বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৪

জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

মেহেদী হাসান, ২৭/৩/২০১৪
জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের কার্যালয়)। আজ দুপুরে পর চিফ প্রসিকিউটর বা রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী গোলাম আরিফ টিপুর কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান। এসময় রাষ্ট্রপক্ষের অন্যান্য আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে দায়ের করা তদন্ত প্রতিবেদনে দলটিকে নিষিদ্ধ করার আবেদন জানানো হয়েছে তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে। জামায়াতের নাম পরিবর্তন করে বা ভিন্ন নামেও যাতে কেউ এদেশে জামায়াতের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে না পারে সে দাবিও জানানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্তকরন এবং তা দাখিল উপলক্ষে গত মঙ্গলবার তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিসহ অন্যান্য বিষয় সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয় তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে। সেদিনই প্রতিবেদনটি প্রসিকিউশনে দাখিল করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সাংবাদিকদের বলেন, এটি এখন যাচাই বাছাই করে অভিযোগ গঠনের জন্য ট্রাইব্যুনালে পেশ করা হবে।

১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ,  মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা এবং নানাবিধ অপরাধমূলক কার্যক্রম, পরিচালনার  অভিযোগে জামায়াতে ইসলামী ও দলটির তৎকালীন  সংশ্লিষ্ট অঙ্গসঙ্গঠনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তাই  ট্রাইব্যুনালের আইনের ধারা মোতাবেক জামায়াতে ইসলামী ও দলটির সেই সময়কার অঙ্গসংগঠনের বিচারের আবেদন করা হয়েছে তদন্ত সংস্থা কর্তৃক।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভূমিকার কারনে জামায়াতে ইসলামী ও এর সকল স্তরের নেতৃত্বকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে জামায়াতে ইসলামী এবং সেসময় তাদের অঙ্গসঙ্গঠনের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে তদন্ত সংস্থা কর্তৃক। ব্যক্তির পাশাপাশি দলের বিচারের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের আগস্ট মাস হতে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

জামায়াতের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের আইনের ধারায় বর্নিত সাত ধরনের অভিযোগ  আনা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালে  মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভূমিকার কারনে অভিযুক্ত সংগঠন ‘জামায়াতে ইসলামী’ ও তার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, ও আল শামস বাহিনী এবং জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম ট্রাইব্যুনালের আইনে বর্ণিত মানবতাবিরোধী, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক আইনে বর্নিত অন্যান্য অপরাধ, অপরাধ সংগঠনে সহায়তা, ষড়যন্ত্র এবং অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতা প্রভৃতি অপরাধ করেছে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৪ (১) ও ৪ (২) ধারা অনুযায়ী। অভিযুক্ত সংগঠনসমূহের নীতি, নীতি নির্ধারক, সংগঠক, পরিচালক এবং সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী সকলেই উপরোক্ত অপরাধসংগঘটনের জন্য দায়ী। তাই অভিযুক্ত সংগঠন ‘জামায়াতে ইসলামী এবং তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদরম আলশামস বাহিনী এবং দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা ট্রাইব্যুনাল আইনের বর্ণিত ধারায় অপরাধ সংঘটন করায় অপরাধী সংগঠন হিসেবে ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য অত্র প্রতিবেদন দাখিল করলাম।’

জামায়াতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মূল তদন্ত প্রতিবেদনটি ৩৭৩ পৃষ্ঠার। জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমানপত্র সাতটি খন্ডে মোট দুই হাজার ৩০৩ পৃষ্ঠা। অন্যান্য নথিপত্র, ডকুমেন্ট ১০ খন্ডে  তিন হাজার ৭৬১ পৃষ্ঠা। বই পুস্তক রয়েছে দুই শতাধিক। জামায়াতের অনেক নিজস্ব প্রকশানা সংগ্রহ করে ডকুমেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।  সাক্ষীর সংখ্যা ৭০ জন।


মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০১৪

জামায়াত নিষিদ্ধ চেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত

মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার আবেদন  জানিয়ে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। জামায়াতের নাম পরিবর্তন করে বা ভিন্ন নামেও যাতে কেউ এদেশে জামায়াতের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে না পারে সে দাবিও জানানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। একই সাথে জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা নিষিদ্ধের আবেদন করা হয়েছে।

১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ,  মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা এবং নানাবিধ অপরাধমূলক কার্যক্রম, পরিচালনার  অভিযোগে জামায়াতে ইসলামী ও দলটির তৎকালীন  সংশ্লিষ্ট অঙ্গসঙ্গঠনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তাই  ট্রাইব্যুনালের আইনের ধারা মোতাবেক জামায়াতে ইসলামী ও দলটির অঙ্গসংগঠনের বিচারের আবেদন করা হয়েছে তদন্ত সংস্থা কর্তৃক।

তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া  উপলক্ষে আজ তদন্ত সংস্থা কর্তৃক  আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় ‘যদি তদন্তে প্রমানিত হয় যে,  বর্তমান ইসলামী ছাত্রশিবির তৎকালীন ইসলামী  ছাত্রসংঘেরই  উত্তরসুরী হিসেবে কাজ করছে তাহলে   ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমও বন্ধের দাবি জানানো হবে।’ সাংবাদ সম্মেলনে  আরেক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা সানাউল হক  জানান, ‘জামায়াতের সহায় সম্পত্তিও জব্দ করা যেতে পারে।’
সূত্র জানিয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে জামায়াতের সাথে সম্পর্কযুক্ত শতাধিক আর্থিক এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা যুক্তি করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে।

ধানমন্ডিতে অবস্থিত তদন্ত সংস্থার সেফহোমে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় আজ (মঙ্গলবার) আমরা চিফ প্রসিকিউটরের (ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী)  কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। তবে বিকালে তদন্ত সংস্থার সূত্র জানায় আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি থাকায় প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত আজ দাখিল করা যায়নি। আগামীকাল বৃহষ্পতিবার অথবা রোববার প্রসিকিউশন বরাবর দাখিল করা হবে।
নিয়ম অনুযায়ী  তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ আকারে বিচারের জন্য পেশ করা হবে ট্রাইব্যুনালের কাছে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভূমিকার কারনে জামায়াতে ইসলামী ও এর সকল স্তরের নেতৃত্বকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে জামায়াতে ইসলামী এবং সেসময় তাদের অঙ্গসঙ্গঠনের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে তদন্ত সংস্থা কর্তৃক। ২০১৩ সালের আগস্ট মাস হতে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘তদন্তকালে প্রাপ্ত ও উদঘাটিত সাক্ষ্য প্রমান পর্যালোচনায় প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হয় যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়ে অভিযুক্ত সংগঠন ‘জামায়াতে ইসলামী’ ও তার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, ও আল শামস বাহিনী এবং জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম মানবতাবিরোধী, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক আইনে বর্নিত অন্যান্য অপরাধ, অপরাধ সংগঠনে সহায়তা, ষড়যন্ত্র এবং অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতা প্রভৃতি অপরাধ করেছে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৪ (১) ও ৪ (২) ধারা অনুযায়ী।  অভিযুক্ত সংগঠনসমূহের নীতি, নীতি নির্ধারক, সংগঠক, পরিচালক এবং সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী সকলেই উপরোক্ত অপরাধসংগঘটনের জন্য দায়ী। তাই অভিযুক্ত সংগঠন ‘জামায়াতে ইসলামী এবং তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদরম আলশামস বাহিনী এবং দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা ট্রাইব্যুনাল আইনের বর্ণিত ধারায় অপরাধ সংঘটন করায় অপরাধী সংগঠন হিসেবে ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য অত্র প্রতিবেদন দাখিল করলাম।’

এসময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, জামায়াতের সেসময়কার অঙ্গসংগঠন তো এখন নেই। এখন আছে ছাত্রশিবির।  ছাত্রশিবির বিষয়ে আপনাদের সিদ্ধান্ত কি। জবাবে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা সানাউল হক বলেন, যদি প্রমানিত হয় যে, ছাত্রশিবির ছাত্রসংঘেরই উত্তরসুরী তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাব।
সাংবাদিকরা এসময় প্রশ্ন করেন, মুসলিম লীগ, পিডিব, নেজামে ইসলাম, কনভেনশন মুসলিম লীগ প্রভৃতি দলও তো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের  বিষয়ে আপনারা কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন।  জবাবে সানাউল হক বলেন, আপাতত তাদের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা। প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করা হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় এসব সংগঠনও স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান নিলেও পরে তাদের কার্যক্রম কম গুরুত্বপূর্ণ ওয়ে ওঠে জামায়াতই মুখ্য বিরোধীতাকারী সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হয়।

জামায়াতকে কিভাবে এবং কি কারনে অপরাধী সংগঠন হিসেবে সাব্যস্ত করে বিচার চেয়েছেন সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সানাউল হক বলেন, জামায়াত ১৯৭১ সালে  একটি দল হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়েই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান নেয় এবং পাকিস্তান আর্মির সাথে যোগ দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা এবং অংশগ্রহণ করে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েই শান্তি কমিটি, আলবদর, আল শামস এবং রাজাকার বাহিনী গঠন করে এবং এসব সংগঠন নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম করেছে। তাই এসব অপরাধের দায়ভার দলের ওপরও বর্তায়। তিনি বলেন, আমরা আদর্শ হিসেবে জামায়াতের নিষিদ্ধ চাইব। আমরা চাই এখানেই এর সমাপ্তি চাই (ঞযব ঊহফ) । 
আরেক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেন, গত বছর জামায়াত দল হিসেবে সারা দেশে যেসব হত্যা এবং সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছে তাও আমরা কেস ডায়েরিতে উল্লেখ করেছি।
সংগঠনের বিরুদ্ধে বিচারের সময় আসামীর কাঠগড়ায় কে দাড়াবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের দায়িত্বে যারা আছে তাদের দায়িত্ব এটা ডিফেন্ড করা । তারা যদি কেউ না আসে তাহলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার হবে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে দলের কাছে নোটিশ যাবে।

জামায়াতের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের আইনের ধারায় বর্নিত সাত ধরনের অভিযোগ  আনা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এগুলো হল মানবতাবিরোধী অপরাধ, গনহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনে বর্নিত সশস্ত্রযুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কোন নিয়ম ভঙ্গ, আন্তর্জাতিক আইনে বর্নিত অন্য কোন ধরনের অপরাধ, এ ধরনের কোন অপরাধ সংঘঠনের জন্য ষড়যন্ত্র, সহযোগিতা এবং উদ্যোগ গ্রহণ, অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা এ ধরনের কোন অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতা ।
জামায়াতে ইসলামী এবং ১৯৭১ সালে দলটির অঙ্গংগঠনের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনাকালে মূলত ১৯৭১ সালে জামায়াতের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে তদন্তের অংশ হিসেবে। পাশাপাশি
দলটির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের পূর্বের ও পরবর্তী কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে। ১৯৪১ সালে দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহে এ দলের ভূমিকা এবং অবস্থান,  জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা সায়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী রচিত বিভিন্ন বই, তার চিন্তা, দর্শন,  অধ্যাক গোলাম আযমসহ জামায়াতের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের লেখা বই পুস্তক, জামায়াত বিরোধী বিভিন্ন লোকজনের লেখা বেশকিছু বই পুস্তক পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং এর ওপর নির্ভর করা হয়েছে।  ১৯৭১ সালের দৈনিক সংগ্রামসহ অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন খবর, সরাসরি জামায়া পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও তদন্ত করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় মূল প্রতিবেদনটি ৩৭৩ পৃষ্ঠার। জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমানপত্র সাতটি খন্ডে মোট দুই হাজার ৩০৩ পৃষ্ঠা। অন্যান্য ডকুমেন্ট ১০ খন্ডে  তিন হাজার ৭৬১ পৃষ্ঠা। বই পুস্তক রয়েছে দুই শতাধিক। জামায়াতের অনেক নিজস্ব প্রকশানা সংগ্রহ করে ডকুমেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।  সাক্ষীর সংখ্যা ৭০ জন।

বুধবার, ১২ মার্চ, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল // শুনানী ১ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি

১২/৩/২০১৪
অবকাশকালীন ছুটির কারনে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা আগামী এপ্রিল মাস পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

অবকাশকালীন ছুটির আগে মার্চ মাসে আগামীকাল সুপ্রীম কোর্টের শেষ কার্যদিবস। আগামী পয়লা এপ্রিল পুনরায় বসবে কোর্ট। তবে আগামীকাল কোর্ট খোলা থাকলেও মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম আজ থেকেই মুলতবি করা হয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আজ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১০ নং অভিযোগ বিশাবালী হত্যার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। বিশাবালী হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান তিনি। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।
সকালের সশনের শুনানী শেষে মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম অবকাশকালীন ছুটি চলা পর্যন্ত মুলতবি করেন কোর্ট।

মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল /// মমতাজ বেগমের মামলার মূল কপি দেখতে চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল

মেহেদী হাসান, ১১/৩/২০১৪
মমতাজ বেগমের মামলার মূল কপি দেখতে চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আজ শুনানীর সময় তিনি আদালতের কাছে এ আবেদন করলে আদালত অনুমতি দেন। একজন বেঞ্চ অফিসার এবং আসামী পক্ষের একজন আইনজীবীর উপস্থিতিতে তিনি মামলার এ ডকুমেন্ট দেখতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আদালত।

স্বামী ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিচার চেয়ে মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলার এজাহারের একটি সার্টিফাইড কপি  আসামী পক্ষ সংগ্রহ করে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় হওয়ার পর এ মামলার  যাবতীয় কাগজপত্র আপিল বিভাগে জমা আছে প্রধান বিচারপতির অধীনে। এর মধ্যে আসামী পক্ষের জমা দেয়া মমতাজ বেগমের মামলার মূল সার্টিফাইড কপিও রয়েছে। রেকর্ড রুম থেকে সেই কপিটাই দেখতে চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

এদিকে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।
ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।
এদিকে আজো শুনানীর সময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করেন ১৯৭২ সালে মামলার এ সার্টিফাইড কপি কে কিজন্য তুলেছিল এবং কেন তা সে এতদিন  ধরে সংগ্রহে রাখল এবং সে তা আসামী পক্ষকেই বা কিভাবে দিল এ বিষয়ে জেরায় আপনারা কোন প্রশ্ন করেছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ বিষয়ে বিশদ জেরা হয়েছে। আসামী পক্ষের সাফাই সাক্ষীকে এ বিষয়ে জেরা করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। তিনি জেরা থেকে পড়ে শুনিয়ে বলেন, সিতারা বেগমের (মমতাজ বেগমের মা এবং ইব্রাহীম কুট্টির শাশুড়ী) কাছে মামলার এ সার্টিফাইড কপিটি ছিল। আসামী পক্ষের ১৩ নং সাক্ষী মাসুদ সাঈদী জেরায় বলেছেন তার বড়ভাই (মরহুম রাফিক বিন সাঈদী) সিতারা বেগমের কাছ থেকে এ কপি সংগ্রহ করেছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি উপস্থাপনের শুরুতে বলেন, যদি ধরেও নেই এ ডকুমেন্ট সত্য তাহলে আমার ভিন্ন আর্গুমেন্ট আছে।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী থেকে পড়ে শুনিয়ে আদালতে বলেন, তাকে যে পাড়েরহাট হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই।

ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দাবি মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে এবং পরামর্শে ১৯৭১ সালের ৮ মে তাকে পাড়েরহাট বাজারে হত্যা করা হয়।
অপরদিকে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে মমতাজ বেগম পিরোজপুরে যে মামলা করেন তাতে মোট ১৩ জনকে আসামী করা হয়। আসামীর তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। ১৯৭২ সালে পিরোজপুর দায়ের করা মমতাজ বেগমের মামলায় বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর ইব্রাহীম কুট্টি নলবুনিয়ায় তার শশুরবাড়ি  থাকা অবস্থায় নিহত হয়। ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার সময় তার শ্যালক অর্থাৎ মমতাজ বেগমের ভাই সিহাব আলীকেও  ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। 

রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে বর্নিত ঘটনাস্থল হল পাড়েরহাট এবং ঘটনা সংঘটনের সময় হল ১৯৭১ সালেল ৮ মে। অপরদিকে মমতাজ বেগমের মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনাস্থল হল নলবুনিয়া এবং ঘটনা সংঘটনের সময় হল ১ অক্টোবর। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ  এবং মমতাজ বেগমের মামলায় বর্নিত তথ্যে মিল নেই। শুধু তাই নয়, মমতাজ বেগম সে মামলায় তার স্বামী এবং ভাই হত্যার জন্য ১৩ জনকে আসামী করেন। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পাড়েরহাট এবং তার আশপাশের এলাকায় যত হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং অত্যাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে তার প্রতিটিতে যাদের নাম বারবার ঘুরেফিরে এসেছে তাদের সকলেই মমতাজ বেগমের মামলায় আসামী। কিন্তু মমতাজ বেগমের মামলায়  ১৩ আসামীর মধ্যে  মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

মমতাজ বেগমের মামলার ১৩ আসামী হল  দানেশ মোল্লা,  আতাহার আলী, আশ্রাব আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী, কালাম চৌকিদার, রুহুল আমিন, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন, সেকোন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা।  এছাড়া পাকিস্তান আর্মিকেও আসামী করা হয় মমতাজ বেগমের মামলায়।

আজ  শুনানীতে আসামী পক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোটেক এসএম শাহজাহান, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।


সোমবার, ১০ মার্চ, ২০১৪

সাঈদীর আপিল /// মমতাজ বেগমের মামলা নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে একের পর এক প্রশ্ন আদালতের

মেহেদী হাসান, ১০/৩/২০১৪
ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগ বিষয়ে শুনানীর সময়  মমতাজ বেগমের মামলার একটি ডকুমেন্ট নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম একের পর এক প্রশ্নের মুখোমখি হন। এসব প্রশ্নের যে জবাব তিনি দিয়েছেন তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার অভিযোগের স্বপক্ষে আজ  যুক্তি পেশ করছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।

ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার বিচার চেয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় মোট ১৩ জন আসামী ছিল। আসামীর তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। মমতাজ বেগমের সেই মামলার কাগজপত্র আদালতে জমা দিয়েছে আসামী পক্ষ। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ ডকুমেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় মামলার প্রয়োজনে এ জাল ডকুমেন্ট আসামী পক্ষ তৈরি করেছে।

আজ শুনানীর সময় মমতাজ বেগমের মামলার এ ডকুমেন্ট বিষয়ে আদালতের অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হয় রাষ্ট্রপক্ষ।
সকালের বিরতির পর আগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন । একজন বিচারপতি তখন তাকে প্রশ্ন করেন, আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার ডকমেন্ট সংগ্রহ করতে পারল আর আপনারা পারলেননা কেন? ১৯৭২ সালে আদৌ এ ধরনের কোন এফআইআর হয়েছিল কি-না? পিরোজপুরে অবশ্যই জিআর রেজিস্ট্রেশন বই আছে। আপনারা এটা চাইতে পারতেননা? আপনাদের অনেক বড় মেশিনারীজ আছে। তার মাধ্যমে এগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন? আমরা যদি আসামী পক্ষের দায়ের করা এ ডকুমেন্ট গ্রহণ করি তাহলে অ্যাটলিস্ট আমরা বলতে পারি সাঈদী এ ঘটনায় জড়িত নয়।
এসময় অপর আরেক বিচারপতি বলেন, মমতাজ বেগমের সেই মামলায় মোসলেম মাওলানা, দানেশ আলী মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার সবারই নাম আছে শুধু সাঈদীর নাম নেই।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ পর্যায়ে বলেন, দোজ আর নট ট্রেসঅ্যাবল নাউ (এগুলো এখন পাওয়ার উপায় নেই)।
তখন বিচারপতি বলেন, ট্রাইব্যুনালে একথা বলতে পারতেন যে এগুলো এখন পাওয়া যায়না। তাহলেই তো শেষ হয়ে যেত। কিন্তু আপনারা শুধা জাল ডকুমেন্ট বলে সাজেশন দিয়ে ছেড়ে দিলেন? মমতাজ বেগমের এ ডকুমেন্ট বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কোন ফাইন্ডিংস আছে? এসময় আসামী পক্ষের আইনজীবী এসএম শাহজাহান দাড়িয়ে বলেন, কোন ফাইন্ডিংস নেই।
এ পর্যায়ে একজন বিচারপতি বলেন, আপনারা ম্যারাথন আর্গুমেন্ট করছেন। অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাহেব অনেক আগে এ বিষয়ে যুক্তি পেশ করেছেন। অনেক সময় পেয়েছেন আপনারা। এ দীর্ঘ সময়ে আপনারা চাইলে এ ডকুমেন্ট বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন।
আরেকজন বিচারপতি বলেন, মমতাজ বেগমের মামলায় শুধু যে সাঈদীর নাম অনুপস্থিত তা নয়। বরং সেখানে ঘটনাস্থল হিসেবে উল্লেখ আছে ইব্রাহীম কুট্টিকে নলবুনিয়ায় হত্যা করা হয় অক্টোবর  মাসে।
আরেকজন বিচারপতি বলেন, ৭২ সালে কে এবং কেন এ মামলার সার্টিফাইড কপি তুলেছিল এবং (আসামী পক্ষ ১৯৭২ সালে ইস্যু করা   মামলার সার্টিফাইড কপি জমা দিয়েছে) কেনই বা সে এতদিন এ কপি সংগ্রহ করে রাখল এ বিষয়ে জেরায় আপনারা কোন প্রশ্ন করেছিলেন?

এসব প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বারবার বলার চেষ্টা করেন
মমতাজ বেগমের মামলার এ ডকুমেন্ট ছাড়া আসামী পক্ষের সব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে ১৩ তম সাফাই সাক্ষী। তিনি বলেন, এ ডকুমেন্ট রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তিসহকারে জমা নেয়া হয়েছে। এরপর তিনি এ ডকুমেন্ট বিষয়ে আসামী পক্ষের সাক্ষীর জেরা থেকে পড়ে শোনান । তিনি রাষ্ট্রপক্ষের সাজেশন পড়ে শুনিয়ে বলেন, মামলার প্রয়োজনে এ জাল ডকুমেন্ট সৃজন করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত শুনানীর পর যুক্তি পেশ আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দাবি মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে এবং পরামর্শে ১৯৭১ সালের ৮ মে তাকে পাড়েরহাট বাজারে হত্যা করা হয়।
অপরদিকে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে মমতাজ বেগম পিরোজপুরে যে মামলা করেন তাতে বলা হয় ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর ইব্রাহীম কুট্টি নলবুনিয়ায় তার শশুরবাড়ি  থাকা অবস্থায় নিহত হয়। ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার সময় তার শ্যালক অর্থাৎ মমতাজ বেগমের ভাই সিহাব আলীকেও  ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। 

রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে বর্নিত ঘটনাস্থল হল পাড়েরহাট এবং ঘটনা সংঘটনের সময় হল ১৯৭১ সালেল ৮ মে। অপরদিকে মমতাজ বেগমের মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনাস্থল হল নলবুনিয়া এবং ঘটনা সংঘটনের সময় হল ১ অক্টোবর। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ  এবং মমতাজ বেগমের মামলায় বর্নিত তথ্যে মিল নেই। শুধু তাই নয়, মমতাজ বেগম সে মামলায় তার স্বামী এবং ভাই হত্যার জন্য ১৩ জনকে আসামী করেন। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পাড়েরহাট এবং তার আশপাশের এলাকায় যত হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং অত্যাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে তার প্রতিটিতে যাদের নাম বারবার ঘুরেফিরে এসেছে তাদের সকলেই মমতাজ বেগমের মামলায় আসামী। কিন্তু মমতাজ বেগমের মামলায়  ১৩ আসামীর মধ্যে  মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

মমতাজ বেগমের মামলার ১৩ আসামী হল  দানেশ মোল্লা,  আতাহার আলী, আশ্রাব আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী, কালাম চৌকিদার, রুহুল আমিন, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন, সেকোন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা।  এছাড়া পাকিস্তান আর্মিকেও আসামী করা হয় মমতাজ বেগমের মামলায়।

আজ  শুনানীতে আসামী পক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোটেক এসএম শাহজাহান, গিয়াসউদ্দিন মিঠু, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, মহিনুর ইসলাম, মতিয়ার রহমান প্রমুখ।


বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল// ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এর যুক্তি উপস্থাপন

মেহেদী হাসান, ৬/৩/২০১৪
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অষ্টম অভিযোগ ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা ও মানিক পসারীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ লুটপাট বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছেন গতকাল। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহন করেন।

ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  যুক্তি উপস্থাপনের শুরুতে  অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের  জবানবন্দী এবং জেরা থেকে সংশ্লিষ্ট অংশ পড়ে শোনান আদালতে। এরপর তিনি এ অভিযোগের বিরুদ্ধে আসামী পক্ষের উপস্থাপিত যুক্তির জবাব দেন।

প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের ছয় নং সাক্ষী মানিক পসারীর  জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান তিনি। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে মানিক পসারী ‘ইব্রাহিম আমাদের বাড়িতে কাজ করত। ১৯৭১ সালে ৮ মে পাক সেনাবাহিনী নিয়ে দেলোয়ার শিকদার বর্তমানে সাঈদী, সেকেন্দার শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মোসলেম মাওলানা, রেজাকার  মবিন, হাকিম কারী, সোবহান মাওলানাসহ আরো অনেকে রেজাকার আমার বাড়িতে   প্রবেশ করে। তাদের আসতে দেখে আমি বাড়ির  পাশে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকি এবং সব ঘটনা  দেখতে  থাকি। তারা আমার বাড়িতে প্রবেশ করে আমার ফুফাত ভাই মফিজ উদ্দিন (  বাড়িতে কাজ করত)  এবং অপর কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকে আর্মিরা ধরে একই দড়িতে বাঁধে। তারপর ঘরে লুটপাট করে সোনাদানা দেলু শিকদার, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা নিয়ে যায়। লুটের পর দেলোয়ার শিকদারের নেতৃত্বে  রাজাকার বাহিনী ঘরে  কেরোসিন   ছিটায়। তারপর দেলোয়ার শিকদার ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।  মফিজ ও ইব্রাহিম কুট্টিকে  বেঁধে পাড়েরহাট নিয়ে যাবার সময় আমি তাদের পেছনে পেছনে যেতে থাকি। তাকে পাড়েরহাট বাজারের মধ্যে  ব্রিজের ওপারে নিয়ে গেলে আমি  এপারে বসে তাদের লক্ষ্য করি। দেলোয়ার  হোসেন শিকদারকে আর্মির সাথে পরামর্শ করতে দেখি। তারপর দেলোয়ার হোসেন শিকদার, সেকেন্দার শিকদারের সাথে পরামর্শক্রমে পাক আর্মিরা  ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে। ইব্রাহিম চিৎকার মারে। তারপর লাশ নদীতে ফেলে দেয়।

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল সপ্তম সাক্ষী মফিজউদ্দিন পসারীর জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান। ১৯৭১ সালের ৮ মে সকালে   গরু মহিষ  নিয়ে চরে যাই। সাথে ইব্রাহিম কুট্টিও ছিল। কিন্তু  আনুমানিক ১০/১১টার দিকে  চরে বসে বসে মামার বাড়িতে  বাড়িতে আগুন  এবং  ধোয়া দেখতে পাই। তারপর মামার বাড়ির দিকে ফিরে আসি। ১২/১৪ জন পাক আর্মি, ২০/২২ জন রাজাকার মামার বাড়ি যাচ্ছে দেখতে পাই। তার মধ্যে দিলু  শিকদার ছিল। আমরা পালাতে চাইলে পাক আর্মি ধরে ফেলে। দিলু শিকদার ইব্রাহীমের চুল ধরে বলে “শুয়ারের বাচ্চা যাচ্ছো কোথায়”। রাজাকার মবিন, রাজ্জাক আরো কয়েকজন আমাদের দুজনকে এক দড়িতে  বাঁধে।  এরপর রাজাকাররা ঘরে ঢুকে  লুটপাট করে এবং কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেকেন্দা শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মবিন, রাজ্জাক দিলু শিকদারসহ আরো অনেক রাজাকার   তেল ছিটিয়ে ঘরে আগুন দিতে বলে। তারপর আমাদের দুজনকে পারেরহট বাজারে নিয়ে যায়। বাজারের  মধ্যে ব্রিজের মাঝখানে নিয়ে ইব্রাহিমকে জিজ্ঞেস করে সইজুদ্দীন পসারী, মানিক পসারী কোথায় থাকে। তুই তো সইজুদ্দীনের বডি গার্ড । তুই জানিস তারা কোথায়। না বললে তোকে গুলি করব। এরপর  পুল থেকে নামিয়ে দিলু শিকদার (তাদের ভাষায় দিলু শিকদার মানে মাওলানা সাঈদী) সেকেন্দার শিকাদর উর্দুতে কি যেন বলল। আমি উর্দু বুঝিনা এবং কি বলেছিল তা  শুনতে পাইনি। এরপর ইব্রাহিমকে  দড়ি থেকে খুলে ছেড়ে দিল এবং আমাকে নিয়ে সামনের দিকে গেল।
তারপর গুলির  শব্দ শুনতে পাই। ইব্রাহিম মা বলে চিৎকার করে।
পেছনে তাকিয়ে দেখি ইব্রাহিমকে গুলি করছে।
এ পর্যায়ে একজন বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, আপনি যা পড়ে শোনাচ্ছেন এগুলো আসামীপক্ষ ইতোমেধ্য দুইবার আমাদের পড়ে শুনিয়েছে। আপনার এগুলো পড়ার দরকার নেই। আপনি টেকনিক্যাল পয়েন্ট আউট করেন।
তখন অ্যটর্নি জেনারেল ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে সংক্ষেপে অন্যান্য সাক্ষীদের জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান।
রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদার বলেছেন, ‘ রইজুদ্দীন সইজুদ্দীন পসারীর বাড়িতে দুজন লোক থাকত মফিজ উদ্দিন এবং ইব্রাহীম কুট্টি নামে। তারা চরে গিয়েছিল গরু চড়াতে।
তারা আগুন দেখে দৌড়ে আসে। এসময় দেলোয়ার শিকদার তাদের চাইপপা ধরে এবং মফিজ উবরাইয়া পরে যায়।  পাক আর্মি ধরে ইব্রাহিম কুট্টিকে। তাদের এক দাড়িতে বেঁধে পারেরহাট বাজারে নিয়ে যায়। তারপর মফিজকে পারেরহাট রাজাকার ক্যাম্পে আর ইব্রাহিমকে নেয়া হয় থানার ঘাটের দিকে। তারপর গুলির শব্দ শুনি। থানার ঘাটের কাছে ব্রিজের গোড়ায় ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেয়।’

দশম সাক্ষী বাসুদেব বলেছেন, ‘মে মাসের ৮ তারিখে পাঞ্জাবী আর্মি, রাজাকার, শান্তি বাহিনীর লোকজন মানিক পসারীর বাড়িতে আসে। তাদের আসতে দেখে বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়।  তারা বাড়িতে ঢুকল। ইব্রাহীম কুট্টি ও মফিজ উদ্দিন  মানিক পসারীর বাড়িতে কাজ করত। ওদের ধরে বেঁধে ফেলল। দিলু শিকদার, সেকেন্দার আলী শিকদার, মোসলেম মাওলানা, দানেশ আলী মোল্লা, রুহুল আমিন, হাকমি কারী মোমিন এদের দেখেছি তখন।  এদের চিনি। ওরা ধান চাউল সব লুটপাট করে নিয়ে  গেল ভাগ করে। আর দামি মালামাল নিল দিলু শিকদার।  এরপর দিলু আর অন্য রাজাকাররা মিলে ঘরে আগুন দিল। ইব্রাহীম আর মফিজকে নিয়ে রওয়ান দিল।  বাজারের ব্রিজের ওপর উঠল। তারপর দেলোয়ার সাঈদী হেগো লগে (পাক আর্মি) কি যেন বলল। আমরা আড়ালে বসে  দেখছি। ইব্রাহীমকে বাঁধন  খুলে ব্রিজ পার হয়ে ঘাটের দিকে নিয়ে গেল। মফিজকে নিয়ে গেল ক্যাম্পের দিকে। আর ইব্রাহীমকে গুলি দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর আমরা দৌড়ে বাড়ি যাই।’

১১ তম সাক্ষী আব্দুল জলিল শেখ বলেছেন, ১৯৭১ সালের ৮ মে দেলোয়ার হোসেন দিলু,  দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, আরো কয়েকজন রাজাকার মিলে ১০/১৫   জনের  একটি দল এবং পাক সেনা মিলে আমাদের চিথলিয়া গ্রামে আসে। তাদের আসতে দেখে বাড়ির লোকজন আশপাশের জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। আমিও তাদের সাথে জঙ্গলে আশ্রয় নেই। দিলু রাজাকার, দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার  কুট্টিকে   ধরে ফেলে। তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে উঠানে ফেলে রাখে। এরপর তারা ঘরের ভেতর ঢকে। ভেতরে ঢুকে ধান চাউল যা ছিল সব কিছু লাটপাট করে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে যায়। ঘরের মধ্যে থাকা টাকা পয়সা, সোনদানা মূল্যবান জিনিসপত্র রাজাকার ও পিস কমিটির লোকজন ভাগবাটোয়রা করে পকেটে করে নিয়ে যায়। এরপর দেলোয়ার, সেকেন্দার শিকদার  এবং দানেশ মোল্লা তিনজন মিলে ঘরে রাখা কেরোসিন ভাগ ভাগ করে  ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন পরা ধইরা যাবার পর উঠানে নাইম্যা মফিজ ও কুট্টিকে লইয়া বাজারের দিকে রওয়ানা দেয়। আমরাও পেছনে পেছনে যাই। বাজারের ব্রিজ পারা হইয়া ওপারে যাইয়া কুট্টির বান ছেড়ে  । এরপর তাকে থানার ঘাটের দিকে নিয়ে গুলি করে। দেলোয়ারের ইশারায় আর্মি গুলি করে। এরপর মফিজকে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে  যায়। তারপর আমরা বাড়ি চইল্লা আসি’

১২ তম সাক্ষী একেএমএ আউয়াল বলেছেন, ‘পাড়েরহাট এলাকা হিন্দু অধ্যূসিত এলাকা হওয়ায় ও ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের সমর্থকের সংখ্যাধিক্য থাকায় ঐ এলাকায় লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। যুদ্ধকালীন সময় আমার নিজ ইউনিয়ন শংকরপাশার বাদুরা, চিথলিয়া গ্রামের  নুরুল ইসলাম, রইজ্দ্দুীন পসারী, সইজুদ্দিন পসারী, মানিক পসারীসহ  হিন্দু পাড়া  একদিনে একটানা পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা পুড়িয়ে দিয়েছিল ।  ঐ পোড়া বাড়িঘর আমি স্বাধীনতার পরে এসে দেখেছি।  দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, শুনেছি সাঈদী সাহেবও তাদের সাথে ছিলেন। ’

ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার শ্যালক মো: মোস্তফা, শ্যালিকা রানী বেগম এবং শাশুড়ী সিতারা বেগম তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী প্রদান করে তা ১৯ (২) ধারায় ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে। তারা কেউ সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে আসেনি। ১৯ (২) ধারায় গৃহীত তাদের জবানবন্দী আদালতে পড়ে শোনান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তারা তিনজনই বলেছেন তারা জানতে পেরেছেন ইব্রাহীম কুট্টিকে মানিক পসারীর বাড়ি থেকে মাওলানা সাঈদীসহ অন্যান্যরা ধরে নিয়ে পাড়েরহাট বাজারে হত্যা করে । তারা তার লাশ আনার জন্য পাড়েরহাট বাজারে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদেরকে ভয় দেখানোর পর তারা ফিরে আসেন। তারা জানতে পেরেছেন ইব্রাহীম কুট্টির লাশ দুইদিন পর পানিতে ফেলে দেয়া হয়।

শুনানীর সময় একজন বিচারপতি প্রশ্ন করেন, এ তিন সাক্ষী বলেছেন, দুই দিন পর তার লাশ পানিতে ফেলে দেয়া হয়। অপরদিকে ট্রাইব্যুনালে কয়েক সাক্ষী বলেছেন গুলি করার পর লাশ লাথি মেরে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এ বিষয়ে আপনার জবাব কি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ তিনজন সাক্ষী শোনা সাক্ষী। তারা শুনেছেন দুইদিন পর লাশ নদীতে ফেলা হয়েছে। তারা গিয়েছিল লাশ আনতে। ভয়ে চলে এসেছে। তখনকার যে পরিস্থিতি তাতে তার শাশুড়ীর পক্ষে সেখানে যাওয়া কি সম্ভব? তাছাড়া লাশ লাথি মেরে ফেলার পর তা কি তোলা যায়না আবার?
এসময় আরেকজন বিচারপতি বলেন আসামী পক্ষের অভিযোগ মানিক পসারীর অভিযোগে ইব্রাহীমের পিতার নাম দুই জায়গায় দুই রকম এসেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা হতেই পারে। হয়ত ভুল হয়ে গেছে। অতিরিক্ত একটা ডকুমেন্টে যদি তার পিতার নাম আলাদা থাকতে পারে। কিন্তু মূল বিষয় হল ইব্রাহীম নিহত হয়েছে। কিন্তু মানিক পসারীর বাড়িতে প্রবেশের সময় সাঈদীর নাম আছে।  লুটপাট আগুন দেয়অম জঙ্গলে বসে ঘটনা দেখার বিষয়ে কোন ডিনায়াল দেয়নি আসামী পক্ষ।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে আসামী পক্ষের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল তাকে নলবুনিয়ায় হত্যা করা হয়েছে।
এসময় একজন বিচারপতি বলেন, ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম যে মামলা করেছে তাতে মাওলানা সাঈদীকে আসামী করেনি। তাছাড়া ইব্রাহীমকে হত্যা বিষয়ে মমতাজ বেগমের বক্তব্যের সাথে তার বোন, মা এবং ভাইয়ের জবানবন্দীর মিল নেই।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ছয় নং সাক্ষী বিষয়ে আসামী পক্ষের অভিযোগ হল বাড়ি পোড়ানোর পর সে মামার বাড়ি ওঠে। ১৫ দিন পর নিজ বাড়িতে আসে। সে বাড়িতে ছিলনা। কাজেই বাড়ি পোড়ানো দেখল কি করে? তাছাড়া পিরোজপুর মামলায় সে মফিজের নাম বলেনি।
এ বিষয়ে আসামী পক্ষ তাকে জেরায় শুধু সাজেশন দিয়ে বলেছে সে সোনাদানা লুট এবং ইব্রাহীম ও মফিজকে একই দড়িতে বাঁধার কথা তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেনি। কিন্তু পুরো ঘটনার মধ্যে বাকী সবই রয়ে গেছে । সে বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়নি।
পুলের গোড়ায় নিয়ে ইব্রাহীমকে হত্যা, আগুন দেয়া, লুটপাট এবং তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া বিষয়ে সাজেশন দেয়া হয়নি। পুলের গোড়ায় নিয়ে দেলোয়ার শিকদার, সেকেন্দার শিকদার পাকিস্তান আর্মির সাথে কি যেন পরামর্শ করল তারপর ইব্রাহীমকে গুলি করল সাক্ষীর এ দাবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাত নং সাক্ষী মফিজ উদ্দিন পসারী বিষয়ে আসামী পক্ষের অভিযোগ পিরোজপুরের মামলায় সে বলেছেন, ইব্রাহীমকে কে মেরেছে তা সে দেখেনি। কে মেরেছে তা সে জানেনা। কাজেই ট্রাইব্যুনালে এসে সে দেখেছে মর্মে যে কথা বলেছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
কিন্তু পিরোজপুর মেজিস্ট্রেট এর কাছে সে কি বলেছে বা না বলেছে সে বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়নি। আগে বলনি এখন কেন একথা বলছ এ মর্মে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়নি।
তাহলে আসলে বিষয়টি দাড়ায় কি? দাড়ায় যেম মানিক পসারীদের বাড়িতে আসার ঘটনা, ইব্রাহীম এবং মফিজকে ধরে নিয়ে যাওয়া, আগুন দেয়া, লুটপাট করাম উর্দুতে কি যেন বলা, গুলি করা মর্মে যেসব কথা সাক্ষীরা বলেছে তার সবই রয়ে গেল।

এছাড়া পিরোজপুরে সংঘটিত ১৯৭১ সালের ঘটনা নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ এবং ভোরেরকাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন যা রাষ্ট্রপক্ষ দাখিল করেছে তা থেকে পড়ে শোনান অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন বিচার শুরুর ১০ বছর আগে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিবেদনে ঘটনার যে বিবরন রয়েছে তার সাথে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনিত অভিযোগের মিল রয়েছে। বিচার শুরুর আগেই এসব খবর ছাপা হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে আরো স্পষ্ট যে, এসব ঘটনা লোকজন জানত। এতে আরো প্রমানিত যে, ঘটনার সময় মাওলানা সাঈদী যশোরে ছিলনা। পিরোজপুরেই ছিল।
এসময় একজন বিচারপতি বলেন, জনকন্ঠের প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শর্ন মার্কের সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে হাজির করা উচিত ছিল। তাকে হাজির না করা প্রসিডিউরাল ভুল।
এছাড়া ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রানী বেগম, সিতারা বেগম এবং মো; মোস্তফার জবানবন্দী ছাড়াও ১৯ (২) ধারায় আরো যাদের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়েও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।













বুধবার, ৫ মার্চ, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল আবেদন// ৭ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করলেন এটর্নি জেনারেল

মেহেদী হাসান, ৫/৩/২০১৪
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাত নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছেন। এরপর আট নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শুরুর পর শুনানী আগামীকাল বৃহষ্পতিবার  পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাত নং অভিযোগ হল নুরুল ইসলাম খানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটাপট এবং নুরুল ইসলাম খানের ওপর নির্যাতন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাত নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনের সময় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং জেরা থেকে পড়ে শোনান। এরপর তিনি সাত নং অভিযোগ বিষয়ে আসামী পক্ষের উপস্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দেন।

প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।

শুনানীর শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাত নং অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদারের  জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান। সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার তার জবানবন্দীতে বলেছেন, ‘ পাড়েরহাটের লোকেররা লুটপাটের মালামাল, সোনাসহ ১৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি পাসতহবিল গঠন করে। নগরবাসী সাহা, তারকাচন্দ্র  সাহা, বেনীমাধব সাহা প্রানের ভয়ে ভারতে চলে গেলে তাদের ঘরের মালামাল লুটপাট করে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নেতৃত্বে নগরবাসী সাহার ও পাড়েরহাটের লুটের মালামাল নিয়ে গঠিত পাসতহবিলের মালালা নিজেই বেচাকেনা করে। এবং  আরো লুটের অর্থ এর সাথে যোগ করে বাড়াতে থাকে। এই টাকা দিয়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী খুলনা, ঢাকায় অট্টালিকা ও বহু সম্পদ গড়ে তোলে।’

এরপর তিনি রাষ্ট্রপক্ষের চার নং সাক্ষী সুলতান আহমেদ হাওলাদারের জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান্ সুতলান আহমেদ হাওলাদার বলেছেন, ‘পরে জানতে পারি এবং গিয়ে দেখি খেয়াঘাটে অবস্থিত নগরবাসী সাহার  ঘর দখল করে লুটের মালামাল  এর সাহায্যে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে যার পরিচালক  ছিলেন দেলোয়ার হোসেন  শিকদার বর্তমানে সাঈদী।........নুরু খা’র বাড়িতে দেখি দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে।

রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদার সাত নং অভিযোগ বিষয়ে বলেন, ‘এরপর ১৫/১৬ জন আর্মি  এবং ৩০/৩৫ জন রাজাকার বাহিনীর লোকেরা বাদুরা গ্রামে যায়। সেখানে নুরু খার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। নুরু খার ঘর দেখিয়ে দেয় দেলোয়ার শিকদার। দেলোয়ার শিকদার গত ১৫ বছর থেকে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী হয়েছে। আমরা খালের ওপারে বসে ধোয়া এবং আগুন দেখতে পাই নুরু খার ঘরের। আগুন আর ধোয়া দেখার পর দেখি  লুটপাট করে লোকজন রইজুদ্দীন কোম্পানীর বাড়ির দিকে যাচ্ছে। সেখানে তারা ২ টি ঘরে  লুটপাট করে আগুন দেয়। সইজুদ্দীন পসারীর বাড়িতে ৫টি ঘরে লুটপাট করে  আগুন  ধরিয়ে দেয়।’

নবম সাক্ষী আলতাফ হাওলাদার বলেছেন. পাড়েরহাট ও আশপাশের এলাকায় যেসব ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ লুটপাট ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে তা সবই সাঈদীর নেতৃত্বে হয়েছে।

১২ তম সাক্ষী একেএমএ আউয়াল বলেছেন, ‘পাড়েরহাট এলাকা হিন্দু অধ্যূসিত এলাকা হওয়ায় ও ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের সমর্থকের সংখ্যাধিক্য থাকায় ঐ এলাকায় লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। যুদ্ধকালীন সময় আমার নিজ ইউনিয়ন শংকরপাশার বাদুরা, চিথলিয়া গ্রামের  নুরুল ইসলাম, রইজ্দ্দুীন পসারী, সইজুদ্দিন পসারী, মানিক পসারীসহ  হিন্দু পাড়া  একদিনে একটানা পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা পুড়িয়ে দিয়েছিল ।  ঐ পোড়া বাড়িঘর আমি স্বাধীনতার পরে এসে দেখেছি।  দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, শুনেছি সাঈদী সাহেবও তাদের সাথে ছিলেন ।’

এ পর্যন্ত পড়ে শোনানোর পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাত নং অভিযোগের পক্ষে  ১৯ (২) ধারায় গৃহীত তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান। ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়া এসব সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্র্তার কাছে যে জবানবন্দী প্রদান করে তা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল।
সাত নং অভিযোগ বিষয়ে যে তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান এরা হল নুরুল ইসলাম খানের ছেলে সেলিম খান, আব্দুল লতিফ হাওলাদার এবং আইউব আল হাওলাদার।

এ তিন সাক্ষীসহ আরো যেসব অনুপস্থিত সাক্ষীদের জবানবন্দী ১৯(২) ধারায় ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে তাদের বিষয়ে আসামী পক্ষের অভিযোগ ছিল এদের অনেককে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ঢাকায় এনে সেফ হাউজে রাখে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু এরা রাষ্ট্রপক্ষের কথামত শেখানো সাক্ষ্য দিতে রাজী না হওয়ায় তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়নি। এছাড়া অনেকে এলাকায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করলেও তাদেরকে আসামী পক্ষের সন্ত্রাসীদের ভয়ে  নিঁেখাজ ও এলাকাছাড়া বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সাক্ষীদের ঢাকায় সেফ হাউজে এনে রাখা বিষয়ে দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে আসামী পক্ষ।

রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সেফ হাউজ বলতে কিছু নেই। আছে উইটনেস হাউজ। তখন একজন বিচারপতি বলেন, কথা একই। সেফ হাউজ আর উইটনেস হাউজ একই জিনিস।
সাত নং অভিযোগ বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের দুইজন সাক্ষীর জবানবন্দী পড়ে শুনিয়ে বলেন, তারাও ঘটনা স্বীকার করেছে। তবে তারা বলেছে মাওলানা সাঈদী ছিলেননা।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল আট নং অভিযোগ ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগ বিষয়ে যুক্তিপেশ শুরু করেন। তখন শুনানী আগামীকাল বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

মাওলানা সাঈদীর আপিল আবেদন ৭ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করলেন এটর্নি জেনারেল




মেহেদী হাসান, ৫/৩/২০১৪
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল মামলায় আজ রাষ্ট্রপক্ষে অ্যটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাত নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছেন। এরপর আট নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শুরুর পর শুনানী আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাত নং অভিযোগ হল নুরুল ইসলাম খানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটাপট এবং নুরুল ইসলাম খানের ওপর নির্যাতন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাত নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনের সময় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং জেরা থেকে পড়ে শোনান। এরপর তিনি সাত নং অভিযোগ বিষয়ে আসামী পক্ষের উপস্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দেন।

প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।









মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০১৪

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৩ ও ১৪তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ

৪/৩/২০১৪
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ ও ১৪তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ ১৩তম সাক্ষী ইঞ্জিনিয়ার মো: হাসান ও ১৪তম সাক্ষী ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকীর জবানবন্দী গ্রহণ করার পর আসামীপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাদের জেরা করেন। এরপর আগামীকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের পরবর্তী সাক্ষীর জবনবন্দী গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।

জবানবন্দীতে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি সাক্ষী মো: হাসান। অপর দিকে ১৪তম সাক্ষী ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী জেরায় বলেছেন, মীর কাসেম আলীর ব্যক্তিগত জিবন সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই।

সাক্ষ্যগ্রহণের সময় মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মিজানুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম, অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও সুলতান মাহমুদ সিমন।

১৩তম সাক্ষী ইঞ্জিনিয়ার মো: হাসানের জবানবন্দী : জবানবন্দীতে সাক্ষী মো: হাসান বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নভেম্বর মাসের শেষ দিকে একদিন সন্ধ্যা রাতে আমরা বাড়িতে বসে রেডিওতে খবর শুনছিলাম, এমন সময় বাড়িতে হুইসেলে ও লোকজনের দৌড়াদৌড়ির শব্দ শুনতে পাই। মুখে কাপড় বাধা অবস্থায় একদল লোক আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে তল্লাসী করে। আমার চাচা বশিরুল হুদা সাহেবের ঘরবাড়ি তল্লাসী করে তিনজনকে আটক করে। এরা হলেন হাবিবুর রহমান, ইলিয়াস সওদাগর ও সানাউল্লাহ চৌধুরী। তাদের আটক করে ডালিম হোটেলস্থ আল-বদর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এই ঘটনার নয় বা দশদিন পর হাবিবুর রহমান একটি রিকসাযোগে বাড়িতে ফিরে আসে। ওইদিন আমরা তাকে খুব অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পাই। হাবিবুর রহমান বাড়িতে ফিরে আসার তিন বা চারদিন পর সানাউল্লাহ চৌধুরীও ফিরে আসেন। তখন তাকেও আমি বিদ্ধস্ত অবস্থায় দেখতে পাই। তাদের কাছ থেকে জানতে পারি উভয়কেই বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলস্থ আল-বদর ক্যাম্পে নির্যাতন করা হয়েছিল। এই আমার জবানবন্দী।

জবানবন্দী শেষে আসামীপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন।

জেরা:
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে হাবিবুর রহমান কি করতেন?
উত্তর : ইলেকট্রিক সরঞ্জামের ব্যবসা করতেন।
প্রশ্ন : হাবিবুর রহমানের সাথে স্বাধীনতার পরেও কি আপনার যোগাযোগ ছিল?
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : সানাউল্লাহ চৌধুরী ও ইলিয়াস সওদাগরের সাথেও কি আপনার যোগাযোগ ছিল?
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ডালিম হোটেল কার দখলে বা নিয়ন্ত্রণে ছিল সে সম্পার্কে আপনার কোন ধারণা ছিল?
উত্তর : না, ছিল না।
প্রশ্ন : হাবিবুর রহমান বা সানাউল্লাহ চৌধুরী ডালিম হোটেলে নির্যাতিত হওয়া সম্পার্কে আপনাকে কোন তথ্য দেয়নি।
উত্তর : সত্য নয়।

১৪তম সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা: রাষ্ট্রপক্ষের ১৪তম সাক্ষী ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর আমার দুলাভাই সাইফুদ্দিন খানকে পশ্চিম মাদারবাড়িস্থ আজিজ কলোনী বাসা থেকে গভীর রাতে অন্যান্যদের সাথে আল-বদর বাহিনী ধরে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। আল-বদর কমান্ডার ছিলেন মীর কাসেম আলী। আমার বড়বোন নুরজাহান খানের কাছ থেকে আমি একথা শুনি। এ কথা শুনার পর আমি আমার মোটর সাইকেল নিয়ে ডালিম হোটেলের সামনে যাই। ওই সময় ডালিম হোটেলের সামনে থাকা নিরাপদ মনে না করে বাসায় চলে আসি। চট্টগ্রাম শহরে থাকাও নিরাপদ মনে না করায় পটিয়ার অন্তর্গত করলডাঙ্গা পাহাড়ে আমাদের গেরীলা ইউনিটের ক্যাম্পে চলে যাই। সেখানে আমি ’৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকি। ওইদিন রাতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকান্ড নিস্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর আমি চট্টগ্রাম শহরের বাসায় চলে আসি। ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর খুব ভোরে শতর্কতার সাথে আমি ডালিম হোটেলে পৌছাই। সেখানে দেখতে পাই কিছু লোক জড়ো হয়ে ডালিম হোটেলে বন্দীদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা করছে। ডালিম হোটেলের প্রত্যেকটি রুমে রুমে গিয়ে আমি দুলাভাইকে খুজেছিলাম কিন্তু দেখা পায়নি। ডালিম হোটেলে অবস্থান কালে আমি ১০০ বা ১৫০ জন বন্দীকে মুক্ত হতে দেখি। যাদের মধ্যে কদমতলী থানার জাহাঙ্গীর চৌধুরী, এমরান, হাজারী লেনের সুশিল কান্তি বর্ধন, ইস্কান্দার আলম চৌধুরী ও পটিয়ার নাসিরউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন। ১৭ ডিসেম্বরের পর আমার দুলাভাই সাইফুদ্দিন খানের সাথে দেখা হয়। তিনি চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। তার কাছ থেকেই জানতেপারি ডিসেম্বর মাসের ২ বা ৩ তারিখে তাকে ডালিম হোটেল থেকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ডালিম হোটেলে থাকা কালীন সময়ে তাকে অমানুসিক নির্যাতন করা হয়।  

জবানবন্দী শেষে আসামীপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন।

জেরা:
প্রশ্ন : রেজা আহমেদ সিদ্দিকী আপনার কি হন, তিনি কি জিবিত আছেন?
উত্তর : বড় ভাই, তিনি জিবিত আছেন।
প্রশ্ন : আপনার বড়বোন সুরজাহান খান জিবিত আছেন?
উত্তর : জিবিত আছেন।
প্রশ্ন : আপনি কবে পড়ালেখা শেষ করেন?
উত্তর : আমি ১৯৬৮ সালে বিকম পাস করি।
প্রশ্ন : ’৭১ সালে আপনি কোন ব্যাংকের কোন শাখায় কর্মরত ছিলেন?
উত্তর : ইউবিএল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায়।
প্রশ্ন : খাতুনগঞ্জ থেকে ডালিম হোটেল কোন দিকে কত দূরে?
উত্তর : পশ্চিমে, তবে কতদূরে বলতে পারব না।
প্রশ্ন : আপনার জবানবন্দীতে বর্নিত দুই দিন ছাড়া অন্যকোন দিন কি ডালিম হোটেলে গিয়েছেন?
উত্তর : দুই দিন ছাড়া অন্যকোন দিন যায়নি।
প্রশ্ন : ডালিম হোটেলের মালিকানা সম্পার্কে আপনার কোন ধারণা আছে?
উত্তর : ধারণা নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের চট্টগ্রামের রাজাকার, শান্তি কমিটি ও আল-শামস সম্পার্কে কোন ধারণা আছে কি?
উত্তর : ধারণা আছে।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের রাজাকার বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : বলতে পারব না।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির সেক্রেটারী কে ছিলেন?
উত্তর : বলতে পারব না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের চট্টগ্রামের জালাল চৌধুরী নামে কোন ব্যক্তির নাম শুনেছেন?
উত্তর : শুনিনি।
প্রশ্ন : শেখাপড়া শেষ করার পর ছাত্রইউনিয়নের সাথে আপনার আনুষ্ঠনিক কোন যোগাযোগ ছিল কি?
উত্তর : ছিল না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রকাশ্যে কোন কর্মকান্ড ছিল কি?
উত্তর : ছিল না।
প্রশ্ন : সাইফুদ্দিন খান সাহেব কি করতেন?
উত্তর : কমিউনিস্ট পার্টি করতেন এবং তিনি ব্যাংকার ছিলেন।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ডালিম হোটেলে যাওয়ার কথাটি আপনি আজ সর্বপ্রথম এই ট্রাইব্যুনালে বললেন।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : আপনি ছাত্র অবস্থায় ছাত্রইউনিয়নের কোন পদে ছিলেন?
উত্তর : চট্টগ্রাম শহরের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর মীর কাসেম আলী ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং এরপর থেকে তিনি ঢাকায় চলে আসেন।
উত্তর : মীর কাসেম আলীর ব্যক্তিগত জিবন সম্পার্কে আমার কোন ধারণা নেই। ৭ নভেম্বরের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন কি না বলতে পারব না।
প্রশ্ন : মীর কাসেম আলী আল-বদর কমান্ডার ছিলেন না।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সাইফুদ্দিন খানকে আটক করে ডালিম হোটেল নিয়ে যাওয়া হয়নি?
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি মীর কাসেম আলীকে চেনেন না।
উত্তর : সত্য নয়।