বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অষ্টম সাক্ষীর জেরা///পিতার হত্যাকারীকে চেনা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেননি সাক্ষী।

১৯/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী মো. জিয়াউল ইসলামের জেরা । সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেছিলেন তার পিতা শহীদ নুরুল ইসলামকে ’৭১ সালে তৈয়ব ও রব্বানী নামে দুই আল-বদর সদস্য অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে আল-বদর সদস্যরা তাকে হত্যা করে। এ বিষয়ে জেরায় সাক্ষী বলেন, তৈয়ব ও রব্বানীকে আমি মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে চিনতাম। তাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের পর দেখাও হয়েছে। তবে তৈয়ব ও রব্বানীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেইনি।

আন্তর্জাতক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষীকে জেরা করেন ডিফেন্স কাউন্সেল কফিল উদ্দিন চৌধুরী। তাকে সহায়তা করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক ও অ্যাডভোকেট শিশির মনির। জেরায় সাক্ষী স্বীকার করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার  বাবার দোকানের ডানদিকে ছিল রব্বানীর দোকান যে তার  বাবাকে ধরে আল-বদর ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিল।

জেরায় সাক্ষী স্বীকার করেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম অর্ন্তভুক্ত করে।  ৭২ হাজার ৭৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় এবং অবৈধভাবে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে সাক্ষী ও তার স্ত্রীর নামে বিদ্যুৎ বিভাগ ২০০৪ সালে মামলা করে।


জেরা (সংক্ষিপ্ত):
প্রশ্ন: ’৭১ সালে আপনার পিতাকে অপহরণকারী তৈয়ব ও রব্বানীকে চেনেন?
উত্তর: তৈয়ব ও রব্বানী নামে দুই আল-বদর সদস্যকে আমি মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে চিনতাম। তাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের পর দেখাও হয়েছে।
প্রশ্ন: তৈয়ব ও রব্বানীর বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন?
উত্তর: নেইনি।
প্রশ্ন: ময়মনসিংহ জেলার আল-বদর কমান্ডার কে ছিলেন?
উত্তর: জানি না।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর আপনি যখন দেশে ফিরে আসেন তখন স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকায় কামারুজ্জামানের নাম পেয়েছেন?
উত্তর: তালিকা করা আমার দায়িত্ব নয়।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর থেকে (বর্তমান সরকার আসার আগ পর্যন্ত) পিতা হত্যার বিচার চেয়ে কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে কোথাও কোন অভিযোগ করেছেন কিনা?
উত্তর: পিতার হত্যার বিচার চেয়ে লিখিতভাবে কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে এই ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছি।
সাক্ষীর এ জবাবের পরই প্রসিকিউটর নুর জাহান বেগম মুক্তা বলতে থাকেন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তাকে-ই তিনি লিখিত অভিযোগ বলে মনে করেছেন। এ সময় জেরাকারী আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী প্রসিকিউশনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা এমন মন্তব্য করে ঠিক করেননি। আমি প্রশ্ন করার আগেই আপনারা জবাবটা দিয়ে দিচ্ছেন। ওই সময় ডিফেন্স কাউন্সেল ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক দাড়িঁয়ে ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মাই লর্ড  উনি (প্রসিকিউটর নুর জাহান মুক্তা) বারবারই এমন করেছেন, সাক্ষিকে উত্তর বলে দিচ্ছেন। এ সময় প্রসিকিউটর নুর জাহান মুক্তা আদালতকে বলেন,  সে আমকে চোখ রাঙিয়েছে। আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলেছেন। এ বিষয় নিয়ে কিছু সময়ের জন্য প্রসিকিউটর ও ডিফেন্সের সদস্যরা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল উভয়পক্ষকে থামিয়ে দেন এবং পুনরায় জেরা শুরু হয়।

প্রশ্ন: আপনি কি এই মামলার  অভিযোগকারি? 
উত্তর: হ্যাঁ, এই মামলার অভিযোগকারী আমি নিজেই।
প্রশ্ন: ’৭১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল তখন আপনার বাবার হত্যার মামলা (অভিযোগ) করেননি কেন?
উত্তর: সময় পাইনি। 
প্রশ্ন: আপনার যে বন্ধু আপনার বাবা হত্যার ঘটনা বলেছিলেন সেই বন্ধুর নাম কি?
উত্তর: ওই বন্ধুর নাম বলতে পারব না।
প্রশ্ন: ’৭১ সালে আপনি কখন ভারতে যান এবং কখন ফিরে আসেন?
উত্তর: ’৭১ সালের এপ্রিল মাসে আমি ভারতে যাই এবং ’৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ফিরে আসি।
প্রশ্ন: আপনি কত দিন বিস্ফোরক ট্রেনিং নেন?
উত্তর: তিন দিন।
প্রশ্ন: আপনি বিস্ফোরকের ট্রেনিং নেন বলেছেন, বিস্ফোরকের পাওয়ার কে কি বলা হয়?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: বিস্ফোরকের ট্রেনিং নেয়ার সময় আপনাদের ব্রিজের কোন অংশ বা কতটুকু উড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হত?
উত্তর: অংশ বলতে পাব না, ব্রিজ উড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
এপর সাক্ষী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে এতো প্রশ্ন করলে বাবা হত্যার বিচার চাই না।
প্রশ্ন: বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহারের সময় সোজাসুজি না আড়াআড়ীভাবে বসাতেন?
উত্তর: ৪০ বছর পর সঠিক মনে নেই বিস্ফোরক সোজাসুজি না, আড়াআড়িভাবে বসাতে হত।
প্রশ্ন: কাজী মতিউর রমানকে চেনেন?
উত্তর: চিনি, তিনি আমার বন্ধু এবং তিনি ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন। 
প্রশ্ন: কাজী মতিউর রমানের মেয়েকে অপহরণেল অভিযোগে আপনার ও আপনার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় কখন আপনার নাম অন্তর্ভূক্ত হয়েছে?
উত্তর: যখন থেকে তালিকা হয় তখন থেকে।
প্রশ্ন: ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আপনার নাম অর্ন্তভুক্ত করে।
উত্তর: সত্য।
প্রশ্ন: ময়মনসিংহ জেলা কমান্ডার নাজির উদ্দিন আহমেদসহ ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা ২০০৯ সালের ১১জুন মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ডে এক আবেদনে আপনাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা গণ্য করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে আপনার নাম কর্তনের আবেদন করেন।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: ওই অভিযোগের উপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধ কেন্দ্রীয় কমান্ড তালিকা (অভিযোগ) এর প্রথম পর্যায়ে আপনার নাম অন্তর্ভূক্ত করে।
উত্তর: অভিযোগ করেছে তবে এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
প্রশ্ন: আপনি সব সময় আওয়ামী লীগ পন্থী ও বর্তমান আপনার এলাকার সংসদ সদস্য মতিউর রহমান আপনার চাচা হয়।
উত্তর: শতভাগ সত্য।
প্রশ্ন: আপনার পিতা হত্যার বিষয়ে স্বাধীনতার ৪২ বছর পর কামারুজ্জামানকে জড়িয়ে যেসব কথা বলেছেন তা মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক ও বানোয়াট।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনি যেহেতু একজন বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা তাই  বিতর্ক থেকে নিজেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এমপির পরামর্শে এ মামলার আসামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিচ্ছেন।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: কামারুজ্জামান ’৭১ সালে আল-বদর স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন না, তিনি তখন এইচএসসির ছাত্র ছিলেন মাত্র।  
উত্তর: সত্য নয়।

রিপোটার : হাবিবুর রহমান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন