সম্পাদক ছিলেন?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : নিজামী সাহেব মাধ্যমিক লেখাপড়া কোথায় করেন জানা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তিনি কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন?
উত্তর : কলেজের  কথা জানা নেই। তবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন জানি।
প্রশ্ন : আপনি ১৯৬৯, ১৯৭০ সালে ধানমন্ডিতে ছিলেন এবং সেন্ট্রাল স্কুলে পড়েছেন। ১৯৬৯ সালে ছাত্রসংঘের ঢাকা মহানগর সভাপতি কে  ছিলেন
উত্তর :  আবদুল মালেক।
প্রশ্ন : সেক্রেটারী কে ছিলেন ?
উত্তর : আমার মনে নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭০ এবং ১৯৭১ সালে ঢাকা মহানগরীর ছাত্র সংঘের সভাপতি বা সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : ১৯৬৯, ১৯৭০ এবং ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংঘের সভাপতি বা সম্পাদক কে ছিলেন ?
উত্তর :  বলতে পারব না।
প্রশ্ন : ১৯৬৯, ১৯৭০ সালে স্কুল সপ্তাহে একদিন বন্ধ থাকতো এবং তা শুক্রবার?
উত্তর : আমার স্কুল শুক্রবারে বন্ধ থাকত না।
প্রশ্ন : আপনি নিয়মিত কাস করতেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন :  ১৯৬৯ সালে ঢাকায় আপনার বাসা থেকে মৌলভীবাজার বাসায় যেতে কতক্ষন লাগত?
উত্তর :  রাত ৮টায় কমলাপুর থেকে ট্রেনে চড়লে ভোর বেলা বা ফজরের সময় শ্রীমঙ্গলে পৌঁছাতাম।
প্রশ্ন : শাহীন ফৌজের অনুষ্ঠান স্কুলে হত?
উত্তর : শাহীন ফৌজের কোন অনুষ্ঠান কোন দিন স্কুলে হয়নি।
প্রশ্ন : আপনি কবে শাহীন ফৌজের মৌলভীবাজার সভাপতি হন?
উত্তর :  ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে
প্রশ্ন : আপনার আগে কে সভাপতি ছিল?
উত্তর : আমার আগে কোন সভাপতি ছিল না, একজন আহবায়ক ছিল, নাম ছিল ইসহাক সাহেব।
প্রশ্ন : ইসহাক সাহেব জীবিত আছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনার পরে  কে সভাপতি হয়েছিল?
উত্তর :  আমি সে খোজ রাখি নাই।
প্রশ্ন : আপনার অধীনে সাধারন সম্পাদক কে ছিল?
উত্তর : ছিলেন নূরুল ইসলাম পারভেজ। তিনি জীবিত আছেন।
প্রশ্ন : নূরুল ইসলাম সাহেব সেক্রেটারী থাকা অবস্থায় কোথায় পড়তেন?
উত্তর : মৌলভীবাজার সরকারী স্কুলে ।
প্রশ্ন :  জাহানে নও নামে ঐ সময় একটি পত্রিকা চালু ছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : মাওলানা আবদুর রহিম সাহেব ঐ পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন।
উত্তর :  তা আমার মনে নেই।
প্রশ্ন : সংগ্রাম পত্রিকা সর্ব প্রথম  কবে পড়েন?
উত্তর : ১৯৬৯ সালে ।
প্রশ্ন : ওই পত্রিকার ত:খন  সম্পাদক কে  ছিলেন ?
উত্তর : আখতার ফারুক সাহেব।
প্রশ্ন : দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় মাসের শেষ শুক্রবারে একটি পাতায় শাহীন ফৌজের খবরাখবর প্রকাশিত হত।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : উল্লেখিত পাতাটি সম্পাদনা বা পরিচালনা কে করতেন মনে আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি মৌলভীবাজারের সভাপতি থাকা অবস্থায় আপনার সভাপিত্বে অনুষ্ঠিত শাহীন ফৌজের কোন খবর সংগ্রামের শাহীন পাতায় ছাপা হয়েছিল?
উত্তর :  ১৯৭০ সালে ২/৩টি সংখ্যায় আমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শাহীন ফৌজের খবরাখবর সংগ্রামে প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রশ্ন :  সে পত্রিকা আপনার সংগ্রহে আছে?
উত্তর : একটি সংখ্যা আমার নিকট রক্ষিত আছে।
প্রশ্ন : শাহীন ফৌজের সভাপতি বা সম্পাদক কিভাবে নির্বাচিত হত?
উত্তর : নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হত।
প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় সভাপতি কিভাবে নির্বাচিত হত?
উত্তর : ইসলামী ছাত্রসংঘের জেলার নেতারা ইহা নিয়ন্ত্রণ করত, তারা যখন মনে করতেন তখন নির্বাচন হত। আমি মৌলভীবাজার সভাপতি থাকা অবস্থায় কোন নির্বাচন হয়নি। কাজেই  নির্বাচন প্রক্রিয়া বলতে পারবনা।
প্রশ্ন :  শাহীন ফৌজের কেন্দ্রীয় সংগঠন বা সংবিধান ছিল ?
উত্তর : ছিল ।   শাহীন ফৌজের এক পাতার একটি গঠনতন্ত্র বা সংবিধান ছিল
প্রশ্ন :  শাহীন ফৌজের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি  ছিলেন নূর মুহাম্মাদ আকন।
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন :  মতিউর রহমান নামে শাহীন ফৌজের কোন সভাপতির নাম   শুনেছেন?
উত্তর : না। তবে সংগ্রামের শাহীন ফৌজের পাতায় ঐ নামে একজন লিখতেন।
প্রশ্ন :  শাহীন ফৌজ নামকরণ কে করেছিলেন  এবং এটা কার নামে নামকরন হয় জানা আছে?
উত্তর : কে নামকরন করেছেন তা  আমার জানা নাই, তবে কোন ব্যক্তির নামের ভিত্তিতে এটা হয় নাই।
প্রশ্ন: কেন্দ্রীয় সংগঠনের কোন শাহীন ভাইকে চিনতেন?
উত্তর :  কেন্দ্রীয় শাহীন ফৌজের একাধিক শাহীন ভাইকে আমি দেখেছি।
প্রশ্ন : একজনের পরিচয় বলেন।
উত্তর : একজন শাহীন ভাই মৌলভীবাজারে শাহীন ফৌজের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়েছিলেন, সেই সূত্রে তার সংগে আমার পরিচয় হয়, তবে তার ব্যক্তিগত পরিচয় আমার জানা নাই।
প্রশ্ন : আমি বলছি শাহীন ফৌজের কোন ছাত্রকে কোনদিন সভাপতি করা হয় নাই
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আমি বলছি মাওলানা আবদুর রহীম সাহেবের নিয়ন্ত্রণে কিছু সুধীজন শাহীন ফৌজ গঠন করেছিলেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : এই সুধীজনদের মধ্য হতে সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হত।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আমি বলছি আপনি শাহীন ফৌজের মৌলভীবাজার সভাপতি ছিলেননা।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আমি বলছি  সুধীজনরা প্রতি শাখায় ছাত্রদের মধ্য হতে একজন পরিচালক মনোনয়ন দিতেন।
উত্তর :  সত্য নয়।
প্রশ্ন :  জাহানে নও পত্রিকায় শাহীন ফৌজের খবরাখবর প্রচারিত হত,
উত্তর : সত্য নয়। জাহানে নও পত্রিকা মৌলভীবাজার যেত না। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় প্রতিমাসে একদিন একপাতায় শাহীন ফৌজের খবরাখবর প্রকাশিত হত।
প্রশ্ন : ইসলামী ছাত্রসংঘের গঠনতন্ত্র পড়েছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের কাঠামো বলেন? এটা কি এককেন্দ্রিক ছিল?
উত্তর : নিখিল পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ইসলামী ছাত্রসংঘ বলতে প্রকৃতপক্ষে কোন ছাত্র সংগঠন ছিল না। পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘ বলতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ভিত্তিক একটি ছাত্র সংগঠন ছিল এবং তার কার্যক্রম কেবল মাত্র তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানেই হত।

প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য আরেকটি ভিন্ন নামে ছাত্র সংগঠন ছিল?
উত্তর :  হ্যা। দুই নামে ছিল।
প্রশ্ন :  অবিভক্ত পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র পড়েছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : উক্ত গঠনতন্ত্রে ছাত্র সংগঠনের নাম উল্লেখ ছিল ?
উত্তর : কোনকালেই জামায়াতের গঠনতন্ত্রে ছাত্রসংগঠনের নাম  উল্লেখ ছিলনা।
প্রশ্ন : গঠনতন্ত্রে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন তৈরির কোন বিধান উল্লেখ ছিল ?
উত্তর : না। জামায়াতে ইসলামীর দু’টি গঠনতন্ত্র ছিল।  একটি রুকনরা পাঠ করত। আরেকটি  ছিল আম জনতার জন্য। আমি আম জনতার গঠনতন্ত্র দেখেছি। যেহেতু আমি রুকন ছিলাম না, সেহেতু আমি অপরটি দেখি নাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন