মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর আপিল /// মমতাজ বেগমের মামলার মূল কপি দেখতে চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল

মেহেদী হাসান, ১১/৩/২০১৪
মমতাজ বেগমের মামলার মূল কপি দেখতে চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আজ শুনানীর সময় তিনি আদালতের কাছে এ আবেদন করলে আদালত অনুমতি দেন। একজন বেঞ্চ অফিসার এবং আসামী পক্ষের একজন আইনজীবীর উপস্থিতিতে তিনি মামলার এ ডকুমেন্ট দেখতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আদালত।

স্বামী ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিচার চেয়ে মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলার এজাহারের একটি সার্টিফাইড কপি  আসামী পক্ষ সংগ্রহ করে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় হওয়ার পর এ মামলার  যাবতীয় কাগজপত্র আপিল বিভাগে জমা আছে প্রধান বিচারপতির অধীনে। এর মধ্যে আসামী পক্ষের জমা দেয়া মমতাজ বেগমের মামলার মূল সার্টিফাইড কপিও রয়েছে। রেকর্ড রুম থেকে সেই কপিটাই দেখতে চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

এদিকে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।
ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।
এদিকে আজো শুনানীর সময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করেন ১৯৭২ সালে মামলার এ সার্টিফাইড কপি কে কিজন্য তুলেছিল এবং কেন তা সে এতদিন  ধরে সংগ্রহে রাখল এবং সে তা আসামী পক্ষকেই বা কিভাবে দিল এ বিষয়ে জেরায় আপনারা কোন প্রশ্ন করেছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ বিষয়ে বিশদ জেরা হয়েছে। আসামী পক্ষের সাফাই সাক্ষীকে এ বিষয়ে জেরা করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। তিনি জেরা থেকে পড়ে শুনিয়ে বলেন, সিতারা বেগমের (মমতাজ বেগমের মা এবং ইব্রাহীম কুট্টির শাশুড়ী) কাছে মামলার এ সার্টিফাইড কপিটি ছিল। আসামী পক্ষের ১৩ নং সাক্ষী মাসুদ সাঈদী জেরায় বলেছেন তার বড়ভাই (মরহুম রাফিক বিন সাঈদী) সিতারা বেগমের কাছ থেকে এ কপি সংগ্রহ করেছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি উপস্থাপনের শুরুতে বলেন, যদি ধরেও নেই এ ডকুমেন্ট সত্য তাহলে আমার ভিন্ন আর্গুমেন্ট আছে।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী থেকে পড়ে শুনিয়ে আদালতে বলেন, তাকে যে পাড়েরহাট হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই।

ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দাবি মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে এবং পরামর্শে ১৯৭১ সালের ৮ মে তাকে পাড়েরহাট বাজারে হত্যা করা হয়।
অপরদিকে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে মমতাজ বেগম পিরোজপুরে যে মামলা করেন তাতে মোট ১৩ জনকে আসামী করা হয়। আসামীর তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। ১৯৭২ সালে পিরোজপুর দায়ের করা মমতাজ বেগমের মামলায় বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর ইব্রাহীম কুট্টি নলবুনিয়ায় তার শশুরবাড়ি  থাকা অবস্থায় নিহত হয়। ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার সময় তার শ্যালক অর্থাৎ মমতাজ বেগমের ভাই সিহাব আলীকেও  ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। 

রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে বর্নিত ঘটনাস্থল হল পাড়েরহাট এবং ঘটনা সংঘটনের সময় হল ১৯৭১ সালেল ৮ মে। অপরদিকে মমতাজ বেগমের মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনাস্থল হল নলবুনিয়া এবং ঘটনা সংঘটনের সময় হল ১ অক্টোবর। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ  এবং মমতাজ বেগমের মামলায় বর্নিত তথ্যে মিল নেই। শুধু তাই নয়, মমতাজ বেগম সে মামলায় তার স্বামী এবং ভাই হত্যার জন্য ১৩ জনকে আসামী করেন। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পাড়েরহাট এবং তার আশপাশের এলাকায় যত হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং অত্যাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে তার প্রতিটিতে যাদের নাম বারবার ঘুরেফিরে এসেছে তাদের সকলেই মমতাজ বেগমের মামলায় আসামী। কিন্তু মমতাজ বেগমের মামলায়  ১৩ আসামীর মধ্যে  মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

মমতাজ বেগমের মামলার ১৩ আসামী হল  দানেশ মোল্লা,  আতাহার আলী, আশ্রাব আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী, কালাম চৌকিদার, রুহুল আমিন, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন, সেকোন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা।  এছাড়া পাকিস্তান আর্মিকেও আসামী করা হয় মমতাজ বেগমের মামলায়।

আজ  শুনানীতে আসামী পক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোটেক এসএম শাহজাহান, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।


1 টি মন্তব্য: