মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সাক্ষী বললেন কামারুজ্জামানকে চিনি না, কখনো দেখিওনি


৩/৯/২০১২
গতকাল সোমবার ৩/৯/২০১২ তারিখ  ট্রাইব্যুরাল-২ এ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে জবানবন্দী দেন ষষ্ঠ সাক্ষী ডা. মো. হাসানুজ্জামান। জবানবন্দীতে হাসানুজ্জামান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কামারুজ্জামানকে চিনি না এবং কখনো দেখিওনি, পত্রিকায় তার ছবি দেখেছি।

কামারুজ্জামানের আইনজীবী মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন চৌধুরী সাক্ষীকে জেরা করেন।

অন্যদিকে ট্রাইব্যুরাল-২ এ গতকাল জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে নবম সাক্ষী মোঃ আমির হোসেন মোল্লাকে দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করা হয়। জেরায় সাক্ষী শিকার করেন হাইকোর্টের বিচারপতি এএফএম আলী আসগারের জমি দখল করার অভিযোগে গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর পল্লবী থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন আছে। এছাড়া ৭০ এর নির্বাচনে মিরপুরের জামাতে ইসলামীর প্রার্থী গোলাম আযমের পক্ষে প্রচারণার জন্য আমির হোসেন মোল্লা ৭০ টাকা নেন মর্মে আসামী পক্ষের এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন এটা সত্য নয়। এ কাদের মোল্লার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুস সোবহান তরফদার সাক্ষীকে জেরা করেন।

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ সাক্ষীর জবানবন্দী (সংক্ষিপ্ত):
ষষ্ঠ সাক্ষী ডা. মো. হাসানুজ্জামান জবানবন্দীতে বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কামারুজ্জামানকে চিনি না এবং দেখিওনি, পত্রপত্রিকায় তার ছবি দেখেছি। আমার শ্বশুরবাড়ী রামনগর গ্রামে আহমদ নগর স্কুলে পাকিস্তান বাহিনীর একটি বড় ক্যাম্প ছিল। ’৭১ সালের ২৯ জুন আমার ভাই বদিউজ্জামান সেই ক্যাম্প র‌্যাকি করার জন্য আমার শ্বশুর বাড়ি যান। অনুমানিক রাত ১১টায় ১০ বা ১১ জনের একটি দল আমার শ্বশুরের ঘরের সামনে ভাই ভাই বলে ডাকে। নিজেদের মুক্তিবাহিনীর লোক বলে পরিচয় দেয়। আমার ছোটভাই মুক্তিযোদ্ধ নাম শুনে অতিউৎসাহে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে ও তাদের সঙ্গে কথা বলে। আমার ভাই তাদেরকে পাকিস্তান বাহিনীর ক্যাম্প দেখিয়ে দেয়। কিন্তু তারা ধমক দিয়ে আমার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে যায়। তাকে সারা রাত অমানুসিক নির্যাতনের পর পরদিন সকালে ঝিনাইগাতী শেরপুর সড়কে দাঁড়করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পাকিস্তান আর্মির সদস্যরা আমার ভাইয়ের লাশ টেনে হিচড়ে সড়কের পাশে একটি কাঠের পুলের নীচে পানিতে ফেলে দেয়। স্বাধীনতার পর আমি শ্বশুর বাড়িতে যাই। আমার চাচা শ্বশু সৈয়দুর রহমান আমাকে বলেছেন, সেই দিন তিনি কামারুজ্জামানকে চিনতে পেরেছেন।


জেরা:
প্রশ্ন: কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে আপনাদের পরিবারের কেউ মামলা করেছে এমন কোন কাগজ দেখাতে পারবেন?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: আপনার বাবা মা যে হত্যা মামলা করেছিলেন সেই মামলার কপি দেখেছেন?
উত্তর: কোন দিন দেখিনি।
প্রশ্ন: ওই মামলায় কামারুজ্জামানের নাম না থাকায় আপনি সত্য গোপন করার জন্য মামলার কাগজপত্রের কথঅ গোপন করছেন? 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর আপনার এলাকার স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে? 
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর নয়ানীবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধ ক্যাম্প হয়েছিল এবং ওই ক্যাম্পে স্বাধীনতা বিরোধীদের লিস্ট করা হয়েছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, আপনি জানেন?
উত্তর: জানি না। আমি বাজিদখিলা ক্যাম্প ছাড়া অন্য ক্যাম্পে কখনো যাইনি।
প্রশ্ন: মুক্তিযোদ্ধ এমদাদুল হক হিরার নাম শুনেছেন?
উত্তর: এমদাদুল হক হিরা নামে একজন মুক্তিযোদ্ধ সংগঠক ছিলেন।
প্রশ্ন: মুক্তিযোদ্ধা এমদাদুল হক হিরার বাড়ি লুটপাট করার অভিযোগে ১৫০ বা ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, জানেন?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: ওই মামলায় কামারুজ্জামানের নাম না থাকায় আপনি মামলা সম্পার্কে না জানার কথা বলছেন?
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: পত্রিকার প্রতিবেদন এবং এলাকার মানুষ জানে কলেজে পরীক্ষা দেয়ার সময় আপনার ভাইকে পাকিস্তান আর্মিরা ধরে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে এবং এলাকার মানুষ আপনার ভাই সম্পার্কে এটাই জানে। এ বিষয়ে আপনি অসত্য বলছেন?
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার ভাই অপহরণ হওয়া সম্পার্কে যে সময় ও স্থানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং কামারুজ্জামানের নির্দেশের কথা বলেছেন তা সত্য নয়। 
উত্তর: ইহা সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার ভাইকে কোন দিন কোথা থেকে অপহরণ করা হয় তা আপনি জানেন না এজন্য অপহরণেল দিনের কথা বলতে পারেননি।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার সময় আপনার এলাকার চেয়ারম্যান কে ছিলেন?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: ’৭১ সালে আপনি যে স্কুলে পড়তেন সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কে ছিলেন?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: আপনার বাবা মারা গেছেন কোন সালে?
উত্তর: এ মুহুর্তে মনে নেই।
প্রশ্ন: আপনার মা এসএসসি পাস করেছিলেন কি না বলতে পারবেন?
উত্তর: না, তবে তিনি পড়া লেখা করেছেন।
প্রশ্ন: কামারুজ্জামান স্বাধীনতা বিরোধী আল বদর রাজাকার কিছুই ছিলেন না।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর কামারুজ্জামান স্বাধীনভাবে চলাচল করেন এবং এলাকা থেকে ’৭২ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেন?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: যুদ্ধকালীন সময় কামারুজ্জামান গ্রামের বাড়িতে ছিলেন?
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনি আপনার ভাই হত্যা সম্পার্কে অসত্য বলছেন?
উত্তর: সত্য নয়।

আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে নবম সাক্ষী আমির হোসেন মোল্লাকে জেরা:
প্রশ্ন: আপনার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের বিচারপতি এএফএম আলী আসগারের জমি দখল করার অভিযোগে দায়ের করা মামলা চলমান আছে?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বিচারপতি এএফএম আলী আসগারের জমি কি এখনো আপনার দখলে আছে?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: ওই সম্পত্তি আনবিক শক্তি কমিশন গৃহ নির্মাণ সমবায় সমিতির ৭৫ নং প্লট।
উত্তর: হ্যাঁ, আমি ওই সমিতির সভাপতি। 
প্রশ্ন: আপনি বাড়ি ও মসজিদ মাদ্রাসা করে অধিগ্রহণ করা জমি দখল করে আছেন?
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: ২০০১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সংবাদ প্রকাশিত হয়, আপনি এলাকায় লাটভাই হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত, কুখ্যাত চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদকদ্রব্য ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং বিশাল সরকারি সম্পত্তি দখলকারী মোল্লা বাহিনীর প্রধান আমির হোসেন মোল্লা। ওই সংবাদ দৈনিক আজকের কাগজেও প্রকাশিত হয়।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: একই তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায়, ‘অর্ধশত মামলার আসামী লাট ভাই গ্রেফতার’ শীর নামে সংবাদ প্রকাশিথ হয়।
উত্তর: হতে পারে। এসব সংবাদ করা হয়েছে আমাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।
প্রশ্ন: আপনি এক সময় ওয়ার্ড কমিশনার ছিলেন?
উত্তর: ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের সময় আমাকে ওয়ার্ড কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রশ্ন: ২০০১ সালের ২১ এপ্রিল সফুরা হক আপনার বিরুদ্ধে জিডি করেন যে তৎকালিন ক্ষমতাসীন দল বিএনপির লোক হয়ে তার জমি দখলে নেয়ার জন্য হুমকি দেন?
উত্তর: জিডির বিষয় জানি না। আমি কখনো বিএনপি করিনি।
প্রশ্ন: বিচারপতি এএফএম আলী আসগারের জমি দখল করার মামলায় কোন তারিখে জেলে যান?
উত্তর: মনে নেই।
প্রশ্ন: ’৭০ এর নির্বাচনে মিরপুর থেকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ছিলেন গোলাম আযম?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: গোলাম আযমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করার জন্য ওই সময় ৫০ টাকা নিয়েছেন?
উত্তর: সত্য নয়।

আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী সাইদুর রহমানের জবানবন্দী:
বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষী মো. সাইদুর রহমান গতকাল ট্রাইব্যুনাল-এ আংশিক জবানবন্দী দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার আবার তার বাকি জবানবন্দী গ্রহণ করা হবে। জবানবন্দীতে সাইদুর রহমান বলেন, আক্কেলপুরের জাতীয় পরিষদ সদস্য মুজিবুর রহমান আক্কেলপুরীর নেতৃত্বে আমরা ২৬ মার্চ আক্কেলপুর সংগ্রাম পরিষদ গঠন করি। পাক বাহিনীর আক্রমণ থেকে নিজেদের রা করতে আমরা স্বাধীনতাকামী কিছু যুবককে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশিণ শুরু করি। আমরা বিভিন্ন এলাকা যেমন নওগাঁ ইপিআরের ব্যাটালিয়ান হেডকোয়ার্টারের কমান্ডার মেজর নাজমুল হক, বগুড়ার সংগ্রাম কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গাজীউল এবং সৈয়দপুরের অবস্থিত থার্ড বেঙ্গলের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন আনোয়ারের সঙ্গে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি জানানোর জন্য আমরা সার্বনিক যোগাযোগ রাখতাম।

1 টি মন্তব্য:

  1. এডমিন কপি করার সুযোগ রাখলে সবার জন্য উপকার হয় আর এগুলো ছড়িয়ে দেবারও সুযোগ থাকবে

    উত্তরমুছুন