রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৩

সাক্ষী বললেন আমার ভায়রা অনিল ১৯৭১ সালে নিজামীর ভাগ্নেকে জবাই করে হত্যা করে

মেহেদী হাসান, ৭/৭/২০১৩
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আজ ১২ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন রথিন্দ্র নাথ কুন্ডু। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, তার ভায়রা অনিল কুন্ড ১৯৭১ সালে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ভাগ্নেকে জবাই করে হত্যা করে। কারণ হিসেবে সাক্ষী জানান মাওলানা নিজামীর ভাগ্নের নেতৃত্বে   রাজাকাররা অনিলদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল।  সাক্ষী বলেন, ১৯৮৫ সালে তিনি তার ভায়রা অনিল কুন্ডুর বাড়িতে গেলে তখন ১৯৭১ সালের এ ঘটনা অনিল তাকে জানান। অনিল ২০১০ সালে মারা যায়।
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জেরায় সাক্ষীর কাছে মাওলানা নিজামীর আইনজীবী মতিউর রহমান নিজামীর নিহত ভাগ্নের নাম জানতে চাওয়া হলে তিনি জানাতে পারেননি। এছাড়া ১৯৭১ সালে মাওলানা নিজামীর কোন ভাগ্নে খুন হয়েছিলেন কি-না সে বিষয়ে ১৯৮৫ সালের পরবর্তীতে সাক্ষী কোন খোঁজ খবরও নেননি বলে জানান সাক্ষী।
১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যাসহ মানবতাবিরোধী নানা কর্মকান্ডের নেতৃত্বে অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচার চলছে মাওলানা নিজামীর।
জবানবন্দী :
আমার নাম রথিন্দ্র নাথ কুন্ডু, আমার বয়স- আনুমানিক ৫৮ বৎসর।
বর্তমানে আমি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার হাসপাতালে চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত আছি। আমি ১৯৬৮ সালে এস,এস,সি, ১৯৭০ সালে এইচ,এস,সি, এবং ১৯৮৪ সালে এম,বি,বি,এস পাশ করি। ২২-০২-১৯৮৪ সালে আমি আই,এস,টি, হিসাবে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করি। ১৪-০৭-১৯৮৫ তারিখে আমি সরকারী আদেশে হেলথ সাব সেন্টার, আটঘড়িয়ায় যোগদান করি। ১৯৯১ সালের ২রা জুন তারিখে আমি কারা বিভাগে যোগদান করি। ১৯৮৫ সালে আমি আমার স্ত্রীসহ নীলফামারীতে অবস্থানরত আমার ভায়রা অনিল কুন্ডুর বাড়িতে যাই। সেখানে যাওয়ার পর অনিল তার জীবনের কিছু কিছু ঘটনা আমাকে জানায়। অনিল আমাকে জানায় যে, সে ১৯৭০ সালে সাঁথিয়া হাইস্কুলের এস,এস,সি, ছাত্র ছিল এবং ১৯৭১ সালে এস,এস,সি, পরীক্ষার্থী ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অনিল তার বন্ধু বান্ধব সহ ভারতের পানিঘাটাতে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেওয়ার জন্য চলে যায়। সেখানে তিন/চার মাস ট্রেনিং নেওয়ার পর বাংলাদেশে ফিরে এসে ৭ নং সেক্টরে বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। এর ফলে অনিলের পিতা-মাতা তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের নাজিমে আলা যাকে সভাপতি বলা হয় আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা মতিউর রহমান নিজামী, রাজাকারদের অত্যাচারে ভারতে চলে যায়। নিজামীর নির্দেশে অনিল মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অপরাধে ১৯৭১ সালের মে মাসে তার এক ভাগ্নের নেতৃত্বে একদল রাজাকার অনিলদের বাড়ি লুটপাট করে এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরপর অনিল ও তার গ্রুপ কমান্ডার বাতেন, হামিদ, ফনিন্দ্র নাথ ঘোষ এবং হাবিবুর রহমানসহ সাঁথিয়া থানার অন্তর্গত সোনাতলা গ্রামের পাশ দিয়ে বহমান ইছামতি নদীতে টহল ডিউটি করতো। অনিল তার বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষোভে নিজামী সাহেবের উক্ত ভাগ্নেকে ধৃত করার জন্য একটি ফাঁদ পাতে। অনিল জানতো নিজামী সাহেবের ঐ ভাগ্নের মেয়েদের প্রতি আসক্তি ছিল। সেই সুযোগ নেওয়ার জন্য অনিল নিজে মেয়েদের শাড়ী ব্লাউজ পরে মেয়ে সেজে একটি ছইওয়ালা নৌকায় ঐ ইছামতি নদীতে ঘোরাফেরা করতে থাকে ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসের শেষের দিকে। নিজামী সাহেবের ঐ ভাগ্নে রাজাকারদের একটি দলসহ ইছামতি নদীতে পেট্রোলিং ডিউটি করতো। পেট্রোলিং ডিউটি করাকালীন ঘটনার ঐ দিন অনিলদের নৌকা দেখে নৌকার কাছে গিয়ে চ্যালেঞ্জ করে, নৌকার মধ্যে একটি মেয়েকে দেখে লাফ দিয়ে ঐ নৌকায় উঠে পড়ে। অনিলদের ঐ নৌকা হামিদ নামে একজন চালাচ্ছিলেন, ফনিন্দ্র ও হাবিবুর রহমান অস্ত্রসহ নৌকার পাটাতনের নীচে লুকিয়ে ছিল। নিজামী সাহেবের ঐ ভাগ্নে নৌকায় উঠা মাত্র অনিল এবং হামিদ ক্ষিপ্রতার সহিত তাকে জাপটে ধরে। সংগে সংগে পাটাতনের নীচ হতে তাদের সহযোগী দুইজন বেরিয়ে ব্লাংক ফায়ার করে। ইহাতে নিজামী সাহেবের ভাগ্নের সহযোগী রাজাকাররা নৌকা নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। তখন অনিলরা নিজামী সাহেবের ভাগ্নেকে নৌকার গলাইয়ের উপর শুয়ায়ে জবাই করে হত্যা করে লাশ ইছামতি নদীতে ফেলে দেয়। এই ঘটনা হয়েছিল ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসের শেষের দিকে। নিজামী সাহেবের ভাগ্নেকে মারার কারণে নিজামীর নির্দেশে একদল রাজাকার বাতেনকে সোনাতলায় ধরে নিয়ে আসে এবং পথিমধ্যে তাহাকে নিরস্ত্র অবস্থায় হত্যা করে। এই ঘটনাটি ঘটে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে। আমি আমার জবানবন্দীতে যে অনিলের কথা বলেছি তার বাড়ি সাঁথিয়া থানার সোনাতলা গ্রামে ছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট তারিখে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের ভয়ে অনিল সোনাতলা গ্রাম ত্যাগ করে নীলফামারীতে চলে যায় এবং সেখানে অবস্থানকালীন সময়ে ৮ই মে, ২০১০ তারিখে মৃত্যুবরণ করে।
আমি আটঘড়িয়ায় অবস্থান করাকালে ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসের শেষ সপ্তাহে আমার স্কুল জীবনের বন্ধু স্বপনের সংগে আমার দেখা হয়। স্বপন আমাকে বলে যে, ১৯৭১ সালের ১০ই জুন তারিখে আমাদের স্কুলের শিক্ষক মাওলানা কছিম উদ্দিন আহম্মদসহ আরও দুইজনকে চোঁখ বাঁধা অবস্থায় পাকিস্তান আর্মিরা জীপে তুলে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন স্বপন দেখেছিল যে পাক আর্মির ঐ জীপে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বসা ছিলেন। ০২-০৬-২০১১ তারিখে আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার অফিসে জবানবন্দী প্রদান করেছি। আমি যে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের কথা বলেছি তাকে আমি চিনি, তিনি অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)

জেরা-
জেরায় আইনজীবীর প্রশ্নে সাক্ষী যে উত্তর দেন তা নিম্নরূপ
আমার জন্ম তারিখ ০১-০১-১৯৫৪। ১৯৭০ সালে এস,এস,সি পাশ করার পর পাবনা এডওয়ার্ড কলেছে বি,এস,সিতে ভর্তি হই। আমার এইচ,এস,সি পড়াশুনাও পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। ১৯৭১ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি বা সেক্রেটারী যে ছিলেন তাহা এডওয়ার্ড কলেজে আমার পড়াকালীন সময়ে ছাত্র সংসদেও কোন নির্বাচন হয়েছিল কিনা তাহা বলতে পারছি না। ঐ সময় এডওয়ার্ড কলেজে ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন আব্দুস ছাত্তার লালু, রফিকুল ইসলাম বকুল, সোহরাব উদ্দিন সোভা, ইশরাত আলী জিন্নাহ। ঐ সময় ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন), ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) এবং ইসলামী ছাত্রসংঘের কার্যক্রম ছিল। ছাত্রসংঘের উল্লেখযোগ্য কারো নাম আমার এ মূহুর্তে মনে পড়ছে না। আমি ঐ কলেজে পড়াশুনা করা ব্যতীত আমি পিতামাতার সঙ্গে শহরের বাসায় থাকতাম। আমাদের বাসা ছিল দিলাপুরে (পাথরতলা) ১৯৭১ সালে আমি পাবনা শহরের শালগাড়ি এলাকা চিনতাম। ১৯৭১ সালে নগরবাদি ফেরীঘাট পার হয়ে গাড়ী সাধারনত কাশিনাথপুর, পাবনা শহরের মুজাহিদ স্যারের পাশ দিয়ে যেতো। ১৯৭১ সালে পাবনা শহরের বাসস্ট্যান্ড ছিল গোপালপুর। নগরবাড়ী ঘাট থেকে রাজশাহী যাতায়াতের জন্য উল্লেখিত সড়ক পথ ছাড়া বিকল্প কোন সড়ক পথ ছিল না। বাসস্ট্যান্ড থেকে শালগাড়ীয়ার দূরত্ব ছিল উত্তর দিকে আনুমানিক দুই কিলোমিটার। বাসস্ট্যান্ড থেকে শালগাড়িয়ার দিকে একটি কাঁচা রাস্তা ছিল, তবে সেটা নগরবাড়ী থেকে রাজশাহী যাওয়ার রাস্তা হিসাবে ব্যবহৃত হতো না। ১৯৭১ সালে ৯ই এপ্রিল তারিখে পাকিস্তানী সৈন্যরা সর্বপ্রথম পাবনা শহরে আসে কিনা তাহা আমার মনে নাই। পাকিস্তানী আর্মিরা ১৯৭১ সালে নগরবাড়ী ঘাট দিয়ে পাবনায় প্রবেশ করেছিল। নগরবাড়ী ঘাট দিয়ে পাকিস্তানী আর্মিরা পাবনায় আসার আগে কিছু আর্মি যারা পাবনায় ছিল তারা ডাক বাংলায় অবস্থান করতো। ডাক বাংলায় অবস্থানরত আর্মিরা নগরবাড়ী ঘাট দিয়ে আসা আর্মিদের সঙ্গে একত্রিত হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। ডাক বাংলা থেকে আমাদের শহরের বাড়ির দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ২৯ শে মার্চ পর্যন্ত আমি পাবনা শহরে দিলাপুরে আমার বাড়িতে ছিলাম। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে পাবনা শহরে কোন যুদ্ধ হয়নি, তবে যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছিল যার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালিন জেলা প্রশাসক জনাব নূরুল কাদির সাহেব। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ৯ই এপ্রিল তারিখের মধ্যে পাবনা শহরে কোন হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ৯ই এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত জেলা স্কুল মাঠ সেখানে যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছিল সেখানে আমার যাতায়াত ছিল। জেলা স্কুল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের যারা ট্রেনিং দিতেন তাদের মধ্যে ছিলেন কাছিম উদ্দিন স্যার, বকুল ভাইসহ আরও অনেকে ছিল সকলের নাম আমার মনে নাই। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে ৯ই এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত কোন ই,পি,আর. সদস্যকে আমি পাবনা শহরে দেখেছিলাম কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। পাবনা শহরে এন,এস,এফ. এর কার্যালয় কোথায় ছিল তাহা আমার স্মরন নাই। ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন), ইসলামী ছাত্রসংঘের অফিস কোথায় ছিল তাহা আমার মনে পড়ছে না। ছাত্রলীগের অফিস ছিল শহরে তাহা আমি চিনতাম। ১৯৭১ সালে পাবনা শহর বা জেলার ছাত্রসংঘের সভাপতি বা সেক্রেটারীর নাম আমার মনে নাই। ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাবনা শহরে ছাত্রসংঘের পাঠক্রম কোথায় থেকে কে পরিচালনা করতো এ সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নাই। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাবনা শহরে ইসলামী ছাত্রসংঘের কার্যক্রম সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নেই। ৯ই এপ্রিল তারিখে নগরবাড়ী ঘাট দিয়ে পাকিস্তান আর্মিরা প্রবেশ করার পর আমি শহরে থাকতাম। আমি ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষের দিকে ভারতে চলে যাই। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আমি ভারত থেকে ফিরে আসি। ভারত থেকে ফেরত এসে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার কোন একটা থানা এলাকায় ছিলাম তবে সেই থানার নাম আমার এ মূহুর্তে মনে পড়ছে না। ঐ এলাকায় বা চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় কতদিন ছিলাম তাহা অনুমান করে বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে চাপাইনবাবনগঞ্জ জেলা থেকে পাবনা জেলায় ফেরত আসার আগ পর্যন্ত আমি বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করেছি তবে তার নাম আমার এ মূহুর্তে স্মরন হচ্ছে না। বিজয় অর্জনের পর আমি বেড়া থানা এলাকায় আসি। আমি স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি সাথিয়া এলাকায় যাই নাই। মে মাসের শেষের দিকে ভারত চলে যাওয়ার পর বিজয় অর্জন পর্যন্ত আমি পাবনা শহরে আসি নাই।
আমি আমার জবানবন্দীতে যে হাবিবুর রহমানের কথা বলেছি তার পিতার নাম শহীদ কোবাদ আলী,  সাকিম সাধুপাড়া, থানা পাবনা সদর কিনা তাহা আমি জানি না। আমি আমার জবানবন্দীতে যে বাতেনের নাম বলেছি তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত পাবনার রাজনীতি ত্রিধারায় বিভক্ত ছিল একটি হলো স্বাধীনতাপন্থী, একটি হলো পাকিস্তান পন্থী এবং অন্যটি নকশাল পন্থী। নকশাল পন্থীদের নেতৃত্বে টিপু বিশ্বাস ছিলেন তবে বাতেন ছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের যে ভাগ্নেকে হত্যা করার কথা বলা হয়েছে তার নাম অনিল আমাকে বলে নাই কিংবা আমি জানি না। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের কোন ভাগ্নে ১৯৭১ সালে খুন হয়েছিল কিনা তাহা আমি অনুসন্ধান করি নাই বা যাচাই করি নাই।
আমি সাংগব মাছের নাম শুনেছি। সাংগব মাছের লেজ চাবুক হিসেবে ব্যবহার করা হয় কিনা তাহা আমি জানি না। আমি চর্ম রোগের চিকিৎসা করি। সাংগব মাছের লেজের বাড়ি মানুষের শরীরে লাগলে চামড়ায় পচন সৃষ্টি হয় কিনা তাহা আমার জানা নাই। অনিলের সঙ্গে আমার চলাফেরা দেখা সাক্ষাত হয়েছে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে ১৯৭১ সালে আগষ্ট মাসের শেষে আটক করা হয়েছিল মর্মে অনিল আমাকে কোন তথ্য দিয়েছিল কিনা তাহা এ মূহুর্তে আমার মনে নাই।
১৯৭৬ সালে আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্র হিসেবে ভর্তি হই। ১৯৭১ সালে বিজয় অর্জনের পর আমি দেশের বাইরে যাই এবং ১৯৭৪ সালে ফিরে এসে ১৯৭৬ সালে মেডিকেলে ভর্তি হই।
১৯৭১ সালে বিজয় অর্জনের পরে পাবনা শহর এবং বেড়া এলাকায় স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনের জন্য অনেক স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। বিজয় অর্জনের পর থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়েছিল কিনা তাহা এ মূহুর্তে আমার স্মরন নাই। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে ১৯৭৫ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত কোন পত্রিকায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে দেখিয়ে কোন সংবাদ পরিবেশিত হয়েছিল কিনা তাহা এ মূহুর্তে আমার মনে নাই। (চলবে)
পূনরায় জেরা
তাং- ০৮/০৭/২০১৩ ইং

মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আমি কলেজে পড়াকালীন সময় থেকে চিনি। ১৯৭১ সাল বা তার আগে আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বাড়িতে যাই নাই। ঐ সময় তার গ্রামের বাড়ি কোথায় ছিল তাহা আমি জানতাম না। আমি যতটুকু জানি তিনি আটঘরিয়ায় একটি মাদ্রাসায় জায়গীর থেকে লেখাপড়া করেছেন। তিনি ঐ মাদ্রাসায় কোন্ কাস থেকে কোন্ কাস পর্যন্ত পড়েছেন তাহা আমার জানা নাই। আমি সাথিয়া থানার সোনাতলা গ্রামে কোনদিন যাই নাই। অনিলেরা সম্ভবত চার ভাই। অনিলের পিতা সত্তর দশকের পূর্বেই নিলফামারীতে বাড়ি করে বসবাস করতেন, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের কোন বোন, ভগ্নিপতি ও ভাগ্নেকে আমি কোন দিন দেখি নাই। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের আগে ১৯৭০ সালের পূর্বে আমি নিজামী সাহেবকে দেখেছি।
পাবনা শহর বা জেলায় শান্তি কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কে ছিলেন তাহা আমার মনে নাই। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল, তবে কোন্ মাসে তাহা আমার মনে নাই। ক্যাপ্টেন জায়েদী সাহেবকে চিনতাম তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকা পালন করেন, তবে তিনি শান্তি কমিটি, রাজাকার নাকি আলবদরের সদস্য ছিলেন তাহা আমার মনে নাই।
শহিদ মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা কাছিম উদ্দিন সাহেবকে আমি যখন কাস থ্রিতে পড়তাম তখন থেকেই চিনতাম, তিনি আমার শিক্ষক ছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০৩ রাইফেলের ট্রেনিং দিতেন, তিনি একজন ভাল ক্যাডেট প্রশিক্ষক ছিলেন। তার ট্রেনিং ক্যাম্প কতদিন স্থায়ী ছিল তাহা আমার মনে নাই।
আমি একটিই মাত্র বিবাহ করেছি, আমার শ্বশুরের নাম নারায়ণ চন্দ্র কুন্ডু। অনিল চন্দ্র কুন্ডুসহ তার এক ভাই মারা গেছে, অপর দুই ভাই জীবিত আছে। অনিল চন্দ্র কুন্ডুদের সোনাতলা গ্রামে কে কে থাকে তাহা আমার জানা নাই।
১৯৭১ সালের মে মাসে ভারতে যাওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি পাবনার আটঘরিয়া ও চাটমোহর এলাকায় এসেছিলাম, তবে পাবনা শহরে আসি নাই। ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মতিউর রহমান নিজামী সাহেব পাবনার কোন্ এলাকায় থাকতেন তাহা আমার জানা নাই।
নিজামী সাহেব আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মর্মে সংবাদ আমি ১৯৭১ সালের দৈনিক সংগ্রাম কিংবা দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় দেখেছিলাম। ঐ সংবাদটি আমি ভারতে যাওয়ার আগে নাকি পরে দেখেছি তাহা আমার মনে নাই।
বি,এল,এফ বা তার গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নাই। দেশ স্বাধীনের পর পাবনা জেলায় নকশালদের কোন উৎপাত ছিল না, কিন্তু ১৯৭০ সালের পূর্বে ছিল।
“নিজামী সাহেবের ভাগ্নেকে মারার কারণে নিজামীর নির্দেশে একদল রাজাকার বাতেনকে সোনাতলায় ধরে নিয়ে আসে” বা “আমি আটঘড়িয়ায় অবস্থান করাকালে ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসের শেষ সপ্তাহে আমার স্কুল জীবনের বন্ধু স্বপনের সংগে আমার দেখা হয়। স্বপন আমাকে বলে যে, ১৯৭১ সালের ১০ই জুন তারিখে আমাদের স্কুলের শিক্ষক মাওলানা কছিম উদ্দিন আহম্মদসহ আরও দুইজনকে চোঁখ বাঁধা অবস্থায় পাকিস্তান আর্মিরা জীপে তুলে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন স্বপন দেখেছিল যে পাক আর্মির ঐ জীপে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বসা ছিলেন।” একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিমে আলা যাকে সভাপতি বলা হয় আল বদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালের মে মাস উল্লেখে রাজাকাররা অনিলের বাড়ি লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার কথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
তদন্তকারী কর্মকর্তার ডাকে আমি তার নিকট জবানবন্দী প্রদান করি। অনিলের উদ্ধৃতি দিয়ে আমি যে সাক্ষ্য প্রদান করেছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। স্বপনের উদ্ধৃতি দিয়ে আমি যে সাক্ষ্য প্রদান করেছি তাহাও অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমি একজন সরকারী কর্মকর্তা হওয়ায় সরকারী এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে জড়িয়ে অসত্য জবানবন্দী দিয়েছি, ইহা সত্য নহে। (জেরা সমাপ্ত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন