শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কি ছিল ১৯৭৪ সালের ত্রিদেশীয় দিল্লী চুক্তিতে?

১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ ভারত এবং পাকিস্তানেবর মধ্যে  ত্রিদেশীয় দিল্লী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।   চুক্তি অনুযয়ী বাংলাদেশে  ১৯৭১ সালের যুদ্ধে  গণহত্যা,   মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং  যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনাকর্মকর্তাকে ক্ষমা করে বাংলাদেশ।  চুক্তিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের বেদনায়ক  ঘটনার কারণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কাছে  ‘ক্ষমা কর এবং ভুলে যাও’ আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তাদের বিচার না করে   ক্ষমা করে দিয়েছে। যুদ্ধের কারণে  ভারতে আটক ৯২ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যসহ ৩০ লাখের উপরে বেসামরিক নাগরিক তখন তিন দেশে  আটকা পড়ে ছিল ।  ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরপরই ১৯৭২ সালে ভারত- পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং চুক্তিতে   দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং  সম্প্রীতি  স্থাপনে সব ধরণের প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করা হয় উভয় দেশের পক্ষ থেকে।   কিন্তু তার কোনটিই বাস্তবায়ন সম্ভব হয়না  বাংলাদেশকেন্দ্রিক যুদ্ধউত্তর সমস্যার সমাধান না হওয়ায় । যুদ্ধউত্তর সমস্যার সমাধান এবং তা নিয়ে তিন দেশের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিরসনে ১৯৭২ সাল থেকে  দফায় দফায় আলোচনাসহ নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয় এবং সবশেষে তা পূর্ণতা পায়  ১৯৭৪ সালের  ত্রিদেশীয় চুক্তির মাধ্যমে।  চুক্তিটি স্বাক্ষরের পর দিল্লী, ইসলামাবাদ এবং ঢাকা থেকে তা  একযোগে প্রকাশ করা হয়।  ১৬ দফার  সেই চুক্তিটি এখানে তুলে ধরা হল।  ভাষান্তর : মেহেদী হাসান


(১)     ১৯৭২ সালের ২ জুলাই ভারতের  প্রধানমন্ত্রী  এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের মধ্যে ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।  উপমহাদেশে শান্তি এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে  বিদ্যমান  দ্বন্দ্ব সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে পারষ্পরিক বন্ধুত্ব এবং সম্প্রীতি জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। এছাড়া এই চুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে যেকোন  বিবদমান বিষয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে  পারষ্পরিক তথা দ্বিপাক্ষিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। 

(২)    বাংলাদেশের পক্ষ থেকে  সিমলা চুক্তিকে স্বাগত জানানো হয়েছে।  উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশদুটির মধ্যে  সমঝোতা চুক্তিকে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জোরাল সমর্থন জানান।

(৩)     ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ফলে যে মানবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তা উপমহাদেশে বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।  বাংলাদেশ  একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে তখনো ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে না পারায়  যুদ্ধউত্তর মানবিক সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছিলনা। এ সমস্যা সমাধানে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হিসেবে ভারত এবং পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল সবেচেয়ে বেশি  জরুরি।   বাংলাদেশকে নিয়ে ত্রিদেশীয় বৈঠক অনুষ্ঠানে প্রধান অন্তরায় ছিল পাকিস্তান কর্তৃক  বাংলাদেশকে তখনো একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়া।

(৪)      বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে আটকে পড়া দুই দেশের লক্ষ লক্ষ নাগরিকের প্রত্যাবর্তন এবং ভারতে আটক ৯২ হাজার সৈন্য ফেরত পাঠানোসহ নানাবিধ মানবিক সমস্যা সমাধানে ভারত এবং বাংলাদেশ একটি  জোরাল উদ্যোগ নেয় ১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল।  এজন্য বাংলাদেশকে স্বীকৃতিজনতি  রাজনৈতিক সমস্যাকে  আপাতত পাশে সরিয়ে রাখা হয়। ১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল দুই দেশের পক্ষ
থেকে একটি যৌথ ঘোষনা দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, উপমহাদেশে উত্তেজনা কমিয়ে স্থায়ী  শান্তি ও সমৃদ্ধির  লক্ষ্যে দুই দেশ বন্ধুত্ব এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে কাজ করে যাবে। দুই দেশ থেকে প্রস্তাব করা হয় যে, আটককৃত এবং আটকে পড়া  নাগরিকদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা উচিত। তবে  বন্দী ঐসব পাকিস্তানী সৈন্য, যাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তাদের বাংলাদেশে বিচারের  প্রয়োজন হতে পারে তাদের  ক্ষেত্রে এই মানবিক দৃষ্টিকোনের বিষয়টি প্রযোজ্য হবেনা।

(৫)    এই ঘোষনার আলোকে ভারত-বাংলাদেশ এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক  চলে।    বৈঠক শেষে ১৯৭৩ সালের ২৮ আগস্ট একটি সমঝোতায় আসে দেশ তিনটি। এবং  বাংলাদেশের সম্মতির  ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে  একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়  বিদ্যমান মানবিক সমস্যা সমাধানে।

(৬)      এই সমঝোতার ফলে ১৯৭৩ সালের  ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দেশের মধ্যে আটকে পড়া এবং বন্দী প্রত্যর্পন শুরু হয়। প্রায় ৩০ লাখ নাগরিক  তাদের স্ব স্ব দেশে ফেরার সুযোগ পায় তখন।   এর ফলে তিন দেশের মধ্যে  বিরাজমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং উপমহাদেশে শান্তির পথে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হয়।

(৭)     ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ায়    একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে তিনদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পথ সুগম হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, ভারতের বিদেশমন্ত্রী শরন সিং এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমেদ সমমর্যাদা নিয়ে  ৫ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দিল্লীতে  বৈঠক করেণ এবং বৈঠকে তিন দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের অন্তরায় নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিশেষ করে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্বসহকারে স্থান পায়। এছাড়া পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশী এবং বাংলাদেশ ও ভারতে  আটকে পড়া পাকিস্তানীদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানোর চলমান প্রকৃয়া নিয়েও আলোচনা করা হয়। 

(৮)     ১৯৭৩ সালের ২৮ আগস্টের দিল্লী সমঝোতার আলোকে তিন দেশে আটকে পড়া নাগরিকদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি তিন মন্ত্রী  মূল্যায়ন করেণ এবং বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ শেষ  পর্যায়ে চলে আসায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেণ।

(৯)      আটকে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বাকী কাজ দ্রুত এবং সন্তোষজন উপায়ে শেষ করতে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে একমত পোষন করেণ তিন  মন্ত্রী।

(১০)    ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয় ভারতে বন্দী এবং আটকে পড়া  বাদবাকী সৈন্য  ও নাগরিকদের  দিল্লী চুক্তির অধীনে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে।  ১৯৭৪ সালের এপ্রিলের মধ্যেই এ প্রত্যাবাসন কাজ শেষ করার ঘোষনা দেয়া হয়।  দুই দেশের মধ্যে চলমান ট্রেনে করেই একদিন পরপর  বাকী সাড়ে ৬ হাজার সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিক পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। 

(১১)     পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয় পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠানোর কাজ প্রায় শেষের পথে। বাকীদেরও শান্তিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে আন  হবে।

(১২)    পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয় সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত,  কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে  চাকরি রত,  অথবা অন্য কোন কারণে পশ্চিম পাকিস্তানের  যেসব নাগরিক  বাংলাদেশে আটকে পড়েছে তাদের পাকিস্তানে ফেরত আনার জন্য ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয় প্রথম তিন ক্যাটাগরিতে যারা পড়বে তারা সংখ্যায় যতই হোক সবাইকে ছাড়পত্র দেয়া হবে। যাদের দরখাস্ত বাতিল করা হবে সে বিষয়ে  তাদেরকে এর কারণ জানিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হবে। যাদের আবেদন গ্রহণ করা হবেনা তাদের  আপীল করার সুযোগ  পরবর্তীতে খোলা থাকবে।  এ জন্য কোন নিদির্ষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হবেনা। পরবর্তীতে এ জাতীয় আবেদনের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌছবে।

(১৩)     উপমহাদেশে  শান্তি এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে  এবং তিন দেশের মধ্যে  আশু বন্ধুত্বপূর্ণ  সম্পর্ক ও সম্প্রীতি স্থাপনের লক্ষ্যে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টি  নিয়ে তিন দেশের তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী  আলোচনা করেণ।  বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বৈঠকে বলেন যে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাব, আন্তর্জাতিক আইন, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যাজনিত অপরাধ বিষয়ে যত আইন আছে তার সবগুলোর বিবেচনাতেই ১৯৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য অপরাধী । ঐসব আইনে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যার সংজ্ঞায় যেসব অপরাধের নাম আছে এবং যারা ঐসব অপরাধ করবে তাদের যথাযথ আইনী প্রকৃয়ায়  বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে সারা বিশ্ব সর্বসম্মতভাবে একমত। আর ১৯৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য ঐসব আইনে বর্ণিত অনেক অপরাধ করেছে।  পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব ঘটনাকে তার  সরকার কঠোরভাবে নিন্দা জানায়  এবং এ জাতীয় অপরাধ হয়ে থাকলে তার জন্য পাকিস্তান গভীরভাবে অনুতপ্ত।


(১৪)    তিন মন্ত্রী একমত হন যে,  উপমহাদেশে শান্তি ও অগ্রগতির স্বার্থে তিন দেশের মধ্যে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে তার আলোকেই ১৯৫ জন সৈনিকের বিষয়টি  বিবেচনা করা উচিত। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর  আমন্ত্রনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শীঘ্রই বাংলাদেশ ভ্রমনে যাবার ঘোষনা দিয়েছেন  এবং   আপনার দেশের নাগরিকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার  আবেদন জানাবেন । একইভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী  পাকিস্তানীদের  প্রতি ক্ষমা  প্রার্থনার  আহবান জানিয়ে ঘোষনা দিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের মানুষ   ক্ষমা করতে  জানে।  তাই নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করার জন্য ১৯৭১ বাংলাদেশে যে   বর্বরতা এবং  ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে তা তিনি তার দেশের নাগরিকদের ভুলে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

(১৫)   ‘ক্ষমা করো এবং ভুলে যাও’  বাংলাদেশের প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর এই আবেদন এবং মনোভাবের  প্রেক্ষিতে  বাংলাদেশ সরকার ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধপারাধীর বিচার  না করে  ক্ষমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে  বলে ঘোষনা করেণ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।   অত:পর দিল্লী সমঝোতার আলোকে অন্যান্য যুদ্ধবন্দীদের সাথে এই ১৯৫ জন সেনাকর্মকর্তাদেরও  ভারত হতে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। 

(১৬)  ১৯৭১ সালের যুদ্ধউত্তর মানবিক সমস্যা সমাধানে  তিন দেশের এসব  চুক্তি এবং সমঝোতা ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে বলে তিনমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেণ। তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী   একমত প্রকাশ করে বলেন যে, তিন দেশের দেশের ৭০ কোটি মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন এবং উপমহাদেশে শান্তি ও  অগ্রযাত্রার পথে তিনটি  দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে মিলে মিশে কাজ করে যাবে। 

চুক্তিতে স্বাক্ষর করেণ:
ড. কামাল হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশ সরকার
সরদার শরণ সিং, বিদেশমন্ত্রী, ভারত সরকার
আজিজ আহমেদ, পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, পাকিস্তান সরকার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন