মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৩

কিছু ব্যর্থ বামপ্রেমিকদের পৃষ্ঠপোশকতায় জাতিকে বিভক্ত এবং মুসলমানদের দোষী সাব্যস্ত করার জন্য বিচার চলছে-ট্রাইব্যুনালে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী

মেহেদী হাসান
বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার জবানবন্দীতে বলেছেন, এ দেশের মুসলমানদের দোষী হিসেবে  সাব্যস্ত করার জন্যই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ  নেতাদের বিরুদ্ধে  বিচার পরিচালিত হচ্ছে।  তারই অংশ হিসেবে  আজ এদেশের আলেমদের বিরুদ্ধে কোরাস তোলা হয়েছে এবং মুসলিম নেতাদের বিচার করা হচ্ছে ।

তিনি বলেন, কিছু ব্যর্থ বামপ্রেমিকদের প্ররোচনায় আজ আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নিষ্পেষন চলছে। ধর্মনিরপক্ষেতার ছদ্মাবরনে তারা আজ জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত করার  প্রচেষ্টায় লিপ্ত।  এই অশুভ  প্রচেষ্টারই  অংশ হিসেবে তারা এদেশে আলেমদের বিরুদ্ধে কোরাস তুলছে এবং নানা রকম আইনের অধীনে মুসলিম উম্মাহর নেতাদের বিচার করা হচ্ছে। উদ্দেশ্যমূলক এই কর্মসূচীরই অংশ হিসেবে আজ আমি এই ট্রাইব্যুনালের সামনে দণ্ডায়মান আছি। আজকের সমাজ যেখানে নাস্তিক এবং বিশ্বাসী এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে সেখানে আমি বর্তমানে হুমকির মুখে থাকা বিশ্বাসীদের দলে রয়েছি এবং তাদেরই প্রতিনিধিত্ব করছি। ফলে আমি আমার প্রথাগত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নাস্তিকদের ক্রোধ এবং বিষের শিকার হয়েছি।

আজ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার জবানবন্দীর শেষ দিনে একথা বলেন। তিনি বলেন, আমি আবারো দায়িত্ব নিয়ে বলছি ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ১৯৭৪ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তানে ছিলাম; বাংলাদেশে ছিলামনা। এ বিষয়ে সমস্ত ডকুমেন্ট আমার রয়েছে।
আজ  সালাহউািদ্দন কাদের চৌধুরীর জবানবন্দী শেষে জেরা শুরু হয়েছে। জবানবন্দী প্রদান থেকে শুরু করে জেরা পর্যন্ত দফায় দফায় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র বাকবিতন্ডা এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ইংরেজিতে দেয়া জবানবন্দীতে  বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনের গো-দেবতাদের সম্মান দেখাতে না পারার কারনে আমি আজ রাজনৈতিক নিষ্পেষনের শিকার। আমার কোন সন্দেহ নাই যে, ১৯৭১ সালে এখানে নির্মম গনহত্যা পরিচালিত হয়েছে। আমি এ মাটির সন্তান। ভারত থেকে উদ্বাস্তু হয়ে এদেশে আসিনি। কাজেই বাংলাদেশের  প্রতি আমার দেশপ্রেম এবং আনুগত্য নিখাঁদ এবং প্রশ্নাতীত। বীর  মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমরা আর্থিক এবং বস্তুগত নানা সহায়তার মাধ্যমে  সম্মান দেখিয়েছি। আমি  বিশ্বাস করি এবং জোর দিয়ে বলছি আমরা  তিরিশ লক্ষ শহীদীদেরকে শুধুমাত্র সংখ্যার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছি উদ্দেশ্যমূলকভাবে। শসস্ত্র বাহিনীর  মধ্যে যারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তাদের নাম ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের গেটে খোদাই করে রাখা হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল ৪২ বছরেও আমরা ৩০ লাখ বেসামরিক শহীদদের নামাঙ্কিত করতে পারিনি। তবে আশার বিষয় হল আমার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জে কিছু নাম উঠে এসেছে যাদেরকে গত ৪২ বছরেও কেউ স্বীকৃতি দেয়নি এবং দাবিও করেনি। আমার বিরুদ্ধে চার্জে যেসব মৃত ব্যক্তিদের নাম উঠে  এসেছে তাদের অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এবং শত্রু সম্পত্তি অধ্যাদেশ জারির পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিপুল সংখ্যক হিন্দু  ভারতে চলে যায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে আবার বাংলাদেশে চলে আসে। শত্রু সম্পত্তি অধ্যাদেশের মাধ্যমে দখলীকৃত জমি  ফেরত দাবি করে হিন্দুদের ৭৪ হাজার মামলা বর্তমানে পেন্ডিং আছে। আমার বিরুদ্ধে চার্জে  মৃত যাদের নাম আছে তাদের মধ্যে একমাত্র নূতন চন্দ্র সিংহ বাবু ছাড়া আর কারোর নাম ১৯৭০ সালের ভোটার লিস্টে বা জমির রেকর্ডে নেই।  কারো কবর বা চিতার ডিএনএ টেস্টও করা হয়নি।

জেরায় তীব্র উত্তেজনা :
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী জবানবন্দী প্রদানের সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দীর্ঘসুত্রিতার অভিযোগ তোলা হয়। তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, আমাকে ফাঁসির কাষ্ঠে দাড় করিয়েছেন। কথাতো বলতে দিতেই হবে। তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম বলেন, অপরাধ করলেতো কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, আপনাদেরও যে এখানে দাড়াতে হতে পারে তা কি করে অস্বীকার করি। কাজেই অত বলবেননা। তখন জেয়াদ আল মালুম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেন।
এরপর জেরার শুরু হলে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জবানবন্দী শেষে জেয়াদ আল মালুম তাকে জেরা শুরু করেন। জেরায় প্রথম প্রশ্ন করেন, আপনার নাম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরী। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী  উত্তর দেন ‘নো’ বলে। কিন্তু আদালতের প্রসিডিংসে উত্তরটি লেখা হয় এভাবে ‘আমার নাম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাকা চৌধুরী নয়।
তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, আমিতো  এ উত্তর দেইনি। আমি শুধু বলেছি ‘নো’। কারণ এ প্রশ্নটির মধ্যে এক ধরনের ইনসাল্টিংয়ের বিষয় আছে। তখন কোর্ট তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, এতে ইনসাল্টিংয়ের কিছু নেই। তাছাড়া বোঝার সুবিধার্থে কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী উত্তর লিখতে হবে।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী জেরার শুরুতে বলেন, আমি ইংরেজিতে উত্তর দেব। তখন কোর্ট বলেন, প্রশ্নগুলো করা হচ্ছে বাংলায়। উত্তর যদি ইংরেজিতে লেখা হয় তাহলে দেখতে ভাল দেখায়না। আপনি ইংরেজিতেই উত্তর বলেন। আমরা আমাদের মত করে বাংলায় লিখব।
এরপর জেয়াদ আল মালুম প্রশ্ন করেন, আপনি গত ১৭ জুন থেকে ৯ দিন ধরে সাক্ষ্য দেয়ার নামে যা বলেছেন তা জেনে বুঝে বলেছেনতো?
তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ইংরেজিতে জোর দিয়ে বলিষ্ঠভাবে বলেন, আই অ্যাম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। হোয়াট আই সে আই মিন ইট এন্ড আই সে ইট নোয়িংলি (আমি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আমি যা বলি তা মিন করি এবং আমি যা বলি তা জেনে বুঝেই বলি)।
কিন্তু উত্তরটি প্রথমে বাংলায় লেখার সময়  কোর্টের পক্ষ থেকে বাংলায় উচ্চারন করা হয়-আমি আমার জবানবন্দীতে যা বলেছি তা সঠিক এবং বুঝে শুনেই বলেছি। তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, আমি যা ইংরেজি বললাম তার অর্থতো এর মধ্যে আসলনা। তখন আরেকটু পরিবর্তন করে বাংলা লেখা  রেকর্ড করা হয়।
এরপর তাকে প্রশ্ন করা হয়-আপনি যে দীর্ঘ পারিবারিক পরিচয় বললেন তার  কৃষ্ঠি আছে?
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, আছে।
এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জেরার প্রস্তুতির জন্য আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি প্রার্থনা করা হয়। কোর্ট বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক গতকাল বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন