বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৪

রাষ্ট্রপক্ষের ডকুমেন্টই রয়েছে মীর কাসেম আলী নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় ছিলেন-আইনজীবী

মেহেদী হাসান, ৩০/৪/২০১৪, বুধবার, ঢাকা।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ১৯৭১ সালের বেশ কিছু পেপারকাটিং জমা দিয়েছে। তাতে দেখা যায় মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালের  নভেম্বর ও  ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় ছিলেন। এ সময়ে তিনি চট্টগ্রামে ছিলেননা। অথচ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ডালিম হোটেলকেন্দ্রিক রাষ্ট্রপক্ষ যেসব অপহরন নির্যাতন এবং হত্যার অভিযোগ করেছে তার সবগুলোই  নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে সংঘটিত। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষেরই  ডকুমেন্টে দেখা যায় তিনি অপরাধ সংঘটনকালে ঢাকায় ছিলেন চট্টগ্রামে নয়। 
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ খন্ডন করে যুক্তি উপস্থাপনের সময় অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম এ তথ্য তুলে ধরেন।

মিজানুল ইসলাম দাবি করেন মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালের সাত  নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ছিলেন। ছয়  নভেম্বরের আগে তিনি চট্টগ্রম নগর ছাত্রসংঘ সভাপতি ছিলেন। ছয়  নভেম্বরের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘ সাধারন সম্পাদক হন এবং এরপর তিনি ঢাকায় আসেন। সাধারনত কোন পার্টির সমাধারন সম্পাদক ঢাকায়ই বাস করেন। মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ছিলেন এ তথ্য রাষ্ট্রপক্ষের ডকুমেন্টে আছে। ৮ সেপ্টেম্বরের পর তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন এ মর্মে তাদের কোন পেপারকাটিং নেই তাদের।
তিনি বলেন, বরং  রাষ্ট্রপক্ষের জমা দেয়া পেপারকাটিংয়ে দেখা যায় ১৯৭১ সালের নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে মীর কাসেম আলী ঢাকায় ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর এবং ৮ নভেম্বর তারিখে প্রকাশিত দুটি খবরের কাটিং জমা দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ যে খবরে উল্লেখ আছে মীর কাসেম আলী ঢাকার সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন।
যুক্তি পেশ শেষে ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে মিজানুল ইসলাম দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন,  দৈনিক আজাদের ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর তারিখের একটি পেপার কাটিং জমা দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ পেপারকটিংয়ের খবরে বর্নিত রয়েছে ১০ ডিসেম্বর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের সমাবেশে মীর কাসেম আলী বক্তব্য দেয়। ১১ ডিসেম্বর তা আজাদে ছাপা হয়। এতে দেখা যায় মীর কাসেম আলী তখন ঢাকায় ছিল। তাছাড়া তাদের আরেকটি পেপারকাটিং হল ১৯৭১ সালের ৮ নভেম্বর। এ পেপারকাটিংয়েও দেখা যায় মীর কাসেম  আলী ঢাকায় একটি সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন ৭ নভেম্বর।
তাছাড়া তাদের  ৭, ১১, ১৪  ও ২৪ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখের পেপারকটিংয়ে মীর কাসেম আলীর বিবৃতি রয়েছে যা ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। ট্রাইব্যুনাল তখন বলেন ঢাকায় না থাকলেও বিবৃতি দেয়া যায়। মিজানুল ইসলাম বলেন, ধরে নেয়া যায় ঢাকায় বসেই তিনি বিবৃতি দিয়েছেন।  এসব থেকে প্রমানিত যে মীর কাসেম আলী নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের ডকুমেন্ট থেকে এটি স্পষ্ট যে মীর কাসেম আলী ৬ নভেম্বরের পর থেকে চট্টগ্রামে ছিলেননা বরং ঢাকায় ছিলেন। 

চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২  বিচার কার্যক্রম পরিচালান করেন।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে নয় নং অভিযোগ হল ২৯ নভেম্বর ১৯৭১ সালে সৈয়দ মো : এমরান হোসেন, কামাল উদ্দিন, জামালউদ্দিন, সরওয়ার উদ্দিন,  গোলাম কিবরিয়া, গোলাম রহমান এ   ছয় জনকে অপহরন ও নির্যাতন।
মিজানুল ইসলাম বলেন, এদের মধ্যে এমরান হোসেন, জামালউদ্দিন এবং সরওয়ারউদ্দিন এ তিনজকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়েছে। এ তিনজন বাদে বাকী চারজন বিষয়ে আর কোন তথ্য নেই। আর যে তিনজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছে তারা অপহরন ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে কিছুই বলেনি।

জামালউদ্দিন বলেছেন, আটকের সময় ডালিম হোটেলের কাউকে তিনি চিনতে পারেননি। কারণ তারা মুখোস পড়া ছিল। অপরদিকে একই ঘর থেকে একই সময়ে আটক হওয়া অপর সাক্ষী সরওয়ার উদ্দিন বলেছেন, আটকের সময় দুজন আর্মি এবং একজন বদর সদস্য ছিল। বদর সদস্য হল মীর কাসেম আলী।

মিজানুল ইসলাম বলেন, সাতজনকে একই ঘর থেকে একই সাথে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে তিনজন এসে সাক্ষ্য দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে  দুজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিপরীত তথ্য দিয়েছে গ্রেফতার ঘটনা বিষয়ে।
অপর সাক্ষী  এমরান বলেছেন তিনি যুদ্ধ করেছেন কিন্তু কোন এলাকায় যুদ্ধ করেছেন তা বলতে পারেননি। আর্মি ক্যাম্প কোথায় ছিল তাও বলতে পারেননি। আলবদর ক্যাম্প সম্পর্কেও বলতে পারেনি। এরকম একজন সাক্ষী আসামীকে জড়িয়ে যা বলেছে তাও অসত্য এটাই স্বাভাবিক।

মিজানুল ইসলাম বলেন, দুই জন সাক্ষী ঘটনার বর্ননা এবং তারিখ বিষয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত তথ্য দিয়েছেন ১১ নং অভিযোগ যথা জসিম হত্যা বিষয়ে।
গাজী সালাহউদ্দিন তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন জসিমের নিহত হবার স্থান এবং তারিখ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বই ডিফেন্স ডকুমেন্ট হিসেবে প্রদর্শনী মার্ক করা হয়েছে। অপর দিকে জসিম নিহত হওয়া বিষয়ে সাক্ষী সানাউল্লাহ এবং জাহাঙ্গীর আলম ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, তিনি  ২৪ নভেম্বর ডালিম হোটেলে জসিমের লাশ দেখেছেন। আর সানাউল্লাহ বলেছেন তিনি ২৮ নভেম্বর ডালিম হোটেল জসিমের লাশ দেখেছেন।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১২ নং অভিযোগ হল  জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, টন্টু সেন ও রঞ্জিত দাসকে অপহরন করে নির্যাতন করা হয়। টন্টু  রঞ্জিত দাসকে হত্যা  করে  তাদের লাশ গুম করা হয়।

সানাউল্লাহ বলেছেন তিনি ২৭ নভেম্বর ডালিম হোটেলে টন্টু সেন ও রঞ্জিতের সাথে কথা বলেছেন। ২৮ তারিখ তাদের হত্যা করা হয়।
শফিউল আলমকে গ্রেফতার করা হয় ২৮ নভেম্বর। তিনি তার সেই সে সময় আনন্দ বেদনা বইয়ে উল্লেখ করেছেন ২৮ নভেম্বর টন্টু মারা যাবার  তিনদিন আগে থেকে অজ্ঞান ছিল। কিন্তু সানাউল্লাহ বলেছেন বলেছেন তিনি ২৭ তারিখ টন্টুর সাথে কথা বলেছেন ডালিম হোটেলে।  মিজানুল ইসলাম প্রশ্ন করেন অজ্ঞান লোকের সাথে সাক্ষী সানাউল্লাহ  কথা বললেন কি করে?

টন্টু সেনের ভাগনে প্রদীপ তালুকদার । ১২ নং অভিযোগ বিষয়ে  প্রদীপ সাক্ষ্য দিয়েছেন অপহরন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে। প্রদীব বলেছেন ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিলণ ছয় বছর। তিনি যে ঠিকানা ট্রাইব্যুনালে দিয়েছেন সে ঠিকানায় তার কোন অস্তিত্ব নেই। নতুন যে ঠিকানা দিয়েছেন সেখানেও তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে নতুন ঠিকানা অনুযায়ী আমরা তার ভোটার লিস্ট সংগ্রহ করেছি এবং সেখানে তার জন্ম তারিখ লেখা আছে ১৯৭৭ সাল। ১৯৭৭ সালে জন্ম নেয়া ব্যক্তি কি করে ১৯৭১ সালের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারে?
মিজানুল ইসলাম বলেন, ১২ নং অভিযোগে আরো রয়েছে হাজারি লেনে আড়াইশ থেকে তিনশ বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়েছে এবং একশরও বেশি পরিবারকে জোর করে ভারতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কোন সাক্ষী হাজির করেনি।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৩ নং অভিযোগ হল সুনীল কান্তি বর্ধনকে অপহরন ও নির্যাতন।
মিজানুল ইসলাম বলেন, এ অভিযোগ বিষয়ে সাক্ষী সুনীল কান্তি বর্ধন অস্বাভাবিক বক্তব্য দিয়েছে। সে একবার বলছে শহরে টিকতে না পেরে গ্রামে গেছে। আবার বলছে গ্রামে টিকতে না পেরে শহরে এসেছে। গ্রামে সে কেন টিকতে পারলনা? তাছাড়া সে কোন রাজাকার আলবদরও চিনতনা। তাহলে কি করনে কাদের কারনে সে গ্রামে টিকতে পারলনা? সে বলেছে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বাড়ি পোড়ানো হয়নি। সে যে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে এটা তার প্রমান। কারণ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বাড়ি পোড়ানো হয়েছিল ।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৪ নং অভিযোগ হল নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরন ও নির্যাতন।
নাসির উদ্দিন চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা। চট্টগ্রাম শহরে সে এসেছে যুদ্ধের জন্য। অথচ সে বলেছে সার্কিট হাউজ ছাড়া অন্য কোথাও আর্মি ক্যাম্প ছিল কিনা তা তার জানা নেই। এটা কেমন কথা? এসময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাইতো? এটা কি করে হতে পারে?
মিজানুল ইসলাম বলেন, তাদের এলাকা হাজারি লেন  বারবার পুড়িয়ে দেয়া হল, বারবার লুট হয়েছে তার এলাকায়, তার এলাকার পাশেই ডালিম হোটেল বলছে তারা আর সেখানেই এসে সে আশ্রয় নিল। এটা কি করে সত্য হতে পারে? কাজেই তার আহত হবার ঘটনা অসত্য।

সাত নং অভিযোগ হল মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে সাত/আট জন যুবক ডাবলমুরিং থানা থেকে সানাউল্লাহ চৌধুরী,  হাবিবুর রহমান, ইলিয়াসকে  ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়।
মিজানুল ইসলাম বলেন, সানাউল্লাহ বলছে তার চোখ বাঁধা ছিল। কাজেই তাকে ডালিম হোটেলের সামনে না অন্য কোথায় আনা হল তা তার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ইলিয়াসের অপহরন এবং নির্যাতন বিষয়ে এখানে একটা লাইন ছাড়া আর কোন কিছু কোথাও বলা হয়নি। ইলিয়াসের অপরহন নির্যাতন বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আর কোন কিছু নেই। কেন তাকে সাক্ষী হিসেবে আনা হলনা, অন্য কোন সাক্ষী দিয়ে কেন কিছু বলানো হলনা এর কোন ব্যাখ্যা নেই।
মিজানুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম পিডিবি নেতা নবি চৌধুরী স্বাধীনতা বিরোধী কি-না তাও সে জানেনা। তার বক্তব্য যে অসত্য এটা তার প্রমান। সে ডিসি অফিসে চাকরি করত কিন্তু ডিসি অফিস লুট হওয়ার খবরও সে জানেনা বলছে। একজন মানুষের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে যা জানার কথা তাও সে জানেনা বলছে। সত্য এড়িয়ে গেছে। যে লোক স্বাভাবিক জানাকথা সঠিকভাবে বলছেনা তার বাকি কথা কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

১০ নং অভিযোগ মীর কাসেম আলীর নির্দেশে মো : জাকারিয়াসহ চারজনকে অপহরন ও নির্যাতন।
ভিকটিম চারজনই সাক্ষ্য দিয়েছে। মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী জাকারিয়া বলেছেন আটকের সময় পাকিস্তান আর্মি ছিল। শান্তি কমিটি বিষয়ে তার কোন ধারণা নেই।  এলাকায় রাজাকর ক্যাম্প দেখেনি সে। মীর কাসেম আলী ছাড়া অপর কাউকে তিনি চেনেননা।

সাক্ষী হাসিনা বেগম বলেছেন তিনি ১৯৭২ সালে সম্পাদক ছিলেন। ন্যাপ নেতা ছিলেন। কিন্তু তিনি জেরায় বলেছেন ১৯৭২ সালে দালাল আইনে ট্রাইব্যুনাল গঠন বিষয়ে জানা নেই। শান্তি কমিটি ও রাজাকার বিষয়েও বলতে পারছেননা। তার একথা কি বিশ্বাসযোগ্য? কারণ তিনি কোন সাধারন গৃহিনী নন। তিনি আবার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বই লিখেছেন।

মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ডালিম হোটেল তদন্ত  বিষয়ে অসত্য তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন তিনি তদন্ত করতে গিয়ে ওই বাড়ির  কারো সাথে কথা বলেননি প্রথমে । আসলে তিনি তদন্ত করেছেন ঠিকই কিন্তু তদন্তে যখন মীর কাসেম আলী বিষয়ে কোন তথ্য পাননি তখন তিনি তদন্ত বিষয়ে অস্বীকার করেন। তিনি আসল তথ্য গোপন করেছেন। ওই বাড়ির একজনকে সাক্ষী করা হয় কিন্তু তাকে আনা হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় স্বীকার করেছেন ডালিম হোটেলের মালিক মইত্যা গুন্ডার বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিল ১৯৭২ সালে সে বিষয়ে কোন তদন্ত করেননি।

মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে অসদ উদ্দেশ্য নিয়ে মীর কাসেম আলীকে আসামী নির্ধারন করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সাজিয়ে সে অনুযায়ী শিখিয়ে পরিয়ে সাক্ষী হাজির করেছেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে।
যুক্তি উপস্থাপনে মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন,  ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম, আসাদ উদ্দিন ও আবু বকর সিদ্দিক।
আগামী রোববার উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হবার কথা রয়েছে। এর মাধ্যমে শেষ হবে এ মামলার বিচার  কার্যক্রম।





মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৪

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলায় আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু// রাষ্ট্রপক্ষের ডকুমেন্টে মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আল বদর কমান্ডার ছিল এ মর্মে উল্লেখ নেই বরং ফেনির নাসির নামে এক লোক কমান্ডার ছিল মর্মে উল্লেখ আছে

মেহেদী হাসান, ২৯/৪/২০১৪, মঙ্গলবার, ঢাকা।
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়েছে। মীর কাসেম আলীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের দাবি  মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তার নির্দেশে এবং সিদ্ধান্তে ডালিম হোটেলে  মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনকে অপহরন করে এনে বন্দী করে রাখা, নির্যাতন করা এবং হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে তাতে দেখা যায় মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আলবদর কমান্ডার ছিলেননা। চট্টগ্রামের আলবদর কমান্ডার ছিল ফেনির নাসির নামে এক লোক। সেক্রেটাারি ছিল সন্দ্বীপের ফয়জুল্লাহ।

মিজানুল ইসলাম আজ আসামী সনাক্তকরন প্রক্রিয়া,  আলবদর কমান্ডার ইস্যু বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনের পর অভিযোগ খন্ডন করে যুক্তি পেশ শুরু করেন। এরপর বিচার কার্যক্রম আগামীকাল  বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

মীর কাসেম আলী আলবদর কমান্ডার ছিলেন কি-না :
মিজানুল ইসলাম শুনানীর শুরুতে বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের দাবি হল মীর কাসেম পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারন সম্পাদক  ছিলেন, তিনি চট্টগ্রাম আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন, তার নির্দেশে এবং সিদ্ধান্তে ডালিম হোটেল পরিচালিত হত যেখানে লোকজনকে ধরে এনে নির্যাতন এবং হত্যা করা হয়েছে।
অপরদিকে এ মামলায় আসামি পক্ষের দাবি হল মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেননা। ডালিম হোটেল মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা গুন্ডার নিয়যন্ত্রন করত। ডালিম হোটেল কোন ক্যাম্প ছিলনা।

মিজানুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে তার কোথাও তিনি  আল বদর কমান্ডার ছিলেন এ মর্মে উল্লেখ নেই। বরং অপর তিন থেকে চারজন ব্যক্তিকে এসব বইয়ে আলবদর প্রধান  হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মাহবুবুল আলমের  লেখা বই যা রাষ্ট্রপক্ষ জমা দিয়েছে তাতে ফেনির নাসির নামে একজন লোক চট্টগ্রামের আলবদর কমান্ডার ছিল বলে উল্লেখ আছে। সেক্রেটারি ছিল সন্দ্বীপের ফয়জুল্লাহ। এছাড়া চট্টগ্রাম আলবদর নেতা হিসেবে জাকির হোসেন এবং  মনসুর এর নাম উল্লেখ আছে। এসময় ট্রাইব্যুনাল বইটি নিয়ে বিষয়টি পড়ে দেখেন।
এরপর মিজানুল ইসলাম বলেন, তাহলে রাষ্ট্রপক্ষের ডকুমেন্টেই দেখা যাচ্ছে মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আলবদর কমান্ডার ছিলেননা।  ছিল অন্যরা।

মিজানুল ইসলাম  বলেন, ডালিম হোটেল যে মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা গুন্ডার নিয়ন্ত্রনে ছিল সে মর্মে আমরা দুটি ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি। ১৯৭২ সালে মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা গুন্ডার বিরুদ্ধে  একটি মামলার ডকুমেন্ট দিয়েছি । এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম একটি প্রামান্য দলিল বইয়েও  এ বিষয়ে উল্লেখ আছে।
তদন্ত কর্মকর্তাও জেরায় স্বীকার করেছেন ডালিম হোটেল নির্যাতন কেন্দ্র ছিল মর্মে কোন রিপোর্ট তিনি দেখেননি।

অভিযোগ খন্ডন :
মীর  কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মোট ১৪টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ এক  এবং পাঁচ  নং অভিযোগ বিষয়ে কোন সাক্ষী হাজির করেনি। মিজানুল ইসলাম আজ দুই, তিন, চার, ছয় এবং আট  নং অভিযোগ খন্ডন করে যুক্তি পেশ করেন।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে দুই নং অভিযোগ হল লুৎফর রহমানকে অপহরন করে ডালিম হোটেলে নির্যাতন। মিজানুল ইসলাম বলেন, লুৎফর রহমান বলেছেন, নির্যাতনের ফলে তার সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তিনি এ ঘটনার পরে বিয়ে করেছেন। তিনি যদি পুরুষত্বহীন হবেন তাহলে তিনি বিয়ে করলেন কিভাবে? এথেকে বোঝা যায় নির্যাতনের ঘটনা মিথ্যা।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে তিন নং অভিযোগে বলা হয়েছে ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর আসামীর নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে তার কদমতলা বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়।

মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেছেন ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। অপর দিকে শফিউল আলম তার আনন্দ বেদনার সেই সে সময় বইয়ে লিখেছেন ২৭ নভেম্বর তাকে (শফিউল আলম) ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাহলে চারদিন আগে জাহাঙ্গীর আলম ডালিম হোটেলে শফিউল আলমকে দেখল কি করে? কাজেই জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য অসত্য এবং তিনি ডালিম হোটেলে মীর কাসেম আলীকে জড়িয়ে যেসব কথা বলেছেন তাও অসত্য। অপর দিকে শফিউল আলমও তার বইয়ে চট্টগ্রাম আলবদর কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম আলীর নাম উল্লেখ করেননি । তিনি তার আরেকটি বইয়ে আলবদর কমান্ডার হিসেবে ভিন্ন লোকের নাম উল্লেখ করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষই এসব বই জমা দিয়েছে।
তাহলে মীর কাসেম আলী আলবদর কমান্ডার ছিল  এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকেই তিন রকম তথ্য দিয়েছে দেখা যায়। তাদের জমা দেয়া বইয়ে মীর কাসেম আলী নয় বরং ফেনির নাসিরকে আল বদর কমান্ডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাদের অভিযোগ এবং সাক্ষীদের বক্তব্যে দাবি করা হয়েছে মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আল বদর কমান্ডার ছিল। মীর কাসেম আলী আল বদর কমান্ডার ছিল এ দাবি বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের তিনরকম তথ্য রয়েছে এবং বেনিফিট অব ডাউটের সুবিধা তারা পাবেনা। 

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার নং অভিযোগে বলা হয়েছে ডাবলমুরিং থানায় সাইফুদ্দিন খানকে তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাাতন করা হয়। মিজানুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় সাইফুদ্দিনের বোন নুরজাহান ঘটনা দেখেছেন মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু তাকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি।

মীর কাসেম আীল বিরুদ্ধে ছয় নং অভিযোগ হল চট্টগ্রাম শহরের একটি চায়ের দোকান থেকে হারুনুর রশিদ নামে একজনকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেল এবং সালমা মঞ্জিলে নির্যাতন করা। মিজানুল ইসলাম বলেন, হারুনুর রশিদের স্ত্রী এ ঘটনায় সাক্ষ্য দিয়েছে। অভিযোগ বিষয়ে তার বক্তব্যই বেশি গ্রহণযোগ্য হবার কথা। কিন্তু তিনি যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার বিপরীত তথ্য রয়েছে তার স্বামীর কথায়। তার স্বামী হারুনুর রশিদের উদ্ধুতি দিয়ে মাহবুবুল আলম তার বইয়ে লিখেছেন, আল বদর কমান্ডারদের তিনি চিনতেননা।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আট নং অভিযোগ হল নুরুল কুদ্দুস, মো : নাসির, নুরুল হোসেনসহ চারজনকে অপহরন করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন। মিজানুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তিনজনই জীবিত আছে। তাদের জবানবন্দীও রেকর্ড করা হয়েছে এবং সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।  কিন্তু তাদের কাউকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি। কি কারনে আনা যায়নি তারও কোন ব্যাখ্যা রাষ্ট্রপক্ষ দেয়নি।
এসময় ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন করেন তাদেরকে সাক্ষী হিসেবে আনা না হলে তাতে কি অভিযোগের গুরুত্ব কমবে? মিজানুল ইসলাম বলেন, অবশ্যই কমবে। রুলসে এটা বলা আছে এবং রায়ে  এ বিষয়ে মূল্যায়ন ভিন্ন হবে।

বাঙ্গাল খান :
মিজানুল ইসলাম বলেন, মীর কাসেম আলী বাঙ্গাল খান নামে পরিচিত ছিল বলে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ যুক্তি উপস্থাপনের সময় বলেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যেই দেখা যায়  বাঙ্গাল খান নামে আরেক ব্যক্তি ছিলেন, মীর কাসেম আলী নয়।
যেমন রাষ্ট্রপক্ষের আট নং সাক্ষী এস্কান্দার আলম বলেছেন, তিনি শুনেছেন মীর কাসেম আলী বলছেন  খান সাহেব কোথায়? তখন খান সাহেব বলছেন, মীর কাসেম আমি আসছি।
১৯ নং সাক্ষী বলছেন, চোখ খুলে মীর কাসেম আলীর সাথে আরো একজনকে দেখি। উনি খান সাহেব হতে পারে। এ থেকে স্পষ্ট যে মীর কাসেম আলী খান সাহেব ছিলেননা। খান সাহেব নামে আরেকজন  আলাদা ব্যক্তি ছিলেন।

আসামী সনাক্তকরন :
মিজানুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ মামলর তদন্ত শুরু হয়েছে। আইন অনুসারে তদন্ত শুরু হয়নি। জেরায় তদন্ত কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন  মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে কোন মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ ছিলনা। তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে ব্যক্তি হিসেবে মীর কাসেম আলীকে বাছাই করে তার নিজস্ব ধারণা অনুসারে তদন্ত শুরু করেছে । এরপর  ডালিম হোটেলের ঘটনা লিপিবদ্ধ করে  সে মোতাবেক শিখিয়ে পরিয়ে সাক্ষী হাজির করা হয়েছে।
মিজানুল ইসলাম বলেন, যখন মামলা শুরু হয় তখন মীর কাসেম আলী বাংলাদেশে একজন পরিচিত ব্যক্তি। যারা পত্রপত্রিকা পড়েন এবং টিভিতে খবর দেখেন তারা তাকে চেনেন। ট্রাইব্যুনাল আইনে আসামী  সনাক্তকরন প্রকৃয়া বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। তবে বাংলাদেশে ফৌজদারি মামলায় আসামী সনাক্তকরন প্রকৃয়া উল্লেখ আছে। কি পদ্ধতিতে সাক্ষী আসামীকে সনাক্তকরন করবে তা বলা আছে। আসামীকে আট থেকে ১০ জন লোকের সাথে মিলিয়ে রেখে সাক্ষীকে আসামী সনাক্ত করতে বলা হয়। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী কর্তৃক আসামী সনাক্ত করা খুব সহজ ছিল। কারণ এখানে ডকে আসামী ছাড়া আর কেউ থাকেনা। তারপর সাক্ষী সাক্ষ্য দেয়ার পর সাক্ষীকে  বলা হয় আপনি যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন তিনি আজ ডকে উপস্থিত আছেন কি-না দেখেনতো। এভাবে খুব সহজেই সাক্ষী আসামীকে সনাক্ত করতে পারে।
মিজানুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী সৈয়দ এমরান বলেছেন মীর কাসেম আলী তার স্কুলের সহপাঠী ছিলেন সেই হিসেবে তিনি তাকে চিনতেন। সৈয়দ এমরান বলেছেন তিনি ১৯৬৮ সালে এমএনসি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন।
অথচ মীর কাসেম আলী এসএসসি পাশ করেন ১৯৬৭ সালে। সহপাঠী হতে হলে একই কাসে পড়তে হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে মীর কাসেম আলী তার এক বছর আগে  এসএসসি পাশ করেন। কাজেই সাক্ষী অসত্য তথ্য দিয়েছে ।
যুক্তি উপস্থাপনে মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, আসাদ উদ্দিন ও আবু বকর সিদ্দিক।

সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৪

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ

মেহেদী হাসান, ২৮/৪/২০১৪, সোমবার, ঢাকা।
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের  মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ যুক্তি পেশ শেষ করে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদন্ড দাবি করেন। এরপর আগামীকাল আসামী পক্ষের যুক্তি  উপস্থাপন শুরু করার জন্য নির্ধারন করে ট্রাইব্যুনাল।

চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, অপহরন,  নির্যাতন, লুন্ঠন এবং অগ্নিসংযোগের মত ১৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়।

আগের দিনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আজ সকালে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন ১১, ১২.১৩ এবং ১৪ নং অভিযোগ বিষয়ে যুুক্তি পেশ শুরু করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের অপর আইনজীবী রেজিয়া সুলতানা চমন আসামী পক্ষের তিন সাক্ষীর বক্তব্য খন্ডন করে যুক্তি পেশ করেন। সবশেষে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আইনী বিষয় তুলে ধরে সাবমিশন রাখেন।
রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপনের সময় ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।
সুলতান মাহমুদ সিমন যুক্তি পেশের সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্য থেকে দেখা যায় আসামী নিজে কারো গায়ে হাত দেয়নি। নিজে কাউকে মারেনি। আসামী নিজ হাতে কাউকে মেরেছে এরকম অভিযোগ আছে?
সুলতন মাহমুদ সিমন বলেন, আছে।
১৪ নং অভিযোগ  নাসিরউদ্দিন নামে একজনকে অপহরন এবং নির্যাতন বিষয়ে যুক্তি পেশের সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, অপহরনের সময় আসামী ছিলনা। অপহরনের অভিযোগ প্রমানিত নয়।  ভিকটিম নিজেই বলেছে অপহরনের সময় আসামী ছিলনা। কিন্তু আমরা তো অপহরন বিষয়ে চার্জ গঠন করে ফেললাম। কোর্ট ভুল করতে পারে কিন্তু আপনারা তখন বললেননা কেন এ বিষয়ে? আপনারা তো মনে করেন একটা চার্জ গঠন করলেই হয়ে গেল।  চার্জ প্রমান করতে হবেনা?
সুলতান মাহমুদ সিমন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে।

এরপর আসামী পক্ষের তিন সাক্ষীর বক্তব্য খন্ডন করে রেজিয়া সুলতানা চমন যুক্তি পেশ করেন। এসময় ট্রাইবুনালের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হন তিনি। ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ মামলায় আসামী পক্ষের দাবি কি? আসামী পক্ষের দাবি হল ডালিম  হোটেল চালাত মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা গুন্ডা । সে একজন  রাজাকার। আসামী পক্ষের দাবি ডালিম হোটেল মীর কাসেম আলী চালাতনা। আসামী পক্ষ যে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে তা দেখে এসেছেন? আসামী পক্ষের ডকুমেন্টে ডালিম হোটেলের যে বিবরন রয়েছে তা দেখেছেন?
এসময় নীরব থাকেন রেজিয়া সুলতানা চমন।
ট্রাইব্যুনালের আরো কিছু প্রশ্ন করার পর বলেন, আপনার আর্গুমেন্ট কি আমরা করে দেব? আপনার ফি তাহলে আমাদের দিয়ে দিয়ে দিয়েন।

এরপর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ যুক্তি পেশ করে বলেন, ডালিম হোটেল মীর কাসেম আলীর সিদ্ধান্ত এবং নেতৃত্বে পরিচালিত হত। কাজেই এখানে সংঘটিত সকল অপরাধের দায়ভার তার।
ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন করেন, পুরো সিস্টেম যে সে পরিচালনা করত তা কোথায় আছে? সাক্ষীদের বক্তব্যে এসেছে? অনেক সময় দেখা গেছে একজন ভিকটিম ধরে হোটেলে নিয়ে এসেছে তখন আসামী সেখানে উপস্থিত ছিলনা।
তুরিন আফরোজ বলেন, বিষয় হল সেখানে কোন সিস্টেম কাজ করেছে কি-না সেটা দেখা। যেহেতু মীর কাসেম আলীর সিদ্ধান্তে এবং নেতৃত্বে ডালিম হোটেল পরিচালিত হত তাই সব ঘটনার দায় তার ওপরই বর্তায়। মীর কাসেম আলী  উপস্থিত থাকলে ধরে আনা লোকজনের ওপর নির্যাতন বেড়ে যেত। তারা দেখাত যে সবকিছু ঠিকমত চলছে, তারা ঠিকমত কাজ করছে।
তিনি বলেন, ডালিম হোটেলের নির্যাতনের যে চিত্র আমরা পাই তাতে এর সাথে সামন্যতম সম্পৃক্ত যেকোন ব্যক্তির সাজা হওয়া উচিত। আর মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে যেহেতু পরিচালিত হত তাই তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দাবি করছি আমরা।





বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৪

সন্দেহাতীত অবস্থানে পৌছার সুযোগ কেন হাতছাড়া করা হল বোধগম্য নয়

মেহেদী হাসান,17/4/2014
ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলার নথি পিরোজপুর থেকে তলবের আবেদন  করেছিল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবী। আদালত গতকাল বুধবার আবেদনটি খারিজ করে দেয়। একই সাথে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের দায়ের করা বরিশাল থেকে ১৯৭২ সালে গঠিত স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের নথি তলবের আবেদনও খারিজ করে দেয়া হয়েছে।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আলোচিত একটি অভিযোগ হল ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা। এ অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দাবি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে ১৯৭১ সালের ৮ মে পাড়েরহাট বাজারে তাকে পাকিস্তান আর্মি গুলি করে হত্যা করে। আর আসামি পক্ষের দাবি ইব্রাহিম কুট্টি ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর নলবুনিয়ায় তার শশুরবাড়ি থাকা অবস্থায় রাজাকারদের হাতে নিহত হয়। এ হত্যাকান্ডের সাথে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কোন সম্পর্ক নেই। আসামি পক্ষ এ দাবির পক্ষে ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে পিরোজপুর আদালতে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে যে মামলা করেন সেই মামলার এফআইআর বা মামলার প্রাথমিক অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। মমতাজ বেগমের সেই মামলায় তিনি পাকিস্তান আর্মিসহ মোট১৩ জনকে আসামি করেন । কিন্তু আসামির তালিকায় সাঈদীর নাম নেই। আসামি পক্ষের যুক্তি সাঈদী যদি এ ঘটনায় জড়িত থাকত তাহলে অন্তত মমতাজ বেগমের ওই মামলায় আসামির তালিকায় তার নাম থাকত।  শুধু তাই নয় মমতাজ বেগমের সেই মামলার বিবরনে ইব্রাহিম কুট্টি নিহত হবার ঘটনাস্থল  নলবুনিয়া এবং ঘটনার তারিখ ১ অক্টোবর ১৯৭১ সাল উল্লেখ আছে। আর রাষ্ট্রপক্ষের দাবি ইব্রাহিম কুট্টি ১৯৭১ সালের ৮ মে পাড়েরহাট বাজারে নিহত হয়। মমতাজ বেগমের মামলায় ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার ঘটনাস্থল এবং তারিখের সম্পূর্ণ বিপরীত তথ্য রয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে।

২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে আসামি পক্ষ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মমতাজ বেগমের মামলার এ ডকুমেন্ট জমা দেয় এবং ট্রাইব্যুনালে তা প্রদশীনী ‘এ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ তখন আসামি পক্ষের এ ডকুমেন্টকে জাল এবং মামলার প্রয়োজনে সৃজনকৃত বলে আখ্যায়িত করে। একে জাল আখ্যায়িত করার আগে তারা পিরোজপুর  গিয়ে এ মামলা বিষয়ে কোন খোঁজখবর নিয়েছিল কিনা এমন কোন দাবিও তারা করেনি। রাষ্ট্রপক্ষ এ ডকুমেন্টকে জাল আখ্যায়িত করার পর আসামি পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার জিআর বইয়ের একটি ফটোকপি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে এবং পিরোজপুর থেকে জিআর বই তলবের আবেদন করে। ট্রাইব্যুনাল তাদের সে আবেদন খারিজ করে দেয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয় এবং তার মধ্যে একটি হল আলোচিত এ ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার অভিযোগ। ট্রাইব্যুনালের রায়ে আসামি পক্ষের দায়ের করা মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্ট বিষয়ে কোন আলোচনা করা হয়নি। 

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল শুনানীতেও অন্যতম আলোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয় ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা এবং মমতাজ বেগমের মামলা।
গত ৩ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নতেৃত্বে আপিল শুনানীর  সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্ট বিষয়ে একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়েন।
আদালত তাকে প্রশ্ন করেন, আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার ডকমেন্ট সংগ্রহ করতে পারল আর আপনারা পারলেননা কেন? ১৯৭২ সালে আদৌ এ ধরনের কোন এফআইআর হয়েছিল কি-না? পিরোজপুরে অবশ্যই জিআর রেজিস্ট্রেশন বই আছে। আপনারা এটা চাইতে পারতেননা? আপনাদের অনেক বড় মেশিনারীজ আছে। তার মাধ্যমে এগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন? আমরা যদি আসামী পক্ষের দায়ের করা এ ডকুমেন্ট গ্রহণ করি তাহলে অ্যাটলিস্ট আমরা বলতে পারি সাঈদী এ ঘটনায় জড়িত নয়।
আদালত আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ মামলার শুনানী চলছে। আসামী পক্ষ অনেক আগে এ বিষয়ে যুক্তি পেশ করেছে। আপনারা অনেক সময় পেয়েছেন। এ দীর্ঘ সময়ে আপনারা চাইলে এ ডকুমেন্ট বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন।

এরপর গত ১ এপ্রিল শুনানীর পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ মামলার বিচার ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি চান। এরপর খবর বের হল মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় আলোচিত ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলার নথির খোঁজে অ্যাটর্নি জেনারেল বরিশাল সফর করছেন। ৯ এপ্রিল অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম  দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সামনে দাবি করলেন পিরোজপুর এবং বরিশালে এ মামলার কোন কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছেনা। কাজেই আসামি পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার যে এফআইআর জমা দিয়েছে তা জাল, মিথ্যা এবং মামলার প্রয়োজনে সৃজনকৃত।  তিনি লিখিত আবেদন করে বলেন, আসামি পক্ষের দায়ের করা মমতাজ বেগমের মামলার এফআইআর যেন  বিবেচনায় না নেয়া হয়।
মমতাজ বেগমের মামলাকে জাল, মিথ্যা, সৃজনকৃত আখ্যায়িত করা এবং একে বিবেচনায় না নেয়ার আবেদনের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান যুক্তি ছিল পিরোজপুর এবং বরিশালে এ মামলার কোন কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছেনা। এরপর দ্বিতীয় প্রধান যুক্তি ছিল একটি মামলায় এফআইআরে সব আসামি বা মূল আসামির নাম নাও থাকতে পারে। মামলার তদন্ত শেষে যে চার্জশিট তৈরি হয় সেখানে মূল আসামির নাম থাকতে পারে। আসামি পক্ষ দাবি করেছে এ মামলার চার্জশিট হয়েছিল কিন্তু তারা সে চার্জশিট তুলতে পারেনি এবং জমাও দিতে পারেনি। তারা এফআইআর তুলতে পারল চার্জশিট কেন তুলতে পারলনা? তাছাড়া চার্জশিট হলে এফআইআর নির্ভরযোগ্য থাকেনা।

অবশেষে  গত ১৩ এপ্রিল মমতাজ বেগমের মামলার চার্জশিটের সার্টিফাইড কপি জমা দেয় আসামি পক্ষ। সেখানেও আসামির তালিকায় সাঈদীর নাম নেই। আসামি পক্ষ ১৩ এপ্রিল আবেদন চার্জশিট যেন বিবেচনায় নেয়া হয় সে মর্মে আবেদন করে। একই আবেদনে তারা পিরোজপুর থেকে মমতাজ বেগমের  মামলার জিআর বই তলবেরও আবেদন করে। গতকাল  ১৬ এপ্রিল আদালত র আবেদনটি খারিজ করে দেয়।

আমি মনে করি সকল  প্রশ্নের মীমাংসার জন্য আদালতের পিরোজপুর থেকে মমতাজ বেগমের মামলার নথি তলব করা উচিত ছিল। এটা তলব করলেই প্রমান হয়ে যেত আসামি পক্ষের  দাবি সত্য নাকি মিথ্যা। মমতাজ বেগমের মামলার যে এফআইআর তারা জমা দিয়েছে  জাল কিনা।  নথি তলব করলেই বোঝা যেত ১৯৭২ সালে মমতাজ বেগম নামে কোন মহিলা পিরোজপুর আদালতে এ ধরনের কোন মামলা করেছিলনা কিনা, এ ধরনের কোন মামলার অস্তিত্ব সেখানে আছে কি-না। আসামি পক্ষ জাল জালিয়াতি করেছে কি-না তাও প্রমানিত হত।  কিন্তু আবেদনটি খারিজ করে দেয়ায় বিষয়টি অমিমীমাংসিত থেকে গেল । সাঈদী সত্যিই ইব্রাহিম কুট্টি হত্যায় জড়িত কি-না এ বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমানের একটি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন আদালত সে সুযোগ  কাজে না লাগিয়ে আবেদন খারিজ করে দিল  এ জিজ্ঞাসা সবসময়ই মানুষের মনে থেকে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।

আরেকটি মজার বিষয় হল  ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম এখনো জীবিত। তিনি ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার অভিযোগের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এক নম্বর সাক্ষী হতে পারতেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ তাকে এ মামলায় সাক্ষী করেনি। মমতাজ বেগম জীবিত সেটা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও জানেন বলে জেরায় স্বীকার করেছেন। কিন্তু তাকে তিনি সাক্ষী করেননি। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তকালে কখনো মমতাজ বেগমের কাছে যানওনি।

ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার অভিযোগ এবং এ বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত এত আলোচিত একটি বিষয়ে পরিণত হলেও কোন পক্ষ থেকেই তাকে আদালতে হাজির করার কোন আবেদন কেউ করেনি। ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার সাথে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জড়িত কিনা এবং তিনি ১৯৭২ সালে এ বিষয়ে কোন মামলা করেছিলেন কি-না তা সবই পানির মত পরিষ্কার হয়ে যেত তাকে হাজির করা গেলে। কারণ তিনি তার স্বামী হত্যার ঘটনায় একজন চাুস সাক্ষী। ঘটনার সময় তিনি তার স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন এবং তার হাতেও গুলি লেগেছে মর্মে মামলার বিবরনে বর্নিত আছে।




বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিলের রায় যেকোনদিন// নথি তলব এবং চার্জশিট বিবেচনার আবেদন খারিজ

মেহেদী হাসান, ১৬/৪/২০১৪
বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মোফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল মামলার রায় যেকোন দিন ঘোষনা করা হবে। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ রায় প্রদানের তারিখ অপেক্ষমান ঘোষনা করেন।

তাছাড়া পিরোজপুর এবং বরিশাল থেকে মমতাজ বেগমের মামলা সংক্রান্ত নথি তলবের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। একই সাথে আসামী পক্ষ থেকে দাখিল করা মমতাজ বেগমের মামলার চার্জশিট বিবেচনায় নেয়ার আবেদনও খারিজ হয়ে গেছে। 
সকালে উভয় পক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়ে রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করেন আদালত।
গত মঙ্গলবার উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয় এ মামলার।

ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে যে মামলা করেছিল সেই মামলার জিআর (জেনারেল রেজিস্টার) বই তলবের আবেদন করে আসামী পক্ষ গত ১৩ এপ্রিল। একই আবেদনে  আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার চার্জশিট এর মূল সার্টিফাইড কপি জমা দিয়ে তা বিবেচনায় নেয়ার আবেদন করে। ফলে  নথি তবলবের আবেদন খারিজ এর সাথে চার্জশিট বিবেচনায় নেয়ার আবেদনও খারিজ হয়ে গেল।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পিরোজপুর এবং বরিশাল ঘুরে এসে আদালতে বলেন, মমতাজ বেগমের মামলার কোন কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছেনা এবং আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার যে এফআইআর জমা দিয়েছে তা জাল। তিনি তা বিবেচনায় না নেয়ার আবেদন করেন। এরপর গত ১০ এপ্রিল  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবেদন করা হয় ১৯৭২ সালে গঠিত বরিশাল স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল এর রেজিস্টার বই তলবের জন্য। গতকাল সে আবেদনও খারিজ করে দেন আদালত।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষ থেকে দায়ের করা মমতাজ বেগমের মামলার এফআইআর কপিকে জাল আখ্যায়িত করে তা বিবেচনায় না নেয়ার যে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ তাতে অন্যতম একটি যুক্তি ছিল আসামী পক্ষ এ মামলর চার্জশিট জমা দিতে পারেনি। এফআইআর এ নাম না থাকলেও চার্জশিটে আসামির নাম থাকতে পারে। এরপর গত ১৩ এপ্রিল আসামি পক্ষ চার্জশিট জমা দেয় এবং তা বিবেচনার আবেদন জানায়।

আদালত রায় ঘোষনার তারিখ অপেক্ষমান রাখার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনাল যে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে তা আমরা সঠিক মনে করি এবং আশা করছি সে রায় বহাল থাকবে। এছাড়া অপর যে ছয়টি অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে দোষীয় সাব্যস্ত করা হয়েছে কিন্তু সাজা উল্লেখ করা হয়নি সেগুলোতেও সাজার দাবি করেছি।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে দেলোয়ার শিকদারকে সাঈদী বানিয়ে সাজা দেয়া হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার দাবি করছি এবং তিনি মুক্তি পাবেন আশা করছি। আমরা বিশাবালীর ভাই সুখরঞ্জন বালীকে এনেছিলাম। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ট্রাইব্যুনাল কম্পাউন্ড থেকে তাকে অপহরন করে নিয়ে গেল সাদা পোশাকের লোকজন। অপহরনের আগে সুখরঞ্জন বালী টিভিতে যে সাক্ষাতকার দিয়েছিল তার ভিডিও আমরা জমা দিয়েছি আপিল আদালদে। সেটি বিবেচনায় নেয়া হলে রাষ্ট্রপক্ষের মিথ্যাচার প্রমানিত হবে। সত্য বলতে চাওয়ার কারনে আজ সুখরঞ্জন বালীকে ভারতের কারাগারে জীবন কাটাতে হচ্ছে।

২০১৩ সালেল ২৮ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদন্ড দেয়। ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটাপাট, নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্মান্তরকরনসহ ২০টি অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে আটটি অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

মাওলানা সাঈদীর খালাস চেয়ে  ওই বছর ২৮ মার্চ আপিল বিভাগে আবেদন করে আসামি পক্ষ। যে ছয়টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে কিন্তু সাজা উল্লেখ করেনি ট্রাইব্যুনাল  সেগুলোতে সাজা উল্লেখ করার দাবি জানিয়ে একই দিন রাষ্ট্রপক্ষও আপিল আবেদন করে।
ওই বছর ২৪ সেপ্টেম্বর আপিল শুনানী শুরু হয়। সাড়ে ছয় মাসেরও অধিক সময় পর আজ আলোচিত এ মামলায় আপিল শুনানী শেষে রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হল।

প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে এ মামলার শুনানীর জন্য গঠিত  পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞ, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে এ মামলায় শুনানী পেশ শুরু করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এরপর তার অনুপস্থিতিতে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান শুনানী পেশ এবং যুক্তি উপস্থাপন করেন। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন। এছাড়া এ মামলার আপিল শুনানীর সময় বিভিন্ন পর্যায়ে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন অংশগ্রহণ করেছেন।
আসামী পক্ষে অন্যান্য আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তাজুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম, মহিনুর ইসলাম, মতিয়ার রহমান, আবু বকর সিদ্দিক, মোসাদ্দেক বিল্লাহ। 

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল শুনানী শেষ

মেহেদী হাসান, ১৫/৪/২০১৪
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল শুনানী শেষ হয়েছে। আলোচিত এ মামলায় আজ উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। তবে রায় কবে ঘোষনা করা হবে সে বিষয়ে শুনানী শেষে আদালত কিছু উল্লেখ করেননি। পিরোজপুর এবং বরিশাল থেকে মমতাজ বেগমের দায়ের করা ১৯৭২ সালের মামলার নথি তলব করা বিষয়ে উভয় পক্ষের দুটি ভিন্ন আবেদন বিষয়ে আগামীকাল  আদেশ দেয়ার জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ মামলাটির শুনানী গ্রহণ করেন। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে মাওলানা সাঈদীকে নির্দেষা দাবি করে তার মুক্তি দাবি করেন। এছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন এর সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে দরখাস্তের শুনানী শেষে যুক্তি উপস্থাপনের সমাপনি টানেন। তিনি স্কাইপ সংলাপসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কিছু বিতর্কিত কর্মকান্ড তুলে  ধরে আদালতকে বলেন, এ ট্রাইব্যুনাল একটি পক্ষপাতমূলক আদালত । মাওলানা সাঈদীর মামলাটিকে ঐতিহাসিক মামলা উল্লেখ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে তিনি ন্যায় বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ৪০ বছর পরে শুরু হওয়া এ মামলা একদিন দেশে ইতিহাস হয়ে থাকবে।

ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার বিচার চেয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে যে মামলা করেছিল সেই মামলার  চার্জশিট জমা দিয়েছে আসামি পক্ষ। মমতাজ বেগমের মামলার চার্জশিট বিবেচনায় নেয়া এবং পিরোজপুর থেকে ওই মামলার জিআর বই তলবের আবেদন করেছে আসামি পক্ষ। অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পিরোজপুর এবং বরিশাল ঘুরে এসে বলছেন মমতাজ বেগমের মামলার কোন নথি পাওয়া যাচ্ছেনা। তিনি বরিশাল থেকে ১৯৭২ সালে গঠিত স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের রেজিস্টার বই তলবের আবেদন করেছেন। আগামীকাল  বুধবার এ বিষয়ে আদেশের জন্য ধার্য্য করেছেন আদালত।

চার্জশিট বিবেচনায় নেয়া  এবং জিআর বই তলবের আবেদনের ওপর শুনানী করেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন। আবেদনের সাথে তারা মমতাজ বেগমের মামলার জিআর কপির  ফটোকপি জমা দিয়েছে। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা ট্রাইব্যুনালে পিরোজপুর থেকে পাওয়া মমতাজ বেগমের মামলার জিআর বই জমা দিয়েছিলাম কিন্তু তা খারিজ করে দিয়েছে । গতকাল শুনানীর সময় আদালত জিআর বইর ফটোকপি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেন। আদালত প্রথমে বলেন, এটা একটা ফটোকপি। সার্টিফাইড কপি নয়। তখন অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, আমরা সার্টিফাইড কপি চেয়েছিলাম কিন্তু দেয়নি। জিআর বই’র ফটোকপি কিভাবে সংগ্রহ করা হল আদালতের এ প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, সেটা আমার জানা নেই। তখন একজন বিচারপতি বলেন,  নিশ্চয়ই জিআর বই ফটোকপির জন্য বাইরে নিয়ে যেতে হয়েছে। যারা এটা করতে পারে তারা সবই পারে। জিআইর নথিতে বরিশাল স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের নম্বর না থাকা, কবে কিভাবে মামলাটি প্রত্যাহার হল, কে কিভাবে কোন ক্ষমতাবলে প্রত্যাহার কর, বাকেরগঞ্জ ডিসির কাছে কিভাবে গেল আদালত এসব বিষয়ে প্রশ্ন করলে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের ডকুমেন্টটি সত্য না মিথ্যা সেটা প্রমানের জন্যই পিরোজপুর থেকে এ মামলার জিআর বই তলব করা উচিত এবং তার সাথে আমাদের এ কপি মিলিয়ে দেখা যাবে। তাহলেই সত্য মিথ্যা বের হয়ে যাবে। আর মূল বিষয় হল মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে এ ধরনের একটি মামলা করেছিল কি-না, এ ধরনের একটি মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল কি-না, এফআইর এবং চার্জশিট হয়েছিল কিনা । এটা জানা গেলেই ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা বিষয়ে আমাদের দাবির সত্য  না মিথ্যা প্রমানিত হবে। সেজন্য পিরোজপুরের জিআর বই তলব করা দরকার।  আপনারা গোড়ায় হাত দেন। বরিশল ট্রাইব্যুনালে এ মামলা গিয়েছিল কিনা এবং সেখানে কি হয়েছিল তা পরের বিষয়। আগে জানা দরকার পিরোজপুরে আদৌ এ মামলা হয়েছিল কিনা। খন্দকার মাহবুব হোসেন বারবার বলেন, আপনারা দয়া করে গোড়ায় হাত দেন। এটাই আমাদের নিবেদন।

আজ অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানী পেশ করার পর একজন বিচারপতি বলেন,  মি. অ্যাটর্নি জেনারেল আমার স্পষ্ট মনে আছে আসামী পক্ষের দাখিল করা মমতাজ বেগমের মামলার এফআইআর গ্রহণ না করার যে আবেদন আপনারা দিয়েছেন তাতে আপনি বলেছেন এ  মামলার চার্জশিট আসামি পক্ষ জমা দেয়নি। আপনি বলেছিলেন  এফআইআরে আসামির নাম না থাকলেও চার্জশিটে থাকতে পারে। আপনি বারবার বলেছেন আসামি পক্ষ চার্জশিট জমা দিতে পারেনি। কিন্তু এখন তারা চার্জশিট জমা দেয়ার পর আপনি ভিন্ন যুক্তি দেখাচ্ছেন।

দরখাস্ত বিষয়ে শুনানী শেষে মাওলানা সাঈদীপর পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতের অনুমতি নিয়ে  ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা এবং সুখরঞ্জন বালি বিষয়ে কিছু কথা বলেন। তিনি বলেন, সুখরঞ্জন বালি ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী। তারা তাকে আনতে পারলনা। আমরা তাকে আনলাম। এরপর তাকে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহরন করা হল। তাকে অপহরন করায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
এরপর তিনি সুখরঞ্জন বালীর একটি সাক্ষাৎকার পড়ে শোনান যেখানে সুখরঞ্জন বালি  বলেছেন, তিনি রাষ্ট্রপক্ষের শেখানোমত মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ তাকে ট্রাইব্যুনালে আনেনি। তিনি আগে থেকেই মাওলানা সাঈদীকে চিনতেন। তাদের বাড়ি আক্রমন এবং তার ভাই বিশাবালীকে ধরে নিয়ে যাবার ঘটনার সময় তাদের বাড়িতে যারা এসেছিল তাদের সাথে মাওলানা সাঈদী ছিলনা। থাকলে তিনি তাকে চিনতেন। কারণ মাওলানা সাঈদীকে তিনি আগে থেকেই চিনতেন। পাড়েরহাট বাজারে মাওলানা সাঈদীর শশুরের কাপড়ের দোকান ছিল । সেই সূত্রে আগে থেকেই তিনি তাকে চিনতেন।

এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে পক্ষপাতমূলক (বায়াজড) আখ্যায়িত করে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এ ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে বাইরের একজন লোকের সাথে ১৭ ঘন্টা স্কাইপ সংলাপ করেছেন এর চেয়ারম্যান। বিচার নিয়ে ২২৩টি ইমেইল আদান প্রদান করেছেন। বাইরে থেকে পাঠানো অনেক বিষয় তিনি হুবহু ট্রাইব্যুনালে পড়ে শুনিয়েছেন।

সকালে শুনানীর  শুরুতে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের দাবি মাওলানা সাঈদী স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার ইত্যাদি। কিন্তু আবার তারাই বলছে মাওলানা সাঈদী পাড়েরহাট বাজারে চট বিছিয়ে তেল নুন লবন মরিচ বিক্রি করত। এ ধরনের একজন লোক কি করে তাদের বর্নিত কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, মাওলানা সাঈদী যশোরে ছিলেননা বরং পিরোজপুরে ছিলেন এ মর্মে কোন সাজেশন তারা সাফাই সাক্ষীদের দেয়নি।
আদালতের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পিরোজপুর জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত পিরোজপুর জেলার ইতিহাস বইতে স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। দেলোয়ার হোসেন মল্লিক নামে এক লোকের নাম আছে। সেই বইয়ে পিরোজপুরের কৃতি সন্তানদের তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম আছে।

২০১৩ সালেল ২৮ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদন্ড দেয়। ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটাপাট, নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্মান্তরকরনসহ ২০টি অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে আটটি অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

মাওলানা সাঈদীর খালাস চেয়ে  ওই বছর ২৮ মার্চ আপিল বিভাগে আবেদন করে আসামি পক্ষ। যে ছয়টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে কিন্তু সাজা উল্লেখ করেনি ট্রাইব্যুনাল  সেগুলোতে সাজা উল্লেখ করার দাবি জানিয়ে একই দিন রাষ্ট্রপক্ষও আপিল আবেদন করে।
ওই বছর ২৪ সেপ্টেম্বর আপিল শুনানী শুরু হয়। সাড়ে ছয় মাসেরও অধিক সময় পর আজ আলোচিত এ মামলায় উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হল।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে এ মামলায় শুনানী পেশ শুরু করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এরপর তার অনুপস্থিতিতে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান শুনানী পেশ এবং যুক্তি উপস্থাপন করেন। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন। এছাড়া এ মামলার আপিল শুনানীর সময় বিভিন্ন পর্যায়ে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন অংশগ্রহণ করেছেন।
আসামী পক্ষে অন্যান্য আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তাজুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম, মহিনুর ইসলাম, মতিয়ার রহমান, আবু বকর সিদ্দিক, মোসাদ্দেক বিল্লাহ। 


রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা ও ইব্রাহীম কুট্টি ইস্যু// অবশেষে মমতাজ বেগমের মামলার চার্জশিটও দাখিল করল আসামী পক্ষ

মেহেদী হাসান,১৩/৪/২০১৪
ইব্রাহিম কৃট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের ১৯৭২ সালে দায়ের করা মামলার চার্জশিট ( চার্জশিট নং ২৬, তারিখ ২৯/৯/৭২) আপিল বিভাগে জমা দিয়েছে আসামী পক্ষ। আজ শুনানী শেষে আপিল বিভাগে একটি দরখাস্তের সাথে এ মামলার মূল সার্টিফাইড কপি জমা দেয়া হয়। মমতাজ বেগমের মামলার সেই চার্জশিটেও মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

এর আগে আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার এফআইআর কপি জমা দেয় ট্রাইব্যুনালে যেখানে ১৩ জন আসামীর মধ্যে মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আলোচিত অভিযোগ হল ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা। এ অভিযোগে  ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।

ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে তার স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে পিরোজরে একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় তিনি মোট ১৩ জনকে আসামী করেন। কিন্তু আসামীর সেই তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের দায়ের করা সেই মামলার এফআইআর নর্থির একটি সার্টিফাইড কপি ২০১১ সালে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। মামলার আপিল শুনানীর শেষ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পিরোজপুর এবং বরিশাল সফর করেছেন। সফর শেষে গত ৯ এপ্রিল আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, পিরোজপুর এবং বরিশালের জেলাজজ আদালতে কোথাও এ মামলার কাগজ পাওয়া যায়নি। আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার নথি মর্মে যে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে তা জাল, মিথ্যা এবং মামলার প্রয়োজনে সৃজনকৃত। তাই এ কাগজ বিবেচনায় না নেয়ার লিখিত আবেদন করেন তিনি।

আসামী পক্ষের দায়ের করা এফআইআর কপিটিকে জাল আখ্যায়িত করা এবং এটি বিবেচনায় না নেয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল এর পক্ষ থেকে যেসব যুক্তি আদালতে তুলে ধরা হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি ছিল মমতাজ বেগমের দায়ের করা মামলার চার্জশিট বিষয়ক। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আসামী পক্ষ দাবি করেছে এ মামলায় চাজশিট হয়েছিল কিন্তু তারা সেই চার্জশিট জমা দেয়নি। একটি মামলার প্রাথমিক অভিযোগে সব বা মূল আসামীর নাম নাও থাকতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে চার্জশিটে মূল আসামীর নাম আসতে পারে বা অন্য আসামীর নাম যোগ হতে পারে। আসামী পক্ষ মামলার এফআইআর কপি যোগাড় করতে পারল আর চার্জশিট তারা জোগাড় করতে পারলনা? তারা কেন চার্জশিট তুলতে পারলনা?

এ প্রেক্ষিতে আসামী পক্ষ আজ মমতাজ বেগমের মামলর চার্জশিট দাখিল করল আদালতে। ১৯৭২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পুলিশ এ মামলর চার্জশিট দাখিল করে। মমতাজ বেগমের মামলার প্রাথমিক অভিযোগ বা  এফআইআরে ঘটনার  বিবরন, তারিখ এবং  ঘটনাস্থলের যে বিবরন রয়েছে তার সাথে মিল রয়েছে চার্জশিটে বর্নিত ঘটনা, ঘটনার তারিখ এবং ঘটনাস্থলের।  তবে এফঅইআরে যে ১৩ জনকে আসামী করা হয়েছে তা থেকে চারজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে মাওলানা সাঈদী বা অন্য কোন নতুন আসামীর নাম এ ঘটনায় আর যুক্ত হয়নি চাজশিটে।

মমতাজ বেগমের মামলার চার্জশিটে ঘটনার বিবরন :
২ নং কলামে বর্নিত পলাতক  (১. দানেশ আলী মোল্লা ২. আশরাফ আলী ৩. আব্দুল মমিন হাওলাদার ৪. আব্দুল কালাম চৌকিদার, ৫. আবদুল হাকিম মুন্সি, ৬. মমিন উদ্দিন ৭. মোসলেম মাওলানা) এবং ৩ নং কলামে বর্নিত গ্রেফতারকৃত ( আইউব আলী ও  সুন্দর আলী) আসামীরা ১/১০/৭১ তারিখ রাইফেলসহ মমতাজ বেগমের ঘরে প্রবেশ করে তার স্বামী ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করে, রাইফেলের গুলিতে মমতাজ বেগমের হাতে জখম হয়, তাদের বাড়ির জিনিসপত্র লুট করে, তার (মমতাজ বেগম) ভাই সাহেব আলী ওরফে সিরাজকে অপহরন করে পাকিস্তান আর্মির কাছে তুলে দেয় যারা তাকে পরে হত্যা করে। আসামীদের সবাই রাজাকার এবং দালাল। তদন্তে প্রাথমিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১ নং কলামে বর্নিত চারজনকে (আতাহার আলী হাওলাদার, রুহুল আমিন, সেকেন্দার আলী সিকদার এবং শামসুর রহমান) অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া যেতে পারে।

গত বৃহষ্পতিবার শুনানীর সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বরিশাল থেকে ১৯৭২ সালে  গঠিত স্পেশাল ট্রাইবুনালের রেজিস্ট্রার বই তলবের আবেদন করেন আদালতে। তখন আসামী পক্ষ থেকে মৌখিক আবেদন করে বলা হয় ১৯৭২ সালে পিরোজপুর থেকে মমতাজ বেগমের মামলার জিআর (জেনারেল রেজিস্ট্রার) বইও তলব করা হোক। আদালত তখন আসামী পক্ষকে লিখিত আবেদন করতে বলেন। আজ আসামী পক্ষ পিরোজপুর থেকে জিআর বই তলব এবং মমতাজ বেগমের মামলার চার্জশিট জমা দিয়ে তা বিবেচনায় নেয়ার জন্য একটি দরখাস্ত জমা দেয়।


পূর্বসূত্র :
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে এবং উপস্থিতিতে ইব্রাহীম কুট্টিকে পাড়েরহাট বাজারে  পাকিস্তানী সৈন্যরা গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে যে মামলা করেন তাতে আসামীর তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। সেই মামলার ডকুমেন্ট আসামী পক্ষ ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ তখন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করে আসামী পক্ষ মামলার প্রয়োজনে এ জাল দলিল তৈরি করেছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে তবে আসামী পক্ষের এ ডকুমেন্ট বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি রায়ে।

গত ৩ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নতেৃত্বে আপিল শুনানীর  সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্ট বিষয়ে একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়েন।
আদালত তখন তাকে প্রশ্ন করেন, আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে পারল আর আপনারা পারলেননা কেন? ১৯৭২ সালে আদৌ এ ধরনের কোন এফআইআর হয়েছিল কি-না? পিরোজপুরে অবশ্যই জিআর রেজিস্ট্রেশন বই আছে। আপনারা এটা চাইতে পারতেননা? আপনাদের অনেক বড় মেশিনারীজ আছে। তার মাধ্যমে এগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন? আমরা যদি আসামী পক্ষের দায়ের করা এ ডকুমেন্ট গ্রহণ করি তাহলে অ্যাটলিস্ট আমরা বলতে পারি সাঈদী এ ঘটনায় জড়িত নয়।
আদালত আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ মামলার শুনানী চলছে। আসামী পক্ষ অনেক আগে এ বিষয়ে যুক্তি পেশ করেছে। আপনারা অনেক সময় পেয়েছেন। এ দীর্ঘ সময়ে আপনারা চাইলে এ ডকুমেন্ট বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন।

এরপর গত ১১ মার্চ অ্যাটর্নি জেনারেল আসামী পক্ষের জমা দেয়া মমতাজ বেগমের মামলার মূল সার্টিফাইড কপি আপিল বিভাগের রেকর্ড রুম থেকে দেখার আবেদন করেন। গত ১ এপ্রিল শুনানীর পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ মামলার বিচার ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি চান। এরপর খবর বের হল মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় আলোচিত ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলার নথির খোঁজে অ্যাটর্নি জেনারেল বরিশাল সফর করছেন।

ইব্রাীহম কুট্টি হত্যার অভিযোগ : পাড়েরহাট বাজারের নিকটে সইজুদ্দিন পসারীদের  বাড়িতে কাজ করত ইব্রাহীম কুট্টি। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ৮ মে মাওলানা সাঈদীসহ শান্তি কমিটির অন্যান্য লোকজনের নেতৃত্বে পাকিস্তান সৈন্যরা ওই বাড়িতে আক্রমন করে। এসময় ইব্রাহীম কুট্টি ও অপর আরেকজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পাড়েরহাট বাজারে। পরে মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে পাকিস্তান সৈন্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে পাড়েরহাট বাজারে।

আসামী পক্ষের দাবি : আসামী পক্ষের দাবি ইব্রাহীম কুট্টিকে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর নলবুনিয়ায় তার শশুরবাড়ি থাকা অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার সাথে মাওলানা সাঈদী জড়িত নন। এ দাবির পক্ষে তারা ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলার নথি জমা দিয়েছে আদালতে। মমতাজ বেগমের মামলায় ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে মোট ১৩ জন আসামী করা হয়। আসামীর তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। আসামী পক্ষের দাবি তিনি যদি এর সাথে জড়িত থাকতেন তাহলে অন্তত মমতাজ বেগমের মামলায় তাকে তখন আসামী করা হত।

মমতাজ বেগমের মামলার এফআইর-এ ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিবরন : স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিচার চেয়ে মমতাজ বেগম দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে একটি মামলা করেন। সে মামলার বিবরনে মমতাজ বেগম উল্লেখ করেছেন   তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি তার বাপের বাড়ি নলবুনিয়া থাকা অবস্থায় শান্তি কমিটির লোকজন এবং পাকিস্তান আর্মি গুলি করে  হত্যা করেছে। ঘটনার সময়কাল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১  অক্টোবর ।
মমতাজ বেগমের মামলায় আরো উল্লেখ আছে যে, ওই ঘটনার সময় তাদের বাড়ি থেকে তার ভাই সাহেব  আলী ওরফে সিরাজ এবং তার মা সিতারা বেগমকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পিরোজপুর। পরে তার মাকে ছেড়ে দেয়া হলেও তার ভাই সাহেব আলীকে আর ছাড়া হয়নি। তাকে পাকিস্তান পিরোজপুরে আর্মি গুলি করে হত্যা করে।

মমতাজ বেগমের মামলার বিবরনে বলা হয়েছে ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা করা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবার নলবুনিয়া তার শশুর বাড়ি থাকা অবস্থায়। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের দাবির্  ৮ মে তাকে পাড়েরহাট বাজারে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যের স¤পূর্ণ বিপরীত তথ্য রয়েছে মমতাজ বেগমের মামলার নথিতে।

মমতাজ বেগমের মামলায় ঘটনার বিবরন নিম্নরূপ :

“ঘটনার বিবরন এই যে, বিবাদীগন পরষ্পর যোগাযোগে রাইফেল পিস্তল ছোরা লাঠি ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আমার পিতার ঘর বেড়দিয়া আমার স্বামীর উপর গুলি করিয়া হত্যা করিয়া আমার শরীরে জখম করিয়া আমার মাতা ও ভ্রাতাকে ধরিয়া পিরোজপুর আনিয়া আমার মাতাকে ছাড়িয়া দিয়া আমার ভ্রাতা সিরাজুলকে গুলি করিয়া হত্যা করিয়াছে। আক্রোশের কারণ এই যে, আমি ও আমার স্বামী আমার স্বামীর বারিতে বাদুরা গ্রামে বাসবাস করিতেছিলাম। গত মে মাসে পাক সৈন্য এদেশে আসিয়া যখন অকারনে গুলি করিয়া মানুষ হত্যা করিতে থাকে তখন কতিপয় হিন্দু আমাদের সরনাপন্ন হওয়ায় আমরা তাহাদের আশ্রয় দেওয়ায় পাক সৈন্য ও তাহাদের দালালরা আমার স্বামীকে হত্যা করিতে খোঁজ করিতে থাকায় আমরা ভয়ে ভীত হইয়া আমরা পিত্রালয়ে বসবাস করিতেছিলাম। তথায় বিবাদীগন ক্রোধ করিয়া উক্তরুপ অত্যাচার করিয়াছে।

প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে আমি গর্ভবতী থাকায় আমার পিতা পারোরহাট আওমীলীগ অফিসে জানাইয়া কোন প্রতিকার পাইনাই। তাই এই দরখাস্ত করিতে বিলম্ব হইল।
সে মতে প্রার্থনা, আদালত দয়া করিয়া উক্ত ধারামতে উক্ত বিবাদীগনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট দিয়া ধৃত করাইয়া সুবিচার করিতে আজ্ঞা হয়। ইতি মমতাজ বেগম”

মামলঅর নথি থেকে ঘটনার এ ব্বিরন আসামী পক্ষ থেকে আদালতে পড়ে শোনানো হয়েছে শুনানীর সময়।

মমতাজ বেগমের মামলার এফআইআর এ   আসামীর তালিকা :
মমতাজ বেগম  সে মামলায় মোট ১৩ জনকে আসামী করেছেন।  এরা হল  দানেশ মোল্লা,  আতাহার আলী, আশ্রাব আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী, কালাম চৌকিদার, রুহুল আমিন, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন, সেকোন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা।  এছাড়া পাকিস্তান আর্মিকেও আসামী করা হয় মমতাজ বেগমের মামলায়। কিন্তু মমতাজ বেগমের মামলায় আসামীদের তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

আপিল শুনানীর সময় মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম  শাহজাহান আদালতে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আমাদের এ ডকুমেন্টকে অসত্য এবং জাল আখ্যায়িত করেছে।  তাদের উচিত ছিল পিরোজপুর থেকে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ডাকার ব্যবস্থা করে তাদের দাবি প্রমান করা। কিন্তু তারা তা করেনি। বরং  আমরা থানা থেকে এ মামলার নথিপত্র তলবের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

আসামী পক্ষ যেভাবে সংগ্রহ করল মমতাজ বেগমের মামলার নথি : মাওলানা সাঈদীর ছেলে   ও ১৩ তম সাফাই সাক্ষী মাসুদ সাঈদী ট্রাইব্যুনালে জেরায় বলেছেন, ‘তার বড় ভাই মরহুম রাফিক বিন সাঈদীকে মমতাজ বেগমের মা সিতারা বেগম মামলার মূল সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করেন।’
মামলার বাদী মমতাজ বেগমের মা সিতারা বেগম ১৯৭২ সালে এ মামলার সার্টিফাইড কপি পিরোজপুর থেকে ইস্যু করান এবং সিতারা বেগম দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এ মামলার কপি সংরক্ষন করেছেন।

মমতাজ বেগমের মামলার ঘটনাপ্রবাহ :
মামলার নথি  ঘেটে দেখা যায় ১৯৭২ সালের ৮ মার্চ মমতাজ বেগম পিরোজপুর এসডিও কোর্টে প্রথম এ মামলা করেন। তখন এসডিও ছিলেন একে আজাদ। ওই তারিখে এসডিও মামলাটি পিরোজপুর থানায় পাঠান।

বাদী মমতাজ বেগমের লিখিত অভিযোগ এসডিওর কাছ থেকে পাবার পর পিরোজপুর থানা ১৬/৭/১৯৭২ তারিখ বেলা ১টা ৩০ মিনিটের সময় অভিযোগটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করে। মামলা নং ৯। জিআর (জেনারেল রেজিস্ট্রার) নং ৩৭৮/৭২।

১৭/৭/১৯৭২ তারিখ সকাল ৮টায় থানা থেকে মামলাটি পিরোজপুর কোর্টে পাঠানো হয়। তখন থানার ওসি ছিলেন মেফতাউদ্দিন আহমেদ। তিনি নিজে মামলার তদন্ত শুরু করেন। মামলার এজাহারে ঘটনার তারিখ লেখা আছে ১/১০/১৯৭১। বাংলা ১৩ আশ্নিন ১৩৭৮।
২২ জুলাই ১৯৭২ এসডিও কোর্টে মামলাটি উত্থাপন করা হয়।

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ পুলিশ এ মামলার চার্জশিট দাখিল করে।

৩ অক্টোবর ১৯৭২ এসডিও বরাবর চার্জশিট উপস্থাপন করা হয়।
মমতাজ বেগমের অভিযোগ অনুসারে  এ মামলার তদন্তকালে আসামীদের মধ্য থেকে ২ জনকে আটক করা হয়। এরা হল আইউব আলী চৌকিদার ও সুন্দর আলী দফাদার।

পুলিশের প্রতিবেদনে আসামীদের মধ্য থেকে যাদেরকে পলাতক দেখানো হয় তারা হল
১.    দানেশ মোল্লা
২.    আশরাফ আলী
৩.     আব্দুল মান্নান
৪.    কালাম চৌকিদার
৫.    আব্দুল হাকিম মুন্সি
৬.    মমিন উদ্দিন
৭.    মোসমেল মওলানা।

মামলা চলাকালে পলাতক আসামীদের মধ্য থেকে আরো ২ জনকে আটক করা হয়। ১৯৭২ সালের ৭ অক্টোবর আব্দুল মান্নান এবং ১৯৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মমিন উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয় যা মেজিস্ট্রেট কোর্টে সংরক্ষিত জিআর বইতে ৩৭৮/৭২ জিআর কপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়।
জিআর কপি পর্যালোচনা করে আরো দেখা যায় মমতাজ বেগমের দায়ের করা ওই মামলা থেকে আসামী আতাহার আল হাওলাদার, রুহুল আমিন সেকেন্দার শিকদার, শামসুর রহমান (তৎকালীন পিরোজপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই) কে অব্যাহতি দেয় কোর্ট।

মমতাজ বেগমের দায়ের করা মামলাটি ২৭/১১/১৯৭২ সালে তৎকালীন এসডিও এমএ হাশেম মিয়া স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল জাজ বরিশাল প্রেরন করেন।
মামলার জিআর বইয়ে দেখা যায় ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ সালে মামলার কার্যক্রমের জন্য মামলাটি বাকেরগঞ্জ ডিসির কাছে পাঠানো হয়েছিল। জিআর বইয়ের ১৭ নং কলামে লেখা আছে-
ঔঁফরপরধষ ৎবপড়ৎফ ংবহঃ ঃড় উঈ ইধশবৎমড়হম ঢ়ৎড়ারফব ঃযরং সবসড় ঘড় ২৫৫ ঔঁফরপরধষ, ফধঃবফ ১৭/২/১৯৮১ ারফব ঃযরং পড়সঢ়ষঃ সপপ ঘড় ১৮৯/৮১.




বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল// রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ

মেহেদী হাসান, ১০/৪/২০১৪
বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মোফাসসিরে কুরআন  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানীতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আজ যুক্তি পেশ শেষ করেন। আগামী রোববার রাষ্ট্রপক্ষের পেশকৃত যুক্তির জবাব প্রদানের সুযোগ পাবে আসামি পক্ষ।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানীতে বলেন, ট্রইব্যুনাল সঠিকভাবেই মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুদন্ড দিয়েছে এবং ট্রাইব্যুনাল কোন ভুল করেনি। তিনি আদালতের কাছে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রদত্ত মৃত্যুদন্ডের রায় বহালের আবেদন করেন। এছাড়া মাওলানা সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল অপর যে ছয়টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে কিন্তু সাজা উল্লেখ করেনি সেগুলোতেও সাজা উল্লেখের দাবি জানান। 
আদালতের কার্যক্রম শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল তার অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ট্রাইব্যুনালের রায় অবশ্যই বহাল থাকবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তি উপস্থাপন শেষে ১৯৭২ সালে গঠিত বরিশাল স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বই তলবের আবেদন করেন। তখন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান পিরোজপুর আদালত থেকে ১৯৭২ সালে দায়ের করা  মমতাজ বেগমের মামলার জিআর বই তলবেরও মৌখিক আবেদন করেন। প্রধান বিচারপতি তাকে লিখিত আবেদন জমা দিতে বলেন।
অ্যাডভোকেট শাহাজাহন বলেন, আগামী রোববার তিনি আবেদন জমা দেবেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তার লিখিত জবাব আজ আদালতে জমা দিয়েছে আসামী পক্ষ। এর মধ্যে অপহরনের শিকার বিশাবালীর ভাই সুখরঞ্জন বালী এবং তার স্ত্রীর  সাক্ষাতকারের স্ক্রিপ্টও রয়েছে।

প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন। গতকাল শুনানীর শুরুতে আদালত আসামী পক্ষের দাখিল করা মমতাজ বেগমের মামলার মূল সার্টিফাইড কপি দেখেন। এসময় এ কপি বিষয়ে আদালত বেশ কিছু প্রশ্ন তোলেন।
কপিটি হাতে পাওয়ার পর প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি বলছিলেন ফটোকপির ওপর প্রদর্শনী মার্ক করা হয়েছে? এরপর তিনি নথিটি নেড়েচেড়ে দেখে বলেন, আপনার সাবমিশন সঠিক। ফটোকপির ওপর প্রদর্শনী মার্ক করা হয়েছে। ফটোকপির সাথে সার্টিফাইড কপি স্টাপলার মারা। ফটোকপির মধ্যে সার্টিফাইড কপি। সার্টিফাইড কপি এখানে আসল কি করে তাহলে?
এপর্যায়ে একজন বিচারপতি আসামী পক্ষের উদ্দেশে বলেন, এ নথি প্রদর্শন করার সময় সাক্ষী কি বলেছিল পড়ে শোনান। অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান ১১ তম সাফাই সাক্ষীর জবানবন্দী পড়ে শুনিয়ে বলেন, মমতাজ বেগমের মামলার জাবেদা নকল ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হল। এই সেই মূল সার্টিফাইড কপি যা প্রদর্শনী ‘এ’ হিসেবে চিহ্নিত হল।
তখন ওই বিচারপতি বলেন, সাক্ষীতো বলেছে মূল সার্টিফাইড কপি দাখিল করা হয়েছে এবং প্রদর্শনী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ভুল করেছে। ট্রাইব্যুনাল ফটোকপির ওপর প্রদর্শনী মার্ক করেছে। ট্রাইব্যুনাল পরে প্রদর্শনী মার্ক করলে সেজন্য সাক্ষী দায়ী হবেনা।
প্রধান বিচারপতি তখন প্রশ্ন করেন ট্রাইব্যুনালে ডকুমেন্ট প্রদর্শনের নিয়ম কি। তখন আসামী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন বলেন, আমরা সরাসরি হাতে হাতে ট্রাইব্যুনালের কাছে কপিটি দিয়েছি এবং তা সাফাই সাক্ষীর মাধ্যমে প্রদর্শনের পর প্রদর্শনী হিসেবে চিহ্নিত হয়। তিনি বলেন, অনেক অনেক ডকুমেন্টের মূল কপি আদালতে প্রদর্শন করে বলা হয়েছে এই হল এর ফটোকপি। পরে মূল কপির সাথে ফটোকপির মিল প্রমান সাপেক্ষে ফটোকপির ওপর প্রদর্শনী মার্ক করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল আইনে ফটোকপি গ্রহনের নিয়ম আছে।

আসামি পক্ষের দায়ের করা মমতাজ বেগমের মামলার নথি বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আসামি পক্ষ দাবি করেছে এ মামলার চার্জশিট হয়েছিল। চার্জশিট যদি হয় তাহলে এফআইআর আর নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়না। তারা বলেছে চার্জশিট হয়েছিল । তাহলে তারা চার্জশিট আনতে পারলনা কেন? তিনি বলেন, অনেক সময় এফআইআরে মূল আসামীর নাম নাও থাকতে পারে। পরে চার্জশিটে মূল আসামির নাম যোগ হতে পারে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা প্রথমে মূল আসামীদের নাম ছিলনা। পরে মূল আসামীর নাম যোগ হয়েছে।  ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
এসময় একজন বিচারপতি বলেন, চাজশিটে আসামীর নাম পরিবর্তন হলেও ঘটনাস্থল এবং ঘটনার তারিখ তো পরিবর্তন হবেনা (মমতাজ বেগমের মামলায় এবং আসামী পক্ষের অভিযোগে ঘটনাস্থল এবং ঘটনার তারিখ সম্পূর্ণ ভিন্ন  হিসেবে উল্লেখ আছে।)
মমতাজ বেগমের মামলার নথিকে জাল আখ্যায়িত করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ নথি তো বিবেচনায়ই আনা যেতে পারেনা।
একজন বিচারপতি প্রশ্ন করেন নথিটিতে সব পাতায় সিল আছে কি-না। তখন পরীক্ষা করে দেখা যায় কপিটির শেষের পাতায় সিল আছে। মাঝখানের পাতায় কর্তৃপক্ষের সিল নেই। আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহজাহান তখন এভিডেন্স অ্যাক্ট পড়ে শুনিয়ে আদালতে বলেন, শেষ শুধু শেষ পৃষ্ঠায় সিল থাকারও নিয়ম আছে। তিনি এসময় চলতি বছর ইস্যু করা একটি  সার্টিফাইড কপি আদালতে দেখিয়ে  বলেন, এ কপিটিতে শুধু শেষের পাতায় কর্তৃপক্ষের সিল আছে। সব পাতায় নেই। আদালত তখন মন্তব্য করেন মাঝখানে যাতে নতুন পাতা কেউ যোগ করতে না পারে সেজন্য সব পাতায় সিল মারার নিয়ম করার হয়েছে।

মমতাজ বেগমের মামলার নথি জাল-অ্যাটর্নি জেনারেল

মেহেদী হাসান, ৯/৪/২০১৪
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে বলেছেন, আসামি পক্ষ ইব্রাহিম কুট্টি হত্য বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলার যে এফআইআর কপি জমা দিয়েছে তা জাল এবং মিথ্যা। বরিশাল সেশনজজ আদালত এবং পিরোজপুর থানায় এ মামলার মূল কপি পাওয়া যায়নি। আসামী পক্ষ মামলার প্রয়োজনে এ জাল কপি তৈরি করেছে। তাই মমতাজ বেগমের মামলার নথি হিসেবে   আসামী পক্ষের দাখিল করা এ এভিডেন্স  বিবেচনায় নেয়  উচিত হবেনা।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আজ আদালতে বলেন, ইব্রাহীম কুট্টির হত্যা বিষয়ে মামলার নথির খেঁজে তিনি দুই দফা বরিশাল এবং একবার পিরোজপুর সফর করেছেন। কিন্তু সেখানে এ মামলার কাগজ খুজে পাওয়া যায়নি।

মমতাজ বেগমের দায়ের করা মামলার এফআইআর নথির  সার্টিফাইড কপি আসামী পক্ষ ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছে। সেটি প্রদর্শনী ‘এ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে । এফআইআর নথির সার্টিফাইড কপি বা প্রদর্শনী ‘এ’ আমলে না নেয়ার জন্য গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন আপিল বিভাগে। গতকাল যুক্তি উপস্থাপনের সময় তিনি এ আবেদন পড়ে শোনান।
আসামী পক্ষের দায়ের করা ১৯৭২ সালের মামলার কপি রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জাল মিথ্যা এবং সৃজনকৃত হিসেবে আখ্যায়িত করার পর আদালত মামলার মূল সার্টিফাইড কপি দেখতে চেয়েছেন। আগামীকাল তা আপিল বিভাগের রেকর্ড রুম থেকে আদালতে হাজির করার জন্য বলেছেন আদালত।

মাওলানা সাঈদীর মামলার নথির খোঁজে অ্যাটর্নি জেনারেল বরিশাল এবং পিরোজপুর সফর করেছেন মর্মে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রচারিহ হয়। তবে সাঈদীর মামলার নথির খোঁজে বরিশাল এবং পিরোজপর গেছেন একথা অস্বীকার করেন তিনি। কিন্তু আজ অ্যাটর্নি জেনারেল তার আবেদনে লিখিত আকারে জানান এ মামলার কাজে অর্থাৎ ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে মমতাজ বেগমের মামলার নথির খোঁজেই তিনি এ সফর করেছেন ।

ট্রাইব্যুনাল মাওলানা সাঈদীকে আটটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আজ এ আটটি অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষে দেলোয়ার শিকদার নাম প্রসঙ্গে যুক্তি পেশ করেন। এরপর তিনি আসামী পক্ষের দায়ের করা মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্ট বিষয়ে লিখিত আবেদন পেশ করেন এবং আদালতে তা পড়ে শোনান। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।

মমতাজ বেগমের নথি বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এর আবেদন :
আসামী পক্ষের দায়ের করা মমতাজ বেগমের মামলার এফআইআর কপি বা প্রদর্শনী ‘এ’ আদালত কর্তৃক বিবেচনায় না নেয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল লিখিত আবেদন ১০টি যুক্তি তুলে ধরেছেন।
লিখিত আবেদনে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আসামী পক্ষের দায়ের করা কথিত এফআইআর কপি বিষয়ে তদন্তের জন্য তিনি গত ২৯/৩/২০১৪ তারিখে পিরোজপুর সফর করেন। পিরোজপুর এসপির তত্ত্বাবধানে থানার ওসির মাধ্যমে এ মামলার রেকর্ড খোঁজ হয় কিন্তু কোন রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে বিচারচলাকালে আসামী পক্ষ দাবি করেছে  এ মামলার চার্জশিট হয়েছিল।  সে মোতাবেক এ চার্জশিট বরিশাল স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল যা ১৯৭২ সালে গঠিত হয় সেখানে পাঠানোর কথা। সেখানে চার্জশিট পাওয়া যেতে পারে এ লক্ষ্যে আমি বরিশাল যাই এবং জেলাজজ আদালতের রেকর্ডরুমে খোঁজ করি। কিন্তু রেকর্ড কিপার আমাদের জানায় স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের কেস নম্বর ছাড়া এ রেকর্ড পাওয়া যাবেনা। তাই আমি আমার সহকর্মী নিয়ে আবার বরিশাল যাই এবং ১/৪/২০১৪ ও ২/৪/২০১৪ তারিখ ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে দায়ের করা ৯ নং মামলার নথি খোঁজ করা হয়। কিন্তু নেজারাত আমাদের জানায়  ওই তারিখের স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের কেস নাম্বার পাওয়া যাচ্ছেনা। স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল ১৯৭২ এর  রেজিস্ট্রার  বইয়ে  ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত যেসব মামলার রেকর্ড রয়েছে তাতে পিরোজপুরে ১৯৭২ সালে দায়ের করা ৯ নং মামলার কোনকিছু নেই।

অ্যাটর্নি জেনারেল লিখিত আবেদনে বলেন, আসামী পক্ষ দাবি করেছে মমতাজ বেগমের মামলায় চার্জশিট হয়েছিল। সে হিসেবে স্বাভাবিকভাবে তাদের এ মামলার চার্জশিটও পাওয়ার কথা। কিন্তু এটা আশ্চর্য বিষয় যে, তারা এ মামলার চার্জশিটের কোন সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে পারেনি।
আাসামী পক্ষের দায়ের করা কপি থেকে দেখা যায় মমতাজ বেগম ২১/১০/১৯৭২ সালে মামলার সার্টিফাইড কপি লাভ করেন। মমতাজ বেগম কেন এ কপি সংগ্রহ করল এবং কেনই বা ২০১১ সাল পর্যন্ত এটা সংরক্ষন করল সে বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা নেই। আসামী পক্ষ তাদের সমস্ত কাগজপত্র অভিযুক্তর ছেলে ও ১৩ নং সাফাই সাক্ষীর মাধ্যমে দাখিল করেছে কিন্তু এই কাগজটি ১১ নং সাফাই সাক্ষীর মাধ্যমে দাখিল করিয়েছে এবং প্রদর্শনী ‘এ’ মার্ক করা হয়েছে।  যেহেতু এটা জাল এবং বানানো তাই এটা ১৩ নং সাক্ষীর মাধ্যমে দাখিল করানো হয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম লিখিত আবেদনে আরো বলেন, এফআইআর এ কোন আসামীর নাম নাও থাকতে পারে বিভিন্ন কারনে। কিন্তু তদন্তের পর প্রকৃত আসামীদের নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। মমতাজ বেগমের মামলাটি সত্যি হলে এ মামলার একটি চার্জশিট আসামী পক্ষ অবশ্যই সংগ্রহ করতে পারত।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তাই নিম্নলিখিত কারনে প্রদর্শনী ‘এ’ বিবেচনায় নেয়া ঠিক হবেনা।

ক)    মূল এফআইআর কপি পিরোজপুর পুলিশ স্টেশন বা বরিশাল সেশন জজ আদালত কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা। কাজেই আসামী পক্ষের জমা দেয়া ডকুমেন্ট এর সত্যতা যাচাই করা যাচ্ছেনা।
খ)    আসামী পক্ষের দাবি এ মামলার চার্জশিট হয়েছিল। যেহেতু তারা এ মামলার চার্জশিট জমা দিতে পারেনি কাজেই মাওলানা সাঈদী  ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার সাথে জড়িত ছিলনা মর্মে আসামী পক্ষের দাবি সঠিক নয়।
গ)    কথিত এফআইআর এ ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিবরনের সাথে তারই তিনজন ঘণিষ্ঠ আত্মীয়ের বক্তব্যের সাথে মিল নেই।
ঘ)    ডকুমেন্টটি আইন অনুযায়ী দাখিল করা হয়নি।
ঙ)    একজন গ্রাম্য দরিদ্র মহিলা ১৯৭২ সালে  সার্টিফাইড কপিটি তোলেন বলে বলা হচ্ছে। গ্রামের একজন দরিদ্র মহিলার কাছে ৪০ বছর ধরে সংরক্ষিত কপিটি দেখতে এত নতুন হতে পারেনা।
চ)    কপিটিতে সেসময়কার ট্রাইব্যুনালের কোন সিল নেই এবং সার্টিফাইড কপির একটি ফটোকপিতে প্রদর্শনী  ‘এ’ মার্ক করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে।
ছ)     অভিযোগের প্রতি পাতায় উপরে ডানদিকে বাদীর স্বাক্ষর থাকার কথা কিন্তু তা নেই।
জ)    অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত এবং বাদীর পূর্ণ ঠিকানা থাকতে হয়। কিন্তু তা নেই। 
ঝ)     ১৩ তম সাফাই স্বাক্ষীর বক্তব্য অনুযায়ী প্রদর্শনী ‘এ’ সিতারা বেগমের কাছে ছিল। ইব্রাহীমরে স্ত্রী মমতাজ বেগম তার মা সিতারা বেগমের কাছ থেকে নিয়ে ১৩ তম সাক্ষীর বড়ভাই রাফিক সাঈদীকে প্রদান করে। এরপর সে তা ১৩ তম সাফাই স্বাক্ষীকে দেয় ১৩ তম সাক্ষী আবার তা ১১ তম সাক্ষীকে দেয় যে কিনা জামায়াতের একজন নেতা। এ ডকুমেন্ট দাখিলের সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়েছে।
ঞ)    এসব কারনে আসামী পক্ষের দায়ের করা কপি প্রদর্শনী ‘এ’ মিথ্যা, জাল এবং মামলার প্রয়োজনে সৃজন করা হয়েছে। সে কারনে এটা বিবেচনায় নেয়া সটিক নয়।

অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি পেশ শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল শিকদার নাম প্রসঙ্গ এবং মমতাজ বেগমের মামলার নথি বিষয়ে যুক্তি পেশ করছিলেন। এ সময় একজন বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আসামী পক্ষের দায়ের করা মমতাজ বেগমের  মামলার নর্থির বিরুদ্ধে আপনি কি নিয়ে এসেছেন বলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এরপর তার আবেদন থেকে পড়ে শোনান। এসময় আদালত বলেন, আপনি আমাদের কাছ থেকে সময় নিয়ে পটুয়াখালি বেড়াতে গিয়েছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি এ মামলার কাজেই বরিশাল গিয়েছি। মমতাজ বেগমের মামলার নথিকে জাল আখ্যায়িত করে যুক্তি পেশের সময় একজন বিচারপতি বলেন, আপনি বলতে চাচ্ছেন মমতাজ বেগমের মামল ফেক?
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, হ্যা ফেক। কারণ ইব্রাহীম কুট্টির তিনজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় যথা তার শাশুড়ী সিতারা বেগম, শ্যালিকা রানী বেগম এবং শ্যালক মোস্তফা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছে তার সাথে মমতাজ বেগমের মামলার কথিত এফআইআর এ বর্নিত ঘটনার মিল নেই।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এ তিন সাক্ষীর   জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
আদালত এসময় বলেন, আসামী পক্ষ ৪০ বছর আগে তোলা মামলার যে সার্টিফাইড কপি জমা দিয়েছে তা কোথায়? আসামী পক্ষ এবং রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয় সেটা আপিল বিভাগের রেকর্ডরুমে জমা  আছে। প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন এসময় অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, সেটা নিয়ে আসলেননা কেন? আপনাদের না সেটা দেখার অনুমতি দিলাম?
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ৪০ বছর আগের কপিটি কেমন তা দেখা দরকার। আদালত কপিটি রেকর্ডরুম থেকে আগামীকাল আদালতে হাজির করার আদেশ দেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তারা যে মূল সার্টিফাইড কপিটি জমা দিয়েছে তাতে প্রদর্শনী মার্ক করা হয়নি। প্রদর্শনী মার্ক করা হয়েছে ফটোকপির ওপর। আদালত বলেন, বলেন কি? এ পর্যায়ে একটা বেজে যাওয়ায় বিচার কার্যক্রম আগামীকাল  বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মিজানুল ইসলাম। মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্ট বিষয়ে আজ অ্যাটর্নি জেনারেল এর দাবি বিষয়ে তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এর দাবি বিষয়ে আমরা লিখিত জবাব দেব। অ্যাটর্নি জেনালে বলেছেন, আমাদের জমা দেয়া কপিতে সেসময়কার ট্রাইব্যুনালের সিল নেই। কপিটি পিরোজপুর থেকে ইস্যু হয় ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আগেই। কাজেই ট্রাইব্যুনালের সিল থাকবে কেমন করে। অ্যাটর্নি জেনারেল এর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলছি তিনি কি করে এসব অযৌক্তিক প্রশ্ন উত্থাপন করলেন তা আমাদের বুঝে আসেনা। মমতাজ বেগমের মামলার জিআর কপি বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এর আবেদনে একটি কথাও নেই। আমাদের কাছে আছে জিআর কপি আছে এবং ট্রাইব্যুনালে তা আমরা জমা দিতে চেয়েছি কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন খারিজ করেছে। আমরা আরো আবেদন করেছিলাম পিরোজপুর থেকে মামলার জিআর কপি তলব করা হোক। তাও খারিজ হয়। আমরা চার্জশিট জমা দেইনি বলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। জিআর কপিতে মামলার চার্জশিট  হয়েছিল মর্মে উল্লেখ আছে।
মিজানুল ইসলাম বরেন, একজন গ্রাম্য মহিলা কেন সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করল এবং তা কেন এতদিন সংরক্ষন করল বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সে  মামলার বাদী। মমতাজ বেগমের  স্বামী, ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতরা সিতারা বেগমের সন্তান এবং জামাই। তারা এ কপি সংগ্রহ করে রাখবেনা তো কে রাখবে? তাদের কেন কোর্টে আনা হলনা? মমতাজ বেগম জীবিত থাকা সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তা কেন তার কাছে গেলনা এবং তাকে স্বাক্ষী করলনা?
কাজেই আমাদের ডকুমেন্ট জাল এ পর্যায়ে আর এ প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

শুনানীর সময় রাষ্ট্রপক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে আনোয়ার।
আসামী পক্ষে অন্যান্যের মধ্যে  ছিলেন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন এর সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, এসএম শাহজাহান, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, মহিনুর ইসলাম, মতিয়ার রহমান, মোসাদ্দেক বিল্লাহ।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে একটি মামলা করেন পিরোজপুর আদালতে। সে মামলায় মমতাজ বেগম  ১৩  জনকে আসামী করেন।  আসামীর তালিকায়  মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। সে মামলার কপি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় আসামী পক্ষ।



মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল শুনানী অব্যাহত

৮/৪/২০১৪
এক সপ্তাহ মুলতবি থাকার পর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল শুনানী পুনরায় শুরু হয়েছে আজ। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৬ নং অভিযোগ গৌরাঙ্গসাহার তিন বোনকে পাকিস্তানী সেনাদের হাতে তুলে দেয়া বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। এরপর বিচার কার্যক্রম আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৬, ৭, ৮, ১০, ১১ এবং  ১৪ নং অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। মাওলানা সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল মোট আটটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। এ অভিযোগগুলোর বিষয়েই আপিল শুনানী চলছে।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অন্যান্য আইনজীবীদের মধ্যে বাংলাদেশ  সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন এর সভাপতি  খন্দকার মাহবুব হোসেন, এসএম শাহজাহান, ব্যারিস্টার তানভির আহেমদ আল আমিন, গিয়াসউদ্দিন মিঠু, তারিকুল ইসলাম,  মহিনুর ইসলাম, মতিয়ার রহমান, মোসদ্দেক বিল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা ও ইব্রাহীম কুট্টি ইস্যু/// তিন বছর পর মমতাজ বেগমের মামলার নথির খোঁজে রাষ্ট্রপক্ষ

মেহেদী হাসান,  ৬/৪/২০১৪
মাওলানা দেলাওয়ার  হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  আলোচিত ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা মামলার নথির খোঁজ করছে রাষ্ট্রপক্ষ। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের ১৯৭২ সালে দায়ের করা  মামলার নথি আসামী পক্ষ জমা দিয়েছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে। তিন বছরের মাথায় রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার নথির খোঁজ করছে যখন ট্রাইব্যুনালে এ মামলার রায় হয়ে গেছে এবং আপিল বিভাগেও এ মামলার শুনানী একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা মামলার নথির খোঁজে পিরোজপুর এবং বরিশাল সফর করেছেন।  গত ২ এবং ৩ এপ্রিল বরিশাল জেলাজজ আদালতের রেকর্ড রুমে তিনি এ মামলার নথির খোঁজ করেছেন। এর আগে তিনি পিরোজপুর সফর করেন একই উদ্দেশে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে নির্দিষ্ট করে বলতে অস্বীকার করেছেন ঠিক কি কাজে তিনি বরিশাল গেছেন এবং কোন মামলার কাগজ পত্র খোঁজ করছেন। তবে স্থানীয় সাংবাদিকরা তাদের প্রতিবেদনে বরিশাল জেলাজজ আদালতের সূত্র এবং বিভিন্ন আইনজীবীদের বরাতে উল্লেখ করেছেন যে, ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা মামলার নথির খোঁজেই অ্যাটর্নি জেনারেল বরিশাল গেছেন।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আলোচিত অভিযোগ হল ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা। এ অভিযোগে  ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। বর্তমানে এ মামলার আপিল শুনানী শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আপিল শুনানীর এ পর্যায়ে আবারো ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা এবং তার স্ত্রী মমতাজ বেগম কর্তৃক ১৯৭২ সালে দায়ের করা মামলার ডকুমেন্ট আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে এবং উপস্থিতিতে ইব্রাহীম কুট্টিকে পাড়েরহাট বাজারে  পাকিস্তানী সৈন্যরা গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে যে মামলা করেন তাতে আসামীর তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। সেই মামলার ডকুমেন্ট আসামী পক্ষ ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ তখন অভিযোগ করে আসামী পক্ষ মামলার প্রয়োজনে এ জাল দলিল তৈরি করেছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে তবে আসামী পক্ষের এ ডকুমেন্ট বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি রায়ে।

গত ৩ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নতেৃত্বে আপিল শুনানীর  সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্ট বিষয়ে একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়েন।
আদালত তখন তাকে প্রশ্ন করেন, আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার ডকমেন্ট সংগ্রহ করতে পারল আর আপনারা পারলেননা কেন? ১৯৭২ সালে আদৌ এ ধরনের কোন এফআইআর হয়েছিল কি-না? পিরোজপুরে অবশ্যই জিআর রেজিস্ট্রেশন বই আছে। আপনারা এটা চাইতে পারতেননা? আপনাদের অনেক বড় মেশিনারীজ আছে। তার মাধ্যমে এগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন? আমরা যদি আসামী পক্ষের দায়ের করা এ ডকুমেন্ট গ্রহণ করি তাহলে অ্যাটলিস্ট আমরা বলতে পারি সাঈদী এ ঘটনায় জড়িত নয়।
আদালত আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ মামলার শুনানী চলছে। আসামী পক্ষ অনেক আগে এ বিষয়ে যুক্তি পেশ করেছে। আপনারা অনেক সময় পেয়েছেন। এ দীর্ঘ সময়ে আপনারা চাইলে এ ডকুমেন্ট বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন।

এরপর গত ১১ মার্চ অ্যাটর্নি জেনারেল আসামী পক্ষের জমা দেয়া মমতাজ বেগমের মামলার মূল সার্টিফাইড কপি আপিল বিভাগের রেকর্ড রুম থেকে দেখার আবেদন করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে তিনি এ কপি দেখার অনুমতি পান। তবে আসামী পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এখন পর্যন্ত তাদের কাউকে এ ডাকা হয়নি এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে। গত ১ এপ্রিল শুনানীর পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ মামলার বিচার ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি চান। এরপর খবর বের হল মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় আলোচিত ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলার নথির খোঁজে অ্যাটর্নি জেনারেল বরিশাল সফর করছেন।
ইব্রাীহম কুট্টি হত্যার অভিযোগ : পাড়েরহাট বাজারের নিকটে সইজুদ্দিন পসারীদের  বাড়িতে কাজ করত ইব্রাহীম কুট্টি। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ৮ মে মাওলানা সাঈদীসহ শান্তি কমিটির অন্যান্য লোকজনের নেতৃত্বে পাকিস্তান সৈন্যরা ওই বাড়িতে আক্রমন করে। এসময় ইব্রাহীম কুট্টি ও অপর আরেকজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পাড়েরহাট বাজারে। পরে মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে পাকিস্তান সৈন্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে পাড়েরহাট বাজারে।

আসামী পক্ষের দাবি : আসামী পক্ষের দাবি ইব্রাহীম কুট্টিকে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর নলবুনিয়ায় তার শশুরবাড়ি থাকা অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার সাথে মাওলানা সাঈদী জড়িত নন। এ দাবির পক্ষে তারা ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলার নথি জমা দিয়েছে আদালতে। মমতাজ বেগমের মামলায় ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে মোট ১৩ জন আসামী করা হয়। আসামীর তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। আসামী পক্ষের দাবি তিনি যদি এর সাথে জড়িত থাকতেন তাহলে অন্তত মমতাজ বেগমের মামলায় তাকে তখন আসামী করা হত।

মমতাজ বেগমের মামলায় ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিবরন : স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিচার চেয়ে মমতাজ বেগম দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে একটি মামলা করেন। সে মামলার বিবরনে মমতাজ বেগম উল্লেখ করেছেন   তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি তার বাপের বাড়ি নলবুনিয়া থাকা অবস্থায় শান্তি কমিটির লোকজন এবং পাকিস্তান আর্মি গুলি করে  হত্যা করেছে। ঘটনার সময়কাল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১  অক্টোবর ।
মমতাজ বেগমের মামলায় আরো উল্লেখ আছে যে, ওই ঘটনার সময় তাদের বাড়ি থেকে তার ভাই সাহেব  আলী ওরফে সিরাজ এবং তার মা সিতারা বেগমকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পিরোজপুর। পরে তার মাকে ছেড়ে দেয়া হলেও তার ভাই সাহেব আলীকে আর ছাড়া হয়নি। তাকে পাকিস্তান পিরোজপুরে আর্মি গুলি করে হত্যা করে।

মমতাজ বেগমের মামলার বিবরনে বলা হয়েছে ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা করা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবার নলবুনিয়া তার শশুর বাড়ি থাকা অবস্থায়। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের দাবির্  ৮ মে তাকে পাড়েরহাট বাজারে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যের স¤পূর্ণ বিপরীত তথ্য রয়েছে মমতাজ বেগমের মামলার নথিতে।

মমতাজ বেগমের মামলায় ঘটনার বিবরন নিম্নরূপ :

“ঘটনার বিবরন এই যে, বিবাদীগন পরষ্পর যোগাযোগে রাইফেল পিস্তল ছোরা লাঠি ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আমার পিতার ঘর বেড়দিয়া আমার স্বামীর উপর গুলি করিয়া হত্যা করিয়া আমার শরীরে জখম করিয়া আমার মাতা ও ভ্রাতাকে ধরিয়া পিরোজপুর আনিয়া আমার মাতাকে ছাড়িয়া দিয়া আমার ভ্রাতা সিরাজুলকে গুলি করিয়া হত্যা করিয়াছে। আক্রোশের কারণ এই যে, আমি ও আমার স্বামী আমার স্বামীর বারিতে বাদুরা গ্রামে বাসবাস করিতেছিলাম। গত মে মাসে পাক সৈন্য এদেশে আসিয়া যখন অকারনে গুলি করিয়া মানুষ হত্যা করিতে থাকে তখন কতিপয় হিন্দু আমাদের সরনাপন্ন হওয়ায় আমরা তাহাদের আশ্রয় দেওয়ায় পাক সৈন্য ও তাহাদের দালালরা আমার স্বামীকে হত্যা করিতে খোঁজ করিতে থাকায় আমরা ভয়ে ভীত হইয়া আমরা পিত্রালয়ে বসবাস করিতেছিলাম। তথায় বিবাদীগন ক্রোধ করিয়া উক্তরুপ অত্যাচার করিয়াছে।

প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে আমি গর্ভবতী থাকায় আমার পিতা পারোরহাট আওমীলীগ অফিসে জানাইয়া কোন প্রতিকার পাইনাই। তাই এই দরখাস্ত করিতে বিলম্ব হইল।
সে মতে প্রার্থনা, আদালত দয়া করিয়া উক্ত ধারামতে উক্ত বিবাদীগনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট দিয়া ধৃত করাইয়া সুবিচার করিতে আজ্ঞা হয়। ইতি মমতাজ বেগম”


মমতাজ বেগমের মামলার আসামীর তালিকা :

মমতাজ বেগম  সে মামলায় মোট ১৩ জনকে আসামী করেছেন।  এরা হল  দানেশ মোল্লা,  আতাহার আলী, আশ্রাব আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী, কালাম চৌকিদার, রুহুল আমিন, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন, সেকোন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা।  এছাড়া পাকিস্তান আর্মিকেও আসামী করা হয় মমতাজ বেগমের মামলায়। কিন্তু মমতাজ বেগমের মামলায় আসামীদের তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।


আপিল শুনানীর সময় মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম  শাহজাহান আদালতে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আমাদের এ ডকুমেন্টকে অসত্য এবং জাল আখ্যায়িত করেছে।  তাদের উচিত ছিল পিরোজপুর থেকে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ডাকার ব্যবস্থা করে তাদের দাবি প্রমান করা। কিন্তু তারা তা করেনি। বরং  আমরা থানা থেকে এ মামলার নথিপত্র তলবের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

আসামী পক্ষ যেভাবে সংগ্রহ করল মমতাজ বেগমের মামলার নথি : মাওলানা সাঈদীর ছেলে এবং ১৩ তম সাফাই সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে জেরায় বলেছেন, ‘তার বড় ভাই মরহুম রাফিক বিন সাঈদীকে মমতাজ বেগমের মা সিতারা বেগম মামলার মূল সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করেন।’
মামলার বাদী মমতাজ বেগমের মা সিতারা বেগম ১৯৭২ সালে এ মামলার সার্টিফাইড কপি পিরোজপুর থেকে ইস্যু করান এবং সিতারা বেগম দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এ মামলার কপি সংরক্ষন করেছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল এর বক্তব্য : ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা মামলার খোঁজে বরিশাল এবং পিরোজপুর সফর বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বিষয়ে আজ বিকালে ফোনে কথা  হয় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সাথে। তাকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার নথির খোঁজে বরিশাল এবং পিরোজপুর সফর করেছেন মর্মে খবর বের হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি তাদেরকে বলিনি যে, আমি সাঈদীর মামলার কাজে এবং ইব্রাহীম কুট্টির হত্যা মামলার নথির খোঁজে বরিশাল এবং পিরোজপুর গিয়েছি। আমি অন্য একটি কাজে গিয়েছি।
কিন্তু স্থানীয় সাংবাদিকরা জেলাজজ সূত্র এবং আইনজীবীদের বরাত দিয়ে বলেছেন, আপনি এ মামলার কাজেই বরিশাল গেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা তাদের অনুমান। তারা দেখেছে আমি দুইদিন জেলাজজ আদালতের রেকর্ডরুমে ছিলাম। সেকারনে তারা এটা বলেছে হয়ত।
তাহলে আমরা কি বলব যে, আপনি সাঈদীর মামলার কাজে নয় অন্য কোন মামলার কাজে বরিশাল গেছেন? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, না আমি এটাও বলতে চাইনা। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাইনা।
আসামী পক্ষ তিন বছর আগে মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে। তখন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কোন খোঁজ খবর নেয়নি কেন এবং এখন এতদিন পরেই বা কেন খোঁজ করছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তারা আমার কলিগ। তাদের আমি কিভাবে সমালোচনা করব। আপনারা তো সবই বোঝেন ।

মাওলানা সাঈদীর মামলায় নিযুক্ত আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল সাঈদীর মামলায় যুক্তি পেশ করছিলেন। তাই স্বাভাবিকভাবে অনুমান করা যায় তিনি এ মামলার কাজেই বরিশাল গেছেন। আমরা ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি ট্রাইব্যুনালে। রাষ্ট্রপক্ষ তখন একে জাল বলে আখ্যায়িত করলেন। আমরা তখন সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে মামলার নথি তলবের আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরোধীতা করে। এখন তিন বছর পর কেন তারা এ মামলার নথির খোঁজ করছে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।

মমতাজ বেগমের মামলার ঘটনাপ্রবাহ :
মামলার নথি  ঘেটে দেখা যায় ১৯৭২ সালের ৮ মার্চ মমতাজ বেগম পিরোজপুর এসডিও কোর্টে প্রথম এ মামলা করেন। তখন এসডিও ছিলেন একে আজাদ। ওই তারিখে এসডিও মামলাটি পিরোজপুর থানায় পাঠান।

বাদী মমতাজ বেগমের লিখিত অভিযোগ এসডিওর কাছ থেকে পাবার পর পিরোজপুর থানা ১৬/৭/১৯৭২ তারিখ বেলা ১টা ৩০ মিনিটের সময় অভিযোগটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করে। মামলা নং ৯। জিআর (জেনারেল রেজিস্ট্রার) নং ৩৭৮/৭২।

১৭/৭/১৯৭২ তারিখ সকাল ৮টায় থানা থেকে মামলাটি পিরোজপুর কোর্টে পাঠানো হয়। তখন থানার ওসি ছিলেন মেফতাউদ্দিন আহমেদ। তিনি নিজে মামলার তদন্ত শুরু করেন। মামলার এজাহারে ঘটনার তারিখ লেখা আছে ১/১০/১৯৭১। বাংলা ১৩ আশ্নিন ১৩৭৮।
২২ জুলাই ১৯৭২ এসডিও কোর্টে মামলাটি উত্থাপন করা হয়।

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ পুলিশ এ মামলার চার্জশিট দাখিল করে।

৩ অক্টোবর ১৯৭২ এসডিও বরাবর চার্জশিট উপস্থাপন করা হয়।
মমতাজ বেগমের অভিযোগ অনুসারে  এ মামলার তদন্তকালে আসামীদের মধ্য থেকে ২ জনকে আটক করা হয়। এরা হল আইউব আলী চৌকিদার ও সুন্দর আলী দফাদার।

পুলিশের প্রতিবেদনে আসামীদের মধ্য থেকে যাদেরকে পলাতক দেখানো হয় তারা হল
১.    দানেশ মোল্লা
২.    আশরাফ আলী
৩.     আব্দুল মান্নান
৪.    কালাম চৌকিদার
৫.    আব্দুল হাকিম মুন্সি
৬.    মমিন উদ্দিন
৭.    মোসমেল মওলানা।

মামলা চলাকালে পলাতক আসামীদের মধ্য থেকে আরো ২ জনকে আটক করা হয়। ১৯৭২ সালের ৭ অক্টোবর আব্দুল মান্নান এবং ১৯৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মমিন উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয় যা মেজিস্ট্রেট কোর্টে সংরক্ষিত জিআর বইতে ৩৭৮/৭২ জিআর কপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়।
জিআর কপি পর্যালোচনা করে আরো দেখা যায় মমতাজ বেগমের দায়ের করা ওই মামলা থেকে আসামী আতাহার আল হাওলাদার, রুহুল আমিন সেকেন্দার শিকদার, শামসুর রহমান (তৎকালীন পিরোজপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই) কে অব্যাহতি দেয় কোর্ট।

মমতাজ বেগমের দায়ের করা মামলাটি ২৭/১১/১৯৭২ সালে তৎকালীন এসডিও এমএ হাশেম মিয়া স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল জাজ বরিশাল প্রেরন করেন।
মামলার জিআর বইয়ে দেখা যায় ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ সালে মামলার কার্যক্রমের জন্য মামলাটি বাকেরগঞ্জ ডিসির কাছে পাঠানো হয়েছিল। জিআর বইয়ের ১৭ নং কলামে লেখা আছে-
Judicial record sent to DC Bakergong provide this memo No 255 Judicial, dated 17/2/1981 vide this complt mcc No 189/81.






মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০১৪

এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে সাক্ষীকে বৈরি ঘোষনা করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন রাষ্ট্রপক্ষের // ট্রাইব্যুনালের নাকচ

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সপ্তম সাী আমিনুল ইসলামকে বৈরি ঘোষনা করে তাকে কারা হেফাজতে নেয়ার আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে এটিএম আজহারুল ইসলামের নাম  না বলায় রাষ্ট্রপক্ষ তাকে বৈরি ঘোষনা করে। এরপর তাকে জুড়িশিয়াল কাস্টডিতে নিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে হেফাজতে পাঠানোর আবেদন করে। তবে ট্রাইব্যুনালে সে আবেদন নাকচ করে দেয়।


আজ চেয়ারম্যান  বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাক্ষীকে কারা হেফাজতে নেয়ার আবেদন নামঞ্জুর করে  আদেশে বলেন, আমরা এই সাক্ষীকে নিরাপত্তা হেফাজদে নেয়ার আবেদন গ্রহণ করলাম না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে এই সাক্ষী অন্য সাক্ষীদের যাতে ইনফুয়েন্স করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইনফুয়েন্স করলে ব্যবস্থা নেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই সাক্ষীকে ফলো করবে। একই সাথে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমকে নিরাপদে সাী আমিনুল ইসলামকে বাড়িতে পৌছে দেয়ার নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর সাক্ষী আমিনুল ইসলামকে প্রসিকিউশনের কার্যালয়ে নিয়ে যান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। 

এর আগে সকালে জবানবন্দিকালে আসামির নাম না বলায় রাষ্ট্রপক্ষ সপ্তম সাী আমিনুল ইসলামকে বৈরি ঘোষনা করে। এরপর তাকে কাস্টডিতে (কারাগারে) পাঠানোর আবেদন করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। সাক্ষ্য প্রদান কালে আমিনুল ইসলাম এটিএম আজহারের নাম উল্লেখ না করে বলেন, একাত্তর সালে পাক বাহিনী ও তার দোসররা রংপুরে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ সময় প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাীকে বৈরী ঘোষণা করে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানোর আবেদন করেন।
এসময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম বলেন, সাক্ষ্য দেয়ার পর কেন তাকে আমরা জুডিশিয়াল কাস্টুডিতে পাঠাবো।

আবেদনে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন সাী আমিনুল ইসলামকে নিরাপত্তা দিতে কাস্টডিতে (কারাগারে) পাঠানো প্রয়োজন। তখন আদালত সাীর কাছে জানতে চায় আপনি কি নিরাপত্তা চান। জবাবে সাী বলেন, আমি নিরাপত্তা চাই না।
এসময় আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, একজন সাক্ষীকে বৈরী ঘোষনা করা হল রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক। এরপর তারা তাকে কাস্টুডিতে নেয়ার আবেদন করেছে। আমি যতদূর জানি এই আইনে অভিযুক্ত ছাড়া কাউকে কাস্টুডিতে পাঠানোর অনুমতি নেই। এখানে এই ভদ্রলোক (সাক্ষী) নিরাপত্তা চেয়েছে। এ অবস্থায় তাকে পুলিশের হাতে ছেড়ে দিলে সাক্ষী বিশাবালীর যে ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনার পুনুরাবৃত্তি হবে। একজন সাক্ষীকে সরকার হোস্টাইল ঘোষণা করে সেই ব্যক্তিকে নিরাপত্তায় নিলে তিনি কতটা নিরাপদ সেটা আমাদের অনুধাবন করতে হবে। সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে যেয়ে যেন কোন ধরণের ভয়ভীতির স্বীকার না হয় সেটা মনে রাখতে হবে। একজন সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে তোলার পর তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে।
এরপর জেয়াদ আল মালুম সাক্ষীকে আবারও কাস্টুডিতে রাখার আবেদন করেন।

এরপর ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষকে এবিষয়ে লিখিত আবেদন করা নির্ধেশ দেন।
দুপুর ২টায় লিখিত আবেদনের শুনানিতে জেয়াদ আল মালুম বলেন, এই সাক্ষী অন্য সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারে, এজন্য সাক্ষীকে জুডিশিয়াল কাস্টুডিতে রাখার আবেদন জানাচ্ছি।
জবাবে আসামীপরে আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, প্রসিকিউশনের ইচ্ছানুযায়ী জবানবন্দী না দেয়ায় সাীকে বৈরী ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে জেরাও করা হয়েছে। প্রসিকিউশন সাীকে বৈরী ঘোষণা করে ান্ত হননি বরং তাকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় করাগারে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে। এটা ন্যায় বিচারকে ভেঙ্গে গুড়োগুড়ো করার সামিল। সাক্ষী কারোর পক্ষের নন। তিনি ন্যায় বিচারের স্বার্থে যা জানেন বলবেন। সব কিছু তাদের পক্ষে না নিতে পেরে রাষ্ট্রপক্ষ এই সাক্ষীকে  করাগারে নিতে চাচ্ছে। এই সাক্ষীকে জেলে পাঠানো হলে আর কেউই সাক্ষী দিতে আসবে না। ন্যায় বিচারকে ধ্বংস করতে এই আবেদন করা হয়েছে।  সাী নিরাপত্তা চায় না, তারপরও তাকে নিরাপত্তা দেয়ার দোহাই দিয়ে কারাগারে নিয়ে নির্যাতন করার জন্যই এ আবেদন করা হয়েছে।

সাক্ষীর জবানবন্দী ও রাষ্ট্রপক্ষের জেরা:
জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আমার নাম মো: আমিনুল ইসলাম। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৬ বৎসর। আমার ঠিকানা গ্রাম-উত্তর মোকছেদপুর ধাপপাড়া, উপজেলা-বদরগঞ্জ, জেলা-রংপুর। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি গড়াশোনা করতাম এবং আমি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলাম। ১৯৭০ সালে আমাদের এলকায় জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ছিলেন আফজাল হোসেন এবং মোখলেছুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আনিছুল হক চৌধুরী ও মজিবুর রহমান মাষ্টার।
১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল দুপুরের দিকে রংপুর থেকে একটি ট্রেন পাকিস্তানী আর্মি ও তাদের এদেশীয় দোসরসহ সেই ট্রেনে টেকশোর হাট ৬নং রেল গোমাটিতে এসে দাঁড়ায় এবং ট্রেন থেকে নেমে তারা সকলেই উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং রাস্তার দুই ধারে অবস্থিত বাড়ি ঘর অগ্নিসংযোগ এবং এলোপাতারি গুলি করতে করতে ধাপপাড়া গ্রাম ঘেরাও করে ফেলে। ঐ সময় আমার চাচা ইউসুফ আলীর বাড়িতে একটি মাটির ঘরে আমার বড় আম্মা (চাচী) মরিময় নেছা ওরফে কালটি মাই, যিনি নয় মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলেন এবং আমি অবস্থান করছিলাম। তারপর আমার চাচী আম্মা বলে পাকিস্তানী আর্মিরা খুব কাছাকাছি এসে গেছে, চলো আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। আমার বড় আম্মা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় কিন্তু আমি ঘরেই অবস্থান করতে থাকি। বাড়ি সংলগ্ন রাস্তায় পাকিস্তানী আর্মিরা আমার বড় আম্মাকে ধরে ফেলে। তখন আমার বড় আম্মা পাকিস্তানী আর্মিদের পা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে, ‘আমি নয় মাসের অন্তস্বত্তা, আমাকে মেরো না- আমাকে মেরে ফেললে আমার গর্ভের সন্তানও মারা যাবে’। আমি তখন মাটির ঘরের জানালা দিয়ে ঐ ঘটনা দেখছিলাম। পিছন দিক থেকে একজন পাক সেনা এসে আমার বড় আম্মাকে গুলি করে। বড় আম্মা মারা যায় এবং তার গর্ভের সন্তানটি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর পাকিস্তানী আর্মিরা সেখান থেকে আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদরে গ্রামে এলে আমার চাচা ইউসুফ আলী আত্মরক্ষার জন্য বাড়ির কাছে একটি বড় বট গাছের উপরে আশ্রয় নেয়। আমার বড় আম্মাকে গুলি করে হত্যা করার পর পাকিস্তানী আর্মিরা ঐ স্থান থেকে আরো উত্তর দিকে চলে গেলে আমার চাচা ইউসুফ আলী গাছ থেকে নেমে বাড়িতে আসে, বাড়ির অবস্থা দেখার জন্য। তিনি তার নিজ ঘরে ঢুকে দেখেন তার জীবিকা নির্বাহের মাছ ধরা জাল ও টেবিলে রক্ষিত একটি রেডিও পাকিস্তানী আর্মিরা নিয়ে গেছে। পাকিস্তানী আর্মিরা কিছু সময় পরে যখন পুনরায় গ্রামের দিকে ফিরে আসছিল তখন আমার চাচা রাস্তায় গিয়ে পাকিস্তানী আর্মিদের ঐ জাল ও রেডিওটি ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। আমি তখন বাড়ির বাহিরে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে দেখছিলাম। তখন একজন পাকিস্তানী আর্মি বলে ‘ম্যারা জুট বাদ বলেগা’- এই কথা বলে তাকে গুলি করে হত্যা করে। ঐ দিন আমার চাচা ও বড় আম্মাসহ প্রায় ১৫ জনকে ঐ পাকিস্তানী আর্মি ও তাদের এদেশীয় দোসররা হত্যা করে। যারা নিহত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে জঙ্গুলী ভরসা, আম মাই, চিনি মাই, বিষু, ওসমান আলী, ছহির আলী, জহির আলী, মৌলভী আব্দুল কুদ্দুস, মমতাজ, তমির উদ্দিন, আজিজার রহমান খোকা, সাধিনা, আমার চাচী মরিময় নেছা কালটি মাই, চাচা ইউসুফ আলী ছিলেন।
এই পর্যায়ে প্রসিকিউশন পক্ষ এই সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণা করেন এবং তাকে জেরা করেন।

প্রসিকিউশন পক্ষ কর্তৃক জেরা:
জেরায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, আমি পাকিস্তানী আর্মিদের সাথে আসা এদেশীয় দোষরদের কারো নাম বলতে পারব না। আমার মনে কোন ভয় কাজ করছে না। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসাবে এলাকায় যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং যারা বিপক্ষে ছিল তাদের নাম জানা স্বাভাবিক এবং আমার নিজ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ সময়কালীন সময় হতে এ পর্যন্ত আমাদের এলাকার সকলে জানে আমিও জানি। আমার এলাকার যে সমস্ত রাজনৈতিক দল আছে সে সমস্ত দলগুলো সম্পর্কে জানি এবং সেই সমস্ত দলের নেতা কর্মীদের ভূমিকা সম্পর্কে আমার যথেষ্ট জ্ঞান আছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের আমি চিনি, তাদের নাম ও ভূমিকা সম্পর্কেও জানি। আমার এলাকা বদরগঞ্জের ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সাহেবের মামলায় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে এসেছি। এটিএম আজহারুল ইসলাম ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় আমাদের এলাকায় গিয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ইহা সত্য নহে যে, আমি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসাবে নিজেকে দাবী করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার গ্রামে পাকিস্তানী আর্মিদের ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের প্রকৃত নাম গোপন করিয়াছি। ইহা সত্য নহে যে, আমার চাচী মরিয়ম নেছা ওরফে কালটি মাইকে পাকিস্তানী আর্শি তাদের এদেশীয় দোষর আসামী এটিএম আজহারুল ইসলামের উপস্থিতিতে এবং তার নির্দেশে হত্যা করা হইয়াছে, তাহা আমি গোপন করি।

আসামী পক্ষ কর্তৃক জেরা:
এই মামলার সাক্ষী অধ্যাপক মেছের উদ্দিন, মোখলেছুর রহমান, তাহের সরকার, আইয়ুব আলী, মকবুল হোসেন এবং আব্দুর রহমান কে আমি চিনি। আমি আমার বড় আম্মা কালটি মাইকে হত্যাকান্ডের ব্যাপারে উপরোক্ত সাক্ষীদের বলেছি। ১৯৯৬ সালের পূর্বে আসামী এটিএম আজহারুল ইসলাম আমাদের এলাকায় গিয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই।
এরপর আগামী বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের পরবর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।

##

মাওলানা সাঈদীর আপিল শুনানী ফের শুরু

১/৪/২০১৪
বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মোফসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল আবেদন মামলায় ফের শুনানী শুরু হয়েছে।
আজ শুনানীর  পর এ মামলার কার্যক্রম আগামী মঙ্গলবার আট এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

মাওলানা সাঈদীর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন চলছিল। সুপ্রীম কোর্ট ছুটির পর আজ প্রথম কার্যদিবসে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তি পেশ করেন। আজকের মত যুক্তি পেশ শেষ করে অ্যটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তার ব্যক্তিগত কিছু সমস্যা আছে। তাই আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত এ মামলার শুনানী মুলতবি রাখার আবেদন করেন তিনি। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করেন।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১০ নং অভিযোগ বিশবালী হত্যার অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন সকালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এরপর তিনি ১১ নং অভিযোগ মাহবুবুল আলমের বাড়ি আক্রমন লুটপাট  ও ১৪ নং অভিযোগ যথা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমন এবং শেফালী ঘরামীকে ধর্ষণ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
বিশাবালীকে হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্য থেকে তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্য থেকে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে এবং উপস্থিতিতেই তাকে নারকেল গাছের সাথে বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়।

শুনানীতে আসামী পক্ষে অন্যান্য আইনজীবীদের  মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, এসএম শাহজাহান, গিয়াসউদ্দিন মিঠু, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, তারিকুল ইসলাম, মহিনুর ইসলাম, মতিয়ার রহমান, আবু বকর সিদ্দিক এবং  মোসাদ্দেক বিল্লাহ ।