মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০১৪

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৩ ও ১৪তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ

৪/৩/২০১৪
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ ও ১৪তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ ১৩তম সাক্ষী ইঞ্জিনিয়ার মো: হাসান ও ১৪তম সাক্ষী ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকীর জবানবন্দী গ্রহণ করার পর আসামীপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাদের জেরা করেন। এরপর আগামীকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের পরবর্তী সাক্ষীর জবনবন্দী গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।

জবানবন্দীতে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি সাক্ষী মো: হাসান। অপর দিকে ১৪তম সাক্ষী ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী জেরায় বলেছেন, মীর কাসেম আলীর ব্যক্তিগত জিবন সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই।

সাক্ষ্যগ্রহণের সময় মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মিজানুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম, অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও সুলতান মাহমুদ সিমন।

১৩তম সাক্ষী ইঞ্জিনিয়ার মো: হাসানের জবানবন্দী : জবানবন্দীতে সাক্ষী মো: হাসান বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নভেম্বর মাসের শেষ দিকে একদিন সন্ধ্যা রাতে আমরা বাড়িতে বসে রেডিওতে খবর শুনছিলাম, এমন সময় বাড়িতে হুইসেলে ও লোকজনের দৌড়াদৌড়ির শব্দ শুনতে পাই। মুখে কাপড় বাধা অবস্থায় একদল লোক আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে তল্লাসী করে। আমার চাচা বশিরুল হুদা সাহেবের ঘরবাড়ি তল্লাসী করে তিনজনকে আটক করে। এরা হলেন হাবিবুর রহমান, ইলিয়াস সওদাগর ও সানাউল্লাহ চৌধুরী। তাদের আটক করে ডালিম হোটেলস্থ আল-বদর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এই ঘটনার নয় বা দশদিন পর হাবিবুর রহমান একটি রিকসাযোগে বাড়িতে ফিরে আসে। ওইদিন আমরা তাকে খুব অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পাই। হাবিবুর রহমান বাড়িতে ফিরে আসার তিন বা চারদিন পর সানাউল্লাহ চৌধুরীও ফিরে আসেন। তখন তাকেও আমি বিদ্ধস্ত অবস্থায় দেখতে পাই। তাদের কাছ থেকে জানতে পারি উভয়কেই বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলস্থ আল-বদর ক্যাম্পে নির্যাতন করা হয়েছিল। এই আমার জবানবন্দী।

জবানবন্দী শেষে আসামীপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন।

জেরা:
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে হাবিবুর রহমান কি করতেন?
উত্তর : ইলেকট্রিক সরঞ্জামের ব্যবসা করতেন।
প্রশ্ন : হাবিবুর রহমানের সাথে স্বাধীনতার পরেও কি আপনার যোগাযোগ ছিল?
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : সানাউল্লাহ চৌধুরী ও ইলিয়াস সওদাগরের সাথেও কি আপনার যোগাযোগ ছিল?
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ডালিম হোটেল কার দখলে বা নিয়ন্ত্রণে ছিল সে সম্পার্কে আপনার কোন ধারণা ছিল?
উত্তর : না, ছিল না।
প্রশ্ন : হাবিবুর রহমান বা সানাউল্লাহ চৌধুরী ডালিম হোটেলে নির্যাতিত হওয়া সম্পার্কে আপনাকে কোন তথ্য দেয়নি।
উত্তর : সত্য নয়।

১৪তম সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা: রাষ্ট্রপক্ষের ১৪তম সাক্ষী ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর আমার দুলাভাই সাইফুদ্দিন খানকে পশ্চিম মাদারবাড়িস্থ আজিজ কলোনী বাসা থেকে গভীর রাতে অন্যান্যদের সাথে আল-বদর বাহিনী ধরে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। আল-বদর কমান্ডার ছিলেন মীর কাসেম আলী। আমার বড়বোন নুরজাহান খানের কাছ থেকে আমি একথা শুনি। এ কথা শুনার পর আমি আমার মোটর সাইকেল নিয়ে ডালিম হোটেলের সামনে যাই। ওই সময় ডালিম হোটেলের সামনে থাকা নিরাপদ মনে না করে বাসায় চলে আসি। চট্টগ্রাম শহরে থাকাও নিরাপদ মনে না করায় পটিয়ার অন্তর্গত করলডাঙ্গা পাহাড়ে আমাদের গেরীলা ইউনিটের ক্যাম্পে চলে যাই। সেখানে আমি ’৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকি। ওইদিন রাতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকান্ড নিস্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর আমি চট্টগ্রাম শহরের বাসায় চলে আসি। ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর খুব ভোরে শতর্কতার সাথে আমি ডালিম হোটেলে পৌছাই। সেখানে দেখতে পাই কিছু লোক জড়ো হয়ে ডালিম হোটেলে বন্দীদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা করছে। ডালিম হোটেলের প্রত্যেকটি রুমে রুমে গিয়ে আমি দুলাভাইকে খুজেছিলাম কিন্তু দেখা পায়নি। ডালিম হোটেলে অবস্থান কালে আমি ১০০ বা ১৫০ জন বন্দীকে মুক্ত হতে দেখি। যাদের মধ্যে কদমতলী থানার জাহাঙ্গীর চৌধুরী, এমরান, হাজারী লেনের সুশিল কান্তি বর্ধন, ইস্কান্দার আলম চৌধুরী ও পটিয়ার নাসিরউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন। ১৭ ডিসেম্বরের পর আমার দুলাভাই সাইফুদ্দিন খানের সাথে দেখা হয়। তিনি চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। তার কাছ থেকেই জানতেপারি ডিসেম্বর মাসের ২ বা ৩ তারিখে তাকে ডালিম হোটেল থেকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ডালিম হোটেলে থাকা কালীন সময়ে তাকে অমানুসিক নির্যাতন করা হয়।  

জবানবন্দী শেষে আসামীপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন।

জেরা:
প্রশ্ন : রেজা আহমেদ সিদ্দিকী আপনার কি হন, তিনি কি জিবিত আছেন?
উত্তর : বড় ভাই, তিনি জিবিত আছেন।
প্রশ্ন : আপনার বড়বোন সুরজাহান খান জিবিত আছেন?
উত্তর : জিবিত আছেন।
প্রশ্ন : আপনি কবে পড়ালেখা শেষ করেন?
উত্তর : আমি ১৯৬৮ সালে বিকম পাস করি।
প্রশ্ন : ’৭১ সালে আপনি কোন ব্যাংকের কোন শাখায় কর্মরত ছিলেন?
উত্তর : ইউবিএল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায়।
প্রশ্ন : খাতুনগঞ্জ থেকে ডালিম হোটেল কোন দিকে কত দূরে?
উত্তর : পশ্চিমে, তবে কতদূরে বলতে পারব না।
প্রশ্ন : আপনার জবানবন্দীতে বর্নিত দুই দিন ছাড়া অন্যকোন দিন কি ডালিম হোটেলে গিয়েছেন?
উত্তর : দুই দিন ছাড়া অন্যকোন দিন যায়নি।
প্রশ্ন : ডালিম হোটেলের মালিকানা সম্পার্কে আপনার কোন ধারণা আছে?
উত্তর : ধারণা নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের চট্টগ্রামের রাজাকার, শান্তি কমিটি ও আল-শামস সম্পার্কে কোন ধারণা আছে কি?
উত্তর : ধারণা আছে।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের রাজাকার বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : বলতে পারব না।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির সেক্রেটারী কে ছিলেন?
উত্তর : বলতে পারব না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের চট্টগ্রামের জালাল চৌধুরী নামে কোন ব্যক্তির নাম শুনেছেন?
উত্তর : শুনিনি।
প্রশ্ন : শেখাপড়া শেষ করার পর ছাত্রইউনিয়নের সাথে আপনার আনুষ্ঠনিক কোন যোগাযোগ ছিল কি?
উত্তর : ছিল না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রকাশ্যে কোন কর্মকান্ড ছিল কি?
উত্তর : ছিল না।
প্রশ্ন : সাইফুদ্দিন খান সাহেব কি করতেন?
উত্তর : কমিউনিস্ট পার্টি করতেন এবং তিনি ব্যাংকার ছিলেন।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ডালিম হোটেলে যাওয়ার কথাটি আপনি আজ সর্বপ্রথম এই ট্রাইব্যুনালে বললেন।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : আপনি ছাত্র অবস্থায় ছাত্রইউনিয়নের কোন পদে ছিলেন?
উত্তর : চট্টগ্রাম শহরের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর মীর কাসেম আলী ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং এরপর থেকে তিনি ঢাকায় চলে আসেন।
উত্তর : মীর কাসেম আলীর ব্যক্তিগত জিবন সম্পার্কে আমার কোন ধারণা নেই। ৭ নভেম্বরের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন কি না বলতে পারব না।
প্রশ্ন : মীর কাসেম আলী আল-বদর কমান্ডার ছিলেন না।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সাইফুদ্দিন খানকে আটক করে ডালিম হোটেল নিয়ে যাওয়া হয়নি?
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি মীর কাসেম আলীকে চেনেন না।
উত্তর : সত্য নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন