বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিলের রায় যেকোনদিন// নথি তলব এবং চার্জশিট বিবেচনার আবেদন খারিজ

মেহেদী হাসান, ১৬/৪/২০১৪
বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মোফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল মামলার রায় যেকোন দিন ঘোষনা করা হবে। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ রায় প্রদানের তারিখ অপেক্ষমান ঘোষনা করেন।

তাছাড়া পিরোজপুর এবং বরিশাল থেকে মমতাজ বেগমের মামলা সংক্রান্ত নথি তলবের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। একই সাথে আসামী পক্ষ থেকে দাখিল করা মমতাজ বেগমের মামলার চার্জশিট বিবেচনায় নেয়ার আবেদনও খারিজ হয়ে গেছে। 
সকালে উভয় পক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়ে রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করেন আদালত।
গত মঙ্গলবার উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয় এ মামলার।

ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে যে মামলা করেছিল সেই মামলার জিআর (জেনারেল রেজিস্টার) বই তলবের আবেদন করে আসামী পক্ষ গত ১৩ এপ্রিল। একই আবেদনে  আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার চার্জশিট এর মূল সার্টিফাইড কপি জমা দিয়ে তা বিবেচনায় নেয়ার আবেদন করে। ফলে  নথি তবলবের আবেদন খারিজ এর সাথে চার্জশিট বিবেচনায় নেয়ার আবেদনও খারিজ হয়ে গেল।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পিরোজপুর এবং বরিশাল ঘুরে এসে আদালতে বলেন, মমতাজ বেগমের মামলার কোন কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছেনা এবং আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার যে এফআইআর জমা দিয়েছে তা জাল। তিনি তা বিবেচনায় না নেয়ার আবেদন করেন। এরপর গত ১০ এপ্রিল  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবেদন করা হয় ১৯৭২ সালে গঠিত বরিশাল স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল এর রেজিস্টার বই তলবের জন্য। গতকাল সে আবেদনও খারিজ করে দেন আদালত।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষ থেকে দায়ের করা মমতাজ বেগমের মামলার এফআইআর কপিকে জাল আখ্যায়িত করে তা বিবেচনায় না নেয়ার যে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ তাতে অন্যতম একটি যুক্তি ছিল আসামী পক্ষ এ মামলর চার্জশিট জমা দিতে পারেনি। এফআইআর এ নাম না থাকলেও চার্জশিটে আসামির নাম থাকতে পারে। এরপর গত ১৩ এপ্রিল আসামি পক্ষ চার্জশিট জমা দেয় এবং তা বিবেচনার আবেদন জানায়।

আদালত রায় ঘোষনার তারিখ অপেক্ষমান রাখার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনাল যে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে তা আমরা সঠিক মনে করি এবং আশা করছি সে রায় বহাল থাকবে। এছাড়া অপর যে ছয়টি অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে দোষীয় সাব্যস্ত করা হয়েছে কিন্তু সাজা উল্লেখ করা হয়নি সেগুলোতেও সাজার দাবি করেছি।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে দেলোয়ার শিকদারকে সাঈদী বানিয়ে সাজা দেয়া হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার দাবি করছি এবং তিনি মুক্তি পাবেন আশা করছি। আমরা বিশাবালীর ভাই সুখরঞ্জন বালীকে এনেছিলাম। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ট্রাইব্যুনাল কম্পাউন্ড থেকে তাকে অপহরন করে নিয়ে গেল সাদা পোশাকের লোকজন। অপহরনের আগে সুখরঞ্জন বালী টিভিতে যে সাক্ষাতকার দিয়েছিল তার ভিডিও আমরা জমা দিয়েছি আপিল আদালদে। সেটি বিবেচনায় নেয়া হলে রাষ্ট্রপক্ষের মিথ্যাচার প্রমানিত হবে। সত্য বলতে চাওয়ার কারনে আজ সুখরঞ্জন বালীকে ভারতের কারাগারে জীবন কাটাতে হচ্ছে।

২০১৩ সালেল ২৮ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদন্ড দেয়। ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটাপাট, নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্মান্তরকরনসহ ২০টি অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে আটটি অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

মাওলানা সাঈদীর খালাস চেয়ে  ওই বছর ২৮ মার্চ আপিল বিভাগে আবেদন করে আসামি পক্ষ। যে ছয়টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে কিন্তু সাজা উল্লেখ করেনি ট্রাইব্যুনাল  সেগুলোতে সাজা উল্লেখ করার দাবি জানিয়ে একই দিন রাষ্ট্রপক্ষও আপিল আবেদন করে।
ওই বছর ২৪ সেপ্টেম্বর আপিল শুনানী শুরু হয়। সাড়ে ছয় মাসেরও অধিক সময় পর আজ আলোচিত এ মামলায় আপিল শুনানী শেষে রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হল।

প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে এ মামলার শুনানীর জন্য গঠিত  পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞ, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে এ মামলায় শুনানী পেশ শুরু করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এরপর তার অনুপস্থিতিতে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান শুনানী পেশ এবং যুক্তি উপস্থাপন করেন। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন। এছাড়া এ মামলার আপিল শুনানীর সময় বিভিন্ন পর্যায়ে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন অংশগ্রহণ করেছেন।
আসামী পক্ষে অন্যান্য আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তাজুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম, মহিনুর ইসলাম, মতিয়ার রহমান, আবু বকর সিদ্দিক, মোসাদ্দেক বিল্লাহ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন