বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ// রোববার আর্গুমেন্ট

৩১/১০/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মামলায় আসামী পক্ষের সাফাই সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে এ মামলায় উভয় পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হল। আগামী রোববার মামলার শেষ ধাপে আর্গুমেন্ট তথা যুক্তি উপস্থাপন শুরু হবে। প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।

মাওলানা নিজামীর পক্ষে চতুর্থ সাক্ষী নাজিবুর রহমান ওরফে নাজিব মোমেন এর জেরা শেষ হয় আজ। গত বুধবার এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ধার্য্য ছিল। তবে রাষ্ট্রপক্ষ সাফাই সাক্ষীর জেরা শেষ করতে না পারায় আগামী রোববার থেকে যুক্তি উপস্থাপন ধার্য্য করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিচার চলছে ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে।

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ২৬ জন সাক্ষী হাজির করে। অপর দিকে মাওলানা নিজামীর পক্ষে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নির্ধারিত চারজন সাক্ষী হাজির করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো: শামসুল আলম এবং মুক্তিযোদ্ধা  কে এম হামিদুর রহমান ।
অপরদিকে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেযোগ্য হলেন পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হাবিবুর রহমান এবং  ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিষয়ে আসামী পক্ষের শুনানী আগামী পাঁচ নভেম্বর পুনরায় নির্ধারন করা হয়েছে। আজ  আসামী পক্ষের শুনানীর জন্য ধার্য্য ছিল। তবে আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান কবির প্রস্তুতির জন্য সময় প্রার্থনা করায় ট্রাইব্যুনাল পুনরায় তারিখ ধার্য্য করেন।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৩

মাওলানা নিজামী মামলা : ইউটিউবের বক্তব্য সাক্ষী শামসুল হক নান্নুর তা ৯৯ ভাগ সত্য-দাবি আসামী পক্ষের


মেহেদী হাসান, ৩০/১০/২০১৩
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ১১ তম সাক্ষী অ্যাডভোকেট মো : শামসুল হক ওরফে নান্নুর নামে ইউটিউবে যে বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে তা তারই বলে দাবি করেছে আসামী পক্ষ। ইউটিউবের বক্তব্য যে ১১ তম সাক্ষী শামসুল হক ওরফে নান্নুর সে বিষয়ে ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ সত্য মর্মে পরীক্ষায় প্রমানিত হয়েছে বলে দাবি আসামী পক্ষের। 

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, শামসুল হক নান্নুর নামে ইউটিউবে যে বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে তা  আমরা সংগ্রহ করেছি। এরপর বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত তার বক্তব্যও সংগ্রহ করেছি। তার সব বক্তব্য আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কণ্ঠস্বর পরীক্ষা এবং ফরেনসিক তদন্তের জন্য বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ভেরিফিকেশন সার্ভিস (আইভিএস) এর  কাছে পাঠাই পরীক্ষার জন্য। আইভিএস এর  পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা গেছে ইউটিউবে প্রচারিত বক্তব্য সাক্ষী শামসুল হক ওরফে নান্নুর এবং এটি ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ সত্য মর্মে নিশ্চিত হয়েছে তারা। অপরদিকে  এ বক্তব্য তার নয় বলে সাক্ষী সংবাদ সম্মেলন করে যে দাবি করেছেন তাও ৯৮ ভাগ মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হয়েছে তাদের প্রতিবেদনে।

তাজুল ইসলাম আজ ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আইভিএস থেকে ফরেনসিক রিপোর্ট পাবার পর ট্রাইব্যুনালে দুটি আবেদন করি। একটি হল সাক্ষী শামসুল হক ওরফে নান্নুকে ট্রাইব্যুনালে ডেকে এনে জেরার করার জন্য পুনরায় আবেদন এবং তার কণ্ঠস্বর পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রস্ততকারী আইভিএস এর বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন (অব) জন পি স্লেটারকে আসামী পক্ষে সাক্ষী হিসেবে আনার জন্য সমন ইস্যু করা। তবে আবেদন দুটি আজ ( বুধবার) ট্রাইব্যুনাল শুনানী ছাড়া চেম্বারে বসে খারিজ করে দিয়েছেন।

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে  ২০ জুন  বৃহষ্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ১১ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন পাবনার অ্যাডভোকেট মোঃ শামছুল হক ওরফে নান্নু । আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ  মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তিনি তার জবানবন্দীতে অনেকগুলো গুরুতর অভিযোগ করেন। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য মাওলানা নিজামীসহ অন্যান্যরা মিলে স্বাধীনতা বিরোধী সেল গঠন, সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প উদ্বোধন, রুপসী প্রাইমারি স্কুলে শান্তিকমিটি গঠনের নির্দেশ এবং আলবদর বাহিনী গঠনের নেতৃত্ব দান।  এছাড়া মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষনের নেতৃত্ব দানের বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেন সাক্ষী। পাবনা এলাকায় সংঘটিত এসব অপরাধের নেতৃত্ব দানের সময় সাক্ষী মাওলানা নিজামীকে দেখেছেন বলে সাক্ষ্য দেন। তিনি বলেন,  ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল পাকিস্তানী বাহিনী গানবোট নিয়ে নগরবাড়ি ঘাটের দিকে অগ্রসর হয়।  মাওলানা নিজামী এবং তার দলবল তাদের সাথে থেকে তাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে। সেদিনের যুদ্ধে প্রায় দেড়শ লোক শহীদ হয়। ১১ এপ্রিল মাওলনা নিজামী পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নিয়ে পাবনা শহরে প্রবেশ করে এবং রাস্তার দুপাশের  ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, দোকানপাট লুটপাট করে। ১৯ এপ্রিল একইভাবে মাওলানা নিজামীর সহায়তায় ডাববাগান আক্রমন পরিচালনা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ১৪ই মে, ১৯৭১ ফজরের আযানের পর সশস্ত্র পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মতিউর রহমান নিজামী, রফিকুন নবী, কুখ্যাত দালাল আসাদ এবং তার দলবল রূপসী, বাউশগাড়ী এবং ডেমরা গ্রাম ঘিরে ফেলে এবং ব্যাপক গোলাগুলি চালিয়ে নিরস্ত্র নীরিহ এবং নির্দোষ মানুষদেরকে হত্যা করে। এতে ৪৫০ জনের অধিক শহীদ হন ।  এভাবে আরো বেশ: কিছু ঘটনা উল্লেখ করে সাক্ষী বলেন, মাওলানা নিজামীর দেখানো মতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনেককে হত্যা করে। এসব  অনেক  অপরাধ সংঘটনের সময় মাওলানা নিজামীকে তিনি দেখার কথা বলেছেন।
ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার পূর্বে সাক্ষী মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী দেন এবং সে জবানবন্দীতেও মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে প্রায় একই ধরনের বক্তব্য লিখিত আছে তার নামে।


অ্যাডভোকেট শামসুল হক ওরফে নান্নুর এ সাক্ষ্য গ্রহনের পর  আসামী পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়  সাক্ষী অ্যাডভোকেট শামসুল হক ওরফে নান্নুর একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে ইউটিউবে। সেটি তারা সংগ্রহ করেছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর ইউটিউবে তার সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার আগে গত বছর জুলাই মাসের দিকে তিনি এ সাক্ষাৎকার ধারন করা হয়েছে।  ধারনকৃত এ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধচলাকালে  মাওলানা নিজামীকে তিনি কোনদিন পাবনায় দেখেননি। মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কোন জবানবন্দীও দেননি। ১৯৮৬ সালের আগে তিনি মাওলানা নিজামীকে চিনতেনও না। মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে তার নামে তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দীতে যদি কিছু লেখা থাকে তাহলে তা মিথ্যা।

ইউটিউিবে এ ভিডিও প্রচারিত হবার পর গত ২১ সেপ্টেম্বর সাক্ষী অ্যাডভোকেট শামসুল হক ওরফে নান্নু প্রসিকিউশন কার্যালয়ে সংবাদ  সম্মেলন করে বলেন, ইউটিউবের সাক্ষাতকারে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে সে ব্যক্তি তিনি নন। তিনি এ ধরনের কোন সাক্ষাৎকার কাউকে দেননি।

এ প্রসঙ্গে আসামী পক্ষ তাকে তলব করে পুনরায় জেরার আবেদন জানায়। আসামী পক্ষ দাবি করে ইউটিউবের যে রেকর্ড তারা সংগ্রহ করেছে তা সাক্ষী শামসুল হক ওরফে নান্নুরই। ইউটিউবে তার প্রদত্ত বক্তব্যই সত্য এবং তিনি ট্রাইব্যুনালে এসে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা  মিথ্যা। তিনি চাপের মুখে বাধ্য হয়ে এ মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালে এসে।  গত ৮অক্টোবর শুনানী শেষে আবেদনটি খারিজ করে দেয় ট্রাইব্যুনাল।

এরপর  আসামী পক্ষ তাদের সংগৃহীত বিভিন্ন ভিডিও কিপ পরীক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইভিএস বররাবর পাঠায় এবং সে রিপোর্ট সম্প্রতি তাদের হাতে আসার পর সাক্ষীকে পুনরায় ডেকে আনার যে আবেদন ৮ অক্টেবার  খারিজ করে দিয়েছে আদালত তা পুনরায় বিবেচনার জন্য আবেদন করে তারা। এছাড়া কণ্ঠস্বর পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রস্ততকারী জন পি স্লেটারকেও আসামী পক্ষের সাক্ষী হিসেবে তলবের জন্য আবেদন করে। দুটি আবেদনই আজ খারিজ করে দেয়া হয়েছে।

তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কন্ঠস্বর পরীক্ষা এবং এ জাতীয় তদন্তের জন্য আইভিএস নামকরা প্রতিষ্ঠান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দক্ষ লোকজন এখানে কাজ করে। আমরা আমাদের দরখাস্তের সাথে আইভিএস এর প্রতিবেদন এবং ইউটিউবের বক্তব্য, বিভিন্ন টিভিতে প্রচারিত সাক্ষীর বক্তব্য সিডি এবং ট্রান্সিক্রিপ্ট আকারে জমা দিয়েছিলাম।



মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৩

মাওলানা নিজামী মামলায় কাল থেকে যুক্তি উপস্থাপন শুরু

২৯/১০/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মামলায় কাল থেকে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ যুক্তি উপস্থাপনের এ দিন ধার্য্য করেন। প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করবে।

যুক্তি উপস্থাপন মামলার শেষ ধাপে হয় এবং যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে মামলার সমস্ত বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। যুক্তি উপস্থাপন শেষে  রায় ঘোষনার তারিখ নির্ধারন করা হয় ।

তবে কাল থেকে যুক্তি উপস্থান শুরু হলেও মাওলানা নিজামীর পক্ষে  চতুর্থ সাক্ষী তার ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান ওরফে নাজিব মোমেন তার অসমাপ্ত সাক্ষ্য প্রদানের সুযোগ পাবেন। প্রথমে সকালে তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিকালের সেশনে যুক্তি উপস্থাপন শুরুর জন্য ধার্য্য করেন আদালত।

গত বৃহষ্পতিবার  চতুর্থ সাক্ষী নাজিবুর রহমান ওরফে নাজিব মোমেন এর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় । কিন্তু রোববার থেকে হরতাল শুরু হওয়ায় আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী এবং সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকেন। গত রোববার আসামী  পক্ষে জুনিয়র আইনজীবী আসাদ উদ্দিন সময় প্রার্থনা করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুলতিব প্রার্থনা করেন। আদালত সোমবার পর্যন্ত মুলতিব করেন। সোমবারও একই প্রেক্ষাপটে আসাদ উদ্দিন সময় প্রার্থনা করেন আদালতের কাছে। তখন আদালত ঐদিনের মত আবেদন গ্রহণ করে আদেশে বলেন মঙ্গলবার সাক্ষী আনা না হলে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হবে।
আদেশ অনুযায়ী আজও আসামী পক্ষের সাক্ষী এবং সিনিয়র আইনজীবী উপস্থিত না হওয়ায় যুক্তি উপস্থাপনের তারিখ ধার্য্য করেন আদালত। তবে আসামী পক্ষকে সাক্ষ্য প্রদান শেষ করারও সুযোগ রাখেন আদালত। সকালের সেশনে আসামী পক্ষে সর্বশেষ এবং চতুর্থ সাক্ষী তার জবানবন্দী প্রদান শেষ করতে পারবেন বলে আদেশে  উল্লেখ করেন আদালত।

আজ সকালে আসামী পক্ষে জুনিয়র আইনজীবী আসাদ উদ্দিন মুলতবি আবেদনের দরখাস্ত দিয়ে বলেন আগের দুইদিন যে প্রেক্ষাপটে তারা দরখাস্ত করেছেন এবং আদালত তা গ্রহণ করেছেন সেই একই প্রেক্ষাপট এখনো বিরাজ করছে। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে আর একদিনের জন্য হলেও মুলতবি আবেদন করেন তিনি। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচার শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত যত হরতাল হয়েছে তার কোনটিতেই নিরাপত্তার কারনে আসামী পক্ষের কোন সিনিয়র আইনজীবী কোর্টে আসেননি এবং তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষীও হাজির করেনি। সে ধারা মোতাবেক আজো তারা অনুপস্থিত এবং তাদের পরামর্শ মোতাবেক তিনি মুলতবি আবেদন পেশ করেছেন কোর্টে।

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ২৬ জন সাক্ষী হাজির করে। এর মধ্যে একজন সাক্ষী কোর্টে সাক্ষ্য দেয়ার সময় তাকে রাষ্ট্রপক্ষ বৈরি সাক্ষী ঘোষনা করে।
অপর দিকে মাওলানা নিজামীর পক্ষে আদালতের বেঁধে দেয়া সংখ্যা অনুযায়ী চারজন সাক্ষী  হাজির করা হয়।
১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যাসহ মানবতাবিরোধী মোট ১৬ টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয় মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে । তবে একটি অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ কোন সাক্ষী হাজির করেনি।



সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৩

কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে রাখা হয় এটিএম আজহারুল ইসলামকে


২৮/১০/২০১৩
আজ  মামলার কার্যক্রম শুরু হলে এটিএম আজহারুল ইসলামকে আসামির কাঠগড়ায় আনা হয়। ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আসামীর কাঠগড়ায় বসার জন্য চেয়ার রাখা হলেও আজ  কোন চেয়ার ছিলনা। চেয়ার না থাকায় এটিএম আজহারুল ইসলাম কাটগড়ায় দাড়িয়ে থাকেন। বিষয়টি আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালের নজরে অনলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, বিষয়টি উনাকেই জিজ্ঞাসা করেন। এরপর আইনজীবীরা এটিএম আজহারের সাথে কথা বলেন কাঠগড়ার সামনে গিয়ে।  এটিএম আজহার বলেন, চেয়ার সরিয়ে নেয়ার বিষয় তিনি কিছু জানেননা।  এরপর আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালকে বলেন, উনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। তখন  ট্রাইব্যুনাল বলেন, চেয়ার সরিয়ে নেয়ার কারণ ১২ নভেম্বর জানানো হবে।


এটিএম আজহারের অভিযোগ গঠনের আদেশ ১২ নভেম্বর: জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত  সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ আগামী ১২ নভেম্বর পুননির্ধারণ করা হয়েছে। আজ  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।

গত ১০ অক্টোবর রাষ্ট্র ও আসামিপরে শুনানি শেষে অভিযোগে গঠনের বিষয়ে ২৮ অক্টেবার সোমবার আদেশের দিন ধার্য করা হয়। আজ আসামির পরে আইনজীবীরা  ট্রাইব্যুনালে হাজির না থাকায় আদেশের জন্য নতুন দিন ধার্য করার আবেদন করেন আইনজীবী সৈয়দ মো. রায়হান উদ্দিন। এরপর ট্রাইব্যুনাল আদেশ দেন।


নিজামী :
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে শেষ সাীর সাক্ষ্য গ্রহণ আগামীকাল পুননির্ধরণ করা হয়েছে। হরতাল পরিস্থিতিতে মাওলানা নিজামীর পক্ষে সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।  

এছাড়া ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপকে মামলার চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেন, প্রস্তুতি নেন, কাল (মঙ্গলবার) আসামিপে সিনিয়র আইনজীবী ও সাী না এলে পরদিন (বুধবার) থেকে এ মামলায় যুক্তি উপস্থাপন করবেন। আজ মাওলানা নিজামীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলেও কাঠগড়ায় তোলা হয়নি।

মাওলানা নিজামীর পক্ষে ট্রাইব্যুনালে সময় আবেদনের শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. আসাদ উদ্দিন। রাষ্ট্রপে ছিলেন প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলা ৭ নভেম্বর পর্যন্ত মূলতবি

দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান (এমসি) জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে  মামলা আগামী ৭ নভেম্বর পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে। ওই দিন মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ পুনরায় বিবেচনা বিষয়ক  (রিভিউ) আবেদনের উপর শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করা হয়েছে।  আজ  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ দেন।

সকালে ট্রাইব্যুনাল-২ এর কার্যক্রম শুরু হলে মীর কাসেম আলীর পক্ষে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম  অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে দায়ের করা রিভিউ আবেদন উপস্থাপন করে বলেন, ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক রিভিউ আবেদনের উপর শুনানি করবেন। এজন্য আমরা চার সপ্তাহ সময় চাচ্ছি। জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা চাই রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হোক, তবে তা আইন অনুযায়ী হতে হবে। আইন অনুযায়ী আপনারা সময় পাবেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল আগামী ৭ নভেম্বর পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মূলতবি করেন।

ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনাল-১ এ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের পর ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলাটি  স্থানান্তর করা হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর।  চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে আমরা রিভিউ আবেদন করি। কিন্তু আবেদন শুনানীর আগেই  মামলাটি দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। তাই আমরা দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে আবার চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেছি।

ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম বলেন, অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন ছাড়া  আরো দুটি আবেদন দায়ের করা হয়েছে। ৭ নভেম্বর এসব আবেদনের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে এ মামলার প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ বলেন, আগামী ৭ নভেম্বর  মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে। রিভিউ আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, রিভিউ আবেদনের উপর শুনানির জন্য আইনগত দিকগুলো দেখাতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। 

মীর কাসেম আলীর মামলা ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে  ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করার পর গত ৬ অক্টোবর মামলাটি দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের  কার্যতালিকায় আসে। তবে অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মামলাটি মূলতবি করা হয়।
গত ৫ সেপ্টেম্বর মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ১৪টি ঘটনায় অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল-১।

বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর পক্ষে ছেলের সাক্ষ্য/// আমার পিতা জামায়াতের আমির না হলে কোন অভিযোগ আনা হতনা

মেহেদী হাসান, ২৪/১০/২০১৩
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে তার  ছেলে ব্যারিস্টার মো : নাজিবুর রহমান ওরফে নাজিব মোমেন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, আমার পিতা যদি জামায়াতে ইসলামীর আমির না হতেন তাহলে তার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ৪২ বছর পর মানবতাবিরোধী কোন অভিযোগ আনা হতনা। 
তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালে জামায়াতের পক্ষ থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগ পর্যন্ত কেউ আমার পিতার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও করেনি, কোন মামলাও হয়নি কোথাও।

ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে একজন তদ্বিরকারক হিসেবে যুক্ত আছেন মামলার শুরু থেকে। সে হিসেবে তিনি তার পিতার পক্ষে চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য প্রদান শুরু করেছেন আজ থেকে।

জবানবন্দী প্রদানের সময় নাজিব মোমেন দলিল দস্তাবেজ উপস্থাপন করে বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড সংক্রান্তে ৪২টির বেশি মামলা দায়ের হয়েছিল। এমনকি ১৯৯৭ সালেও বুদ্ধিজীবী হত্যা সংক্রান্তে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ বিষয়ে  এতগুলো মামলা দায়ের হলেও আমার পিতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী করা হয়নি ।  ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধ বিষয়ে সাধারন ফৌজদারি আইনে মামলা ছাড়াও শুধুমাত্র দালাল আইনেই লক্ষাধিক মামলা হয়েছিল স্বাধীনতার পর। এছাড়া সরকারি প্রতিবেদনে এবং  বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে অপরাধীদের নাম প্রকাশিত হতে থাকে। কিন্তু কোথাও আমার পিতার বিরুদ্ধে একটি মামলও দায়ের হয়নি, একটি অভিযোগও করেনি কেউ ১৯৭১ সাল বিষয়ে। তাই আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই আমার পিতা রাজনৈতিক প্রতিহিংশার শীকার।  তার বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মামলা সাজানো হয়েছে।

জবানবন্দী :
সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ নাজিবুর রহমান ওরফে নাজিব মোমেন। আমার বয়স ৩২ বৎসর।
আমি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের ছেলে। আমি তার পক্ষে তদ্বিরকারক হিসাবে এই মামলার শুরু থেকে যুক্ত আছি। আমি এই মামলার অনুসন্ধান করতে গিয়ে এবং এই মামলার অভিযোগ সমূহ পর্যালোচনা করতে গিয়ে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের উপর প্রকাশিত বই পুস্তক, সরকারী বেসরকারী দলিল দস্তাবেজ, ১৯৭১ সালে প্রকাশিত পত্র পত্রিকা এবং স্বাধীনতার পর পরই প্রকাশিত পত্র পত্রিকা পর্যালোচনা করি। ১৯৭১ সালে প্রকৃত পক্ষে কি ঘটেছিল, কারা ঐ সময় সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল সেই সত্য অনুসন্ধানের জন্য দেশ বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, সাংবাদিকসহ সেই সময়ে প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি বর্গের   সাথে  সাক্ষাৎ করি। অত্র মামলায় যে সমস্ত অভিযোগ আনা হয়েছে সেই সমস্ত স্থানসমূহ পরিদর্শন করি এবং সেই সমস্ত স্থানের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিবর্গের পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করি। আমি এবং আমার সহকর্মীরা দেশে বিদেশে ১৯৭১ সালের ঘটনাকেন্দ্রীক বিভিন্ন নথিপত্র ও বই পুস্তক সংগ্রহ করার চেষ্টা করি। আমার গত সাড়ে তিন বছরের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে আমি দ্যর্থহীন ভাবে বলতে পারি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে আনীত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ সমূহ সবৈর্ব মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এর বড় প্রমান হলো ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে ১৯৮৬ সালে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নমিনি হিসাবে অংশগ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোথাও কোন অভিযোগ আনা হয় নি। আসামী পক্ষে দাখিলকৃত দলিলসমূহ যা আমি মাননীয় ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করব এবং সরকার পক্ষের প্রদর্শিত দলিলপত্র সমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিবরণ স্বাধীনতার পরবর্তীতে প্রকাশিত সংবাদপত্রে দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হতে থাকে। এ সমস্ত জঘন্যতম অপরাধের সাথে যারা যুক্ত ছিল কিংবা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর উঠেছিল তাদের নামও ঐ সময় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। যারা আলবদর নামে পরিচিত ছিল তাদের নাম পত্র পত্রিকায় সেই সময় এসেছিল এমনকি তাদের ছবিও সেই সময়কার বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। অনেককে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পত্রিকায় গণ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের প্রেক্ষিতে সেই সময় অসংখ্য মামলা হয়েছিল। শুধুমাত্র দালাল আইনেই লক্ষাধিক মামলা হয়েছিল। সাধারণ ফৌজদারি আইনেও অনেক মামলা হয়েছিল। এসকল মামলায় বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের সাথে পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী রাজনীতিবিদদেরকেও আসামী করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তাদের নামও সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ১৯৮১ সালে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের হয় নাই এমনকি কোন পত্র পত্রিকায় ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে অপরাধের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে কোন অভিযোগ আসে নাই। আমার প্রদর্শিতব্য দলিলে দেখা যাবে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পরবর্তী সময়ে সরকার পাকিস্তান আর্মির সহযোগিদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিল। এই তালিকা প্রণয়নের জন্য প্রতিটি থানায় সিও (ডেভ) কে আহ্বায়ক করে এবং সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে সদস্যসচিব করে কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তিকমিটির সদস্যদের তালিকা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রেরণ করেন। জেলা পুলিশ সুপার উক্ত তালিকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করেছিলেন। আমি অনুসন্ধানকালে দেখতে পেয়েছি আমার পিতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নাম উক্ত তালিকায় নাই। আমার প্রদর্শিতব্য দলিল পত্রাদিতে আরো দেখা যাবে ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যা সংক্রান্তে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং সরকার পক্ষের প্রদর্শিত দলিলে দেখা যায় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড সংক্রান্তে ৪২টির বেশি মামলা দায়ের হয়েছিল। এমনকি ১৯৯৭ সালেও বুদ্ধিজীবী হত্যা সংক্রান্তে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ সংক্রান্তে এতগুলো মামলা দায়ের হলেও আমার পিতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী করা হয় নাই। এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে, আমার পিতা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তার বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মামলা সাজানো হয়েছে। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড সংক্রান্তে কোন অভিযোগ আনতে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও জনৈকি ব্যক্তির নির্দেশনায় প্রসিকিউশন সেই অভিযোগ এনেছে (প্রসিকিউশনের আপত্তি সহকারে)। এমনটি তদন্ত সমাপ্ত হওয়ার পর ফরমাল চার্জ দাখিলের পরে অন্যায়ভাবে উক্ত অভিযোগটি প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ফরমায়েশে সাক্ষী বানানো হয়েছে।

সাক্ষী বলেন, প্রসিকিউশনের প্রদর্শিত ডকুমেন্টে দেখা যায় ১৯৭০/১৯৭১ সালে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব কোন অখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন না। তার বক্তব্য বিবৃতি পত্র পত্রিকায় সেই সময় নিয়মিত প্রকাশিত হতো। সরকারী গোয়েন্দা রিপোর্টে তার কর্মকান্ডের বিষয়ে বর্ণনা থাকতো। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ষাটের দশকের শেষের দিকে লেখাপড়া এবং ছাত্র রাজনীতি করেছেন। তার সমসাময়িক ছাত্র নেতারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত। জনাব তোফায়েল আহমেদ, জনাব আব্দুর রাজ্জাক, জনাব রাশেদ খান মেনন তার সমসাময়িক রাজনীতিবিদ এবং তারা একই সাথে ষাটের দশক থেকে অদ্যাবধি রাজনীতি করে যাচ্ছেন। ১৯৭১ সালে মাওলানা নিজামীর যে সমস্ত বক্তব্য, বিবৃতি ও কর্মকান্ডের খবর তদানিন্তন পত্র পত্রিকায় এবং গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখিত হয়েছে সেখানে কোথাও নিজামী সাহেবের পরিচিতি হিসাবে আলবদর প্রধান বা আলবদরের কমান্ডার উল্লেখ করা হয় নাই। তিনি আলবদরের কোন বৈঠকে যোগ দিয়েছেন এ ধরণের কোন রিপোর্টও নেই। তিনি সেনাবাহিনীর কোন অফিসার কিংবা কোন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন এ ধরণের কোন রিপোর্ট ১৯৭১ সালের গোয়েন্দা রিপোর্ট বা পত্র পত্রিকায় নাই। আমার পিতা ১৯৭১ সালে যে সমস্ত জায়গায় গিয়েছিলেন এবং বক্তব্য রেখেছিলেন তা পত্র পত্রিকায় ও গোয়েন্দা রিপোর্টে এসেছিল। তদানিন্তন প্রবাসী সরকারের গোয়েন্দা রিপোর্টেও আমার পিতার বিরুদ্ধে আলবদর বাহিনী প্রধান হওয়ার বা পাবনা যাওয়ার কোন অভিযোগ নেই। এ সমস্ত অভিযোগের সূচনা ১৯৮৬ সালে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের একজন সম্ভাবনাময় নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশের পরপরই হয়েছে। আমার পিতা যদি আজকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির না হতেন, তার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ৪২ বৎসর পর নতুন করে অভিযোগ আনা হতো না। শুধুমাত্র বাংলাদেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে তিনি একজন ফ্যাক্টর বলে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগসমূহ আনা হয়েছে। আমার পিতা দীর্ঘ ৫০ বৎসর বাংলাদেশে সুনামের সাথে রাজনীতি করে যাচ্ছেন এবং তিনি বিভিন্ন সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পাবনা জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী হিসাবে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। সাথিয়া-বেড়া এলাকায় তিনি দুই দুই বার সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন এবং দেশ ও দশের ক্ষতিকর কোন কাজ করেছেন এমন কোন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে নেই।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি। তিনি শুধুমাত্র একজন রাজনীতিবিদ নন তিনি একজন ইসলামীক স্কলারও বটে। তিনি বাংলাদেশের ইসলামী শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ইসলামী আইনের উপর সর্বোচ্চ ডিগ্রী লাভ করেছেন। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে তার লিখিত বর্তমান সময় পর্যন্ত ইসলামের উপর অসংখ্য পুস্তক ও আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। তার রাজনৈতি কর্মকান্ড ও লিখিত বই পুস্তক পর্যালোচনা করে আমি দেখেছি তিনি আগাগোড়াই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী।
আমি আমার উল্লেখিত বক্তব্যেল সমর্থনে এখন কিছু দলিলপত্র উপস্থাপন করছি। ডঃ এম আবদুল আলিম কর্তৃক সম্পাদিত “পাবনার ইতিহাস” বইয়ের ফটোকপি সংশ্লিষ্ট অংশ যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১৩ এর ৪২০ থেকে ৫২০ পৃষ্ঠা প্রদর্শনী-অ হিসাবে চিহ্নিত হইল। ডঃ মুহাম্মদ আবদুল জলিল কর্তৃক লিখিত “শাহজাদপুরের ইতিহাস” বইয়ের ফটোকপি সংশ্লিষ্ট অংশ যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-৯ এর ১৮৪ থেকে ১৮৯ পৃষ্ঠা প্রদর্শনী-ই হিসাবে চিহ্নিত হইল। পাবনার এসপি কর্তৃক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারী বরাবরে ২৬-০৯-৭২ তারিখে ৬৭৯০/ই- স্মারক মূলে প্রেরিত প্রতিবেদন যাহাতে পাবনা জেলার স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের তালিকার ফটোকপি যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১৪ এর ১৮৮ থেকে ১৯৮ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী- ঈ হিসাবে চিহ্নিত হইল।

বিরতির পর ২.০০টায় পুনরায় জবানবন্দি শুরুঃ-
আবুল কালাম আজাদ কর্তৃক লিখিত “মুক্তিযুদ্ধের কিছু কথা পাবনা জেলা” এর ফটোকপি আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১৪ এর ২০১ থেকে ২১৪ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-উ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক সংবাদের ০৭-০৬-২০১২ইং তারিখে পত্রিকার “বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী রহম আলী খবর কেউ রাখেনি” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ফটোকপি যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১০ এর ২৯৭ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-ঊ হিসাবে চিহ্নিত হইল। মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম কর্তৃক লিখিত “৭১’র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কথা” এর ফটোকপি আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-৯ এর ৩৪ থেকে ৭০ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-ঋ হিসাবে চিহ্নিত হইল। বাংলা ১৩৭৮ সালের পঞ্জিকা গণনায় উত্তম সিংহ এর ফটোকপি যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১৩ এর ০১ থেকে ৩৬৯ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-এ হিসাবে চিহ্নিত হইল। পাবনার বেড়া উপজেলার সম্ভুপুর এলাকায় মহিলাদের ভোটার লিষ্ট যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১৩ এর ৩৮২ থেকে ৩৮৪ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-ঐ হিসাবে চিহ্নিত হইল। পাবনার বেড়া উপজেলার বৃশালিখা এলাকার পুরুষদের ভোটার লিষ্ট যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১৩ এর ৩৮৮ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-ও হিসাবে চিহ্নিত হইল। শহীদ আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েলের জীবন বৃত্তান্ত যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১৩ এর ৩৯২ ও ৩৯৩ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-ঔ হিসাবে চিহ্নিত হইল। দৈনিক প্রথম আলোর ০২-১১-২০১১ইং তারিখের সংশ্লিষ্ট অংশের ফটোকপি যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১৩ এর ৩৯৪ ও ৩৯৫ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-ক হিসাবে চিহ্নিত হইল। শহীদ আলতাফ মাহমুদ এর জীবন বৃত্তান্ত যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১৩ এর ৩৯৬ থেকে ৩৯৮ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-খ হিসাবে চিহ্নিত হইল। “আলতাফ মাহমুদ এক ঝড়ের পাখি” নামক স্মারক গ্রন্থ সম্পাদনায় মতিউর রহমান আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১৪ এর ২৬৬ থেকে ৩২০ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-গ হিসাবে চিহ্নিত হইল। আনিসুল হকের লিখিত বই “মা” যাহা প্রদর্শনী-ঘ হিসাবে চিহ্নিত হইল। মোহাম্মদ আসাদ ও মিল্লাত হোসেন সম্পাদিত “ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ” বইয়ের ফটোকপি যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-৯ এর ২৬৭ থেকে ২৭৫ পৃষ্ঠায় পদর্শনী-ঙ হিসাবে চিহ্নিত হইল। পাবনা জেলার বেড়া থানার বৃশালিখা পুরুষদের ভোটার লিষ্ট যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১৫ এর ০১ থেকে ০৪ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-চ হিসাবে চিহ্নিত হইল। বাংলদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র- ৭ম খন্ড যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমন্টে ভলিউম-১১ এর ২৯৯ তেকে ৩১৩ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-ছ হিসাবে চিহ্নিত হইল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র- ৮ম খন্ড যাহা আসামী পক্ষ কৃর্তক দাখিলি ডকুমন্টে ভলিউম-১১ এর ৩১৪ থেকে ৩২৭ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-জ হিসাবে চিহ্নিত হইল। মুনতাসির মামুন কর্তৃক লিখিত ''ঞঐঊ ঠঅঘছটওঝঐঊউ এঊঘঊজঅখঝ অঘউ ঞঐঊ খওইঊজঅঞওঙঘ ডঅজ ঙঋ ইঅঘএখঅউঊঝঐ'' যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১০ এর ২৯ থেকে ৫৯ পৃষ্ঠায় প্রদশর্নী-ঝ হিসাবে চিহ্নিত হইল। জেনারেল এ এ কে নিয়াজী কর্তৃক লিখিত "ঞযব ইবঃৎধুধষ ড়ভ ঊধংঃ চধশরংঃধহ" যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-৭ এর ১৩৩ থেকে ১৯৮ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-ঞ হিসাবে চিহ্নিত হইল। জেনারেল রাও ফরমান আলী কর্তৃক লিখিত “বাংলাদেশের জন্ম” যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-৪ এর ৩২৪ থেকে ৩৬৮ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-ট হিসাবে চিহ্নিত হইল। জেনারেল স্যার জ্যাক ডেভারেল এর পড়সসধহফ জবংঢ়ড়হংরনরষরঃু এর উপর প্রদত্ত মতামত যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমেন্ট ভলিউম-১০ এর ০১ থেকে ২৮ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-ঠ হিসাবে চিহ্নিত হইল। রাজাকার অর্ডিন্যান্স যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমন্টে ভলিউম-৭ এর ০১ থেকে ০৩ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-ড হিসাবে চিহ্নিত হইল। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল পত্র- একাদশ খন্ড যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দখিলি ডকুমন্টে ভলিউম-৭ এর ৩২২ থেকে ৩২৭ পৃষ্ঠায় মুজিবনগর সরকারের ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টের কপি প্রদর্শনী-ঢ হিসাবে চিহ্নিত হইল। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী কর্তৃক আসামী অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের মামলায় প্রদত্ত জবানবন্দি ও জেরার জাবেদা নকলের ফটোকপি যাহা আসামী পক্ষ কৃর্তক দখিলি ডকুমন্টে ভলিউম-১৪ এর ১৩৬ থেকে ১৮৭ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-ণ হিসাবে চিহ্নিত হইল। রমনা থানা মামলা নং-১১৫(৯)৯৭ এর এজাহারসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রের ফটোকপি যাহা আসামী পক্ষ কর্তৃক দাখিলি ডকুমন্টে ভলিউম-১৪ এর ৮৬ থেকে ১০৪ পৃষ্ঠায় প্রদর্শনী-ত হিসাবে চিহ্নিত হইল (প্রদর্শনী-অ ঃড় ত উপস্থাপনে প্রসিকিউশন কর্তৃক আপত্তি সহকারে)। (চলবে)

সাক্ষ্য গ্রহণ আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।




অসদাচরনের অভিযোগ // জেয়াদ আল মালুমের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের

মেহেদী হাসান, ২৪/১০/২০১৩
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুমের বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরনের অভিযোগে শোকজ নোটিশ জারি করেছে  বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।

আগামী সাত নভেম্বরের মধ্যে অভিযোগের জবাব প্রদানের জন্য সময় নির্ধারন করে আজ  এ নোটিশ জারি করা হয়।

ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী গত বছর ৩১ ডিসেম্বর জেয়াদ আল মালুমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বরাবর অভিযোগ করেন। স্কাইপ কেলেঙ্কারির  জের ধরে গুরুতর পেশাগত অসদাচরনের অভিযোগ এনে  জেয়াদ আল মালুমের আইনজীবী সনদ বাতিলের আবেদন করেন তিনি। এছাড়া স্কাইপ কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত থাকা এবং বিচার নিয়ে প্রহসন করার অভিযোগে জেয়াদ আল মালুমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনেরও দাবি জানানো হয় দরখাস্তে। এ আবেদনের প্রক্ষিতে আজ  বার কাউন্সিল তার বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করল অভিযোগের বিষয়ে তার জবাব চেয়ে। সময়মত জবাব দাখিলে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

অসদাচরনের অভিযোগ :
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বরাবর গত বছর ফরহাত কাদের চৌধুরীর দায়ের করা আবেদনে তিনি বলেন, আমার স্বামী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারের মুখোমুখি। জেয়াদ আল মালুম তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী। ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এবং বেলজিয়ামের ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের যে স্কাইপ সংলাপ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাতে  জেয়াদ  আল মালুমের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরনের প্রমান  রয়েছে।  জেয়াদ আল মালুম গোপনে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতির সাথে বৈঠক করেছেন বিচার নিয়ে। আসামীর মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য  কোন কোন সাক্ষী আনতে হবে, কোন সাক্ষী বাদ দিতে হবে এবং  সাক্ষীকে দিয়ে কি বলাতে হবে সে বিষয়ে তিনি সাক্ষীদের প্রশিক্ষন প্রদান করেছেন; বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমসহ বিভিন্ন মহলের সাথে গোপন আতাত করেছেন। কিভাবে প্রকাশ্য ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে নাটক করবেন এবং মানুষকে দেখাবেন যে, এখানে ন্যায় বিচার হয়েছে সে বিষয়ে বিচারপতি নিজামুল হকের রুমে গিয়ে আলোচনা করেছেন।  একজন আইনজীবী হিসেবে  জেয়াদ  আল মালুমের এ ধরনের কাজ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে কর্তৃক আইনজীবীদের জন্য প্রণীত  আচরন বিধির লঙ্ঘন এবং গুরুতর অসদাচরনের শামিল।

বিচারপতি নিজামুল হক এবং ড. জিয়াউদ্দিন জেয়াদ আল মালুমের সাথে সাক্ষী নির্বাচন নিয়েই শুধু তারা আলোচনা করেননি বরং সাক্ষীকে দিয়ে কি বলাতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন। সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল শফিউল্লাহ একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হওয়া সত্ত্বেও তাকে  ট্রাইব্যুনালে আনা হয়নি। কারণ তাকে জেয়াদ আল মালুম অন্যান্য সাক্ষীদের মত প্রশিক্ষন দিয়ে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেনা।  তার ওপর জেয়াদ আল মালুমের  নিয়ন্ত্রন থাকবেনা।  তিনি তাদের নির্দেশ মত সাক্ষ্য দিতে রাজি হবেননা। ফলে সাক্ষীর মুখ দিয়ে  এমন কিছু বের হয়ে  যেতে পারে যা আসামী পক্ষে চলে যেতে পারে এবং বিরাট সমস্যা হতে পারে রাষ্ট্রপক্ষের জন্য। সেকারনে তাকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি।  বিচারপতি নিজামুল হক  এবং ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সম্মতিতে তাকে সাক্ষী হিসেবে  না আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেয়াদ আল মালুম। এ বিষয়ে আলোচনা রয়েছে স্কাইপ সংলাপে। সুতরাং আসামীকে ফাঁসানোর জন্য জেয়াদ আল মালুম শুধু সাক্ষী বাছাই, সাক্ষী বাদ দেয়ার কাজ করেছেন তাই নয় বরং তাদের প্রশিক্ষন দিয়ে কোর্টে নিয়ে এসেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং ট্রাইব্যুনাল মিলে প্রকাশ্য কোর্টে  নাটক মঞ্চস্ত করেছেন  ।  ট্রাইব্যুনালের গোটা বিচার কাজই ছিল এ ধরনের একটি সাজানো নাটক। বিচারপতি নিজামুল হকের রুমে গিয়ে জেয়াদ আল মালুম বলেছেন আমি কোর্টে দাড়িয়ে যাব আর আপনি আমাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দেবেন।  যাতে লোকে বুঝতে পারে আমাদের মধ্যে কোন  খাতির নেই।

সাক্ষী সুলতানা কামাল বিষয়ে স্কাইপ সংলাপে বলা আছে তাকে সমস্ত এভিডেন্স দেয়ার পর তিনি বুঝে গেছেন কি বলতে হবে। এছাড়া বেশ কয়েকবার তার সাথে আলোচনা হয়েছে  কিভাবে সাক্ষ্য দেয়া হবে  সে বিষয়ে।  সুলতানা কামালসহ অন্যান্য সাক্ষীদের প্রশিক্ষন এবং জেনারেল শফিউল্লাহ তাদের নির্দেশত সাক্ষ্য দিতে রাজি হবেননা বিধায় তাকে বাদ দেয়ার মাধ্যমে জেয়াদ আল মালুম বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে   অধ্যায়-১১১ এ বর্নিত আইনজীবীদের পেশাগত আচরন লঙ্ঘন করেছেন এবং  এটি গুরুতর অসদাচরনের শামিল।

১১১ অধ্যায়ে বর্নিত আছে ‘পাবলিক প্রসিকিউশনের একজন আইনজীবীর প্রথম  কর্তব্য হল আসামীকে দন্ডিত করা নয় বরং ন্যায় বিচার হচ্ছে কি-না তা দেখা। আসামীকে নির্দোষ প্রমানে সহায়ক হতে পারে এমন তথ্য প্রমান চেপে রাখা এবং সাক্ষী গোপন করা গুরুতর দুষনীয় কাজ।’

সাক্ষীকে প্রশিক্ষন দেয়া এবং সাক্ষী গোপন করার ফলে আসামীর  মৃত্যুদণ্ড হতে পারত। আসামীর  মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করার জন্য সে সাক্ষী গোপন করেছেন, তথ্য প্রমান চেপে রেখেছেন এবং সাক্ষী প্রশিক্ষনের কাজ  করেছে।   এ কারনে  জেয়াদ আল মালুুমের আইনজীবী খারিজ করা অপরিহার্য।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়-স্কাইপ সংলাপের এক স্থানে  ড. জিয়াউদ্দিন বলছেন, প্রসিকিউশনের কৌশল শুধু পাঁচ জনের জানা উচিত। তিনি থেকে চার জন মুল আইনজীবী এবং অন্য দুজন (বিচারপতি নিজামুল হক এবং  ড. জিয়াউদ্দিন নিজে)  জানবে বিষয়টি। জিয়াউদ্দিন আরো বলছেন তাদের (বিচারপতি নিজামুল হক এবং জিয়াউদ্দিন) মালুমকে সাপোর্ট দিতেই হবে। স্কাইপ সংলাপের ১২ টি স্থানে জিয়াউদ্দিন এবং বিচারপতি নিজামুল হক একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করেছেন অমুক বিষয়ে জেয়াদ  আল মালুমের সাথে  আলোচনা করেছেন কি-না।  এসব থেকে বোঝা যায়  জেয়াদ আল মালুম নিয়মিত গোপন আতাত করতেন বিচারপতি নিজামুল   হকের  সাথে। এভাবে জেয়াদ আল মালুম ট্রাইব্যুনালের বিচারকে কলুষিত করার পেছনে কাজ করেছেন।  জেয়াদ আল মালুম ন্যায়বিচার এবং  স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার পথে একটি অন্তরায়। এ কারনে  তার আইনজীবী সনদ খারিজ করা উচিত বলে ফরহাত কাদের চৌধুরীর দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন পাবনা জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুল আলম

মেহেদী হাসান , 22/10/2013
পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ  এর  সাবেক কমান্ডার মো: শামসুল আলম মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা মো : শামসুল হক এর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় আজ।

জবানবন্দী :
সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ শামসুল আলম। বয়স আনুমানিক ৬২ বছর। ঠিকানা : গ্রাম- গোবিন্দা, থানা- পাবনা সদর, জেলা- পাবনা।

সাক্ষী তার পরিচয় সম্পর্কে বলেন, আমি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। আমি পাবনা জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের বিবরন দিয়ে সাক্ষী বলেন,  ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালো রাত্রে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যখন নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে তখন আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি। পরবর্তীতে ২৮শে মার্চ আমার বাড়ির নিকটবর্তী টিএন্ডটি ভবনে অবস্থানরত পাক সেনাদেরকে আক্রমণ করে তাদের নিশ্চিহ্ন করি।  সেখানে ২৯ জন পাক সেনা ছিল। পরের দিন ২৯শে মার্চ পাবনার মাধপুর নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক সেনাদের যুদ্ধ হয় এবং সেখানে ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়।  এ যুদ্ধে অনেক পাক সেনা নিহত হয়। এরপর ৮ই এপ্রিল পর্যন্ত পাবনা জেলা শত্রুমুক্ত ছিল। তারপর ১৯শে এপ্রিল পাক সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের ডাববাগানে (শহীদনগর) যুদ্ধ হয়।  সেখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং অনেক পাক সেনাও নিহত হয়। আমাদের অস্ত্রশস্ত্র না থাকায় ট্রেনিং এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসার জন্য ভারতে  যাই। আমি প্রথমে ভারতের কেচুয়াডাংগা ইয়ুথ ক্যাম্পে যোগদান করি। এরপর  আমাদেরকে উচ্চতর ট্রেনিং-এর জন্য জুনের শেষের দিকে অথবা জুলাইয়ের প্রথম দিকে বিহারের চাকুলিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানে ২৮ দিনের উচ্চতর ট্রেনিং দেওয়ার পরে মুর্শিদাবাদ জেলার বাবুলতলী অপারেশন ক্যাম্পে নিয়ে আসে। বাবুলতলী অপারেশন ক্যাম্প থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ১২/১৩ই আগষ্ট বাংলাদেশের রাজশাহী এলাকায় প্রবেশ করি এবং রাজশাহী শহরের পাশে সিতলাই ব্রীজ বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে  দেই। তার দুই দিন পর সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে অভয়া ব্রীজ অপারেশনে গেলে পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ হয়।  সেখানে আমাদের তিনজন মুক্তযোদ্ধা শহীদ হন এবং পাক সেনাদের অনেক হতাহত হয়। পরবর্তীতে ভারতের ধূলাউড়ি ক্যাম্পে যাই এবং সেখান থেকে মকবুল হোসেন সন্টুর নেতৃত্বে পাবনা এলাকায় চলে আসি। দেশে আসার পর আড়িয়া গোয়ালবাড়ি নামক স্থানে নকশাল, রাজাকার সম্মিলতি বাহিনীর সাথে যুদ্ধ হয় আমাদের এবং সেখানে ২৩ জনকে পাকড়াও করি। পরবর্তীতে পাবনার নিকটবর্তী তিনগাছা বাবুবাড়িতে যুদ্ধ হয় নকশালদের বিরুদ্ধে। সেখানে আমাদের দুইজন শহীদ এবং শত্রুপক্ষের ১৭/১৮ জন নিহত হয়। তিনগাছা বাবুবাড়িটি নকশালদের হেডকোয়ার্টার ছিল যেটি  আমরা যুদ্ধের পরে  দখল করি। ২৭শে নভেম্বর ১৯৭১ সানিকদিয়ায় ভয়াবহ যুদ্ধ হয়।  এ  যুদ্ধে পাক সেনাদের সাথে রাজাকার, নকশাল মিলে তিন শতাধিক ছিল।  মুক্তিযোদ্ধারাও দুই শতাধিক ছিল। যুদ্ধে আমাদের পরিবারের ৯ জনসহ মোট ২০/২৫ জন শহীদ হয় এবং শত্রুপক্ষের অসংখ্য আহত ও নিহত হয়।  পাকসেনারা তাদেরকে গাড়িতে করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে পাবনার পশ্চিম অঞ্চল মুক্ত অঞ্চলে পরিণত হয়। আমি সানিকদিয়ার যুদ্ধে মর্টারের স্পিøন্টারে আহত হই।

সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শত শত লোকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধ করার কারণে আমাদের নিকট অনেকে অভিযোগ করেছে কিন্তু মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে কেউ কোন সময় কোন অপরাধ করেছে মর্মে কোন অভিযোগ করে নাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমি আমাদের কমান্ডার ইকবাল হোসেন সাহেব এবং মকবুল হোসেন সন্টু সাহেবের সাথে জেলার সাথিয়া, সুজানগর, বেড়াসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় গিয়েছি,। শত শত লোক যারা অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের নিকট অভিযোগ করেছে লোকজন। লোকজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অনেককে শাস্তি দিয়েছি  কিন্তু কোন লোক মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ করেছে মর্মে কোন অভিযোগ করে নাই। 
সাক্ষী বলেন, আমাদের পাবনা এলাকায় অধিকাংশ যুদ্ধ হয়েছে অতি বিপ্লবী নকশালদের সাথে তার মধ্যে ৮০/৯০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছে তাদের গুলিতে। শহীদদের নিকট আত্মীয় ও পরিবারবর্গকে জিজ্ঞাসা করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে। পাবনা এলাকায় ক্যাপ্টেন জায়েদী, নুরু খন্দকার, টিপু বিশ্বাস, মাসুদ খন্দকার মূলত আর্মিসহ রাজাকার টাজাকারদের নিয়ন্ত্রণ করতো । এখানে  নিয়ন্ত্রণ অর্থ আর্মিদের কমান্ডার ছিল না তবে তাদেরকে যে দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল সেদিকে নিয়ে যেতো।

সাক্ষী বলেন, স্থানীয় পিস কমিটির সভাপতি ছিল স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পিস কমিটির সদস্য ছিল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররা। তারা নি¤œবিত্ত লোকজন নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করেছিল। আমাদেরকে রাজাকারদের সাথে তেমন একটা যুদ্ধ করতে হয় নাই।


জেরা :
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী।
প্রশ্ন : আপনার দাদার নাম কি?
উত্তর : কোরবান মালিথা।
প্রশ্ন : আপনারা কয় ভাইবোন?
উত্তর : ১২ জন।
প্রশ্ন : আপনি পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্ব পালন করেছেন কোন সময় থেকে কোন সময় পর্যন্ত?
উত্তর : ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সালের মে মাস পর্যন্ত।
প্রশ্ন : ২০০১ সালের পর কারা ক্ষমতায় ছিল জানা আছে?
উত্তর : চারদলীয় জোট।
প্রশ্ন : চারদলীয় জোটের মধ্যে অন্যতম ছিল জামায়াতে ইসলামী ।
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী তখন মন্ত্রী ছিলেন।
উত্তর : ছিলেন।
প্রশ্ন : তিনি তখন জামায়াতের আমির ছিলেন।
উত্তর : হতে পারে।
প্রশ্ন : ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেই আপনি নিজামী সাহেবের অনুপ্রেরনায় জামায়াতে যোগদেন  এবং আপনি তার কাছে মানুষে পরিণত হন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি ২০০১ সালের নির্বাচনে নিজামী সাহেবের পক্ষে প্রচারানয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তার প্রিয়ভাজনে পরিণত হন।
উত্তর : সঠিক নয়।
প্রশ্ন : ২০০১ সালের নির্বাচনের পর নিজামী সাহেব জোটের প্রভাবশালী মন্ত্রী হন এবং  তিনি আপনাকে পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ  করে।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের বিধি অনুযায়ী নির্বাচন হয়েছিল তখন?
উত্তর : শেষের দিকে হয়েছিল।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে এমন দলের নাম আপনার জানা আছে?
উত্তর : মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম এবং নকশালীরা।
প্রশ্ন : মুসলিম লীগ, জামায়াত এবং নেজামে ইসলাম রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : বিপ্লবী নকশাল বাহিনী কখনোই অনুমোদিত কোন রাজনৈতিক ছিলনা।
উত্তর : আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধুর দলের নাম ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এ দলের ছাত্রফ্রন্টের নাম ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এভাবে জামায়াতেরও ছাত্রফ্রন্ট ছিল এবং ১৯৭১ সালে এর নাম ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ যা বর্তমানে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে পরিচিত।
উত্তর : শুনেছি।
প্রশ্ন : সেসময় ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী।
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : আপনার লেখাপড়া কতদূর?
উত্তর : এইচএসসি পাশ।
প্রশ্ন : স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য মুক্তিবাহিনীর পাশপাশি মুজিব বাহিনী হয়েছিল দেশকে হানাদার মুক্ত করার লক্ষ্যে তা আপনি জানেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনীর পাশাপাশি  আল বদর বাহিনী গঠিত হয়েছিল তাও আপনি জাননে।
উত্তর : শুনেছি।
প্রশ্ন : আল বদর বাহিনী গঠিত হয়েছিল পাকিস্তান বাহিনীকে সহায়তার জন্য।
উত্তর : হয়তোবা।
প্রশ্ন ঃ আড়িয়া গোয়ালবাড়িসহ চরতারাপুর ইউনিয়নেও দখলদার পাক বাহিনী দেশীয় রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের সহযোগীতায় একাধিকবার নিরিহ নিরস্ত্র লোকদের উপর আক্রমন     করেছিল কিনা?
উত্তর ঃ রাজাকার ও পাক বাহিনী দ্বারা আক্রমন হয়েছিল, অন্যদের সম্পর্কে আমার কোন ধারনা     নাই
প্রশ্ন : উক্ত চরতারপুর ইউনিয়নসহ পাবনা জেলার বিভিন্ন স্থানে দখলদার পাক বাহিনী ও রাজাকারদের সাথে  আলবদর বাহিনীর সদস্যরাও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটনে সম্পৃক্ত ছিল।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সাথিয়া, সুজানগর ও বেড়া থানার আলবদর কমান্ডার ছিল রফিকুন্নবী বাবলু । তিনি সহ অন্যান্য আলবদররাও দখলদার পাক বাহিনী ও রাজাকারদের সাথে মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটনে জড়িত ছিল।
উত্তর : আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : পাবনার কোন জায়াগায়  নকশালদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়নি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : “তিনগাছা বাবু বাড়িটি নকশালদের হেড কোয়ার্টার ছিল” বা “মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে কেউ কোন সময় কোন অপরাধ করেছে মর্মে কোন অভিযোগ করে নাই।” বা “কোন লোক মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ করেছে মর্মে কোন অভিযোগ করে নাই।” আপনার এ বক্তব্য অসত্য।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : নিজামী সাহেব আপনাকে  জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহ্বায়াক/কমান্ডার মনোনিত করায় এবং চার দলীয় জোট সরকারের আমলে প্রভাবশালী মন্ত্রী জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের দ্বারা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কারনে তাকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে তার পক্ষে অসত্য সাফাই সাক্ষ্য েিদ এসেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।

মাওলানা নিজামীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, মনজুর আহমেদ আনসারী, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, আসাদ উদ্দিন, তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।

সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমান


মেহেদী হাসান, ২১/১০/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। তার পক্ষে প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন পাবনার মুক্তিযোদ্ধা কে এম হামিদুর রহমান। তিনি ১৯৬৮-৬৯ সময়ে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ   আজ  তার জবানবন্দী  গ্রহণ শেষে জেরা সমাপ্ত হয়।

জবানবন্দী :
আমার নাম কে এম হামিদুর রহমান। বয়স আনুমানিক ৬৬ বছর। আমার বর্তমান ঠিকানা- দিলালপুর, পাবনা শহর, পাবনা। আমি পাবনা জেলা জজ কোর্টের একজন আইনজীবী। আমি ১৯৬৭ সালে এইচএসসি পাশ করার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মেডিকেল কোরে সিপাহী পদে যোগদান করি। সেখানে ট্রেনিং নেওয়ার পর কয়েক মাস চাকুরী করার পর চাকুরী ছেড়ে চলে আসি। এরপর আমি নিয়মিত পড়াশুনা করে ১৯৭২ সালে এলএলবি পাশ করে ১৯৭৩ সালে আমি আইন পেশায় যোগদান করি। আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থা থেকেই ছাত্রলীগের সাথে জড়িত হই। ১৯৬৮ সালে এডওয়ার্ড কলেজে বিএ পড়া অবস্থায় পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হই। ১৯৬৯ সালে বিএ পাশ করে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত একই পদে দায়িত্ব পালন করি।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত্রে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করার পর আমরা ২৬শে মার্চ থেকেই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি। তারপর থেকে আমরা বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি এবং আমাদের মধ্যে যাদের ট্রেনিং ছিল না তাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ভারতে চলে যান এবং আমি যেহেতু সেনাবাহিনীর ট্রেনিং প্রাপ্ত সেহেতু আমি ভারতে যাই নাই। আমরা রাজাকারদের পরিবারের সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করতাম এই মর্মে যে, তাদের পরিবারের যে সকল লোক রাজাকারে গিয়েছে তারা যেন এলাকায় কোন ক্ষতি না করে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সুজানগর থানা আক্রমণ করি এবং সেই যুদ্ধ চারদিন চাররাত্র চলার পর পঞ্চম দিন রাত্রে পাকিস্তান সেনারা সেখানে কয়েকটি লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে সুজানগর, সাথিয়া ও বেড়া থানা এলাকায় আমরা চলা ফেরা করতাম এবং সোর্সের মাধ্যমে খবর সংগ্রহ করতাম। সোর্সদের মাধ্যমে এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব সাথিয়া থানা এলাকায় মানবতা বিরোধী কোন অপরাধ করেছেন কিংবা অপরাধের কোন সহযোগিতা করেছেন এই মর্মে কোন ব্যক্তি আমার নিকট অভিযোগ করেন নাই এবং কোন ব্যক্তি আমার নিকট ইহা বলে নাই যে, তারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সাথিয়া এলাকাতে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে দেখেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে তার এলাকাতে এবং পাবনা শহরে স্বাধীনভাবে ঘুরা ফেরা করতে দেখেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমরা জানতে পেরেছি সিও (ডেভ) কে আহবায়ক করে এবং সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে সরকার একটি কমিটি করেছিল রাজাকার, আলবদরদের তালিকা তৈরি করার জন্য এবং পরবর্তীতে তাদের দ্বারা তৈরিকৃত তালিকায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নাম ছিল না। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আমি চিনি, তিনি অদ্য ট্রাইব্যুনালের ডকে উপস্থিত আছেন।


জেরা (সংক্ষিপ্ত ) ঃ
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী এবং মোহাম্মদ আলী।

প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায় ছিল?
উত্তর :  গ্রাম গোকুলপুর, ইউনিয়ন সুজানগর।
 প্রশ্ন : ট্রাইব্যুনালে নিজামী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে হবে একথা কবে জানতে পারলেন?
উত্তর : অনেক আগে জানতে পেরেছি যে, তবে তারিখ আমার মনে নাই।
প্রশ্ন : সর্বপ্রথম কার কাছ থেকে জানতে পারলেন সাক্ষ্য দেয়ার বিষয়ে?
উত্তর : নিজামী সাহেবের ছেলের নিকট থেকে
প্রশ্ন : ঢাকা কবে এসেছেন ?
উত্তর :  গতকাল ।
প্রশ্ন : আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন কবে?
উত্তর :  প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে সম্ভবত ১৯৮০ সালের পূর্বে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলাম।
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন এলএলবি পাশ করেছেন আপনি। কোথা থেকে পাশ করলেন?
উত্তর :  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ।
প্রশ্ন : আপনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : কবে কোন উপজেলায়?
উত্তর : ১৯৮৯ সালে পাবনা সদর।
প্রশ্ন : আপনি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পছন্দে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার পাবনা শহরের বাড়িটা তো বেশ বড়।
উত্তর : আমার তার চেয়েও বড় বাড়ি আছে। পাবনা শহরে আমার ৫৩টি দোকান, তিনটি মার্কেট আছে।
প্রশ্ন : পাবনা শহরের বাড়িতে কতজন ভাড়াটিয়া আছে?
উত্তর : ২০টি পরিবার থাকে। এছাড়া একটি বাড়িতে  ব্যাচেলর সরকারী ও বেসরকারী কর্মচারীদের জন্য ফ্যাট ভাড়া দেওয়া আছে।
প্রশ্ন : আপনি ইনকাম ট্যাক্স দেন?
উত্তর : অবশ্যই।
প্রশ্ন : গত বছর কত দিয়েছেন?
উত্তর : স্মরন নেই।  সম্ভবত ২০/৪০ হাজার টাকা হবে। আমার ইনকাম ট্যাক্স লইয়ার আছে। সে এসব দেখে।
প্রশ্ন : আপনার মাসিক আয় কত?
উত্তর  : আমি আমার বাড়ি এবং দোকান থেকে মাসিক লক্ষাধিক টাকা ভাড়া পাই।
প্রশ্ন : আমি বলছি আপনার বাড়ি ও দোকান ভাড়ার মাসিক আয় লক্ষাধিক টাকার অনেক বেশী হওয়া সত্ত্বেও অদ্য মাননীয় ট্রাইব্যুনালে অসত্য তথ্য দিয়েছেন।
উত্তর :  সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি ইসলামী ছাত্র শিবিরের অনেক ছাত্রকে আপনার বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি পাবনা  সদর উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর আমির।
উত্তর : সত্য নয়। আমির তো দূরেরর কথা। আমি জামায়াতের কিছুই নই। প্রশ্নটা করার আগে এটা আপনার জানা উচিত ছিল।
প্রশ্ন : আপনি আর্মিতে থাকা অবস্থায় কোথায় ট্রেনিং নিয়েছিলেন?
উত্তর :  পাকিস্তানের এবোটাবাদ-এ ছয় মাসের আর্মি ট্রেনিং নিয়েছিলাম। ট্রেনিং শেষে দুই/তিন মাস চাকুরীতে ছিলাম।
প্রশ্ন : আর্মি থেকে চাকরি ছেড়ে আসার কোন সুযোগ নেই।
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : আপনি অনুমতি ছাড়া কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে পালিয়ে চলে এসেছেন?
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সে কারনে আপনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয় তখন।
উত্তর : সত্য নয়। কোনদিনও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়নি।
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন রাজাকারদের পরিবারকে উদ্ভুদ্ধ করতেন ক্ষতিকর কাজকর্ম না করার জন্য।
এর মানে হল রাজাকার এবং  রাজাকারদের পরিবারের সাথে আপনার সুসম্পর্ক ছিল।
উত্তর : অসত্য।
প্রশ্ন :  তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজাকারদের সাথে আপনি যোগাযোগ রাখতেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আপনি  সবসময় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সঙ্গে থাকতেন এবং চলাফেরা করতেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন :  আপনার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করার কথা ভূয়া ও অসত্য।
উত্তর : আপনার দাবি  সত্য নয়।
প্রশ্ন :  আমি পাবনা জেলা জামায়াত শিবিরের আর্থিক মদদদাতা।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন :  আপনি  সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশুনা করাকালীন সময় থেকেই ছাত্রলীগের সাথে জড়িত  ছিলেন একথা সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার দাবি সত্য নয়।
প্রশ্ন : ১৯৬৮ সালে এডওয়ার্ড কলেজে বিএ পড়া অবস্থায় পাবনা জেলা ছাত্র লীগের সাধারন সম্পাদক মনোনিত হওয়ার কথাও সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার দাবি সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার এলাকায় কোন লোক বিপদে পড়ে আনপার কাছে আসলে আপনি তার পক্ষে সাক্ষ্য দেন।
উত্তর : আমি আমার মেয়ের পক্ষে একবার ছোলেনামা সাক্ষ্য দিয়েছিলাম। এছাড়া কোনদিন এর আগে কোন মামলায় সাক্ষ্য দেইনি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী কি করতেন, কি ছিলেন, তার রাজনৈতিক পরিচয় আপনি জানতেন।
উত্তর : জানতামনা।
মাওলানা নিজামীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, তারিকুল ইসলাম, আসাদ উদ্দিন প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অন্যান্যের মধ্যে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু উপস্থিত ছিলেন।



পূর্ন জেরাঃ
জেরায় প্রশ্নের জবাব আকারে  সাক্ষী যে উত্তর দিয়েছেন তা হুবহু এখানে তুলে ধরা হল। উত্তর তেকে প্রশ্নটি কি ধরনের ছিল তা বুঝে নিতে হবে।
আমি কখনোই নোটারী পাবলিক ছিলাম না এবং নোটারী পাবলিক হওয়ার জন্য কখনো আবেদনও করি নাই। ১৯৭১ সালে আমার গ্রামের বাড়ি ছিল গোকুলপুর, ইউনিয়ন পরিষদ ছিল সুজানগর। (চলবে)

০২.০০ টায় পূনরায় জেরাঃ
আমি মাননীয় ট্রাইব্যুনাল থেকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কোন সমন পাই নাই। অনেক আগে জানতে পেরেছি যে, অত্র মামলার আসামী মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে হবে, তবে তারিখ আমার মনে নাই। আমি সর্বপ্রথম মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের ছেলের নিকট থেকে জানতে পেরেছি যে, এই মামলায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পক্ষে আমাকে সাক্ষ্য দিতে হবে। আমি গতকাল ঢাকায় এসেছি। আমার জানাশুনা একজন লোক আব্দুর রউফ এর সঙ্গে ঢাকায় এসেছি। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে সম্ভবত ১৯৮০ সালের পূর্বে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলাম। প্রথম স্ত্রীর একটি মেয়ে আছে। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এলএলবি পাশ করেছি। আমি পাবনা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলাম। আমি তখন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের প্রার্থী হিসাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছিলাম, ইহা সত্য নহে। আমার বাড়ির ২০টি ফ্যাট ভাড়া দেওয়া আছে। এছাড়াও ব্যাচেলর সরকারী ও বেসরকারী কর্মচারীদের জন্য ফ্যাট ভাড়া দেওয়া আছে। এছাড়াও আমার আরো তিনটি বাড়ি, ০৮টি গোডাউনসহ ৫৩টি দোকান ঘর আছে। আমি গত বৎসর সম্ভবত ২০/৪০ হাজার টাকা আয়কর দিয়েছি তবে সঠিক পরিমান বলতে পারব না। আমি আমার বাড়ি এবং দোকান থেকে মাসিক লক্ষাধিক টাকা ভাড়া পাই। আমার বাড়ি ও দোকান ভাড়ার মাসিক আয় লক্ষাধিক টাকার অনেক বেশী হওয়া সত্ত্বেও অদ্য মাননীয় ট্রাইব্যুনালে অসত্য তথ্য দিলাম, ইহা সত্য নহে। ইসলামী ছাত্র শিবিরের অনেক ছাত্রকে আমার বাড়িতে ভাড়া দিয়েছি, ইহা সত্য নহে। আমি সদর উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর আমির, ইহা সত্য নহে। আমি পাকিস্তানের এবোটাবাদ-এ ছয় মাসের আর্মি ট্রেনিং নিয়েছিলাম। ট্রেনিং শেষে দুই/তিন মাস চাকুরীতে ছিলাম। চাকুরী ছেড়ে দিয়ে আসার কোন নিয়ম সেনাবাহিনীর চাকুরী বিধিতে নাই, ইহা সত্য নহে। আমি সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে কোন অনুমতি না নিয়ে বা ইনফরমেশন না দিয়ে পালিয়ে এসেছিলাম এবং এই কারণে আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, ইহা সত্য নহে। ইহা সত্য নহে যে, রাজাকারদের পরিবারের সদস্যদের সহিত এবং রাজাকারদের সহিতও আমার সুসম্পর্ক ছিল এবং এজন্যই তাদের সহিত যোগাযোগ রাখতাম। আমি তৎকালিন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজাকারদের সহিত এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সহিত যোগাযোগ রক্ষা করতাম, ইহা সত্য নহে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি সবসময় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সঙ্গে থাকতাম এবং চলাফেরা করতাম, ইহা সত্য নহে। আমি আমার জবানবন্দীতে যে সোর্স শব্দটি ব্যবহার করেছি, ইহা বলতে আমি রাজাকার, আলবদর ও মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত লোকদেরকেই বুছিয়েছি, ইহা সত্য নহে। আমি আমার জবানবন্দীতে যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করার কথা বলেছি ইহা ভূয়া ও অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশে রাজাকার ও আলবদরদের কর্মকান্ড মনিটরিং করতাম, ইহা সত্য নহে। আমি পাবনা জেলা ইসলামী ছাত্র শিবির এবং জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতাদের আর্থিক সাহায্য করি, ইহা সত্য নহে। ইহা সত্য নহে যে, গত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি পাবনা জেলা ইসলামী ছাত্র শিবির এবং জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ড দেখা শুনা করতাম। গত নির্বাচনের পূর্বে সাধারন নির্বাচনে আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়েছিলাম, ইহা সত্য নহে।
আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশুনা করাকালীন সময় থেকেই ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলাম না, ইহা সত্য নহে। ১৯৬৮ সালে এডওয়ার্ড কলেজে বিএ পড়া অবস্থায় পাবনা জেলা ছাত্র লীগের সাধারন সম্পাদক মনোনিত হই নাই, ইহা সত্য নহে।
আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবেরে ছেলের নিকট মাননীয় ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদানের বিষয়ে সম্মত হওয়ার সময় আমি আমার পেশাগত এবং বংশগত পরিচয়সহ পুরো পরিচয় দিয়েছি। পাবনা আইনজীবী সমিতির অন্য কোন সদস্যের নিকট মতিউর রহমান নিজমাী সাহেবের ছেলে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়ে বলেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই এবং সেই কারণে আইনজীবী পরিচয়ে অন্য কারো নাম আসামী পক্ষের সাক্ষীর তালিকায় আছে কিনা তাহাও আমার জানা নাই। আমি জানি না যে, প্রথম সাক্ষীর তালিকায় এডভোকেট পরিচয়ে দুইজন সাক্ষীর নাম ছিল কিনা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদের সুজানগর থানার প্রত্যন্ত এলাকায় কোন পত্রিকা যেতনা এবং কোন পত্রিকা আমি পড়তাম না। মুক্তিযুদ্ধের পরেও আমি খবরের কাগজ তেমন একটা পড়তাম না, মাঝে মাঝে দুই/একটা পড়তাম। আমার এলাকায় কেউ মামলায় পড়লে আমাকে সাক্ষী দিতে বললে আমি কখনও সাক্ষ্য দেই নাই। আমি ইতিপূর্বে আমার মেয়ের পক্ষে একবার সাক্ষ্য দিয়েছি এবং অদ্য আরেকবার সাক্ষ্য দিলাম, ইহা ছাড়া আমি আর কখনও সাক্ষ্য দেই নাই। আমি কোন নেতার লেখা বই পড়ি নাই। মতিউর রহমান নিজমাী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর আমির তাহা আমি জানি। ১৯৭১ সালে তিনি কি ছিলেন বা তিনি কি করতেন বা তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় ছিল কিনা তাহা আমা জানা নাই। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগ। ঐ দুইটি রাজনৈতিক দলের কোন ছাত্র সংগঠন ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। দৈনিক সংগ্রাম নামে একটি পত্রিকা আছে তাহা আমি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে জানতে পারি। সেই পত্রিকাটি জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র এটা এখন শুনি।
“সোর্সদের মাধ্যমে এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব সাথিয়া থানা এলাকায় মানবতা বিরোধী কোন অপরাধ করেছেন কিংবা অপরাধের কোন সহযোগিতা করেছেন এই মর্মে কোন ব্যক্তি আমার নিকট অভিযোগ করেন নাই এবং কোন ব্যক্তি আমার নিকট ইহা বলে নাই যে, তারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সাথিয়া এলাকাতে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে দেখেছেন।” এই কথাগুলি অসত্য বা আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত কর্মী হিসাবে তাকে রক্ষা করার জন্য এই অসত্য বক্তব্য দিয়েছি, ইহা সত্য নহে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইসলাম ছাত্র সংঘের সভাপতি এবং আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসাবে জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পরিকল্পনা ও নির্দেশে এবং তার উপস্থিতিতে সাথিয়া থানার বিভিন্ন স্থানে তৎকালীন দখলদার পাক বাহিনী এবং রাজাকার আলবদরদের নিয়ে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং বিতাড়ন সহ বিভিন্ন ধরনের মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত হওয়ার ঘটনার কথা জানা সত্ত্বেও মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে বাঁচানোর জন্য সত্য গোপন করে অসত্য সাক্ষ্য দিলাম, ইহা সত্য নহে।
“দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে তার এলাকাতে এবং পাবনা শহরে স্বাধীনভাবে ঘুরা ফেরা করতে দেখেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমরা জানতে পেরেছি সিও (ডেভ) কে আহবায়ক করে এবং সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে সরকার একটি কমিটি করেছিল রাজাকার, আলবদরদের তালিকা তৈরি করার জন্য এবং পরবর্তীতে তাদের দ্বারা তৈরিকৃত তালিকায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নাম ছিল না।” এই কথাগুলি অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমি জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতা হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রধান জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের কৃত অপরাধ গোপন করে অদ্য মাননীয় ট্রাইব্যুনালে অসত্য সাক্ষ্য দিলাম, ইহা সত্য নহে। (সমাপ্ত)




প্রবেশে বাঁধা // ট্রাইব্যুনালের গেটে জয়নুল আবেদিনসহ আইনজীবীদের অবস্থান কর্মসূচী

মেহেদী হাসান, ২১/১০/২০১৩
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদিনসহ আরো বেশ কয়েকজন আইনজীবীকে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করায় আজ  ট্রাইব্যুনালের সামনে গেট আটকে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন তারা । একঘন্টা পর্যন্ত চলা অবস্থান কর্মসূচীর সময় ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারকও মেইন গেট দিয়ে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশে সমস্যায় পড়েন এবং তাকে গাড়ি ঘুরিয়ে ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়া হয় ট্রাইব্যুনালে। 

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক দুইবার নির্বাচিত সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক জারি করা আদালত অবমাননা বিষয়ক মামলার তারিখ ধার্য্য ছিল আজ ।  তার পক্ষে এ্যাডভোকে জয়নুল আবেদিন সুপ্রীম কোর্ট বারের এসিসট্যান্ট সেক্রেটারি সাইফুর রহমান, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামসহ ১০/১২ জন  আইনজীবী নিয়ে সকাল সোয়া দশটার দিকে ট্রাইব্যুনালের সামনে আসেন। কিন্তু তখন তাদের ট্রাইব্যুনালে প্রবেশে বাঁধা দেয়া হলে এর প্রতিবাদে তারা গেটের সামনে দাড়িয়ে অবস্থান কর্মসূচী পালন শুরু করেন।

কর্মসূচীর ৪০ মিনিটের মাথায় ট্রাইব্যুনালের গেটে একজন বিচারকের গাড়ি আসে। বিচারকের গাড়ির সামনে থাকা পুলিশের গাড়ি থেকে পুলিশ সদস্যরা নেমে আসেন।  পুলিশ তাদের অনুরোধ করেন গেট থেকে সরে যাবার জন্য। কিন্ত জয়নুল আবেদিন তাদের বলেন, আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে না দিলে আমরা এখান থেকে সরবনা। আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হোক আমরা সরে যাব।  এসময় ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এ কে এম নাসির উদ্দিন মাহমুদ সেখানে আসেন এবং তাদের সরে যেতে অনুরোধ করেন। জয়নুল আবেদিন বলেন, আমরা ৪০ মিনিট পর্যন্ত এখানে দাড়িয়ে আছি। আপনি আমাদের ঢকুতে দিচ্ছেননা কেন? ট্রাইব্যুনালের কোন আইনে  আছে যে, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করতে পারবেনা আমাদের দেখান। আপনি নাকি বলেছেন আমাদের ভেতরে যাবার দরকার নেই।   নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আপনাদের টাইম প্রেয়ারের দরখাস্ত গতকাল আমি পেয়েছি।  আমি একটু আগে আপনাদের এখানে যারা এসেছেন তাদের তালিকা নিয়েছি। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে প্রবেশের ব্যবস্থা করব। কিন্তু তার আগে আপনারা গেটটা একটু ছেড়ে দেন। জাজ সাহেবকে ভেতরে যেতে দিন। জয়নুল আবেদিন বলেন, আমাদের ভেতরে যেতে দিন। আমরা এুনি সরে যাব। এরপর নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য গেটটা ছাড়েন। জজ সাহেব যাক তারপর আপনাদের ব্যবস্থা করব।  এসময় জয়নুল আবেদন তাকে পাঁচ মিনিট সময় দেন। কিন্তু ততক্ষনে বিচারক চলে গেছেন গাড়ি ঘুরিয়ে। এরপর রেজিস্ট্রার এ কে এম নাসির উদ্দিন মাহমুদ ভেতরে চলে যান। কিন্তু ১৫ মিনিট পার হয়ে গেলেও কারা প্রবেশ করতে পারবে সে বিষয়ে কোন তালিকা না আসায় জয়নুল আবেদিন বলেন, আমরা আর ভেতরে প্রবেশ করবনা আজ। ৫ মিনিটের কথা বলে রেজিস্ট্রার চলে গেছেন কিন্তু এখন ১৫ মিনিট পার হয়ে গেছে তার কোন খবর নেই।   তিনি কোন তালিকা পাঠাননি।

একঘন্টা অবধি অবস্থান কর্মসূচী পালন শেষে অ্যাডভোটেক জয়নুল আবেদিন সাংবাদিকদের  ঘটনার বিষয়ে বলেন, আপনারা সব দেখলেন নিজের চোখে। আজ খন্দকার মাহবুব হোসেন এর মামলার তারিখ ধার্য্য ছিল। আমাকে তিনি তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করেছেন। আমরা এ মামলায়  চার সপ্তাহ সময় চেয়ে গতকাল একটি দরখাস্ত দিয়েছি। আজ আমি আমার কাউন্সিলরদের নিয়ে ট্রাইব্যুনালে এসেছি। কিন্তু আমাদের ভেতরে যেতে দেয়া  হলনা। যে ট্রাইব্যুনালে আইনজীবীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়না সে ট্রাইব্যুনালের বিচার সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক।

আইনজীবীদের ট্রাইব্যুনালে প্রবেশে বাঁধা বিষয়ে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, জয়নুল আবেদিনসহ  আমরা এখানে আসার পর রেজিস্ট্রার  আমাদের জানিয়েছেন, টাইম প্রেয়ারের দরখাস্ত মুভ করতে  আমাদের যাবার দরকার নেই। ভেতরে নাকি চার পাঁচজন আইনজীবী আছেন তারাই যথেষ্ট।  ভেতরে যে আইনজীবীদের কথা উনি বলেছেন তারা কেউই খন্দকার মাহবুব হোসেন এর পক্ষের আইনজীবী নন। তারা মাওলানা নিজামীর মামলার আইনজীবী। খন্দকার মাহবুব হোসেন এর পক্ষে কোন আইনজীবী ভেতরে  যায়নি। আমাদের প্রশ্ন হল  খন্দকার মাহবুব হোসেন এর পক্ষে কে কোর্টে কথা বলবে তা কি রেজিস্ট্রার সাহেব ঠিক করে দেবেন? তাজুল ইসলাম বলেন, আধাঘন্টা পর রেজিস্ট্রার এখানে লোক পাঠিয়ে কারা কারা উপস্থিত আছি তাদের তালিকা চেয়েছেন। আমরা তালিকা দিয়েছি  কিন্তু কোন খবর নেই। ৪০ মিনিটরে মাথায় এসে তিনি বললেন যাচাই বাছাই করে তালিকা ঠিক করে ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা করবেন। সুপ্রীম কোর্ট বারের একজন সভাপতি, সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীদের তিনি এক ঘন্টা পর্যন্ত দাড় করিয়ে রেখেছেন এখানে। ৫ মিনিটের মধ্যে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হবে বলে চলে গেলেন তিনি। ১৫ মিনিটের মাথায়ও তিনি কোন খবর দিলেননা। এই হল এখানকার অবস্থা।

অবস্থান কর্মসূচী শেষে প্রহসনের বিচার বন্ধ কর করতে হবে স্লোগান দিতে দিতে চলে যান সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীরা।

এদিকে ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজকের কার্যতালিকায় খন্দকার মাহবুব হোসেন এর মামলাটি ছিল এক নং ক্রমিকে। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে এ মামলায়  কোন আইনজীবী না থাকায় মাওলানা নিজামীর মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। মাওলানা নিজামীর পক্ষের সাক্ষীর নাম নিয়ে সমস্যা হওয়ায় ১২টায় কোর্ট মুলতবি করা হয় এবং দুইটায় খন্দকার মাহবুব হোসেন এর মামলার বিষয়ে জানানো হবে বলে আদেশ দেন কোর্ট।

দুইটার বিরতির পরও এ মামলায় কোন আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামকে তলব করে আনা হয় ট্রাইব্যুনাল। তাজুল ইসলাম যখন উপস্থিত হন তখন মাওলানা নিজামীর মমালা চলছিল। মাওলানা নিজামীর মামলা শেষ হলে খন্দকার মাহবুব হোসেন এর মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। ট্রাইব্যুনাল তাজুল ইসলামকে বলেন, টাইম প্রেয়ার দরখাস্তে আপনার স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু আপনি কোর্টে উপস্থিত নেই কেন ? আপনাকে কেন ডেকে আনতে হল?

তখন তাজুল ইসলামক সকালের ঘটনার বিবরন দিয়ে বলেন, যেহেতু এ মামলার সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদিনসহ অন্যান্যদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়ন এবং তারা চলে গেছেন তাই তাদের  ডিঙ্গিয়ে এবং কায়েন্টের পরামর্শ ব্যতীত আমি কিছু করতে পারিনা। তারা যেহেতু আসেননি তাই আমার একার এখানে আসাটা শোভনীয় নয়।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি কোর্টে এসে শুরুতেই এ বিষয়টি তুলতে পারতেন । আপনার তো কোর্টে আসতে বাঁধা নেই। তাজুল ইসলাম বলেন, আমি অন্য মামলার আইনজীবী হিসেবে কোর্টে আসি। কিন্তু খন্দকার মাহবুব হোসেন এর মামলায় আইনজীবীদের প্রবেশ নিয়ে যা হয়েছে তাতে আমি সে মামলায় একা এখানে আসতে পারিনা। এটা আমার জন্য বিব্রতকর অবস্থা।  রেজিস্ট্রার সুপ্রীম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি এবং সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে অশোভন আচরন করেছেন। তারা সবাই মিলে এর প্রতিবাদে চলে গেছেন কোর্টে না এসে। এ অবস্থায় আমি এখানে অন্য মামলার আইনজীবী হিসেবে এখানে আসতে পারলেও ওই মামলার হয়ে কোন কথা বলতে পারিনা। এটা আমার জন্য শোভনীয় নয়।

এরপর আগামীকাল আবার এ মামলার তারিখ ধার্য্য করা হয়। কোর্ট উঠে যাবার পূর্বে রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাডভোকেট জেয়াদ আল মালুম কিছু একটা বলেন। এসময় তাজুল ইসলাম বলেন, সাবমিশনেরও একটা সীমা থাকা উচিত। কোর্টে কিভাবে কথা বলতে হয় তা শিখে আসেন। এসময় কোর্টের বিচারপতিরা কোর্টরুম ত্যাগ করার জন্য উঠে দাড়িয়েছেন। তারা বের হয়ে যাচ্ছেন। এমনসময় তাজুল ইসলাম এবং জেয়াদ আল মালুমের মধ্যে উচ্চস্বরে বাক্য বিনিময় শুরু হয়ে যায়। দুই পক্ষ পরষ্পরের প্রতি তেড়ে যাবার উপক্রম হয়। জেয়াদ আল মালুম তাজুল ইসলামকে উচ্চস্বরে  বলেন, বেয়াদপ। তাজুল ইসলাম বলেন, সারাজীবন যা করে এসেছেন তা এখানে এসেও করতে চান। জেয়াদ আল মালুম বলেন, কি করেছি সারা জীবন? তাজুল ইসলাম বলেন, গুন্ডা। কোর্টে এসেও গুন্ডামি করতে চান? স্কাইপে আপনার নাম আসেনি? বিচার ব্যবস্থাকে আপনারা ধ্বংস করেননি? বেহায়া, নির্লজ্জ কোথাকার। এসময় তাজুল ইসলামের এক জুনিয়র বলেন, বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংসের জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার একদিন হবেই। এ পরিস্থিতিতে  দুইপক্ষের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে পুলিশ এসে হস্তক্ষেপ করেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।

অবস্থান কর্মসূচীতে জয়নুল আবেদিনের সাথে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী গোলাম কিবরিয়া, হুমায়ুন কবির মঞ্জু, আব্দুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, জাহানারা সরকার, মাসুদ রানা, শেখ মো : আলী, মাসুদুল হক, কামরুন্নাহার, রাফিয়া আখতার, নাসরিন খন্দকার, নাজমুল হক, রেজবাউল কবির, তাহা মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৩

UK Parliament Proposal on ICT and Abdul Quader Mollah



Early day motion 569


BANGLADESH INTERNATIONAL CRIMES TRIBUNAL AND CASE OF ABDUL KADER MULLAH

That this House is very concerned about the failure of the Bangladesh International Crimes Tribunal (ICT), which despite its name is a domestic court, to uphold international fair trial standards; is particularly alarmed about the denial of due process rights in the case of Abdul Kader Mullah, a leader of the Jamaat-e-Islami party convicted of war crimes, who has recently been sentenced to death with no possibility of the sentence being reviewed, in contravention of Bangladesh's international human rights obligations; notes also the criticisms raised in connection with the trial of the Bangladesh National Party MP, Salahuddin Quader Chowdhury, who was recently convicted on charges including murder and genocide and sentenced to death, subject to an appeal; notes that, while holding perpetrators to account for the atrocities committed in the 1971 war of independence is important, the denial of due process in these trials threatens to undermine the very legitimacy of the ICT and result in further political instability and violence; and calls on the Government to raise these concerns as a matter of urgency with the government of Bangladesh and to urge it to end the possibility of the death penalty being handed down in these trials and allow legal experts from the international community to support the work of the ICT.

Filter EDMs by:

Total number of signatures: 13
  1. Show:

Showing 13 out of 13
Name Party Constituency Date Signed
Bottomley, Peter Conservative Party Worthing West 15.10.2013
Campbell, Ronnie Labour Party Blyth Valley 16.10.2013
Caton, Martin Labour Party Gower 16.10.2013
Clwyd, Ann Labour Party Cynon Valley 15.10.2013
Corbyn, Jeremy Labour Party Islington North 16.10.2013
Dobbin, Jim Labour Party Heywood and Middleton 16.10.2013
Durkan, Mark Social Democratic and Labour Party Foyle 15.10.2013
Flynn, Paul Labour Party Newport West 17.10.2013
Meale, Alan Labour Party Mansfield 16.10.2013
Ritchie, Margaret Social Democratic and Labour Party South Down 15.10.2013
Russell, Bob Liberal Democrats Colchester 15.10.2013
Shannon, Jim Democratic Unionist Party Strangford 16.10.2013
Ward, David Liberal Democrats Bradford East 16.10.2013
Footer links
  •  
  •  যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে ব্রিটিশ সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন

    বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার  কার্যক্রম নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।
    প্রস্তাবে বলা হয়েছে যুদ্ধাপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল  আন্তর্জাতিক মান রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে । বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন না করায় ট্রাইব্যুনালের বিচারের বৈধতা হুমকির মুখে পড়েছে এবং এতে করে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা দেখা দিতে পারে।

    ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ১৩ জন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের উত্থাপিত এ প্রস্তাবে অবিলম্বে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য।

    প্রস্তাবে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদন্ডের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

    গত ১৫ অক্টোবর ব্রিটিশ তথা যুক্তরাজ্যের সংসদে উত্থাপিত এ প্রস্তাবটি  (আর্লি ডে মোশন) সংসদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।
    প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছেন লেবার পার্টির সংসদ সদস্য কয়েড অ্যান। তাতে সমর্থন দিয়েছেন লেবার পার্টির  ডুরান মার্ক ও রিচি মার্গারেট, লিবারেল ডেমোক্র্যাট রাসেল বব, কনজারভেটিভ পার্টির বটমলি পিটার ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টির শ্যানন জিম।

    প্রস্তাবে বলা হয়েছে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে সম্প্রতি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ দন্ডের বিরুদ্ধে  রিভিউ করার সম্ভাবনা নেই।  আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে এ ক্ষেত্রে তার  লক্সঙ্ঘন হচ্ছে। আব্দুল কাদের মোল্লার অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রকৃয়া অনুসরন না করায় ব্রিটিশ সংসদ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
    একই প্রস্তাবে বলা হয়েছে সম্প্রতি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে ১৯৭১ সালে হত্যা এবং গণহত্যার অভিযোগে। ১৯৭১ সালের অপরাধের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন না করায় ট্রাইব্যুনালের বিচারের বৈধতা হুমকির মুখে পড়েছে এবং  এতে করে রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। এ বিষয়গুলো বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরার জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে প্রস্তাবে।
    প্রস্তাবে মৃত্যুদন্ডের বিরোধিতা করে বলা হয়েছে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক আইন  বিশেষজ্ঞরা যাতে সহায়তা করতে পারে সেক্ষেত্রে উদ্যোগ  গ্রহনের জন্য।

    প্রস্তাবের প্রতি অপর সমর্থনকারীরা হলেন, লেবার পার্টির ক্যম্পবেল রনি, ক্যাটন মার্টিন, করবিন জারেমি,  ডববিন জিম. এলিন পল ও  মিল এলান এবং  লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক ওয়ার্ড ডেভিড।

বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৩

এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন আদেশ ২৮ অক্টোবর

১০/১০/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হবে কি হবেনা সে বিষয়ে আগামী ২৮ অক্টোবর আদেশের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে। চার্জ গঠন বিষয়ে উভয় পক্ষের শুনানী শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ এ আদেশ দেয়।

এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের বিরোধীতা করে শেষ দিন যুক্তি উপস্থাপন করেন আসামী পক্ষের (ডিফেন্স টিম) প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৯৭১ সালে যখন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তখন আন্তর্জাতিক প্রচলিত আইনে  অপহরন এবং নির্যাতন নামে কোন অপরাধ ছিলনা। যুদ্ধাপরাধ বিচারের লক্ষ্যে বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সেখানে এ বিষয়গুলো বিচার্য বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানীতে অধিকাংশ  অ্যামিকাস কিউরি মত দিয়েছেন যে, এ বিচারে প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে। আপনারাও এটা গ্রহণ করেছেন। কাজেই যেহেতু ১৯৭১ সালের প্রচলিত আইনে অপহরন এবং নির্যাতন নামে কোন অপরাধ ছিলনা তাই এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ অভিযোগে কোন চার্জ গঠন করা যাবেনা।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১, ৪, ৫ এবং ৬ নং অভিযোগে অহরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া ১, ৫,  এবং ৬ নং অভিযোগে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক তার যুক্তির পক্ষে দেশি বিদেশি বিভিন্ন মামলার রেফারেন্স পেশ করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম এর বিরোধীতা করে বলেন, অন্যান্য অমানবিক অপরাধ বলে একটি অপরাধ তখনকার আইনে ছিল। সেই অপরাধের মধ্যে অপহরন, নির্যাতন সব কিছুই এসে যায়।

এটিএম আজহারুল ইসলামের  বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী  ছয়টি অভিযোগ আনা হয়েছে। ১৮ জুলাই  রাষ্ট্রপক্ষ ফরমাল চার্জ দাখিল করে এবং  ২৫ জুলাই অভিযোগ আমলে নেয়  ট্রাইব্যুনাল।

গত বছর ২২ আগস্ট এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর  ওইদিনই তাকে  তাকে তার মগবাজারস্থ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সেই থেকে তিনি বন্দী রয়েছেন।

আদালত অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করে বক্তব্যের স্বপক্ষে অবস্থান নিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

মেহেদী হাসান, ১০/১০/২০১৩
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচার নিয়ে  টিভি টকশোতে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার স্বপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তিনি। আদালত অবমাননার অভিযোগ বিষয়ে দাখিলকৃত লিখিত জবাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কোন ধরনের দু:খপ্রকাশ বা নিজের বক্তব্যকে ভুলও বলে স্বীকার করেননি।
আদালত অবমাননা বিষয়ে আনীত  অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন তিনি ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী কোন অপরাধ করেননি টকশোর  বক্তব্যের মাধ্যমে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ বিষয়ে আজ  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  এ শুনানীর জন্য ধার্য্য ছিল। এ উপলক্ষে সকালে তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। তিনি তার পক্ষে কোন আইনজীবী নিয়োগ দেননি। নিজের বক্তব্য নিজেই উপস্থাপনের জন্য লিখিত আকারে নিয়ে আসেন এবং আদালতে তা দাখিল করেন। তবে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহসহ অপর অভিযুক্তরা ট্রাইব্যুনালে না আসায় আজ শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি।

সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর পক্ষে সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন এর সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন হাজির হয়ে বলেন, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাই তিন সপ্তাহ সময় দরকার। এছাড়া চ্যানেল ২৪ এর অপরাপর অভিযুক্তদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান হাজির হয়ে সময় আবেদন করেন। আদালত তাদের আবেদন গ্রহণ করে শুনানী এবং হাজিরার জন্য আগামী ৬ নভেম্বর পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে দার্শনিক ফরহাদ মজহার, রাজনীতিবিদ আসম আব্দুর রব, নারীনেত্রী ফরিদা আখতারসহ বিপুলসংখ্যক ভক্ত ট্রাইব্যুনালে আসেন।


লিখিত জবাব :
ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে লিখিত বক্তব্য কোর্টে দাখিল করেছেন তাতে তিনি লিখেছেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত আদালত অবমাননার অভিযোগের উত্তরে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে দ্বিধাহীন কন্ঠে নি:সংকোচে আমি বলতে চাই যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে ১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তবাক অনুষ্ঠানে খোলামনে আলোচনা করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১১(৪) ধারা মোতাবেক কোন অপরাধ করিনি, আমি মনগড়া কোন মিথ্যা বক্তব্য দেইনি, কল্পকাহিনী সৃষ্টি করিনি এবং আদালতের কার্যক্রমে কোনভাবে বাঁধাও সৃষ্টি করিনি। জনগনের মনে আদালত সম্পর্কে অনাস্থা  ও ঘৃনা সৃষ্টি করিনি। বরঞ্চ জনগনের বক্তব্যসমূহ পুনরুল্লেখ করে সমস্যার প্রতি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি আদালতের সুহৃদের কর্তব্য পালন করেছি। জনসম্মুখে কোন চলমান মামলা সম্পর্কে আলোচনা বা বক্তব্য কিংবা মন্তব্য করলেই তা সাবজুডিস হয়না।

লিখিত জবাবে  জাফরুল্লাহ চৌধুরী উল্লেখ বলেছেন, ‘বিচারপতি হাসনাইনের জবানবন্দী শুনতে চাই’ শিরোনামে ২ অক্টোবার প্রথম আলোতে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে ২২ জুলাই প্রধান বিচারপতির কাছে লেখা চিঠিতে বিচারপতি শামীম হাসনাইন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে এটি সম্ভবত একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই চিঠিতে লেখা হয়েছে, এটা সত্য যে একাত্তরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিলেন।

চ্যানেল ২৪ এ করা বক্তব্যের স্বপক্ষে জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, সম্প্রতি মাননীয় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ্বকে কর্মশালায় বলেছেন, সপ্রীম কোর্টের বিচার প্রাথীদের ভোগান্তির শেষ নেই। ফাইল জমা দিতে, শুনানীতে, মামলা কার্যতালিকায় নিতে, আদেশের কপি পেতে বিভিন্ন ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হন বিচারপ্রার্থী জনগন। তিনি বলেন, নিন্ম আদালতের চিত্র তো আরো ভয়াবহ, কোর্টের ইটও নাকি টাকার জন্য হা করে থাকে। এ অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে দুনীতি আরো বেড়েছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করেছে।  এ অবস্থার পরিবর্তন চাই। বিচার বিভাগের প্রতি কতকাংশ মানুষের আস্থার অভবা দেখা দিয়েছে......।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন তার লিখিত জবাবে।
১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা ট্রিবিউনে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন এর বক্তব্য দিয় শিরোনাম করা হয়েছে । শিরোনামটি হল ডু নট পে ব্রাইবস টু জাজেস (বিচারকতের ঘুষ দেবেননা)।
এসব  বক্তব্য উদ্ধৃতি করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রশ্ন করেছেন আইনমন্ত্রীর এ সত্য ভাষনের জন্য কি সুপ্রীম কোর্টে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হবে?
বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে কি বিচারকদের সম্মানহানি হয়েছে? বিচারকদের প্রতি কি জনসাধারনের অনাস্থা সৃষ্টি হবে?

জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, আমি বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। দেশবাসী মনযোগ দিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যক্রম লক্ষ্য করছে এবং বিভিন্ন  সময় বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছে। এটা তাদের অধিকার। আমিও এ সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছি। এতে আদালতের বিচারকার্য বিঘিœত হয়না। এ ধরনের প্রকাশ্য আলোচনার উদ্দেশ্য জনগনের মনে  ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে ঘৃনা ও অনাস্থা সৃষ্টি নয়। বরং বিচারের প্রতি জনগনের আস্থা ও শ্রদ্ধা বাড়ানো।
যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে তিনি লিখেছেন, মাননীয় বিচারপতিগন, আমি আশা করছি আমাকে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে রেহাই দিয়ে আমার বাক স্বাধীনতার অধিকারের স্বীকৃতি দেবেন। আমি আদালত ও ন্যায় বিচারকদের প্রদি সবসময় শ্রদ্ধশীল।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর চ্যানেল-২৪ এ রাত ১১টায় প্রচারিত মুক্তবাক নামক টকশো অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলছে, সে নাকি ছিলই না।  এর পক্ষে সে চারজন সাক্ষী মেনেছে। একটা তো বললাম, আমাদের সালমান, আরেকজন হলেন হাইকোর্টের একজন সিটিং জাজ। তিনি (হাইকোর্টের বিচারপতি শামীম হাসনাইন)  বলেছেন তিনি  স্যা দিতে চান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে। সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি চেয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে দরখাস্ত দিয়েছেন কিন্তু অনুমতি পাননি।  তাকে অনুমতি দেয়া হয়নি এই যে জিনিসটা এর ফলে কী হবে? সন্দেহটা কিন্তু মানুষের মনে থেকেই যাবে। আইনে বলে  দশজন আসামি খালাস পেয়ে যাক, কিন্তু একজন নিরপরাধ যেন শাস্তি না পায়। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মনে প্রানে  ঘৃণা করি আমি। এই লোক দাবি করেছে, সে (ঘটনার সময়) ছিল না। সে হাসনাইন নামের এক জজ সাহেবকে সাী মেনেছে। সেই জজ সাহেবকে কেন সাী দিতে দেননি, এটাকে যদি না দেয়া হয়, তাহলে কি বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদবে না?’

এ বক্তব্যের জের ধরে টকশোতে অংশগ্রহণকারী  ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, অনুষ্ঠান সঞ্চালক মাহমুদুর রহমান মান্না ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল-২৪ এর সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের বিরুদেধ বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২৬ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ তাদের বিরুদ্ধে রুল জারি করে ১০ অক্টোবর হাজির হওয়ার জন্য। একই সাথে কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা মর্মে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।


 

বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৩

আব্দুল আলিমের আমৃত্যু জেল


মেহেদী হাসান ও হাবিবুর রহমান, ৯/১০/২০১৩
প্রবীণ বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলিমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। চারটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড ছাড়াও অপর চারটি অভিযোগে মোট ২০  বছর এবং আরো একটি অভিযোগে ১০ বছর করাদণ্ড দেয়া হয়েছে তাকে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আজ  তার বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষনা করে।
আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগের মধ্যে নয়টিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আটটি অভিযোগে খালাস দেয়া হয়েছে। দোষী প্রমানিত চারটি অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করেছে আব্দুল আলিমের  অপরাধ মত্যৃদন্ডের সমতুল্য। তবে তার বয়স এবং শারিরীক অসুস্থতা বিবেচনায় তাকে আমৃত্যু জেল দেয়া হল।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আব্দুল আলিমের বয়স ৮৩ বছর। তিনি হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। শারিরীক এবং মানসিকভাবে অসুস্থ কোন ব্যক্তিকে ফাঁসির কাষ্ঠে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা তার শারিরীক অসুস্থতার বিষয়ে অন্ধ থাকতে পারিনা।
এ নিয়ে বিএনপির দ্বিতীয় কোন নেতার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত করে রায় দিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগে বিএনপি জাতীয়  স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল-১।
দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের এটি পঞ্চম রায়। দুই ট্রাইব্যুনাল মিলিয়ে এ পর্যন্ত আটি মামলার রায় ঘোষনা করল।
জনাকীর্ন আদালত কক্ষে  ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সদস্য বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম রায় পড়ে শোনান।
রায়ে বলা হয়েছে, আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে নয়টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে। যে চারটি অভিযোগে  তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে  এসব অভিযোগে আসামীর অপরাধ সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের সমতুল্য। কিন্তু আবদুল আলীম ৮৩ বছরের বয়োবৃদ্ধ একজন মানুষ। তিনি  শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী । হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন।  যদিও আবদুল আলীম শতাধিক মানুষ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন, তথাপি আইন আসামীর শারীরিক অক্ষমতা অগ্রায্য করে শান্তি দেয়ার ক্ষেত্রে নির্দয় হতে পারে না।

দোষী প্রমানিত নয়টি অভিযোগ :
১. ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার দমদমা গ্রামের মেহের উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে হামলা এবং তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা।
২. ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল কাঁদিপুর এলাকার হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামের বাড়িঘরে লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের পর ৩৭০ জনকে হত্যা।
৬. ’৭১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে আক্কেলপুরের ১০জন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে ভারত যাওয়ার পথে আটক করে কোকতারা গ্রামের বকুলতলা এলাকায় নয়জনকে হত্যা করা হয়।
৭. ’৭১ সালের ২৬ মে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার নওদা গ্রামের চারজন নিরস্ত্র মানুষকে কালী পুকুরের পাশে নিয়ে হত্যা করা হয়।
৮. ’৭১ সালের মে মাসে তেলাল থানার উত্তরহাট শহরে হারুনজাহাট এলাকায় হিন্দু জনগণের ওপর হামলা ও লুটপাট চালানো হয় এবং ১০ জনকে হত্যা করা হয়।
৯. ’৭১ সালের ১৪ জুন ১৫ যুবককে পশ্চিম আমাত্রা গ্রামে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা।
১০. ’৭১ সালের জুন মাসে ২৬ জন ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে আটক করা ছবি তোলার। পরে জয়পুরহাট কলেজে নিয়ে হত্যা করা হয়।
১২. ’৭১ সালের ২৬ জুলাই দেবীপুর কাজীপাড়া থানা থেকে ডা. আবুল কাশেমকে হত্যা।
১৪. পাহাড়পুরে আহত মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিমসহ আরো দুজনকে হত্যা।

দণ্ড :
উপরোক্ত নয়টি অভিযোগের মধ্যে ১ নং অভিযোগে ১০ বছর; ৬, ৭. ৯ ও  ১২ নং অভিযোগে মোট ২০ বছর এবং ২, ৮, ১০, ও ১৪ নং অভিযোগে আমৃত্যু জেলা দেয়া হয়েছে।
তবে চারটি অভিযোগের ২০ বছর এবং একটি অভিযোগের ১০ বছর কারাদণ্ডও স্বাভাবিকভাবে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাথে একিভূত হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

রায় ঘোষনা :
আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকে দেশি বিদেশি  বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক, আইনজীবী, পর্যবেক্ষক,  মুক্তিযোদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের পক্ষে সোচ্চার বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির নেতাকর্মীরা ট্রাইব্যুনালের সামনে জড়ো হতে থাকে।
এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুম প্রসিকিউশনের সমন্বয়ক এম কে রহমান প্রসিকিউশন টিমের  অন্যান্য  সদস্যদের নিয়ে হাজির হন ট্রাইব্যুনালে। 

১০টা ৫০ মিনিটের সময় রায় ঘোষনা শরু হয়।  রায় ঘোষণার শুরুতে ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, এখন চিফ প্রসিকিউটর বনাম আবদুল আলীম মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। রায়টি মোট  ১৯১ পৃষ্ঠার । তবে রায় সংক্ষিপ্ত আকারে পড়া হবে। শুরুতে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম, তারপর বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া রায় পাঠ করেন। সব শেষে রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এদিকে রায় ঘোষনা উপলক্ষে ট্রাইব্যুনাল এবং পুরো সুপ্রিম কোর্ট এলাকাজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার অতিরিক্ত সদস্য মোতায়নের পাশাপাশি আইনশঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়।  ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ প্রার্থীদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে এবং তল্লাশি করে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করানোর ব্যবস্থা করা হয়।
আব্দুল আলিমের ফাঁসির দাবিতে সকাল থেকে ট্রাইব্যুালের সামনে বিভিন্ন সঙ্গঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন ও স্লোগান দিতে থাকে।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে আবদুল আলীমকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানা থেকে আসামির কাঠগড়ায় আনা হয়। আবদুল আলীমের ছেলে সাজ্জাদ বিন আলীম ও খালিদ বিন আলীম ট্রাইব্যুনালে তাদের বাবার পাশে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া তার আইনজীবী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলে আহসানুল হক হেনা ও মো: তারিকুল ইসলাম। সকাল পৌনে ১০টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে আবদুল আলীমকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
আব্দুল আলীম জানতে চান কি সাজা হয়েছে:
৮৩ বছরের বয়োবৃদ্ধ আবুল আলিম কানে ঠিকমত  শুনতে পান না। রায় ঘোষণা শুরু হলে আলীম তার ছেলে সাজ্জাদ বিন আলিমকে বলেন, শুনতে পাই না কি বলছে। ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর আদালতের আসামীর কাঠগড়ায় বসা আব্দুল আলীম তার সামনের বেঞ্চে বসা মেজ ছেলে সাজ্জাদ বিন আলিম ও সেজ ছলে খালেদ বিন আলিমের কাছে জানতে চান কি সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। ছেলে সাজ্জাদ বিন আলিম বলেন, তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়নি, লাইফ সাজা দিয়েছে।

পরিচিতি:
আবদুল আলীম ১৯৩০ সালের ১ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি থানাধীন পাঁদুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০-৫১ সালে আলীমের পরিবার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জয়পুরহাটে এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  ইতিহাস বিষয়ে এম এ পাশ করেন  এবং ১৯৫৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাশ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি কনভেনশন মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন। ১৯৭৫ ও ১৯৭৭ সালে তিনি জয়পুরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৯, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে জয়পুরহাট পাঁচবিবি আসন থেকে আবদুল আলীম এমপি নির্বাচিত হন। আবদুল আলীম ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী সভায় প্রথমে  বস্ত্রমন্ত্রী ও পরে যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। 
আব্দুল আলিমের চার ছেলে ও ১ মেয়ে। তার স্ত্রী ১৯৭১ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

মামলার বিবরণ:
 গত ১৯ সেপ্টেম্বর আবদুল আলীমের পক্ষে মামলার যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আসামিপে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন  অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা ও অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোঃ খলিলুর রহমান। গত ৪ সেপ্টেম্বর আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয় এবং ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ও রানা দাসগুপ্ত যুক্তি উপস্থাপন করেন। গত বছরের ১১ জুন আলীমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং এসব অপরাধে উস্কানি ও সহযোগিতার করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৭টি ঘটনার অভিযোগ গঠন করা হয়।
আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে ৩৫ জন এবং  পে তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১১ সালের ২৭ মার্চ জয়পুরহাটের বাড়ি থেকে আবদুল আলীমকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ৩১ মার্চ তাকে ১ লাখ টাকায় মুচলেকা এবং ছেলে ফয়সাল আলীম ও আইনজীবী তাজুল ইসলামের জিম্মায় তাকে জামিন দেন ট্রইব্যুনাল-২। ২২ সেপ্টেম্বর মামলার সমস্ত কার্যক্রম শেষে আব্দুল আলিমের জামিন বাতিল করে রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হয় এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে আব্দুল আলিমের মামলটি ছিল প্রথম মামলা।


খালাস পাওয়া আট অভিযোগ :
৩. ’৭১ সালের ১৮ জুন আলীমের দেয়া একটি তালিকা অনুসারে ২৮ জনকে চিহ্নিত করা হয়। তাঁদের মধ্যে ২২জন নিহত হন, বাকিরা পালিয়ে যান।
৪. ’৭১ সালের মে মাসে কোকতারা, বাগজানা, কোটাহারা, ঘোড়াপা গ্রামের ১৯ জন মুক্তিযুদ্ধে পরে লোককে হত্যা।
৫. ’৭১ সালের মে মাসে ৬৭ জন নিরস্ত্র লোককে হত্যা করেকবর দেওয়া হয়।
১১. ’৭১ সালের জুন মাসে ১৯ ব্যক্তিকে খঞ্জনপুর কুঠিবাড়ি সেতুর কাছে নিয়ে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
১৩. আলীমের পরামর্শে পাকিস্তানি সেনারা ১১ জনকে গুলি করে হত্যা করে।
১৫. জয়পুরহাট চিনিকলে স্থাপিত সেনাক্যাম্পে ২৫ জন ব্যক্তিকে আটকে রাখার পর হত্যা করা হয়।
১৬. পাঁচবিবি থানার সুলাইমান আলী ফকির, আফজাল হোসেন, আব্দুল খালেক ও আব্দুস সামাদকে দেশান্তরিত করতে বাধ্য করা।
১৭. ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টের ১৭ উইংয়ের সুবেদার মেজর জব্বল হোসেনকে হত্যা।

মাওলানা আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুনানী শুরু

৯/১০/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুস সোবমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুনানী শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ। রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন শুনানী শুরু করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের শুনানী শেষ হলে আগামী ২৩ অক্টোবর আসামী পক্ষের শুনানীর জন্য ধার্য্য করা হয়।

দুইটার পরে কোর্টের কার্যক্রম শুরু হলে আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান কবির দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি বসেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুলতান মাহমুদের কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনারা প্রস্তুত কি-না। সিমন বলেন, আমরা প্রস্তুত। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি শুরু করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবীকে বলেন, আপনার আবেদন পরে বিবেচনা করা হবে। এখন রাষ্ট্রপক্ষের পার্ট শুরু হোক।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর মাওলানা আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে  আজ অভিযোগ আমলে নেয়া হয়।

মাওলানা আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা গনহত্যা, অপহরন, নির্যাতন, পরিকল্পনা ষড়যন্ত্রসহ নয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।

২০০৩ সালে পাবনা থানায় দায়েরকৃত  মামলায় গত বছর   ২০ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন  মাওলানা  আব্দুস সোবহানকে টাঙ্গাইল থেকে আটক করে। ২৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী (চিফ প্রসিকিউটর) গোলাম আরিফ টিপু মাওলানা আব্দুস সোবহানকে  গ্রেফতার দেখানোর (শোন অ্যারেস্ট)  আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে প্রডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন ট্রাইব্যুনাল।  ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে মানবতা বিরোধী অভিযোগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। 



জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন/// ৩ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু

মেহেদী হাসান, ৯/১০/২০১৩
জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  আজ তার বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগে চার্জ গঠন করে । আগামী ৩ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।

জাহিদ হোসেন খোকন বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে চার্জ গঠন আদেশ দেয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপরন, বন্দীকরন, নির্যাতন, ধর্মান্তরকন, দেশান্তরকরনসহ মানবতাবিরোধী ১১টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছে।

জাহিদ হাসান খোকন ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র। তিনি নগরকান্দা পৌরসভা বিএনপির সহসভাপতি। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার কার্যক্রম শুরুর পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

জাহিদ হাসান খোকন এর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ১৮ জুলাই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর  ১৪ আগস্টের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হবার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল ৩০ জুলাই  রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেয়।  এদিনের মধ্যে সে স্বেচ্ছায় ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে তার পক্ষে একজন রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগ করা হবে এবং তার অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে  চার্জ গঠন শুনানী  শুরু হবে মর্মে আদেশে বলা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষ গত ২৩ জুন জাহিদ হোসেন  খোকনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সাল বিষয়ে ১০টি মানবতাবিরোধী অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে ট্রাইব্যুনালে। এর আগে ৩০ মে তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষের কাছে।



মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৩

ইউটিউব ভিডিও //মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষীকে পুনরায় জেরার আবেদন খারিজ


মেহেদী হাসান, ৮/১০/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের  ১১ তম সাক্ষী অ্যাডভোকেট শামসুল হক ওরফে নান্নুকে পুনরায় তলব করে জেরার আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে। আসামী পক্ষের এ আবেদন শুনানী শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আবেদনটি খারিজ করে দেয়। আবেদনের পক্ষে ডিফেন্স টিমের প্রধান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানী পেশ করেন।

সাক্ষী অ্যাডভোকেট শামসুল হক ওরফে নান্নু মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে গত ২০ জুন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন। তিনি তার জবানবন্দীতে  ১৯৭১ সালে পাবনায় মাওলানা নিজামীকে দেখেছেন উল্লেখ করে অনেকগুলো অপরাধ সংঘটনে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দানের অভিযোগ করেন । অপরদিকে আসামী পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে সাক্ষী অ্যাডভোকেট শামসুল হক ওরফে নান্নুর একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে ইউটিউবে। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার আগে ধারনকৃত এ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন ১৯৭১ সালে মাওলানা নিজামীকে তিনি কোনদিন পাবনায় দেখেননি। মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কোন জবানবন্দীও দেননি। ১৯৮৬ সালের আগে তিনি মাওলানা নিজামীকে চিনতেনও না।

ইউটিউিবে এ ভিডিও প্রচারিত হবার পর গত ২১ সেপ্টেম্বর সাক্ষী অ্যাডভোকেট শামসুল হক ওরফে নান্নু সংবাদ  সম্মেলন করে বলেন, ইউটিউবের সাক্ষাতকারে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে সে ব্যক্তি তিনি নন। তিনি এ ধরনের কোন সাক্ষাৎকার কাউকে দেননি। সাক্ষাতকারে যাকে দেখা যাচ্ছে তার গোফ নেই। তার বর্তমানে গোফ আছে।

এ প্রসঙ্গে আসামী পক্ষ তাকে তলব করে পুনরায় জেরার আবেদন জানায়। আজ   শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা তার পাসপোর্ট, ভোটার আইডি কার্ড এবং সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীদের তালিকা থেকে অ্যাডভোকেট শামসুল হক ওরফে নান্নুর ছবি সংগ্রহ করেছি। এ ছবি আব্দুর রাজ্জাক কোর্টকে দেখিয়ে বলেন, এসব ছবিতে সাক্ষীর গোফ নেই। ইউটিউবের সাক্ষাৎকারে আমরা যাকে শামসুল হক ওরফে নান্নু বলে দাবি করছি তার চেহারার সাথে এসব ছবির চেহারর মিল রয়েছে। তাছাড়া পাবনায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সাথে তার একটি ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে যেখানে তাকে গোফবিহনীন অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। পুনরায় তলবের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা তাকে প্রশ্ন করব পাসপোর্ট, ভোটার আইডিকার্ড এবং আইনজীবীদের তালিকায় প্রদত্ত এসব ছবি  তার কি-না। এছাড়া কণ্ঠ পরীক্ষার জন্য তিনি কণ্ঠ দিতে রাজি আছেন কি-না এবং মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদানের বিষয়ে তার ওপর সরকারের কোন চাপ ছিল কি-না।

আসামীপক্ষের দাবিকৃত অ্যাডভোকেট শামসুল হক ওরফে নান্নুর ইউটিউবের সাক্ষাৎকার পড়ে শোনান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ইউটিউবে প্রচারিত সাক্ষাতকারে দেখা যায় সাক্ষী বলছেন “তা তো তখন আমি কোন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমার সামনেও সে (নিজামী)  কোন দিন পড়ে নাই। তার কারণ তাকে কোথাও কোন দিন দেখিও নাই। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কিছু করার দেখি নাই বিরোধীতা করার কিছু করারও দেখি নাই।.. আমি নিজামী সাহেবকে কখনো দেখিনি। আমি একচুয়ালি যখন ওই যে পলিটিকস ওপেন হলো ৮৬ ইলেকশনে এ তখন থেকে তার সঙ্গে পরিচয়।”

শুনানী শেষে আবেদনটি খারিজ করে দেয় ট্রাইব্যুনাল।



নিম্নে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন রয়েছে যা গত ২৪ জুন দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত হয়।
মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে ট্রাইব্যুনালে এবং ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাক্ষীর দুই ধরনের  বক্তব্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে  চলতি মাসের ২০ জুন  বৃহষ্পতিবার ১১ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন মোঃ শামছুল হক ওরফে নান্নু । তিনি পেশায় অ্যাডভোকেট এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ  করেছেন বলে ট্রাইব্যুনালে জানান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ  মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তিনি তার জবানবন্দীতে অনেকগুলো অভিযোগ করেন। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য মাওলানা নিজামীসহ অন্যান্যরা মিলে স্বাধীনতা বিরোধী সেল গঠন, সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প উদ্বোধন, রুপসী প্রাইমারি স্কুলে শান্তিকমিটি গঠনের নির্দেশ এবং আলবদর বাহিনী গঠনের নেতৃত্ব দান।  এছাড়া মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষনের নেতৃত্ব দানের বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেন সাক্ষী। পাবনা এলাকায় সংঘটিত এসব অপরাধের নেতৃত্ব দানের সময় সাক্ষী মাওলানা নিজামীকে দেখেছেন বলে সাক্ষ্য দেন। তিনি বলেন,  ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল পাকিস্তানী বাহিনী গানবোট নিয়ে নগরবাড়ি ঘাটের দিকে অগ্রসর হয়।  মাওলানা নিজামী এবং তার দলবল তাদের সাথে থেকে তাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে। সেদিনের যুদ্ধে প্রায় দেড়শ লোক শহীদ হয়। ১১ এপ্রিল মাওলনা নিজামী পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নিয়ে পাবনা শহরে প্রবেশ করে এবং রাস্তার দুপাশের  ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, দোকানপাট লুটপাট করে। ১৯ এপ্রিল একইভাবে মাওলানা নিজামীর সহায়তায় ডাববাগান আক্রমন পরিচালনা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ১৪ই মে, ১৯৭১ ফজরের আযানের পর সশস্ত্র পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মতিউর রহমান নিজামী, রফিকুন নবী, কুখ্যাত দালাল আসাদ এবং তার দলবল রূপসী, বাউশগাড়ী এবং ডেমরা গ্রাম ঘিরে ফেলে এবং ব্যাপক গোলাগুলি চালিয়ে নিরস্ত্র নীরিহ এবং নির্দোষ মানুষদেরকে হত্যা করে। এতে ৪৫০ জনের অধিক শহীদ হন ।  এভাবে আরো বেশ: কিছু ঘটনা উল্লেখ করে সাক্ষী বলেন, মাওলানা নিজামীর দেখানো মতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনেককে হত্যা করে। এসব  অনেক  অপরাধ সংঘটনের সময় মাওলানা নিজামীকে তিনি দেখার কথা বলেছেন।
ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার পূর্বে সাক্ষী মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী দেন এবং সে জবানবন্দীতেও মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে প্রায় একই ধরনের বক্তব্য লিখিত আছে তার নামে।

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার পূর্বে গত বছর জুলাই মাসে মোঃ শামছুল হক ওরফে নান্নু অ্যাডভোকেট দিগন্ত টেলিভিশনের সাথে সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। সে সাক্ষাতকারে তিনি  বলেন, মাওলানা নিজামীকে  জড়িয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কোন জবানবন্দী দেননি তিনি। ১৯৭১ সালে তিনি পাবনায় মাওলানা নিজামীকে দেখেননি। মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে তার নামে তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দীতে যদি কিছু লেখা থাকে তাহলে তা মিথ্যা। দিগন্ত টিভি কর্তৃক গ্রহণ করা তার সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়নি ; তবে সে সাক্ষাতকারটি এখন ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ইউটিউবে তার আরো একটি ভিডিও সাক্ষাকার  রয়েছে এবং সেখানেও তিনি মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে কোন কিছু বলার কথা অস্বীকার করছেন। তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দীতে তার  নামে মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে জবানবন্দী বিষয়টি নজরে আসার পর সাক্ষী মোঃ শামছুল হক ওরফে নান্নু অ্যাডভোকেট ২০১২ সালে একটি এফিডেভিট তৈরি করেন এবং সেখানে তিনি ঘোষনা করেন-   ১৯৭১ সালের ঘটনা বিষয়ে মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে তার নামে তদন্ত কমকর্তার  তৈরি করা জবানবন্দীতে যা আছে তা মিথ্যা। তিনি তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দী উল্লেখ করে বলেন তিনি এসব কথা তার কাছে বলেননি।

প্রথমে আসা যাক দিগন্ত টিভিতে ধারন করা ইউটিউবে প্রচারিত তার সাক্ষাতকার বিষয়ে। নিম্নের এ লিংক দুটিতে তার সাক্ষাতকার দেখা এবং শোনা যাবে।





দিগন্ত টিভিতে  প্রদত্ত সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, বাউশগাড়ী ঘেরাও করার সময়  পাকিস্তানী আর্মিকে  সাহায্য করছে বেড়ার আসাদ নাম করে একটা লোক। সে  ওদেরকে রাস্তা দেখায়ে নিয়ে আসছে। ... বিষয়টা হলো তখন পাকিস্তান মিলিটারীর দাবড় খাইয়া লোক যার যার মত লাইফ নিয়ে পালায়।  যেটা বাস্তবতা। পালায়ে চলে যায়। আসাদকে সামনা সামনি আমি দেখিনি, তবে লোক সবাই বলছে, যারা দেখছে যে, আসাদ ছিল। এইখানে মাওলানা নিজামী সাহেব, সোবহান সাহেব বা আদারস্ যারা আছে, ওদের ওখানে কেউ বলে নি যে, তারা ছিল বা আমরাও দেখিনি।....স্বাধীন হওয়ার পর যখন যাদের লোকজন মারা গেছে তারা আসাদকে দেখায়ে দিল যে এই লোকটি আনছিল, তখন মুক্তিযোদ্ধারা গণআদালতে আসাদের বিচার করে, বিচার করে তার মৃত্যুদ- দেয়।...ডেমরা হত্যাকান্ডে  পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে রাস্তা আসাদ দেখায়ে নিয়ে আসছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, এ ঘটনায় আমি মতিউর রহমান নিজামীর নাম বলিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, তখন আমি মাওলানা নিজামী সাহেবকে চিনতামও না।আরেক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, আমি তো বললাম, একাত্তরে তার সাথে আমার পরিচয়ই ছিলো না।

সাক্ষী বলেন, যে আসাদ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছিল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু সে মারা যাবার আগে কখনো মাওলানা নিজামী, আব্দুস সোবহানের নাম বলেনি।

তার নামে তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক  জমা দেয়া জবানবন্দীতে মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে সরাসরি অনেক অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাক্ষী বলেন, তিনি এটা বলেননি। যদি এধরনের কথা লেখা থাকে তাহলে তা  ঠিক নয় এবং তিনি এর প্রতিবাদ করবেন।

ইউটিউবে প্রচারিত তার আরেকটি সাক্ষাতকারে দেখা যায় যেখানে সাক্ষী বলছেন “তা তো তখন আমি কোন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমার সামনেও সে (নিজামী)  কোন দিন পড়ে নাই। তার কারণ তাকে কোথাও কোন দিন দেখিও নাই। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কিছু করার দেখি নাই বিরোধীতা করার কিছু করারও দেখি নাই।.. আমি নিজামী সাহেবকে কখনো দেখিনি। আমি একচুয়ালি যখন ওই যে পলিটিকস ওপেন হলো ৮৬ ইলেকশনে এ তখন থেকে তার সঙ্গে পরিচয়।

এফিডেভিট : সাক্ষী মো : মোঃ শামছুল হক ওরফে নান্নু  ২০১২ সালে ১ম শ্রেণীর মেজিস্ট্রেট/ নোটারি পাবলিক এর কার্যালয়, পাবনা একটি হলফনামা তৈরি করেন। ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে তৈরি করা সে হলফনামায় সাক্ষী মো : শামছুল হক ঘোষনা করেন- স্বাধীনতাবিরোধী সেল গঠন, বাউশগাড়ীসহ বিভিন্ন অপারেশনে মাওলানা নিজামী কর্তৃক পাকিস্তানী সেনাবাহিীনকে নিয়ে যাওয়া এবং পথ দেখিয়ে দেয়া, রাজাকার বাহিনী গঠনসহ মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে আমার নামে তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দীতে যা উল্লেখ রয়েছে তা মিথ্যা।

তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক  জমা দেয়া জবানবন্দী কোট করে তিনি  ঘোষনা করেন-“এ বিষয়ে আমার পরিস্কার বক্তব্য এই যে,  আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জনাব আব্দুর রাজ্জাক খানের  নিকট প্রদত্ত জবানবন্দীকালে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে জড়াইয়া এ ধরনের কোন বক্তব্য প্রদান করিনাই। যদি আমার নামে উল্লিখিত কোন বক্তব্য লিখিত থাকে তাহা হইলে তা তদন্ত কর্মকর্তার মনগড়া বক্তব্য।
আমি এই মর্মে আরো ঘোষনা করিতেছি যে, আমি যে বক্তব্য প্রদান করিয়াছি তাহাতে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে জড়াইয়া কোন বক্তব্য  প্রদান করিনাই। কারণ তিনি উল্লিখিত ঘটনার সাথে কোনভাবেই জড়িত ছিলেননা।”
এফিডেভিট, দিগন্ত টিভিতে প্রদত্ত সাক্ষাতকার যা এখন ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে এ বিষয়ে সাক্ষীর মতামত জানানর জন্য তাকে ফোনে চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

মাওলানা নিজামী সম্পর্কে সাক্ষীর পরস্পরবিরোধী বক্তব্য 

 http://www.dailynayadiganta.com/welcome/post/1867#.UlQAEdhP0p0