বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৩

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুনানী শুরু


দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (এমসি) জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য  মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে  চার্জ গঠন শুনানী শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ  আজ  শুনানী শুরু হয়।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন, অপহরন লুন্ঠন এবং অগ্নিসংযোগের মত ১৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। এর মধ্যে দুটি পৃথক অভিযোগে মোট সাতজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। বাকী ১২টি অভিযোগ হল অপহরন এবং নির্যাতন সংক্রান্ত। এসব অভিযোগের সাথে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপনসিবিলিটি বা উর্দ্ধতন নেতৃত্বে দায় আনা হয়েছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৭১ সালে মীর কাসেম আলী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন ।  তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে আল বদর বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র মহামায়া বা ডালিম হোটেলে স্বাধীনতাপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের অপহরন করে  নির্যাতন, হত্যা, গুম করা হত। এছাড়া  লুন্ঠন এবং অগ্নিসংযোগের মত মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড পারিচালিত হয়েছে তার নেতৃত্বে। মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে যে ১৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে তার  সবগুলোর সাথেই হয়  তার নেতৃত্ব  অথবা  সরাসরি  সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুলতান মাহমুদ সিমন শুনানীতে অংশ নেন এবং মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনালে। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানী শেষে আগামী ৭ আগস্ট আসামী পক্ষের শুনানী পেশের জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করা হয়েছে।

শুনানী শেষে সুলতান মাহমুদ সিমন সাংবাদিকদের জানান, ১৪টি অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মোট ৩৩ জন সাক্ষীর নাম জমা দেয়া হয়েছে।

অভিযোগসমূহ :
১ নং অভিযোগ  : মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে আল বদর বাহিনী ১৯৭১ সালের ৮ নভেম্বর ওমরুল ইসলাম চৌধুরীকে  চাকতাই ঘাট থেকে অপহরন রা হয়। এরপর তাকে কয়েক দফায় চট্টগ্রামের আন্দর কিল্লাস্থ ডালিম হোটেল, পাচলাইশ থানার সালমা মঞ্জিল এবং একটি চামড়ার গুদামে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
২ নং অভিযোগ : আসামীর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর চাকতাই থেকে লুৎফর রহমান ফারুককে অপহরন করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয় এবং বাড়িঘরে আগুন দেয়া  হয়।

৩ নং অভিযোগ : ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর আসামীর নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে তার কদমতলা বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়।
৪ নং    অভিযোগ :  ডাবলমুরিং থানায় সালাহউদ্দিন খানকে তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে আল বদর বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন।
৫ নং অভিযোগ : ২৫ নভেম্বর আনোয়ারা থানার আব্দুল জব্বারকে  তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে মীর কাসেম আলীর সামনে হাজির করা হয় । এরপর তাকে নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়া হয়।
৬ নং অভিযোগ : চট্টগ্রাম শহরের একটি চায়ের দোকান থেকে হারুনুর রশিদ নামে একজনকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেল এবং সালমা মঞ্জিলে নির্যাতন করা হয়।
৭ নং অভিযোগ : মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে সাত/আট জন যুবক ডাবলমুরিং থানা থেকে সানাউল্লাহ চৌধুরীসহ ২ জনকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়।
৮ নং অভিযোগ : ২৯ নভেম্বর রাতে নুরুল কুদ্দুসসহ চারজনকে অপহরন করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন।
৯ নং অভিযোগ : ২৯ নভেম্বর সৈয়দ মো : এমরানসহ ছয় জনকে অপহরন ও নির্যাতন।
১০ নং অভিযোগ : আসামীর নির্দেশে মো : যাকারিয়াসহ চারজনকে অপহরন ও নির্যাতন।
১১ নং অভিযোগ : শহীদ জসিম উদ্দিনসহ ছয় জনকে অপহনের পর নির্যাতন করা হয়। এতে জসিমসহ পাঁচজন নিহত হয় এবং  পরে লাশ গুম করা হয়। ঈদের দিনের পর জসিমকে অপহন করে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়।
১২ নং অভিযোগ : জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ তিনজনকে অপহরন করে নির্যাতন করা হয়। এতে দুই জন নিহত হয় এবং তাদের লাশ গুম করা হয়।
১৩ নং     অভিযোগ : সুনীল কান্তিকে অপহরন ও নির্যাতন
১৪ নং অভিযোগ : নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরন ও নির্যাতন

অভিযোগ গঠন শুনানীর শুরুতে মীর কাসেম আলীর জন্ম পরিচয় তুলে ধরা হয় ফরমাল চার্জ থেকে।  এতে বলা হয় মীর কাসেম আলী ১৯৫২ সালে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানায় জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা উপলক্ষে তিনি ১৯৭১ সালের পূর্ব থেকে চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করতেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম এ ডিগ্রী অর্জন করেন। ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হবার পূর্বে তিনি চট্টগ্রাম শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

আজ  ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে মীর কাসেম আলীর পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম চার্জ গঠন শুনানী শুরু বিষয়ে সময় প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, সর্বশেষ যে ২০৯ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট জমা দেয়া হয়েছে তার মধ্যেও ৩৮ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট পাঠযোগ্য নয়। তাছাড়া আসামীর সাথে তার আইনজীবীরাও যোগাযোগের সুযোগ পায়নি। তবে ট্রাইব্যুনাল আবেদন প্রত্যাখ্যান করে রাষ্ট্রপক্ষকে শুনানী শুরু করতে বলেন এবং আসামী পক্ষকে তাদের শুনানী শুরুর জন্য সময় দেয়ার কথা বলেন।
দুপুর একটার মধ্যেই রাষ্ট্রপক্ষের শুনানী শেষ হয়ে যায়।

চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের  ট্রাইবু্যুনাল শুনানী গ্রহণ করেন।
আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম, আবু বকর সিদ্দিক, সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ২৮ জুলাই এবং ১ আগস্ট আসামীকে তার আইনজীদের সাথে পরামর্শ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে কাসিমপুর জেলখানায়।

১৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে ট্রাইব্যুনালে।

গত বছর  ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে  ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  এর নির্দেশে। সেই থেকে তিনি বন্দী রয়েছেন।
চার্জ গঠন শুনানী উপলক্ষে আজ মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন