সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

দালাল আইনে গ্রেফতার হয় সাক্ষীর শ্বশুর/সাক্ষীর পরিবার এবং মাতৃকুলও স্বাধীনতা বিরোধী দাবী আইনজীবীর// সাক্ষীর বলেন সত্য নয়

৯/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষী ডা. হাসানুজ্জামানকে আজ দ্বিতীয় দফায় জেরা করা হয় ।  জেরায় সাক্ষী স্বীকার  করেন  তার শ্বশুর আহমদ আলী মেম্বার মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছিলন। সাক্ষীর পরিবার, শ্বশুর পক্ষ এবং নানার পরিবারের সবাই মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানপন্থি ছিল এবং স্বাধীনতা বিরোধী ছিল বলে আসামী পক্ষের আইনজীবী দাবি করলে সাক্ষী বলেন, সবাই ছিল না ।  পরে বলেন এটা সত্য নয়।

এর আগে সাক্ষী জবানবন্দীতে  ১৯৭১ সালে নিহত তার ভাই বদিউজ্জামানকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করলেও গতকাল জেরায় স্বীকার করেন সে  মুক্তিযোদ্ধ ছিল না।

জেরায় আইনজীবী বলেন, ’৭১ সালে সাক্ষী ডা. হাসানুজ্জামানের  শালিকা সাজেদা বেগমের সঙ্গে তার ভাই নিহত বদিউজ্জামানের সম্পর্ক ছিল। সাক্ষীর শ্বশুর বাড়ির কাছে আহমদনগর স্কুলে পাক আর্মি ক্যাম্প থাকায় বদিউজ্জামান সেনাবাহিনীর নজরে আসে এবং সেনাবাহিনী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বদিউজ্জামান পাকিস্তান নৌ বাহিনীর সদস্য জানার পরে সেনা ক্যাম্পেই তাকে হত্যা করা হয়। এছাড়া বদিউজ্জামানের হত্যার পেছনে শ্বশুর পক্ষের হাত আছে এই ধারণায় সাক্ষী হাসানুজ্জামান দীর্ঘ ১২ বছর  শ্বশুর বাড়িতে যাননি। আসামিপক্ষের এসব প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, এটা সত্য নয়।

আসামী পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে  প্রশ্ন করেন, আপনার বৃদ্ধ বাবা মাকে এই মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আটকে রেখেছেন। এছাড়া কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দেয়া নিয়ে পারিবারিক বিরোধ হয় এবং সাক্ষীর দুই ভাই আসাদুজ্জামান ও আনিসুজ্জামান বাড়ী থেকে রাগ করে চলে যান। জবাবে সাক্ষী বলেন,  সত্য নয়।

আন্তর্জাতক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষীকে জেরা করেন মুহাম্মদ  কামারুজ্জামানের আইনজীবী  কফিল উদ্দিন চৌধুরী।


জেরা:
প্রশ্ন: কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দেয়া নিয়ে আপনাদের পরিবারে বিরোধ হয় এবং আপনার দুই ভাই আসাদুজ্জামান ও আনিসুজ্জামান বাড়ি থেকে রাগ করে চলে গেছেন। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার বৃদ্ধ বাবা মাকে এই মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আটকে রেখেছেন।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার শ্বশুর আহমদ আলী মেম্বর এলাকার একজন প্রভাবশালী মুসলীম লীগ নেতা ছিলেন।
উত্তর: জানিনা।
প্রশ্ন: আপনার শ্বশুর এলাকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তার পরিবারের উদ্যোগে আহমদ নগর স্কুলে পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্প স্থাপন করে। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার চাচা শ্বশুর সৈয়দুর রহমান, মকবুল হোসেন, ভায়রা ভাই জামশেদসহ শ্বশুর পরিবারের সবাই পাকিস্তানপন্থি ছিল এবং স্বাধীনতা বিরোধী ছিল। 
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর আপনার শ্বশুর দালাল আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে ছিল। 
উত্তর: হতে পারে।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর আপনার চাচা শ্বশুর এবং ভায়রা ভাইসহ শ্বশুর পরিবারের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে পালাতক ছিল।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার চাচা সাইদুল হক?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: আপনার চাচা এলাকার রাজাকার সংগঠক এবং রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। 
উত্তর: আমি জানি না।
প্রশ্ন: আপনার চাচার বিরুদ্ধে দালালী আইনে মামলা হয় এবং স্বাধীনতার পর তিনি পালাতক ছিলেন। 
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: আপনার পুরো পরিবার ছিল পাকিস্তান পন্থী ও স্বাধীনতা বিরোধী?
উত্তর: পুরো পরিবার নয়।
প্রশ্ন: আপনার নানার পরিবারও স্বাধীনতা বিরোধী ছিল। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার ভাই ছুটিতে এসে আপনার শ্বশুর বাড়িতে বিভিন্ন অযুহাতে থাকতেন। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার শালিকা সাজেদা বেগমের সঙ্গে আপনার ভাই নিহত বদিউজ্জামানের সম্পর্ক ছিল। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার বিয়ে নিয়ে শ্বশুরের সঙ্গে প্রতারণা করার কারণে আপনার ভাইয়ের সঙ্গে শালিকার  সম্পর্ক সুনজরে দেখেননি আপনার শ্বশুরের পরিবার। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার ভাই বদিউজ্জামান দীর্ঘদিন আপনার শ্বশুর বাড়িতে থাকার কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নজরে আসে এবং পাক সেনাবাহিনী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং অপনার ভাই পাকিস্তান নৌ বাহিনীর সদস্য জানার পর হত্যা করে। 
উত্তর: এটা সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার ভাই হত্যার পেছনে শ্বশুর পক্ষের হাত আছে এই ধারণা করে আপনি ও আপনার পরিবারের কেউ দীর্ঘ ১২ বছর শ্বশুর বাড়িতে যাননি।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার ভাই হত্যার জন্য কখন মামলা করেন?
উত্তর: স্বাধীনতার পর কোর্ট কাচারীর কাজ শুরু হলে।
প্রশ্ন: কোন থানায় মামলা করেন?
উত্তর: সম্ভবত নলিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করি।
প্রশ্ন: ওই মামলায় কতজনকে আসামী করেছেন?
উত্তর: ১১ জনকে।
প্রশ্ন: কামারুজ্জামান বাদে বাকী আসামীদের নাম ঠিকানা বলতে পারবেন?
উত্তর: পারব না। তারা কোন এলাকার তাও বলতে পারব না। 
প্রশ্ন: মামলা দায়েরের কতদিন পরে তার খোঁজ নিতে যান?
উত্তর: এক মাস পরে।
প্রশ্ন: যে কোর্টে গিয়েছিলেন তা জজ কোর্ট না ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: আপনার দায়ের করা মামলা নম্বর কত ছিল?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: মামলার খোঁজ নিয়েছেন এর সমর্থনে ইনফরমেশন স্লিফ দেখাতে পারবেন?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: আপনার দায়েরকৃত মামলার খোজ না পাওয়ার পর আপনি পুনরায় অভিযোগ এনে আজ পর্যন্ত আপনি বা আপনার পরিবারের কোন সদস্য আপনার ভাই হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন?
উত্তর: না করিনি।
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ ভাই হত্যার বিচার দাবি করে কোন আবেদন করেছেন?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের সময় কামারুজ্জামান কি করতেন?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: যুদ্ধের সময় কামারুজ্জামান আপনাদের এলাকায় ছাত্র হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে না অন্যকোন পেশায় নিয়জিত ছিলেন কি না বলতে পারবেন?
উত্তর: বলতে পারব না কারণ আমি তখন ঢাকায় ছিলাম।
প্রশ্ন: আপনার ছোটভাই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: আপনি এলাকার আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর পক্ষে কাজ করছেন।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: মতিয়া চৌধুরীর সাথে সুসম্পর্ক থাকায় তার পরামর্শে আপনি কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছেন?
উত্তর: সত্য নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন