বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০১৩

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ//উই আর নট স্টুডেন্ট

31/7/2013
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আগামীকাল বৃহষ্পতিবার আসামীপক্ষে যুক্তি উপস্থান শুরু হবার কথা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ  রাষ্ট্রপক্ষে প্রথমে অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন সুলতান মাহমুদ সিমন। এরপর আইনী বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।

তুরিন আফরোজ সালহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জবানবন্দী তুলে ধরে বলেন, তার নিজের দেয়া জবানবন্দীতেই অনেক অসঙ্গতি এবং স্ববিরোধীতা রয়েছে। তিনি বলেছেন ১৯৬৯ সালে ঢাকায় তার বাসায় আইউব বিরোধী আন্দোলনে নিয়মিত বৈঠক হত । আজকের পরিচিত অনেক রাজনীতিবিদ সে বৈঠকে যোগ দিতেন। তিনি তার বাসা ও গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে সে আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের সাত মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স সমাবেশে যোগ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন সাত মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষন যদি স্বাধীনতার ঘোষনা হয় তাহলে তিনিও স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন সক্রিয় সমর্থক আইনগতভাবে।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, আমরা তার এ কার্যক্রম বিষয়ে কোন বিতর্ক  করছিনা। কিন্তু এ পর্যন্ত কার্যক্রমের পরে তিনি কি করলেন? ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পরে তিনি (তার দাবি অনুযায়ী) পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ি জমালেন। আইউববিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় নেতা যুদ্ধ শুরুর সাথে সাথে পশ্চিম পাকিস্তান পাড়ি দিলেন। বিদেশে গিয়েও অনেকে মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকিস্তান গিয়ে কি করলেন? তিনি আগস্টে সেখানে অনার্স পরীক্ষা শেষে বন্ধু বান্ধব মিলে পাকিস্তানের উত্তারাঞ্চলের পার্বত্য অঞ্চল মারিতে বেড়াতে গেলেন। দেশে তখন যুদ্ধ চলছে। এরপর সেপ্টেম্বরে বন্ধুবান্ধব মিলে গাড়িতে করে পাকিস্তান থেকে লন্ডন যাত্রা করলেন। কি রাজকীয় ভ্রমন।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, হতে পারে তিনি ১৯৬৯ সালে আইউব বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন কিন্তু পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রশ্নে তিনি ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। তার প্রমান ফুটে ওঠে তারই দেয়া জবানবন্দী থেকে। আইউব বিরোধী আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানে অবস্থান ও কর্মকান্ড বিষয়ে তিনি যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা  স্ববিরোধী এবং অসঙ্গতিতে পূর্ণ।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, তিনি বাই চয়েজ বাংলাদেশী নাগরিক। কিন্তু কখন এ বাইচয়েজ তিনি বাংলাদেশী নাগরিক হলেন? ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশে আসলেন। তিনি বলেছেন ১৯৭৩ সালে তার পিতা ঢাকা জেলখানায় মারা যান। তখনো তিনি বাই চয়েজ বাংলাদেশী নাগরিক হলেননা এবং বাংলাদেশেও আসলেননা। আসলেন ১৯৭৪ সালে।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে রাশিয়ার স্বঘোষিত বিতর্কিত  ধর্মযাজক রাশপুতিনের সাথে তুলনা করেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তিনি  বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছেন   রাজনৈতিক বিচারের অংশ হিসেবে তিনি আজ এ ট্রাইব্যুনালের সামনে দণ্ডায়মান। তিনি মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং মুসলমান হবার কারনে তার আজ  এ বিচার হচ্ছে। কিন্তু তিনি যে নিজেকে মুসলমানদের প্রতিনিধি দাবি করছেন তা তার সার্বিক জীবন পর্যালোচনা করলে তার  এ দাবির সত্যতা মেলেনা। তিনি পাকিস্তানের সাদিক পাবলিক স্কুলে পড়েছেন। নামকরা এ স্কুলে অমুসলমানরাও পড়েন। নটরডেম কলেজে পড়েছেন তিনি। সেটা একটা মিশনারী স্কুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন তিনি যেখানে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের আলোচনা হয়। লন্ডনেও পড়েছেন তিনি।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের অভিযোগ তুলে ধরে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, এদেশে হিন্দুদের জন্মই আজন্ম পাপ। হিন্দু হবার কারনেই তাদের তখন নৃশংষ হত্যার স্বীকার হতে হয়। পেটের নিষ্পাপ শিশুও নারকীয় হত্যা থেকে রেহাই পায়নি। কারণ সে শিশু হিন্দুর পেটে ছিল। এটাই ছিল তার অপরাধ।
ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের  যুক্তি উপস্থাপনের জন্য তিনদিন সময় বেঁধে দিয়েছিল। গতকাল চতুর্থ দিনে তাদের যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় শেষ হয়েছে। আজ আসামী পক্ষ যুক্তি উপস্থান  শুরু করবে এবং এরপর আবার রাষ্ট্রপক্ষ সুযোগ পাবে পরবর্তীতে।

উই আর নট স্টুডেন্ট : ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ তার যুক্তি উপস্থানের শুরুতে তার বক্তব্যের একটি লিখিত কপি ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের হস্তান্তর করেন। এসময় ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত আসামী পক্ষ যত দরাখাস্ত দিয়েছে তার সবই তারা দিয়েছে ইংরেজিতে। আর রাষ্ট্রপক্ষ যত  যা কিছু দিয়েছে সবই দিয়েছে বাংলায়। আমরা রায় লিখব ইংরেজিতে। আপনারা কি আমাদের সহযোগিতা করছেন না করছেনা?
এরপর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বক্তব্যের সারাংশ বিষয়ে বলেন, এটা আপনি কি দিয়েছেন? উই আর নট স্টুডেন্ট। উই আর জাজেস  অব দিস ট্রাইব্যুনাল।  আমরা স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় এ ধরনের লেকচার শিট পেতাম কাসে। আপনি রাষ্ট্রপক্ষ থেকে প্রসিকিউটর হিসেবে আর্গমেন্ট এর জন্য দাড়িয়েছেন। আপনি আর্গুমেন্ট করবেন। কিন্তু যা দিয়েছেন তা লেকচারের জন্য  হতে পারে।
এরপর তিনি তার সারাংশের একটি শিরোনাম ‘প্যাটার্নস অব ক্রাইমস’ উল্লেখ করে বলেন এসব কি? একটা সিনোপসিসতো অন্তত দিবেন। অন্তত আপনার কাছে এটা আশা করেছিলাম।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, বাংলা এবং ইংরেজি দুটি ভাষা ব্যবহারের সুযোগ আছে। আর আমি আমার বক্তব্য  ইংরেজিতেই তৈরি করেছি।


মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০১৩

মাওলানা সাঈদীর মামলায় আপিল শুনানী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে


৩০/৭/২০১৩
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আপিল আবেদন শুনানী শুরু হবে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ এ তারিখ ধার্য্য করেন।

আজ  আপিল বিভাগের শুনানীর কার্য তালিকায় মাওলানা সাঈদীর মামলাটি এক নম্বরে ছিল। আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানীর জন্য সময় প্রার্থনা করলে নতুন এ তারিখ ধার্য্য করা হয়।
আগামী ২ আগস্ট থেকে সুপ্রীম কোর্ট দেড় মাসের জন্য ছুটি থাকবে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনা করে।

জাহিদ হোসেন খোকনকে হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের


৩০/৭/২০১৩
জাহিদ হোসেন খোকনকে  আগামী ১৪ আগস্টের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হবার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচারের জন্য রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এদিনের মধ্যে সে স্বেচ্ছায় ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে তার পক্ষে একজন রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগ করা হবে এবং তার অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে  চার্জ গঠন শুনানী  শুরু হবে।
আজ সকালে এ নির্দেশ জারি করা হয়েছে।

জাহিদ হাসান খোকন এর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ১৮ জুলাই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

জাহিদ হাসান খোকন ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র। তিনি নগরকান্দা পৌরসভা বিএনপির সহসভাপতি। তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার কার্যক্রম শুরুর পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটাপাট, ধর্মান্তরকরন এবং হিন্দুদের দেশ থেকে জোর করে নির্বাসনের অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল  তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুনানী ধার্য্য করা হয়েছিল।
রাষ্ট্রপক্ষ গত ২৩ জুন জাহিদ হোসেন  খোকনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সাল বিষয়ে ১০টি মানবতাবিরোধী অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে ট্রাইব্যুনালে। এর আগে ৩০ মে তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষের কাছে।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলায় যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত

৩০/৭/২০১৩
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত রয়েছে। আদালতের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আজ তিনদিনের মাথায় তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হবার কথা ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ সময় প্রার্থনা করায় আগামীকাল বুধবারের মধ্যে তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আনীত মোট ২৩ টি অভিযোগের মধ্যে আজ পর্যন্ত তারা ১৭টি অভিযোগের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ  করেছে। সকালে ট্রাইব্যুনালের (১) কার্যক্রম শুরু হলে সুলতান মাহমুদ সিমন আগের দিনের ধারাবাহিকতায় সপ্তম অভিযোগ থেকে যুক্তি পেশ শুরু করেন। দিনের শেষে ১৭ নম্বর অভিযোগ পর্যন্ত যুক্তি পেশ শেষ করেন। তবে এর মধ্যে ৯ম, ১৩, ১৫ এবং ১৬ নং অভিযোগে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির না করায় এসব অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি পেশ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকী অভিযোগগুলো বিষয়ে যুক্তি পেশ করা হয়েছে। আজ যেসব অভিযোগে যুক্তি পেশ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ৭ম-সতিশ চন্দ্র পালিত হত্যা, ৮ম- শেখ মোজাফফর আহমদ এবং তার ছেলে আলমগীরকে অপহরন ও হত্যা, ১০ম-মানিক ধরের বাড়ি লুটপাট, ১১ তম বোয়ালিয়া থানার শাখপুরা গ্রামে গনহত্যা তথা গুলি করে ৫২ জনকে হত্যা, ১২ তম-জগৎমল্লপাড়া গ্রামে গণহত্যা, ১৪ তম হানিফকে অপহরন করে গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতন, এবং ১৭ তম অভিযোগ হল নিজামউদ্দিনসহ তিনজনকে ধরে নিয়ে গুডসহিলে নির্যাতন।
সুলতান মাহমুদ সিমন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং ১৯৭১ সালে প্রকাশিত ও সংরক্ষিত কিছু  ডকুমেন্ট  উপস্থাপন করে বলেন,  আসামীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে। আসামীর নির্দেশে এবং উপস্থিতিতে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনা যে ঘটেছে তাতে কোন সন্দেহ নাই এবং এ বিষয়ে দলিলপত্র রয়েছে।

তরকারি বেশি রান্না হয়ে গেছে : আজ  সোয়া তিনটার দিকে রাষ্ট্রপক্ষের ১৭ তম অভিযোগের পক্ষে যুক্তি উপস্থান শেষে  আরো সময় প্রার্থনা করলে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, আপনাদের তরকারি বেশি রান্না হয়ে গেছে। ফলে কোনটায় লবন কম, কোনটায় তেল কেম, কোনটায় ঝাল বেশি হয়ে গেছে। অল্প আইটেম রান্না করলে সবগুলো আইটেম সুস্বাদু হত। রাষ্ট্রপক্ষ আনিত অধিকসংখ্যক অভিযোগের প্রতি লক্ষ্য করে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এক্সটারমিনেশন মানে কি : আজ যুক্তি উপস্থাপনের সময় দুপুরের বিরতির হলে  ট্রাইব্যুনাল কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এবং অন্যান্যরা। তখন ডকে দন্ডায়মান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তুরিন আফরোজকে লক্ষ করে বলেন, এই তুরিন এক্সটারমিনেশন মানে কি? তখন তুরিন আফরোজ বা কেউ একজন পাশ থেকে বলেন, নির্মূল, নিশ্চিহ্নকরন। তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, নির্মূলতো? আমার বিরুদ্ধে আপনারা নির্মূলের অভিযোগ এনেছেন। আর আপনি তো নির্মূল কমিটির সদস্য। এরপর আপনাকে নির্মূলের জন্য ধরা হবে। এরপর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাসলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৩

বিচারপতি শামীম হাসনাইন বিষয়ক রিভিউ আবেদন খারিজ// রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থন চলছে

২৯/৭/২০১৩
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে হাইকোর্টে কর্মরত  বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে সাক্ষী হিসেবে হাজিরের জন্য সময় চেয়ে দায়ের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুাল-১। আজ  সকালে এ আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় দিনের মত রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয় ।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য  পাঁচজন সাক্ষীর তালিকা জমা দেয়া হয়েছিল আসামী পক্ষ থেকে।  সাক্ষীর তালিকায় হাইকোর্টের কর্মরত বিচারপতি শামীম হাসনাইন এর  নাম ছিল। বিচারপতি শামীম হাসনাইন ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী ছিলেন। সে জন্য অনুমতি চেয়ে তিনি গত ২২ জুলাই প্রধান বিচারপতি বরাবর একটি চিঠি লিখেন।  এদিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুীর পক্ষে চতুর্থ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়ে যায় গত ২৪ জুলাই। এদিন আসামী পক্ষের পঞ্চম সাক্ষীও হাজিরের জন্য ধার্য্য ছিল। কিন্তু আসামী পক্ষ পঞ্চম সাক্ষী হাজির করতে পারেনি কারণ বিচারপতি শামীম হাসনাইন তখনো প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে কোন জবাব পাননি তার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়া বিষয়ে। ফলে ২৪ জুলাই  আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহন বন্ধ করে দিয়ে মামলার যুক্তি উপস্থাপন করার জন্য ২৮ জুলাই তারিখ নির্ধারন করে ট্রাইব্যুনাল। এদিন অর্থাৎ ২৪ জুলাই  আসামী পক্ষ থেকে আবেদন দিয়ে বলা হয় পঞ্চম সাক্ষী হাজিরের জন্য তাদের আরো সময় দেয়া হোক এবং যুক্তি উপস্থান মুলতবি রাখা হোক পরবর্তী সাক্ষী হাজির না করা পর্যন্ত।  ট্রাইব্যুনাল এ আবেদন খারিজ করে দেন।

এরপর গত ২৮ জুলাই যুক্তি উপস্থাপনের দিন আসামী পক্ষ থেকে আবারো আবেদন দাখিল করে বলা হয় তাদের পক্ষে পঞ্চম সাক্ষী হিসেবে বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে হাজিরের জন্য সময় দেয়া হোক এবং যুক্তি উপস্থাপন মুলতবি রাখা হোক। এসময় তারা বিচারপতি শামীম হাসনাইন কর্তৃক প্রধান বিচারপতি বরাবর অনুমতি চেয়ে লিখিত চিঠিও দাখিল করে ট্রাইব্যুনালে।  রিভিউ আবেদন বিষয়ে পরের দিন  জানানো হবে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল  রাষ্ট্রপক্ষকে যুক্তি উপস্থানের নির্দেশ দেন । আজ সোমবার রিভিউ আবেদনটি খারিজ করে দেয়া হয়েছে।
এর ফলে আসামী পক্ষের সাক্ষী হাজিরের সুযোগ  বন্ধ হয়ে গেল।

রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন চলছে : রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুলতান মাহমুদ সিমন আজ দ্বিতীয় দিনের মত যুক্তি উপস্থাপন করেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩ টি অভিযোগের মধ্যে আজ তিনি তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ অভিযোগ পর্যন্ত  যুক্তি পেশ করেন। তৃতীয় অভিযোগ নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যাকান্ড, চতুর্থ অভিযোগ জগৎমল্লপাড়া হত্যাকান্ড, পঞ্চম অভিযোগ সুলতানপুর, বনিকপাড়া হত্যাকান্ড এবং ষষ্ঠ অভিযোগ ৬৯ পাড়া গনহত্যা বিষয়ে যুক্তি পেশ করে সুলতান মাহমুদ সিমন বলেন এ অভিযোগগুলো সন্দেহাততীভাবে প্রমানিত হয়েছে। এসব হত্যাকান্ডের সময় আসামী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। নূতন চন্দ্র সিংহকে তিনি নিজে গুলি করেছেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং অন্যান্য ডকুমেন্ট থেকে তা প্রমানিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এসব অভিযোগ বিষয়ে ১৯৭২ সালে দায়ের করা তিনটি মামলার রেফারেন্স দিয়ে তিনি বলেন, এসব মামলার আসামীর তালিকায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাম রয়েছে।




বিচারপতি শামীম হাসনাইন এর চিঠি


২৮/৭/২০১৩
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক পাঁচজন সাক্ষীর সংখ্যা নির্ধারন  করে দেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী আসামী পক্ষ থেকে পাঁচজন সাক্ষীর তালিকা জমা দেয়। সাক্ষীর তালিকায় হাইকোর্টের কর্মরত বিচারপতি শামীম হাসনাইন এর  নাম ছিল। বিচারপতি শামীম হাসনাইন ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী ছিলেন। সে জন্য অনুমতি চেয়ে তিনি গত ২২ জুলাই প্রধান বিচারপতি বরাবর একটি চিঠি লিখেন তিনি। তবে সে চিঠির কোন জবাব তিনি পাননি। এদিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুীর পক্ষে চতুর্থ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়ে যায় ২৪ জুলাই। এদিন পঞ্চম সাক্ষীও হাজিরের জন্য ধার্য্য ছিল। কিন্তু আসামী পক্ষ পঞ্চম সাক্ষী হিসেবে বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে এদিন হাজির করতে ব্যর্থ হয় । তখন ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব বন্ধ ঘোষনা করে মামলার যুক্তি উপস্থাপনের তারিখ ধার্য্য করেন ২৮ জুলাই। আসামী পক্ষ থেকে আবেদন দাখিল করে বলা হয় পঞ্চম সাক্ষী হাজিরের জন্য তাদের আরো সময় দেয়া হোক এবং মামলার যুক্তি উপস্থানের যে তারিখ ধার্য্য করা হয়েছে তা মুলতবি রাখা হোক। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল  এ আবেদন খারিজ করে দেয়।
এরপর আজ  রোববার ২৮ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের  যুক্তি উপস্থানের দিন আসে। আসামী পক্ষ থেকে  ট্রাইব্যুনালে আবারো একটি আবেদন দিয়ে বলা হয় পঞ্চম সাক্ষী বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে হাজির না করা পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন মুলতবি রাখা হোক। ট্রাইব্যুনাল এ আবেদন বিষয়ে আগামীকাল  সিদ্ধান্ত হবে মর্মে  উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষকে যুক্তি উপস্থাপনের নির্দেশ দেন।


বিচারপতি শামীম হাসনাইনের চিঠি :
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বরাবর ইংরেজিতে পাঠানো চিঠিতে বিচারপতি শামীম হাসনাইন লিখেছেন, “আমি জানতে পেরেছি যে, সালাহউদ্দিন চৌধুরী মামলায় আমার নাম আসামী পক্ষের সাক্ষীর তালিকায় রাখা হয়েছে আসামী পক্ষ থেকে। আসামী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী লাহোরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কাসমেট ছিলেন। আমার ধারণা সে কারনে হয়ত তিনি তার পক্ষে আমাকে সাক্ষী মেনেছেন। এটা সত্য ঘটনা যে, ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করেছেন। আমার সহকর্মীরা আমাকে জানিয়েছেন যে, হাইকোর্টের একজন কর্মরত বিচারপতি হিসেবে যেকোন কোর্টে সাক্ষী হিসেবে হাজির হতে আমার বারন রয়েছে।
একদিকে আমার অফিসিয়াল বাধ্যবাধকতা/আচরনবিধি এবং অন্যদিকে আমার বিবেক-এ দুই অবস্থার মধ্যে আমি ঘুরপাক খাচ্ছি। কাজেই আমার সাক্ষ্যদান বিষয়ে যদি কোন বাঁধা থাকে তবে সে বিষযে বিবেচনার জন্য আপনার সহযোগিতা কামনা করছি। ”

বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৩

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুনানী শুরু


দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (এমসি) জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য  মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে  চার্জ গঠন শুনানী শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ  আজ  শুনানী শুরু হয়।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন, অপহরন লুন্ঠন এবং অগ্নিসংযোগের মত ১৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। এর মধ্যে দুটি পৃথক অভিযোগে মোট সাতজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। বাকী ১২টি অভিযোগ হল অপহরন এবং নির্যাতন সংক্রান্ত। এসব অভিযোগের সাথে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপনসিবিলিটি বা উর্দ্ধতন নেতৃত্বে দায় আনা হয়েছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৭১ সালে মীর কাসেম আলী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন ।  তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে আল বদর বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র মহামায়া বা ডালিম হোটেলে স্বাধীনতাপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের অপহরন করে  নির্যাতন, হত্যা, গুম করা হত। এছাড়া  লুন্ঠন এবং অগ্নিসংযোগের মত মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড পারিচালিত হয়েছে তার নেতৃত্বে। মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে যে ১৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে তার  সবগুলোর সাথেই হয়  তার নেতৃত্ব  অথবা  সরাসরি  সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুলতান মাহমুদ সিমন শুনানীতে অংশ নেন এবং মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনালে। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানী শেষে আগামী ৭ আগস্ট আসামী পক্ষের শুনানী পেশের জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করা হয়েছে।

শুনানী শেষে সুলতান মাহমুদ সিমন সাংবাদিকদের জানান, ১৪টি অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মোট ৩৩ জন সাক্ষীর নাম জমা দেয়া হয়েছে।

অভিযোগসমূহ :
১ নং অভিযোগ  : মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে আল বদর বাহিনী ১৯৭১ সালের ৮ নভেম্বর ওমরুল ইসলাম চৌধুরীকে  চাকতাই ঘাট থেকে অপহরন রা হয়। এরপর তাকে কয়েক দফায় চট্টগ্রামের আন্দর কিল্লাস্থ ডালিম হোটেল, পাচলাইশ থানার সালমা মঞ্জিল এবং একটি চামড়ার গুদামে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
২ নং অভিযোগ : আসামীর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর চাকতাই থেকে লুৎফর রহমান ফারুককে অপহরন করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয় এবং বাড়িঘরে আগুন দেয়া  হয়।

৩ নং অভিযোগ : ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর আসামীর নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে তার কদমতলা বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়।
৪ নং    অভিযোগ :  ডাবলমুরিং থানায় সালাহউদ্দিন খানকে তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে আল বদর বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন।
৫ নং অভিযোগ : ২৫ নভেম্বর আনোয়ারা থানার আব্দুল জব্বারকে  তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে মীর কাসেম আলীর সামনে হাজির করা হয় । এরপর তাকে নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়া হয়।
৬ নং অভিযোগ : চট্টগ্রাম শহরের একটি চায়ের দোকান থেকে হারুনুর রশিদ নামে একজনকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেল এবং সালমা মঞ্জিলে নির্যাতন করা হয়।
৭ নং অভিযোগ : মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে সাত/আট জন যুবক ডাবলমুরিং থানা থেকে সানাউল্লাহ চৌধুরীসহ ২ জনকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়।
৮ নং অভিযোগ : ২৯ নভেম্বর রাতে নুরুল কুদ্দুসসহ চারজনকে অপহরন করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন।
৯ নং অভিযোগ : ২৯ নভেম্বর সৈয়দ মো : এমরানসহ ছয় জনকে অপহরন ও নির্যাতন।
১০ নং অভিযোগ : আসামীর নির্দেশে মো : যাকারিয়াসহ চারজনকে অপহরন ও নির্যাতন।
১১ নং অভিযোগ : শহীদ জসিম উদ্দিনসহ ছয় জনকে অপহনের পর নির্যাতন করা হয়। এতে জসিমসহ পাঁচজন নিহত হয় এবং  পরে লাশ গুম করা হয়। ঈদের দিনের পর জসিমকে অপহন করে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়।
১২ নং অভিযোগ : জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ তিনজনকে অপহরন করে নির্যাতন করা হয়। এতে দুই জন নিহত হয় এবং তাদের লাশ গুম করা হয়।
১৩ নং     অভিযোগ : সুনীল কান্তিকে অপহরন ও নির্যাতন
১৪ নং অভিযোগ : নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরন ও নির্যাতন

অভিযোগ গঠন শুনানীর শুরুতে মীর কাসেম আলীর জন্ম পরিচয় তুলে ধরা হয় ফরমাল চার্জ থেকে।  এতে বলা হয় মীর কাসেম আলী ১৯৫২ সালে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানায় জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা উপলক্ষে তিনি ১৯৭১ সালের পূর্ব থেকে চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করতেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম এ ডিগ্রী অর্জন করেন। ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হবার পূর্বে তিনি চট্টগ্রাম শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

আজ  ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে মীর কাসেম আলীর পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম চার্জ গঠন শুনানী শুরু বিষয়ে সময় প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, সর্বশেষ যে ২০৯ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট জমা দেয়া হয়েছে তার মধ্যেও ৩৮ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট পাঠযোগ্য নয়। তাছাড়া আসামীর সাথে তার আইনজীবীরাও যোগাযোগের সুযোগ পায়নি। তবে ট্রাইব্যুনাল আবেদন প্রত্যাখ্যান করে রাষ্ট্রপক্ষকে শুনানী শুরু করতে বলেন এবং আসামী পক্ষকে তাদের শুনানী শুরুর জন্য সময় দেয়ার কথা বলেন।
দুপুর একটার মধ্যেই রাষ্ট্রপক্ষের শুনানী শেষ হয়ে যায়।

চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের  ট্রাইবু্যুনাল শুনানী গ্রহণ করেন।
আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম, আবু বকর সিদ্দিক, সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ২৮ জুলাই এবং ১ আগস্ট আসামীকে তার আইনজীদের সাথে পরামর্শ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে কাসিমপুর জেলখানায়।

১৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে ট্রাইব্যুনালে।

গত বছর  ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে  ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  এর নির্দেশে। সেই থেকে তিনি বন্দী রয়েছেন।
চার্জ গঠন শুনানী উপলক্ষে আজ মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।



কাইউম রেজা চৌধুরীর জেরা


সাবেক প্রধান বিচারপতি মাঈনুর রেজা চৌধুরীর ছোট ভাই কাইউম রেজা চৌধুরী সাক্ষ্য দিয়েছেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে। গত ১৬ জুলাই তিনি জবানবন্দী প্রদানের পর জেরা শুরু হয়। সামান্য কিছু প্রশ্ন করার পর জেরা মুলতবি করা হয়। ২১/৭/২০১৩ তার জেরা সমাপ্ত হয়।


জেরা ঃ-
১৬/৭/২০১৩
আমি জমিদার বংশের ছেলে। অদ্য আমি সুস্থ শরীরে ট্রাইব্যুনলে জবানবন্দী করেছি। ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেট খেলা চলাকালীন সময়ে এ্যাসেমব্লি স্থগিত করায় খেলা পন্ড হয়ে যায় ‘‘কথাগুলো সত্য নয়”। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আমার আপন খালাতো ভাই। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেব কখনো বঙ্গবন্ধুর ছয় দফাকে সমর্থন করেছিলেন কি না তাহা আমার জানা নাই (চলবে)


২১-০৭-২০১৩ইং পুনরায় জেরা শুরু ঃ-
আমি ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ডিগ্রী লাভ করি। ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন চত্বরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল কিনা তাহা আমি জানি না। কারণ আমি সেদিন ঢাকা স্টেডিয়ামে খেলার মাঠে ছিলাম। ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ তারিখে ঢাকা স্টেডিয়ামে পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড ক্রিকেট খেলা চলাকালীন দুপুরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষনা করলে খেলা পন্ড হয়েছিল। ২রা মার্চ ১৯৭১ তারিখে ঢাকা স্টেডিয়ামে কোন ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয় নাই, ইহা সত্য নহে। আমি গার্মেন্টস বাইং হাউজের সংগে জড়িত আছি। আমার ব্যবসা সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং আয়কর সম্পর্কিত কাগজপত্র অদ্য আমি ট্রাইব্যুনালে আনি নাই, প্রয়োজন হলে দেখাতে পারব। ১৯৪৭ সালের আগে আমার পিতা মুসলিম লীগের রাজনীতি করতেন এবং মুসলিম লীগ থেকে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এ্যাসেমব্লীর সদস্য হয়েছিলেন, ইহা সত্য নহে। আমার যেহেতু জন্ম হয় নাই সেহেতু, আমি বলতে পারব না যে, কত সালে আমার বাবা মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। আমার পিতা পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমার পিতা এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেব এবং সালমান এফ রহমান সাহেবের পিতা একই সাথে একই দল থেকে পাকিস্তান আন্দোলনের সংগে যুক্ত ছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। খেলাধুলার কারণে শেখ কামালের সংগে আমার সুসম্পর্ক ছিল তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেব কনভেনশন মুসলি লীগের সভাপতি এবং প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, পরবর্তীতে স্পীকার, প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত আইয়ুব খানের পরে তিনি কনভেনশন মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন কিনা তাহা আমি জানি না। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, তার সরকার ও দল বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কট্টর বিরোধী ছিলেন এবং আত্মনিয়ন্ত্রকারী বাঙ্গালী জনগনের বিরুদ্ধে তীব্র দমন, পীড়ন, হত্যা, নির্যাতন ইত্যাদি চালিয়েছিলেন, ইহা সত্য। আমি জানি যে, ১৯৬৮ সালে জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে ১ নম্বর আসামী করে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেছিলেন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রভাবাধীন ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন), ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া), জামায়াত পন্থী ইসলামী ছাত্র সংঘ, কনভেনশন মুসলিম লীগ পন্থী এন,এস,এফ, ছিল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব সরকারী দল অর্থাৎ এন,এস,এফ এর সংগে যুক্ত ছিলেন এবং মুসলিম লীগ পরিবারের সদস্য ছিলেন তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী আইয়ুব খানের ঘনিষ্ট ছিলেন বিধায় বঙ্গবন্ধু আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হলে তার মুক্তি আন্দোলনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কে নিয়ে আমি অংশ নিয়েছিলাম মর্মে আমার প্রদত্ত জবানবন্দীর বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমার মনে নাই যে, ছাত্র সমাজ কোন মাসে এগারদফা আন্দোলনের কর্মসূচী দেয় এবং তার ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আমার স্মরণ নাই যে, কোন কোন ছাত্র সংগঠনের কোন কোন ছাত্র নেতারা এগার দফা আন্দোলনের কর্মসূচীতে স্বাক্ষর করেছিল। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারী মাসে এগারো দফা কর্মসূচী ঘোষিত হয়েছিল কিনা তাহা আমার স্মরণ নাই। এগারো দফা আন্দোলনে আমরা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবকে নিয়ে অংশ গ্রহণের যেসকল কথা আমার জবানবন্দীতে বলেছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। শহীদ আসাদ কোন ছাত্র সংগঠনের সদস্য ছিল তাহা আমি বলতে পারবনা, তবে আমাদের সামনে যে শহীদ হয়েছিল। শহীদ আসাদকে গুলি করার সময় আমি, সালমান এফ রহমান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এগার দফা আন্দোলনের সময় মিছিলে ছিলাম এবং শহীদ আসাদকে গুলি করার সময় আমরা গাছের পিছনে ছিলাম মর্মে জবানবন্দীতে যে বক্তব্য প্রদান করেছি  তাহা সর্বাংশে মিথ্যা, ইহা সত্য নহে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবকে আন্দোলনের সময় ই,পি,আর পিছন দিক থেকে লাথি মারার যে কথা জবানবন্দীতে বলেছি তাহা সর্বাংশে ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশুনাকালীন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব কোন ছাত্র নেতা ছিলেন না, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশুনা করাকালীন অবস্থায় সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের ধানমন্ডিস্থ বাসায় আসার যে কথা জবানবন্দীতে বলেছি, তাহা মিথ্যা, বানোয়াট এবং অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমার খালু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব চট্টগ্রামের কোন নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচন কররিলেন তাহা আমি জানি না তবে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থির নিকট হেরেছিলেন। আমার ভাই এরফান রেজা চৌধুরী ১৯৭০ সালে মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে হেরেছিলেন।
‘‘ঐ সময় আমার ইংরেজীতে দখল থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু আমাকে বাদশা ভাইয়ের সংগে বিদেশী সংবাদিকদের দেখাশুনা ও অনুবাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এইজন্য ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ইংরেজী টাইপিং এর দায়িত্ব আমার উপর পড়ে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষনের সময় রেসকোর্সে আমাদের সংগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবও উপস্থিত ছিলেন। ঐ সময় আওয়ামী লীগের কাজের জন্য আই,সি,আই, আমাকে একটি গাড়ি দিয়েছিল। এই গাড়িটি বিদেশী সাংবাদিকদের আনা নেওয়া এবং তাদের প্রেসের খোঁজ খবর দেওয়ার কাজে আমি ব্যবহার করতাম” বা ‘‘১৯৭১ সালের ১৮ কিংবা ১৯শে মার্চ বিকাল ৪.০০ টার সময় বঙ্গবন্ধু ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেবের সংগে দেখা করার জন্য ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেবের বাসায় এসেছিলেন এবং আমি বঙ্গবন্ধুর সংগে ছিলাম। তাদের আলোচনার সবকিছু আমি শুনি নাই তবে শুধু একটি কথা কানে এসেছিল যে, ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেব বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন পাকিস্তানিদের বিশ্বাস করো না” বা ‘‘ ১৯৭১ সালের ২৩ বা ২৪ শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধুর সংগে বিদেশী সাংবাদিকদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা আমি এবং বাদশা ভাই মিলে করে দিতে পারি নাই। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত্রে বাদশা ভাই, নিজাম আহম্মেদ, নেওয়াজ আহম্মেদকে নিয়ে আমি গাড়ি চালিয়ে তৎকালীন হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে প্রেস রিলিজ দেওয়ার জন্য যাই। প্রেস রিলিজ দেওয়ার পর আমি গাড়িতে ফেরত আসি, বাদশা ভাই তখন হোটেল থেকে বের হয়ে আসবেন তখন প্রায় ১০.২০ বাজে। এই সময় একজন পাকিস্তানি সৈন্য বন্দুক তাক করে আমাদেরকে হোটেলের মধ্যে যেতে নির্দেশ দিল। বাদশা ভাইয়ের ব্রীফকেসটি গাড়িতে আটকা পড়লো যাহার মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ন কাগজপত্র ছিল” -এই কথাগুলি অসত্য, ইহা সত্য নহে।
শেখ কামালকে নিয়ে আমি আমার জবানবন্দীতে যে সকল বক্তব্য প্রদান করেছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। তেজগাঁও থেকে কয়টি পি,আই,এ এবং বিদেশী বিমান যাতায়াত করতো তাহা আমি জানি না, তবে প্রতিদিন দুপুরে একটি ফাইট ছিল। ১৯৭১ সালে ঢাকা থেকে করাচী যেতে কলম্বোর উপর দিয়ে যাওয়ার কারণে ৬ ঘন্টা সময় লাগতো। 
 ‘‘ আমি এবং নিজাম আহম্মেদ ২৮শে মার্চ সুইডিস পরিবারের বাসায় গিয়ে উঠি” বা ‘‘ ২৮শে মার্চ তারিখে ৮ নম্বর ব্রীজের কাছে আমি যখন গাড়ি নিয়ে বের হই তখন শেখ কামালকে দেখতে পাই। শেখ কামালকে নিয়ে আমি ঐ সুইডিস পরিবারের বাসায় ফিরে আসি। সুইডিস মহিলা শেখ কামালকে দেখে শেখ কামালের গোফ কেটে দিল এবং মাথার চুল মাঝখান দিয়ে চিরুনী করে দিল যাতে তাকে দেখে সহজে চেনা না যায়” বা ‘‘ শেখ কামাল, নিজাম আহম্মেদ এবং আমি ৩/৪ দিন ঐ সুইডিস পরিবারের সংগে ছিলাম। ৩০/৩১শে মার্চ শেখ কামাল টুঙ্গিপাড়ায় যেতে না পেরে সেই সুইডিস পরিবারে আবার ফেরত এসেছিল। এই সময় পাকিস্তান সরকার সুইডিস পরিবারকে দেশ ত্যাগের নির্দেশ প্রদান করে। এই নির্দেশের পরে আমি, শেখ কামাল এবং নিজাম আহম্মেদ খাবার দাবার নিয়ে ৩২ নম্বরে আমার বোনের বাড়ীতে উঠি” বা ‘‘ঐ সময় আমরা সিদ্ধান্ত হীনতার মধ্যে শেখ কামাল বললেন আমি টুঙ্গিপাড়ায় যাই আর তোমরা তোমাদের বন্ধু বান্ধব সহ জার্মানীতে যাওয়ার চেষ্টা করো। ৪ঠা এপ্রিল কিংবা ৫ই এপ্রিল তারিখে শেখ কামাল টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার সময় আমাকে তার পরিবারের সদস্যদের দেখাশুনা করার জন্য অনুরোধ করেছিল। আমি আমার ভাইয়ের গাড়ি নিয়ে আমি মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় গেলাম। সেখানে যাওয়ার পর মামি-অর্থাৎ বেগম মুজিব আমাকে দেখে বললেন বাবা তুমিই প্রথম আমাদের দেখার জন্য এখানে এসেছো। সেখানে শেখ জামাল, শেখ রাশেল, শেখ রেহানা, বর্তমানে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা, ডঃ ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন। মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় আমি যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে নিজাম আহম্মেদ এবং শেখ কামাল সেখানে উপস্থিত হয়, কারণ শেখ কামাল টুঙ্গিপাড়ায় যেতে পারেনি। তখন আমরা তিনটি গাড়িতে করে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদেরকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া থেকে ১ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডস্থ মিসেস বদরুন্নেছা আহম্মেদের বাড়ীতে নিয়ে আসি”- এই কথাগুলি সম্পূর্ণ অসত্য, ইহা সত্য নহে।
‘‘২৮শে মার্চ দুপুরের পরে আমি হেটে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ১৮ নম্বর রোডের বাসায় যাই। আমাকে দেখে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলল, আমি আগামী কাল করাচি যেতে চাই, আমাকে পরের দিন এয়ারপোর্টে পৌছে দিতে হবে। ৩২ নম্বর রোডস্থ আমার বোন মিসেস ফারাদি খান এর বাসা থেকে আমার দুলাভাইয়ের টয়োটা করোনা যার নম্বর ৪৮৯৩ গাড়ি করে আমি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসায় যাই এবং তাকে গাড়িতে তুলে দুপুরে তেঁজগাও আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছে দিই” বা ‘‘। আমি করাচি পৌঁছাবার দুইদিন পরে যখন আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য একটি বাড়ি খুঁজতে বেরিয়েছিলাম তখন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সালমান এফ, রহমানের বাসায় এসেছিল, সে সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের সংগে আমার দেখা হয় নাই। আমার ভায়রা মিঃ আব্দুল মোমেন চৌধুরী যিনি তানজানিয়া থেকে করাচি এসেছিলেন আমি আশিকুর রহমান সাহেবের অফিসে গিয়ে তার সংগে দেখা করি” বা ‘‘ আশিকুর রহমান সাহেবের অফিসে বসে আব্দুল মোমেন চৌধুরী বললেন তোমার কাজিন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের দেখা হয়েছে এবং পরিচয় হয়েছে” এই কথাগুলি সম্পূর্ণ বানোয়াট, মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিক,  ইহা সত্য নহে।
আমার ভাইয়েরা এবং আত্মীয় স্বজনরা মুসলিম লীগের রাজনীতির সংগে জড়িত ছিল বিধায় আমি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্স হিসাবে ছাত্র আন্দোলন নস্যাত করার জন্য নিয়োজিত ছিলাম, ইহা সত্য নহে। আমি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের আত্মীয় বিধায় তার পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য প্রদান করার জন্য ট্রাইব্যুনালে এসেছি, ইহা সত্য নহে। আমি সত্য সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য এসেছি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের বিরুদ্ধে যে সকল মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনয়ন করা হয়েছে তাহা সঠিক ভাবে আমার জানা নাই। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ঘনিষ্ঠজন সেজে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত বাঙ্গালীর স্বাধীনতার লড়াইকে নস্যাতের অভিপ্রায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ১৯৭১ সালে যে সমস্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন তার দায় থেকে তাকে রক্ষা করার জন্য আমি খালাতো ভাই হিসাবে আসামী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এর পক্ষে মনগড়া, শেখানো, মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট সাক্ষ্য ট্রাইব্যুনালে প্রদান করলাম, ইহা সত্য নহে। (সমাপ্ত) 


মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৪ তম সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা

21/7/2013
আমার নাম মোঃ আব্দুস সেলিম লতিফ, আমার বয়স- ৫৯/৬০ বৎসর। আমার ঠিকানা- সাং বৃশালিখা, থানা-বেড়া, জেলা- পাবনা।
১৯৭০ সালে আমি বেড়া কলেজের ১ম বর্ষ বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ছিলাম। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রেডিওতে শুনে আমি এবং আমার সহপাঠিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুতি কল্পে অবসরপ্রাপ্ত আর্মি, ই,পি,আর, এবং পুলিশদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে প্রাথমিক ট্রেনিং শুরু করি। ২৬ শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার পর আমরা বেড়া থানা থেকে ১৪টি রাইফেল এবং গোলাবারুদ সহ স্থানীয় যে সকল লোকের লাইসেন্স করা বন্দুক ছিল সেই সমস্ত বন্দুক এবং কার্টিজ সংগ্রহ করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। এরপর বিভিন্ন স্থানে সেই স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে আনুমানিক ৩/৪ তারিখে আমরা খবর পাই যে, আরিচা থেকে পাকিস্তানী আর্মিরা নগরবাড়ী যাওয়ার জন্য ফেরি যোগে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন আমরা ও অবসর প্রাপ্ত ই,পি,আর, আর্মি ও পুলিশের সদস্য সহ আমরা নগরবাড়ী ফেরিঘাটে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলি। পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদের অবস্থানের খবর পেয়ে আনুমানিক ৪ঠা এপ্রিল বিমান থেকে আমাদের উপর গুলি বর্ষণ শুরু করে। ঐ গুলি বর্ষণের ফলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে টিকতে না পেরে আনুমানিক ৫/৭ কিঃমিঃ দূরে শহীদ নগর ডাব বাগানে অবস্থান নেই। এরপর পাকিস্তানী সৈন্যরা নগরবাড়ী ঘাট দখল করে নেয়। ৬/৭ তারিখের দিকে তারা বগুড়ার অভিমুখে যাত্রা করলে আমরা ডাব বাগান শহীদ নগরে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য অবস্থান নেই। তখন ৬/৭ তারিখে পাকিস্তান আর্মিদের সংগে আমাদের ডাব বাগানে সম্মুখ সশস্ত্র যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে পরবর্তীতে ঐ জায়গার নাম হয় শহীদনগর। ১৯৭১ সালের মে মাসে আমি, এস,এম, আমির আলী, আলাউদ্দিন, সুজা উদ্দিন, হারুন অর রশিদ সহ আমরা অনেকেই ভারতে যাই। ভারতে গিয়ে পশ্চিম দিনাজপুরে পতিরামপুর ক্যাম্প/ মালঞ্চ ক্যাম্পে এক সপ্তাহের শর্ট ট্রেনিং নিয়ে পুনরায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বেড়া থানায় ফিরে আসি এবং তৎকালীন এম,এন,এ, আব্দুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন করি। ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসের সম্ভবত ১৫ তারিখে আব্দুল লতিফ মির্জা সাহেবের নির্দেশে বেড়া থানা রেকি করতে যাই। যাওয়ার পথে বেড়া থানার এল,এস,ডি, লঞ্চ ঘাটে আমি এবং আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত আলবদর ও রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি। ধরা পড়ার পর আমাদেরকে বেড়া থানায় আর্মি ও আলবদরদের ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়। ঘন্টা খানেক পরে ওখান থেকে আমাদেরকে নগরবাড়ী আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যাওয়ার সময় খালি গায়ে আমাদেরকে পিঠ মোড়াদিয়ে বেধে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমাদেরকে একটি ফেরির উপর রাখা হয়। গিয়ে দেখি সেখানে আমাদের মত আরও ৯/১০ জন পিঠ মোড়া দিয়ে বাধা অবস্থায় আছে। আরও দেখি একজন আর্মি অফিসারের সাথে মতিউর রহমান নিজামী কথা বলছেন। ইত্যবসরে রাত্রি আটটা বেজে যায়। সেখানে আর্মির একজন ক্যাপ্টেন ছিল তার কাছে আমাদেরকে ফেরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করে ঐ এলাকায় কারা কারা আওয়ামী লীগ করে, কারা কারা মুক্তিযুদ্ধের সহিত জড়িত, বেড়া থানা থেকে লুণ্ঠিত রাইফেল কোথায়। আমরা বলি যে, আমরা কিছুই জানি না। তখন আমাদের উপর নির্মম অত্যাচার শুরু হয়। জলন্ত সিগারেটের আগুন দিয়ে আমার পিঠে ছ্যাকা দেওয়া হয়। এইভাবে প্রায় দুই/তিন ঘন্টা অত্যাচার চলতে থাকে। আমার পিঠে সেই ছ্যাকার চিহ্ন এখনও আছে। আমাদের নিকট থেকে কোন তথ্য বের করতে না পেরে তখন ক্যাপ্টেন বললেন ‘পার করে দে গা’। তখন আমাদেরকে বাহিরের ফেরিতে নিয়ে যায়। এরপর আমাকে একটি রুমে বসিয়ে রেখে আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিনকে বাহিরে নিয়ে যায়। আনুমানিক ২০/৩০ মিনিট পরে পানির মধ্যে পড়ে যাওয়ার মত বিকট একটা শব্দ শুনতে পাই। এর এক মিনিটের মধ্যে আমাকে বাইরের ফেরীর রেলিংয়ের মধ্যে পিঠমোড়া দিয়ে দাড় করায়। তৎপর দুইজন পাকিস্তান আর্মি ও দুই একজন আলবদরের সদস্যরা আমার দুটি পা ইলেকট্রিকের চিকন তার দিয়ে পেঁচিয়ে বাঁধে এবং আমার দুই হাট পিঠমোড়া করে তার দিয়ে বাধে। আমি দেখতে পাই যে, আমার নিকট থেকে সামান্য দূরে দুইটা বস্তার ভিতর আনুমানিক ৮/১০ খানা ইট ঢোকানো হচ্ছে। এরপর বস্তার মুখ তার দিয়ে বাঁধা হয়। এরপর ঐ ইটের বস্তা দুটি আমার কাধের দুই পার্শ্বে ঝুলিয়ে দেয়।এরপর আমার পা উচু করে বলে যে, “লে বাঙ্গালী লেও ছয় দফাকে এক দফা লেও” এই বলে আমাকে নগরবাড়ী যমুনা নদীতে দুইটি ফেরীর মাঝখানে ফেলে দিলে পার্শ্ববর্তী ফেরীর সংগে ধাক্কা খেয়ে আমার কাধের বস্তা দুইটি খুলে পড়ে যায় মর্মে আমি অনুভব করি। বস্তা সরে যাওয়ার পর আমার মনে হয় আমি বাঁচব তখন আমি আমার হাতের বাঁধন খোলার জন্য চেষ্টা করি। আমি পানি খেতে থাকি। এক পর্যায়ে আমার জ্ঞান শুন্য হওয়ার অবস্থায় আমার হাতের বাঁধন খুলে যায়। এরপর আমার সামান্য জ্ঞান ফিরে আসে, তখন আমি বুঝতে পারি আমি ফেরির নীচে। তখন আমি বাঁচার জন্য ফেরীর তলায় হাত দিয়ে স্রোতের সাথে ভাসতে থাকি। এক পর্যায়ে বুঝতে পারলাম ফেরীর তলা থেকে বের হয়েছি, তখন আমি ভেসে উঠে আমি দেখতে পাই পাকিস্তানী আর্মি ও আলবদররা ফেরির উপর থেকে টর্চ মেরে আমরা কি অবস্থায় আছি তাহা লক্ষ্য করছে। এরপর একটু কিনারে গিয়ে আমার পায়ের বাঁধন খুলে ফেলি। নগরবাড়ি থেকে এক কিঃমিঃ সাতার কেটে গোকসেলুন্দা গ্রামের একটি বাড়িতে গিয়ে উঠি। তখন রাত্রি আনুমানিক একটা/দেড়টা হবে। ঐ বাড়ির লোকেরা তখন আমাকে আশ্রয় দিয়ে লুকিয়ে রাখে এবং পরের দিন সকালে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিনের সংগে সেদিন আনিছ সহ আরও কয়েকজন ছিল। তাদের মধ্যে চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন বাড়িতে ফিরে আসে কিন্তু আনিছ বাড়িতে ফিরে আসে নাই। আনুমানিক ১০/১৫ দিন চিকিৎসা নিয়ে আমি একটু সুস্থ হলে আবার আমি, আমার আব্বা সহ চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন, হারুন অর রশিদ সহ আরও কয়েকজন মাইনকার চর দিয়ে ভারতে চলে যাই। সেখানে পশ্চিম দিনাজপুরে ৭ নং সেক্টরে মালঞ্চ ক্যাম্পে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আমাদের তৎকালীন এম,এন,এ, অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব ৭ নং সেক্টরে বেসামরিক উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছেন। সেখান থেকে ৭ দিনের স্পেশাল ট্রেনিং দিয়ে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব আমাদেরকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন। আমরা ২২ জন একসংগে আসি। আমার পিতা শহীদ সোহরাব আলী প্রামাণিক অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের কাছে থেকে যান। দেশে ফিরে আমরা বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানী আর্মি, রাজাকার, আলবদরদের সংগে যুদ্ধ করি।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখে আমার পিতা আমাদের বাড়িতে ফিরে আসেন। এই খবর স্থানীয় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা জানতে পেরে আলবদর বাহিনীর চীফ ষ্টাফ মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নিকট খবর দেয়। ৩রা ডিসেম্বর তারিখে ভোর বেলা আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা যৌথভাবে আমাদের বৃশালিখা গ্রাম ঘিরে ফেলে। এরপর তারা আমাদের গ্রামের বহু বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং আমার আব্বাকে আমাদের বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে রাস্তার উপর নির্মম অত্যাচার করে ও আমার অবস্থানের কথা আমার আব্বার কাছে জানতে চায়। আমার অবস্থান সম্পর্কে আমার পিতা কিছু না বলায় তাকে গুলি করে হত্যা করে। উক্ত ঘটনা আমি আমার মা, আজগর আলী মুন্সি, অহেদ আলী প্রামাণিক, শাহজাহান আলীসহ আরও অনেকের নিকট থেকে শুনেছি। আমি আরও শুনতে পাই যে, মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশে আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা আমার আব্বাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করেছে। তারা আমার পিতা ছাড়াও আমাদের গ্রামের মনু, ষষ্টি প্রামাণিক, ভাদু প্রামাণিক, জ্ঞানেন্দ্র নাথ হালদার সহ আরও অনেক নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ হত্যা করে। আমি এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদান করেছি। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।
-জেরা
তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট কত তারিখে জবানবন্দী প্রদান করি তাহা আমার মনে নাই। কোন্ সালের কোন্ মাসে জবানবন্দী প্রদান করি তাহাও মনে নাই। (চলবে)



পুনরায় জেরাঃ
তাং- ২২/০৭/২০১৩ইং

সম্ভবত ২০১১ সালের ৮ মাসে আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী দিয়েছিলাম। আমি যখন জবানবন্দী প্রদান করি তখন আমার সামনে উহা লেখা হয়েছিল। লিখিত জবানবন্দী আমাকে পড়ে শুনানো হয়েছিল। আমার কথামত জবানবন্দী লেখা হয়েছে বিধায় আমার কথামত লেখা হয় নাই এ মর্মে আমি কোন আপত্তি প্রদান করি নাই। আমার স্মরণ শক্তি কমে নাই। জবানবন্দী নেওয়ার সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার বাসায় গিয়েছিলেন। আমার জবানবন্দী গ্রহণ করার জন্য আমাকে কোন নোটিশ দেওয়া হয় নাই। স্থানীয় কোন লোক আমাকে এই জবানবন্দী গ্রহণের বিষয়ে খবর দেয় নাই।
১৯৭১ সালে আমাদের পরিবারের সদস্য ছিল ৯ ভাই-বোন ও পিতা-মাতা সহ ১১ জন। আমার ভাই আমিনুল ইসলাম ডাবলু আমার থেকে ২০/২২ বছরের ছোট হবে। আমার গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে আমি প্রাথমিক লেখাপড়া করেছি। মাধ্যমিক লেখাপড়া আমি বিপিন বিহারী হাই স্কুল, বেড়া থানায় করেছি। ১৯৭০ এর নির্বাচনের সময় আমি ভোটার ছিলাম না। আমরা সাধারণভাবে কাশিনাথপুর হয়ে পাবনা শহরে যেতাম। কাশিনাথপুর রোড দিয়ে পাবনা যেতে মনমথপুর, বোয়াইলমারী এবং সাথিয়া সদর পড়ত না। আমার জন্ম সাল ১৯৫৭ সন কিনা তাহা এখন স্মরণ নাই। জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি কালে আমার দেওয়া তথ্য মতে এবং আমার সাক্ষরে তৈরি হয়েছে। ভোটার লিষ্টে আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সমূহ লিপিবদ্ধ করা আছে। সাথিয়া থানার মনমথপুরে আমার আত্মীয় স্বজন নাই, তবে বোয়াইলমারীতে আত্মীয়-স্বজন আছে।
আমি যে স্কুলে ও কলেজে পড়তাম সেই স্কুলে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের কোন যাতায়াত ছিল না। নিজামী সাহেব যেখানে পড়ালেখা করতেন সেই স্কুলে বা কলেজে আমার যাতায়াত ছিল না। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পিতাকে আমি চিনতাম না। নিজামী সাহেবরা কয় ভাই-বোন তাহা আমি বলতে পারি না। বোয়াইলমারী এবং মনমথপুর গ্রামের দূরত্ব আনুমানিক দেড়/দুই কিলোমিটার নদীর এপার ওপার। নিজামী সাহেবের বোনের কোন ছেলেকে আমি চিনতাম না। এখন পর্যন্ত নিজামী সাহেবের বোনের কোন ছেলের নামও আমি জানি না। নিজামী সাহেবকে আমি সর্বপ্রথম ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় দেখেছি। ১৯৭০ সালের নির্বাচন একটি দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঐ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হকের নির্বাচনী জনসভায় আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে দেখেছিলাম। মাওলানা ইছহাক সাহেবের নাম শুনেছি তার ঐ নির্বাচনে তিনি বেড়া এলাকার প্রার্থী ছিলেন না তবে অন্য কোন এলাকার প্রার্থী ছিলেন কিনা তাহা আমা স্মরণ নাই। ঐ নির্বাচনে এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক সাহেব এবং অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব ছাড়া আর কোন প্রার্থী ছিলেন কিনা তাহা আমার স্মরণ নাই। আমি কলেজে পড়াকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমার পিতা আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আমার পিতা ব্যবসা করতেন। আমার পিতার সঙ্গে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের কোন দিন দেখা সাক্ষাত হয়েছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সামনে দাড়িয়ে মুখোমুখি কথাবার্তা বলি নাই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব আমাকে চিনতেন এ ধরনের কোন খবর আমার নিকট ছিল না, তবে চিনলেও চিনতে পারেন।
কলেজে পড়াকালীন আমার ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা ছিল। ১৯৭০ সালে আমাদের কলেজে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোন ছাত্র সংগঠন ছিল না। ১৯৭০ সালে আমাদের কলেজের ভিপি ছিলেন আল মাহমুদ সরকার। তিনি জীবিত আছেন। তার বাড়ী আমাদের গ্রামে। তিনি প্রথম দিকে আমাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেও পরবর্তী পর্যায়ে তিনি কোথায় কি অবস্থায় ছিলেন তাহা আমার জানা নাই। জি.এস কে ছিলেন তাহা আমার স্মরণ নাই। আমার পিতা এবং আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন ছাড়াও আমাদের গ্রামের হারুন অর রশিদ, জানে আলম, চাঁন আলী, বেলায়েত হোসেন এবং আমিসহ ১৫/২০ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। আমাদের গ্রামের ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর তারিখের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আনুমানিক একশত জনের বেশি লোক এখনও জীবিত আছে। তাদের মধ্যে আমাদের গ্রামের শাহজাহান আলীর সাক্ষাতকার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়েছিলেন। আমাদের গ্রামে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২/৩ দিন গিয়েছিলেন। আমি ঢাকায় আসার পরও আমাকে জবানবন্দীর একটি কপি দেওয়া হয়েছে।
আর্মির পদ পদবী সম্পর্কে আমার সম্যক ধারণা নাই। পাকিস্তান আর্মিদের বুকে নাম ফলক লেখা ছিল কিনা তাহা আমার মনে নাই। পাকিস্তানী আর্মি অফিসারদের র‌্যাঙ্ক ব্যাজ কি ছিল তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী বাহিনীদের র‌্যাঙ্ক ব্যাজ কি ছিল আমি বলতে পারব না।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের পর আমাদের ট্রেনিং দিতেন আনছার কমান্ডার মোজাহার আলী এবং আব্বাস আলী সাহবে। আব্বাস আলী সাহেব মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন মোজাহার আলী সাহেব যান নাই। মোজাহার আলী সাহেবের বাড়ী আমাদের গ্রামে ছিল।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ থেকে ডাব বাগান যুদ্ধের সময় কালীন সময়ে সুজানগর, বেড়া এবং সাথিয়া এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধী প্রকাশ্য কোন তৎপরতা ছিল না। গোপনে কিভাবে কোথায় কি তৎপরতা ছিল সেটা আমার জানা নাই। ডাব বাগান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত পাবনা এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধীদের কোন তৎপরতা ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। ডাব বাগান যুদ্ধের পরে পাকিস্তান আর্মিরা কাশিনাথপুর হয়ে বগুড়ার দিকে গেছে। আর্মিরা ৪ঠা এপ্রিল প্রথম নগরবাড়ী ঘাটে আসে এবং দখল নেয়। নগরবাড়ী থেকে কাশিনাথপুর হয়েই পাবনা যেতে হতো। আমরা ডাব বাগানে থাকাকালীন সময়ে আর্মিরা কাশিনাথপুর হয়ে পাবনা গিয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমরা যখন নগরবাড়ী ঘাটে অবস্থান করি তখন আমাদের কমান্ডার ছিলেন বেড়ার এস,এম আমির আলী। তিনি পরবর্তীতেকালে সাথিয়া নয় বেড়ার মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন। ৪ঠা এপ্রিল থেকে আমার প্রথমবার ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধী কোন তৎপরতা প্রকাশ্যে দেখি নাই। উক্ত সময়ে আমাদের পাশ্ববর্তী এলাকা সাথিয়া, সুজানগর, আটঘরিয়ায় কোন স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতা ছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। আমি প্রথমবার ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রাজাকার, আলবদর, আলশামসের কোন নাম শুনি নাই। আমাদের এলাকার রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের পৃথকভাবে চিহ্নিত করতে পারতাম, কারণ তারা আমার এলাকার লোক ছিল। আমার বাড়ি বেড়া ইউনিয়নে, এখন যেটা পৌরসভা। বর্তমানে আমি ঐ বাড়িতেই বসবাস করি। ১৯৭১ সালে বেড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন রাজা মিয়া। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যান নাই, পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ছিলেন না। আমাদের ওয়ার্ডের মেম্বার কে ছিলেন তাহা আমার স্মরণ নাই। আমাদের গ্রামে পিস কমিটির সদস্য ছিল না। আমি প্রথমবার ভারতে ট্রেনিং নিয়ে সপ্তাহ খানেক পরে মে মাসেই দেশে ফিরে আসি। মে মাসে ভারত থেকে ফেরত আসার পরে বিভিন্ন সময় সাথিয়া, উল্লাপাড়া এবং শাহজাদপুর এলাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। মে মাসে ভারত থেকে ফেরত আসার পর থেকে দ্বিতীয়বার ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা আমাদের এলাকায় কোন রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করি নাই। সাথিয়া এলাকায় রাজাকার ও আলশামসদের ক্যাম্প একই সঙ্গে থানাতেই ছিল। (বিরতি)

পুনরায় জেরাঃ 
বিকালঃ ২:০০
বেড়া থানাতে বেড়া থানার রাজাকার এবং আলবদরের ক্যাম্প ছিল। আমি শুনেছি বেড়া থানার পিস কমিটির অফিস বেড়া ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিসে ছিল। বেড়া থানার পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছাড়াও আরও কয়েকজন পিস কমিটির মেম্বারদের চিনতাম তাদের মধ্যে ছিল রইচ উদ্দিন এবং মফিজ। আমার পিতাকে যে রাজাকার এবং আলবদররা হত্যা করেছিল তাদের নাম কেউ আমাকে বলে নাই। আমিও কাউকে জিজ্ঞাসা করি নাই যে, আমার পিতাকে কারা হত্যা করেছে।
আমি জবানবন্দীতে যে পুলিশ এবং ই.পি.আর এর কথা বলেছি তারা অবসরপ্রাপ্ত ছিলেন। ই.পি.আর দের  মধ্যে বৃশালিখার আব্দুল লতিফ ছাড়া অন্য কারো নাম মনে আসছে না। পুলিশদের মধ্যে কে কে ছিল তাদের নাম এখন মনে আসছে না। বেড়া এলাকায় কোন ই.পি.আর ক্যাম্প ছিল না। ১৯৭১ সালে ৩রা ডিসেম্বর সালে সাড়ে ছয়টার পরে সুর্য উদয় হয়েছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। আমাদের বৃশালিখা গ্রামটি মোটামুটি বড় গ্রাম। ১৯৭১ সালে আমাদের গ্রামে আনুমানিক তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার লোকের বসবাস ছিল। আমাদের গ্রামটি পূর্ব পশ্চিমে লম্বা। আমাদের বাড়িটি ছিল গ্রামের মধ্যভাগে, তবে দক্ষিন প্রান্তে। ১৯৭১ সালে আমাদের গ্রামে কোন বিদ্যুৎ ছিল না। আমাদের গ্রামে ঐদিন নিহত মনু, ষষ্টি প্রামানিক, ভাদু প্রামানিক এবং জ্ঞানেন্দ্র নাথ হালদারদের বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে ৫০০/৬০০ গজ দূরে হিন্দু পাড়ায়। ঐ হিন্দু পাড়ায় এখনও কিছু কিছু হিন্দু সম্প্রদায়েরর লোকজন বসবাস করে। এখনও ৫০/৬০ টি বাড়ি আছে। আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের নাম হাবিবুর রহমান ওরফে হবি। আমাকে ফেরি ঘাটে পানিতে ফেলে দেয়ার পর থেকে বিজয় অর্জন পর্যন্ত কোন রাজাকার, আলবদর, পিস কমিটির সদস্য আমাকে দেখেছিল কিনা বলতে পারি না, তবে আমি কোন রাজাকার, আলবদর, পিস কমিটির সদস্যদের উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সামনা সামনি দেখি নাই। ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব একজন বেসামরিক লোক ছিলেন, তবে তিনি আলবদর বাহিনীর চীফ অব ষ্টফ/প্রধান ছিলেন। আলবদর বাহিনীর চীফ অব ষ্টাফ ছাড়া অন্য কোন পদবী সম্পর্কে আমার ধারনা নাই। আলবদর বাহিনীর সদস্যরাও বেসামরিক বাহিনীর লোক ছিল। বেড়া থানার আলবদর বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। পাবনা জেলা সদরের পিস কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামসের সদস্যদের আমি চিনি না। নগরবাড়ি-আরিচা ফেরি ঘাটে ১৯৭১ সালে কয়টি ফেরি চলাচল করতো তাহা আমার মনে নাই। আমরা যখন নগরবাড়ি ফেরি ঘাটে ছিলাম তখন আমাদের নিকট কোন ওয়ারলেস সেট ছিল না। বিজয় অর্জনের পরে আমার পিতার হত্যাকান্ড সংক্রান্তে আমি কোন মামলা করি নাই এবং আমাকে মামলা করতে কেউ বাধা দেয় নাই। আমার স্কুলের সিনিয়র ছাত্র রফিকুন নবী বাবলুকে আমি চিনি। তার বাড়িতে আমার যাতায়াত নাই। বিজয় অর্জনের পরে আমাদের এলাকায় বেশ কয়েকজন রাজাকার এবং স্বাধীনতা বিরোধী গ্রেফতার হয়েছিল। বিজয় অর্জনের পর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারনে আমাদের এলাকায় আমি প্রভাবশালী ছিলাম কিনা তাহা আমি বলতে পারি না, অন্য লোকেরা বলতে পারে। বিজয় অর্জনের পর পরই সার্কেল অফিসারকে আহবায়ক এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধীদের কার কি ভূমিকা ছিল তাহা তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠিত হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। যে সকল স্বাধীনতা বিরোধীদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে আমার পিতাকে হত্যা করার অভিযোগ ছিল তাহা আমি শুনেছি। যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল তারা হল জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী ছাত্র সংঘ এবং অভাবী সাধারণ মানুষ যাদেরকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বা পেটের দায়ে তারা গিয়েছিল। ১৯৭০/১৯৭১ সালে নেজামে ইসলাম বা পি,ডি,পি নামে কোন সংগঠন আমাদের এলাকায় ছিল না। ১৯৭০/১৯৭১ সালে একটি মাত্র পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক ২/৩ দিন পর পর আসতো। ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালে অনেক রাজাকার আলবদরদের চিনতাম, তবে তাদের সংখ্যা বলতে পারব না। আমি যে স্কুলে পড়তাম সেই স্কুল সহ মফস্বলের কোন স্কুলেই ছাত্র রাজনীতি ছিল না। সুজানগর এবং আটঘরিয়ায় কোন কলেজ ছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। ঐ সময় কোন মাদ্রাসায় আমার যাতায়াত ছিল না। আমাদের কলেজে ছাত্র ইউনিয়ন করতো এমন ছাত্রের মধ্যে অনেককেই চিনতাম তাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল লাল। বিজয় অর্জনের পর যে সকল রাজাকার আত্মসমর্পন করেছিল তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল এই কারণে যে, তারা সকলেই স্থানীয় লোকজনের আত্মীয় স্বজন ছিল।
অদ্য আসামীর কাঠগড়ায় একজন মাত্র ব্যক্তি উপস্থিত আছেন এবং তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই পাবনা থেকে এসেছি।
“ঈড়হঃৎধফরপঃরড়হ...” একথাগুলি আমি তদন্ত কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
আগষ্ট মাসের “সম্ভবত ১৫” তারিখে কথাটি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত আলবদর, রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি এই কথাগুলির মধ্যে “মতিউর রহমান নিজামী সাহেবেরে অনুগত” এই কথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। ধরা পড়ার পর আমাদেরকে বেড়া থানার আর্মি ও আলবদরদের ক্যাম্পে হস্তান্তর করে এই কথাগুলির মধ্যে, “আলবদরদের” শব্দটি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। আমি আরও শুনতে পাই যে, মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশে আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা আমার বাবাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে, এই কথাগুলির মধ্যে “নির্দেশে” শব্দটি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলি নাই, ইহা সত্য নহে। “পতিরামপুর/মালঞ্চ” ক্যাম্পে আমি ট্রেনিং নিয়েছিলাম একথা তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত আলবদর ও রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি একথা অসত্য, ইহা সত্য নহে। একজন আর্মি অফিসারের সঙ্গে ফেরির উপর মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে কথা বলতে দেখেছি ইহা অসত্য, সত্য নহে। আমাকে বস্তায় ইট বেধে ফেরির উপর থেকে ফেলে দেওয়া অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমার বাবা মালঞ্চ/পতিরামপুর থেকে ১৯৭১ সালের ২রা ডিসেম্বর তারিখে ফিরে আসলে স্থানীয় আলবদর সদস্যরা আলবদর বাহিনীর চীফ অব ষ্টাফ মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নিকট খবর দেয় মর্মে যে বক্তব্য আমি দিয়েছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশে আমার পিতার হত্যাকান্ড ঘটে মর্মে আমি জবানবন্দীতে যে বক্তব্য দিয়েছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। আলবদর বাহিনী সম্পর্কে আমি যে বক্তব্য দিয়েছি তাহাও অসত্য, ইহা সত্য নহে। ঐ সময় আমার কলেজে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব না থাকায়, ছাত্র ইউনিয়নের ......... ছাড়া অন্যদের  ..............., সাথিয়াতে কোন কলেজ না থাকায়, সুজানগর এবং আটঘরিয়ায় কোন কলেজ থাকা না থাকা সম্পর্কে কোন জ্ঞান না থাকায়, ঐ সময় মফস্বল স্কুল সমূহে ছাত্র রাজনীতি না থাকায় এবং ঐ এলাকার কোন মাদ্রাসায় আমার যাতায়াত না থাকায় ইসলামী ছাত্র সংঘকে জড়িয়ে যে সাক্ষ্য প্রদান করলাম তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমি আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে আওয়ামী লীগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে ও নির্দেশে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে জড়িয়ে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করলাম, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব আমাদের এলাকায় থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে অসত্য সাক্ষ্য প্রদানের আরও একটি কারণ হলো তিনি আমাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দী, ইহা সত্য নহে। (সমাপ্ত)










সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে চতুর্থ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ


২৪/৭/২০১৩
জবানবন্দী :
আমার নাম আব্দুল মোমেন চৌধুরী। আমার বয়স  ৭৩ বৎসর। আমার ঠিকানা রোড নম্বর ৪১ বাড়ী নম্বর ৪৪, গুলশান, ঢাকা।

আমি বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত কুটনীতিবিদ। আমি ১৯৮৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রদুত হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি ১৯৬৮ সালে সিরিয়ার দামেস্কাসে ৩য় সেক্রেটারী হিসাবে প্রথম যোগদান করি। ১৯৭০ সালে বাবার মৃত্যুতে আমি ঢাকায় এসেছিলাম। মাস খানেক ঢাকায় অবস্থান করে আমার শিশু কন্যা শ্বশুরের নিকট রেখে আমরা আবার দামেস্কাসে চাকুরীস্থলে ফিরে যাই। ১৯৭১ সালের জানুয়ারী মাসের ২৮ তারিখে আমার স্ত্রীকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিই। ঐ সময় ইন্ডিয়ান একটি বিমান হাইজাক হওয়ার কারণে ইন্ডিয়ান এয়ার স্পেস পাকিস্তানি ফাইটের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমার স্ত্রীকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়ার পর তার সংগে আমার কোন যোগাযোগ ছিল না। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পাকিস্তান সরকার আমাকে দামেস্কাস থেকে তানজানিয়ায় বদলী করেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সপ্তাহে ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসার উদ্দেশ্যে করাচি যাই। আমি করাচিতে আমার এক বন্ধু আব্দুল জলিলের সংগে সেন্ট্রাল গভঃ হোষ্টেল, গার্ডেন রোডে আনুমানিক দুই সপ্তাহ অবস্থান করি। ঐ সময় আমার উদ্দেশ্য ছিল ঢাকায় আসার কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও পি,আই,এ, এর কোন টিকিট সংগ্রহ করতে পারি নাই। ঐ সময় সম্পূর্ণ ভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে আমি খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। টেলিফোনেও  যোগাযোগ করতে পারি নাই। আমার একই ব্যাচের সিভিল সার্ভিসের অনেক কর্মকর্তা পাকিস্তানের অনেক স্থানে কর্মরত ছিলেন ঐ সময়। তখন আমার ব্যাচমেট মিঃ হাবিবুন নবী আশিকুর রহমান সিন্ধু সরকারের অধীনে কর্মরত আছে। তখন আমি উনার খোঁজ করে একদিন তার অফিসে যাই। যখন আমি উনার অফিসে যাই তখন উনার অফিসে একজন ভদ্রলোক বসা ছিলেন। আমি উক্ত ভদ্রলোককে পূর্বে চিনতাম না। আশিকুর রহমান সাহেব তার সংগে আমার পরিচয় করিয়ে দেন যে, তিনি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আশিকুর রহমান সাহেবও ঐ সময় করাচি থেকে আমার পরিবারের সংগে কোন রকম যোগাযোগ করে দিতে সক্ষম হননি। উনার অফিসে কিছুক্ষণ অবস্থানের পরে আমি গর্ডেন রোডে ফিরে আসি। আশিকুর রহমান সাহেবের অফিসে অবস্থানকালে দুইজনের কথা প্রসংগে জানতে পারলাম কাইউম রেজা চৌধুরীও করাচিতে অবস্থান করছেন। কাইউম রেজা চৌধুরী সাহেবকেও আমি ঐ সময় ভালভাবে চিনতাম না যদিও আমার শ্বাশুড়ীদের সংগে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। আশিকুর রহমান সাহেবের অফিসে যাওয়ার আনুমানিক এক সপ্তাহ পরে কাইউম রেজা চৌধুরী আমার গার্ডেন রোডের বাসায় হঠাৎ একদিন আসে। তখন আমি আমার পরিবারের কথা জিজ্ঞাসা করলে উনি বলেন তারা নিরাপদে আছে। কিন্তু কোথায় আমার পরিবার আছে তাহা বলতে পারলেন না। আমি চিন্তার মধ্যে থাকলাম। ফকরউদ্দিন সাহেব যিনি পরবর্তীতে পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন তার পরামর্শক্রমে আমি দামাস্কাস হয়ে পরবর্তীতে তানজানিয়ায় চলে গেলাম। ১৯৭১ সালে আমি কখনও পূর্ব পাকিস্তানে আসি নাই।

জেরা ঃ
আমি অদ্য আমার ঢাকাস্থ গুলশানের বাসভবন থেকে অত্র ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান করতে এসেছি। (চলবে)
জেরা ঃ-
আমি অদ্য আমার ঢাকাস্থ গুলশানের বাসভবন থেকে অদ্য ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান করতে এসেছি। আমি অদ্য ট্রাইব্যুনালে জেনে শুনে বুঝেই সত্য কথা বলার জন্য এসেছি। আমি গুলশান থেকে বেলা ১১.০০ টার সময় গাড়ি যোগে ট্রাইব্যুনালে এসেছি। আমার জন্য একটি গাড়ি পাঠানো হয়েছিল। সেই গাড়িতেই আমি এসেছি। আমাকে কোর্টে আসার জন্য ব্যারিস্টার এ,কে,এম ফখরুল ইসলাম সাহেব টেলিফোনে বলেছিলেন। অদ্য তারিখে পূর্বে থেকে আমি জানতাম অদ্য মামলায় আমাকে সাফাই সাক্ষ্য দিতে হবে। আজ  থেকে সাত থেকে দশ দিন আগে জনাব এ,কে,এম ফখরুল ইসলাম সাহেব আমাকে এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে হবে একথা বলেছেন আমি ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তান সরকারের সরকারী চাকুরীতে যোগদান করি। আমার চাকুরী ফরেন সার্ভিসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নাই। আমি অক্টোবর ১৯৬৬ ফরেন সার্ভিসে যোগদান করি। ১৯৬৮ সালের সেপ্টম্বর মাসে সিরিয়ার দামেস্কোতে যোগদান করি এবং ১৯৯৭ সালে আমার বয়স ৫৭ বৎসর পূর্ন হওয়ায় আমি  চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করি। ঐ সময় আমি ইন্দোনেশিয়া রাষ্ট্রদূত হিসাবে কর্মরত ছিলাম। ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি একনাগাড়ে পাকিস্তান সরকারে অধীনে চাকুরীরত ছিলাম। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন কালীন সময়ে আমি সিরিয়ার দামাস্কাস কর্মরত থাকা অবস্থায় সেখান থেকে নির্বাচনের ফলাফল অবগত হয়েছিলাম। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল তাহা আমি জানতাম। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দল ও নেতার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাত্রে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী রাজধানী ঢাকা সহ সারা বাংলাদেশে যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় সে খবর আমি বিস্তারিত জানতাম না। ২৫ শে মার্চ রাত্রে অর্থাৎ ২৬শে মার্চ তারিখের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন একথা আমি জানতাম এবং স্বাধীনতার ঘোষনার পর পরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনার আলোকে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছিল তাহা আমার জানা আছে। প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে ৯ মাস যাবৎ ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। ২৫ শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনায় উজ্জীবিত হয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত দেশ প্রেমিক বাঙ্গালী অফিসাররা পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষ অবলম্বন করেছিল তাহা আমি জানতাম। তাদের মধ্যে ছিলেন হোসেন আলী, জনাব হুমায়ন রশিদ চৌধুরী প্রমুখ উল্লেখ যোগ্য। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাস রক্তখাত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাক হানাদার বাহিনী তাদের এদেশিয় সহযোগী সহ আত্মসমর্পন করে এবং আত্মসর্ম্পন দলিলেও স্বাক্ষর করে আমি জানতাম। আমি সহ কুটনীতিবিদরা ‘‘হোয়াইট লাই” “ঞরিংঃবফ াবৎংব” এই  শব্দগুলির সাথে পরিচিত। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের চাকুরীর মোহ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করি নাই বা করার চেষ্টা করি নাই ইহা সত্য নয়। কাইয়ুম রেজা চৌধুরী সাহেব আমার ভায়রা। কাইয়ুম রেজা চৌধুরী এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব পরস্পর আত্মীয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আমার কোন আত্মীয় নহেন, তবে কাইয়ুম রেজা চৌধুরী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব পরস্পর কাজিন বিধায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব আমার আত্মীয়ের আত্মীয়। ১৯৭১ সালে ফকরুদ্দিন সাহেব পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ কওে বাংলাদেশের পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন ইহা সত্য নহে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে চট্টগ্রামের গুডসহিল রাউজান ও রাউজান চট্টগ্রাম এলাকায় সংগঠিত মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিচার চলছে-
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সপ্তাহে ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসার উদ্দেশ্যে করাচি যাই। আমি করাচিতে আমার এক বন্ধু আব্দুল জলিলের সংগে সেন্ট্রান গভঃ হোষ্টেল, গার্ডেন রোডে আনুমানিক দুই সপ্তাহ অবস্থান করি। ঐ সময় আমার উদ্দেশ্য ছিল ঢাকায় আসার কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও পি,আই,এ, এর কোন টিকিট সংগ্রহ করতে পারি নাই। ঐ সময় সম্পূর্ণ ভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে আমি খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। টেলিফোনেও  যোগাযোগ করতে পারি নাই। আমার একই ব্যাচের সিভিল সার্ভিসের অনেক কর্মকর্তা পাকিস্তানের অনেক স্থানে কর্মরত ছিলেন ঐ সময়। তখন আমার ব্যাচমেট মিঃ হাবিবুন নবী আশিকুর রহমান সিন্ধু সরকারের অধীনে কর্মরত আছে। তখন আমি উনার খোঁজ করে একদিন তার অফিসে যাই। যখন আমি উনার অফিসে যাই তখন উনার অফিসে একজন ভদ্রলোক বসা ছিলেন। আমি উক্ত ভদ্রলোককে পূর্বে চিনতাম না। আশিকুর রহমান সাহেব তার সংগে আমার পরিচয় করিয়ে দেন যে, তিনি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আশিকুর রহমান সাহেবও ঐ সময় করাচি থেকে আমার পরিবারের সংগে কোন রকম যোগাযোগ করে দিতে সক্ষম হননি। উনার অফিসে কিছুক্ষণ অবস্থানের পরে আমি গর্ডেন রোডে ফিরে আসি। আশিকুর রহমান সাহেবের অফিসে অবস্থান কালে দুইজনের কথা প্রসংগে জানতে পারলাম কাইউম রেজা চৌধুরীও করাচিতে অবস্থান করছেন। কাইউম রেজা চৌধুরী সাহেবকেও আমি ঐ সময় ভালভাবে চিনতাম না যদিও আমার শ্বাশুড়ীদের সংগে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। আশিকুর রহমান সাহেবের অফিসে যাওয়ার আনুমানিক এক সপ্তাহ পরে কাইউম রেজা চৌধুরী আমার গার্ডেন রোডের বাসায় হঠাৎ একদিন আসে। তখন আমি আমার পরিবারের কথা জিজ্ঞাসা করলে উনি বলেন তারা নিরাপদে আছে। কিন্তু কোথায় আমার পরিবার আছে তাহা বলতে পারলেন না এইকথাগুলো অসত্য ইহা সত্য নয় আমার উল্লেখিত কথাগুলো হোয়াইট লাই, ঞরিংঃবফ াবৎংব নহে। তবে কুটনীতিবিদরা সৎ তবে দেশের স্বার্থে অনেক সময় অসত্য কথা বলতে হয়।
তদানিন্তন পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান সরকারের চাকুরী বিধিমালা অনুসারে কোন কর্মকর্তা কর্মচারীকে বদলী করলে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদানের সময়ে নির্ধারন করে দেওয়া হত ইহা সত্য নয়। ১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে পাকিস্তান আমলে দামাস্কাস থেকে তানজানিয়াতে বদলী আদেশে দুই সপ্তাহের মধ্যে যোগদান করার নির্দেশ থাকার কথা ছিল, ইহা সত্য নহে। এই ট্রাইব্যুনালে শপথ নিয়ে আমি অদ্য যে সাক্ষ্য প্রদান করেছি সেই সাক্ষ্যের সমর্থনে কোন দালিলিক প্রমানপত্র আমার নিকট নাই, তবে আমার চাকুরী সংক্রান্ত কাগজপত্র আমার নিকট নাই, তবে চাকুরীর কাগজপত্র আমার নিকট আছে। সাক্ষ্যের মধ্যে বিভিন্ন দেশে ঐ সময় আমি যে ভ্রমন করেছি সেই সংক্রান্তে কোন ডকুমেন্ট আমার নিকট নাই। ১৯৭১ সালে করাচি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ছিল। ঐ সময় করাচি এয়ারপোর্টে বিদেশী এয়ারলাইন্স যাতায়াত করতো। ১৯৭১ সালে টেলিকমিউনিকেশন চালু ছিল কি না তাহা আমি জানি না কারণ আমি তখন পাকিস্তানে ছিলাম না। ঢাকা করাচি টেলিকমিউনিকেশন কবে বন্ধ হয়েছিল এবং কখন পুনরায় চালু হয়েছিল এ সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নাই। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের দালালিতে ব্যস্ত ছিলাম, প্রকৃত সত্য জানা সত্ত্বেও সত্য গোপন করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের সংগে আত্মীয়তার সূত্রধরে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে অত্র ট্রাইব্যুনালে শপথ গ্রহণ করে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করলাম ইহা সত্য নয়। 

বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৫ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ


২৪/৭/২০১৩আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ১৫ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

জবানবন্দী :

আমার নাম মোঃ আমিনুল ইসলাম ডাব্লু, আমার বয়স- ৪৫/৪৬ বৎসর, আমার ঠিকানা- সাং বৃশিলাখা, থানা- বেড়া, জেলা- পাবনা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ৩ বৎসর। আমরা মোট ৯ ভাই-বোন, তার মধ্যে ৪ ভাই, ৫ বোন। ভাইদের মধ্যে সবার বড় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সেলিম লতিফ। আমি বড় হয়ে জানতে পারি যে, আমার আব্বা শহীদ সোহরাব উদ্দিন প্রামাণিক এবং বড় ভাই মোঃ আব্দুস সেলিম লতিফ মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে আমার আব্বা পাটের ব্যবসা করতেন এবং বড় ভাই আব্দুস সেলিম লতিফ বেড়া কলেজের এইচ,এস,সি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আমার বড় ভাই আব্দুস সেলিম লতিফ ১৯৭১ সালের ১৫ ই আগষ্ট বেড়া থানায় রেকি করতে যাওয়ার সময় বেড়া লঞ্চ ঘাটের নিকট রাজাকার, আলবদরদের হাতে ধরা পড়ে। আমার বড় ভাইয়ের সংগে ছিল চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন। উল্লেখিত দুইজনকেই সেখান থেকে নগরবাড়ী ঘাটে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার বড় ভাই আব্দুস সেলিম লতিফের নিকট থেকে জানতে পারি নগরবাড়ী ঘাটে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর আমার উক্ত ভাই সেখানে জামায়াতের নেতা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে পাকিস্তানী আর্মিদের সাথে আলাপরত অবস্থায় দেখাতে পান। এরপর আমার ভাইকে পাকিস্তানী মিলিটারী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে এবং এক পর্যায়ে তার পিঠে জলন্ত সিগারেটের আগুনের ছ্যাকা দেয় যার ফলে তার পিঠে ক্ষত চিহ্ন হয় যা ভাইয়ের পিঠে এখনও আছে। এরপর আমার বড় ভাই ও চাচাতো ভাইকে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে নগরবাড়ী ঘাটে ফেরীর মধ্যে আটক রাখা হয়। তারপর আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিনকে আমার ভাইয়ের নিকট থেকে অন্যত্র নিয়ে যায়। এর ১৫/২০ মিনিট পর আমার বড় ভাইকেও হাত পা বেঁধে নগরবাড়ী ঘাটে নদীতে ফেলে দেয়। ভাগ্যক্রমে আমার বড় ভাই আব্দুস সেলিম লতিফ বেঁচে যান এবং একদিন পরে তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। আমার চাচাতো ভাই ২/৩ দিন পর বাড়িতে ফিরে আসে।
আমার বড় ভাই এবং চাচাতো ভাই ফিরে আসার ১০/১৫ দিন পর আমার আব্বা সহ আমার উক্ত বড় ভাই ও চাচাতো ভাই এবং আরও কয়েকজন মাইনকার চর হয়ে ইন্ডিয়া চলে যায়। সেখান থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে কয়েকদিন পর আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে। আমার বড় ভাই ফিরে আসলেও আমার আব্বা সাবেক তথ্য মন্ত্রী ও তৎকালীন এম,এন,এ অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের সাথে ভারতে থেকে যান। ১৯৭১ সালের ২রা ডিসেম্বর আমার আব্বা ভারত থেকে আমাদের বাড়িতে ফিরে আসেন। আমার আব্বার ফিরে আসার খবর স্থানীয় আলবদর, রাজাকাররা জেনে যায় এবং মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নিকট খবর জানায়। ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ ভোর বেলা আলবদর, রাজাকার এবং পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদের বৃশালিখা গ্রাম ফিরে ফেলে আমার আব্বাকে আমাদের বাড়ী থেকে ধরে রাস্তায় নিয়ে চরম নির্যাতন করে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া আমাদের গ্রামের মনু, ষষ্ঠি, ভাদু, জ্ঞানেন্দ্র নাথ হালদার সহ অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে এবং গ্রামের ৭০/৭৫ টি বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। উল্লেখিত ঘটনা আমি আমার আম্মা, ভাই-বোন ও প্রতিবেশীদের নিকট থেকে জানতে পেরেছি। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আমি চিনি, তিনি অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)। আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদান করেছি। (জবানবন্দী সমাপ্ত)  
জেরা ঃ
আমি বর্তমানে বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব এবং বর্তমান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জনাব শামছুল হক টুকু সাহেবের বাড়ি আমাদের গ্রামে। উল্লেখিত দুইজনই স্বাধীনতা যুদ্ধাকালীন সময়ে ভারতে গিয়েছিলেন, তবে কোন্ সময় গিয়েছিলেন তাহা আমার জানা নাই। অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের বাড়ি আমার বাড়ি থেকে আনুমানিক ৪০০ থেকে ৫০০ মিটার হবে। পাকিস্তানী আর্মিরা অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের বাড়িও পুড়িয়ে দিয়েছিল মর্মে আমি জানতে পেরেছি।
আমার আব্বা মুক্তিযুদ্ধের জন্য বেড়া থানা থেকে এবং স্থানীয় জনসাধারনের লাইসেন্স করা অস্ত্র সংগ্রহ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন শুনেছি। যে সকল রাজাকার ও আলবদররা আমার বড় ভাই এবং আলাউদ্দিনকে আটক করেছিল তাদের নাম আমার ভাই আমাকে বলেছিল। সেই রাজাকারদের মধ্যে অনেকেই মারা গেছে এবং কেউ কেউ এখনও জীবিত আছে। যারা আমার বড় ভাই এবং আলাউদ্দিনকে আটক করেছিল তাদের মধ্যে অনেককে বিজয় অর্জনের পর আটক করা হয়েছিল কিনা তাহা আমি জানি না। বিজয় অর্জনের পর আমাদের এলাকায় কোন রাজাকারকে আটক করা হয়েছিল কিনা তাহাও আমি জানি না। সুরাইয়া সোহরাব, স্বামী ফজলুল বারী শাহীন সাং বেড়া ডাকবাংলা, আমার ছোট বোন। আমি কাস ওয়ানে ১৯৭৫/৭৬ সালে ভর্তি হয়েছিলাম। আমি ১৯৮৬ সালে এস,এস,সি পাশ করেছি। স্কুলের কাস নাইনে রেজিষ্ট্রেশন আমি নিজে করি নাই। জাতীয় পরিচয় পত্র আমি নিয়েছি। আমার জাতীয় পরিচয়পত্র আমার দেওয়া তথ্য মতে আমার স্বাক্ষরে তৈরি হয়েছে। আমার জাতীয় পরিচয় পত্রে আমার জন্ম তারিখ লেখা আছে। আমি আমার ভাইয়ের নাম সম্বলিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকার যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে তাহা দেখেছি। ঐ তালিকায় আমার পিতার নাম শহীদ বা মৃত লেখা আছে কিনা তাহা আমি জানি না। আমার দাদার নাম নয়ন উদ্দিন। আমাদের গ্রামে আমার আব্বা ছাড়া সোহরাব আলী প্রামাণিক নামে অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা আমার জানা মতে নাই। আমার পিতা প্রামাণিক পদবী মাঝে মাঝে ব্যবহার করতেন মাঝে মাঝে ব্যবহার করতেন না। আমার ছোট বোন নাজমা আক্তার বেলী আমাদের বাড়ীতে একই সঙ্গে বসবাস করে। আমাদের এলাকায় মোট তিন দিনে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং যার যার সুবিধা মত সময়ে নিজ নিজ তথ্য প্রদান করেছে। আমার বোন নাজমা আক্তার বেলী এস,এস,সি পাশ করেছে। তিনি তার জন্ম তারিখ ১৫-১২-১৯৭৩ ইং দিয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমার বোন আমার পরে এস,এস,সি পাশ করেছে। সুরাইয়া সোহরাব, নাজমা আক্তার বেলীর পরে এস,এস,সি পাশ করেছে। সুরাইয়া সোহরাব এর জন্ম তারিখ জাতীয় পরিচয়পত্রে ৩১-১২-১৯৭৬ লেখা আছে কিনা তাহা আমি জানি না। সুরাইয়া সোহরাবের বিবাহের সময় আমি বাড়িতে উপস্থিত ছিলাম। তার বিবাহের কাবিন নামায় জন্ম তারিখ কত লেখা হয়েছে, তাহা আমার জানা নাই।
“১৫ ই আগষ্ট বেড়া থানায় রেকি করতে যাওয়ার সময়” বা “আমার বড় ভাই আব্দুস সেলিম লতিফের নিকট থেকে জানতে পারি নগরবাড়ী ঘাটে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর আমার উক্ত ভাই সেখানে জামায়াতের নেতা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে পাকিস্তানী আর্মিদের সাথে আলাপরত অবস্থায় দেখাতে পান।” বা “এক পর্যায়ে তার পিঠে জলন্ত সিগারেটের আগুনের ছ্যাকা দেয় যার ফলে তার পিঠে ক্ষত চিহ্ন হয় যা ভাইয়ের পিঠে এখনও আছে।” বা “তারপর আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিনকে আমার ভাইয়ের নিকট থেকে অন্যত্র নিয়ে যায়।” বা “আমার চাচাতো ভাই ২/৩ দিন পর বাড়িতে ফিরে আসে।” বা “মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নিকট খবর জানায়।” বা “রাস্তায় নিয়ে চরম নির্যাতন করে” এই কথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার পিতা শহীদ হন নাই, ইহা সত্য নহে। আমার ভাইয়ের নিকট থেকে জানতে পাই জামায়াতের নেতা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে তিনি নগরবাড়ী ঘাটে পাকিস্তানী আর্মিদের সাথে আলাপরত অবস্থায় দেখেছেন মর্মে আমি যে বক্তব্য দিয়েছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালে ২রা ডিসেম্বর স্থানীয় রাজাকার, আলবদররা আমার পিতার বাড়িতে ফিরে আসার খবর মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে জানায় এই বক্তব্য অসত্য, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর আমাদের গ্রামের রাস্তার সামনে আমার পিতাকে নির্যাতন করে হত্যা করা এবং আমাদের গ্রামের ৭০/৭৫টি বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার যে বক্তব্য আমি প্রদান করেছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমার বয়স ৪৫/৪৬ বৎসর মর্মে আমি যে বক্তব্য দিয়েছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমি এবং আমার ছোট বোন নাজমা আক্তার বেলীর জন্ম ১৯৭১ সালের পরে হয়েছে, ইহা সত্য নহে। আমি আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার কারনে আমার দলের উর্দ্ধতন নেতাদের পরামর্শ ও নির্দেশে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য অসত্য সাক্ষ্য দিলাম, ইহা সত্য নহে। (সমাপ্ত)

কাদের মোল্লা মামলায় আপিলের রায় যেকোনো দিন

২৩/৭/২০১৩
জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেয়া যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে করা আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়েছে। মামলাটি এখন  রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যেকোন দিন আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করবেন।
দীর্ঘ শুনানি গ্রহণ শেষে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতত্বাধীন আপিল বিভাগ আজ মঙ্গলবার মামলাটিকে রায়ের জন্য অপেক্ষমান হিসাবে ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

সকালে রাষ্ট্রপে সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদালত থেকে বেরিয়ে মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, উভয়প মিলে মোট ৩৯ কার্যদিবস শুনানি করেছেন। আজ মঙ্গলবার  আদালত শুনানি শেষে দুটি আপিল আবেদন সিএভি (রায়ের জন্য অপেমান) রেখেছেন।

আদালতে দেয়া সমাপনী বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আপিলে সমান সুযোগ দিয়ে আনা সংশোধনীকে কাদের মোল্লার েেত্র অকার্যকর বলেছেন আসামিপ। তারা বলছেন, এতে আসামির অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আমরা বলেছি, এতে আসামির অধিকার খর্ব করা হয়নি। রাষ্ট্রেরও আপিল করার অধিকার রয়েছে। এটা সমতা আনার জন্য করা হয়েছে। এতে আসামির সংুব্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, এ আইনের বিষয়ে সংবিধানে প্রোটেকশন দেয়া আছে। এটা বির্তকের উর্ধ্বে। এটা চ্যালেঞ্জযোগ্য নয়। প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাপারে তিনি বলেন, সার্বভৌম দেশ হিসেবে আমাদের আইনই প্রযোজ্য হবে। আন্তর্জাতিক আইন এখানে প্রযোজ্য নয়। সাজার বিষয়ে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে ১, ২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি। আর কেন দেয়নি তাও রায়ে বলা হয়নি। সুতরাং, আমাদের আপিল মঞ্জুর হওয়া উচিত। এর আগে সোমবার আসামিপে শুনানি শেষ করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ছয়টি অভিযোগের মধ্যে দুটিতে তাকে যাবজ্জীবন, তিনটিতে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড এবং একটিতে খালাস দেয়া হয়। এ রায়ের প্রতিবাদে শাহবাগে শুরু হয় আন্দোলন। মূল আইনে সাজা বাড়াতে সরকার পক্ষের আপিলের বিধান না থাকলেও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আইন সংশোধন করে সরকারকে আপিলের সুযোগ দেয়া হয়। পরে সরকার ও আসামি দু-পক্ষই আপিল দায়ের করে। পরে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে গত তিন মার্চ আপিল করে সরকারপ। আপিলে কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড চাওয়া হয়। এরপর চার মার্চ দণ্ডাদেশ থেকে খালাস চেয়ে আপিল  করে আসামিপ। গত ১ এপ্রিল থেকে আপিলের শুনানি শুরু হয়। আপিল শুনানিকালে আসামিপ দাবি করেন যে, আপিলের সমান সুযোগ রেখে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ সালের আইনের যে সংশোধনী আনা হয়েছে তা কাদের মোল্লার মামলার েেত্র প্রযোজ্য হবে না। কারণ, কাদের মোল্লার বিচার আইন সংশোধনের আগেই শেষ হয়েছে। এছাড়া ‘কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল’ এই বিচারের েেত্র প্রযোজ্য হবে বলেও আসামিপরে আইনজীবীরা দাবি করেন।

এ আপিলের শুনানিকালে উত্থাপিত আইনি প্রশ্নের মিমাংসায় গত ২০ জুন সাত জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ এর ক্ষেত্রে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে কি না? দ্বিতীয়ত, ২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আইন সংশোধন করে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে যে ভূতাপে কার্যকারিতা দেয়া হয়েছে, তা কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি না? শুনানিতে অংশ নিয়ে আইনের সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মত দেন সংখ্যাগরিষ্ট অ্যামিকাস কিউরি। অ্যামিকাস কিউরিদের মধ্যে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল- ইসলাম, ব্যারিস্টার রফিক-উল- হক, সাবেক এটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ এবং ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি মত দেন যে, আইনের সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অন্যদিকে, সাবেক বিচারক টি এইচ খান,, সাবেক এটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফের মতে সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আইনে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ প্রশ্নে শুধুমাত্র ব্যারিস্টার রফিক-উল হক মত দেন তা প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগের পক্ষে মত দেন। ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ১৯৭৩ সালের ট্রাইব্যুনালস আইনে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিফলন রয়েছে। মাহমুদুল ইসলাম বলেন, এ প্রশ্নে হ্যাঁ না উত্তর দেয়া কঠিন। সাধারণভাবে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে না। তবে দেশীয় আইনে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা থাকলে, শূন্যতা থাকলে অথবা ব্যাখ্যার জন্য প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক আইনের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। আজমালুল হোসেন কিউসি মত দেন, সাংঘর্ষিক না হলে আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইন প্রযোজ্য হবে। টি এইচ খানের মত, প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে। তবে দেশীয় আইনের সাথে আন্তর্জাতিক আইন সাংঘর্ষিক হলে সেেেত্র দেশীয় আইন প্রাধাণ্য পাবে। এ এফ হাসান আরিফের মতে আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইন প্রযোজ্য হবে।

সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়-হাসান আরিফ///সাজা দেয়া হলে এটি দেশের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে-আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী

২২/৭/২০১৩
মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেয়া যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি আজ শেষ করেছে আসামিপ। আগামীকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এ আপিলের শুনানি শেষ হবে।

শুনানি শেষে আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, সরকারপক্ষ যে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করেছে, সে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেয়া অসম্ভব। এসব দুর্বল সাক্ষ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করে যদি কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়া হয়, তাহলে এটি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সর্বশেষ সংশোধনী জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে মত দিয়েছেন আরেক অ্যামিকাস কিউরি এ এফ হাসান আরিফ। তিনি বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারিতে ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লার মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। ওই দিন তার শাস্তি চূড়ান্ত হয়। এরপর আনা সংশোধনী তার েেত্র প্রযোজ্য নয়। তবে আদালতে আপিল বিচারাধীন, দণ্ডসহ সব বিষয় পর্যালোচনা করার এখতিয়ার আদালতের রয়েছে। আজ  সোমবার আদালতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ মত দেন সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এই শুনানি গ্রহণ করেন। তার আগে সিনিয়র আইনজীবী ও রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক টি এইচ খানও বলেছেন, আইনের সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

হাসান আরিফ বলেন, অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপকে আপিলের সুযোগ দিয়ে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে আনা সংশোধনী বৈধ। তবে তা কাদের মোল্লার েেত্র প্রযোজ্য নয়। তাছাড়া প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের রীতি দেশীয় আইনের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য তা অনুসরণ করা যেতে পারে।

সোমবার আসামিপে শেষ দিনের মতো শুনানি করেন ট্রাইব্যুনালে আসামীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। এরপর মঙ্গলবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের সমন্বয়ক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবারই শুনানি শেষ করবেন রাষ্ট্রপ। আধা ঘণ্টার মতো শুনানি করবেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এরপরই আদালত আপিল মামলাটির রায়ের দিন ধার্য করতে পারেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

আজ  শুনানি শেষে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘৫ ফেব্রুয়ারি আবদুল কাদের মোল্লার রায় হয়ে যাওয়ার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি আইনে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তা আবদুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সুতরাং সরকার পক্ষ যে আপিল করেছে সে আপিল বাতিলযোগ্য এবং এটা বাতিল হওয়া উচিত। কিন্তু আদালতের ক্ষমতা আছে, আদালত ইচ্ছা করলে আবদুল কাদের মোল্লার শাস্তি বাড়াতে পারেন। সরকারের যে আপিল সে আপিল অকার্যকর, এটা চলতে পারে না। দ্বিতীয়ত আমরা বলেছি- আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে, যদি না বাংলাদেশের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হয়। ১৯৭৩ সালের আইনের কোনো বিধান আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। সুতরাং আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে। তৃতীয়ত- আদালতে সরকারপক্ষ যে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করেছে, সে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেয়া অসম্ভব। আমি আপনাদের বলছি, আদালতেও বলেছি, রাষ্ট্রপক্ষ যে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করেছে, তার ভিত্তিতে আবদুল কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়া অসম্ভব এবং তার বেকসুর খালাস পাওয়া উচিত। আমাদের আপিল গৃহীত হওয়া উচিত এবং সরকারের আপিল বাতিল হওয়া উচিত। তিনি বলেন, এসব দুর্বল সাক্ষ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করে যদি কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়া হয়, তাহলে এটি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের আপিলের ভিত্তিতে কাদের মোল্লার শাস্তি বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাজা বাড়াতে পারেন, সে ক্ষমতা আদালতের আছে, কিন্তু কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে নয়। সাত জন অ্যামিকাস কিউরির পাঁচ জনই সংশোধিত আপিল আইন আবদুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ বলে মত দিয়েছেন- এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, সংখ্যা বড় বিষয় নয়, এখানে ন্যায্যতা দেখা হবে। আমাদের বক্তব্য সঠিক কিনা, আইনিভাবে গ্রহণযোগ্য কিনা, তা দেখার পর আদালত বিচার করবেন। এটা তাদের এখতিয়ার।

মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ছয়টি অভিযোগের মধ্যে দুটিতে তাকে যাবজ্জীবন, তিনটিতে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড এবং একটিতে খালাস দেয়া হয়। এ রায়ের প্রতিবাদে শাহবাগে শুরু হয় আন্দোলন। মূল আইনে সাজা বাড়াতে সরকার পক্ষের আপিলের বিধান না থাকলেও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আইন সংশোধন করে সরকারকে আপিলের সুযোগ দেয়া হয়। পরে সরকার ও আসামি দু-পক্ষই আপিল দায়ের করে। এ আপিলের শুনানিকালে উত্থাপিত আইনি প্রশ্নের মিমাংসায় গত ২০ জুন সাত জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ এর ক্ষেত্রে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে কি না? দ্বিতীয়ত, ২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আইন সংশোধন করে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে যে ভূতাপে কার্যকারিতা দেয়া হয়েছে, তা কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি না?

শুনানিতে অংশ নিয়ে আইনের সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মত দেন সংখ্যাগরিষ্ঠ অ্যামিকাস কিউরি। অ্যামিকাস কিউরিদের মধ্যে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ এবং ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি মত দেন যে, আইনের সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অন্যদিকে, সিনিয়র অ্যাডভোকেট টি এইচ খান ও এ এফ হাসান আরিফের মতে সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আইনে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ প্রশ্নে শুধুমাত্র ব্যারিস্টার রফিক-উল হক মত দেন তা প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগের পক্ষে মত দেন। ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ১৯৭৩ সালের ট্রাইব্যুনালস আইনে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিফলন রয়েছে। মাহমুদুল ইসলাম বলেন, এ প্রশ্নে হ্যাঁ না উত্তর দেয়া কঠিন। সাধারণভাবে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে না। তবে দেশীয় আইনে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা থাকলে, শূন্যতা থাকলে অথবা ব্যাখ্যার জন্য প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক আইনের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। আজমালুল হোসেন কিউসি মত দেন, সাংঘর্ষিক না হলে আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইন প্রযোজ্য হবে। টি এইচ খানের মত, প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে। তবে দেশীয় আইনের সাথে আন্তর্জাতিক আইন সাংঘর্ষিক হলে সেেেত্র দেশীয় আইন প্রাধাণ্য পাবে। এ এফ হাসান আরিফের মতে আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইন প্রযোজ্য হবে।

অ্যামিকাস কিউরি শুনানী : আইনের সংশোধীন কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় : টি এইচ খান



২১/৭/২০১৩
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সর্বশেষ সংশোধনী জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রয়োগের প্রশ্নে দুই ধরনের মত দিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী টি এইচ খান ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। লিখিত মতামতে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক টি এইচ খান বলেন, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করে ৫ ফেব্রুয়ারি। তার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে শাহবাগে আন্দোলন শুরু হয়। যে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালস আইনে সংশোধন আনা হয়। এ সংশোধনে যেকোন দণ্ডের বিরুদ্ধে সরকারকে আপিল দায়েরের সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু এর আগেই কাদের মোল্লার মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ সংশোধনী প্রয়োগের সুযোগ নেই। তবে তার সাথে দ্বিমত পোষন করে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ট্রাইব্যুনালের যেকোন রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা রয়েছে। কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যেই আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। এ কারণে এ সংশোধন তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শুনানিতে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। টি এইচ খানের পক্ষে তার লিখিত মতামত আদালতে উত্থাপন করেন অ্যাডভোকেট ফয়সাল এইচ খান।

অসুস্থতার জন্য আদালতে আসতে না পারার কারণে দুঃখ প্রকাশ করে লিখিত মতামতে টি এইচ খান বলেন, আদালত দুটি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন। একটি ইস্যু হচ্ছে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনের ক্ষেত্রে   প্রচলিত  আন্তর্জাতিক  আইন প্রযোজ্য হবে কি না? শুধুমাত্র হ্যাঁ বা না এর মধ্যে এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন। এটা প্রতিষ্ঠিত নীতি যে, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে বিভেদ দেখা দিলে দেশীয় আইনই প্রাধান্য পাবে। সাধারণত দেশীয় আদালত দেশীয় আইন অনুসরণ করেন। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে দেশীয় আইন পূর্ণাঙ্গ নয়, যেসব ক্ষেত্রে দেশীয় আইনে অস্পষ্টতা রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে দেশীয় আদালত আন্তর্জাতিক অঙ্গনের মিমাংসিত সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’র কোনো সংজ্ঞা নেই। বাংলাদেশের অন্য কোনো আইনেও এ অপরাধ সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল বিভাগকে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, যদিও গত ১৮ ফেব্রুয়ারির আইনে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেয়া হয়েছে। তবুও তা কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা। কারণ, তার মামলার কার্যক্রম আগেই শেষ হয়েছে।

ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ১৯৭৩ সালের ট্রাইব্যুনালস আইনে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিফলন রয়েছে। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনের সর্বশেষ সংশোধনীকে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেয়া হয়েছে। আমাদের সংবিধানে কোথাও বলা নেই যে, আইনে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেয়া যাবেনা। ট্রাইব্যুনাল আইনটিকে সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ দ্বারা সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। এ আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তির কোনো মৌলিক অধিকার নেই। অভিযুক্ত ব্যক্তি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো রিটও দায়ের করতে পারেন না। এ আইন নিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি আপিল বিভাগেও কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেন না। সংবিধানে এক্ষেত্রে বাধা রয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ রায়ের প্রতিবাদে শাহবাগে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। মূল আইনে সাজা বাড়াতে সরকার পক্ষের আপিলের বিধান না থাকলেও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আইন সংশোধন করে সরকারকে আপিলের সুযোগ দেয়া হয়। পরে সরকার ও আসামী দু-পক্ষই আপিল দায়ের করে। এ আপিলের শুনানিকালে উত্থাপিত আইনি প্রশ্নের মিমাংসায় গত ২০ জুন সাত জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ এর ক্ষেত্রে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে কি না? দ্বিতীয়ত, ২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আইন সংশোধন করে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে যে ভূতাপে কার্যকারিতা দেয়া হয়েছে, তা কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি না?

এ বিষয়ে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ইতোমধ্যে সিনিয়র আইনজীবী রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম ও আজমালুল হোসেন কিউসি মত দিয়েছেন। আরো মতামত দিবেন আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ।

এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ও কাদের মোল্লার পে আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৩

রায় পর্যালোচনা//সিরু মিয়া ও তার ছেলেকে মুক্তির সুপারিশ ছিল গোলাম আযমের চিঠিতে!


মেহেদী হাসান, ১৬/৭/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমকে  সিরু মিয়া, তার কিশোর ছেলে আনোয়ার কামালসহ ৩৮ জন বন্দী মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার দায়ে ৩০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। সিরু মিয়া হত্যাকান্ড বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ছিল- অধ্যাপক গোলাম আযমের  চিঠির নির্দেশে ব্রাèনবাড়িয়া জেলখানা থেকে বের করে  সিরু মিয়অসহ ৩৮ জনকে হত্যা করা হয়।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী শহীদ সিরু মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জেরায় জানিয়েছেন অধ্যাপক গোলাম আযমের লেখা চিঠিটি তার ভাই ফজলুর রহমান ব্রাèবাড়িয়া নিয়ে গিয়েছিলেন এবং চিঠিটি  তার ভাই  পড়েছিলেন। সে চিঠিতে লেখা ছিল তার স্বামী সিরু মিয়া এবং ছেলে আনোয়ার কামালকে মুক্তির বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছিলেন অধ্যাপক গোলাম আযম।  চিঠিটি ছিল ছোট্ট দুই লাইনের।

তবে  যে চিঠির ওপর ভিত্তি করে সিরু মিয়া হত্যাকান্ডের জন্য অধ্যাপক গোলাম আযমকে অভিযুক্ত  করা হয়েছে এবং ৩০ বছর জেল দেয়া হয়েছে আলোচিত সেই  চিঠি রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পারেনি।  চিঠি যে বহন করেছিল এবং চিঠি যাকে পৌছানো হয়েছিল  এবং যিনি পাঠ করেছেন তাদের কাউকেই হাজির করা হয়নি সাক্ষী হিসেবে।

সিরু মিয়াসহ ৩৮ জন হত্যাকান্ডের ঘটনা :  অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রায়ে সিরু মিয়া এবং ব্রাèনবাড়িয়া জেলখানায় বন্দী ৩৮ জন মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিবরন সাক্ষীদের বরাত দিয়ে বিস্তারিতভাবে  তুলে ধরা হয়েছে । রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা চার্জ থেকে রায়ে ঘটনাটি নিম্নরুপ আকারে উল্লেখ করা হয়েছে।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সিরু মিয়া ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মোহাম্মদপুর থানায় দারোগা ছিলেন। ২৭ বা ২৮ মার্চ তিনি সপরিবারে কুমিল্লা জেলার হোমনা থানায় নিজ গ্রাম রামকৃষ্ণপুর চলে যান।  গ্রামে গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি তার নিজ বাড়িতে ক্যাম্প গড়ে তোলেন এবং এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করতে থাকেন। প্রশিক্ষনের জন্য অনেককে ভারতে পাঠান এবং নিজেও ভারতে গিয়ে আবার ফিরে আসেন। এর এক পর্যায়ে  তিনি তার  ১৪ বছরের কিশোর ছেলে আনোয়ার কামাল, নজরুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা  মিলে কসবা থানার তন্তর চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাবার পথে অস্ত্রসহ রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন ২৭ অক্টোবর। এরপর তাদেরকে ব্রাèবাড়িয়া কোর্টে চালান দেয়া হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে ব্রাèনবাড়িয়া জেলাখানায় হস্তান্তর করা হয়। কোর্টে চালান  দেয়া এবং জেলখানায় হস্তান্তরের পূর্বে তাদেরকে দানা মেয়ার বাড়িতে আর্মি ক্যাম্প রেখে দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়।
সিরু মিয়ার স্ত্রীর নাম আনোয়ারা বেগম। আনোয়ারা বেগমের ছোট বোনের নাম মনোয়ারা বেগম। মনোয়া বেগমের স্বামীর নাম মহসিন আলী খান। অর্থাৎ মহসিন আলী খান সিরু মিয়ার ভায়রা। এই মহসিন আলী খান  ১৯৭১ সালে খিলগাও সরকারী স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। সেই স্কুলে পড়তেন অধ্যাপক গোলাম আযমের দুই ছেলে আযমী ও আমীন। অধ্যাপক গোলাম আযমের দুই ছেলে মহসিন আলীরও ছাত্র ছিল। সেই সূত্র ধরে সিরু মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম তার বোনের স্বামী মহসিন আলীকে অনুরোধ করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের কাছে যাওয়ার জন্য। তার স্বামী এবং ছেলেকে জেলখানা থেকে মুক্ত করার ব্যাপারে অধ্যাপক গোলাম আযমের কাছ থেকে একটি সুপারিশপত্র সংগ্রহের জন্য।

মহিসন আলী খান অধ্যাপক  গোলাম আযমের কাছে তার মগবাজার বাসায় যান। দুই দিন পর তিনি জামায়াতের নাখালপাড়া পার্টি অফিসে যেতে বলেন। সেখানে গেলে অধ্যাপক গোলাম আযম মহসিন আলী খানকে খামে আটকানো একটি চিঠি দেন। চিঠিখানা তিনি ব্রাèনবাড়িয়া শান্তি কমিটির নেতা পেয়ার মিয়ার কাছে পৌছানোর জন্য বলেন। মহসিন আলী সে চিঠি এনে সিরু মিয়ার স্ত্রী আনোয়রা বেগম এর কাছে দেন। আনোয়ারা বেগম তার ভাই ফজলুর রহমানকে সে চিঠিসহ পাঠান ব্রাèবাড়িয়া শান্তি কমিটির নেতা পেয়ারা মিয়ার কাছে।

পেয়ারা মিয়ার কাছে চিঠি হস্তান্তরের পর পেয়ারা মিয়অ  ফজলুর রহমানকে অধ্যাপক গোলাম আযম লিখিত আরেকটি অফিসিয়াল চিঠি দেখান যেখানে সিরু মিয়াকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মর্মে উল্লেখ আছে। কারণ তারা মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সিরু মিয়ার স্ত্রীকে বাড়ি ফিরে আল্লারহ কাছে প্রার্থনা করতে বলেন। শেষ পর্যন্ত সিরু মিয়াসহ ৪০ জনকে জেলখানা থেকে বের করে আনা হয়। এদের মধ্যে একজন শফিউদ্দিন আহমেদ উর্দু ভাষা জানার কারনে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকী ৩৯ জনকে পৈরতলায় নিয়ে রাজাকার আল বদররা গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকান্ড থেকে চিনু মিয়া নামে একজন ঘটনাক্রমে বেঁচে যায়। এভাবে অধ্যাপক গোলাম আযমের সরাসরি নির্দেশে সিরু মিয়া, আনোয়ার কামাল, নজরুল ইসলাম, আবুল কাসেমসহ ৩৮ জনকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে মর্মে অভিযোগ করা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।

সাক্ষী : অভিযোগটির পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মোট আট জন সাক্ষী হাজির করা হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সিরু মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। ট্রাইব্যুাল রুদ্ধদ্বার কক্ষে তার জবানবন্দী গ্রহণ করায় তখন তা সাংবাদিকদের জানানো হয়নি এবং গনমাধ্যমে  প্রকাশও নিষিদ্ধ ছিল। তবে তার জবানবন্দী  রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে পর্যালোচনা আকারে এবং অভিযোগের  স্বপক্ষে ভিত্তি আকারে। এছাড়া অপর গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন  শফিউদ্দিন আহমদ। তিনিও ২৭ অক্টোবার সিরু মিয়ার সাথে ভারত যাবার পথে ধরা পড়েছিলেন এবং তাকেও হত্যার জন্য ৪০ জনের সাথে জেলখানা থেকে বের করে আনা হয়েছিল।  তবে তিনি ১৯৭০ সালে করাচির একটি কলেজে লেখাপড়া করতেন এবং উর্দু জানার কারনে পাকিস্তানের সাদ উল্ল্যাহ নামে এক বিগ্রেডিয়ার তাকে ছেড়ে দেন বলে তিনি জানান ট্রাইব্যুনালে।
এ ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষের আরেকজন  উল্লেখযোগ্য সাক্ষী  হলেন বিশিষ্ট সুরকার গীতিকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তিনিও সিরু মিয়া, আনোয়ার কামালদের  সাথে ব্রাèনবাড়িয়া জেলাখানায় বন্দী ছিলেন।

সাক্ষীদের বরাতে ঘটনার বিবরন : রাষ্ট্রপক্ষের এসব সাক্ষীদের বরাত দিয়ে সিরু মিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে রায়ে। সাক্ষীদের বিবরন অনুযায়ী পাকিস্তান আর্মি ৪০ জনকে জেলখানা থেকে বরে নিয়ে নিয়ে এসেছিল। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ২১ নভেম্বর রাতে এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। সিরু মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ট্রাইব্যুনালে জানান তার  ভাই ফজলুর রহমান ব্রাèনবাড়িয়া পেয়ারা মিয়ার বাড়ি থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার দুই দিন তিনি তার স্বামী এবং ছেলর হত্যাকান্ডের  খবর জানতে পারেন। তার স্বামী এবং ছেলের কাপড় পোচড় ফেরত পাঠানো হয় তার কাছে। স্বাধীনতার পর শফিউদ্দিন জেল থেকে ছাড়া পাবার পর তার সাথে দেখা করেন এবং শফিউদ্দিন তার কাছে হত্যাকান্ডের বিবরন দেন। ৩৮ জনের সাথে তার স্বামী এবং ছেলেকেও হত্যা করা হয়েছে বলে শফিউদ্দিন জানান তাকে।

সিরু মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ট্রাইব্যুনালে তার স্বামী এবং ছেলে হত্যা বিষয়ে ঘটনার যে বিবরন দিয়েছেন তা তুলে ধরা হয়েছে রায়ে। তিনি তার  জবানবন্দীতে বলেন, ‘আমার ভাই পেয়ারা মিয়াকে চিঠি দেয়ার পর পেয়ারা মিয়া আমার ভাইকে আরেকটি চিঠি খুলে দেখান এবং তা পড়তে বলেন। ঔ চিঠিতে নির্দেশ ছিল এরা মুক্তি বাহিনী , এদের খতম করে দেয়া হউক। তিনি আমার ভাইকে আরো বলেন, আপনি যে চিঠি নিয়ে এসেছেন তাতে অনেক কিছু লেখা থাকলেও এটা সাদা কাগজ । এ লেখার কোন গুরুত্ব নেই। পেয়ারা মিয়া আমার ভাইকে বড়ি ফিরে আল্লাহর নাম নিতে বলেন।...পেয়ারা মিয়া আমার ভাইকে যে চিঠিটি দেখিয়েছিলেন সে চিঠির নির্দেশ ছিল গোলাম আযমের। ’

সিরু মিয়া এবং তার ছেলেকে মুক্তির সুপারিশ ছিল চিঠিতে?
সিরু মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে জেরায় প্রশ্ন করা হয় তিনি তার ভাইকে দিয়ে অধ্যাপক গোলাম আযমের লেখা যে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তা তিনি নিজে পড়েছিলেন কি-না। তিনি জবাবে জানান তিনি পড়েননি। কারণ সেটি খামবদ্ধ ছিল। তবে আনোয়ারা বেগম জানান, তার ভাই সে চিঠি পেয়ারা মিয়ার কাছে নিয়ে যাবার পরে পড়েছিলেন এবং চিঠির বিষয সম্পর্কে পরে তাকে বলেছিলেন। দুই লাইনের ছোট্ট সে চিঠিতে অধ্যাপক গোলাম আযম   সিরু মিয়া এবং তার ছেলের মুক্তির বিষয়ে বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

রায়ে আনোয়রা বেগমের জবানবন্দী বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলেও জেরার এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
অধ্যাপক গোলা আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, যে চিঠিতে মুক্তির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে তা কি করে মানবতা বিরোধী অপরাধ হতে পারে?
আনোয়ারা বেগমের ভাই ফজলুর রহমান যিনি চিঠি বহন করেছিলেন তিনি এখন মৃত।  যার কাছে চিঠি পৌছানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে সেই পেয়ারা মিয়াও  বর্তমানে মৃত। তবে যে মহসিন আলী সরাসরি অধ্যাপক গোলাম আযমের কাছ থেকে চিঠিটি এনেছিলেন  তিনি বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। রাষ্ট্রপক্ষ তাকেও হাজির করতে পারেনি। তবে তার জবানবন্দী  তার অনুপস্থিতিতে  আদালতে দাখিল করা হয়েছে এবং ১৯ (২) ধারায় আদালত তা গ্রহণ করেছেন। রায়ে মহসিন আলীকে মৃত উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, এটি ভুলে হতে পারে। তিনি জীবিত আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান জেরায় স্বীকার করেছেন গোলাম আযমের লেখা চিঠি উদ্ধারের জন্য পেয়ারা মিয়ার বাড়িতে যাননি। সে বাড়ি তল্লাসি করেননি এবং পেয়ারা মিয়ার জীবিত ছেলে সানাউল হকের সাথেও যোগাযোগ করেননি।

সিরু মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম স্বীকার করেছেন তাদের  যে চিঠি গোলাম আযম লিখেছিলেন তাতে তার স্বামী এবং সন্তানকে মুক্তির জন্য সুপারিশ ছিল। কিন্তু রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে অধ্যাপক গোলাম আযম ইচ্ছা করলে তার অধীনস্ত পেয়রা মিয়াকে নির্দেশ দিয়ে সিরু মিয়াসহ অপর তিনজনের জীবন বাঁচাতে পারতেন। কিন্তু তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তার অধীনস্ত পেয়রা মিয়াকে নিগেটিব সিগনাল দিয়ে সিরু মিয়া এবং অপর তিনজনকে হত্যায় সহযোগিতা করেছেন।

রায়ে সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে উল্লেখ করা হয়েছে শেষ পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযমের নির্দেশে সিরু মিয়া, তার ছেলে, নজরুলইসলামসহ ৩৮ জন বন্দী মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে।

সাক্ষী আনোয়ারা বেগম বলেছেন তার বোনের স্বামী মহসিন আলী ১৯৭১ সালে মতিঝিল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। অপর দিকে মহসিন আলী তার জমা দেয়া জবানবন্দীতে দাবি  উল্লেখ করেছেন তিনি ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত খিলগাও গভ: স্কুলে শিক্ষক ছিলেন। ১৯৯৫ সালে মতিঝিল বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবসর নেন।

আনোয়রা বেগম বলেছেন ৯১৭১ সালে তার ছেলে মতিঝিল সরকারী স্কুলে পড়ত এবং গোলাম আযমের দুই ছেলেও সেই স্কুলে পড়ত। অন্য দিকে মহসিন আলীর দাবি অনুযায়ী তারা তখন খিলগাও সরকারী স্কুলে পড়ত।
অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম আনোয়ারা বেগমেকে জেরার সময় সাজেশন দিয়ে বলেন, মহসিন আলী খন্দকারকে অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক চিঠি দেয়া, সে চিঠি নিয়ে পেয়ারা মিয়ার কাছে যাওয়া, পেয়ারা মিয়া কর্তৃক গোলাম আযমের আরেকটি অফিসিয়াল চিঠি দেখানো, গোলাম আযমের দুই ছেলের মহসিন আলীর ছাত্র থাকার তথ্য সব মিথ্যা। তবে আনোয়ারা বেগম এ সাজেশন অস্বাীকার করেন।

সাক্ষ্য : রায়ে আনোয়রা বেগমের সাক্ষ্য থেকে যে বিবরন তুলে ধরা হয়েছে তা এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল। আনোয়ারা বেগম বলেছেন সিরু মিয়া তার স্বামী। আনোয়ার কামাল তার ছেলে। ১৯৭১ সালে তার স্বামী মোহাম্মদপুর থানায় পোস্টিংয়ে ছিল। তার ১৪ বছরের ছেলে মতিঝিল সরকারি   উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ত। ১৯১৭১ সালের ২৮ অথবা ২৯ মার্চ তিনি তার বোনের পরিবারসহ হোমনার রামকৃষ্ণপুরে চলে যান। এরপর  সিরু মিয়া ভারতে চলে যান এবং ১৫/২০ দিন থাকার পরে চলে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগদেন। তিনি পাঁচটি থানার দায়িত্ব পালন করেন। ২৫ অক্টোবর সিরু মিয়া, আনোয়ার কামাল, নজরুল, কাসেম, জাহাঙ্গীর, সেলিম, শফিউদ্দিন ভারতের উদ্দেশে বাড়ি ছেড়ে যায়। ২ দিন পর তার স্বামীল চাচাত ভাই জাহারু  এসে জানায় তার স্বামী ছেলে এবং অন্যরা ধরা পড়েছে। তাদেরকে ব্রাèনবাড়িয়া নেয়া হয়েছে। এরপর তিনি তার ভাই ফজলুর রহমানকে ব্রাèবাড়িয়া পাঠান এবং তার ছেলে সিগারেটের সাদা কাগজে তাকে একটি চিঠি লিখেন। এরপর তিনি তার পিতার সাথে ঢাকায় তার বোন মনোয়ারা বেগমের বাসায় আসেন। তার বোনের স্বামী মহসিন আলী খান মতিঝিল সরকার স্কুলের শিক্ষক ছিলেন তখন এবং পরে খিলগাও সরকারি স্কুল থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি আগেই জানতেন গোলাম আযমের দুই ছেলে মহসিন আলীর ছাত্র ছিল। তাই সেই সূত্রে তিনি মহসিন আলীকে গোলাম আযমের কাছে পাঠানা তার স্বামী এবং ছেলের মুািক্তর বিষয়ে সুপারিশ সংগ্রহের জন্য। দুই দিন পর মহসিন আলী অধ্যাপক গোলাম আযমের কাছ থেকে চিঠি সংগ্রহ করে দেন। চিঠিখানা গোলাম আযম ব্রèনবাড়িয়া শান্তি কমিটির সভাপতি পেয়ারা মিয়ার কাছে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক তিনি সে  চিঠি নিয়ে তিনি তার ভাই ফজলুর রহমানকে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া পাঠান । সে চিঠি পেয়ারা মিয়াকে দেয়ার পর পেয়ারা মিয়া তাকে গোলাম আযমের আরেকটি অফিসিয়াল চিঠি দেখান যেখানে বলা আছে তারা মুক্তিযোদ্ধা। তাদের হত্যা করা হোক। নতুন যে চিঠি নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার কোন মূল্য নেই। কারণ সেটি সাদা কাগজে লেখা। তার ভাই বাড়ি ফিরে আসল। এর দুই দিন পর তিনি তার স্বামী এবং ছেলের জামা কাপড় ফেরত পেলেন এবং তাদের মৃত্যুর খবর জানতে পারলেন।
স্বাধীনতার পর তার স্বামীর সাথে ধরা পড়া শফিউদ্দিন তার সাথে দেখা করেন । তার স্বামীসহ ৩৮ জনকে হত্যার বিবরন দেন। এছাড়া একদিন টিভিতে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে এ ঘটনা বলতে দেখে তিনি তাকে ফোন দেন । এর আগে তার সাথে তার পরিচয় ছিলনা বলে সাক্ষী জানান।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সাক্ষ্য তুলে ধরে রায়ে বলা হয়েছে তিনিও ভারত যাবার পথে তন্তর চেকোপোস্টে ধরা পড়েন এবং ব্রাèনবাড়িয়া কারাগারে রাখা হয়। সেখানে আনোয়ার কামালের সাথে পরিচয় হয় এবং তাদের ঘটনা জানতে পারেন। এরপর ঈদুল ফিতরের দিন রাতে পাকিস্তান আর্মি সিরু মিযা আনোয়ার কামালসহ ৪০ জনকে বের করে নেয়ার ঘটনার রিববনর দেন তিনি।
সাক্ষী শফিউদ্দিন আহমেদের বাড়ি হোমনার রামনগর। তিনিও সিরু মিয়ার সাথে ভারতে যাবার জন্য ২৫ অক্টোবার রওয়ানা হন। এরপর সিরু মিয়াসহ তিনি ধরা পড়া থেকে শুরু করে ব্রান্নবাড়িয়া জেল খানায় বন্দী হওয়া, ৩৮ জনকে ২১ নভেম্বর ঈদুল ফিতরের দিন পাকিস্তান আর্মি কর্তৃক বের করে নিয়ে যাওয়া এবং তার রক্ষা পাওয়ার ঘটনার বিস্তারিত বিবরন দেন।

মূল্যায়ন :
ইভালুয়েশন অব এভিড্যান্স এন্ড ফাইন্ডিংস শিরোনামে রায়ে বলা হয়েছে-পাঁচ নং অভিযোগ সিরু মিয়া, আনোয়ার কামাল, নজরুল ইসলামসহ ৩৮ জনকে গোলাম আযমের সরাসরি নির্দেশে পাকিস্তান আর্মি, রাজাকার আলবদর কর্তৃক হত্যার অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ মোট আট জন সাক্ষী হাজির করেছে।  রায়ে বলা হয়েছে শফিউদ্দিন আহমেদ এ অভিযোগের পক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন সাক্ষী। কারণ তার দাবি অনুযায়ী সেও সিরু মিয়া আনোয়ার কামালসহ একসাথে ধরা পড়েন এবং তাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসাথে বন্দী ছিলেন জেলখানা।

আনোয়ার কামাল ১/১১/১৯৭১ সালে সিগারেটের কাগজে তার মাকে যে চিঠি লিখেছিলেন সে চিঠি আদালতে হাজির করা হয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে-আম্মা, সালাম নিবেন। আমরা  জেলে আছি। জানিনা কবে ছুটব। ভয় করবেননা। আমাদের ওপর তারা অকথ্য অত্যাচার করেছে। দোয়া করবেন। আমাদের জেলে অনেক দিন থাকতে হবে। ঈদ মোবারক। কামাল।

মহসিন আলী তার লিখিত জবানবন্দীতে জানিয়েছেন তিনি সিরু মিয়ার আপন ভায়রা। তিনি ১৯৬৮  থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত খিলগাও সরকারি স্কুলে শিক্ষক ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযমের দুই ছেলে ওই সময় তার ছাত্র ছিল। ১৫ রমজানের পর সিরু মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম তার চৌধুরী পাড়া বাসায় আসেন এবং তাকে অনুরোধ করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের কাছ থেকে তার স্বামী ও ছেলের মুক্তির বিষয়ে একটি সুপারিশ সংগ্রহের জন্য। তিনি অধ্যাপক গোলাম আযমের কাছ থেকে চিঠি এনে আনোয়ারা বেগমের কাছে দিয়েছেন। এরপর জানতে পারেন ২১ নভেম্বর সিরু মিয়া, আনোয়ার কামালসহ অন্যদের হত্যা করা হয়েছে।  মহসিন আলীর অনুপস্থিতিতে তার জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে ১৯ (২) ধারায়।

রায়ে উল্লেখ করা হয় সাক্ষ্য প্রমান বিশ্লেষনে এটি প্রতিষ্ঠিত যে, ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর সিরু মিয়া, আনোয়ার কামাল, নজরুল এবং অন্যরা ভারতে যাবার জন্য বাড়ি থেকে রওয়ানা হন। এরপর তারা তন্তর চেকপোস্টে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন এবং পরে তাদের  ব্রাèনবাড়িয়া কারাগারে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযমের নির্দেশে ২১ নভেম্বর ঈদুল ফিতরের দিন সিরু মিয়া, আনোয়ার কামাল, নজরুল, কাসেমসহ ৩৮ জনকে পাকিস্তান আর্মি, রাজাকার এবং আল বদর বাহিনীর লোকজন হত্যা করে। এটা প্রমানিত যে, অধ্যাপক গোলাম আযম ইচ্ছা করলে তার অধীনন্ত ব্রাèনবাড়িয়া শান্তি কিমিটির নেতা পেয়ারা মিয়াকে নির্দেশনা দিয়ে সিরু মিয়া, আনোয়ার কামাল, নজরুল এবং কাসেমের জীবন রক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তাদেরকে হত্যায় সহযোগিতা করেছেন এবং ভূমিকা পালন করেছেন। কাজেই সিরু মিয়া এবং অপর তিনজনকে হত্যার জন্য অধ্যাপক গোলাম আযম মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ।

আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন,  চিঠি নেই, চিঠির বাহক নেই, চিঠির পাঠকও নেই। তারপরও মাননীয় ট্রাইব্যুনাল তাদের ‘প্রজ্ঞা‘য় গোলাম ্আযমকে মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য সাজা প্রদান করেছেন। আমাদের দেশের ফৌজদারী আইনের দু‘শো বছরের ইতিহাসে এরকম সাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে কাউকে সাজা দেওয়ার কোন নজির নেই।
অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, পেয়ারা মিয়ার কাছে গোলাম আযমের আরেকটি অফিসিয়াল  চিঠির কথা বলা হয়েছে । কিন্তু গোলাম আযম কি করে পেয়ারা মিয়ার কাছে অফিসিয়াল চিঠি লিখবেন? সে চিঠি কাকে সম্বোধন করা হয়েছিল তাও কোন সাক্ষী বলতে পারেননি। গোলাম আযমের কোন হাতের লেখার সাথেও তারা আগে থেকে পরিচিত ছিলনা বলে জানিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, এ রায়ে আমরা একটি বিষয়ে সন্তুষ্ট যে আসামী পক্ষ কোন অভিযোগ প্রমান করতে পারেনি। ট্রাইব্যুনাল  আসামী পক্ষের সাক্ষীদের বিশ্বাস না করে দালিলিক বিষয়ের ওপর নির্ভর করেছেন। তবে আদালতের প্রতি সম্মান রেখেই আমরা বলছি আদালত যেসব দালিলিক বিষয়ের ওপর নির্ভর করেছে সে বিষয়ে আমরা কোন জবাব দেয়ার সুযোগ পাইনি।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে  বিরোধী দলীয়  নেতা থাকাকালে ১৯৯২ সালের ১৬ এপ্রিল গণআদালতের ন্যায্যতা এবং  অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের প্রমান তুলে ধরে একটি ভাষন দেন। ভাষনে তিনি বলেন, গোলাম আযম যে একজন হত্যাকারী ছিলেন তার একটি প্রমান আমি এখানে এনেছি। কুমিল্লার হোমনা থানার রামকৃষ্ণপুর  গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সিরু মিয়া দারোগা ও তার কিশোর পুত্র আনোয়ার কামালকে গোলাম আযমের লিখিত নির্দেশে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৭  অক্টোরব সিরু মিয়া এবং তার কিশোর পুত্র আনোয়ার কামাল ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার সময় অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাসহ রাজাকারদের  হাতে ধরা পড়েন। সিরু মিয়া মুক্তিযুদ্ধে অনেক দু:সাহসিক কাজ করেছেন। তিনি আমাদের প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী বেগম তাজউদ্দিনকে সপরিবারে কুমিল্লা সীমান্ত থেকে পার করে দিয়েছিলেন। সেই সিরু মিয়াকেও গোলাম আযমের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিল। তার নজির  ও প্রমান (কাগজ দেখিয়ে) এই কাগজে আছে। আপনি (মাননীয় স্পিকার) চাইলে এই কাগজও আপনার কাছে দিতে পারি।

পাক্ষিক ‘একপক্ষ’ নামে একটি ম্যাগাজিনে  বাংলা ১৪১৭ (ইংরেজি ২০১০ ) সংখ্যায় ‘গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের প্রমান প্রধানমন্ত্রীর কাছেই  আছে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। পাক্ষিক এক পক্ষের ওই প্রতিবেদনে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  সংসদে  তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা কর্তৃক উত্থাপিত   অভিযোগ এর বিষয়টি বিস্তারিত  তুলে ধরা হয়।

একপক্ষ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত  উপরোক্ত প্রতিবেদনটি  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয়েছে ।  এ বিষয়ে গত বছর ১১ অক্টোবর   তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জেরায় তদন্ত কর্মকর্তা জানান তিনি ওই  প্রমানপত্রটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সংগ্রহ করেননি  এবং যোগাযোগও করেননি কোথাও।
 এ বিষয়ে রায়ে কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি।







বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০১৩

জাহিদ হোসেন খোকন’র বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ট্রাইব্যুনালের

জাহিদ হাসান খোকন এর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে । আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ এ পরোয়ানা জারি করে।

জাহিদ হাসান খোকন ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র। তিনি নগরকান্দা পৌরসভা বিএনপির সহসভাপতি। তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার কার্যক্রম শুরুর পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটাপাট, ধর্মান্তরকরন এবং হিন্দুদের দেশ থেকে জোর করে নির্বাসনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আগামী ৩০ জুলাই তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুনানী ধার্য্য করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোখলেছুর রহমান বাদল সাংবাদিকদের বলেন,  জাহিদ হোসেন খোকন  ফরিদপুরের একজন চিহ্নিত রাজাকার। তিনি নিজেকে রাজাকার হিসেবে পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। রাজাকার পরিচয় দিয়ে গর্ব করেন। তিনি দম্ভ করে বলে বেড়ান ১৯৭১ সালে তিনি রাজাকার ছিলেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজাকার থাকতে চান। তার বড় ভাইও রাজাকার ছিল।

এ ধরনের চিহ্নিত একজন রাজাকারের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল কি-না এবং  দালাল আইনে কোন মামলা হয়েছিল কি-না সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি কোন তথ্য দিতে পারেননি এ মর্মে।

ইকনোমিস্ট বিষয়ে আদেশ ২৭ আগস্ট :
বহুল আলোচিত স্কাইপ কেলেঙ্কারির জের ধরে লন্ডনের সাময়িকী দি ইকনোমিস্ট এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা সংক্রান্ত অভিযোগ বিষয়ে আগামী ২৭ আগস্ট আদেশ প্রদান করা হবে।

আজ  অভিযোগ বিষয়ে শুনানী শেষে এ তারিখ ধার্য্য করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১।
ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এর স্কাইপ সংলাপের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ইকনোমিস্ট এর পক্ষ থেকে দুজন সাংবাদিক তাকে ফোন করেছিলেন। ফোন করে তারা তাকে জানান বেলজিয়ামের ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সাথে তিনি   ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে স্কাইপের মাধ্যমে যেসব কথা বলেছেন এবং যেসব মেইল আদান প্রদান করেছেন তার সব ডকুমেন্ট তাদের  কাছে রয়েছে।
গত বছল ৬ ডিসেম্বর এ বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে ওপেন কোর্টে প্রথমে ফাঁস করেন বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এবং ওইদিনই তিনি ইকনোমিস্ট এর বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। রুলে স্কাইপ সংলাপ এবং ইমেইল প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। একই সাথে তাদের কাছে জানতে চাওয়া  হয়  সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারপতির সাথে টেলিফোনে কথা বলা কেন আদালত অবমনানা বলে গন্য হবেনা।
শুনানীতে আজ  ইকনোমিস্ট এর পক্ষে ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, বিচারপতির সাথে কথা বলা কোন আদালত অবমানার মধ্যে পড়েনা। এ বিষয়ে বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজির কেস বিষয়ে আদালতের একটি পর্যবেক্ষন আছে। একজন বিদেশী সাংবাদিক ফোন করেছেন। তিনি  হয়ত সৌজন্যতার খাতিরেও কথা বলতে পারেন। তিনি যদি সাথে সাথে তখনই তাকে ডিনাই করে দিতেন তাহলে সেটা একরকম হত। কিন্তু সাংবাদিক ফোন করার পর বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম তার সাথে কথা বলেছেন। আমার মক্কেলের প্রশ্ন বিচারপতিকে ফোন করা যদি এতই অপরাধ হবে তাহলে তিনি  তার সাথে কথা বললেন কেন।

ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে একটি পর্যবেক্ষন দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার প্রস্তাব করেন  ট্রাইব্যুনালের কাছে।
18/7/2013.