সোমবার, ১০ মার্চ, ২০১৪

সাঈদীর আপিল /// মমতাজ বেগমের মামলা নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে একের পর এক প্রশ্ন আদালতের

মেহেদী হাসান, ১০/৩/২০১৪
ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগ বিষয়ে শুনানীর সময়  মমতাজ বেগমের মামলার একটি ডকুমেন্ট নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম একের পর এক প্রশ্নের মুখোমখি হন। এসব প্রশ্নের যে জবাব তিনি দিয়েছেন তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার অভিযোগের স্বপক্ষে আজ  যুক্তি পেশ করছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।

ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার বিচার চেয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় মোট ১৩ জন আসামী ছিল। আসামীর তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। মমতাজ বেগমের সেই মামলার কাগজপত্র আদালতে জমা দিয়েছে আসামী পক্ষ। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ ডকুমেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় মামলার প্রয়োজনে এ জাল ডকুমেন্ট আসামী পক্ষ তৈরি করেছে।

আজ শুনানীর সময় মমতাজ বেগমের মামলার এ ডকুমেন্ট বিষয়ে আদালতের অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হয় রাষ্ট্রপক্ষ।
সকালের বিরতির পর আগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন । একজন বিচারপতি তখন তাকে প্রশ্ন করেন, আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার ডকমেন্ট সংগ্রহ করতে পারল আর আপনারা পারলেননা কেন? ১৯৭২ সালে আদৌ এ ধরনের কোন এফআইআর হয়েছিল কি-না? পিরোজপুরে অবশ্যই জিআর রেজিস্ট্রেশন বই আছে। আপনারা এটা চাইতে পারতেননা? আপনাদের অনেক বড় মেশিনারীজ আছে। তার মাধ্যমে এগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন? আমরা যদি আসামী পক্ষের দায়ের করা এ ডকুমেন্ট গ্রহণ করি তাহলে অ্যাটলিস্ট আমরা বলতে পারি সাঈদী এ ঘটনায় জড়িত নয়।
এসময় অপর আরেক বিচারপতি বলেন, মমতাজ বেগমের সেই মামলায় মোসলেম মাওলানা, দানেশ আলী মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার সবারই নাম আছে শুধু সাঈদীর নাম নেই।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ পর্যায়ে বলেন, দোজ আর নট ট্রেসঅ্যাবল নাউ (এগুলো এখন পাওয়ার উপায় নেই)।
তখন বিচারপতি বলেন, ট্রাইব্যুনালে একথা বলতে পারতেন যে এগুলো এখন পাওয়া যায়না। তাহলেই তো শেষ হয়ে যেত। কিন্তু আপনারা শুধা জাল ডকুমেন্ট বলে সাজেশন দিয়ে ছেড়ে দিলেন? মমতাজ বেগমের এ ডকুমেন্ট বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কোন ফাইন্ডিংস আছে? এসময় আসামী পক্ষের আইনজীবী এসএম শাহজাহান দাড়িয়ে বলেন, কোন ফাইন্ডিংস নেই।
এ পর্যায়ে একজন বিচারপতি বলেন, আপনারা ম্যারাথন আর্গুমেন্ট করছেন। অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাহেব অনেক আগে এ বিষয়ে যুক্তি পেশ করেছেন। অনেক সময় পেয়েছেন আপনারা। এ দীর্ঘ সময়ে আপনারা চাইলে এ ডকুমেন্ট বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন।
আরেকজন বিচারপতি বলেন, মমতাজ বেগমের মামলায় শুধু যে সাঈদীর নাম অনুপস্থিত তা নয়। বরং সেখানে ঘটনাস্থল হিসেবে উল্লেখ আছে ইব্রাহীম কুট্টিকে নলবুনিয়ায় হত্যা করা হয় অক্টোবর  মাসে।
আরেকজন বিচারপতি বলেন, ৭২ সালে কে এবং কেন এ মামলার সার্টিফাইড কপি তুলেছিল এবং (আসামী পক্ষ ১৯৭২ সালে ইস্যু করা   মামলার সার্টিফাইড কপি জমা দিয়েছে) কেনই বা সে এতদিন এ কপি সংগ্রহ করে রাখল এ বিষয়ে জেরায় আপনারা কোন প্রশ্ন করেছিলেন?

এসব প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বারবার বলার চেষ্টা করেন
মমতাজ বেগমের মামলার এ ডকুমেন্ট ছাড়া আসামী পক্ষের সব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে ১৩ তম সাফাই সাক্ষী। তিনি বলেন, এ ডকুমেন্ট রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তিসহকারে জমা নেয়া হয়েছে। এরপর তিনি এ ডকুমেন্ট বিষয়ে আসামী পক্ষের সাক্ষীর জেরা থেকে পড়ে শোনান । তিনি রাষ্ট্রপক্ষের সাজেশন পড়ে শুনিয়ে বলেন, মামলার প্রয়োজনে এ জাল ডকুমেন্ট সৃজন করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত শুনানীর পর যুক্তি পেশ আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দাবি মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে এবং পরামর্শে ১৯৭১ সালের ৮ মে তাকে পাড়েরহাট বাজারে হত্যা করা হয়।
অপরদিকে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে মমতাজ বেগম পিরোজপুরে যে মামলা করেন তাতে বলা হয় ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর ইব্রাহীম কুট্টি নলবুনিয়ায় তার শশুরবাড়ি  থাকা অবস্থায় নিহত হয়। ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার সময় তার শ্যালক অর্থাৎ মমতাজ বেগমের ভাই সিহাব আলীকেও  ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। 

রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে বর্নিত ঘটনাস্থল হল পাড়েরহাট এবং ঘটনা সংঘটনের সময় হল ১৯৭১ সালেল ৮ মে। অপরদিকে মমতাজ বেগমের মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনাস্থল হল নলবুনিয়া এবং ঘটনা সংঘটনের সময় হল ১ অক্টোবর। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ  এবং মমতাজ বেগমের মামলায় বর্নিত তথ্যে মিল নেই। শুধু তাই নয়, মমতাজ বেগম সে মামলায় তার স্বামী এবং ভাই হত্যার জন্য ১৩ জনকে আসামী করেন। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পাড়েরহাট এবং তার আশপাশের এলাকায় যত হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং অত্যাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে তার প্রতিটিতে যাদের নাম বারবার ঘুরেফিরে এসেছে তাদের সকলেই মমতাজ বেগমের মামলায় আসামী। কিন্তু মমতাজ বেগমের মামলায়  ১৩ আসামীর মধ্যে  মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

মমতাজ বেগমের মামলার ১৩ আসামী হল  দানেশ মোল্লা,  আতাহার আলী, আশ্রাব আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী, কালাম চৌকিদার, রুহুল আমিন, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন, সেকোন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা।  এছাড়া পাকিস্তান আর্মিকেও আসামী করা হয় মমতাজ বেগমের মামলায়।

আজ  শুনানীতে আসামী পক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোটেক এসএম শাহজাহান, গিয়াসউদ্দিন মিঠু, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, মহিনুর ইসলাম, মতিয়ার রহমান প্রমুখ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন